What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস: মার্কিন-সোভিয়েত স্নায়ুযুদ্ধে আগুন ছড়ানো একটি ঘটনা (1 Viewer)

I8YgW3n.jpg


এ পর্যন্ত দুটি বিশ্বযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছে মানবজাতি। দুটি যুদ্ধেই যুদ্ধ বাঁধানো মূল দেশগুলোর পাশাপাশি অসহায় নিরীহ দেশগুলোকেও এদের কারো না কারো পক্ষ অবলম্বন করে ঝরাতে হয়েছে রক্ত। সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ ছিল ২য় বিশ্বযুদ্ধ। এমনকি ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর বেশ অনেক বছর মানব জাতি এক অস্থির উৎকণ্ঠা নিয়ে দিন যাপন করেছে। এই উৎকণ্ঠার কারণ ছিল দুই পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে শীতল যুদ্ধ তথা স্নায়ুযুদ্ধ।

দুই পরাশক্তিই আসলে তখন নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বৃদ্ধিতে প্রতিযোগিতাতে নেমেছিল। তবে সে দৌড়ে এগিয়ে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েত ইউনিয়নকে জব্দ করার সব ফন্দি আঁটছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অপরদিকে সোভিয়েতও প্রাণপণে রাজনীতি আর সামরিক যুদ্ধের মাঠে নিজেদের এগিয়ে নিতে মরিয়া ছিল।

এই দুই পক্ষের স্নায়ুযুদ্ধ বেশ কয়েকবারই পৃথিবীতে যুদ্ধের দামামা বাজিয়েছিল। বিশ্ববাসী ভেবে বসেছিল এই বুঝি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেঁধেই গেল। একেবারে শেষ মুহুর্তে এসে যুদ্ধের সিদ্ধান্ত বাদ দেয়া হয়েছে এমন নজির আছে বেশ কয়েকটি। তবে স্নায়ুযুদ্ধের সংকট সবচেয়ে বেশি ঘনীভূত অবস্থায় এসছিল আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে ১৯৬২ সালে। ইতিহাসের পাতায় এই সংকট 'কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস' নামে পরিচিত। যা কিনা বিশ্ব কূটনীতির এক সফল দৃষ্টান্ত ছিল। আজ সে সম্পর্কেই জানাবো আপনাদের।

২য় বিশ্বযুদ্ধের পর কিউবায় অর্থনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য সাম্যবাদী চেতনার প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রোর হাত ধরে কিউবায় অভ্যন্তরীণ বিপ্লব ঘটে আর বাতিস্তা পরিচালিত সরকারের পতন ঘটে। আর সে বছরেই ফিদেল কাস্ত্রোর হাত ধরে কিউবায় চালু হয় সমাজতন্ত্র। এতে ক্যারিবিয়ান সাগরের অন্তর্গত এই দেশের সাথে সমাজতন্ত্র বিরোধী যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে। এছাড়া সোভিয়েত রাশিয়ার সাথে কাস্ত্রোর সুসম্পর্ক, স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতি, বৈদেশিক শিল্প ও জাতীয়তাকরণ ইত্যাদি কারণেও কিউবার প্রতি আমেরিকা নাখোশ ছিল। যুক্তরাষ্ট্র ফিদেল কাস্ত্রোর সরকার সরিয়ে দেয়ার জন্য বেশ কয়বার কিউবায় আক্রমণ করার উদ্যোগ নেয়। এক পর্যায়ে তারা কিউবার সাথে সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।

সে সময় কিউবার বেশির ভাগ মানুষ সমাজতন্ত্রের পক্ষে থাকলেও সমাজতন্ত্র বিরোধী মানুষেরও অভাব ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র কিউবা ছেড়ে বেরিয়ে আসা সমাজতন্ত্র বিরোধী সামরিক সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কিউবায় হামলার পরিকল্পনা করে। এজন্য তারা ফ্লোরিডায় নির্বাসিত কিউবানদের নিয়ে একটি রাজনৈতিক কমিটি গঠন করে। সাথে ব্যবস্থা করে সামরিক প্রশিক্ষণের। পরিকল্পনা ছিল সমাজতন্ত্র বিরোধী সৈন্যরা কিউবায় অনুপ্রবেশ করে গেরিলা যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটিয়ে সেখানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। আর মার্কিন সামরিক বিমান বাহিনী তাতে সাহায্য করবে।

WyL9ZO7.jpg


হুমকির মধ্যে ছিল খোদ মার্কিন রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি সহ আরো নয়টি গুরুত্বপূর্ণ শহর।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯৬১ সালের এপ্রিল মাসে প্রায় ১৪০০ জন কাস্ত্রো বিরোধী কিউবানকে বে অব পিগস নামক স্থানে অবতরণ করায় যুক্তরাষ্ট্র। আর অভিযানে মার্কিন বি-২৬ বোমারু বিমান পাঠানোর জন্য প্রস্তুত রাখা হয়। কিন্তু শেষ অব্দি মার্কিন প্রশাসনের এ অভিযান ব্যর্থ হয়। পরিস্থিতি বিবেচনা করে কিউবা সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্য প্রার্থনা করে। আর তাতে সাড়া দেয় তৎকালীন সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকিতা ক্রুশ্চেভ ।

সোভিয়েত ইউনিয়ন অতি গোপনীয়তায় কিউবায় পারমাণবিক বোমা বহনে সক্ষম আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায়। শুধু কিউবাকে সাহায্য করা নয় বরং এর পেছনে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দেয়া প্রচ্ছন্ন হুমকি। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ইতালি ও তুরষ্কে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নকে যে হুমকি দিয়েছিল তার এক প্রকার পাল্টা জবাব ছিল এটি।

মার্কিন চতুর গোয়েন্দা বাহিনীর বদৌলতে সমস্ত পরিকল্পনার তথ্য চলে যায় যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু ততক্ষণে সোভিয়েতের পাঠানো ক্ষেপণাস্ত্র ঘাটি তৈরির সব রসদ আর কারগরি সহায়তা কিউবায় পৌছে গেছে। ফ্লোরিডা অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র থেকে মাত্র ৯০ মেইল দূরত্বে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাটি বসানো হয়। এছাড়া হুমকির মধ্যে ছিল খোদ মার্কিন রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি সহ আরো নয়টি গুরুত্বপূর্ণ শহর।

এমন গুরুতর অবস্থায় ১৯৬১ সালের অক্টোবর মাসে দফায় দফায় জরুরী মিটিংয়ে বসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রশাসন। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির উপদেষ্টাগণ তাকে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র ঘাটিগুলোতে বিমান হামলা করার পাশাপাশি কিউবা দখলের পরামর্শ দেন। কিন্তু সে সময় কেনেডি ভাবেন অন্যভাবে।

২২ অক্টোবর তিনি ঘোষণা দেন মার্কিন নৌবাহিনী কিউবায় আসা সকল জাহাজের চালান আটক ও পরীক্ষা করে দেখবে। কিন্তু এখানেই ছিল একটি গভীর সমস্যা। নৌ অবরোধ করাকে সে সময় আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধের সূচনা হিসেবে গণ্য করা হত। যদিও কেনেডি একে বিপদজনক জাহাজকে আলাদা করার একটি প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

স্বাভাবিকভাবেই সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ মার্কিন এ আচরণকে ভালো চোখে দেখেননি। নিকিতা ক্রুশ্চেভ ক্ষুদ্ধ হয়ে চিঠি লিখেন কেনেডিকে। তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা ও আকাশপথ ব্যবহারের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হল চূড়ান্ত আগ্রাসী আচরণ। এ কর্মকান্ড মানব সভ্যতাকে বিশ্বব্যাপী আত্মঘাতী পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিবে। এভাবে শীতল যুদ্ধের সবচেয়ে উৎকণ্ঠাময় একটি সপ্তাহের শুরু হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগত সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নেয়ার দাবি জানায়। জবাবে কিউবা আর সোভিয়েত ইউনিয়ন একে প্রতিরক্ষার কাজে ব্যবহার করা হবে জানায়।

YGxi0qL.jpg


জন এফ কেনেডি ও নিকিতা ক্রুশ্চেভের কূটনৈতিক দক্ষতায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হাত থেকে রক্ষায় পায় পৃথিবী

২৭শে অক্টোবর মেজর রুডলফ এন্ডারসন চালিত মার্কিন গুপ্তচর বিমান সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূ-সীমায় সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত হয়। একই দিনে পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত একটি সোভিয়েত সাবমেরিনকে ইউএস নৌ বাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ পানির উপরে উঠার সংকেত দেয়। কিন্তু সংকেত আগ্রাহ্য করায় সেই সাবমেরিনে তারা হামলা করে বসে। যদিও সাবমেরিনটি পানির অনেক গভীরে থাকায় এর কমান্ডার মার্কিনিদের সংকেত বুঝে উঠতে পারেনি। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন হয়ত যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে বলে তাদের আক্রমণ করা হচ্ছে। ফলে সোভিয়েত সাবমেরিন থেকে একটি পারমাণবিক শক্তি সম্পন্ন টর্পেডো নিক্ষেপ করার প্রস্তুতি নেয়া হয়। তবে সে সময় নিয়ম ছিল কোনো পারমাণবিক হামলা শুরুর আগে তিনজন নেতৃত্ব দানকারী অফিসারকে একমত হতে হবে।

সাবমেরিনে থাকা ক্যাপ্টেন ও পলিটিক্যাল অফিসার টর্পেডো নিক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিলেও সেকেন্ড ইন কমান্ড অফিসার ভাসিলি আকিপভ এই আক্রমণে দ্বিমত পোষণ করেন। এতে প্রায় শুরু হতে যাওয়া পারমাণবিক যুদ্ধ থেমে যায়। কিন্তু মূল সংকট তখনো শেষ হয়নি।

ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মার্কিন সেনাবাহিনী ডেফকন-২ জরুরী অবস্থা জারি করে। সম্ভাব্য পারমাণবিক আক্রমন প্রতিহত করার জন্য সর্বোচ্চ জরুরী অবস্থা এটি। পাশাপাশি চলছিল কূটনৈতিক প্রক্রিয়া। ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন এটর্নি জেনারেল রবার্ট কেনেডি সেখানকার সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত ডুবেরিনের সঙ্গে দেখা করেন। প্রচন্ড বাকবিতণ্ডার পর তারা চুক্তি করেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইতালি ও তুরষ্ক থেকে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাটিগুলো অপসারণ করবে। এর বিনিময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবায় থাকা তাদের আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে আনবে। সেই সাথে এই চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র আর কখনো কিউবা দখল করবে না এমন প্রতিশ্রুতি দেয়।

সব মিলিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের তৎপরতা সফল হয়। রাষ্ট্রদূত ডুবেরিন মস্কোতে এক তারবার্তায় সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষের এমন সুযোগ আর হাতছাড়া করা ঠিক হবেনা মর্মে মতামত জানান। এই পরিপ্রেক্ষিতে পরের দিন ২৮ অক্টোবর সকাল ৯টায় ক্রুশ্চেভ কিউবা থেকে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র অপসারণের ঘোষণা দেন।

এভাবেই অবসান হয় টানা ১৩ দিনের উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থার। কিউবান মিসাইল ক্রাইসিসের এক ঘটনা কেনেডি ও স্ক্রুশ্চেভের কূটনৈতিক দক্ষতাকে সামনে নিয়ে আসে। এতে প্রতীয়মান হয় কেবল যুদ্ধ নয় কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমেও অনেক মারাত্বক সমস্যার সমাধান সম্ভব ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top