জীবন্ত পাথর বা রানিং রক এক ব্যাখ্যাহীন রহস্যের সৃষ্টি করেছে। অদ্ভুত এই জীবন্ত পাথর এর আরেক নাম হচ্ছে সেইলিং স্টোন। কোন প্রকার বল প্রয়োগ ছাড়াই এই পাথর এক যায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরে যেতে সক্ষম। আজকের প্রতিবেদনে আমরা এই জিবন্ত পাথরের রহস্য উন্মোচন করার চেষ্টা করবো।
জীবন্ত পাথর বা সেইলিং স্টোন কি?
প্রকৃতি রহস্য করতে ভালোবাসে। তাই তো বিচিত্র এই প্রকৃতির পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে হাজারো রহস্য, যার অধিকাংশই মানুষের কাছে আজও ব্যাখ্যাতীত। প্রকৃতির এই ব্যক্ষাহিন রহস্যগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে রানিং রক। রানিং রককে অনেকেই বাংলায় জীবন্ত পাথর বলে থাকেন। কারন এই পাথরের নিজ থেকে চলাফেরার খমতা আছে বলে মনে করা হয়। রানিং রক এর আরেক নাম হচ্ছে সেইলিং স্টোন।
সেইলিং স্টোন হচ্ছে মূলত সমুদ্র উপকূলে দেখা যায় এমন বড় আকৃতির পাথর। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে- আকৃতি যতই বড় হোক না কেন, এই পাথরগুলি মানুষ কিংবা অন্য কোন প্রাণীর সাহায্য ছাড়াই এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ক্রমশ সরে যেতে সক্ষম। স্থান পরিবর্তনের সময় পাথরগুলি পেছনে লম্বা ট্র্যাক ফেলে যায়। তাই গবেষকরা অনেকেই একে মুভিং রক বলে থাকেন।
জীবন্ত পাথর কিভাবে চলাফেরা করে?
সেইলিং স্টোন কখনও সোজা পথে এগোয় না, ডানে বা বায়ে খানিকটা তির্যক ভঙ্গিতে অগ্রসর হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল এবং ইউরোপের অনেক দেশের বালিময় সমুদ্র সৈকতে এমন পাথরের দেখা মেলে। পাথরের মাঝে এই গতি সঞ্চার হওয়ার সঠিক কারণ এখনও নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
বিজ্ঞানীদের ধারণা প্রচন্ড ঝড়ো বাতাস, সেই সাথে ভেজা ও পিচ্ছিল মাটির কারণে পাথরগুলি আস্তে আস্তে এক স্থান ছেড়ে অন্য স্থানে সরে যেতে থাকে। কিন্তু পাথরগুলি চলার সময় কখনও মানুষের চোখে পড়ে না কেন? ছোট ছোট নুড়ি পাথর হলে কথা ছিলনা, এমন বিশাল আকৃতির পাথর ঝড়ো বাতাসে সরে যাওয়াটা সহজ ব্যাপার নয়।
জীবন্ত পাথর সম্পর্কে গবেষকদের ধারণা
কিছু বিজ্ঞানী অবশ্য ধারণা করেন যে আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় উপকূলবর্তী অঞ্চলে মাটির অভ্যন্তরে মৃদু কম্পনের ফলে পাথরগুলি ক্রমশ ঢালু স্থানের দিকে সরে যায়। তবে কোন ব্যাখ্যাই পাথরগুলোর চলার পথে ট্র্যাক ফেলে যাওয়ার পেছেনে যুক্তিযুক্ত কারণ দেখাতে পারেনি। রানিং রক বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় যে সেইলিং স্টোন এর সন্ধান পাওয়া গেছে তার ওজন প্রায় ৩২০ কেজি।
জীবন্ত পাথর নিয়ে সাধারন মানুষদের ধারণা
বিজ্ঞানীরা যতই কারণ দর্শানোর চেষ্টা করুক না কেন, স্থানীয়রা মনে করেন এই রানিং রক বা জীবন্ত পাথর হচ্ছে সৌভাগ্যের প্রতীক। এরা সমুদ্র সৈকত ঘুরে ঘুরে পাহারা দেয় এবং উপকূলের অধিবাসীদের সামুদ্রিক বিপর্যয় থেকে বাঁচায়। অনেকে আবার রানিং রক এর চলার গতি থেকে আসন্ন সামুদ্রিক ঝড় সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা করে থাকেন। তবে দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতে এ ধরনের জীবন্ত পাথরের দেখা পাওয়া যায়নি এখনও। আপনি যদি এমন পাথরের দেখা পেতে চান, তাহলে ইউরোপ বা আমেরিকার কোন দেশের সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যেতে হবে।
আজকের মত তাহলে এ পর্যন্তই। ভাল থাকুন সবাই।
জীবন্ত পাথরের মতো অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে এক জীবন্ত পাহাড়। এই পাহাড় ক্ষনে ক্ষনে নিজের রঙ বদলাতে পারে।অদ্ভুত এই পাহাড়ের নাম হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার আয়ারস রক বা যাদুর পাহাড়।