বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্য পৃথিবীর সবচেয়ে হতবাক করা রহস্য এর মধ্যে অন্যতম। সৃষ্টির শুরুতে মানুষের আশে পাশে রহস্যের সীমা ছিলো না। কিন্তু যতই সময় গেছে, ততই মানুষ আস্তে আস্তে প্রযুক্তিতে উন্নত হয়েছে আর খুজে বের করেছে এই সব রহস্যের পেছনের কারণ। তবুও এমন কিছু রহস্যময় ঘটনা এখনো আছে যা মানুষের কাছে রয়ে গেছে ব্যখ্যাহীন। বিজ্ঞানীরা অবশ্য সম্ভাব্য কিছু ব্যখ্যা দিয়েছেন, তাও অতটা স্পস্ট নয়। এসব বিষয় আমাদের কাছে সুপার ন্যাচারাল বা অতিপ্রকৃত ঘটনা হিসাবে পরিচিত। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল তেমনই এক যায়গার নাম। বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল এর রহস্যের কথা জানবো।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এর অবস্থান
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল পৃথিবীর রহস্যময় স্থানগুলোর অন্যতম। এই অঞ্চলে এত বেশি রহস্যময় ঘটনা ঘটেছে, যা পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায়নি। বিজ্ঞানীরা অবশ্য ইতিমধ্যেই প্রমান করার চেষ্টা করেছেন যে কিছু প্রকৃতিগত ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য ছাড়া এই ট্রায়াঙ্গল অন্য সব এলাকার মতোই স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু বিষয় আজও অস্পষ্ট হয়ে রয়েছে।
বারমুডা ত্রিভুজের অবস্থান হচ্ছে আটলান্টিক মহাসাগরে। মোট তিনটি প্রান্ত দ্বারা এ অঞ্চলটি সীমাবদ্ধ বলে এর নামকরণ করা হয়েছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বা বারমুডা ত্রিভুজ। এ অঞ্চলটি যে তিনটি প্রান্ত দ্বারা সীমাবদ্ধ তার এক প্রান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফোরিডা, একপ্রান্তে পুয়ের্টো রিকো এবং অপর প্রান্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুডা দ্বীপ অবস্থিত। ত্রিভুজাকার এই অঞ্চলটির মোট আয়তন ১১৪ লাখ বর্গ কিলোমিটার বা ৪৪ লাখ বর্গ মাইল। এটি ২৫-৪০ ডিগ্রি উত্তর আংশ এবং ৫৫-৫৮ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।
পৃথিবীর সবচাইতে অভিশপ্ত স্থানগুলোর মধ্যে বারমুডা টায়াঙ্গল বা ত্রিভুজকে চ্যাম্পিয়ন বলে মনে করা হয়। কারণ এ যাবৎ এখানে যতো রহস্যময় ও কারণহীন দুর্ঘটনা ঘটার কথা শোনা গিয়েছে, অন্য কোথাও এতো বেশি এরকম দুর্ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করা হয়। এ জন্যে স্থানীয় অধিবাসীরা এ এলাকাটির নামকরণ করেছে পাপাত্মাদের ত্রিভুজ।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্য এর পেছনের কথা
এখানে প্রথম রহস্যময় ঘটনার কথা শোনা গিয়েছিল কলম্বাসের আমেরিকা অভিযানের সময়। কলম্বাস বিশাল জাহাজে চেপে তার নাবিকদের নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে যাত্রা করেছিলেন আমেরিকার উদ্দ্যেশ্যে। পথে তাদের বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল পার হয়ে যেতে হয়েছিল। ঐ ট্রায়াঙ্গেল এর যায়গাটুকু পাড়ি দেওয়ার সময় জাহাজের নাবিকেরা অদ্ভুত এক আলো দেখতে পান। সেই আলো পানির নিচ থেকে আসছে। মনে হচ্ছিল যেন পানির নিচে কেউ বিশাল এক মশাল জালিয়ে রেখেছে, যার আলোতে পানির নিচের জগত পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে। এই ঘটনা দেখে ভয়ে অনেক নাবিক জাহাজ থেকে লাফিয়ে পড়ে পালিয়েছিলেন। কলম্বাস আর কিছু সাহসী নাবিক হাল ধরে বসেছিলেন। তারা পরবর্তীতে ফিরে এসে এই অদ্ভুত ঘটনার কথা বিশ্ববাসীকে জানায়। সেই থেকে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলকে অভিশপ্ত যায়গা বলে ভাবা শুরু হয়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্য নিয়ে মানুষের তাই চিন্তার শেষ নেই।
এই ঘটনার পর আরো অসংখ্যবার বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল অঞ্চলে রহস্যময় ব্যাক্ষাহিন ঘটনা ঘটেছে। এ অঞ্চলের রহস্যময়তার একটি দিক হলো, কোনো জাহাজ বা বিমান এই ত্রিভুজ এলাকায় প্রবেশ করার কিছুণের মধ্যেই তা বেতার তরঙ্গ প্রেরণে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং এর ফলে জাহাজটি উপকূলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়। একসময় তা দিক নির্ণয় করতে না পেরে রহস্যজনকভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। মার্কিন নেভির সূত্র অনুযায়ী, গত ২০০ বছরে এ এলাকায় কমপে ৫০টি বাণিজ্যিক জাহাজ এবং ২০টি বিমান চিরতরে অদৃশ্য হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৯৬৮ সালের মে মাসে হারিয়ে যাওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক ডুবোজাহাজের ঘটনাটি সারা বিশ্বে সবচাইতে বেশি আলোড়ন তুলে।
১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই পাচটি বোমারু বিমান প্রশিক্ষণ চলাকালীন হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাবার মুহূর্তে বৈমানিকদের একজন অতি নিম্ন বেতার তরঙ্গ পাঠাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার এই বেতার বার্তাতে বারবার একটি কথাই বলা হচ্ছিলো, 'সামনে প্রচণ্ড কুয়াশা। আমরা কিছু দেখতে পাচ্ছি না। কোথায় যে যাচ্ছি তাও বুঝতে পারছি না। আমাদেরকে উদ্ধার কর।' এ বার্তা পাওয়ার পরপরই মার্কিন বিমান বাহিনীর একটি উদ্ধারকারী টিম এ অঞ্চলের দিকে রওয়ানা হয়। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে তারাও নিখোঁজ হয়ে যায়। এভাবে এ এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ লোক প্রাণ হারিয়েছে বলে মনে করা হয়। সবচাইতে আশ্চর্যের বিষয় হলো, হারিয়ে যাওয়া এসব যানগুলোর কোনো ধ্বংসাবশেষ পরবর্তীকালে অনেক খুঁজেও পাওয়া যায় নি। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্য গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল রহস্য এর বর্তমান পরিস্থিতি
মার্কিন সামরিক বাহিনী এ এলাকায় বেশ কিছু গবেষণা চালিয়েও তেমন কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি। অনেকে মনে করেন, নাবিকদের ভাষ্য অনুযায়ী এ এলাকায় মাঝে মাঝে বেতার তরঙ্গ হয়তো হারিয়ে যায়, তবে তা সবসময়ের জন্য নয়। তবে গবেষকরা হারিয়ে যাওয়া যানের ধ্বংসাবশেষ না পাওয়ার যে ব্যাখ্যাটি তারা দিয়ে থাকেন সেটি হলো, আটলান্টিক মহাসাগরের মধ্যে একটি অন্যতম গভীর স্থান হচ্ছে এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল। এমনকি আধুনিক ও প্রশিক্ষিত ডুবুরি সরঞ্জাম দিয়ে এই অঞ্চলে উদ্ধার কাজ চালানো এখনো দুরূহ। স্যাটেলাইট প্রযুক্তির কারণে ধ্বংসাবশেষ কোথায় আছে তা হয়তো জানা সম্ভব, কিন্তু সেগুলো উদ্ধার করা ততোটাই কঠিন। ফলে এ এলাকায় কোনো ধ্বংসাবশেষ নাও পাওয়া যেতে পারে।
এই ছিল বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য নিয়ে আমাদের প্রতিবেদন। আগামীতে নতুন কোন রহস্য নিয়ে হাজির হয়ে যাব আপনাদের সামনে। ভালো থাকুন সবাই।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের মতো আরও একটি অভিশপ্ত স্থান হচ্ছে অভিশপ্ত বাল্ট্রা দ্বীপ। যেখানে ঘটে যাওয়া সব রহস্যের কোন সমাধান কেউ এখনও করতে পারেনি।