আমরা অনেকেই কম্পিউটারের ওয়ালপেপারে বা ক্যালেন্ডারের পাতায় একটা দারুন সৌন্দর্যের দৃশ্য দেখেছি। সমুদ্রের পানির মধ্যে বিশালাকার নীল রঙের গর্ত দেখা যায়। এই গর্তের নাম হচ্ছে দ্যা গ্রেট ব্লু হোল বা বিশালাকার নীল গর্ত। অনেকেই হয়তো দেখে ভাবতে পারেন এই ছবিটা কম্পিউটারের গ্রাফিক্সের কাজ। কিন্তু আসলে তা নয়! পৃথিবীর বুকে এমন অদ্ভুত আর অসাধারণ সুন্দর একটি যায়গা আসলেই আছে। আজ আমরা এই দ্যা গ্রেট ব্লু হোল নিয়েই কথা বলব।
দ্যা গ্রেট ব্লু হোল
দ্যা গ্রেট ব্লু হোল এর অবস্থান মধ্য আমেরিকার দেশ বেলিজ এর সমুদ্র উপকূলে। এটি একটি বৃহৎ সমুদ্রগর্ভস্থ গর্ত। বেলিজ সিটি থেকে প্রায় ৬০ মাইল দূরে বেরিয়ার রিফ রিজার্ভ সিস্টেম অবস্থিত এ এই গর্তের অবস্থান। এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র গর্ত হিসাবে ধরা হয়। এটির আকৃতির প্রায় বৃত্তাকার, ব্যাসার্ধ ৩০০ মিটার (৯৮৪ ফুট) এবং ১২৪ মিটার (৪০৭ ফুট) গভীরতা রয়েছে।
সমুদ্রের বুকে কীভাবে সৃষ্টি হল এই গর্ত?
ধারনা করা হয় ৬৫ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে শেষবারের মতো যখন বরফ রাজত্ব করছে, পৃথিবীর সব পানি জমে জমে জড়ো হয়েছিল মেরু অঞ্চলে। সমুদ্রপৃষ্ঠও তাই তখন ছিল এখনকার চেয়ে অনেক নিচুতে। বেলিজে তখন সমুদ্রপৃষ্ঠ ছিল এখনকার চেয়েও আরো ১৫০ মিটার নিচুতে। তখন ক্যালসিয়াম কার্বনেট জাতীয় পদার্থ জমে তৈরি হয় পাথর। আর সেই পাথর দিয়ে সৃষ্টি হয় কেভের বিশাল কাঠামো। কিন্তু যখন বরফ আবার গলতে শুরু করে, সাগরের পানির উচ্চতাও বাড়তে শুরু করল। পানির নিচে ডুবে যায় সেই কাঠামো। মোটামুটি আজ থেকে ১০ হাজার বছর আগে পুরো কেভ নেটওয়ার্কই একেবারে পানির নিচে ডুবে যায়। আর তখনই কয়েক জায়গার পাথর ভেঙে সৃষ্টি হয় এই ব্লু হোলগুলো।
কেমন দেখতে এই গর্তের ভেতরটা?
হোলের ভিতর পুরো আলাদা একটা জগত চলছে। এই জায়গায় দেখার হচ্ছে স্কুবা কতিপয় জলজ প্রাণী, যারা অতল গভীরে থাকে। নানা বিরল প্রজাতির প্রচুর প্রাণী যা শুধুমাত্র এই স্থানে পাওয়া যায়। সেখানে যে কতো আজব আজব প্রাণী আছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই! এখনো চলছে নতুন প্রাণী খোঁজার প্রক্রিয়া। এটি খুব পর্যটক প্রিয়, প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ আসে একবার এই গ্রেট ব্লু হোলকে দেখতে।