What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দেখি নাই ফিরে (উপন্যাস) (3 Viewers)

মিত্রা ফাইল খুললো, অনেকগুলো দলিল। তার মধ্যে থেকে একটা খাম বের করে নিয়ে এলো। একটা ছবি আমার হাতে দিল। ফটোটা লাল হয়ে গেছে। আমি কাছে নিয়ে এসে ভালো করে দেখলাম। বছর বাইশ তেইশ বয়স হবে মেয়েটার। ছবিটা স্টুডিওতে তোলা। বড়মার মুখশ্রীর সঙ্গে কিছুটা মিল আছে।
আমি অনেকক্ষণ ফটোটা লক্ষ করলাম। মিত্রা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
চিনতে পারছিস।
মনে হচ্ছে বড়মাকে যদি এই বয়সে নিয়ে যাই, তাহলে ছবিটার সঙ্গে বড়মার মুখশ্রী মিলে যাবে।
মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরে ঠোঁটে চুমু খেলো।
দ্যাটস রাইট বুবুন, তুই একেবারে ঠিক কথা বলেছিস।
তাই!
মিত্রা চোখের ভাষায় আর ঘাড় দুলিয়ে, হ্যাঁ বললো।
তুই পেলি কোথায় ?
প্রশ্ন করবি না। খালি দেখে যা। আমি তোর মতো হতে পারছি কিনা বল।
এবার এই ছবিটা দেখ।
বিবাহ বাসরে তোলা ছবি। সবে বিয়ে হয়েছে। একজন মিত্রার বাবা আর একজন সেই ভদ্রমহিলা মানে বড়মা। তারমানে বড়মার সঙ্গে মিত্রার বাবার বিয়ে হয়েছিল! আমি মিত্রার দিকে তাকালাম। মিত্রা আমার চোখের দিকে জুল জুল করে চেয়ে আছে। আমি কি বলি।
তোর বাবার সঙ্গে বড়মার বিয়ে হয়েছিল!
ইয়েস ইয়েস বুবুন তুই একেবারে ঠিক।
মিত্রার চোখ দুটো চক চক করে উঠলো।
তুই প্রমাণ পেলি কি করে।
মিত্রা আমাকে জড়িয়ে ধরলো, তোকে সব বলবো বুবুন, তুইযে আমার সব, তোকে বলতে না পারলে আমি শান্তিতে মরতেও পারব না।
এই দেখ একটা পোস্ট কার্ড।
হাতে নিয়ে পরলাম। ফর্মাল চিঠি কন্যাদায় গ্রস্ত পিতা আর একজনের পুত্রের সঙ্গে তার মেয়ের বিবাহ দিতে চান। নিচে বসিরহাটের ঠিকানা। আর মিত্রাদের বাড়ির ঠিকানা।
পড়লি।
আমি মিত্রার দিকে তাকালাম।
জানিস বাবা এরপর বড়মাকে দেখতে যান, পছন্দ হয়, বিবাহ হয়। বাবা তার দিনলিপিতে এটা লিখে গেছে। তোকে পরাব। তারপরের ঘটনা তুই জানিস। বড়মা পীর সাহেবের থানে নিজে মুখে সব স্বীকার করেছে। তোকে নতুন করে কি বলবো। বাবা আর কোনদিন বিবাহ করেন নি।
আমি চমকে মিত্রার দিকে তাকালাম।
ভাবছিস আমি পৃথিবীর আলো দেখলাম কি করে।
আমি এক দৃষ্টে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
আমি তোকে ফাঁকি দিতে চাইনি বুবুন, তুই বিশ্বাস কর। আমি ভীষণ লোভী।
মিত্রা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো।
আমি মিত্রাকে কাছে টেনে এনে বুকে জড়িয়ে ধরলাম।
মিত্রা আমার বুকে মাথা রেখেছে। চোখ বন্ধ। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে। আমি মিত্রার গালে আস্তে করে থাপ্পর মারলাম। মিত্রা চোখ খুললো।
কিরে, শরীর খারাপ লাগছে।
মিত্রা অস্ফুট কিছু বলতে চাইল, বলতে পারল না।
আমি জলের বোতলটা কাছে টেনে নিয়ে মিত্রার চোখে জল দিলাম। আমার পরনের কাপরটা দিয়ে মুছিয়ে দিলাম।
কষ্ট হচ্ছে।
মিত্রা আমর দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে।
যে কথা ছ’বছর ধরে নিজের বুকের মধ্যে বয়ে বেরিয়েছি, আজ তোকে বললাম। তুই ছাড়া দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি জানে না।
একটুক্ষণ থেমে।
বুকের ভেতরটা ভীষণ ব্যাথা করছে, জানিস বুবুন।
হুকটা একটু খোল আমি হাত বুলিয়ে দিই।
না থাক, একটু সহ্য করতে শিখি। তুই আমার থেকে আরও কষ্ট পেয়েছিস।
আমি মিত্রার মুখটা বুকে জড়িয়ে ধরলাম।
নারে বুবুন সত্যি। এখন তুই আছিস, আমার আর ভয় নেই। আমার আর কিছু হবে না, দেখিস।
আমার নিজেরও খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু কি করবো, প্রত্যেক মানুষের জীবনে কিছু কষ্ট আছে। যা সম্পূর্ণ ভাবে তার নিজস্ব। সেটা ভাগ করে নেওয়া যায় না। হয়তো অনুভব করা যায়। তার কষ্টের সমব্যাথী হওয়া যায়। কিন্তু শেয়ার করা যায় না।
জানিস বুবুন, বড়মা যে দাদার সঙ্গে থাকেন, বাবা সেটা জানতেন।
উনি জানতেন! তা সত্বেও….
বাবার দিনলিপি তার প্রমাণ।
জানিস, বাবা মারা যাবার আগে আমার আর মার মধ্যে প্রপার্টি ভাগ করে দিলেন।
মিত্রা আমার ডানহাতটা ওর হাতে তুলে নিল।
তখনি আমার একটা খটকা লেগেছিল। কিন্তু কাউকে বলিনি। বাবা আমার বয়ফ্রেন্ড। বাবার কাছে আমি কখনো কনো কথা কোনদিন গোপন করিনি। সিনেমা হলে তোর হাত নিয়ে যেদিন বুকে রেখেছিলাম বাবাকে এসে অকপটে সব স্বীকার করেছি।
বাবা হেসে বলেছিলেন ছেলেটাকে তুমি একবার আমাকে দেখাতে পার। আমি মাথা দুলিয়ে বলেছিলাম পারব। উনি বলেছিলেন কবে ? আমি হাসতে হাসতে বলেছিলাম, ও ভীষণ মুডি, আমার ইচ্ছের ওপর আসবে না। বাবা হেসেছিলেন। একটু মনে করে দেখ তারপর তোকে প্রথম আমাদের বাড়িতে নিয়ে গেছিলাম।
স্বরস্বতী পূজোর দিন।
এইতো তোর মনে আছে।
সেইদিন বাবার আচার আচরণে তুই কিছু বুঝতে পেরেছিলি।
কাঁচা মন, তখন এতো সব ঘোর-প্যাঁচ বুঝতাম না। সত্যি কথা বলতে কি তখন আমার চোখে সব রঙ্গীন। গ্রাম থেকে একটা ছেলে শহরে এসেছে। কেরিয়ার তৈরি করতে হবে। কলেজে দাদা হতে হবে, একটা হামবড়ক্কি ভাব। মাঝে মাঝে সেই দিন গুলর কথা মনে পরলে হাসি পায়।
বাবা তোকে দেখার পর, তোর সঙ্গে কথা বলার পর বলেছিলেন আমার অমত নেই।
মিত্রা আমার দিকে তাকাল।
তুই একটু ভেবে দেখ, তখন আমাদের সেকেন্ড ইয়ার চলছে।
হ্যাঁ।
আমাদের ঘনিষ্ঠতা এরপর আরও বেড়েছে। তুই আমাদের বাড়ি এসেছিস কম, কিন্তু আমি তোর হোস্টেলে প্রায় গেছি।
ঠিক।
জানিস বুবুন, বাবা মারা যাবার পর আমি নিজেকে নিজে আবিষ্কার করলাম, আমি কে ?
কলেজে পড়ার সময় আমি জানতাম না কে আমার মা ? ছোট থেকে জানতাম আমার মা আমার জন্মের পর আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন। আমি জ্যেঠিমনির কাছেই মানুষ। জ্যেঠিমনি আমাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন।
মিত্রা!
হ্যাঁ। বুবুন তুই বিশ্বাস কর। আমি তোকে….
মিত্রার চোখ দুটো জলে টল টল করছে। আমি ঠোঁট দিয়ে তা মুছে দিলাম।
তুই আমার মা বলে যাকে আজ সকালে প্রণাম করলি, সে আমার মা নয়।
আমি মিত্রার চোখের দিকে স্থির চোখে তাকালাম। কি বলতে চায় মিত্রা ?
আমি বাবার ঔরস জাত জ্যেঠিমনির সন্তান। বাবার সঙ্গে জ্যেঠিমণির অবৈধ সম্পর্ক ছিল।
আমি মিত্রার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছি।
একমাত্র বাবা আর জ্যেঠিমনি ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ জানত না। আমি হওয়ার পর বাবা আইনত জ্যেঠিমনির কাছ থেকে আমাকে দত্তক নিয়েছিল।
মিত্রা থামলো।
তুই বিশ্বাস কর আমি এতোসব জেনেছি বাবার দিনলিপি পরে। বাবা ডে টু ডে ডিটেলসে সব লিখেছে। এমনকি জ্যেঠিমণির সঙ্গে কবে কবে সেক্স করেছে তাও।
জ্যেঠু।
জ্যেঠু আমার হওয়ার মাস তিনেক আগে মারা গেছেন। সেটা সুসাইড ছিল।
কেন ?
তুই বুঝে নে।
তোর যে আর এক বোন ছিল।
ওটা জ্যেঠুর।
তাহলে তোর মা বলে যাকে দেখেছি ?
উনি আমার বাবার সেক্স পার্টনার। বলতে পারিস ক্যাশ বাক্স। আমি যেমন ছিলাম শয়তানটার। বাবার সঙ্গে ওনার বয়সের ডিফারেন্স প্রায় কুড়ি পঁচিশ বছরের। ওনার সঙ্গে বাবার আলাপ ক্লাবে। পয়সা ওয়ালা ঘরের মেয়ে। বাবা কনোদিন ওনাকে বিয়ে করেন নি। এই বাড়িটা কিনে উনি এখানে ওনাকে রেখেছিলেন।
কিন্তু আমি তো ওনাকে ও বাড়িতে দেখেছি।
দাদু খুব স্ট্রিক্ট প্রিনসিপালের লোক ছিলেন। দাদু যতদিন বেঁচেছিলেন ততদিন ওনার প্রবেশাধিকার ছিল না। দাদু মারা যাবার পর উনি ওই বাড়িতে প্রবেশাধিকার পান।
তারপর।
এনার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর জ্যেঠিমনির সঙ্গে বাবার দূরত্ব বেড়েছে। জ্যেঠিমনি প্রথমে আমাকে দিতে চান নি। পরে দাদুর চাপে আর বাবার ব্ল্যাকমেলিংয়ে আমাকে দিতে বাধ্য হন। হাঁড়ি আলাদা হয়েছে। তুই ওপর থেকে কিছু বুঝতে পারিস নি।
তুই কাকে মা বলতিস।
জ্যেঠিমনিকে। ওনার কাছেই তো ছোট থেকে মানুষ।
তাহলে এই মা।
কলেজ লাইফে এসে পেলাম।
তখন তুই কিছু বলিসনি।
একথা কাউকে বলা যায়। আমার বাবা বিয়ে করেছেন।
তাহলে তুই তোর বাবাকে ভালো লোক বলিস কি করে ?
শোন আমার কথা।
আমি মিত্রার মুখের দিকে তাকালাম।
বড়মার সঙ্গে ওই ব্যাপারটা ঘটে যাবার পর। বাবা মেন্টালি ডিসব্যালেন্সড হয়ে যান। তারপর জ্যেঠিমনির জন্য সুস্থ হন। বলতে পারিস তারপর থেকে জ্যেঠিমনি বাবা ক্লোজ হয়ে পরেন।
জ্যেঠু কি করতো।
পারিবারিক ব্যবসা, কাগজ। তখন শেয়ার অত্যন্ত কম ছিলো। পাঁচ পার্সেন্ট।
তোর বাবা কি করতেন।
কাগজ দেখতেন। আর শেয়ারের কারবার। বলতে পারিস ব্রোকার। আমার তথাকথিত মার পরিবারেরও শেয়ারের ব্যবসা। বাবার প্রচুর উচ্চাকাঙ্খা ছিল। বাবা মার বাড়ির সম্পত্তি পায়। কাগজের ভাগটাও কিছুটা সেই পরিবারের।
মানে!
আমার মার পরিবার দামানি। ওরা অবাঙালি।
তারপর।
বাবা মার কাছ থেকে তার সম্পত্তি জোড় করে লিখিয়ে নেন। মানে কাগজের ভাগ। তারপর কাগজটাকে আস্তে আস্তে কুক্ষিগত করেন। আমাদের পরিবারের ফাইভ পার্সেন্ট শেয়ারও নিয়ে নেন। বাড়িটা জ্যেঠিমনিকে ছেড়ে দেন।
টোটাল প্রপার্টি!
হ্যাঁ ফাইভ পার্সেন্টের যা মূল্য।
বাবা জানতেন বড়মা অমিতাভদার স্ত্রী হিসাবে অমিতাভদার কাছে থাকেন। দাদা দামানিদের খুব প্রিয় মানুষ ছিলেন। মিঃ দামানি আর আমার দাদু দুজনে খুব বন্ধু মানুষ। মিঃ দামানি দাদুকে শেয়ারটা কিনিয়ে দিয়েছিলেন। ওদের হাতেই সিংহভাগ শেয়ার ছিল। বাকিটা আর তিন চারজনের কাছে।
তারপর।
বাবা অমিতাভদাকে কব্জা করার জন্য ছলে বলে কৌশলে সব শেয়ার কিনে নিলেন। বলতে পারিস ঘুরিয়ে বড়মাকে শাস্তি দান। কিন্তু মার বাবা আমার মামাদাদু খুব ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন তা করতে দেন নি। বাবা মারা যাবার বছর খানেক আগে মামাদাদু মারা যান। বাবা দামানিদের পুরো শেয়ারটা নিয়ে নেয়।
তখন বাবার অনেক পয়সা। দারুণ প্রতিপত্তি। কাগজটা বাবা পুরো পুরি কব্জা করে ফেলেছেন। কিন্তু আমার তথাকথিত মার সঙ্গে বাবার দূরত্ব বেড়ে যায়। মা আমাকে একেবারে সহ্য করতে পারতেন না। বাবার সঙ্গে প্রায় ঝগড়া করতেন। সেই সময় বাবার ক্যানসার ধরা পরলো। মার নতুন বন্ধু ডাক্তারের প্রবেশ। মার সঙ্গে রেগুলার ঝগড়া। বাবার অসহায় মুখটা মনে পরে যায়।
জ্যেঠিমনির কাছে যাই। দু’একদিন এসেছিলেন। মা বাবার অমতে জোর করে সেই শয়তানটার সঙ্গে আমার ম্যারেজ রেজিস্ট্রি করায়, তলারও খাবে গাছেরও কুরবে। এটা বলতে পারিস বাবার প্রতি মার রিভেঞ্জ। আমি তখন দিশেহারা। এক কথায় বলতে পারিস বলির পাঁঠা। আমি না পারছি ও বাড়িতে ফিরে যেতে, না পারছি এ বাড়িতে থাকতে। তখন আমার মনের কি পরিস্থিতি তোকে বোঝাতে পারব না।

তারপর।
 
বাবা মারা গেলেন।
ব্যাশ আমি মা শয়তানটার হাতের পুতুল। কাগজের সম্পত্তি আর কিছু প্রপার্টি আমার নামে ছিলো। মিঃ দামানি মানে আমার দাদুও আমাকে কিছু প্রপার্টি লিখে দিয়ে যান। শেষে মা শয়তানটার চাল বুঝতে পারলেন। তাই আমার নামে নিজের প্রপার্টির কিছুটা লিখে দিয়ে যান।
তোর মায়ের কোন ভাই ছিল না ?
না। মা দাদুর এক মাত্র মেয়ে।
দাদুর অবর্তমানে বাড়িটার কি হাল হোল ?
রি মডেলিং করে নার্সিংহোম হয়েছে।
তারপর।
এরপর পুরনো বাড়ির সঙ্গে কনো সম্পর্ক রইলো না। বাবা থাকতে যেটুকু ছিল বাবা মারা যাবার পর তা একদম তলানিতে ঠেকে গেল। তারপর সব শেষ। আমি তখন গা ভাসিয়ে দিয়েছি। শয়তানটা মার শরীর খারাপের বাহানায় স্লো-পয়জন করে মেরে দিল।
মরার আগে মার নামে যেটুকু প্রপার্টি ছিল নিজের নামে সই করিয়ে নিল। আমি তখন ওর হাতের পুতুল। ওর ভাগ্না সুনীত কাগজ দেখে। আমি খালি সই করি। কাগজে একটু একটু যেতে শুরু করেছি। বাবার ডাইরী পরে সব জেনেছি। নিজের মনকে শক্ত করেছি।
একদিন কাগজের একটা অনুষ্ঠানে বড়মাকে দেখলাম। সেদিন বড়মা আমাকে দেখেন নি। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম এই ভদ্রমহিলা আমার বাবার জীবনটা নষ্ট করেছেন। আমার বাবা এতো খারাপ লোক ছিলেন না। আমি ওনাকে সঠিক শাস্তি দেব। বলতে পারিস আমিও প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে উঠলাম।
যে ভাবেই হোক উপরে ফেলতে হবে। ফার্স্ট টার্গেট মল্লিকদা অমিতাভদা। সেই ভাবে প্ল্যান প্রোগ্রাম তৈরি করতে শুরু করলাম। দেখলাম সুনীতদা সম্পাদক হওয়ার জন্য উঠে পরে লাগল। আমি সুযোগটাকে কাজে লাগালাম।
এই সময় ধুমকেতুর মতো তোর সঙ্গে একদিন ক্লাবে দেখা। তুই আমাকে এড়িয়ে যেতে চাইলি। বাবার কথাটা মনে পরে গেল। অনি এলে ওকে কখনো ফিরিয়ে দিবি না।
তোর বাবা জানতেন না আমি ওই কাগজে আছি।
জানলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত। তুই জানতিস, বাবা ওই কাগজের মালিক ?
না।
বাবা বেঁচে থাকাকালীন মা যখন চাপ সৃষ্টি করছে শয়তানটার সঙ্গে রেজিস্ট্রীর জন্য, তখন তোর খোঁজ বার বার করেছি। শুভঙ্করবাবুর কাছে গেছি। কার কাছে যাইনি তোর খোঁজ নিতে। লজ্জার মাথা খেয়ে শেষমেষ ড. রায়ের কাছেও একবার গেছি।
প্রতিটা জায়গা থেকে হতাশ হয়ে ফিরেছি। তারপর নিজের মনকে বুঝিয়ে সব মেনে নিয়েছি। তখন তোর মিত্রা বাজারের দেহপসারিণীর থেকে খুব একটা কম যায় না। বলতে পারিস সফিসটিকেটেড বাজারী মেয়ে।
আমি মিত্রার মুখটা চেপে ধরলাম। মিত্রা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। আমার বুকে মুখ গুঁজলো। বেশ কিছুক্ষণ কাঁদার পর ও থামল।
আজ বিগত দশ মাসে আমার জীবনটা একশো আশি ডিগ্রী ঘুরে গেছে।
জানিস বুবুন তখন রেগুলার ড্রিঙ্ক করতাম। বেলেলাপণার চূড়ান্ত। যে কোন পুরুষকে জড়িয়ে বলরুমে ড্যান্স করতাম। ভাবতাম এ ভাবেই আমার জীবনটা শেষ করে দিতে হবে। কাগজের ব্যাপার তখন কিছু বুঝতাম না। বুঝেও বা লাভ কি। তখন আমার পার-ডে হাত খরচ পাঁচ হাজার টাকা। বাকি সব বাদ দে।
তোর খোঁজ খবর নিতে শুরু করলাম। দু’তিনবার দাদাকে ডেকে পাঠালাম। জানলাম দাদা শুভঙ্করবাবুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। শুভঙ্করবাবুর থ্রু দিয়ে তুই কাগজে এসেছিস। কিন্তু তুই তখন চরম বহেমিয়ান জীবনযাপন করছিস। তোকে কিছুতেই ধরতে পারছি না।
প্রতিজ্ঞা করলাম তোকেও কাগজ থেকে সরিয়ে দেব। সুনীতদা বারণ করলো। বললো অনির নিজস্ব একটা পাঠক আছে। ওকে সরালে আমাদের কাগজের ক্ষতি। তার চেয়ে বরং ওকে প্রসার করা হোক।
তবু আমি রিজিড থাকলাম। খোঁজ নিলাম। তুই তখন ভাইজ্যাক গেছিস। ওই পনেরো দিন তোর আর্টিকেল আমি রেগুলার পরেছি। তোর ধার আর ভারের কাছে আমি মাথা নত করেছি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম। আমাদের কাগজে তোর মতো সোর্স কারুর নেই।
তুই এখনো সেরকম একরোখা। স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড। একমাত্র অমিতাভদা ছাড়া তুই কাউকে অফিসে পাত্তা দিসনা। যেরকম তোকে কলেজে দেখেছি। ড. রায় ছাড়া কাউকে পাত্তা দিতিস না। বুবুন এখনো ডেয়ার ডেভিল। বুবুনের যে গুণটা আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছিল।
তোর ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকলাম। তখন বাবার ছবির কাছে বসে প্রতিদিন ড্রিঙ্ক করতাম, আর বলতাম বাবা আমাকে পথ দেখাও, বুবুনকে আমার জীবনে ফিরিয়ে নেব কিনা। বাবা কোনদিন না বলে নি।
তুই ফিরে এলি। প্রথম রিটার্ন পেলাম তোর কাছ থেকে। তুই আমার ডাকে সারা দিলি না। তুই সুনীতদাকে এক কথায় উড়িয়ে দিলি। সবাই মেনে নিল, তুই খালি বললি তুই ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে বসবি। বুঝলাম সব ঠিক আছে। লোহা লোহাকে কাটতে পারবে।
মনকে শায় দিলাম অন্ততঃ একটা লোক আমার পাশে দাঁড়াতে পারে। তোকে জড়িয়ে ধরলাম। সেখানেও শয়তানটা সব বুঝতে পারল। তখন দুটো পথ বেছে নিলাম যে কনো মূল্যে তোকে আমায় ফেরত পেতে হবে। তাতে যা হয় হোক।
ওকে বললাম বুবুনকে আমার চাই। ওকে আমি কাগজের শেয়ার হোল্ডার করবো। তখন শয়তানটা বারাসতের একটা বিশাল প্রপার্টি আমার কাছ থেকে লিখিয়ে নিল। ওটা দামানিদের প্রপার্টি ছিল। দাদু আমাকে দিয়েছিলেন।
দুই তোমাকে ডিভোর্স দিতে হবে। দ্বিতীয়টা ও মেনে নিল না। বরং কাগজের নামে লোন নিয়ে, ও আর মল সব টাকা আত্মসাৎ করে নিল। ইসলামভাইকে সেই সময় আমি দেখি। ইসলামভাই তখন ওদের অপারেটর।
টোডি।
ওদের একটা গ্রুপ আছে। টোডিও বড় ব্যবসায়ী। আমাকে ওরা টোপ হিসাবে ব্যাবহার করলো। প্রথমে বুঝে উঠতে পারি নি। পরে যখন বুঝলাম, তখন সব হাতের বাইরে। দেহটার আর কিছু নেই বুঝলি।
মিত্রা থামল।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে।
তোর মনটা খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার কথা শুনতে শুনতে।
একটুও না।
তুইতো আজ একটুও রেগে যাচ্ছিস না। তোর চোখের রং একটুও বদলে যাচ্ছে না।
তুই বল, আমি শুনছি।
আর কি শুনবি, সবই তুই জানিস।
বড়মা, আজকের বিয়ে।
মিত্রা আমার কোল থেকে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমার জেদ বুবুন।
তোর জেদ!
হ্যাঁ।
তোর ডাকে যেদিন প্রথম শয়তানটাকে নিয়ে দাদার বাড়িতে গেলাম সেদিন বড়মাকে দেখে জ্যেঠিমনির কথা মনে পরে গেল। যিনি আমাকে ন’মাস দশদিন গর্ভে ধারন করেছিলেন। একজন স্নেহময়ী মা। বিশ্বাস কর সেদিন থেকে প্রতিহিংসা পরায়ণ মনোভাবটা মন থেকে আস্তে আস্তে উবে গেল।
আমি তোর আত্মশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করলাম। ধীরে ধীরে নিজেকে ভেঙে নতুন করে গড়তে শুরু করলাম। নতুন জীবন দেখালি তুই। তুই কিরকম মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেলে আকাশে উড়িস। তোর ওখানে গিয়ে তোর প্রতি সকলের ভালবাসা আমাকে পাগল করে দিল। আমার প্রতি তোর ভালবাসা যে তখনো অটুট, সেটা বুঝতে পেরে নিজে পাগল হয়ে গেলাম। তোর সমস্ত কথা মেনে নিতে শুরু করলাম।
মিত্রা একটু থামল।
বার বার তোর খোঁজ নিয়েছি। তুই সেই শয়তানটার মতো মুখোশ ধারী কিনা। প্রত্যেক বার তোর কাছে হেরে গেছি। তুই কাকার অপারেশনের পর দেশ থেকে ফিরে এসে পাগলের মতো হয়ে গেলি। আমি সেই সময় শয়তানটার কাছে বার বার গেছি। সুনীতদাকে বলেছি তোমরা এটা কি করছো। ওরা তোকে মারবার জন্য উঠে পরে লেগেছে।
তারপর যখন শুনল তুই ওদের থেকেও ইসলামভাই-এর খুব কাছের লোক, তখন ওরা গুটিয়ে গেল। সেই সময় আমি স্বার্থপরের মতো একটা চাল চাললাম। বললাম আমি বুবুনকে সামলাতে পারি, যদি তুমি আমাকে ডিভোর্স দাও। গিভ এন্ড টেক পলিসি।
এক কথায় রাজি হয়েগেল। সময় নষ্ট করিনি। নিজের পরিচিত উকিল ঠিক করে ফার্স্টক্লাস ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে মিউচ্যুয়াল ডিভোর্স নিলাম। কাগজ ওর হাতে দিলাম না। আমার কাছে রাখলাম। আমি তখন মুক্ত বিহঙ্গ। তোকে গ্রহণ করা খালি সময়ের অপেক্ষা।
নিজের আনন্দটুকু তোর সঙ্গে শেয়ার করবো তার কনো উপায় নেই। তোকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বার বার বড়মার কাছে ছুটেগেছি, কোন দিশা পাই নি। ভেবেছি বড়মা তোকে তার নিজের বাড়িতে রেখেছে।
বিশ্বাস কর সেই সময় ওই ঠিকানা ধরে বড়মার বসিরহাটের বাড়িতেও একদিন গেছি। যদি তুই ওখানে থাকিস। ব্যার্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এসেছি।
মিত্রা হাঁফাচ্ছে।
তখন জানতাম না। তুই বড়মার সম্বন্ধে কিছুই জানিস না। হঠাৎ একদিন অফিসে আবিষ্কার করলাম, যাদের ভয়ে আমি সিঁটিয়ে থাকতাম, তার সব কেঁদো বাঘ হয়ে গেছে। দিনরাত আমাকে তেল দিচ্ছে। আমি কোন কাজে অনড় থাকলে ভয় দেখাচ্ছে তোকে নিয়ে।
তখন আমার মনের পরিস্থিতি কি তোকে বোঝাতে পারব না। যাকে আমি খড়কুটোর মতো ধরে বাঁচতে চাইলাম সেও আমাকে বুঝলো না। তোর ওপর তখন আমার ভীষণ রাগ। তারপর সেইদিন এলো। একদিনে তুই সব ওলট পালট করে দিলি। কি আনন্দ হচ্ছিল। সেই আনন্দটুকু তোর সঙ্গে শেয়ার করবো ভেবেছিলাম। তুই কারুর ডাকে সারা দিলি না। চলে গেলি।
সেইদিন দুপুরে ও ডেকে পাঠাল। ও আর মল চূড়ান্ত অপমান করলো।
এক কথায় বলতে গেলে আমাকে শকুন দিয়ে ঠুকরে খাইয়ে দেবে।
মনকে বোঝালাম, ওরা ভয় পেয়েছে। তাই এই সব কথা বলছে। নরমে গরমে আমার কাছ থেকে ব্ল্যাঙ্ক স্টাম্প পেপারে সই করাতে চাইল পেয়ারলেস ইনে বসে। আমি করলাম না। তখন আর জীবনের পরোয়া করি না। বেশি কি করতে পারে মেরে দেবে। সে ওরা পারবে না। বুবুন এখন আমার পাশে আছে। তবু মনে ভয়। চলে গেলাম ক্লাবে, বেহেড মাতাল হলাম।
হেসে ফেললাম।
হাসলি যে।
তারপরই তো থাপ্পর।
মিত্রা ঝট করে উঠে বসে আমার গালে চুমু খেল।
তুই বিশ্বাস কর তখন যে আমার কি হয়েছিল।
আমি ওর দিকে তাকালাম। ও মাথা নীচু করে নিল।
এরপর তোকে ছেড়ে আর থাকতে ভালো লাগেনি। ওই চার সপ্তাহ বড়মা ছোটমা আমার জীবনটাকে নতুন রং-এ রাঙিয়ে দিল। সঙ্গে তুই। তোর দায়িত্ব, কর্তব্য বোধ আমার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, আমার বাবা তোকে কতটা চিনেছিলেন।
মনে মনে ঠিক করলাম বাবার সঙ্গে বড়মার বিয়ে হলে বড়মা আমার মা হতো। আমার কাছে বড়মা মা। বহুবার বড়মা তোর কাছে কনফেস করতে চেয়েছে, তুই পাত্তা দিস নি। তুই যেন নতুন পৃথিবী গড়তে এসেছিস। দুর দাড় করে এগিয়ে যাচ্ছিস। আমি বড়মা ছোটমা ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতাম। তোর মন বুঝে কথা বলতাম।
কখনো বড়মা আমাকে পাঠাত তোর কাছে তোর মন বুঝতে, কখনো ছোটমাকে পাঠাত, শেষে নিজে আসত। আস্তে আস্তে দেখলাম প্রত্যেকেই তোকে কেন্দ্র করে আশ্রয় পেতে চাইছে। আমি শুধু একা নয়। ভারি মজা লাগল।
অফিসে খোঁজ খবর নিলেই দেখি সকলে ওরে বাবা বলে দশহাত পিছিয়ে যাচ্ছে। যারা একসময় ছেঁড়া নেকড়ার মতো আমাকে একটা ডাস্টবিনে ফেলে রাখত তারা মর্যাদা দিচ্ছে।
বুঝলাম আমার বুবুন সফল। ও অন্যায় কাজ করছে না।
মিত্রা থামল।
আমি সম্মোহনের মতো ওর কথা শুনে যাচ্ছি। ও আপন মনে সব বমি করছে।
কিরে, কি ভাবছিস ? তোর মিত্রা কবিতার মতো নষ্ট মেয়ে ?
আমি মিত্রার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলাম। ও চোখ বন্ধ করে আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো। উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শে কোন সেক্সের গন্ধ নেই, সেখান ভালবাসার চরমতম স্পর্শ। আমি ঠোঁট থেকে ঠোঁট তুললাম। মিত্রা তাকাল।
আমাকে একটু জলের বোতলটা দিবি।
হাত বাড়িয়ে ওকে জলের বোতল দিলাম। ও ঢক ঢক করে কিছুটা জল খেল। তারপর আবার আমার কোলে মাথা রাখল।
জানিস বুবুন তোর কোলে শুয়ে আছি, কি শান্তি।
আমি ওর মাথায় হাত রাখলাম। ও আমার ডান হাতটা জাপ্টে ধরে বুকের কাছে টেনে নিল।
পীরবাবার থানের মাটি তুই যেদিন আমার মাথায় লাগালি, সেদিন আমি দুটো জিনিস চেয়েছিলাম পীরবাবার কাছে। একটা তোর সন্তান আমি গর্ভে ধারণ করে মা হব। দুই বড়মার মাথার সিঁদুর ঘটা করে অনুষ্ঠান করে আমার সিঁথি রাঙাবো।
ওই সিঁদুর আমার বাবার হাতে দেওয়া। আজ বাবা নেই বড়মা আছেন।

বড়মা সেই অর্থে আমার মা। বাবার সঙ্গে বড়মা থাকলে আমি বড়মার গর্ভেই আশ্রয় পেতাম।
 
মিত্রা উঠে বসে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।
আমি জানতাম তুই একদিন না একদিন আমাকে রেস্ট্রী করবি। না হলে এতো বড়ো প্রপার্টি তুই ঠিক ভাবে সামলাতে পারবি না। তবে সেটা এতো তাড়াতাড়ি ঘটবে বুঝতে পারি নি। প্রথমে ভেবেছিলাম তুই বুঝতে পেরেছিস আমি মা হতে যাচ্ছি। তাই বিয়ে করা জরুরি। একটা সামাজিক স্বীকৃতি আমাকে দেওয়া দরকার। তারপর তোর মনের কথা বুঝতে পারলাম।
জেদ করে আমি এই অনুষ্ঠান করলাম। তাও আমার বাড়িতে। কেন জানিষ ? আমার বাবা মা দুজনেই আজ এখানে উপস্থিত। আমার মা তোকে বরণ করে গাড়ি থেকে নামিয়েছেন। আমার মা আমাকে ধরে নিয়ে এসে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়েছেন। মা তার বিয়ের সিঁদুর কৌট থেকে সিঁদুর নিয়ে কুনকেতে লাগিয়ে দিয়েছেন, যেটা তুই আমার সিঁথিতে দিয়েছিস। বাবা ওপর থেকে সব দেখেছেন। তার বিয়ে করা স্ত্রী তার মেয়ের বিয়ে দিয়েছে।
মিত্রার গলাটা ধরে এলো। কথা বন্ধ হয়ে গেল। আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে। বেশ বুঝতে পারছি ওর বুকের লাব ডুব শব্দটা ঘন হয়ে এক তালে বেজে চলেছে।
এরপরও তুই বলবি ম্যান ইজ মেকার অফ হিজ ওউন ফেট। মিত্রার গলাটা বুঁজে গেল, কথা বলতে পারলো না।
মিত্রা কিছুক্ষণ চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকল। আমি ওর মাথায় হাত বোলাচ্ছি।
জানিস বুবুন আমি যে বেনারসীটা পরে আছি এই বেনারসীটা পরে বড়মা বাড়ি ছেড়ে বিয়ের রাতে চলে এসেছিল। আজ আমার শরীরে যা দেখছিস সব বড়মার। ব্লাউজের হাতাগুলো বড়মা নিজের হাতে শেলাই করে দিয়েছে।
আমার ভেতরটা তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। মুখ মন্ডলে তার প্রতিক্রিয়া হয়তো কিছুটা পরেছে, তবু যতোটা সম্ভব ভেতরে ভেতরে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে চলেছি।
আজ আমি যা চেয়েছি, যেমন ভাবে চেয়েছি, তাই পেয়েছি। আমার জীবনের চরমতম সুখের দিন। যেদিন প্রথম আমার শরীরটা তোর হাতে তুলে দিয়েছিলাম সেদিনের থেকেও। আজকের দিনটার সঙ্গে শুধুমাত্র একটা দিনের মিল আমি খুঁজে পাই।
কোন দিনটা। আমার গলার স্বর অস্পষ্ট।
যেদিন পীরবাবার থান থেকে ফিরে এসে সেই চাঁদনী রাতে তুই আমাকে তোর জীবনটা দিলি।
আমি আর চোখের জল ধরে রাখতে পারলাম না। কাঁদলাম না। তবে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরলো।
এমা, মিত্রার কষ্টে তুই কেঁদে ফেললি, দেখ আমি একটুও কাঁদছি না। আমি তোর মতো শক্ত হওয়ার চেষ্টা করছি।
মিত্রা ডানহাতটা দিয়ে আমার চোখের জল মুছিয়ে দিলো। আমার ঠোঁট স্পর্শ করলো।
কাঁদিসনা বুবুন। তোর মিত্রাকে কেউ আর তোর কাছ থেকে কনোদিন কেরে নিতে পারবে না। তোর মিত্রা তোরই থাকবে। যে আসছে দেখিস সে তোর থেকে কোন অংশে কম যাবে না। জ্যোতিষদাদা বলেছে। তোর বুবুন যেখানে থামবে, সেখান থেকে সে শুরু করবে। আমি যে নদী বুবুন। কতো নোংরা আমার শরীরে। কিন্তু দেখ আমি কতো পবিত্র জিনিষ গর্ভে ধারণ করেছি। কজনের ভাগ্যে এটা ঘটে। তোর কোলে মাথা রেখে আমি নিজেকে নিজে উজার করে দিচ্ছি। এটাও আমার একটা পাওয়া। বলতে পারিস বড়ো পাওয়া।
মিত্রা থামলো।
আমার কোলে মাথা রেখে ও শুয়ে আছে।
জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালাম। সকালের আলো ফুটে উঠেছে। সারারাত ঘুম হল না। দু’জনে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছি। মিত্রার সব কথা শুনলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু মেলাতে পারছি না। সব কেমন জট পেকে যাচ্ছে। কোথায় যেন একটা সূক্ষ্ম ফাঁক থেকে যাচ্ছে। নয় মিত্রা সব গুছিয়ে বলতে পারল না। নয় ও ইচ্ছে করে কিছু একটা গোপন করে গেল। তবে এই মুহূর্তে ও নিজে কিছু গোপন করেনি বলেই মনে হচ্ছে। ও ঠিক গুছিয়ে বলতে পারল না। আমাকে ওর বাবার দিনলিপিটা পরতে হবে। আরও কিছু উদ্ধার করা যাবে তার থেকে।
কিরে আবার কোথায় ডুব মারিল।
অ্যাঁ, না কোথাও না।
দেখছি তো। আমি যে তোর কোলে শুয়ে আছি সেটাই ভুলে গেছিস।
হাসলাম।
ভাবছিস মিত্রা কতোটা স্বার্থপর।
না।
বুবুন আমার ওপর তোর একটুও রাগ হচ্ছে না।
একটুও না।
তুই এখান থেকে বলছিস।
মিত্রা আমার বুকে হাত দিল।
হ্যাঁ।
তুই আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করলি না।
কি বিষয়ে বল।
তোকে এতো কথা বললাম, তুই কিছু বললি না।
এখনো সময় আসে নি। হ্যাঁরে বড়মা জানে।
কি ব্যাপারে বল।
তোর বাবার সঙ্গে বড়মার বিয়ে হয়েছিল।
না।
ওই ঘরে যে ফটোটা আছে বড়মা দেখে নি ?
না। ওই ঘরের চাবি আমার কাছে আছে। একমাত্র তুইই ঢুকেছিলি।
কেউ দেখতে চায়নি!
চেয়েছে, অন্য ফটো দেখিয়েছি।
সেটা কার।
দাদুর কম বয়সের একটা ছবি।
হাসলাম।
হাসলি কেন।
কতদিন গোপন করবি।
আমি বড়মাকে মুখ ফুটে কোনদিন বলতে পারব না।
তোর তো মা। মায়ের কাছে লজ্জা কিসের।
যদি কিছু মনে করে।
করলে করবে। তোর বাবা কিছু কিছু অন্যায় করেছে। এটা তুই স্বীকার করিস।
করি।
তা সত্বেও তুই তোর বাবাকে ফ্রেন্ড ফিলোজাফার গাইড বলছিস।
হ্যাঁ।
বড়মা অন্যায় করেছে, তাকে তুই মা বলে স্বীকার করেছিস।
হ্যাঁ।
তাহলে তাকে জানাতে অসুবিধা কোথায়। কিছুটা তার মন সংশোধন হবে।
এরকম ভাবে কখনো ভাবিনি বুবুন!
মিত্রা আমাকে জাপ্টে ধরে উম উম উম করে গোটা পাঁচেক চুমু খেলো। সত্যি তুই কি সহজভাবে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিলি। এই জন্য তুই আমার বুবুন।
তা বলে এই নয় যে আজকেই তুই গিয়ে বলে দিবি।
না তা বলবো না। তবে কি জানিষ বড়মা মনে হয় কিছু একটা আঁচ করেছে।
কি করে বুঝলি।
এই বেনারসীটা আমি জোর করে বড়মার কাছে দেখতে চেয়েছি, বলেছি তোমার ছেলেকে বিয়ে করলে এই বেনারসী পরেই বিয়ে করবো, না হলে করবো না। নিজে পছন্দ করে আমার জন্য বেনারসী কিনেছে, আমি সঙ্গে ছিলাম, তবু আমি বলেছি আজ পরবো না।
ওটা আমি রবিবার পরবো। তোর সমস্ত কাপর জামা বড়মাকে পছন্দ করতে বলেছি। যেগুলো তুই আজ পরেছিস। আর রবিবারেরটা ছোটমা পছন্দ করেছে। একটাও আমি পছন্দ করিনি। সমস্ত ব্যাপারটা আমি ছেড়ে দিয়েছি দু’জনের ওপর।
দামিনী মাসি ইসলামভাই তোর জন্য পছন্দ করে জিনিষ কিনেছে। সকাল থেকে তুই যে দুটো পাজামা পাঞ্জাবী পরেছিস। একটা দামিনী মাসির একটা ইসলামভাই-এর। তাতেই যেন মনে হলো বড়মা কিছু একটা আঁচ করেছে।
আচ্ছা ডাক্তারদাদা তোকে সম্প্রদান করলো কেন ?
বড়মার ইচ্ছে অনুযায়ী।
কিরকম!
ডাক্তারদাদা আমার জীবন দিয়েছে। তাই।
ডাক্তারদাদা আপত্ত করেনি।
একটুও না। বরং বলেছে, বুঝলে বান্ধবী আমরা সব ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
হাসলাম।
তুই বুঝতে পেরেছিস।
মাথা দোলালাম।
জানিস বুবুন আমি কথাটা শুনে মনে রেখেছি, একটুও বুঝতে পারিনি।
কেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজতো একটা দেশের নাম।
না। পৃথিবীর একটা পোর্সান। ওখানে অনেকগুলো ছোট ছোট দেশ আছে।
ডাক্তারদাদা, ইসলামভাই, দামিনী মাসি, বড়মা, ছোটমা, দাদা, মল্লিকদা, এক একটা দ্বীপ আমরা দুজনে সকলকে একত্রিত করেছি।
কি দারুণ কথা বলেছে ডাক্তারদাদা।
ডাক্তারদাদার জীবনবোধটা ভীষণ গভীর। আমার সঙ্গে কিছুটা মেলে।
ঠিক বলেছিস।
কেন।
সেদিন বাড়ি ফিরে দেখলাম তোর ঘরের লাইট জ্বালা।
কি ভীষণ আনন্দ হচ্ছিল তোকে বলে বোঝাতে পারব না। আজ বুবুন আমার কথা রেখেছে। গাড়ি থেকে নেমে সবার আগে ছুটে আমি ওপরে চলে এলাম। তোকে সারপ্রাইজ দেব। পা টিপে টিপে বারান্দা পার হয়ে তোর ঘরের সামনে এলাম। তুই একমনে ছবি আঁকছিস। আমি স্ট্যান্ট হয়ে গেলাম। তুই ছবি আঁকতে পারিস আমি জানতামই না।
পা টিপে টিপে তোর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তোর কোন খেয়াল নেই। এক মনে ছবি আঁকছিস। আমি যে তোর পেছনে দাঁড়িয়ে আছি তুই বুঝতেও পারলি না। আবার সেই ভাবে নিচে নেমে এলাম। সবাইকে বললাম। ডাক্তারদাদা বললো ও সাধনা করছে, তোমরা ওকে বিরক্ত করো না।
আমি বললাম তোমরা দেখবে না। কি দারুন সব পেন্টিং করছে বুবুন।
ওরা সবাই এলো, নিস্তব্ধে দেখল চলে গেল। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে রইলাম। অনেকক্ষণ। ধৈর্য ধরতে পারলাম না। তোর সামনে গেলাম। তোর চোখদুটো তখন কি ভালো লাগছিল। তুই আমাকে দেখছিস, তবু যেন দেখছিস না।
হেসে ফেললাম।
মিত্রা আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল।
জানিস বুবুন আমি ঈশ্বরের কাছে মনে প্রাণে প্রার্থনা করছি, যে আসছে সে যেইই হোক আমার গুণ যেন সে একটুও না পায়, তোর সব গুণগুলো সে যেন পায়।
তাই ?
হুঁ।
কেন তুই খারাপ।
ভালো বলি কি করে বল।
মন খারাপ করিস না। জীবনটা সব সময় এক খাতে বইবে সেটা হয় কি করে।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
তোর বুবুন ত্রুটিহীন মানুষ নয়।
আমার থেকে অনেক গুণে ভালো।
তোর বুবুনেরও অনেক বেড পার্টনার থাকতে পারে। যদি কখনো জানতে পারিস কি করবি।
আমার বুবুনকে আমার কাছ থেকে কেউ কখনো ছিনিয়ে নিতে পারবে না।
কে বলেছে তোর জ্যোতিষদাদা।
হুঁ।
ঘেঁচু।
তোর বুবুন কৃষ্ণ তার শতো গোপিণী।
তা থাক, তবু সে রাধার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল।
ওরে বাবা খুব বুঝেছিস দেখছি।
আরও অনেক কিছু বুঝেছি তোকে এখন বলবো না।
আর একটা কি দেখাবি বললি, আমার ক্লু।
আজ থাক। আমার কথা শুনে তুই ক্লান্ত হয়ে পরেছিস। আর একদিন তোকে বলবো।
আমি ক্লান্ত হইনি, তুই বল।
জানিস আজ অবতার আর সাগির কনিষ্কর পা ধরে কি কান্না।
তোকে আমার ক্লু টা বলতে বললাম।
আজ ভাল লাগছে না। যেটা বলছি সেটা শোন না।
ঠিক আছে বল।
আমরা সবাই গেলাম।

ইসলামভাই একটু ভড়কে গেছে। কনিষ্কর পা ধরে অবতার সাগির কাঁদে কেন।
 
কি বলছিল ওরা।
তুই ছট্টুকে এনকাউন্টার করিয়েছিস ওদেরকেও ছাড়বি না। কনিষ্ককে দেখলে তখন তুই হাসবি না কাঁদবি।
কেন।
গম্ভীর হয়ে বললো। তোদের এখনো অনি বাঁচিয়ে রেখেছে। আমি অনির জায়গায় থাকলে অনেক আগে মেরে দিতাম।
কনিষ্কর পা ধরে সে কি কান্না। ঢেউ তুলে তুলে। রতন, আবিদ, নেপলা হেসে গড়িয়ে পরে।
তারপর কনিষ্ক দামিনীমাসির দিকে তাকিয়ে বললো। তুমি জাননা মাসি, অনি এদের জন্য কি না করেছে। গুলি খেয়ে রাস্তায় পরে থেকেছে। খবর পেয়ে তুলে এনেছে।
রাতে হাসপাতালে এ্যাডমিসন না করে অপারেসন থিয়েটরে নিয়ে গিয়ে ওদের হাত থেকে পা থেকে গুলি বার করেছি আমি বটা। ওরা অনির বিরুদ্ধে স্কিম করে! ওদের জন্ম দিল অনি। আর ওরা যদি গাদ্দারি করে, বেঁচে থাকবে। আমি সাক্ষী আছি। কে কি বললো বুঝতে যাব না।
ছাড় পা ছাড়। আজ অনির বিয়ে মাথায় রাখিস।
তখন ইসলামভাই বললো অনি সেই জন্য ওদের আনতে বলেছে।
দেখ অনি তোদের নেমন্তন্ন করেছে, নিশ্চই কথায় কথায় একদিন বলেছিল আমার বিয়েতে তোদের নেমন্তন্ন করবো, আর তোরা স্কিম কর, অনিকে মারার জন্য।
সবাই হাঁ করে কনিষ্কর কথা শুনছে।
বটা দাঁড়িয়ে ছিল। দু’টোর হাত ধরে টেনে তুলে বললো যা ভেতরে চলে যা। রবিবার এসে অনির সঙ্গে দেখা করবি। না হলে এবার টেবিলে তুলে মেরে দেব। অনি জানতেও পারবে না। তারপর মর্গে পচে যাবি।
আমি মিত্রার দিকে তাকিয়ে আছি।
আচ্ছা বুবুন তুই এইসব করার সময় পেতিস কি করে ?
সেই জন্য তুই খুঁজে পাস নি।
এক থাপ্পর। আমার কথাটা আমাকে ঘুরিয়ে দিলি।
আমি হাসছি।
তোর সঙ্গে অর্ক ঝগড়া করবে।
কেন।
রবিবার আসুক বুঝতে পারবি।
তুইতো জানিস বল।
এখন বলবো না।
দরজায় কড়ানাড়ার শব্দ পেলাম।
ধ্যুস কি সুন্দর গল্প করছিলাম।
কটা বাজে খেয়াল আছে।
সত্যিতো। তোর কোলে শুয়ে আছি। কিছুই বুঝতে পারিনি। বুবুন আমরা ঘুমলাম না!
আমি হাসছি।
তুই কি রে, ভাবলাম তোর কাছে একটু আদর খাব।
এতো খেয়েও মন ভরলো না।
ভরে, তুই বল।
যা দরজা খোল।
মিত্রা উঠে গিয়ে দরজা খুললো।
ছোটমা।
আমি তাড়াতাড়ি করে ফাইলটা গুছিয়ে রাখলাম। বুঝতে পারছি ছোটমা মিত্রার দিকে তাকিয়ে কালকে কতটা আদর করেছি তার সন্ধান পেতে চাইছে। তাহলে খুনসুটি করবে।
কিরে! ও ওখানে বসে কি করছে! তোরা সারারাত ঘুমোস নি ?
মিত্রা সোজা সাপ্টা জবাব দিল, না।
কি করছিলি ড্যাবা ডেবীতে।
গল্প করছিলাম।
গল্প করতে করতে রাত কাবার!
হ্যাঁ।
কই দেখি চল।
ছোটমা ভেতরে এলো। চারিদিক অনুসন্ধিৎসু চোখে দেখলো।
আলমাড়ি খোলা! সামনে ফাইল!
তুই মাটিতে থেবরে বসে আছিস, তোদের ব্যাপারটা কি বলতো ?
চা এনেছো।
আনা হচ্ছে।
ওটার এখন ভীষণ দরকার। বড়মা ফোন করেছিল ?
করেছিল।
কখন যেতে বলেছে।
কেন।
ওখানে গিয়ে বাথরুমে যাব।
কেন এখানকার বাথরুম মনে ধরছে না। আগে তো অনেকবার ঢুকেছো।
দুজনে ঢোকা যাবে না।
মিত্রা খিল খিল করে হেসে ফেললো।
দাঁড়া তো।
ছোটমা তেড়ে এলো কান ধরতে।
যতো বড় মুখ নয় ততবড় কথা।
ও ছোট করিস কি এই সাত সকালে।
বৌদি চায়ের পট কাপ-ডিশ ট্রে নিয়ে ঘরে এলো।
দেখো দিদি দেখো, সারারাত না ঘুমিয়ে দুটোতে ফাইল পত্র দেখেছে। আবার বলে কিনা ও বাড়িতে গিয়ে বাথরুমে ঢুকবে।
বৌদি চায়ের ট্রে সেন্টার টেবিলে রাখল। মিত্রার দিকে তাকাল। ভালো করে দেখে বললো।
কিরে সত্যি তোরা ঘুমোসনি!
মিত্রার মুখ দেখে বুঝতে পারছ না।
আমি হাসছি।
বৌদি ছোটমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো, সত্যি ছোট তুই পারিসও বটে।
বৌদি, তুমি কখন এলে ?
আমি গেলাম কখন যে আসব।
কেন।
বৌ নিয়েমতো ঘরে ঢুকলি বৌদির খোঁজ রেখেছিস।
আচ্ছা বাবা অন্যায় হয়েছে। সুরো কই।
ও বাড়িতে, তিনবার ফোন হয়ে গেছে। অনিদা কখন যাবে।
আমার খোঁজ খবর নেওয়ার ওই একটাই লোক আছে বুঝলে।
দেবোনা এক থাপ্পর, দাঁড়া দিদিকে খবরটা দিচ্ছি। ছোটমা বললো।
বৌদি, সকাল বেলা এত অত্যাচার ঠিক হচ্ছে না।
সত্যি তোরা ঘুমসনি!
চায়ে চুমুক দিলাম।
আঃ।
আর আয়েশ করতে হবে না। বৌটাকে দাও। নিজে খেলে খালি হবে।
নিয়ে নিক।
দেখেছ ছেলের কথা। ছোটমা বললো।
জানো বৌদি একটা কাজ করছিলাম, দেখলাম সাতটা বেজে গেছে। তোমরা আরও সকালে ডাকতে পারতে।
হাসছি। মিত্রাও হাসছে।
ছোটমা।
বলুন।
হাসলাম।
কিছু খাবর জুটবে।
তোকে দেখলে গা পিত্তি জলে যাচ্ছে। নিজেও ঘুমোস নি, মেয়েটাকেও ঘুমোতে দিস নি। দাঁতে দাঁত চিপে বললো।
দেখলি মিত্রা, কে দোষ করলো, কার ঘারে দোষ পরলো।
ছোটমা ঘর থেকে গট গট করে বেরিয়ে গেল। বৌদি সোফায় বোসল, কাপে চা ঢেলে নিল।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে।
আয়। বোস এখানে।
মিত্রা গিয়ে বৌদির পাশে বসলো।
ঘুমোসনি কেন।
আমি হাসছি। মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। তারপর বৌদির দিকে তাকাল।
ও ঘুমোতে দেয় নি। বললো চল গল্প করি।
সারারাত!
বিশ্বাস করো, বুঝতে পারি নি।
নিশ্চই কোন জরুরি বিষয় নিয়ে গল্প হচ্ছিল বল।
কতোদিন ওর সঙ্গে দেখা হয়নি বলো। অনেক জমে ছিল।
আজ সব শেষ করে দিলি।
কিছুটা, এখনো বাকি আছে।
ছোটমা ঘরে ঢুকলো।
আমি হেসে বললাম প্রমপ্ট এ্যাকসন।
তা বলবে না।
ফোনটা আমার হাতে ধরিয়ে দিল।
বলো।
কিরে তুই নাকি ঘুমোস নি! বড়মার গলা।
তুমি চলে এসো, দেখে যাও।
ছোট বললো।
চা চেয়েছি, তাই।
ছোটমা আমার কান ধরে মুলে দিল, আমি উ করে উঠলাম।
কি হলো রে।
ছোটমা কান মুলে দিল।
বেশ করেছে।
কখন বাড়ি যাব বলো।
কেন থাকতে ভালো লাগছে না।
বল না বল, ওখানে গিয়ে বাথরুমে ঢুকবো। ছোটমা বললো।
আমি হাসছি।
তুমি ছোটমার সঙ্গে কথা বলো।
দে।
আমি ছোটমার হাতে ফোনটা চালান করে দিলাম।
বৌদি টিনারা কোথায় ?
সব ও বাড়িতে চলে গেছে।
ওরা যে থাকবে বলেছিল।
বৌদি হাসলো।
কিরে, তুই যাবি, না আমি সেরে নেব।
তুই যা।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। ফাইলটা আলমাড়িতে তুলে রাখলাম। পাঞ্জাবীটা খুলে বিছানায় ছুঁরে ফেলে দিলাম। বাথরুমের দিকে এগোলাম।
কিরে তুই কাপর পড়ে যাবি ? মিত্রা বললো।
কেন কি হয়েছে ?
দাঁড়া আমি তোকে টাওয়েল দিচ্ছি।
দোখছো বৌদি, কান্ড দেখ।
কান্ড দেখবে কি রে। গর্ধভ কোথাকার। ছোটমা বললো।
তখন থেকে যা ইচ্ছে তাই বলে যাচ্ছ। দাঁড়াও ওখানে গিয়ে মল্লিকদাকে রিপোর্ট করছি।
ছোটমা হেসে ফেললো।
বাড়িতে যখন পৌঁছলাম সাড়ে দশটা বাজে। ছগনলাল ঢুকতে দেখেই হাসলো।
দেখলাম বাড়ি ভর্তি লোক। সবাই হাজির এই সময়। আমি মিত্রা গাড়িতে, সবাই নেমে এলো। বড়মা বরণ করলো। দু’জনকে আমার ঘরে নিয়ে গেল। হৈ হৈ রৈ রৈ বেশ মজা লাগছিল। উপকরণের কোন অভাব নেই। যেন মোচ্ছব বসে গেছে। কাজ কর্ম শেষে খাওয়া দাওয়া হল। আর এক চোট হৈ হৈ। মিত্রা বললো আমি বড়মার ঘরে একটু নাক ডেকে ঘুমবো।
আমি ওপরে চলে এলাম।

দেবাকে বললাম আয় তোদের সঙ্গে কিছু কথা সেরে নেই। বড়মা বললো তুই একটু ঘুমিয়ে নে। আমি বললাম না। পরে ঘুমচ্ছি।
 
ওপরে উঠে এলাম। চারিদিকে একটা বিয়ে বিয়ে গন্ধ। ঘুম নেই কিন্তু শরীরে ক্লান্তিও সেই ভাবে নেই। আমি এসে জানলার সামনে দাঁড়ালাম। একটা সিগারেট খেলাম। ছোট ছোট চকমকি লাইট দিয়ে বাড়ি সাজান চলছে। ইসলামভাই-এর পাগলাম। মনে মনে হাসলাম। মিত্রার সব কথা হুড়মুড় করে মনের মধ্যে এসে ভিড় করছে।
মানুষের মন। সত্যি কি থেকে কি হয়ে গেল। ভাবতেই পারছিনা। মিত্রার লাইফটা বারে বারে ঘুরে ফিরে আমার চোখের সামনে ভেসে আসছে। সত্যি কি ও এক সময়ে বুহু পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী ছিল ? ও নিজে মুখে স্বীকার করেছে।
কেমন যেন লাগছে। আমার মিত্রা। যাকে আমি মনপ্রাণ দিয়ে ভালবেসেছি কই আমার মধ্যে কোন ফাঁকি ছিল না।
তাহলে মিত্রা ?
ও একটা মেয়ে। মেয়েদের অনেক বাধ্য বাধকতা থাকে। ও স্বীকার করে নিয়েছে। ওই সময় গা ভাসিয়ে দেওয়া ছাড়া ওর কোন উপায় ছিলনা। তাহলে আমি ওকে ভুল ভাববার চেষ্টা করছি কেন ? আমি যদি ওর জায়গায় থাকতাম ?
তাহলে আমিও হয়তো এর থেকে কিছু কম যেতাম না। যতই হোক আমি একটা ছেলে। আমি এই পৃথিবীতে যেভাবে লড়াই করতে পারব, একটা মেয়ের পক্ষে সে ভাবে লড়াই করা সম্ভব নয়। নিজের মনকে বোঝালাম, মিত্রাকে ভুল ভাবা আমার কখনোই উচিত নয়।
আমার একটা ব্যাপারে ওর কাছে সব সময় ঋণী থাকা উচিত। ও আমাকে নতুন দিশা দিয়েছে। আমাকে নতুন ভাবে বাঁচতে শিখিয়েছে।
কিরে কি করছিস ওখানে দাঁড়িয়ে।
ফিরে দাঁড়ালাম।
আয়।
দেবারা পাঁচজন।
টিনা এগিয়ে এলো। ভ্রু নাচিয়ে বললো, অনিদা কাল রাতটা কেমন কাটালে।
টিনার মুখের দিকে তাকালাম। খুব একটা ভাল নয়।
কেন!
টিনার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
তোমরা চলে এলে। মনটা খারাপ হয়ে গেল।
টিনা ফিক করে হেসে ফেললো।
এই জন্য।
হ্যাঁ।
বিশ্বাস করো কালকে একটু নিজেদের ফ্ল্যাটে গেছিলাম আমি আর মিলি। এখানেই পরে আছি দিন পাঁচেক হলো। একবার দেখতে গেলাম।
ভালো করেছো।
আমি খাটে এসে বসলাম। কিরে দেবা কাল কেমন মজা করলি।
দারুণ।
আনিদার বিয়েটা স্মরণীয় হয়ে থাকল আমাদের কাছে।
কেন অদিতী।
তোমার না বলা অনেক কথা কাল শুনলাম। তোমার নতুন নতুন জগৎ নতুন নতুন দিক।
অনিদাটা খুব খারাপ না।
এই তুমি শুরু করতে চাইছ। মিলি বললো।
হেসে ফেললাম। জানো অদিতী একটা সময় আমার সেরকম কোন কাজ ছিল না। বদ সঙ্গ বদ নেশা করতে পারি নি। তাই কি করবো, নেই কাজ তো খই ভাজ।
ওরা হাসছে।
আচ্ছা মৈনাক তোকে নিয়ে গিয়ে পরিচয় করাল কনিষ্কদের সঙ্গে। তুই ওদের আপন হয়ে গেলি, আর মৈনাক ফুটে গেল, ব্যাপারটা কি বলতো ?
কি করে বলবো। আমার ভালো লাগতো, তাই ওদের কাছে যেতাম। তারপর দেখলাম আমি ওদের মতো না হলেও, ওরা আমাকে বন্ধু হিসাবে গুরুত্ব দিচ্ছে, তাই হয়তো টিঁকেগেলাম।
অনিদা আমাদের একবার ভালোপাহাড়ে নিয়ে যাবে। কনিষ্কদার মুখ থেকে ভালোপাহাড়ের কথা শুনে মনে হচ্ছিল এখুনি ওখানে চলে যাই। মিলি বললো।
তোমরা যেতে পারবে না।
কেন।
অনেকটা হাঁটতে হয়, চড়াই উতরাই।
তুমি প্রোগ্রাম করো, যাব। টিনা বললো।
কনিষ্করা কম বেশি রেগুলার যায়। ওদের বলে দিচ্ছি ঘুরে এসো।
তুমি না গেলে মজা নেই।
কেন, কনিষ্ক খুব ভালো ছেলে।
পাগল! কি গলা। গম গম করছে যেন। কি পার্সোনালিটি! মিত্রাদিকে কাল অনেক কথা বলেছে তোমার সম্বন্ধে। শেষে বলেছে ওকে কখনো ভুল বুঝবেন না। ঠকে যাবেন। মিলি বললো।
ও আমাকে একটু বেশি ভালবাসে, তাই সব সময় বারিয়ে বারিয়ে বলে।
আমরা জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কনিষ্কদা অনিদা আপনাদের কিরকম বন্ধু।
হাসলাম।
হেসো না, বলে কিনা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যেমন বন্ধুত্ব থাকে তেমন।
তোমাদের মিত্রাদি বলে ওঠে নি, গে কিনা।
সেটা মিলি বলেছে। টিনা বললো।
তাতে কি উত্তর দিলো কনিষ্ক।
বললো অনি না থাকলে সে বছর আমরা ডাক্তার হতে পারতাম না, পরের বছর লেগে যেত।
হাসলাম।
আচ্ছা ডোমেদের সঙ্গেও তোমার বন্ধুত্ব আছে।
ওরা আমার নিউজ সোর্স। হাসপাতালের খবর ওদের থেকে বেশি কেউ রাখে না।
মিত্রা নাচতে নাচতে ঘরে এসে ঢুকলো।
কিরে তুই ঘুমলি না!
ঘুম আসে। তুই জমিয়ে গল্প করছিস।
ওই দেখ, সবাই এসে হাজির।
তোকে দেখতে এলাম।
এসো এসো বসো অনিদার গল্প শোনো। টিনা বললো।
সবাই খাট জুড়ে বসলো। মিত্রা আমার ঘারে উঠে বসলো। আর একপাশে সুরো ঘারে উঠেছে।
কোনটা বলছে রে।
কালকে কনিষ্কদা বললো না অনি না থাকলে ওই বছর ডাক্তার হতে পারতাম না।
কিরে আমাদের বাদ দিয়ে ঝেড়ে দিচ্ছিলি।
দেনা দে পিঠে একটা গুম করে। ছোটমা বললো।
বড়মা, ছোটমা সকাল থেকে….
ছোটমা তেড়ে এলো।
বৌদি সাক্ষী আছে।
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে।
আমি হাসছি।
কি বুঝছো বড়মা। তোমাদের দুটো বললাম এটা থার্ড, কনিষ্ক একটু ছুঁয়ে গেছে। মিত্রা বললো।
বড়মা ইজি চেয়ারে হেলান দিয়েছে। পান চিবচ্ছে পুচুর পুচুর।
কিগো নিজে একটা বেশ গুছিয়ে মোটা করে চিবচ্ছ, আমারটা কোথায়।
তোকে খেতে হবে না জিভ মোটা হয়ে যাবে। ছোটমা বললো।
ওমা দেখি সবার গাল ফোলা। কিগো বৌদি ?
আমারও মুখে ছিলো, শেষ করে ফেলেছি। কানের কাছে সুরো ঘ্যানর ঘ্যানর করলো।
ভালো করেছো, এবার পরীক্ষার আগে নোটটা চেয়ো, লবডঙ্কা দেখাব।
আমার ভেঙচি কাটাতে, সকলে হাসছে।
বলনা। মিত্রা বললো।
দেরি করিস না এখুনি বিকেল হয়ে যাবে, অনেক কাজ। ছোটমা বললো।
কি শুনবে, মরা ঘাঁটার গল্প।
বড়ম ওয়াক করে উঠলো।
দেখলে, আর হবে না। এবার বমি করে ফেলবে।
পানটা গলায় আটকে গেছিল। বড়মা বললো।
আবার হাসি।
ওমনি ছোট করে একটা দিলে।
সবাই হাসে।
আমি কিন্তু এডিট করে বলবো।
তাই বল।
কনিষ্কদের একটা পেপার আছে বুঝলে বড়মা, ডেড বডি দেখে পরীক্ষা দিতে হয়। তাও আবার ফ্রেস বডি হতে হবে। এটা আনসিন কোশ্চেনের মতো। কিরকম বডি পরবে কেউ জানে না। ধরো তোমার বডি আর ছোটমার বডি এক।
না। ও একটু রোগা আমি একটু মোটা।
তেমনি মিলির বডি আর সুরোর বডি এক।
না।
অতএব অন দ্যা স্পট বডি দেখে পরীক্ষা দেওয়া খুব টাফ। তার থেকে যদি বডিটা আগে দেখে নেওয়া যায় তাহলে বডির কেমন স্ট্রাকচার সে গুলো দেখে নেওয়া যায়। পরীক্ষাটা ভালো হয়, নম্বর ভালো পাওয়া যায়। গ্রেডেসান বেড়ে যায়।
এই বডি থাকে কোথায় ?
মর্গে।
সেখান থেকে বডি বার করে এনে ট্রেতে রাখা হয়। সবাই দেখে আর পরীক্ষা দেয়। অনেক মাপ জোক আছে, ওটা ওরা ভালো বলতে পারবে।
তুই মর্গে ঢুকলি। মিত্রা বললো।
হ্যাঁ।
গন্ধ লাগে নি।
সেতো ভালো গন্ধ।
সবাই এমাগো করে উঠলো।
পরীক্ষার আগে আড্ডা মারতে গেলাম ওদের হোস্টেলে। নীরু বললো অনি তুই এ যাত্রায় বাঁচা। বললাম কেনো রে, আবার ভূত। ওরা সব ডিটেলসে বললো। আমি বললাম দাঁড়া আমার পরিচিত লোকটার ডিউটি যদি মর্গে থাকে তাহলে হিল্লে হয়ে যাবে।
তোর সঙ্গে ডোমেদের পরিচয় আছে ? ছোটমা বললো।
হ্যাঁ। ওরা আমার নিউজ সোর্স।
তোর আর কোথায় কোথায় নিউজ সোর্স আছে বলতো। বড়মা বললো।
তাহলে তোমায় বলছি কি বড়মা। টিনা বললো।
রাত তখন বারটা সাড়ে বারটা বাজে। মেডিকেলের মর্গটা একটু ব্যাকোয়ার্ড পজিসনে বুঝলে। আমি গেলাম। চারিদিক নিস্তব্ধ। ওখানটা একটু একটু অন্ধকার। ব্যাটারা লাইট লাগালেও ভেঙে দেয়।
কেন।
মদ খেতে অসুবিধা।
দেখলাম আমার পরিচিত লোকটা নেই ওর এক সাগরেদ আছে। বসে বসে মদ গিলছে। কাছে যেতেই বললো, ভেতরে তোমার মাল আছে নাকি অনিদা ? বললাম আছে।
কেন তোর কি প্রচুর মরা বন্ধু ছিল।
ঠিক তা নয় সে আবার অন্য গল্প বলতে হয় তোমাকে।
এটা আগে শুনি পরে ওটা শুনবো।
মিত্রা হাসছে। সুরো আমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে এসেছে।
ডোম ব্যাটা বললো কার ?
বললাম বিকেলে লাইনে গলা মেরেছে। আলটপকা আর কি। বুঝলে। ওরা বলেছে পরীক্ষায় ফ্রেস বডি দেবে।
গলাকাটা বডি ফ্রেস বডি। মিত্রা বললো।
কেন তোর বডি দেবে পরীক্ষার খাতায়, ছাগল।
সবাই হাসে।
তোর বডিটা দিতে পারত।
তাহলে কাল বিয়ে করতে পারতিস না।
উঃ থামনা মিত্রা। বৌদি বললো।
দেখছো বৌদি বড়মা কেমন চুপ করে শুনছে। এই বেলা কিছু বলতে পারছে না।
বলবো, আগে শুনে নিই।
তা বললো আছে, আন ওটেড (ওয়ান্টেড) বাডি (বডি) পোস্ট মটেম (মর্টেম) হয় নি। ওরাও মাঝে মাঝে ইংরাজী ঝাড়ে। সে ইংরাজী শুনলে তোমার মাথা খারপ হয়ে যাবে।
আমি বললাম, কেন।
কাল নতুন ডাক্তারদের কি কাজে লাগবে, তারপর পোস্ট মর্টেম হবে।
বুঝে গেলাম ওই বডিটা কনিষ্কদের দেবে।

চলতো দেখি, আমার পরিচিত লোকের বডি ডাক্তারদের কাজে লাগাব।
 
ও ব্যাটা বলে কি, একটা বোতলের দাম দাও।
আমি সেই সময় হাঁসব না কাঁদব। পকেটে একটা পয়সাও নেই।
তোকে পরে দেব।
এখুনি দাও, আমি মাল কিনতে যাব।
বুঝলাম সুযোগটা কাজে লাগাতে হবে, ওকে টাকা দিয়ে মাল কিনতে পাঠিয়ে দেব। আমরা আমাদের কাজ করবো।
ঠিক আছে দাঁড়া, আমি বন্ধুদের ডাকি আমার কাছে পয়সা নেই, ওদের কাছ থেকে চেয়ে দিচ্ছি।

সে তখন নেসার ঘোরে, কনিষ্কদের ডেকে আনলাম। ওরা দশ বারো জন। ওরা পয়সা দিল। মর্গের ভেতরে ঢুকলাম। জীবনে প্রথম মর্গে ঢোকা। ঢুকেই আমার চক্ষু ছানা বড়া। ট্রেতে জায়গা নেই বলে। এখানে ওখানে ছড়িয়ে আছে পচা গলা বডি। সে গন্ধে আমার অন্নপ্রাসনের ভাত উঠে আসার জোগাড়। দেখি দেয়ালে একটা লোক হেলান দিয়ে বসে আছে। মাথা নেই। মাথাটা তার কোলে। বড়মার দিকে তাকালাম।
একবার ভাবো।

তুই থাম, আর বলতে হবে না।
একিগো না শুনলে জানবে কি করে। ডাক্তার হতে গেলে কতো কসরত করতে হয়।
দিদি তুমি কানে আঙুল দাও, আমরা একটু শুনি। ছোটমা বললো।
বল শুনি। বড়মা ঢোক গিলে বললো
মর্গের চাবি ওর কাছ থেক নিয়ে নিলাম। ও ব্যাটা মাল কিনতে গেল। কনিষ্করা সবকটা বডি দেখে বললো মনে হয় কালকে এই বডিটা পাবো বুঝলি নীরু। এটাই যা একটু ফ্রেস আছে।
মাথা নেই।
শেলাই করে বসিয়ে দিলেই হলো।
বটা বলে উঠলো, দাঁড়া মালটাকে জোড়া লাগাই।
মর্গের ভেতর তখন বিয়ে বাড়ি।
ওরা হাসছে।
আমি ওদের রগড় দেখছি। গন্ধে বমি এসে যাচ্ছে। ওরা দিব্বি আছে। অভ্যেস আছে। সেই কন্দকাটা বডিটাকে পেটা পিটি করে শুইয়ে গলাটা ধরের কাছে রাখলো। তারপর সব স্কেল দিয়ে মেপে লেখা লিখি করতে বসে গেল।
একবার বুকের কাছে মাপে আর একবার ঠ্যাং মাপে কেউ পেট মাপে। বডির পুরো স্ট্রাকচারটা খাতায় ড্রইং করলো। আমি চারিদিক চেয়ে চেয়ে দেখি। মর্গ থেকে বডি আনতে গেছি। কিন্তু মর্গে ঢুকি নি। একপাশে দেখি একটা মেয়ের বডি পরে আছে উপুর হয়ে গায়ে একফোঁটা কাপর নেই। চারিদিকে রক্তে ভেসে যাচ্ছে। মানে ওটা কাটা হয়ে গেছে।
বটা বলে চল মেয়েটার বডিটা একটু দেখে নিই।
কনিষ্ক বললো দেখছিস না ওটা সাবার হয়ে গেছে। ভেতরে কিছু মাল নেই।
অনিকেত নীরু মেয়েটার বডি টেনে এনে ওই কন্দকাটার পাশে শোয়াল।
আমি ওদের রগড় দেখছি। কারুর কোন হেল দোল নেই। এর মধ্যে নীরু বলে উঠলো।
বুঝলি কনিষ্ক দেখে মনে হচ্ছে কুমারী মেয়ে, জীবনে এখনও কিছু পায় নি বুঝেছিস।
নীরু কনিষ্কর দিকে তাকিয়ে ভাবছি এই বুঝি পাছায় কষিয়ে একটা দেয়।
মালটাকে বিয়ে দিয়ে দে গলা কাটার সঙ্গে।
সঙ্গে সঙ্গে বটার ঝেড়ে লাথি নীরুর পেছনে। তখন মর্গের ভেতর হুলুস্থূলুস কান্ড।
মর্গের ভেতর তোরা মারামারি করছিস! বৌদি বললো।
আমি না ওরা।
করবে না। আনন্দে। পরীক্ষার কোশ্চেন পেপার আউট। ভাবোদেখি একবার, আগামীকাল তোমার সবচেয়ে টাফ পেপারের পরীক্ষা, আর আজ তুমি কোশ্চেন হাতে পেয়ে গেলে। তোমার কি হবে।
সবাই মিলে মর্গের বাইরে এলাম। সে কি আনন্দ বড়মা কি বলবো, যেন মনে হলো গ্যাস চেম্বার থেক বেরলাম। ব্যাটা তখন বেহেড মাতাল, মর্গের গেটে তালা বন্ধ করে চাবি দালাম। সোজা বৌবাজার, সারারাত হোটেল খোলা, সবাই মিলে মাংস ভাত খেলাম।
হাত ধুয়েছিলি। বড়মা বললো।
মনে নেই।
ওই হাতে খেলি ? মিত্রা বললো।
কাঁধটা মিত্রার নাকের কাছে ঠেকিয়ে দিয়ে বললাম, গন্ধটা শোঁক, এখনো ওই গন্ধ পাবি।
দেখছো বড়মা।
তুই বললি কেন।
তুমিতো প্রথমে বললে।
হাওয়া ওদিকে ঘুরে গেছে।
ছোটমার দিকে তাকালাম।
চা। এইতো।
তুমি কতো বোঝ। জড়িয়ে ধরলাম।
আর আদর দেখাতে হবে না। ভালোপাহাড়ে কবে নিয়ে যাবি।
টিনারা সকলে হৈ হৈ করে উঠলো।
তোরা চেঁচাচ্ছিস কেন ?
একটু আগে অনিদাকে বলেছি পাত্তা দেয়নি। বলে কিনা অনেকটা হাঁটতে হবে।
কনিষ্কর মুখ থেকে শুনেছি। খবর পাঠালে ওরা মাথায় করে নিয়ে যাবে। ছোটমা বললো।
তাহলে কনিষ্ককে বলো।
চা পাবি না।
বাইরেটা দেখ অন্ধকার হয়ে আসছে।
ও ছোটো ওকে বলেছিস। বড়মা ছোটমার দিকে বিষ্ময়ভরা দৃষ্টি রেখে বললো।
কখন বলবো। দেখলে তো সবাই এসে জমে গেলাম।
আমার দিকে তাকিয়।
এই তুই নিচে চল, তোর সঙ্গে কথা আছে।
মিত্রার দিকে তাকালাম। মিত্রা মুচকি মুচকি হাসছে। বুঝলাম ও কিছুটা জানে।
ওরা সবাই বসে রইলো। আমি ছোটমা বড়মার পেছন পেছন নিচে এলাম। দামিনী মাসি ভজুরামও নিচে চলে এলো। দেখলাম ইসলামভাই তার দলবল নিয়ে কাজ করছে। পুরো দায়িত্ব ইসলামভাই-এর ঘারে। আমি সোফায় বসলাম।
চা এলো। ভজুরামের হাত দিয়ে চায়ের ট্রে ওপরে চলে গেলো। চা খেতে খেতে ছোটমা বললো। আজ রাতে তোর এ বাড়িতে থাকা হবে না।
কেন!
কাল রাত্রি। আজ তোর মিত্রার মুখ দেখা হবে না।
ভীষণ ফাজলাম করতে ইচ্ছে করছিল। করলাম না। নিজেক চেক করে নিলাম।
ঠিক আছে আমি ফ্ল্যাটে চলে যাচ্ছি।
তোর একা যাওয়া হবে না। তোর সঙ্গে কেউ যাবে।
না তা হবে না। আমি একা যাব, কেউ আমার সঙ্গে থাকতে পারবে না।
কি বদমাশরে তুই। বৌদি বললো।
তুই আমার বাড়িতে চল।
না তা হবে না।
তাহলে তোকে যেতে হবে না। নিচের ঘরে তোকে তালা বন্ধ করে রাখি।
তাও হবে না। আমি ঠিক ওর মুখ দেখে নেব।
বড়মা হাসছে।
ও ছোট ও যা খুশি করুক, আমাদের কাজ হয়ে গেছে। ও এবার ওরটা বুঝে নিক।
বুঝলাম আমার কথায় এদের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় রয়েছে। ঝোপ বুঝে কোপ মারলাম।
কটায় বেরতে হবে।
সন্ধ্যে হওয়ার আগে।
সন্ধ্যে হতে আর কি বাকি আছে ? বাইরেটা একবার দেখ।
ঠিক আছে। আর ঘন্টা খানেক পরে বেরবি।
এখুনি বেরিয়ে যাই। তাহলে আমারও কিছু কাজ করা যাবে।
মিত্রাকে বলে যা।
মিত্রা জানে না!
জানে তবু তুই একবার বলে যা। ওর ভালো লাগবে।
আমি ছোটমার দিকে তাকিয়ে ফিক করে একবার হাঁসলাম। ওপরে এলাম। দেখলাম ওরা সবাই গল্প করছে। মিত্রা আমাকে দেখে একবার হাসল।
কিগো অনিদা কি বললো ছোটমা। টিনা বললো।
আমাকে তাড়িয়ে দিলো।
মিত্রা হাসছে। ওর দিকে তাকিয়ে বললাম।
আজকে আমার মতো জামা প্যান্ট পরি।
মিত্রা মাথা দোলাল, পর। কাল কখন আসবি ?
চলে আসব।
ফোন স্যুইচ অফ করবি না।
এটা কথা দিতে পারব না।
কেন বলছিস ওকে। দেবা বললো।
তোরা থাকবি না চলে যাবি।
হয়তো তোর ওখানে চলে যেতে পারি।
যাস নি।
কেন।
বাঁধা গরু ছাড়া পেলে কি হয় জানিস।
তোকে যেতে হবে না। আমি গিয়ে ছোটমাকে বলছি। মিত্রা বললো।
মিত্রা খাট থেকে নিচে নেমে এলো।
মহা মুস্কিল দুটো মন খুলে কথাও বলা যাবে না ?
এই যে তুই বললি, বাঁধা গরু ছাড়া পেলে….।
ঠিক আছে তুই রাতে লোক পাঠা, দেখ আমি আছি কিনা।
তা করবো কেন, তুই মুখে বলেছিস এটাই যথেষ্ট।
আমি আমার মতো গেঞ্জি জিনসের প্যান্ট ড্রয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলাম। সোজা ছোটমার ঘরে। মিত্রা পেছন পেছন এলো।
তুই চলে যাবি একটুও ভালো লাগছে না।
বিয়ে করতে গেলি কেন।
আমি করলাম, তুইতো করতে গেলি।
বাবাঃ, ঘটা করে শাধ মেটালি, একটু কষ্ট করবি না।
তোর কষ্ট হচ্ছে না।
হচ্ছে, তবে তোর মতো নয়।
মিত্রা পেটে খোঁচা মারল।
দাঁড়া।
মিত্রার দিকে ফিরে তাকালাম।
মিত্রা দরজার সামনে গিয়ে একবার বারান্দায় উঁকি মারল। বুঝলাম দরজা বন্ধ করার ধান্দা।
ও ভুল করিস না। ছোটমা হানা দিতে পারে।
দিক। এখন আর ভয় নেই।
ভয়ের বাকিটা কি রেখেছিস ?
আমি পাজামা পাঞ্জাবীটা খুললাম।
কি ছোটো।
আবার। সারারাত ঘুম হবে না।
একটু।
একবারে না।
মিত্রা তবু আমাকে জাপ্টে ধরলো। ঠোঁটে ঠোঁট রাখল।
এবার ছাড়।
তুই যেন ঘোড়ায় জিন দিয়ে এসেছিস।
এখুনি ইচ্ছে করবে।
কর।
আজ ওসব করতে নেই।
আমার নাম করে অন্য কাউকে করিস। তাহলেই আমাকে করা হয়ে যাবে।
মিত্রার দিকে তাকালাম। চোখের মনি স্থির।
ওমনি মন খারাপ হয়ে গেল।
আমি প্যান্ট পরতে শুরু করলাম।
কিরে ভেতরে কিছু পরবি না।
হাসলাম।
হাসছিস যে।
দেখ ভুল করে কি নিয়ে এসেছি।
মিত্রা খিল খিল করে হেসে ফেললো।
তুই আমারটা নিয়ে এসেছিস।
তুই যে আমার প্যান্টের তলায় গুঁজে রাখবি কি করে জানব।

তখন তাড়াহুড়ো করে তোর প্যান্টের তলায় গুঁজে বাথরুমে গেছিলাম।
 
তারপর আর পরিস নি ?
না।
বেশ করেছিস।
সাবধান কিন্তু।
নিশ্চিন্তে থাকতে পারিস।
দুজনে ছোটমার ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
কখন আসবি।
হয়তো দেখবি তুই ঘুমচ্ছিস, আমি এসে কড়া নারলাম।
মিত্রা খিল খিল করে হসে ফেললো।
দু’জনে নিচে চলে এলাম। আমাকে দেখে ছোটমার চোখে বিস্ময়।
কিরে এট পরেছিস কেন। তোর আর জামা প্যান্ট নেই ?
মিত্রার দিকে তাকিয়ে। তুই কি করছিলি, ও যখন এটা পরলো।
আমাকে বললো, আমার পছন্দ মতো পরি।
তুই একেবারে গদোগদো হয়ে বললি, পর।
মিত্রা মাথা নীচু করে হাসে।
কি খাবি।
কিছু না।
রাতে মনুর হাত দিয়ে খাবার পাঠাব।
পাঠিয়ো না।
কেন! তুই ওখানে যাচ্ছিস না ?
কে বললো যাচ্ছি না।
আমি লোক পাঠাচ্ছি।
তাহলে অনি তার পূর্ব অবস্থায় ফিরে যাবে।
ছোটমা চুপ করে গেল। মুখটা হঠাৎ গম্ভীর। বড়মা এগিয়ে এলো।
কেন গোঁয়ার্তুমি করছিস।
এতো মহা মুস্কিল। আমি কি এখনো ছোট আছি।
আমার কথার ধরণে সকলে হাসছে। একমাত্র ছোটমা গম্ভীর।
তুমি লোক পাঠিয়ো। তবে রাত বারটার পর। তার আগে কিছু কাজ আছে, সারবো।
ছোটমা তবু গম্ভীর।
বুঝলাম কথাটা বলা বুমেরাং হয়ে গেছে।
আবার কাছে গেলাম, জড়িয়ে ধরলাম। একটু আদর করলাম। আবার স্বাভাবিক।
ঠিক আছে। তুমি রাতে খাবার পাঠিও। আর ভজুকে পাঠিয়ে দিও।
মিত্রার দিকে তাকিয়ে বললাম একটা কাজ করবি।
বল।
আমাকে গোটা কুড়ি হ্যান্ডমেট পেপার আর রংয়ের বাক্সটা এনে দে, পারলে বোর্ডটাও।
মিত্রা ছুটে বেরিয়ে গেল।
ছোটমা হাসছে।
তুমি গম্ভীর হয়ে গেলে মেজাজ বিগড়ে যায়। একটা মিষ্টি দাও, একটু জল খাই।
মাসি লুচি ভাজছে। দুটো খেয়ে যা।
তাই দাও।
ছোটমা ছুটে চলে গেল।
বড়মার দিকে তাকিয়ে বললাম, ভজুরাম কোথায় ?
দেখ বাগানে কোথায় লাইট লাগাচ্ছে। তাদের পেছন পেছন ঘুরছে।
বাইরের বারান্দায় এসে ভজুরামকে ডাকলাম। দেখলাম ইসলামভাই এসে হাজির।
কিরে কোথায় যাচ্ছিস।
বনবাসে।
ইসলামভাই হাসছে।
বিয়েতো করলে না, জ্বালা বুঝবে কি করে।
তোকে দেখে মনে হচ্ছে এবার একটা বিয়ে করে ফেলি।
কেউ মেয়ে দেবে না এই বুড়ো বয়সে।
ইসলামভাই জোড়ে হেসে উঠলো।
বলনা কোথায় যাচ্ছিস।
জানিনা। রাস্তায় বেরই আগে।
মানিপার্টস থেকে ফ্ল্যাটের ডুপ্লিকেট চাবিটা বার করলাম। ইসলামভাই-এর হাতে দিলাম।
এটা কি করবো।
ছোটমার হুকুম, রাতে একা থাকা যাবে না। তুমি ভজুরামকে ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেবে। আমি ঠিক সময় চলে আসব। বাকিটা ছোটমা তোমাকে বলে দেবে।
তোর সঙ্গে রাতে আমি থাকব। আপত্তি আছে ?
আছে।
তুই সোজা সুজি বলে দিলি।
ছোটমার হুকুম ভজুরাম ছাড়া কেউ থাকবে না।
আচ্ছা।
কিরে আমি কখন থেকে খাবার নিয়ে বসে আছি। ছোটমা দরজার বাইরে থেকে চেঁচাল।
আমি ফিরে তাকালাম।
মনুকে বলেছিস।
জিজ্ঞাসা করো।
ইসলামভাই হাসছে।
ওমা এসে দেখি দুটোর জায়গায় গোটা দশেক লুচি। মিত্রা ওপর থেকে সব গুছিয়ে নিচে চলে এসেছে। ইসলামভাই আমার প্লেট থেকে দুটো লুচি তুলে মুখে দিল। দেখা দেখি মিত্রা দুটো লুচি তুলে নিল।
ছোটমা চেঁচিয়ে উঠলো কিরে তোরা সবাই খেলে ও খাবে কি।
ওর জন্য বেশ তড়িজুত করে সাজিয়ে দিয়েছ। আমার জন্য দাও ? প্লেটে আরও আছে, খাক না।
আমি হাসছি। আমারা তিনজনে ভাগাভাগি করে খেলাম। তারপর বেরিয়ে এলাম।
গেটের বাইরে এসে দেখলাম, বাড়িটা বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে। চারদিকে সাজো সাজো রব।
মনে মনে যেটা ঠিক করেছি সেটাই করবো।
প্রথমে ভাবলাম রিমঝিমদের বাড়িতে যাই। ওকে মডেল করে কিছু ছবি আঁকি, তারপর ভাবলাম না ওর থেকেও তিয়ার শারীরিক গঠন আরও শার্প। ওকে মডেল করলে ভালো হয়।
রাজী হবে কি ? বলেই দেখি না।
সঙ্গে সঙ্গে তিয়াকে একটা ফোন লাগালাম। রিং বাজতেই ফোন ধরলো।
একটু চেঁচামিচির আওয়াজ। অপর প্রান্ত থেকে তিয়ার গলা ভেসে এলো।
হ্যালো অনিদা দাঁড়াও, আমি তোমাকে রিং ব্যাক করছি।
তিয়া ফোনটা কেটে দিল।
ট্র্যাংগুলার পার্কের দিকে হাঁটতে আরম্ভ করলাম।
তিয়া ফোন করলো।
বলো অনিদা। আমি তো ভড়কে গেছিলাম।
কেন।
তুমি আমাকে ফোন করবে, এ সৌভাগ্য আমার আছে। আমি কি রিমঝিম।
থাক তাহলে, আর যাব না।
তার মানে!
ভাবছিলাম হাতে একটু সময় আছে তোমার বাড়িতে যাব।
এ কি সৌভাগ্য আমার, চলে এসো।
তুমি কোথায় ?
ক্লাবে।
তাহলে থাক, তোমার বন্ধুরা আবার কি ভাববে।
দূর, সব বোগাস বুঝলে, এখানে আসি, টাইম পাস।
তোমার বাড়িতে এখন কে কে আছেন।
কেউ নেই।
কেন, বাবা মা ?
বাবা মা এখানে থাকেন না।
ওরে বাবা তাহলে যাওয়া যাবে না।
সত্যি তুমি এখনো সেকেলে রয়ে গেলে। একটু আধুনিক হওতো। ঝিমলিদি ঠিক কথা বলেছে।
হাসলাম, কোথায় তোমাদের বাড়ি ?
নিউ আলিপুর। তুমি কোথায় আছো বলো, আমি তোমাকে পিকআপ করে নিচ্ছি।
আমি রাসবিহারী কানেকটরে দাঁড়াই।
তাই দাঁড়াও আমি পার্কস্ট্রীটে আছি, আধঘন্টার মধ্যে তোমার কাছে পৌঁছে যাচ্ছি।
চলে এসো।
ফোনটা কেটেই, সুজিতদাকে একটা ফোন লাগালাম।
সুজিতদা ধরলো।
কিরে ব্যাটা তুই কোথায়, অ্যাতো গাড়ির আওয়াজ পাচ্ছি।
লেক মার্কেটের গা দিয়ে হাঁটছি।
এখন!
একজায়গায় যাব। তুমি কোথায় ?
অফিসে।
তোমার এতো পয়সা খাবে কে বলো।
কেন তুই আছিস।
হাসলাম।
আমার কাজ কতদূর।
চলছে।
আচ্ছা অনি সত্যি তোর রবিবার বিয়ে।
হয়ে গেছে।
কবে।
গতকাল। আগামীকাল বৌভাত। সেই জন্য তোমায় আসতে বলেছি।
আগামীকাল তোর বৌভাত! তুই এখন লেক মার্কেটে হাওয়া খাচ্ছিস ?
শোনোনা তুমি কখন বাড়ি ফিরছো।
কেন বলতো।
একটু দরকার আছে।
আরও একঘন্টা।
মানে আটটা বাজবে।
হ্যাঁ।
শোবে কখন।
সাড়ে এগারটা বারটা।
আমি যাব।
কি পাগলের মতো বলছিস, আমার ঠিক বধোগম্য হচ্ছে না।
তোমাকে বুঝতে হবে না। আমি যাব। জেগে থাকবে।
তোর বৌদিকে ভর্সা করে ফোনে বলতে পারি তুই আসবি।
অবশ্যই।
ঠিক বলছিস।
আরে বাবা….।
তোকে এখনো বিশ্বাস হয় না।
গেলেই বুঝতে পারবে।
ফোনটা কেটে দিলাম।
রাসবিহারী কানেকটরে এসে দাঁড়ালাম।
ঝিমলির মাকে একটা ফোন করলাম। সঙ্গে সঙ্গে উনি রিসিভ করলেন। ঝিমলির খবর জানতে চাইলাম। উনি বললেন ভাইজ্যাকে মিঃ মারান ঝিমলির জন্য খুব সুন্দর একটা থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। স্টেশন থেকে ঝিমলিকে গাড়িতে করে পিকআপ করে নিয়ে গেছে।
এমনকি মারানের ফোন নম্বর পর্যন্ত দিয়ে এসেছে। যদি কনো প্রবলেম হয় যেন একবার ফোন করে। উনি খুব খুশী।
ঝিমলি আমাকে বেশ কয়েকবার ফোনে সব জানাতে চেয়েছিল, আমার ফোনের স্যুইচ অফ।
টিনা, মিলি, অদিতির খুব প্রশংসা করলেন।
কাল সন্ধ্যার দিকে একটু সময় হবে।
কেন বলো।
আমার ট্র্যাংগুলার পার্কের বাড়িতে একটু আসতেন।
কেন ?
এমনি একটা ছোটখাটো ভোজসভা আছে।
বিয়ে করছো ?
ওই রকম আর কি।

উনি হাসছেন।
 
সত্যি অনি আজকের দিনেও তোমার মতো একটা সেকেলে ছেলের দেখা পাওয়া যায়।
তা নয়। আমার আত্মীয় স্বজন বলতে কেউ নেই। তাই নিজেকেই….।
যাব।
ঝিমলি নেই। রিমঝিমকে সঙ্গে নিয়ে চলে আসবেন। মানে সবাই।
উনি হাসছেন।
ঠিক আছে, ঠিক আছে।
ফোনটা কেটে দিলাম।
সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে না। কয়েকটা লজেন্স কিনলাম। আর চিকলেট ক্যান্ডি।
চার মাথায় এসে দাঁড়ালাম। একটা ক্যান্ডি মুখে দিয়ে চিবোতে শুরু করলাম। ফোনটা বেজে উঠলো দেখলাম তিয়ার ফোন।
কোথায় আছো ?
দেখো আমি মেট্রো স্টেশনের গায়ে দাঁড়িয়ে আছি।
হুস করে একটা গাড়ি আমার সামনে এসে দাঁড়াল। বেশ দামী গাড়ি। দরজা খুলে গেল। ভতরে দেখলাম তিয়া ড্রাইভিং সিটে বসে। আমি উঠে বসলাম। দরজা বন্ধ করলাম। হাল্কা এসি চলছে। তিয়া গাড়ি স্টার্ট করলো।
তোমাকে দূর থেকে দেখেছি কিন্তু চিন্তেই পারি নি।
কেন।
তুমি এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছো। যেন কনো স্কুলের ছেলে কোচিনে যাবে।
হাসলাম।
এগুলো কি নিয়ে বেরিয়েছো।
ছবি আঁকার ষন্ত্রপাতি।
তুমি ছবি আঁকো!
একটু আধটু। তবে আহামরি কিছু না।
কোথায় গেছিলে।
তোমার কাছে যাব বলেই বেরিয়েছি।
আমার কাছে যাবে! ছবি আঁকবে! ঠিক বুঝতে পারলাম না।
চলো গিয়ে বোঝাচ্ছি।
যদি আমাকে না পেতে।
তাহলে রিমঝিমের কাছে চলে যেতাম।
আমি লাকি নম্বর ওয়ান। রিমঝিমকে কিছুতেই এই সুযোগ দেব না।
আমি মনে মনে হাসছি। এরা চারজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু, কিন্তু একে অপরের প্রবল প্রতিদ্বন্দী।
আমাকে দেওয়া ম্যাসেজগুলো তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ।
আমি পকেট থেকে একটা ক্যান্ডি বার করে তিয়ার দিকে এগিয়ে দিলাম। এই বার ওর দিকে নজর পরলো। চোখ নামিয়ে নিলাম। এ কি পোষাক পরেছে তিয়া! এতক্ষণ খেয়ালি করিনি। কালো রং-এর ফিন ফিনে একটা টপ পরেছে মসারির নেটের মতো। ওর অন্তর্বাস পুরো দেখা যাচ্ছে। অন্তর্বাস বললে ভুল হবে পুরো শরীরটা আমার চোখের কাছে উন্মুক্ত। এমনকি সুগভীর নাভীর নীচে যেখানে চওড়া বেল্টে প্যান্টের কোমরবন্ধনী। ওর পরনে জিনসের থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট। পায়ে রিবকের একটা জুতো। ছোটো মোজা। আমার চোখ দেখে তিয়া বুঝতে পেরেছে। মুচকি হাসছে।
আমি ভিউগ্লাস দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছি। তিয়া আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের পাশ দিয়ে গাড়ি ঘোরাল। আমি জানি এখানে সব নামীদামী লোকেদের বাস। কেউ কারুর খোঁজ রাখে না। তিয়া এসে যে বাড়িটার সামনে দাঁড়াল, এই বাড়ির পাশ দিয়ে আমি বহুবার হেঁটে গেছি। হর্ণ বাজাতেই গেট খুলে গেল। গেটের দারোয়াণের পোষাক দেখেই বোঝা যায় বাড়িটা যে সে লোকের বাড়ি নয়।
তিয়া গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করলো। আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসলো। চলো।
আমি একটু ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছি। গাড়ির ভেতর থেকেই চারিদিক লক্ষ্য করলাম।
বুঝতে পারছি তিয়া তাড়িয়ে তাড়িয়ে আমার এই ব্যাপারটা উপভোগ করছে।
আমি দরজা খুলে নিচে নামলাম। উচ্চবিত্তের বাড়ি বলতে যা বোঝায় একদম সেরকম। তিয়া আমার কাছে এগিয়ে এলো। চলো ভেতরে চলো।
সত্যি আমি তিয়ার পাশে ভীষণ আন-স্মার্ট।
তিয়া আমি দুজনে ওদের বাড়ির ভেতরে এলাম। নিচের ফ্লোরটা বসার জায়গা। বেশ কয়েকটা বড়ো বড়ো অয়েল পেন্টিং আছে। একেবারে টিপ টপ সাজানো গোছান। পুরণো দিনের আসবাব।
আমি কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। একদিকে একটা বাঘের মডেল। দেখেই বুঝতে পারলাম তিয়াদের বাড়ির পূর্ব পুরুষেরা কেউ শিকারী ছিলেন। না হলে এরকম মডেল থাকা সম্ভব নয়।
ওকে জিজ্ঞাসা করলাম। সঙ্গে সঙ্গে উত্তর পেলাম। ঠিকই ধরেছি আমি, তিয়ার দাদুর শিকারী ছিলেন। এই বাঘ তাঁর হাতের শিকার। কাছে গেলাম ভালকরে দেখলাম। তিয়া দেখাল, দাদু এখানে গুলি করেছিল। আমায় গুলির জায়গাটাও দেখাল। চলো আমার ঘরে চলো।
ড্রইংরুমের ভেতর দিয়েই ওপরে ওঠার সিঁড়ি। আমি ঘোরান সিঁড়ি দিয়ে ওর পেছন পেছন ওপরে উঠে এলাম।
ওর ঘরে ঢুকে মনটা ভরে গেল। প্রায় চারশো স্কয়ার ফিটের ঘর। স্ট্যান্ড এসি। একসাইডে ওর শোবার খাট এবং দামি পুরনো দিনের আসবাব। মাঝখানে একটা ছোট্ট সেন্টার টেবিল। তার চারদিকে সোফা। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। তিয়া আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি যে গোগ্রাসে গিলছি, সেটা ও বুঝতে পারছে।
বসো, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলে হবে।
আমি সোফায় বসলাম। এখানকার আদব কায়দা সত্যি আমার অজানা।
কি খাবে ?
এক গ্লাস প্লেন জল।
তিয়া খিল খিল করে হেসে ফেললো।
হাসলে যে।
ভাবছি তুমি কি করে অতো বড়ো কাগজের মালিক হলে।
আমি হই নি। আমাকে করা হয়েছে।
তাহলে তুমি সামলাচ্ছ কি করে।
ওই আর কি।
উঁহুঁ সে বললে শুনবো না। আমি খোঁজ খবর নিয়েছি। তোমাকে অফিসে সবাই রয়েল বেঙ্গল টাইগার বলে।
হবে হয়তো, আমার সামনে তো কেউ বলেনা।
একজন গুড এ্যাডমিনিস্ট্রেটর না হলে এই ধরণের কথা অফিসের লোকজন বলে কি করে ?
আমি হাসলাম।
তুমি এতো সাধারণ, তোমাকে এতো ভায় পায় কেন লোকে, খুব জানতে ইচ্ছে করে।
খোঁজ করো জেনে ফেলবে।
এ-মা তুমি জল চেয়েছিলে। দাঁড়াও নিয়ে আসি।
তিয়া বেরিয়ে গেল।
ভেবেছিলাম ঘরের বাইরে গিয়ে তিয়া চেঁচিয়ে উঠবে আয়া।
তা করলো না নিজেই বেরিয়ে গেল।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে ঘরটার চারিদিক দেখলাম। বেশ কয়েকটা পেন্টিংও আছে তিয়ার ঘরে। ছোটো ছোটো। মনে হয় খুব একটা দামি আর্টিস্টের আঁকা নয়। তুলির স্ট্রোকগুলো ভীষণ দুর্বল। কালার কমবিনেশনটা এমন উগ্র খুব চোখে লাগে। মনে হচ্ছে বুক ফেয়ার থেকে কিনে বাঁধান। কলকাতা আর্ট কলেজের বহু ছাত্র বুকফেয়ারের ওই দশদিন মাঠে বসে ছবি আঁকে। আমি তিয়াদের বয়সী মেয়েদের, যাদের একটু পয়সা আছে, ওদের কাছ থেকে ছবি কিনতে দেখেছি।
কিগো ছবির মধ্যে ঢুকে গেলে নাকি।
ফিরে তাকালাম। তিয়ার ঝলমলে শরীরটার দিকে ঠিক ভাবে তাকাতে পারছি না। বার বার চোখ নামিয়ে নিচ্ছি। তিয়া খুব স্বাভাবিক। নিজের মনকে বোঝালাম তুই কি রে অনি। তুই নাকি তিয়াকে মডেল করে ছবি আঁকবি। ও যদি তোকে বলে অনিদা তুমি আমার একটা নুড স্কেচ করে দাও।
মনে মনে হাসলাম।
কিগো নিজের খায়ালে নিজে হাসছো।
কথাটা ঘুরিয়ে নিলাম। এই ছবিটা কি তুমি বুক ফেয়ার থেকে কিনেছো।
কি করে বুঝলে।
এমনি বললাম।
নিশ্চই তুমি কিছু একটা বুঝেছো, না হলে বলতে পারতে না।
তারমানে তুমি বুক ফেয়ার থেকেই কিনেছ।
হ্যাঁ।
আমি এগিয়ে এসে তিয়ার হাত থেকে জলের গ্লাস নিলাম।
তিয়া তোমার বাড়িতে কেউ নেই।
মা-বাবা কয়েকদিনের জন্য একটু বাইরে গেছেন।
কোথায় ?
হাঁসিমারাতে আমাদের তিনটে টি-গার্ডেন আছে। কলকাতার অফিস থেকেই সব কিছু হয়, কি একটা প্রবলেম হতে বাবা গেলেন সঙ্গে মাও গেলেন। কয়েকদিনের মধ্যেই চলে আসবেন।
তুমি গেছ।
মাসে একবার যাই। অনিদা তুমি ম্যাজিক জান।
হ্যাঁ মনের ম্যাজিক। ওটা কাউকে শেখানো যায় না, অনুভব করতে হয়। এবার আমার আসার কারণটা তোমাকে বলি।
গ্লাসটা সেন্টার টেবিলে রাখলাম।
আমি একটা কাজ করছি বুঝলে তিয়া। একটা এ্যাড এজেন্সির কিছু প্রমোসনের কাজ।
তুমি!
কেন, করতে পারি না।
না মানে।
আমার আবার কিসের টাকার দরকার।
হ্যাঁ!
আমার টাকার দরকার আছে। কাগজের জন্য। অনেক টাকা পেলাম, তাই কাজটা নিয়েছি।
তিয়ার চোখদুটো বদলে গেল। চোখের তারা দুটো অন্য কিছু কথা বলতে চায়।
রিমের মা বলছিল তোমার কাগজকে এ্যাড পাইয়ে দিয়েছে।
হ্যাঁ দিয়েছেন। সরকারী দপ্তরের এ্যাড। কেন ?
এমনি তোমাকে জিজ্ঞাসা করলাম। আচ্ছা অনিদা তোমার কনো আত্মসম্মান বোধ নেই।
কিসের জন্য বলো।
তুমি তোমার কাগজের হয়ে ওনার কাছে এ্যাড চেয়েছো কেন।
কাগজ এ্যাডের ওপর নির্ভরশীল। তাছাড়া কাগজের প্রতি আমারও একটা দায়িত্ব আছে।
সেটা ঠিক, তা বলে ওনাকেই তোমাকে চাইতে হবে।
বুঝলাম ব্যাপারটা নিয়ে চার বন্ধুর মধ্যে কিছু একটা আলোচনা হয়েছে। কথাটা ঘোরাবার চেষ্টা করলাম।
ও ছেড়ে দাও তিয়া। তুমিতে মডেলিং করো ?
করি।
তুমি আমার প্রমোসন গুলোয় মডেলিং করবে।
অফকোর্স কেন করবো না। কিন্তু তুমি কি আমাকে নেবে ?
নেবো। তোমাদের চারজনকেই একটা সুযোগ দেব।
তাহলে আমি করবো না।
কেন।
আমি ওদের সঙ্গে এক সঙ্গে কাজ করবো না।
প্রোডাক্ট একটা নয়। অনেক গুলো আছে। সবেতেই তুমি মডেল হবে, তা হবে না।
ঠিক আছে। তাহলে করবো। কিন্তু তোমাকে একটা প্রমিস করতে হবে, আমি যেই প্রোডাক্টে কাজ করবো সেই প্রোডাক্টে অন্য কেউ কাজ করতে পারবে না।
হাসলাম। তোমার স্টিল গুলো আমাকে একটু দেখাবে।
নিশ্চই। কেন দেখাব না। তিয়া ওর দেয়াল আলমাড়িটার দিকে এগিয়ে গেল। আমি সোফায় বসতে বসতে বললাম। তোমার যে গুলো পছন্দ সেগুলো আমায় দাও।
তিয়া বেছে বেছে আমায় ফটো দিল। ছবিগুলো বেশ ভালো। বুঝলাম এই ঘরেই তোলা।
কিছু সিডিতে আছে। তোমায় দিতে পারি। ওগুলো আউটডোর স্যুটিং।
আমি ল্যাপটপ নিয়ে আসিনি।
নিয়ে যাও, সময় করে দিয়ে যাবে।
ঠিক আছে।
তিয়া আমার সামনে বসে। ওর ডাগর চোখে অনেক জিজ্ঞাসা। ওর চোখ তাই বলছে।
আমি তোমার কয়েকটা ছবি আঁকবো। তোমার আপত্তি আছে।
একটুও না। এই ড্রেসে, না চেঞ্জ করবো।
তোমায় যদি কস্টিউম আর টু পিসে দেখতে চাই, দেখাবে ?
তুমি নুড দেখতে চাইলেও, দেখাতে পারি।
একটু থমকে গেলাম। তিয়া বলে কি!

না তার দরকার পরবে না। আমার যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু হলেই চলবে।
 
তাহলে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করো আমি আসছি।
তিয়া বেরিয়ে গেল। ঘরটা বেশ ঠান্ডা হয়ে গেছে। তবু কেমন যেন আমি ঘেমে যাচ্ছি। কাগজ বার করলাম পেন্সিল বার করলাম, রেডি হলাম। ঘরের দরজাটা বন্ধ। বশে বশে পোজ গুলো ভাবছিলাম কি ধরণের ড্রইং করবো।
তিয়া ঢুকলো।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। তিয়ার হাইট প্রায় পাঁচ ফুট নয় ইঞ্চি। মেয়েদের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভালো হাইট। বুক থেকে তলপেট পর্যন্ত একফোঁটা মেদ নেই, শরীরটা ধরে রাখার জন্য বেশ ভালোরকম চর্চা করে। ব্রা-প্যান্টি যা পরেছে তা না পরার মতো। শরু ফিতেয় ঢাকা। টকটকে ফর্সা চেহারায় লাল রঙের ব্রা-পেন্টিতে ওকে মোহময়ী করে তুলেছে। আমি ওর দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে। তিয়া হাসলো।
পছন্দ।
আমি নিজে যথেষ্ট স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা করলাম। এই ঘরে ঢুকেই দেখেছি দুটো স্পট লাইট আছে।
তিয়া আমার সামনের সোফায় এসে বসলো। চোখ ফেরাতে পারছি না ওর শরীর থেকে। বুঝতে পারছি তিয়া আমার চোখের ভাষা পড়ার চেষ্টা করছে।
এবার বলো। তুমি কেমন ভাবে আঁকতে চাও।
তোমার ঘরে ওই স্পট লাইটটা জ্বলে না।
হ্যাঁ। প্রয়োজন লাগে না, তাই জ্বালাই না।
লাইটটা জ্বালাও।
তিয়া সোফা থেকে উঠে গেলো। হাঁটার ভঙ্গির মধ্যে উদ্ধত ভাব। একটা ছন্দ আছে।
তিয়া লাইটা জ্বালিয়ে আমার দিকে তাকাল।
ঠিক লাইটটার নিচে দাঁড়াও।
তিয়া হেঁটে গেল।
ঠিক ফরটি ফাইভ ডিগ্রী এ্যাঙ্গেলে দাঁড়াও।
কি ভাবে বলো।
আবার বললাম।
তুমি উঠে এসে দেখিয়ে দাও।
আমি উঠে গিয়ে ওকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে এলাম। তিয়া হাসলো।
আমি সোফায় ফিরে এসে ড্র করতে শুরু করলাম। তিনটে এ্যাঙ্গেলে তিনটে স্কেচ করলাম। একটা বসে দুটো দাঁড়িয়ে।
আবার ওর কাছে গেলাম। ওকে ঠিক মতো দাঁড় করিয়ে ওর সামনে থেকে স্কেচ করলাম। এইভাবে একের পর এক গোটা পনেরো স্কেচ করে ওকে রিলিফ দিলাম।
আমি সোফায় এসে বসলাম। তিয়া বললো একটু দাঁড়াও, আমি আসছি।
আমি ছবি গুলো দেখছিলাম, আর নিজের প্রশংসা নিজেই করছিলাম। কনোদিন মডেলিং করিনি, কিন্তু দেখে দেখে খুব খারাপ স্কেচ আমি করিনি। ছবিগুলো নিয়ে নিজেই একটু একটু কারেকসন করছিলাম, তিয়া এসে ঢুকেই আমার পাশে বসলো। হাতে দুটো অরেঞ্জ জুসের গ্লাস। টেবিলে গ্লাস দুটো রেখে, ওআও বলে চেঁচিয়ে উঠলো।
আমি ওর দিকে তাকালাম।
তুমি কি দারুণ এঁকেছো অনিদা।
হাসলাম।
আগে কোনদিন এইভাবে সিটিং করেছো।
একবার।
কোথায়।
আমরা যেখানে শিখি। আর্ট কলেজের কিছু ছাত্র-ছাত্রী এসেছিল তাদের কাছে।
এবার তুমি চেঞ্জ করে নাও।
তোমার কাজ শেষ।
হ্যাঁ।
তিয়া বেরিয়ে গেল, কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো, এবার অন্য পোষাক, জিনসের প্যান্ট আর গেঞ্জি।
দুজনে অরেঞ্জজুস খেলাম।
আমি এবার বেরবো তিয়া।
তুমি কোথায় যাবে।
লেক মার্কেট।
চলো তোমায় পৌঁছে দিই।
আমি চলে যেতে পারবো।
কটা বাজে খেয়াল আছে।
কটা।
সাড়ে দশটা, এখান থেকে এখন ট্যাক্সি পাবে না।
হাঁটতে হাঁটতে ওই মোড়ে চলে যাব।
সত্যি অনিদা, আচ্ছা আমি ছেড়ে দিয়ে আসলে তোমার কনো আপত্তি আছে।
হাসলাম। চলো।
দুজনে নিচে নেমে এলাম।
তাহলে তোমাকে নিয়ে আমি পরিকল্পনা করতে পারি।
অবশ্যই।
গাড়িতে আসতে আসতে ওর সঙ্গে ছেঁড়া ছেঁড়া টুকরো টুকরো কথা হলো।
সঠিক জায়গায় এসে আমি ওকে গাড়ি থামাতে বললাম, এখান থেকে সুজিতদার বাড়ির দূরত্ব মিনিট চারেক। তিয়াকে বিদায় দিলাম।
সুজিতদার বাড়ির কাছে এসে মোবাইলটা বার করে অন করলাম। চারজনকে ম্যাসেজ করলাম।
তোমাদের অনিদা হঠাৎ একটা বিয়ে করে ফেলেছে। তাদের কাগজের মালকিনকে। যদি পারো আগামীকাল সন্ধ্যায় একবার এসো। ফোনটা অফ করে দিলাম।
সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে এলাম। যাক এখনো সেই নেমপ্লেটটা সুজিতদা টাঙিয়ে রেখেছে। পরিবর্তন করে নি। বেল বাজাতেই বৌদি দরজা খুলেই চেঁচা মিচি শুরু করে দিল। ভেতরে এলাম। জুতো খুললাম। দেখলাম বৌদির চেঁচা মিচিতে ভেতরে থেকে সুজিতদা আর বছর সাত আটেকের একটা বাচ্চা ছেলে বেরিয়ে এলো। সুজিতদার ছেলে। ওর যখন এক বছর বয়স শেষ এসেছিলাম। ছেলেটা আমাকে দেখে হাসছে।
কি গুবলুবাবু অনি কাকাকে নিশ্চই চিনতে পারছ না।
তোকে চিনবে কি করে তখন ওর এক বছর বয়স। বৌদি বললো।
আয় ভেতরে আয়। সুজিতদা বললো।
কথা বলতে বলতে ভেতরে গেলাম।
আমি বেশিক্ষণ বসবো না। আরও এক জায়গায় যেতে হবে।
এতো রাতে কোথায় যাবি ? বৌদি বললো।
অনেক কাজ, বুঝলে বৌদি।
অনেক বড়ো হয়ে গেছিস এখন, তাই না ?
সুজিতদা বৌদি কিন্তু গন্ডগোল করছে।
বৌদি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
তোর একটুও পরিবর্তন হয় নি ও সেদিন ঠিক বলেছিল।
হবে কি করে। পরিবর্তন হলে এই অবেলায় তোমার এখানে আসতাম।
উঃ মুখে যেন খই ফুটছে। কি খাবি ?
স্রেফ জল। একদিন বৌকে নিয়ে এসে পেট ভরে খেয়ে যাব।
তোর বৌ আসবে ?
অনি যখন আসতে পেরেছে তার বৌও আসবে। তখন সে মালকিন নয়। অনির বৌ।
তাহলে আমি যা শুনেছিলাম সেটাই সত্যি।
কি শুনেছিলে বলো।
তোর সঙ্গে তোর হাউসের মালকিনের প্রেম নিবেদন চলছে।
বৌদি আজ থেকে সাতবছর আগে তোমায় একটা মেয়ের কথা বলেছিলাম তোমার মনে আছে।
হ্যাঁ।
কি নাম বলো।
মিত্রা।
এইতো বেশ মনে রেখেছো।
মনে রাখবো না। তার কথা বলে কতোদিন চোখের জল ফেলেছিস।
ফেলেছি বুঝি।
বৌদি হাসছে।
সেই মিত্রাই এই মিত্রা।
অ্যাঁ।
কিগো বুলা তুমি তাহলে ভুল ইনফর্মেসন দিয়েছ।
সে কাগজের মালকিন ছিল না।
তখন তার বাবা ছিল। এখন সে হয়েছে।
সুজিতদা জোরে হাসলো। আর যা শুনেছ ওকে বলতে যেও না। সব কথা নস্যাৎ করে দেবে।
না সুজিতদা বৌদি যদি ওর সম্বন্ধে কোন খারাপ কথা শুনে থাকে তারও একটা রিজিন আছে।
একটু থামলাম।
সেই নিয়েই মেতে আছি সুজিতদা। ভুলটা যে কতটা অসত্য তা প্রমাণ করতে হবে।
সুজিতদার দিকে তাকালাম।
যাক কালকে কিন্তু ভাইপকে নিয়ে যাওয়া চাই।
আমি ভেতরের ঘরে চলে এলাম। সুজিতদার সঙ্গে কাজের কথা বললাম। ছবি দেখালাম।
সুজিতদা অবাক।
তুই এখন ছবি আঁকতে বেরিয়েছিলি!
হ্যাঁ।
সুজিতদা চেঁচিয়ে উঠলো, বুলা দেখে যাও অনির কীর্তি।
বৌদি প্লেটে করে মিষ্টি, জল নিয়ে এসেছে।
কিগো সাদা জল না কোল্ডড্রিংকস ?
কোল্ডড্রিংকস।
বৌদি ছবিগুলো দেখল, হাসল।
তোর না আজ কালরাত্রি।
সেই জন্যই ফাঁক পেয়ে গেলাম।
সুজিতদা হাসছে।
কাজের প্রতি তোর ডেডিকেসনকে আমি সত্যি শ্যালুট করি।
তোমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছি।
দেব এক থাপ্পর।
তা তুমি দিতে পার বৌদি। কিন্তু যে লোকটি টাকা দিয়েছে। তার কথা একবার ভাব। তাকে গ্যাস খাইয়ে তখন বুঝিয়ে দিয়েছি। যদি করে দিতে না পারি, তাহলে কতোবড় প্রেসটিজ বলো।
এই জন্য তোর দাদা তোকে দিয়েছে।
আমি সব নয় বৌদি, দাদার টিমকেও কাজ করতে হবে।
ও নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।
আমি একটা মিষ্টি গুবলুবাবুকে দিলাম। আর একটা মিষ্টি নিজের মুখে তুললাম।
তোকে কিন্তু আজ দেখে ভীষণ ভাল লাগছে।
ও কথা বলো না, মিত্রা শুনলে রাতে দরজা বন্ধ করে ঠ্যাঙাবে।
দেখেছো কি টক টক করে কথা বলছে। সেই অনি আর এই অনি! বৌদি বললো।
জানিস অনি, তুই সেদিন চলে আসার পর। আর কাজ হয় নি।
কেন।
আমার মার্কেটিং ম্যানেজার, সেলসের ছেলে আমাকে এসে ছেঁকে ধরলো।
কেন আমাকে পিটবে নাকি!
দূর।
শোন না আগে কি বলে। বৌদি বললো।
তুমি দাঁড়িয়ে রইলে কেন, বসো।
বৌদি বসলো।
ওরা দুমাস ধরে যাকে বোঝাতে পারে নি, তুই এক ঘন্টায় তাকে কি করে বোঝালি।
সত্যি জান কি সুজিতদা, আমি ওর চোখ মুখ দেখে ধরে ফেলেছিলাম।
ভদ্রলোক একটু ক্রিয়েটিভ আর্ট পছন্দ করেন। এই গড্ডালিকা প্রবাহের মতো যা চলছে তা ওঁর মন পসন্দ নয়। আমি সেই এ্যাঙ্গেলে কথা বললাম, মাছ বড়সিতে বিঁধলো।
শুনলে বুলা, অনির কথা শুনলে। তাহলে ও যদি মালিক না হয় কে হবে।
তুই বেশ সুন্দর কথা বলতে শিখেছিস।
সব তোমার আর্শীবাদ বৌদি। আমার জীবনে কয়েকটা বছর, তোমরা দুজনে আলো দিয়েছো।
আমি ভুলি কি করে।
সব শালা নেমকহারেমের জাত। সুজিতদা বললো।
রাগ কোর না দাদা। তোমার হাতের পাঁচটা আঙুল সমান, তুমি নিজে বলো। অনি গ্রামের ছেলে। শহরে উড়ে এসে জুড়ে বসতে চাইছে। তাকে নেমকহারামী করলে চলবে।
আর বক বক করিস না।
বেশ কিছুক্ষণ সুজিতদা বৌদির সঙ্গে গল্প করলাম।

তারপর উঠে এলাম। তিনজনে আমাকে নীচ পর্যন্ত এগিয়ে দিল।
 
তুই এখন কোথায় যাবি।
বাড়িতে ঢোকা নিষেধ নতুন বৌ-এর মুখ দেখা যাবে না। তাই নিজের খুপরিতে।
তোর সেই ফ্ল্যাটে ?
হ্যাঁ।
চল তোকে ছেড়ে দিয়ে আসি।
কলকাতা শহরে সারারাত ট্যাক্সি চলে।
সুজিতদা হাসছে।
তোর সঙ্গে কথায় পেরে ওঠা যাবে না।
কালকের কথাটা মথায় থাকে যেন। আর শোনো ছবিগুল সঙ্গে করে নিয়ে যাবে।
সুজিতদা বৌদি দুজনে হাসছে।
এখান থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের পথ আমার বাড়ি। তবু আমি সেখানে যেতে পারব না। কালরাত্রি। নিজের মনে হেঁটে বড়ো রাস্তায় চলে এলাম। একটা ট্যাক্সি ধরলাম।
ট্যাক্সি থকে যখন নামলাম তখন সাড়ে এগারোটা হবে। গেটের কেয়ারটেকার ছেলেটি আমায় দেখে হাসলো।
দাদা অনেকদিন পর।
তুমি ভালো আছো।
হ্যাঁ দাদা।
আমার ঘরে কেউ এসেছে।
দু’জন ভদ্রলোক এসেছেন। একজনকে আগে দেখেছি। আর একজন নতুন।
লিফ্টের দিকে এগিয়ে গেলাম।
বুঝলাম ইসলামভাই আর ভজু। ওপরে উঠে এলাম। দরজায় নক করতেই দরজা খুলে গেল।
গেটে ভজুরাম।
কে রে ভজু। ভেতর থেকে ইসলামভাই-এর গলা পেলাম।
অনিদা।
ভেতরে এলাম।
তুমি এতরাত পর্যন্ত কোথায় ছিলে ?
কাজ করছিলাম।
বড়মা কতবার ফোন করলো জানো।
তুই কিছু বললিনা কেন।
ইসলামদার সঙ্গে কথা হয়েছে।
তুই খেয়েছিস।
তুমি আস নি খাব কি করে।
বেশ করেছিস। পেটে ভিঁজে গামছা বেঁধে থাক।
ঘরে এলাম।
দেখলাম ইসলামভাই আমার বিছানায় টান টান হয়ে শুয়ে আছে। আমায় দেখে হাসল।
একটা চকচকে চাদর পাতা। ঘরটা মনে হয় আগের থেকে একটু চকচক করছে।
ঘরটার কি অবস্থা করেছিলি।
কতদিন আসিনি সেটা বলো।
তা ঠিক। কাজ হলো।
হ্যাঁ। আর একটা বড়ো কাজ বাকি আছে, কাল সকালে সারব।
হাত মুখ ধুয়েনে তিনজনে বসে খাই।
তুমি খেয়ে আস নি ?
তোর এখানে আসব, খেয়ে আসব কেন। দিদিকে বললাম দিয়ে দাও, তিনজনে একসঙ্গে খাব।
তুমি থাকবে না কেটে পরবে।
তুইতো থাকতে দিবি না ?
আমি সে কথা বলিনি, তোমার ওখানে কি কাজ আছে না আছে আমি কি করে জানব।
ওখানকার কাজ সাল্টে দিয়েছি। বাকি যে টুকু আছে রতন, আবিদ করবে, লোক আছে।
আচ্ছা ইসলামভাই আমাকে একটা কথা বলতে পার।
বল।
টোটাল ব্যাপারটার স্পনসর কে।
জেনে তোর লাভ।
আমার কোন লাভ নেই। তবু একবার জিজ্ঞাসা করা কর্তব্য তাই।
ইসলামভাই হাসছে।
তুই ব্যাটা বহুত ঘাঘু মাল। ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানিস না।
কিগো তুমি এখনো হাত মুখ ধোও নি। আমার খাবার গরম হয়ে গেছে। খিদে লেগেছে।
তুই রান্নাঘরের খোঁজ পেলি কি করে!
এসে ঘর গোছালাম, ও বাড়ি থেকে আসার সময় দিদিমনি নতুন চাদর দিয়েছিল পাতলাম।
ওই জন্য, তখন থেকে ভাবছি এ চাদর এলো কোথা থেকে। এতো চকচকে।
ব্যাগে তোমার পাজামা পাঞ্জাবী আছে। পরে নাও।
তুই রেডি।
হ্যাঁ।
দাঁড়া আমি ঝট করে হাত-মুখ ধুয়ে আসছি।
বাথরুমে গেলাম। তাড়াতাড়ি কাজ সারলাম। দেখি ইসলামভাই ছোট টেবিলটা টেনে নিয়ে কাগজ পেতেছে।
কি এনেছিস ভজুরাম।
আলুপরটা মটর পণির আর চিকেন।
কিগো ইসলামভাই মেনুটা মনে হচ্ছে মিত্রার সিলেকসন।
ইসলামভাই হাঁসছে।
ও বাড়ির লেটেস্ট খবরা খবর নিতে নিতে খাওয়া শুরু করলাম।
ইসলামভাই বললো তুই ফোনের স্যুইচ অফ করে রেখেছিস। মামনি ফোন করেছিল, আমি কতোবার ফোন করেছি। আবার টেনসনে পরে গেছিল সবাই। কেন তুই এরকম করিস ?
আমি হাসছি।
একটু বললে যেখানে সব ঝামেলা মিটে যায়, সেখানে চেপে রাখার কি দরকার।
আমি শুনে যাচ্ছি।
অনিমেষদা বিধানদার সঙ্গে আমি দামিনী কাল একঝলক কথা বলেছি।
কি বললো।
দামিনীকে ওখানকার দায়িত্ব নিতে বলছে।
মাসি কি বলছে।
তোর সঙ্গে কথা বলে জানাবে।
অনিমেষদা কি বললো।
হাসছে। বিধানদাকে টিপ্পনি কেটে বললো, বিধানবাবু অনি এখন বড়ো নেতা।
ঠিকঠাক খাইয়েছো।
সাদা ভাত, মুড়িঘন্টের ডাল, মাছ, সামান্য দই মিষ্টি খেয়েছে দুজনে। খুব ভালো মুডে ছিল।
ওদিককার ব্যাপারে তোমায় কিছু বললো।
গ্রীণ সিগন্যাল দিয়েছে। এবার আমাকে কাজের কাজ করতে হবে।
চিন্তা ভাবনা করলে।
কালকের কাজটা মিটুক।
কতজনের এ্যারেঞ্জমেন্ট।
দাদা বললো অনি একটা পাগল বুঝেছো ইসলাম। কাকে কাকে বলবে আমি নিজেও জানিনা। তুমি বরং তিনশো জনের কথা মাথায় রেখে ব্যবস্থা করো।
হাসলাম।
আমি এর মধ্যে মাথা গলাব না।
সে বললে হয়।
খাবার গুলো বেশ ভাল বানিয়েছে বুঝলে ইসলামভাই।
আমি জাকিরকে বলেছি একবারে রিচ করবি না। ঘরোয়া বানাবি। ব্যাটা আমার কথাটা রেখেছে।
কালকের মেনু।
বলাযাবে না।
সেকিগো! বিয়ে আমার, মেনু জানতে চাইছি, বলছো কিনা বলা যাবে না।
ইসলামভাই হাসে।
ইসলামভাই-এর ফোনটা বেজে উঠল। নামটা দেখে বললো, মামনি।
কিরে মামনি।
বুবুন এসেছে।
তিনজনে বসে খাচ্ছি। তোকে খাওয়া হয়ে গেলে, ফোন করতাম।
কখন এসেছে।
সাড়ে এগারোটা নাগাদ।
ওর ফোন বন্ধ কেন।
আমার ফোন খোলা আছে।
পকেট থেকে বার করে একবার দেখ না।
ভজু দেখতো।
অনিদা ঠ্যাংটা একটু রেখো।
কিরে তোর ঠ্যাং ও খাচ্ছে।
তাহলে কি।
ওরে সকাল থেকে ওর মুখ বন্ধ নেই, শরীর খারাপ করবে। ডাক্তারদাদা সকালে একবার বকেছে।
নাগো অনিদা দিদিমনি মিছে কথা বলছে।
আমি ভজুর দিকে তাকালম।
তোমার ফোন বন্ধ।
কিরে, দেখলি।
তুই কোথায় ?
বড়মার ঘরে শুয়ে আছি।
কেন ?
তোর ঘরে সব মেয়েরা।
মেয়েরা মানে।
অদিতি, সুরো বাড়ি যায় নি। ফেল সবাই ও ঘরে।
তাই!
ছোটমার ঘরে দাদা মল্লিকদা। আগামীকাল আরও লোক আসবে ডাক্তারদাদার বাড়িতে শোবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কেন ?
কোন আবার কিরে, এতো লোক শোবে কোথায় ?
দেখ আমি কিছুই জানি না।
তোর সব বড় বড় ব্যাপর।
এই রিটার্নটা কাল পাবি।
সরি সরি আর বলবো না।
তোর কাছে আর কে শোবে ?
ছোটমা বড়মা।
ওঘরে।
মাসি কবিতা। ইসলামভাই প্রচুর জিনিসপত্র ঢুকিয়ে গেছে।
মামনি ওরা বার করে নি ?
কোথায় রাখবে, তুমি কিছু বলোনি।
আমি রতনকে ফোন করছি।
এখন আর তোমায় ফোন করতে হবে না। সারাদিন পরে সবে দু’জনে একটু শুয়েছে।
বুবুন।
উঁ।
তুই কখন আসবি।
দেখি।
দেখি কেন, ইসলামভাই-এর সঙ্গে চলে আসবি।
ঠিক আছে, এখন রাখ।
খাওয়া শেষ ?
শেষের পথে।
মিত্রা ফোন বন্ধ করল। খাওয়া শেষ হতেই, বেশ ঘুম পাচ্ছে। ইসলামভাইকে বললাম, আমি এই সাইডে তুমি ওই সাইডে। ভজুরাম মাঝখানে।
ইসলামভাই বললো তাই হোক।
ভজুরামকে বললাম মাথাটা একটু কড়কে দে।
ঠিক বলেছো অনিদা তোমার মাথাটা অনেকদিন ভাল করে টেপা হয় নি।
ভজুরাম সব গুছিয়ে গাছিয়ে নিল। আমি বিছানায় টান টান হয়ে শুলাম।
ইসলামভাই, কাল কিন্তু আমি অনেক ভোর ভোর বেড়িয়ে যাব।
তুমি জাগলে ভালো, না হলে ডাকব না। মনে রেখো।

কাল আবার কোথায় যাবি ?
 

Users who are viewing this thread

Back
Top