What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

যে যেমন করে চায় তুমি তাই /কামদেব (1 Viewer)

[চৌষট্টি]


শহরের প্রান্তে সাধারণ হোটেল,স্যাত সেতে পরিবেশ। দোতলায় দুইখান ঘর নিয়েছে সায়েদ। বেল টিপতে দরজা খুললো মুমতাজ বেগম। সায়েদের সঙ্গে অপরিচিত লোক দেখে ঘোমটা টেনে দ্রুত সরে গেল। সায়েদ মজা পায় বলে,কি ভাবী চিনতে পারো নাই?
— কে আসলো রে? কে সায়েদ নাকি? বিছানায় শুয়ে রাহিমা বেগম জিজ্ঞেস করেন।
সায়েদ মায়ের কাছে গিয়ে বলে,আম্মু তোমার ব্যাটা আসছে।
বলদেব কাছে এগিয়ে গেল,ঘাড় ঘুরিয়ে বলদেবকে দেখে বলেন,বলামিঞা না? সাথে কে বউ নাকি? একেবারে পরীর মত দেখতে।
গুলনার লজ্জা পায়।মুমতাজ অবাক হয়ে দেখে বলদেবকে,অনেক বদলে গেছে একেবারে চেনাই যায় না। ঠাকুর-পোর বউ ভারী সুন্দর সিনেমা আর্টিষ্টের মত। বলদেব মুমতাজকে লক্ষ্য করে বলে,ভাবীজান কেমুন আছেন?
— ভাল। আপনে মানে তুমি কেমন আছো? ছেলেরা মাঝে মধ্যে তোমার কথা বলে।
— ওরা কই?
— ফুফার কাছে আছে,টুনি আসছে তো। টুনির পোলা হইছে।
গুলনার আড় চোখে মুমতাজকে দেখেন,দুজনের সম্পর্কটা বোঝার চেষ্টা করেন। বলদেব মণ্টির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়,এই আমার বউ মণ্টি। এই বড়ভাইয়ের বউ।
— বিয়ার দিন দেখছি। মুমতাজ বলে।
সেদিনের কথা গুলনারের কিছু মনে নেই। রহিমা বেগমকে মনে আছে আবছা। সায়েদ বলে,আমি চা বলে আসতেছি।
— বলারে কিছু খাইতে দে। আহা মুখ শুকায়ে গেছে। রহিমাবেগম বলেন। গুলনার বুঝতে পারে উনি দেবের খাবার ব্যাপারটা এখনো মনে রেখেছেন। ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে দাড়ালেন গুলনার। দেবও সেখানে গিয়ে বলে,সবাই বলে,আমি খাইতে ভালবাসি।
— না না এখন না। গুলনার আপত্তি করেন।
— মণ্টি তুমি কোনদিন না চাইতে বলেছো খাও?
গুলনার এদিক-ওদিক দেখে বলেন,আচ্ছা খাও। কিন্তু বেশিক্ষন না।
দেব দু-হাত গুলনারের কাধের উপর রেখে মাথা নীচু ঠোটে ঠোট স্থাপন করে।
— উম-উম না না বলে গুলনার ঠেলে দিলেন দেবকে। ক্ষিধা মিটছে?
— না আরো বেড়ে গেল।
— বাড়লেও আমার কিছু করনের নাই। গুলনার ঘরে ঢুকে এলেন।
ভিতর থেকে রহিমা বেগম ডাকেন,বলা কই,এদিকে আসো বাবা।
— মা কথা কইয়েন না। ডাক্তার আপনারে কথা কইতে নিষেধ করছে। মুমুতাজ আম্মুকে বলে।
— ছাড়ান দাও তো ডাক্তারের কথা। মায়ে ব্যাটার লগে কথা কইবো না?
বলদেব এগিয়ে কাছে যেতে রহিমা বেগম পাশে বসতে ইঙ্গিত করেন। বলদেব বসলে জিজ্ঞেস করেন,তুমি অখন কি করো?
— আমি একটা কলেজে পড়াই।
— পড়াও? দেখছো বৌমা একদিন আমি অরে পড়াইতে লাগাইছিলাম,ব্যাটা আমার সেই কামে লাইগা রইছে।
পুরানো দিনের কথা মনে পড়ে। মাটি কাটার কাজ ম্যাসেজ করা বাগান করা ইত্যাদি নানা কাজ করলেও দেব পড়ানোর কথা ভাবেনি। আম্মুই প্রথম তার নাতিকে পড়ানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। গুলনারের উৎসাহে দেব এম.এ পাস করেছে তার ইচ্ছেতে অধ্যাপনা পেশায় নিযুক্ত হলেও দেব ছেলে পড়াতে পারবে সে কথা প্রথম মনে হয়েছিল আম্মুর। একজন বেয়ারা একটা ট্রেতে খাবার সাজিয়ে ঢুকল। রুমালি রুটি আর রেজালা। রহিমা বেগম বলেন,খাও তোমরা খাও।
প্রতি প্লেটে দুটো করে রুটী ছিল। প্লেট নিয়ে নিজের প্লেট থেকে একটা রুটি দেবের প্লেটে তুলে দিলেন গুলনার। মুমতাজ আড় চোখে লক্ষ্য করে মজা পায়। কিছুক্ষন পরে সেই ছেলেটি টি-পটে চা দুধ চিনি নিয়ে ঢুকতে মুমুতাজ বলে,তুমি যাও,আমরা নিয়ে নেবো। ছেলেটি চলে যেতে মুমতাজ সবাইকে চা পরিবেশন করে। শ্বাশুড়িকেও আধ কাপ চা দিল। সবে শেষ হয়েছে চা খাওয়া সায়েদ ঢুকলো ডাক্তার রিয়াজকে নিয়ে। পিছনে ইউসুফ খান হাতে একটা অ্যাটাচি। মুমুতাজ একটা চেয়ার এগিয়ে দিল। ডাক্তার স্টেথো দিয়ে পরীক্ষা শুরু করেন। ইতিমধ্যে ইউসুফ অ্যাটাচি খুলে পাশে রেখেছে। প্রেশারের যন্ত্র নিয়ে প্রেশার মাপলেন। সায়েদের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন,ইসিজি রিপোর্ট আছে?
সায়েদ ইসিজি এক্সরে এগিয়ে দিল। ড.রিয়াজ গম্ভীরভাবে চোখ বুলালেন জিজ্ঞেস করলেন,কেমন আছেন?
— আমার ব্যাটা আসছে অখন আমি সুস্থু।
— ব্যাটায় কাম হইবো না,অক্সিজেন দেওন লাগবে। তারপর সায়েদের দিকে ফিরে বলেন,নার্সিং হোমে নিয়ে যেতে হবে এখনই,আমি নার্সিং হোমে থাকবো।
— ডাক্তার সাব খারাপ কিছু?
— বয়স হইছে,তুমি নিয়া আসো।
মেয়ে জামাইয়ের দিকে একবার ফিরেও দেখলেন না,গটগট করে চলে গেলেন। সায়েদ গুলনারের দিকে তাকালেন। গুলনার বলেন,টাকা না চাইলে দিতে হবে না।
দেব বলে,সায়েদ তোমরা নার্সিং হোমে আসো,আমি আম্মুরে নিয়ে যাচ্ছি।
রহিমা বেগমকে ধরে ধরে সিড়ি দিয়ে নামিয়ে গাড়িতে তোলে দেব। গুলনার আর দেব উঠে নার্সিং হোমের দিকে গাড়ি ছোটালেন। দেবের এই সেবার মনোভাব মুগ্ধ করে গুলনারকে।অতীতকে সবাই মনে রাখে না। রহিমা বেগমকে নার্সিং হোমে ভর্তি করে ফেরার পথে গাড়িতে গুলনার জিজ্ঞেস করেন,তোমার ভাবী কি যেনি নাম তোমার দিকে হা কইরা কি দেখতেছিল?
— মুমতাজ বেগম। তুমি জিজ্ঞেস করতে পারতে কি দেখতেছে? কে কি ভাবে কে কি দেখে সেইটা কি আমাকে বলতে হবে?
— আহা এতে রাগনের কি আছে?
— আমি রাগ করি নাই। মণ্টি রাগ না করলে একটা কথা বলি,তোমার এত ঐশ্বর্য আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখেছো কখনো? তবু অন্যের সামান্য পুজির উপর ঈর্ষা করো কেন?
গুলনার রাগ করেন না,দেবের হাত বুকে চেপে ধরে বলেন,ঐশ্বর্য আছে তাই খালি চুরি যাওনের ভয়। নাইলে কিসের ডর?
বাড়ি ফিরতে একটু রাত হল। ড.রিয়াজ তখনো ফেরেন নি। নাদিয়া বেগম মেয়েকে একান্তে জিজ্ঞেস করেন,কি হইছিল রে মণ্টি,জামাই ক্ষেপছিল ক্যান?
— কে বলল ক্ষেপছিল?
— ডাক্তার ফোন কইরা সব বলছে।
— আমি জানি না কখন ক্যান ক্ষেপছিল?
— বাড়িটা পাগলে ভইরা গেল। আগে ছিল এক পাগল ডাক্তার আর অখন জুটছে তার পাগল জামাই।
দেব ক্ষেপেছিল বিশ্বাস করতে পারে না। এত নরম মানুষ,আব্বু মনে হয় মস্করা করে থাকবে। আগে যেখানে থাকতো সেখানে সবাই দেবকে ভালবাসে। শুধু ভালোবাসা নয় বিশ্বাস করে। এ বাড়ীর সবাই এমন কি কাজের লোক পর্যন্ত দেবকে খুব পছন্দ। অবাক লাগে গুলনার কেন এত ক্ষেপে উঠেছিল এমন মানুষটার উপর।যেমন মেয়ে তার তেমন বাপ কথাটা মনে পড়তে গুলনার হেসে ফেলে।খুব ইচ্ছে হয় দেবের রাগী চেহারা দেখতে।
 
[পয়ষট্টি]


খাওয়া দাওয়ার পর বিছানায় আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছেন গুলনার এহসান। দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস নেই। দেবের ক্লাস রুটিনের একটা নকল চেয়ে নিয়েছেন। চোখ বুলিয়ে দেখেন আজ চারটে-পয়তাল্লিশে শেষ ক্লাস। পাঁচটার একটু আগে পৌছালে হবে। সকলে বলে দেবের খাওয়ার ব্যাপারে কোন বাছবিচার নেই। কাল রাতে ভাল মতন টের পেয়েছেন গুলনার। পেটে বাচ্চা আছে তাই পেটের উপর চড়েনি কিন্তু পাগলের মত শরীরটাকে নিয়ে কি না করেছে। খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুকেও বলা যায় না। নুসরত অফিস থেকে ফিরে কত গল্প করতো দেবকে নিয়ে,গুলনারের মনে হয়েছিল দেব সম্পর্কে নুসরতের একটা দুর্বলতা আছে। পরে তার ভুল ভাঙ্গে। মেয়েটি ভদ্র কি ব্যাপারে বাবার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় বাড়ি ছেড়ে চাকরি করতে এসেছিল। এখন কোথায় আছে কে জানে? বাড়িতে এখন মা ছাড়া কেউ নেই। মামুন হাসপাতালে যায় নাই,ট্যাক্সি নিয়ে বন্ধুদের সংগে আড্ডা দিতে গেছে। মামুন চলে যাবে ভেবে মনটা খারাপ লাগে। মা খালি ওর জামা কাপড় গুছায়। গুছানোটা অজুহাত,আসলে মামুনের জামা কাপড় ঘাটতে ভাল লাগে। আব্বু চাপা মানুষ বাইরে থেকে তাকে বোঝা যায় না। সবসময় মুখে নির্বিকার ভাব আটা। মামুন একমাত্র বংশধর। তার প্রতি আব্বুর টান থাকা স্বাভাবিক। গুলনার কি চিরকাল বাপের বাড়িতে থেকে যাবেন? এই ব্যাপারে দেবকে দোষ দেওয়া যায়না। গুলনার জানেন ওকে বললেই বলবে সেইটা ঠিক কথা। চলো আমরা অন্য কোথাও যাই। নিরাপত্তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই সব অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। নীচে গাড়ির শব্দ পাওয়া গেল,সম্ভবত মুস্তাক ফিরে এসেছে। কলেজে পুচকে পুচকে মেয়েগুলোর আলোচ্য হয়ে উঠেছে দেব। পছন্দ না হলেও গুলনার বোঝেন কারণটা কি? দেব এমনভাবে কথা বলে কথা বলার স্টাইলটাই হৃদয়কে স্পর্শ করে। বয়স ইত্যাদির ব্যবধান লজ্জা সংকোচের পর্দা খসে যায়। নিজেও বুঝেছেন মর্মে মর্মে। একটা অচেনা অজানা মানুষ তাই সহজে আম্মুর এত কাছের হয়ে যেতে পারল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন সাড়ে তিনটে বাজে। এবার তৈরী হওয়া যাক। বিছানা ঘেষটে নামতে গিয়ে পাছায় জ্বালা অনুভব করেন। উঃ রাক্ষসটা এমন কামড়েছে দাত বসিয়ে দিয়েছে।
সালোয়ার কামিজ পরবেন আজ। চুল আচড়ে পিছনে একটা বাঁধন দিলেন। বেশি সাজগোজ তার পছন্দ না। বার কয়েক পেটের উপর হাত বুলিয়ে আয়নার দিকে দেখলেন। দেবের আম্মু বলছিলেন,পরীর মত দেখতে। অবশ্য তার রুপ নিয়ে দেবের কোন মাথা ব্যথা আছে বলে মনে হয় না। সে চেনে কেবল মণ্টিকে। মণ্টির কাছেই তার সব রকমের প্রত্যাশা। মামুন সকাল সকাল আজ বাড়ি ফিরবে বলে গেছে।
মায়ের ঘরে উকি দিয়ে দেখলেন,ঘুমোচ্ছে। করিমকে বলল,মাকে বলিস অপা কলেজে গেছে। সিড়ি দিয়ে নেমে দেখলেন,মুস্তাক গাড়ির মধ্যেই বসে আছে। তাকে দেখে দরজা খুলে দিল। বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হল না,মিনিট দশেকের মধ্যে নজরে পড়ল সাদা পায়জামা গেরুয়া পাঞ্জাবি কাধে কালো ঝোলা ব্যাগ।ওকে ঘিরে কয়েকটা মেয়েও আসছে।দেব তোদের শিক্ষক তার সঙ্গে তোদের এত কি দরকার।গুলনার বিরক্ত হয়।মেয়েগুলো কিছুটা এসে ফিরে যায়।
--কতক্ষন?
— মিনিট দশেক হবে। কাধে ব্যাগ কেন?
— অফ পিরিয়ডে সময় কাটেনা তাই বই রাখি।
— বই? কি বই?
— দর্শন না মনস্তত্বের বই,বেশ ভাল লাগছে জানো। মনস্তাত্বিক জ্ঞান থাকলে কমুনিকেট করতে অনেক সুবিধে হয়।তারপর হেসে বলে,জানো যারা পথে ঘাটে পকেট মারে চুরি করে তাদেরও বেশ মনস্তাত্বিক জ্ঞান আছে।
— তুমি চুরি করবা নাকি?
— তা বলতে পারো। তবে টাকা পয়সা না– ।
মণ্টি মুখ তুলে তাকায়, দেব নীচু হয়ে বলে,আম্মু বলছিল তুমি আমার মেয়ের মন ডাকাতি করেছো।
— শোনো ডাকাতি করতে করতে লোভ বাড়ে অন্যমনের দিকে যদি হাত বাড়াও– ।
কথা শেষ করতে না দিয়ে দেব বলে,চুরি করে কোথায় রাখবো বলো? তোমার মন আমার হৃদয়জুড়ে আছে আর জায়গা থাকলে তো।
মণ্টি ভাবে, উফস লোকটা কথা সাজাতে ওস্তাদ,এইজন্যই মেয়েরা সহজে পটে।
নার্সিং হোমে যখন পৌছালো ভিজিটিং আউয়ারস তখনো শুরু হয়নি। নীচে লোকজন অপেক্ষমান। ভীড়ের মধ্যে নুসরতকে দেখে অবাক হয় গুলনার। ও এখানে কেন? কেউ কি আছেন এখানে? তাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসে নুসরত,মণ্টিদি কেমন আছো?
বলদেব অন্য একজনকে দেখে মনে করার চেষ্টা করে ভদ্রলোককে কোথায় দেখেছে, চেনা চেনা মনে হচ্ছে। মনে পড়ে যায় জয়নাল দারোগা, যিনি সুপারিশ করে তাকে পাঠিয়েছিলেন।কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল, স্যর আপনি এখানে?
জয়নাল অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন। বলদেব বলে,আমি বলদেব। চিনতে পারছেন না?
জয়নাল ভুত দেখার মত চমকে উঠে বলেন,হ্যা হ্যা কেমন আছো? কি করো?
— আমি একটা কলেজে পড়াই।
জয়নাল মনে মনে ভাবেন তার ভুল হচ্ছে নাতো? আমতা আমতা করে বলেন, আপনার সঙ্গে কোথায় দেখা হয়েছিল বলেন তো?
--আপনি একদিন চিঠি লিখে রিজানুর সাহেবের বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন?মনে পড়েছে?
--রাশেদের অফিসে চাকরির ব্যবস্থা করেছিলাম একজনকে--মানে--।
--আমিই সেই বলদেব।
জয়নাল সাহেব বিস্মিত গলায় বলেন,সেতো প্রায় বছর দশেক আগের কথা কিন্তু আপনি বলছেন অধ্যাপনা করেন?
--হ্যা স্যার আগের চাকরি ছেড়ে পরে পড়াশুনা করেছি এখন অধ্যাপনা করি।
--খুব ভালো লাগলো শুনে।এখন কোথায় থাকা হয়?
--ড রিয়াজের মেয়েকে বিয়ে করে ঢাকাতে আছি।আপনি?
--আমি কাল এসেছি।মইদুল খবর দিল ভাবীজান অসুস্থ এইখানে ভর্তি হয়েছে।
এমন সময় নুসরত এল গুলনারকে নিয়ে,আব্বু মণ্টি-দি ড.রিয়াজের মেয়ে। আমার বন্ধুর মত। একসময় আমরা একসঙ্গে থাকতাম।
গুলনার এবং জয়নাল দারোগা আলাপ করে। দেবের পুরানো অনেক কথা বলেন জয়নাল। ইতিমধ্যে সময় হয়ে গেল,একে একে সবাই উপরে উঠতে লাগল। মুমুতাজ সায়েদও এসে পড়েছে। একেবারে শেষে দেব আর নুসরত উপরে উঠল।
নুসরত জিজ্ঞেস করে,দেব তুমি কেমন আছো? বেশ দেখতে লাগছে তোমাকে।
— প্রশ্ন এবং উত্তর দুটোই আপনি দিয়ে দিলেন। আমার বলার কিছু থাকলো না।
নুসরত জিজ্ঞেস করল,তুমি আব্বুরে চিনলে কিভাবে?
--উনি আপনার বাবা আজ জানলাম।আব্বুর প্রতি বিরক্ত হয়ে আপনি বাড়ী ছেড়ে চলে আসেন।
নুসরত বুঝতে পারে বলদেব সব খবর পেয়েছে।

বলদেব বলে, আমার জীবনে আপনার আব্বুর একটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা আছে।একবার চুরির দায়ে থানায় গিয়ে ওর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ।

অবাক হয়ে নুসরত বলল,চুরির দায়ে?
বলদেব হাত তুলে বিরত করে পূর্বাপর সমস্ত কথা বলে গেল।নুসরত অবাক হয়ে শুনতে থাকে দেবের সম্পর্কে অনেক অজানা ঘটনা।বলদেব থামলে নুসরত বলে,তোমার কথা শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল আরব্য রজনীর গল্প শুনছি।তুমি আজ অধ্যাপক আমাকে তুমি বললে ভাল হয়।
--ধন্যবাদ।অবস্থান মানুষের সম্পর্ককে বদলে দেয়। তুমি জিজ্ঞেস করছিলে চুরির দায়ে?হ্যা ঠিকই শুনেছো কিন্তু আমি চুরি করিনি।সব কিছুর কার্য কারণ থাকে শুধু মাত্র কার্য দেখে কারও বিচার করলে ভুল হবে।তোমার আব্বুর প্রতি তুমি সেই ভুল করেছো আমার মনে হয়।পুলিশে কাজ করতে গিয়ে ঠগ জোচ্চোর অপরাধী ঘাটতে ঘাটতে ওর মূল্যবোধে ধাক্কা খায় মেজাজ মানসিকতা বদলে দেয়।নাহলে মানুষটাকে খারাপ বলা যায় না। তুমি বাড়ী ছেড়ে এলে তার অভিমান হয় অথচ এই সময় তার পাশে দাড়ান উচিত ছিল।আমাকে চেনেন না আলাপ ছিলনা তাহলে কেন আমার চাকরির জন্য সুপারিশ করলেন?আর কেনই বা বন্ধু রিজানুর সাহেবকে চিঠি লিখে আমাকে সাহায্য করলেন?
জয়নাল দারোগা মাতাল মারকুট্টে অত্যাচারী বলে শুনে এসেছে আজ দেবের কাছে আব্বুর অন্য পরিচয় জেনে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।ব্যাগ থেকে রুমাল বের করে চোখ মোছে নুসরত।
বলদেবের দৃষ্টি এড়ায় না।বলদেব হেসে বলল,বাদ দাও পুরানো কথা।হ্যা ম্যাডামের খবর কি উনি কি ওখানেই আছেন নাকি বদলি হয়ে গেছেন?
নুসরত কি বলবে ভাবতে থাকে।বলদেব বলে,ভদ্রমহিলার লাইফটা খুব ট্র্যাজেডির এত উচু পদে চাকরি করতেন অথচ পারিবারিক জীবনে শান্তি ছিলনা।
--উনি ওখানে নেই।কোথায় আছেন জানি না।তুমি চলে যাবার পর খুব ভেঙ্গে পড়েছিলেন,মনে হয় ম্যাডাম তোমাকে ভালোবাসতেন।
--তুমি কিছুই জানো না?
--শুনেছি উনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে কোথাও চলে গেছেন।রান্না করতো মহিলা ওর সঙ্গে গেছে।
--তোমার সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগছে।কিন্তু এখানে এত লোকজনের আনাগোনা--।
--চলো না ঐ দিকটায় বেশ নির্জন।

দুজনে নার্সিংহোমের শেষ প্রান্তে স্বল্প পরিসর একটা জায়গায় এসে বসলো। বলদেব শুরু করে, তুমি ভালবাসার কথা তুললে। এই শব্দটা নিয়ে আমার বেশ ধন্দ্ব আছে। প্রেম ভালবাসা অতি পবিত্র এবং চিরস্থায়ী একটা সম্পর্ক এরকম আমরা মনে করি। কিন্তু বাস্তবিকই কি তাই?
— তাই নয় বলছো?
— আমি কিছুই বলতে চাই না,আমি জানতে চাই। ধরো একটি মেয়ে একটি ছেলের প্রেমে পড়ল। তার মনে হল ছেলেটিকে ছাড়া বাঁচবে না। বাড়ির লোকজন তাকে বোঝালো,ছেলেটির আর্থিক অবস্থা শিক্ষা উপার্জন তেমন ভাল নয়। বিকল্প হিসেবে অন্য একটি ছেলেকে উপস্থিত করলো যার শিক্ষা আর্থিক অবস্থা আগের ছেলেটির তুলনায় অনেকগুণ উন্নত। মেয়েটির মনে ধীরে ধীরে প্রথম ছেলেটির প্রতি সৃষ্টি হল বিরুপতা সে দ্বিতীয় ছেলেটিকে ভালবেসে ফেলল। প্রেমের স্থায়ীত্ব সম্পর্কে এর পর আস্থাআবার রাখা যায় কি?
— দেব তুমি খুব নিষ্ঠুর। হেসে বলে নুসরত জাহান।
— আবার ভুল করছো,কেউ নৃশংস ঘটনা ঘটালো আর যে সেই ঘটনার বিবরণ দিল তাকে বলবো নিষ্ঠুর? মেয়েটি ছেলেটিকে প্রত্যাখ্যান করলো তার দোষ নেই একে বলে ভাবের ঘোরে চুরি করা। এবার আসি জেনিফার ম্যাডামের কথায়। আগের কথা জানিনা কিন্তু যখন থেকে তার সঙ্গে আমার পরিচয় তাতে আমার মনে হয়েছে,উনি যে কারণেই হোক পুরুষ বিদ্বেষী। তুমি দেখোনি পুরুষ আসামীদের কি প্রচণ্ড অত্যাচার করতেন। জুতো পায়ে পুরুষাঙ্গ পিষ্ঠ করে আমোদ পেতেন। উনি ছিলেন ডোমিনেটিং টাইপ যার ফলে কখনো ক্ষিপ্ত হয়ে আত্ম নিগ্রহও করতেন। এসবের পিছনে কারণ হতাশার জ্বালা।
গুলনারের খেয়াল হয় দেবকে দেখছেন না,কোথায় গেল? রহিমা বেগমের ঘর থেকে বেরিয়ে এদিক-ওদিক দেখেন।
অনেকেই নারসিং হোমে এসেছে রহিমা বেগমকে দেখতে।উনি বেশ সুস্থ সবার সঙ্গেই কথা বলছেন।গুলনারকে দেখে বললেন,পরী ওইখানে ক্যান?আমার কাছে আসো।
গুলনার লজ্জা পেয়ে এগিয়ে গেল।গায়ে হাত বুলিয়ে বলল,আমার ব্যাটায় আসে নাই?
দেবের কথা বলছেন।গুলনার হেসে বলল,এসেছে দারোগা সাহেবের সঙ্গে কথা বলছে।
জয়নাল বাইরে দাঁড়িয়ে সায়েদের সঙ্গে কথা বলছেন।রিজানুর সাহেবের মৃত্যুর খবর তাকে কেউ জানায় নি অনুযোগ করেন।সায়েদ লজ্জিত হয়ে বলে চাচা আমাদের তখন মাথার ঠিক ছিল না। ভালো মানুষ রাতে খাইল গল্প করল রাত যাইতে না যাইতে--।সায়েদ চোখ মুছে বলে,তারপর আম্মু চুপচাপ বেশী কথা কয়না।
--যাক ভাবীজানরে তো বেশ সুস্থ্যই মনে হল।
--ডাক্তার খুব নামকরা।বলাভাই সাহায্য না করলে কি যে হতো।
--ওকে প্রথম দেখেই মনে হয়েছিল আর পাচটা মানুষের মত না,এত বছর পুলিশে কাজ করছি মানুষ তো কম দেখলাম না।এত সহজ মানুষ তাই ভয় ছিল ফাদে পড়ে নষ্ট না হয়ে যায়।অধ্যাপনা করে ভাল পেশা।আমি তো চিনতেই পারিনি।
--বলা ভাইরে আম্মু নিজের ব্যাটার মত মনে করে।
--এতদিন পর সেইসব পুরানো কথা কয়জন মনে রাখে।কিন্তু বলদেব উপযাচক হয়ে নিজের পরিচয় দিল,এইখানে বোঝা যায় মানুষটার দিল।

ঘর থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক দেখে বলদেব কোথায় গেল।দেবের জন্য এখানে এসেছে আর ওরই পাত্তা নেই।ঐ তো দারোগাসাহেব তাহলে দেব কোথায় গেল?

 
[ছেষট্টি]


গুলনার নীচে নেমে এসে মুস্তাককে জিজ্ঞেস করেন,সাহেব এসেছিলেন? মুস্তাক কিছু বলতে পারে না। গুলনার আবার উপরে উঠে এলেন। কোথায় গেল লোকটা? সব সময় তক্কে তক্কে রাখা যায়? সঙ্গেই তো ছিল।গুলনারের ভাবখানা মা তার ছেলে হারিয়েছেন। ওর জন্য রহিমা বেগমকে দেখতে আসা আর বাবু উধাও? কোথায় যেতে পারে? একজন জুনিয়ার ডাক্তার দেখা হতে জিজ্ঞেস করেন,ম্যম আপনি কি স্যরকে খুজছেন?
স্যর মানে আব্বুর কথা বলছেন,গুলনার বলেন,না কাউকে খুজছি না।
আরে ঐদিকে থামের আড়ালে মনে হচ্ছে নুসরত কার সঙ্গে কথা বলছে। একটু এগিয়ে বুঝতে পারলেন কাধ থেকে ঝুলছে কালো ঝোলা ব্যাগ। ছিঃ শেষ পর্যন্ত নুসরতের সঙ্গে? তার আগেই সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। নুসরত জানে দেব বিবাহিত, নিজেকে বাবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে বলেছিল ‘আমরা বন্ধু’ এই কি বন্ধুত্বের নমুনা? কি এত গভীর আলোচনা হচ্ছে যে তার উপস্থিতি টের পাচ্ছে না?কাছে যেতে গিয়েও গুলনার একটা দেওয়ালের আড়ালে দাঁড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে দেখা না গেলেও স্পষ্টশোনা যাচ্ছে প্রেমালাপ।
— তুমি জিজ্ঞেস করছো তোমাকে কেমন লাগতো? দেব বলে।
উফস এতদুর? গুলনার ভাবেন।
– আমি যদি বলি তোমার প্রতি আমি ছিলাম নিস্পৃহ তাহলে হবে সত্যের অপলাপ। তোমার কথা শুনতে আমার ভাল লাগতো। অপেক্ষা করতাম তুমি কখন আমাকে ডেকে বলবে ‘ দেব এই ফাইলটা দিয়ে এসো…আমার জন্য টিফিন নিয়ে এসো। ‘ তোমার কাজ করতে আমার ভাল লাগতো।
সত্যবাদী যুধিষ্ঠির,আমি বিয়ে না করলে চিরকাল তোমাকে ফাইল বইতে হতো। গুলনার ভাবেন।
— আমারও ইচ্ছে করতো তোমার কথা শুনতে। নুসরত বলে।
— কিন্তু সে ইচ্ছে প্রসারিত হয়নি মানে আমার চাকরি শিক্ষাগত যোগ্যতা ইচ্ছেকে প্রসারিত হতে দেয়নি। একই কারণে আমিও ইচ্ছেকে অবদমিত করেছি। মিষ্টির দোকানে সাজানো মিষ্টি দেখে লালাক্ষরণ হলেও যখন বুঝতেপারি পকেটে পয়সা নেই আমরা ইচ্ছেকে প্রশ্রয় দিইনা।
— তুমি বলছো ঐ ঘটনা ঘটেছিল বলে মণ্টিদি তোমাকে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিল?
বলদেব নিজের মনে হাসল,তারপর আবার শুরু করে,ঐ ঘটনার জন্য জেনিফার আলম অমন প্রস্তাব দিতে সাহসী হয়েছিলেন,আর জেনিফার যদি উদ্যোগী না হতো আমি স্বপ্নেও মণ্টিকে বিবাহের কথা ভাবতাম না। হয়তো অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করতাম বা অবিবাহিত জীবন কেটে যেত। কিন্তু আমি মনে করিনা মণ্টি বাধ্য হয়ে বিবাহ করেছে। ওর অসম্ভব মনের জোর তাছাড়া পিছনে ছিল সামাজিক আর্থিক সাপোর্ট।
গুলনার সজাগ তার প্রসঙ্গে কি বলে দেব?
— নুসরত তুমি কিছু মনে কোরনা একটা কথা বলি। তুমি চেয়েছিলে একটি ফিনিশ পুতুল রঙ চং করা চোখ মুখ আঁকা সুন্দর একটি পুতুল কিন্তু মণ্টির অসম্ভব আত্ম প্রত্যয়ের কথা তোমায় বলেছি। নিজের বউ বলে বলছি না ওকে যতটা জেনেছি,ও একতাল মাটি নিয়ে নিজের মত করে নিজ হাতে গড়ে নিয়েছে পুতুল। মণ্টিকে বাদ দিয়ে আমার অস্তিত্ব কল্পনাও করতে পারিনা। ও আমার অক্সিজেন এক মুহূর্ত ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না।
— মণ্টীদিকে না পেলে তুমি আত্মহত্যা করতে?
— তোমার কথার শ্লেষ আমি গায়ে মাখছিনা।
গুলনারের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। এতো স্তুতি নয়,অকপট স্বীকারোক্তি।
বলদেব বলতে থাকে, মানুষ মরণ শীল। ইচ্ছে অনিচ্ছে নিরপেক্ষ,প্রতিদিন আমরা তিল তিল করে এগিয়ে চলেছি অসহায় সেই মৃত্যুর দিকে। কিন্তু ঝড়ের হাত থেকে প্রদীপ শিখার মত চেষ্টা করা উচিত যাতে নিভে না যায়। প্রদীপ শিখা কি জানো? আমাদের মনুষ্যত্ব।শারীরি মৃত্যু না হলেও মনুষ্যত্বের মৃত্যু হয়। একবার পা পিছলে যেতে যেতে বেঁচে গেছি কে আমাকে রক্ষা করেছিল জানো?
— কে মণ্টি?
— না ডাক্তার রিয়াজ আমার আব্বু। মণ্টিও তাকে চিনতে পারেনি। তোমরা ড.রিয়াজকে একজন বড় চিকিৎসক হিসেবে জানো আমার কাছে আব্বু একজন বড় মাপের মানুষ।তার কাছে অনেক শিখেছি।
আর আড়ালে থাকা সম্ভব হয় না,চোখে জল মুছে গুলনার যেন হঠাৎ ওদের আবিষ্কার করেন,একী আপনি এখানে?আপনার আক্কেলটা কি? ওদিকে আপনার আম্মু আপনার জন্য হেদিয়ে মরছেন।
বলদেব ভ্রু কুচকে এগিয়ে এসে বলে, একী তোমার চোখে কি হল,এত লাল কেন?
— থাক আর ঢং করতে হবে না। ভেবেছেন এইসব বলে পার পাবেন? আর কবে বুদ্ধি হবে আপনার? সারারাত আপনার জন্য নার্সিং হোম খোলা থাকবে?
দেব ঢুকতে মুমুতাজ বলে,ঐতো বলা মিঞা আসছে।
রহিমা বেগম তাকিয়ে হাসলেন। এতক্ষন কইছিলা বাবা?
— বাইরে,ভিতরে এত ভীড়– ।
— জয়নাল তুমারে চিনতে পারে নাই অথচ ঐ তুমারে পাঠাইছিল। নুসরতরে তো তুমি চিনতা– ।
— চিনতাম,জানতাম না উনি স্যরের মেয়ে।
— আমার সায়েদের লগে কেমুন লাগবো?
সায়েদ বাঁধা দিল,আম্মু ডাক্তার তোমারে কথা কইতে নিষেধ করল তুমি মানবা না?
— এতদিন চুপ কইরা ছিলাম বইলাই সেনা কাণ্ডটা ঘটলো।
সায়েদ ঘর থেকে বেরিয়ে গেল,করো তুমি বক বক।
মুমতাজ মিটমিট করে হাসছিল। বলদেব জিজ্ঞেস করে,কি ভাবীজান আম্মু কি কয় আমারে তো বলেন নাই?
— তুমি তো তবসুমরে দেখছো। ভারী দেমাগ ছিল, ছ্যাকা দিয়া পলাইছে।
বলদেব চুপ করে থাকে,আবার সেই প্রেম। অরূপকে ছেড়ে রূপের প্রতি মোহ? নুসরত কিছু বলেনি তাকে,সে কি জানে না?
এ্যাণ্টিবাইওটিক দিয়ে এখন ভাল আছেন রহিমা বেগম। দিন চারেক পর ছেড়ে দেওয়া হবে। আব্বু বলেছেন ইসিজি রিপোর্ট ভুল ছিল। কাল আসা সম্ভব না,মামুনকে এগিয়ে দিতে বিমান বন্দরে যেতে হবে। মণ্টির খুব প্রিয় মামুন। সেও অপাকে খুব ভালবাসে।
খাবার টেবিলে গল্প হল অনেক রাত অবধি। আম্মু মাঝে মাঝে কেদে ফেলছিলেন। ড.রিয়াজ চুপচাপ একেবারে নির্বিকার।গুলনার মুগ্ধ চোখে আব্বুর দিকে তাকিয়ে কি যেন বোঝার চেষ্টা করে।
— ভাগ্যিস বিয়ার আগে আমি বিদেশ গেছিলাম। বিবিকে উদ্দেশ্য করে বলেন ড.রিয়াজ।
— আমি আপনের কাছে কিছু শুনতে চাইনি। নাদিয়া বেগম বিরক্তির সঙ্গে বলেন।
মণ্টি আর মামুন চোখাচুখি করে হাসি বিনিময় করে। করিম কি বুঝলো কে জানে ফিক করে হেসে ফেলে। নাদিয়া বেগম ধমক দেয়,বলদের মত হাসিস ক্যান রে? দূর হ আমার চোখের সামনে থিকা।
করিম বেরিয়ে গেল। গুলনার দেবকে দেখেন,বলদ শুনে তার কোন ভাবান্তর হয় কিনা? কেননা মাঝে মধ্যে তিনিও দেবকে বলেন,বলদ। নাদিয়া বেগম পর মুহুর্ত্তে করিমকে ডাকেন, অ্যাই করিম কই গেলি?
— তুমি তারে বাইরে যাইতে কইচো। ড.রিয়াজ বলেন।
করিম ঢুকতে বলেন,চোখে দেখিস না,বলারে ভাত দে।
— আম্মু অরে আর ভাত দিবেন না। গুলনার বলেন।
দেব কোন কথার প্রতিবাদ করে না। খাওয়া-দাওয়ার পর লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়ে দেব। গুলনার উসখুস করেন। একসময় থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করেন,কি হইল ঘুমিয়ে পড়লেন?
— না ঘুমাই নাই।
— আচ্ছা আমারে আর ভাল লাগে না?
— এই সত্য কবে আবিস্কার করলে?
— তা হইলে এমুন সুন্দরী বিবি পাশে থাকতে ভুস ভুস কইরা ঘুমান কেমনে?
— কি করবো জেগে বসে থাকবো?
— কিছু ইচ্ছা হয়না?
— খালি নিজের কথা না ভেবে যে আসছে তার কথা একটু ভেবো।
গুলনার জোর করে নিজের দিকে টেনে বলেন,কি বলতেছেন এদিক ঘুরে বলেন আমি পেটে নিয়ে ঘুরতেছি আমি ভাবি না আপনে ভবেন? একটু থেমে আবার বলেন,আচ্ছা দেব আমাকে একটু আদর করতে ইচ্ছে হয় না?
— ইচ্ছে হবে না কেন কিন্তু– ।
— ইচ্ছেরে দমন করে রেখেছেন?
দেবের মাথায় কথাটা ঝিলিক দিয়ে ওঠে,বলে,লুকায়ে কারো কথা শোনা পাপ।
— ঠিক আছে আর শুনবো না। আপনে আমার পিছন দিক থেকে একবার প্লিজ আমি পারতেছি না।
গুলনার চার হাতপায়ে ভর দিয়ে বলেন,কি হলো ওঠেন। এভাবে করলে আপনের সন্তানের কিছু হবে না।
অগত্যা দেব মণ্টির পিছনে গিয়ে পাছার উপর মাথা রাখে। কি শীতল পাছা। গুলনার বলেন,কামড়াইবেন না আমি কি খাওনের সামগ্রী? রাইক্ষস কোথাকার?
দেব পিঠের উপর শুয়ে পড়ে। গাল ঘষে সারা পিঠে। গুলনার তাগাদা দিলেন,তাড়াতাড়ি করো কাল সকাল সকাল উঠতে হবে।
হাটুতে ভর দিয়ে দেব দুহাতে মণ্টির কোমর ধরে খেয়াল করে তার পুরুষাঙ্গ তৈরী নেই।
— কি হল?
— শক্ত হোক।
— আমার মুখের কাছে আসেন।
মণ্টি উঠে দেবকে চিত করে বাড়াটা মুখে নিয়ে চুষতে লাগলো। দেব হাত দিয়ে মণ্টির পিঠ চুলকে দিতে থাকে।
কিছুক্ষনল চোষার পর ধোন শক্ত কাঠ। দেব উঠে এসে চেরা ফাক করে ধীরে ধীরে চাপতে থাকে। গুলনার পাছা উচু কর ধরেন। মনে পড়ে ‘মণ্টি আমার অক্সিজেন ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না” চোখ দিয়ে জল গড়ায়। চোখের জল কেবল দুঃখে নয় সুখেও পড়ে।
অতি সতর্কতার সঙ্গে বলদেব চেরার মুখে লাগিয়ে ধীরে ধীরে চাপ দিতে থাকে।
— হয়েছে এবার করো।
বলদেব দুহাতে মণ্টির কোমর জড়িয়ে ধরে ঠাপ শুরু করল।
— দেখো যেন পেটে চাপ না পড়ে।
— ঠিক আছে এত কথা না বলে যা করছো করো। দেব ঠাপিয়ে চলেছে কোমর ধরে আছে যাতে পেটে চাপ না পড়ে। আর ধরে রাখতে পারে না ফুচুর ফুচুর করে বীর্যপাত করল। উহু-হু-হু-হু করে মণ্টিও জল খসিয়ে দিলেন। নজরে পড়ে মণ্টির চোখে জল।
— কি ব্যথা পেয়েছো? দেবের কণ্ঠে উদবেগ।
গুলনার দেবকে জড়িয়ে ধরে বলেন,খুউব ব্যথা পেয়েছি গো– খুউউউব ব্যথা পেয়েছি।
বলদেব পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলল,সব ব্যাপারে জিদ ভালো না।এই সময় একটু সাবধানে থাকতে হয়।
গুলনার পিঠে একটা কিল মেরে বলল,চুপ করো ব্যথা পাইলেই কান্দে সুখে কান্দে না? কলেজে পড়ায়--বলদ একটা।
 
সহৃদয় পাঠক অনেক ধৈর্য ধরেছেন,আর একটি পর্বে শেষ করব।
 
[সাতষট্টি]

যথারীতি সকাল হল অন্যান্য দিনের মত। ছুটির দিন ব্যস্ততা নেই কোনো। কিন্তু এহসান মঞ্জিলের সকাল আলাদা। ঘুম ভেঙ্গেও যেন জড়তা কাটতে চায় না। মামুন আর একবার নিজের জিনিসপত্র দেখে নেয় সব ঠিকঠাক আছে কি না। করিম ঘোরে ফেরে চোরা চোখে ভাইয়ারে দেখে। কবে এ বাড়িতে কাজে লেগেছে সাল হিসেব করতে গেলে সব তালগোল পাকিয়ে যায়। মামুনের অবাক লাগে সবাই এমন করছে কেন,সে তো চিরকালের জন্য যাচ্ছে না। বন্ধুরা মুখে শুভকামনা জানালেও চোখে দেখেছিল ঈর্ষার ঝলক বেশ উপভোগ করেছে মামুন। কিন্তু মাকে নিয়ে হয়েছে সমস্যা। মুখে বলছে সাবধানে থাকিস বাবা চোখের ভাষা আলাদা। আব্বু এই দিক দিয়ে একেবারে ফিট। দেখা হলেই ,কাগজপত্র ঠিকঠাক আছে তো? মন দিয়া পড়াশুনা করিস।
বাইরে কার ডাকে করিম ছুটে গেল ফিরে এল একটা চিঠি হাতে।
— কিরে কার চিঠি?
— আমি কি করে বলবো পিয়ন বলল কি গোলমাল না কি?
আবার কিসের গোলমাল? ড.রিয়াজ এগিয়ে গিয়ে করিমের হাত থেকে চিঠি নিয়ে দেখে বলেন,হারামজাদা তুই অপার নাম জানিস না?
— মণ্টি। জানবো না কেন?
— ওইটা ডাক নাম,ভাল নাম গুলনার এহসান মণ্টি।
— আমি ঐসব গোলমাল-টাল কইতে পারবো না,চিরকাল অপা কইছি অপাই কমু।
— কিসের চিঠি? নাদিয়া বেগম জিজ্ঞেস করেন। আসল কথা না কইয়া উনি করিমের পিছনে লাগছেন।
গুলনার আসতে ড.রিয়াজ মেয়ের দিকে চিঠি এগিয়ে দিলেন। গুলনার চিঠি খুলে দেখলেন,স্কুল থেকে এসেছে। মঞ্জুর হয়েছে তার পদত্যাগ পত্র। একদিন গিয়ে টাকা পয়সা নিয়ে আসতে বলেছে।
— শেষ পর্যন্ত চাকরী ছেড়ে দিলি? তোর মা এত করে বলেছিল শুনিস নি। আজ কেন মা তোর সুমতি হল?
নাদিয়া বেগম স্বামীর কাছ ঘেষে গিয়ে ফিসফিস করে বলেন,আপনে কেমুন ডাক্তার এই বুদ্ধি নিয়া ডাক্তারী করেন? কদিন পর বাচ্চা হইবো,বাচ্চা ফেলাইয়া চাকরি করতে যাইবো নাকি?
ড.রিয়াজ হো-হো করে ঘর কাপিয়ে হেসে উঠলেন।

জয়নাল দারোগার প্রোমোশন হয়ে এখন আইসি হয়েছেন। হোটেলে জানলার ধারে বসে নানাকথা মনে আসছে। বলার ব্যাপারটা এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না। চুরির দায়ে এসেছিল থানায়। বেশ অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলে। লোকটার প্রতি মায়া বশত রাশেদকে বলে কাজ পাইয়ে দিয়েছিলেন। বদলি হয়ে এল নবাবগঞ্জে। অচেনা জায়গা কোথায় থাকবে ভেবে চিঠি লিখে দিলেন রিজানুর রহমানের কাছে। রিজানুর ছিলেন বড়ভাইয়ের মত। দাদা যে বেঁচে নেই খবরটা তখন জানতেন না। জানলে হয়তো চিঠি লিখতেন না। নুসরতের কাছে শুনেছেন,কিভাবে ড.রিয়াজের মেয়ের সঙ্গে বিবাহ হয়। এরেই বলে নসিব। কি সুন্দর স্মার্ট দেখতে হয়েছে এখন। শিক্ষা অনেকটা উর্দির মত। যেই গায়ে দিবা অমনি প্রশাসনের অঙ্গ। সইদুল এখন সাব-ইন্সপেকটার,মন লাগায়ে কাজ করতে পারলে ইন্সপেক্টার হতে কতক্ষন। রাশেদ আছে নুসরতের পরিচিত ডিএম সাহেবা থাকলে একটু সাপোর্ট দিতে পারতেন। বিবাহটা ভালয় ভালয় মিটলে হয়। অধ্যাপকরেও নেওতা দেওয়া যাইতে পারে। কারে দিয়া কি হয় কে বলতে পারে।
একটু সকাল সকাল এসে পড়েছে বিমান বন্দরে। মুস্তাক নিয়ে এসেছে নাদিয়া বেগম মণ্টি দেব আর মামুনকে। মামুন আজ ড্রাইভ করে নাই। নাদিয়া বেগমের দুই পাশে বসেছিল মেয়ে আর ছেলে,দেব বসেছিল ড্রাইভারের পাশে। পরে আসছেন ড.রিয়াজ, সঙ্গে করিমেরও আসার কথা। দেরী আছে চেকিংযের সময়।
মামুন নেমে জিজ্ঞেস করে, দুলাভাই কফি খাইবেন নাকি?
— কারে কি জিগাস? তর দুলাভাই খাওনের ব্যাপারে কখনো আপত্তি করচে? গুলনার হেসে বলেন।
নাদিয়া বেগম মেয়েকে ধমক দেন, আমার জামাইরে তুই খাওনের খোটা দিবি না, বইলা রাখলাম।একী লঘু গুরু জ্ঞান নাই।
— এই যে গুরুজন আপনে কিছু কন না? দেবকে জিজ্ঞেস করেন গুলনার।
— একসাথে সবাই কথা বলতে নেই। দেব বলে।
— বলা তোর স্বামী না? স্বামীর লগে কেউ এইভাবে কথা হয়?
গুলনার কিছু বলেন না। মনে মনে ভাবে দেব যে তার স্বামী না সন্তান সেইটাই এখনো ঠিক করতে পারলেন না। কেউ না থাকলে গাড়ি থেকে নেমে ওকে একটা চুমু দিতেন। পায়চারি করছে দেব। মামুন কফি আনতে গেছে। গাড়ি থেকে নেমে গুলনার দেবের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, আপনে আমার উপর রাগ করছেন?
— কেমন করে রাগ করে সেইটা শিখতে পারলাম না। আমার মায়ে বলতো বলা ক্রোধে বোধ নষ্ট হয়।
গুলনার ভাবেন কেমন সুন্দর করে কথা বলে দেব। মাটি দিয়ে নিজের মত করে গড়ে নিয়েছে। ছিঃ এমন মানুষকে কেউ সন্দেহ করে? নিজের উপর রাগ হয়। নিজের গড়া পুতুলকে মাঝে মাঝে নিজেই চিনতে পারেন না। চারদিকে লোকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একটু দূরে একটা জটলা ক্রমশ ভারী হতে থাকে। কোনো ভিআইপি হবে হয়তো। দেব দূরে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে। গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন গুলনার। মামুন আসছে পিছনে ট্রে হাতে একজন বয়। গাড়িতে মাকে দিয়ে ছেলেটি তাদের কাছে আসে। ট্রের উপর দু-কাপ কফি আর দুটো ফিসফ্রাই। গুলনার কফি নিয়ে বলেন,ফ্রাই দুইটা আপনে নেন।
— না আমি একটা খাবো।
— তার মানে রাগ করছেন? কাদো কাদো ভাবে জিজ্ঞেস করেন গুলনার।
মণ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি পেয়ে যায়, দেব বলে,নিতে পারি যদি তুমি হাতে করে খাইয়ে দাও।
— ইস আমার বইয়া গ্যাছে। গুলনার এদিক-ওদিক তাকিয়ে ফিস ফ্রাই তুলে দেবের মুখের কাছে তুলতে দেব এক কামড়ে প্রায় অর্ধেকটা কেটে নিল। আবার মুখ এগিয়ে আনতে গুলনার টুপ করে বাকিটা নিজের মুখে পুরে দিলেন।
একটি মেয়ে এসে বলদেবকে বলল,স্যর আপনাকে ডাকছেন। বলেই দৌড়ে ভীড়ের দিকে চলে গেল। দেব আর গুলনার চোখাচুখি করে। দেব ইতস্তত করে।গুলনার বলল, দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বলদেব এগিয়ে যেতে লাগল,মণ্টি তার পিছু ছাড়েনা। ভীড়ের কাছাকাছি হতে ড.মৌসম বলেন,হাই সোম।
তারপর ভীড় ছেড়ে কাছে এসে বলেন,তুমি এখানে? উনি তোমার ওয়াইফ? আলাপ করিয়ে দেবে না?
অগত্যা দেব মণ্টির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল।
বলদেব বলল,আমার অধ্যাপিকা মৌসম বেনজির আর ইনি গুলনার এহসান।
গুলনার হাত তুলে নমস্কার করল।
— তোমার বউয়ের সঙ্গে আলাপ করে ভাল লাগলো। রিয়ালি শি ইজ এঞ্জেল। নিজে নিজে খিল খিল করে হেসে উঠলেন। হাসি থামিয়ে বললেন,তোমাদের ভার্সিটি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তোমার কথা আমি ড.আইয়ুবকে বলেছি। তুমি ইচ্ছে করলে ওর আণ্ডারে থিসিস করতে পারো।
কিছুক্ষন তাকিয়ে গুলনারকে দেখলেন। তারপর গুলনারের কাছে গিয়ে বললেন,ম্যাডাম এক মিনিট একটা প্রাইভেট কথা আছে।
গুলনারকে একটু দূরে সরিয়ে নিয়ে মৃদু স্বরে বললেন,আমি বিনি সুতোর বাঁধন দেখতে পাইনি তাই দড়ি দিয়ে বাঁধতে গেছিলাম। অ্যাম সরি। তারপর দেবের দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে বললেন,বাই সোম। মৌসম আবার ভীড়ে মিশে গেলেন।

গুলনার ভদ্রমহিলার নাম শুনেছিলেন আজ প্রথম দেখলেন। দেবের থেকে কম করে পনেরো-ষোলো বছরের বড় হবেন। দেব এর পাল্লায় পড়েছিল? এতো ওকে চিবিয়ে ছিবড়ে করে দিত। দড়ি দিয়ে বাধতে গেছিল আবার আইলে এমন বাড়ি দিমু জ্বালা জুড়াইয়া যাইবো। দেবের হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে গুলনার বলেন,হা করে দেখেন কি? চলেন,আব্বু আইসা পড়ছে।
দূরে দেখা গেল আরেকটা গাড়ি এসেছে। ওরা তাড়াতাড়ি পা চালালো। মামুন ভিতরে যাবার জন্য প্রস্তুত। গুলনার কাছে যেতে জড়িয়ে ধরে মামুন ধরা গলায় বলল,অপা আসি? তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, আমি মামা হইলে সঙ্গে সঙ্গে খবর দিবা।
ভাইকে জড়িয়ে ধরে গুলনার কেদে ফেলে,খুব ফাজিল হইছস?
— অপা ছাড় কি পাগলামি করো? মামুনের চোখ ঝাপসা।
চদেব এগিয়ে গিয়ে বলে,শোন মামুন একলা যাচ্ছো একলা ফিরবে,মামী-টামি না। লাজুক হেসে মামুন মায়েরে প্রণাম করে বলদেবকে প্রণাম করতে এলে সে জড়িয়ে ধরে বলল,যাত্রা শুভ হোক। মামুন সংরক্ষিত অঞ্চলে ঢুকে গেল।
ফেরার পথে গাড়িতে কেবল গুলনার আর দেব। অপর গাড়িতে ড.রিয়াজ নাদিয়া বেগম আর করিম। কিছুটা যাবার পর গুলনার জিজ্ঞেস করেন, মুস্তাক কফি খেয়েছো।
— জ্বি আমি ভাজা খেয়েছি,কফি খাইতে তিতা লাগে,আমি চা খাই।
— তুমি গাড়ি দাড় করাও।
মুস্তাক ঘাবড়ে গিয়ে গাড়ি থামায়। গুলনার বলেন,নামো কোথাও গিয়া চা খাইয়া আসো। যাও।
— পরে খামুনে– ।
— না অখনই যাইবা। বাধ্য হয়ে মুস্তাককে যেতে হয়। জানলা দিয়ে মুখ বের করে দেখেন গুলনার,মুস্তাক হাটতে হাটতে চায়ের দোকান খুজতে অনেক দূর চলে যাচ্ছে। মণ্টি ইচ্ছে করেই মুস্তাককে চা খেতে পাঠিয়েছেন বলদেব বুঝতে পারেনি।
মণ্টির অদ্ভুত ব্যবহারে দেব হতচকিত। মুস্তাক চলে যেতেই গুলনার দেবকে বলেন, হা করে চেয়ে কি দেখতেছো?
'ওরে আমার বলদারে’ বলে গুলনার দেবের মাথা নিজের দিকে টেনে এনে ঠোট জোড়া মুখে পুরে নিল যেন শেষ বিন্দু শুষে নেবে।

। । সমাপ্ত । ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top