চুয়ান্ন]
বছরের পর বছর একই ছাদের নীচে দেবের সঙ্গে দিব্য কাটিয়েছেন গুলনার এহসান মন্টি কখনো এমন অবস্থা হয়নি। রাতে ঘুম আসতে চায় না,সারা শরীর মনে অনুভব করেন হাহাকার।এক-একসময় ইচ্ছে করে ঢের হয়েছে চাকরি,সব ছেড়ে ছুড়ে ছুটে যায় দেবের কাছে।পর মুহূর্তে নিজেকে শাসন করেন ভুলে গেলে তোমার প্রতিজ্ঞা? তুচ্ছ কারণে প্রতিজ্ঞা ভেঙ্গে দেবে?তুচ্ছ কারণ?তা নয়তো কি?শারীরি ক্ষুধা কি এত গুরুত্বপুর্ণ যার জন্য নিজেকে লক্ষ্যচ্যুত করতে হবে?হায় আল্লাহ কি করে বোঝাবেন নিছক শারীরি চাহিদা নয় দেবের স্পর্শে এমন এক অনির্বচনীয় আস্বাদ যা ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। তাকে দেখা যায় না ছোঁয়া যায় না,অনুভুত হয় মর্মেমর্মে।মাস তিনেক পর চিঠি এল দুরদর্শন থেকে।মন নেচে ওঠে এই উপলক্ষ্যে আবার দুজনের দেখা হবে।এবার দেবকে নিয়ে যাবে।স্কুল কামাই করে রওনা হলেন যাতে ভার্সিটিতে যাবার আগে দেবকে ধরতে পারেন।
দেব একটু সকাল সকাল এসে পড়েছে।ক্লাস সুরু হতে ঘণ্টা খানেক বাকী। ক্যাম্পাসের একধারে একটা গাছের নীচে বসে আছে।ক্যাণ্টিনে যেতে পারতো কিন্তু বেশি ভীড় তার অপছন্দ।একটা বেয়ারা এসে বলে গেল ড.এমবি ডাকছেন।
ড.এমবি পুরো নাম সম্ভবত মৌসম বেনজির।দ্বিতীয় পত্রের ক্লাস নেন। মধ্যবয়সী স্বাস্থ্যবতী,ক্লাসে ছাড়া সব সময় চোখ ঢাকা থাকে সানগ্লাসে।চোখ দেখা যায় না বলে মনে হয় কিছুটা রহস্যময়ী। ক্লাসে যখন লেকচার করেন দেখলে মনে হবে দৃষ্টি তার ক্লাসরুম ছাড়িয়ে হারিয়ে গেছে কোন সুদুরে।ওর স্বামী বিদেশে থাকেন তিনিও মস্ত পণ্ডিত মানুষ এরকম শুনেছে।
--ম্যাডাম ডেকেছিলেন?
--ওহ সোম?দেখলাম তুমি ম্লানমুখে গাছের নীচে বসে আছো, কি ব্যাপার?
চোখ দেখা না গেলে কথা বলতে অস্বস্তি হয়।দেব দ্বিধা জড়িত কণ্ঠে বলে,আপনি কালো চশমার মধ্যে দিয়ে দেখেছিলেন তাই সম্ভবত ম্লান মনে হয়েছে।
অপ্রত্যাশিত উত্তরে এমবি কিছুটা থমকে গেলেও খিলখিল করে হেসে উঠলেন। হাসলে ম্যামকে বেশ দেখতে লাগে চশমা খুলে সরাসরি তাকিয়ে বলেন,তুমি বেশ কথা বলো।আচ্ছা সোম তোমার দর্শন পড়তে ইচ্ছে হল কেন?
--ম্যাম আমি যা বলবো শুনতে আপনার অদ্ভুত লাগবে।
--তোমার কথা শুনতে ভাল লাগছে,তুমি বলো।
--আমি কোন বিষয়কে স্বয়ং সম্পুর্ণ মনে করিনা।জীবনের একটা অংশমাত্র। জীবন ব্যতীরেকে শিক্ষা অর্থহীন।
ড.এমবি মাথা নীচু করে চশমার কাচ ঘষতে থাকেন। তারপর একসময় বলেন, আমার ক্লাস আছে।তুমি একদিন এসো না আমার বাড়িতে--।দরজায় কাকে দেখে বললেন,এখানে কি চাই?ক্লাসে যাও। দেব ঘুরে তাকিয়ে দেখে মণ্টি।মণ্টি ততক্ষনে চলে গেছে।ম্যাম আমি আসছি বলে দ্রুত বেরিয়ে পিছু ধাওয়া করে।হনহন করে করিডর দিয়ে চলে যাচ্ছেন, পিছন ফিরে দেখছেন না।এ সময় এখানে কেন ভেবে অবাক।ক্যাম্পাসের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি।গুলনারকে দেখে ইউসুফচাচা ছুটে এলেন।দেব দ্রুত গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢূকে গেল।গুলনার বিরক্ত হয়ে সরে গিয়ে জানলা ঘেষে বসেন।
--চাচা আমরা কোথায় যাচ্ছি?দেব জিজ্ঞেস করে।
--টিভির অফিসে।ইউসুফ উত্তর দিলেন।
--চাচা ফাউ কথা না বইলা গাড়ি চালান।গুলনার বলেন।
হাওয়ায় গুলনারের উড়ুনি দেবের কোলে এসে পড়ে।দেব হাত দিয়ে ধরতে গুলনার টান দিলেন কিন্তু দেব ধরে থাকে।গুলনার আড়চোখে দেখে বিরক্ত হয়ে বুক থেকে উড়ুনি নামিয়ে দিলেন।দুরদর্শন ভবনের কাছে গাড়ি থামতে দরজা খুলে গুলনার নেমে পড়লেন।দেবও নেমে উড়ুনিটা কাধে জড়িয়ে দিল।গুলনার ভ্রুক্ষেপ না করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলেন। বোকার মত কিছুক্ষন চেয়ে থেকে গাড়িতে এসে বসল।মন্টির রাগ এখনো যায় নি।গাড়িতে বসে উসখুস করতে থাকে দেব।কখন নামবে কিছু বলে গেল না।ইউসুফ চাচাকে জিজ্ঞেস করে,চাচা চা খাবেন?
--সাহেব আপনি বসেন,আমি চা নিয়ে আসতেছি।ইউসুফ চা আনতে গেলেন।
সন্ধ্যের মুখে গুলনার উপর থেকে নামলেন।চোখে মুখে তৃপ্তির ছাপ।দেব দরজা খুলে দিতে গুলনার গাড়িতে উঠে বসে জিজ্ঞেস করেন,চাচা কিছু খাইবেন?
--না মা।আমরা চা খেয়েছি।ইউসুফ মিঞা বললেন।
--চাচাকে পয়সা দিয়ে দাও।দেব বলে।
চায়ের দাম কত হয়েছে জেনে ব্যাগ খুলে ইউসুফকে টাকা দিলেন গুলনার।গাড়ি ছেড়ে দিল।
--জানেন চাচা আটখান গান রেকর্ড করলো।তার মধ্যে চারটে রবীন্দ্র সংগীত।
--এত সময় লাগলো?দেব জিজ্ঞেস করে।
--আপনি খালি খালি ক্লাস কামাই করলেন কেন?
--তোমাকে দেখে চলে এলাম,আর ক্লাস করলাম না।
--ওই ঘরে ক্লাস করতেছিলেন?
--কি উলটাপালটা বলো?উনি আমাদের অধ্যাপিকা।আমারে ডাকলেন--।
--সবাই আপনাকে ডাকে কেন?আপনি কি?
--মন্টি তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
--হ্যা আমার মাথা খারাপ,আমাকে আর বকাবেন না।
ইউসুফের দিকে তাকিয়ে দেব চুপ করে গেল।কি করবে ভাবে মনে মনে।গুলনারের ভুল ভাঙ্গাতে বলে,ড.এমবি বেশ রাশভারী মহিলা,আমারে বেশ পছন্দ করেন।ওর স্বামী বিদেশে থাকেন,পণ্ডিত মানুষ।তোমারে ছাত্রী ভেবেছেন--হা-হা-হা।
--চাচা ক্যাসেট চালায়ে দেন তো,গান শুনি।গুলনার বলেন।
দেব বুঝতে পারে মণ্টি এসব শুনতে চাইছে না।গুলনার বলেন,থাক চাচা গান চালাইতে হবে না,মাথা ধরছে।গুলনার হেলান দিয়ে বসেন।ইউসুফ মিঞা না থাকলে মাথা টিপে দিত।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে গুলনার চোখ বুজে আছেন।বাড়ির সামনে গাড়ি থামতে গুলনার নেমে সিড়ি বেয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন।বন্ধ দরজার সামনে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে দেব নাদিয়া বেগমের ঘরের দিকে গেলেন তাকে দেখে বললেন,আসো বাবা,বসো।এই ফিরলা?
দেব একটা চেয়ার টেনে বসলো।
--মন্টি আসছে তোমার লগে দেখা হইছে?
--দেখা হয়েছে,ওর মাথা ধরেছে।ঘরে দরজা বন্ধ করে শুয়ে আছে।
--কোন সকালে বের হয়েছে,মাথার আর দোষ কি?থাক বিশ্রাম করুক।এ্যাই করিম--।উচু গলায় ডাকলেন।
করিম চা নাস্তা নিয়ে ঢূকলো।নাদিয়া বেগম হেসে বললেন, করিমের বুদ্ধি খুলতাছে। মেঘ না চাইতে পানি।মণ্টিরে এখন চা দিস না,ওরে বিশ্রাম নিতে দে।
--জ্বি দিদি তো চা খাইতেছে।আগে বললে দিতাম না।
--মণ্টি দরজা খুলছে?যা ব্যাটা মাথামোটা।
করিম বুঝতে পারে মায়ের মাথার ঠিক নাই।একবার কয় বুদ্ধি খুলছে আবার কয় মাথামোটা। অবশ্য মায়ের কথায় করিম কিছু মনে করে না।মুখে যাই বলুক মনটা ভারী নরম।
ডিএম সাহেবা চলে গেছেন।তার জায়গায় নতুন সাহেব এসেছেন নাম আররাব আখলাক।যার অর্থ ন্যায়বান ব্যক্তি।আখলাক সাহেব ন্যায়-অন্যায়ের ধার ধারেন না।এই ভদ্রলোকের সঙ্গে কাজ করতে নুসরত হাপিয়ে উঠেছে।রান্নার মহিলা কাজ খুইয়ে কোথায় গেল কে জানে?ঐ মহিলা শুনেছে তাদের পিয়ন তৈয়ব মিঞার শাশুড়ী।গেছে ভালো হয়েছে আখলাক সাহেবের যা ব্যবহার। কথায় কথায় এটা করো ওটা করো ফরমাশ করেন।অনবরত ফোন বেজে চলেছে।আগের ম্যামের সময় এত ফোন আসতো না।আখলাক সাহেব অফিসে না থাকলে কয়েকবার ফোন ধরেছে নুসরত।সবই অফিসের বাইরের লোক,ব্যক্তিগত দরকার।টেলিফোনে যে সব শব্দ অবলীলায় উচ্চারণ করেন পাশে একজন মহিলা বসে আছেন মনে হয়না আখলাক সাহেবের সে খেয়াল আছে।কথা বলতে বলতে এমন উচু গলায় হাসেন যেন এইটা অফিস না তার বাড়ী। দেব থাকলে তমিজ শিখিয়ে দিতো।এই সাহেব আসায় অফিসের অন্যান্য স্টাফরা বেশ খুশী মনে হয়।
জেনিফার ম্যাডাম যাবার আগে বলে গেছেন,তিনি নুসরতকে তার অফিসে নিয়ে যাবার চেষ্টা করবেন। বছর পার হতে চলল,ম্যাডাম কোনো খবর দিলেন না।নুসরত ভাবে,একদিন খোজ করে ম্যাডামের অফিসে চলে যাবে কিনা?
বছরের পর বছর একই ছাদের নীচে দেবের সঙ্গে দিব্য কাটিয়েছেন গুলনার এহসান মন্টি কখনো এমন অবস্থা হয়নি। রাতে ঘুম আসতে চায় না,সারা শরীর মনে অনুভব করেন হাহাকার।এক-একসময় ইচ্ছে করে ঢের হয়েছে চাকরি,সব ছেড়ে ছুড়ে ছুটে যায় দেবের কাছে।পর মুহূর্তে নিজেকে শাসন করেন ভুলে গেলে তোমার প্রতিজ্ঞা? তুচ্ছ কারণে প্রতিজ্ঞা ভেঙ্গে দেবে?তুচ্ছ কারণ?তা নয়তো কি?শারীরি ক্ষুধা কি এত গুরুত্বপুর্ণ যার জন্য নিজেকে লক্ষ্যচ্যুত করতে হবে?হায় আল্লাহ কি করে বোঝাবেন নিছক শারীরি চাহিদা নয় দেবের স্পর্শে এমন এক অনির্বচনীয় আস্বাদ যা ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না। তাকে দেখা যায় না ছোঁয়া যায় না,অনুভুত হয় মর্মেমর্মে।মাস তিনেক পর চিঠি এল দুরদর্শন থেকে।মন নেচে ওঠে এই উপলক্ষ্যে আবার দুজনের দেখা হবে।এবার দেবকে নিয়ে যাবে।স্কুল কামাই করে রওনা হলেন যাতে ভার্সিটিতে যাবার আগে দেবকে ধরতে পারেন।
দেব একটু সকাল সকাল এসে পড়েছে।ক্লাস সুরু হতে ঘণ্টা খানেক বাকী। ক্যাম্পাসের একধারে একটা গাছের নীচে বসে আছে।ক্যাণ্টিনে যেতে পারতো কিন্তু বেশি ভীড় তার অপছন্দ।একটা বেয়ারা এসে বলে গেল ড.এমবি ডাকছেন।
ড.এমবি পুরো নাম সম্ভবত মৌসম বেনজির।দ্বিতীয় পত্রের ক্লাস নেন। মধ্যবয়সী স্বাস্থ্যবতী,ক্লাসে ছাড়া সব সময় চোখ ঢাকা থাকে সানগ্লাসে।চোখ দেখা যায় না বলে মনে হয় কিছুটা রহস্যময়ী। ক্লাসে যখন লেকচার করেন দেখলে মনে হবে দৃষ্টি তার ক্লাসরুম ছাড়িয়ে হারিয়ে গেছে কোন সুদুরে।ওর স্বামী বিদেশে থাকেন তিনিও মস্ত পণ্ডিত মানুষ এরকম শুনেছে।
--ম্যাডাম ডেকেছিলেন?
--ওহ সোম?দেখলাম তুমি ম্লানমুখে গাছের নীচে বসে আছো, কি ব্যাপার?
চোখ দেখা না গেলে কথা বলতে অস্বস্তি হয়।দেব দ্বিধা জড়িত কণ্ঠে বলে,আপনি কালো চশমার মধ্যে দিয়ে দেখেছিলেন তাই সম্ভবত ম্লান মনে হয়েছে।
অপ্রত্যাশিত উত্তরে এমবি কিছুটা থমকে গেলেও খিলখিল করে হেসে উঠলেন। হাসলে ম্যামকে বেশ দেখতে লাগে চশমা খুলে সরাসরি তাকিয়ে বলেন,তুমি বেশ কথা বলো।আচ্ছা সোম তোমার দর্শন পড়তে ইচ্ছে হল কেন?
--ম্যাম আমি যা বলবো শুনতে আপনার অদ্ভুত লাগবে।
--তোমার কথা শুনতে ভাল লাগছে,তুমি বলো।
--আমি কোন বিষয়কে স্বয়ং সম্পুর্ণ মনে করিনা।জীবনের একটা অংশমাত্র। জীবন ব্যতীরেকে শিক্ষা অর্থহীন।
ড.এমবি মাথা নীচু করে চশমার কাচ ঘষতে থাকেন। তারপর একসময় বলেন, আমার ক্লাস আছে।তুমি একদিন এসো না আমার বাড়িতে--।দরজায় কাকে দেখে বললেন,এখানে কি চাই?ক্লাসে যাও। দেব ঘুরে তাকিয়ে দেখে মণ্টি।মণ্টি ততক্ষনে চলে গেছে।ম্যাম আমি আসছি বলে দ্রুত বেরিয়ে পিছু ধাওয়া করে।হনহন করে করিডর দিয়ে চলে যাচ্ছেন, পিছন ফিরে দেখছেন না।এ সময় এখানে কেন ভেবে অবাক।ক্যাম্পাসের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি।গুলনারকে দেখে ইউসুফচাচা ছুটে এলেন।দেব দ্রুত গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢূকে গেল।গুলনার বিরক্ত হয়ে সরে গিয়ে জানলা ঘেষে বসেন।
--চাচা আমরা কোথায় যাচ্ছি?দেব জিজ্ঞেস করে।
--টিভির অফিসে।ইউসুফ উত্তর দিলেন।
--চাচা ফাউ কথা না বইলা গাড়ি চালান।গুলনার বলেন।
হাওয়ায় গুলনারের উড়ুনি দেবের কোলে এসে পড়ে।দেব হাত দিয়ে ধরতে গুলনার টান দিলেন কিন্তু দেব ধরে থাকে।গুলনার আড়চোখে দেখে বিরক্ত হয়ে বুক থেকে উড়ুনি নামিয়ে দিলেন।দুরদর্শন ভবনের কাছে গাড়ি থামতে দরজা খুলে গুলনার নেমে পড়লেন।দেবও নেমে উড়ুনিটা কাধে জড়িয়ে দিল।গুলনার ভ্রুক্ষেপ না করে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলেন। বোকার মত কিছুক্ষন চেয়ে থেকে গাড়িতে এসে বসল।মন্টির রাগ এখনো যায় নি।গাড়িতে বসে উসখুস করতে থাকে দেব।কখন নামবে কিছু বলে গেল না।ইউসুফ চাচাকে জিজ্ঞেস করে,চাচা চা খাবেন?
--সাহেব আপনি বসেন,আমি চা নিয়ে আসতেছি।ইউসুফ চা আনতে গেলেন।
সন্ধ্যের মুখে গুলনার উপর থেকে নামলেন।চোখে মুখে তৃপ্তির ছাপ।দেব দরজা খুলে দিতে গুলনার গাড়িতে উঠে বসে জিজ্ঞেস করেন,চাচা কিছু খাইবেন?
--না মা।আমরা চা খেয়েছি।ইউসুফ মিঞা বললেন।
--চাচাকে পয়সা দিয়ে দাও।দেব বলে।
চায়ের দাম কত হয়েছে জেনে ব্যাগ খুলে ইউসুফকে টাকা দিলেন গুলনার।গাড়ি ছেড়ে দিল।
--জানেন চাচা আটখান গান রেকর্ড করলো।তার মধ্যে চারটে রবীন্দ্র সংগীত।
--এত সময় লাগলো?দেব জিজ্ঞেস করে।
--আপনি খালি খালি ক্লাস কামাই করলেন কেন?
--তোমাকে দেখে চলে এলাম,আর ক্লাস করলাম না।
--ওই ঘরে ক্লাস করতেছিলেন?
--কি উলটাপালটা বলো?উনি আমাদের অধ্যাপিকা।আমারে ডাকলেন--।
--সবাই আপনাকে ডাকে কেন?আপনি কি?
--মন্টি তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
--হ্যা আমার মাথা খারাপ,আমাকে আর বকাবেন না।
ইউসুফের দিকে তাকিয়ে দেব চুপ করে গেল।কি করবে ভাবে মনে মনে।গুলনারের ভুল ভাঙ্গাতে বলে,ড.এমবি বেশ রাশভারী মহিলা,আমারে বেশ পছন্দ করেন।ওর স্বামী বিদেশে থাকেন,পণ্ডিত মানুষ।তোমারে ছাত্রী ভেবেছেন--হা-হা-হা।
--চাচা ক্যাসেট চালায়ে দেন তো,গান শুনি।গুলনার বলেন।
দেব বুঝতে পারে মণ্টি এসব শুনতে চাইছে না।গুলনার বলেন,থাক চাচা গান চালাইতে হবে না,মাথা ধরছে।গুলনার হেলান দিয়ে বসেন।ইউসুফ মিঞা না থাকলে মাথা টিপে দিত।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে গুলনার চোখ বুজে আছেন।বাড়ির সামনে গাড়ি থামতে গুলনার নেমে সিড়ি বেয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন।বন্ধ দরজার সামনে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে দেব নাদিয়া বেগমের ঘরের দিকে গেলেন তাকে দেখে বললেন,আসো বাবা,বসো।এই ফিরলা?
দেব একটা চেয়ার টেনে বসলো।
--মন্টি আসছে তোমার লগে দেখা হইছে?
--দেখা হয়েছে,ওর মাথা ধরেছে।ঘরে দরজা বন্ধ করে শুয়ে আছে।
--কোন সকালে বের হয়েছে,মাথার আর দোষ কি?থাক বিশ্রাম করুক।এ্যাই করিম--।উচু গলায় ডাকলেন।
করিম চা নাস্তা নিয়ে ঢূকলো।নাদিয়া বেগম হেসে বললেন, করিমের বুদ্ধি খুলতাছে। মেঘ না চাইতে পানি।মণ্টিরে এখন চা দিস না,ওরে বিশ্রাম নিতে দে।
--জ্বি দিদি তো চা খাইতেছে।আগে বললে দিতাম না।
--মণ্টি দরজা খুলছে?যা ব্যাটা মাথামোটা।
করিম বুঝতে পারে মায়ের মাথার ঠিক নাই।একবার কয় বুদ্ধি খুলছে আবার কয় মাথামোটা। অবশ্য মায়ের কথায় করিম কিছু মনে করে না।মুখে যাই বলুক মনটা ভারী নরম।
ডিএম সাহেবা চলে গেছেন।তার জায়গায় নতুন সাহেব এসেছেন নাম আররাব আখলাক।যার অর্থ ন্যায়বান ব্যক্তি।আখলাক সাহেব ন্যায়-অন্যায়ের ধার ধারেন না।এই ভদ্রলোকের সঙ্গে কাজ করতে নুসরত হাপিয়ে উঠেছে।রান্নার মহিলা কাজ খুইয়ে কোথায় গেল কে জানে?ঐ মহিলা শুনেছে তাদের পিয়ন তৈয়ব মিঞার শাশুড়ী।গেছে ভালো হয়েছে আখলাক সাহেবের যা ব্যবহার। কথায় কথায় এটা করো ওটা করো ফরমাশ করেন।অনবরত ফোন বেজে চলেছে।আগের ম্যামের সময় এত ফোন আসতো না।আখলাক সাহেব অফিসে না থাকলে কয়েকবার ফোন ধরেছে নুসরত।সবই অফিসের বাইরের লোক,ব্যক্তিগত দরকার।টেলিফোনে যে সব শব্দ অবলীলায় উচ্চারণ করেন পাশে একজন মহিলা বসে আছেন মনে হয়না আখলাক সাহেবের সে খেয়াল আছে।কথা বলতে বলতে এমন উচু গলায় হাসেন যেন এইটা অফিস না তার বাড়ী। দেব থাকলে তমিজ শিখিয়ে দিতো।এই সাহেব আসায় অফিসের অন্যান্য স্টাফরা বেশ খুশী মনে হয়।
জেনিফার ম্যাডাম যাবার আগে বলে গেছেন,তিনি নুসরতকে তার অফিসে নিয়ে যাবার চেষ্টা করবেন। বছর পার হতে চলল,ম্যাডাম কোনো খবর দিলেন না।নুসরত ভাবে,একদিন খোজ করে ম্যাডামের অফিসে চলে যাবে কিনা?