- চাচীর পয়লা দিন কিবা অইছিল? সমস্যা অইছে কিছু?
হাসুর মায়ের প্রশ্নে হাসেন, নড়েচড়ে বসেন গৃহকর্ত্রী।
সিলেটি হুজুরের সঙ্গীদুজনকে খাইয়ে-দাইয়ে গোছগাছ করে মানসিক প্রস্ততির সুযোগ হয়নি সেরাতে। হাকিম সাহেবও অত রীতিনীতি জানেন না। যতটুকু জেনেছেন, সে মোতাবেক স্ত্রী ফলের ট্রে নিয়ে মেহমানদের ঘরে গেছে।
- বিছানায় দুইটা দামড়া ব্যাটা, পায়জামা পড়ে শুয়ে আছে। আমি ঢুকতেই একজন উইঠা আসল, হাত বাড়াইল ট্রে নিতে। আমি ভাবছি আমারে ধরবে। হাত-পা কাঁপাকাঁপি শুরু।
হেসে বলেন।
- দুইজন কেন আম্মা?
সেতু জিজ্ঞেস করে। ওকে খেদমতে কাফেলার বইটা দেয়া হয়নি, জানার কথা না।
- দুইজনে দুই হাত ধরে বিছানায় নিয়ে গেছে, সুন্দর করে শোয়ায়ে দিয়েছে। খুব ভদ্রলোক ছিল ওনারা।
দুই হাত ধরে নেয়ার কথা শুনে বইটির প্রচ্ছদের কথা মনে পড়ে সেতুর।
বলতে বলতে শাতিরা বেগমের ঠোঁট চওড়া হয়। তবে আর বেশি কিছু বলেন না। বর্তমানের চিন্তায় মগ্ন হন।
পাশের বাসার মেয়েটির নতুন বিয়ে হয়েছে। জামাই নিয়ে বেড়াতে এসেছে। ছেলেটা দেখতে ভালই। জাহিনের বাবা আর ওবাড়ির মেয়ের বাবা বন্ধু ছিলেন। তাই একসঙ্গে জমি-বাড়ি করা। তবে গৃহকর্তার প্রয়াণের পর সংগঠনে ওদের কার্যক্রম কমে গেছে।
বাড়ির মেয়েরা পর্দাটর্দা করেনা। শাতিরা বেগম ওদিকে খুব একটা যান না। অসৎ সঙ্গ তার পছন্দ নয়।
সংগঠনে অতটা জড়িত না থাকলেও কুসংস্কারচ্ছন্ন লম্ফঝম্ফে আছে। মেয়ের বিয়ের সময় সাউন্ডবক্স বাজিয়ে ক'দিন খুব বিরক্ত করেছে। এই এক নতুন ঝামেলা যুক্ত হয়েছে। কলোনিতে এ জিনিস বাজানো নিষেধ। এরা বাইরে বলে নিষেধ মানেনা।
বক্স বাজানো নিয়ে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল, তবে বিয়েতে গিয়েছিলেন শাতিরা বেগম। আজ হাসুর মাকে পাঠিয়েছেন প্রয়োজন বলে। মেয়েটা নাকি মুখ বেঁকিয়ে বলেছে,
- আমার জামাই যাবে কেন? ওদের বৌকে পাঠান। আমাদের বাসায় গেস্ট আছে। দেবর-ভাসুর-ভাই.. পাঠালে পাঠান।
ভুল হয়েছে, এখন এরা আবার কাকে কি বলে, লোকে জানবে। কেউ তাবিজ-টাবিজ করে থাকলে সতর্ক হয়ে যাবে।
- ছেড়ি ওইটা আস্তা বিয়াদব!
হাসুর মা গরগর করে।
- ইমাম সাব হুজুরে লাংছেঁচা করতে আইছিলনা? ছেড়ি নাকি কয়, দুপুর বেলা হইছে, আপনের করা লাগনা। আস্তা বিয়াদব! বাপে যা পয়সাঘড়ি রাইখা গেছে, পোলায় উড়াইতেছে।
ছেলের ফ্যামিলি বৌভাতে খেদমত করাবে, তা যথেষ্ট নয় মেয়ের মায়ের। এ বাড়িতেও তো হওয়া দরকার। কি করা যায়, নতুন ট্রেন্ড, তাতে গা ভাসাতে হবে তো। বৌ তুলে নেয়ার আগে হবেনা, ছেলের ফ্যামিলি মানবেনা। বিয়ের পরদিন যখন বৌভাত শেষে মেয়ে-জামাই ফিরেছে তখন করিয়েছেন।
কিছুক্ষণ নীরবতা, তারপর বলে,
- চাচী, আমি একটা কথা কই, কমু?
- বলবা?
- জ্বি। ভালা না লাগলে মন কালা কইরেন না। অন্য কেউ অইলে কইতাম না, আপনেগোরে কই।
- হুম, বলো। সমস্যা নাই। তোমার বুদ্ধিও শুনি।
- যদি কাউরে ভাউ করবার না পারেন, হাসুর বাপে আইতে পারে কইলে।
- হাসুর বাপ?
চোখ তুলে তাকান শাতিরা বেগম। মোটা ফ্রেমের চশমার ওপাশ থেকে ভ্রুকুঞ্চন দেখা যায়।
- আমরা চাচী যার নুন খাই হের গুন গাই। আর এই কথা পেডে থাকব, মুখে আইবোনা। নিচ্চিন্ত থাকবার পারেন।
শাতিরা বেগম ভাবছেন ঠোঁট চিপে।
- হাসুর বাপ পারবে?
- পারবোনা ক্যান? কি যে কন চাচী.. হেহহেহহ..
- না, বুইঝো কিন্ত। এইটা খালি ধরলাম-মারলাম করলে হবেনা। নিয়ম কানুন আছে।
- হ, একটু কইয়া দিলেই হ্যায় হেই মতোন কাম করব।
- জাহিন কালকে সব বুঝিয়ে দিছে? মনে আছে কি-কি কেমনে-কেমনে?
বৌকে জিজ্ঞেস করেন।
- আগে যা যা বলেছে মনে আছে। সমস্যাটা হওয়ার পরে আর কিছু করেনি। কি কি যেন করবে বলেছিল।
সেতু মনে করার চেষ্টা করে।
- হ্যায় এগুলা বুঝে। ভাবীসাব খালি একটু ধরাইয়া দিলেই দেখবেন পারব।
শাতিরা বেগম তাকান সেতুর দিকে,
- কি বল বৌ?
- আম্মা যা ভাল মনে করেন।
সেতু মাথা ঝাঁকায়। কোন উৎসাহ নেই।
- ভাবীসাবরে কইয়া দেই, আমার জামাই কিন্ত রিশকা বায়। দুফুরবেলা আইয়া খাইয়া ঘুমাইয়া আবার বাইর অইব বিকালে। রাইতে দশটা বাজে গ্যারেজে রিশকা থুইয়া হেরপরে আইব।
- আজকে তাড়াতাড়ি আসতে বলো। সোজা বাসায় চলে আসবে, খাওয়াদাওয়া করবে।
- ডাইরেক কেমন আইব? শইল্লে ধুলা-কালি না? গোছল দিয়া হের পরে না আইব। আগে গ্যারেজে থুইলেও হেই দশটাই বাজব ধরেন।
- এইখানে করবে গোসল। জয়নালের লুঙ্গি-গামছা আছেনা?
- আইচ্ছা, তাইলে কইয়া দিমুনে।
কিচেনের দিকে চলে যায় হাসুর মা।
- কিছু বলবা বৌ?
নতুন দিশা পাবার পর থেকে সেতুর মুখে চিন্তা। বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে শ্বাশুড়ি।
- আম্মা, ওই লোক রিকশা চালায়?
শাতিরা বেগম পুত্রবধূর বলার ধরণে অবজ্ঞার ছাপ পাচ্ছেন। ঠোঁটে মুচকি হাসি টেনে চোখে চোখ রেখে বলেন,
- শোন বৌ, কামের জন্য কাওকে নিচা ভাবতে নাই।
- না না আম্মা, আমি ওরকম বলিনি..
সেতু পিঠ খাড়া করে পটপট বলতে শুরু করে। আম্মা যে এভাবে নেবে ভাবেনি।
- মানে, ওরা কেমন নোংরা, তারপর দেখেন না সুযোগ পেলেই ভাড়া নেবে বাড়িয়ে। তারপর মেয়েমানুষ দেখলেই কেমন করে..
- কেমন করে?
- কিভাবে তাকায়, ডাকে, বাজে কথা বলে পাশ দিয়ে যাবার সময়।
- কবে করছে? এই বাড়ি আসার পর থেকে যতদিন গেছ বাইরে, এমন হইছে?
মনে করার চেষ্টা করে সেতু। না, তেমনটা হয়নি। তবে কলেজে পড়ার সময় এমন অনেক সহ্য করেছে।
- না..
- এইটাই পর্দার গুণ। চেহারা-শরীর দেখাইয়া চলবা, ওদের দোষ কি? একটু দেখাইলা, একটু দেখাইলানা - ওদের মনে চায়না দেখতে? দেখলে মনে চায়না টেস্ট করতে? পুরুষ মানুষ তো আল্লা এমন কইরাই বানাইছে। আমি যে বাইর হই, রিকশাঅলারা সালাম দেয়, বলে খালা কেমন আছেন? আবার আরেক বেটী কোমর ঢুলাইয়া যায়, পর্দা-পুশিদা নাই। এক রিকশাঅলা আরেকটারে বলে, আয় বাজি ধরি বুনি কয় কেজি! আয় ধইরা পিছা মারি!
শ্বাশুড়ির বলার ধরণে হেসে ফেলে সেতু।
- জ্বি আম্মা।
- তাই বলি, কাজ কইরা ইনকাম করে এমন কাওরে নিচা ভাবার দরকার নাই। লুঙ্গি খুললে দেখবা উকিল-মোল্লার যা আছে রিকশাঅলারও তাই। বরং যারা খাটনি করে ওরা সুখ দিতে পারে বেশি।
সেতু বাধ্য মেয়ের মত হুঁ হাঁ করে জানায় বুঝতে পারছে।
- রিকশা চালায় না কি চালায় সেইটা কথা না, তুমি দেখবা তোমারে কেমন চালাইতে পারল।
- জ্বি।
- মাদ্রাসা থেকে মুফতি ডাইকা আনতে পারব, আসবে। কিন্ত লাভ কি, শুকুর নাই। সপ্তায় সপ্তায় দাওয়াত। এই লোক সারাদিন রিকশা টাইনা এসে যখন শরীর ঠান্ডা করে দিবা, দোয়া করবে। মুখে দোয়া করা লাগেনা, মন থেকেই আসে।
- তাহলে কিভাবে নিয়্যত করব, সাদকার নাকি খেদমতের?
- সদকার নিয়্যত কর, ছওয়াব বেশি।
শাতিরা বেগম তজবি জপায় মন দেন। সেতু মনে মনে নিয়্যত করে ফেলে।
হাসুর মায়ের প্রশ্নে হাসেন, নড়েচড়ে বসেন গৃহকর্ত্রী।
সিলেটি হুজুরের সঙ্গীদুজনকে খাইয়ে-দাইয়ে গোছগাছ করে মানসিক প্রস্ততির সুযোগ হয়নি সেরাতে। হাকিম সাহেবও অত রীতিনীতি জানেন না। যতটুকু জেনেছেন, সে মোতাবেক স্ত্রী ফলের ট্রে নিয়ে মেহমানদের ঘরে গেছে।
- বিছানায় দুইটা দামড়া ব্যাটা, পায়জামা পড়ে শুয়ে আছে। আমি ঢুকতেই একজন উইঠা আসল, হাত বাড়াইল ট্রে নিতে। আমি ভাবছি আমারে ধরবে। হাত-পা কাঁপাকাঁপি শুরু।
হেসে বলেন।
- দুইজন কেন আম্মা?
সেতু জিজ্ঞেস করে। ওকে খেদমতে কাফেলার বইটা দেয়া হয়নি, জানার কথা না।
- দুইজনে দুই হাত ধরে বিছানায় নিয়ে গেছে, সুন্দর করে শোয়ায়ে দিয়েছে। খুব ভদ্রলোক ছিল ওনারা।
দুই হাত ধরে নেয়ার কথা শুনে বইটির প্রচ্ছদের কথা মনে পড়ে সেতুর।
বলতে বলতে শাতিরা বেগমের ঠোঁট চওড়া হয়। তবে আর বেশি কিছু বলেন না। বর্তমানের চিন্তায় মগ্ন হন।
পাশের বাসার মেয়েটির নতুন বিয়ে হয়েছে। জামাই নিয়ে বেড়াতে এসেছে। ছেলেটা দেখতে ভালই। জাহিনের বাবা আর ওবাড়ির মেয়ের বাবা বন্ধু ছিলেন। তাই একসঙ্গে জমি-বাড়ি করা। তবে গৃহকর্তার প্রয়াণের পর সংগঠনে ওদের কার্যক্রম কমে গেছে।
বাড়ির মেয়েরা পর্দাটর্দা করেনা। শাতিরা বেগম ওদিকে খুব একটা যান না। অসৎ সঙ্গ তার পছন্দ নয়।
সংগঠনে অতটা জড়িত না থাকলেও কুসংস্কারচ্ছন্ন লম্ফঝম্ফে আছে। মেয়ের বিয়ের সময় সাউন্ডবক্স বাজিয়ে ক'দিন খুব বিরক্ত করেছে। এই এক নতুন ঝামেলা যুক্ত হয়েছে। কলোনিতে এ জিনিস বাজানো নিষেধ। এরা বাইরে বলে নিষেধ মানেনা।
বক্স বাজানো নিয়ে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিল, তবে বিয়েতে গিয়েছিলেন শাতিরা বেগম। আজ হাসুর মাকে পাঠিয়েছেন প্রয়োজন বলে। মেয়েটা নাকি মুখ বেঁকিয়ে বলেছে,
- আমার জামাই যাবে কেন? ওদের বৌকে পাঠান। আমাদের বাসায় গেস্ট আছে। দেবর-ভাসুর-ভাই.. পাঠালে পাঠান।
ভুল হয়েছে, এখন এরা আবার কাকে কি বলে, লোকে জানবে। কেউ তাবিজ-টাবিজ করে থাকলে সতর্ক হয়ে যাবে।
- ছেড়ি ওইটা আস্তা বিয়াদব!
হাসুর মা গরগর করে।
- ইমাম সাব হুজুরে লাংছেঁচা করতে আইছিলনা? ছেড়ি নাকি কয়, দুপুর বেলা হইছে, আপনের করা লাগনা। আস্তা বিয়াদব! বাপে যা পয়সাঘড়ি রাইখা গেছে, পোলায় উড়াইতেছে।
ছেলের ফ্যামিলি বৌভাতে খেদমত করাবে, তা যথেষ্ট নয় মেয়ের মায়ের। এ বাড়িতেও তো হওয়া দরকার। কি করা যায়, নতুন ট্রেন্ড, তাতে গা ভাসাতে হবে তো। বৌ তুলে নেয়ার আগে হবেনা, ছেলের ফ্যামিলি মানবেনা। বিয়ের পরদিন যখন বৌভাত শেষে মেয়ে-জামাই ফিরেছে তখন করিয়েছেন।
কিছুক্ষণ নীরবতা, তারপর বলে,
- চাচী, আমি একটা কথা কই, কমু?
- বলবা?
- জ্বি। ভালা না লাগলে মন কালা কইরেন না। অন্য কেউ অইলে কইতাম না, আপনেগোরে কই।
- হুম, বলো। সমস্যা নাই। তোমার বুদ্ধিও শুনি।
- যদি কাউরে ভাউ করবার না পারেন, হাসুর বাপে আইতে পারে কইলে।
- হাসুর বাপ?
চোখ তুলে তাকান শাতিরা বেগম। মোটা ফ্রেমের চশমার ওপাশ থেকে ভ্রুকুঞ্চন দেখা যায়।
- আমরা চাচী যার নুন খাই হের গুন গাই। আর এই কথা পেডে থাকব, মুখে আইবোনা। নিচ্চিন্ত থাকবার পারেন।
শাতিরা বেগম ভাবছেন ঠোঁট চিপে।
- হাসুর বাপ পারবে?
- পারবোনা ক্যান? কি যে কন চাচী.. হেহহেহহ..
- না, বুইঝো কিন্ত। এইটা খালি ধরলাম-মারলাম করলে হবেনা। নিয়ম কানুন আছে।
- হ, একটু কইয়া দিলেই হ্যায় হেই মতোন কাম করব।
- জাহিন কালকে সব বুঝিয়ে দিছে? মনে আছে কি-কি কেমনে-কেমনে?
বৌকে জিজ্ঞেস করেন।
- আগে যা যা বলেছে মনে আছে। সমস্যাটা হওয়ার পরে আর কিছু করেনি। কি কি যেন করবে বলেছিল।
সেতু মনে করার চেষ্টা করে।
- হ্যায় এগুলা বুঝে। ভাবীসাব খালি একটু ধরাইয়া দিলেই দেখবেন পারব।
শাতিরা বেগম তাকান সেতুর দিকে,
- কি বল বৌ?
- আম্মা যা ভাল মনে করেন।
সেতু মাথা ঝাঁকায়। কোন উৎসাহ নেই।
- ভাবীসাবরে কইয়া দেই, আমার জামাই কিন্ত রিশকা বায়। দুফুরবেলা আইয়া খাইয়া ঘুমাইয়া আবার বাইর অইব বিকালে। রাইতে দশটা বাজে গ্যারেজে রিশকা থুইয়া হেরপরে আইব।
- আজকে তাড়াতাড়ি আসতে বলো। সোজা বাসায় চলে আসবে, খাওয়াদাওয়া করবে।
- ডাইরেক কেমন আইব? শইল্লে ধুলা-কালি না? গোছল দিয়া হের পরে না আইব। আগে গ্যারেজে থুইলেও হেই দশটাই বাজব ধরেন।
- এইখানে করবে গোসল। জয়নালের লুঙ্গি-গামছা আছেনা?
- আইচ্ছা, তাইলে কইয়া দিমুনে।
কিচেনের দিকে চলে যায় হাসুর মা।
- কিছু বলবা বৌ?
নতুন দিশা পাবার পর থেকে সেতুর মুখে চিন্তা। বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে শ্বাশুড়ি।
- আম্মা, ওই লোক রিকশা চালায়?
শাতিরা বেগম পুত্রবধূর বলার ধরণে অবজ্ঞার ছাপ পাচ্ছেন। ঠোঁটে মুচকি হাসি টেনে চোখে চোখ রেখে বলেন,
- শোন বৌ, কামের জন্য কাওকে নিচা ভাবতে নাই।
- না না আম্মা, আমি ওরকম বলিনি..
সেতু পিঠ খাড়া করে পটপট বলতে শুরু করে। আম্মা যে এভাবে নেবে ভাবেনি।
- মানে, ওরা কেমন নোংরা, তারপর দেখেন না সুযোগ পেলেই ভাড়া নেবে বাড়িয়ে। তারপর মেয়েমানুষ দেখলেই কেমন করে..
- কেমন করে?
- কিভাবে তাকায়, ডাকে, বাজে কথা বলে পাশ দিয়ে যাবার সময়।
- কবে করছে? এই বাড়ি আসার পর থেকে যতদিন গেছ বাইরে, এমন হইছে?
মনে করার চেষ্টা করে সেতু। না, তেমনটা হয়নি। তবে কলেজে পড়ার সময় এমন অনেক সহ্য করেছে।
- না..
- এইটাই পর্দার গুণ। চেহারা-শরীর দেখাইয়া চলবা, ওদের দোষ কি? একটু দেখাইলা, একটু দেখাইলানা - ওদের মনে চায়না দেখতে? দেখলে মনে চায়না টেস্ট করতে? পুরুষ মানুষ তো আল্লা এমন কইরাই বানাইছে। আমি যে বাইর হই, রিকশাঅলারা সালাম দেয়, বলে খালা কেমন আছেন? আবার আরেক বেটী কোমর ঢুলাইয়া যায়, পর্দা-পুশিদা নাই। এক রিকশাঅলা আরেকটারে বলে, আয় বাজি ধরি বুনি কয় কেজি! আয় ধইরা পিছা মারি!
শ্বাশুড়ির বলার ধরণে হেসে ফেলে সেতু।
- জ্বি আম্মা।
- তাই বলি, কাজ কইরা ইনকাম করে এমন কাওরে নিচা ভাবার দরকার নাই। লুঙ্গি খুললে দেখবা উকিল-মোল্লার যা আছে রিকশাঅলারও তাই। বরং যারা খাটনি করে ওরা সুখ দিতে পারে বেশি।
সেতু বাধ্য মেয়ের মত হুঁ হাঁ করে জানায় বুঝতে পারছে।
- রিকশা চালায় না কি চালায় সেইটা কথা না, তুমি দেখবা তোমারে কেমন চালাইতে পারল।
- জ্বি।
- মাদ্রাসা থেকে মুফতি ডাইকা আনতে পারব, আসবে। কিন্ত লাভ কি, শুকুর নাই। সপ্তায় সপ্তায় দাওয়াত। এই লোক সারাদিন রিকশা টাইনা এসে যখন শরীর ঠান্ডা করে দিবা, দোয়া করবে। মুখে দোয়া করা লাগেনা, মন থেকেই আসে।
- তাহলে কিভাবে নিয়্যত করব, সাদকার নাকি খেদমতের?
- সদকার নিয়্যত কর, ছওয়াব বেশি।
শাতিরা বেগম তজবি জপায় মন দেন। সেতু মনে মনে নিয়্যত করে ফেলে।