What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ST SEX (এস টি সেক্স) (2 Viewers)

তর্ক করব নি | এতে লেখকের সৃষ্টিরস শুকায়ে যায় | ;)


তর্ক নয়, তবে আলোচনা তো চলতেই পারে। In fact, পাঠকদের কাছ থেকে regular feedback পেলে, আমরা যারা অল্পস্বল্প লেখালেখি করি, তারা ঋদ্ধ হই।
 
তর্ক নয়, তবে আলোচনা তো চলতেই পারে। In fact, পাঠকদের কাছ থেকে regular feedback পেলে, আমরা যারা অল্পস্বল্প লেখালেখি করি, তারা ঋদ্ধ হই।
তবে বলি । রেস সঙ্ক্রান্ত লেখা টা বড়ই টেকনিকাল হয়ে যাচ্ছে আর বোরিং।
 
তবে বলি । রেস সঙ্ক্রান্ত লেখা টা বড়ই টেকনিকাল হয়ে যাচ্ছে আর বোরিং।

সে কি মশাই, Race ব্যাপারটা তো যথেষ্টই সRace ব্যাপার বলেই জানতাম। মাঠে গিয়েও দেখেছি এবং এই লেখাটা যখন আগের সাইটে প্রকাশিত হচ্ছিল. তখনও পাঠকদের উৎসাহ দেখেছি। আপনার কেন ভাল লাগছে না, বুঝতে অপারগ।
তাছাড়া, এই কাহিনীতে রেসের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
 
সে কি মশাই, আপনার কেন ভাল লাগছে না, বুঝতে অপারগ।
তাছাড়া, এই কাহিনীতে রেসের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
লেখকের লেখার স্বাধীনতা আছে পাঠকের না পড়ার স্বাধীনতা আছে। চলতে থাকুন।
 
ত্রিপঞ্চাশৎ পর্ব

এই যে কোন রেসে আপসেট রেজাল্ট হবে এবং সেই রেসে নন-ফেবারিট ঘোড়াগুলির মধ্যে, কোন বিশেষ ঘোড়াটি জিতবে, সেটা ধরতে পারলেই কেল্লা ফতেহ্। আর এটা speculation করার নামই “guesstimation” (guess+estimation = guesstimation)। কিছুটা guess অর্থ্যাৎ অনুমান এবং বাকিটা estimation অর্থ্যাৎ প্রাক্কলন-এর সমন্বয়ে এই প্রক্রিয়া অর্থনীতিতে বহুব্যবহৃত। শেয়ার বাজারে শেয়ারের দামের speculation করার জন্যও guesstimation পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। বেশ কয়েকদিন রেসের মাঠে এসে এবং একটু-আধটু রেসের বই-টই ঘেঁটে, স্বাভাবিক বুদ্ধিতে, মাঠের ঘাৎঘোৎ, শানুরও এখন জানা হয়ে গেছে। সে ধরতে চেষ্টা করে, কোন রেসে কোন ঘোড়া জিতবে। কিন্তু এই ব্যাপারে কিছু বলতে গেলেই, ছোটে মিয়া নুর নাচিয়ে বলে, “জুম্মা জুম্মা আটদিন নহী হুয়া বাবু, ইয়ে ময়দান মে আকে। পহলে সিনে মে ঘোড়ে কি লাথ খাইয়ে, ফির টিপস দেনা”। শুনে কালো কালো দাঁত বার করে, খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসতে থাকে বাচ্চা ঠাকুর। অপমানে কান লাল হয়ে যায় শানুর। ওদের সামনে আর মুখ খোলে না সে। কিন্তু নিজের মনে মনেই সে তার speculation-এর প্রক্রিয়া চালু রাখে। ক্রমশঃ এটা তার নেশায় পেয়ে বসে।

এই যেমন আজ। পরপর চারটে রেসে ফেবারিট ঘোড়া জেতার পরে, শানু নিশ্চিত ছিল যে, পঞ্চম রেসে আপসেট হবেই। কিন্তু ফেবারিটকে বাদ দিয়ে, বাদবাকি ঘোড়াগুলোর মধ্যে কোনটা জিতবে? লাল্টুদা একটা রেসের বই কেনে বটে, কিন্তু পড়ে না, টেবিলের উপর বইটা পড়ে থাকে। ওটা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করলো শানু। পিঙ্ক অর্কিড ঘোড়াটা তার খুব মনে ধরেছে। এটা ঘোড়া নয়, ঘোড়ী। পাঁচ বছর বয়স, রেসের পক্ষে একটু বেশী। গত বছর এটা হায়দ্রাবাদ ডার্বিসহ বেশ কিছু ইভেন্ট জিতেছিলো, কিন্তু এ বছর তার ঝুলি ফাঁকা। কোনো রেসে একটা প্লেসও পায় নি। তাহলে কি পিঙ্ক অর্কিড ফুরিয়ে গেলো? হঠাৎ একটা জিনিষ লক্ষ্য করে, শানুর মাথায় চিরিক করে বিদ্যুত খেলে গেল। এই রেসের ফেবারিট ঘোড়া টার্ফ এম্পেরর এবং পিঙ্ক অর্কিডের মালিক একই – চেন্নাইয়ের রামস্বামী। তাহলে কি রামস্বামী ফেবারিট টার্ফ এম্পেররকে টেনে দিয়ে পিঙ্ক অর্কিডকে রেস জেতাবে? পিঙ্ক অর্কিডের জকি ক্রিস্টোফার খুবই অভিজ্ঞ, সে জায়গায় টার্ফ এম্পেররের জকি স্বদেশ নাইডু এখনো ট্রেণী আছে। রামস্বামীর যদি টার্ফ এম্পেররকেই জেতাতে হতো, তাহলে তো সে ক্রিস্টোফারকেই এই ঘোড়ার জকি রাখতো। তাছাড়া টার্ফ এম্পেরর আছে এক নম্বর লেনে; sharp bend ঘুরে ঘোড়াকে স্টেডী রাখতেই ট্রেণী জকি স্বদেশ নাইডু হিমসিম খেয়ে যাবে, উইন করা তো পরের কথা। সে জায়গায় পিঙ্ক অর্কিড আছে চার নম্বর লেনে, অভিজ্ঞ জকি ক্রিস্টোফারের হাতে, সব থেকে স্মুথলি বেন্ড ঘুরতে পারবে সে। এছাড়া এ বছর পিঙ্ক অর্কিডের পারফর্ম্যান্স ক্রমাগত খারাপ হওয়ায়, তার হ্যান্ডিক্যাপও অনেক কম, এটাও তার একটা advantage. তাহলে আজ কি তার দিন? আজই কি পিঙ্ক অর্কিড ঘুরে দাড়াবে? ছোটে মিয়ার কাছ থেকে শানু শুনেছে, এ রকম ঘটনা রেসের মাঠে আকছার হয়।

মনে মনে গোটা অঙ্কটা কষে নেওয়ার পর, শানু নিঃসন্দেহ হয়ে গেলো যে পিঙ্ক অর্কিডেই এই রেসের ব্ল্যাক হর্স। লাল্টুদা যথারীতি ছোটে মিয়ার পরামর্শ মতো টার্ফ এম্পেররই খেলবেন। সঙ্গে সেকেন্ড এবং থার্ড ফেবারিটকে নিয়ে কুইনালা এবং টানালা। একবার ভাবলো লাল্টুদাকে তার স্পেকিউলেশনের ব্যাপারটা বলবে। তারপরই মনে হলো, কি দরকার তার, না মিললে ফালতু খোরাক হয়ে যাবে। এই ভেবে শানু চুপ করে রইলো। বাচ্চা ঠাকুরকে তিরিশ হাজার টাকা গুনে দিয়ে, শানু স্ট্যান্ড থেকে বেরিয়ে এলো। টিকিট কাউন্টারের সামনে এসে একটা সিগারেট ধরালো। টোটেতে কুইনালা – টানালার টিকিট কেটে, বাচ্চা ঠাকুর বুকিদের স্টলের দিকে গেলো, উইনের পরচি কাটতে। রেস শুরু হতে আর মাত্র মিনিট পাঁচেক বাকি আছে। হঠাৎ কি মনে হলো, সিগারেটটা ফেলে দিয়ে, পা দিয়ে পিষে, টোটের টিকিটের লাইনে দাড়িয়ে গেলো সে।

বেশ লম্বা লাইন পড়েছে, টিকিট পাওয়ার চান্স কম। তার নিজের কাছে মাত্র দশটা টাকা পড়ে আছে, ও দিয়ে এক টিকিট খেলা যাবে। একটু ইতঃস্তত করে, লাল্টুদার ফোলিও ব্যাগ থেকে একটা একশ টাকার নোট বার করে হাতের মুঠোয় রাখলো। মনটা একটু খচখচ করছে। না বলে লাল্টুদার ব্যাগ থেকে টাকা নেওয়া হলো। যদি না জেতে, তাহলে হিসাব দেবে কি করে? লাল্টুদা অবশ্য এতো ছোটখাটো আ্যমাউন্টের হিসাব নিয়ে মাথা ঘামান না, কিন্তু তার accountant ধূর্জটিবাবুকে পাইপয়সার হিসাব বুঝিয়ে দিতে হয়। কতো টাকা নিয়ে এসেছে, কতো টাকার খেলা হয়েছে, কোনো প্রাইজ মানি পেয়েছে কি না, সব বুঝিয়ে দিয়ে, বাকি টাকা ফেরত দিয়ে তবে সে রেহাই পায়। এখন একশো টাকা কম পড়ে গেলে, হিসাব মেলাবে কি করে? একবার ভাবলো লাইন থেকে বেরিয়ে যায়। তখনই কেমন যেন জেদ চেপে গেলো তার। ধূর্জটিবাবুকে বলবে, টাকাটা হারিয়ে গেছে, তার মাইনে থেকে কেটে নেওয়া হোক। দাঁতে দাঁত চিপে, টাকা ধরা হাতের মুঠোটা পিষে ধরলো সে। তার সামনে আরমাত্র দুজন, কিন্তু রেস শুরু হতে আর এক মিনিটও বাকি নেই। টিকিট কি আদৌ সে পাবে?
 
লেখকের লেখার স্বাধীনতা আছে পাঠকের না পড়ার স্বাধীনতা আছে। চলতে থাকুন।

একদমই ঠিক। পাঠকের সামনে অসংখ্য sites, অসংখ্য thread, অসংখ্য পছন্দ।
এটা লেখকের খুশ-কিসমত, যে পাঠক দয়া করে, তার লেখা পড়ছেন।
 
না পাঠক দয়া করে লেখা পড়ে না। লেখকের সৃষ্টিশীলতা পাঠক কে বাধ্য করে লেখা পড়তে । পাঠক যদি কোন লেখা না পড়ে সেটা লেখকের ব্যারথতা । তবে পাঠক ও লেখক উভয়ই এর মধ্যই শ্রেণি বৈষম্য আছে।
 
Last edited:
চতুঃপঞ্চাশৎ পর্ব

(১)

- “এই সোনা, একটা কিসসি দেও না”
- “দিলাম তো এতো, মন ভরলো না?’
- “আর একটা, প্লিস, এটাই লাস্ট, গড প্রমিস।“
- “না, আর না, এবার ঘুমোও, কাল ডিউটি যেতে হবে না?’
- “না, কাল যাবো না তো, কাল তোমার বাড়ির লোকেরা আমাদের বাড়ী আসবে না। তাই মা যেতে বারণ করেছে।“
- “ও হ্যাঁ, আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। তাহলেও লেট নাইট করে লাভ কি? চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়ে যাবে। তখন বাবা কিন্তু পছন্দ নাও করতে পারে।“
- “লেট নাইট করা আমার অভ্যাস আছে। আর সকালে উঠে, টম্যাটো আর লেবুর রস মিশিয়ে, দশ মিনিট লাগিয়ে রাখলেই, ডার্ক সার্কেল চলে যাবে। আর শোনো, উনি পছন্দ করলেন কি করলেন না, তাতে আমার ইয়ে ছেঁড়া যায়, বাবার ছেলে পছন্দ করলেই হলো।“
- “উফ্ফ্, আবার স্ল্যাঙ ইউজ করে। এই ধরনের ভাষা, মেয়েদের মুখে মানায়। এ বাড়ীতে কিন্তু ও সব একদম চলে না।“
- “স্যরি, বাবা; স্লিপ অফ টাং। আচ্ছা, একটা কিসসি দেও।“
- “দারুন জেদ তোমার। আচ্ছা একটাই দেবো, তারপর ঘুমিয়ে পড়বে কিন্তু”, বলে আইফোনের স্ক্রিনের উপর মুখটা নামিয়ে, চুক করে মুখ দিয়ে একটা শব্দ করলো অর্ক।
- “কোথায় দিলে?”
- “তোমার চোখে।“
- “না চোখে নয়, এইখানে”, বলে ঠোঁটদুটো pout করলো, “আর এইখানে”, বলে তার বারুইপুরের ডাঁশা পেয়ারার মতো বুকদুটো উঁচিয়ে ধরলো, “আর এইখানে”, বলে তলপেটের নীচে উরুসন্ধির দিকে আঙ্গুল দেখালো ঝুম।
- “আবার দুষ্টুমি শুরু হলো। এবার ঘুমোও”, বলে অফলাইন হয়ে গিয়ে, ফোন সুইচ্ড অফ করে দিলো অর্ক।
দারুন রাগ হলো ঝুমের, রাগ না অভিমান। ছেলেটা কেমন যেন! মনে হয় অষ্টাদশ শতাব্দীর লোক, ভুল করে টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরিতে জন্মেছে। তার মতো একটা উদ্ভিন্নযৌবনা মেয়ে, রাত দেড়টার সময় ওয়্যাটসআপ ভিডিও কলিং করে, সেক্স চ্যাট করতে আহ্বান করছে, আর বাবু ফোন সুইচ্ড অফ করে শুয়ে পড়লো। অন্য যে কোন ছেলে হলে, ফোনেই তার পায়ের কড়ে আঙ্গুল থেকে মাথার চুল অবধি, চেটে-চুষে-কামড়ে, জল খসিয়ে দিতো। এখনো বুম্বাদা, তারিকভাই, রকি, অনেকেই অনলাইন আছে। বারবার মিস্ড কল দিয়ে যাচ্ছে। একবার চান্স দিলেই হলো, ঝুমের ঘুম মাথায় উপবে, রাত তিনটে-চারটে অবধি জ্বালিয়ে মারবে এমসি-বিসিগুলো। এই রে, আবার খিস্তিখামারি বেরিয়ে গেল মুখ থেকে। এ সব র’ কথা শুনলে, খুব রেগে যায় অর্ক। ভীষণ সফিসটিকেটেড ছেলে, ভদ্র এবং নম্র। মেয়েদের দিকে চোখ তুলে দেখে না পর্যন্ত্য। ঝুমের মতো উড়ুক্কু মেয়ের কি না জুটলো এ রকম গুডি গুডি বয়!


দারুন গরম লাগছে, শুধু বাইরের গরমই নয়, শরীরের ভিতরেও ভীষণ হট ফিল করছে ঝুম। একটা মাইক্রো-সর্টস আর টেপজামা পড়ে শুয়ে আছে সে। ইচ্ছা করছিলো, অর্ক অন্ততঃ ফোনেই তাকে একটু আদর করুক। কিন্তু বাবুর ভীষণ প্রিন্সিপল আছে, বিয়ের আগে ওসবে ট্যাবু। এখনও পর্য্যন্ত্য ঝুমের হাত ছাড়া, আর কিছু ছোঁয় নি সে। যেদিন রায়চকে ডেটিং-এ গিয়েছিলো তারা দুজনে, অর্ককে উত্তেজিত করার জন্য, শুধু একটা টাওয়েল জড়িয়ে, টয়লেট থেকে বেরিয়ে এসেছিলো ঝুম। কিন্তু মেনকা দুর্বাসার ধ্যান ভাঙ্গাতে পারলেও, সে কিন্তু পারে নি, অর্কের কৌমার্য্যব্রত ভাঙ্গতে। চোখ ফিরিয়ে নিয়ে, ব্যালকনিতে চলে গিয়েছিল অর্ক। থাক, এমনটাই থাক তার সোন্টুমন্টু অর্কসোনাটা। এমন চরিত্রবান ছেলে, আজকের দিনে, কটা পাওয়া যায়?

শরীরের দাবি আর চেপে রাখা যাচ্ছে না। করবে না কি একটু ফোন সেক্স, বুম্বাদা বা মাইকেলের সাথে! দারুন রোল প্লে করে তারিকভাই, আধাঘন্টার মধ্যেই তার শরীরের সব জ্বালা মিটিয়ে দেবে। কিন্তু না, অর্কের শান্ত, সৌম্য মুখটা মনে পড়তেই, নোংরা ইচ্ছাগুলো ঝেড়ে ফেললো ঝুম। স্মার্টফোনের ফটোগ্যালারি থেকে, অর্কের একটা ছবি বার করে, দেখতে দেখতে সর্টসের ভিতরে হাত ঢোকালো ঝুম। উই ম্মা, কোঁঠটা কত্তো বড়ো হয়ে গেছে, তিরতির করে কাঁপছে অল্প ফাঁক হওয়া যোনির ঠোঁটদুটো, বেরিয়ে এসেছে দু ফোঁটা রাগরস। টেপজামাটাকে উপরে তুলে, বাঁ হাত দিকে বাঁ স্তনটাকে উপরে তুলে, স্তনবৃন্তে জিভ ছোঁয়ালো; আর ডান হাতের তর্জণীটাকে গোপন চেরার উপর ঘষতে লাগলো। অনুভব করলো অর্ক তার কোমলাঙ্গে জিভ ছোঁয়াচ্ছে। আর পারলো না ঝুম; অস্ফুট স্বরে, “উফ্ফ আমার অর্কসোনা, আমাকে তুমি নেও” শীৎকার করে, যৌবনের মধুক্ষরণ করলো। তারপরই ঘুমিয়ে পড়লো সে; ঘূমন্ত যুবতীর ঠোঁটে লেগে রইলো, দয়িতের সাথে আসন্ন মিলনের আকাঙ্খা মাখা স্মিত হাসি।


(পরবর্তী পরব একটু পরেই)
 
চতুঃপঞ্চাশৎ পর্ব

(২)

নেহাৎ তার আগের লোকটি লাইন থেকে বেরিয়ে গেলো, কারণ তার সঙ্গী অন্য কাউন্টারে লাইন দিয়ে টিকিট কেটে নিয়েছে। পাঁচ-ছ সেকেন্ড বাকি থাকতে, কাউন্টারের সামনে পৌঁছালো শানু। এই প্রথম সে রেসের টিকিট কাটছে, উত্তেজনায় দরদর করে ঘাম বেরোচ্ছে। কি যেন খেলবে সে, সব গুলিয়ে যাচ্ছে তার। কাউন্টারে বসা ভদ্রমহিলা অধৈর্য্য হয়ে বললেন, “কি খেলবেন বলুন? সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে তো”। হাতের মুঠোয় রাখা একশ টাকার নোটটা এগিয়ে দিয়ে, কাঁপা কাঁপা গলায় কোনোরকমে শানু বলতে পারলো, “পিঙ্ক অর্কিড, দশ টিকিট, উইন”। পোঁ করে সাইরেন বেজে উঠলো, অর্থ্যাৎ রেস শুরু হয়ে গিয়েছে, আর টিকিট বার হবে না। কিন্তু তার আগেই কাউন্টারের মহিলাটি বোতাম টিপে দিয়েছেন, আর চ্যাঁক চ্যাঁক, চ্যাঁক চ্যাঁক শব্দ করে ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার থেকে বেরিয়ে আসছে, শানুর কাঙ্খিত টিকিট।

টিকিটটা হাতের মুঠোয় চেপে স্ট্যান্ডে ফিরে এলো শানু। রেস শুরু হয়ে গেছে। ১৬০০ মিটারের রেস এটা, ঘোড়াগুলো খাঁচা থেকে বেরিয়ে, দুশো মিটারের বেশী ছুটেও নিয়েছে। শানুর কাছে তো আর বাইনোকুলার নেই, তাই সে সিসি টিভিতেই রেস দেখতে লাগলো। উইনিং পোস্টের কাছাকাছি এলে, রেলিং-এর সামনে গিয়ে দাড়াবে। পিঙ্ক অর্কিড ঘোড়াটার নম্বর ৭, প্রথম চার-পাঁচটা ঘোড়ার মধ্যে পিঙ্ক অর্কিড নেই। সবথেকে সামনে ৬ নম্বর ঘোড়া টার্ফ এম্পেরর, তার ঠিক পেছনে, সেকেন্ড ফেবারিট, মানালি ম্যানিয়া, তারপর মিস ওয়ান্ডার, সিক্রেট হার্ট, পিঙ্ক অর্কিড একদম পিছনের দুটো ঘোড়ার মধ্যে একটা। তাহলে কি ভুল করলো শানু! Guesstimation-এর মতো বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি, রেসের মাঠে অচল! ছোটে মিয়ার আনতাবড়ি অন্ধকারে ঠিল ছোঁড়াই, রেসের মাঠে প্রযোজ্য! চোখের সামনে ধূর্জটিবাবুর খ্যাচামার্কা মুখটা ভেসে উঠলো। লাল্টুদা বাইনোকুলার চোখে, রেলিং-এর সামনে, পাশে বাচ্চা ঠাকুর আর ছোটে মিয়া। ওরা যদি ঘুণাক্ষরে টের পায়, শানু লাল্টুদার পয়সায় জুয়ো খেলে, টাকা উড়িয়েছে, তাহলে তার জিনা হারাম করে দেবে। হাতের চেটো ঘেমে উঠছে তার, টিকিটটা কি ফেলে দেবে! তাহলে আর প্রমাণ থাকবে না যে, সে রেসের টিকিট কেটে পয়সা নষ্ট করেছে। বললেই হবে টাকাটা হারিয়ে গেছে।

বেন্ড ঘুরেই টার্ফ এম্পেরর একটু থমকালো, বোধহয় শার্প টার্নিং নেওয়ার পর একটু ধাতস্থ হচ্ছে, কিন্তু এই ফাঁকে তাকে টপকে গেলো মানালি ম্যানিয়া, মিস ওয়ান্ডার এবং আরো দুটো ঘোড়া। সারা মাঠ “টার্ফ এম্পেরর, টার্ফ এম্পেরর” করে গলা ফাটাচ্ছে, আবার মানালি ম্যানিয়ার নামেও আওয়াজ উঠছে, কিন্তু কারো মুখে পিঙ্ক অর্কিডের নাম নেই। বারোর দরের ঘোড়ার পিছনে কে পয়সা লাগাবে! কমেন্টেটরের গলা শোনা যাচ্ছে, “মানালি ম্যানিয়া গোয়িং আ্যহেড, নেক্স্ট কামিং মিস ওয়ান্ডার, টুডে’স ফেবারিট টার্ফ এম্পেরর লেংথস বিহাইন্ড, সিক্রেট হার্ট গ্যালপিং ফাস্ট …….”, কিন্তু তার মুখেও পিঙ্ক অর্কিডের উল্লেখ পর্য্যন্ত নেই। রেস শেষ হতে আর মাত্র শ’ তিনেক মিটার বাকি, অর্থ্যাৎ আর মাত্র পনেরো-কুড়ি সেকেন্ডের মধ্যেই ‘খেল খতম, পয়সা হজম’। হতাশায় মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করছিলো শানুর। কেন যে মরতে ঘোড়ার গাঁড়ে টাকা ঢোকাতে গেল। লাল্টুদার সাথে আসছিলো, ফ্রি ফান্ডে রেসের মাঠের উত্তেজনার মজা নিচ্ছিলো, সেটাই ভালো ছিল। কথায় বলে, “খাচ্ছিলো তাঁতি তাঁত বুনে, কালহলো তার এঁড়ে গরু কিনে”। প্রবাদ বাক্যটার মর্মার্থ আজ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করলো শানু। না, একটু গাঁজায় দম না দিলে, নার্ভ স্টেডী হবে না। অশ্বথগাছটার পেছনে কিছু ছেলে ধুমকি করছিলো। স্ট্যান্ড থেকে সে দিকেই পা বাড়ালো সে।

হঠাৎই মাঠে একটা শোরগোল উঠলো। পিছন ফিরে দেখলো, একটা কালো ধুলোর ঝড় যেন উল্কার মতো এগিয়ে আসছে। কি হলো ব্যাপারটা বোঝার আগেই কমেন্টেটরের উত্তেজিত গলা শোনা গেলো, “পিঙ্ক অর্কিড গ্যালপিং আ্যট লাইটনিং স্পিড, ওভারটেকিং টার্ফ এম্পেরর, ওভারটেকিং সিক্রেট হার্ট, ওভারটেকিং মিস ওয়ান্ডার, টাচেস মানালি ম্যানিয়া, পিঙ্ক অর্কিড-মানালি ম্যানিয়া, মানালি ম্যানিয়া-পিঙ্ক অর্কিড, গোয়িং সাইড বাই সাইড, পিঙ্ক অর্কিড ওভারটেকিং মানালি ম্যানিয়া, মানালি ম্যানিয়া ওভারটেকিং পিঙ্ক অর্কিড, পিঙ্ক অর্কিড-মানালি ম্যানিয়া, মানালি ম্যানিয়া-পিঙ্ক অর্কিড”। দুটো ঘোড়া একদম পাশাপাশি ছুটছে, শানুর বুকের ভিতর হৃৎপিন্ডটা এত জোরে লাফাচ্ছে, বোধহয় ঘোড়াগুলোর পা-ও এত জোরে ছুটছে না। মানালি ম্যানিয়ার জকি আরশাদ আলম হুইপ করলো, ঘোড়াটা কয়েক কদম এগিয়ে গেলো। ক্রিস্টোফার কিছু করছে না কেন? আর তো মাত্র কয়েক লেংথ বাকি। মনে পড়লো পিঙ্ক অর্কিড আজ “নো হুইপ” ঘোড়া, উঁচু ক্লাস থেকে ডিগ্রেডেশন হয়ে নিচু ক্লাশে আসা ঘোড়াকে চাবুক মারা যায় না। তাহলে কি হবে? তীরে এসে তরী ডুববে পিঙ্ক অর্কিডের আর তার সাথে সাথে শানুর!

হঠাৎ সামনের দিকে ঝুঁকে পড়লো ক্রিস্টোফার। একেই বলে পোড় খাওয়া জকি। হুইপ মারতে পারবে না বলে, ঘোড়াকে আ্যডভান্টেজ দিতে, ঘোড়ার উপর ভার কমিয়ে দিলো। এবার উড়তে লাগলো পিঙ্ক অর্কিড, এক লেংথ, দু লেংথ, পাশাপাশি তীরবেগে ছুটে আসছে মানালি ম্যানিয়া। সারা মাঠ নিঃশব্দ; শুধু সিসি টিভিতে কমেন্টেটরের চরম উত্তেজিত আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, “পিঙ্ক অর্কিড-মানালি ম্যানিয়া, মানালি ম্যানিয়া-পিঙ্ক অর্কিড”। দুটো হাত মুঠো করে শুন্যে ছুঁড়ে শানু চেঁচিয়ে উঠলো, “কাম অন পিঙ্ক অর্কিড, আজ তেরা দিন হ্যায়”।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top