প্রকৃতিতে শীত আসি আসি করছে। হিমেল ও শুষ্ক হাওয়া বইতে শুরু করেছে। শীত সবার আগে টের পায় মানুষের ত্বক। হিমেল মৌসুমে ত্বকের রুক্ষতা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে যোগ হয় ত্বক ফাটার সমস্যা, নানা চর্মরোগ। এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পা ও ঠোঁটে। তাই পুরোদমে শীত শুরুর আগেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ত্বকের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। তবেই শীত মৌসুমে ত্বক থাকবে ঝকঝকে, মসৃণ। আসুন জেনে নিই ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে ত্বকের যত্ন নেওয়ার কিছু উপায়।
ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার
শীতের শুরুতেই ত্বকে এমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত, যাতে তেলের পরিমাণ বেশি। সেই সঙ্গে রাতে যে নাইট ক্রিম ব্যবহার করা হয়, তা-ও যেন ওই রকম হয়। কারণ, এসব ক্রিম ত্বক আর্দ্র রাখতে বেশি সহায়ক।
সানস্ক্রিন ব্যবহার জরুরি
অনেকেই মনে করেন শীতকালে সানস্ক্রিন ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। কিন্তু শীত হোক কিংবা গ্রীষ্ম মৌসুম—সরাসরি রোদ সব সময় ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তাই শীতের মৌসুমেও বাইরে বের হওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে মুখে, হাত ও পায়ে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন।
হাতের যত্ন নিন
মুখের ত্বকের যত্ন নিয়ে মানুষ যতটা সচেতন, অনেক সময় হাতের যত্নের বিষয়ে ততটা দেখা যায় না। যদিও হাতের ত্বক শীতকালে অনেক বেশি রুক্ষ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে যাঁদের বারবার হাত ধুতে হয়, তাঁরা এই সমস্যায় বেশি ভোগেন। এ সময় হাতে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। বারবার যাঁদের হাত ধুতে হয় কিংবা স্যানিটাইজ করতে হয়, তাঁদের দিনে কয়েকবার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা দরকার।
সুন্দর পায়ের জন্য
শীত মৌসুমে পায়ে মোজা পরে থাকার বিকল্প নেই। এতে পায়ের ত্বক ঝকঝকে, মসৃণ থাকে। এ ছাড়া শীতের সময় পেট্রোলিয়াম জেলি কিংবা গ্লিসারিন দিয়ে পায়ের ত্বকে ম্যাসাজ করতে পারেন। সপ্তাহে একবার এক্সফোলিয়েট করে পায়ের ত্বকের মৃত কোষ তুলে নিন। প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সামান্য যত্ন শীত মৌসুমে আপনার পায়ে ত্বক সুন্দর রাখবে।
বেশি বেশি পানি পান
শীত মৌসুমে অনেকে তুলনামূলক কম পানি পান করে থাকেন। এটা ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। ত্বকের জন্য তো বটেই, শুষ্ক মৌসুমে সুস্থ থাকার জন্য বেশি বেশি পানি পান করা দরকার। শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে তা একদিকে ত্বকে নানা রোগব্যাধির জন্ম দেয়, ত্বক খসখসে ও রুক্ষ হয়ে যায়; অন্যদিকে পানির অভাব নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
নিয়ম মেনে গোসল
প্রকৃতিতে শীত এলে অনেকেই হট বাথ নিতে পছন্দ করেন। এ সময় অনেকেই অতিরিক্ত গরম পানি গায়ে ঢালেন। এতে ত্বক আরও শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে পড়ে। যদি ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে অজান্তেই ত্বক পুড়ে যেতে পারে। কারণ, তাঁদের অনুভূতি শক্তি তুলনামূলক কম থাকে। তাই শীত মৌসুমে নিয়ম মেনে গোসল করুন। এ সময় গোসলে অতিরিক্ত গরম পানির ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। গোসলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন।
এ ছাড়া শীত মৌসুমে অতিরিক্ত শুষ্ক ও রুক্ষতার কারণে অনেকের ত্বক থেকে রক্তপাত শুরু হয়। অনেকেই এই সময়ে দাদ, খুজলি, পাঁচড়াসহ নানা চর্মরোগে ভোগেন। এমন সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
[FA]pen[/FA] লেখক: ডা. জাহেদ পারভেজ, সহকারী অধ্যাপক, চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল