What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

স্বামীর কল্পনা স্ত্রীয়ের যন্ত্রণা (3 Viewers)

পর্ব ১৮

"চলুন , তবে যাওয়া যাক ", অনুরিমাকে আদিত্য বললো।

"হ্যাঁ হ্যাঁ , চলুন ", বলে অনুরিমা আদিত্যর সাথে বেরোতে লাগলো।

আদিত্য গাড়ি স্টার্ট দিলো। মেঘ ঘনিয়ে কালো হয়ে এসছিলো। হঠাৎ করে মেঘ ডেকে উঠলো। অনুরিমা ভয় পেয়ে বললো , "একটু তাড়াতাড়ি চলুন , দেখছেন তো মেঘের কি অবস্থা। সুচরিতা ঠিকই বলেছে , কলকাতার রাস্তায় বাস অটো ট্যাক্সির কোনো মা বাপ্ নেই , কখন যে এরা ভিন্ন ভিন্ন কারণে ঝাঁপি বন্ধ করে দ্যায় তার ঠিক নেই , তা কোনো রাজনৈতিক কারণে হোক বা প্রাকৃতিক কারণে। "

"চিন্তা করবেন না ম্যাডাম , আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব যখন কাঁধে নিয়েছি তখন হাজার বিপর্যয় এলেও আপনাকে ঠিক আমি বাড়ি পৌঁছে দেবো। "

"আমি কথাটা ঠিক ওভাবে বলতে চাইনি। আসলে আপনাকেও তো বাড়ি ফিরতে হবে , আকাশ দেখে মনে হচ্ছে প্রবল বৃষ্টি নামবে। আর অতো বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি চালানোটা সেফ নয়। তাই বলছিলাম , যদি আপনি বৃষ্টি নামার আগেই নিজের গন্তব্যে পৌঁছে যান তাহলে সেটা আপনার পক্ষেই ভালো হবে। আমি এসে শুধু শুধু আপনার হেডেক বাড়ালাম। "

"মোটেই না। তুমি হয়তো জানোনা , আমি অনেক এক্সপিরিয়েন্সড ড্রাইভার , সেই কলেজ লাইফ থেকে ড্রাইভিং করি নিজের কার। আমার এই বৃষ্টি বাদলের দিনে বরং ড্রাইভিং করতে ভালোই লাগে , বেশ রোম্যান্টিক একটা ব্যাপার থাকে। ..... বাই দা ওয়ে , আমি তোমাকে তুমি করে ডাকলে অসুবিধা নেই তো ? "

"না না , ঠিক আছে। আমি আপনার থেকে বয়সে এমনিতেও অল্পবিস্তর ছোট , তাই তুমি করে ডাকতেই পারেন। "

"তাহলে তো , তোমাকেও তুমি করে ডাকতে হবে আমায়। সো নো আপনি , ওকে ?"

"আচ্ছা সব ছেলেরাই কেন আপনি থেকে তুমি ডাকটা শুনতে বেশি পছন্দ করে ? "

"এই আবদার বুঝি আগেও অন্য কোথাও থেকে আপনার কাছে এসছে ?"

"আলবাত। ...."

"তা সেই ডাকে কি মিস অনুরিমা সাড়া দিয়েছিলো ?"

"সেটা বড়ো কথা নয় , আগে আমার প্রশ্নের উত্তরটা দেওয়া হোক। ...."

"বাকি ছেলেদের কথা তো বলতে পারবো না , বাট আমি তুমি ডাকটাই বেশি প্রেফার করি , সম্বোধন করতেও আর পেতেও। তাই অফিসের জুনিয়ররাও আমাকে তুমি করে ডাকে , আমিও তাদের তুমিই বলি , উভয় লিঙ্গ বিশেষে ...."

"বুঝলাম , তা এটা কেন ভাবলে যে আমিও সমান সাচ্ছন্দ বোধ করবো ?"

"আমি অতো ভাবিনা , এই যেমন তুমি না ভেবেই আমাকে তুমি করে সম্বোধন করা শুরু করলে , এক্ষুনি বলে উঠলে ভাবলে ইনস্টেড অফ ভাবলেন ......"

"সাবকনশাস মাইন্ডে বলেছি , সেটাও অবজার্ভ করলেন ?"

"সে তুমি যেই মাইন্ডেই বলে থাকো না কেন , যখন বলেই ফেলেছো আর ব্যাক আউট করোনা। তুমিতে স্টিক থাকো। "

"আপনি খুব জেদি দেখছি , সরি তুমি .... হয়তো এই জেদের কারণেই সুচরিতার সঙ্গে সম্পর্ক থাকেনি আপনার , সরি এগেইন , তোমার। ....."

সঙ্গে সঙ্গে আদিত্যর মুখের অভিব্যক্তি বদলে গেলো। সে খানিকটা কড়া গলায় বললো , "তুমি আদেও জানো , কেনো আমার আর সুচির সম্পর্ক ভেঙে গেছিলো ? তুমি হয়তো সুচির ভার্শনটা শুনেছো , আর সেটাকেই সত্যি ভেবে আমাকে এখন অ্যাকিঊস্ করছো ! আমি খারাপ , আমার মা খারাপ , আর তোমার সুচিই একমাত্র ভালো , তাই তো ??"

আদিত্যর গলার আওয়াজে হঠাৎ কঠোরতার প্রকাশ শুনে অনুরিমা বুঝলো দ্যাট সি হ্যাস ডান দা মিস্টেক বাই ক্রসিং হার লিমিট। সে অনুনয় বিনয় করে আদিত্যর কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে লাগলো। বোঝাতে লাগলো তার কোনো উদ্দেশ্য ছিলোনা আদিত্যকে হার্ট করার। কিন্তু আদিত্য অতো সহজে মানতে চাইছিলো না। বোঝাই যাচ্ছিলো না জেনে অনুরিমা তাকে অনেক গভীরে আঘাত করেছে। আদিত্য অনুরিমার সাথে কথা কাটাকাটি করতে গিয়ে স্টিয়ারিং থেকে তার মন সরে যায়। ব্যাস , আর কি ! নজর হাটি তো দূর্ঘটনা ঘটি। তাদের সাথেও ঠিক সেটাই হলো। ভুলবশত গাড়িটা গিয়ে ধাক্কা খেলো একটা ল্যাম্প পোস্টে।

ভাগ্য ভালো তাদের দুজনের কোনো আঘাত লাগেনি। কিন্তু অ্যাক্সিডেন্ট দেখে দূর থেকে সাদা ইউনিফর্ম পড়া কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন ছুটে এলো। পথচলতি প্রাইভেট গাড়ির এরকম বিপর্যয়ের মতো সুযোগ কি আর সার্জেনরা ছাড়ে। তাঁরা তো বসেই আছে লম্বা চালান কাটার জন্য আর সাধারণ মানুষদের হ্যারাস করার জন্য।

একজন অফিসার দৌড়ে এলো তাদের কাছে। আদিত্যর সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লো। অনুরিমা তা দেখে একটু ভয় পেয়ে গেলো। সে আদিত্যকে থামানোর চেষ্টা করছিলো। কিন্তু আদিত্য কোনো কথা শুনছিলোনা। সে ক্রমাগত পুলিশ অফিসারটার সাথে হিটেড আর্গুমেন্ট করে যাচ্ছিলো। ফলে যা হওয়ার তাই হলো , আদিত্যর একটা লম্বা চালান কেটে গেলো। তাছাড়া যেমন ঘোড়া দেখলে মানুষ খোড়া হয় তেমনই দামী গাড়ি দেখলে পুলিশেরও ট্রাফিক নিয়মের কথা বেশি মনে পড়ে। পুলিশ অফিসার আদিত্যকে তার সাথে থানায় যেতে বললো। আদিত্য রাজি হলোনা , তো অফিসার তার গাড়িকে জব্দ করলো, বললো থানা থেকে ছাড়িয়ে আনতে। আদিত্য বললো , তাই হবে। কিন্তু এখন সে থানায় যেতে পারবে না, পরে গিয়ে ছাড়িয়ে আনবে গাড়িটা। কারণ তার কাছে এখন গাড়ির চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্ব এই মেয়েটিকে (অনুরিমার দিকে আঙ্গুল করে বললো) এই আবহাওয়ায় নিরাপদে তার বাড়ি পৌঁছে দেওয়া। কথাটা শুনে আদিত্যর প্রতি অনুরিমার মনে শ্রদ্ধার জায়গা তৈরী হলো।

কথামতো অফিসার আদিত্যর কাছ থেকে চাবি নিয়ে গাড়িটাকে সরকারী ভাবে দখল করলো। অনুরিমা ও আদিত্য এবার হাঁটা দেওয়া শুরু করলো। অনুরিমা বারবার আদিত্যকে বলছিলো তার এটা করা উচিত হয়নি , তার এখন গাড়িটাকে রেসকিউ করা নিয়ে ভাবা উচিত ছিল। অনুরিমা ঠিক কিছু না কিছু একটা ম্যানেজ করে বাড়ি পৌঁছে যেত। আর আদিত্যও প্রত্যুত্তরে বারবার এটাই বোঝাচ্ছিলো যে সে কখনোই কোনো মেয়েকে এভাবে মাঝরাস্তায় ফেলে এক পার্থিব বস্তুর পিছনে দৌড়োবে না।

আদিত্যর এসব কথা গুলো অনুরিমাকে একটা ফীল গুড ব্যাপার অনুভব করাচ্ছিল। সে এবার আদিত্যর সাথে অনেক বেশি সহজভাবে কথা বলতে পারছিলো। রাজীবের মতো সেখানে কোনো ট্রিটমেন্টের বাধ্যবাধকতা ছিলোনা। মনে মনে অল্প অনুশোচনাও বোধ হচ্ছিলো এটা ভেবে যে আদিত্য ও সুচরিতার অতীতের বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে তার ওইরূপ আলটপকা মন্তব্য করা উচিত হয়নি। কিন্তু সে তো শুধু তাই বলেছে যা সে সুচরিতার কাছ থেকে জেনেছে। তাহলে কি সুচরিতা তাকে নিজের ম্যারেড লাইফ নিয়ে ভুল কথা বলেছিলো ? দুই তরফের কথা না শুনে কখনো কোনো জাজমেন্টে আসা উচিত হয়নি তার।

সেই সময়ে অনুরিমার খুব জানতে ইচ্ছে করছিলো কেন আদিত্যর সাথে তার বান্ধবীর বিয়েটা টেকেনি ? এই কথা তো ঠিক যে আদিত্য নিঃসন্দেহে একটা ভালো ছেলে , তার প্রমাণ সে আজ পেয়েছে। তাছাড়া তার প্রাক্তন স্ত্রী সুচরিতাও সবসময়ে তার এক্স-হাসবেন্ড কে নিয়ে যতবার কথা বলেছে ভালো ভালো কথাই বলেছে , যা সত্যিই খুব বিরল ব্যাপার। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরও কোনো মেয়ের তার প্রাক্তন স্বামীকে নিয়ে এতোটা রেসপেক্টফুল থাকা , সচরাচর দেখা যায়না। তাই স্বাভাবিকভাবেই মানুষ আদিত্যকে নিয়ে অনুরিমার কৌতূহল ক্রমশ বাড়ছিলো।

সে আদিত্য ও সুচরিতার বিয়ে নিয়ে কথা তুলতেই যাবে কি সঙ্গে সঙ্গে ঝমঝম করে বৃষ্টি নেমে আসলো। তারা তখন এমন একটা জায়গায় ছিল যেখানে কোনো শেড ছিলোনা বৃষ্টি থেকে বাঁচার। এভাবে হঠাৎ করে প্রবল বেগে বৃষ্টি নেমে আসবে সেটা তারা ভাবতে পারেনি। তাদের কাছে ছাতাও ছিলোনা। অনুরিমা প্যানিক করে গিয়ে দৌড়ে কাছের একটি বাস স্টপ ছাউনিতে যেতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে গেলো। আদিত্য অনুরিমা বলে চেঁচিয়ে উঠলো। রাস্তা তখন শুনশান , আসে পাশে কেউ নেই সাহায্য করার। গাড়ি থেকে শুরু করে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সব নিজের গতি বাড়িয়ে ছুটছিলো , বৃষ্টিতে নিজ নিজ গন্তব্যে তাড়াতাড়ি পৌঁছনোর জন্য। কারোর সময় নেই থামার।

আদিত্য সঙ্গে সঙ্গে অনুরিমাকে কোলে তুলে নিয়ে কাছের সেই বাস ছাউনিতে এসে বসালো। যন্ত্রণায় অনুরিমা কাতরাচ্ছিল। হাত পা বেশ ছিলে গেছিলো , রক্ত বেড়োচ্ছিলো। ব্যাথায় অনুরিমার চোখ দিয়ে জল বেড়িয়ে আসছিলো। আদিত্য মাথা ঠান্ডা রেখে প্রথমে দেখলো কোথায় কোথায় অনুরিমার লেগেছে। তারপর অনুরিমাকে বসতে বলে বৃষ্টি মাথায় নিজে বেড়িয়ে পড়লো কাছে পিঠে কোনো ওষুধের দোকান আছে কিনা সেটা খুঁজতে। বিধাতার অশেষ কৃপায় পেয়েও গেলো একটা কেমিস্টের দোকান। দোকানে গিয়ে তাড়াতাড়ি একটা ফাস্ট-এইড্ এর বক্স কিনলো , সঙ্গে কিছু নেসেসারি ওষুধপত্র যেমন পেইন কিলার ইত্যাদি। সেসব নিয়ে সে আবার ছুট দিলো অনুরিমার উদ্দেশ্যে।

বাস স্টপে পৌঁছে আদি ফাস্ট-এইড বক্স এর সাহায্যে অনুরিমার সাময়িক শুশ্রুষা করতে লাগলো। বন্ধু নয় , যেন স্বামীর কর্তব্য সে পালন করছিলো। আদিত্যর বিরামহীন যত্নে অনুরিমার একটু আরাম অনুভব হচ্ছিলো। সে মনে মনে সমীরকে কল্পনা করছিলো কিন্তু বাস্তবে সেই কার্য আদিত্য করছিলো। যখন সে সেটা বুঝতে পারলো তখন সে নিজেকেই প্রশ্ন করলো যে সমীর কি কোনোদিনও তার এভাবে যত্ন নিয়েছে , যতটা যত্ন একটা অজানা অচেনা পুরুষ কয়েকদিনের আলাপেই নিচ্ছে। সে চাইলেই তো নিজের গাড়ির পিছনে ছুটতে পারতো ! তা না করে সে আমার সাথে এলো , একসাথে বৃষ্টিতে ভিজলো। ভিজতে ভিজতে আমার জন্য ওষুধ আনতে গেলো। এখন আমার শুশ্রুষা করছে। ইস্সস ! কত ভালোই না হতো যদি এসবকিছু আদিত্যর বদলে সমীর করতো।

মনে মনে অনুরিমা বলে উঠলো , "সমীর তুমি কোথায় ? বারবার কেন এমন হয় , যে যা আমি তোমার কাছ থেকে এক্সপেক্ট করি তা আমাকে অন্য কেউ দিয়ে যায়। আমি তো এসব কিছু তোমার কাছ থেকে চাই। তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে চাই , তোমার সাথে ফাঁকা সিনেমা হলে চুম্বনে লিপ্ত হতে চাই , আর তুমি কিনা আমাকেই অন্য কারোর সাথে কল্পনা করো , ছিঃ !"

মনে মনে এসব ভেবে অনুরিমা কেঁদে উঠলো। আদিত্য ভাবলো এটা তার শারীরিক ব্যাথার কান্না , যে ব্যাথা সে কিছুক্ষণ আগে পড়ে গিয়ে পেয়েছে। কিন্তু না , এ ব্যাথা তো আসলে মনের। জীবনে অপূরণীয় আকাঙ্খা নিয়ে অনুরিমার কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ তার এটাই যে সেইসব অপূরণীয় আকাঙ্খা তার পূরণ হচ্ছে অন্য পুরুষদের দিয়ে , তার স্বামীর দ্বারা নয়। সেটা তাকে আরো ব্যাথিত করে তুলছে।

বৃষ্টি ভেজা মুখেও অনুরিমার চোখের জল বুঝে নিতে আদিত্যর অসুবিধা হয়নি। সে ঠিক বুঝতে পারছে অনুরিমা কাঁদছে। তাই সে খুবই নরম গলায় আদরভরা স্নেহে জিজ্ঞেস করে উঠলো , "ব্যাথা করছে ?"

ভাবনার আকাশে মেঘ সরে গিয়ে সে বাস্তবতার আলো দেখতে পেলো। নিজেকে সামলে নিয়ে অনুরিমা বললো , "হ্যাঁ , ওই একটুখানি।"

অনুরিমা আদিত্যকে বুঝতে দিলোনা তার চোখে জলের পিছনে আসল কারণ। বৃষ্টিটা তখন একটু লেগে এসছিলো। তবু রাস্তা ছিল কাঁদাময় , এবং ফুটপাথ শ্যাওলাময়। অনুরিমা আদিত্যর হাত ধরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো। উঠতে পারলো , কিন্তু চলতে পারছিলো না তখন। আদিত্য বললো এখন আবার পা পিছলে পড়লে সে আর উঠতেও পারবে না। এই বলে আদিত্য কিছু জিজ্ঞেস না করেই অনুরিমাকে নিজের কোলে তুলে নিলো। অনুরিমা অবাক হয়েগেলো। আদিত্য কোলে করে তাকে কোথায় নিয়ে যাবে ? বাড়ি যে এখনও অনেক দূর।

রাস্তাটা তখনও বেশ ফাঁকাই ছিল। দু-চারজন লোক বেরিয়ে ছিলো। কিন্তু তাদেরও তো চোখে পড়ছিলো যে ফুটপাথ দিয়ে বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় একটা ছেলে একটি মেয়েকে সিনেমার মতো কোলে তুলে নিয়ে কোথাও একটা যাচ্ছে। অনুরিমা লজ্জায় ছটফট করতে লাগলো। আদিত্যকে অনুরোধ করতে লাগলো তাকে নামিয়ে দেওয়ার জন্য। আদিত্য তাকে ওয়ার্নিং দিলো , এরকম করলে অনুরিমা নিজেও পড়বে তাকেও ফেলবে। তারপর দুজনের কোমড় ভাঙবে। তখন কে কাকে সাহায্য করবে ? সে যা করছে তা অনুরিমার ভালোর জন্যই করছে। এই অবস্থায় অনুরিমা ভেজা পিচ্ছিল রাস্তায় হেঁটে যেতে পারবে না। পরিস্থিতিটা একটু অনুরিমা বোঝার চেষ্টা করুক।

অনুরিমা তখন জিজ্ঞেস করলো এইভাবে সে তাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ? বাড়ি তো এখন অনেক দূর ! আদিত্য বললো ওষুধ আনতে গিয়ে সে একটি ইন্ লজ দেখে এসছে। এখন তারা সেখানে যাচ্ছে। এভাবে বাস স্টপে কতোক্ষণ আর বসে থাকবে ! কোনো বাস পাওয়া যাচ্ছে না, পেলেও সেই বাসে খুব ভীড় থাকবে , যেখানে অনুরিমা চাইলেও উঠতে পারবে না এই পা নিয়ে। সব ট্যাক্সি নিজেদের মিটার বন্ধ করে গাড়ি গ্যারেজ করে দিয়েছে। তাই এখন হেঁটে হেঁটেও বাড়ি ফেরা যাবেনা। তার চেয়ে বরং একটি লজে কিছুক্ষণ স্টেই করে অনুরিমা বিশ্রাম নিক। ব্যাথা কিছুটা ঠিক হলে , এবং রাস্তায় গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হলে তখন কোনো শাটল্ বা গাড়ি ভাড়া করে আদিত্য অনুরিমাকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেবে।

আদিত্যর সাথে কোনো লজে সময় কাটাতে তার মন তো চাইছিলো না , কিন্তু আর তো কোনো উপায়ও ছিলোনা। আদিত্যর অকাট্য যুক্তিকে কোনো এক্সকিউস দিয়ে খণ্ডন করা যাচ্ছিলো না। সে ভাবলো একবার সমীরকে ফোন করে আসতে বলবে। সেই মতো অনুরিমা তার ছোট হ্যান্ডব্যাগ থেকে ফোনটা বার করলো। ওমাহঃ ! দেখলো তখন পড়ে যাওয়ার সময়ে ব্যাগ সমেত ফোনটা জলে পড়ে যাওয়ায় ফোনটা ডেড হয়েগেছে ! শিট্ ! বিপদ যখন আসে তখন চারদিক থেকে সকল বিপদ একসাথে গ্যাং আপ করেই আসে। একবার ভাবলো যে আদিত্যর কাছে ফোন চেয়ে সে সমীরকে কল করবে। কিন্তু আদিত্য কি ভাববে ? আদিত্য ভাববে যে অনুরিমাকে তাকে বিশ্বাস করছে না ! একেই সে তার আর সুচরিতার বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করে যথেষ্ট লজ্জিত , আর সে নিজেকে ছোট করতে পারবে না , আদিত্যকে অবিশ্বাস করে তাকে অহেতুক ভাবে পারভার্ট হিসেবে দাগিয়ে দিয়ে ! তাছাড়া সমীরও কি ভাববে , যদি সে জানতে পারে আমি আদিত্যর সাথে ছিলাম। নাহঃ নাহঃ , সমীরের এরম অবস্থায় সমীরের অসুস্থ মানসিকতাকে আমি প্রশ্রয় দিতে চাইনা !

এসব ভাবতে ভাবতে সে দেখলো আদিত্যর কোলে চড়ে সে একটি থাকার লজের সামনে এসেছে। সে খানিকটা ইমপ্রেস হলো আদিত্যর স্ট্রেনথ দেখে। অনুরিমা রোগা হলেও ওর তো একটা ভার রয়েইছে। তাকে এতোটা রাস্তা কোলে করে নিয়ে আসা, ..... সত্যিই, একটা সাইলেন্ট সাবাশি আদিত্যর প্রাপ্যই। তাই অনুরিমা মনে মনে তাকে ধন্যবাদ ও কুর্নিশ জানালো। মুখে জানালো না যদি আদিত্য এটার অন্য মানে করে নেয়।
 
পর্ব ১৯

লজে ঢুকে আদিত্য তাদের জন্য দুটো রুম চাইলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই লজে তখন একটিই মাত্র ঘর ফাঁকা ছিল। তা শুনে অনুরিমা আদিত্যকে বললো অন্য কোথাও যেতে। আদিত্য অনুরিমাকে বোঝালো যে এই এলাকায় আর কোনো ভালো লজ নেই। তাছাড়া তারা তো মাত্র কিছুক্ষণের জন্য থাকবে , তাহলে অনুরিমা কেন এতো হেসিটেট করছে ? আদিত্য জানতে চাইলো , অনুরিমা কি তাকে বিশ্বাস করছে না ? অনুরিমার মন তো চাইলো এটাই বলতে যে হ্যাঁ , করছি না বিশ্বাস। এই স্বল্প আলাপে কাউকেই কখনও বিশ্বাস করা যায়না। কিন্তু আদিত্য যে ওর জন্য এতকিছু করলো , নিজের দামী গাড়িটা পর্যন্ত পুলিশের হাতে ছেড়ে চলে এলো, সেই কৃতজ্ঞতা থেকেই অনুরিমা এই কঠোর সত্যিটা আদিত্যর মুখের উপর বলতে পারলো না। সে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। অগত্যা একটি রুমের চাবি নিয়েই আদিত্য ও অনুরিমা লিফট দিয়ে উঠে গেলো লজের তিন তলায়।

ঘরে প্রবেশ করে দেখলো ঘরটা কাপল্ রুম , একটাই বিছানা রয়েছে। কিন্তু বিছানা দেখে কি হবে , তারা তো সেখানে রাত্রিবাস করতে আসেনি ! পরিস্থিতির চাপে পড়েছে বলে কিছুক্ষণ থাকবে , তারপর চলে যাবে। আদিত্য ঘরটা ইন্সপেকশন করে দেখতে লাগলো ঘরে কি কি আছে। একটা বিছানা , একটা ডাইনিং টেবিল সাথে দুটো চেয়ার। একটা তিনজনের বসার সোফা , তার সামনে ছোট একটা কাঁচের টেবিল। একটা অ্যাটাচ বাথরুম। দেওয়ালে কাপবোর্ড লাগানো ছিল সেখানে দুটো সাদা টাওয়াল রাখা ছিল। বিছানার চাদরও ধবধবে সাদা ছিল , সাথে দুটো বালিশ রাখা ছিল।

সব দেখে আদিত্য হোটেলের স্টাফটা-কে (যে স্টাফটা তাদের-কে রুম অবধি নিয়ে এসছিলো ) বললো কয়েকটা দড়ি আর একটা হিটার নিয়ে আসতে। একজন ওবিডিয়েন্ট স্টাফ হিসেবে সে তাই আনতে গেলো। অনুরিমা জিজ্ঞেস করলো আদিত্যর দড়ি আর হিটারের কেনো প্রয়োজন ? আদিত্য অনুরিমাকে ধৈর্য ধরতে বললো। কথামতো স্টাফটি কয়েকটি দড়ি ও একটা হিটার নিয়ে এলো।

হোটেলের কর্মীটি জানতে চাইলো তাদের আর কিছু লাগবে কিনা ? বা তারা কিছু খাবে কিনা ? তখন আদিত্য অনুরিমাকে জিজ্ঞেস করলো এক কাপ কফি চলবে কিনা ? বৃষ্টি ভেজা অবস্থায় অনুরিমার একটু শীত শীত করছিলো , তাই সে কফির জন্য হ্যাঁ বলে দিলো। আদিত্য হোটেলের স্টাফটা-কে সঙ্গে নিয়ে দরজা অবধি গেলো , ওর হাতে টিপ্ ধরিয়ে বললো যেন ওকে আর অনুরিমাকে তারা অযথা ডিস্টার্ব না করে রুম সার্ভিসের নামে। শুধু কফি দিয়েই চলে যায় , আর যেন কোনো কারণে ফের কেউ না আসে। স্টাফটি মাথা নাড়িয়ে আদিত্যর আবেদনে সম্মতি জানালো , এবং কফির অর্ডার নিয়ে চলে গেলো কফি বানাতে।

দরজা বন্ধ করে রুমের ভেতরে আসতেই অনুরিমা তাকে আবার প্রশ্ন করা শুরু করলো কেন আদিত্য এতগুলো দড়ি ও হিটার এনেছে? আদিত্য বললো শুধু দেখতে যাও , আমি কি করছি। এই বলে সে দড়ি গুলো নিয়ে রুমের জানলার গ্রিল থেকে দেওয়ালে লাগানো বিভিন্ন আংটা বা হ্যাংগার গুলোতে টান টান করে বেঁধে দিতে লাগলো। হিটারের প্লাগটা সুইচ বোর্ডে লাগিয়ে অন করে দিলো। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসব অনুরিমা শুধু দেখছিলো , কিন্তু ছাতার মাথা কিচ্ছু বুঝতে পারছিলোনা আদিত্য এক্সাক্টলি কি করতে চাইছে সেটা।

আদিত্য নিজের কাজ সেরে অনুরিমাকে বললো , "ডান ! এবার আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসি। দেখো তোমার জন্য ফাস্ট-এইড বক্স কিনে আনতে গিয়ে আমি তোমার চেয়েও বেশি ভিজে গেছি। যদিও আমি দেখতে পাচ্ছি যে তোমার শাড়িটা কাদায় নোংরা হয়ে গ্যাছে , তুমিও বেশ ভালোই ভিজে গ্যাছো। সো ইউ অলসো নিড টু বি ফ্রেশ। বাট আগে আমি আমার পরনে ভেজা জামাকাপড়গুলো খুলে শুকোতে দিই , নাহলে এই সিজন চেঞ্জের সময়ে আমারই আগে ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হয়ে যাবে। তবে চিন্তা করোনা, আমি তাড়াতাড়ি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসবো। "

এই বলে আদিত্য অনুরিমার সামনেই এক এক করে নিজের জামাকাপড় গুলো খুলে ফেলতে লাগলো। কাপবোর্ডে রাখা দুটো সাদা তোয়ালের মধ্যে একটা নিজের জন্য নিলো। আদিত্য তখন টপলেস ছিল , শুধু পরনে নিজের প্যান্ট এবং ভেতরের জাঙ্গিয়াটা ছিল। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিলো আদিত্য জিম করে , পেটানো চেহারা , সিক্স প্যাক আছে কিনা বলা মুশকিল , কিন্তু সেরকমই একটা মাসক্যুলার হ্যান্ডসম ম্যানের ভাইব্ ওর থেকে আসছিলো।

আদিত্যকে জামা খুলতে দেখে অনুরিমা রে রে করে উঠেছিল। সে তৎক্ষণাৎ নিজের চোখ অন্য দিকে সরিয়ে নিয়েছিল। আদিত্য নিজের কার্যকলাপের জাস্টিফিকেশন দিতে লাগলো। সে এবার বলতে শুরু করলো কেন সে হোটেলের স্টাফটা-কে দিয়ে কয়েকটা দড়ি ও একটা হিটার আনালো। দড়িগুলো টাঙানোর পিছনে কারণ হলো নিজেদের ভেজা কাপড় শুকোতে দেওয়া। এইভাবে যদি আদি ও অনুরিমা ভেজা কাপড়ে বেশিক্ষণ থাকে তাহলে জোর ঠান্ডা লাগতে বেশি সময় লাগবে না। তার থেকে বাঁচতেই আদিত্যর এতো বন্দোবস্ত। সেই জন্যেই সে হিটারও আনিয়েছে , যাতে জামাকাপড়গুলো তাড়াতাড়ি শুকোয় , এবং ঘরটা তাদের জন্য গরম থাকে। ঠিক একই কারণে সে তাদের দুজনের জন্য কফি অর্ডার দিয়েছে , যাতে ক্যাফিন তাদের শরীরকে গরম রাখতে সাহায্য করে।

এসব শুনে অনুরিমার তো চক্ষু চড়কগাছ ! কি বলছে এসব আদিত্য ! সে চায় তারা দুজনই কাপড়জামা খুলে শুকোতে দিক ! মানে টা কি ! সে এরকম ভাবলোও কিভাবে ! অনুরিমার এরকম রিঅ্যাকশন আসাটা আদিত্যর কাছে এক্সপেকটেড ছিলই। সে তখন অনুরিমাকে শুধু একটা কথাই শুধালো , যে আর কি কোনো রাস্তা আছে ?

বাড়িতে অনুরিমার একটা মেয়ে আছে , শ্বশুর শাশুড়ি দুজনে বৃদ্ধ। এই অবস্থায় যদি অনুরিমার এখন কোনো ভাইরাল ফিভার হয়ে যায় , তখন কে দেখবে তাকে এবং তার পরিবারকে ? সতীত্ব ঢাকতে গিয়ে তো সে তার পরিবারের স্বার্থ জ্বলাঞ্জলি দিয়ে দেবে। তাছাড়া তাকে এই অবস্থায় কে আসছে দেখতে ? কেই বা জানবে এই ব্যাপারটা ? হোটেলের সেই স্টাফটা-কে অলরেডি আদিত্য বলে দিয়েছে কফি সার্ভ করার পর আর যাতে তাদের কোনোভাবে ডিস্টার্ব করা না হয়। আর সেটা বলার পিছনে কারণ হলো একটাই , যে যতোক্ষণ তারা রুমে থাকবে তারা নিজেদের কাপড় জামা শুকোতে দেবে। অন্য কোনো বদমতলবের জন্য আদিত্য এই প্রাইভেসি চায়নি।

তাই জন্য আদিত্য আগে ওয়াশরুমে যেতে চায়। সে ফ্রেশ হতে হতে কফি চলে আসবে। কফি সার্ভ করার পর বেয়ারা-টা রুম থেকে চলে গেলে তখন অনুরিমা নিজের কাপড় জামা ছেড়ে শুকোতে দেবে , আর ততোক্ষণ কাপবোর্ডের ভেতরে রাখা অপর আরেক টাওয়েলটা সে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে নিজের লজ্জা নিবারণ করবে। সিম্পল ! এতে অনুরিমার অতো রিএক্ট করার কি আছে ? এসব বোঝাতে গিয়ে আদিত্যকে অনেক বেশি বিরক্ত দেখালো। আদিত্যর বিরক্তি অনুরিমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলো যে কোনো কুমতলবের কারণে নয় , এই দুর্যোগের কারণেই আদিত্য এরূপ কার্য তাকে করতে বলছে।

অনুরিমা তখন চরম এক অন্তর্দ্বন্দ্বে পড়ে গেছিলো। সত্যিই তো , এখন যদি এই ভেজা কাপড়ে সে থাকে তাহলে নির্ঘাত তার নিউমোনিয়া বা ভাইরাল ফিভার হবে। কয়েকদিনের মধ্যে তিন্নির মিডটার্ম এক্সাম শুরু হবে , এখন যদি মা হয়ে অনুরিমা জ্বরের কবলে পড়ে যায় , তখন তার মেয়েকে কে দেখবে ? শ্বশুর শাশুড়িরও তো বয়স কম হয়নি। শুনেছি ভাইরাল ফিভার তো ছোঁয়াচে রোগ , তার থেকে যদি শ্বশুর শাশুড়িরও ধরে যায় এই রোগ , তখন !! নাহঃ , এটা কিছুতেই হতে পারেনা !

অনুরিমা ভাবলো তাকে ছাড়া তো তার পরিবার অচল ! সে অসুখ পাকিয়ে নিজের পরিবারকে বিপদের মুখে ফেলতে পারবে না। কালে কালে মেয়েদের তো কতোই না অগ্নিপরীক্ষা দিতে হয়েছে। আজ নাহয় সেই নারীদের প্রতিনিধিত্ব হয়ে সেও একটা পরীক্ষা দিলো। আর আদিত্য যদি এই অবস্থার ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করে , তাহলে পুরুষসমাজ থেকে চিরকালের মতো বিশ্বাস অনুরিমার উঠে যাবে। আবার তখুনি অনুরিমার মনের আরেক দিক তাকে বলে উঠলো, সত্যিই যদি আদিত্যর কিছু করার থাকে তাহলে এই বন্ধ ঘরে নিজের পেশী শক্তি প্রয়োগ করেই সে করে নিতে পারবে। তার জন্য তাকে দড়ি , হিটার এসব নিয়ে এতো আয়োজন করার দরকার পড়তো না।

নিজের মনের সাথে অনেক সলা-পরামর্শ করার পর শেষে অনুরিমা সিদ্ধান্ত নিলো যে সে আগে নিজের স্বাস্থ্যের কথা ভাববে , নিজের কারণে না হলেও নিজের পরিবারের জন্য , বাচ্চা মেয়েটার জন্য , পিতৃ-মাতৃসম বয়স্ক শ্বশুর শাশুড়ির জন্য। তাই সে সাময়িকভাবে নিজের বস্ত্র ত্যাগ করার নির্ণয় নিলো। সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যতোক্ষণে এসব ভাবছিলো ততোক্ষণে আদিত্য নিজের জামা, স্যান্ডো গেঞ্জি , প্যান্টের বেল্ট খুলে দড়িতে মেলে দিয়েছিলো। এখন শুধু সে জিন্স এর প্যান্ট ও তার ভেতরে জাঙ্গিয়া পরিধানে পরিহীত ছিল। টাওয়েল হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে যাওয়ার তোড়জোড় করছিলো।

কাপবোর্ডে রাখা দুটি টাওয়েলের মধ্যে একটিকে নিয়ে আদিত্য বাথরুমে প্রবেশ করলো। ঠিক তখুনি দরজায় একটা নক পড়লো। অনুরিমা শাড়িটাকে একটু ঠিক করে দরজার দিকে গেলো। দরজা খুলে দেখলো বেয়ারা কফির ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অনুরিমা ভেতরে আসতে বললো। বেয়ারা কফির ট্রে টা ডাইনিং টেবিলে রাখলো। অনুরিমাকে জিজ্ঞেস করলো আর কিছু তাদের লাগবে কিনা। অনুরিমা নো থ্যাংকস বলে সসম্মানে তাকে বিদায় জানালো। অনুরিমা রুমের দরজা বন্ধ করে আসলো। কিছুক্ষণ পর বাথরুমের দরজা খুলে গেলো।

বাথরুম থেকে শুধু সাদা তোয়ালে কোমড়ে জড়িয়ে বেড়িয়ে এলো আদিত্য। হাতে ছিল তার জিন্সের প্যান্ট ও জাঙ্গিয়া। দুটোই সে দড়িতে মেলে দিলো। ঠিক যেন সাওয়ারিয়া গানের রণবীর কাপুরের মতো লাগছিলো তাকে। সেই সুঠাম চেহারা , গৌর বর্ণ গায়ের রং , মাথায় ঘন কালো চুল , সমীরের থেকে হাজারো গুণ বেশি আকর্ষণীয়। কিন্তু আদিত্যর এই আকর্ষণীয় অর্ধ নগ্ন আবেদনময় চেহারা কি একনিষ্ঠবতী অথচ সুন্দরী অনুরিমার মনকে বিপথে চালিত করার ক্ষমতা রাখে ? তা ছিল অপেক্ষা করে দেখবার।

আদিত্য অনুরিমাকে বললো এবার সে নিজের কাপড় জামা মেলে দিক। অনুরিমা চুপ করে দাঁড়িয়েছিলো , নিজের হাত নিজে টিপে প্রবল অস্বস্তির কথা পরোক্ষভাবে জানান দিচ্ছিলো। আদিত্য অনুরিমার কুণ্ঠাবোধ বেশ ভালোমতোই বুঝতে পারছিলো। তাই আদি অনুরিমাকে উপদেশ দিলো, সে যেন বাথরুমে গিয়ে নিজের শাড়ি, সায়া ও ব্লাউজ খুলে আদিত্যর হাতে দ্যায়। আদিত্য ভালো করে সেগুলোকে মেলে দেবে দড়িতে। এমনিতেও শুধু তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে সে পুরো শাড়ি মেলতে পারবে না। তার চেয়ে সেই কাজটা বরং আদিত্য করে দেবে যতোক্ষণে অনুরিমা বাথরুমে ফ্রেশ হবে।

তাছাড়া শাড়ি , সায়া , ব্লাউজ , অন্তর্বাস সবকিছু একসাথে নিয়ে অনুরিমা বাথরুম থেকে বেরোতে পারবে না। বাথরুমের ভেজা মেঝেতে পড়ে গিয়ে ফের তার কাপড়জামা খারাপ হয়ে যাবে। তাই আদিত্য অনুরিমাকে বললো সে বাথরুমে গিয়ে এক এক করে যথাক্রমে শাড়ি সায়া ও ব্লাউজ খুলে নিজেকে আড়াল করে দরজার ফাঁক থেকে আদিত্যর হাতে তুলে দিক। অনুরিমা শুধু তার প্যান্টি ও ব্রেসিয়ারটা নিজের হাতে নিয়ে বেড়োক , এবং নিজে সেই দুটো মেলুক। সঙ্গে সঙ্গে অনুরিমা প্রতিবাদ জানিয়ে বললো , সে তার অন্তর্বাস খুলবে না , কিছুতেই না।

আদিত্য ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বললো , অন্তর্বাসটাই আসল জিনিস। সেটাকেই আগে শুকোতে হবে। নাহলে ভেজা অন্তর্বাস পড়ে থাকলে "সেইসব জায়গায়" ইনফেক্শন হয়ে যেতে পারে তার। আদিত্য নিজেও তো নিজের জাঙ্গিয়াটা খুলে মেলে দিয়েছে। আদিত্য বারবার অনুরিমাকে অনুরোধ করে বললো , এখন সময় এতো লজ্জা পাওয়ার নয়। এই ঘরেতে সে আর অনুরিমা ছাড়া আর কেউ নেই , কেউ আসবেও না। তাই তাদের নিজ নিজ স্বাস্থ্যের কথা ভেবে দুজনকেই লজ্জা ত্যাগ করে কিছুক্ষণ শুধু সাদা টাওয়েল-টা জড়িয়ে থাকতে হবে। এই সময়ে লজ্জা ঘেন্না ভয় তিন থাকতে নয়। এই একই কথা রাজীবও তো সমীরকে বলেছিলো। তবে তার কারণ ছিল ভিন্ন। আর আদিত্য যখন সমীরের স্ত্রীকে সেই একই কথা বলছে তখন তার পটকথা ও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। কিন্তু এই একটা বাংলা প্রবাদ স্বামী-স্ত্রীর ভাগ্যটাকে কিরকম বদলে দিচ্ছিলো , সেটা সমীর ও অনুরিমা দুজনেই বুঝতে পারছিলো না। ......

"লজ্জা ঘেন্না ভয় , তিন থাকতে নয়। ........"
 
মনে হছে শেষে সমীর আর অনুরিমার সম্পর্কটা শেষ হয়েই যাবে, অনুরিমার সমীরের প্রতি পবিত্র ভালোবাসাটা আর থাকবে না। আদিত্য বা রাজীব জয় করে নিয়ে চলে যাবে অনুরিমাকে বা দুজনেই জয় করে নেবে অনুরিমার ভালোবাসা, তার আকাঙ্খা, তার প্রেম, কাম সবটাই। সমীর হয় কাকোল্ড বলে সবটা মেনে নেবে, নাহলে অনুরিমাকে চিরতরে হারাবে। সুচরিতার যেন একটা মধুর প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে যাবে সমীরের উপর।
 
মনে হছে শেষে সমীর আর অনুরিমার সম্পর্কটা শেষ হয়েই যাবে, অনুরিমার সমীরের প্রতি পবিত্র ভালোবাসাটা আর থাকবে না। আদিত্য বা রাজীব জয় করে নিয়ে চলে যাবে অনুরিমাকে বা দুজনেই জয় করে নেবে অনুরিমার ভালোবাসা, তার আকাঙ্খা, তার প্রেম, কাম সবটাই। সমীর হয় কাকোল্ড বলে সবটা মেনে নেবে, নাহলে অনুরিমাকে চিরতরে হারাবে। সুচরিতার যেন একটা মধুর প্রতিশোধ নেওয়া হয়ে যাবে সমীরের উপর।

সম্পর্কে বিশ্বাস কমে গেলে তা বিচ্ছেদের পরিণতি নেয়। এছাড়া প্রত্যাশা , আকাঙ্খা , বিতৃষ্ণা এসব তাতে অনুঘটকের কাজ করে। গল্পটা পড়তে পড়তে দেখবেন কার সাথে কার রসায়ন কিরকম তৈরী হচ্ছে। এখুনি উপসংহার টানাটা লেখিকা হিসেবে আমার উচিত নয়। এখনো জল অনেক দূর গড়ানো বাকি আছে , এখনো খেলা অনেক বাকি রয়েছে।
 
পর্ব ২০
অবশেষে অনুরিমা বাথরুমের দিকে যেতে লাগলো। তার পা যেন চলছিলো না। প্রচন্ড ভয় ভয়ে ছিলো। লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিলো তার। কিন্তু কোনো উপায় নেই। তাকে তার শরীরের দিকটাও দেখতে হবে। লজ্জা ঢাকতে গিয়ে এই অবস্থায় শরীরের বারোটা বাজালে , তাকে কে দেখবে ? সমীর তো নিজের ফ্যান্টাসি নিয়েই মশগুল রয়েছে। তার জন্যই তো অনুরিমাকে এতো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।

কার জন্য আজ তাকে ছুটে যেতে হলো সুচরিতার কাছে ? কার জন্য তাকে এক পরপুরুষের সাথে ওসব রিহার্সাল করতে হয়েছে ? ওসব অহেতুক উটকো ঝামেলা অনুরিমার ঘাড়ে এসে না পড়লে ওকে তো আর আজকের এই বৃষ্টি-বাদলের দিনে বাড়ি থেকে বেড়োতে হতো না ! বাড়ি থেকে বেড়োনোর সময়ই সে আজ দেখেছে আকাশটা কিরকম ভার করে আছে। তবুও সে বেড়িয়েছিলো সুচরিতার সাথে দেখা করতে কারণ সে স্বয়ং এটা নির্ণয় করতে পাচ্ছিলো না যে সমীরকে সে কতোটুকু বলবে রিহার্সাল সম্পর্কে ! আর ওই রিহার্সাল তাকে করতেই হতো না যদি সমীরের মাথায় এই অদ্ভুত ফ্যান্টাসির ভূত চেপে না বসতো। তাহলে সবদিক দিয়ে সমীরই একমাত্র দায়ী, তার আর আদিত্যর বৃষ্টি ভেজা অবস্থায় কোনো এক হোটেলের এক ঘরে স্টে করার পিছনে।

মনে মনে সমীরকে দোষারোপ করতে করতে সে আনমনে বাথরুমের দিকে এগোচ্ছিল। একটু ডিসটেন্স বজায় রেখে আদিত্যও তার পিছন পিছন যাচ্ছিলো, দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবে বলে, কখন অনুরিমা নিজের পরিহীত বস্ত্রসমূহ এক এক করে খুলে আড়াল থেকে তার হাতে সঁপে দেবে সেই জন্যে।

বাথরুমের দরজার পাটাতন-টা একটু উঁচু ছিল। বাথরুমে ঢোকার সময়ে আনমনা অনুরিমা সেটা খেয়াল করেনি। সঙ্গে সঙ্গে হোঁচট খেয়ে সে পড়তে যাচ্ছিলো ঠিক তখুনি পিছন থেকে আদিত্য এসে তাকে জাপটে ধরে ফেললো। কিছুটা আতঙ্কের সুরে টেন্সড হয়ে আদিত্য বলে উঠলো , "কি করছো কি !! কোথায় থাকে মনটা তোমার ? এক্ষুনি তো একটা বড়ো বিপদ বাঁধিয়ে ফেলছিলে ! ভাগ্যিস আমি পেছন পেছন আসছিলাম, দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে। কারণ তোমার ছেড়ে দেওয়া জামাকাপড় গুলো কালেক্ট করে মেলবো বলে। "

অনুরিমা তখন নিজেকে সামলে নিয়ে ঠিক মতো উঠে দাঁড়ালো। তারপর বললো , "থ্যাংক ইউ। আই এম ফাইন নাও। "

আদিত্য খানিকটা রেগেমেগে বললো, "তোমার থ্যাংকস আমার লাগবে না। তুমি দয়া করে একটু সাবধানে চলা ফেরা করো। তুমি অলরেডি পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছো , আবার পড়ে গেলে কি হতো শুনি ! বাস স্টপে ভিজে মাথায় দাঁড়িয়ে অনেক কষ্টে তোমার মেডিক্যাল ড্রেসিং করেছি, কিন্তু সবটা ঠিক মতো করতে পারিনি। এখন তুমি কাপড় ছেড়ে এলে ভালো করে তোমার ড্রেসিং করে দেবো। ফাস্ট এইড বক্সটা সাথে করে কোনোমতে নিয়ে এসছি। "

- "তার আর দরকার পড়বে না , আমি এখন ঠিক আছি। "

- "সেটা নাহয় আমাকে বুঝতে দাও অনুরিমা। যাই হোক , ভালো করে গা হাত পা ধুয়ে টাওয়েল গায়ে দিয়ে বেড়ো , তারপর আবার তোমার ভালো মতো ড্রেসিং করে দেবো , যাতে কাটা জায়গায় ইনফেক্শন না হয়ে যায়। "

আদিত্যর এতো কেয়ার নেওয়া , স্বামীর মতো বকাঝকা করা , সব যেন অনুরিমাকে অজান্তেই মন্ত্রমুগ্ধ করে তুলছিলো। তার উপর বাড়তি সংযোজন আদিত্যর "তুমি" ডাক। তাই আবার সে না চাইতেও সমীরের সঙ্গে আদিত্যর তুলোনা টেনে ফেলছিলো। এরকমটা তো সে রাজীবের বেলায় করেনি , তবে আদিত্য কেন বারবার তার মনের দরজায় কড়া নেড়ে দিচ্ছে ! এতোটা যত্ন , শাসন , এসবকিছু তো অনুরিমা শুধু একজন মানুষের কাছ থেকে এক্সপেক্ট করে, সেটা তার সন্তানের বাবা সমীর। এত বছরের বিবাহিত জীবনে নিঃসন্দেহে সে সমীরের কাছ থেকে ভালোবাসা পেয়েছে , কিন্তু এরূপ যত্ন সে পায়নি। অপর কেউ দেয়নি বলে তার এই ব্যাপারটা এতোদিন মাথায়ও আসেনি। আজ যখন হঠাৎ করে অন্য এক পুরুষ তার যত্ন নিচ্ছে , তার ভালোর জন্য তাকেই শাসন করছে তখন তার মনে পড়ছে সমীরের খামতির জায়গা গুলি।

বেশ কিছুক্ষণ সে এভাবেই আদিত্যর দিকে তাকিয়ে সেসব কথা ভাবতে লাগলো। তারপর আদিত্যই তার বাস্তব চেতনা ফেরালো , "কি হলো অনুরিমা , কি এতো ভাবছো তুমি ? "

খানিকটা চমকে গিয়ে অনুরিমা নিজেকে সামলে নিলো। আঙ্গুল দিয়ে নিজের চুল-কে কানের পাশে সরিয়ে কিছু না বলে বাথরুমে প্রবেশ করলো। আদিত্যর মুখের সামনে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। আদিত্য ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। বাথরুমে ঢুকে সে ভাবতে লাগলো তার এই কাজটা করা উচিত কিনা যেটা আদিত্য তাকে করতে বলছে।

অনেক ভাবার পর সে নিজের শাড়িটা আস্তে আস্তে খুলতে লাগলো। ভেজা শাড়িতে সত্যি তার খুব অস্বস্তি হচ্ছিলো। তখুনি বাথরুমের দরজায় আদিত্য কড়া নাড়লো। আসলে অনুরিমা কাপবোর্ডে পড়ে থাকা অপর টাওয়েলটি নিজের সাথে নিয়ে আনতেই ভুলে গেছিলো। তার মনের উপর দিয়ে এতো চাপ যাচ্ছিলো যে সে সেই দিকে খেয়ালই করেনি। অনুরিমার বাথরুমে প্রবেশ করার পর আদিত্যর মাথায় স্ট্রাইক করলো যে সে অনুরিমার হাতে কোনো টাওয়েল দেখেনি , যখন তাকে মুখ থুবড়ে পড়ার থেকে আদিত্য বাঁচিয়ে ছিল। আদিত্য কাপবোর্ডের কাছে গিয়ে খুলে দেখলো তার ভাবনাই ঠিক। অপর তোয়ালে-টি যেখানে ছিল সেখানেই পড়ে রয়েছে। তখন আদি সেটা নিয়ে গিয়ে বাথরুমের দরজায় কড়া নাড়লো।

অনুরিমা চমকে গেলো। কারণ সে তখন নিজের ভেজা শাড়িটা গা থেকে খুলে ফেলছিলো। ভেতর থেকে কোনো শব্দ না পেয়ে আদিত্য বাইরে থেকে অনুরিমাকে বললো , সে তোয়ালেটা না নিয়েই বাথরুমে গ্যাছে , তাই বাইরে আদিত্য তোয়ালে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অনুরিমার খেয়াল হলো , ঠিক তো ! সে তোয়ালেটাই নিয়ে আসেনি।

অনুরিমা দরজার ছিটকিনি-টা খুলে অল্প ফাঁক করলো। সেখান দিয়ে নিজের হাত বাড়ালো। বাইরে থেকে শুধু অনুরিমার দুধ সাদা কোমল হাতটিই দেখা যাচ্ছিলো , আর কিছু না। আদিত্য সময় নষ্ট না করে সেই ফাঁক দিয়েই তোয়ালেটা অনুরিমার হাতে ধরিয়ে দিলো। অনুরিমা আবার দরজা বন্ধ করে দিলো।

এই ছোট্ট একটা ঘটনা অনুরিমার মনে আদিত্যকে নিয়ে আত্মবিশ্বাস জাগালো। তার মনে যেটুকু ডাউট্ ছিল আদিত্যর সততা নিয়ে সেটুকুও তখন মুছে গেলো, আদিত্যর এই ছোট্ট সাহায্য ও সুযোগের অপব্যবহার না করা থেকে। তাই এবার অনুরিমা সব দ্বিধা কাটিয়ে একে একে নিজের শাড়ি , সায়া , ব্লাউজ সব খুলে দরজার ফাঁক দিয়ে নিজেকে আড়াল করে আদিত্যর হাতে তুলে দিতে লাগলো , আর আদিত্যও বাধ্য ছেলের মতো এক এক করে অনুরিমার বস্ত্র গুলো নিয়ে দড়িতে মেলতে লাগলো।

অনুরিমা পরনে তখন শুধু নিজের অন্তর্বাস দুটি (ব্রা ও প্যান্টি) ছিল। সে দরজাটা হালকা করে খুলে উঁকি মেরে দেখতে চাইলো এখনো আদিত্য দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে কিনা ? কারণ কথা মতো আদিত্যর তো কাজ শেষ। সে কেনই বা তাহলে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে ?

অনুরিমা উঁকি মেরে দেখলো আদিত্য নেই। সে দূরে বিছানায় গিয়ে বসে রয়েছে বাথরুমের দিকে পিঠ করে। অনুরিমা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। আদিত্য তার কথা রেখেছে। আদিত্যর সত্যি অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই অনুরিমার প্রতি। সে সত্যিই তাদের হেল্থ এর কথা মাথায় রেখেই অনুকে নিজের ভেজা কাপড় ছাড়তে বলেছিলো।

অনুরিমা নিজের মনকে বললো সে সঠিক মানুষকেই বিশ্বাস করেছে। এবার সে নির্দ্বিধায়ে নিজের অন্তর্বাস ছেড়ে শুধু তোয়ালে জড়িয়ে বেরিয়ে আসতে পারবে। সে এখন ১০০ শতাংশ নিশ্চিত আদিত্য এই পরিস্থিতির কোনোরূপ ফায়দা তুলবে না। বিকউস্ আদিত্য রিয়্যালি ইস এ পিওর জেন্টলম্যান। ইস্স, কেনো যে সুচরিতা বিয়েটা ভাঙলো ? অনুরিমার মনে আবার তাদের বিয়ে নিয়ে কৌতূহল জেগে উঠলো। তার মন সুচরিতার জন্য আফসোস করতে লাগলো। নাকি আফসোসটা ছিল নিজের জন্য , সমীর কেন আদিত্যর মতো পারফেক্ট নয় ? কারণ তার চোখে আদিত্য এখন এক আদর্শ পুরুষ হয়ে উঠেছিলো , যে সুযোগ থাকলেও কোনো মেয়ের অনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করেনা, উল্টে তার যত্ন নিতে জানে।
 
পর্ব ২১
"আমি আর পারছি না আদিত্য......"
অনুরিমা এক এক করে নিজের ব্রা ও প্যান্টি খুলে উলঙ্গ হলো। তারপর শাওয়ার চালিয়ে গা টা ভালোমতো ধুলো। তোয়ালেটা দিয়ে ভালো করে নিজের ভেজা শরীরটা-কে মুছে সেই তোয়ালেটা-ই নিজের গায়ে জড়িয়ে নিলো , এমন ভাবে যেন তার বক্ষ ও নিম্নাঙ্গ দুটোই ঢাকা থাকে , অর্থাৎ ব্রা-কাপ্ ও প্যান্টির জায়গাটা। যেইভাবে আর কি মেয়েরা টাওয়েল গায়ে জড়ায়। বাথরুমের হ্যাঙারে তখন ব্রা ও প্যান্টিটা ঝুলছিলো। সেই দুটি সে হাতে নিলো। এবার সে দরজা খুলতে যাবে। তার বুকটা ধড়পড়িয়ে উঠলো। যতোই আদি সভ্য ভদ্র একটা ছেলে হোক না কেন , আদতে তো সে অনুরিমার কাছে একটা পরপুরুষই। ওর সামনে শুধু টাওয়েল পড়ে যেতে হেসিটেশন তো হবেই।

কিছুক্ষণ সে বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। তার পা কাঁপছিলো। কিভাবে সে আদিত্যকে এইভাবে ফেস করবে ? আদিত্যর মন যদি ডগমগিয়ে যায়। ঝোঁকের বশে নিজেকে সামলাতে না পেরে যদি উল্টোপাল্টা কিছু করে বসে তার সাথে ! কিন্তু সে কতোক্ষণই বা এইভাবে বাথরুমের ভেতর বন্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।

ঘর থেকে আদিত্যর হাঁক এলো , অনুরিমা তোমার হয়েছে , কফি তো ঠান্ডা হয়েগেলো। নার্ভাস হয়ে মুখ ফসকে অনুরিমা বাথরুমের ভেতর থেকে বলে উঠলো , "হ্যাঁ যাই। "

শিট ! সে কেন উত্তর দিলো ! ঠোঁট কামড়াচ্ছিল অনুরিমা। আদিত্যর কথার উত্তর দেওয়ার অর্থ ছিল অনুরিমার স্নান হয়ে গ্যাছে , এবার সে এক্ষুনি বাইরে আসবে। কিন্তু অনুরিমা যে এখন আসতে চাইছিলো না বাইরে , তাতে কফি ঠান্ডা হলে হোক ! সে আরেকটু সময় নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে চাইছিলো , কিভাবে আদিত্যকে ফেস করবে সে ব্যাপারে। কিন্তু হটকারিতায় "হ্যাঁ যাই " বলে ফেলাতে তাকে এখুনি বেড়োতে হবে। কফির জন্য নাহলেও , নিজের দৃপ্ততা দেখানোর জন্য। আসলে অনুরিমা চাইছিলো না যে আদিত্য জানুক সে কতোটা নার্ভাস এই সাদা টাওয়েল পড়ে। সি সুড্ লুক কনফিডেন্ট , যাতে আদিত্য চাইলেও তাকে কোনোভাবে ম্যানিপুলেট করতে না পারে , যদি সে চায় তা করতে।

পুরুষজাতি মানেই নারীলোভী। সে চায় নারীর উপর নিজের আধিপত্য কায়েম করতে , তা সে যেভাবেই হোক না কেন। যুগ যুগ ধরে তা হয়ে এসছে। তাই আদি ভালো ছেলে হলেও , তার কাছে সম্পূর্ণ সারেন্ডার করতে নারাজ অনুরিমা। কারণ আদি তার স্বামী নয়। সে তার স্বামীর চেয়ে হাজারগুণ ভালো হলেও সে একজন পরপুরুষই। আর সমীরের মধ্যে হাজার খামতি থাকলেও পতি পরমেশ্বরই হয়, এটা সে ভোলে নাই।

যাই হোক , অনেক ভেবে চিন্তে অনুরিমা বাথরুমের দরজাটা আস্তে করে খুললো। সাদা তোয়ালে জড়ানো এক তুলোর গজ বাঁশি রোল এর ন্যায় কোমল ও ধবধবে ফর্সা দেহখানি এক পা দু পা করে বাথরুম হইতে বেড়িয়ে আসছিলো। চুল থেকে জল টিপ্ টিপ্ করে ঘাড় হয়ে নদীর মতো আঁকা বাঁকা পথ নিয়ে দুই আবৃত দুধের মধ্যিখানের সুড়ঙ্গে (যাকে আমরা ক্লিভেজ বলি) ঢুকে যাচ্ছিলো। হয়তো সেই গতিপথ নাভিতে গিয়ে মিশবে বা আরেকটু এগিয়ে গিয়ে যোনিপথের উদ্দেশ্যে গমন করবে।

তার হাতে তার ব্রা ও প্যান্টিটি ছিল। সেগুলো সে মেলতে আসছিলো। সেদিন বোঝা গেলো যে ময়দার থেকেও নরম কোনো শ্বেতবর্ণের কিছু থেকে থাকে তাহলে তা হবে অনুরিমার মাখো মাখো দেহটি। অদ্ভুত কামদায়িনী লাগছিলো তাকে। আদিত্য কফি খাওয়ার জন্য তখন বিছানা ছেড়ে ডাইনিং চেয়ারে বসেছিলো। সুতরাং এবার সে অনুরিমার সামনাসামনি ছিল। অনুরিমাকে দেখছিলো কিভাবে সে বাথরুমের দরজা খুলে গুটি গুটি পায়ে তার পানে আসছে।

প্রথমে অনুরিমা নিজের ব্রা ও প্যান্টিটা-কে দড়িতে মেলে দিলো। তারপর আস্তে আস্তে ধীমে পায়ে লজ্জামিশ্রিত মুখ নিয়ে আদিত্যর সামনের চেয়ারে এসে বসলো, কফি খাওয়ার জন্য। অনুরিমা কফি কাপের মুখে ঠোঁট লাগিয়ে হালকা চুমুক দিতেই আদি বলে উঠলো , "তাহলে , সব কেমন চলছে তোমার ?"

- "সব বলতে ?"

- "এই .... তোমার হাসবেন্ড , তাঁর ফ্যান্টাসি , এইসব নিয়ে যে তুমি বেজায় খুব জর্জরিত , তা আমি বেশ বুঝি। তাই জিজ্ঞেস করছিলাম ......"

- "আমার কথা ছাড়ো , আগে তোমার কথা বলো। তোমার আর সুচরিতার সম্পর্কটা ভাঙলো কি করে ?"

- "তোমাকে তো তোমার বান্ধবী সব বলেইছে। আর কি জানতে চাও ?"

- "আমি বুঝতে পেরেছি যে একতরফা বিশ্লেষণ শুনে কখনোই কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসতে নেই। অপর পক্ষকেও সুযোগ দিতে হয় বিশ্লেষণের। আমি খুব লজ্জিত গাড়িতে ওভাবে ক্যাসুয়ালি তোমার আর সুচরিতার সম্পর্ক নিয়ে তুলোনা টেনে এনেছিলাম , সবটা না জেনেই। তাই আমি এখন তোমার ভার্শনটাও জানতে চাই। ....."

- "আমাদের বিয়ে ভাঙার কারণ জেনে তুমি কি করবে ?"

- "আদিত্য , আমি বিবাহীতা , নিজের স্বামীকে হারাতে ভয় পাই। আমি জানি সুচরিতা ও আমার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে , ও অতো সহজে মানিয়ে নিতে পারেনা। কিন্তু সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরও ওর মুখে তোমার অহরহ প্রশংসা শুনে আমি সত্যিই খুব বিস্মিত ! সুচরিতার মতো মেয়ে কারোর সম্পর্কে এতো ভালো কথা বলেনা , কিন্তু তোমার সম্পর্কে বলে। অথচ তুমি তার প্রাক্তন স্বামী , তোমাদের সম্পর্ক ভেঙে গ্যাছে। স্বভাবগত ভাবে ওর তোমার সম্পর্কে খারাপ কথা বলার কথা , কিন্তু এতো একেবারে উলটপূরাণ ! কিভাবে ??"

- "হা হা !! আগে বলো , সুচরিতা কি বলেছে আমাদের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া নিয়ে ?"

- "এটাই যে ওর মানিয়ে নিতে অসুবিধা হচ্ছিলো , কারণ ....... "

- "কারণ আমার মায়ের জন্য তো ? এবং খানিকটা আমার জন্য ? আমি আর মা দুজনে ওর পায়ে সাংসারিক শেকল পড়িয়ে রাখতাম , এই কথাই বলেছে তো ও ?"

- "হ্যাঁ , মানে সেরকমই ......"

- "এই এক কথা ও সবাইকে বলে বেড়িয়েছে , নিজের হীনমন্যতা-কে ঢাকতে। আসলে পুরুষদের যেমন মেল ইগো থাকে তেমন কিছু মেয়েদেরও নারীবাদী ইগো থাকে যা দিয়ে তারা নিজেদের দুর্বল ও স্পর্শকাতর বিষয়গুলো ঢাকতে চেষ্টা করে। সুচরিতাও সেটাই করার চেষ্টা করে। "

- "সুচরিতা যদি ঠিক না বলে থাকে , তাহলে আসল সত্যিটা কি ?"

একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে আদিত্য বলতে শুরু করলো , "বিয়ের পর থেকেই সুচরিতা কিরকম অন্যমনস্কা থাকতো। আমার কাছে আসতে চাইতো না। প্রথমে জিজ্ঞেস করলে কিছু বলতো না। পরে ধীরে ধীরে যখন ধাতস্থ হলো , তখন মনের কথা খুলে বললো। সুচরিতা কলেজ জীবনে মনে মনে একজনকে চাইতো। কিন্তু সেই মানুষটা মজেছিলো অন্য কারোর প্রেমে। রিতা-কে সে ভালো তো বাসতোইনা উল্টে ওকে সহ্য করতে পারতো না। কিন্তু তাও রিতা আড়াল থেকে তাকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবেসে গ্যাছে।"

আদিত্যর কথা শুনে অনুরিমা আকাশ থেকে পড়লো। সুচরিতার মনের গভীর কোণের এই গোপন সত্য তার জানা ছিলোনা। কলেজ জীবনে সে সুচরিতার সাথে অনেকটা সময় হোস্টেলে কাটিয়েছে , তবুও সুচরিতা কোনোদিনও তাকে জানতে দেয়নি এসব ! কে সেই ছেলেটা যে তার বান্ধবীর ভালোবাসা বুঝতে পারেনি ? অনুরিমা আরো বিস্তারিত ভাবে আদিত্যর কাছে সবকিছু জানতে চাইলো।

আদিত্য বললো , "আমি এর থেকে বেশি কিছু জানিনা। সেই ছেলেটা কে ছিলো , কোথায় থাকতো কিচ্ছু আমায় বলেনি সুচরিতা। শুধু এইটুকু বলতো যে সুচরিতা তাকে ভুলতে পারেনি , আর কোনোদিন পারবেও না। আমি জিজ্ঞেস করতাম ছেলেটা কোথায় থাকে বলো , আমি তোমাকে পৌঁছে দিচ্ছি তার কাছে , কিন্তু রিতা বলেছিলো আনফর্চুনেটলি সেই ছেলেটার বিয়ে হয়ে গ্যাছে , এবং সে সুখে শান্তিতে সংসার করছে। "

- "কিন্তু ও তো নিজের জীবনকে একটা দ্বিতীয় সুযোগ দিতে পারতো ? কেন সেই ব্যর্থ ভালোবাসাটা-কে বুকে নিয়ে আজও সে বয়ে বেড়াচ্ছে ? আপনি তো যথেষ্ট যোগ্য একজন ছেলে , হয়তো সুচরিতাকে ভালোও বাসেন। তাহলে কেন ওকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসছেন না ?"

- "আসলে ভালোবাসা নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করতে আমার ভালো লাগেনা। এটাকে মেল ইগো ভেবোনা। খানিকটা আত্মসম্মানে লাগে। তাছাড়া আমি যেটা বুঝেছি , মেয়েরা প্রথম প্রেমকে সহজে ভুলতে পারেনা , বা ভুলতে চায়না। এই দেখো না , তোমার প্রথম প্রেম তোমার স্বামী তোমার উপর এতো মানসিক অত্যাচার করছে , তাও তুমি একবারের জন্যও ওকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবছো ? কল্পনাতেও না !

- "মানসিক অত্যাচার ??"

- "তা নয় ? একটা মেয়ে তার স্বামীকে এতোটা ভালোবাসে , পরোয়া করে , তাও সেই স্বামীই নাকি তাকে অন্য কারোর সাথে...... না জানি আর কতো স্বামীরা এরকম সামাজিক ব্যাধিতে জর্জরিত হয়ে তোমার মতো মেয়েদেরকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারবে। "

আদিত্যর কথা শুনে অনুরিমা চুপ করে গেলো। তার মৌনতা দেখে আদি কিছুটা ঘাবড়ে গেলো। মনে মনে আশংকা করলো সে একটু বেশিই বলে ফেলেনি তো ! তাই নিজের বলে দেওয়া কথাকে প্রলেপ দেওয়ার জন্য বললো , "কিছু মনে করোনা , আমি ওইভাবে ঠিক বলতে চাইনি। আসলে আমি যদি তোমার স্বামীর জায়গায় থাকতাম তাহলে কোনোদিনও এধরণের চিন্তাভাবনা মনে পোষণ করতাম না। হয়তো সমীরের এসব ভাবনার পিছনে কোনো কারণ রয়েছে , যেমন ধরো অফিসে কাজের চাপ চলছে , তাই এরকম উদ্ভট চিন্তা মাথায় এসেছে ওনার। "

মৌনতা ধারণ করে থাকা অনুরিমা এবার বললো , "জানেন , এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি যাদের সাথে কথা বলেছি , তারা সবাই আমার বিরুদ্ধাচারণ করেছে , তা সমীর হোক , বা সুচরিতা বা ডাক্তার রায়। সবাই পরোক্ষভাবে এই ফ্যান্টাসির সাথে আমাকে আপোষ করতেই বলেছে। আপনি প্রথম যিনি আমার মতোই পুরো ব্যাপারটাকে নেতিবাচক দিক দিয়ে দেখছেন। আপনি ঠিক বলেছেন , সত্যিই এটা আমার উপর একটা মানসিক অত্যাচার। কিন্তু এর থেকে নিস্তারের পথ কোনো দেখতে পাচ্ছিনা ", এই বলে অনুরিমা মাথা নিচু করে বসে রইলো। সে ভুলে গেছিলো তার পরনে তখন টাওয়েল ছাড়া আর কোনো কাপড় ছিলোনা। ভেজা চুলগুলো পিঠের দিকে রাখা ছিল। সুতরাং যখন সে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে মাথা নিচু করে মাটির পানে চেয়েছিলো তখন স্পষ্টত তার বক্ষের খাঁজ অর্থাৎ ক্লিভেজ বেশ অনেকটা উন্মুক্ত হয়েগেছিলো , যা আদিত্যর নজর এড়ায়নি।

চোখের সামনে এরম দৃশ্য দেখলে যেকোনো পুরুষের শরীর প্রতিক্রিয়া দিতে শুরু করবে , সেটা স্বাভাবিক। আর এই স্বাভাবিক কাজটা আদিত্যর জন্য মোটেই স্বাভাবিক ছিলোনা। কারণ অনুরিমার মতো সেও তো স্রেফ একটা টাওয়েল জড়িয়ে বসেছিলো। ফলে অনুরিমার নরম দুগ্ধ বেষ্টিত ক্লিভেজ দেখে তার নিম্নাঙ্গ যেভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল তাতে আদিত্যর টাওয়েলের কোমড়ের বাঁধন খুলে যাওয়ার উপক্রম ছিল। আদিত্য তা কোনোমতে সামলে নিয়ে অনুরিমার মাথায় হাত রাখলো , তাকে মিথ্যে শান্ত্বনা দেওয়ার জন্য।

অনুরিমার উন্মুক্ত বক্ষ তাকে ক্রমশ আকর্ষিত করছিলো। তবুও আদিত্য নিজের মনের সমুদ্রে বাঁধ লাগিয়ে অনুরিমার কাছে গেলো বন্ধু হয়ে। সে চেয়ারটা স্বল্প টেনে আরো কাছে এসে অনুরিমার সামনে বসলো। যাতে শান্ত্বনা প্রদানের অছিলায় সে আরো ভালোভাবে অনুরিমাকে স্পর্শ করতে পারে। কি নরম শরীর তার ! না ছুঁয়েও চোখ জানান দিচ্ছে তা।

আদিত্য অনুরিমার মাথায় আলতো ভাবে হাত বোলাতে বোলাতে বললো , "চিন্তা করোনা অনু , সব ঠিক হয়ে যাবে। নিশ্চই কোনো না কোনো মুক্তির পথ খুঁজে পাবে তুমি। মেয়েরা যখন কাউকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতে শুরু করে তখন সেই মেয়ে সেই ভালোবাসার জন্য সব সীমা অতিক্রম করতে রাজি থাকে। তা সে মেয়ে অনুরিমা হোক , বা সুচরিতা। আমার আফসোস, সুচরিতাকে তো কোনোভাবে সাহায্য করতে পারিনি , শুধু ডিভোর্স দেওয়া ছাড়া। কিন্তু তোমার বেলায় আমি কথা দিচ্ছি , সাধ্য মতো চেষ্টা করবো তোমার পাশে থাকার , তোমার লড়াইয়ে শরিক হওয়ার। "

আদিত্যর মন ভোলানো কথাগুলো কিছুটা অযৌক্তিক হলেও তা তৎকালীন অনুরিমার দূর্বল চিত্তকে ভেদ করে নিজভাবে আবেগের বাসা তৈরি করে নিচ্ছিলো। অনুরিমা মুখ তুলে তাকালো। আদিত্যও তখন নিজের নজর অনুরিমার কোমল বুকের খাঁজ থেকে সরিয়ে নিলো। আদিত্যর চোখ তখন অনুরিমার চোখে এক চিলতে আশা খুঁজছিলো। কিছুক্ষণ স্থির থেকে একটা লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে আমাদের আদিত্য বললো , "কফিটা খেয়ে নাও , ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে যে। "

চোখের ঈশান কোণে জমা জলগুলো আঙ্গুল দিয়ে মুছে অনুরিমা কফির কাপটা হাতে তুলে নিলো। আদিত্যও একটু স্বাভাবিক হয়ে বসলো। ততোক্ষণে কিছুটা হলেও উত্তেজিত বাঁড়ার প্রসারণে লাগাম টানা গেছিলো, তাই অনুরিমা লক্ষ্য করেনি আদিত্যর নিম্নাঙ্গের শোচনীয় অবস্থা। নাহলে আদিত্যকে প্রচন্ড পরিমাণের এম্ব্যারেসমেন্টে পড়তে হতো। যাই হোক , অনুরিমা ও আদিত্য চুপচাপ নিজেদের কফি শেষ করলো।

এরপর আদিত্য একজন নারীর প্রতি যত্নশীল পুরুষের ন্যায় ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে ফের একবার অনুরিমার কেটে-ছিলে যাওয়া হাঁটুতে শুশ্রূষা করতে শুরু করলো। অনুরিমা প্রাথমিকভাবে বাধা দিলেও আদিত্য তা অগ্রাহ্য করে হাঁটু গেড়ে বসে নিজের মতো করে অনুরিমার ক্ষতে প্রলেপ দিতে লাগলো। অনুরিমার একদিক দিয়ে সেটা ভালোই লাগছিলো। একটু আদর , একটু যত্ন পেতে কারই না ভালো লাগে।

অজান্তেই আদিত্যর প্রতি অনুরিমার মন উষ্ণায়নভূক্ত হিমবাহ চেয়েও দ্রুত গতিতে গলতে লাগলো। প্রথমে তাকে বাড়িতে ড্রপ করার জন্য গাড়িতে তোলা। মাঝরাস্তায় তাকে একা না ফেলে যাওয়ার জন্য পুলিশের হাতে বন্ধক সাধের গাড়িটাকেও ত্যাগ করে দেওয়া। বৃষ্টিভেজা রাস্তায় একপ্রকার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার জন্য ওষুধ নিয়ে আনা এবং শুশ্রূষা করা। তাকে এক নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা। তার মনের কথা শোনা , বোঝা , এবং যত্ন নেওয়া। এসব তো কোনো পরপুরুষ করেনা , বরং কোনো রূপকথার গল্পের একতরফা প্রেমে নিমজ্জিত কোনো পাগল প্রেমিক করে থাকে তার এক্তিয়ারের বাইরে থাকা প্রেমিকার জন্য, যাকে পাওয়া অসম্ভব , তবুও তার জন্য তার পদতলে জীবন লুটিয়ে দেওয়া। একেই হয়তো বলে একতরফা প্রেম ! ভালোবাসা তো এখন শুধু শরীরের দেওয়া নেওয়া তে পরিণত হয়েছে।

আদিত্যও কি সেরকম এক একতরফা প্রেমের পাগল প্রেমিকে পরিণত হয়েছিলো ? Who Knows ..... তবে সেসব কিছু বিস্তারিতভাবে না ভেবে অনুরিমা শুধু আদিত্য কতৃক তার পায়ের শুশ্রূষা অনুভব ও উপভোগ করছিলো। মাঝে মাঝে আরামে তার চোখ বুজে আসছিলো , আবার মাঝে মাঝে ক্ষতে ওষুধের রিঅ্যাকশন বেশি হলে "উহ্হঃ .... আহ্হ্হঃ ....." করে নিজের ব্যাথা জানান দিচ্ছিলো। তখন আদিত্য আরো আলতো করে সেই জায়গাটা মালিশ করে দিচ্ছিলো। ফের আরামে অনুরিমার চোখ ঘোলাটে হয়ে আসছিলো। এরকম চক্রাকার ন্যায়ে অনুরিমার ইন্দ্রিয়তে কখনো ব্যাথা তো কখনো আরামের উপলব্ধি ঘটছিলো।

আদিত্যর মন তো খুব করছিলো। এটাই সুযোগ অনুরিমার দূর্বল মুহূর্তে তাকে কাছে টেনে নেওয়ার। কিন্তু তার মনুষ্যত্ব বারবার তার কামলালসা-কে হারিয়ে দিচ্ছিলো। কিছুক্ষণ পর অনুরিমার মেডিক্যাল ড্রেসিং শেষ হলো। আদিত্য ওকে বিছানায় গিয়ে পা ছড়িয়ে বসতে বললো। সেইমতো অনুরিমা উঠতে যাচ্ছিলো। কিন্তু আবার তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মেঝেতে পড়তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তখন ফের একবার ত্রাতা হয়ে দাঁড়ালো আদিত্য। কিন্তু এবার তাড়াহুড়োতে তাকে ধরতে গিয়ে তার তোয়ালের গিঁটে-তে টান মারলো। ব্যাস !! সঙ্গে সঙ্গে অনুরিমার টাওয়েল মেঝেতে পড়ে গেলো !

আদিত্য অনুরিমাকে মেঝেতে পড়া থেকে তো বাঁচিয়ে নিয়েছিলো , কিন্তু তার তোয়ালেটা-কে ধরতে পারলো না। আদিত্যর একটা হাত অনুরিমার পিঠে, আরেকটা কোমড়ে। অনুরিমা সম্পূর্ণভাবে এক্সপোসড্ , নগ্ন ! পুরো ব্যাপারটা অনুরিমার মস্তিষ্কে প্রসেস হতে কিছুটা সময় নিলো। তারপর যখন মস্তিস্ক মনকে বার্তা পাঠালো, "অনুরিমা চেয়ে দেখো , তুমি এখন নগ্ন , তাও এক পরপুরুষের সামনে ", তখন তো মন আর যায় কোথায় , মুখ দিয়ে বেড়িয়ে আসার উপক্রম !

মন তো বেড়োলো না , তবে আওয়াজ বেড়োলো ! অনুরিমা চিৎকার করে উঠলো। চিৎকার এতো প্রবল ছিল যে আদিত্য ভয় পেয়ে গেলো , পাছে কেউ যদি শুনে নেয়, তাহলে কি ভাববে ? একটা বিবাহীতা মেয়েকে হোটেলের ঘরে নিয়ে এসে সতীত্ব নষ্ট করছে ? কেউ জিজ্ঞেস করলে সরল অনুরিমা তো সোজা সত্যি কথা বলে দেবে আদিত্য তার কেউ নয় , তখন আদিত্য মরণ ফাঁসান ফাঁসবে ! তাই অনুরিমাকে কি করে শান্ত করবে সেটা বুঝতে না পেরে সে সোজা অনুরিমার মুখে নিজের মুখ ঢুকিয়ে দিলো !

অনুরিমার মুখ বন্ধ হয়েগেলো। আদিত্য অনুরিমার ঠোঁটে ঠোঁট ঢুকিয়ে চুষতে লাগলো যাতে অনুরিমার মুখ দিয়ে একটাও শব্দ চিৎকার-রূপে না বেরোয়। অনুরিমা যাতে আবার পড়ে না যায় তাই আদিত্য ওকে দু'হাত দিয়ে আরো জাপটে ধরলো। সেই কারণে অনুরিমা বেশি ছটফট করতে পারলো না। ফলে এই চুম্বন গভীরতর হলো, থামলো না , দীর্ঘ প্রসারিত হলো।

একটা সময়ে অনুরিমা ভুলেই গেলো সে অন্য এক পুরুষের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চুমু নিচ্ছে। মনের অবচেতনে অনুরিমার অবশিষ্ট ছটফটানিও কমে গেলো। শরীর একটু ঢিল দিলো, আলগা হয়ে পড়লো। পূর্ণ আত্মসমর্পণ যাকে বলে। এইরকম মুহূর্তের সদ্ব্যবহারে আদিত্যর বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি ঘটলো না। সে অনুরিমাকে আরো আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে চুমু খেতে লাগলো।

শরীরে শরীর ঘষা খাচ্ছিলো। ফলে এই প্রক্রিয়াতে আরো একটি দূর্ঘটনা ঘটে গেলো। কোমড় থেকে খসে আদিত্যর তোয়ালেটাও পড়ে গেলো মেঝেতে ! ভাগ্যচক্রে দুজনেই আদিম মানবে পরিণত হলো। আদিত্যর বাঁড়া খাঁড়া হয়ে তখন খাম্বা-তে পরিণত হয়েছে। হঠাৎ সেই খাম্বা-কে অনুরিমা নিজের যোনিদ্বারে অনুভব করায় তার বাস্তব চেতনা পূনরায় ফিরে এলো। বুঝতে পারলো ঘোরের মধ্যে সে কতো বড়ো মহাপাপ করতে যাচ্ছিলো। সঙ্গে সঙ্গে নিজের সর্বস্য পেশী শক্তি দিয়ে আদি-কে নিজের থেকে আলাদা করলো। আদিরও তখন শুভচেতনার উদয় হলো। অনুরিমা কিছু রিএক্ট করুক তার আগেই নিজে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে পড়লো।

অনুরিমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে বললো , "আই এম সরি অনুরিমা , আই এম রিয়েলি ভেরি সরি। আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিলোনা। আমি যা করেছি নিজের আর তোমার মান সম্মান বাঁচানোর জন্যই করেছি , কোনো দৈহিক লালসায় পড়ে নয়। "

অনুরিমা তখন কিছু শোনার মতো পরিস্থিতিতে ছিলোনা। সে সর্বপ্রথম মেঝে থেকে নিজের তোয়ালেটা নিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো। তারপর আদিত্যর দিকে পিঠ করে দাঁড়িয়ে রইলো। বোঝাতে চাইলো আদিত্যও যেন নিজের তোয়ালেটা জড়িয়ে নেয়। অনুরিমার ইঙ্গিত বুঝতে দেরী হলোনা আদিত্যর। সে ঝট করে নিজের তোয়ালেটা মেঝে থেকে তুলে কোমড়ে জড়িয়ে নিলো। তারপর আবার বলতে শুরু করলো , "তুমি হয়তো এখন আমার উপর রেগে আছো , বাট্ সুযোগ দিলে আই ক্যান এক্সপ্লেইন এভরিথিং। "

অনুরিমা চুপ করে রইলো। কোনো সাড়া শব্দ করলো না , নড়চড় করলো না। পিছন ফিরে স্থির দাঁড়িয়ে থাকলো। আদিত্য সেটাকে মৌনম সম্মতি লক্ষণম্ হিসেবে ধরে নিয়েই নিজের কার্যকলাপের জবাবদিহি দিতে শুরু করলো , " তুমি তখন এমনভাবে চিৎকার করে উঠেছিলে , যা শুনে হোটেলের লোকজন ছুটে আসতো। তখন সবথেকে বেশি সমস্যায় আমি পড়তাম। বন্ধ দরজার ভেতরে কি হচ্ছে তা না জেনে দরজা ভেঙে ঢুকে আসতে পারতো। তখন তারা তোমাকে আর আমাকে শুধুমাত্র টাওয়েল পরিধানে দেখে নানারূপ প্রশ্ন করতো। জিজ্ঞেস করতো আমাদের মধ্যেকার কি সম্পর্ক ? তখন তুমি কি উত্তর দিতে ? আমাকে তো আর স্বামী বলে পরিচয় দিতে না। লোকে ভাবতো আমি তোমাকে ইলোপ করে নিয়ে এসছি , আর এখন সুযোগের ফায়দা ওঠাচ্ছি, তাই জন্য তুমি আতঙ্কে চিৎকার করে উঠেছো। এরূপ মিসকন্সেপশন এর ফলস্বরূপ আমার কি অবস্থা হোটেলের স্টাফরা করতো তুমি ভাবতে পারছো? গণপিটুনি খেতাম। কেউ আমার কোনো এক্সপ্ল্যানেশন শুনতো না। তুমিও একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে। তাই তোমার চিৎকার তৎক্ষণাৎ বন্ধ করার আর কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে ফ্র্যাক্শন অফ সেকেন্ডের সিদ্ধান্তে তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে দিলাম। তারপর কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম। ভুলে গেলাম আমি কোথায় আছি , কার সাথে আছি। আসলে বহুকাল হয়েগেছে আমি কোনো নারীর স্পর্শ পাইনি। তবুও আমি জানি আমি সীমা লঙ্ঘন করেছি। তার জন্য তোমার কাছে কোটি কোটি বার ক্ষমা চাইতে আমি রাজি আছি। "

এই বলে আদিত্য অনুরিমার সামনে হাত জোড় করে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো , এটা বোঝানোর জন্য যে সে সত্যিই খুব অনুতপ্ত। অনুরিমা পিছন ফিরে তাকালো। দেখলো আদি হাঁটু গেড়ে মাথা নিচু করে তার সামনে বসে রয়েছে। এটা দেখে অনুরিমার মন একটু হলেও গললো। সে আদিকে উঠে দাঁড়াতে বললো। বাধ্য ছেলের মতো উঠে দাঁড়ালো , কিন্তু তার মস্তক এখনো অপরাধবোধে নিম্নমুখী ছিল। যা দেখে অনুরিমা বুঝলো আদিত্য সত্যিই খুব অনুতপ্ত। অনুরিমা গলা ঝেড়ে স্বাভাবিকভাবে আদিকে বললো তাকে আর অনুশোচনা বোধে ভুগতে হবেনা। ভুল বোঝাবুঝির কারণে একটা দূর্ঘটনা ঘটেই গ্যাছে। আদি চাইলে হাত দিয়ে তার মুখটা চেপে ধরতে পারতো। মুখের প্রয়োগ সে না করলেও পারতো।

আদিত্য পাল্টা যুক্তি দিয়ে বললো , তার দুটি হাত অনুরিমাকে বেষ্টন করে ছিলো , নাহলে যে অনুরিমা আবার পড়ে গিয়ে পায়ের বারোটা বাজাতো। অগত্যা তাকে বাধ্য হয়ে নিজ মুখগহ্বরের সাহায্য নিতে হয়েছে অনুরিমার তারস্বরে নির্গত আওয়াজকে প্রশমিত করতে। আদিত্যর কথায় সত্যি কোনো ফাঁক-ফোঁকড় ছিলোনা। তাই অনুরিমাও ব্যাপারটাকে নিয়ে বেশি জলঘোলা করলো না। একটা দুঃস্বপ্নের কিছু মুহূর্ত ভেবে ভুলে যেতে চাইলো।

আদিত্য তাকে বিশ্রাম নিতে বললো। তার পায়ের উপর দিয়ে অনেক ধকল যাচ্ছে , এখন ড্রেসিং করা হয়েছে , বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে পা ফুলে যেতে পারে। আদিত্যর কথা শুনে অনুরিমা বিছানার দিকে এগোলো। পাছে সে আবার পড়ে না যায় তাই আদিত্য তার হাতটা ধরলো। আদিত্যর এই ছোট ছোট বিষয়ে কেয়ারিং নেওয়া গুলো অজান্তে অনুরিমার মনে হালকা হালকা করে দাগ কেটে যাচ্ছিলো। সে আদিত্যকে ধন্যবাদ দিতে ভুললো না , তার পায়ে এতো সুন্দরভাবে ড্রেসিং করার জন্য। আদিত্যও স্পষ্ট জানিয়ে দিলো , সে অনুরিমার থ্যাংকস পাওয়ার জন্য বসে ছিলোনা। এটা তার বন্ধু হিসেবে দায়িত্ব ছিল যেটা সে পালন করেছে।

আদিত্য হাত ধরে অনুরিমাকে নিয়ে গিয়ে বিছানায় বসালো। পা টা ভালো মতো ছড়িয়ে দিয়ে তার নিচে বালিশ রাখলো। আরেকটা বালিশ অনুরিমার পিঠের পিছনে রাখলো হেলান দিয়ে বসানোর জন্য। একটা চেয়ার এনে বিছানার সামনে রাখলো , যেখানে বসে সে অনুরিমার সাথে কথা বলবে। সেইমতো সেই চেয়ারে নিজের পশ্চাদ ঠেকিয়ে আদিবাবু বসলেন।

অনুরিমা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। অনুরিমার নীরবতা আদিত্যকে চঞ্চল করে তুলছিলো। না জানি গোটা ঘটনার পর অনুরিমা কি ভাবছে তার সম্পর্কে ! আদিত্য নিজেকে দোষারোপ করে মনে মনে বললো, "ওহঃ মন , নিজেকে একটু নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারোনা ? মানছি, তোমার অনুরিমাকে ভালো লাগে , তাই বলে সুযোগ পেলেই নরম শরীরটার উপর দখল নিতে চাইবে ??"

অনুরিমাকে সে কি বলবে কিছু বুঝতে পারছিলো না। তবুও ইনিশিয়েট তো তাকেই নিতে হবে কথা বলার। তাই আর বেশি সময় নষ্ট না করে আদি বললো , "আমি জানি অনুরিমা তোমার খুব খারাপ লাগছে। তুমি আমাকে খারাপ ভাবছো। কিন্তু বিশ্বাস করো সেই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমার আর কিছু করার ছিলো না। তুমি এতো ভয় পেয়েগেছিলে যে তোমাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে থামানো যেতো না। তার উপর তুমি আমার বাহুতে আবদ্ধ ছিলে , বেশি কিছু হলে যদি আবার পড়ে যেতে , সেই ভয়েই অগত্যা ........"

"আমি বুঝতে পেরেছি আদি , তোমাকে আর ফার্দার কিছু এক্সপ্লেইন করতে হবেনা ", আদিত্যকে থামিয়ে অনু বললো। তারপর সংযোজন করলো , "আমি ভাবছি অন্য কথা ......."

"কি কথা অনু ?", বিস্ময়সূচক মুখ নিয়ে আদি জিজ্ঞেস করলো।

অনুরিমা প্রথমে একটু আমতা আমতা করে হেসিটেট ফীল করছিলো বলতে , কিন্তু আদি একটু কথার চাপ দেওয়ায় অবশেষে অনু সিদ্ধান্ত নিলো সে আদিত্যকে কথাটা বলবে। কি কথা ?? আসুন জানি ......

- "দেখো আদি তুমি তো মোটামুটি জানো আমার ব্যাপারটা, আমার সাথে গত কয়েকদিন ধরে কি কি হচ্ছে সেইসব। সুচরিতার কথামতো আমি সমীরকে নিয়ে একটা সেক্সওলজিস্ট দেখাই। উনি আমাকে অনেক কিছু অ্যাডভাইস করেছেন। কিন্তু ......."

- "কিন্তু কি অনুরিমা ?"

- "আমি বুঝতে পারছিনা কোথা থেকে শুরু করবো , কিভাবে বলবো তোমায় ......"

- "আচ্ছা ঠিক আছে , তোমাকে অতো চাপ নিতে হবেনা। আমি তোমার জন্য ব্যাপারটাকে একটু ইজি করে দিচ্ছি। তুমি বললে ডক্টর তোমাকে কিছু অ্যাডভাইস দিয়েছে। তুমি কি সেগুলো নিয়ে কিছুটা দ্বিধাভক্ত আছো ? মানে সেই অ্যাডভাইস গুলোই কি তোমার গলার কাঁটা হয়েগেছে ? না মানতে পারছো না ছাড়তে পারছো। ...."

- "এক্সাক্টলি ! তুমি ঠিক ধরেছো। ..এতোটা অ্যাকুড়েট হলে কি করে ? তুমি কি রাজীববাবু-কে চেনো ? চেনাটা অস্বাভাবিক নয় , সুচরিতার থ্রু দিয়েই তো তাকে পেয়েছি , সুচরিতার পরিচিত মানে তোমারও জানাশোনা হতে পারে। "

- "আমি ডক্টর রাজীবকে পার্সোনালি চিনিনা। থিয়েটার করার দরুন এক আধবার সাক্ষাৎ হয়েছিল তাও সেটা সুচরিতার মারফৎ। ব্যাস এইটুকুই , মুখ চেনা বলতে পারো, এর থেকে বেশি কিছুনা। আমি আসলে তোমার মুখভঙ্গি দেখে আর তোমার শব্দচয়নের মাধ্যমে আন্দাজ করতে পারলাম সমস্যাটা ঠিক কোথায়। থিয়েটার করি ম্যাডাম , আমরা লোকের চালচলন দেখেই তার ভেতরকার আত্মবিশ্বাসের পরিমাণ , সত্য মিথ্যা সব যাচাই করে নিতে পারি , তাহলে তোমার এইটুকু না বলা কথা বুঝবো না। "

- "সত্যি আপনি পারেন না বলা কথা বুঝতে ? আমি আসলে এই সকল কথা নিয়ে বাক্যালাপ করতে প্রচুর দ্বিধাবোধ করি। পরিস্থিতির চাপে পড়েই আমাকে অনেক অসহজ কাজ করতে হচ্ছে , যা আমার একদম পোষাচ্ছে না। "

- "আমি বুঝতে পারি অনুরিমা , কিন্তু তোমাকে তো একটু মেলে ধরতে হবে তোমার কথার সাজি। না বলা কথা বুঝলেও, আমি তো একেবারে অন্তর্যামী নই।"

- "ঠিক আছে , বলছি। ...... আসলে ডাক্তারবাবু আমাকে এক অদ্ভুত ব্যাপার সাজেস্ট করেছেন ......", এই কথা বলে অনুরিমা চুপ করে গেলো। তার মুখ দিয়ে যেন কথা বেরোচ্ছিলোনা , বা সংকোচে বেরোতে চাইছিলনা। আদিত্য আবার কোমল ভাবে কথার চাপ দিলো , "কি হলো অনুরিমা ? থেমে গেলে কেন ? কি সাজেস্ট করেছে ডক্টর রাজীব ? বলো .... আমার কাছে কুন্ঠা বোধ করোনা। নির্দ্বিধায়ে, যা মনে আছে সব বলে ফেলো ...." , এই বলে আদিত্য আলতো করে নিজের হাতটা অনুরিমার হাতে রাখলো, তাকে ভরসা দেওয়ার জন্য এবং তার মনে ভরসার জায়গাটা নেওয়ার জন্য।

অনুরিমা একটু শান্ত স্বাভাবিক হয়ে বললো , "প্রথমে রাজীব আমাকে ছেলে বন্ধু বানাতে বলে। তাঁর মতে আমি সংসারের জাঁতাকলে এতোটাই পিষে গেছি যে বাস্তব পৃথিবীর সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই জন্মায়নি। এই পৃথিবী আগের থেকে অনেক বদলে গ্যাছে , এখন মন দেওয়া নেওয়া হয়না , শরীরের সওদা হয়। যাক গে ..... ওনার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আমার বদলে যাওয়া সমীরকে বোঝার জন্য আমাকে নাকি খোলা আকাশে শ্বাস নিতে হবে। নতুন বন্ধু বানাতে হবে। ছেলে বন্ধু বানাতে হবে। অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলে তাদের চাওয়া পাওয়া, মন, সেসব বুঝতে হবে। তবেই নাকি আমি সমীরের মনের অজানা দিকগুলো-কে ঠিকমতো এক্সপ্লোর করতে পারবো। "

- "তারপর?"

"তারপর আর কি .... আমি সমীরের সামনেই রাজীবকে জিজ্ঞেস করলাম , কোথায় পাবো ছেলে বন্ধু ? আমার তো জীবনে একটাই ছেলে রয়েছে , সে হলো সমীর। স্বামীও সে , সখাও সে। তখন রাজীব সমীরের উপস্থিতিতেই বন্ধুত্বের প্রস্তাব দিয়ে বসে। সবচেয়ে খারাপ লাগলো যখন আমার সেই সখা , সেই স্বামীও তাতে সম্মতি প্রদান করলো। সমীর কি ভুলতে বসেছে আমার জীবনে তার গুরুত্বটা ? কে জানে ......", এই বলে কিছুটা থেমে একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো অনুরিমা।

অনুরিমার চোখ ছলছল করছিলো। এক দু'ফোটা গড়িয়েও পড়লো। আদি সঙ্গে সঙ্গে সেই অশ্রুস্রোতে নিজের আঙ্গুলের বাঁধ লাগালো। তার গাল স্পর্শ করে জল মুছে দিলো। তা দেখে দূর্বল হয়ে থাকা অনুরিমা আবেগের জোয়ারে ভেসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। এই করুণ দৃশ্য আদি সহ্য করতে পাচ্ছিলো না। সে সঙ্গে সঙ্গে অনুরিমাকে জড়িয়ে ধরলো। তার মাথায় হাত বোলাতে লাগলো। অনুরিমাও এক লহমায় সব ভুলে গেলো। আদি যে তার কাছে সামাজিকভাবে একজন পরপুরুষ, সেটা তার মাথা থেকে বেরিয়ে গেলো। কারণ সে তখন একটা আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিলো , যার তলায় শুয়ে সে তার ভরাট মনকে একটু বিশ্রাম দিতে চাইছিলো।

অনুরিমা আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো , আর ততোই আদিত্য অনুরিমার মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো। একটা সময়ে দুজন দুজনকে জাপটে ধরলো। আবেগের সুনামি এসেছিলো যে।

হঠাৎ অনুরিমা বলে উঠলো , "কিস মি আদি। ....."

আদিত্য চমকে গেলো ! সে ঠিক শুনলো তো ! নিশ্চিত হওয়ার জন্য জিজ্ঞেস করলো , "ওয়াট ??"

- "আমি আর পারছি না আদিত্য।..... ডক্টর রাজীব আমাকে সাজেস্ট করেছে সমীরের সামনে কোনো পরপুরুষকে চুমু খেতে। সেটা দেখে যদি সমীর বিচলিত হয় , তবে হয়তো ওর কাকোল্ড ফ্যান্টাসির ভূত মাথা থেকে নামতে পারে। কিন্তু আমি তো আনকোড়া , নিজের স্বামী ব্যাতিত আগে অন্য কোনো ছেলের সাথে সেভাবে মিশিনি। আমি কি করে অতো সহজে সেই কার্যসিদ্ধি করতে পারবো ? তাই রাজীব আমাকে তার সাথে রিহার্সাল করতে বলেছে , যাতে আমি এই বিষয়ে পটু হয়ে সমীরের সামনে নিজের কলার প্রদর্শন করতে পারি। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে , রাজীবের সাথে রিহার্সালের বিষয়টা যদি কোনোভাবে সমীর জানতে পারে , তাহলে সে আমায় ভুল বুঝতে পারে। এই আশংকার কথা আজ তোমার প্রাক্তন স্ত্রী-কে বলায় সে আমায় অ্যাডভাইস দিলো আমি যেন অন্য কোনো এক পুরুষের সাথে কিসিং রিহার্সালটা করি। তারপর ফাইনাল ডে তে রাজীবের সাথে সমীরের সামনে সেটা মঞ্চস্থ করি। রাজীব ব্যাতিত অন্য পুরুষ বলতে আমি এখন তোমাকেই চিনি। তাই আমার চিৎকার থামাতে তুমি যখন আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁটটা লাগিয়ে দিলে তখন ৫ শতাংশ হলেও আমার তাতে সায় ছিল , কারণটা এই জন্যে। তাই আমাদের সেই চুম্বন কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। আমি সেই কারণে তোমার সাথে রিহার্সালটা করতে চাই। কেন জানিনা তোমাকে আমার খুব বিশ্বস্ত মানুষ বলে মনে হচ্ছে , যাকে চোখ বন্ধ করেও বিশ্বাস করা যেতে পারে। এই অল্প সময়ে তুমি আমার বিশ্বাসের জায়গাটা নিতে পেরেছো আদি ......"

এই বলে আদিত্যকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তার ঠোঁটের সাথে অনুরিমা নিজের ঠোঁট মিশিয়ে নিলো !
 
wow just superb update 💚💚💚
অসাধারণ লেখা হচ্ছে দিদি প্লিজ আপনার লেখা চালিয়ে জান ।
অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো আপনার জন্য 💐
 

Users who are viewing this thread

Back
Top