What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

স্বামীর কল্পনা স্ত্রীয়ের যন্ত্রণা (3 Viewers)

৪ (চার) ----

সুচরিতা অনুর হাত সরিয়ে জিজ্ঞেস করলো , "কি হয়েছে রিমা , আমাকে বল। "

অনুরিমার চোখ ছল ছল করছিলো। সে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো , "আমি কিভাবে তোকে বলবো বুঝতে পারছি না রে। আমার খুব লজ্জা করছে। সমীর ইস টোটালি চেঞ্জড নাও। "

"শোন্ রিমা , আমাকে বলা মানে তোর নিজের আয়না কে বলার সমান। কাম অন রিম্স , we used to be best buddies during our college days । তুই কি সব কথা ভুলে গেছিস। আমরা একে অপরের কাছ থেকে কোনো কথা গোপন করতাম না। we shared everything. তাহলে আজ কি হলো তোর ?"

"প্রমিস কর , তুই এই কথা গুলো কাউকে বলবি না। "

"আমি কাকেই বা বলতে যাবো বল। "

"ইদানিং সমীর খুব অদ্ভুত চিন্তা করতে শুরু করেছে। আমি ভাবতেও পারিনি , ও কখনো আমার সম্পর্কে এরকম ভাবনা পোষণ করবে ! "

"কি ভাবছে ? কি ওর ভাবনা ?"

"ওর একটা ফ্যান্টাসি রয়েছে। .."

"কি ?"

অনুরিমা গলার আওয়াজ নিচু করে বললো , "তুই কাকোল্ড সম্পর্কে শুনেছিস ?"

"আঃহ্হ্হঃ। ..", সুচরিতা অবাক হয়ে মুখে হাত দিয়ে বসলো, তারপর বললো , "সিরিয়াসলি ! সমীর সত্যি এখন এসব ভাবছে ?"

অনুরিমা মাথা নিচু করে বসে রইলো। সুচরিতা কিছুটা সেকেন্ড নিজেকে সামলে নিয়ে অনুরিমার হাত ধরে জিজ্ঞেস করলো , "তা তুই কি ভাবছিস ওর এই ফ্যান্টাসিটা কে নিয়ে ?"

"মানে ? তুই বলতে কি চাইছিস ?", অনুরিমা হঠাৎ সুচরিতাকে ঝাঁঝিয়ে কথাটা বললো।

"রিল্যাক্স , এতো উত্তেজিত হোসনা। একটু প্র্যাক্টিক্যাল হও। দেখ এটা তো সত্যি যে সমীরের মাথায় এই কথাটা এসছে , তুই নিজেই সেটা বললি। আর তোর রিঅ্যাকশন দেখে বোঝাই যাচ্ছে যে তুই এসব কথা নিজের কল্পনাতেও আনতে পারিস না। তাই তো ? "

অনুরিমা চুপ করে রইলো। সুচরিতা বললো , "এবার বল , সমীর কি তোকে ফোর্স করছে এসবের জন্য ?"

"নাহঃ , ও এই কথাটা শুধু একবারই তুলেছিল। তারপর আমি এমন অশান্তি করেছি যে দ্বিতীয়বার বলার সাহস পায়নি আর। "

"ব্যাস , তাহলে তো ঝামেলা মিটেই গেলো। "

"কিন্তু , তারপর থেকে ....."

"তারপর থেকে কি ?"

"তারপর থেকে আমাদের সম্পর্কের তার টা কেমন জানি কেটে গ্যাছে মনে হচ্ছে। ও ভয়ে একথা আর তুলছে না ঠিকই , কিন্তু আমি বেশ বুঝতে পারছি , এই ব্যাপারটা ও এখনো নিজের মাথা থেকে নামাতে পারেনি। আর এতে মনে মনে ও অশান্তিতে ভুগছে , আর আমিও। আমাদের মধ্যে এখন বেশ কয়েকদিন ধরে ঠিক মতো কথাও হচ্ছেনা। "

"তাহলে তুই ওর সাথে কথা বল। বলে দ্যাখ ওর ভেতরে এখন কি চলছে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কোনো ব্যাপার নিয়ে টানাটানি চললে সেটা কে ঝুলিয়ে রাখতে নেই। আমাকে তো দেখছিস , আমি ঘর পোড়া গরু। "

সুচরিতার কথা শুনে অনুরিমা ঠিক করলো যে সে আজই নিজের স্বামীর সাথে বসবে , এবং বসে কথা বলে সবকিছু ক্লিয়ার করে নেবে। সেই মতো রাতে অনুরিমা সমীরের কাছে গেলো , এবং ওদের কথোপকথন শুরু হলো।

"কি ভেবেছো ? মাথা থেকে ভূতটা নেমেছে তোমার ?"

"তুমি কিসের কথা বলছো ?"

"বুঝতে পারছো না , তোমার সেই ফ্যান্টাসির কথা বলছি। "

সমীর প্রথমে ভাবলো অনুরিমা কে কি জবাব দেবে সে। তারপর ঠিক করলো যে যা হওয়ার দেখা যাবে , কিন্তু সে নিজের কাছে এবং নিজের স্ত্রীয়ের কাছে সৎ থাকবে। তাই সে বললো , "দেখো অনুরিমা , আমি জানি আমার এসব জিনিস ভাবা অপরাধ। কিন্তু আমি তো শুধু এটা তোমাকেই বলেছি , আর কাউকে তো নয়। আমাদের বিয়ের প্রায় এক দশক হয়ে গেছে। আমরা দুজনেই সংসারের নিত্যকার ঝুট ঝামেলার মধ্যে ফেঁসে আছি। তারপরও যেটুকু সময় পাই, আমি যদি ভুলবশত সে সময়ে তোমায় নিয়ে অন্য কিছু ভেবেও থাকি , তাতে আমি কি খুব বড়ো অপরাধ করে ফেলেছি ?"

"তুমি বুঝতে পারছো না , তোমার এই ভাবাটা কতোটা বিষাক্ত ভাবনা ? এরকম কেউ ভাবে নিজের স্ত্রীকে নিয়ে ? ছিঃ। "

"তুমি কি এখন আমাকে ঘেন্না করতে শুরু করেছো ?"

"করবো না ? নিজেকে কোথায় এনে নামিয়েছো তুমি নিজেই সেটা দেখো , এবং বোঝার চেষ্টা করো। "

"অনু , এটা শুধু আমার একটা ফ্যান্টাসি , সেক্সউয়াল ফ্যান্টাসি। "

"ফ্যান্টাসি মানে তো কল্পনা , আর কল্পনা মানে ভাবনা। তুমি আমাকে অন্য কারোর সাথে ভেবেছো ! এটা কি করে ভাবতে পারো তুমি ? আমি তোমার স্ত্রী সমু। নিষিদ্ধ পল্লীর কোনো পতিতা নই। "

"অনু , তুমি কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছো ! তুমি এসব কি বলছো ?"

"তাহলে আর কি বলবো , বলো ? তুমি হয়তো মনে মনে চেয়েইছো আমাকে অন্য কারোর সাথে শুতে দেখতে ! নিজের কল্পনাকে বাস্তবে রূপায়ণ হতে দেখতে। একবার ভেবে দেখো সমু , কোনো স্বামী কি এটা চাইতে পারে ? তার উপর তুমি এতো পোসেসিভ স্বামী ! এখন কোথায় গেলো সেইসব পোসেসিভনেস তোমার ? সমু আমার দিকে চেয়ে দেখো , আমি তোমার স্ত্রী , অনুরিমা বসু মল্লিক , এই মল্লিক পরিবারের বউ , সমীর মল্লিকের স্ত্রী। আমি কোনোদিনও নিজের স্বামী ব্যাতিত অন্য কারোর কথা নিজের কল্পনাতেও আনিনি। কলেজ লাইফে প্রথমবার প্রেমে পড়ি , তাও সেটা তোমারই প্রেমে। তুমি আমার প্রথম এবং শেষ প্রেম। তুমি ছাড়া আর অন্য কোনো পুরুষ আমার জীবনে কোনোদিনও আসেনি, আর আসবেও না। এই কথাটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও তোমার। "

এই বলে অনুরিমা মুখ ঘুরিয়ে ঘুমোতে চলে গেলো। সেদিন সমীরও কিছু বললো না আর। সেই রাতটাও স্বামী স্ত্রীর মধ্যেকার অমীমাংসিত ঝামেলার সাক্ষী হয়ে থেকে গেলো।

অনুরিমা ঠিক করলো সে সুচরিতার সাথে আবার দেখা করবে , এবং এই বিষয় নিয়ে কথা বলবে। কারণ এই কথা তো সে আর অন্য কাউকে বলতে পারবে না। একমাত্র সুচরিতাই আছে যাকে সে শেয়ার করতে পারবে।

বিকেলে অনুরিমা গেলো সুচরিতার সাথে দেখা করতে নন্দনের কাছে মোহরকুঞ্জে। সুচরিতা একটা কাজে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে এসছিল। যেমনটা আগে বলেছি ডিভোর্সের পর সুচরিতা এখন স্বাধীন ঝাড়া হাত-পা হয়ে যাওয়া একজন নারী। চাকরির সাথে সাথে সে টুকিটাকি শিল্প-সাহিত্য নিয়েও চর্চা করতে থাকে। যাই হোক , দুই বান্ধবীতে আবার বসলো গল্প করতে।

"কি রে , হঠাৎ করে এতো জরুরি তলব ? আমি যখন দেখা করতে বলি তখন তো নিজের সংসারের হাজার একটা বাহানা দিস। শশুর-শাশুড়ি বাড়িতে থাকবে না , তিন্নির টিউশন আছে , সমীরের এই হয়েছে , ওই হয়েছে , আরো কতো কি। আর এখন ? আমি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে এসছিলাম , একটা এক্সহিবিশন ছিল। পুরোটা না দেখেই বেরিয়ে এলাম , তোর জন্য , তোকে টাইম দিয়ে রেখেছিলাম বলে। "

"আই এম সরি রে ", এই বলে অনুরিমা মাথা নিচু করে চোখের জলটা মুছে নিলো।

"হেই , কি হয়েছে তোর ? সব ঠিক আছে ? আরে আমি তো জাস্ট এমনি বললাম , কিছু মনে করিসনা প্লিজ। তোর জন্য তো আমার জান হাজির , মাই ডার্লিং !"

"কিচ্ছু ঠিক নেই রে !"

"তুই কি সমীরের সাথে সেই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলেছিলিস ? আই মিন ওর সেই ফ্যান্টাসি-টা নিয়ে ?"

"হুমঃ। .."

"তা কি হলো , তারপর ?"

"কি আর হবে ?"

"ও কি এখনো চায় এসব করতে ?"

"মুখে কিছু বলছে না , তবে ওর হাব-ভাব দেখে কেন জানিনা আমার সেরকমই কিছু মনে হচ্ছে। "

"তা তুই কি ঠিক করলি ? "

"মানে ?"

"মানে , তুই কি ওর ফ্যান্টাসিটা কে এনকারেজ করবি ?"

"তুই কি পাগল হয়েছিস ? আমি এসব কথা নিজের দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারিনা ! হাও কুড ইউ সে দিস ?"

"দেখ তুই হয়তো ভাবতে পারিস না , বাট অনেকে ভাবে , এবং ইমপ্লিমেন্টও করে। "

"কি বলছিস তুই এসব !"

"ওই জন্যই বলি ডার্লিং , ঘর সংসার থেকে একটু বেরো , বেড়িয়ে দুনিয়াটা কে দেখ। এটা এখন সোশ্যাল মিডিয়ার এক ভার্চুয়াল দুনিয়া। এই সমাজে এখন অনেক কিছু হয় , লোক চক্ষুর আড়ালে। "

"সে যাই হোক না কেন , আমি ওসবের মধ্যে একদম নেই। "

"তা তুই নাই বা থাক, কিন্তু জানতে তো কোনো অপরাধ নেই। "

"তুই হেয়াঁলি না করে , সোজাসুজি বলবি , এক্সাক্টলি কি বলতে চাইছিস। "

"খুব সিম্পল। তোরা একটা সেক্সওলজিস্ট এর সাথে কনসাল্ট কর। দেখ তুই চাসনা এসব করতে , সমীর মনে মনে হয়তো চায় , কিন্তু ভয়ে তোকে খোলাখুলিভাবে বলতে পারছে না। এভাবে মনে মনে দ্বন্দ্ব চললে তো তোদের স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের মধ্যে তো ফাটল ধরে যাবে , সেটা নিশ্চই তুই চাইবি না। তোকে একটা ডিসিশন নিতে হবে। হয় তুই সমীরের ফ্যান্টাসিটা কে অ্যাপ্রুভ করে সেটা কে সত্যি করবি , আর নতুবা সমীরকে ওই ফ্যান্টাসির মোহঃ মায়া থেকে সরিয়ে আনবি। আমি জানি তুই সেকেন্ডটাই করার চেষ্টা করবি। প্রথম অপশনটা তোর সামনে রাখা বৃথা। তবে যেটাই হোক না কেন , বোথ অফ ইউ শুড হ্যাভ কনসাল্ট উইথ আ সেক্সওলজিস্ট ফর দিস পারপাস। আমার এক বন্ধু সেক্সওলজিস্ট , নাম ডক্টর রাজীব রায় , আমাদেরই বয়সী। আমি ওর নাম্বার তোকে দিচ্ছি। তুই বললে আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিতে পারি। "

"রাজীব রায় , ছেলে তো। ওকে কি করে বলবো সব। "

"কাম অন অনুরিমা , সেক্সওলজি বিভাগে তুই দেশে ক'জন মহিলা ডাক্তার কে পাবি বল তো ? আর সে তো তোর পরিচিত নয় , তোরা যাবি নিজেদের সেক্সউয়াল প্রবলেম নিয়ে কথা বলতে , ও ডক্টর , ওর এটাই পেশা , এইসব সমস্যা নিয়ে ডিল করা। সো অতো হিচকিচাস না। "

"কিন্তু সমীর রাজি হবে ? "

"আলবাত হবে। এখন তুই ডমিনেটিং পজিশনে আছিস , আর ও নিজের মরমে মরছে। তুই যদি এখন ওকে চাঁদেও যেতে বলিস , ও তোর সাথে সেখানেও যেতে রাজি হয়ে যাবে। শুধু বলিস না , আমি তোকে ডাক্তারের নম্বরটা দিয়েছি। বলবি তুই ইন্টারনেট থেকে সার্চ করে পেয়েছিস। আমিও রাজীবকে বলে রাখবো যে ও যেন সমীরের সামনে আমার নাম না নেয়। আমি জানি সমীর আমাকে পছন্দ করেনা , সেই কলেজ এর টাইম থেকেই। আমি আসলে ঠিক ওর টাইপের মেয়ে নই , তাই ওর চোখে আমি সবসময়ে একটা বাচাল , উৎশৃঙ্খল মেয়ে ছিলাম , এবং অ্যাম প্রিটি সিওর এখনও ওর ভাবনাটা আমার প্রতি ওরকমই রয়েছে। আসলে এতে আমি সমীরের দোষ দেখিনা, এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের জন্য কিছু গতে বাধা নিয়ম রয়েছে , যেগুলো আমি কোনোদিনই মানিনি। তাই বেশিরভাগ পুরুষেরই চক্ষুশূল আমি , তা সে সমীর হোক বা আমার স্বামী আদিত্য , সরি প্রাক্তন স্বামী। "
 
গল্পগুলোর কি আর শেষ হবে না পাঠকদের আর কতো অপেক্ষায় রাখবেন । এমন হলে গল্প লেখার দরকার কি ভাই
 
অসাধারন গল্প, পরের পর্বের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই অপেক্ষায় আছি, আশা করি শীঘ্রই পুনরায় কলম ধরবেন আর আমরাও আপনার লেখা আবার পড়ার সুযোগ পাব।
 
কবে আসবে গল্প গুলো ।পছন্দের গল্প গুলো শেষ না হয়েই বন্ধ হয়ে যায় লেখন তার লেখা বন্ধ করে দেয়
 


বাড়ি ফিরে অনুরিমা ভাবতে লাগলো কিভাবে সে সমীর কে বলবে ডাক্তার দেখানোর কথাটা। সমীর ওকে ভুল বুঝবে না তো ? সে তো নিজেও জানেনা সেক্সওলজি টা ঠিক কি, খায় না মাথায় দেয় ? কোনোদিনও তো জানার দরকারই পড়েনি না ! অনুরিমা তাই সমীর অফিস থেকে আসার আগে নেটে একটু রিসার্চ করে নিলো সেক্সওলজি , এবং সেক্সওলজিস্ট সম্পর্কে। সমীর বাড়ি ফিরলো। অনুরিমার সাথে সে সংসার করছে প্রায় দশ বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেলো। তাই অনুরিমার মুখে প্রশ্নের ভাঁজ সে দেখতে পারে , বুঝতে পারে যে অনুরিমার কিছু জিজ্ঞাস্য আছে তার কাছে। সে তাই নিজে থেকেই অনুরিমা কে জিজ্ঞেস করলো , "কিছু বলবে ?"

"হ্যাঁ , ওই আর কি। "

"তা বলো। .."

"তুমি আগে ডিনার করে নাও , তারপর শোয়ার সময়ে বলবো। "

"আচ্ছা , ঠিক আছে। "

ডিনারের পর সমীর জানতে চাইলো অনুরিমার কাছে , তার কি বলার আছে। অনুরিমা ঘুরিয়ে সেক্সওলজিস্টের কথা তুললো।

"সমু , তুমি এটা ভালো মতোই বুঝতে পারছো যে বিগত কয়েকদিন ধরে আমাদের মধ্যে কোনো কিছু ঠিক চলছে না। আর তা কেন সেটাও তুমি জানো। "

"হুমঃ। .."

"তা এটার তো কোনো একটা সলিউশন বের করতে হবে। এভাবে তো চলতে পারেনা। "

"কি সলিউশন বলো ?"

"দেখো সমু , কিছু মনে কোরোনা , তবে আমার ধারণা এটা তোমার একপ্রকার মানসিক সমস্যা। এর একটা ট্রিটমেন্ট হওয়ার দরকার। রাগ কোরোনা , আমি তোমাকে পাগল বলছি না , আর তোমাকে আমি সাইক্রেটিস্ট এর কাছেও নিয়ে যাবো না। আমি ভাবছি একটা সেক্সওলজিস্ট কে দেখানোর কথা। আশা করবো , তুমি এতে না করবে না। "

"যা ভালো বোঝো , করো। আমার কোনো আপত্তি নেই। "

সমীর যে এতো সহজে রাজি হয়ে যাবে সেটা অনুরিমা ভাবতে পারেনি। সুচরিতা ঠিকই বলেছিলো , এখন সে ডমিনেন্ট পজিশনে আছে আর সমীর সাবমিসিভ। অনুরিমা সুচরিতা কে জানালো সমীর রাজি আছে। সুচরিতা সেই মতে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিলো। উইকেন্ডে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া ছিল যাতে সমীরের সুবিধা হয়। সুচরিতা অনু কে জানালো ডক্টর রায় এর চেম্বার হাজরা মোড়ে। ঠিকানাটা পাঠিয়ে দিলো।

শনিবার বিকেলে ছিল অ্যাপয়েন্টমেন্ট। সময় মত অনুরিমা আর সমীর হাজির ডক্টরের চেম্বারে। ডাক্তারের রুমের বাইরে শুধু একজন লেডি অ্যাটেনডেন্ট বসে ছিল। আর কোনো পেশেন্ট পার্টি ছিলোনা। গুপ্তরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে সচরাচর তো মানুষ যেতে চায়না , তাই একজন সেক্সওলজিস্টের প্রাইভেট চেম্বারে শুধু নির্জনতা ভীড় করে।

সুচরিতা আগে থেকে অনুরিমাকে বলে দিয়েছিলো , অ্যাপয়েন্টমেন্ট-টা সে অনুর নামেই করেছে। তাই অনু লেডি অ্যাটেনডেন্ট এর কাছে গিয়ে নিজের নাম বললো। সমীর ভাবলো অনুই অ্যাপয়েন্টমেন্ট-টা নিয়েছে , তাই হয়তো নিজের নামটা দিয়েছে। ওদিকে সুচরিতা নিজের ডাক্তার বন্ধুকে বলে রেখেছিলো যে অনুরিমার হাজবেন্ডের সামনে সে যেন তার নাম না নেয়। ওকে বুঝিয়ে রেখেছিলো তার আর অনুর স্বামীর মধ্যেকার সাপে-নেউলের সম্পর্কের ইকুয়েশনটা। লেডি অ্যাটেনডেন্ট অনু ও সমীরকে বসতে বলে চেম্বারের ভেতরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর বেড়িয়ে এসে বললো , "যান আপনারা। "

অনু ও সমীর ভেতরে ঢুকলো। দেখলো তাদেরই সমবয়সী একজন লোক , বয়স ৩৭-৩৮ হবে , দেখতে মোটামুটি , গায়ের রং তামাটে মতন। কিন্তু আমি ডাক্তারের শারীরিক বর্ণনা কেন দিচ্ছি ? সে তো শুধু ওদের ট্রিটমেন্ট করবে , শলা-পরামর্শ দেবে , তাই না ? দেখা যাক , কি লেখা আছে নিয়তি তে।


ডক্টর রাজীব রায়ের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো , যখন সে প্রথম ঝলকে অনুরিমা কে দেখলো। মনে মনে ভাবলো, "কি অপূর্ব সুন্দরী মহিলা , না জানি ঈশ্বর কতোটা সময় নিয়ে একে বানিয়েছে ! যেমন মুখশ্রী , তেমন শারীরিক গঠন। এক কথায় , লা জবাব।" ডক্টর রায়ের ঘোর ভাঙলো সমীর বললো , "আসবো? ...."

"হ্যাঁনঃ। .... হ্যাঁ হ্যাঁ , আসুন আসুন। " , ডক্টর রায় নিজেকে সামলে নিয়ে বললো।

ডক্টর রায়ের এরূপ চাউনি টা অনু বা সমীর কেউই লক্ষ্য করেনি। আসলে তারা দুজনেই খুব নার্ভাস ছিল , কিভাবে একজন অজানা তৃতীয় ব্যক্তিকে নিজেদের বৈবাহিক জীবনের সমস্যার কথা বলবে ! এটা ভেবেই একটু অন্যমনস্ক ছিল তারা। তাই তাদের নজরটা ডক্টর রায়ের কু'নজরের উপর ঠিক পড়েনি।

ডঃ রায় -- বসুন।

অনু ও সমীর চেয়ার টেনে বসলো।

"বলুন কি সমস্যা ?"

সুচরিতা ওদের সমস্যার ব্যাপারে আগে থেকে ডঃ রায়কে কিছু বলেনি। স্বামী স্ত্রীর সমস্যা তাদের মতো করে তারাই শুধু বলতে পারবে , তাই জন্য। কিন্তু চেম্বারে অনু সমীর বুঝে পাচ্ছিলো না , কে প্রথমে বলবে , কার প্রথমে বলা উচিত , এবং সর্বোপরি কিভাবে বলবে ? ওদের হেজিটেশন দেখে রাজিব বললো , "সমস্যাটা ঠিক কার ? আপনার ? নাকি আপনার ?"

অনু ইতঃস্ততভাবে হাত দেখিয়ে সমীরের দিকে ইশারা করলো। ডঃ রাজীব বুঝলেন সমস্যাটা সমীরের। এটাও বুঝলেন যে তারা দুজনই খুবই সংকোচ বোধ করছেন নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে। তাই তিনি ঠিক করলেন এক এক করে দুজন কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। তিনি অনুকে বাইরে গিয়ে বসতে বললেন। অনু সেইমতো চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেলো।

"এবার বলুন , কি সমস্যা ? বাই দা ওয়ে , আপনার নামটা ?"

"সমীর মল্লিক। "

"আচ্ছা তো সমীর বাবু , এবার নিঃসংকোচে সব কথা গুলো বলে ফেলুন দেখি। লজ্জা করবেন না একদম। জানেন না , লজ্জা ঘেন্না ভয় , তিন থাকতে নয়। "

"আমি জানিনা ব্যাপারটা কিভাবে বলবো , বা বোঝাবো। "

"এমনভাবে বলুন , যেন নিজের ছায়া কে বলছেন ও বোঝাচ্ছেন। "

সমীর মাথা নিচু করে বসে রইলো। রাজীব এক গ্লাস জল সমীরের দিকে এগিয়ে দিয়ে সেটা পান করতে বললো। সমীর এক ঢোঁকে পুরো গ্লাসটা শেষ করে দিলো। দিয়ে মুখ মুছে বললো , "আমার মনে হয় , আমি খুব খারাপ একজন স্বামী। "

"আর সেটা কেন মনে হয় আপনার ?"

"আমি মনে মনে অনেক খারাপ চিন্তা ভাবি। আমি চাইনা ভাবতে , তবুও সেটা চলে আসে আমার কল্পনায়। আমি চাইলেও সেটাকে অ্যাভয়েড করতে পারিনা। "

"তা সেই খারাপ চিন্তাটা কি শুনি ?"

সমীর একটু থেমে বললো , "মাঝে মাঝে কল্পনাতে নিজের স্ত্রীকে অন্য কারোর সাথে ভেবে পেলি। মানে ......., আপনি বুঝতে পারছেন তো আমি কি বলতে চাইছি ?"

"হুমঃ। .... তা সেসব ভেবে আপনার রাগ হয় , না ভালো লাগে ?"

"আগে রাগ হতো , এখন কেন জানিনা ........ "

"ভালো লাগে , তাই তো ?"

সমীর নিম্নস্বরে বললো , "হুমঃ। ...."

"বুঝলাম। আপনার স্ত্রী নিশ্চই এসব চায়না। আর সেই জন্যই সে আপনাকে এখানে নিয়ে এসছে। কিন্তু সবচেয়ে বড়ো প্রশ্নটা হলো এখন আপনি কি চান ? আপনি কি মনে করেন , এটা আপনার একটা মানসিক অসুস্থতা , নাকি ওয়াইল্ড ফ্যান্টাসি ?"

"সেটা তো আপনি ভালো বলতে পারবেন , এটা আসলে কি !"

"দেখুন , সবটাই পার্সপেক্টিভের উপর ডিপেন্ড করে। আপনি ব্যাপারটা কে কিভাবে দেখছেন। সবটাই আপেক্ষিক। খানিকটা অর্ধেক ভর্তি জলের গ্লাসের মতো , একদিক দিয়ে দেখলে মনে হবে অর্ধেক পূর্ণ , অপরদিক দিয়ে অর্ধেক খালি। "

"আপনি কি বলছেন আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। "

"মানে , এটা কে ফ্যান্টাসি ভাবলে ফ্যান্টাসি , অসুস্থতা ভাবলে অসুস্থতা। "

"তার মানে আপনি বলতে চাইছেন , আমার এইসব ভাবাটা অস্বাভাবিক নয় ?"

"আচ্ছা আগে এটা বলুন , আপনাদের বিয়ে কতদিন হয়েছে ?"

"প্রায় এগারো বছর। "

"আপনাদের সেক্স লাইফ কিরকম চলছে ?"

"মোটামুটি। .."

"মানে , অ্যাভারেজ , কখনো-সখনো বিলোও অ্যাভারেজ , তাই তো ?

"বলতে পারেন। "

"সপ্তাহে কতোবার মিলিত হন ?"

"ঠিক নেই। "

"আপনার অন্য কোনো সম্পর্ক আছে , এক্সট্রা ম্যারিটাল ? "

"নাহঃ। "

"স্ত্রী কে সন্দেহ করেন ?"

"নাহঃ , ও সেরকম নয়। "

"তাহলে আপনার এই ফ্যান্টাসিটা এসছে আপনার ম্যাড়ম্যাড়ে সেক্স লাইফের জন্য। আপনার সেক্সউয়াল লাইফে আপনি খুব বোড়িং ফিল করছেন , তাই আপনি একটু অন্যরকম কিছু ভাবছেন। "

"হতে পারে। "

"আপনার স্ত্রী এই ব্যাপারে কি করে জানলো ? আপনি নিজে থেকে বলেছেন , নাকি উনি কোনোভাবে জানতে পেরে গেছেন ?"

"আসলে আমি বেশ কয়েকদিন ধরে এইসব কারণে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলাম , আমার স্ত্রী এর কারণ জানতে জোর করায় আমি বাধ্য হই স্ত্রী কে সবটা বলতে। তারপর থেকে আমাদের মধ্যে কোনোকিছু ঠিক নেই , সি ইস অফেন্ডেড অন মি। "

"আপনি কি কখনো ভেবেছেন , এই কল্পনাকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার কথা ?"

"হ্যাঁ ভেবেছি , কিন্তু অনুকে বলবো কিভাবে সেটা বুঝে পাইনি। "

"এখন স্ত্রীয়ের প্রতিক্রিয়া দেখে সেই ভাবনা থেকে সরে এসেছেন , নাকি এখনো সেটাকে পোষণ করে চলেছেন ? "

"কল্পনা করতে তো ভালোই লাগে , বাট সেটাকে বাস্তবের রূপ দেওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারিনা। "

"আপনি আমার কাছ থেকে কি চান ? আপনার স্ত্রীয়ের ইচ্ছা মতো আপনাকে এই সো কল্ড মানসিক অসুস্থতার থেকে বের করে আনি , নাকি আপনার কল্পনাকে বাস্তবে রূপায়িত করতে আপনাকে সাহায্য করি ?"

সমীর বুঝে পাচ্ছিলো না এর উত্তর সে কি দেবে ! সে নিজের সম্মানের কথা ভাববে , নাকি লাজ লজ্জা ত্যাগ করে নিজের কামের লালসায় বশীভূত হয়ে এক অজানা ব্যক্তির সাহায্য নেবে নিজের ফ্যান্টাসিকে পূরণ করতে ?
 


ডক্টর রাজীব রায় আবার এক গ্লাস জল সমীরের কাছে এগিয়ে দিলো , দিয়ে সমীরকে পান করতে বললো। নার্ভাসনেসের ফলে সমীরের গলা শুকিয়ে এসছিল। কিন্তু সে এবার অর্ধেক জল পান করে , গ্লাসটি কে অর্ধেক পূর্ণ করে রাখলো , বা বলতে পারেন অর্ধেক খালি করে রাখলো। ডক্টর রায়ের কথায় যে যেভাবে দেখবে, সবটাই তো আপেক্ষিক না !

সমীর কিছুক্ষণ ভেবে বললো , "আচ্ছা এটাও কি সম্ভব ?"

"কোন অসম্ভবের কথা বলছেন যেটা সম্ভব নয় ?"

"মানে আমার ফ্যান্টাসিটা কে বাস্তব রূপ দেওয়া। অনুরিমা সেরকম মেয়ে নয় , ওকে রাজি করানো আর বিন্ধ পর্বত টলানো দুটোই সমান , এক কথায় অসম্ভব ! আমি নিজের কামের তাড়নায় একবার ভেবেছিলাম ওর কাছে কথাটা পাতবো , পরে যখন কনফেস করতে হলো , তখন বুঝলাম কতো ভুল ছিল সেই ভাবনা। "

"ইচ্ছা থাকলে সবকিছুই সম্ভব সমীর বাবু। সঠিক পরিকল্পনা , এবং সঠিক টাইমিংয়ের দ্বারা যেকোনো নারীকেই যেকোনো কাজ করার জন্য ম্যানুপুলেট করা যায়। রাস্তাটা কঠিন খুব , কিন্তু অসম্ভব বলে পৃথিবীতে হয়না কিছুই , সবটা মানুষের কর্মক্ষমতার পরিধির উপর নির্ভর করে। আপনি আপনার পরিধির সীমানা যতো বাড়াবেন , ততোই অনেক অসম্ভব কাজ আপনার কাছে সহজলভ্য হয়ে উঠবে। নীল আর্মস্ট্রং নিজের পরিধি বাড়িয়ে চাঁদ অবধি পৌঁছে গেছিলেন , কেউ আগে সেটা ভাবতে পেরেছিলো কোনোদিনও ? "

"কিন্তু আপনি আমাকে এই অ্যাডভাইস দিচ্ছেন কেন ? আমার স্ত্রী তো আপনার কাছে আমাকে সম্পূর্ণ বিপরীত কারণে নিয়ে এসছিল। সেটা না করে উল্টে আপনি আমাকে এবং আমার ফ্যান্টাসিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন !"

"আমি আপনাকে আগেই জিজ্ঞেস করেছি, আপনি কি চান ? নিজের ফ্যান্টাসিটা কে পূরণ করতে , নাকি স্ত্রীয়ের কথা শুনে সেটা থেকে বেরিয়ে আসতে। দা চয়েস ইস ইয়র্স। "

"কিন্তু এই ফ্যান্টাসিটা কে বাস্তব রূপ দেওয়া কি ঠিক হবে ? আমাদের স্বামী স্ত্রী সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরী হবে না এতে ? কিছু কিছু জিনিস ভাবতে ভালো লাগে কিন্তু বাস্তবে তার কংসিকুয়েন্সেস কতোটা সাংঘাতিক হতে পারে তার আইডিয়া আমাদের কাছে সবসময়ে থাকেনা। "

"আমার মতে সবটাই পার্সপেক্টিভের উপর ডিপেন্ড করছে। অনেস্টলি স্পিকিং আমি আমার অনেক পেশেন্ট কাপাল কে দেখেছি যারা এই কাকোল্ড ফ্যান্টাসির পথ বেছে নিয়েছিলো নিজের সেক্সউয়াল লাইফ কে বেটার করার জন্য , এখন তারা দিব্বি সুখে আছে। তাদের মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং অনেক বেটার হয়েছে , সম্পর্কে একটা ট্রান্সপারেন্সি এসছে। তাই মাঝে মাঝে স্রোতের বিপরীতে গিয়েও সমস্যার সমাধান করা যায়। আপনার স্ত্রী যেটা কে সমস্যার মূল কারণ হিসেবে দেখছে , কে বলতে পারে সেটাই হয়তো সমস্যার একমাত্র সমাধান। "

"কিন্তু কার সাথে ? কে করতে পারে আমার ফ্যান্টাসিটা কে বাস্তবায়িত ? কার উপর বিশ্বাস করে এই চরম পদক্ষেপটা নেবো আমি ? "

"দেখুন কিছু মনে করবেন না , আপনার স্ত্রীকে আমি যতটুকু দেখলাম তাতে আমি বলতেই পারি যে আপনার স্ত্রী এক অপরূপ সৌন্দর্য্যে সমৃদ্ধ এক নারী , আপনার স্ত্রীকে পাওয়ার জন্য যে কেউ রাজি হয়ে যাবে। "

"কিন্তু সেই ব্যক্তিটি যদি পরে আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চায় ? সে যদি আমার স্ত্রীকে আমার থেকে কেড়ে নিতে চায় ? তখন ! "

"আপনার কি নিজের উপর একটুও বিশ্বাস নেই ? সাধারণত কাকোল্ড ফ্যান্টাসি সেইসব বিবাহীত পুরুষই করতে চায় , যাদের নিজেদের উপর ভরসা আছে , নিজের বৈবাহিক সম্পর্কের উপর বিশ্বাস আছে। তারা শুধু নিজের যৌনজীবনকে আরো উন্নত ও রঙিনতর করে তোলার জন্যই এই রাস্তাটা বেছে নেয়। "

"কিন্তু তার জন্য তো সেই তৃতীয় ব্যক্তিটি কে একটু ভরসাযোগ্য হতে হবে। আমার নিজের উপর বিশ্বাস ঠিকই আছে , কিন্তু একটা সোশ্যাল ইমেজ বলেও তো একটা বিষয় রয়েছে। সে লোকটি যদি এই বিষয়টা গোপন না রাখে , তাহলে ? পরে যদি ব্ল্যাকমেইল করতে চায়। "

"সেরকম প্রিকশন নিয়ে চলতে হবে। আর বিশ্বাসযোগ্যতার কথা বলছেন , টাকা দিলে বিশ্বাসযোগ্যতাও কিনতে পাওয়া যায়। এখনকার দিনে সবচেয়ে বেশি অবিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে আপনজনেরাই। কঠিন সময়ে তারাই সবার প্রথমে সরে দাঁড়ায়। একটা জিগোলো ছেলের কথার দাম আপনার যেকোনো আত্মীয়ের কথার থেকে অনেক বেশি। কেন জানেন ? কারণ সেই জিগোলো ছেলেটির অন্য কোনো স্বার্থ থাকেনা, সে শুধু নিজের পেশার দায়ে যেকোনো নারীর বিছানায় চলে যেতে রাজি হয়। দে আর ভেরি মাচ প্রফেশনাল। সো ইউ ক্যান ট্রাস্ট দেম। "

"তার মানে আপনি বলছেন এই কাজের জন্য আমাকে একটা জিগোলো ছেলে কে হায়ার করতে হবে ?"

"তারাই এই সমাজের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য পুরুষ শ্রেণী। "

"কিন্তু অনুরিমা রাজি হবে না , কিছুতেই হবে না। "

"আপনাকে অলরেডি বলেছি সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনামাফিক চললে কঠিন থেকে কঠিনতর পর্বতকেও ভেঙে রাস্তা তৈরি করা যায় , এটা তো তাও একটি মেয়ের কোমল হৃদয়। অসম্ভব কিছুই নয় , যদি ইরাদা মজবুত থাকে। "

"তাহলে আপনি আমাকে নিজের ফ্যান্টাসিটা কেই নিয়ে এগোতে বলছেন ? "

"নাহঃ , ভুল ভাবছেন। আমি একজন প্রফেশনাল সেক্সওলজিস্ট। আমার কাজ পেশেন্টের সমস্যার সল্যুউশন বের করা। আমি শুধু প্রাথমিক অবস্থায় সবকটা সম্ভাবনার দরজা খোলা রাখছি। আপনি আগে ভাবুন , নিজেকে প্রশ্ন করুন , আপনি কি সত্যিই চান আপনার ফ্যান্টাসিকে বাস্তবে রূপায়িত করতে , নাকি শুধু কল্পনায় এটা কে ভাবতে ভালো লাগে। আমি এখন একটু আপনার স্ত্রীয়ের সাথে কথা বলবো। আগে দুজনের পয়েন্ট অফ ভিউ শুনবো , তারপর একটা ডিসিশনে আসা যাবে। মনে রাখবেন আপনার লক্ষ্য এটা হওয়া উচিত নয় যে আপনার ফ্যান্টাসি পূরণ করা , আপনার লক্ষ্য এটা হওয়া উচিত আপনাদের সম্পর্কটা কে ঠিক করা। আর তার জন্য যদি ইন কেস এক আধবার আপনার কাকোল্ড ফ্যান্টাসিকে রিয়্যালিটির রূপ দিতে হয় , তখন সেটা আলাদা ব্যাপার। বুঝলেন ?"

সমীর গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে বললো , "হুমঃ। ......"

"তাহলে এবার আপনি একটু বাইরে বসুন , আর আপনার মিসেস এর সাথে একটু কথা বলে নিই। দাঁড়ান , আমি ডেকে নিচ্ছি। ..... মালিনী..... মালিনী....." , এই বলে ডক্টর রাজীব দুবার টেবিলের উপর রাখা নিজের বেলটা বাজালো। মালিনী সেই লেডি অ্যাটেন্ডারের নাম। সে চেম্বারে এলো তো রাজীব তাকে বললো বাইরে বসে থাকা সেই ম্যাডাম কে ডেকে নিতে। মালিনী বাইরে বেরিয়ে অনুরিমা কে ডাকলো। অনুরিমা চেম্বারের ভেতরে ঢুকলো। রাজীব এবার সমীরকে বাইরে বসতে বললো। সমীর উঠে দাঁড়ালো। পেছন ফিরে চেম্বারের বাইরে যেতে লাগলো। একবারের জন্য স্বামী স্ত্রীর মধ্যে শুধু চোখাচুখি হলো। তারপর সমীর বেরিয়ে গেলো। ডক্টর রাজীব অনুরিমা কে বসতে বললো। অনুরিমা চেয়ার টেনে বসলো। এবার ছিল অনুরিমার পালা, সমীরের ন্যায় ডক্টর রায়ের সামনে কাইন্ড অফ ইন্টারভিউ দেওয়ার।


অনুরিমা কে দেখে ডক্টর রায়ের মন আবার যেন কেমন বিচলিত হয়ে উঠলো ! কেন জানিনা ডাক্তারবাবু মনে মনে ভাবলেন এই নারীটি যদি ব্যাকলেস স্যাটিন শাড়ী পড়ে আসতো তাহলে কি দারুণই না লাগতো তাকে। কে জানে এটাও হয়তো এক ধরণের ফ্যান্টাসি , পরস্ত্রী কে নিজের মনমতো খোলামেলা পোশাকে কল্পনা করা।

"নমস্কার , আপনার নামটা ঠিক কি যেন ?"

"অনুরিমা বসু মল্লিক। "

"আপনার স্বামীর নাম কি ছিল যেন ?"

"সমীর মল্লিক। "

"উনি মল্লিক , আপনি বসু মল্লিক। বাপেরবাড়ি , শশুরবাড়ি উভয়ের পদবীই ক্যারি করছেন দেখছি। বাহঃ , ভালো। তার মানে আপনাকে তো একটু আধুনিকমনস্কাই বলতে পারি আমি। "

"শিক্ষিতা বলতে পারেন। আধুনিকমনস্কা কিনা , জানিনা। "

"দুটোই তো কয়েনের এপিঠ আর ওপিঠ , তাই না। .... তা শিক্ষিতা হয়েও আপনি এতো বাস্তববিমুখ কেন ?"

"মানে ? আমি ঠিক বুঝলাম না। "

"আপনি মনে করেন আপনার স্বামীর ফ্যান্টাসিটা আসলে একটা অসুস্থ মানসিকতার পরিচয়। .... "

"আমার মনে করাটা কি খুব ভুল ? একজন স্বামী কি করে চিন্তা করতে পারে তার স্ত্রীয়ের সম্পর্কে এধরণের কথা ?"

"নাহঃ নাহঃ , আপনার ভাবনাটা কে আমি পুরোপুরিভাবে ভুল আখ্যা দিচ্ছি না। আপনি আংশিক ঠিক। কিন্তু আপনাকে কয়েনের আদার সাইডটাও দেখতে হবে। একটু ভাবুন তো , আপনার স্বামীর মাথায় এরকম চিন্তা হঠাৎ করে এলো কেন ! "

"আমি ঠিক জানিনা। "

"সেটাই আপনাকে জানতে হবে , বুঝতে হবে। নাহলে এই সমস্যা থেকে বেড়োবেন কি করে ? তা এর সমাধান যাই হোক না কেন সেটাকে একসেপ্ট করতে হবে। এই জন্য আমি আপনাকে বাস্তববিমুখ বললাম। আপনি শুধু নিজের দিক থেকে ভাবছেন। মনে রাখবেন এই পৃথিবীতে সবকিছু ঘটে কোনো না কোনো কারণবশত। একটা কথা বলুন তো , আপনাদের সেক্স লাইফ কেমন ? লজ্জা পাবেন না। আপনার স্বামীর কাছ থেকে শুনে আমার কিছুটা আইডিয়া হয়েছে , কিন্তু আমি আপনার ভার্শান টা শুনতে চাই। "

"সমীর কি বলেছে এটা নিয়ে ? "

"সরি ম্যাডাম , সেটা আপনাকে বলবো না আমি। আপনাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে একটা বৈবাহিক টানাপোড়েন চলছে। ডাক্তার হিসেবে আমার কর্তব্য হলো সেটাকে সল্ভ করা। তাই আমি আপনাদের সাথে আলাদা আলাদা করে ব্যাপারটা কে ডিল করতে চাই। যেকথা গুলো আপনারা একে অপরকে বলতে পারছেন না , সেই কথা গুলো আপনারা আমার সাথে শেয়ার করুন। প্রাথমিকভাবে আপনার কথাও আমি ওনাকে বলবো না , ওনার কথাও আমি আপনাকে বলবো না। এবার বলুন , আপনার মতে আপনাদের সেক্স লাইফ কিরকম ? "

"আসলে বিয়ের প্রায় দশ বছর পর সেক্স জিনিসটা যেকোনো বিবাহীত দম্পতির কাছে সেকেন্ডারি হয়ে যায়। প্রায়োরিটির লিস্টে প্রথমে উঠে আসে সংসার , বাচ্চা-কাচ্চা এসব। তাই আমি সেইভাবে কখনো ভেবে দেখিনি এই ব্যাপারটা কে। হ্যাঁ , আমাদের মধ্যে প্রায়ই এসব হয় , মানে আমরা মাঝেসাঝেই কাছাকাছি আসি , তবে সেটা ভালোবাসার টানে , কামের টানে নয়। আকর্ষণ এক সাথে থাকতে থাকতে একটা সময়ে কেটে যায় , কিন্তু ভালোবাসা , সেটা চিরন্তন থেকে যায়। "


ডক্টর রাজীব হাঁ হয়ে অনুরিমার কথা শুনছিলো। সে অনুরিমার কথায় অবাক ও মুগ্ধ হয়ে গেছিলো। সে তার পেশাগত জীবনে এতোদিন অনেক পেশেন্ট পার্টির সাথে ডিল করেছে , অনেক বিবাহীত মহিলার সাথে কথা বলেছে , তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনেছে। কিন্তু অনুরিমার মতো মেয়ে সে আগে কখনোই দেখেনি। কি চমৎকার ভাবনা তার ! এরকম স্ত্রী কোনো পুরুষ পেলে তার সারাটা জীবন সফলভাবে উতরে যাবে।

রাজীব মনে মনে ভাবছিলো , ইসস , এরকম মেয়েকে যদি আমি নিজের স্ত্রী হিসেবে পেতাম , তাহলে আমি সারাজীবন তাকে মাথায় করে রাখতাম। এমাহঃ , আমি এসব কি ভাবছি , ছিঃ ছিঃ।

রাজীব ভাবনার সমুদ্রে হারিয়ে গেছিলো। অনুরিমা বেশ কিছুক্ষণ বসেছিল নিজের কথা শেষ করে। অপরদিক থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে সেই আবার বলে উঠলো , "ডক্টর রয়, কি হলো ! কিছু ভাবছেন ? আমি কি কিছু ভুল বললাম ? "

"হ্যাঁ , .... নাহঃ নাহঃ , আপনার মত কে ২০০ শতাংশ সাপোর্ট করি ", এই বলে রাজীবের চেতনা ফিরলো , এবং সে ভাবনার সমুদ্র থেকে ফের বাস্তবের বালিয়াড়ি তে এসে পড়লো।

"তাহলে বলুন , আমার এখন কি করণীয় ? কিভাবে আমি আমার স্বামীকে কল্পনার নরক থেকে বাস্তবের স্বর্গে ফিরিয়ে আনবো ? "

রাজীব মনে মনে ভাবছিলো , এই মোহঃ মায়াময়ী ভুবনভোলানি নারী যেকোনো পুরুষকেই বাস্তবের স্বর্গ থেকে কল্পনার নরকে পাঠিয়ে দিতে পারে। রাজীব নিজেও তো বারবার তাকে নিয়ে কুভাবনা পোষণ করে ফেলছে, যা তার ডাক্তারি জীবনে প্রথমবার হচ্ছিলো। আর সেই মেয়েই নাকি তাকে জিজ্ঞেস করছে কিভাবে সে নিজের স্বামীকে বাস্তবের মাটিতে নামিয়ে আনবে। আরে যাকে জিজ্ঞেস করছে , সেই ডাক্তার নিজেই তো অনুরিমার মায়াবী আকর্ষণে বারংবার বাস্তবের মাটি থেকে নিজের পা উঠিয়ে ফেলছে !

রাজীব তাও নিজেকে সামাল দিয়ে একজন পেশাগত ডাক্তার হিসেবে অনুরিমা কে বললো, "চিন্তা করবেন না , আমি আপনাকে পূর্ণ সহযোগিতা করবো। তবে আপনাকেও একটা কথা দিতে হবে , আপনি আমার সামনে কোনো ব্যাপার নিয়ে হেজিটেট ফীল করবেন না। অলওয়েজ বি ওপেন উইথ মি। খোলাখুলি ভাবে সবকথা শেয়ার করবেন , আর আমি যা অ্যাডভাইস দেব সেটা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার চেষ্টা করবেন। আপনি তো সুচরিতার বন্ধু। সুচরিতার সাথে আমার পরিচয় বেশ কয়েকদিনের। আসলে ওর মতো আমিও এক্সট্রা ক্যারিকুলাম অ্যাক্টিভিটি হিসেবে একটু আধটু থিয়েটার করি। সেখান থেকেই আমাদের আলাপ। সুচরিতা বলেছিল বটে যে আপনার স্বামী সমীর ওকে ঠিক পছন্দ করেনা , ও একটু আলাদা প্রকৃতির মেয়ে বলে। তাই সমীরবাবুর সামনে আমি ওর কথা তুলিনি। আপনি আমাকেও সুচরিতার মতো নিজের বন্ধু হিসেবে মনে করতে পারেন। "

"অনেক ধন্যবাদ ডাক্তারবাবু , আপনার কথা শুনে আমি এখন একটু নিজেকে আস্বস্ত বোধ করতে পারছি। "

"ডাক্তারবাবু নয় , বন্ধু বলে যখন ভেবেছি আপনাকে , তখন আপনি আমাকে শুধু নাম ধরে মানে রাজীব বলেও ডাকতে পারেন। "

"ঠিক আছে , রাজীব বাবু। "

"আবার বাবু কেন ? বাবু তো আমার সারনেম নয়। শুধু রাজীব। "

এই কথার পর দুজনেই হেসে ফেললো। থমথমে নার্ভাসনেসে পরিপূর্ণ পরিবেশটা একটু হলেও নরম ও ফ্রিই হলো।

"তাহলে কি বললাম , মনে থাকবে তো আপনার ? আমি যা বলবো , সেটাই করতে হবে , আর আমাকে সবকথা শেয়ার করতে হবে। "

"হুমঃ। .... ঠিক আছে ", অনুরিমা নিচু গলায় বললো।

"দ্যাটস লাইক এ গুড গার্ল। .. সরি , গুড ওয়াইফ। হা হা ...."

আবার একপ্রস্থ হাসি বিনিময় হলো দুজনের মধ্যে। রাজীবের সাথে কথা বলে অনুরিমার আড়ষ্টতা অনেকটা কেটে গেছিলো। রাজীব এরপর টেবিলের বেল বাজিয়ে ফের মালিনী কে ডাকলো। ডেকে বললো , সমীরকে ভেতরে ডাকতে। সমীর চেম্বারে এলো , মালিনী চেম্বার থেকে বেরিয়ে নিজের ডেস্কে গিয়ে বসলো।

রাজীব দুজনের সামনে বললো , "দেখুন , আপনাদের দুজনের কথাই আমি এক এক করে শুনলাম। আমাকে কিছু সময় দিন। আমি ভালোমতো ভেবে আমার ওপিনিয়ন এবং অ্যাডভাইস দেবো। আপনারা নেক্সট উইকে আসুন। ইন দা মিন টাইম , আপনারা যতোটা সম্ভব একে অপরের প্রতি স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুন। এই বিষয় নিয়ে একদম কথা বলতে হবেনা। অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। চিন্তা করবেন না , সমস্যা যখন আছে , তখন তার সমাধানও আছে। কথা দিচ্ছি , আপনাদের দাম্পত্য সম্পর্কে খারাপ কিছু ঘটবে না। যা হবে ভালোর জন্যই হবে , তা যাই ঘটুক না কেন। আপনারা এখন আসুন। আবার নেক্সট শনিবার ঠিক এই সময়ে দেখা হচ্ছে কেমন ! "

সমীর ও অনুরিমা রাজীবের সাথে নমস্কার বিনিময় করে উঠলো , এবং সেখান থেকে প্রস্থান করলো। বাড়ি ফেরার পথে ওদের মধ্যে সেরকম কোনো কথা হলো না। ডক্টর রায় যে ওদেরকে এই নিয়ে ফার্দার কথা বলতে বারণ করেছিল। বাড়ি ফিরে তারা রোজনামচার জীবনে ব্যাস্ত হয়েগেলো। কিন্তু দুজনেই মনের কোনো এক গভীর কোণ থেকে আগামী শনিবার এর দিনটা আসার নিবিড় অপেক্ষা করতে লাগলো।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top