What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

স্বামীর কল্পনা স্ত্রীয়ের যন্ত্রণা (1 Viewer)

পর্ব ৭

বেহালার বাড়িতে বসে ডক্টর রাজীব রায় অনুরিমার কথা ভাবছিলো। ভাবছিলো ওদের সমস্যার কথা। খাতা পেন নিয়ে বসে এক এক করে সমীর ও অনুরিমার কথা গুলো মনে করে করে নোটডাউন করছিলো , এবং তাদের সমস্যার key-point গুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলো। রাজীব কিছুটা দোটানায় পড়ে গেছিলো। একদিকে সমীরের সুপ্ত বাসনা ছিল, কাকোল্ড ফ্যান্টাসি , অপরদিকে অনুরিমার নিঃস্বার্থ আদর্শবাদিতা। রাজীব এখন কোন দিকে যায় ?

ভাবতে ভাবতে রাজীবের চোখ লেগে আসছিলো। তাই সে ওয়াশরুমে গেলো স্নান করে ফ্রেশ হতে। শাওয়ারের নিচে যখন সে উলঙ্গ হয়ে দাঁড়ালো তখন হঠাৎ তার অনুরিমার কথা মনে পড়ে গেলো। কল্পনায় সে দেখলো অনুরিমা সাদা একটি স্লীভলেস নাইটি পড়ে আপন মনে সমুদ্রের পাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ।

বলেছিলাম না , পরস্ত্রী কে মনের মতো পোশাকে কল্পনা করাটাও এক ধরণের ফ্যান্টাসি। রাজীব আর নিজেকে বিরত রাখতে পারলো না অনুরিমার কথা ভেবে হস্তমইথুন করা থেকে। ফ্যানার মতো বেড়িয়ে এলো বীর্য তার লিঙ্গ থেকে , আর সেই সাদা বীর্যের প্রতিটি কণায় যেন কাল্পনিক কলম দিয়ে লেখা ছিল শুধু একজনের নাম , অনুরিমা

ডক্টর রায়ের তখন শরীরটা একটু হালকা অনুভব হচ্ছিলো। ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে সে আবার বসলো নিজের কাজে, তার পেশেন্ট পার্টি সমীর ও অনুরিমার সমস্যার কাঁটাছেড়া করতে।

ওদিকে অনুরিমা ভাবছিলো এরই মধ্যে একদিন সে সুচরিতার সাথে দেখা করবে। ডাক্তারের সাথে নেক্সট অ্যাপয়েন্টমেন্ট আসতে দেরি আছে , সেই আবার শনিবার। এর মধ্যে একবার নিজের বান্ধবীর সাথে এবিষয়ে শলা-পরামর্শ যদি করে নেওয়া যায় আর কি। ডাক্তারের সাথে কনসাল্ট করার আইডিয়া টা তো সুচরিতাই দিয়েছিলো। তাই অনুরিমা সুচরিতাকে নিজের প্রবলেম-শ্যুটার বলে মনে করতে শুরু করেছিল। অনুরিমার কথায় সেই সপ্তাহে একদিন সুচরিতা মিট করলো সাউথ কলকাতার একটা ক্যাফে তে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিলো ইনক্লুডিং ডক্টর কনসালটেশন। হটাৎ সেই ক্যাফেতে এসে হাজির আদিত্য রায়চৌধুরী , সুচরিতা সেনগুপ্তের প্রাক্তন স্বামী।

অকস্মাৎ দেখাতে দুই প্রাক্তন একে অপরের সাথে সৌজন্য বিনিময় করতে ভুললো না। সম্পর্ক নাই বা থাকতে পারে , তাই বলে কি মিনিমাম ভদ্রতাটুকু থাকবেনা , সেটা কি হয়। সুচরিতা আদিত্যর সাথে অনুরিমার পরিচয় করিয়ে দিলো। প্রথম দেখাতেই অনুরিমা আদিত্যর মনে জায়গা করে নিলো গোপনে। সত্যি , অনুরিমার মধ্যে এমন কি আকর্ষণ রয়েছে , যার ফলে যেকোনো পুরুষই প্রথম দেখায় তার উপর ফিদা হয়ে যায় !

বেশ কিছুটা সময় নিয়েই আদিত্য অনুরিমার সাথে হ্যান্ডশেক করলো , যা সুচরিতার চোখ এড়ালো না। অনুরিমা এসব ছোট ছোট ব্যাপার গুলো কে অতো ডিপলি অবজার্ভ করেনা।

সেদিন অনুরিমা একটি ওয়াইন কালার এর শাড়ী পড়েছিল , যা দেখে আদিত্যর মধ্যে ওয়াইন এর নেশা ছড়িয়ে যাচ্ছিলো। আদিত্য সেখানে কিছু কলিগের সাথে দেখা করতে এসেছিলো। কিছুক্ষণ কথা বলার পর আদিত্য সেখান থেকে চলে যায়। সুচরিতা ও অনুরিমার মধ্যেকার কথা সেদিনের মতো শেষ হয়ে এসেছিলো , তাই তারা ক্যাফে থেকে প্রস্থান করলো।

অনুরিমা বাড়ি গিয়ে দেখলো আদিত্য তাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে , এবং মেসেজে লিখেছে "হাই , দিস ইস আদিত্য , আজকে ক্যাফেতে দেখা হলো , সুচরিতার এক্স। "

সুচরিতার প্রাক্তন স্বামীর এহেন হটাৎ মেসেজ ও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল। ফেসবুকে সে অনুরিমাকে খুঁজে পেলো কি করে ? অনুরিমা আদিত্যর প্রোফাইলে গিয়ে দেখে তাদের মিউচুয়াল ফ্রেন্ড এ সুচরিতা আছে। অনু মনে মনে ভাবলো ভারী অদ্ভুত মেয়ে তো এই সুচরিতা। এখনো নিজের প্রাক্তন স্বামীর সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছে ! ক্যাফেতেও দেখলাম খুব ভালোভাবে কথা বলছিলো , দেখে কেউ বলবে না ওরা এক্স ম্যারেড কাপল , মনে হবে যেন বন্ধু !

যাই হোক , অনুরিমা ভাবলো সুচরিতা যখন এতো easily আদিত্যর সাথে মিশছে , তখন সুচরিতারই সুবাদে ওর প্রাক্তন স্বামীর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করা যেতেই পারে , তবে সে আদিত্যর মেসেজের কোনো রিপ্লাই দিলো না।

এদিকে সমীর ডক্টর রাজীবের পরামর্শ অনুযায়ী চলছিলো। অনুরিমার সাথে ফ্যান্টাসি নিয়ে কোনো কথা বলছিলোনা , যা কথা হচ্ছিলো ওদের মধ্যে তা সবই সাংসারিক। এরকম চলতে চলতে পরের শনিবার চলে এলো। দুজনে ফের হাজির হাজরার ডক্টর রাজীবের চেম্বারে।

ডঃ রায় -- "তা বলুন , কেমন কাটলো এই সপ্তাহটা আপনাদের ?"

সমীর -- "ওই যেমন আর চার-পাঁচটা সপ্তাহ কাটে। "

ডঃ রায় -- "এর মধ্যে কখনো শারীরিক মিলন হয়েছে ?"

সমীর মাথা নিচু করে অনুরিমার সামনে জবাব দিলো , "নাহঃ , মানে আপনিই তো বলেছিলেন না এসব বিষয় নিয়ে এই এক সপ্তাহ কোনো মাথা না ঘামাতে। "

"ওহঃ , কাম অন সমীর বাবু , আমি আপনাদের কাকোল্ড ফ্যান্টাসি নিয়ে কোনোরকম কথা বলতে বারণ করেছিলাম , সেক্স করতে বারণ করিনি ", সমীরের ভাবলেশহীন এরকম অযৌক্তিক ব্যাখ্যা শুনে ডঃ রায় খানিকটা ইরিটেট হয়ে কথাটা বললেন। অনুরিমাও সমীরের উপর খানিকটা বিরক্ত হলো। সেও ভাবলো যে তার স্বামী দিন দিন বড্ড বেশি বোধবুদ্ধিহীন সম্পন্ন কার্যকলাপ করছে বা ভাবছে। ধীরে ধীরে অনুর অজান্তেই তার মনে তার স্বামীকে নিয়ে এক অদ্ভুত বিতৃষ্ণা জমছিলো , যা পরে গিয়ে হয়তো এক ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে !

অনুরিমা একবার বিরক্তিভরে সমীরের দিকে তাকালো। সমীরেরও নিজের ষ্টুপিডিটির উপর একটু লজ্জা বোধ হলো।

ডঃ রায় -- দেখুন সমীরবাবু আমি একজন সেক্সওলজিস্ট। লোকের সেক্সউয়াল সমস্যা নিয়ে আমি ডিল করি। আর আপনাদের মধ্যে যদি সেই সেক্সউয়াল সম্পর্কটাই না থাকে তাহলে আমি কি করে আপনাদের সমস্যার সমাধান করবো।.......

ডঃ রায় ফারদার কিছু বলতে যাবে তার আগে মাঝপথে ডঃ রায় কে থামিয়ে অনুরিমা বললো , "একটা কথা ক্লিয়ার করে দিতে চাই , সমস্যাটা আমাদের নয় , সমস্যাটা ওর (সমীর কে দেখিয়ে অনু বললো) । আর তাই জন্য আমরা আপনার কাছে এসছি। "

-- "সমস্যাটা সমীরবাবুর হতে পারে কিন্তু তার সাথে তো আপনিও ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছেন। আপনার সহযোগিতা ছাড়া তো সমাধান সম্ভব নয়। সমীরবাবু না হয় আমার কথার ভুল ব্যাখ্যা করে আপনার সাথে এই ক'দিনে একবারও মিলিত হয়নি , কিন্তু আপনি ? আপনি নিজে থেকে কেন উদ্যোগ নিলেন না মিলিত হবার ?"

ডঃ রায়ের কথা শুনে অনুরিমা চুপ করে গেলো। এবিষয়ে এবার তার একটিও বাক্য খরচা করার মতো কোনো জায়গা ছিলোনা। ডঃ রায় কমপ্লিটলি শাট হার মাউথ বাই হিস্ ওয়ার্ডস।

ডঃ রাজীব রায় তারপর আরো বললেন , "আমি যতদূর বুঝেছি , আপনি একজন খুবই লাজুক প্রকৃতির নারী। কিন্তু নিজের স্বামীর সামনে কিসের লজ্জা ! কেন স্বামীর সাথে আপনি খোলাখুলিভাবে যৌনতা নিয়ে আলোচনা করতে পারেন না ? "

"আসলে এই বিষয়ে আমি বড্ড বেশি আনাড়ি। এত বছরের দাম্পত্য জীবনে আমরা শারীরিকভাবে মিলিত হয়েছি অনেকবার , কিন্তু সেসব নিয়ে বিশেষ আলোচনা করিনি। এসব দিক দিয়ে আমার চাহিদা খুব একটা বেশি নয়। "

"এটা আপনার ভুল ধারণা। প্রত্যেক মানুষেরই , বিশেষ করে বিবাহিত মানুষেরই যৌনচাহিদা অপরিসীম থাকে। কেউ সেটা কে দমিয়ে রাখে , কেউ সেটা কে বেশি গুরুত্ব দেয়না , কেউ বা পরিস্থিতির সাথে আপোষ করে নেয়। আপনার ক্ষেত্রে কোনটা হয়েছে , সেটা সময়ই ঠিক বলে দেবে। আপাতত আসি আসল সমস্যার কথায়।..... দেখুন আপনারা দুজনেই এখন একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে বাস করছেন। একজন নর্থ পোলে রয়েছেন তো আরেকজন সাউথ পোলে। এবার দুজনকেই একটা মধ্যস্ততায় আসতে হবে, অর্থাৎ সামহোয়্যার বিটউইন দা লং লাইন। "

"এর মানে ?", সমীর জিজ্ঞেস করলো।

"মানে ধরুন আপনার ও আপনার স্ত্রীয়ের চিন্তাধারাটা কে যদি কোনো রুট ডেস্টিনেশন দিয়ে তুলোনা করি তাহলে আপনি রয়েছেন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে আর আপনার স্ত্রী রয়েছে শিয়ালদাহ স্টেশনে। সমস্যাটা হচ্ছে , মুখে যতই বলুন , সত্যিটা হলো যে আপনিও শিয়ালদাহ আসতে চাইছেন না , আর আপনার স্ত্রী অনুরিমাও নিউ জলপাইগুড়ি যেতে চাইছেন না। তাহলে উপায় হলো একটাই......"

"কি ???? ", সমীর ও অনুরিমা দুজনেই একসাথে জিজ্ঞেস করে উঠলো।

"দুজনকেই নিজ নিজ স্টেশন ছেড়ে মাঝামাঝি কোনো স্টেশন যেমন - ফারাক্কা জংশন, স্টেশনে আসতে হবে। "

"মানে ??"

"শিয়ালদাহ স্টেশন থেকে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ৫০০ কিলোমিটার , এবং শিয়ালদাহ থেকে ফারাক্কা জংশন এর দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার , অর্থাৎ একেবারে মাঝামাঝি অবস্থান। তাই ফারাক্কা জংশনের উদাহরণটা দিলাম। আসলে এই উদাহরণ দ্বারা আমি বোঝাতে চাইছিলাম যে, দুজনকেই কিছুটা নিজের নিজের জায়গা ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে হবে, একে অপরের জন্য। ফারাক্কার বাঁধ যেমন গঙ্গা ও পদ্মা কে আলাদা অথচ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সাথে প্রবাহিত হতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে , ঠিক সেইভাবে আমিও আপনাদেরকে কিছুটা ত্যাগ , কিছুটা মিউচুয়াল একসেপটেন্সের মাধ্যমে পরস্পর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সাহায্য করবো। "

"আমাদের ঠিক কি কি করতে হবে ?", সমীর জিজ্ঞেস করলো।

"সমীরবাবু আপনাকে যেমন ধীরে ধীরে অনুরিমাকে অন্য পুরুষের সাথে কল্পনা করা থেকে নিজেকে যতোটা সম্ভব বিরত থাকতে হবে , ঠিক তেমনই অনুরিমা আপনাকেও এই সাংসারিক গৃহবধূর খোলস থেকে নিজেকে কিছুটা মুক্ত করে খোলা আকাশের নিচে বাঁচতে জানতে হবে। "

"খোলা আকাশের নিচে বাঁচতে হবে বলতে আপনি ঠিক কি বোঝাতে চাইছেন ডক্টর ?" , অনুরিমা জিজ্ঞেস করলো।

"মানে আপনি তো দিনের বেশিরভাগ সময়টা বাড়িতেই থাকেন। শশুর শাশুড়ি মেয়ে নিয়ে পুরোদস্তুর সংসারে ব্যস্ত থাকেন। এবার একটু কয়েকদিনের জন্য হলেও সংসার থেকে কিছুটা সময় বার করে বাইরে বেড়ুন। পুরোনো বন্ধু-বান্ধবী দের সাথে যোগাযোগ করুন , তাদের সাথে দেখা করুন। বান্ধবীদের থেকেও বেশি ভালো হয় যদি কোনো বন্ধু থেকে থাকে কলেজ লাইফে, আই মিন ছেলে বন্ধু। না থাকলে , নতুন করে কোনো ছেলে বন্ধু বানান নিজের জীবনে। আপনার সমকাক্ষিক অপোজিট জেন্ডারের সাথে আপনার ইন্টার‍্যাকশন এতো কম বলেই হয়তো আপনি আপনার স্বামীর মনের ব্যাপার গুলোকে ঠিক মতো বুঝতে পারেন না। "

অনুরিমা ডক্টর রায়ের কথা শুনে এক গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেলো। ডক্টর রায় সমীরের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো , "কি সমীরবাবু , আপনার কোনো অসুবিধা নেই তো যদি কোনো ছেলে বন্ধু আপনার স্ত্রীয়ের জীবনে আসে , শুধু বন্ধু হিসেবেই। আমি যতদূর জেনেছি আপনারা কলেজ লাইফ থেকে একসাথে পড়াশুনা করেছেন , তাই সব বন্ধুই আপনাদের কমন ফ্রেন্ড। তার আগে আপনার স্ত্রী গার্লস স্কুলে পড়াশুনা করেছে। আপনার শশুরবাড়ি রক্ষণশীল পরিবার ছিল তাই মেয়েকে বেশি বাইরে বেরোতেও দিতোনা। তাই আপনি ওনার জীবনে আসার আগেও ওনার কোনো ছেলে বন্ধু, মানে ছেলেবেলার কোনো বন্ধু ছিল বলে আমার মনে হয়না। কি ম্যাডাম , ঠিক বলছি তো ? "

"আচ্ছা , আপনি এতো কিছু জানলেন কি করে ?", সমীর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।

"মাছ ধরতে নেমে গায়ে জল ছোঁয়াবো না , তা কি করে হয় বলুন। সেক্সজনিত সমস্যা আমাদের সমাজে বড়োই গোপন একটা সমস্যা বলে গণ্য করা হয়। আর সেক্সউয়াল বিষয়ক বিশারদ হয়ে আমাকে ডাক্তারির পাশাপাশি গোয়েন্দাগিরি টাও করতে হয় , আমার পেশেন্ট দের ভালোর জন্য। তবে চিন্তা নেই , আমি যা করবো আপনাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা কে মাথায় রেখেই করবো। অল উইল বি কেপ্ট সিক্রেট বাই মি , ভেরি ভেরি কনফিডেনশিয়াল। কোনো কথাই পাঁচ কান হবেনা , বিশ্বাস রাখতে পারেন। "

আসলে রাজীব এরই মধ্যে সুচরিতার কাছ থেকে সমীর ও অনুরিমার সম্পর্কে যাবতীয় যতো ইনফরমেশন অ্যাভেইলেবেল আছে তা সব ইন ডিটেলস নোট ডাউন করে রেখেছিলো। শুধু সে সুচরিতাকে এ ব্যাপারে অনুরিমাকে কিছু বলতে বারণ করেছিলো, আদারওয়াইস অনুরিমা তাদের দুজনকেই হয়তো ভুল বুঝতো।

"তা আপনি কি চাইছেন , এখন আমি বাইরে বেরিয়ে নতুন নতুন ছেলে বন্ধু বানাই ?", কিছুটা রাগের ছলে ও কিছুটা সারকাস্টিক ওয়েতে অনুরিমা কথাটা রাজীবকে বললো। রাজীব তা বুঝে জবাব দিলো , "তাতে কি কোনো আপত্তি আছে ম্যাডাম। একদিক থেকে দেখতে গেলে আমরাও তো একপ্রকার ভালো বন্ধু হয়ে গেছি। গত সপ্তাহে আমরা কতকিছু আলোচনা করলাম , আপনাদের প্রবলেম গুলো ডিসকাস করলাম। সেদিনও বলেছি , আজকেও বলছি আপনার স্বামীর সামনেই দ্যাট ইউ ক্যান কনসিডার মি অ্যাজ ইওর ফ্রেন্ড। এরকম নির্ভেজাল বন্ধুত্ব যদি আপনি আরো কয়েকজনের সাথে করেন তাহলে সমস্যা কোথায় ? আপনি তো কোনো কিছু আপনার স্বামীকে লুকিয়ে করছেন না ! "

"তবুও এরকম উদ্ভট উপদেশ দেওয়ার পিছনে কারণটা জানতে পারি ? কি করবো আমি ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করে ?"

"দেখুন সমীরবাবুর সামনেই অপ্রিয় সত্যি কথাটা বলছি , আপনার স্বামী একজন পারভার্ট , কাকোল্ড মানসিকতা সম্পন্ন মানুষে পরিণত হয়েছে। এই জল কতদূর গড়িয়েছে সেটা আপনি তখুনি বুঝতে পারবেন যখন আপনি অন্য পুরুষের সাথে মিশবেন। ঠিক কতোটা আমে দুধে মিশলে আঁটি ছটফট করে গড়াগড়ি খাবে তার উপর ডিপেন্ড করছে অনেক কিছু। এখানে আঁটি হলো সমীরবাবু , আম হলো কোনো এক তৃতীয় ব্যক্তি , আর দুধ হলেন , আপনি। ....."

"নাহঃ , নাহঃ , আমি এসব কিচ্ছু করতে পারবো না, ক্ষমা করবেন। "

"আরে কথা বলতে আপত্তি কিসের আপনার ? কোনো একটি পুরুষ আপনার জীবনে বন্ধু হিসেবে এলে , শুধু বন্ধু হিসেবে এলে , আপনার বৈবাহিক জীবনে দুটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। প্রথমত , আপনি আপনার স্বামীর সমকাক্ষিক ছেলেদের মানসিকতার সম্পর্কে আরো ভালোভাবে ওয়াকিবহাল হবেন , যা আপনাকে সাহায্য করবে আপনার স্বামীকে আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য। দ্বিতীয়ত , আপনার আর সেই তৃতীয় ব্যাক্তিটির মধ্যেকার বন্ধুত্ব আপনার আর সমীরবাবুর দাম্পত্য সম্পর্ককে আরো বেশি ট্রান্সপারেন্ট করে তুলবে। এতোদিন আপনাদের মধ্যে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি আসেনি , সমীরবাবুর পক্ষ থেকেও নাহ , আর আপনার পক্ষ থেকে তো নাইই। তাই আপনাদের রিলেশনশিপের ভাইব্স টেস্ট হয়নি। অনেকে বলে সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তি এলে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায় , এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। যদি পরস্পরের উপর অগাধ বিশ্বাস ও ভালোবাসা মজুদ থাকে তাহলে সেই দম্পত্তির জীবনে তৃতীয় ব্যক্তি আশীর্বাদ হয়ে আসে , অভিশাপ হয়ে নয়। "

"সেটা কিভাবে ?", সমীর খুব কিউরিয়াস হয়ে রাজীব কে জিজ্ঞেস করলো।

"এটা বোঝানোর আগে আমি আপনাদের দুজনের সমস্যার কথাটা আগে বলি। "

"দুজনের সমস্যা ??", অনুরিমা জিজ্ঞেস করলো।

"হ্যাঁ ম্যাডাম , আবার বলছি, সমস্যা আপনারও আছে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে একজন ওয়েল এডুকেটেড স্মার্ট মেয়ে হয়েও আপনি সংসারের জাঁতাকলে নিজেকে পিষে দিয়েছেন , এবং একপ্রকার নিজেকে ঘরবন্দি করে দিয়েছেন সংসার সামলানোর নামে। তাই একটা সেক্সউয়াল ফ্যান্টাসিকে আপনি মানসিক অসুখ বলে গণ্য করছেন। "

"আমি একটা কথা গত সপ্তাহ থেকেই বুঝে উঠতে পারছি না যে আপনি কি করে এই পুরো ব্যাপারটা কে এতোটা সহজ করে দেখছেন ! আমার হাসবেন্ড আমাকে অন্য কারোর সাথে কল্পনা করছে , বুঝতে পারছেন এই ব্যাপারের সিরিয়াসনেসটা ? আমি কি করে এসব অ্যালাও করবো ! আই কান্ট ইম্যাজিন দিস। "

"হতে পারে আপনার এই ফ্যান্টাসিটা পছন্দ নয়। ঘেন্না করে আপনার এসব ভাবতে। কিন্তু মানুষের মন যা কিছু অপবিত্র তার পানেই বারংবার অগ্রসর হয় , সেটা আপনাকে বুঝতে হবে। বুঝতে হবে যে আপনার স্বামী আপনার কাছে পতি পরমেশ্বর হতে পারে কিন্তু আদতে তিনিও একজন রক্তেমাংসে গড়া একজন মানুষ , সর্বোপরি একজন প্রাণী , যার মধ্যে বন্যভাব থাকাটাই স্বাভাবিক। সবার মধ্যে সেটা রয়েছে , কেউ সেটা আপনার স্বামীর মতো প্রকাশ করে ফেলে , কেউ লোকলজ্জা সমাজের ভয়ে সেটা করেনা , সিম্পল। "

"আর আমার সমস্যাটার কথা একটু বলবেন ", সমীর নিচু গলায় বিনম্রভাবে রাজীবকে জিজ্ঞেস করলো।

"মিস্টার মল্লিক , আমি জানিনা কাকোল্ড ফ্যান্টাসিটা সামাজিকভাবে কতোটা একসেপটেড , এটা প্রত্যেকটা কাপল এর ম্যাচুরিটি , মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং , এবং ট্রাস্টের উপর ডিপেন্ড করে। আপনি এবং আপনার স্ত্রীর বর্তমান অবস্থা একেবারে অপোজিট ডিরেকশনে যাচ্ছে। আপনার স্ত্রীয়ের যেমন আপনাকে বোঝা উচিত ঠিক তেমনই আপনারও আপনার স্ত্রীকে বোঝা উচিত। অনুরিমা ম্যাডাম আপনার এই ফ্যান্টাসিটা কে একেবারেই এন্টারটেইন করতে চাইছেন না , উনি একেবারে সৎ চরিত্রবতী সতী এক নারী। "

"কিন্তু আমি তো অনু কে জোর করিনি। "

"করেননি , কিন্তু এই যে আপনি ইদানিং এতো অ্যাবসেন্ট মাইন্ডেড থাকেন , তার জন্য তো আপনাদের সম্পর্কে ও জীবনে একটা কুপ্রভাব পড়বেই। আর আপনি কেন এতো অন্যমনস্ক থাকেন তা নিশ্চই আপনি নিজে ভালো করে খুব জানেন। "

"তাহলে উপায় ?", হতাশ সমীর প্রশ্ন করলো।

"উপায় বলার আগে কারণগুলো ফের একবার ঝালিয়ে নিই ? " -- ডঃ রায়

"বেশ .... গো অ্যাহেড। ...." -- সমীর

"আপনি জানেন , আপনার মধ্যে এই ফ্যান্টাসিটা কেন এসছে ?"

"কেন ?"

"আচ্ছা তার আগে বলুন প্রথমবার এই খেয়ালটা কবে আপনার মাথায় এসছিল ?"

সমীর খুব হেজিটেট ফীল করছিলো এই প্রশ্নের উত্তর দিতে , তাই রাজীব ওকে আবার ইনসিস্ট করার মতো করে বললো , " প্লিজ লজ্জা পাবেন না নিজের স্ত্রীয়ের সামনে কথাটা বলতে। আপনারা দয়া করে একটু নিজেদের মধ্যে খোলামেলা হোন , নাহলে আপনাদের দাম্পত্যের সমস্যা কোনোদিনও মিটবে না। তাই সত্যি কথাটা স্ত্রীয়ের সামনে বুক ঠুকে বলুন। কোনোকিছু কল্পনা করাটা অপরাধের নয় , কারণ কল্পনার উপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ অনেক সময়ে থাকেনা। কিন্তু সেই কল্পনাটা কে কারোর ইচ্ছের বিরুদ্ধে বাস্তবায়িত করাটা অপরাধের। আর এখনও পর্যন্ত আপনি সেই অপরাধটা করেননি , আমার স্থির বিশ্বাস ভবিষ্যতেও করবেন না। বর্তমান পরিস্থিতিতে সমস্যা হলো এইটুকুই যে, আপনার কল্পনা আপনার স্ত্রীয়ের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক কথায় এই কাকোল্ড ফ্যান্টাসিটা হয়েছে , স্বামীর কল্পনা স্ত্রীয়ের যন্ত্রণা
"
 
পর্ব ৮

রাজীবের আশ্বাস পেয়ে সমীর মনে একটু বল পেলো। তাই সে ঠিক করলো অনুরিমার সামনেই সব কথা খুলে বলবে। যেমন ভাবনা , তেমন কাজ। সমীর বলতে শুরু করলো , "আসলে আমাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় ১১ বছর হয়েগেলো। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক সব ঠিকই ছিল। অনুরিমার মতো স্ত্রী পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার। অনুরিমার মধ্যে কোনোরকম শারীরিক সমস্যা নেই , যে আমি বলতে পারবো আমি ওর প্রতি সন্তুষ্ট নই। বিছানায় আমি যথেষ্ট স্যাটিসফ্যাক্শন পেয়েছি। আমার স্ত্রী সত্যি খুব সেক্সি একজন মেয়ে। "

"আহ্হঃ , কি সব বলছো তুমি, ডাক্তারবাবুর সামনে !", নিজের সম্পর্কে এক পরপুরুষের সামনে নিজের স্বামীর এহেন উপমা শুনে অনুরিমা অসন্তোষ প্রকাশ করলো।

"অনুরিমা ওনাকে বলতে দিন। বলেছি না আমার সামনে কোনো দ্বিধা বোধ না রাখতে ", রাজীব অনুরিমার অসন্তোষ কে প্রশমিত করার চেষ্টা করলো। দিয়ে তারপর সমীরকে নিজের বক্তব্য কন্টিনিউ করতে উৎসাহিত করলো , "হ্যাঁ , সমীরবাবু বলুন কি বলছিলেন। আমি জানি আপনার স্ত্রী খুব সুন্দরী। আর আপনার কথা শুনে এও বুঝতে পারছি যে অনুরিমা দেবী কোনোদিনও আপনার বৈবাহিক সুখের কোনো খামতি রাখেনি , তা সংসারের ক্ষেত্রে হোক বা বিছানায়। অনুরিমা ম্যাডামের যদি নিজের সম্পর্কে এই সুন্দর সুন্দর বিশেষণ গুলো শুনতে হেজিটেশন হয় , তাহলে আপনি একথা গুলো কে স্কিপ করে আসল কথায় আসতে পারেন , যে ঠিক কিভাবে এবং কবে থেকে আপনার মধ্যে এই কাকোল্ড ফ্যান্টাসির উদয় হলো। "

"ঠিক আছে , তবে আমি আসল কথায় আসি। দেখুন প্রায় এগারো বছর সংসার করতে করতে একটু একঘেয়েমি আসে , বিশেষ করে যৌনতার দিক দিয়ে। তাই আমি ভিন্ন ভিন্ন পথের সন্ধান করতে লাগলাম আমাদের শারীরিক সম্পর্কের মুহূর্তগুলো কে আরো বেশি ইন্টারেস্টিং করবার জন্য। প্রথমে আমি পর্ন ভিডিও দেখতে শুরু করলাম। তারপর সেক্স স্টোরিজ পড়া শুরু করলাম। পড়তে পড়তে একদিন হঠাৎ কাকোল্ড বিষয়ক স্টোরি আমি পড়ে ফেললাম । "

"এখানে আমি একটু আপনাকে থামাতে চাই। এই যে আপনি বললেন আপনার একটু একঘেয়েমি লাগছিলো , সেটা অনুরিমাকে জানিয়েছিলেন ?"

"নাহঃ , সাহস পাইনি কথাটা বলার ", সমীর নিচু স্বরে রাজীবকে কথাটা বললো।

"কেন ? আপনি আপনার স্ত্রীকে ভয় পান ?"

"নাহঃ , আমি ভাবলাম অনুরিমা যদি আমাকে ভুল বোঝে। "

"অলরেডি তো ভুল বুঝেই ফেলেছে। যাই হোক আপনি কন্টিনিউ করুন। "

"বিশ্বাস করুন , আমি এতো কিছু ভাবতে চাইনি। অনুরিমার আমার প্রতি কোনো অভিযোগ ছিলোনা। কেন জানিনা সমস্যাটা আমার মধ্যেই হচ্ছিলো। "

"কারণটা আমি আপনাদের পরে বুঝিয়ে বলছি , এখন আপনি শুধু ঘটনাক্রম গুলো পর পর বলতে থাকুন , কোনো ব্যাখ্যা না করে ", সমীরকে ইন্টারাপ্ট করে রাজীব বললো।

ডক্টর রাজীবের কথা মেনে সমীর বলতে শুরু করলো , "কাকোল্ড স্টোরিজ পড়ার পর থেকে আমার ভেতরে কিরকম একটা অদ্ভুত ফিলিং হতে লাগলো। ভাবলাম এরকমও ঘটনা বাস্তবে হয়। প্রথমে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো , পরে কৌতূহলবশত নেটে ছানবিন করে জানলাম যে সত্যিই এসব ঘটনা সমাজে ঘটে। তারপর থেকে জানিনা কি হলো যখুনি আমি দেখতাম অনুরিমার দিকে অন্য কোনো ছেলে তাকাচ্ছে তখুনি আমার গায়ের রোম খাঁড়া হয়ে যেতো। এরকম কিন্তু আগে হতো না। আগে ভীষণ রাগ হতো। অনুরিমার মতো সুন্দরী মেয়ে বিবাহীত হলেও তার দিকে পথচলতি পুরুষেরা ফিরে ফিরে তাকায়। স্বামী হিসেবে সে জন্য একটু জেলাস ফীল করতাম। কিন্তু কখনো ইনসেক্যুরিটি ফীল হতো না , কারণ আমার স্ত্রী কখনোই তাদের দিকে ফিরেও তাকাতো না। কিন্তু যখন আমার কল্পনায় এসব কাল্পনিক দৃশ্য আসতে শুরু করলো , মনের মধ্যে যেন ৫০০ থেকে ৬০০ মাইল পার আওয়ার গতিতে সুনামি আঁছড়ে পড়তে লাগলো। কারণ বাস্তবে অনুরিমা কোনোদিনও আমি ব্যাতিত দ্বিতীয় পুরুষের কথা মনেও আনেনি। তাই আকাশকুসুম কল্পনায় এসব অসম্ভব দৃশ্য ভাসলে শরীরে একটা বৈপরীত্য মনোভাবের উদয় হয়। প্রথমে নিজের উপর ঘেন্না হতো , তারপর আস্তে আস্তে উত্তেজনার ঢেউ বইতে লাগলো শরীরে।"

"আর তারপর যখন ক্রমাগত এসব ভাবনা মনে আসতে শুরু করলো , তখন এটি একটি অদ্ভুত কিন্তু উত্তেজক অভ্যাসে পরিণত হলো , এবং সেখান থেকেই আপনার কাকোল্ড মানসিকতার শুরু। কি তাই তো সমীর বাবু ?" , ডক্টর রাজীব, সমীর কে থামিয়েই সমীরের কথার উপসংহার টেনে দিলো।

সমীর মাথা নিচু করে রইলো। কোনো উত্তর দিলো না। মৌনং সম্মতি লক্ষণম।

"এবার আসি আমার ব্যাখ্যায় , আপনি কাকোল্ড হলেন কিভাবে ! কেন যৌন অসন্তুষ্টি আপনাকে আঁকড়ে ধরলো , কিন্তু আপনার স্ত্রী এর থেকে বিরত থাকতে পারলো ! "

রাজীব একটু pause নিয়ে বলতে শুরু করলো , "আসলে আপনি চাকরি করেন তাই আপনার পৃথিবীটা একটু বড়ো। আপনি অনেক বেশি মানুষের সাথে মেশেন , তাদের চিন্তাধারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আপনাকে প্রভাবিত করেন। এটাই মানুষের চরিত্র , একেবারে জলের মতো , যে পাত্রে রাখবে সেই পাত্রের আকার ধারণ করে নেবে। "

"কিন্তু এসব কাকোল্ড বিষয় নিয়ে তো আমি কারোর সাথে কোনোদিন কোনো আলোচনা করিনি ", রাজীবকে থামিয়ে সমীর বললো।

"আমি তো একবারও বলিনি যে আপনি আপনার ফ্যান্টাসির কথা কাউকে জানিয়েছেন। আমি বলেছি যে দৈনন্দিন জীবনে হরেক রকমের মানুষের সাথে আমাদের সাক্ষাত হয় , তাদের কথা ডাইরেক্টলি বা ইনডাইরেক্টলি ভাবে আমাদের মানসিকতা-কে প্রভাবিত করে। যেমন ধরুন আপনার অফিসে কেউ যদি অন্য কারোর কলিগের স্ত্রীকে নিয়ে আলোচনা করে , তার রূপের প্রশংসা করে , সেই কথা আপনার কানে গেলো , তখন আপনি না চাইতেও সেই কথাটি আপনার ব্যাক অফ দা মাইন্ডের মেমোরিতে থেকে গেলো। এরকম ছোট ছোট ঘটনা এভাবে আপনার সাব-কনসাস মেমোরিতে যোগ হতে হতে একটা চিন্তাধারা তৈরী হয়। তারপর সেটা আপনার পঞ্চ ইন্দ্রিয়র উপর নির্ভর করে , সেই চিন্তাধারা কে আপনি কতোটা মনে মনে পোষণ করবেন। "

"তাহলে কি এরকম সবার সাথে হয়?", সমীর জিজ্ঞেস করলো।

"নাহঃ , আগেই বলেছি অনেককটা ঘটনাক্রমকে সংযুক্ত করলে এরকম ফ্যান্টাসি তৈরী হয়। বিন্দু বিন্দু দিয়ে সিন্ধু হয়। যেমন পৃথিবীর মতো কয়েকটা গ্রহ নিয়ে একটা সৌরজগৎ তৈরী হয় , কয়েকটা সৌরজগতের ন্যায় নক্ষত্রমন্ডল মিলে একটি ছায়াপথ তৈরী হয় , কয়েকটি ছায়াপথ মিলে তৈরী হয় সুপার-ক্লাস্টার , এইভাবে বিশ্বব্রহ্মান্ডের প্রসার হয়। আমাদের চিন্তাধারা গুলোও ঠিক যেন বিশ্বব্রহ্মান্ডের মতো অসংখ্য ছায়াপথ , নক্ষত্রমন্ডল ও সৌরজগতে বিভক্ত এবং প্রসারিত। কেউ শুধু নিজের সৌরজগতের মধ্যেই আটকে থাকতে চায় , তো কেউ আবার নিজের চিন্তাধারাকে প্রসারিত করে ছায়াপথ পেরোতে চায়। আপনি চেয়েছেন তাই এরকম হয়েছে। "

"তাহলে এটার কোনো প্রতিকার নেই ?", অনুরিমা জিজ্ঞেস করলো রাজীব কে।

"নিশ্চই আছে। তবে তার জন্য আমার আপনাদের দুজনেরই সম্পূর্ণ সহযোগিতা ও আমার উপর অগাধ বিশ্বাস থাকা চাই। "

"আচ্ছা তো বলুন কি করতে হবে আমাকে আর সমীর কে ?"

"সেটা তো আমি আপনাকে আগেই বলেছি ম্যাডাম , একটু নিজেকে মেলে ধরুন , খোলা আকাশে নিঃশ্বাস নিন। বাড়ি থেকে একটু বেড়োন। বেশ নাহয় ছেলে বন্ধু নাই পাতালেন , এমনি যারা রয়েছে মানে কলেজের পুরোনো বন্ধুবান্ধবরা , তাদের সাথে তো আবার যোগাযোগ স্থাপন করতেই পারেন , তাই না ? নতুন বন্ধু তৈরী করতে এই জন্য বলছিলাম কারণ পুরোনো বন্ধুদের তো আপনারা দুজনে চেনেন সবাইকে । নতুন কোনো বন্ধু এলে জীবনটা কে নতুন ভাবে ডিসকভার করতে পারবেন। "

"তাহলে আপনিই হয়ে যান সেই বন্ধু ", ফ্রাসট্রেটেড হয়ে অনুরিমা মুখ ফসকে বলে ফেললো।

"মন্দ বলেননি , বাট আই নিড পারমিশন ফ্রম মিস্টার মল্লিক। "

"এতে পারমিশন নেওয়ার মতো কি আছে ?", অবাক হয়ে সমীর জিজ্ঞেস করলো।

"কারণ টা বিশ্বাসের। আপনি বা আপনারা আমাকে বিশ্বাস করেন তো ?"

"বিশ্বাস না করলে নিজের স্বামীকে নিয়ে আপনার কাছে আসতাম। "

"তাহলে ঠিক আছে , বুধবার দেখা হচ্ছে আপনার সাথে ", রাজীব অনুরিমার দিকে তাকিয়ে বললো।

"মানে !!", অনুরিমা was shocked.

"এইভাবে চমকানোর কি আছে অনুরিমা। আপনাকে বললাম না বাড়ি থেকে বেড়িয়ে খোলা আকাশে নিঃশ্বাস নিতে হবে আপনাকে। সেটাই হবে আপনাদের সমস্যার সমাধানের প্রথম ধাপ। তাই আপনাকে বললাম বুধবার দেখা করতে আমার সঙ্গে , সমীরবাবুর সামনেই বললাম। "

"তারপর ?" -- অনুরিমা।

"তারপর আবার কি ! আপনার সাথে ঘুরবো , পার্কে যাবো , সিনেমা দেখবো। যেমন বন্ধুরা সাধারণত করে। "

এই কথা গুলো এতো অবলীলায় রাজীব বললো যে অনুরিমা চমকে থ হয়ে গেছিলো। অনুরিমা বুঝতে পারছিলো না এর প্রত্যুত্তরে সে কি বলবে।

"কি সমীরবাবু , আপনার কোনো অসুবিধা নেই তো যদি আমি আপনার স্ত্রীয়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে মিশি , ঘুরি , কথা বলি , তাতে ? আমি কথা দিচ্ছি অনুরিমাকে বাস্তব পৃথিবীটা কে চেনানোর দায়িত্ব আমার। অনুরিমা এরপর থেকে আপনার সমস্যাটা কে ভালোভাবে বুঝতে পারবে। আর অনুরিমা আপনাকেও প্রমিস করছি আমি সমীরবাবুকেও আপনার মনের মতো করে তুলবো। দেখবেন সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে। শুধু একটু আমার উপর বিশ্বাস রাখুন। "

এই কথা শোনার পর আর দুজনেরই কিছু বলার উপক্রম ছিলোনা। রাজীব ওদের দুজনের আস্থা খুব ভালোমতো অর্জন করতে পেরেছিলো। তাই অনুরিমা হেজিটেট করলেও সমীরের কোনো আপত্তি ছিলোনা। সমীরের এবিষয়ে ইতিবাচক মত দেখে অনুরিমাকেও রাজি হতে হলো , শুধু তাদের সম্পর্কটাকে বাঁচানোর খাতিরে। ঠিক হলো অনুরিমা যাবে বুধবার রাজীবের সাথে , ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে।

এরপর সেদিনের মতো ডক্টর কনসাল্টমেন্ট পর্বের ইতি হলো। অনুরিমা ও সমীর বাড়ি ফিরে এলো। অনুরিমা চাইছিলো এই বিষয়ে একবার সুচরিতার উপদেশ নেবে , তাই জন্য সে সুচরিতাকে ফোন করে পরেরদিন অর্থাৎ রবিবার দেখা করতে বললো।
 
পর্ব ৯

রবিবার অনুরিমা একটি ক্যাফেতে গেলো সুচরিতার সাথে দেখা করতে। সেখানে গিয়ে সে অবাক , দেখে সুচরিতার সাথে সুচরিতার প্রাক্তন স্বামী আদিত্য রায়চৌধুরীও হাজির ! অনুরিমা সুচরিতাকে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো তার প্রাক্তন কেন এখানে ? সুচরিতাও সেই ভাষায় অনুরিমাকে আস্বস্ত করে পরে বিস্তারিতভাবে সব বলার প্রতিশ্রুতি দিলো।

আদিত্য হেসে নিজে থেকে এগিয়ে এসে অনুরিমার সাথে হ্যান্ডশেক করলো। অনুরিমাও ভদ্রতার খাতিরে সৌজন্য বিনিময়টা করলো। তিনজনে ক্যাফের একটা কর্নারে বসলো। আদিত্য বেশ ভালোই বুঝতে পারছিলো অনুরিমা কতোটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে তাকে দেখে। তাই সে নিজেই কনভার্সেশনটা স্টার্ট করলো।

"দেখুন আমি বুঝতে পারছি এখানে এসে আমি আপনাকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলেছি। আপনি আপনার বান্ধবীর সাথে দেখা করতে এসছেন , আর আমি আউট অফ সিলেবাস চলে এসছি। "

আদিত্যর এই হিউমার্ ভরা কথা শুনে অনুরিমা না চাইতেও ফিক করে হেসে ফেললো। আদিত্য ভাবলো যে যাক সে তার কথার স্কিল দিয়ে অনুরিমাকে কমফর্টেবল করতে পাচ্ছে। তারপর অনুরিমা তৎক্ষণাৎ হাসি চেপে নিজেকে সামলে নিলো। এবার সুচরিতা কিছুটা সিরিয়াস হয়ে অনুরিমাকে বললো , "অনু আমি জানি এই কথাটা শুনলে তুই রাগ করবি , তবুও তোকে কথাটা বলবো। তুই নিশ্চই ভাবছিস আমার এক্স আদিত্য কি করছে এখানে ? .... দেখ আদিত্য আমার এক্স হাসব্যান্ড হতে পারে বাট ষ্টীল উই শেয়ার আ গুড বন্ডিং অফ ফ্রেন্ডশিপ। আজও আমি আদিত্যকে প্রায় সবকিছু শেয়ার করি। প্লিজ রাগ করিসনা , আমি আদিত্যকে তোর আর সমীরের ব্যাপারে সবটা বলেছি। "

"ওয়াট !!", অনুরিমা চেয়ার থেকে উঠে পড়লো , "রিতা আমি তোকে বিশ্বাস করে আমার প্রবলেমের কথা শেয়ার করেছিলাম। তুই আমার বিশ্বাসের এই প্রতিদান দিলি !"

"কুল ডাউন অনুরিমা। সুচরিতাকে বলা যা , আমাকে বলাও তাই। আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন , আমি কাউকে কিচ্ছু বলবোনা। আসলে সুচরিতা জেনুইনলি চায় আপনার সমস্যার সমাধান করতে। ওই তো আপনাকে সেক্সওলজিস্ট রেকমেন্ড করেছিলো। সিমিলারলি ও আমার সাথেও এই ব্যাপার নিয়ে ডিসকাস করেছে , ফর ইওর বেটারমেন্ট। আপনি আগে শান্ত হয়ে বসুন। আমরা তিনজনে মিলে কথা বললে কিছু একটা উপায় নিশ্চই বেড়োবে। "

আদিত্যর কথা শুনে অনুরিমা ভরা কাফের মধ্যে আর কোনো সিন ক্রিয়েট করতে চাইলো না। সে বসলো কিন্তু রক্তচক্ষু দিয়ে সুচরিতার দিকে তাকাচ্ছিলো , যেন এক্ষুনি ওকে গিলে ফেলবে। সুচরিতা আবার অনুরিমাকে শান্ত করার জন্য বললো , "আমি জানি তুই আমার উপর এখন খুব রেগে আছিস , কিন্তু বিশ্বাস কর , আদিত্য ইস ভেরি ট্রাস্টওয়ার্থই ম্যান। ওর সাথে আমার বিয়েটা ওয়ার্ক করেনি ঠিকই , বাট আনডাউটেডলি হি ইস আ হেল্পফুল এন্ড জেনুইন গাই। তাই জন্যই তো ডিভোর্সের পরও আমাদের মধ্যে যোগাযোগটা রয়েছে। "

অনুরিমা চুপ করেছিলো। ভেবে পাচ্ছিলো না সে কি বলবে। অনুরিমার নিস্তব্ধতা দেখে আদিত্য ঠিক করলো যে সে সেখান থেকে কিছুক্ষণের জন্য চলে যাবে , দুই বান্ধবীকে স্পেস দেওয়ার খাতিরে। অনুরিমা একটু স্বাভাবিক হলে তখন সে জয়েন করবে। তাই সে চেয়ার থেকে উঠে বললো , "তোমরা দুজনে নিজেদের মধ্যে আগে সবকিছু শর্ট আউট করে নাও , আমি ততোক্ষণে বাইরে থেকে একটু ঘুরে আসছি। এক্সকিউস মি। ", বলে আদিত্য ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে গেলো।

আদিত্য চলে যাওয়ার পরই অনুরিমা সুচরিতাকে চার্জ করতে লাগলো , "তুই কেন ওকে সব বললি ? এতোই যদি নিজের এক্স হাসব্যান্ড এর উপর ভরসা , তাহলে ওকে ডিভোর্স দিয়েছিলিস কেন ? "

"লিশন অনু , নাও ইউ বিকাম পার্সনাল। "

"পার্সনাল , রিয়্যালিই ! এটা তুই বলছিস ! যে আমার পার্সোনাল সমস্যা গুলোকে ভরা বাজারের সামনে নিয়ে চলে এসছে। আর কাকে কাকে বলেছিস তুই ? বা বলবি বলে ঠিক করেছিস ? "

"অনু কুল ডাউন , এতো হাইপার হোসনা। "

"শাট আপ ", অনু এতো জোরে বললো যে গোটা ক্যাফের নজর ওদের টেবিলে পড়লো। অনু প্রচন্ড এম্ব্যারেস্ ফীল করলো। সে সঙ্গে সঙ্গে নিজের হ্যান্ডব্যাগ-টা নিয়ে ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে গেলো। বাইরে আদিত্য দাঁড়িয়ে ছিল। সে দেখলো অনু গটমট করে ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে রাস্তা পেরোচ্ছে। পেছন থেকে আদিত্য ডাকলো , কিন্তু কোনো সাড়া পেলোনা। কি হয়েছে তা সুচরিতার থেকে জানতে সে ক্যাফেতে ঢুকলো। দেখে সুচরিতা মুড অফ করে বসে আছে। সে সুচরিতার কাছ থেকে জানতে পারলো যে তার যাওয়ার পর অনুরিমা সুচরিতার উপর প্রচন্ড রিএক্ট করেছে। তার প্ল্যান যে এভাবে ব্যাকফায়ার করে যাবে সেটা আদিত্য রায়চৌধুরী বুঝতে পারেনি। আসলে অনুরিমা বসু মল্লিক কে বোঝা যে অতো সহজ কার্য নয়। আর নয়ও বা তাকে কোনো অছিলায় কাছে পাওয়া। সি ইস অনুরিমা বসু মল্লিক , এ ভেরি টাফ গার্ল টু গেট কন্ভিন্সড।
অনুরিমা প্রচন্ড রেগে ছিল। বাড়িতে এসে সে চুপচাপ নিজের সংসারের কাজ করতে লাগলো। তার সমীরের উপরও খুব বিরক্তি এসে পড়ছিলো। আজ সমীরের জন্যই যতো সমস্যার শুরু। সে কিনা করেছে সমীর ও সমীরের ফ্যামিলিকে খুশি রাখতে। কতো স্যাক্রিফাইসই না করেছে। চাকরি করেনি , মাসের পর মাস বাপের বাড়ি যায়নি শশুর শাশুড়ি কে দেখভাল করার জন্য। বদলে সে কি পেলো ? অপমান ! হ্যাঁ অপমানই তো। কি লজ্জার ব্যাপার , তার স্বামী তাকে অন্য কারোর সাথে কল্পনা করে দেখতে চায়। ছিঃ ! কাজ করতে করতে অনুরিমা এসব ভাবতে লাগলো। সে আরো ভাবলো যে বুধবার ডক্টর রায়ের সাথে একা দেখা করতে যাবে কিনা , তাও আবার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মতো অদ্ভুত জায়গায়। অদ্ভুতই তো। তার আর ডক্টর রায়ের সাক্ষাতের জন্য জায়গাটা যে বড়োই বেমানান। লোকে সেখানে পরিবার নিয়ে যায় , কপোত কপোতিরা প্রেম করতে যায়। রাজীববাবু কে হয় তার ? স্বল্পদিনের সাক্ষাৎ তবুও এক অজানা অচেনা পরপুরুষই সে।

রাজীব বাবুও কি সবকথা সুচরিতাকে বলে ফেলে ?? নাহঃ নাহঃ , সেটা জানতেই হবে। আর সেটা জানার জন্যই আমাকে বুধবার দেখা করতে হবে তার সাথে। আমি আমার জীবনের সমস্যাকে এভাবে সর্বজনীন করতে পারবো না। আমাকে জানতেই হবে রাজীববাবু কতোটা বিশস্ত মানুষ। তাই আমি ওনার সাথে দেখা করবো বুধবার। -- মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো অনুরিমা।

কেটে গেলো দুদিন। এর মধ্যে সুচরিতা অনেকবার তাকে ফোন - ম্যাসেজ করেছিল , যার একটারও উত্তর অনুরিমা দেয়নি। মঙ্গলবার রাতে সে ফাইনাল ভাবে সমীরকে জিজ্ঞেস করলো , আগামীকাল তার যাওয়া উচিত হবে কিনা ডক্টর রায়ের সাথে দেখা করতে ? সমীর কোনো বিশ্লেষণে না গিয়ে শুধু হ্যাঁ বললো। অনুরিমা পুনরায় জিজ্ঞেস করলো , সত্যিই তার যাওয়া উচিত ? পুনরায় জবাব এলো হ্যাঁ। মনে পাথর রেখে অনুরিমা সিদ্ধান্ত নিলো যাওয়ার।

বুধবার সকাল -- অনুরিমার বুক ধড়পড় করতে লাগলো। নার্ভাসনেসে তার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো। সমীর ওর বাবা মা কে বলে রেখেছিলো যে আজ তিন্নি স্কুলে যাবেনা , বাড়িতেই থাকবে , কারণ সে ও অনুরিমা আজ এক বিশেষ কাজে বেড়োবে , ফিরতে দেরী হবে। তাই তিন্নি স্কুলে গেলে , তাকে আনতে যেতে কেউ যেতে পারবে না। সমীরের বাবার শরীরটা কয়েকদিন ধরে খুব একটা ভালো ছিলোনা , আর মা তো পায়ে ব্যাথা নিয়ে প্রায় শয্যাশাহী। তাই অনুরিমার অনুপস্থিতিতে তিন্নিকে স্কুলে পাঠানো সম্ভব নয় একেবারে।

ঠিক ছিলো সমীর অনুরিমা কে ভিক্টোরিয়ার কাছে ড্রপ করে দিয়ে অফিসে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু সমীরের মাথায় অন্য প্ল্যান ছিল। সে গাড়ির ডিকিতে নিজের আরেক সেট জামা এবং ভাড়া করে আনা কিছু মেক আপের সরঞ্জাম এনে রেখে দিয়েছিলো। পরে কাজে আসবে বলে। সেটা অনুরিমা অগোচরেই। ওদিকে রাজীবও নিজের গাড়ি ড্রাইভ করে আসছিলো। আজকে কেনো জানিনা সে একটু বেশি সেজেছিলো। অনেকদিন পর আবার কলকাতা ভ্রমণে বেড়োবে বলে নাকি অনুরিমা আসছে বলে ??.... অনুরিমাকে দেখতে যেমন অভিনেত্রী Swikriti Majumder এর মতো , ঠিক তেমন রাজীবকে দেখতে Swikriti এর সহ-অভিনেতা সৌনক রায়ের মতো।


আর সমীর ? তার কথা নাহয় এখন বাদই দিলাম। সে তো এখন ছদ্মবেশ ধারণ করবে বলে ঠিক করেছে , নিজের বউয়ের উপর জাসুসি করার জন্য। তাই সে কিরকম দেখতে তা এখন অর্থহীন। কারণ সে এখন আসল রূপ ছেড়ে নকল এক রূপে আসতে চলেছে ।

আর যাকে কেন্দ্র করে এতো কিছু সে অনুরিমাই তাপ-উত্তাপহীন সাদামাটা একটা শাড়ি পড়ে বেড়িয়েছিল। যদিও অনুরিমার মতো সুন্দরী অপসরাকে যাই পড়বে তাতেই মানাবে , কিছু না পড়লে আরো ভালো লাগবে। সেটা তো না জানি কতো রাহাচলতি পুরুষের ফ্যান্টাসি , অনুরিমাকে একবার তার বার্থডে স্যুটে দেখার। কিন্তু সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্যবশত সেই অবস্থায় আজ পর্যন্ত শুধু একজন পুরুষই তাকে দেখতে সক্ষম হয়েছে , সে হলো সমীর মল্লিক , অনুরিমার স্বামী।

যাই হোক , সময়মতো ভিক্টোরিয়ার মেইন গেটের সামনে সমীরের গাড়িটা এসে থামলো। অনুরিমা সমীরের দিকে একবার তাকালো , তারপর লম্বা একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে সে গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। সমীর গাড়ি নিয়ে চলে গেলো , তবে সে অফিস গেলো না। রবীন্দ্রসদনের কাছে একটি পার্কিংয়ে গিয়ে সে গাড়িটা কে দাঁড় করালো। ডিকি থেকে আরেক সেট জামা কাপড় নিয়ে সে কাছের একটি পে এন্ড ইউস টয়লেটে গিয়ে নিজের জামা কাপড় চেঞ্জ করে ফেললো। ফের গাড়িতে এসে মোটা কাপড় মাথায় পাগড়ির মতো করে বেঁধে নিলো। চোখে কালো একটা গগোলস পড়লো। আঁঠা দেওয়া ফলস দাঁড়ি গোঁফ মুখে লাগিয়ে নিলো। গাড়ির মিরর গ্লাসে নিজেকে একবার দেখে নিলো। নাহঃ , সে নিজেই নিজেকে চিনতে পারছে না , ঠিক যেন সর্দারজি লাগছে , হুবহু। ওদিকে অনুরিমা জানে তার স্বামী অফিসের দিকে গমন করেছে। কিন্তু বাস্তবে তার স্বামীর অভিপ্রায় ছিল তার উপর গোয়েন্দাগিরি করা। সমীর যে তার কৌতূহল কে কিছুতেই কাবু করতে পারেনি। সে দেখতে চায় অনুরিমা কিভাবে ডক্টর রায়ের সাথে দেখা করবে , কথা বলবে , সব।


অনুরিমা ভিক্টোরিয়ার মেইন গেটের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো। সেরকমই কথা ছিল। শনিবার রাজীব বলে রেখেছিলো ভিক্টোরিয়ার মেইন গেটে মিট করতে। রাজীবের কাছে অনুরিমার নাম্বার ছিলোনা , আর চাওয়ার সাহসও রাজীব দেখায়নি। ডক্টর রাজীব দূরে এক জায়গায় গাড়ি পার্ক করে আসছিলো। তাই রাজীবের একটু দেরী হয়েছিলো। আসলে ভিক্টোরিয়ার আসে পাশে তো পুলিশ গাড়ি পার্কিং করতে দেয়না। দেরীতে আসায় রাজীব অনুরিমার কাছে সৌজন্যমূলক ক্ষমা চেয়ে নিলো। অনুরিমা এসব ছোটোখাটো ব্যাপারে মাইন্ড করেনা , তাই সে শুধু ইট'স ওকে বলে ব্যাপারটাকে খ্যান্ত দিলো।

"চলুন তবে , ভিক্টোরিয়ার ভেতরটা দেখা যাক। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি করবো ", এই বলে রাজীব দুজনের জন্য এন্ট্রি টিকিট কেটে অনুরিমা কে নিয়ে ভিক্টোরিয়ার গ্রাউন্ডে প্রবেশ করলো।

এন্ট্রি গেট দিয়ে ঢুকে ভিক্টোরিয়ার দিকে যেতে যেতে হঠাৎ রাজীব বললো , "একটা কথা বলবো আপনাকে ? কিছু মনে করবেন না তো ?"

"কি ?"

"আজকে আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে দেখতে। "

"ওহঃ , থ্যাংক ইউ ডক্টর রায়। "

"আচ্ছা আপনি একটা কথা দিয়েছিলেন আমাকে , মনে আছে ? যেটা আপনি পুরোপুরিভাবে ভুলে গেছেন !"

"কি কথা ?"

"মনে করে দেখুন , গত সপ্তাহের আগের সপ্তাহে , আমাদের প্রথম সিটিংয়ে আমরা একটা প্রমিস শেয়ার করেছিলাম। "

"প্রমিস ?? কি প্রমিস? সরি আমার কিছু মনে পড়ছে না। "

"স্বাভাবিক। আপনার উপর দিয়ে যা চাপ চলছে , এরকম ছোটখাটো ব্যাপার মেমোরি থেকে একেবারে ওমিট হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। "

"আমার উপর দিয়ে চাপ যাচ্ছে সেটা আপনি বুঝছেন ?"

"বুঝছি বলেই তো দেখা করতে এসছি। বন্ধু হতে এসছি। যাতে যা কিছু আপনি আপনার স্বামীকে বা কাউকে বলতে পারছেন না সেটা যেন নির্দ্বিধায় আমাকে বলতে পারেন। "

রাজীবের এই কথাটা কেন জানিনা অনুরিমার মন ছুঁয়ে গেলো। খুব ভালো লাগলো তার যখন রাজীব বললো সে তাকে বোঝে। কারণ এই ক'দিনে তার অনেক মনোক্ষুন্ন হয়েছে , নিজের আপনজনদের কাছ থেকে। যাদের সে আপন ভাবতো, বিশ্বাস করতো, তারাই তাকে আপসেট করেছে অনেক বেশি করে , তা সমীর হোক বা সুচরিতা , মন ভেঙেছে সবাই। তাই সে রাজীব কে জিজ্ঞেস করলো , "বন্ধুদের-কেও কি বিশ্বাস করা যায় ? তারাও কি আদেও কথা রাখে ?"

রাজীব বললো , "সবার কথা বলতে পারবো না , তবে আমি শুধু আমার গ্যারেন্টি দিতে পারি। "

"তাই ? আচ্ছা সুচরিতার সাথে আপনার কথা হয় ? "

"কি নিয়ে ?"

"আমার সাংসারিক জীবন নিয়ে ? "

"আমি ওর কাছ থেকে সব ইনপুট নিয়েছি , কিন্তু কোনো আউটপুট দিইনি। নাহলে আমি জানতাম কি করে বলুন যে আপনার জীবনে ছেলে বন্ধুর সংখ্যা নেহাতই এক সিং বিশিষ্ট গন্ডারের মতো , বিলুপ্তপ্রায়। খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। "

রাজীবের এই কথা শুনে অনুরিমা হেসে ফেললো , আর বললো , "ঠিকই বলেছেন। তাছাড়া পুরুষেরা হয়েই গন্ডারের মতো , বিশেষ করে তাদের চামড়া , কিছুতেই কিছু যায় আসেনা। হি হি। "

রাজীব এই প্রথম অনুরিমাকে একটু খোলামেলা ভাবে হাসতে দেখলো, যেটা সত্যি ভালো লাগারই বিষয়।

"বাই দা ওয়ে , আপনি বললেন না তো , কি প্রমিস করেছিলাম আমি ?"

"মনে করে দেখুন প্রথম সিটিংয়ের সময়ে বলেছিলাম আপনাকে যদি বন্ধু বলে মনে করেন তাহলে নো ডক্টর রায় , নো রাজীব বাবু , ওনলি রাজীব। "

"ওহঃ !! তা আগে আপনাকে বন্ধু হিসেবে বিশ্বাস করতে শুরু করি, তারপর তো। "

"হুমঃ , তাহলে আমাকে কি করতে হবে আপনার বিশ্বাস অর্জন করতে হলে ?"

"আপনি শুধু এইটুকু বলুন যে আপনি সুচরিতা কে কি কি বলেছেন ?"

"কিচ্ছু না , নাথিং। আমি আপনাকে আগেও বলেছি , এখনও বলছি। আই এম এ সেক্সওলজিস্ট , হোয়াট ইউ শেয়ার উইথ মি , ইট অলওয়েজ কেপ্ট উইদিন মি। শুরুর দিকে সুচরিতার কাছ থেকে আপনাদের ব্যাপারে অনেক ইনফরমেশন জোগাড় করেছি , জাস্ট ফর মাই ট্রিটমেন্ট পারপাস। কারণ দম্পতিরা অতো ইসিলি সবকথা খুলে বলতে পারেনা। তাই আমাকেই খুঁড়ে খুঁড়ে বার করতে হয় ইনফরমেশন , সেটা পেশেন্ট এর মঙ্গলের জন্যই। কিন্তু পেশেন্ট এর কথা একজন প্রকৃত সেক্সওলজিস্ট কখনও কারোর কাছে লিক করেনা। "

"বুঝলাম , তবে এরপর থেকে আমাদের ব্যাপারে যাবতীয় যা ইনফরমেশন জানার ফর আওয়ার প্রবলেম পারপাস , তা সব আপনি আমার কাছ থেকেই জিজ্ঞেস করে নেবেন , কেমন ?"

"ঠিক আছে , তবে একটা শর্তে। আপনার জীবনে আমাকে বন্ধুর স্থানটা দিতে হবে , শুধু রাজীব বলে ডাকতে হবে , রাজি ? "

"আচ্ছা , বেশ। তাই হবে ", অনুরিমা হেসে উত্তর দিলো।

"চলুন তবে ভিক্টোরিয়ার ভেতরটা গিয়ে একটু দেখা যাক। "

"ঠিক আছে। "

এই বলে তারা দুজন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ভেতরে প্রবেশ করলো। ওদিকে সমীরও সেইসময়ে রবীন্দ্রসদনের পার্কিং থেকে হাঁটতে হাঁটতে ভিক্টোরিয়ায় এসে হাজির , ছদ্মবেশে।
 
পর্ব ১০

সমীরের কাছে একটা বাইনোকুলার অর্থাৎ দূরবীন ছিল , দূরের জিনিস কাছ থেকে দেখার জন্য। সমীরও মেইন গেট থেকে এন্ট্রি টিকিট কেটে ধীর গতিতে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পানে চলিতে লাগিলো। সেখানে যে তার নিজের ভিক্টোরিয়া কুইন রয়েছে বন্ধুরূপী অন্য এক পুরুষের সহিত। সমীর একটু নার্ভাস ফীল করছিলো , অনুরিমা ওকে চিনে না ফেলে। যতোই ভালো ছদ্মবেশ ধারণ করুক , স্ত্রী তো , তাই নিজেকে আড়াল করে রাখা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং , সেটা সমীর ভালোমতো জানতো।

ওদিকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ভেতরে ঢুকতেই অনুরিমার মনে পড়লো একবার সমীর কে কল করে জানতে , ও ঠিক মতো অফিসে পৌঁছেছে কিনা। দায়িত্ববতী স্ত্রী হলে যা হয়। কিন্তু অনুরিমার এই পতিব্রতা মনোভাবকে কি আদেও তার স্বামী সমীর বোঝে ? বা সেটার সম্মান করে ?

সমীরের ফোন বেজে উঠলো। কলার নেম এ অনুর নাম দেখে সে চমকে উঠলো ! ধরা পড়ে গেলাম না তো ! চোরের মন বোঁচকার দিকে হলে যা হয়। সে আসে পাশে আগে ভালো করে তাকিয়ে দেখলো , অনু কোথাও নেই তো ! তারপর মাথা নিচু করে ধীর গলায় ফোনটা তুলে বললো , "হ্যালো। .."

"কিগো তুমি পৌঁছে গেছো ?" , ফোনের অপর প্রান্ত থেকে অনুরিমার মিষ্ট গলার আওয়াজ ভেসে আসলো।

অবুজের মতো সমীর বললো , "কোথায় ?"

"কোথায় আবার ? অফিসে ?"

"হা..। .... হ্যাঁ হ্যাঁ পৌঁছে গেছি। তুমি কোথায় ?"

"ভিক্টোরিয়া তে ", কিছুটা গম্ভীর হয়ে অনুরিমা বললো।

"রাজীব বাবু এসছেন ?"

"হুম। "

"আচ্ছা , ঠিক আছে। রাখছি তাহলে ", বলে সমীর ফোনটা কেটে দিলো। সমীরের প্রাণে যেন প্রাণ আসলো, "যাক। খোঁজ নেওয়ার জন্য ফোন করেছিল ", ভেবে সমীর আস্বস্ত হলো।

ফোন কেটে যাওয়ার পর, অনুরিমা অবাক হয়েগেলো সমীরের এই ক্যাজুয়াল অ্যাপ্রোচ দেখে। ওর কি কিছুই যায় আসেনা , আমি কার সাথে আছি , কিভাবে আছি , তাতে ! তবে কি ও সত্যি আমাকে অন্য কারোর কাছে পাঠাতে চায় ? সমীরের এই অদ্ভূত ফ্যান্টাসিকে সমীর বাস্তবে রূপায়িত করতে যাবেনা তো ? .... এসব ভেবে মনে মনে অনুরিমা আঁতকে উঠলো। অনুরিমার মুখ-চোখ দেখে রাজীবের ঠিক লাগলো না। সে অনু কে জিজ্ঞেস করতে লাগলো অনু ঠিক আছে কিনা। রাজীবের বারংবার এর কথায় অনুরিমার চেতনা ফিরলো, গভীর চিন্তার সমুদ্র থেকে বাস্তবের মাটিতে বাস্তবের সময়ে।

অনু নিজেকে সামলে নিয়ে বললো , "নাহঃ , কিছু হয়নি। চলুন ভেতরের মিউজিয়াম-টা দেখি। আমার ঐতিহাসিক জিনিস দেখতে খুব ভালো লাগে। "

অনুরিমা ওভারথিংকিং এর লোড মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে একটু সহজ হওয়ার চেষ্টা করছিলো।

"বাহঃ , তাহলে তো বলতেই হবে আমি আপনাকে ভালো জায়গায় নিয়ে এসছি। সময় থাকলে তাহলে পাশেই পার্ক স্ট্রিটের কাছে ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামটাও দেখে নেওয়া যাবে , কেমন। "

"নাহঃ নাহঃ , আপনাকে অতো প্রেসার নিতে হবে না। "

"ধুর , এতে প্রেসার এর কি আছে। আমি তো বললাম, সময় ও ইচ্ছা থাকলে দেখা যাবে। আমার তো মনে হয় , মিছি মিছি আপনি প্রেসার নিচ্ছেন। "

"আমি !! আমি কেন নিতে যাবো প্রেসার ??"

"হয়তো এখনও আমি আপনার বিশ্বাস সম্পূর্ণভাবে অর্জন করে উঠতে পারিনি। "

"সেটা যদি সত্যি হয়েও , তবুও মিউজিয়াম যেতে গেলে আলাদা করে কোনো বিশ্বাস অর্জন করতে হয়না। আমি শুধু বলছিলাম আপনাকে আমার ভালো লাগা , খারাপ লাগার ব্যাপারে এতো না ভাবলেও হবে। "

"দ্যাটস সো রুড অনুরিমা। কি হয়েছে আপনার ? সমীরবাবু কে কল করার পর থেকে আমি দেখলাম আপনি একটু অন্যমনস্ক হয়ে রইলেন। অনেকবার বলাতে আপনি আমার কথার উত্তর দিলেন। "

অনুরিমা মাথা নিচু করে বললো , "আসলে আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেছি। "

এটা শোনা মাত্রই রাজীব অনুরিমার হাত ধরে তাকে একটা বসার জায়গায় নিয়ে গেলো এবং বললো , "আগে আপনি বসুন। "

অনুরিমার খুব অড্ লাগলো রাজীবের এই বিহেভিয়ার-টা। রাজীব কেন ওর পারমিশন ছাড়া ওকে টাচ করলো ! কিন্তু রাজীব ওকে অতো ভাবার সুযোগ না দিয়ে ওকে এনকোয়েরি করতে লাগলো চিন্তার কারণ অনুসন্ধানের জন্য। অনুরিমা তাই বাকি সব ভুলে রাজীবকে ডেসক্রাইব করতে লাগলো পুরো বিষয়টা। সেক্সওলজিস্ট হিসেবে এখন রাজীবই তো তার ত্রাতা , অন্তত খাতায় কলমে।

রাজীব বুঝলো অনুরিমার শঙ্কার বিষয়টা। সে তাই অনুরিমাকে বললো যে সে পুরো ওয়াকিবহাল সমীরের বিষয়টা নিয়ে। অনুরিমার শঙ্কাটা কে সে মিথ্যে শান্ত্বনা দিয়ে উড়িয়েও দিলো না , কিন্তু পাশাপাশি অনুরিমাকে ভরসা জাগালো সমস্যার সমাধানের। এই ভাবে সে ধীরে ধীরে নিজের জন্য অনুরিমার মনের বিশ্বাসের জায়গাটা আরো বেশি পোক্ত করার চেষ্টা করলো। প্রাক্টিক্যালি সমস্যার সমাধান কতোটা হবে তার গ্যারান্টি তো স্বয়ং ঈশ্বরও দিতে পারবে না , সে তো সামান্য ডাক্তার মাত্র। কিন্তু অনেক সময়ে মুখে বলা ইতিবাচক উক্তি সাময়িকভাবে হলেও ভীত মনকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে প্রশমিত করে ঘুম পাড়িয়ে দ্যায়। কে জানে রাজীব হয়তো সেটাই করছিলো অনুরিমার সাথে , মিথ্যে আশ্বাস !

"আচ্ছা , এবার নিজেকে একটু শান্ত করুন। মনটাকে কিছুক্ষণের জন্য একটু ডিসট্র্যাক্ট করুন। চিন্তা করবেন না , সব ঠিক হয়ে যাবে। Aal izz well . হা হা হা। .... চলুন এবার ভিক্টোরিয়ার ভেতরটা ভালো করে ঘুরে দেখি। অনেকদিন পর এসছি , এই সুযোগ মিস করা যাবেনা। আপনিও তো মনে হয় অনেকদিন পর এলেন ?"

"হুম .."

রাজীব আর কথা না বাড়িয়ে অনুরিমাকে ভিক্টোরিয়ার ভেতরের মিউজিয়াম দেখাতে লাগলো। অনুরিমাও খুব ইন্টারেস্ট নিয়ে সব পূরাতন যুগের ব্রিটিশ আমলের জিনিস দেখছিলো। আগেই বলেছি অনুরিমার এসব ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে দেখতে পছন্দ করে। নিজেকে এক নস্টালজিয়ার মধ্যে আবদ্ধ করে নেয়। ভাবে সেই যুগে জন্মালে কতো ভালোই না হতো। বীর পরাক্রমী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিজের চোখে দেখার সৌভাগ্য হতে পারতো। রাজীবও তার এই কাল্পনিক নস্টালজিয়া কে উসকে দিচ্ছিলো নানারকম আকাশ কুসুম কল্পনার কথা বলে। যাতে কোনোভাবে সে অনুরিমাকে আরো বেশি কমফোর্টেবল করতে পারে নিজের সাথে।

যেমন - সে বলছিলো যদি তুমি হতে কাদম্বরী , আমি হতাম রবীন্দ্রনাথ , তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখতাম।

"যাহঃ , কিসব বলেন আপনি। আমি কাদম্বরী হলে আপনি রবীন্দ্রনাথ। তা কি করে সম্ভব। "

"কেন , তারাও তো একে অপরের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেছিলো। "

"আপনি সেরকম বন্ধুত্ব করতে চান ? তাহলে এক্ষুনি বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। "

"কেন ? আপত্তি কিসের ? তারা তো সম্পর্কে দেওর বৌদি ছিল। "

"তাও। .. তাদের সম্পর্কটা শুনেছি একটু অন্যরকম ছিল। "

"এই হলো আমাদের বাঙালিদের সমস্যা। আমরা রবীন্দ্রনাথকে অ্যাডমায়ার করি ঠিকই , কিন্তু রবীন্দ্রনাথের জীবন আদর্শে কখনো নিজেকে মেলে ধরতে পারিনা। আচ্ছা দেখুন তো রবীন্দ্রনাথ কতো গল্প লিখেছে পরকীয়ার উপর। তার মানে উনিও সবকিছুকে সহজ করে দেখতেন। বিবাহ মানেই যে বন্ধনের নামে সারাজীবনের বন্দী দশা সেটা তিনিও কিন্তু মানতেন না। "

"আপনি কি বলতে চাইছেন ? "

"কিছুনা। শুধু রবীন্দ্রনাথের মতো করে সবকিছু সহজ ভাবে দেখতে ও অ্যাডপ্ট করতে বলছি। চলুন সিঁড়ি দিয়ে ওপরে ওঠা যাক। ওপরের ব্যালকনি থেকে ভিক্টোরিয়ার পেছনের দিকের সৌন্দর্য্যটা অপরূপ লাগে। ঠিক আপনার মতো। " , এই বলেই রাজীব সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলো। কোনো বিকল্প না পেয়ে অনুরিমাও তাকে ফলো করে উঠতে লাগলো , ভিক্টোরিয়ার সিঁড়ি দিয়ে নাকি বাস্তব জীবনের সিঁড়ি দিয়ে, সময় বলবে তা।

ওদিকে সমীর ভিক্টোরিয়ার আসে পাশে ফাঁকা জায়গাতে ওদের দুজনকে খুঁজতে লাগলো। না পেয়ে সে ভাবলো তারা দুজনে নিশ্চই ভিক্টোরিয়ার ভেতরে গ্যাছে। ভিক্টোরিয়ার বিল্ডিং এর এক্সিট টা পেছনের দিকে। তাই সমীর সময় নষ্ট না করে ভিক্টোরিয়ার পেছন দিকটা গিয়ে একটা সেফ জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলো, যেখান থেকে সে চট করে যাতে ওদের নজরে না পড়তে পারে। এবং অপেক্ষায় থাকলো কখন ওরা বেড়োয়।

রাজীব নিজের কমিউনিকেশন স্কিলের ভরপুর ফায়দা তুলে অনুরিমার সাথে অনর্গল কথা বলে যাচ্ছিলো। অনুরিমাও তাই আস্তে আস্তে রাজীবের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ কমফোর্টনেস ফীল করছিলো। কিছুক্ষণ পর তারা হাসতে হাসতে কথা বলতে বলতে এক্সিট গেট দিয়ে বেড়িয়ে আসলো। সমীর লক্ষ্য করলো অনুরিমা বেশ ভালোই হেসে খুলে রাজীব বাবুর সাথে কথা বলছে। যা দেখে সমীরের মনটা হঠাৎ হিংসায় জ্বলে ছ্যাৎ করে উঠলো।

ভিক্টোরিয়ার মেইন বিল্ডিং থেকে বেড়িয়ে রাজীব অনুরিমার হাত ধরে বললো , "চলুন এবার বাইরের গ্রাউন্ড টা একটু ঘোরা যাক । "

"একি , আপনি আমার হাত ধরলেন কেন ?"

"বন্ধু হয়ে বন্ধুর হাত ধরতে পারিনা ? এটা কোথায় লেখা আছে ? প্লিজ একটু কমফোর্টেবল হন , একটু বিশ্বাস রাখুন আমার উপর। চলুন একটু ওই ঝিলের ধারে বসে গল্প করা যাক। "

বন্ধু বন্ধু করে রাজীব যে আর কতোদূর এগোতে চায় তা কে জানে ! অনুরিমার সবকিছু যেন গুলিয়ে যাচ্ছিলো। রাজীব তার সাথে যেটা করছে সেটা ঠিক কিনা, সেটাই সে ঠিকমতো বুঝতে পারছিলো না। কো-এডুকেশন কলেজে পড়লেও তার বান্ধবীর সংখ্যাই ছিল সবচেয়ে বেশি। ছেলে বন্ধু বলতে সেভাবে সমীর ছাড়া আর কেউ ছিলোনা। আর সেই অর্থে সেই একমাত্র ছেলে বন্ধুকেই সে নিজের জীবনের পরম বন্ধু করে নিয়েছিলো।

দূর থেকে সমীর সব দেখছিলো। দেখছিলো কিভাবে রাজীব তার স্ত্রীয়ের হাতটা হঠাৎ করে ধরে নিলো। আচ্ছা রাজীব বাবু কি তাহলে আমার অনুরিমার উপর একটা ট্রাই মারার চেষ্টা করছে ? সমীর নিজের ধন্ধের উত্তর খুঁজতে শেষ অবধি সবকিছু দেখার সিদ্ধান্ত নিলো।

রাজীব অনুরিমাকে হাত ধরে নিয়ে এসে ঝিলের সামনে বসলো। সমীর দূরে এক গাছের পিছনে বসে ওদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। রাজীব ও অনুরিমার পাশেই একটা কাপল বসে মেক আউট করছিলো। অনুরিমার তাতে প্রচন্ড অস্বস্তি হচ্ছিলো। সে বললো , "ইস্স , এখানে এরা এসব করছে। এখান থেকে চলুন। আমি আগেই বলেছিলাম এই জায়গাটা আপনার সাথে দেখা করার জন্য মানানসই নয়। এখানে লোকেরা হয় নিজের পরিবার নিয়ে আসে , নাহলে যুগলরা আসে প্রেম করতে , তাও এভাবে। এখানে কোনো পেশেন্ট পার্টি তার ডাক্তারের সাথে দেখা করতে আসেনা। "

"কিন্তু আমি তো যে সে ডাক্তার নই ম্যাডাম। আমি একজন যৌন-বিশেষজ্ঞ। আমার কাজ যৌনতা নিয়েই। তাই এসব ছোটখাটো বিষয়-তে বিচলিত হলে চলবে ! আপনাকে তো আরো অনেক কিছু এক্সপিরিয়েন্স করতে হতে পারে। "

"মানে ? কি বলতে চাইছেন আপনি ? আর কি দেখার আছে ? "

"এতো প্যানিক করবেন না। প্যানিক করার তো কিছু নেই। আচ্ছা আপনি কখনো সমীরের সাথে বি-গ্রেড সিনেমা দেখেছেন ? "

"নাহঃ। ছিঃ। "

"এতে ঘেন্না করার কিছু নেই। জীবনের সবচেয়ে আপনজনের সাথে এরকম ছোটোখাটো নোংরামো না করলে , জীবনের সব রং যে ফিকে হয়ে যায় , অনুরিমা। "

"হুম। .. কি জানি হয়তো আপনি ঠিক বলছেন। "

"যাক , আপনি যে অ্যাট লিস্ট অ্যাডমিট করতে পারছেন , এটাই অনেক। নাইস ডেভেলপমেন্ট। "

"দেখবেন , বেশি ডেভেলপ করতে গিয়ে আমার পুরো নেচার টাকেই ডেস্ট্রয় করে দেবেন না যেন। আমি এখন খুব কনফিউশনের মধ্যে আছি সমীরের স্টেট অফ মাইন্ডটা কে নিয়ে। ও কি চায় , কি করবে , আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। যতোদিন যাচ্ছে ততোই যেন ওকে নিয়ে এই আশংকার মেঘ আমার মনে ঘনীভূত হচ্ছে। তাই এই পরিস্থিতিতে আমি চাই আপনাকে বিশ্বাস করতে। কারণ এই বিকট সমস্যার সমাধান শুধু আপনার কাছেই থাকতে পারে। "

"চিন্তা করবেন না অনুরিমা , যখন বন্ধু বলে মেনেছেন ,তখন বন্ধুত্বের দায়িত্বটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো ", রাজীব অনুরিমার মাথায় হাত বুলিয়ে কথাটা বললো। অনুরিমা নিজের সম্পর্কের চিন্তায় এতোটাই নিজের মস্তিস্ককে ব্যাস্ত করে রেখেছিলো যে রাজীবের স্পর্শের খবর তার ইন্দ্রিয় তার মস্তিস্কর কাছে পাঠাতে পারলো না। নিমেষের মধ্যে রাজীবের এই ছোট্ট কিন্তু সাহসী পদক্ষেপ বিস্মৃতি তে পরিণত হলো।

কেন জানিনা মনে হচ্ছে ডক্টর রাজীব হয়তো আস্তে আস্তে অনুরিমার কাছে আসার চেষ্টা করছে। রাজীব খুব সাবধানে এবং প্রতিটা পদক্ষেপ খুব মেপে মেপে নিচ্ছিলো। তাই প্রথমে বন্ধুত্বের নামে অনুরিমার হাত ধরা , এখন অছিলায় অনুরিমার মাথায় একবার হাত বুলিয়ে নেওয়া শান্ত্বনার নামে। ইশারা কিন্তু মোটেই ঠিক দিয়ে নির্দেশ করছে না। রাজীব অনুরিমার এই দূর্বল পরিস্থিতির ফায়দা নিতে চাইছেনা তো ? নাহলে যৌন-বিশেষজ্ঞ রাজীব কখোন দায়িত্বপরায়ণ বন্ধু হয়েগেলো , আপনি ধরতে পারলেন না তো ?

দূর থেকে সমীর এই দৃশ্যটা দেখলো , যে রাজীব অনুরিমার মাথায় একবার হাত বোলালো। কেন বোলালো সে জানেনা , সে শুধু দেখলো অন্য একজন পুরুষ কিছু মুহূর্তের জন্য হলেও তার স্ত্রীয়ের ভরসার জায়গাটা তার কাছ থেকে কেড়ে নিলো। কারণ একজন পুরুষ যখন একজন স্ত্রীয়ের মাথায় হাত রাখে তখন সে বোঝাতে চায় যে সে তার পাশেই রয়েছে , সে নারী যেন তার ভরসার জায়গাটা তাকে দিতে পারে।
এটাই কি তবে প্রথম পদক্ষেপ ছিল , সমীরের ফ্যান্টাসি পূরণের ? এবার কি তবে স্বামীর কল্পনা স্বামীরই যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়াবে ?
 
পর্ব ১১

কিছুক্ষণ রাজীব ও অনুরিমা চুপ করে বসেছিল ঝিলের ধারে। আহঃ , কি মনোরম পরিবেশ ! নির্জনতা ছেয়ে রয়েছে। পাখি আর কয়েকজন প্রেমিক যুগল ছাড়া কেউ নেই। আর রয়েছে নতুন নতুন হওয়া এক গোয়েন্দা যে দূর থেকে নিজের স্ত্রীয়ের উপর নজর রাখছে, যাকে সে নিজেই পাঠিয়েছে সেখানে। একেই বলে ছেড়ে দিয়ে তেড়ে ধরা।

অনুরিমা হঠাৎ রাজীবকে জিজ্ঞেস করলো , "আমাকে কি করতে হবে ?"

"হুম ? কিছু বললেন ?"

"এই যে আপনি বারবার বলেন আপনি যা বলবেন তাই করলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তাই জিজ্ঞেস করছি , কি করতে হবে আমাকে , সমীরকে ফিরে পেতে গেলে ? "

"এতো তাড়াতাড়ি সব বললে আপনি নিতে পারবেন না। ইউ কান্ট ডাইজেস্ট ডোস থিংস টুগেদার। তাই একটু সময় নিন। আস্তে আস্তে বলবো সব করণীয়। "

"আমি আর সময় নিতে পারছি না রাজীব , আই এম টায়ার্ড অফ অল দিস স্টাফস। আমি ইমিডিয়েট সলিউশন চাই। তার জন্য আমার যা করার আমি সব করতে রাজি আছি। ইউ জাস্ট টেল। "

"আচ্ছা ! ঠিক আছে , তাহলে আমাকে কিস করুন , এক্ষুনি। " , রাজীব মওকে পে চওকা মেরে বললো। শেষমেশ অনুরিমার দূর্বল মুহূর্তের সুযোগ রাজীব নিতে শুরু করেই দিলো। ছিঃ , রাজীব ! তুমিও প্রমান করলে যে সুন্দরী নারী দেখলে যেকোনো পুরুষেরই তার পেশা কর্তব্য সবকিছু থেকে বিচ্যুতি ঘটে যায়।

"ওয়াট !!", অনুরিমার চোখ যেন বেড়িয়ে আসলো রাজীবের এরকম দুঃসাহসিক কথা শুনে।

"কুল ডাউন , আগে পুরো কথাটা শুনুন , তারপর রিএক্ট করবেন। "

"আর কিছু শোনার বাকি থাকতে পারে বলে আপনার মনে হয় ?", অনুরিমা ঝাঁঝিয়ে বললো।

দূর থেকে সমীর লক্ষ্য করলো যে অনুরিমা কোনো একটা বিষয় নিয়ে খুব হাইপার হয়েগেছে। কিন্তু বিষয়টা কি সেটা জানার কোনো উপায় ছিলোনা তার কাছে। আসলে এতো বড়ো ভিক্টোরিয়া গ্রাউন্ডে একমাত্র তারই তো শুধু খেয়ে দেয়ে কাজ ছিলো অনুরিমা ও রাজীবের প্রতিটি মুহূর্তের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করার।

রাজীব তাও শান্ত হয়ে নিজের কথার সমর্থনে দলিলটা অনুরিমার সামনে পেশ করলো , "এইটুকু কাজ আপনাকে করতেই হতো। আমার সাথে নাহোক অন্য কারোর সাথে। তাই বারবার আপনাকে একটা ছেলে বন্ধু বানাতে বলছিলাম। সমীরের কাকোল্ড ভূতটা ছাড়ানোর জন্য। আপনি খামোখা আমার উপর রাগ দেখাচ্ছেন। আপনিই আমাকে সেই বন্ধুর জায়গাটা দিয়েছেন। "

"তাই বলে সেই বন্ধুত্বের ফায়দা তুলবেন এভাবে , সেটা আমি আগে বুঝিনি। "

"আপনাকে আগেই বলেছিলাম আপনি এখুনি এসব ডাইজেস্ট করতে পারবেন না। তবুও আপনার যখন এতো তাড়া , তাহলে শুনুন , আপনার স্বামীর মন ও মস্তিষ্কে কাকোল্ড ফ্যান্টাসিটা জেঁকে বসেছে। সমীরকে সেখান থেকে বার করতে হলে সীতার মতো আপনাকে কিছু তো অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে , আপনি তার স্ত্রী বলে কথা। পার্থক্য শুধু একটাই , সীতাকে সতীত্বের পরীক্ষা দিতে হয়েছিল , আর আপনাকে কিছুটা অসতীত্বের দিতে হবে। কারণটা আপনাকে বুঝিয়ে বলছি , যদি আপনি ধৈর্য ধরে শুনতে চান। আদারওয়াইস ভিক্টোরিয়ার গেট-টা ওদিকে আছে , আপনি চাইলে চলে যেতে পারেন। আমি আটকাবো না। "

রাজীবের কথা শুনে অনুরিমা চুপ করে গেলো। ওর কাছে যে কোনো উপায় নেই। এই সমস্যার সমাধানে রাজীবই অ্যাস এ সেক্সওলোজিস্ট তার একমাত্র ত্রাতা। তার নিজও বুদ্ধি যে জবাব দিয়ে দিয়েছে , এই এতো কমপ্লিকেটেড সিচুয়েশনের থেকে বেড়োনোর রাস্তা তার জানা নেই। তাই এখন সে না চাইতেও রাজীবের মুখাপেক্ষী।

অনুরিমাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে রাজীব কারণ ব্যাখ্যা করতে শুরু করলো , "সমীরকে এই ফ্যান্টাসি থেকে বের করে আনার একটাই উপায় , ওকে একেবারের জন্য হলেও এই ফ্যান্টাসির পরিণতি সম্পর্কে অবগত করা। স্বপ্নে কল্পনায় ও যে সিনেমাটা দেখছে , তার ট্রেইলার যদি নাও দেখানো যায় , অ্যাট লিস্ট টিজার তো দেখাতেই হবে। তবেই ও বুঝবে কি মারাত্মক হতে পারে এসব কিছু বাস্তবে ঘটলে। যতোক্ষণ না ওর মনে তোমাকে হারানোর ভয় জন্মাচ্ছে , ততোক্ষণ ওর মুক্তি নেই এই ফ্যান্টাসির কবল থেকে। তাই সমীরকে একটা ডেমো দেখাতেই হবে। সেটা তখুনি সম্ভব যদি তুমি রাজি হও ওর সামনে আমাকে চুমু খেতে। সেটাই হবে প্রাকটিক্যাল ডেমো। সমীরের সামনে তোমাকে কিছু করতে হবে না।
আমিই তোমাকে কিস করবো , তুমি শুধু বাধা দিও না তখন। "

রাজীব এবার 'আপনি' থেকে 'তুমি' তে নেমে এসছিল। কিন্তু অনুরিমার সেইসবে কোনো খেয়াল ছিলোনা। তার সামনে যে তার চেয়েও অনেক বড়ো বিষয় ছিল ডিল করার। রাজীবকে কিস করতে হবে , তাও আবার সমীরের সামনে সমীরের ভালোর জন্যই।

"আপনাকে যদি এসব করতে আমি অ্যালাও করি , তাহলে আমার সংসার থাকবে ? আপনার কথা গুলো অবাস্তব বলে আপনার মনে হচ্ছে না ? সমীর আর আমার সম্পর্ক একেবারে শেষ হয়ে যাবে তখন। "

"আর আমি যদি সমীরের পারমিশন নিয়েই করি , তাহলে ?"

"আপনি কি পরিস্থিতির অ্যাডভান্টেজ নিতে চাইছেন ? আপনি জানেন এই সময়ে সমীরের মাথার ঠিক নেই। ও কি করছে , কি চাইছে , সেটা ও নিজেই জানেনা। সে যদি ঝোঁকের বশে আপনাকে অনুমতি দিয়েও দ্যায় , আমি সুস্থভাবে কি করে অ্যালাও করবো আপনাকে ?"

"সমীর কনফিউস্ড , তাই জন্যই তো এসব করতে বলা , যাতে সমীরের কনফিউশন দূর হয়। ওর মধ্যে যতোক্ষণ না গিল্ট ফিলিং কাজ করতে শুরু করবে ততোক্ষণ পর্যন্ত ওর মাথা থেকে আবর্জনা পরিষ্কার হবে না। "

"কিন্তু এটা আমার করা উচিত নয়। প্লিস অন্য কোনো উপায় ভাবুন। "

"দেখো তোমার সব প্রশ্নের উত্তর আমি যথাযথ যুক্তি দিয়ে দিলাম। তুমি জিজ্ঞেস করলে তোমাদের সম্পর্কের কি হবে , আমি বললাম সমীরের পারমিশন নিয়েই যা করার করবো , যাতে ভবিষ্যতে ও তোমাকে দোষারোপ করতে না পারে। তুমি ভাবলে আমি অ্যাডভান্টেজ নিচ্ছি , সমীরের যা অবস্থা সমীর পারমিশন দিয়েই দেবে। তুমি কেনো অ্যালাও করবে এসব , তাই তো ? কারণ সমীরকে ঠিক পথে নিয়ে আনতে। ওকে বোঝাতে যে স্বামীর এরূপ কল্পনা কিভাবে স্ত্রীয়ের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ওর এই রিয়েলাইজেশন-টা হওয়া খুব জরুরি। দ্যাটস ওয়াই ইউ হ্যাভ টু ডু দিস অনুরিমা। "

"আপনি এখন আমাকে কিস করতে বললেন কেন ?"

"তার পিছনেও একটা কারণ আছে, কিন্তু জানিনা সেটা তুমি মানবে কিনা। "

"কি কারণ ? বলুন। ...."

"জীবনে কোনো ইম্পর্টেন্ট কিছু পরীক্ষার আগে আমাদের একটা ভাইটাল জিনিস করার দরকার হয় , তা হলো প্রিপারেশন বা রিহার্সাল। সমীরকে যদি প্রথমবারই পারফেক্ট ডেমো দেখাতে পারি আমরা , তাহলেই আমাদের কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। নাহলে বারংবার করতে হতে পারে সমীরের সামনে কনভিনসিং দেখানোর জন্য। প্রথম তীরেই যে লক্ষভেদটা করতে হবে। তার জন্য তো আগে ধনুর বিদ্যাটা ঠিকমতো আয়ত্ত করতে হবে। "

"আমি প্রথমবারেই করতে পারবো , যদি আমাকে এই অগ্নিপরীক্ষাটা দিতেই হয়। তার জন্য কোনো রিহার্সালের দরকার পড়বেনা আমার। "

"আপনার সমস্যা হচ্ছে আপনি খুব একগুঁয়ে, জেদি। আপনি ভাবেন আপনি সব পারেন করতে। এটাই আপনার মস্ত বড়ো ভুল। ইউ হ্যাভ টু অ্যাডমিট যে ব্যাপারটা আপনার নিজের পক্ষে এতোটা সহজ হবেনা। কিস করা তো দূরের কথা আপনি আজ পর্যন্ত কোনো অন্য পুরুষকে ছুঁয়েও দেখেননি। তাই আসল সময়ে এসে আপনি সবকিছু ঘেঁটে দিতে পারেন। আমরা এটা একবারই করবো সমীরের সামনে , কিন্তু এমনভাবে করতে হবে যাতে সমীরের মনে গিয়ে লাগে , এবং সে নিজে আসে আমাদের আটকাতে। তবেই তার মাথা থেকে কাকোল্ডনেসের ভূতটা যাবে। "

রাজীব আবার 'তুমি' থেকে 'আপনি' তে আপগ্রেড করলো অনুরিমার প্রতি সম্বোধনটা কে। মনে রাখবেন বাঘ দু পা পেছোয় বড়ো লাফ মারার জন্যই।

"কিন্তু এসব রিহার্সাল আমি কি করে করবো ? প্লিস বুঝুন একটু ব্যাপারটা। "

"আমি বলেছিলাম আপনি যদি দাঁড়িয়ে থাকেন শিয়ালদাহ তে , তাহলে সমীর দাঁড়িয়ে আছে নিউ জলপাইগুড়িতে। আপনাদের দুজনকেই ফারাক্কায় মানে মাঝামাঝি একটা জায়গায় আসতে হবে। এবার আপনাকে তার জন্য ভালোমতো রিহার্সাল করে সমীরের সামনে আমাকে চুমু খেতে হবে। তখন সমীর আপনা আপনিই জলপাইগুড়ি ছেড়ে ফারাক্কায় এসে হাজির হবে , আমাদের ট্রেনটা কে আটকাতে। আর এইভাবেই সমীর কাকোল্ড ফ্যান্টাসির মায়াজাল থেকে মুক্ত হবে। "

অনুরিমা এবার বড়ো ডিলেমায়ে পড়ে গেছিলো। ও একদমই বুঝতে পারছিলোনা যে কি করবে। ও শুধু বললো , "আমার মাথা একদম কাজ করছে না ", এই বলে সে নিজের দুহাত দিয়ে মাথা চেপে নিচু করে বসে রইলো। রাজীব ওকে সময় দিলো নিজেকে সামলে নিয়ে ওঠার। তারপর অনুরিমার কানের কাছে মুখটা নিয়ে গিয়ে বললো , "ইউ ক্যান ডু ইট অনু , ইউ আর আ ফাইটার। ইউ শুড ফাইট ফর ইওর লাভ। সো লেট্স ডু ইট .... " .... এই বলে রাজীব দু'হাত দিয়ে অনুরিমার মুখটা কে আলতো করে চেপে ধরলো। ধরে নিজের মুখের কাছে নিয়ে আনলো চুমু খাওয়ার জন্য। অনুরিমা সঙ্গে সঙ্গে দুটি ঠোঁটের মাঝখানে হাত রেখে বললো , "এখানে না। "

রাজীব বুঝতে পারলো দ্যাট হি হ্যাস ডান দা জব। সে পেরেছে , পেরেছে অনুরিমার মতো মেয়েকে কনভিন্স করতে। ইয়েস্স !!.. দূর থেকে সমীর সবটা দেখলো। সে বাকরুদ্ধ হয়েগেলো রাজীবের বোল্ডনেস দেখে। অনুরিমার আচরণও তাকে খুব একটা সন্তুষ্ট করতে পারেনি। কারণ সমীর যে অনুরিমা কে চেনে সে রাজীবকে তার কান অবধি পৌঁছতে দিতোনা , ঠোঁটের কাছে তো অনেক দূরের ব্যাপার।
 
পর্ব ১২

অনুরিমা সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিলো। সে ভাবলো কি বললো এটা সে !! এখানে না , মানে ? তার মানে কি সে অন্য কোথাও 'রিহার্সাল' করতে চায় ? সর্বোপরি সে কি রাজি ? নিজেই নিজেকে মনে মনে প্রশ্ন করতে শুরু করলো। তখুনি রাজীব আস্তে করে অনুরিমাকে বললো , "আমি বুঝতে পারছি এই খোলামেলা জায়গায় তুমি হেসিটেট ফীল করছো। ঠিক আছে , তাহলে অন্য কোথাও যাওয়া যাক রিহার্সের জন্য। "

"মিস্টার রায় , আমার একটু সময় লাগবে , ভাবার জন্য। আমি এখুনি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। "

"ওকে , টেক ইওর টাইম। "

দুজনেই ঠিক করলো আজকের মতো তাদের মিটিং এখানেই ইতি। তাই তারা উঠে পড়লো নিজ নিজ গন্তব্যে ফেরার উদ্দেশ্যে। কিন্তু যাওয়ার আগে রাজীব এবার অনুরিমার সাথে ফোন নম্বর আদান প্রদান করতে ভুললো না। সাথে সে অনুরিমা কে এও বললো যে যেকোনো প্রকার দরকার পড়লে সে যেন রাজীবকে স্মরণ করতে না ভোলে।

ভিক্টোরিয়া থেকে বেড়িয়ে অনুরিমা একটা ট্যাক্সি ধরলো। রাজীব বলছিলো তাকে ড্রপ করে দেবে , বাড়িতে নাহোক নিয়ারেস্ট কোনো ডেস্টিনেশন পয়েন্টে। কিন্তু অনুরিমা পোলাইটলি ভাবে সেই অফার রিফিউস করলো। অনুরিমার মনের অবস্থা বুঝে রাজীবও তাই বেশি জোরাজুরি করলো না।

বাড়ি ফিরে অনুরিমা যথারীতি নিজের সাংসারিক কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। ওদিকে সমীর ওদের ফিরে যেতে দেখে নিজেও গাড়ি নিয়ে অফিসের দিকে রওনা দিলো। আজকে নাহয় সে অফিসে হাফটাইম করবে। কিন্তু রাজীবের সেই দুঃসাহসিকতা কি তাকে অফিসের কাজে মনোযোগ দিতে দেবে ?

সন্ধ্যে সমীর বাড়ি ফিরে দেখলো অনুরিমা যথারীতি তার জন্য চা বানিয়ে এনেছে। দৈনন্দিনের মতো এটাও আরেকটা স্বাভাবিক দিন। রাতে খাওয়ার পর শুতে যাওয়ার আগে অনুরিমা অনেকদিন পর তার সাদা স্লীভলেস নাইটি-টা পড়েছিলো। এই নাইটিটা অনেকদিন আগে সমীরই তাকে গিফট করেছিল , রাতের বেলা পড়ে যৌন আনন্দ দেওয়ার জন্য।

সমীর ভাবলো অনুরিমা হয়তো আজকে ঘটে যাওয়া রাজীবের দুঃসাহসিক পদক্ষেপে উত্তেজিত হয়ে এই পোশাকটা পড়েছে। ভেতর ভেতর সে হয়তো রাজীবের জন্যই গরম হয়ে আছে। কিন্তু আসলে অনুরিমা এই নাইটি-টা পড়েছিল অন্য কারণে। সে একবার শেষ চেষ্টা করতে চাইছিলো ওইসব ডেমো-ফেমো না দেখিয়ে যদি তার স্বামীকে সঠিক পথে ফেরানো যায়। সে যদি আজকে তার স্বামীকে বিছানায় সন্তুষ্ট করতে পারে , তাহলে মে বি সমীর আবার পুরোনো সমীর হয়ে উঠবে।

নাইটি পড়ার কারণ সমীর ভুল জাজ করলেও এটা বুঝতে সমীরের দেরী হয়নি যে আজ অনুরিমা চায় ওকে , বিছানায় , ভালোবাসতে। কারণ অনুরিমা তার স্বামীকে স্বামী হিসেবে ফিরে পেতে চায় , নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে। আর সমীর ? সে তো আবার ছদ্মবেশ ধারণ করতে শুরু করেছিলো , তবে সেটা মনে মনে। তার মাথায় তখন দুপুরে ঘটে যাওয়া রাজীবের সেই কাছে আসার মুহূর্তটা ঘুরছিলো। তাই সে না চাইতেও নিজেকে মনে মনে রাজীব ভাবতে শুরু করেছিল।

রাজীব থুড়ি সমীর ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছিলো অনুরিমার দিকে। অনুরিমা একটু লজ্জা পাচ্ছিলো। আসলে বেশ কয়েকদিন পর সে তার স্বামীর সাথে মিলিত হচ্ছিলো। এমনিতেই সেক্স সম্বন্ধ বিষয়ে সে বরাবরই খুব লাজুক। যাই হোক , সমীর যখন ওকে ছুঁলো , ওর শরীরে ৪৪০ ভোল্টের কারেন্ট বয়ে গেলো। কিন্তু সমীর ভাবলো , সে নয় , রাজীব ওকে ছুঁয়েছে। তাই ভেবে সমীরের শরীরে উত্তেজনার ঢেউ বইতে শুরু করলো।

সমীর অনুরিমাকে নিয়ে গিয়ে বিছানায় পড়লো। চটজলদি নিজের ও অনুরিমার নিচের দিকের কাপড় খুলে ফেললো। সঙ্গে সঙ্গে নিজের লিঙ্গ অনুরিমার যোনিতে ঢুকিয়ে দিলো। পুরো কাপড় খোলারও প্রয়োজন বোধ করলো না সমীর , এতোটাই সে রাজীবকে কল্পনা করে উত্তেজিত ছিল। সমীরের এই মনোভাবে অনুরিমা একটুও স্যাটিসফাই ছিলোনা। সমীর দায়সাড়া ভাবে রাজীবকে কল্পনা করে কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের বীর্য অনুরিমার যোনিতে ঢেলে দিয়ে শুয়ে পড়লো।

জীবনে প্রথমবার অনুরিমার মনে হলো দ্যাট সামথিং ইস মিসিং। সমীর কুডুন্ট স্যাটিসফাই হার টুনাইট। অনুরিমা ভাবলো, আজকেরটা একটু বেশিই তাড়াতাড়ি ও তাড়াহুড়ো করে করা সঙ্গম ছিল। অনুরিমার কখনোই এসব নিয়ে সমীরের প্রতি কোনো কমপ্লেইন ছিলোনা। সে যে সমীরকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু ভালোবাসার মোহঃ আপনার ভুল গুলোকে একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ছাড় দ্যায়। যখন জল মাথার উপর দিয়ে বইতে শুরু করে তখন না পেরে মানুষ হাতের কাছে উপস্থিত যেকোনো একটা শিখন্ডি ধরে সাঁতরে উঠতে চায়। অনুরিমার কাছে সেই শিখন্ডি কি তবে রাজীব ছিল ?

পরের দিন সকালে অনুরিমা দেখে তার ফোন সুচরিতার মেসেজ। সে বারবার অনুরিমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে সে বিশ্বাসঘাতক নয় , সে অনুরিমার কোনো বিশ্বাস ভাঙেনি। তার প্রাক্তন স্বামী অনুরিমার মতোই তার একজন বিশস্ত বন্ধু , যে কোনো কথা পাঁচকান করবে না , উপরন্তু সে সাহায্যই করবে। তাই সে সমীরের ব্যাপারটা আদিত্য কে জানিয়ে ছিল।

এরই মধ্যে অনুরিমার রাগ কিছুটা ঠান্ডা হয়েছিল। সে ভাবলো একবার তার বন্ধুর কথাটা তার শোনা উচিত। সে তাই সুচরিতাকে আবার মিট করতে বললো। কিন্তু এবার আদিত্যকে না নিয়ে আসার কথা কড়া ভাবে জানিয়ে দিলো। সুচরিতা রাজি হয়েগেলো তার এই শর্তে।
 
just wow wow wow খুব ইন্টারেস্টিং গল্প হচ্ছে।খেলককে ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করা যাবে না। প্লিজ গল্পটা সম্পুর্ন করে যাবেন

পরের পর্বগুলোর অপেক্ষ্যায় আছি হতাশ করবেন না নিশ্চয়ই

প্রিয় লেখক আপনার আপডেট এর উপেক্ষায় আছি ।আর কতো অপেক্ষায় রাখবেন পাঠকদের
 
লেখক কি এইভাবে গল্প লেখা বন্ধ করে দিবে ।যদি মাঝখানে এসে বন্ধ করেই দিতে হয় তাহলে তিনি গল্প লিখেন কেন ।
 
পর্ব ১৩

পরের দিন সকালে অনুরিমা দেখে তার ফোন সুচরিতার মেসেজ। সে বারবার অনুরিমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে সে বিশ্বাসঘাতক নয় , সে অনুরিমার কোনো বিশ্বাস ভাঙেনি। তার প্রাক্তন স্বামী অনুরিমার মতোই তার একজন বিশস্ত বন্ধু , যে কোনো কথা পাঁচকান করবে না , উপরন্তু সে সাহায্যই করবে। তাই সে সমীরের ব্যাপারটা আদিত্য কে জানিয়ে ছিল।

এরই মধ্যে অনুরিমার রাগ কিছুটা ঠান্ডা হয়েছিল। সে ভাবলো একবার তার বন্ধুর কথাটা তার শোনা উচিত। সে তাই সুচরিতাকে আবার মিট করতে বললো। কিন্তু এবার আদিত্যকে না নিয়ে আসার কথা কড়া ভাবে জানিয়ে দিলো। সুচরিতা রাজি হয়েগেলো তার এই শর্তে।

সেদিনই বিকেলে অনুরিমা আবার গেলো সুচরিতার সাথে দেখা করতে। সে যে দোটানার মধ্যে রয়েছে তাতে পারলে শত্রুকেও সে একবারের জন্য বিশ্বাস করতে পারে , সুচরিতা তাও তো ওর বান্ধবী ছিল , সেটাও আবার কলেজ জীবনের।

অনুরিমার সাথে দেখা হওয়া মাত্র সুচরিতা ওকে সব খুলে বলতে লাগলো। আদিত্য কৌতূহলবশত অনুরিমার সম্পর্কে ওর কাছে জানতে চেয়েছিলো। তখন ও আদিত্যকে সব খুলে বলে অনুরিমা এবং সমীরের সমস্যার ব্যাপারে। তখন আদিত্যও চায় অনুরিমার এই জীবনযুদ্ধে তার সৈনিক হতে। তাই সুচরিতা সেদিন তার প্রাক্তন স্বামীকে নিয়ে এসেছিলো অনুরিমার সাথে দেখা করাতে।

সুচরিতার যুক্তিতে অনুরিমা কিছুতেই কনভিন্সড হচ্ছিলো না। অনেকবার করে বোঝানোর পর ফাইনালি অনুরিমা মেনে নিলো সুচরিতার সব যুক্তি। কিন্তু একটা শর্তে , অনুরিমা না চাইলে বা অনুরিমাকে না বলে সুচরিতা আর কোনো কথা আদিত্য সেনগুপ্তকে বলবে না। তবেই অনু বিশ্বাস করে আবার সব কথা সুচরিতার সাথে শেয়ার করতে পারবে , নতুবা নয়। এই শর্তে সুচরিতা এক কথায় রাজি হয়েগেলো। এরপর জিজ্ঞেস করতে লাগলো কেন অনু তাকে আজ ডেকে পাঠালো , শুধুই কি তাদের মধ্যে সবকিছু শর্ট আউট করতে নাকি আরো কিছু কথা আছে যা বলার আছে।

অনুরিমা আস্তে আস্তে নিজের কথার বাক্স খুলতে লাগলো। সে বললো রাজীব তাকে কি কি করতে বলেছে। শুনে তো সুচরিতা অবাক ! মুখে হাত দিয়ে সে বসে পড়লো। ভাবতেই পারছে না , যে বান্ধবী তার কোনোদিন সমীর ব্যাতিত আর কারোর কথা কল্পনাতেও আনেনি , তাকে কিনা এখন অন্য পুরুষকে চুমু খেতে হবে তাও সেটা সমীরকে "সুস্থ" করার জন্য !

"আর ইউ সিরিয়াস ? তুই এটা পারবি করতে ?"

অনুরিমা খুব হেসিটেট ফীল করছিলো , কি বলে উঠবে বুঝে উঠতে পারছিলোনা। সুচরিতা অনুরিমার দ্বন্দ্ব অনুভব করতে পারছিলো। সে অনুরিমার হাতটাকে আলতো ভাবে ধরে বললো , "দেখ অনু , আমি জানি তুই এখন অনেক বড়ো ধর্মসংকটে পড়েছিস। এই পরিস্থিতিতে কোনো একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছনো তোর পক্ষে খুবই কঠিন। কিন্তু তুই যদি আমার সাজেশন চাস , তাহলে আমি বলবো , রাজীবের কথাটা তোর একবার ভেবে দেখা উচিত। ওর কথায় কিন্তু যুক্তি রয়েছে। সর্বোপরি ও একজন সেক্সওলজিস্ট, এসব ব্যাপারে তোর আমার থেকে ও বেশি বুঝবে। "

"কি গ্যারান্টি আছে সুচরিতা , যে রাজীব যা বলছে সেটা আমার আর সমীরের ভালোর জন্য। হতেই পারে এর পেছনে ওর কোনো অন্য উদ্দেশ্য আছে। "

"আমি বুঝতে পারছি , তুই ঠিক কি বলতে চাইছিস। আসলে দোষ তোর নয়। তুই ওর ব্যাপারে সবটা জানিসনা তাই এইভাবে ভাবছিস। কিন্তু আমি তো ওকে চিনি। আমি জানি ও এরকম ছেলেই নয়। ও খুব ভালো ছেলে , কিন্তু বেচারার জীবনে অনেক দুঃখ রয়েছে। "

"দুঃখ ! কিসের দুঃখ ?"

"রাজীব নিজের স্ত্রী মৌ-কে খুব ভালোবাসতো। ওদের লাভ ম্যারেজ ছিল। বিয়ের প্রথম কয়েকটা বছর খুব সুখেই কাটছিলো। কিন্তু ওদের জীবনে একটা শূন্যস্থান ছিল, ওদের বাচ্চা হচ্ছিলো না। রাজীব নিজের উদ্যোগে ডাক্তারের কাছে গিয়ে টেস্ট করে জানতে পারে যে সে সম্পূর্ণ সুস্থ ও সক্ষম। তার স্ত্রীয়ের মধ্যে কিছু সমস্যা রয়েছে যা চিকিৎসা করলে সেরে যাবে। ব্যাপারটা খোলসা করে সে মৌ-কে জানায়নি , পাছে সে দুঃখ পায়। সে বলতো সমস্যা একটা রয়েছে দুজনের যা চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। কিন্তু মৌ ভাবতো সমস্যা বুঝি শুধু রাজীবের রয়েছে , নিজের অক্ষমতা ঢাকতে সে এই সমস্যাকে ভাগ করে নিতে চাইছে। প্রথম প্রথম মৌ এসব নিয়ে কিছু বলতো না। কিন্তু একদিন হঠাৎ রাজীব জানতে পারে তার আদরের মৌ তার সাথে প্রতারণা করছে। সে তার অফিসের এক কলিগের সাথে পরকীয়াতে জড়িয়ে পড়েছে। রাজীব তারপরেও চেষ্টা করেছিলো নিজের বিয়েটাকে বাঁচানোর। কিন্তু ওর স্ত্রী নাছোড়বান্দা ছিল। রাজীবের নামে সে মিথ্যে অভিযোগ আনতে লাগলো। বললো রাজীব নাকি ইম্পোটেন্ট , সে তার স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করতে অক্ষম , আর এই মিথ্যে কথাটা সে রটিয়ে দেবে। লোকলজ্জার ভয়ে তাই রাজীব বাধ্য হয় মৌ কে নিঃশর্ত ডিভোর্স দিতে। কিন্তু রাজীব তো জানতো তার মধ্যে কোনো অসুবিধা ছিলোনা। তার স্ত্রী তার ভালোমানুষির সুযোগ নিয়ে তাকে জাস্ট ব্ল্যাকমেইল করেছিল সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। এরপর রাজীব সেক্সওলজি নিয়ে পড়াশুনা করতে লাগলো। ও প্রথমে একজন জেনারেল মেডিসিনের ডক্টর ছিল। তারপর সেখান থেকে স্ট্রিম চেঞ্জ করে সেক্সওলজি বিভাগে চলে এলো। যাতে ওর মতো আর কোনো স্বামীকে এরকম সমস্যার মুখোমুখি না হতে হয়। ও যদি মেডিসিনের ডাক্তারিটা চালিয়ে যেত তাহলে আজ না জানি কতদূর পৌঁছে যেত। যৌন বিষয়ে কথা বলতে ক'জনই বা আসে। সবাই যে লোক লজ্জার ভয় পায়। কিন্তু তবুও রাজীব সেক্সওলজির ক্লিনিকই চালায়। আশা করছি এবার তোর ওকে নিয়ে সব ডাউট ক্লিয়ার হয়েছে ?"

সব কথা শুনে অনুরিমা মাথা নিচু করে বললো , "আমি জানতাম না ওনার জীবনে এতো কিছু ঘটে গ্যাছে ", মনে মনে অনুরিমার একটু খারাপ লাগলো , রাজীবকে নিয়ে স্বল্প সিমপ্যাথির উদয় হলো।

"তাই তোকে বলি , আগে থেকে কারোর ব্যাপারে কোনো জাজমেন্ট দিয়ে বসিস না। এই যেমন তুই আদিত্যকেও ভুল বুঝলি। সেও কিন্তু শুধু তোর হেল্প করতেই চেয়েছে। ওর সাথে আমার বিয়েটা টেকেনি ঠিকই ফর সাম ফ্যামিলি ইস্যুস, কিন্তু তবুও বলবো মানুষ হিসেবে ও সত্যি অতুলনীয় , এখনও তাই ওকে মনে মনে আমি খুব রেসপেক্ট করি।"

অনুরিমা আর কিচ্ছু বুঝতে চাইছিলো না। ওর মাথা হ্যাং হয়েগেছিলো এতো ভাবনার যানজটে। সে মাথায় হাত চেপে বসেছিলো। সুচরিতা ওকে সময় দিচ্ছিলো নিজের ভাবনাগুলো কে একের পর এক সাজিয়ে সেই যানজটকে মুক্ত করার। অবশেষে অনুরিমা মুখ খুললো। .......

"তাহলে তুই কি অ্যাডভাইস করছিস ?"

"আমি রাজীবকে ভালোমতো চিনি। ও খুব বিশ্বস্ত ছেলে। আমার মনে হয় ওর সবকথা তোর অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলাটাই একমাত্র অপশন। ও যদি এখন তোকে জলে ঝাঁপও দিতে বলে তাহলেও তোর সেটাই করা উচিত। ওর উপর বিশ্বাস করে দেখ , ঠকবি না। "

সেদিনের মতো অনুরিমা ও সুচরিতার মধ্যেকার বাক্যালাপ শেষ হলো। অনুরিমা বাড়ি ফিরে এলো , আর ভাবতে লাগলো তার পরবর্তী পদক্ষেপ কি হওয়া উচিত। অনেক ভাবনা চিন্তা করার পর সে নিজের ফোনটা হাতে নিলো , নিয়ে রাজীবকে কল দিলো। রাজীব ধরলো , ফোনটা।

অনুরিমা বুকে পাথর চাপা দিয়ে রাজীবকে বললো সে সব শর্তে রাজি আছে। রাজীব যা যা বলবে অনুরিমা তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে , তাতে যদি তার স্বামী পূনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে তাহলে তাই ঠিক। রাজীব তাকে আরেকদিন দেখা করতে বললো। জানালো তাদের "রিহার্সাল" খুব শীঘ্রই শুরু করতে হবে নাহলে অনেক দেরী হয়ে যাবে সমীরকে মূলস্রোতে ফেরাতে। অনুরিমা রাজীবকে অনুরোধ করলো এসব যতোটা সম্ভব কম করার চেষ্টা করতে , কারণ সে সমীরের পতিব্রতা স্ত্রী , তাকে এসব কাজ শোভা পায়না। পাঁকে পড়ে সে এসব করতে বাধ্য হচ্ছে। রাজীব ফোনে আশ্বাস দিয়ে বললো কমল তো পাঁকেই ফলে। গায়ে কাদা না মাখলে আগামী দিন পদ্মের ন্যায় সুশোভিত হবে কি করে ! রাজীবের ইঙ্গিত বুঝতে অনুরিমার অসুবিধা হলো না। সে ইতিবাচক সম্মতি দিয়ে ফোন রেখে দিলো।

সেই সপ্তাহের শনিবার রাজীব তাদের আসতে বারণ করে দিলো। জানতো যে এসেও কোনো লাভ নেই। যেই সমাধান সে বার করেছে তার জন্য আগে অনুরিমাকে তৈরী হতে হবে। তার আগে সমীরের সাথে সিটিং করে কি হবে। অনুরিমা কে রাজীব অনুরোধ করলো তাদের পরিকল্পনার সম্পর্কে সমীরকে কিছু না জানাতে , খানিকটা কাউন্সেলিং এর স্বার্থেই। কিন্তু অপরদিকে রাজীব সমীরের সাথে আলাদা ভাবে ফোনে কথা বলে রেখেছিলো ! কবে কোথায় সে অনুরিমার সাথে দেখা করবে সব ডিটেইলস সমীরকে আগাম দেবে বলে আশ্বাস দিয়ে রেখেছিলো !

আসলে রাজীব তখন ডাবল গেম খেলছিলো, তাদের স্বার্থেই। রাজীব অনুরিমাকে যথা সম্ভব সেক্সচুয়ালি ওপেন করার চেষ্টা করছিলো , অপরদিকে সমীরকে কিছুটা হলেও কাকোল্ড অভিজ্ঞতার স্বাধ দেওয়ার চেষ্টা করছিলো। যাতে দুদিকটাই বজায় থাকে। এর মাধ্যমে সে নিজের সেই থিওরির উপরই কাজ করছিলো , যেখানে দুজন দুই বিপরীত প্রান্তে দাঁড়িয়ে , দুজনকে একত্রে মধ্য বিন্দুতে নিয়ে আনতে হবে। এক কথায় শিয়ালদাহ আর নিউ জলপাইগুড়ির ট্রেন দুটিকে ফারাক্কায় নিয়ে আসার ব্যাপার।

আসলে ফ্ল্যাশব্যাকে গেলে বোঝা যাবে যে রাজীবের বাজপাখির নজর থেকে সেদিন সমীর লুকোতে পারেনি। ভিক্টোরিয়ায় সে যতোই ছদ্মবেশে যাক , অনুরিমা না পারলেও রাজীব ঠিক সমীরকে চিনতে পেরেছিলো। তখন কিছু না বললেও পরে ফোন করে রাজীব সেই কথা সমীরকে জানায়। ধরা পড়ে সমীর বাধ্য হয় স্বীকার করতে যে সে ভিক্টোরিয়ায় নিজের স্ত্রী ও রাজীবের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করতে গেছিলো, সন্দেহের বশে নয় , তবে কৌতূহলবশে। রাজীব বুঝতে পারে সমীর তার কাকোল্ড ফ্যান্টাসির তাড়নায় এসব করেছিলো। রাজীব তখন সমীরকে আশ্বাস দ্যায় যে তার গোপনে তার স্ত্রীয়ের সাথে সে কোনো অভিসারে লিপ্ত হবে না। যা করবে , বা যদি কিছু করার থাকে তাহলে সেটা সমীরকে সাক্ষী রেখেই করবে।

এরপর শুরু হয় রাজীবের পরবর্তী পরিকল্পনা। সে অপেক্ষা করতে থাকে অনুরিমার ফোন কলের। এর মাঝে অনুরিমা সুচরিতার কাছে পরামর্শ নিতে যায়। তারপর অবশেষে অনুরিমা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে সে রাজীবের সব কথা মানবে , সমীরকে ঠিক করার স্বার্থে। তাই সে বহুকাঙ্খিত ফোন কলটি করেই ফেলে রাজীবকে এবং বলে সে রাজি , রাজীবের সব কথা মেনে চলতে।
 
পর্ব ১৪

পরের সপ্তাহের সোমবার রাজীব অনুরিমাকে মানি স্কোয়ারে আসতে বলে, দুপুরবেলায় , যাতে অনুরিমা বাড়ির সব কাজ সেরে নিশ্চিন্তে আসতে পারে। সমীরকেও সে টাইম এন্ড লোকেশন জানিয়ে দ্যায় , সেই মতো সমীরও অফিস থেকে হাফ ডে নিয়ে ন্যায়। দুটো নাগাদ অনুরিমা মানি স্কোয়ারে এসে পৌঁছয়। তার আগে সে তিন্নিকে স্কুল থেকে বাড়ি নিয়ে আসে , যাতে তার শ্বশুর শাশুড়ি কে কষ্ট করতে না হয়।

রাজীব মানি স্কোয়ারে অনুরিমার জন্য অপেক্ষারত ছিল। অনুরিমাকে দেখা মাত্র সে তার পানে এগিয়ে গেলো। অনুরিমাও তখন খেয়াল করলো তাকে। দুজনের মধ্যে প্রথমে ফর্মাল হাই-হ্যালো হলো, তারপর রাজীব অনুরিমাকে অনুরোধ করলো মলের ভেতর যেতে। দুজনে একসাথে প্রবেশ করলো মানি স্কোয়ারে।

অনুরিমা জানতে চাইলো রাজীব কেন তাকে আজ মানি স্কোয়ারে দেখা করতে বললো। রাজীব উত্তর দিলো যে আজ সে প্ল্যান করেছে মানি স্কোয়ারের পিভিআর এ নূন শো দেখার। সোমবারের এই সময় পিভিআর এর হল প্রায় খালিই থাকে , তাই প্রাইভেসী নিয়ে কোনো সমস্যা হবেনা। এখানেই সেই রিহার্সাল শুরু করা যাবে।

রিহার্সালের কথা শুনে অনুরিমার বুক ধড়পড় করতে লাগলো। সে কিছুটা আঁতকে উঠে বললো , "আজকেই ! আজ থেকেই ওসব করতে হবে ?"

কিছুটা বিরক্তিভাব মুখে নিয়ে রাজীব বললো , "তাহলে তোমাকে আজকে ডাকলাম কেন অনুরিমা ? শুধু গল্প করার জন্য ? এইটুকু কমন সেন্স তোমার নেই ?"

রাজীবের বকা খেয়ে অনুরিমার মুখ ভিজে বেড়ালের মতো চুপসে গেলো। সে বেশি উচ্চবাচ্য করতে পারলো না। অনুরিমার অবস্থা দেখে এবার রাজীব একটু নরম গলায় বললো , "দেখো অনুরিমা , ভিক্টোরিয়ার মতো কোনো খোলা জায়গায় এসব করলে তোমার অস্বস্তি বাড়তো বই কমতো না। আর আমার বাড়িতেও তুমি আসতে না , আমি জানি। আসবেই বা কেন , আমি তো তোমার কয়েকদিনের পরিচিত মাত্র। তাই এখনও পর্যন্ত তোমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস না অর্জন করতে পারাটাই স্বাভাবিক। অগত্যা এমন একটি জায়গা আমাদের বেছে নিতে হতো যেখানে আমাদের প্রাইভেসী ডিস্টার্ব করার মতো লোক প্রায় থাকবেনা বললেই চলে। অনেক ভেবেচিন্তে তাই এর থেকে ভালো সময় ও জায়গা আমি আপাতত খুঁজে পাইনি। দুপুরের শো তে , তাও আবার সোমবারে , লোকে এই সময় সিনেমা দেখতে আসেনা বললেই চলে। বিশ্বাস নাহলে হলের ভেতরে গেলেই বুঝতে পারবে। তাও আমি প্রাইম রো তে পেছনের দিকে টিকিট কেটেছি , যাতে স্বল্প সম্ভাবনাও না থাকে তোমার প্রাইভেসী নষ্ট করার। তাছাড়া যে গুটি কয়েকজন থাকবে তাদের চোখ অন্ধকারে সিলভার স্ক্রিনেই থাকবে , তোমার দিকে নয়। তাই তোমার কোনো ভয় নেই।...... এসো আমার সাথে, তুমি নির্দ্বিধায় আমায় বিশ্বাস করতে পারো। "

অনুরিমা আর কোনো অহেতুক প্রশ্ন না করে রাজীবের কথা মতো তার সাথে পিভিআর এর সিনেমা হলের দিকে যেতে লাগলো। রাজীব আগে থেকে অনলাইনে সিট দেখে টিকিট কেটে রেখেছিলো। তাই তারা সোজা সিনেমা হলে প্রবেশ করলো। অনুরিমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছিলো নার্ভাসনেসে। তারা টিকিট নাম্বার অনুযায়ী পিছনের দিকে প্রাইম সিটে গিয়ে বসলো। আশানরুপ ভাবেই হল প্রায় ফাঁকা ছিল। কিন্তু সেইসব দিকে অনুরিমার মন ছিল। তার মন তখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলো 'রিহার্সাল' এর জন্য। রিহার্সাল তো নয় যেন অগ্নিপরীক্ষা ছিল তার কাছে।

ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সে রাজীবকে বললো , "দেখুন , বেশি কিছু আমি করতে পারবো না। আমার ব্যাপারটা একটু বুঝুন। আমি যা করছি শুধু আমার স্বামীর জন্য , শুধু তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য। তাই আমার মনে হয় আমাদের ওপর ওপর যা করার করতে হবে , যতোটা না করলেই নয় , অতো গভীরভাবে লিপ্ত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। "

রাজীব কিছুটা ভেবে ঠান্ডা মাথায় বললো , "আমি জানি আপনি যা করছেন নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে করছেন , সমীরবাবুর ভালোর জন্য করছেন। তবে আপনাকে একটা কথা বলি শুনুন, ......... আপনি নিশ্চই মহাভারত পড়েছেন?.... সেখানে সবচেয়ে পবিত্র নারী ছিলেন দ্রৌপদী , যার বস্ত্রহরণের প্রচেষ্টার কারণেই মহাভারতের যুদ্ধ লেগেছিলো। সেই দ্রৌপদীর কয়টি স্বামী ছিল ? .. পাঁচটি ! কি করে তার পাঁচটি স্বামী হলো ? সে স্বয়ংবরে শুধু অর্জুনকে পছন্দ করেছিল। শুধু অর্জুনকেই সে ভালোবাসতো। কিন্তু তার শাশুড়ির কথায় তাকে তার বাকি চার ভাইয়ের সাথেও বিয়ে করতে হয়েছিলো। বিয়েটা তার খানিকটা অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও পরে সে পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলো। পাঁচ ভাইয়ের সাথে সমান ভাবে সে সংসার করেছিল। প্রত্যেকের সাথে ক্রমান্বয়ে এক বছর করে সে দাম্পত্য জীবন কাটাতো। প্রত্যেকের সাথে সে সহবাসে লিপ্ত হয়েছিল এবং প্রত্যেকের সন্তানের জননী হয়েছিল। আমরা সবাই সতী সাবিত্রীর উদাহরণ দিই , কিন্তু আমরা ভুলে যাই যে এই দেশ যতোটা সাবিত্রীর ততোটা দ্রৌপদীরও। তাই কখনো কখনো পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে পরিবর্তন করাই হলো এক আদর্শ নারীর উপযুক্ত লক্ষণ। পাপ পুণ্য এসব আপেক্ষিক ব্যাপার। যদি সেই যুগে একাধিক পুরুষের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েও দ্রৌপদী কোনো পাপ করে না থাকে তাহলে এই যুগে আমার সাথে বসে আপনিও এখন কোনো পাপ করতে যাচ্ছেন না। কোনো কাজের পিছনে যদি যথার্থ কোনো কারণ থাকে তাহলে সেই কাজ যতোই নিকৃষ্ট হোক না কেন , তাকে কখনোই পাপ বলে গণ্য করা হয়না। "

বলতে বলতে হলের আলো নিভে গেলো, সিনেমা শুরু হতে যাবে বলে। লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলে রাজীব বললো , "আশা করছি , আপনি আমার কথা গুলো বুঝতে পেরেছেন। এবার তাই দয়া করে আমি যা করতে চলেছি তার সাথে সায় দিয়ে একটু সহযোগিতা করুন আমায়।"

এই বলে রাজীব অনুরিমার দিকে হাত বাড়ালো। তাকে আলতো করে স্পর্শ করলো। অনুরিমার বুকের ভেতর যেন এক দমকা হাওয়া বয়ে গেলো। আর চার পাঁচটা দিনের মতোই সেদিন অনুরিমা একটি সুতির শাড়ি পড়েছিল , সাথে হাফ হাতা ব্লাউজ , যা আপামর মধ্যবিত্ত ঘরণীরা পড়ে থাকে। কচি কলাপাতা রঙের ছিল শাড়ি ও ব্লাউজটি। যা তার রূপকে আরো বেশি স্নিগ্ধ ও পবিত্র করে তুলছিলো। কিন্তু এই পবিত্রতা সে কতোক্ষণ আর ধরে রাখতে পারবে , তা ছিল তখন লাখ টাকার প্রশ্ন !

আলতো ছোঁয়ার পর রাজীব কিছু মুহূর্তের মধ্যেই অনুরিমাকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করলো। অনুরিমা হতচকিত হয়েগেলো ! এতো তাড়াতাড়ি রাজীব এতোটা এগিয়ে যাবে সেটা সে কল্পনা করতে পারেনি। সে শুধু মৃদুস্বরে বলে উঠলো , "আস্তে !! এখন তো সবেমাত্র অন্ধকার নেমেছে হলে। এখনও না জানি কত দর্শকের আনাগোনা হতে পারে। "

প্রত্যুত্তরে রাজীব বললো , "তারা কেউ আমাদের দেখতে আসবে না। অন্ধকারে আমাদের খুঁজেও পাবেনা। চারিদিকে চেয়ে দেখো তো অনুরিমা , কাউকে দেখতে পাচ্ছ কিনা ? আমাদের আশে পাশে , বা কেউ আমাদের দিকে চেয়ে আছে কিনা ! "

সরল মনে অনুরিমা মুখ বাড়িয়ে চেয়ে দেখলো। নাহঃ , কেউ নেই আশে পাশে। অন্ধকারে বিশেষ বোঝা না গেলেও, গুটিকয়েক যারা এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসেছে , বেশিরভাগই তারা কাপল , কারণ তারা সব দুটি মাথা এক করে নিজেরদের মধ্যেই মত্ত হয়েছিলো। কেউ দেখছেও না একে অন্যদের দিকে তাকিয়ে। কারোর অতো ইন্টারেস্ট নেই ঘাড় ঘুরিয়ে অপর কোনো কপোত-কপোতির যুগলবন্দী দেখার।

কিন্তু একটি নজর পিছনের সারিতে কোণের দিকে বসা এক ছদ্মবেশী পুরুষের ছিল , যে মূলত এসেই ছিল রাজীবের দ্বারা অনুরিমার প্রশিক্ষণ প্রাপ্তির সাক্ষী হতে। সে আর কেউ নয় , অনুরিমার স্বামী সমীর ! যাকে আগে থেকেই রাজীব বাবু সব জানিয়ে রেখেছিলো। অন্ধকারে অনুরিমার চোখ তাকে খেয়াল করেনি , বা খেয়াল করলেও তার ছদ্মবেশী চেহারার পিছনে আসল লোকটাকে চিনতে পারেনি। সেই লোকটা দেখলো কিভাবে স্বল্পদিনের পরিচয়ে পরিচিত এক ডাক্তার তার স্ত্রী-কে হঠাৎ জড়িয়ে ধরেছে। তার স্ত্রী একটু চেষ্টা করছে ঠিকই সেই বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কিন্তু স্বল্প চেষ্টায় পর্বতকে তো আর টলানো যায়না !
 

Users who are viewing this thread

Back
Top