‘মেয়েরা খুব কোমল হৃদয়ে, সচেতনতার সঙ্গে শব্দটি উচ্চারণ করেন। কিন্তু এখনো অনেক পুরুষের কাছে এটা একটা নোংরা, নিষিদ্ধ শব্দ। এখনো অনেক মেয়ে রোজার দিনে পিরিয়ড চলাকালে না খেয়ে থাকেন। পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সামনে রোজা রাখার অভিনয় করেন। এখনো কণ্ঠ নামিয়ে চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে দোকানদারের কাছে প্যাড চাইতে হয়। আর দোকানি কাগজে মুড়িয়ে নিষিদ্ধ জিনিসের মতো সেই প্যাকেট হাতে দেন!’ এভাবেই অভিনয়শিল্পী ও সংগীত তারকা মেহের আফরোজ শাওন লিখেছেন ঋতু নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালিয়েছেন ‘ঋতুর সাথে হোক সন্ধি’র উদ্যোগের।
বুঝতেই পারছেন, শিরোনামের ঋতু ষড়্ঋতুর ঋতু নয়। এই ঋতু নারীদের ঋতুচক্রের ঋতু। ২৮ মে ছিল বিশ্ব ঋতুসচেতনতা দিবস। সেই উপলক্ষে সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে পুলিশ প্লাজা–সংলগ্ন এলাকায় দেয়ালচিত্র উদ্বোধন করা হয়। মেয়েদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোয় নেওয়া হয়েছে এই উদ্যোগ।
ক্রেয়নম্যাগ নামে সামাজিক সংগঠনের আয়োজনে ‘ঋতুর সাথে হোক সন্ধি’ শীর্ষক ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে সপ্তাহজুড়ে চলেছে প্রচারণা। ক্রেয়নম্যাগের প্রতিষ্ঠাতা তানজিরাল দিলশাদ দ্বিতান বলেন, ‘সামাজিক উন্নয়নে জ্ঞান বিনিময় জরুরি। আমরা এমন একটি ক্যাম্পেইন আয়োজন করার চেষ্টা করেছি, যাতে পিরিয়ড নিয়ে ট্যাবু আর সামাজিক অন্ধতা দূর হয়। এই ক্যাম্পেইন দিয়ে আমাদের শুরু হলো। এরপর আমরা স্যানিটাইজেশন নিয়ে কাজ করতে চাই। পিরিয়ড নিয়ে খোলামেলা কথা বলার একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চাই। কেবল নারীদের হাতে পুরস্কার ধরিয়ে দিলেই নারীর ক্ষমতায়ন হবে না।’
ঋতুর সাথে হোক সন্ধি
উল্লেখ্য, দ্বিতান তাঁর দুদশক ক্যারিয়ারে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সফলভাবে কাজ করেছেন। সাংবাদিকতা থেকে জনসংযোগ, ফ্যাশন থেকে কমিউনিকেশন- বৈচিত্র্যে পূর্ণ তাঁর অভিজ্ঞতা। আর এসবই তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছে এ ধরনের একটি সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়োপযোগী বিষয় নিয়ে কাজ করার।
শাওন ছাড়াও সংগীতশিল্পী শারমিন সুলতানা সুমি, মডেল ও কোরিওগ্রাফার আজরা মাহমুদ, নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্তরা প্রচারণায় অংশ নেন। এছাড়াও এই উদ্যোগে একাত্মতা প্রকাশ করে অভিনয়শিল্পী আশনা হাবিব ভাবনা এবং মডেল ও কোরিওগ্রাফার বুলবুল টুম্পা ফেসবুকে প্রচারণায় সহযাত্রী হয়েছেন। এই আয়োজনে সহযোগী হিসেবে আরও যুক্ত আছে প্রাভা হেলথ, আইক্যান ফাউন্ডেশন এবং ব্যাকপেজ পিআর।
দেয়ালচিত্র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি বিষয়টি মাধ্যমিক পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত হলেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যায়টি পড়ানো হয় না। অধ্যায়টি যেন থেকেও নেই।
আয়োজকেরা জানান, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশকে এগিয়ে নিতে সাধারণ মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। আর তারই গুরুত্বপূর্ণ অংশ পিরিয়ডের সময় নারীদের সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা। এই সময় অসাবধানতায়, অস্বাস্থ্যকর ব্যবস্থা নেওয়ায় পরবর্তী সময়ে তৈরি হয় নানান জটিলতা। তা একজন নারীকে মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।
প্রাভার প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. সিমিন মাজিদ বলেন, সহজে পাওয়া যায় না, দাম বেশি আর পারিবারিক ও সামাজিক কারণে অনেকেই স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না। সস্তা বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করেন। যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যকর নয়। এগুলো পরবর্তী সময়ে জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই পিরিয়ডকালীন স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনা দরকার।
২০১৪ সালে জার্মানিভিত্তিক একটি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নারীদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য শুরু হয়েছিল বিশ্ব ঋতুসচেতনতা দিবসের। প্রতি ২৮ দিন পর পাঁচ দিনের ঋতুচক্র হয়। তাই প্রতিবছরের পঞ্চম মাস—মে মাসের ২৮ তারিখকে এই বিশেষ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।
ছবি: ক্রেয়নম্যাগ