What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

pinuram রচনাসমগ্র (10 Viewers)

প্রথম পর্বঃ প্রবাহিণীর শোভা।

ঠিক লাঞ্চের সময় একটা ফোন এল। এমনিতে কাজে খুব ব্যস্ত, তার মধ্যে এই ব্যাঙ্কের উটকো ফোনগুলি বড় জ্বালাতন করে। মোবাইলে দেখলো অচেনা একটা নাম্বার, নিশ্চয় আবার কোন ব্যাঙ্কের ফোন। বসের মেল, সামনের মাসে একবার ইটালি যেতে হবে টুরে। বেশ কয়েকবার রিং করে ফোন কেটে গেল, তার কিছু পরে সেই এক নাম্বার থেকে আবার ফোন এল। মেলের উত্তর দিতে দিতে ফোন কেটে গেল। তৃতীয় বার যখন একই নাম্বার থেকে ফোন এল তখন বুধাদিত্য বুঝে গেল যে ফোন নিশ্চয় অন্য কারুর যার নাম্বার ওর কাছে নেই। ফোন তুলে অচেনা একটা গলার স্বর শুনে গম্ভির আওয়াজে উত্তর দিল।

অন্যদিকের আওয়াজ, “আবে শালা কুত্তা, হারামি, শুয়োর, ফোন উঠাতে তোর বাপের বাড়ির পয়সা খরচ হচ্ছিল?”

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল বুধাদিত্য। ফোন তুলেই গালাগালি জীবনে এইরকম ভাবে গালাগালি শোনেনি অচেনা লোকের মুখে। চোয়াল শক্ত করে উত্তর দিল বুধাদিত্য, “সরি রঙ নাম্বার।”

অন্যদিকের অচেনা আওয়াজ, “ধুর শালা, আমি জীবনে কোনদিন রঙ নাম্বার লাগাই নি, এমন কি স্কুলে পড়ার সময় আর তুই শুয়োর বলিস রঙ নাম্বার। মারবো পোঁদে লাথি পড়বি গিয়ে গঙ্গার ঘাটে। শালা শুয়োর বল কেমন আছিস বল? বড়োলোক হয়ে গেছিস, গাড়িতে ঘুরে বেড়াস। মেয়ে টেয়েদের সাথে চলছে কি না? কটা লাগালি?”

বুধাদিত্য কিছুতেই চিনতে পারেনা গলার আওয়াজ। কে করতে পারে এই রকম ভাবে ফোন, আর এই রকম ভাবে গালাগালি। নিশ্চয় ওকে ভালো করে চেনে নাহলে গাড়ির কথা, চাকরির কথা জানলো কি করে। বুধাদিত্য এবারে গলার সুর বদলে নিল, “আবে শুয়োরের বাচ্চা, তুই কেমন আছিস সেটা বল।” আদৌ তখন বুধাদিত্য জানে না উলটো দিকে কার সাথে কথা বলছে, কিন্তু অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ে দিল।

অচেনা আওয়াজ, “এইতো মাল পথে এসেছিস। তো অফিস থেকে কখন বার হস তুই?”

বুধাদিত্য, “এই সাড়ে ছ’টা নাগাদ বের হবো। তুই কোথায় এখন?”

অচেনা আওয়াজ, “আমিও অফিসে আবার কি। কয়েক মাস আগে দিল্লী এলাম।”

বুধাদিত্য, “বোকা... আমার ফোন নাম্বার কে দিল তোকে?” বুধাদিত্য সমানে অন্ধকারে খেলে যাচ্ছে তখন।

অন্যদিকের অচেনা লোকের আওয়াজ এবারে স্তিমিত হয়ে গেছে। ভেবেছিল খুব গালাগালি দেবে বুধাদিত্যকে, কিন্তু বুধাদিত্য অনেক চড়িয়ে খেয়েছে। অচেনা আওয়াজ, “অনির্বাণ দিল আমাকে। বলল যে তুই দিল্লী থাকিস তাই ভাবলাম শালা তোর সাথে দেখা করি।”

অনির্বাণের নাম শুনে বুঝে গেল যে স্কুলের কোন বন্ধু। একটু কান পেতে গলার আওয়াজ ধরতে চেষ্টা করল বুধাদিত্য। হ্যাঁ, সমীরের গলা। বুধাদিত্য, “বোকা... তেলু শালা তুই এতদিন পরে।”

সমীর, “হ্যাঁ বে, এতক্ষণ পরে চিনতে পেরেছিস, শালা মালু।”

দুজনে স্কুলে থাকাকালিন আদায় কাঁচকলায় শত্রুতা ছিল। তাই বুধাদিত্য সমীরের নামকরন করে তেলু, আর সমীর ওকে খ্যাপানোর জন্য নাম দেয় মালু।

বুধাদিত্য, “তোর অফিস কোথায়? আমার অফিস এই ইস্ট অফ কৈলাস।”

সমীর, “বেশ বেশ, আমার অফিস সাউথ এক্স।”

বুধাদিত্য, “ওকে তাহলে বিকেলে তোকে সাউথ এক্স থেকে উঠিয়ে নেবো, আর জিকের কোন বারে বসা যাবে, কি বল।”

সমীর, “কি বলিস? মাল খাবো?”

বুধাদিত্য, “কেন? মাল খেলে কি মাল পড়বে না নাকি?”

সমীর, “না মানে, আচ্ছা দেখছি।”

বুধাদিত্য, “ওকে বাই, সাড়ে ছ’টা আন্সারি নগরের দিকে থাকবো আমি। ওদিকটা একটু খালি, গাড়ি রাস্তার ওপরে পার্ক করলে অসুবিধে নেই।”

সমীর, “ওকে, বাই দেখা হবে সাড়ে ছ’টা।”

বুধাদিত্যের ছোটো বেলার বন্ধু সমীর। স্কুলের পড়াকালীন ওদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল না। পরস্পরের প্রতি একটা বিতৃষ্ণা ছিল, বুধাদিত্য স্কুল ছাড়ার পরে প্রতিজ্ঞা করেছিল, জীবনে সমীরের সাথে দেখা হলে ওকে মেরে ফেলবে। কিন্তু সেই সমীরের ফোন, সেইসব দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। চোখের সামনে ভেসে ওঠে, সেই হোস্টেলের কথা, আম চুরি করা, রোদে মাথে ফুটবল খেলা, বৃষ্টিতে পায়ে চটি নেই, মাথায় বই রেখে দৌড়ে স্কুল ঘরে যাওয়া। সামনে ল্যাপটপ খোলা, কিন্তু চোখের সামনে সেই তেরো বছর আগের ছবি ফুটে ওঠে। কাজে মন লাগলো না বুধাদিত্যের।

ঠিক সাড়ে ছ’টা নাগাদ গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে যথাস্থানে। সমীরকে একবার দেখেই চিনতে পেরে যায়। মুখাবয়ব বদলায়নি, একটু মোটা হয়েছে এই যা। সমীর ওকে দেখে আর গাড়ি দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে।

বুধাদিত্য বলে, “আবে, চলে আয়।”

সমীর, “বাপরে, তুই তো বেড়ে বড়লোক হয়ে গেছিস।”

বুধাদিত্য, “ছাড় শালা। আমি আর তুই সেই পুরানো শত্রু রয়ে গেছি সেটা অনেক।”

শত্রুতার কথা শুনে দুজনেই হেসে ফেলল। সমীর গাড়িতে চেপে পড়ল। বুধাদিত্য চালাতে শুরু করল গাড়ি। চালাতে চালাতে বুধাদিত্য জিজ্ঞেস করল সমীরকে, “মনে আছে শালা, আমার প্রতিজ্ঞা।”

হাহা করে হেসে ফেলে দুজনে, সমীরকে মারতে ছুটেছিল বাঁশ নিয়ে। সমীর হেসে বলল, “খুব মনে আছে রে, সেই বাঁশের কথা।”

বুধাদিত্য, “তাহলে বারে চলা যাক, কি বল।”

সমীরের চেহারা একটু বদলে গেল, “আমি বলছিলাম কি, বারে না গিয়ে আমার বাড়ি চল। ডিনার আমার তরফ থেকে।”

বুধাদিত্য, “হুম, মানে বিয়ে করেছিস।”

হেসে ফেলে সমীর, “হ্যাঁ রে, দু’বছর আগে হয়ে গেছে। বেঁজি, মানে অনির্বাণ বলছিল যে তুই এখন বিয়ে করিস নি, কেন?”

বুধাদিত্য, “ঠিক ঠাক মাল খুঁজে পেলাম না। গাড়ি রাখতে হলে ভালো একটা গ্যারেজের দরকার।”

হাহা করে দু’জনেই হেসে ফেলে। বিয়ে করা হয়নি বুধাদিত্যের। ওর মাথা শুধু টাকা রোজগারের চিন্তা আর উচ্চাকাঙ্ক্ষায় ভরা। কালকাজিতে একটা ফ্লাট কিনেছে, চার মাস আগে ইনোভা কিনেছে। অফিসের লোকজন ওকে খুব কর্মঠ বলে জানে, কাজে ডুবে থাকতে ভালো লাগে, আর ভালো লাগে পানীয়। মাঝে মাঝে এদিক ওদিক থেকে বনিতা উঠিয়ে বিছানাও গরম করে নেয়।

বুধাদিত্য সমীরকে জিজ্ঞেস করল, “সিভাস চলবে না 100 পাইপারস।”

সমীর, “100 পাইপারস নিয়ে চল।”

বুধাদিত্য এক জায়গায় নেমে মদের বোতল কিনে নিল। সমীরকে জিজ্ঞেস করল, “তুই থাকিস কোথায়?”

সমীর, “আমি চিরাগ দিল্লী, আর তুই?”

বুধাদিত্য, “তাহলে তো তুই বাড়ির কাছেই থাকিস, আমি কালকাজিতে ফ্লাট কিনেছি।”

সমীর, “দেখ তো, কত কাছাকাছি থাকি, কিন্তু শালা দেখা হয় না।”

বুধাদিত্য, “এই তো হয়ে গেল। তুই কিসে আছিস?”

সমীর, “আমি শালা একটা কম্পানির মার্কেটিঙে আছি। বহুত ঘুরতে হয়, আজ এখানে কাল ওখানে। তুই তো আই.টি টেকনিকালে।”

বুধাদিত্য, “হ্যাঁ, আমি একটা সফটওয়ার কম্পানিতে আছি, টেকনিকাল ম্যানেজার।”

সমীর, “ঝিলামকে বলেছি তোর কথা।”

বুধাদিত্য, “বউয়ের নাম ঝিলাম বুঝি। তা কোথায় দেখা?”

সমীর, “বাড়ি চল, সব গল্প শুনতে পারবি।”

বুধাদিত্য, “তোর বউয়ের সাথে প্রথম বার দেখা করবো, কিছু কিনতে হবে, দাড়া শালা একবার কালকাজি ঘুরে যাই।”

সমীর, “বোকা... ফরমালিটি চুদাচ্ছিস শালা। বাড়ি চল।”

বুধাদিত্য সমীরকে বলল যে ঠিক আছে, অন্তত একটা ফুলের তোড়া তো উপহার দিতে পারে ওর বউকে। সমীর তাতে সায় দিল। একটা বেশ বড়সড় গোলাপ ফুলের তোড়া কিনে নেওয়া হলো ঝিলামের জন্য। কথাবার্তা মোড় নেয় সেই পুরানো দিনের গল্পে, হোস্টেলের গল্প, আম চুরি, কাঁঠাল চুরি। রাতের বেলা ছাদে উঠে চাকরদের থেকে চাওয়া বিড়ি ফোঁকা। সরস্বতি পুজোর আগে কুল খাওয়া, কুয়োর মধ্যে মই বেয়ে নেমে স্নান করা। মেতে ওঠে দুই বন্ধু সেই পুরানো গল্পে। চিরাগ দিল্লীতে পৌঁছে গেল বুধাদিত্য।

কলিং বেল বাজাতেই যে দরজা খুলল, তাকে দেখে বুধাদিত্য হাঁ হয়ে গেল। ঝিলাম, সমীরের প্রেয়সী সামনে দাঁড়িয়ে, ঠোঁটে মিষ্টি হাসি। অনেক সুন্দরীদের সাথে খেলা করেছে কিন্তু মনে হলো যেন এই অসামান্য রুপবতি ললনা জীবনে দেখেনি। সমীর ওকে ভেতরে নিয়ে গেল, সোফায় বসতে বলল। বুধাদিত্য ঝিলামের হাতে গোলাপের তোড়া ধরিয়ে হাত জোড় করে অভিবাদন করে। ঝিলাম মিষ্টি হেসে ওর হাত থেকে ফুলের তোড়া নিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয় ওর দিকে। সহস্র ঘাটের জল খাওয়া বুধাদিত্য নির্বাক, মোহাচ্ছন্নের মতন হাত বাড়িয়ে নরম আঙুল স্পর্শ করল। উষ্ণ নরম কলির মতন আঙুল নাড়িয়ে একটু হাত মেলালো।

ঝিলাম বেশ আধুনিকা, মাথা ভর্তি ঘন কালো লম্বা চুল, দুই কাঁধের ওপর দিয়ে সামনের দিকে দুটি গুচ্ছ বুকের ওপরে এসে পড়েছে। ত্বক মাখনের মতন মসৃণ আর ফর্সা। মুখখানি গোল, বাঙালি ললনার ছাপ, নিচের ঠোঁটের নিচে একটা ছোটো কালো তিল। ধনুকের মতন বাঁকা ভুরুর নিচে বড় বড় মিষ্টি আর অভিব্যক্তিপূর্ণ কাজল কালো চোখ। নধর দেহের গঠন, ঠিক যেখানে যতটুকু থাকলে, মানুষের মাথা ঘুরিয়ে দেয়, সেখানে ঠিক ততটুকু আছে। পরনে একটা হাল্কা নীল রঙের স্লাক্স আর গোলাপি টপ। স্লাক্স ওর কোমরের নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত একটা রঙের প্রলেপের মতন লেগে আছে ওর অঙ্গে প্রত্যঙ্গে। দুই জানু গোলগাল আর মসৃণ, জানুর মাঝে যদি তিল রাখা হয় তাহলে তিল তেল বেরিয়ে যাবে। ভারী নিটোল পাছা, পাছার প্রতি খাঁজ যেন অনাবৃত বুধাদিত্যের চোখের সামনে। সামনের দিকে, জানুসন্ধি দেখে বুধাদিত্যের নাভির রক্ত গরম হয়ে গেল। বেশ সুন্দর ফোলা একটা ব-দ্বীপ, যোনি অবয়ব পরিষ্কার ফুটে উঠেছে মনে হলো। হাঁটুর নিচ থেকে অনাবৃত, ফর্সা বাঁকা পায়ের গুলি। দুই গোড়ালিতে রুপোর নুপুর, হাঁটলেই ছনছন করে সঙ্গীত বেজে ওঠে। টপ লেপটে রয়েছে ঝিলামের উর্ধাঙ্গের সাথে। পেটের কাছে এমন ভাবে এঁটে আছে কাপড় যে সুগভীর নাভিদেশের অবয়ব পরিস্ফুটিত হয়ে আছে। ভারী নিটোল পীনোন্নত স্তন যুগল সামনের দিকে উঁচিয়ে। টপের ভেতর থেকে ব্রার দাগ পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। বুধাদিত্য চোখ সরাতে পারছেনা ঝিলামের কমনীয় মাদকতাময় রুপের থেকে। যেন সাক্ষাৎ স্বর্গের অপ্সরা নেমে এসেছে মর্তধামে, কিন্তু এই সুন্দরী ললনা ওর বন্ধুর অঙ্কশায়িনী। না হলে বুধাদিত্য নিশ্চয় ঝিলামের প্রেমে পড়ে যেতো প্রথম দেখাতেই।

সমীরের গলার আওয়াজে বুধাদিত্যের মোহভঙ্গ হয়, “একটু ফ্রেশ হয়ে বস। বাথরুম ওই দিকে।”

হ্যাঁ, ফ্রেশ হওয়া খুব জরুরি, চোখের সামনে এমন লাস্যময়ী সুন্দরীর দেহে দর্শন করে বুধাদিত্যের রক্ত চঞ্চল হয়ে উঠছে। একবার মনে হয়েছিল, মদের পুরো বোতল গলায় ঢেলে নিয়ে নিজেকে শান্ত করে। বাথরুমে ঢুকে দেখল, ঝিলামের একটি ক্ষুদ্র লাল কটি অন্তর্বাস, মানে প্যান্টি রাখা তার ওপরে লাল ছোটো ব্রা। বুধাদিত্যের মন চঞ্চল হয়ে উঠল, ঝিলামকে না পাক, ওর এই অন্তর্বাস থেকে ঝিলামের শরীরের পরশ অনুভব করতে পারবে। ইতর মনোবৃত্তি জেগে ওঠে বুধাদিত্যের মনের গহিন কোণে। লাল প্যান্টি উঠিয়ে নিয়ে নাকের কাছে এনে শোঁকে, উম্মম, বেশ পাগল করা সুবাস। ঠিক যোনির কাছে নাক নিয়ে গিয়ে যোনিরসের ঘ্রান বুকের মধ্যে টেনে নিতে চেষ্টা করে। মাথা ঝিমঝিম করে ওঠে, ঘ্রান পেলো কি পেলো না, কিন্তু মনে ভরে গেল বুধাদিত্যের।

বসার ঘরে এসে দেখলো সমীর একটা বারমুডা পরে ওর জন্য অপেক্ষা করছে। ঝিলাম খাবার টেবিলের ওপরে গোলাপের তোড়া একটা সুন্দর কাঁচের ভাসে সাজিয়ে রেখেছে। বুধাদিত্যের একটু মজা করার সখ হলো, কিন্তু সমীর কি ভাবে নেবে সেই ভেবে চুপ করে গেল।

সমীর হাতমুখ ধুয়ে এসে ওর সামনের সোফায় বসে পড়ল। ঝিলাম দুটি কাট গ্লাস, আর কাজু, কিসমিস ভরা একটা কাঁচের পাত্র ওদের সামনে রাখল। হাঁটতে চলতে ঝিলামের শরীর আন্দোলিত হয়, ভারী পাছার দুলুনির সাথে পীনোন্নত বুকের দুলুনি। বুধাদিত্যের নেশা মদ খাওয়ার আগেই চড়ে গেছে। ঝিলাম মাঝে মাঝে ওর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে আলতো হাসে। বুধাদিত্য ওকে আড় চোখেই দেখে যায়, সোজাসুজি দেখে না, বন্ধু স্ত্রী বলে কথা।

বুধাদিত্য সমীরকে জিজ্ঞেস করে, “ঝিলাম মদ খায় না?”

ঝিলাম জোরে মাথা নাড়ায়, “না, না, না, আমি খাই না। আপনারা ড্রিঙ্ক করুন আমার তাতে আপত্তি নেই।”

ঝিলামের গলার আওয়াজ শুনে মনে হলো যেন মধুর ঝঙ্কার বেজে উঠলো। বুধাদিত্য সমীরকে জিজ্ঞেস করল, “কি রে মাল, তোদের কি লাভ ম্যারেজ না অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ।”

ঝিলাম ওর কথা শুনে হেসে ফেলল, মুক্তোর মতন সাজানো দাঁতের পাটি ঝিলিক দিয়ে গেল দুই গোলাপি ঠোঁটের মাঝে। সমীর উত্তর দিল, “না রে আমাদের অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ। ঝিলামের বাড়ি দুর্গাপুরে।”

বুধাদিত্য, “ওকে, বেশ ভালো।”

ঝিলাম, “আপনি তো বিয়ে থা করেন নি। একা একা কত দিন কাটাবেন?”

বুধাদিত্য, “অত আদিখ্যেতা করে আপনি বলতে হবেনা। তুমি তে নেমে এসো, নাহলে ঠিক মনে হচ্ছে না যে বন্ধুর বাড়িতে বসে মদ গিলছি।”

ঝিলাম, “ঠিক আছে, তোমার কথা মেনে নিলাম। কিন্তু সমুকে বেশি খাইও না প্লিস, দুই থেকে তিন হলেই ওর পেটে সহ্য হয় না।”

হেসে ফেলল বুধাদিত্য, ওদিকে সমীরের হাটে হাড়ি ভেঙে গেছে দেখে সমীরের একটু অভিমান হলো। ঝিলাম সমীরের পাশে একটা গ্লাসে কোল্ড ড্রিঙ্কস নিয়ে বসে পড়ল। বেশ গল্প চলতে লাগল, সেই ছোটো বেলার স্কুলের কথা থেকে শুরু হলো। কর্ম জীবনে অনেক ছিটকে গেছে দেশ বিদেশের কোনায়। অনেকের সাথে আর যোগাযোগ নেই।

কথায়, গল্পে জানতে পারলো বুধাদিত্য যে ঝিলামের বাবা দুর্গাপুরে কোকওভেনে চাকরি করতেন। দুই দাদা, দুই দিদির পরে ঝিলাম, বাড়ির কনিষ্ঠ কন্যে, সবার আদুরের। ইংরাজি নিয়ে এম.এ করেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সমীরের মায়ের চেনা জানা ঝিলামের বাবা, সেই সুত্রে দেখে শুনে বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পরে কোলকাতা, হানিমুনে নেপাল গিয়েছিল। এই প্রথম কোলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে এত দুরে। বিয়ের সময় জানতো না যে এত দুরে আসতে হবে। কিন্তু যেখানে স্বামীর চাকরি সেখানে ধর্মপত্নিকে সাথে সাথে যেতে হবে। প্রথমে ঝিলাম একটু মানা করেছিল দিল্লীতে চাকরি নিতে, কিন্তু সমীর জানায় যে নতুন কম্পানি, ভালো টাকা পাবে তাই কোলকাতা ছেড়ে চলে আসা। ঝিলামের বাবা একটু কড়া স্বভাবের মানুষ, মেয়ের প্যানপানিতে কান দেননি, জানিয়ে দিয়েছিলেন যে বিয়ে হয়ে যাবার পরে স্বামির ঘর তার ঘর। ঝিলাম মানা করেনি, ভালো মেয়ের মতন সমীরের পেছনে ছিল এবং আছে। ওদের দেখে বুধাদিত্যের মনে হলো যে সত্যি মনের মতন মানুষ পাওয়া ভাগ্যের।

গল্পে আর কথায় সবাই মজে গেল। বেশ খোলামেলা হয়ে গেল ঝিলাম। সমীর দুটো গ্লাস শেষ করে দিয়েছে, রক্তে একটু নেশা লেগে গেছে। এমন সময় সমীর ঝিলামকে টেনে কোলের ওপরে বসিয়ে দিল। ঝিলামের ফর্সা গাল লজ্জায় লাল হয়ে উঠল। অচেনা এক ব্যক্তির সামনে সমীর ওর সাথে এই রকম প্রেমলীলা শুরু করে দেবে ভাবতে পারেনি। মৃদু বকুনি দেয় সমীরকে।

সমীর হেসে ওঠে, “ডার্লিং আমরা চাড্ডি বন্ধু, ওর সামনে এত লজ্জা পেয়ো না।”

বুধাদিত্য হেসে উঠলো ওদের প্রেমের প্রগাড় আলিঙ্গন দেখে। বুধাদিত্যের রক্তে সুরার চেয়ে বেশি নাচে ঝিলামের রুপ মাধুর্য। সমীরের এক হাতে মদের গ্লাস অন্য হাতে জড়িয়ে ধরে ঝিলামের পাতলা কোমর। নরম পেটের ওপরে চেপে ধরে আছে সমীরের হাতের তালু। ঝিলাম ওর গলা সমীরের গলা জড়িয়ে ধরে দুই হাতে।

ঝিলাম বুধাদিত্যকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি বিয়ে করলে না কেন।”

মজা করে বলল বুধাদিত্য, “বিয়ে করতে চেয়েছিলাম, তারপরে জানলাম যে তুমি সমীরকে বিয়ে করে ফেলেছো।”

ঝিলাম লজ্জায় লাল হয়ে যায়, গাল লাল, নাকের ডগা লাল। ওদিকে সমীর নেশার ঘোরে ঝিলামের পেট ছেড়ে হাত নরম স্তনের নিচের দিকে চলে যায়। ঝিলাম রেগে গিয়ে ওর হাত সরিয়ে দেয়। কোল থেকে নেমে যেতে চায় কিন্তু সমীরের হাতের বেড় অনেক শক্ত, প্রগাড় আলিঙ্গনে বেঁধে রাখে সুন্দরী বউকে।
সমীর আরও একটা গ্লাস তৈরি করে।


ঝিলাম ওর হাত ধরে ফেলে, মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “না আর না। তোমার কোটা দুই পেগ, শেষ হয়ে গেছে।”

সমীর ঝিলামের দিকে কাতর চোখে তাকিয়ে অনুরোধ করে, “জানম, আজ আমার বড় খুশির দিন। তেরো বছর পরে এই শুয়োরটার সাথে দেখা হয়েছে, আজ তো আমি খুশিতে গিলবো।”

বুধাদিত্য নিজের নিয়ন্ত্রন রেখার সম্বন্ধে জানে, জানে যে নিজে একটি তলহীন কুয়ো। এক বোতল গলায় ঢালার পরেও সোজা পায়ে বাড়ি ফিরতে পারবে। সামনে সমীরের অবস্থা যে দুই পেগে শেষ। দেখতে বেশ মজা লাগছে সমীরকে, নেশার চটে ঝিলামকে বেশ আদর করছে, আর ঝিলাম মাঝে মাঝে ওর হাত সরিয়ে দিচ্ছে।

ঝিলাম মৃদু বকুনি দেয় সমীরকে, “এই ধুত ছাড়ো বলছি, ডিনার তৈরি করতে হবে তো।”

সমীর বুধাদিত্যের দিকে তাকিয়ে বলল, “আরে ডারলিং যা আছে তাই খাওয়া যাবে খনে। বুধাদিত্য রাতে এখানেই থাকবে।” তারপরে বুধাদিত্যের দিকে তাকিয়ে বলে, “আজ রাতে থেকে যা।”

চোখের সামনে ঝিলামের মতন উচ্ছল যৌবনা একটা নারীর রুপ দেখতে পাবে, সেই দৃশ্য কি আর হাত ছাড়া করা যায়। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে বুধাদিত্য বলল, “নারে, আজ যাই পরে আবার একদিন দেখা যাবে।”

ঝিলাম বুধাদিত্যের দিকে তাকিয়ে অনুরোধ করল, “বাড়িতে বউ নেই, ফিরে কি হবে, রাতে এখানেই থেকে যাও।”

বুধাদিত্য, ঠোঁটের কাছে গ্লাস এনে ছোটো একটা চুমুক দিয়ে ঝিলামের দিকে চোখ টিপে ইশারা করল, ঠিক আছে। ঝিলাম মিচকি হেসে ওর দিকে মাথা দুলিয়ে জানাল যে ও খুশি হয়েছে। বুধাদিত্য সেই মোহিনী হাসি দেখে উন্মাদ প্রায় হয়ে গেল। ওদিকে সুপ্ত বাবাজি নড়েচড়ে উঠেছে। বুধাদিত্য আরেক গ্লাস তৈরি করল, একটা সমীরের হাতে ধরিয়ে দিল।

ঝিলাম মৃদু অনুরাগ নিয়ে বুধাদিত্যের দিকে তাকিয়ে বলল, “বন্ধুকে আজ মাতাল করে দেবে নাকি?”

বুধাদিত্য ঝিলামকে উসকিয়ে দিয়ে বলল, “ঝিলাম, তোমার রুপে সমীর অনেক আগেই মাতাল হয়ে গেছে। এই মদ ওর কি করবে।”

ঝিলামের গাল লাল হয়ে যায় বুধাদিত্যের কথা শুনে। মৃদু রাগ দেখিয়ে বলে, “তোমরা গেলো বসে বসে। আমি চললাম রান্না করতে।” ঝিলাম শেষ পর্যন্ত নিজেকে সমীরের কবল থেকে মুক্ত করে শরীরে মত্ত ছন্দ তুলে রান্নাঘরে চলে যায়।

সমীর আর বুধাদিত্য দুজনেই ওর নিটোল ভারী পাছার দুলুনি দেখে। সমীর বুধাদিত্যকে মদের নেশায় বলে, “উফফফ মাইরি। আমার বউটা খুব অভিমানিনী, কিন্তু ভারী মিষ্টি আর কচি মেয়ে।”

বুধাদিত্য, “হুম, তা দেখতেই পাচ্ছি। কত বয়স ঝিলামের?”

সমীর, “এই সবে চব্বিশে পা দিল, আমার চেয়ে পাঁচ বছরের ছোটো।”

বুধাদিত্য, “হ্যাঁ শালা, পুরো লাল গোলাপ কুঁড়ি তুলে এনেছিস।”

হাহা করে হেসে ফেলে সমীর, তারপরে বুধাদিত্যকে বলে, “রাতে যখন থাকছিস তাহলে কাপড় পালটে নে। আমার একটা বারমুডা গলিয়ে নে।”

সমীর গ্লাস শেষ করে উঠে গিয়ে বুধাদিত্যকে একটা বারমুডা ধরিয়ে দিল। রাতে শোয়ার জন্য পাশের রুম দেখিয়ে দিল। ওদের ফ্লাট ছোটো, একটা ড্রইং কাম ডাইনিং রুম আর দুটি বেডরুম। বুধাদিত্য ফ্লাটের দেয়াল, সোফা, বেডরুম সব কিছুর দিকে নজর দিল। ঝিলাম যেমন সুন্দরী তেমনি ওর রুচি বোধ, ফ্লাট ছোটো হলেও ঝিলামের ছোঁয়ায় বেশ সুন্দর হয়ে গেছে। বুধাদিত্য চতুর্থ গ্লাস ড্রিঙ্ক বানিয়ে এক ঢোকে গলায় ঢেলে দিল। নিট হুইস্কি এবারে ওর রক্তে আগুন জ্বালিয়ে দিল। রান্নাঘরের দিকে চোখ গেল বুধাদিত্যের, পেছন থেকে ঝিলামের নিটোল পাছা দেখা যায়। দুই পাছার বলয়ের মাঝখানের খাঁজ স্পষ্ট দেখা যায়। স্লাক্সের নিচে প্যান্টির গভীর দাগ দেখা যায়, মনে মনে ঝিলামের প্যান্টির আকার এঁকে নিল। লাল ক্ষুদ্র প্যান্টি, শুধু মাত্র যোনিদেশ ঢাকা, বাকি সব কিছু অনাবৃত। প্যান্টির পেছনের দড়ি, দুই ভারী পাছার খাঁজে হারিয়ে গেছে বোধহয়। মদের নেশা আর রুপের নেশায় মাতাল বুধাদিত্য। সমীরের ওপরে যেন হিংসে হয়। মনকে সান্তনা দেয় বুধাদিত্য, বন্ধু স্ত্রী ঝিলাম, পা বাড়ানো বড় ভুল, এ যে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে ওর সাথে। বুধাদিত্য বারমুডা হাতে বাথরুমের ঢুকে পড়ে।
 
দ্বিতীয় পর্বঃ তৃষ্ণার্ত কপোতী।

সেপ্টেম্বর মাস, গরম নেই, বর্ষা কাল এসে গেছে। কিছুদিন আগেই বৃষ্টি হয়ে গেছে, তাই আবহাওয়া বেশ মনোরম। বুধাদিত্যের বিকেল বেলা স্নান করা অনেক পুরানো স্বভাব। আজ তো করতেই হবে, মদের নেশার চেয়ে বেশি ঝিলামের কমনীয় আকর্ষণীয় রুপসুধা ওকে মাতাল করে দিয়েছে। স্নান করার সময়ে ওর কানে এল মৃদু গলার আওয়াজ। ঝিলাম যেন কাতরাচ্ছে, একটু কান পেতে শুনতে চেষ্টা করে ঝিলামের মধু ঢালা কাতরানি।

“এই প্লিস, ছাড়ো আমাকে। উফফফ, তুমি কি যে করোনা। বাড়িতে তোমার বন্ধু এসেছেন, তা সত্তেও তোমার যেন... উম্মম্ম সমু প্লিস আর না, উম্মম... না না... দু’পেগ গলার নিচে নামলেই তোমার প্রেম যেন আকাশ ফুঁড়ে... ইসসস... লাগছে হানি... উম্মম”

বুধাদিত্যের সেই মধু ঢালা কাতরানি শুনে তলপেটে আগুন ধরে গেল। লিঙ্গ টানটান হয়ে গেল, রক্ত ফুটতে শুরু করে দিল। বুধাদিত্য স্নান সেরে চুপ করে বারমুডা পরে বাথরুমের দরজা খুলে দেখতে চাইল সমীর আর ঝিলাম কি করছে। ওদের প্রেমের প্রগাঢ় দৃশ্য দেখে বারমুডার ভেতরে লিঙ্গ একদম শাল গাছের মতন হয়ে গেল।

রান্নাঘরের দেয়ালে ঝিলামকে পিষে দিয়েছে সমীর। বাম হাতের তালুর মধ্যে ঝিলামের পীনোন্নত সুগোল ডান স্তন, চেপে পিষে ধরেছে। ডান হাত নেমে গেছে ঝিলামের নিটোল পাছার ওপরে, খামচে ধরেছে নরম তুলতুলে পাছা। ঝিলামের কাঁধে মাথা গুঁজে চুমু খেয়ে চলেছে। ঝিলাম প্রেমে কাতর একটি তৃষ্ণার্ত চাতকির মতন চোখ বুঝে ওর শরীর জড়িয়ে ধরেছে আর সমীরের মাথার চুলে আঁচড় কেটে দিচ্ছে। ঝিলামের গাল লাল, বুকে উত্তাল সাগরের ঢেউ, শরীরে বাঁধন হারা নদীর স্রোত। গাড় গোলাপি রঙের ঠোঁট জোড়া অল্প খোলা, মৃদু শীৎকার বাতাসে ভেসে আসে। মাথার চুল অবিন্যাস্ত হয়ে গেছে। সমীর ওর ঘাড়ে, কাঁধে, গালে অজস্র চুম্বনের বর্ষণ করে চলেছে। সমীরের হাত ওর নরম স্তনের ওপরে ঘোরাফেরা করে আর স্তনের বোঁটা আঙ্গুলে নিয়ে চেপে ঘু্রিয়ে ঝিলামকে উত্যক্ত করে তোলে। অন্য হাতে ঝিলামের নিটোল পাছা টেনে ধরে নিজের উত্থিত কঠিন লিঙ্গের ওপরে। কোমর নাড়িয়ে ঝিলামের যোনিদেশে ঘষে দেয় লৌহ কঠিন লিঙ্গ। ঝিলাম জল থেকে উঠে আসা মাছের মতন স্বামীর আলিঙ্গন পাশে বদ্ধ হয়ে ছটফট করে। সমীরের গোঙানি আর পেষণ তীব্র আকার ধারন করে।

বুধাদিত্য খানিকক্ষণ ওদের প্রেমলীলা দাঁড়িয়ে দেখল তারপরে একটু গলা খাঁকরে নিজের অস্তিত্বের জানান দিল। এক ঝটকায় ঝিলাম সমীরকে ঠেলে রান্নাঘরের দরজার পেছনে লুকিয়ে পড়ল। বারমুডার ভেতর থেকে দন্ডায়ামান সমীরের লিঙ্গ যেন একটা ঝুলন্ত সাপ। সমীর ঘোলা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। বুধাদিত্য লক্ষ্য করল যে সমীরের দু’চোখ লাল, হাঁটার সময়ে পা একটু টলছে।

বুধাদিত্য অবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য ঝিলামকে বলল, “ঝিলাম, আমি চোখ বন্ধ করে ছিলাম, কিছুই দেখিনি তুমি বেরিয়ে আসতে পারো। আমার খুব ক্ষিধে পেয়েছে।”

বুধাদিত্য সমীরের হাত ধরে খাওয়ার টেবিলে বসিয়ে দিল। সমীর ওর দিকে তাকিয়ে ধরা পড়ে যাওয়া অপরাধির মতন ক্যাবলা একটা হাসি দিয়ে বলে, “মাল আমি একদম ঠিক আছি, বুঝলি।”

বুধাদিত্য, “হ্যাঁ শালা, আমি জানি তুই একদম ঠিক আছিস।”

ঝিলাম বেরিয়ে এল রান্নাঘর থেকে। বুধাদিত্যের দিকে মাথা তুলে তাকাতে পারছেনা লজ্জায়। গাল লাল, ঠোঁট লাল, ঠোঁটে লাজুক হাসি। সমীরের পিঠের ওপরে আলতো চাপড় মেরে কিছু বলল কানেকানে। সমীর উঠে চলে গেল বাথরুমে। বুধাদিত্য খাওয়ার টেবিলে বসে, ঝিলাম সামনে রাতের খাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বুধাদিত্য জোর করে চোখ ফিরিয়ে নিতে চায় অন্যদিকে, কিন্তু ঝিলাম যেন ওকে এক অদৃশ্য শক্তি দিয়ে টেনে রেখেছে। সমীর বাথরুম থেকে ঘাড়ে মাথায় জল দিয়ে এলো, নেশা অনেকটা কেটে গেছে। বুধাদিত্য মজা করে সমীরকে জিজ্ঞেস করে, রাতে খাওয়ার পরে হবে নাকি। ঝিলাম চোখ পাকিয়ে সমীরের দিকে তাকাতেই, সমীর বাঁধা গরুর মতন মাথা নাড়িয়ে বারন করে দেয়। বুধাদিত্য ওদের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। রাতের খাওয়ার সময়ে বিশেষ কিছু কথাবার্তা হয় না আর। ঝিলাম একদম চুপ করে গেছে, সমীর মাঝে মাঝে কিছু বলছে, বুধাদিত্য মাঝে মাঝে মাথা দুলিয়ে, হ্যাঁ হু তে সমীরের কথার উত্তর দেয়। খেতে খেতে রাত এগারটা বেজে যায়।

রাতের খাওয়া শেষ, সমীর বুধাদিত্যকে পাশের ঘরে শুতে বলে, নিজেদের ঘরে ঢুকে পড়ে। বুধাদিত্য ঝিলামকে জানায় যে কিছুক্ষণ ল্যাপটপে বসে কাজ করবে। এত তাড়াতাড়ি ওর ঘুম আসে না। একা একা থাকতে থাকতে রাত একটার আগে ঘুম আসেনা ওর। ঝিলাম বুধাদিত্যকে জানিয়ে দিল যে ফ্রিজে জল আছে আর যদি ড্রিঙ্কস নেওয়ার ইচ্ছে হয় তাহলে কাট গ্লাস সামনের কাপবার্ডে রাখা। ঝিলাম রান্নাঘর থেকে একটা বড় বাটিতে কাজু, চিপস আর কিছু ফল রেখে যায়।

ঝিলামের দিকে তাকিয়ে বুধাদিত্য বলে, “তুমি সত্যি অনেক কিছু বুঝে যাও তাই না।”

ঝিলাম মৃদু হেসে উত্তর দেয়, “ওর সাথে থাকতে থাকতে সব সয়ে গেছে। কোলকাতায় কোনদিন ড্রিঙ্ক করতো না। এখানে এসেও প্রথম প্রথম ড্রিঙ্ক করতো না। কিন্তু গত মাস তিনেক ধরে মাঝে মধ্যেই অফিস থেকে এক দু পেগ মেরে আসে, কি করা যাবে। কিছু বললেই বলে যে এই ড্রিঙ্ক করা নাকি মারকেটিঙের একটা অঙ্গ।”

হেসে ফেলে বুধাদিত্য, “মদ খেলে বুঝি খারাপ লোক হয়ে যায়?”

ঝিলাম, “আমি এটা বলিনি যে লোক খারাপ হয়ে যায়। আমি শুধু এই বলেছি যার যেটা সয় না সেটা তার করা উচিত নয়।”

বুধাদিত্য, “তবে আমি খাই নিজের জন্য, কারুর জোরে আমি মদ গিলিনা। যাই হোক সে সব নাহয় অন্য কথা।”

ঝিলাম, “তুমি এত রাত করে ঘুমাও কেন?”

বুধাদিত্য, “কি করবো আমার কাজ থাকে অনেক সময়ে, অনেক সময়ে ঘুম আসেনা, জেগে জেগে তাই টিভি দেখি না হলে ল্যাপটপ।”

ঝিলাম ওর দিকে হাত নাড়িয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “ওকে গুড নাইট, আমি চললাম।”

বুধাদিত্য ওর বাঁকা হাসি আর দেহের মত্ত ছন্দ দেখে মজা করে বলে, “চিন্তা নেই, রাতে আমি তোমাদের শান্তিভঙ্গ করবো না।”

লাজুক হেসে নিজেদের শোয়ার ঘরে ঢুকে পড়ে ঝিলাম। সমীর অনেক আগেই ঘরে ঢুকে গেছে।

বুধাদিত্য ঘরের আলো বন্ধ করে বিছানার ওপরে ল্যাপটপ খুলে বসে পড়ল। কিছু মেল আছে, চেক করে উত্তর দিয়ে দিল। সামনের মাসে ইটালি যেতে হবে, প্রেসেন্টেসানটা তৈরি করতে বসল। কাজে ডুবে গেল বুধাদিত্য। ঘড়ি দেখল, রাত বারোটা প্রায় বাজে। এমন সময়ে নিস্তব্ধতা আর ওর কাজের মনোসংযোগ ভেঙে দিল ঝিলামের মৃদু সুরেলা ধ্বনি শীৎকার।

“উম্মম...ইসসস... তুমি সত্যি পাগল... করো আরও চাটো, হ্যাঁ, হ্যাঁ... উম্মম... খুব ভালো লাগছে... নিচে নিচে... একটু নিচে... উম্মম সমু প্লিস এবারে এসো, আমি আর পারছিনা... উফফফ... কত গরম... হ্যাঁ হ্যাঁ... ইসসস... উম্মম্ম...ইসসসসস... আহহহহহহ”

বুধাদিত্য বুঝে গেল যে পাশের ঘরে চরম প্রেমের খেলা চলছে। ঝিলামের মৃদু শীৎকার আর সমীরের হুম হুম গোঙানো আওয়াজে ওর রক্ত ফুটতে শুরু করে দেয়। বারমুডার ভেতর থেকে নেতানো লিঙ্গ এক ঝটকায় শক্ত টানটান হয়ে যায়। বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। মানসচক্ষে ঝিলাম আর সমীরের রতিবিহার দেখতে চেষ্টা করে। উফফ ঝিলাম যদি নগ্ন হয়ে ওর সামনে আসে তাহলে তো বারমুডার মধ্যেই নিজেকে ঝরিয়ে দেবে। ইতর মনোভাব জেগে উঠল বুধাদিত্যের বুকে। ব্যাল্কনির দরজা খুলে ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। দুই ঘরের একটাই ব্যাল্কনি। সমীরদের ঘরের জানালার কাঁচ বন্ধ কিন্তু পর্দা কিছুটা খোলা। ঘরের মধ্যে মৃদু হলদে আলোয় ভরা। একটা সিগারেট ধরাল বুধাদিত্য, ব্যালকনি অন্ধকার, ভেতর থেকে কিছু দেখা যাবেনা। বুধাদিত্য ওদের জানালার পাশে গিয়ে উঁকি মারে।

সাদা টিউবের আলোয় ঘরের মধ্যে সবকিছু পরিষ্কার দেখা যায়। বিছানা ওপরে চিত হয়ে শুয়ে নগ্ন ঝিলাম। পীনোন্নত স্তনজোড়া উপরের দিকে দুটি সুউচ্চ শৃঙ্গের মতন উঁচিয়ে। স্তনের গাড় বাদামি বোঁটা ফুলে নুড়ি পাথরের মতন শক্ত হয়ে গেছে। বোঁটার চারদিকে হাল্কা বাদামি বৃত্ত। এক হাতে নিজের একটি নরম সুগোল স্তন নিয়ে চেপে পিষে দিতে থাকে, অন্যহাত তলপেটের ওপরে তীব্র গতিতে নড়ছে। দুই গোল সুন্দর থামের মতন মসৃণ উরু হাঁটু ভেঙে মেলে ধরা। দুই উরুর মাঝে সমীর নিজের নিম্নাঙ্গ ডুবিয়ে দিয়েছে ঝিলামের নরম সিক্ত সুখের সাগরে। ঝিলামের দেহের দুপাশে হাত রেখে ভর করে যৌনাঙ্গের সাথে যৌনাঙ্গ মিলিয়ে মন্থনে রত। ঝিলামের ফুলের মতন নরম দেহপল্লব বিছানার সাথে পিষে চেপে একাকার করে দিয়েছে সমীর। ঝিলাম কাতরাতে থাকে চরম কামনা বাসনার তৃষ্ণায়, তীব্র উত্তেজনায় মাথা ঝাঁকায়। সমীরের মন্থনের তালে তালে ঝিলাম কোমর তুলে সাড়া দেয় ওর পেষণে। ঝিলাম দুই হাতে সমীরের মুখ আঁজলা করে ধরে, আহ্বান জানায় ওর বুকের ওপরে আসার জন্য, ওর কমনীয় দেহকে পিষে ফেলার জন্য। সমীরের মন্থনের গতি বেড়ে যায়, ঝুঁকে পড়ে ঝিলামের স্তনের ওপরে। একটা স্তন মুখের মধ্যে নিয়ে চুষে, পিষে সমান করে দেয়। কামড় বসিয়ে দেয় নরম সুগোল স্তনের ওপরে। ফর্সা নরম স্তনের ওপরে সমীরের দাঁতের দাগ বসে যায়। ঝিলাম সেই কামড়ে কঁকিয়ে ওঠে, ব্যাথায় নয়, তীব্র কামনার সুখে। কিছু পরে ঝিলামের দেহ বেঁকে যায় ধনুকের মতন। মাথা, ঘাড় পেছনে বেঁকে যায় সমীরের মাথা নিজের বুকের উপরে চেপে ধরে। সমীর বারকয়েক জোরে জোরে মন্থন করার পরে শিথিল হয়ে যায়। ঝিলাম দুই হাতে সমীরকে জড়িয়ে ধরে নিচের দিক থেকে সমানে কোমর উপর দিকে ঠেলতে থাকে। সমীরের লিঙ্গ নিজের ভেতরে সিক্ত গুহার ভেতরে নিয়ে নিজেই মন্থনের আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। সমীর নিস্তেজ হয়ে ওর শরীরের ওপরে পড়ে থাকে আর কাঁপতে থাকে। ঝিলাম প্রাণপণে নিজেকে ঠেলে ধরে সমীরের সাথে, কিন্তু ওর ভারের জন্য নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে নিচে। কিছু পরে হাত পা এলিয়ে ঝিলাম চুপ করে সমীরের নিচে শুয়ে থাকে।

তীব্র উত্তেজনায় বুধাদিত্যের লিঙ্গ কঠিন হয়ে যায়। ওদের কাম বাসনার খেলা দেখে সেই কঠিন লিঙ্গ হাতের মুঠিতে নিয়ে নাড়াতে শুরু করে দেয়। যখন দেখে যে সমীর শিথিল হয়ে ঝিলামের ওপরে পড়ে আছে, তখন বুধাদিত্যের জ্ঞান ফেরে। লিঙ্গ ছেড়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে পড়ে। বন্ধু আর বন্ধুপত্নির প্রেমের রতিক্রীড়া লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে মনের মধ্যে এক অদ্ভুত স্বাদের আনন্দ পায়। চুরি করার স্বাদ পায় বুভুক্ষু বুধাদিত্য, অবশেষে স্বপ্ন সাকার হয় ওর। মর্তের অপ্সরা ঝিলামের নগ্ন কমনীয় দেহ দেখার স্বপ্ন সাকার হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ ল্যাপটপ খুলে বসে থাকে, কিন্তু কিছুই মাথায় আসেনা। চোখের সামনে শুধু ঝিলামের নগ্ন নরম দেহপল্লব আর কানের মধ্যে গুঞ্জরিত হয় তৃষ্ণার্ত বাসনার মৃদু শীৎকার। একটু মদের দরকার এই অশান্ত হৃদয়কে শান্ত করতে, নাহলে পাগল হয়ে যাবে বুধাদিত্য।

কতক্ষণ এই ভাবে বসেছিল জানেনা। কিছুক্ষণ পরে বাথরুমে জল পড়ার আওয়াজে সম্বিৎ ফেরে ওর। ঘরের দরজা খুলে খাওয়ার ঘরে গিয়ে ফ্রিজ খুলে মদের বোতল বের করে। কাপবোর্ড থেকে একাটা কাট গ্লাস বের করে। খাওয়ার টেবিলে সাজানো বাটিতে ঝিলাম ওর জন্য কাজু, কিসমিস রেখে গেছে। গ্লাসে বেশ কয়েকটা বরফের টুকরো ঢেলে দিয়ে মদ ঢেলে নেয়। সোফার ওপরে গিয়ে বসে পড়ে হাতে গ্লাস নিয়ে আর বাটি নিয়ে। বেশ কিছু আগের তীব্র বাসনার শীৎকার বারমুডার ভেতরে ওর লিঙ্গকে কঠিন করে তোলে, সামনের দিকে দাঁড়িয়ে থাকে সুউচ্চ শৃঙ্গের মতন। ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত, আর পাঁচটা বাঙ্গালীর মতন নয়, ওর সুঠাম গঠন, চওড়া কাঁধ, চওড়া বুকের ছাতি, পেশিবহুল পেটানো শরীর। মদ, মাংস নিয়ে থাকে তাই সকালে ব্যায়াম করে নিজেকে ধরে রেখেছে।

বাথরুম থেকে সমানে জল ঢালার আওয়াজ আসে। কে গেছে এত রাতে, সমীর না ঝিলাম? গ্লাস ঠোঁটের কাছে আনতেই বাথরুমের দরজা খুলে যায়। চোখের সামনে ভেজা একটা সুন্দরী পায়রা, ঝিলাম বেরিয়ে আসে বাথরুম থেকে। ভেজা শরীর, পরনে পাতলা গোলাপি স্লিপ, কাঁধে বাঁধা দুটি সরু স্ট্রাপ। বুধাদিত্যকে সোফায় বসে থাকতে দেখে হকচকিয়ে যায়। একহাত চলে যায় বুকের কাছে, ভারী স্তনের মাঝের খাঁজ এক হাতে ঢাকতে চেষ্টা করে ঝিলাম। অন্য হাতে স্লিপের নিচের দিক টেনে ধরে ঢাকতে চেষ্টা করে জানুসন্ধি। ভেতরে কিছুই পরেনি ঝিলাম, পীনোন্নত স্তনের অবয়ব পরিষ্কার ফুটে উঠেছে, সাথে সাথে পাতলা স্লিপের ভেতর থেকে স্তনের দুই কঠিন নুড়ি পাথরের মতন উঁচিয়ে থাকা দুই বোঁটা পরিষ্কার দেখা যায়। স্লিপ খানি ভারী পাছার ঠিক নিচে এসে শেষ। দুই পুরুষ্টু মসৃণ উরু অনাবৃত, চিকচিক করছে বিন্দু বিন্দু জলের ফোঁটা। সারা মুখে একটা ভীতি আর তৃষ্ণার্ত চাহনি। ঠোঁট জোড়া ফ্যাকাসে, গালের লালিমা চলে গেছে। বাথরুমের দরজার কাছে থমকে দাঁড়িয়ে থাকে ঝিলাম, হাতে বুকে মুখের ওপরে বিন্দু বিন্দু জলের ফোঁটা। স্লিপের কিছু অংশ ভিজে গেছে, পেটের কাছে ভিজে নাভির চারদিকে লেপটে গেছে। ছোটো গোল পেট আর গভীর নাভিদেশ পরিস্ফুটিত। কিছুক্ষণ থমকে দাঁড়িয়ে থাকার পরে মাথা নিচু করে বুধাদিত্যের চোখ বাঁচিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায় ঝিলাম। হাঁটার সময়ে ভারী পাছার দুলুনি দেখে বুধাদিত্য উন্মাদ হয়ে যায়। স্লিপ মাঝে মাঝে পাছার ওপরে থেকে সরে গিয়ে নিটোল সুগোল পাছার চমক বুধাদিত্যকে দেখিয়ে দিয়ে যায়। বুধাদিত্য এক ঢোকে গ্লাসের মদ গলায় ঢেলে দেয়। মাথা নিচু করে দরজা খুলে ঘরে ঢুকে পড়ে ঝিলাম।

বুধাদিত্যের শিরায় উপশিরায় মদের চেয়ে বেশি ঝিলামকে কোলে পাওয়ার নেশা চাগিয়ে ওঠে। বারমুডার ভেতরে লিঙ্গ কঠিন তপ্ত লোহার রডের মতন দাঁড়িয়ে থাকে। ঝিলাম হয়তো ওর লিঙ্গের উঁচিয়ে থাকা দেখে ফেলেছে। না, এখান থেকে চলে যাওয়া ভালো, ওদের থেকে দুরে থাকা ভালো। এত সুন্দর একটি ফুলকে নষ্ট করে দিতে মন চাইল না বুধাদিত্যের। এতদিন যে মাছগুলো খেয়েছে বুধাদিত্য, তারা সবাই টোপ ফেলার আগেই বুধাদিত্যের ছিপ দেখে বঁড়শিতে গেঁথে যেতো। কিন্তু ঝিলামের মতন সুন্দরী অপ্সরা একদম অন্য ধাঁচের মেয়ে। কাউকে যদি মন দেয় তবেই সে তার শরীর পায়। ঝিলামের রুপ মাধুর্য দেখে পায়ে ডলতে ইচ্ছে করেনা বুধাদিত্যের। বোতল নিয়ে ঘরে ঢুকে গ্লাসের পর গ্লাস শেষ করে দেয়। বুকের ভেতর তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, বিবেকের সাথে তীব্র কামনার যুদ্ধ। বিবেক বাধা দেয়, কামনার আগুন ঝিলামকে ঝলসে দেয়ার জন্য উসকিয়ে দেয়। বোতল শেষ, মাথা ঝিমঝিম করছে বুধাদিত্যের। বিবেক শেষ পর্যন্ত জিতে যায়, ঝিলামের থেকে দুরে, সমীরের থেকে দুরে চলে যেতে হবে। পাশবিক, স্বার্থপর স্বভাবের লোক বুধাদিত্য, নিজেকে সে ভালো করে চেনে। টাকা আর প্রতিপত্তি ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসে না। সেইজন্য কোন একজনকে অঙ্কশায়িনী করেনি। সকাল হলেই চলে যাবে, পারে কি রাতের বেলা বেড়িরিয়ে যাবে সমীরের বাড়ি থেকে। হ্যাঁ, মাথা ঠিক থাকা পর্যন্ত বেরিয়ে পড়া ভালো।

হিংস্র মন মেজাজ কাবু করে নিজের জামা কাপড় পরে নিল। ঘড়িতে দেখে রাত দুটো বাজে। একটা ব্লাঙ্ক ফোন করে নিজেই নিজেকে উত্তর দিতে থাকে জোর গলায়। “কি হয়েছে? সারভার গেছে? কি করে, কতক্ষণ লাগবে ঠিক হতে? প্রোগ্রাম গেছে না হার্ডঅয়ার গেছে? আচ্ছা আমি আসছি, দেখি।”

ঘর থেকে বেরিয়ে সমীরের ঘরের দরজায় টোকা দেয়। সমীরের পরিবর্তে ঝিলাম দরজা অল্প ফাঁক করে। স্লিপের ওপরে একটা লম্বা গাউন চড়ানো। ঝিলাম প্রথমে বুধাদিত্যের চোখে চোখ রাখতে লজ্জা পায়। বুধাদিত্যকে জামা কাপড় পরা অবস্থায় দেখে অবাক হয়ে যায়। দরজা খুলে বেরিয়ে আসে, বুধাদিত্য ঘরের মধ্যে লক্ষ্য করে দেখে সমীর মরার মতন বিছানায় পড়ে আছে।

ঝিলাম মাথা নিচু করে মৃদু সুরে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার, এই রাত দুটোতে জামা কাপড় পরে? তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? কোথায় যাবে?”

বুধাদিত্য অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে ভারী গলায় উত্তর দেয়, “না মানে আমাকে এখুনি অফিস যেতে হবে, কিছু টেকনিকাল প্রবলেম এসে গেছে। কাল সকালে আমার হয়ে সমীরের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিও। আমি চললাম ঝিলাম, ভালো থেকো।”

ঝিলাম ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “চলি বলতে নেই বুধাদিত্য, বলে আসছি।”

বুধাদিত্য হাসবে না কাঁদবে ভেবে পায়না। কে এই নারী, কেন এর সাথে আগে দেখা হয়নি বুধাদিত্যের? হয়তো তাহলে কাউকে ভালবাসতো এবং বিয়ে করতো বুধাদিত্য। ওর চোখের দিকে তাকায়, ঝিলামের চোখে মিষ্টি হাসি।

বুধাদিত্য হারিয়ে যায়, মৃদু গলায় বলে, “ঝিলাম আমি আসছি।”

দরজা খুলে দেয় ঝিলাম। বুধাদিত্য ব্যাগ হাতে বেরিয়ে যায়, পেছনে না তাকিয়ে। আবার যদি কোন অদৃশ্য টানে বেঁধে পড়ে সেই ভয় ওর বুকের মাঝে ভর করে।

ঝিলাম ওকে পেছন থেকে ডাক দেয়, “বুধাদিত্য, এত রাতে যাচ্ছো। অফিস পৌঁছে একটা ফোন করে দিও সমীরের ফোনে। আমি খুব চিন্তায় থাকবো, আমি তোমার ফোনের অপেক্ষায় জেগে থাকবো কিন্তু।”

পেছনে না তাকিয়ে মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দেয় যে ফোন করবে। আজ পর্যন্ত নিজের মা ছাড়া কোন মহিলার আওয়াজে ওর চোখে জল আসেনি। ঝিলামের শেষ বাক্য ওর মন কাঁদিয়ে দিয়ে গেল, শরীরের শত সহস্র শিরা উপশিরা ঝনঝন করে বেজে উঠল। এই ঝিলামকে পিষে নিংড়ে নিজের কামক্ষুধা চরিতার্থ করতে চেয়েছিল কয়েক ঘন্টা আগে। যাবার আগে ঝিলামের মধু মাখানো সুর ওর হৃদয়ের আমুল নাড়িয়ে দেয়।
 
তৃতীয় পর্বঃ ভস্মীভূত ক্রন্দন।

সেই রাতে আর বাড়ি ফেরেনা বুধাদিত্য। সারা রাত গাড়ি চালিয়ে যায় পাগলের মতন জয়পুর হাইওয়ে দিয়ে। সকাল সাতটা নাগাদ খেয়াল হয় যে জয়পুর পৌঁছে গেছে। ঝিলামকে ফোন করা হলো না, কি বলবে ঝিলাম কে, আমি পালিয়ে এসেছি? গাড়ি ঘুরিয়ে দিল্লীর দিকে রওনা হয়ে গেল। দিল্লী ঢুকতে ঢুকতে দেরি হয়ে গেল, সেদিন আর অফিস গেলোনা। সোজা বাড়ি চলে এলো। তালা খুলে ঢুকতেই একটা গুমোট বাধা হাওয়া বেরিয়ে আসে। বাড়ির তালা খোলার সময়ে সমীরের ফোন।

সমীর উদোম গালাগালি শুরু করে দিল ফোনে, “শুয়োরের বাচ্চা, কুত্তা, হারামি। অত রাতে কেউ বের হয়? শালা তুই জাত শয়তান, আজ পর্যন্ত বদলালিনা।”

বুধাদিত্য কি উত্তর দেবে, সমীরকে ক্ষান্ত করার জন্য বলল, “একটু বুঝতে চেষ্টা কর, অফিসে কাজ ছিল তাই রাতে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল।”

সমীর, “শালা সেসব বুঝলাম, কিন্তু ঝিলামকে একটা ফোন করে দিতে পারতিস অফিস পৌঁছে। বেচারি সারা রাত তোর ফোনের অপেক্ষা করে সকালের দিকে ঘুমাতে গেছে।”

বুধাদিত্যের বুক ফাঁকা হয়ে যায়, চিনচিন করে ওঠে বুকের বাঁদিক। কেন ঝিলাম ওর জন্য বসে ছিল? বুধাদিত্য ঝিলামের কেউ নয়, শুধুমাত্র ওর স্বামির পুরানো বন্ধু মাত্র, তাও আবার অনেক দিন পরে দেখা। ঝিলাম কি আসল বুধাদিত্যকে চেনে? চিনলে হয়তো বাড়িতেই ঢুকতে দিতো না। আসল বুধাদিত্য স্বার্থপর, নিচ, ইতর স্বভাবের লোক।

বুধাদিত্য সমীরকে ক্ষমা চেয়ে বলে, “সরি বাবা, কাজে এত ডুবে গেছিলাম যে ফোন করা হয়নি।”

সমীর, “শালা এখন দুপুর বারোটা বাজে, এতক্ষণে তোর ফোন করার সময় হয়নি?”

বুধাদিত্য, “ঠিক আছে বাবা, আমার মাথা কেটে তোর পায়ের তলায় রাখলে তুই শান্তি পাবি? আমার হয়ে ঝিলামের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিস।”

সমীর, “ঠিক আছে। এক কাজ কর আগামি শনিবার বিকেলে আমার বাড়ি চলে আসিস।”

বুধাদিত্য ফাঁপরে পড়ে যায়। ওর বুকে যে ঝিলামের সামনে যাওয়ার শক্তি নেই। মিথ্যে কথা বলে সমীরকে এড়াতে চায়, “আমি পরের সপ্তাহে ইটালি যাচ্ছি, দিন পনেরোর টুর। ওখান থেকে এসে দেখা হবে।”

সমীর, “ওকে বাই, মাঝে মধ্যে ফোন করিস তাহলে।”

ফোন রেখে চুপ করে বসে থাকে বুধাদিত্য। নিজের জীবনের পাতা চোখের সামনে মেলে ধরে। টাকা ছাড়া, প্রতিপত্তি ছাড়া কারুর পেছনে যায়নি। তিন রুমের বিশাল ফ্লাট যেন ওকে গিলে খাবার জন্য হাঁ করে তাকিয়ে ওর দিকে। একটা রুম বেডরুম, একটি গেস্ট রুম যেটা ওর শারীরিক ক্ষুধা মেটানোর জায়গা, অন্য রুমটিকে স্টাডি বানিয়েছে। বসার ঘরের সোফার ওপরে খবরের কাগজ, খাওয়ার টেবিলে কিছু প্লেট ছড়ানো। সকাল বেলায় কাজের লোক এসে ফিরে গেছে। নিজেকেই একটু সাফসুতরা করতে হবে। সবকিছু ভুলিয়ে দিয়ে ঘরের কাজে মেতে উঠলো বুধাদিত্য। নিজেই ঝাড়ু হাতে ঝাড় দিল, দুই ঘরের আবর্জনা পরিষ্কার করে দিল। সোফার কভার বদলে দিল, খাওয়ার টেবিল মুছে চকচক করে দিল। শোয়ার ঘরে ঢুকে বিছানার চাদর বদলে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল।

বিকেল হয়ে এল। সারাদিনের কাজের পরে একটু ক্লান্ত। বসার ঘরে বসে টিভি চালিয়ে দিল। ঠিক তখন ফোন বেজে উঠল। ফোন তুলে দেখে অচেনা একটা এসটিডি নাম্বার। ফোন তুলে জিজ্ঞেস করে কে কথা বলছে।

অচেনা আওয়াজ, “হ্যালো, বুধাদিত্য, আমি তোমার বাবা বলছি, ধানবাদ থেকে।”

ঝনঝন করে ওঠে সারা শরীর। অচেনা ভদ্রলোকের পরিচয় শুনে রাগে রক্ত ফুটে ওঠে বুধাদিত্যের। গম্ভির স্বরে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ বলো কি খবর? হটাত এতদিন পরে কি মনে করে?”

বুধাদিত্যের বাবা একটু আমতা আমতা করে বলেন, “না মানে, বহু বছর দেখা সাক্ষাৎ নেই তাই। কেমন আছো?”

বুধাদিত্য, “আমি ভালো আছি। চোদ্দ বছর পরে আমাকে মনে পড়ল তোমার? কিছু কাজ আছে নিশ্চয়, কি কাজ আছে?”

বুধাদিত্যের বাবা, “না মানে, শুনলাম তুমি দিল্লী চলে গেছো। একটি বার দেখা করার ইচ্ছে হলো। কোলকাতায় কি আর আসা হয়?”

বুধাদিত্য, “মাঝে মধ্যে মামাবাড়ি যাই। আমার ফোন নাম্বার তোমাকে কে দিল?”

বুধাদিত্যের বাবা, “তোমার মামিমা দিলেন। মানে প্রথমে দিতে চাইছিলেন না, আমি অনেক অনুরোধ করার পরে দিয়েছেন। আমার কর্মের ফল তোমাকে অনেক ভোগ করতে হয়েছে। তোমার সাথে একটি বার দেখা করার ইচ্ছে আছে, বুধো। আমি ক্ষমাপ্রার্থী বুধো।”

বুধাদিত্য গর্জে ওঠে নিজের নাম শুনে, “মিস্টার গুহ, তুমি আমাকে ওই নামে ডাকার অধিকার হারিয়েছো।” বাবাকে বাবা বলে ডাকতে ইচ্ছে করে না। “মায়ের চিতার সাথে আমি অনাথ হয়ে গেছি, মিস্টার গুহ। তুমি ফোন রেখে দাও।”

বুধাদিত্যের বাবা ধরা গলায় বলেন, “আমি সত্যি ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে।”

বুধাদিত্য, “এত দিন পরে হটাত, কারন জানতে পারি কি? তুমি তো বেশ আনন্দে আছো, আবার বিয়ে করেছো, ভালোই আছো, সেখানে আমার জায়গা হতে পারেনা।” কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, “নতুন বউ কি ছেড়ে দিয়েছে, যে আমার কথা চোদ্দ বছর পরে মনে পড়েছে?”

বুধাদিত্যের বাবা চাপা গলায় উত্তর দেয়, “না ঠিক তা নয়। তবে যদি কোনদিন কোলকাতা আসো, তাহলে একটিবার ধানবাদ ঘুরে যেও। খুব দেখতে ইচ্ছে করে তোমাকে। বয়স হয়েছে, জীবনে অনেক পাপ করেছি, অনেক কিছুর ক্ষমা নেই জানি। তাও একটি বার দেখা করার ইচ্ছে আছে।”

ফোন রেখে দিল বুধাদিত্য। ফ্রিজ খুলে একটা গ্লাসে মদ ঢেলে নিল। দুচোখ ঝাপসা হয়ে গেছে, একটা দমকা ঝড় এসে ওর বাঁধাধরা অঙ্ককষা জীবন উলট পালোট করে দিয়ে গেল। বিছানার ওপরে শুয়ে পড়ল বুধাদিত্য। মাথার কাছে বাঁধানো মায়ের ছবি। মায়ের সবে একুশ আর বাবার তখন চব্বিশ, যখন তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পরেই বুধাদিত্যের জন্ম। ক্লাস নাইনে পড়তো বুধাদিত্য তখন মা মারা যান। কাঁচের ফ্রেমের ভেতর থেকে মা ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসেন, চোখ দুটি ভারী মিষ্টি, অসীম মমতা মাখা। রোজ সকালে স্নান সেরে মায়ের ছবির নিচে ধুপ কাঠি জ্বালিয়ে যায়। মা ওকে রোজ দিন আশীর্বাদ করেন, বাবা সাবধানে গাড়ি চালাস একটু, কারুর সাথে এক্সিডেন্ট হলে মাথা গরম করিস না, মারপিট করিস না। বুধো রে, আমি তোর পথ চেয়ে বসে থাকবো।

কেঁদে ওঠে বুধাদিত্যের প্রান, সেই কান্নার জল ওর একার। হাতের পানীয়ের অর্ধেকটা গলায় ঢেলে দিল, মাথা ঝিম ঝিম করতে শুরু করে দিল একটু। ছোটোবেলা থেকে হস্টেলে মানুষ। মা চাইতেন না তার একমাত্র ছেলেকে হস্টেলে পাঠাতে, কিন্তু বাবার জেদের জন্য হস্টেলে যেতে হয়।

ক্লাস নাইনে পড়তো, একদিন স্কুল যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে সবাই। হস্টেল ওয়ার্ডেন ওকে ডেকে নিয়ে যায় অফিস ঘরে। সেখানে গিয়ে দেখে যে মামা বসে আছেন। মামাকে দেখে খুব খুশি বুধাদিত্য, কিন্তু রঞ্জন বাবুর মুখ থমথমে। ভাগ্নের মুখের হাসি দেখে প্রান কেঁপে ওঠে। বোনের মৃত্যু সংবাদ কি করে দেবে। মামাকে দেখে আনন্দে আঠখানা, বুধাদিত্য জিজ্ঞেস করে, কি এনেছো মামা। রঞ্জন বাবু ওকে বললেন যে ওকে বাড়ি নিয়ে যেতে এসেছেন। সেই শুনে বুধাদিত্যের মনে আনন্দ ধরে না। এক মাস বাকি ছিল শীতের ছুটির, তার আগেই বাড়ি ফিরতে হবে শুনে খুব খুশি হয়েছিল। সারা রাস্তা রঞ্জনবাবু ওর খুশির আমেজে টোল পড়তে দেয় না, জানে যে এই হাসি হয়তো তাঁর ভাগ্নের শেষ হাসি।

বাড়িতে পা দিতেই পা আটকে যায় মাটিতে। উঠানে তার স্নেহময়ি মা শুয়ে আছেন অন্তিম শয্যায়। দৌড়ে গিয়ে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে ওঠে বুধাদিত্য, মা একি হলো, তুমি যে বলেছিলে শীতের ছুটিতে আমাকে নিয়ে বেড়াতে যাবে? মা ওঠ মা, দেখ আমি এসে গেছি। চল না মা, ঘুরতে যাব। বুধাদিত্যের মায়ের কানে সেই আওয়াজ পৌঁছায় না। মায়ের মাথা কোলে করে নিয়ে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে কেঁদে ওঠে বুধাদিত্য। জগতে সব শেষ। শেষ পর্যন্ত সবাই মিলে মাকে নিয়ে চলে গেল।

মায়ের মুখাগ্নি করার সময়ে দুরে দাঁড়িয়ে থাকা বাবার দিকে চোখ পড়ে। চোয়াল শক্ত হয়ে যায় বাবাকে দেখে। মুখাগ্নি করার পরে হাতের কাছে একটা বাঁশ পড়ে ছিল, সেটা নিয়ে বাবাকে মারতে ছোটে। বুধাদিত্যের মামি, প্রমিলা দেবী জড়িয়ে ধরেন ওকে। মামিমার আদরের ছোঁয়া পেয়ে শেষ পর্যন্ত ক্ষান্ত হয় বুধাদিত্য। বুধাদিত্য জানে না রঞ্জনবাবু ওর বাবাকে কি বলেছিল সেইদিন। শুধু জানে যে বাবার সাথে শেষ দেখা সেই শ্মশানে। মায়ের চিতা জ্বলে ওঠে, সেই সাথে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যায় বুধাদিত্যের মুখের হাসি, ছাই হয়ে যায় বুধাদিত্যের মনের আনন্দ।

বাবা সেই ছোটবেলায় হস্টেলে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, তারপরে ছয় বছরে মাত্র দিন কুড়ির জন্য দেখা হয়েছিল বাবার সাথে। বাবা ধানবাদের কোল ইন্ডিয়া লিমিটেডের উচ্চ পদস্থ ম্যানেজার। বাবার কথা জিজ্ঞেস করলেই মা ওকে বলতেন যে, বাবা কাজে খুব ব্যস্ত। কেউ যদি ওকে এসে জিজ্ঞেস করতো, তোর বাবা দেখতে কেমন। উত্তর দেবার মতন ছবি ছিল না বুকে, ঠিক করে হয়তো বলতে পারতো না, যে ওর বাবা দেখতে কেমন।

প্রমিলা দেবী আর রঞ্জন বাবু বুধাদিত্যকে ভাসিয়ে দেননি। নিজের মেয়ে অনিন্দিতার সাথে নিজের সন্তানের মতন মানুষ করেছেন। কিন্তু কারুর সাথে বুধাদিত্যের মনের বন্ধন তৈরি হয় না। বুধাদিত্যের মায়ের নামে ওর দাদু কোলকাতার লেকটাউনে একটা ফ্লাট কিনে রেখে গিয়েছিলেন। বোনের জমানো টাকা দিয়ে বুধাদিত্যকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ান রঞ্জন বাবু। বুধাদিত্য কলেজে পড়াকালীন মামাবাড়ি ছেড়ে লেকটাউনের ফ্লাটে চলে আসে। রঞ্জনবাবু মানা করেন নি, ছেলে বড় হয়েছে, নিজের বাড়ি চলে যাবে সেটা তিনি আগেই জানতেন। চাকরি পাওয়ার পরে দিল্লী চলে আসে। গত বছর লেকটাউনের ফ্লাট বিক্রি করে দিল্লীর কালকাজিতে বিশাল তিন কামরার ফ্লাট কেনে। ছোটোবেলা থেকে কোলকাতার বাইরে, কোলকাতায় মা নেই, সুতরাং কোলকাতা আর ওর শহর নয়। তবে প্রতি বছর এক নয় পুজোতে নাহয় শীতে মামাবাড়ি যায়।

বুধাদিত্য চুপ করে শুয়ে থাকে বিছানার ওপরে। ঠাণ্ডার আমেজ কেটে বুকের মধ্যে দেখা দেয় মরুভুমির তপ্ত বালুচর। সেই ছোটবেলায় মা ওকে বুকে করে লেকটাউনের ফ্লাটে চলে আসে, আর ফিরে যায়নি ধানবাদে। ধানবাদের কথা বিশেষ মনে নেই বুধাদিত্যের। ছোটবেলা থেকে হস্টেলে মানুষ, ছুটিতে মামাবাড়ি না হয় নিজেদের ফ্লাটে। কানাঘুষো কথা শুনতে পেত বুধাদিত্য, বাবা নাকি মেয়েছেলে আর মদ নিয়ে পরে থাকে দিন রাত।

বাবা যাকে বিয়ে করেছে তাকে হয়তো আগে থেকেই চিনতো, তাই হয়তো মাকে ছেড়ে দিয়েছিল। আসল কারন জানেনা, কেননা বাবার সাথে বহু বছর কারুর দেখা সাক্ষাৎ নেই, নতুন সেই মহিলাকেও কোন দিন দেখেনি বুধাদিত্য। যাবে কি যাবে না, গিয়ে কি হবে, না একবার যাওয়া যাক, দেখা যাক কি বলতে চায় তাঁরা। দেখে আসতে চায় নতুন সংসার কেমন করে আছে।

কুয়াশার মতন কিছু ছবি ওর চোখের সামনে ভেসে আসে। বুধাদিত্য তখন হস্টেলে যায়নি, ক্লাস ওয়ানে পড়ে। বাবা অতি মদ্যপ হয়ে বাড়ি ফিরেছে, মায়ের সাথে তুমুল ঝগড়া, মা ওকে কোলে করে অন্য ঘরে নিয়ে গিয়ে শুয়ে পড়ে। বহু রাত এই রকম কেটে গেছে। এমন দিন গেছে যে মা বাবার জন্য খাবার বেড়ে টেবিলেই শুয়ে পড়েছে, বাবা রাতে আর বাড়ি ফেরেন নি। বুধাদিত্য রাতে পেচ্ছাপ করার সময় মা বলে কেঁদে উঠতো। ঘুম ঘুম চোখ মেলে টের পেতো, মা ওর পাশে নেই। খাবার ঘরে গিয়ে দেখতো মা টেবিলের ওপরে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছেন। মায়ের নাকের কাছে চোখের জলের সরু দাগ। ছোট্ট ছোট্ট হাতে সেই জলের দাগ মুছিয়ে মাকে আদর করে বলতো, আমি বড় হলে তোমাকে তাড়াতাড়ি খেতে দেব। তোমাকে রাতে না খেয়ে থাকতে হবে না। মাকে তাড়াতাড়ি খেতে দিতে পারলো না বুধাদিত্য, মা তাঁর আগেই ওকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেলেন।

সেইদিন থেকে ওর জীবন কালো মেঘে ঢেকে গেল। পড়াশুনায় ভালো তাই ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করল। জীবনকে এক নতুন অঙ্কে বেঁধে নিল বুধাদিত্য। মমতাময়ি মা তাকে ছেড়ে বহুদুরে চলে গেছে। অন্যদিকে নারীসঙ্গে ডুবে তার বাবা তার কাছ থেকে দুরে চলে গেছে। এমন হতে পারে যে কোন এক সুন্দরী লাস্যময়ী নারীর কবলে পরে বাবা মাকে ছেড়ে চলে গেছেন। সেই নারী বাবাকে ভুলিয়ে বশীভূত করে তাঁর সম্পত্তি নিয়ে নিয়েছে। আর যখন বাবা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন, শ্রান্ত পথের পথিক হয়ে গেছেন তখিন সেই মহিলা ছেড়ে চলে গেছে। তাই হয়তো ওর বাবার এতদিন পরে বুধাদিত্যের কথা মনে পড়েছে। এই নারীসঙ্গের প্রতি বিতৃষ্ণায় বুধাদিত্য নতুন নারী খোঁজে প্রতি রাতে। কোন আকর্ষণীয় নারী দেখলে, পেটের মধ্যে জৈবিক ক্ষুধা জেগে ওঠে। ঝিলামকে দেখে সেই জৈবিক ক্ষুধার উদ্রেক হয়েছিল। ব্যাতিক্রমি শুধু এক নারী, আয়েশা।

গত চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ওর জীবনের সব অঙ্ক ভুল হয়ে গেল। গত রাতে ঝিলামের সেই শেষ বাক্য মায়ের কথা মনে করিয়ে দেয়। উনত্রিশ বছরের ঋজু বুধাদিত্য, চোদ্দ বছর পরে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। হাতের গ্লাস ছুঁড়ে মারে, ঝনঝন করে হাতের গ্লাসের সাথে সেন্টার টেবিলের কাঁচ ভেঙে যায়। মেঝের ওপরে ছড়িয়ে সহস্র কাঁচের টুকরো, ওর জীবন যেন দ্বিতীয় বার টুকরো টুকরো হয়ে গেল।

মাঝে মাঝেই প্রমিলাদেবী ওকে ফোন করে কুশল জিজ্ঞেস করতো। ঠিক সন্ধ্যের সময়ে প্রমিলাদেবীর ফোন আসে।

বুধাদিত্য ফোন তুলেই মামিমাকে বকতে শুরু করে দেয়, “আমার ফোন নাম্বার কি বারোয়ারী পেয়েছো, যে যাকে তাকে নাম্বার দিয়ে বেড়াচ্ছো?”

প্রমীলাদেবী থথমত খেয়ে যান, একটু ধাতস্থ হয়ে বুঝতে পারেন যে, বুধাদিত্যের বাবা ওকে ফোন করেছিল। শান্ত হয়ে বলেন, “হ্যাঁ বাবা, তুই ভালো আছিস। আজ অফিস গেছিলি?”

বুধাদিত্য ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “দুই দিনে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় না। আমি ঠিক আছি। তুমি একদম আমার কথা ঘুরাবার চেষ্টা করবে না। কেন দিয়েছিলে মিস্টার গুহকে আমার ফোন নাম্বার?”

প্রমীলাদেবী, “তোর বাবা অনেক অনুরোধ করেছিলেন। তোর মামা দিতে চাননি। পরে আবার আমাকে ফোন করেছিলেন আমি ভাবলাম চোদ্দ বছর হয়ে গেছে, সবার বয়স হয়েছে। তাই তোর ফোন নাম্বার দিয়ে দিলাম। কথা বলে দেখ।”

বুধাদিত্য, “কথা বলা হয়ে গেছে। কি চায় এত দিন পরে?”

প্রমীলাদেবী, “তা জানিনা বাবা। তোর সাথে দেখা করতে চায় এই জানালেন।”

বুধাদিত্য, “হ্যাঁ আমাকেও তাই বললেন, কিন্তু আমার একদম ইচ্ছে নেই দেখা করার।”

প্রমীলাদেবী, “বাবা, আমার কথা শোন, একটি বার পারলে দেখা করিস, তোর বাবার বয়স হয়েছে, হয়তো প্রায়শ্চিত্ত করতে চায়।”

বুধাদিত্য, “ঠিক আছে সে দেখা যাবে। সেটা পরের কথা। তোমরা ভালো আছো?”

প্রমীলাদেবী, “হ্যাঁ রে সবাই ভালো আছি। দিনেদিনে বুবাইয়ের দুষ্টুমি বেড়েই চলেছে।”

বুধাদিত্য, “আচ্ছা মামি, আমি পরের মাসে দেশের বাইরে যাচ্ছি। পুজোর সময়ে আসতে পারবো কি না ঠিক জানিনা।”

প্রমীলাদেবী, “পুজো এবারে অক্টোবরের মাঝামাঝি, তুই ততোদিনে ফিরতে পারবি না?”

বুধাদিত্য, “জানিনা, তবে আগে ফিরে এলে পুজোতে যাবো। ওকে বাই, ফোন রাখছি।”

প্রমীলাদেবী, “ঠিক আছে, সাবধানে থাকিস।”
 
চতুর্থ পর্বঃ ছিন্ন টান।

সমীর মাঝে মধ্যে ফোন করে, কিছু কথা হয়। বুধাদিত্য শুক্রবার রাতে জানিয়ে দেয় যে ও ইটালি যাচ্ছে অফিসের টুরে, ফিরে এসে যোগাযোগ করবে। কিছুটা আস্বস্ত হয় বুধাদিত্য। মাস শেষ হতে এখন দুই সপ্তাহ বাকি, আর অক্টোবরের শুরুতেই সত্যি ইটালি আর জার্মানির টুর আছে। প্রায় একমাস সমীরের সাথে যোগাযোগ থাকবে না। সমীর ঝিলাম ভুলে যাবে বুধাদিত্যকে, বুধাদিত্যের অশান্ত মন শান্ত হয়ে যাবে। নিজের পুরানো অঙ্ক আবার গুনতে বসবে। সমীরের এসএমএস আসে মাঝে মধ্যে, “কোথায় আছিস?” “কেমন আছিস?” “কবে ফিরছিস?” শুরু দিকে প্রায় আসতো এসএমএস, মাঝে মধ্যে উত্তর দিতো বুধাদিত্য। ইটালি যাওয়ার পরে আর উত্তর দেয় না। সমীরের খবর নেওয়া কমে যায়, বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় টান।

জার্মানি ঘুরে, ইটালি ঘুরে দেশে ফেরে, মনের মাঝে পুরানো শান্তি, পুরানো জীবন ফিরে পায়। আগমনীর সুর আকাশে বাতাসে। দিল্লীতে দুর্গা পুজোর আবহাওয়া ঠিক করে বোঝা যায় না। তবে কালকাজি, সিআর পার্কে অনেক বাঙালি থাকে তাই পুজো পুজো গন্ধ মাঝে মধ্যে নাকে ভেসে আসে। গতে বাঁধা বুধাদিত্যের জীবন প্রবাহ চলতে থাকে।

প্রায় পুজোতে মামাবাড়ি যায় বুধাদিত্য। মামিমাকে ফোন জানিয়ে দেয় যে ষষ্টির দিনে কোলকাতা পৌঁছে যাবে। রঞ্জনবাবু প্রমীলা দেবী, দুজনেই খুব খুশি। নির্ধারিত দিনে প্লেনে চেপে বুধাদিত্য কোলকাতা নামে। নামতেই যেন এক জন সমুদ্রের কবলে পড়ে যায়। গাড়ি আগে থেকেই বলা ছিল, গাড়ি নিয়ে সোজা পন্ডিতায় মামাবাড়ি পৌঁছে যায়। বাড়ি ঢুকতেই বুবাই ওর কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বুবাই, অনিন্দিতাদির মেয়ে। অনিন্দিতাদির বর, সুব্রতদা, যাদবপুর কলেজের প্রফেসার। মামা ভাগ্নিতে শুরু হয় তুমুল মারামারি, পেটাপিটি।

অনিন্দিতাদি, “হ্যাঁরে পাগলা, তুই কি এনেছিস এবারে আমার জন্য?”

জার্মানি থেকে দিদির জন্য একটা চামড়ার কোট কিনেছিল, সেটা হাতে ধরিয়ে দেয়। বুবাইয়ের জন্য রোম থেকে আনা একটা কথা বলা, গান করা পুতুল, সুব্রতদার জন্য এক কারটন ইটালিয়ান সিগারেট, মামার জন্য একটা শার্ট। মামিমার জন্য কিছু কিনতে পারেনি, করুন চোখে তাকিয়ে থাকে মামিমার দিকে।

বুধাদিত্য মামিমার দিকে তাকিয়ে বলে, “পমুসোনা তুমি তো স্কার্ট পরবেনা তাই তোমার জন্য কিছু আনতে পারিনি।” মামিমাকে আদর করে বুধাদিত্য পমুসোনা বলে ডাকে।

মা হারা ছেলে বাড়ি ফিরেছে, প্রমীলা দেবীর চোখে জল। বছরে এই কটা দিনের জন্য কোলে ফিরে আসে। মামিমা আলতো একটা চড় কষিয়ে দিয়ে বলেন, “বিকেল বেলা গড়িয়াহাটে গিয়ে আমার জন্য জামদানি কিনে আনবি।”

বুধাদিত্য গালে মামিমার স্নেহের চড় খেয়ে মাথা দুলিয়ে বলে, “ওকে পমুসোনা তোমার জন্য সব কিছু কিনে দেবো।”

সুব্রতদা খাওয়ার সময়ে জিজ্ঞেস করে, “কিরে ব্যাটা কবে বিয়ে করবি, বুড়ো হয়ে যাবি তারপরে?”

অনিন্দিতাদি মুখ শুকনো করে বলে, “পিসি বলে কি আমাকে কেউ ডাকবে না?”

বুধাদিত্য হাসে, চুপ করে খেয়ে চলে। বুবাই বায়না ধরে, “আমি এবারে মামুর সাথে দিল্লী যাবো।”

বুধাদিত্য বুবাইকে জানায়, “একটু বড় হয়ে নে, মাকে ছেড়ে তাকতে পারলে আমি আর তুই মিলে আলস্কা যাবো। ওই যে ডিস্কভারি চ্যানেলে দেখিস, নরদান লাইটস, সেই দেখাবো তোকে।”

বুবাইয়ের চেহারায় খুশির ঝলক, “কিন্তু মামু সেতো বড় হলে যাবো। এবারে আমি কিন্তু তোমার সাথে যাবো দিল্লী।” মায়ের দিকে তাকিয়ে মিনতি করে বলে বুবাই, “মাম্মা, প্লিস আমি মামুর সাথে দিল্লী যাবো।”

অনিন্দিতাদি বুবাইকে বলে, “রাতে কিন্তু মা থাকবে না, তখন যেন মায়ের কাছে যাবো বলে কাঁদিস না।”

বুবাই বুক ফুলিয়ে বলে, “আমি বড় হয়ে গেছি, ক্লাস থ্রি তে পড়ি।” বুবাইয়ের কথা শুনে সবাই হেসে ফেলে।

রাতের বেলা ছাদে বসে সুব্রতদা আর বুধাদিত্য বেশ আয়েস করে ড্রিঙ্কস করছিল। এমন সময়ে অনিন্দিতাদি ছাদে আসে। অনিন্দিতাদিকে দেখে বুধাদিত্য হকচকিয়ে যায়।


অনিন্দিতাদি ওকে আস্বস্ত করে, “বড় হয়েছিস, বড় ম্যানেজার, তা ড্রিঙ্কস নিতে ক্ষতি নেই, তবে একটু মেপে খাস।”

বুধাদিত্য হেসে ওর পেটানো শরীর দেখিয়ে বলে, “ড্রিঙ্কসের সাথে মাঝে মধ্যে ব্যায়াম হয়ে যায়, তাই বেঁচে আছি।”

অনিন্দিতাদি হেসে বলে, “দিনে দিনে সাঙ্ঘাতিক চেহারা বানিয়ে ফেলেছিস। তারপরেও কপালে মেয়ে জুটলো না?”

হেসে ফেলে বুধাদিত্য, সুব্রতদার দিকে চোখ টিপে বলে, “বউয়ের কি দরকার, বরযাত্রী পেয়ে যাই।”

অনিন্দিতাদি ওর কথার মানে বুঝতে পেরে যায়। মৃদু বকুনি দিয়ে বলে, “বুধি ভালো নয় রে। প্লিস ছেড়ে দে ওইসব আর একটা সরল জীবনে ফিরে আয়।”

বুধাদিত্য, “তুমি প্লিস ড্রিঙ্কস করার সময়ে জ্ঞান দিয়ো না।”

অনিন্দিতাদি কিছু থেমে বলে, “মায়ের কাছে শুনলাম যে গত মাসে নাকি সুবির পিসেমশায় ফোন করেছিলেন?”

বুধাদিত্য গম্ভির হয়ে যায়। ফোনের কথা এতদিনে মন থেকে মুছে গিয়েছিল, অনিন্দিতাদির কথা শুনে সেই কথা আবার মনে পড়ে যায়। গ্লাসের বাকি পানিয়টুকু গলায় ঢেলে দিদির দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ করেছিল।”

অনিন্দিতাদি, “কি ব্যাপার? এতদিন পরে?”

বুধাদিত্য, “জানিনা।”

অনিন্দিতাদি, “যা একবার ধানবাদে। দেখা করে আয়।”

বুধাদিত্য হাতের গ্লাস চেপে ধরে চিবিয়ে অনিন্দিতাদির কথার উত্তর দেয়, “তোমার খুব দেখা করার ইচ্ছে হচ্ছে বুঝি? নিজে যাও না তাহলে, আমাকে টানছো কেন?”

অনিন্দিতাদি ওর মাথায় হাত রেখে বলে, “বুধাদিত্য, একটু শান্ত হ। বুঝতে চেষ্টা কর, তোর বাবা, হয়তো গরম রক্তের ফলে একসময়ে অনেক কিছু করে ফেলেছেন। এখন বয়স হয়েছে হয়তো মনের মধ্যে পরিতাপ এসেছে। একবার দেখা করে আয়।”

বুধাদিত্য দিদির হাত মাথা থেকে সরিয়ে দিয়ে উঠে পড়ে। ঝাঁঝিয়ে বলে ওঠে, “তুমি এসে সব নেশা গুবলেট করে দিলে।”

অনিন্দিতাদি ওকে শান্ত করে বলে, “বুধি, একবার দেখা করতে দোষ কি?”

বুধাদিত্য উত্তর দেয়, “ঠিক আছে। দেখা করবো খানে, মামিকে বলো জানিয়ে দিতে যে দশমীর পরের দিন আমি ধানবাদ যাবো।”

পুজোর কটা দিন হইহুল্লোড়, আনন্দে কেটে যায়। ঠিক দশমীর দিনে প্রমীলাদেবী ধানবাদ ফোন করে বুধাদিত্যের বাবা, সুবিরবাবুকে জানিয়ে দেন যে তাঁর ছেলে পরেরদিন ধানবাদ যাবে তাঁর সাথে দেখা করতে। বুধাদিত্য পেছনে দাঁড়িয়ে মামিমার কথা শোনে, কিন্তু বাবার সাথে কথা বলার অভিপ্রায় জাগে না।

পরেরদিন সকাল বেলা ব্লাক ডায়মন্ডে বেরিয়ে পড়ে ধানবাদের উদ্দেশ্যে। যাত্রা শুরু করার সময়ে ফেরার টিকিট কিনে রেখেছিল। ট্রেন যত ধানবাদের কাছে এগিয়ে যায়, বুধাদিত্যের বুক টনটন করে ওঠে। ব্যান্ডেল পেরিয়ে গেল, বর্ধমান পেরিয়ে গেল। দুর্গাপুরে এসে ট্রেন দাঁড়ায়। দুর্গাপুর আসতেই বুধাদিত্যের হটাত ঝিলামের কথা মনে পড়ে যায়। চোখের সামনে হটাত করে ভেসে আসে ঝিলামের নগ্ন দেহপল্লব। মাথা ঝাঁকিয়ে সেই দৃশ্য দূর করে দেয়। তারপরে ভেসে ওঠে ঝিলামের মিষ্টি মুখ, ঠোঁটে লেগে মিষ্টি হাসি। দুর থেকে কানে ভেসে আসে ঝিলামের মধুর কন্ঠস্বর। সেই রাতে বেরিয়ে যাবার আগে ঝিলাম মৃদু সুরে অনুরোধ করেছিল বুধাদিত্যকে, যেন অফিস পৌঁছে ফোন করে। কিন্তু বুধাদিত্য ফোন করেনি। তারপরে আর দেখা হয়নি ঝিলামের সাথে। প্রায় তিরিশ দিন হয়ে গেছে, সমীরের সাথেও কথা হয়নি। কেমন আছে সমীর, কেমন আছে ঝিলাম? জানতে বড় ইচ্ছে করে। হটাত বুকের পাঁজর বাধা দেয়, ঝিলাম পরস্ত্রী, মুখ তুলে দেখা পাপ। বুধাদিত্যের জীবনে অনেক মেয়ে এসেছে সব বিস্নেস উইথ প্লেসার। একমাত্র আয়েশা আলাদা, ওর প্রতি বুধাদিত্যর হৃদয় একটু নরম, একটু টান। রোহিতের লাস্যময়ী বউ, আয়েশা, ওর আগের কম্পানির একাউন্টসে কাজ করে। আয়েশা ধরা দেয় ওর ডাকে, মাছের মতন বুধাদিত্যের ছিপে এসে গেঁথে যায়। না ঝিলাম সেই মেয়ে নয়, ঝিলাম অন্য মাটির তৈরি। আয়েশা আর ঝিলামের মধ্যে আকাশ পাতালের পার্থক্য। আয়েশা উচ্ছল তরঙ্গিণী, ঝিলাম শান্ত গভীর সমুদ্র।

শত চিন্তা ভর করে আসে বুধাদিত্যের মাথার মধ্যে। কখন যে ট্রেন ধানবাদ পৌঁছে যায় ঠিক ঠাহর হয়না। সূর্য মাথার ওপরে। মামিমা ওকে বাড়ির ঠিকানা লিখে দিয়েছিল। স্টেশানে নেমে একটা অটো করে লিখিত ঠিকানার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বুক ঢিপঢিপ করে, চোদ্দ বছর পরে বাবার সাথে দেখা হবে। কি বলবে, কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে। বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী, যদি থাকেন সাথে, তাহলে তিনি কেমন ভাবে ওকে নেবে? কি ভাববে ওকে দেখে? না বুধাদিত্য জানিয়ে দেবে যে, তাদের সুখের সংসারে ভাঙন ধরাতে আসেনি। এসেছে শুধু মাত্র বাবার ডাক শুনে নাহলে কোনদিন আসতো না। ভুলেই গেছিল যে ওর বাবা জীবিত।

অটো একটা বিশাল দুতলা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। এই বাড়িতে ওর জন্ম হয়নি। ছোটোবেলায় মনে আছে, কোল ইন্ডিয়ার কোয়াটারে থাকত ওরা। বাড়ির সামনে একটা ব্রাসের নামের ফলক তাতে বড় বড় হরফে লেখা “মঞ্জুষা মন্দির”। নাম পড়েই বুক কেঁপে গেল বুধাদিত্যের। বুধাদিত্যের মায়ের নাম মঞ্জুষা। ব্রাসের নামের ফলকে হাত ছোঁয়ায় বুধাদিত্য। চোয়াল শক্ত হয়ে গেল ওর, কি মনে করে মায়ের নামে বাড়ির নাম রেখেছে মিস্টার সুবির গুহ? বিশাল লোহার গেট ঠেলে ভেতরে ঢোকে। সামনে একটা ছোটো বাগান, অনেক ফুলের গাছ। কয়েকটা সিঁড়ি চড়ে বাড়ির সামনের দুই পাল্লার ভারী কাঠের দরজা। কোথা থেকে একটা লোক দৌড়ে এসে জিজ্ঞেস করল কাকে চাই। বুধাদিত্য উত্তর দিল যে বাড়ির মালিককে খুঁজছে।

চাকরটা দরজা খুলে দিতেই, বিশাল হলো ঘরে পা রাখে বুধাদিত্য। পায়ের নিচে, চকচকে শ্বেত পাথরের মেঝে, মাথার ওপরে একটা ঝাড় লণ্ঠন, দেয়ালে বেশ কিছু দামী পেন্টিং ঝুলছে। একপাশের দেয়ালে বিশাল একটা কাঁচের আলমারি, প্রচুর বই ঠাসা। লোকটা ওকে সোফার ওপরে বসতে বলে ভেতরে চলে যায়। কিছু পরে বেরিয়ে আসেন এক সুন্দরী ভদ্রমহিলা, বয়স প্রায় সাঁইত্রিস কি আটত্রিস। পরনের শাড়ি আর সিঁথিতে একটু সিঁদুর, দেখে বোঝা গেল যে তিনি এই বাড়ির রাজ্ঞী। চোখে মুখে আভিজাত্যের ছাপ, ঠোঁটে মিষ্টি আময়িক হাসি, মাথা ভর্তি ঘন কালো কোঁকড়ানো চুল, ঘাড়ের কাছে আলতো হাত খোঁপায় বাঁধা, শরীরের গঠন ভারী সুন্দর, গায়ের রঙ উজ্জ্বল। ভদ্রমহিলা বুধাদিত্যকে দেখে হাত জোড় করে বসতে বলে। দাঁড়িয়ে থাকা লোককে আদেশ দেয় সরবত বানিয়ে আনতে। গলার স্বর শুনে মনে হলো মধুর ঝঙ্কার। চোয়াল শক্ত হয়ে গেল বুধাদিত্যের, তাহলে এই মোহিনী নারীর রপে মুগ্ধ হয়ে মিস্টার সুবির গুহ বশীভূত হয়েছেন, সত্যি ভদ্রমহিলার রুপের কাছে যে কেউ বশ মেনে যাবে।

ভদ্রমহিলা ওর সামনে দাঁড়িয়ে ওকে বলেন, “মিস্টার গুহ গাড়ি নিয়ে স্টেশানে গেছেন, দেখা হয়নি? আমি ফোন করে দেখি।”

বুধাদিত্য মাথা নাড়ায়, “না আমার সাথে কারুর দেখা হয়নি।”

ভদ্রমহিলা ফোন করতে যাবেন ঠিক এমন সময়ে দরজা ঠেলে সুবিরবাবু ঘরে ঢোকেন। বুধাদিত্যকে দেখে ঠিক কি বলবেন, কি করবেন ভেবে পায় না। চশমার পেছনে ছোটো ছোটো চোখ দুটি জলে ভরে আসে। বুধাদিত্য সুবিরবাবুর দিকে দু পা এগিয়ে যায়। ভদ্রমহিলা সুবিরবাবুর পেছনে দাঁড়িয়ে পিঠে হাত রাখেন। মাথা নাড়িয়ে ইঙ্গিত করেন সামনে এগিয়ে যেতে। বুধাদিত্য ডান হাত বাড়িয়ে দেয়, ওর বাবা হাত টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয় বুধাদিত্যের, আচমকা এত প্রেম উথলে পড়ছে, ঠিক মেনে নিতে কষ্ট হয় বুধাদিত্যের। জড়সড় হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে নিজেকে ধিরে ধিরে বাহুপাশ থেকে মুক্ত করে।

ভারী গলায় জিজ্ঞেস করে সুবিরবাবুকে, “কেমন আছো?”

সুবিরবাবু উত্তর দেন, “এই বেঁচে আছি।” ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে বলেন, “দেবস্মিতা না থাকলে হয়তো মারা যেতাম।”

বুধাদিত্য জানতে পারলো যে পিতার নতুন ভার্যার নাম দেবস্মিতা। যেমন নাম তেমনি দেবীর মতন দেখতে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত আবার দেখে নিল বুধাদিত্য। সুবিরবাবু জিজ্ঞেস করেন বুধাদিত্যকে, “বসো দাঁড়িয়ে কেন? তোমার খবর শুনি।”

ঘরের চারদিকে চোখ বুলিয়ে সুবিরবাবুর দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “আমি খুব ভালো আছি। আমাকে কেন ডেকেছো তাই বল?”

সুবিরবাবু ওর সামনের সোফায় বসে পড়েন, সুবিরবাবুর কাঁধের ওপরে হাত রেখে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকেন দেবস্মিতা। সুবিরবাবু ওকে বলেন, “বাবা হই তোমার, আমার সাথে দেখা করতে নেই?”

বুধাদিত্য ভারী গলায় উত্তর দেয়, “গত উনত্রিশ বছরে, আমি হাতের কড় গুনে বলতে পারি তুমি আমার কাছে কটা দিন ছিলে।”

দেবস্মিতা সুবিরবাবুর কাঁধে আলতো চাপ দিয়ে বলেন, “মিস্টার গুহ, তোমাকে বলেছিলাম...” দেবস্মিতার হাবভাব দেখে মনে হয় সুবিরবাবু সম্পূর্ণ তাঁর বশীভূত, আঙ্গুলি হেলনে ওঠেন আর আঙ্গুলি হেলনে বসেন।

কি বলেছিল দেবস্মিতা? বুধাদিত্যকে বাড়িতে না ডাকার জন্য? দেবস্মিতার দিকে চোয়াল শক্ত চোখ লাল করে তাকিয়ে থাকে বুধাদিত্য। দেবস্মিতা ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পেরে যায় যে বুধাদিত্যের মাথায় রক্ত চড়ে গেছে। দেবস্মিতা ওখান থেকে সরে যায়। বুধাদিত্য আর সুবিরবাবু সামনা সামনি সোফায় বসে পড়ে। বুধাদিত্যের ঠিকভাবে মেনে নিতে পারছেনা, শুধু মাত্র মামিমার বারংবার বলার জন্য আসা। গা হাত পা চিড়বিড় করে জ্বলতে থাকে ওর। বেশ ছিল নিজের জীবনে নিজের মতন, একটা ডাকে সবকিছু বদলে গেল বলে মনে হলো। ঘৃণা আর রোষে গায়ের রক্ত ফুটছে, বাবার মুখের দিকে তাকাতে ইচ্ছে করছে না। বারেবারে মনে হয় যে দেবস্মিতা মিস্টার সুবির গুহকে ওর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। চোয়াল শক্ত করে এদিক ওদিকে তাকিয়ে চুপ করে বসে থাকে।

সুবির বাবুর চোখ ছলছল, ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। এত দিন পরে দেখা, কি জিজ্ঞেস করবেন জানেনা। তাও কিছু পরে জিজ্ঞেস করেন, “তোমার শরীর স্বাস্থ্য ভালো আছে?”

বুধাদিত্য মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ ভালো আছে।” আবার চুপ।

ঠিক সেই সময়ে দেবস্মিতা একটা বড় ট্রেতে কোল্ড ড্রিঙ্কস, একটা প্লেটে লুচি ভাজা আর আলুরদম, তিনটে বাটিতে তিন রকমের মিষ্টি। বুধাদিত্য খাবারের সাজ দেখে মনে মনে হাসে। এদের আদিখ্যেতার বলিহারি, এত ধাক্কা দেওয়ার পরে এবারে খাবারে বিষ মিশিয়ে মারতে চায় নাকি।

বুধাদিত্য ভদ্রতার খাতিরে বলে, “এতো আমি খাইনা, কিছু উঠিয়ে নিয়ে গেলে ভালো হয়।”

দেবস্মিতা নরম সুরে হেসে বলে, “এমন কিছু বানানো হয়নি। এই সব খাওয়া যায়।” দেবস্মিতা বুধাদিত্যকে ঠিক কি বলে সম্বোধন করবে ভেবে পায়না, ভাব বাচ্যে কথাবার্তা হয়।

সেন্টার টেবিলের ওপরে ট্রে রেখে সুবীরবাবুর পাশে বসে পড়েন। বুধাদিত্যর রাগে দুঃখে ক্ষিধে মরে গেছে। উত্তর হাতড়ায় মনের অলিগলিতে, কেন ডেকেছে? শুধু মাত্র কোল্ড ড্রিঙ্কসের গ্লাস উঠিয়ে নিয়ে বাকিগুলো সরিয়ে দেয়। দেবস্মিতা একটু মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে যায়, কিন্তু বুধাদিত্যের শক্ত চোয়াল দেখে কিছু বলতে সাহস পায়না।

দেবস্মিতা নরম সুরে বুধাদিত্যকে বলেন, “অনেক দূর থেকে আসা হয়েছে, বেশ ক্লান্ত। হাতমুখ ধুয়ে কাপড় বদলে নিলে ভালো হয়। খাবার তৈরি আমি খাবার বাড়ছি।” সুবিরবাবুর দিকে তাকিয়ে বলেন, “ওঠো এখন, খাওয়ার আগের ওষুধ খেয়ে নাও। খাওয়ার টেবিলে বাকি কথা হবে আর তারপরে সময় আছে তো। সময় মতন না খেলে তোমার ব্লাড সুগার বেড়ে যাবে।”

দেবস্মিতার গলার আওয়াজ শুনে ক্ষণিকের জন্য বিদ্বেষ ভুলে যায় বুধাদিত্য। চাকর ওকে গেস্টরুম দেখিয়ে দেয়। বাথরুমে ঢুকে হাতমুখ ধুয়ে বের হতেই একটা ছোটো ছেলের সাথে দেখা হয়। একটু নাদুসনুদুস গোলগাল খুব মিষ্টি দেখতে। মাথা ভর্তি কোঁকড়ানো কালো চুল। গাল দুটি টোপাটোপা, দেবস্মিতার পেছনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে জুলুজুলু চোখে তাকিয়ে আছে। অবাক হয়ে যায় বুধাদিত্য, যদি জানতো যে একটা বাচ্চা ছেলে আছে তাহলে কিছু হয়তো হাতে করে আনতো সেই বাচ্চা ছেলেটার জন্য। কিন্তু কেউ জানেনা এই ছেলেটার কথা।

বুধাদিত্য সেই বাচ্চার দিকে হাত বাড়িয়ে ডাকে। বাচ্চা ছেলে একবার বুধাদিত্যের দিকে তাকায় তারপরে মায়ের মুখের দিকে তাকায়।

দেবস্মিতা বাচ্চাকে এগিয়ে যেতে বলে, “বড়রা ডাকলে যেতে হয়, কত বার বলেছি। যাও হ্যান্ডশেক করো। তোমার দাদা হয়।”

বুধাদিত্যের দিকে তাকিয়ে শিশুসুলভ প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, “দাদাদের মুছ থাকে না, কাকুদের গারিমুছ থাকে।”

বুধাদিত্য ওর কথা শুনে হেসে ফেলে, সাথে সাথে দেবস্মিতাও হেসে ফেলে।

বুধাদিত্য ওকে নাম জিজ্ঞেস করে, “তোমার নাম কি?”

বাচ্চাটা উত্তর দেয়, “পাপ্পাতিত্ত।”

বুধাদিত্য বুঝতে পারেনা নামের মানে মাথা নাড়ায়, “কি?”

দেবস্মিতা ওর দিকে হেসে বলে, “বাপ্পাদিত্য” দেবস্মিতা বাপ্পাদিত্যকে বলে, “খাওয়ার পরে বেশ গল্প করবে। চল খেতে হবে।”

খাওয়ার টেবিলে বসে দেখল সে এক এলাহি ব্যাপারের আয়োজন করা হয়েছে। কাঁসার থালায় খেতে দিয়েছে দেবস্মিতা। টেবিলে পাতা দুটি থালা, একটি সুবির বাবুর অন্যটি বুধাদিত্যের জন্য। দুজনের থালা মুখোমুখি বসানো। দেবস্মিতা অন্য একটি থালায় খাবার নিয়ে বাপ্পাদিত্যকে কোলে বসিয়ে খাওয়াতে শুরু করেন। আর ওদের খাওয়ার তদারকি করেন। চুপ করে খাওয়া শুরু হয়, কারুর মুখে বিশেষ কথা নেই, শুধু মাত্র দেবস্মিতা চাকরদের বলে খাবার নিয়ে আসতে বলেন, পরিবেশন নিজের হাতেই করেন।

খাওয়ার সময়ে বুধাদিত্য প্রশ্ন করে বাবাকে, “তোমার শরীর কেমন আছে?”

সুবির বাবু অনেকক্ষণ পরে ছেলের মুখে প্রশ্ন শুনে খুশি হন, “হ্যাঁ ভালো আছি। তুমি দিল্লীতে কি করো?”

বুধাদিত্য কাষ্ঠ হেসে বলে, “চাকরি করি আবার কি করবো।”

সুবিরবাবু একটু আহত হন ওর উত্তরের গড়ন দেখে, পাশে বসে দেবস্মিতা মৃদু মাথা নাড়ায় সুবির বাবুর দিকে। বুধাদিত্য লক্ষ্য করে সেই ইঙ্গিত। বুধাদিত্য জিজ্ঞেস করে সুবির বাবুকে, “আরো তিন চার বছর আছে তোমার চাকরির তাই না?”

সুবিরবাবু উত্তর দেন, “না, বছর চারেক আগে ভলেন্টারি রিটায়ারমেন্ট নিয়ে নিয়েছি। এখন বাড়িতেই থাকি আর নিজের একটা কম্পানি খুলেছি সেটা একটু দেখি।” দেবস্মিতার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “ওই দেখে, ওই সব আমি নিমিত্ত মাত্র।” দেবস্মিতা লাজুক হাসে আর ছেলে খাওয়ায়।

বুধাদিত্য, “ভালো কথা। এই বাড়ি আগে ছিলো না, কত বছর হলো এই বাড়ির?”

সুবিরবাবু, “বছর বারো হয়েছে মনে হয়।” দেবস্মিতার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “বারো বছর কি?” দেবস্মিতা আলতো মাথা নাড়িয়ে জানায় যে বারো বছর হয়েছে বাড়ির।

বুধাদিত্যের চোখ এড়ায় না যে সুবিরবাবু পদে পদে দেবস্মিতার হাত ধরে চলে। ভদ্রমহিলা সুবিরবাবুকে তাঁর মানে বশীভূত করে রেখেছে। হুম, তাহলে হটাত এমন ভাবে ডাকা কেন? অঙ্ক কিছুই মেলাতে পারছেনা বুধাদিত্য।
খাওয়া শেষ, দেবস্মিতা বাপ্পাদিত্যকে নিয়ে উপরের তলায় চলে যান। সুবিরবাবু আর বুধাদিত্য দু’জনে চুপচাপ বসার ঘরে বসে থাকেন। কি জিজ্ঞেস করবে, দুজনের বুকের মাঝে সহস্র প্রশ্ন, কিন্তু ঠিক কি বলে শুরু করবে সেটা ভেবে কূলকিনারা পায় না দুজনে। এমন সময়ে দেবস্মিতা নেমে আসেন, এসে দেখেন যে দুই জনে চুপ চাপ বসে। সুবিরবাবু পেপারে মাথা ডুবিয়ে, বুধাদিত্য চুপ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে।

দেবস্মিতা সুবিরবাবুকে একটু ভারী গলায় বলেন, “কি হলো, তোমরা চুপ করে বসে কেন? আমি তোমাকে বলেছিলাম কথা বলতে?”

সুবিরবাবু কাতর চোখে ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “কি জিজ্ঞেস করবো কিছু বুঝে পাচ্ছিনা।”

বুধাদিত্য চিবিয়ে উত্তর দেয়, “এইতো দেখে গেলাম তোমাদের সুখী সংসার। ব্যাস আবার কি চাই।”

সুবিরবাবু, “প্রতি বছর পুজোতে আসো কোলকাতায়?”

বুধাদিত্য, “প্রতি বছর আসি, তবে সময় অনুযায়ী। কোন বছর পুজোতে কোন বছর শীতকালে।”

ঘড়ি দেখে বুধাদিত্য, বসার বিশেষ মন নেই আর। চোখের সামনে ওর ভাঙা বাড়ির ওপরে সুখের অট্টালিকা দেখে দুঃখে আর বিদ্বেষে গা রিরি করে। কোন কথা বলতে ইচ্ছে করেনা বুধাদিত্যের।

দেবস্মিতা নিজেই হেসে আবহাওয়ার সামাল দিয়ে বলে, “রাতে কি খাবে তাই বল।”

বুধাদিত্য কাষ্ঠ হেসে সুবিরবাবুকে জানায়, “না আমি রাতে থাকছি না। বিকেলে ব্ল্যাকে ফিরে যাবো আমি।”

দেবস্মিতা আর সুবিরবাবু আহত হয়ে যান, ওর দিকে তাকিয়ে থাকেন। সুবিরবাবু জিজ্ঞেস করেন, “এতদিন পরে এসেছো, একটি রাত থেকে যাবে না।”

বুধাদিত্য দাঁড়িয়ে ম্লান হেসে বলে, “না বেরিয়ে পড়ি, অনেক দূর যেতে হবে, অনেকটা পথ একা একা হাঁটা বাকি। তুমি বেঁচে আছো জেনে খুশি, আমি বেঁচে আছি সেটা জেনে তুমিও খুশি।”

সুবিরবাবুর শরীর কেঁপে ওঠে, হাত বাড়িয়ে কিছু বলার চেষ্টা করেন। দেবস্মিতার চোখ ছলছল করে ওঠে এক অজানা আশঙ্কায়। বুধাদিত্য ওদের দিকে তাকিয়ে হাত জোড় করে বিদায় নেয়।

দেবস্মিতা শেষ চেষ্টা করে বুধাদিত্যকে আটকে রাখার জন্য, “ট্রেন ছাড়তে অনেক দেরি আছে, একটু বসে গেলে ভালো হতো। মিস্টার গুহ, গাড়ি করে ছেড়ে দেবেন।”

বুধাদিত্যের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে, “এতটা পথ আমি একা একা হেঁটে পার করেছি, বাকি রাস্তা একা হেঁটে পার করতে পারবো, আমার জন্য চিন্তা না করাই ভালো।”

বুধাদিত্য আর দাঁড়ায় না, চোখে দুঃখের জল, রাগের জল মিলেমিশে একাকার। কান লাল হয়ে গেছে এতক্ষণ এই সুন্দর সুবাসিত অট্টালিকার পাকের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে। নিজেই দরজা খুলে বাড়ির বাইরে পা রাখে। বিশাল লোহার গেট খুলে বেরিয়ে আসার আগে শেষ বারের মতন ব্রাসের নামের ফলকের দিকে তাকায়। মায়ের নাম বেশ জ্বলজ্বল করছে ওই ফলকে। ডুকরে কেঁদে ওঠে প্রান, কিন্তু চোখ শুকিয়ে রাখে বুধাদিত্য।

মামাবাড়ি ফিরে পরের দিন প্লেনে চেপে নিজের কর্ম জীবনে ফিরে আসে। প্রমীলা দেবী, অনিন্দিতাদি বারবার জানতে চায় কি কথা হয়েছে ওর বাবার সাথে। চুপ করে থাকে বুধাদিত্য, এক বারের জন্যেও মুখ খোলেনা। বুকের পাষাণ বুকের মাঝে বয়ে নিয়ে ফিরে আসে। নিজের জীবন আবার গুছিয়ে নেয় কিছুদিনের মধ্যেই। ফিরে আসে কিছুদিনের মধ্যেই সেই পুরাতন বুধাদিত্য; কাজে, মদে ডুবিয়ে দেয় নিজেকে।
 
পঞ্চম পর্বঃ উচ্ছলার চাপা অশ্রু।

পুজো শেষ, দিওয়ালী পার হয়ে গেছে। দিল্লীতে বেশ একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব নেমে এসেছে। রাতের বেলায় অবশ্য একটা শাল গায় দিলে চলে যায়। ছেলেরা এখনো সোয়েটার বের করেনি। মনোরম আবহাওয়া, ঘুরতে যাবার জন্য একেবারে উপযুক্ত। খুশির আমেজ এখনো কেউ কেউ ধরে রেখেছে মনের মধ্যে। সন্ধ্যে খুব তাড়াতাড়ি নেমে আসে আজকাল। অফিস থেকে বের হলেই রঙ বেরঙের পোশাকে মেয়েদের, ছেলেদের ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।

দুপুরে লাঞ্চ হয়ে গেছে। রোদ বেশ চনমনে তরতাজা। বুক ভরে ঠাণ্ডা বাতাস টেনে নেয় বুধাদিত্য। অনেক দিন সমীরের খবর নেই। নিজে থেকে ফোন করেনি, তবে পুজোর পরে একটা ফোন এসেছিল সমীরের। সেই শেষ ফোন, ইচ্ছে করেই বুধাদিত্য নিজেকে ওদের কাছ থেকে দুরে সরিয়ে রাখে। ঝিলামের সাথে আর দেখা হয়নি। মাঝে মাঝে বড় জানতে ইচ্ছে করে ঝিলাম আর সমীর কেমন আছে, কিন্তু কিছুতেই ফোন করতে পারেনা।

ঠিক সেই সময়ে আয়েশার ফোন আসে। ওর হৃদয়ের একটু খানি জায়গা আয়েশা নিয়ে নিয়েছে, কিন্তু একটা কিন্তুর জন্য সব বাঁধা। বেশ সুন্দরী লাস্যময়ী মেয়ে, অফিসে থাকাকালীন আয়েশার সাথে চুটিয়ে প্রেমের খেলা খেলেছে। সেই লাস্যময়ী ললনার সাথে বেশ কিছুদিন যাবত কোন দেখা সাক্ষাৎ নেই, হটাত ফোন করাতে উত্তেজনায় আর ভালো লাগায় বুক ভরে যায় বুধাদিত্যের।

বুধাদিত্য বেশ চনমনে গলায় বলে, “কি ব্যাপার অনেক দিন পরে ফোন? নিশ্চয় কোন সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছো, না হলে এই অধমকে কেন ফোন করবে।”

আয়েশা গলায় মধু ঢেলে বলে, “কি যে বলো না তুমি। তোমাকে আমি প্রতি রাতে মনে করি ডারলিং।”

হেসে দেয় বুধাদিত্য, “আর বেশি বাড়িয়ে বলতে হবে না, তোমার গলার আওয়াজ শুনেই আমার অবস্থা খারাপ।”

আয়েশা, “এই শুনছো, আমি না সত্যি একটা সমস্যায় জড়িয়ে পড়েছি।”

বুধাদিত্য শয়তানি হাসি দিয়ে বলে, “পথে এসো বাছাধন। ঠিক আছে আমি কয়েক ঘন্টার মধ্যে তোমার ওখানে পৌঁছে যাচ্ছি।”

আয়েশা, “আরে না না, আমার ফ্লাটে এসো না। আমি এখন অফিসে, আমি তোমার ফ্লাটে চলে আসছি, ওখানে আমি বিস্তারিত ভাবে আমার সমস্যার কথা বলবো আর তুমি একটু ভেবে চিন্তে সমাধান করে দিও।”

বুধাদিত্য বুকের ওপরে হাত বুলিয়ে বলে, “উফফ, ভেবেই পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি। তোমার সমস্যা আমার সমস্যা, চলে এসো তাড়াতাড়ি আমি সব সমাধান করে দেব।”

রক্ত চনমনে হয়ে ওঠে বুধাদিত্যের। অনেক দিন মনের সুখে সহবাস করা হয়নি কারুর সাথে। এমনি যাদের বার থেকে নিয়ে যায় তাদের সাথে সহবাস করে সেই আনন্দ আসেনা। আয়েশার সাথে অন্য এক আনন্দ, প্রচন্ড উচ্ছল উদ্দাম মেয়ে, শরীরের আনাচে কানাচে ভরে আছে যৌনতার চমকে। আয়েশার সাথে চুটিয়ে সহবাস করে এক অন্য আনন্দ পায় বুধাদিত্য। বারেবারে মনে হয় রোহিতের পেছনে ওর বউয়ের সাথে চুটিয়ে প্রেম, এই ভাবনা ওকে চরম উত্তেজনার শিখরে নিয়ে যায়। রোহিত একটা বহুজাগতিক কম্পানির ম্যানেজার। মাঝে মধ্যেই দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়ায়, তাইতো আয়েশা আর বুধাদিত্য বেশ চুটিয়ে প্রেমের খেলা খেলে। রোহিতের এই বর্তমান চাকরি বুধাদিত্য করিয়ে দিয়েছিল, একমাত্র আয়েশার ঠোঁটের তীব্র ছোবলের জন্য।

ঠিক চারটে নাগাদ নিজের ফ্লাটে পৌঁছে যায় বুধাদিত্য। বেশ ভালো করে স্নান করে নেয় বুধাদিত্য। দাড়ি কামিয়ে নেয়, ওল্ড স্পাইস আফটার শেভ মেখে নেয়, ওই গন্ধটা আয়েশার খুব ভালো লাগে। একটা বারমুডা পরে নেয়, বারমুডার নিচে কিছু পরেনা, আগে থেকেই তৈরি যাতে আয়েশার বিশেষ অসুবিধে না হয়। আয়েশা আসবে শুনে ওর পায়ের মাঝের সিংহ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে গেছে। গেস্ট রুম ঠিকঠাক করে নেয়। নিজের শোয়ার ঘরে কোনদিন কারুর সাথে সহবাস করেনি। ওখানে ওর মায়ের ছবি টাঙানো। ঘরের মধ্যে বেশ কয়েকটা সুগন্ধি মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়, আলাদা করে আলো লাগানো আছে। চারটে মৃদু নীল রঙের আলো ছাদে লাগানো। বুধাদিত্যের আলোর মধ্যে প্রেমের খেলা ভালো লাগে। কামিনীর শরীর নিয়ে খেলা করার সময়ে ওর সেই কামিনীকে চোখ ভরে দেখতে চায়, তার চেহারার লালিমা, তার চোখের ভাষা সব যেন ওকে উত্তেজিত করে। আয়েশা ছাড়া আর কোন মেয়ের শরীরে সেই আবেদন সেই কামনা খুঁজে পায় না। আয়েশাকে চেনে ভালো করে। আয়েশা খুব তাড়াতাড়ি ধরা পড়েছিল ওর জালে আর ওর তীব্র আলিঙ্গনে সাড়া দিয়েছিল প্রান খুলে। ওর শরীর নিয়ে যখন মেতে ওঠে বুধাদিত্য তখন যেন উন্মাদ হয়ে যায় আয়েশা। আয়েশা বেশ রসিয়ে রসিয়ে বুধাদিত্যের শরীর উপভোগ করে আর নিজেকে উজাড় করে দেয়।

সাড়ে চারটে বাজতেই কলিং বেল বেজে ওঠে। দরজা খুলে কামনার রমণী আয়েশাকে ভেতরে আহ্বান জানায়। সোফার ওপরে কাঁধের ব্যাগ ছুঁড়ে দিয়ে বুধাদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে একটা চুমু খায় আয়েশা। এক হাতে আয়েশার পাতলা কোমর জড়িয়ে অন্য হাতে দরজা বন্ধ করে দেয়। একরকম কোলের ওপরে তুলে সোফার ওপরে আছড়ে ফেলে আয়েশার নরম শরীর।

আয়েশা কঁকিয়ে ওঠে, “উফফফ, তুমি দেখছি একদম আগে থেকে তৈরি। কি ব্যাপার এই ক’দিনে কাউকে পাওনি বুঝি।” আয়েশা বুধাদিত্যকে চেনে, জানে যে বুধাদিত্য মাঝে মাঝে অন্য মেয়ের সাথে সহবাস করে।

বুধাদিত্য তাকিয়ে থাকে আয়েশার দিকে। পরনে একটা লম্বা নীল রঙের স্কার্ট, উপরে একটা হাল্কা নীল রঙের ফ্রিল শার্ট, গলায় জড়ানো একটা ওড়না। আজ যেন অন্য রকম আয়েশা। পরনের কাপড় যেন ওর কমনীয় লাস্যময়ী দেহ পল্লব বেশি করে ঢেকে রেখেছে। ওর ভরা যৌবনের ডালি আজ যেন মেলে ধরেনি আয়েশা। জানে কিছু পরেই এই বস্ত্র থাকবে মেঝেতে, ওর কোলে থাকবে কোমল আয়েশার নগ্ন দেহপল্লব।

বুধাদিত্য ফ্রিজের দিকে এগিয়ে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি নেবে? স্কচ না ভদকা?”

আয়েশা সোফার ওপরে বসে পড়ে, “আমি একটু ফ্রেস হয়ে আসি তারপরে আমি বানিয়ে দেবো।”

বুধাদিত্য হাত পা ছড়িয়ে সোফায় এসে বসে পড়ে। আয়েশাকে দেখেই বারমুডার ভেতরে লিঙ্গের চারপাশে রক্ত চলাচল বেড়ে গেছে। একটু শক্ত হয়ে গেছে ওর পুংদন্ড, আয়েশার দিকে তাকিয়ে বারমুডার ওপরে দিয়ে লিঙ্গ নাড়িয়ে দেয়। আয়েশা ওর দিকে তাকিয়ে গাড় বাদামি ঠোঁটে গোলাপি জিব বুলিয়ে চোখ টিপে ইঙ্গিতে জানায় যে একটু অপেক্ষা করতে। শরীরে মত্ত ছন্দ তুলে বাথরুমে ঢুকে পড়ে। বুধাদিত্য ফাইভ পয়েন্ট ওয়ান মিউসিক সিস্টেমে রোম্যান্টিক সঙ্গীত চালিয়ে দেয়। আয়েশার সাথে সঙ্গম করার সময়ে বুধাদিত্য একটু রোম্যান্টিক হয়ে যায়, এটা অবশ্য আয়েশার বেশি পছন্দ।

আয়েশা কিছুক্ষণ পরে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে। ধবধবে সাদা তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে, উন্নত স্তনের মাঝে গিঁট বাঁধা তোয়ালে, ঠিক কোমরের নিচ পর্যন্ত এসে শেষ হয়ে গেছে। আয়েশার দিকে তাকিয়ে থাকে বুধাদিত্য। অনেকদিন পরে পেয়েছে ওকে বুকের কাছে। তাই চোখ ভরে ওর ভরা যৌবনের ডালি উপভোগ করে বুধাদিত্য। গায়ের রঙ ফর্সা বললে চলে, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ। মাথার চুল ঘাড়ের নিচে। চোখ দুটি উত্তেজনায় চকচক করছে, কালো বাঁকা ভুরু যেন দুটি সাপ। নিচের ঠোঁট ওপরের ঠোঁটের চেয়ে একটু মোটা, তাই ওই ঠোঁটে চুমু খেতে বুধাদিত্যের বড় ভালো লাগে। উন্নত স্তন জোড়া যেন দুটি হিমালয়ের শৃঙ্গ। জানে যে ওই তোয়ালের নিচে লুকিয়ে আছে সুগোল স্তন, আর দুটি বড়বড় খেজুরের মতন রসালো স্তনের বোঁটা। পাতলা কোমর, একটু মেদ আছে যেটা না হলেই নয়, তাই ওর পেট দেখলে মনে হয় যেন এই খেয়ে নেই। নাভির নিচে একটা ছোটো তিল, বুধাদিত্যের সেই তিল দেখে পাগল হয়ে যায় আর নাভির ওপরে ওর আক্রমন বেড়ে যায়। গোল তলপেটের নিচে, দুই পুরুষ্টু উরুর মাঝে লুকিয়ে আছে নারীসুধার গহ্বর। সেই সুখের গুহার ওপরে বেশ সুন্দর করে রেশমি কোঁকড়ানো চুলের একটি বাগান সাজানো। তবে আয়েশার তোয়ালের নিচে সবকিছু ঢাকা। গুটি গুটি পায়ে আয়েশা ওর দিকে এগিয়ে আসে। চলার ছন্দে সামনের তোয়ালে বারেবারে সরে যায় জানুসন্ধি থেকে। বেরিয়ে পড়ে কালো প্যান্টি ঢাকা ফোলা যোনিদেশ।

আয়েশা ওর দিকে তাকিয়ে একটু রেগে বলে, “আমি আসবো জেনেও একটা ডাভ সাবান কিনে আনতে পারো নি?”

বুধাদিত্য একদম ভুলে গেছিল সাবানের কথা, “সরি আয়েশা, আমি একদম ভুলে গেছিলাম।”

আয়েশা মৃদু অভিমান দেখিয়ে বলে, “সেই আমাকে তোমার পামোলিভ মাখতে হলো।”

বুধাদিত্য ওর হাত টেনে কোলের ওপরে বসিয়ে দেয়। আয়েশা উরু ফাঁক করে বুধদিত্যের দিকে মুখ করে ওর কোলের ওপরে বসে পড়ে। বারমুডার নিচে বুধাদিত্যের উত্থিত লিঙ্গ সোজা স্পর্শ করে কালো প্যান্টি ঢাকা আয়েশার যোনিদেশ। আয়েশা ওর কাঁধের ওপরে হাত রেখে নিজের ভার ভর দেয়। বুধাদিত্য আয়েশার পাতলা কোমর দুহাতে জড়িয়ে ধরে ওর মুখের দিকে তাকায়। আয়েশার ঠোঁট অল্প খোলা, চোখে কামনার আগুন চিকচিক করছে। মাথা নাচিয়ে বুধদিত্যের মুখের ওপরে রেশমি চুলের পর্দা ফেলে দেয়। বুধাদিত্য বুক ভরে আয়েশার গায়ের কামনার ঘ্রান বুকে টেনে নেয়।

বুধাদিত্য নিচু স্বরে আয়েশাকে বলে, “তুমি সত্যি দিনে দিনে আরও বেশি সেক্সি হয়ে উঠেছো। কি ব্যাপার, রোহিত রোজ রাতে দিচ্ছে নাকি?”

আয়েশা ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে, “তোমার কি এই সময়ে ওর নাম না নিলেই হয় না?”

বুধাদিত্য, “সরি সোনা, সরি। তোমার সমস্যা কি সেটা বলো এবারে শুনি, না রাতে বলবে?”

আয়েশা ওর দিকে ঝুঁকে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলে, “আজ রাতে থাকতে পারবো না, কাল সকালে রোহিত ফিরে আসছে।”

বুধাদিত্য, “ওকে, আমাদের কাছে অনেক সময় আছে তোমার সমস্যার সমাধান করার জন্য।”

আয়েশা, “জানো একাউন্টসে একটা নতুন বস এসেছে আর আমাকে নিয়ে খুব ঝামেলা করছে। একটু সি.ই.ওকে বলে দাওনা প্লিস।” চাকরি ছেড়ে দিয়েছে বুধাদিত্য, কিন্তু আগের কম্পানির সি.ই.ও, ভিশাল সিনহার সাথে ওর ভালো সম্পর্ক আছে। ভিশাল সিনহা ওর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সিনিয়ার ছিল তাই ভিশাল ওকে বেশ খাতির করে।

বুধাদিত্য জিজ্ঞেস করে, “নতুন কে জয়েন করেছে? কি নাম?”

আয়েশা, “একটা মারাঠি, প্রবীর কেলকর নাম। সবার কাজের মধ্যে ফাঁকফোঁকর খুঁজে বেড়ানো ওর কাজ।”

বুধাদিত্য আয়েশার নিটোল নরম পাছার ওপরে হাত চেপে বলে, “তোমার এই সুন্দর পাছা আছে, একটু খেলিয়ে দিতে পারলে না ওর সামনে? তাহলে দেখতে কেমন তোমার কবলে চলে আসতো।”

আয়েশা ওর কথায় রেগে যায়, গালের ওপরে আলতো চাঁটি মেরে বলে, “তুমি জানো যে আমি কি রকম তারপরেও তুমি এই কথা আমাকে বললে?”

বিয়ের পরে আয়েশা শুধু মাত্র বুধাদিত্যের সাথে শারীরিক সম্পর্ক রেখেছিল। খুব খোলামেলা মেয়ে, নিজের শরীর দেখাতে পছন্দ করে কিন্তু কাউকে হাত লাগাতে দেয়না। কারুর কবলে পড়েনি, সেই লাস্যময়ী রমণী বুধাদিত্যের জালে ধরা দেয়। একবার বুধাদিত্য ওকে টাকা হেরফেরের অপবাদ থেকে বাঁচিয়ে ছিল। একাউন্টসে একবার বেশ কিছু অঙ্কের হেরফের হয়ে গিয়েছিল, সেটা অবশ্য আয়েশা করেনি, করেছিল মারকেটিঙের একটা ম্যানেজার আর দোষ পড়েছিল আয়েশার ওপরে। ওর রুপ যৌবনে ধরা পড়ে গিয়ে বুধাদিত্য ওকে বাঁচিয়ে ছিল। সি.ই.ও, ভিশাল সিনহার সাথে আলাদা করে কথা বলে বুধাদিত্য, বুদ্ধি দেয় একটা ইন্টারনাল এনকোয়ারি বসাতে। অফিসের সবার টুর ট্রিপ খরচ খরচার লিস্ট বানাতে, সবার কাছ থেকে রশিদ চাওয়া হয়। অফিস উলট পালট করে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে দেখার পরে সেই লোক ধরা পড়ে আর আয়েশা অপবাদ মুক্ত হয়। সেইদিন থেকে আয়েশা উন্মাদিনী হয়ে ধরা দেয় বুধাদিত্যের প্রেমের আলিঙ্গনে।

নরম পাছার ওপর থেকে তোয়ালে সরিয়ে বুধাদিত্য আয়েশার পাছা দু’হাতের থাবার মধ্যে নিয়ে আলতো করে চেপে ধরে। নগ্ন শীতল ত্বকের ওপরে গরম হাতের পরশে আয়েশা গলে যায়। চোখের পাতা ভারী হয়ে নেমে আসে, রসালো ঠোঁট জোড়া নামিয়ে আনে বুধাদিত্যের ঠোঁটের কাছে।

বুধাদিত্য জিব বের করে ওর ঠোঁট চেটে বলে, “সরি আয়েশা, আমি সত্যি তোমাকে এইভাবে আর কোনদিন বলবো না।”

আয়েশা বুধাদিত্যের কাঁধের ওপরে থেকে হাত নিয়ে যায় গালের দুপাশে। আঁজলা করে ধরে বুধাদিত্যের মুখ, ঠোঁট নামিয়ে চেপে ধরে বুধাদিত্যের ঠোঁট। জিব বের করে চেটে দেয় ওর জিবের ডগা। বুধাদিত্যের হাতের চাপ শক্ত হয়ে যায় আয়েশার নরম সুগোল পাছার ওপরে। পাছা চেপে ধরে আয়েশার যোনির ওপরে কঠিন লিঙ্গ উঁচিয়ে পিষে দেয়। আয়েশা যোনির ওপরে কঠিন লিঙ্গের পরশে কঁকিয়ে ওঠে। নিজেকে জোরে চেপে দেয় ওর গরম লিঙ্গের ওপরে, দু উরু চেপে ধরে বুধাদিত্যের কোমর। বুধাদিত্য ছটফট করে ওঠে আয়েশার তীব্র চুম্বনে। ডান হাত নিয়ে যায় আয়েশার পিঠের ওপরে, তোয়ালে খুলে পড়ে যায়। আয়েশার পীনোন্নত স্তন যুগল বেরিয়ে আসে তোয়ালের বাঁধন থেকে। আয়েশার কোমল স্তনের ওপরে কঠিন বোঁটা দুটি বুধাদিত্যের প্রসস্ত বুকের ওপরে আঁচড় কেটে দেয়। মনে হয় যেন দুটি গরম নুড়ি পাথর কেউ ওর বুকের ওপরে চেপে ধরে রেখেছে।

আয়েশা বাঁ হাত নামিয়ে নিয়ে আসে দুজনার শরীরের মাঝে, বুধাদিত্যের কঠিন লিঙ্গের ওপরে হাত বুলিয়ে দেয়। নরম আঙ্গুলের ছোঁয়ায় বুধাদিত্য বারেবারে কেঁপে ওঠে। আয়েশা ওর বারমুডার চেন খুলে কঠিন লিঙ্গের ওপরে আঙুল জড়িয়ে দেয়। বুধাদিত্য দুই হাতে আয়েশার কোমল শরীর জড়িয়ে ধরে একটু উপর দিকে তুলে ধরে। আয়েশা ওর লিঙ্গ বের করে নিজের প্যান্টি সরিয়ে সিক্ত যোনির ওপরে চেপে ধরে। উত্তপ্ত লাল লিঙ্গের মাথা, সিক্ত যোনির গুহার মধ্যে প্রবেশ করে যায়। আয়েশা কঁকিয়ে ওঠে যখন ওই লাল গোল মাথা ওর যোনিপাপড়ি ভেদ করে নারীগুহার মধ্যে প্রবেশ করে। কোমর একটু উঠিয়ে ঠিকভাবে অবস্থান করে দেয় লিঙ্গকে, বুধাদিত্য একহাতে আয়েশার কোমর অন্য হাতে ওর চুলের মুঠি ধরে টেনে রাখে। উত্তেজনায় দুই নর নারী ঘামে সিক্ত হয়ে ওঠে। আয়েশা হাত ছেড়ে ওর কাঁধের ওপরে হাত রেখে ভর দেয়। বুধাদিত্যের চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে, কোমর উঁচিয়ে ধরে বুধাদিত্য, কঠিন গরম লিঙ্গ সিক্ত যোনিগহ্বরে অনায়াসে ঢুকে যায়। আয়েশা মাথা পেছনে হেলিয়ে দিয়ে সুখের শীৎকার করে ওঠে, “ইসসসসস... উফফফফফ... উম্মম্ম... এক ধাক্কায় ফাটিয়ে দিলে একদম...”

আয়েশা ধিরে ধিরে নিজেকে নামিয়ে আনে ওর লিঙ্গের ওপরে। বুধাদিত্য ঝুঁকে পড়ে আয়েশার স্তনের ওপরে, একটি নরম স্তন নিজের মুখের মধ্যে পুরে নিয়ে চুষতে শুরু করে দেয় আর অন্য হাত ওর পিঠের ওপরে অবাধ্যের মতন বিচরন করে। আয়েশা সুখের শীৎকার করতে করতে কোমর নাচিয়ে মন্থন করে চলে নিজের সিক্ত যোনি। বারেবারে বুধাদিত্যের চুলের মধ্যে আঁচড় কাটে, থেকে থেকে ওর চওড়া কাঁধের ওপরে হাত বুলিয়ে দেয়। বুধাদিত্য এক স্তন ছেড়ে অন্য স্তনের ওপরে আক্রমন করে। আয়েশার পাছার তালেতালে নিচ থেকে কোমর উঁচিয়ে ওর যোনি গহ্বর মন্থন করে।

কিছুক্ষণ মন্থন চলার পরে, আয়েশার হাঁটুর নিচ থেকে দু’হাতে গলিয়ে সোফা ছেড়ে উঠে পড়ে। আয়েশা ওর গলা জড়িয়ে ধরে লতার মতন বুধাদিত্যের শরীরের সাথে লেপটে থাকে। লিঙ্গ আমুল গাঁথা যোনি গহ্বরে, বুধাদিত্য ওকে কোলে করে গেস্টরুমের বিছানায় নিয়ে যায়। হাঁটতে হাঁটতে বুধাদিত্য আয়েশার যোনির ভেতরে অল্প অল্প করে মন্থন করে চলে। আয়েশা স্তন চেপে থাকে বুধাদিত্যের বুকের ওপরে। ঠোঁট দিয়ে চুমু খায় বুধাদিত্যের ঠোঁটে। বিছানায় নিয়ে এসে আলতো করে শুইয়ে দেয় আয়েশার নরম দেহপল্লব। আয়েশা এলিয়ে যায় নীল নরম বিছানার ওপরে। কঠিন লিঙ্গ টেনে বের করে নেয় বুধাদিত্য, হাঁ করে খাবি খাওয়া মাছের মতন ফাঁক হয়ে থাকে আয়েশার গোলাপি সিক্ত যোনি। ঘরের মৃদু আলোতে আয়েশাকে দেখে মনে হয় যেন একটা জলপরী সাগর জলের ওপরে শুয়ে আছে। বুধাদিত্য পরনের বারমুডা খুলে ফেলে, উঁচিয়ে আয়েশার দিকে টানটান হয়ে যায় উত্থিত লিঙ্গ। আয়েশার চোখ সেই দেখে চকচক করে ওঠে। দুহাত মেলে কাছে ডাকে বুধাদিত্যকে। বুধাদিত্য বিছানায় উঠে পড়ে, আয়েশার পায়ের দিকে হাঁটু গেড়ে বসে ওর কোমর থেকে প্যান্টি টেনে নামিয়ে দেয়। আয়েশা কোমর উঠিয়ে কালো ছোটো প্যান্টি খুলে দিতে সাহায্য করে। ঠোঁটে কামনার হাসি মাখা, চোখে তীব্র বাসনার আগুন। কমনীয় দেহপল্লবের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছলকে ওঠে তীব্র যৌন আবেদন। প্যান্টি খুলতেই বেরিয়ে আসে সিক্ত যোনিদেশ। বুধাদিত্য আঙুল দিয়ে আলতো আদর করে দেয় সিক্ত গহ্বর। দুই পুরুষ্টু উরু দুপাশে মেলে ধরে আয়েশা, আহবান জানায় বুধাদিত্যকে। আয়েশা দুই হাতে নিজের নরম স্তন জোড়া পিষে ফেলে। গোলাপি জিব বের করে নিচের ঠোঁটের ওপরে বুলিয়ে, উফফফফফ.. ইসসসসসস শীৎকার করে। বুধাদিত্যের ডান হাতের মধ্যমা আর অনামিকা ঢুকে যায় যোনির ভেতরে। আয়েশার বুকের ওপরে ঝুঁকে পড়ে বুধাদিত্য, একটি স্তন নিজের মুখের মধ্যে পুরে নিয়ে চিবিয়ে চুষে একাকার করে দেয় নরম সুগোল স্তন। আয়েশা এক হাতে ওর মাথার ওপরে, ঘাড়ের ওপরে হাত বুলিয়ে কাছে ডাকে। বুধাদিত্যের আঙুল সঞ্চালন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। আয়েশার শীৎকার বেড়ে চলে। বুধাদিত্য আঙুল সঞ্চালনের ফাঁকে ফাঁকে আয়েশার ভগাঙ্কুর চেপে ধরে বুড়ো আঙুল দিয়ে। আয়েশা উন্মাদ হয়ে ওঠে বুধাদিত্যের প্রেমের খেলায়।

আয়েশা কঁকিয়ে আবেদন করে বুধাদিত্যকে, “প্লিস ডারলিং, এবারে আমি আর থাকতে পারছিনা, প্লিস আমার মধ্যে ঢুকে আমাকে ছিঁড়ে ফেলো, পিষে ফেলো।”

আয়েশার যোনির ভেতর থেকে বুধাদিত্য আঙুল বের করে আনে। মুখের মধ্যে পুরে দিয়ে যোনিরস চেটে নেয়, বেশ একটু নোনতা, কিন্তু বড় মধুর মনে হয় আয়েশার যোনিরস। আয়েশা ওর হাত টেনে আঙুল নিজের মুখে পুরে নিজের রসের আস্বাদ নেয়। বুধাদিত্য আয়েশার মেলে ধরা উরুর মাঝে নিজেকে নিয়ে যায়। এক হাত শরীরের পাশে রেখে নিজের ভার ভর দেয়, অন্য হাতে নিজের উত্থিত কঠিন লিঙ্গ আয়েশার সিক্ত যোনির মুখে নিয়ে যায়। যোনি পাপড়ির ওপরে লিঙ্গের লাল মাথা চেপে ধরে উত্যক্ত করে তোলে কামার্ত কপোতীকে। ছটফট করে ওঠে আয়েশা, প্রসস্ত বুকের ওপরে দুই হাতের তালু মেলে ধরে আঙুল দিয়ে আদর করে। ভারী চোখের পাতা নামিয়ে ইশারা করে লিঙ্গ প্রবেশ করাতে। বুধাদিত্য, কিছুক্ষণ ওকে উত্যক্ত করার পরে লিঙ্গ একটুখানি ঢুকিয়ে দেয় আয়েশার যোনির ভেতরে। গরম কঠিন লিঙ্গ প্রবেশ মাত্র আহহহহহহ... করে একটি লম্বা শীৎকার করে আয়েশা। কোমর চেপে, যোনিদেশ পিষে দেয় লিঙ্গের ওপরে। বুধাদিত্যের কঠিন বৃহৎ লিঙ্গ আমুল ঢুকে যায় আয়েশার যোনির ভেতরে। কিছুক্ষণ চেপে থাকে লিঙ্গ। আয়েশার সিক্ত যোনির দেয়াল কামড়ে ধরে থাকে ওর লিঙ্গ। বুধাদিত্যের মনে হয় যেন একটি নরম তুলতুলে দস্তানা ওর লিঙ্গের চারদিকে এঁটে কামড়ে ধরে রয়েছে। বুধাদিত্য কোমর টেনে লিঙ্গ বের করে আনে, তারপরে আবার সজোরে চাপ দিয়ে ঢুকিয়ে দেয় ওর যোনি গহ্বরে। আয়েশা বুধাদিত্যের চওড়া শরীরের নিচে পড়ে থেকে মাছের মতন কাতরাতে থাকে। বুধাদিত্যের মন্থন গতি নেয়। আয়েশার শরীরে সেই মন্থনের দোলায় দুলে ওঠে, স্তন জোড়া দুলে ওঠে, সারা শরীরে সমুদ্রের ঢেউয়ের তরঙ্গ বয়ে যায়। ঘর ভরে যায় বুধাদিত্যের গোঙানি আর আয়েশার কামার্ত শীৎকারে।

কিছুপরে আয়েশার কমনীয় দেহপল্লব ধনুকের মতন বেঁকে যায়। দুই হাত শরীরের দুপাশে মেলে ধরে বিছানার চাদর খামচে ধরে। বালিশের ওপরে মাথা এপাস ওপাশ করতে শুরু করে দেয়। বুধাদিত্য ওর শরীরের ওপরে নিজেকে ফেলে দেয়। বগলের তলা দিয়ে দুই হাত গলিয়ে আয়েশার মাথার নিচে নিয়ে যায়। ভারী শরীরের চাপের নিচে আয়েশার নরম শরীর ছটফট করে। বুধাদিত্য আয়েশার মাথার পেছনে হাত নিয়ে গিয়ে ওর মাথা নিজের দিকে অল্প তুলে ধরে। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে রস খেয়ে নেয় আয়েশার মুখের ভেতর থেকে। কোমরের নাচন তীব্র থেকে চরমে পৌঁছে যায়।

আয়েশা ওকে জড়িয়ে ধরে কানেকানে ফিসফিস করে বলে, “চেপে ধরো বুধাদিত্য, পিষে দাও আমাকে, আমি শেষ...”

বুধাদিত্যে উত্তেজনার চরম শিখরে পৌঁছে যায়। ওর আহ্বানের উত্তরে বলে, “আমি আসছি হানি...”

আয়েশা কাতর শীৎকার করে, “উম্মম্মম্ম... চলে এসো আমার ভেতরে চলে এসো... বেবি...”

বুধাদিত্যের শরীরে টানটান হয়ে যায় সেই সাথে আয়েশা ওকে দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিথর হয়ে যায়। আয়েশার শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, যোনির ভেতরে রসের বন্যা নামে। বুধাদিত্য কিছুক্ষণ আরও মন্থন চালিয়ে যায়, আয়েশার শরীর নিথর হয়ে পড়ে ওর ভারী দেহের নিচে। শেষ একটা চাপে আয়েশাকে বিছানার ওপরে পিষে ধরে। মাথার চুল আঁকড়ে ধরে আয়েশা, বুধাদিত্য আয়েশার ঘাড়ের ওপরে ঠোঁট চেপে ধরে। উত্তেজনায় কেঁপে ওঠে বুধাদিত্য, তরল আগুন লিঙ্গের নল বেয়ে যোনিগহ্বর ভাসিয়ে দেয়। দুই কামার্ত পায়রা শ্বাস বন্ধ করে পরস্পরকে আঁকড়ে ধরে শুয়ে থাকে।

বুধাদিত্য চাপা স্বরে আয়েশার কানেকানে বলে, “আই লাভ ইউ আয়েশা।” হটাত আজ প্রথম বার বুধাদিত্যের ঠোঁট থেকে এই শব্দ বেরিয়ে যায়, আয়েশা চুপ করে বুধাদিত্যকে জড়িয়ে ধরে থাকে।

সঙ্গম শেষে বুধাদিত্য চিত হয়ে শুয়ে পড়ে বিছানার ওপরে। পাশ থেকে একটা চাদর টেনে দুজনকে ঢেকে, আয়েশা ওর বুকের ওপরে হাত ভাঁজ করে মাথা রেখে শুয়ে থাকে। পরস্পরকে জড়িয়ে সুখ সাগরের সাঁতারের শেষ রেশ উপভোগ করে। আয়েশা ওর প্রশস্ত বুকের ওপরে ছোটো ছোটো চুম্বনের বর্ষণ করে চলে। কঠিন বুকের পেশির ওপরে আয়েশার নরম ঠোঁটের পরশ বড় মধুর মনে হয় বুধাদিত্যের। এক হাতে জড়িয়ে ধরে আয়েশাকে।

মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করে, “রাতে সত্যি থাকতে পারবে না? তাহলে একবার আই.এন.এ তে গিয়ে লবস্টার আনা যেতো। অনেকদিন তোমার হাতের লবস্টার খাইনি জানো।”

আয়েশা ওর গালের ওপরে হাত বুলিয়ে বলে, “না ডারলিং, আজ রাতে সত্যি থাকতে পারবো না। নাহলে তোমাকে ছেড়ে কোনদিন গেছি বলো?”

বুধাদিত্য ওর গালের ওপরে ছোটো একটি চুমু খেয়ে বলে, “উম্মম... ঠিক আছে, লবস্টার অন্যদিন পুষিয়ে নেবো।”
আয়েশা ওকে জিজ্ঞেস করে, “আমার সমস্যার কিছু সমাধান করলে?”

হেসে ফেলে বুধাদিত্য, “তোমার থেকে চোখ ফেরাতে পারলে তবে না একটু ভাববো? তুমি সামনে থাকলে তোমার থেকে চোখ ফেরাতে পারিনা যে।”

আয়েশা আলতো করে বুধাদিত্যের বুকের ওপরে চাঁটি মেরে বলে, “ধুত শয়তান ছেলে। এবারে ছাড়ো, আমাকে যেতে হবে।”

বুধাদিত্য ওকে নিবিড় করে বুকের ওপরে জড়িয়ে ধরে বলে, “চিন্তা কিসের, আমি তোমাকে ছেড়ে আসব তো।”

আয়েশা ওর গালে চিমটি কেটে হেসে বলে, “জানি বেবি। আমাকে না ছাড়তে গেলে আমি তোমাকে মেরে ফেলবো না।”

বুধাদিত্যের আলিঙ্গন থেকে নিজেকে কষ্টে ছাড়িয়ে নেয় আয়েশা। এই বুকে অনেক ভালোবাসা বাঁধা, কিন্তু সেই ভালোবাসা কার জন্য তুলে রেখেছে বুধাদিত্য, আয়েশা জানে না। শুধু জানে, এই জগতে রোহিতের পরে যদি কেউ ওর পাশে এসে দাঁড়ায়, সে মানুষ বুধাদিত্য। ওকে সেই অপবাদ থেকে বাঁচিয়ে দেওয়ার পরে বুধাদিত্য চেয়েছিল একটু বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব খুব শীঘ্র প্রগাড় বন্ধনে পরিনত হয়ে যায়। ধরা দেয় বুধাদিত্যের আহবানে, সেদিন আয়েশা আর নিজেকে দুরে সরিয়ে রাখতে পারেনি। দুই হাতে জড়িয়ে ধরেছিল বুধাদিত্যকে, অকপটে নিজেকে মেলে ধরেছিল ওর আলিঙ্গনে।

বুধাদিত্য বিছানার ওপরে বসে আয়েশার কাপড় পরা দেখে। আয়েশা ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হেসে যায় আর ওকে উত্যক্ত করার জন্য ধিরে ধিরে একটা একটা করে কাপড় গায়ে চড়ায়। বুধাদিত্য একটা সিগারেট জ্বালিয়ে লাস্যময়ী আয়েশার সাজ সজ্জা দেখতে থাকে। কাপড় পরা হয়ে গেলে আয়েশা ঘর থেকে বেরিয়ে বসার ঘরে চলে যায়। বুধাদিত্য বারমুডা পরে ওর পেছন পেছন বসার ঘরে চলে আসে। ফ্রিজের কাছে দাঁড়িয়ে আয়েশা, জলের একটা বোতল বার করে। পেছন থেকে আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে বুধাদিত্য।

আয়েশা আদর করে বলে, “কি হয়েছে, সোনা, মন খারাপ?”

বুধাদিত্য ওর ঘাড়ের ওপরে নাক ঘষে বলে, “তুমি চলে যাবে মনে পড়লেই মন খারাপ হয়ে যায়।”

ওর আলিঙ্গনের মাঝে আয়েশা ওর দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। ঠোঁটের ওপরে ঠোঁট আলতো ছুঁইয়ে বলে, “ডাকলেই আসবো আমি, সেটা তুমিও জানো, আমিও জানি।”

বুধাদিত্য ওকে ছেড়ে দেয়। নিজের ঘরে ঢুকে জামাকাপড় পরে নেয়। ঘড়ি দেখে, রাত ন’টা বাজে। ফ্রিজ খুলে এক ঢোঁক কড়া হুইস্কি চুমুক দেয়। মাথা ঝাঁকিয়ে নেয় তারপরে। আয়েশা ওর দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। হাত বাড়িয়ে কাছে ডেকে ইশারা করে এবার বের হতে হবে।

গাড়িতে দুজনের মধ্যে অনেক গল্প হয়, অফিসের কে কে কি কি করছে, কেউ নতুন এলো কিনা, ভিশাল কেমন আছে, সেই সব কথা। গুরগাঁও পৌঁছতে পৌঁছতে রাত দশটা বেজে যায়। আয়েশাকে ওর ফ্লাটের সামনে নামিয়ে দেয়। গাড়ি থেকে নেমে আয়েশা ওর দিকে ঘুরে চলে এসে জানালার কাছে দাঁড়ায়। হাতের ওপরে হাত রেখে মিষ্টি হাসে আয়েশা।

চোখ দুটি চিকচিক করছে, ঠোঁটে একটু কাঁপুনি। আয়েশা ওকে বলে, “একটা কথা বলবো তোমাকে?”

বুধাদিত্য, “বলো আর কি বলতে চাও।”

আয়েশার চোখে জল চলে আসে ওর মুখ দেখে, কাঁপা গলায় বলে, “এবারে একটা বিয়ে করো। কাউকে নিজের বুকে স্থান দাও। আমি তোমার পাশে চিরদিন থাকতে পারবো না, বুধাদিত্য।”

বুধাদিত্য ওর হাত চেপে ধরে বলে, “আজ হটাত এইরকম কথা বলছো কেন?”

আয়েশা হাত ছাড়িয়ে নেয়, দু’পা পেছনে সরে ধরা গলায় বলে, “তুমি হটাত আজ আমাকে আই লাভ ইউ বললে কেন? আমি তোমার টানে পুড়ে মরে যাই এই চাও? তোমার বুকে আমার স্থান নেই, তুমি ভালো করে জানো বুধাদিত্য। কেন নিজেকে প্রতিবার কষ্ট দাও? আমি জানি আমি চলে আসার পরে তুমি খালি ঘরে ঢুকে মদে ডুবে যাবে। মনের মতন কাউকে খুঁজে নাও বুধাদিত্য। আমি সেইদিন খুব আনন্দিত হবো, যেদিন জানবো আমার সবথেকে প্রিয় বন্ধু নিজের জন্য একটা সাথি খুঁজে পেয়েছে।”

আয়েশা আর দাঁড়ায়না। হটাত ওর কি হলো, দু’চোখে অশ্রুর বন্যা কেন বয়ে গেল। স্থম্ভিত বুধাদিত্য গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে মাথা নিচু করে বসে থাকে। আয়েশা পেছনে না তাকিয়ে, চোখ মুছতে মুছতে দৌড়ে ফ্লাটের লিফটের দিকে চলে যায়।

ঠিক সেইসময়ে বুধাদিত্যের ফোন বেজে ওঠে। নাম্বার না দেখে ফোন তুলে জিজ্ঞেস করে কে বলছে। ওপর পাশ থেকে ভেসে এক নারী কণ্ঠের আতঙ্কে ঢাকা চাপা আর্তনাদ, “বুধাদিত্য হেল্প...”
 
ষষ্ঠ পর্বঃ আতঙ্কিত আর্তনাদ।

আতঙ্কে ভরা ধরা নারী কন্ঠ চিন্তে অসুবিধা হয় না বুধাদিত্যের। ঝিলামের কি হলো, এত রাতে ফোন করেছে? বুধাদিত্যের সারা শরীর টানটান হয়ে যায় ঝিলামের আর্তনাদ শুনে। বুধাদিত্য জিজ্ঞেস করে ঝিলামকে, “তুমি কোথায়?”

কাঁপা গলায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলে, “আমি গুরগাঁওয়ের একটা ফার্ম হাউসে। সমীর ভেতরে কোথাও। প্লিস আমাকে বাঁচাও।”

ঝিলাম যে ফার্ম হাউসের নাম বলে সেটা আয়েশার বাড়ি থেকে বেশি দুরে নয়। পাশের সিটের নিচে হাত দিয়ে দেখে নেয় বাক্স আছে তো। একটা ছোটো বাক্সে পিস্তল রাখা। পিস্তলটা বেশ কয়েক বছর আগে কিনেছিল, এক শখে দ্বিতীয় মাঝে মাঝেই নিরুদ্দেশের পানে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ে তাই নিজের নিরাপত্তার জন্য।

পাগলের মতন গাড়ি ছুটিয়ে দিল বুধাদিত্য। সাড়ে দশটার মধ্যে ফার্ম হাউসের সামনে পৌঁছে গেল। বাক্স থেকে পিস্তল বার করে প্যান্টের পেছনে বেল্টের ভেতরে গুঁজে নেয়। পকেটে একটা ম্যাগাজিন নিয়ে নেয়। গাড়ি থেকে নামার আগে জামার হাতা গুটিয়ে নেয়, জামা ছেড়ে দেয় প্যান্টের ওপরে যাতে পেছনে গোঁজা পিস্তলটা দেখা না যায়। চোয়াল শক্ত করে ঢুকে পড়ে ফার্ম হাউসে। দারয়ান জিজ্ঞেস করে কাকে চাই। ভারী গলায় কম্পানির নাম বলে উত্তর দেয় সে এই পার্টির লোক। বুকের মধ্যে তুমুল ঝড়, ঝিলামের যদি কিছু হয় তাহলে আজ সারা পৃথিবীর রক্ত ঝরিয়ে দেবে। মাথার মধ্যে রক্ত টগবগ করে ফুটছে, চোয়াল শক্ত করে নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখে। অধীর উৎকণ্ঠায় এদিক ওদিক চেয়ে দেখে, খোঁজে ঝিলামকে। ফার্ম হাউসের সামনের বাগানে বেশ কিছু চেয়ার পাতা। বুফে সিস্টেমে এক পাশে খাবার রাখা। বেশ কিছু লোক হাতে প্লেট নিয়ে খাবার খাচ্ছে। একটি জায়গায় দেখে যে একটা লোক মদের নেশায় চুর হয়ে টেবিলে শুয়ে। ওর চোখ শুধু ঝিলামকে খুঁজে বেড়ায়।

বুকের মাঝে হুহু করে ওঠে যখন লক্ষ্য করে যে ঝিলাম এক কোনায় একটি চেয়ারে একাকী মাথা নিচু করে বসে। চওড়া ফর্সা পিঠ থেকে থেকে ফুলে উঠছে। বুঝতে দেরি হয়না বুধাদিত্যের, ওই মীনাক্ষী অশ্রু সিক্ত। কাছে গিয়ে কাঁধে হাত রাখে বুধাদিত্য। কাঁধের ওপরে কারুর হাতের পরশ পেয়ে সারা শরীর কেঁপে ওঠে থরথর করে, ভীষণ আতঙ্কে কুঁকড়ে যায় ঝিলাম। ভয়ার্ত চোখে মাথা তুলে পাশের লোকের দিকে তাকায়। ঝাপসা চোখের সামনে বুধাদিত্যকে দেখে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা।

উঠে দাঁড়িয়ে বুধাদিত্যের হাত ধরে কাতর আবেদন জানায়, “দয়া করে সমীরকে ভেতর থেকে খুঁজে আনো। আমাকে বাঁচাও, এখান থেকে নিয়ে চলো। আমি এখানে থাকতে পারছিনা।”

বুধাদিত্য ঝিলামের সুন্দর মুখখানির দিকে তাকিয়ে থাকে, দুই চোখে কাজল এঁকেছিল। কান্নার জলে সেই কাজল মুছে গেছে, ভয়ে গালের লালিমা উবে গেছে, ঠোঁট জোড়া ফ্যাকাসে। মাথায় সুন্দর করে একটা খোঁপা বেঁধেছিল কিন্তু এখন কেমন আলুথালু। নভেম্বরের ঠাণ্ডা কিন্তু ঝিলাম আতঙ্কে ঘেমে গেছে। বুধাদিত্য ওর কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে যে এখানে কেউ ওর সাথে কিছু দুরব্যবহার করেছে কি না? মাথা দুলিয়ে জানায় যে এখনো পর্যন্ত কেউ কিছু করেনি।

ঝিলাম ওর হাত প্রানপন শক্তি দিয়ে চেপে ধরে থাকে, বুধাদিত্য ওর শেষ সম্বল। ধরা গলায় বলে, “এই নাকি অফিসের পার্টি। আমার ভেতরে যেতে ভয় করছে, বুধাদিত্য।”

ঝিলাম এই রকম উদ্দাম চালচলনে অভ্যস্ত নয়। বুধাদিত্য ওকে আস্বস্ত করে বলে, “চলো আমার সাথে ভেতরে।”

ঝিলাম জোরে মাথা দোলায়, “না না, আমি ভেতরে যাবোনা। তুমি দয়া করে সমীরকে খুঁজে আনো। আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো।”

চোয়াল শক্ত করে ঝিলামকে জিজ্ঞেস করে, “ভেতরে কেন যাবেনা?”

ঝিলাম ধরা গলায় উত্তর দেয়, “ভেতরে সবাই উন্মাদ, সবাই ইতর। জঘন্য নোংরামো করে বেড়াচ্ছে ছেলেরা আর মেয়েরা। আমার যেতে ঘেন্না আর ভয় করছে।”

ঝিলামের বাজু টেনে পেছনে নিয়ে বলে, “আমি আছি, আমার পেছন পেছন এসো।” বুধাদিত্য বাড়িটার দিকে পা বাড়ায়।

ঝিলাম ওর পেছন পেছন গুটি গুটি পায়ে ফার্ম হাউসের হলের মধ্যে ঢোকে। খুব শক্ত করে বুধাদিত্যের জামা আঁকড়ে ধরে থাকে। হলের মধ্যে অন্ধকার, শুধু মাত্র ঝিকিমিকি আলো সামনের নাচের জায়গা আলোকিত করে রেখেছে। খুব জোরে গান বেজে চলেছে। নাচের জায়গায় খান আটেক মেয়ে আর প্রায় খান পনেরো ছেলে মিলে উদ্দাম নাচে মগ্ন। মেয়েগুলোর পরনের কাপড় দেখে মনে হয় অঙ্গ ঢাকার চেয়ে খুলে রাখা ভালো ছিল। বেশির ভাগ মেয়েদের পরনে ইভিনিং পার্টির হাতাবিহীন কাঁধবিহীন ছোটো বস্ত্র, যা পাছার নিচে এসে শেষ হয়ে গেছে। তিনটে মেয়ের পরনে ছোটো স্কার্ট, উদ্দাম নাচের ফলে তাদের প্যান্টি ঢাকা জানুসন্ধি দেখা যায় বারেবারে। কয়েকটা মেয়ের পরনে ছোটো জিন্সের প্যান্ট শুধু মাত্র পাছা ঢেকে রাখতে পেরেছে। সবাই নেশায় চুর, সবাই মাতাল। ছেলেগুলো মেয়েদের ঘিরে অশ্লিল ভাবে নেচে চলেছে। মেয়েগুলো সেই তালেতালে নেচে চলেছে। সবার বয়স এই পঁচিশ থেকে পঁয়ত্রিশের মধ্যে। কেউ বিবাহিতা কেউ অবিবাহিতা। একটি মেয়ের স্কার্ট কোমরের উপরে উঠে গেছে, সামনে পেছনে দুটি ছেলে ওদের যৌনাঙ্গ মেয়েটির সামনে আর পেছনের অঙ্গের সাথে চেপে ধরে এক কোনায় নেচে চলেছে। বুধাদিত্য এই সব দৃশ্য দেখে অভ্যস্থ, দিল্লীর পার্টিতে এই সব জামা কাপড় পরে উন্মাদ হয়ে যাওয়া খুব সামান্য ব্যাপার।

কোথায় এই সব মেয়েরা আর কোথায় ঝিলাম। স্বামীর সাথে অফিস পার্টিতে যাবে তাই সুন্দর গোলাপি রঙের শাড়ি পরেছিল। কপালে গোলাপি আর লাল টিপ আঁকা। ঠোঁটে লাল রঙ, গালে গোলাপি রুস, চোখের কোণে কাজল এঁকে সুন্দর সেজেছিল। গোলাপি শাড়ির রঙের সাথে মিলিয়ে গোলাপি রঙের ব্লাউস পরনে। ভারী সুন্দর শাড়ি, আঁচলে রুপোলী সুতোর ভারী কাজ করা। সোনার লোহা বাঁধানোর সাথে দুই হাতে গোলাপি আর সাদা রঙের চুড়ি। পরনের শাড়ি আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ঝিলামের নধর দেহপল্লব, গলা আর দুই হাত ছাড়া বাকি সব অঙ্গ কাপড়ে ঢাকা। অসামান্য সুন্দরী দেখতে লাগছিল ঝিলামকে। সামনের মেয়েদের দিকে তাকায় বুধাদিত্য আর একবার পেছনে দাঁড়িয়ে আতঙ্কিত সুন্দরীর মুখের পানে তাকায়। সামনে পাতাললোকের পাপের উদ্দাম নাচ, পেছনে স্বর্গ থেকে নেমে আসা অপ্সরা।

পেছন থেকে একজন ঝিলামকে বলে “কি ম্যাডাম, একা দাঁড়িয়ে কেন? চলুন একটু নাচা যাক। সমীর তো মদ খেয়ে কোথাও পড়ে আছে।”

ওই লোকটার কথা শুনে মাথায় রক্ত চড়ে যায় বুধাদিত্যের। ভয়ে সিঁটিয়ে যায় ঝিলাম। শক্ত করে ধরে বুধাদিত্যের হাতা, থরথর করে কাঁপতে থাকে। সামনে এসে বুধাদিত্যের দিকে একটা গ্লাস বাড়িয়ে দিয়ে ড্রিঙ্ক করতে বলে। বুধাদিত্যের মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে। এক থাবড়ে ওর হাতের গ্লাস মেঝেতে ফেলে দেয়। হকচকিয়ে যায় লোকটা। থতমত খেয়ে নেশার ঘোরে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ঝিলামের দিকে তাকায়। ঝিলাম বুধাদিত্যের জামা খামচে ধরে পিঠের পেছনে লুকিয়ে যায়। বুধাদিত্য ওর চোখে দেখে বুঝতে পারে যে ইতর লোকটির নজরে ঝিলামের দিকে। প্যান্টের পেছন থেকে পিস্তল বের করে আনে। এক ঝটকায় লোকটাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে খোলা মুখের মধ্যে পিস্তল ধরে। পিস্তলের চমকানি দেখে নেশা ছুটে যায়। গম্ভির গলায় লোকটাকে জিজ্ঞেস করে সমীরের কথা। লোকটা কাঁপতে কাঁপতে হাত উলটে জানায় যে, সমীরের খবর জানেনা। আশপাশ থেকে বেশ কিছু লোক ওদের দিকে আসে। সবার চোখে মদের নেশা, সবাই যেন ঝিলামকে ক্ষুধার্ত হায়নার মতন খুবলে খাবলে লুটেপুটে খাচ্ছে। বুধাদিত্য সামনের লোকটার হাঁ করা মুখের মধ্যে পিস্তলের নলি চেপে দিয়ে হুঙ্কার দেয়, একপা এগোলে মাথার সবকটা গুলি এর মুখের মধ্যে ঢেলে দেবে। আশেপাশের লোকজন এতটা ভাবতে পারেনি, থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। ঝিলাম চোখ বন্ধ করে বুধাদিত্যের পিঠের সাথে নিজেকে লুকিয়ে নিতে প্রানপন চেষ্টা করে। আবার হুঙ্কার দেয় বুধাদিত্য, কেঁপে ওঠে বড় হলো ঘর, জিজ্ঞেস করে, সমীর কোথায়।

পেছন থেকে একজন উত্তর দেয়, “ওই বোকা... উপরের কোন এক রুমের মধ্যে কবিতার সাথে পড়ে আছে। যা গিয়ে নিজের চোখে দেখে নে শালা...”

ওই খবর শোনার আগে ঝিলাম মরে কেন যায়নি। বুধাদিত্য অনুভব করে যে ঝিলামের চোখের জলে ওর জামার পিঠের দিক ভিজে গেছে। লোকটার কথা কানে যেতেই, ঘৃণায়, রোষে, তীব্র দুঃখে বুধাদিত্যের পিঠের ওপরে দশ আঙ্গুলের নখ বসিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করে।

বুধাদিত্য সামনের লোকটাকে ছেড়ে দেয়। পিস্তলের নল দেখে অনেকের নেশার ঘোর কেটে যায়। লোকটা ছাড়া পেয়ে দৌড়ে ওর সামনে থেকে পালিয়ে যায়। বুধাদিত্য ঝিলামের দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।

ঝিলামের দুই চোখ শক্ত করে বন্ধ, মাথা নিচু, বুধাদিত্যের বুকের কাছে হাত জোর করে কাতর মিনতি জানায়, “সমীরকে ওইখান থেকে নিয়ে এসো দয়া করে।”

বুধাদিত্য ঝিলামের হাত ধরে হলো ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে একটা ঘরের দরজায় লাথি মারে। হাতে উঁচিয়ে থাকে পিস্তল। কিছু এদিক ওদিক হলে সামনে যে আসবে তার খুলি গুঁড়িয়ে দেবে। ঘরের ভেতর দেখে যে বেশ কয়েকটা ছেলে মেয়ে সিগারেটের মধ্যে গাঁজা ভরে টানছে আর উদ্দাম নাচে ব্যস্ত। দরজা খোলার আওয়াজে ঢুলুঢুলু চোখে ওই ছেলে মেয়েরা ওদের দিকে তাকায়। বুধাদিত্য গর্জন করে জিজ্ঞেস করে সমীরের কথা। একজন উত্তর দেয় যে পাশের ঘরে সমীর থাকতে পারে।

পাশের ঘরের দরজায় লাথি মারে বুধাদিত্য। ভেতর থেকে ছিটকিনি লাগানো ছিল তাই প্রথম লাথিতে খুলতে পারেনা। দ্বিতীয় লাথি জোরে মারে, ছিটকিনি ভেঙে খুলে যায় দরজা।

ভেতরের দৃশ্য দেখে চাপা আর্তনাদ করে ওঠে ঝিলাম। মেঝের ওপরে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে আছে সমীর। পরনের কাপড় অগোছালো, প্যান্টের চেন খোলা, নেতানো লিঙ্গ কিছুটা বেরিয়ে। খাটের ওপরে অর্ধনগ্ন একটি মেয়ে শুয়ে। পরনের জিন্সের ক্যাপ্রি হাঁটুর কাছে নামানো, কালো প্যান্টিতে ঢাকা জানুসন্ধি, মাথার কাছে টপ দলা পাকিয়ে পড়ে আছে। ফাঁক করা উরুর মাঝে একটি ছেলে শুয়ে, তার প্যান্ট নেমে গেছে কোমর থেকে। দুইজনের কারুর শরীর নড়ছে না। ওই দৃশ্য দেখে ঝিলাম ঘর থেকে বেরিয়ে মুখের ওপরে হাত রেখে পাঁজর ভাঙা বেদনার আর্তনাদ গিলে নেয়। চোখ বন্ধ করে, দুই হাত মুঠি করে মাথায় বাড়ি মারতে মারতে মেঝের ওপরে বসে পড়ে। সেই করুন দৃশ্য বুধাদিত্যের সহ্য হয়না। সমীরের দিকে দুপা এগিয়ে গিয়ে ওর পাশে বসে পড়ে। নাকের কাছে আঙুল দিয়ে দেখে যে ধড়ে প্রান আছে কিনা। শ্বাস চলছে, কিন্তু বেশ ধিমে তালে। নেশার ঘোরে কি করেছে হয়তো নিজেই জানেনা সমীর। প্যান্টের পেছনে পিস্তল গুঁজে নেয়। সমীরের লিঙ্গ প্যান্টের ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়ে, প্যান্টের চেন আটকে দেয়। ওর ঘাড়ের নিচে হাত গলিয়ে দিয়ে বস্তার মতন কাঁধের ওপরে উঠিয়ে নেয় সমীরের নেশাগ্রস্থ সংজ্ঞাহীন দেহ। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখে ঝিলাম, উন্মাদিনির মতন হয়ে গেছে। দু’চোখ জবা ফুলের মতন লাল। ঝাপসা চোখে বুধাদিত্যের দিকে তাকায় ঝিলাম। বুধাদিত্য ওকে ইশারা করে ওর পেছন পেছন আসার জন্য। কোনোরকমে নিজেকে মেঝে থেকে টেনে তোলে ঝিলাম। কাঁদতে কাঁদতে গুটি পায়ে বুধাদিত্যের পেছন পেছন সিঁড়ি ভেঙে নেমে আসে। গাড়ির কাছে গিয়ে বুধাদিত্য গাড়ির পেছনের দরজা খুলতে বলে। ঝিলাম গাড়ির পেছনের দরজা খুলে ধরে, পেছনের সিটে সমীরকে শুইয়ে দেয়।

ঝিলাম গাড়িতে উঠে সমীরের মাথা নিজের কোলের মধ্যে নিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে, “হায় বিধাতা আজ আমাকে এই দিন দেখতে হলো?”

বুধাদিত্য আবার ফিরে যায় ফার্ম হাউসে, একটা ছোটো বালতিতে জল নিয়ে আসে। সমীরের মাথা ধরে বালতির সব জল মাথার মধ্যে ঢেলে দেয়। সমীরের সম্বিৎ ক্ষণিকের জন্য ফিরে আসে। ঝাপসা চোখে একবার বুধাদিত্যের দিকে তাকায় একবার ঝিলামের দিকে তাকায়। শরীর কেঁপে ওঠে সমীরের। হড়হড় করে কালো মদের বমি করে দেয় ঝিলামের কোলের ওপরে। ঝিলামের শাড়ি মদের বমিতে নোংরা হয়ে যায়। রাগে কাঁপতে থাকে বুধাদিত্য। ঝিলামের অশ্রুসিক্ত চোখ আর করুন মুখ দেখে সমীরকে কিছু বলেনা। ঝিলাম সমীরের মাথা বুকের কাছে টেনে ধরে শাড়ির আঁচল দিয়ে ওর মুখ মুছিয়ে দেয়। সেই দৃশ্য দেখে মাথা ঠিক রাখতে পারেনা বুধাদিত্য। রাগে গজগজ করতে করতে দুম করে গাড়ির দরজা বন্ধ করে দেয়। থমথমে মুখে চালকের সিটে বসে গাড়ি হাঁকিয়ে দেয় বাড়ির দিকে।
পাগলের মতন ফাঁকা হাইওয়ে দিয়ে দিল্লীর দিকে গাড়ি ধেয়ে চলে। আয়নার প্রতিফলনে দেখে যে সিক্ত বসনা, সিক্ত নয়না ঝিলাম স্বামীর মাথা বুকে করে নিয়ে বারেবারে কপাল, মুখ শাড়ির আঁচলে মুছে দেয়।

বুধাদিত্য ঝিলামকে জিজ্ঞেস করে, “আমার বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।”

ঝিলাম কাঁপা গলায় নিচু সুরে উত্তর দেয়, “যেখানে একটু শান্তি পাবো সেখানে নিয়ে চলো।”

রাত প্রায় একটা নাগাদ বুধাদিত্য ওদের নিয়ে বাড়ি পৌঁছায়। ঝিলামের শাড়ি সমীরের বমিতে ভর্তি, গাড়ির ভেতর থেকে বোঁটকা গন্ধ বের হচ্ছে। ঝিলাম সেই নোংরা শাড়ি পরে সমীরকে দুহাতে আগলে রেখেছে, ওর ভিজে মাথার ওপরে গাল চেপে ধরে আছে। চোখে মুখে একটা হেরে যাওয়া ভাব, দুঃখে বুক ফেটে যায় ঝিলামের। বুধাদিত্য ওর মনের ভাব ওর মুখ দেখেই বুঝতে পেরে যায়। ঝিলামকে সান্তনা দেবার মতন ভাষা খুঁজে পায়না বুধাদিত্য। মনে হয় যেন সমীরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে এই সুন্দরী প্রতিমাকে বুকের কোণে লুকিয়ে রাখে। চোয়াল শক্ত করে সেই অভিব্যক্তি চেহারায় আনতে দেয় না। পেছনের দরজা খুলে সমীরকে টেনে কাঁধের ওপরে নিয়ে নেয়। ঝিলামকে বাড়ির চাবি হাতে দিয়ে বলে তিনতলায় উঠে যেতে। ঝিলাম আগে আগে, পেছনে বুধাদিত্য সমীরের শরীর কাঁধে ফেলে সিঁড়ি ভেঙে তিনতলায় ওর ফ্লাটে আসে।

ঝিলাম তালা খুলে দেয়, বুধাদিত্য সমীরকে বয়ে নিয়ে গেস্টরুমে ঢুকে বিছানার ওপরে শুইয়ে দেয়। ঝিলামের চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে, চোখের কোনের কাজল লেপটে গেছে চোখের পাশে। শাড়ি ভিজে গেছে সমীরের বমিতে, সারা শরীর থেকে দুর্গন্ধ আসছে। গা ঘিনঘিন করে ওঠে বুধাদিত্যের, কিন্তু ঝিলামের সেদিকে খেয়াল নেই। তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে একটা তোয়ালে জলে ভিজিয়ে নিয়ে আসে। সমীরের পাশে বসে অতি যত্ন সহকারে ওর কপাল, মুখ মুছিয়ে দেয়। ভালোবাসার সেই স্পর্শ দেখে বুধাদিত্য বুক ফাঁকা হয়ে ওঠে। বুধাদিত্য সমীরের জামা কাপড় ছাড়িয়ে দেয়, ঘরের এসি চালিয়ে দেয়। আলমারি থেকে একটা চাদর বের করে সমীরের অর্ধ নগ্ন দেহ ঢেকে দেয়। ঝিলাম চুপ করে গালে হাত দিয়ে থমথমে মুখে সমীরের মুখের দিকে চেয়ে থাকে আর মাথায় কপালে হাত বুলিয়ে দেয়। সমীর অচেতন। দু’চোখে অবিরাম বয়ে চলে শ্রাবন ধারা। মাঝে মাঝে মাথা নাড়ায় ঝিলাম।

বুধাদিত্য ঝিলামের কাঁধে হাত রেখে বলে, “ওই পাগলার কিছু হয়নি। মদ খেয়ে উলটে পড়ে গেছে ব্যাস। সকাল হলেই ঠিক হয়ে যাবে। তুমি বাথরুমে গিয়ে স্নান করে নাও। আমি দেখি তোমার জন্য কোন কিছু পরতে দিতে পারি কিনা।”

ঝিলাম বুক ভাঙা কৃতজ্ঞ ভরা চাহনি নিয়ে বুধাদিত্যের দিকে তাকায়। গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ে। ঘরের মৃদু আলোতে দু’ফোঁটা চোখের জল দুটি মুক্তোর ফোঁটার মতন ফর্সা গালে চিকচিক করছে। ঠোঁট কেঁপে ওঠে ঝিলামের, “তুমি না থাকলে আমি আজ মরে যেতাম।”

বুধাদিত্য কিছু বলে না। মাথা নিচু করে আলমারি থেকে একটা ট্রাক প্যান্ট, একটা কালো পাঞ্জাবী আর একটা তোয়ালে বের করে আনে। বুধাদিত্য ইচ্ছে করেই কালো লম্বা পাঞ্জাবী বার করে, বিবেকে চায়নি ঝিলামের দেহপল্লব দেখার জন্য। ঝিলামের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, “বাথরুমে যাও, ওখানে সাবান শ্যম্পু সব আছে। ঠান্ডা লাগলে গিজার চালিয়ে নিও। স্নান করে পরিষ্কার হয়ে এসো।”

ঝিলাম ওর হাত থেকে কাপড়, তোয়ালে নিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ে। চোখের জল মুছতে মুছতে বাথরুমে ঢুকে পড়ে। বুধাদিত্য কিছুক্ষণ সমীরের দিকে তাকিয়ে থাকে। মরার মতন বিছানার ওপরে এলিয়ে পড়ে আছে সমীর। রাগে ফেটে পড়ে বুধাদিত্য, মনে হয় পিস্তলের গুলি সবকটা ওর মাথার মধ্যে নামিয়ে দেয়। এত সুন্দরী বউ, প্রান দিয়ে ভালোবাসে তোকে, তা সত্তেও তুই মদ গিলে একটা অন্য মেয়ের কোলে ঢলে পড়ে গেলি? আমার না হয় কেউ নিজের বলতে নেই, আমি শালা জাত শয়তান। আলমারি থেকে নিজের জন্য বারমুডা নিয়ে নিজের বাথরুমে ঢুকে পড়ে বুধাদিত্য।

স্নান সেরে বেরিয়ে আসে বুধাদিত্য। গেস্টরুমে ঢুকে দেখে সমীর অচেতন অবস্থায় উলটে শুয়ে। ঝিলাম তখন বাথরুম থেকে বের হয়নি, বাথরুম থেকে কোন আওয়াজ শুনতে পায়না। চিন্তায় পড়ে যায় বুধাদিত্য, রাগে দুঃখে কিছু করে বসেনি তো। দরজায় টোকা মেরে দেখবে কি? গুটি পায়ে বাথরুমের দরজার দিকে এগোয়, ঠিক সেইসময়ে দরজা খুলে ঝিলাম বেরিয়ে আসে। সামনে বুধাদিত্যকে দেখে মাথা নিচু করে নেয়।

বুধাদিত্য ঘর থেকে বেরিয়ে ফ্রিজের কাছে চলে যায়। কিছু খাওয়া হয়নি, ঝিলাম হয়তো এখন কিছু খায়নি। ফ্রিজ খুলে দেখে একটু খানি ভাত আছে, তাতে দু’জনার হয়ে যাবে, একটু ডাল আছে আর একটু আলু ভাজা। বুধাদিত্য খাবার ফ্রিজ থেকে বের করে দেখে পেছনে ঝিলাম দাঁড়িয়ে। কালো পাঞ্জাবী হাঁটু ছেড়ে অনেকটা নেমে এসেছে, সারা শরীর আজ ঢাকা। হাতা গুটিয়ে নিয়েছে। তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বুধাদিত্যের দিকে তাকায়।

ঝিলামকে জিজ্ঞেস করে বুধাদিত্য, “কিছু খাওয়া হয়েছে?”

ম্লান হাসি দিয়ে বলে, “খাওয়া মাথায় উঠে গেছে আমার। তুমি কিছু খেয়েছো?”

বুধাদিত্য মাথা নাড়ায়, “না কি করে খাবো। তোমার গলা শুনে দৌড়ে গেছি।” লুকিয়ে নিলো যে বিকেলে একজনের সাথে ছিল।

ঝিলাম কাঁধের ওপরে তোয়ালে রেখে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে বলে, “দাও ওইগুলো গরম করে দেই।”

বুধাদিত্য, “রান্না ঘরে ঢুকে দেখবে কোনার দিকে মাইক্রো ওভেন আছে।”

ঝিলাম মাথা নাড়িয়ে ওর হাত থেকে খাবার নিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে পড়ে। বুধাদিত্য চুপ করে সোফার ওপরে বসে টিভি চালিয়ে দেয়। কিছু পরে ঝিলাম একটা থালায় ভাত ডাল আর ভাজা নিয়ে ওর সামনে রাখে।

বুধাদিত্য ঝিলামকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি খাবে না?”

ঝিলাম মাথা নাড়িয়ে বলে, “না আমার খিধে নেই, তুমি খেয়ে নাও। আমি ওর কাছে গিয়ে একটু বসি।”

ঝিলামকে জোর করার ক্ষমতা নেই বুধাদিত্যর, তাই খাওয়ার প্রতি মন উঠে যায়। ঝিলাম ওর সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। বুধাদিত্য কোনোরকমে ভাত মাখতে শুরু করে।

ঝিলামের দিকে তাকিয়ে বলে, “কিছু খেয়ে নাও, না হলে শরীর খারাপ করবে।”

ঝিলাম কাষ্ঠ হেসে উত্তর দেয়, “খেয়ে আর কি হবে। তোমার জন্য জল নিয়ে আসি, তুমি খাও।”

ঝিলাম জল আনতে চলে যায়। বুধাদিত্যের খাওয়া আর হয়না। ঝিলাম জলের গ্লাস হাতে এসে দেখে ভাত পড়ে আছে, বুধাদিত্য মাথা নিচু করে সোফার ওপরে বসে। ঝিলাম জিজ্ঞেস করে, “কি হলো, খাও?”

বুধাদিত্য মাথা তুলে বলে, “না খিদে মরে গেছে আমার।”

ঝিলাম একটু কড়া গলায় ওকে আদেশ করে, “চুপচাপ খেয়ে নাও, আমার কথা চিন্তা করে কোন লাভ নেই তোমার।”

বুধাদিত্য চুপ করে কয়েক গ্রাস ভাত মুখে তোলে। ঝিলাম সেই দেখে একটু হেসে শোয়ার ঘরে ঢুকে যায়। ঝিলাম চলে যাওয়া মাত্রই বুধাদিত্য থালা নিয়ে উঠে পড়ে। রান্না ঘরে গিয়ে সব খাবার ডাস্টবিনে ঢেলে থালা সিঙ্কে রেখে দেয়। ফ্রিজ থেকে এক বোতল হুইস্কি আর বরফ বার করে। ফ্রিজের ওপরে ওর কাট গ্লাস সবসময়ে রাখা থাকে। সেই কাট গ্লাসে বরফ ঢেলে হুইস্কি ঢেলে নেয়। বোতল, বরফ আর গ্লাস নিয়ে সোফার ওপরে বসে পড়ে। সামনে টিভি চলছে, ডিস্কভারি চ্যানেলে সেই পুরানো সেরেঙ্গেটি। এক দল সিংহ একটি হরিণ ধরে তাকে খাবলে খুবলে খায়। বুধাদিত্য হুইস্কির গ্লাসে ছোটো ছোটো চুমুক দেয়।

ঠিক সেই সময়ে ঝিলাম ওর পাশের সোফার ওপরে এসে বসে। ঝিলামকে বসতে দেখে একটু নড়ে চড়ে বসে বুধাদিত্য। ঝিলাম কিছুক্ষণ ফাঁকা চোখে তাকিয়ে থাকে টিভির দিকে। ড্রয়িং রুমের মৃদু আলোতে বুধাদিত্য লক্ষ্য করে ঝিলামের সুন্দর গোল মুখখানি অসামান্য বেদনায় মাখা। চোখ দুটি ফাঁকা ভাষাহীন, ঠোঁট দুটি শুকিয়ে গেছে, চোখের কোনে যেন একটু কালি পড়ে গেছে।

ঝিলাম ওর দিকে তাকিয়ে বেদনা ভরা চোখে চাপা গলায় জিজ্ঞেস করে, “কি ছাইপাঁশ গেলো বলতে পারো? কি আছে এই মদে?”

বুধাদিত্যের গ্লাস হাতেই থেমে যায়, কি উত্তর দেবে। টিভির দিকে মুখ করে উত্তর দেয়, “জানি না কি আছে, তবে এর স্বাদ অন্য। তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।”

হটাত করে ঝিলাম বুধাদিত্যের সামনে রাখা মদের বোতল হাতে নিয়ে বলে, “আজ আমি খাবো, দেখবো কি নেশা আছে এই মদে। কত শান্তি পাও এই সব ছাইপাঁশ গিলে।”

হকচকিয়ে যায় বুধাদিত্য আঁতকে ওঠে, “না তোমাকে খেতে দিতে পারিনা। তুমি খেও না ঝিলাম।”

ঝিলাম বোতল ঠোঁটের কাছে এনে রেগে দুঃখে গুঙিয়ে ওঠে, “কেন, আমি কেন খেতে পারিনা, তোমরা খেলে কিছু না, আমি খেলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে?”

বুধাদিত্য ওর হাত ধরে ফেলে, “তুমি খাওনি কোন দিন, তুমি খেওনা এই সব।”

ঝিলাম ওর হাতের কবল থেকে নিজের হাত ছাড়াতে চেষ্টা করে, চেঁচিয়ে বলে, “সবকিছুর প্রথম বার বলে কিছু আছে। আজ আমি খাবো, আজ এর স্বাদ নিয়ে দেখতে চাই, কি মধু এই মদে।”

বুধাদিত্য দাঁড়িয়ে পড়ে ঝিলামের সামনে। বোতলের ওপরে শক্ত করে ধরে থাকে। ঝিলাম দাঁড়িয়ে পড়ে ওর সামনে বোতল কিছুতেই ছাড়ে না। ওর মাথায় রক্ত চেপে গেছে। আজ যেন ঝিলামের দেহে দেবীর শক্তি ভর করে এসেছে। শক্ত করে ঠোঁটের কাছে ধরে থাকে বোতল। বুধাদিত্য একটানে বোতল ছিনিয়ে নেয়, ঝিলাম বোতল ধরতে গিয়ে ওর বুকের ওপরে পড়ে যায়।

ঝিলাম কেঁদে ফেলে, “তোমরা খেতে পারো, তোমরা সব কিছু করতে পারো আর আমি খেলে দোষ?”

বুধাদিত্য চোয়াল শক্ত করে। বুকের মাঝে তোলপাড় হয়ে যায়, বুকের ওপরে টিশার্টের কলার চেপে ধরে ঝিলাম। মাথা ঝিমঝিম করে বুধাদিত্যের। ছুঁড়ে ফেলে দেয় মদের বোতল, মেঝেতে পড়ে ঝনঝন শব্দে ভেঙে যায় কাঁচের বোতল, ছড়িয়ে পড়ে মদ আর কাঁচের টুকরো।

বুধাদিত্য ঝিলামকে নিচু গলায় বলে, “আমি প্রতিজ্ঞা করছি, ঝিলাম, আজ থেকে আমি আর মদ ছোঁবো না।”

কলার ছেড়ে মুখ চাপা দিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠে ঝিলাম, “যার প্রতিজ্ঞার অপেক্ষায় আমি, সে করে না কেন? বলো আমাকে, উত্তর দাও।”

কি উত্তর দেবে বুধাদিত্য, তাও সান্তনা দেয় ঝিলামকে, “আমি কথা দিচ্ছি, সমীরকে আমি মদ খেতে বিরত করবো।”

ঝিলাম চুপ করে হাঁটু মুড়ে নিজেকে গুটিয়ে সোফার ওপরে বসে পড়ে। খুব ক্লান্ত ঝিলাম, ক্লান্তিতে চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে, কিন্তু বুকের মাঝে সমীরের চিন্তা। এখন জাগেনি, এখন চোখ খোলেনি। বুধাদিত্য ওর চোখমুখ দেখে বুঝে যায় যে ঝিলাম সমীরের চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে। ঝিলামের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওর হাতের ওপরে হাত রাখে। জল ভরা চোখে বুধাদিত্যের দিকে তাকায় ঝিলাম।

ঝিলামের ঠোঁট কেঁপে ওঠে, “ভালো হয়ে যাবে তো?”

বুধাদিত্য ম্লান হাসে, “আরে বাবা, কিছু হয়নি। শুধু মদ খেয়ে উলটে পড়ে আছে। দাঁড়াও আমি এক গ্লাস নুন জল বানিয়ে দিচ্ছি, তুমি ওকে খাইয়ে দাও, দেখবে সব মদ পেট থেকে হড়হড় করে বেরিয়ে যাবে, শালা একদম ঠিক হয়ে যাবে।”

ঝিলাম কিছু বলেনা, চুপ করে বসে থাকে। বুধাদিত্য রান্না ঘরে ঢুকে নুন জল বানিয়ে ঝিলামের হাতে ধরিয়ে দেয়। ঝিলাম গ্লাস নিয়ে শোয়ার ঘরে ঢুকে পড়ে। বুধাদিত্য বালতি আনতে বাথরুমে ঢুকে পড়ে। ঝিলাম সমীরের মাথা কোলের ওপরে তুলে ধরে, কানেকানে মুখ খুলতে বলে। সমীর অচেতন, একটু নড়াচড়া করে ব্যাস। ঝিলাম ওর ঠোঁটের কাছে জলের গ্লাস ধরে, সমীর কোনোরকমে একটু ঠোঁট খোলে, ঝিলাম নুন জল ওর গলায় ঢেলে দেয়। নুন জল পেটে যাওয়ার কিছু পরে ওর শরীর কেঁপে ওঠে। বুধাদিত্য তাড়াতাড়ি বালতি নিয়ে ওর মুখের সামনে ধরে। হড়হড় করে বমি করতে শুরু করে সমীর। কালো হলদে মদ আর কিছু খাবার বেরিয়ে যায় পেট থেকে। ঝিলাম বারেবারে সমীরের মাথায় কপালে হাত বুলিয়ে দেয়। বুধাদিত্য জলের নিয়ে বোতল ঝিলামের হাতে ধরিয়ে দেয়। ঝিলাম আঁজলা করে জল নিয়ে সমীরের মুখে চোখে ছিটিয়ে দেয়। কিছু পরে সমীর শান্ত ছেলের মতন চুপ করে শুয়ে পরেড়ে ঝিলামের কোলে।

বুধাদিত্য ঝিলামকে বলে, “ব্যাস, নো চিন্তা। এবারে একটু পরে দেখবে তোমার সমু ডারলিং চোখ খুলেছে।”

ঝিলাম ম্লান হেসে বলে, “চোখ খুললেই খেয়ে ফেলবো আমি।”

হেসে ওঠে বুধাদিত্য, “পরে খেও, এখন একটু বিশ্রাম করো।”

ঝিলাম, “তুমি শুয়ে পড়ো, অনেক ধকল দিলাম তোমাকে।”

বুধাদিত্য, “না এমন কিছু ধকল দাওনি আমাকে। আমি ঠিক আছি।”

বুধাদিত্য বসার ঘরে চলে যায়, সোফার ওপরে বসে চুপ করে টিভি দেখে। ওদিকে ঘরের মধ্যে ঝিলাম সমীরের মাথার কাছে বসে থাকে চুপ করে। সমীর কিছু পরে চোখ খুলে ঝিলামের দিকে তাকায়। বুধাদিত্য দরজার ফাঁক দিয়ে দেখে যে ঝিলাম ওর মুখের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। সমীর কাঁচুমাচু মুখ করে ঝিলামের দিকে তাকিয়ে। ঝিলামের ফর্সা গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। উলটো হাতে চোখ মুছে নেয়। বুধাদিত্য চুপ করে সোফা ছেড়ে উঠে দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়।

ঝিলাম সমীরকে জিজ্ঞেস করে, “কেমন লাগছে তোমার শরীর?”

সমীরের গলা শুকিয়ে গেছে, ঝিলামের মুখ দেখে ওর নেশার ঘোর কেটে গেছে। মাথা নিচু করে বিছানার ওপরে উঠে বসে। ঝিলাম ওর চিবুকে হাত রেখে মুখ নিজের দিকে করে। সমীর চোখ বন্ধ করে থাকে। ঝিলাম ওর গালে সপাটে একটা চড় কষিয়ে দেয়। চড়ের আওয়াজ সেই রাতের নিস্তব্ধতা খানখান করে সারা বাড়িতে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। সমীর চুপ করে বসে থাকে কিছু বলে না।

ঝিলাম সমীরের দিকে চেঁচিয়ে ওঠে, “আমাকে একটু বিষ দিতে পারো না। খেয়ে মরে গেলে শান্তি পাবে।”

সমীর লাল চোখে ঝিলামের দিকে তাকিয়ে বলে, “দয়া করে ক্ষমা করে দাও আমাকে। আমি মদের নেশায় কি করেছি কিছুই মনে নেই।” ওর পায়ের ওপরে ঝুঁকে পড়ে সমীর। ঝিলাম পা সরিয়ে নিয়ে চুলের মুঠি ধরে মাথা তুলে ধরে।
সমীরকে বলে, “ছিঃ পা ধরতে নেই।” ওর মুখখানি আঁজলা করে ধরে কাতর সুরে বলে, “কেন গেলো ওই ছাইভস্ম? কি স্বাদ পাও ওর মধ্যে? আমি কি দেইনি তোমাকে?”

সমীর কঁকিয়ে ওঠে, “না ঝিলাম, না, তোমার মধ্যে কোন খুঁত নেই। আমি দুঃখিত ঝিলাম, আমাকে ক্ষমা করে দাও।” কেঁদে ফেলে সমীর। ঝিলাম ওকে দুহাতে জড়িয়ে কেঁদে ফেলে।

বুধাদিত্য চুপচাপ দরজা ভেজিয়ে দিয়ে বেরিয়ে আসে। এবারে সমীর আর ঝিলামের মান অভিমানের পালা চলবে, তারপরে বইবে প্রেমের ভেলা।
 
সপ্তম পর্বঃ অন্তরদ্বন্দ।

বুধাদিত্য ইচ্ছে করেই ওদের থেকে দুরে চলে যেতে চেয়েছিল কিন্তু ঝিলামের কাতর আর্তনাদ আবার করে সেই ছিন্ন বন্ধন বেঁধে নেয়। বুধাদিত্য চাইলেও যেন সমীরের কাছ থেকে দুরে যেতে পারে না। সমীর আর ঝিলাম পরের দিন বাড়ি ফিরে যায়। ওদের মনোমালিন্য অনেকটা স্তিমিত হয়ে আসে। ঝিলামের প্রতি পাশবিক ক্ষুধার জ্বালা নিভে এক ভালোলাগা ভরে যায় বুধাদিত্যের বুকে।

পুজোতে কিছু উপহার দেওয়া হয়নি সমীর আর ঝিলামকে। ওই রাতের ঘটনার দুই দিন পরে, দুপুরে বেলা অফিস থেকে বেরিয়ে বাজার চলে যায়। ঠাণ্ডার ভাব বাতাসে ভরে উঠেছে। লাজপত নগর মারকেট জনবহুল বাজার, নানা ধরনের জিনিস পাওয়া যায়। ঝিলামের জন্য একটা দামী সাদা ফারের জ্যাকেট কেনে আর সমীরের জন্য রেমন্ডসের সুট পিস কেনে। ঝিলামের আবার ক্রিসান্থিমাম আর ডালিয়া বেশি পছন্দ, তাই খুঁজে খুঁজে সেই ফুলের তৈরি বড় তোড়া কিনে নেয়। মন মেজাজ বেশ খুশি, নিজের বিবেক ওকে অনেক শান্ত করে দিয়েছে।

ফোন না করেই ভেবেছিল আচমকা হাজির হবে ওদের দরজায়। ঠিক সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ ওদের বাড়ি পৌঁছে যায় বুধাদিত্য। হাতে উপহারের বাক্স আর ফুলের তোড়া নিয়ে। সেদিন আর মদের বোতল নিয়ে যায়নি। ঝিলামকে দেওয়া প্রতিজ্ঞার পরে ফ্রিজ থেকে সব হুইস্কি আর ভদকার বোতল ভেঙে ফেলে দিয়েছিল। দশ বছরের পুরানো পাপের অভ্যেস এক ঝটকায় ঝিলাম ভেঙে দিয়েছিল।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজাতে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে বুধাদিত্য। ঘরের ভেতরে সমীরের জোর গলার আওয়াজ তার সাথে ঝিলামের গলার আওয়াজ ভেসে আসে।

সমীর, “এমনি সময়ে জিন্স, টপ, ক্যাপ্রি পরতে তোমার খারাপ লাগে না। কিন্তু পার্টিতে আমি ওই ড্রেস পরতে বলেছি তাই তোমার খারাপ লেগে গেল?”

ঝিলাম, “কি ড্রেস ছিল সেটা, ছিঃ, একটা কাঁধহীন পাছার নিচ পর্যন্ত ছোটো নীল রঙের ইভিনিং ড্রেস?”

সমীর, “দিল্লীর পার্টিতে ওই সব পরে যায় লোকে। কেন দেখোনি ওখানে কি রকম সবাই পরে গেছিল? তার মধ্যে তুমি ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাঙালির মতন শাড়ি পরে... আমার যা লজ্জা করছিল সেই সময় বলে বুঝাতে পারবো না।”

ঝিলাম, “কি বুঝতে পারি না আমি?”

সমীর, “দিল্লীর লোকেরা অনেক উদার চিন্তাভাবনা নিয়ে থাকে, তোমার মতন দুর্গাপুরের ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাঙ্গালীর মতন মানসিকতা নয় ওদের। এখানে মানুষের চিন্তাধারা অনেক স্বাধীন।”

ঝিলাম, “ছোটো কাপড় জামা পরে, অর্ধ উলঙ্গ হয়ে যার তার সাথে নেচেকুঁদে, মদ গিলে ব্যাভিচার করাকে স্বাধীনতা বলে না। স্বাধীনতা শিক্ষাদিক্ষায় আসে, সমীর। উদার চিন্তাধারা শিক্ষাদিক্ষার ফলাফল।”

সমীর, “বেশি জ্ঞান দিয়ো না আমাকে। কি জানো তুমি, ছিলে তো ওই দুর্গাপুরে?”

ঝিলাম, “আমার শিক্ষা তোমার চেয়ে বেশি।”

সমীর, “তোমার মানসিকতা নিচ, মধ্যবিত্ত বাঙ্গালীর মতন। স্বাধীন চিন্তাধারা তোমার মধ্যে নেই।”

ঝিলাম, “হ্যাঁ হ্যাঁ, অনেক স্বাধীনতা দেখিয়েছো আমাকে। তুমি সারাদিন অফিসে থাকো, আমি একা একা বাড়িতে পড়ে থাকি, চার দেয়ালের মধ্যে বদ্ধ। একবার ভেবে দেখেছো কি সেই সব কথা?”

সমীর, “কেন ভাবিনা, নিশ্চয় ভাবি।”

ঝিলাম, “কি ভাবো? আমি পুজোতে বাড়ি যাবো বলেছিলাম, নিয়ে যাওনি। দুর্গাপুজোর দিনে একটা দিন ছুটি নিয়ে ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যেতে বলেছিলাম, নিয়ে যাওনি। আমি অষ্টমীর দিন সেজেগুজে তোমার জন্য পথ চেয়ে বসেছিলাম, তুমি এলে রাত দশটায়, মদে ডুবে।”

সমীর, “হ্যাঁ হ্যাঁ, জানি জানি, সেইদিন আমার অনেক কাজ ছিল তাই দেরি হয়ে গেছিল।”

ঝিলাম, “তোমার সব কথা আমাকে মেনে নিতে হয়। তুমি আমার কোন কথা মানো শুনি? তুমি মদ খাবে, আমি কিছু বলতে পারবো না। তোমার ইচ্ছে মতন আমাকে কাপড় পরতে হবে, আমি কিছু বলতে পারবো না।”

সমীর, “কি চাও তুমি, আমি চাকরি ছেড়ে তোমার সামনে পুতুল হয়ে বসে থাকি। গত ছয় মাসে শুধু ছয় সাতবারের জন্য বাইরে গেছি, তাও আবার এক রাতের জন্য। তোমার জ্বালায় ফিরে আসতে হয় আমাকে। আমার কেরিয়ারে কত বড় ধাক্কা সেটা তুমি বুঝতে পারো না।”

ঝিলাম, “তোমাকে বাড়িতে বসতে তো বলিনি আমি। আমাকে বেড়াতে নিয়ে যেতে বললে, তুমি কোন এক বাহানা দেখাও প্রতি ছুটির দিনে। আমি কি এখানে শুধু তোমার সাথে শুতে এসেছি? শুধু মাত্র বিছানা গরম করার জন্য আমাকে বিয়ে করেছো?”

সমীর, “সারা সপ্তাহ কাজে ডুবে আর ইচ্ছে থাকে না আমার তাই বের হই না।”

ঝিলাম, “মদ গেলার সময়ে তোমার অফিস থেকে দেরি হয় না, আমি একটু ঘুরতে যাবো বললে তোমার দেরি হয়।”

সমীর, “তোমাকে দুর্গাপুরে রেখে এলে ভালো হতো।”

ঝিলাম, “তুমি জানো যে আমার যাবার জায়গা নেই তাই বারেবারে আমাকে দুর্গাপুরের কথা বলো। আমার বাবার পয়সার অত জোর নেই, তাই আমার ওপরে তুমি জোর খাটাতে পারো।”

সমীর, “মায়ের কথা শুনে বিয়ে করেছিলাম। বিয়েতে কি দিয়েছে তোমার বাবা?”

ঝিলাম, “আর কি দেবে, আর কি চাইতে?”

সমীর, “এক লাখ টাকাও দিতে পারলো না।”

ঝিলাম, “কেন? খাট, বিছানা, টিভি, ফ্রিজ সব কিছু বাবা কিনে দিয়েছে তারপরেও তোমার চাই?”

সমীর, “বলেছিল এক লাখ দেবে শেষ পর্যন্ত পঁচাত্তর হাজার টাকা ধরিয়ে দেয়।”

ঝিলাম, “কেন? তোমাকে তার মেয়ে দিয়েছেন, সেই মেয়েকে পড়িয়েছেন, সেটার দাম কি তুমি আমার বাবাকে দিয়েছো? তুমি আবার স্বাধীনচেতার কথা বলো? ছিঃ তোমার লজ্জা করে না এই সব কথা বলতে?”

সমীর, “তোমাকে নিয়ে আর পারা যায়না।”

ঝিলাম, “তুমি আমাকে এগিয়ে যেতে দাও নি। আমি কোলকাতায় থাকতেই তোমাকে বলেছিলাম যে আমাকে চাকরি করতে দাও, করতে দাওনি? কেন সেই সময়ে তোমার বউ বাইরে যাবে বলে খুব গায়ে লেগেছিল? আর যখন তুমি অন্য মেয়েদের দেখ, তখন তাদের স্বামীদের বা ভাইদের গায়ে লাগে কি লাগে না সেটা ভাব না তো?”

সমীর, “তুমি চাকরি করবে? তোমাকে আমি দুর্গাপুরে পাঠিয়ে দেবো এবারে।”

ঝিলাম, “আমি কোথাও যাবো না। বিয়ে করে এনেছো যখন তখন আমার সব দায়িত্ব তোমার।”

সমীর, “তোমার জেদ আর রাগের জন্য আমি মদ খাই, আমার মাথার ঠিক থাকে না।”

ঝিলাম, “হ্যাঁ তাতো বলবেই এখন। গত আড়াই বছরে কতটুকু নজর দিয়েছো আমার প্রতি? কোলকাতায় থাকতে তুমি একটু আধটু মদ খেতে আমি কিছু বলতাম না। এখানে এসে একটু বেড়ে যায় তাও আমি কিছু বলিনি। কিন্তু শেষের কয়েক মাস ধরে তুমি যা শুরু করেছো সেটা সহ্য সীমার বাইরে চলে গেছে। শেষ পর্যন্ত তুমি কিনা অন্য একজনের সাথে, আর সেই দৃশ্য আমাকে দেখতে হলো? তার থেকে আমার মরে যাওয়া ভালো ছিল।”

সমীর, “তুমি কি দিয়েছো আমাকে? এতদিনে একটা বাচ্চার মা হতে পারলে না।”

ঝিলাম কেঁদে ফেলে, “শুধু কি আমার দোষ দেখ? গত বছরে একটা মিসক্যারেজ হয়েছে, অনেকের হয়, তাই বলে কি শুধু আমার দোষ? তুমিও তো ডাক্তার দেখাবে না।”

সমীর, “আমার কি হয়েছে? আমার কিছু হয়নি।”

ঝিলাম, “বললেই হয়ে যাবে? ওই তো তোমার মুরোদ। কত বার বলেছি, আমার গায়নকলজিস্টও বলেছিল তোমাকে স্পারম কাউন্ট করাতে আর তার ওষুধ খেতে, তুমি শুনেছিলে?”

সমীর, “না আমার স্পারম কাউন্ট ঠিক আছে।”

ঝিলাম, “হ্যাঁ হ্যাঁ জানা আছে, দু মিনিটে নেতিয়ে পড়ে যে মানুষ সে আবার বড় বড় কথা বলে। আমি বলে তোমার সাথে টিঁকে আছি, অন্য মেয়ে হলে এতদিনে ছেড়ে চলে যেতো।”

সমীর, “হ্যাঁ যাও, আর আমি তাহলে বেঁচে যাই।”

ঝিলাম, “আমি সত্যি বলছি, গলায় দড়ি দিয়ে এবারে আত্মহত্যা করবো।”

বাইরে দাঁড়িয়ে বুধাদিত্য কলিং বেল বাজাতে ভুলে গেল। ভেতরে তুমুল ঝগড়া চলছে, এই ভীষণ ঝড়ের মধ্যে ওর ঢোকা উচিত কি না তাই ভাবছিল। কিন্তু শেষ বাক্য ওকে নাড়িয়ে দেয়, ঝিলামের গলা শুনে মনে হলো রাগের বশে হয়তো কোন উল্টো পদক্ষেপ নিয়ে ফেলবে। ঝিলামের এই দুরাবস্থা বুধাদিত্য সহ্য করতে পারেনা। মনে হয় এখুনি সমীরের মাথার খুলি ভেঙে দেয়। প্রথম বার মনে হয়েছিল যে চলে যায় কিন্তু ঝিলামের কান্না শুনে মনে হয় দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ে। বুধাদিত্যের শরীর রাগে কেঁপে ওঠে। চোয়াল চেপে নিজেকে সামলে নিয়ে জোরে দরজায় ধাক্কা মারে। ভেতরের থেকে ভেসে আসা আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেল। কোন সাড়া শব্দ নেই, বুধাদিত্য দ্বিতীয় বার দরজায় ধাক্কা মারে। সমীর এসে দরজা খুলে দিল। ঝিলামের চোখে জল, সারা মুখ লাল, বিধ্বস্ত পরাজিত এক নারী, জীবন যুদ্ধে হেরে গেছে সবকিছু। চুড়িদারের ওড়না গলায় জড়িয়ে ফাঁসে বাঁধা, তার মানে ঝিলাম সত্যি নিজেকে সমীরের সামনে শেষ করে দিতো আর সমীর শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতো।

বুধাদিত্য এমন ভান করল যেন কিছু জানেনা, কিছুই শোনেনি। বুধাদিত্য হেসে সমীরকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ব্রাদার, ভাবলাম তোদের পুজোতে কিছু দেওয়া হয়নি তাই নিয়ে এলাম।” ঝিলামের দিকে তাকিয়ে বলল, “কি ব্যাপার, গলায় ঠাণ্ডা লেগেছে নাকি? ওড়নাটা মাফলারের মতন পরে আছো।”

ঝিলামের চোখ ছলছল, চোখ মুখ থমথমে। বুধাদিত্যের কথা শুনে, চোখ মুছে অতি কষ্টে একটু হাসি নিয়ে আসে ঠোঁটে। সমীরের চোখমুখ লাল, জড়িয়ে ধরার সময়ে অনুভব করেছিল যে সমীরের গা গরম, প্রচন্ড ক্রোধের ফলাফল।

বুধাদিত্য ঝিলামের দিকে তাকিয়ে বলল, “এই দেখো তোমার জন্য ক্রিসান্থিমাম এনেছি, এবারে হাসো একটু।”

ঝিলাম কোনরকমে ঠোঁটে হাসি টানতে গিয়ে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে। মুখ চেপে দৌড়ে শোয়ার ঘরে ঢুকে পড়ে। সমীরের দিকে ভুরু কুঁচকে তাকায় বুধাদিত্য। ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে।

সমীর চেপে যায় ওদের ঝগড়ার কথা, থমথমে ভারী গলায় বলে, “কিছু না রে। তুই ভেতরে আয়। আর হ্যাঁ এই সব কি পাগলামি করেছিস?”

বুধাদিত্য, “আরে বাপ্স, কিছুই করিনি। নে ধর, আর ঝিলামকে ডাক।”

সমীরের মুখ থমথমে, বুধাদিত্য তার কারন জানে, তাও না জানার ভান করে সমীরকে জিজ্ঞেস করে, “কিরে তোরা ঝগড়া করেছিস নাকি?”

বুধাদিত্য সোফার ওপরে বসে পড়ে, সামনে সমীর। সমীর মাথা নিচু করে ভারী গলায় বলে, “হ্যাঁ একটু মনোমালিন্য হয়ে গেছে। একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে।” বুধাদিত্যর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল, ঝিলামের চোখে জল যেন আর সহ্য করতে পারছেনা। কিন্তু বাইরের লোক, তাই ওদের স্বামী-স্ত্রীর বাক বিতন্ডার মধ্যে আসতে চায়না। সমীর ওর দিকে তাকিয়ে বলে, “হ্যাঁ রে কিছু এনেছিস আজ? মাথা ঝিমঝিম করছে, একটু খেলে ভালো হতো।”

ঝিলাম ঘরের ভেতর থেকে শুনতে পায় ওদের কথা। চিৎকার করে কেঁদে ওঠে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, মদের সাথে সাথে আমাকে মেরে ফেলে আমার রক্ত গিলে নাও, তবে তোমার মনে শান্তি হবে।”

সমীর মাথা বিরক্তিতে মাথা নাড়ায়, চিৎকার করে ওঠে, “চুপ করে থাকো তুমি, একটা কথা বলবে না।”

বুধাদিত্যের কান গরম হয়ে যায়, হাতের মুঠি শক্ত হয়ে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রনে রাখে। গম্ভির স্বরে সমীরকে বলে, “না আমি আজ কোন মদের বোতল আনিনি। ড্রিঙ্ক করা এক প্রকার ছেড়ে দিয়েছি।”

একটু যেন অবাক হয়ে যায় সমীর, বুধাদিত্যের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বলে, “কি ব্যাপার তুই মদ ছেড়ে দিয়েছিস?”

বুধাদিত্য চিবিয়ে বলে, “তোর সেইদিনের পরে শিক্ষা হওয়া উচিত ছিল।”

সমীর ঝাঁঝিয়ে ওঠে ওর দিকে, “তুই আর জ্ঞান দিতে আসিস না প্লিস।”

ঝিলাম বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। সমীরের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে, “ও ছিল বলে এই যাত্রায় বেঁচে ফিরেছো। ও না থাকলে ওখানে মরে পরে থাকতে আর আমি ওখানে আত্মহত্যা করতাম।”

মাথা নিচু করে বসে থাকে সমীর। বুধাদিত্য বুক ভরে এক শ্বাস নেয়, এই ঝড় দুরন্ত গতি ধারন করেছে, না থামালে ভবিষ্যতে অনেক বড় আকার ধারন করবে। ওর আনা উপহারের প্যাকেটগুলো সোফার ওপরে পড়ে, কেউ খুলে পর্যন্ত দেখেনি। ঝিলামের দিকে তাকায় বুধাদিত্য, চোখে দুটি ছলছল, নাকের ডগা লাল, সারা মুখ লাল, কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ ফুলে গেছে।

আবহাওয়ার সামাল দিতে ঝিলামকে বলে বুধাদিত্য, “এক গ্লাস জল দেবে তো, এত খুঁজে খুঁজে বিশেষ করে তোমার জন্য ক্রিসান্থিমাম এনে দিলাম, আর এক গ্লাস জল পাবো না?”

ঝিলাম ওর কথা শুনে লজ্জিত হয়ে হাল্কা হেসে ফেলে। সেই হাসি দেখে বুধাদিত্য সমীরকে বলে, “ওই দেখ ঝিলাম হেসেছে, এবারে মিটমাট কর। চল কোথাও যাই, আজ রাতে আর বাড়িতে খাবার বানাস না।”

সমীর, “না আমার আর কিছু মন করছে না।”

বুধাদিত্য, “আচ্ছা, ঠিক আছে যেতে হবে না। কি ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া? আমাকে জানাতে কি কোন বাধা আছে?”

ঝিলাম বুধাদিত্যকে বলে, “আমি একটা চাকরি করবো। আমার জন্য একটা চাকরি খুঁজে দেবে তুমি?”

সমীর চুপ করে বসে থাকে, ঝিলামের কথার উত্তর দেয় না। বুধাদিত্য সমীরের কাঁধ নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার? চাকরি করতে চায় বাধা দিচ্ছিস কেন?”

সমীর বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে, “চাকরি করতে চায় ঝিলাম, কিন্তু...”

বুধাদিত্য, “ঝিলাম চাকরি করবে, সেট খুব ভালো কথা। তাতে তোর আপত্তি কেন?”

সমীর, “না মানে আমার আপত্তি নেই, নিজে চাকরি খুঁজে করতে পারলে করুক।” ওর গলার স্বরে প্রবল দ্বন্দের প্রতিধ্বনি।

বুধাদিত্যের কান গরম হয়ে যায়। অবস্থা নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য আবার বলে, “নে অনেক কথা কাটাকাটি করেছিস, এবারে জামা কাপড় পরে নে। চল বাইরে কোথাও যাই, ভালো লাগবে। দেখ ঘরের আবহাওয়া গুমোট মনে হচ্ছে আমার। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।” ঝিলামকে বলে, “তুমি দাঁড়িয়ে কেন, তাড়াতাড়ি জামাকাপড় পরে নাও। আজ আমার তরফ থেকে ডিনার।”

ঝিলাম ওকে বলে, “না আমি যাবো না ওর সাথে।”

বুধাদিত্য দেখল যে প্রচন্ড বিগড়ে গেছে ঝিলাম। সত্যি সমীর যা করেছে তারপরে ওকে ক্ষমা করে দেওয়া একটু মুশকিল। বুধাদিত্য ঝিলামের দিকে নরম স্বরে বলে, “ঠিক আছে ওর সাথে যেতে হবে না। তুমি আমার সাথে চলো, তাহলে হবে তো। মনে করে নিও যে গাড়িতে শুধু তুমি আর আমি ব্যাস আর কেউ নেই।”

বুধাদিত্য নেহেরু প্লেসে একটা বড় বাঙালি রেস্টুরেন্ট, অহঃ ক্যালক্যাটা, ফোন করে তিন জনের জন্য একটা টেবিল বুক করে নিল। সমীরের মুখ দেখে মনে হলো সেখানে আগে গেছে। বুধাদিত্য আর কথা বাড়াল না, কিছু জিজ্ঞেস করল না সে বিষয়ে। সমীর মুখ কাঁচুমাচু করে বসে ঝিলামের দিকে তাকায়, ঝিলাম বুধাদিত্যের দিকে একটু হাসি দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য। সমীর কিছু পরে উঠে চলে যায় জামা কাপড় পরতে। কিছু পরে সমীর আর ঝিলাম তৈরি হয়ে বেরিয়ে আসে। ঝিলামের পরনে বেশ সুন্দর একটি সালোয়ার। বিশেষ কিছু সাজগোজ করেনি কারন মাথা এখন গরম। সমীর একটা জিন্স আর শার্ট পরে বেরিয়ে আসে। বুধাদিত্য ওদের নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

গাড়িতে সমীর বুধাদিত্যের সাথে সামনের সিটে বসে, পেছনে ঝিলাম। কারুর মুখে কোন কথা নেই, এই নিস্তব্ধতা এক বিশাল ঝড়ের পূর্বাভাস। কিছু করে হোক এই অবস্থার সামাল দেওয়া উচিত, ভাবতে থাকে বুধাদিত্য। ঝিলামের চোখ যে বড় ডাকে, ঝিলামের চোখে যেন জল দেখতে পারেনা বুধাদিত্য। ওই কাজল কালো চোখে জল দেখলেই বুধাদিত্যের বুক বড় কেঁপে ওঠে। আয়েশার পরে আরও এক নারীর প্রতি ওর বুকের মাঝে টান ধরেছে, এক প্রশান্ত ভালোলাগার টান। কিন্তু দু’জনেই ওর হতে পারেনা। কেন ওর বুকে কোন অবিবাহিতা জোটে না? রেস্টুরেন্টে পাশাপাশি চেয়ারে সমীর আর ঝিলামকে বসিয়ে দেয়, ওদের সামনের চেয়ারে বুধাদিত্য। দিল্লীর বেশ নামকরা বাঙালি রেস্টুরেন্ট, ওঃ ক্যালক্যাটা।

বুধাদিত্য মজা করে সমীরকে জিজ্ঞেস করে, “কিরে, এই রকম চুপ করে বসে থাকবি নাকি? কিছু বল, ঝড়ের পরে তো বৃষ্টি হওয়া উচিত রে বোকা...”

ঝিলাম উত্তর দেয়, “একটু বুঝিয়ে বলো তোমার বন্ধুকে, আমাকে একদম দেখে না।”

বুধাদিত্য ঝিলামকে বলল, “তুমি চাকরি করতে চাও?” মনের কোনে এক প্রবল ইচ্ছে জাগে, ঝিলামকে সমীরের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিজের করে নিতে। খুব ভারী পাথর দিয়ে বুকের মাঝে চেপে রাখে সেই প্রবল অনুভুতি।

ঝিলাম মাথা নাড়ায়, হ্যাঁ। সমীর ওর দিকে তাকিয়ে বলে, “ঠিক আছে আমি মত দিচ্ছি তুমি চাকরি করতে পারো। কিন্তু আমি কাউকে চিনি না, আমি কিছু সাহায্য করতে পারবো না কিন্তু।”

বুধাদিত্য সমীরকে বলে, “রাগ এখনো কমেনি তোর? ঝিলামের পাশে একটু চেপে বস তো একটা সুন্দর ছবি তুলি তোদের। শালা আমার কাছে তোদের কোন ছবি নেই। একটু জড়িয়ে ধর ঝিলামকে দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।”

ঝিলামের কাঁধে কাঁধ দিয়ে একটু ঠেলে দেয় সমীর। ঝিলাম কপট রাগ দেখিয়ে হেসে বলে, “ন্যাকামো ছাড়ো, অনেক হয়েছে।”

বুধাদিত্য ওর মোবাইল বের করে ওদের একটা ছবি তোলে। ইচ্ছে করেই শুধু মাত্র ঝিলামের আরও একটা ছবি তোলে। বুধাদিত্য অর্ডার দিল ডাব চিংড়ি আর ভাপা ইলিশ। ঝিলামের জিবে যেন জল চলে এলো, একটু হেসে বুধাদিত্যকে ধন্যবাদ জানায়। বুধাদিত্য খাওয়ার সময়ে জানায় যে ঝিলামের জন্য চাকরি খুঁজে দেবে। গল্প করতে করতে স্বামী স্ত্রীর মাঝের বরফ খানিকটা গলে যায়। সেই দেখে বুধাদিত্যের বেশ ভালো লাগে, বিশেষ করে ভালো লাগে ঝিলামের গালের লালিমা, দুটি বড় চোখের ভাষা আর ঠোঁটের হাসি। ফিরে এসেছে ঝিলাম, খুব খুশি বুধাদিত্য। কিন্তু সেই খুশি চেহারায় আনতে দেয় না। খাওয়ার সময়ে সমীর মজা করে বুধাদিত্যকে জিজ্ঞেস করে মদ ছাড়ার কারন। বুধাদিত্য কপট হেসে সমীরকে উত্তর দেয় যে একজনের কথায় মদ ছেড়ে দিয়েছে। উত্তরটা ধরতে পারে ঝিলাম, মৃদু মাথা নাড়ায়। বুধাদিত্য চোখের ইঙ্গিতে ঝিলামের অভিবাদন স্বীকার করে।

খাওয়ার পরে ওদের পৌঁছে দেয় বাড়িতে। বাড়িতে ঢুকে বুধাদিত্য দুই জনকে এক সাথে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে, ওর ছোঁয়ায় শুধু মাত্র বন্ধুসুলভ অনুভুতি। এই প্রথম বার ঝিলামের কোমল দেহপল্লব বাঁধা পড়ে বুধাদিত্যের পেশি বহুল বাজুর মাঝে, একটুখানি কুঁকড়ে যায় ঝিলাম।

বুধাদিত্য ওদের বলে, “তোরা দুজন এইভাবে মারামারি করলে আমি কোথায় যাই বলতো? প্লিস করিস না। আর ঝিলাম, শেষবারের মতন ক্ষমা করে দাও সমীরকে। আর সমীর তুই কথা দে ঝিলামকে যে আর কোনদিন মদ খাবি না।”

ঝিলাম ম্লান হেসে বলে বুধাদিত্যকে বলে, “আমি কি ইচ্ছে করে ঝগড়া করেছি?”

সমীর মৃদু মাথা দুলিয়ে জানায় যে ও অনুতপ্ত, ভবিষ্যতে আর মদ খাবে না। সোফার ওপরে পড়ে আছে উপহারের প্যাকেট। বুধাদিত্য প্যাকেটগুলো ওদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করে যে ওদের ভালো লেগেছে কিনা। সমীর প্যাকেট খুলে অবাক, এত দামী সুট পিস। সাদা ধবধবে ফারের জ্যাকেট দেখে ঝিলামের মুখে হাসি ধরেনা। ঝিলাম জানায় যে ছোটোবেলা থেকে ওর খুব শখ ছিল ওই রকম একটা জ্যাকেট পাওয়ার। ঝিলামের চোখ দেখে মনে হচ্ছিল সমীর সামনে না থাকলে বুধাদিত্যকে জড়িয়ে ধরতো। ঝিলামের ঠোঁটের মিষ্টি হসি বুধাদিত্যকে আবার মাতাল করে দেয়। বেশ কিছুক্ষণ ওদের বাড়িতে বসে বুধাদিত্য খুশি মনে বাড়ি ফিরে আসে।

ভিশাল সিনহার স্ত্রী, শমিতা, ডি.পি.এসো ইস্ট অফ কৈলাস, জুনিয়ার সেকশান স্কুলে অঙ্কের টিচার। বুধাদিত্য ভিশালের সাথে কথা বলে। ভিশাল জানায় যে এই ব্যাপারে বুধাদিত্য যেন শমিতার সাথে বিস্তারিত কথা বলে, এই সব ব্যাপারে ওর কোন হাত নেই। একদিন বুধাদিত্য ভিশালের বাড়ি গিয়ে ঝিলামের চাকরির ব্যাপারে কথা বলে আসে। শমিতা জানায় যে বুধাদিত্য যেন ওকে ঝিলামের প্রোফাইল মেইল করে দেয়।

সমীরের সাথে একদিন কথা হয় এই ব্যাপারে। সমীর একটু মনক্ষুণ্ণ, ঝিলামের চাকরির ব্যাপারে। কিন্তু ঝিলামের দৃঢ় সঙ্কল্পের সামনে মাথা নত করে দেয় সমীর। বুধাদিত্য এক বিকেলে সমীরের বাড়ি গিয়ে ঝিলামের সাথে বসে ওর কারিকুলাম ভিটা বানিয়ে ফেলে। বুধাদিত্য ঝিলামকে জানায় যে ওর ইংরাজি উচ্চারন প্রচন্ড বাঙালি ঘেঁষা, সেটা আগে ঠিক করতে হবে। সমীরকে অনুরোধ করে যে ঝিলামকে একটা ইংরাজি স্পিকিং কোর্সে ভর্তি করিয়ে দিতে। সমীররে অনিচ্ছে থাকা সত্তেও ঝিলামের দৃঢ়তার জন্য শেষ পর্যন্ত ওকে ইংরাজি স্পিকিং কোর্সে ভর্তি করিয়ে দেয়। বুধাদিত্য প্রতিদিন ফোন করে সমীরের কাছ থেকে ঝিলামের খবর নেয়। ঝিলামের সাথে প্রতি রাতে কথা হয় বুধাদিত্যের। বুধাদিত্যের মনের মধ্যে এক অনাবিল আনন্দে ভরে ওঠে, বারেবারে মনে হয় ঝিলাম ওর অনেক কাছে এগিয়ে এসেছে। এই কদিনে ওদের সাথে বিশেষ দেখা সাক্ষাৎ হয়না বটে কিন্তু প্রায় প্রতিদিন ওদের সাথে কথা হয়। বুধাদিত্য কোনদিন ঝিলামকে একা ফোন করেনা, যখনি করে সমীরের ফোনে ফোন করে আর তারপরে ঝিলামের সাথে কথা বলে। বুধাদিত্য কোনদিন নিজের মনের ভালোবাসা ওদের বুঝতে দেয়না, সবসময়ে অতি প্রিয় বন্ধুসুলভ আচরন করে যায়। মনপ্রান ঝুঁকে যায় ঝিলামের দিকে কিন্তু বিবেকের কাছে হার মেনে নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখে বুধাদিত্য।

একদিন বিকেলে অফিস থেকে বেরিয়ে খুব ঝিলামের কথা মনে পড়ে যায় বুধাদিত্যের। অহেতুক কোন সমস্যায় জড়াতে চায়না তাই সমীরকে ফোন করে বুধাদিত্য। সমীরকে বলে যে ওদের বাড়ি আসছে, সেই শুনে সমীর একটু চেপে যায়, বলে বাইরে দেখা করতে, বুধাদিত্যের সাথে ওর কিছু কথা আছে। বাড়িতে থাকলে ঝিলামের সামনে মন খুলে কথা বলতে পারবেনা। অনেকদিন বুধাদিত্যের সাথে সামনা সামনি দেখা হয়নি। সমীরের সাথে বিকেলে দেখা করে। সমীর একটু মনক্ষুণ্ণ যে ঝিলাম ঘরের বাইরে পা রেখেছে।

সমীর, “তোকে সত্যি কথাটা বলি। আমি বিয়ে করেছিলাম রুপে মুগ্ধ হয়ে। এত সুন্দরী আর প্রানবন্ত মেয়ে, যে আমি প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেছিলাম।” বুধাদিত্য যেদিন প্রথম ঝিলামকে দেখে সেদিনই ওর ক্ষিধে চাগিয়ে ওঠে, কিন্তু পরে সেই ক্ষিধে মরে এক অন্য ভালোলাগায় বুক ভরে যায়।

সমীর বলতে থাকে, “বিয়ের পরে বেশ কয়েকবার বার বলে যে ও চাকরি করবে। আমার মনের কোনায় হিংসে ভাব জাগে, একে ভীষণ সুন্দরী তার ওপরে চাকরি করতে গেলে যদি আমার হাত ছাড়া হয়ে যায় বউ, সেই ভেবে আমি ওকে চাকরি করতে বারন করি। কোলকাতায় থাকতে ওর বেশ কয়েকজন কলেজের বন্ধুদের সাথে আবার করে দেখা হয়, তাদের মধ্যে বেশ কয়েক জন ছেলেও ছিল। কেউ কেউ দুর্গাপুর, বর্ধমান ছেড়ে কোলকাতায় চাকরির খোঁজে এসে গেছে। ঝিলাম খুব প্রানবন্ত খোলামেলা মনের মেয়ে, আমার খুব হিংসে হতো যখন ওর বন্ধুরা আমার বাড়িতে আসতো। আমি মাঝে মাঝে অফিস থেকে বাড়ি ফিরে দেখতাম যে ঝিলাম বন্ধুদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা মারছে। সত্যি বলছি তোকে, আমি সহ্য করতে পারিনি ওর হাসি। আমার ধারনা সুন্দরী বউ আমার পেছনে অন্য কারুর সাথে প্রেম করছে। একদিন খুব ঝগড়া হয় এই নিয়ে। ঝিলাম খুব জেদি মেয়ে, আমার কথা মানে না। আমি ওকে দুর্গাপুর পাঠিয়ে দিলাম একদিন। আমার মনে হয়েছিল যে দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো। বাবা মায়ের কথা শুনে আমি আবার ঝিলামকে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। ঝিলাম আমাকে বলে যে কোন বন্ধুর সাথে সম্পর্ক রাখবে না। আমি চাকরি বদলে দিল্লী চলে আসি, শুধু ওকে বেঁধে রাখার জন্য।”

বেঁধে রাখার কথা শুনে বুধাদিত্যের মনে হয় যে সমীরের গালে সজোরে এক থাপ্পড় কষিয়ে দেয়। গায়ের রক্ত গরম হয়ে ওঠে বুধাদিত্যের তাও ওর কথা চুপ করে শুনে যায়।

সমীর বলতে থাকে, “তুই যেদিন আমাদের বাড়ি প্রথমবার গেছিলি তার আগে পর্যন্ত মোটামুটি ঠিকঠাক ছিল সব কিছু। কিন্তু তার মাঝে ওর এক বান্ধবীর ফোন আসে, সে কোলকাতায় একটা স্কুলে চাকরি পেয়েছে। সেই শুনে ঝিলাম আবার বিগড়ে যায়। আবার বায়না ধরে যে চাকরি করবে। আমি প্রথমে মানা করি, কিন্তু কিছুতেই শোনেনা ঝিলাম। আমাদের মধ্যে মনোমালিন্য বেড়ে চলে। এমন দিন গেছে যে আমাকে ওর পাশে পর্যন্ত যেতে দেয়নি। নিজে না খেয়ে সারা রাত মাটিতে শুয়ে থেকেছে। কোলকাতায় থাকাকালীন শুধু অকেশানে মদ খেতাম। এখানে ওর জ্বালায় নিয়মিত হয়ে গেল। মাঝে মাঝে মনে হতো বাড়ি গিয়ে কি হবে। সেই তো আবার ওর মুখ দেখা, কিছু না কিছু অছিলায় আবার ঝগড়া শুরু করে দেবে, নিজেকে কষ্ট দেবে।”

অনেকক্ষণ পরে বুধাদিত্য মুখ খোলে, “সত্যি কথা বলতে তুই অনেক নিচ, তুই অনেক স্বার্থপর, বুঝলি। আমি তোর পুরানো বন্ধু বা শত্রু, যাই বলিস, আজ আমি তোর মুখের সামনে বলছি, তুই যা করছিস ওর সাথে খুব ভুল করছিস।”

সমীর রেগে যায়, বুধাদিত্যকে বলে, “আমি জানি ওর সাথে কি করতে হয়। তুই সেদিন না এলে আমি ওকে মেরে বকে ঠিক চুপ করিয়ে দিতাম।”

যেই শোনে যে সমীর ঝিলামের গায়ে হাত তুলবে, সেইখনে বুধাদিত্যের কান গরম হয়ে ওঠে। কোনোরকমে রাগ গিলে নেয়, “আমি সেদিন তোদের ঝগড়ার কথা সব শুনেছিলাম বাইরে দাঁড়িয়ে। হ্যাঁ, আমি শুনেছিলাম। আমি চলে যেতাম জানিস, তোদের মাঝে আসতে চাইনি আমি। কিন্তু তোদের কথা কাটাকাটি সহ্য সীমার বাইরে চলে যায়। সেইজন্য আমি ঘরে ঢুকেছিলাম।”

সমীর বলে, “তুই এসে ওকে আরও মাথায় চড়িয়ে দিয়েছিস, এবারে কিছু হলে তুই দায়ী। দেখে নিস আমি ওকে বেশি দিন চাকরি করতে দেবো না। আমার আর ভালো লাগছে না রে। আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। সত্যি কথা বলতে ওর রুপ যৌবন আমার কাছে শেষ পর্যন্ত বিষ হয়ে দাঁড়াল। কিছুদিন পরে স্কুল জয়েন করবে আমাকে পায়ের নখের যোগ্য বলে গন্য করবে না দেখে নিস।”

বুধাদিত্যের সহ্যের বাঁধ ভেঙে যায়, বুধাদিত্য ওকে বিরত করতে চেষ্টা করে, “তুই কি করবি ওর সাথে? রাগের মাথায় প্লিস কিছু করিস না, একটু ভেবে চিন্তে কাজ করিস। দেখ যেদিন তুই মদ খেয়ে উলটে পড়েছিলিস, অন্য মেয়ে হলে সেদিন সেখানে তোকে ওই অবস্থায় ফেলে চলে যেতো। তুই জানিস তোর কি অবস্থা ছিল? ঘরের মধ্যে একটা উলঙ্গ মেয়ে উলটে পড়ে আছে বিছানায়, তুই মাটিতে তোর বাড়া বের করে উলটে পড়ে। তা সত্ত্বেও ঝিলাম তোকে বুকে আঁকড়ে ধরে, তোর বমি গায়ে মেখে তোকে আগলে রেখেছিল। সত্যি রে, ঝিলামের মতন মেয়ে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।”

সমীর চুপ করে থাকে বুধাদিত্যের কথা শুনে, “এত কিছু তো আমাকে বলেনি কোনদিন?”

বুধাদিত্য, “কেন বলতে যাবে? ও যে তোকে ভালোবাসে সেটা কি বুক চিরে দেখাবে, চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে জানাবে?”

সমীরের মাথা লজ্জায় নত হয়ে যায়, বুক ভরে এক শ্বাস নিয়ে বলে, “জানি না কি করবো, এখন মাথার ঠিক নেই।”

সেই মুখ দেখে বুধাদিত্যের মনে হলো, যে ঝিলাম আর সমীরের মাঝের অন্তরদ্বন্দ অনেক বেড়ে গেছে। ফাটল ধরেছে বিশ্বাসের প্রাচীরে। বড় ভয়ানক এই ফাটল, বুধাদিত্য তাঁর জীবন দিয়ে জানে এই ফাটল কত বড় দ্বন্দ আনতে পারে। বাবা মায়ের মধ্যে সেই প্রাচীর গড়ে উঠেছিল। ছোটোবেলায় মা ওকে নিয়ে সেই যে চলে আসে কোলকাতার বাড়িতে আর ফিরে যায় না ধানবাদে। বুধাদিত্যের সামনে সেই অতীতের চক্র ঘুরে দাঁড়ায়। যতক্ষণ না কেউ ওকে ডাকে ততক্ষণ ও স্বামী স্ত্রীর মাঝে নাক গলাবে না বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে। কিন্তু ঝিলামের কি হবে সেটা একবারের জন্য মনে করে বুক কেঁপে ওঠে।

দিনেদিনে বুধাদিত্য বদলে যায়, মদ ছেড়ে দিয়েছে, তবে সিগারেট খাওয়া কমাতে পারেনি। আর বারে যাওয়া হয় না বুধাদিত্যের, নারীসঙ্গ ছেড়ে দিয়েছে। শুধু মাঝে মাঝে আয়েশার কথা খুব মনে পড়ে। জানে যে এই বুকে আয়েশা কোন দিন আসতে পারবে না, ঝিলামও কোনদিন আসতে পারবে না। শুধু এক ফাঁকা হৃদয় নিয়ে খুঁজে বেড়ায় মনের মানুষ। কিন্তু সেই মানুষ ধরা দেয়না বুধাদিত্যকে। বুঝতে দেরি হয়না বুধাদিত্যের যে ঝিলামের চোখ, ঝিলামের ঠোঁট বড় ডাকে ওকে, সেটা শুধু ওর মনের ভ্রম। কিছুতেই মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনা ঝিলামকে। চোখ বন্ধ করলেই ঝিলামের সেই রাতের সুরেলা কণ্ঠস্বর ভেসে আসে, একটা ফোন করতে বলেছিল ঝিলাম। ঝিলামের কথা মনে পড়তেই, মোবাইলে তোলা ঝিলামের ছবি খুলে দেখে। একটু গম্ভির মুখ, তাও যেন ঠোঁটে হাসি টেনে ধরে। রাগলে ভারী সুন্দরী দেখায় ঝিলামকে।

সমীরের সাথে কথা বলে বোঝে যে সমীর একটু নরম হয়ে গেছে। মেনে নিয়েছে ঝিলামের আব্দার, তবে মন থেকে নয়, উপর উপর। বুধাদিত্য একদিন ঝিলাম আর সমীরকে নিয়ে ভিশালের বাড়ি যায়। দিনে দিনে ঝিলাম অনেক পরিনত হয়ে ওঠে। কথাবার্তাতে এক নতুন আত্মপ্রত্যয় দেখা দেয়। বুধাদিত্য লক্ষ্য করল যে ঝিলাম দুর্গাপুর ছেড়েছিল সেই ঝিলাম আর নেই। শীতকাল, ঝিলাম একটা গাড় নীল রঙের জিন্স পরেছে, উপরে হাল্কা বেগুনি রঙের শার্ট। তারপরে বুধাদিত্যের দেওয়া সাদা ফারের জ্যাকেট। ঝিলাম যেন সুন্দরী এক জলপরী। সমীরের চোখে মুখে যেন হেরে যাওয়ার ভাব বেশি করে ফুটে ওঠে। বুধাদিত্য ঝিলামকে দেখে বেশ খুশি হয়। কিন্তু নিজের মনের ভাব লুকিয়ে রাখে সমীরের সামনে। শমিতাকে বুধাদিত্য ঝিলামের কথা আগে থেকেই বলে রেখেছিল। সামনা সামনি কথা বলার পরে শমিতার মনে হয় যে ঝিলাম এবারে তৈরি। একদিন শমিতা বুধাদিত্যকে ফোন করে জানায় যে ঝিলামকে নিয়ে ইন্টারভিউ দিতে আসতে হবে। সমীরের সাথে কথা বলে বুধাদিত্য, সমীরকে ছুটি নিতে বাধ্য করে। সমীর ছুটি নিয়ে ঝিলামের সাথে স্কুলে যায়। রাতের বেলা সমীর বুধাদিত্যকে ইন্টারভিউর কথা জানায়। কিছুদিনের মধ্যে ঝিলামের চাকরি হয়ে যায়।

ঝিলাম মনেপ্রানে বুঝতে পারে যে বুধাদিত্য না থাকলে এই যাত্রায় ওকে বাঁচানোর কেউ ছিলনা, এমন কি বিবাহিত স্বামী ওর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে ছিল। যেদিন এপয়েন্মেন্ট লেটার পায় সেদিন খুশিতে মাটিতে যেন পা পড়েনা। সব থেকে আগে বুধাদিত্যকে ফোন করে। এই প্রথম বার ঝিলামের সাথে একা কথা বলছে বুধাদিত্য। ওর সুরেলা উচ্ছল গলার স্বর শুনে বুধাদিত্য পাগল হয়ে যায়।

ঝিলাম, “জানো আজ কুরিয়ারে আমার এপয়েন্মেন্ট লেটার এসেছে। শীতের ছুটির পরে আমার জয়েনিং, জানুয়ারির মাঝামাঝি।” মনে হয় এখুনি দৌড়ে গিয়ে ঝিলামকে জড়িয়ে ধরে। নিজের কেবিনে চুপ করে বসে সেই মনোভাব চেপে নেয় বুধাদিত্য। বুধাদিত্য শুধু একটু হুম করে উত্তর দেয়। ঝিলাম খুশিতে যেন ফেটে পড়ছে, “তুমি আজ বিকেলে আমাদের বাড়ি চলে এসো। আমি সমীরকে এখুনি ফোন করে দিচ্ছি অফিস থেকে যাতে তাড়াতাড়ি বের হয়। আমি চিকেন নিয়ে এসেছি, চিলি চিকেন বানিয়ে খাওয়াবো তোমাকে।”

বুধাদিত্য কাজের আছিলা দেখায়, “না, আজ অনেক কাজ আছে অফিসে। পরে একদিন যাবো। যাই হোক তুমি এখনো সমীরকে ফোন করে জানাও নি কেন? তাড়াতাড়ি ফোন করো ওকে, এ যে বড় খুশির খবর।”

ঝিলাম একটু মনমরা হয়ে উত্তর দেয়, “তুমি সত্যি আসবে না?”

ওই গলার স্বর শুনে বুক ফেটে কাঁদতে ইচ্ছে করে বুধাদিত্যের, চোয়াল শক্ত করে ধির গলায় বলে, “না ঝিলাম আমার অনেক কাজ আছে আজকে থাক। তোমরা আনন্দ করো, পরে আমি যাবো। আমি তোমার চাকরি পাওয়াতে খুব খুশি হয়েছি।”

ঝিলাম মনমরা হয়ে বলে, “তুমি আসলে খুব ভালো লাগতো।” ফোন রেখে দেয় ঝিলাম।

বুধাদিত্য মোবাইল খুলে ঝিলামের ছবি দেখে বসে বসে। ঝিলামের শেষের আওয়াজ বড় কানের মধ্যে বেজে ওঠে, “তুমি আসলে খুব ভালো লাগতো।” ওর দেহের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রতিধ্বনি হয় সুরেলা গলার আওয়াজ।

কিছু পরে সমীর ওকে ফোন করে। সমীরের গলার স্বর বদলে গেছে, বউয়ের চাকরি নিয়ে একটু খুশি ব্যক্ত করল। বুধাদিত্যকে অশেষ ধন্যবাদ জানাল। ঝিলামের মিষ্টি ঠোঁটের হসি, নরম গালের লালিমা, দুটি গভীর চোখের অব্যাক্ত ভাষা বুধাদিত্যকে বড় কাছে টানে। শেষ পর্যন্ত হেরে যায় বুধাদিত্য, হুহু করে ওঠে বুক, ফাঁকা হয়ে যায় সবকিছু। খুব মনে হয় আয়েশার কথা। শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে আয়েশাকে ফোন করে বুধাদিত্য। কিন্তু ফোনের রিং বেজে বেজে থেমে যায়, ওপাশ থেকে কেউ ফোন তোলেনা। বুধাদিত্য একটু ভাবনায় পড়ে, কিছু হলো না তো সেই উচ্ছল তরঙ্গিণীর, বুক আবার যেন হুহু করে ওঠে। ওর কপালে ভাগ্য বিধাতা শুধুমাত্র দেহাত্মবাদী সুখের কথা লিখে গেছে, ওর জন্য ভাগ্য বিধাতা প্রানের আনন্দের কথা লিখে যায়নি। আয়েশার অফিসে ফোন করে জানে যে বেশ কয়েকদিন আয়েশা অফিসে আসছে না, কোন এক কাজে বম্বে গেছে। খুব ইচ্ছে করে নিজের কাউকে ফোন করে কথা বলতে, কিন্তু ওর মনের কথা শোনানোর মতন লোক খুঁজে পায়না।

বিকেলে ফাঁকা বাড়িতে ফিরে মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে অনেকক্ষণ। ঝিলামকে কথা দিয়েছিল যে মদ ছোঁবে না, তাই ড্রিঙ্কস আর করেনা। মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত বুধাদিত্য নিজের মনের কথা বলে ফেলে। কাঁদতে কাঁদতে মাকে বলে, “মা আমি ঝিলামকে ভালোবেসে ফেলেছি মা। আমি কি করবো মা, আমাকে একটু পথ দেখাও। আমার যে তুমি ছাড়া এই পৃথিবীতে কেউ নেই মা।” মঞ্জুষাদেবী কাঁচের আড়াল থেকে বুধাদিত্যের দিকে তাকিয়ে শুধু হাসেন, কিছু বলেন না সেইদিন।

বুধাদিত্য জানতো কোন তারিখে ঝিলাম স্কুল জয়েন করবে তাও চুপ ছিল। সমীর ফোন করে বুধাদিত্যকে জানায় যে ঝিলাম স্কুল জয়েন করবে। সমীর অনুরোধ করে ওদের সাথে যেতে। বুধাদিত্য মজা করে জানায় যে অত সকালে ঘুম থেকেই ওঠে না, ওদের কি করে নিয়ে যাবে। ঝিলাম সমীরের হাত থেকে ফোন নিয়ে বুধাদিত্যকে অনুরোধ করে। ঝিলামের কর্ম জীবনের প্রথম দিন, গত কয়েক দিন ধরে উত্তেজনায় ঝিলামের ঘুম হয় না। সমীর নাছোড়বান্দা, বুধাদিত্যকে সাথে যেতে হবে। বুধাদিত্যের মনে চাপা উত্তেজনা। সমীর ওকে বলে, যেহেতু ঝিলামের স্কুল আর বুধাদিত্যের অফিস একদম কাছাকাছি। সুতরাং ওকে স্কুলে ছেড়ে ও অনায়াসে অফিস যেতে পারবে। বুধাদিত্য ঝিলামের মিষ্টি অনুরোধ প্রত্যাখান করতে পারেনা। জানিয়ে দেয় যে সকালে ওদের বাড়ি পৌঁছে যাবে।
শীতকাল, প্রচন্ড ঠাণ্ডা পড়েছে দিল্লীতে। সকাল বেলা গাড়ি নিয়ে পৌঁছে যায় সমীরদের বাড়ি। দরজা খোলে ঝিলাম, স্কুল যাবার জন্য তৈরি। পা থেকে মাথা পর্যন্ত নিরীক্ষণ করে বুধাদিত্য। সত্যি একদম শিক্ষিকার মতন দেখতে লাগছে। পরনে হালকা গোলাপি তাঁতের শাড়ি, গাড় বাদামি রঙের চওড়া পাড়। গায়ের ওপরে ভারী একটা সোয়েটার। মাথার চুল বেনুনি করা, কপালে লাল টিপ, দুই হাতে পলা বাঁধানো আর একটা ঘড়ি ছাড়া কিছু নেই, ঠোঁট দুটি হাল্কা গোলাপি। খুব মার্জিত সাজ অতীব সুন্দরী শিক্ষিকা। সমীর যাবার জন্য তৈরি। বুধাদিত্য ওদের নিয়ে গাড়ি করে বেরিয়ে পড়ে। সমীর গাড়ির সামনের সিটে উঠতে যায়, ঝিলাম ওকে টেনে ধরে পেছনের সিটে বসিয়ে দেয়। সমীর হাসতে হাসতে পেছনের সিটে গিয়ে বসে। ঝিলাম সারাটা পথ সমীরের হাত ধরে থাকে। আয়নায় সেই দৃশ্য দেখে বুধাদিত্যের মনের খুশি খুশি ভাবটা একটু কেটে যায়। চঞ্চল মনকে শান্ত করে নেয় বুধাদিত্য। ঝিলামকে নামিয়ে দেয় স্কুলের সামনে। সমীর আলতো করে ওর হাত টেনে ধরে। ঝিলাম চোখের ইশারা করে জিজ্ঞেস করে কি করছো? সমীর গাড়ি থেকে নেমে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে কিছু বলে। ঝিলামের গাল লাল হয়ে যায় লজ্জায়। চট করে সমীর ওর গালে একটা ছোটো চুমু খেয়ে নেয়। অনেক দিন পরে একটু যেন আদরের পরশ পায় ঝিলাম, হটাত করে চোখের কোনে জল চলে আসে। সমীর ঝুঁকে পড়ে ওর গালে হাত দিয়ে যেতে বলে। ঝিলাম গেটের ভেতরে না ঢোকা পর্যন্ত সমীর দাঁড়িয়ে থাকে। বুধাদিত্য সবকিছু গাড়ি থেকে বসে বসে দেখে, একবারের জন্য গাড়ি থেকে নামে না।

ঝিলাম ঢুকে যাবার পরে সমীর সামনের সিটে এসে বসে পড়ে। বুধাদিত্য ওকে জিজ্ঞেস করে যে ঝিলামের চাকরিতে সমীর খুশি কিনা। সমীর প্রান খোলা হাসি হেসে বলে ঝিলামের মুখের হাসির ফিরে পাবার জন্য ও খুশি। ক্ষণিকের জন্য বুধাদিত্যের মনে হিংসে হয়, আমি তোর কাছ থেকে ঝিলামকে কেড়ে নেবো একদিন। অফিসে নামিয়ে দেয় সমীরকে।

ঠিক নামার আগে সমীর বুধাদিত্যের হাত ধরে বলে, “তুই অনেক করেছিস আমাদের জন্য। সেই রাতে আমাকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছিস, ঝিলামকে চাকরি দিয়েছিস। তাও তুই আমাদের থেকে দুরে দুরে কেন থাকিস? আমাকে সত্যি কথা বলতো একটু?”

ভাষা হারিয়ে ফেলে বুধাদিত্য, কি উত্তর দেবে? বলবে যে ঝিলামকে ভালোবাসে সেই ভালোবাসা যে শুধু শরীরের নয় শুধুমাত্র আত্মার এক অন্য মাত্রার ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার সংজ্ঞা জানেনা বুধাদিত্য, কেউ বুঝবে না সেই প্রেমের মানে। আর তাই বুধাদিত্য নিজেকে ওদের থেকে দুরে সরিয়ে দিয়েছে। কি বলবে, বুধাদিত্য, ভেবে পায়না উত্তর।

আমতা আমতা করে বলে, “আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে, আমি যাই।” সমীরকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে গেল। বুকের ভেতরে একটা চিনচিন বেদনা শুরু হয়ে যায়। সমীরের হাসি মুখ, ঝিলামের হাসি মুখ, এর মাঝে কি করছে বুধাদিত্য?
 
অষ্টম পর্বঃ প্রজাপতির প্রস্থান।

ঝিলামের স্কুল আর বুধাদিত্যের অফিস একদম কাছাকাছি। লাঞ্চের পরে বিকেলের দিকে ঝিলামের স্কুল ছুটি হয়ে যায় আর ঝিলাম বুধাদিত্যের অফিস পৌঁছে যায়। বুধাদিত্য ঝিলামকে অফিসের নিচে দেখে অবাক, একেবারে আশাতীত দর্শন। সেদিন ঝিলামের পরনে আঁটো গোলাপি রঙের চুড়িদার কামিজ, হাল্কা নীল রঙের সোয়েটার বেশ ফোলা ফোলা। মাথার চুল চুড় করে মাথার ওপরে বাঁধা, তার মধ্যে আবার একটা পেন গোঁজা, ঠিক জাপানি পুতলের মতন দেখতে মনে হয় ঝিলামকে। ঝিলাম অফিসের রিসেপ্সানে বসে ছিল। বুধাদিত্যকে দেখে খুব খুশি, যেন অনেক দিন পরে অতি পুরানো এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে।

একটু কপট অভিমান দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে বুধাদিত্যকে, “চাকরি পাওয়ার পরে এতো ডাকলাম তাও একবারের জন্য বাড়ি এলেনা কেন? আমাদের ওপরে রাগ করে আছো? ভাবো বড় জ্বালায় এই স্বামী স্ত্রী, তাই ওদের থেকে দুরে থাকা ভালো?”

বুধাদিত্য কি উত্তর দেবে ঝিলামকে, অজে সত্যি ঝিলামের থেকে দুরে সরে যেতে চাইছে। যতবার দুরে যায় ততবার ঝিলাম ওকে কাছে ডেকে নেয়। এবারেও ভেবেছিল যে ঝিলামের চাকরির পরে বুধাদিত্য ওদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ কমিয়ে দেবে। কিন্তু চোখের সামনে ঝিলামকে দেখে মাথার মধ্যে সব কিছু গুবলেট হয়ে যায়। হাসতে হাসতে ঝিলামকে বলে যে কাজের চাপের জন্য ওদের সাথে দেখা করতে পারছে না। ঝিলাম ওর কথা বিশ্বাস করে না। ঝিলাম ওকে অনুরোধ করে বাড়িতে ছেড়ে আসতে। বুধাদিত্য মহা ফাঁপরে পড়ে যায়। বুধাদিত্য বুঝাতে চেষ্টা করে যে অফিসে অনেক কাজ আছে। ঝিলাম জেদ ধরে বসে থাকে, বলে যে অফিসের কাজ শেষ করে ওর সাথে বাড়ি যেতে হবে। নিরুপায় বুধাদিত্য, শেষ পর্যন্ত ঝিলামের জেদের কাছে হার মেনে যায়। রিসেপ্সানে বসিয়ে নিজের কেবিনে গিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকে। একটু ভালোলাগা, একটু পূর্বরাগ বুকের ভেতর জেগে ওঠে। কিছু পরে ঝিলামকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। রাস্তায় যেতে যেতে ঝিলাম ওকে স্কুলের গল্প শুনাতে শুরু করে দেয়। নতুন চাকরি, নতুন লোকজন, নতুন পরিবেশ, উচ্ছল তরঙ্গিণীর মতন বয়ে চলেছে ঝিলামের মধুর কণ্ঠস্বর। বুধাদিত্য শুধু মাত্র হুঁ, হ্যাঁ ছাড়া বিশেষ উত্তর দিতে চায় না। ঝিলামকে ওদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে আসে। ঝিলাম অনেকবার বুধাদিত্যকে বাড়ির মধ্যে আসতে বলে কিন্তু বুধাদিত্য কাজের অছিলায় ঝিলামের চোখের সামনে থেকে সরে আসে।

কয়েক দিন পরে স্কুল থেকে আবার ঝিলামের ফোন, “আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে?”

এবারে বুধাদিত্য ওকে মজা করে বলে, “আমি কি তোমার ড্রাইভার?”

ঝিলাম মজা করে বলে, “যদি বলি হ্যাঁ...”

বুধাদিত্য, “সমীরকে বল তোমার জন্য একটা গাড়ি কিনে দেবে।”

ঝিলাম, “নিজের জন্য একটা কিনুক আগে তারপরে দেখা যাবে। আর সে তো আজকাল রাত করে ঘরে ফেরে, আমি আর কিছু বলিনা।”

বুধাদিত্য একটুখানি থমকে যায়, “মানে?”

ঝিলাম শুকনো গলায় বলে, “সমীরের অফিসে নাকি আজকাল অনেক কাজের চাপ তাই দেরি করে ফেরে। আজকাল আবার টুর একটু বেড়ে গেছে, তবে যেদিন যায় সেদিনেই ফিরে আসে। কিছু বললেই বলে, যে আমি চাকরি পেয়ে গেছি, আমি সব কিছু পেয়ে গেছি, এবারে ওর আর কি দরকার। জানো আমার মনটা খুব কাঁদে সমীরের ওই কথা শুনে।”

বুধাদিত্যের বুক ঝিলামের কথা শুনে কেঁদে ওঠে, “আচ্ছা ঠিক আছে, আমি সমীরের সাথে কথা বলবো খানে।”

ঝিলাম, “তুমি আর কত করবে আমাদের জন্য, ছাড়ো আমার ভাগ্য যা আছে তাই নিয়ে থাকি। হ্যাঁ এবারে বলো আমাকে ছেড়ে আসবে বাড়িতে না আমি অটো করে চলে যাবো।”

বুধাদিত্য, “তুমি প্লিস অটো করে চলে যাও, আমি দেখি কয়েক দিনের মধ্যে একটা ড্রাইভার যোগাড় করে নেবো।”

ওর কথা শুনে হেসে ফেলে ঝিলাম, “আমার জন্য তুমি ড্রাইভার রাখবে? তুমিই তো আমার ড্রাইভার, এক বান্ধবীর জন্য এইটুকু করতে পারবে না?”

বুধাদিত্য, “বাঃ রে তুমি আমাকে জ্বালাতন করবে রোজদিন, গাড়িতে যেতে চাইবে, অফিসে কাজ থাকে তাই একটা ড্রাইভার রাখা ভালো। যেদিন আমার কাজ থাকবে না সেদিন আমি পৌঁছে দেবো না হলে ড্রাইভার তোমাকে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আসবে।”

ঝিলাম হটাত ফিসফিস করে বলে ফেলে, “আমার ড্রাইভার চাইনা, তুমি পাশে থাকলে বড় ভালো লাগে তাই বললাম।” বলেই ঝিলাম ফোন কেটে দেয়। বুধাদিত্য হটাত ওর গলায় ওই কথা শুনে স্থম্ভিত হয়ে যায়। এটা কি ভাললাগার পূর্বাভাস না শুধুমাত্র বন্ধুপ্রীতি?

সেদিনের পরে ঝিলামের ফোন আর আসেনা। বুধাদিত্যের হৃদয় ছটফট করে ঝিলামের সাথে দেখা করার জন্য, কিন্তু আগ বাড়িয়ে যেতে বড় বাধা লাগে। ঝিলামের কথা মনে পড়লেই রোজরাতে মোবাইল খুলে একবার ঝিলামের সেই অভিমান করা মুখের ছবি দেখে আর নিজের মনের ভালোবাসাকে সংযত করে রাখে। এইভাবে বেশ কয়েকদিন কেটে যায়।

এর মাঝে একদিন সকাল বেলায় আয়েশার ফোন আসে। বুধাদিত্য সবে অফিস যাবার জন্য স্নান করে বেরিয়েছে। এবারে বেশ জমে ঠাণ্ডা পড়েছে। জানালার বাইরে কুয়াশায় ঢাকা।

আয়েশা, “এই তুমি কি করছো আজকে?”

আয়েশার গলা একটু মনমরা বলে মনে হয়। অনেকদিন পরে আয়েশার গলা শুনে অবাক হয়ে যায় বুধাদিত্য, জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার, কোথায় হাওয়া হয়ে গিয়েছিলে তুমি?”

আয়েশার গলা একটুখানি শুকনো, “তুমি কি আজ ফ্রি আছো?”

বুধাদিত্য, “কেন বলতো? এমনিতে আমার আজকে অনেক কাজ আছে তবে সেটা তোমার ইচ্ছের ওপরে নির্ভর করছে।”

আয়েশা কাতর কণ্ঠে বলে, “তোমার সাথে একবার দেখা করতে চাই বুধাদিত্য। প্লিস আজকে না কোরো না।”

বুধাদিত্য ভেবে পায়না হটাত আয়েশার একি হলো, “ওকে, চলে এসো, আমি তাহলে আজ আর অফিস যাচ্ছি না।”

বুধাদিত্য সাতপাঁচ ভাবতে থাকে। রোহিতের সাথে কি কিছু মনোমালিন্য ঘটলো আয়েশার? না আবার কোন অফিসের ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছে। বেশ কয়েক মাস কেটে গেছে এর মাঝে। মদ, মেয়ে সব ছেড়ে এক নতুন বুধাদিত্য, তাও আয়েশা ওকে খুব টানে। আগে আয়েশা যখনি আসতো, নিজে রান্না করে যেতো। বুধাদিত্যের প্রতি ওর একটা অন্য টান আছে।

আয়েশা যথা সময়ে বুধাদিত্যের দরজার কলিং বেল বাজায়। দরজা খুলে আয়েশাকে সাদর আহবান জানায়। আয়েশা যেন আজ একটু বেশি নিজেকে সাজিয়ে এনেছে। এতো সকাল বেলা, বেশ সুন্দর পরিপাটি সেজে এসেছে। সাদা আঁটো জিন্স, গাড় নীল রঙের লম্বা জ্যাকেট, কানে বড় দুল, ঠোঁটে হাল্কা গোলাপি রঙ, চোখের কোনে আবার কাজল পরেছে। কাঁধের ব্যাগ দেখে মনে হলো যে অফিসের জন্য বের হয়নি, শুধুমাত্র ওর সাথে দেখা করার জন্যই এসেছে। আয়েশার চোখে মুখে এক অদ্ভুত খুশির আলো ছড়িয়ে।

আয়েশা দরজা বন্ধ করে ওকে ঘরের মধ্যে ঠেলে দিয়ে বলে, “কেমন আছো? আমার কথা মনে পড়তো তোমার?”

বুধাদিত্য ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে আয়েশাকে, “হ্যাঁ মনে পড়েছিল, তাই তো ফোন করেছিলাম কতবার। কিন্তু ফোন রিং হয়ে যেত কেউ উঠাতো না। এতদিন কোথায় ছিলে?”

আয়েশা গায়ের জ্যাকেট খুলে সোফার ওপরে বসে বলে, “হ্যাঁ ফোনটা খারাপ হয়ে গেছিল, এই কদিনে কারুর ফোন ধরতে পারিনি।”

বুধাদিত্য ওর পাশে বসে ওর কাঁধের ওপরে হাত রাখে, আয়েশা ওর দিকে সরে এসে ঘন হয়ে বুকের কাছে বসে বুকের ওপরে আদর করে দেয়। আয়েশার গা থেকে খুব মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসে ওর নাকে, আয়েশার মাথার ওপরে ঠোঁট চেপে প্রগাড় করে নেয় আলিঙ্গন। আয়েশা নিজেকে ছেড়ে দেয় বুধাদিত্যের পেশিবহুল বাহুবন্ধনের মাঝে।

বুধাদিত্য ওকে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি বলতো, কোথায় গেছিলে আর কেন এতদিনে একবার যোগাযোগ করোনি।”

আয়েশা বুধাদিত্যের কথার উত্তর দেয় না, পালটে জিজ্ঞেস করে, “কি আছে রান্না করার মতন, দেখি আগে তোমার জন্য রান্না করে ফেলি তারপরে দুজনে মিলে অনেক গল্প করবো, তোমার সব গল্প আমি শুনবো আজকে।”

আয়েশা নিজেকে বুধাদিত্যের আলিঙ্গন থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে পড়ে সোফা থেকে। হাঁটার তালে ভারী পাছা বুধাদিত্যের চোখের সামনে দুলে ওঠে। বুধাদিত্যের তলপেটে চিনচিন করে ওঠে, লিঙ্গ একটু শক্ত হয়ে যায়, আয়েশার পাছার দুলুনি দেখে। রান্নাঘরে ঢোকার আগে আয়েশা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে যে বুধাদিত্যের নজর ওর সুগোল নিটোল পাছার ওপরে নিবদ্ধ। খিলখিল করে হেসে ফেলে আয়েশা, সেই মিষ্টি হাসির সুর বন্ধ ঘরের দেয়ালে প্রতিধ্বনি হয়।

বুধাদিত্য আয়েশাকে জানায়, “আমি মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি, আয়েশা।”

আয়েশা ওই কথা শুনে অবাক হয়ে ঘুরে দাঁড়ায়, “কি বলছো? তুমি ড্রিঙ্ক করা ছেড়ে দিয়েছো? হতেই পারে না।”

বুধাদিত্য কাষ্ঠ হাসি হেসে বলে, “বিশ্বাস না হলে ফ্রিজ খুলে দেখতে পারো।”

আয়েশা নিজের কান বিশ্বাস করে না, ফ্রিজ খুলে দেখে যে শুধু খাবার দাবার ছাড়া, কোন মদের বোতল ফ্রিজে নেই। ফ্রিজের দরজা বন্ধ করে বুধাদিত্যের দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। এতদিন ভাবতো, যে বুধাদিত্য শুধু ওর কথা শোনে, কিন্তু ওর জীবনে অন্য কেউ এসেছে জেনে চোখের কোনায় নিজের অজান্তে একটুখানি ছলকে ওঠে খুশির আর বেদনা মাখা অশ্রু।

আয়েশা আবার বুধাদিত্যের কাছে এগিয়ে আসে, ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে ওর মুখখানি আঁজলা করে তুলে ধরে। বুধাদিত্যের মন হুহু করে ওঠে আয়েশার স্নেহ ভালোবাসা মাখানো পরশে। আয়েশা ওকে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে শেষ পর্যন্ত কাউকে পেয়েছো, বলো? আমি খুব খুশি। কে সে আমার সাথে দেখা করাবে না, তাকে?”

বুধাদিত্য কি বলবে, বলবে যে মনে মনে ঝিলামকে ভালোবেসে ফেলেছে আর তাই ওর কথা মেনে মদ, নারীসঙ্গ ছেড়ে দিয়েছে। বুধাদিত্য মুখে হাসি টেনে এনে বলে, “না গো ডাক্তার দেখিয়েছিলাম, বোকা... ড্রিঙ্ক করতে করতে লিভারটা বড় হয়ে গেছে তাই মদ ছাড়তে হলো।”

আয়েশা ম্লান হেসে বলে, “তোমার চোখ বলছে তুমি খুব বড় ব্যাথা লুকিয়ে আছো, ডাক্তারের কথা সব মিথ্যে। সত্যি কথা বলো না আমাকে, কে এসেছে তোমার জীবনে, আমি তোমাকে কিছু বলবো না।”

বুধাদিত্য চেপে যায় ঝিলামের সাথে ওর অপ্রকাশিত সম্পর্কের কথা, “সত্যি তোমার প্রমিস, আয়েশা, এই বুক বড় ফাঁকা।”

আয়েশা ওকে জড়িয়ে ধরে দুইহাতে, ওর মাথা নিজের বুকের ওপরে চেপে বলে, “আমি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করবো যাতে খুব তাড়াতাড়ি তুমি মনের মানুষ খুঁজে পাও।”

বুধাদিত্য ওর বুকের মাঝে মাথা রেখে দুহাতে আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে থাকে। অনেকদিন পরে ওর ভাললাগার পাত্রীকে বুকের কাছে পেয়েছে। মনের মধ্যে একটা চিনচিন ব্যাথা থাকা সত্তেও আয়েশাকে পেয়ে সেই বেদনা একটুখানি স্তিমিত হয়ে গেছে।

আয়েশা কিছু পরে বলে, “এই ছাড়ো আমাকে, রান্না সেরে ফেলি, তারপরে দুজনে মিলে শুধু গল্প করবো।”

ফ্রিজে কিছু কাঁচা চিকেন রাখা ছিল, সেটা রান্না করে ফেলে আয়েশা। রান্না করতে করতে বুধাদিত্যের সাথে গল্প করে এইকদিনে কোথায় ছিল। রোহিতের একমাস লম্বা একটা অফিসিয়াল টুর ছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তাই তাঁর সাথে ইউরোপ গিয়েছিল। রোম, প্যারিস, মিলান, হেগ, বার্লিন অনেক জায়গা ঘুরেছে। নানান জায়গা ঘুরে ওর খুব ভালো লেগেছে, কোথায় কি কি দেখেছে সেই সব বর্ণনা। বুধাদিত্য উচ্ছল সেই প্রজাপতির মধুর ধ্বনি শোনে মন দিয়ে। একবার মনে হয় পেছন থেকে আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে ওর ওই মরালী গর্দানে ঠোঁট চেপে ধরে। দুই ভারী পাছার মাঝে নিজের উত্থিত লিঙ্গ চেপে, পিষে দেয় আয়েশার নরম দেহ।

আয়েশা ওর চোখের ভাষা পড়ে ফেলে, বাঁকা হেসে বলে, “পরে হবে ডারলিং একটু সবুর করো। ওইভাবে দেখতে থাকলে আমার দেহ জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে।”

বুধাদিত্য হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে, “উম্মম্ম... আমি যে আর থাকতে পারছি না, বেবি... তোমাকে আমার এখুনি চাই।”

আয়েশা খিলখিল করে হেসে ফেলে, বলে, “যাও আমার পেছনে এইরকম ভাবে দাঁড়িয়ে থেকো না। একটু হিটার চালিয়ে দাও বড় ঠাণ্ডা লাগছে।”

বুধাদিত্য আয়েশার পেছনে দাঁড়িয়ে নিজের শরীর ওর পেছনে চেপে ধরে। পাতলা কোমরের দুপাশ থেকে হাত নিয়ে গিয়ে গোল নরম তুলতুলে পেট চেপে ধরে এক হাতের থাবায়, অন্য হাত নিয়ে যায় ওর পাঁজরের ওপরে, ঠিক উন্নত স্তনের নিচে চেপে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে আয়েশাকে। আয়েশা বুধাদিত্যের প্রেমঘন বাহুর মাঝে জড়িয়ে পড়ে কঁকিয়ে ওঠে। নিটোল পাছার খাঁজে উত্থিত লিঙ্গের কঠিন পরশ অনুভব করে। আয়েশা ওর হাত ধরে নিজের দেহের ওপরে বুধাদিত্যের বাহুবন্ধন আরও প্রগাড় করে নেয়। মাথা বেঁকিয়ে বুধাদিত্যের ঠোঁটে ঠোঁট চেপে দেয়। উষ্ণ শ্বাসে ভরিয়ে দেয় পরস্পরের মুখ।

চুম্বন শেষে আয়েশা বুধাদিত্যের হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দেয়। রান্নাঘর থেকে একটা থালা নিয়ে আসে, বলে, “আজ আমি তোমাকে খাইয়ে দেবো, তুমি আমাকে কোলে নিয়ে বসে থেকো। তুমি আমাকে একটু জোরে জড়িয়ে ধরবে, প্লিস?”

আয়েশা হাতে থালা নিয়ে বুধাদিত্যের কোলের ওপরে বসে পড়ে। বুধাদিত্য দুহাতে আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে থাকে। আয়েশা ওকে খাইয়ে দেয় আর মিটিমিটি হাসে। দুই প্রেমঘন নরনারীর মাঝে ভালোবাসার আগুন জ্বলে ওঠে। নরম পাছার চাপের নিচে বুধাদিত্যের লিঙ্গ ধিরেধিরে নিজের কঠিন অবয়ব ধারন করে। বারেবারে নিচ থেকে ঠেলে দেয় নরম আয়েশাকে, আয়েশা ইচ্ছে করেই বুধাদিত্যকে উত্যক্ত করার জন্য পাছা দিয়ে চেপে ধরে কঠিন লিঙ্গ। খাওয়া চলাকালীন চলে আদরের খেলা, মিষ্টি মধুর আহা, উহু ধ্বনি, মাঝে মাঝে একটু চুম্বন, নিজে খায় আর বুধাদিত্যকে খাইয়ে দেয়। মাঝে মাঝে বুধাদিত্যের মুখের ভেতর থেকে মাংসের টুকরো কামড়ে ধরে, দুটি প্রেমাসিক্ত নরনারী কামনার খেলায় মেতে ওঠে খেতে খেতে।

খাওয়া শেষে হাত ধুয়ে, আয়েশা ঝাঁপিয়ে পড়ে বুধাদিত্যের কোলে। বুধাদিত্য আয়েশার হাবভাব ঠিক ভাবে ধরতে পারেনা। উদ্দাম আয়েশা আজ যেন আজ এক সুন্দরী প্রজাপতি, ওকে আদরে, ভালবাসায় ভরিয়ে দেবার জন্য তৎপর। প্রাণপণে দুহাতে বুধাদিত্যকে জড়িয়ে ধরে, প্রশস্ত কঠিন বুকের ওপরে, নরম স্তন চেপে ফিসফিস করে প্রেমঘন গলায় অনুরোধ করে ওকে ভালোবাসার জন্য। আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে ওর ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। চুম্বন গভীর করে তোলে আয়েশা, বুধাদিত্যের পরনের গেঞ্জি খুলে নগ্ন বুকের ত্বকের ওপরে নরম আঙুল দিয়ে আঁচড় কাটে। বুধাদিত্য ওর পেছনে হাত নিয়ে গিয়ে নরম পাছা চেপে ধরে। আয়েশাকে ঠেলে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। আয়েশা বুধাদিত্যের ঠোঁট ছেড়ে ওর গলায়, কাঁধে, বুলের ওপরে চুম্বনের ঝড় বইয়ে দেয়। ছোটো ছোটো চুম্বনের সাথে সাথে, জিবের ডগা বের করে লালার দাগ এঁকে দেয় বুধাদিত্যের বুকে। বুধাদিত্য আয়েশার কোমরে হাত নিয়ে গিয়ে গায়ের জামা উপর দিকে টেনে তোলে। আয়েশা হাত উঁচু করে বুধাদিত্যকে সাহায্য করে জামা খুলে দিতে। আয়েশার পরনে ছোটো লাল ব্রা বেরিয়ে পড়ে জামার ভেতর থেকে। পীনোন্নত স্তন জোড়া ছোটো ব্রার বাঁধুনির মাঝে পরস্পরের সাথে মারামারি করে। আয়েশা বুধাদিত্যের মাথার চুল আঁকড়ে ধরে বুকের খাঁজের ওপরে চেপে ধরে। ঘন মৃদু কন্ঠে ওর স্তনের নরম মাংসে চুম্বনে চুষে ভরিয়ে দিতে অনুরোধ করে বারেবারে। বুধাদিত্য ঠোঁট নামিয়ে আনে আয়েশার কাঁধের ওপরে, গলার ওপরে চুমু খেতে থাকে, ধিরে ধিরে ঠোঁট নিচে নামে, বুকের ওপরে জিবের ডগা দিয়ে লালার দাগ কেটে দেয়। তপ্ত ত্বকের ওপরে জলের দাগ পড়ে যেন ছ্যাঁক করে ওঠে। কামনার আগুনে দুই জনের শরীর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আয়েশার উরু মাঝে বুধাদিত্যের কঠিন লিঙ্গ স্পর্শ করে। জিন্সের উপর দিয়েই চেপে ধরে যৌনাঙ্গের সাথে যৌনাঙ্গ। কঠিন অনুভুতি পেয়ে আয়েশা পাগল হয়ে যায়। ঠোঁট অল্প ফাঁক করে শীৎকার করে প্রেমে পাগল আয়েশা। বুধাদিত্যের ঠোঁট নেমে যায় ব্রার ওপরে, কামড়ে, চুষে পিষে একাকার করে দেয় আয়েশার স্তন জোড়া। হাত দুটি একবার পাছার ওপরে, একবার পিঠের ওপরে ইতরের মতন বিচরন করে।

আয়েশা বুধাদিত্যের মাথা স্তনের ওপরে চেপে ধরে বলে, “হানি, আই মিস ইউ। আজ আমাকে খুব করে ভালোবাসো।”

আয়েশার ধরা গলার আওয়াজে বুধাদিত্য ওর মুখের দিকে মুখ তুলে তাকায়, “কি হয়েছে তোমার?”

চোখ দুটি ছলছল, চোখের পাতা ভিজে গেছে। ঠোঁটে হাসি টেনে বলে, “আমি চলে যাচ্ছি, দিল্লী ছেড়ে, তোমাকে ছেড়ে।”

বুধাদিত্যের মাথা ঘুরে যায়, নাকের ডগা লাল হয়ে আসে, চোয়াল শক্ত করে চাপা গলায় আয়েশাকে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় যাচ্ছো?”

আয়েশা হাসিহাসি মুখে চোখে জল নিয়ে বলে, “অনেক দুরে, সাত সমুদ্র তের নদী পার করে। রোহিতের লন্ডনে চাকরি হয়েছে, ওর সাথে আমাকে যেতে হবে, বুধাদিত্য। আমার ভিসা হয়ে গেছে, পরের মাসে আমি দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছি।” বুধাদিত্য এক পা পেছনে সরে যায়, কিন্তু আয়েশার কোমর থেকে হাত সরায় না, আলতো করে ধরে থাকে আয়েশার কোমর। আয়েশা ওর গলা জড়িয়ে বলে, “আরও একটা খবর আছে,” একটু থেমে যায় আয়েশা, “আমি প্রেগ্ন্যান্ট। গত মাসে, রোহিতের সাথে, বার্লিনে। ছয় সপ্তাহ হলো আমার প্রেগ্ন্যান্সির।”

বুধাদিত্য আয়েশার কোমর ছেড়ে দেয়, ওর বুকের মাঝে হুহু করে ওঠে এক আর্তনাদ। ব্যাথিত বুধাদিত্য, কাঁপা গলায় আয়েশাকে বলে, “আমি জানি আমি বড় পাপী, আমি নিচ, আমি ইতর, ব্যাভিচারি। আমি অন্যের বউয়ের সাথে শুই, অন্যের বউয়ের সাথে প্রেম করি। সেই পর্যন্ত ঠিক ছিল আয়েশা, কিন্তু কারুর মায়ের গায়ে হাত দিতে পারিনা, কারুর মাকে আমি কলুষিত করতে পারবো না, আয়েশা।” ধুপ করে সোফার ওপরে বসে পড়ে বুধাদিত্য, দু’চোখে শ্রাবনের অঝোর বারিধারা। মাথার চুল আঁকড়ে, নিজেকে অভিশাপ দিতে থাকে, “আমার মতন পাপী, আমার মতন দুঃখী যেন এই পৃথিবীতে আর কেউ না জন্মায়, সেই প্রার্থনা করো। আমি মাকে হারিয়েছি ছোটো বেলায়, কারুর মাকে আমি কলুষিত করতে পারবো না আয়েশা। তুমি চলে যাও।” বুক ফাটিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে বুধাদিত্য, “আয়েশা তুমি চলে যাও।”

আয়েশা ওর সামনে দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেলে, কিছু বলার নেই আর বুধাদিত্যকে। বড় বেদনা এই বুকে সামনে বসা ছেলেটার জন্য, যতদিন শরীরে খেলা হিসাবে ছিল ততদিন ঠিক ছিল, কিন্তু সব কিছু জেনে বুঝে প্রেমে পড়েছিল বুধাদিত্য, ঝুঁকে গেছিল আয়েশাও।

আয়েশা ওর কপালে ছোটো চুমু খেয়ে বলে, দুই কাজল কালো চোখে জল, চোখের পাতা ভারী, ঠোঁট দুটি তিরতির করে কেঁপে ওঠে, “প্রথম যেদিন তোমার কোলে এসেছিলাম, সেদিন আমাকে একটা গোলাপ দিয়েছিলে সেটা শুকিয়ে গেছে। আমাদের ভালোবাসা বড় মেকি, বড় নিষ্ঠুর। আমি নিজেই জানিনা আমি কাকে বেশি ভালোবাসি, রোহিত না তুমি। শেষ পর্যন্ত আমি ঠিক করলাম যে আমি রোহিতের সাথে চলে যাবো। আমি চললাম বুধাদিত্য, আমাকে আর খুঁজতে চেষ্টা কোরো না। জানি পৃথিবীটা অনেক ছোটো, হয়তো কোন এক মোড়ে আবার দেখা হবে কিন্তু দয়া করে তুমি আমাকে আর খুঁজতে এসো না।”

জামা কাপড় পরে, চোখের জল মুছে ফেলে আয়েশা। আর দাঁড়ায় না, দরজা খুলে বেরিয়ে যায় চুপ করে। বুধাদিত্য সোফার ওপরে পাথরের মূর্তির মতন বসে থাকে। দরজা খোলা, ঠাণ্ডা বাতাস ঢুকে পড়ে ঘরের মধ্যে, কিন্তু বুকের আগুন নেভাতে অক্ষম সেই ঠাণ্ডা বাতাস।
 
নবম পর্বঃ প্রবাহিণীর পায়ের ছাপ।

“কি হয়েছে তোমার? ওইরকম মাথা নিচু করে বসে আছো কেন? আর একি, তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে যে মদ খাবে না, আবার খাচ্ছো?” একটা সুরেলা ধমকে চেতনা ভঙ্গ হয় বুধাদিত্যের। দরজা খোলা ছিল, হাতে বোতল নিয়ে সোফায় বসে ছিল বুধাদিত্য। বোতলের অর্ধেক গলায় ঢালা হয়ে গেছে। কখন সেই দরজা দিয়ে ঝিলাম এসে ঢুকেছে তার খেয়াল নেই। চোখ মুখ লাল, কঠোর শূন্য চোখে ঝিলামের দিকে তাকিয়ে থাকে।

এই দরজা দিয়েই বেশ কিছু আগে আয়েশা বেরিয়ে গেছে, চিরতরে চলে গেছে, কোন দিন ফিরে আসবেনা। যদিও জানতো বুধাদিত্য যে আয়েশা কোনদিন ওর হতে পারবেনা তাও এক নেশার মতন আয়েশার পেছনে ঘুরেছে। আয়েশা চলে যাবার পরে, জ্যাকেট গলিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। ভুলে যায় ঝিলামকে দেওয়া প্রতিজ্ঞার কথা। নিচে নেমে, দোকান থেকে হুইস্কির বোতল কিনে আনে। বাড়ি ঢোকে কিন্তু দরজা বন্ধ করতে ভুলে যায়। সোফার ওপরে বসে ঢক ঢক করে অর্ধেক বোতল খালি করে দেয়। মাথার মধ্যে সবকিছু গুবলেট হয়ে যায়। নিজের জীবন আর মিস্টার সুবির গুহর জীবন যেন এক পথের পথিক। ওর বাবা নারীসঙ্গে মত্ত ছিলেন, বুধাদিত্য কিছুদিন আগেও নারীসঙ্গে মত্ত ছিল। তফাত কোথায় মিস্টার সুবির গুহ আর বুধাদিত্য গুহর মধ্যে?

ঝিলাম দরজা বন্ধ করে বুধাদিত্যের দিকে এগিয়ে আসে। বুধাদিত্য ওকে দেখে কিছু বলতে পারেনা। চুপ করে বসে বাকি বোতল শেষ করার জন্য ঠোঁটের কাছে নিয়ে আসে। ঝিলাম দৌড়ে গিয়ে হাত ধরে ফেলে। জোর গলায় ধমক দেয় বুধাদিত্যকে, “কি হয়েছে তোমার?” বুধাদিত্য হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে, ঝিলাম ওর হাত থেকে বোতল কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। কাঁচের বোতল দ্বিতীয় বার মেঝের ওপরে পড়ে ভেঙে যায়। ঝিলাম ওর পাশে বসে বুধাদিত্যকে আবার জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে?” বুদ্ধিমতী ঝিলামের বুঝতে দেরি হয় না যে বুধাদিত্যের ভালোবাসা ওকে ছেড়ে চলে গেছে। ঝিলামের ওর হাতের ওপরে হাত রেখে প্রিয় বান্ধবীর মতন হেসে বলে, “কি হয়েছে, গার্ল ফ্রেন্ড ছেড়ে চলে গেছে তাই এত দুঃখ? যাঃ বাবা, আমি তো ভাবতাম এই সব কান্নাকাটি শুধু কলেজের ছেলে মেয়েরা করে। এত বুড়োধাড়ির চোখে জল আসবে ভাবতেই পারিনি।”

ঝিলামের উচ্ছল আওয়াজে মন কেমন করে ওঠে বুধাদিত্যের, এতক্ষণ চুপ করে থাকা বুধাদিত্য, হাতের ওপরে ঝিলামের হাতের পরশ পেয়ে যেন একটু শক্তি পায় মনের মধ্যে। ওর মিষ্টি হসিহাসি মুখ আর তরতাজা আওয়াজে বুধাদিত্যের মনের বেদনাভাব কেটে যায়। আয়েশার প্রস্থানের সাথে ঝিলামের আগমনের যেন একটা সুপ্ত যোগসূত্র আছে। ঝিলামের টান যখন বুকের মাঝে শেষ রেশ টানে তখন আয়েশার আগমন হয় আর ঠিক আয়েশা চলে যাবার পরেই যেন ঝিলামের প্রত্যাবর্তন হয় প্রতিবার। ঝাপসা চোখের সামনে ঝিলামের মিষ্টি মুখাবয়ব দেখে বুক ফাঁকা এক হাসি দেয়। তারপরে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ঝিলামকে বলে, “আমি আজ একটু মুক্ত।”

ঝিলাম ওর হাত ছেড়ে হেসে বলে, “হ্যাঁ তাতো দেখতেই পাচ্ছি। কে গেছে বললে না তো? ঠিক আছে বলতে হবে না। সারাদিন কোথায় ছিলে? এতবার ফোন করলাম, ফোন উঠালে না?”

বুধাদিত্যের খেয়াল পড়ল যে মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখা ছিল এতক্ষণ। হেসে বলে, “ছাড়ো ওসব কথা। আমি অনেক ভুল করে ফেলেছি, তার খেসারত গুনছি এখন। যাই হোক আমার কথা নাই শুনলে। কোন খবর নেই তোমার, হটাত এখানে কি মনে করে?”

ঝিলাম, “বাঃ রে, তুমি না হয় নাই বা গেলে আমাদের বাড়িতে, তাই বলে কি আমি কি এখানে আসতে পারিনা?”

বুধাদিত্য একটু লজ্জায় পড়ে যায় ঝিলামের কথা শুনে, “আরে না না, তোমাদের জন্য আমার বাড়ির দরজা খোলা সময়ে। তা শালা কুত্তাটাকে দেখছি না যে।”

ঝিলাম, “বম্বে গেছে অফিসের কাজে, রাতে বাড়ি ফিরবে। আমি ভাবলাম একটু তোমার সাথে দেখা করে আসি। খবর নিতে হয় সেটা তো ভুলেই গেছো। অফিসে গেছিলাম, শুনলাম তুমি আসোনি। মোবাইলে ফোন করলাম কতবার, কেউ উঠালো না, আমি একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম তাই চলে এলাম।”

বুধাদিত্য, “ভালো করেছো চলে এসেছো।”

ঝিলাম, “ঠাণ্ডাটা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে।” বলে গায়ের সোয়েটারটা আরও জড়িয়ে নিয়ে উঠে গেল রান্নাঘরের দিকে, রান্নাঘরের দরজা থেকে ওর দিকে জিজ্ঞেস করে “কিছু রান্না করা আছে? না সারাদিনে কিছু খাওয়া হয়নি।”

বুধাদিত্য, “না দুপুরে খাওয়া হয়েছে, তোমাকে অত কষ্ট দেবো না প্রথম দিনেই।”

ঝিলাম, “ধুত এতে আবার কষ্ট কি।” তারপরে বেশ খুশির হাসি হেসে বলে “যাই হোক, রাতে ওকে আনতে যাবো এয়ারপোর্ট থেকে, বেশ একটা সারপ্রাইস দেওয়া হবে ওকে।”

সেই হাসি দেখে বুধাদিত্য মনে মনে ভাবে, এই স্বামী স্ত্রী ওকে কলুর বলদ পেয়েছে। যাক ঝিলামের সান্নিধ্য, কাছে থাকা, ওর মিষ্টি হাসি, চোখের ভাষা এই যথেষ্ট ওর জন্য। বুধাদিত্য হেসে বলে, “বাপরে, প্রেম উথলে পড়ছে মনে হচ্ছে। একটা কথা জিজ্ঞেস করবো, যদি কিছু মনে না করো।”

ঝিলাম হাসতে হাসতে বলে, “হ্যাঁ জিজ্ঞেস করে ফেল।”

বুধাদিত্য, “সমীরের সাথে সব ঠিকঠাক চলছে?”

ঝিলাম ভুরু কুঁচকে বুধাদিত্যের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “হটাত এই কথা কেন জিজ্ঞেস করলে?”

বুধাদিত্য হেসে কথা ঘুরিয়ে বলল, “না মানে, সমীরের মাথার কোন ঠিক নেই তাই বললাম।” বুঝতে দিলোনা যে সমীরের সাথে ওর কথা হয়েছে আর সেদিনের ঝগড়ার কথা বুধাদিত্য সব জানে।

ঝিলামের গলায় বেশ খুশির সুর, “হ্যাঁ আজকাল ভালোই আছি। সমীর ইদানীং অনেক বদলে গেছে। বেশ খুশি খুশি মনে হয়। তবে অফিসের কাজ বেড়ে গেছে ওর, আজকাল বেশ রাত করে বাড়ি ফেরে।” ফ্রিজ খুলে ওকে বলে, “তোমার ফ্রিজে কিছু নেই তো। যাও কিছু কাঁচা বাজার করে নিয়ে এসো, আমি দেখি কিছু রান্না করে ফেলি। ডাল, তেল নুন কোথায়? সব আছে না আমাকে তোমার সাথে যেতে হবে?”

এ যে দেখি একদিনেই গৃহিণী হয়ে গেল। বুধাদিত্য ওকে বারন করে, “তোমার মাথা খারাপ হয়েছে? প্রথম বার এসেছ আর এসেই রান্না ঘরে? যা বাবা, একটু বসো আমি কফি বানাই।”

ঝিলাম খিলখিল করে হেসে বলে, “আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না আমাকে। অনেক হয়েছে, তুমি যাও কিছু নিয়ে এসো আমি চা বানিয়ে রাখছি।”

অগত্যা বুধাদিত্যকে বাজার বের হতে হয়। এমনিতে সকালে কাজের লোক রান্না করে যায়, না থাকলে বাইরে খেয়ে নেয়, মাঝে মাঝে নিজের হাত পুড়িয়ে রান্না করে অবশ্য। কিন্তু ঝিলামকে দেখে উৎফুল্ল মনে বাজারে চলে যায়। কিছু পরে কাঁচা বাজার করে ফিরে আসে। বাড়ি ঢুকে দেখে, ঝিলাম কফি বানিয়ে সোফার ওপরে বসে ওর অপেক্ষা করছে।

বুধাদিত্য, “কি হলো চুপ করে বসে কেন? টিভি চালাতে পারতে তো।”

ঝিলাম ওর হাত থেকে বাজারের প্লাস্টিকগুলি নিয়ে বলে, “বাড়ির মালিক বাড়ি নেই আর আমি একা একা বসে কফি খাবো নাকি? নাও খেয়ে নাও, দেখি কি এনেছো? কিছু কাটাকাটি করতে পার? একটু আলু না হয় কেটে দাও, পটল দিয়ে একটা ঝোল আর ডাল করে রেখে যাই।”

বুধাদিত্য চুপ করে সোফার ওপরে বসে দেখে। ঝিলামের উচ্ছল রুপ যৌবন দেখে বুকের ভেতর বেশ একটা ভালোলাগায় ভরে যায়, ওর সান্নিধ্য বড় মিঠে। আলু, ছুরি দিয়ে গেল ঝিলাম। হাত মুখ ধুয়ে, গায়ের সোয়েটার খুলে রান্না ঘরে ঢুকে পড়ল ঝিলাম। আলু কাটা হয়ে গেলে আলু নিয়ে চলে যায়। শীতকালে সন্ধ্যে অনেক তাড়াতাড়ি নেমে আসে। সাতটার মধ্যে যেন চারদিকে ঘন অন্ধকারে ডুবে যায়। দিল্লী তখন যেন জেগে ওঠে। বুধাদিত্য চুপ করে বসার ঘরে বসে শুধু ঝিলামের দিকে তাকিয়ে থাকে। এক উচ্ছল প্রবাহিণী ওর ঘরের মধ্যে নেচে বেড়াচ্ছে। নীল রঙের শাড়ি, নীল রঙের ব্লাউস, আঁচল কোমরে গুঁজে নিয়েছে, বেনুনি খুলে মাথার পেছনে একটা হাত খোঁপা করে বাঁধা। পেছন থেকে ঠিক একটা বালির ঘড়ির মতন দেহ গঠন। ঝিলামের যৌবনের ডালি ভরা আকর্ষণীয় রুপসুধা আকণ্ঠ পান করে চুপিচুপি। ঝিলামের সেদিকে খেয়াল নেই, নিজের মনের মতন রান্নায় মশগুল। স্বামীর বন্ধুর চেয়ে বুধাদিত্য যেন ওর বেশি কাছের বন্ধু। গুনগুন গানে রান্না সেরে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে দেখে যে বুধাদিত্য ওর দিকে একভাবে তাকিয়ে।

মিচকি হেসে বুধাদিত্যকে জিজ্ঞেস করে, “কি হলো কি দেখছো?”

বুধাদিত্য একবার বলতে চায় যে তোমার রুপে পাগল হয়ে তোমাকে দেখছি, কিন্তু ম্লান হেসে বলে, “রান্না শেষ?”
মাথা নাড়ায় ঝিলাম চোখে একটু বিরহের বিষণ্ণতা, “হ্যাঁ শেষ। সবে সাড়ে আটটা বাজে, অনেক সময় বাকি। সেই রাত এগারোটায় ফ্লাইট ল্যান্ড করবে। কি করা যায় বলতো আমার আজকে আর তর সইছে না।”

বুধাদিত্য হেসে ফেলে, “প্রেম যে উথলে পড়ছে। তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে আর বাড়িতে মন টিঁকছে না। বেড়াতে যেতে চাও?”

ঝিলাম, “কোথায় যাবো এই রাতে?”

বুধাদিত্য, “গাড়িতে এমনি এমনি। সময় মতন তোমাকে এয়ারপোর্ট নিয়ে যাবো চিন্তা নেই।”

ঝিলাম, “হ্যাঁ, তাই চলো। বাড়িতে সত্যি আর মন টিঁকছে না।”

একবার যখন হ্যাঁ বলেছে ঝিলাম, তখন সিদ্ধান্ত বদলে ফেলার আগেই বেরিয়ে পড়া ভালো। উচ্ছল রমণীর যদি হটাত করে আবার মতিগতি বদলে যায়। বুধাদিত্য তাড়াতাড়ি জামাকাপড় পরে ঝিলামকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। বাইরে লোক চলাচল কমে এসেছে। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রায় শেষের দিকে, ঠাণ্ডা একটু যেন জাঁকিয়ে, ছেড়ে যাবার আগে যেন শেষ কামড় বসিয়ে দিয়ে তবে যাবে। ঝিলাম বুঝতে পারেনি যে বাইরে এত ঠাণ্ডা হবে। তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে ওকে বলে হিটার চালিয়ে দিতে।

বুধদিত্য গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল, নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্যে। গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যে এয়ারপোর্ট ছাড়িয়ে জয়পুর হাইওয়ে ধরে ফেলে। এয়ারপোর্ট ছাড়াতেই ঝিলাম ওকে জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছে? উত্তরে বলে, ঠিক নেই, তবে ঠিক সময়ে ওকে এয়ারপোর্ট পৌঁছে দেবে। বুধাদিত্য চুপ করে গাড়ি চালায়, পাশে ঝিলাম চুপ করে বসে থাকে। একজনের মনে ভালোলাগার পূর্বরাগ কিন্তু সেটা অবৈধ, অন্য জনের মনে খুশির আমেজ, স্বামীর সাথে দেখা হবে।

ঝিলাম কিছু পরে বুধাদিত্যকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি পিস্তল নিয়ে ঘোরাফেরা করো কেন? তুমি তপ আই.টিতে চাকরি করো?”

বুধাদিত্য হেসে মজা করে উত্তর দেয়, “ওই তোমাকে বাঁচানোর জন্য পিস্তল যোগাড় করেছিলাম।”

ঝিলাম, “ধুত, সত্যি বলো না, তুমি পিস্তল নিয়ে কি করো?”

বুধাদিত্য, “আমি একটু পাগলা প্রকৃতির লোক, তাই মাঝেমাঝে নিরুদ্দেশের দিকে যাত্রা করি একা একা। রাত বিরাতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যাই যেদিকে দু’চোখ যায়। নিজের আত্মরক্ষার করার জন্য একটা অস্ত্র চাই তাই পিস্তল কিনেছিলাম।”

ঝিলাম, “বাপরে,কাউকে সাথে না নিয়ে, তোমার একা একা বেড়াতে ভালো লাগে?”

বুধাদিত্য ম্লান হেসে বলে, “সবাই তো আর সমীরের মতন ভাগ্যবান নয়, কি করবো আর, একা তাই একা ঘুরে বেড়াই।”

ঝিলাম লাজুক হসে বলে, “তুমি বিয়ে করোনি কেন?”

খুব কঠিন প্রশ্ন, বুধাদিত্য কেন বিয়ে করেনি। বিয়ের কথা, কাউকে সাথে নিয়ে চলার কথা ওর মাথায় কোনদিন আসেনি। ঝিলামকে দেখে সেই কথা প্রথম মাথায় আসে যে যদি ঝিলামের মতন কাউকে পেতো তাহলে বুকের বামদিকে বসিয়ে রাখতো চিরজীবন। বুধাদিত্যকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে ঝিলাম, “গার্লফ্রেন্ড চলে গেছে বলে দুঃখ হচ্ছে?”

কাষ্ঠ হাসি হাসল বুধাদিত্য, আয়েশা চলে গেছে, একদিকে ভালো হয়েছে, ফাঁকা বুকে এক নতুন মানুষ খোঁজা যাবে যাকে নিজের করে নিতে পারবে বুধাদিত্য। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, “কারুর চলে যাওয়াতে আজকাল আর দুঃখ হয় না।”

ঝিলাম, “তাই নাকি? কে কে ছেড়ে গেছে তোমাকে?”

বুধাদিত্য বলতে গিয়েও দুঃখের কথা বলতে পারেনা। ঝিলামকে হেসে বলে, “সমীরকে সারপ্রাইস দেবে কি খালি হাতে?”

ঝিলাম মিষ্টি হেসে বলে, “না না, যাওয়ার আগে ওর জন্য একটা বোকে কিনে নেবো। ওইতো আসার সময় একটা জায়গায় দেখলাম একটা দোকান খোলা আছে।”

হেসে ফেলে বুধাদিত্য, “শীতকাল ডিয়ার, রাতে ফেরার সময়ে সেই দোকান খোলা পাবেনা।”

মুখ শুকিয়ে যায় ঝিলামের, “তাহলে কি হবে? আমি যে কিছুই কিনিনি।”

মনে মনে বলে, তুমি থাকতে আর ফুলের কি দরকার, নিজেই তো একটা ফুলের ডালি সাজিয়ে বসে। বাঁকা হাসি হেসে বলে, “তাহলে গাড়ি ঘুরিয়ে নেই, বোকে কিনে আবার দেখা যাবে।”

খুশি হয়ে যায় ঝিলাম, “হ্যাঁ হ্যাঁ গাড়ি ঘুরিয়ে নাও, আমি ওর জন্য বোকে কিনবোই, খালি হাতে সারপ্রাইস দিতে ঠিক মন মানছে না।”

বুধাদিত্য যেন চালক আর ঝিলাম কর্ত্রী। বুধাদিত্য গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়, দোকানের সামনে এসে ফুলের বোকে কিনে আবার উঠে পড়ে গাড়িতে। সবে দশটা আরও অনেক সময় আছে হাতে। হাতে বোকে, ঠোঁটে হাসি, ফুলের চেয়ে ওর ঠোঁটগুলি বেশি মিষ্টি দেখায়। বুধাদিত্য একবার ঝিলামের হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে আবার গাড়ি চালাতে শুরু করে দিল।

ঝিলাম, “এবারে বেশি দুরে যেওনা, তাহলে কিন্তু ঠিক সময়ে ফিরতে পারবো না।”

বুধাদিত্য, “জো হুকুম মালকিন, আপনার আদেশ শিরোধার্য।” হেসে ফেলে দু’জনেই।

ঝিলাম, “আমরা দু’জনে তোমাকে খুব জ্বালাতন করি তাই না?”

বুধাদিত্য হাসতে হাসতে উত্তর দেয়, “তা করো বইকি, খুব জ্বালাতন করো। ছোটোবেলায় হস্টেলে তেলু শালা জ্বালাতন করেছে, বিয়ের পরে ওর বউ জ্বালাতন করে মারছে।”

ঝিলাম হেসে বলে, “না আর জ্বালাতন করবো না তোমাকে। সত্যি বলছি, আমাকে নামিয়ে দাও এখানে তাহলে।”

বুধাদিত্য, “পাগল হলে? সমীর ছেড়ে দেবে আমাকে? গলা টিপে মেরে ফেলবে তাহলে।”

ঝিলাম, “ওর আগে আমি তোমাকে মেরে ফেলবো।”

বুধাদিত্য একবার ভাবে, খুব বাধে গো খুব বাধে, বেশি করে বাধে। হেসে বলে, “তুমি বললে আর আমি নামিয়ে দেবো, ভাবলে কি করে? এত সুন্দর করে রান্না করে রেখে গেলে, তারপরেও স্বার্থপরের মতন তোমাকে ছেড়ে দেবো, হতেই পারে না।”

ঝিলাম ঘড়ি দেখে, গল্প করতে করতে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। বুধাদিত্যের দিকে তাকিয়ে বড় বড় চোখ করে বলে, “বুধাদিত্য, আমার মনে হয় এবারে আমাদের এয়ারপোর্টের দিকে যাওয়া উচিত। এগারোটা বাজতে যায়।” ফুলের তোড়াটা নাকের কাছে আনে গোলাপ আর অন্য ফুল মেশানো, ঘ্রান টেনে নেয় ঝিলাম। “উম্মম, জানো খুব ভালো লাগছে। পরের মাসের দশ তারিখের মধ্যে জীবনের প্রথম মাইনে পাবো। সবটা দুহাতে খরচ করে দেবো।” গলার স্বর বেশ উৎফুল্ল, “সমুর জন্য একটা কালো চামড়ার জ্যাকেট কিনবো, তোমার জন্য কিছু কিনবো, বাড়ির সবার জন্য কিনবো।”

বুধাদিত্য জিজ্ঞেস করে, “নিজের জন্য কিছু কিনবে না?”

ঝিলাম মাথা নাড়ায়, “না, প্রথম মাইনে দিয়ে আমি কি কিনবো? যা কেনার সমু কিনে দেবে আমাকে।”

এয়ারপোর্ট এসে যায়, ঘড়িতে এগারোটা বাজে। সামনের বড় এল.সি.ডি তে লক্ষ্য করল যে বম্বের ফ্লাইট ল্যান্ড করে গেছে একটু আগে। ঝিলাম সমীরকে ফোন করে জানল যে কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাবে। ঝিলামের চোখে মুখে উত্তেজনা ফেটে পড়ছে, সমীরকে জানায় নি যে ওর জন্য এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছে ঝিলাম। উৎকণ্ঠায় বারেবারে ঘড়ি দেখে, মনের মধ্যে উশখুস ভাব। বুধাদিত্যকে বারেবারে জিজ্ঞেস করে, এতো দেরি কেন? বুধাদিত্য বুঝিয়ে হাল ছেড়ে দেয়।

কিছুপরে সমীর গেট থেকে বেরিয়ে আসে। ঝিলাম ওকে দেখে প্রায় দৌড় লাগিয়ে হাত ধরে ফেলে। সমীর ঝিলামকে দেখে ভুত দেখার মতন চমকে ওঠে। বুধাদিত্য কিছু দুরেই দাঁড়িয়ে ছিল, ওদের প্রগাড় আলিঙ্গন দেখে বুকের ভেতর একটু চিনচিন করে ওঠে। ক্ষণিকের জন্য ওদের ভালোবাসা দেখে হিংসে হয় বুধাদিত্যের। কাউকে ভালোবাসা হয়তো ওর কপালে আর নেই। সমীর ঝিলামকে একহাতে জড়িয়ে ধরে, তারপরে কিছু দুরে দাঁড়িয়ে থাকা বুধাদিত্যের দিকে চোখ যায়। সমীরের চোখে একটু যেন ধরা পড়ে যাওয়ার একটা ভীতি লুকিয়ে আছে, সেটা বুধাদিত্যের চোখ এড়াতে পারেনা। বুধাদিত্যের সন্দেহ চেতন মন কিছুর একটা গন্ধ পায়।

সমীর মিচকি হেসে বলে বুধাদিত্যকে, “কিরে, আমার বউ তোকে খুব জ্বালাচ্ছে, তাই না?”

বুধাদিত্য হেসে ফেলে, “সেই বিকেল থেকে মাথা খেয়ে রেখেছে, কখন আসবে কখন আসবে।” ঝিলামের দিকে তাকিয়ে বলে, “এবারে শান্তি, এসে গেছে তোমার প্রানে বাতাস ঢালতে।”

ঝিলাম লাজুক চোখে সমীরের দিকে তাকিয়ে শিশুসুলভ গলায় আব্দার করে, “কিছু এনেছো আমার জন্যে?”

সমীর ওর কাঁধে হাত দিয়ে টেনে বলে, “নিশ্চয় ডার্লিং, সেটা কি করে ভুলে যাই।”

ঝিলাম উৎফুল্ল হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি এনেছো?”

গোলাপি নরম গালে আলতো করে নাক ঘষে বলে, “বম্বে থেকে একটা জুয়েলারি সেট।”

আনন্দে ঝিলাম ওর বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে বলে, “সত্যি আমার কথা মনে ছিল তাহলে?”

সমীর উত্তর দেয়, “হ্যাঁ মনে ছিল।” স্ত্রীকে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় সমীরের চোখ একদিক ওদিক ঘোরাফেরা করতে থাকে, মনে হয় কাউকে যেন খুঁজছে এই ভিড়ে।

বুকের কাছে জড়িয়ে থাকা ঝিলাম সমীরের চোখ দেখে জিজ্ঞেস করে, “কি হলো, কাউকে খুঁজছো নাকি?”

সমীর, “কই না তো। না না, আমি এমনি দেখছিলাম এদিক ওদিক। চলো বাড়ি চলো, অনেক রাত হয়ে গেছে আর ঠাণ্ডাটাও বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে।” বুধাদিত্যের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কাল তোর ছুটি না অফিস যেতে হবে?”

বুধাদিত্য হেসে ফেলে, সেই প্রথম রাতের কথা মনে পড়ে যায়, না আর নয়, এই একবার যা ঘটে গেছিল আবার যদি পেছল খায় তাহলে আবার সেই প্রেমকেলি রত স্বামী স্ত্রীর খেলা দেখতে হবে। কান লাল হয়ে যায় বুধাদিত্যের, চাপা হেসে বলে, “কাল ছুটি, তবে আমি তোদের বাড়ি নামিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে যাবো।”

ওরা তিনজনে মিলে গাড়ি পারকিংয়ের দিকে হাঁটতে শুরু করে দেয়। সমীরের হাত জড়িয়ে ঝিলাম আগে আগে হেঁটে যায়, বুধাদিত্য ওদের পেছন পেছন হাঁটে। বুধাদিত্য লক্ষ্য করে বেশ কিছু দুরে এক মহিলা দাঁড়িয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। দুরে দাঁড়ান সেই মেয়েটাকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে বুধাদিত্য, মনে করতে চেষ্টা করে, ওকে কি আগে কোথাও দেখেছে? না দেখেনি। পারকিংয়ে ঢোকার মুখে সমীর পেছন দিকে ঘাড় ঘুড়িয়ে আলতো করে মাথা দোলায়। দুরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা প্রত্যুত্তরে আলতো করে মাথা দোলায়। চোয়াল শক্ত হয়ে যায় বুধাদিত্যের, মনের কোনে এতক্ষণ যে সন্দেহের মেঘ জমে এসেছিল সেটা সুনিশ্চিত হয়ে যায়। ঝিলামকে নিয়ে সমীর গাড়িতে উঠে পড়ে। বুধাদিত্য কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে দুরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটার নিরীক্ষণের দৃষ্টিতে ছবি এঁকে নেয়। এখন নয়, পরে সময় হলে জিজ্ঞেস করবে এই ব্যাপারে। ঝিলামকে দেখে খুব কষ্ট হয়, বুকে কত আশা বেঁধে স্বামীর হাত ধরে পেছনের সিটে বসে, আর এই ছেলে শেষে কিনা অন্য কারুর সাথে? জানে সমীরের উত্তর, মিথ্যে কথা বলে দেবে সোজা।

ওদের বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে বুধাদিত্য বাড়ি ফিরে যায়। সমীর আর ঝিলাম বারবার বলে রাতে থেকে যেতে, কিন্তু হেসে ফেলে বুধাদিত্য, চোখ টিপে ঝিলামের দিকে তাকায়। ঝিলাম বুঝে যায় বুধাদিত্যের চোখের ইঙ্গিত, সেই প্রথম দিনের কথা। আকর্ষণীয় কমনীয় যৌবনের ডালি নিয়ে সেই রাতে ভিজে স্লিপ পরে বাথরুম থেকে বেরিয়ে বুধাদিত্যের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ঝিলাম লজ্জায় লাল হয়ে যায়, মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে। বুধাদিত্য চলে আসে ওদের ছেড়ে।

একদিন বিকেল বেলা, বুধাদিত্য চুপ করে বসে টিভি দেখছিল, এমন সময়ে কলিং বেল বাজে। ঠাণ্ডা কমে এসেছে, ছুটির দিন, কোন কাজ নেই। আজকাল আর বারে বসে মদ গেলা হয় না, কোন নারীসঙ্গে আর মন নেই। দরজা খুলে দেখে ঝিলাম দাঁড়িয়ে হাতে বেশ কয়েকটা শপিং ব্যাগ। ধবধবে সাদা জিন্স আর গাড় নীল রঙের টপে দারুন দেখাচ্ছে ঝিলামকে। পেছনে দাঁড়িয়ে সমীরের, তাঁর হাতেও বেশ কয়েকটা শপিংয়ের ব্যাগ। বুধাদিত্য বুঝে যায় যে ফেব্রুয়ারির দশ তারিখে ঝিলাম প্রথম বেতন পেয়েছে আর সেই খুশিতে সারা বাজার কিনে ওর দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। সমীর মুখ কাঁচুমাচু করে পেছনে দাঁড়িয়ে।

হেসে ফেলে বুধাদিত্য, “শালা এতদিনে পরে তোকে দেখে মনে হচ্ছে কলুর বলদ। আয় আয় ভেতরে আয়।”

ঝিলাম ভেতরে ঢুকেই ওর হাতে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দেয়, বলে, “একবার খুলে দেখতো পছন্দ হয়েছে কিনা? তোমার চয়েস তো আবার অনেক বড় বড়, জানি না বাবা মনে খুব খুঁত খুঁত ছিল কেনার সময়ে।”

বুধাদিত্য সমীর আর ঝিলামকে বলে, “শালা এই সব করতে গেলি কেন?”

সমীর, “অনেক হয়েছে, অনেক দেখিয়েছিস তুই। জানি শালা তুই অনেক বড়লোক এবারে একবার খুলে দেখ, পছন্দ কিনা। সারা বাজার আমার মাথা খেয়ে ফেললো এই নিয়ে।”

ব্যাগ খুলে দেখে একটা ছাই রঙের দামী সুটের পিস। মাথায় হাত বুধাদিত্যের, আলমারিতে প্রায় গোটা দশ বারো সুট আছে, তারপরে আবার। সমীর হেসে জিজ্ঞেস করে পছন্দ কিনা? বুধাদিত্য ঝিলামের দিকে তাকিয়ে জানায় যে উপহার খুব পছন্দ হয়েছে, ঝিলামের মুখ দেখে কি আর না বলা যায়। সমীর জানায় যে ঝিলাম সব পয়সা শপিং করে শেষ করে দিয়েছে। ওর জন্য একটা সুট পিস কিনেছে। বাড়ির সবার জন্য জামা কাপড় বা কোন না কোন উপহার কেনা হয়েছে। সমীর বলে যে বুধাদিত্যকে পুজোতেও কিছু দেওয়া হয়নি তাই ওর সুট ঝিলাম কিনেছে। দুই বন্ধু মিলে বসে গল্প করে, ঝিলাম রান্না ঘরে ঢুকে ওদের জন্য কফি বানিয়ে আনে। বুধাদিত্যের ফাঁকা বাড়ি ঝিলামের হাসির কল্লোলে ভরে ওঠে।

কফি খেতে খেতে ঝিলাম সমীরকে বলে, “যাও তো বাজারে একটু মাংস নিয়ে এসো, রান্না করে রেখে যাই ওর জন্য।”

সমীর বুধাদিত্যকে বলে, “আরে শোন, আজ রাতে আমার বাড়ি চল।”

ঝিলাম কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “ওকে বলে লাভ নেই, ও যাবেনা আমাদের বাড়ি।” একটু ঠেস দিয়ে কাষ্ঠ হেসে বলে, “একা একা ঘুরে বেড়াবে, একা একা সব করবে, থাকুক একা। তুমি যাও।”

বুধাদিত্য ঝিলামের সাথে পেরে ওঠে না। সমীর ওর কথায় সায় দেয়, কিছু পরে দুই বন্ধু মিলে বাজারে বেরিয়ে যায়। বুধাদিত্য একবার ভাবে যে এয়ারপোর্টে দাঁড়ানো সেই মেয়েটার কথা একবার জিজ্ঞেস করে, বিকেলের কথা ভেবে আর জিজ্ঞেস করেনা, এই সুন্দর বিকেল মাটি করে দিতে মন করেনা।

বুধাদিত্য সমীরকে বলে, “হুম শালা বেশ আনন্দে আছিস, কি বল। তা এত খরচ করতে গেলি কেন?”

সমীর, “নারে বাবা, খরচা আর কি। তুই শালা এতো করিস, আর এইটুকু আমরা করবো না? জানি বাবা জানি তুই শালা অনেক বড়লোক, আমাদের দুজনের মাইনে মিলিয়ে হয়তো তোকে ছুঁতে পারবো না।”

বুধাদিত্য হাল্কা হেসে বলে, “ছাড় ওই সব কথা, আছিস কেমন তাই বল?”

সমীর, “ভালো আছি, একদম মস্ত। আজকাল একটু কাজের চাপ বেড়ে গেছে। মাঝে মাঝেই বাইরে যেতে হয়, তবে ঝিলামের জন্য রাতে থাকিনা, সেদিনেই ফিরে আসি। তবে এবারে ভাবছি, একটু কাজে মন লাগাতে, ঝিলামের চাকরি হয়ে গেছে, এবারে ও শান্ত হয়ে যাবে। এবারে একটু কাজের দিকে মন দিতে হবে।”

বুধাদিত্যের একবার বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল, কাজের দিকে না অকাজের দিকে? চেপে যায় সেই প্রশ্ন। মাংস কিনে বাড়ি ফিরে আসে। ওদের গল্প চলাকালীন ঝিলাম রান্না সেরে ফেলে। অনেকক্ষণ এই সেই, কাজের গল্প, অকাজের গল্প করে খাওয়াদাওয়া সেরে ঝিলাম আর সমীর বাড়ি ফিরে যায়। যাওয়ার সময়ে বুধাদিত্য করুন চোখে ঝিলামের দিকে তাকিয়ে থাকে, মনে হলো যেন ঘর ফাঁকা করে কেউ চলে গেলো। সেই করুন চোখের চাহনি ঝিলামের চোখে পড়েনা। ঝিলাম বেশ খুশি, সমীর অনেক দিন পরে ওর সাথে শপিং করতে বেরিয়েছে, জীবনের প্রথম মাইনে পেয়ে সবার জন্য জিনিস কিনেছে।

সারা অফিস মাতামাতি একটা বেশ বড় প্রজেক্ট নিয়ে। পরে মাসে হয়তো আবার একটা ট্রিপ আছে। এবারে হয়তো সিডনি না হয় মেলবোর্ন যেতে হবে। টেকনিকাল কিছু প্রেসেন্টেসান দেবার আছে, সাথে সি.ই.ও বিশ্বনাথ আহুজা, সি.টি.ও অরুন ঠাকুর এবং আরও কিছু মার্কেটিঙের লোক যাবে। অফিসে বেশ ব্যস্তই থাকে, তবে দুপুরের দিকে নিজেকে কয়েক ঘন্টার জন্য খালি রাখে, কখন প্রিয় বান্ধবী, ঝিলামের ডাক পড়ে ঠিক নেই। একবার ভেবেছিল একটা ড্রাইভার রাখবে, কিন্তু দুপুরে ঝিলামকে বাড়ি পৌঁছে দেবার আনন্দ হারাতে চায়না বুধাদিত্য। ঝিলাম মাঝে মাঝেই হানা দেয় বুধাদিত্যের অফিসে। অগত্যা বুধাদিত্যকে কিছু সময়ের জন্য অফিস ছেড়ে বেরিয়ে ওকে বাড়ি পৌঁছে দিতে হয়। বাড়ির পথে ওর সারাদিনের স্কুলের গল্প শুনতে হয়, চুপ করে শুনে যায়, মাঝে মধ্যে কিছু মন্তব্য করে। কোন কোন সময় কোন স্কুলের কোন লোক ওর দিকে তাকালো, কেমনভাবে তাকাল সেইসব কথা হয়। দুজনে সেই সব কথা শুনে বেশ হাসি ঠাট্টা করে।

একদিন সমীরকে ফোন করে দেখা করতে বলে বুধাদিত্য, জানতে চায় যে এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে থাকা সেই মহিলা কে। বুধাদিত্য জানতো সমীরের উত্তর, তাও জিজ্ঞেস করে। সমীর অকাট মিথ্যের প্রশ্রয় নিয়ে জানিয়ে দেয় যে কেউ ওর জন্য এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে ছিলোনা। সমীর হেসে জানিয়ে দেয় যে অন্য কোন নারীর প্রতি ওর কোন টান নেই, ওর বুকের মাঝে শুধুমাত্র ঝিলামের ছবি আঁকা। বুধাদিত্য সমীরের ফাঁকা হাসি বুঝতে পেরে যায়। সমীরের সাথে বাকবিতন্ডায় যায় না বুধাদিত্য, একটুখানি সাবধান করে মাত্র, বলে যে, মদে আর নারীসঙ্গে যেন নিজেকে ডুবিয়ে না দেয়।

মার্চের শেষের সপ্তাহ, ঠাণ্ডা চলে গেছে দিল্লীর আকাশ থেকে। হোলি পেরিয়ে গেছে। বাতাসে বেশ একটা গরম ভাব এসে গেছে। বুধাদিত্যের জন্মদিন। প্রতিবছরের মতন সাতসকালে বুবাইয়ের ফোন আসে, মামাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়। তারপরে অনিন্দিতাদি ফোন ধরে শুভেচ্ছা জানায়। মামিমা, প্রমীলা দেবী একটু দেরি করেই ফোন করেন প্রতিবারের মতন। ওর জীবনের বাধা ধরা নিয়ম। মামা, মামি, বুবাই আর অনিন্দিতাদি ছাড়া আরও একজন ওকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতো, আয়েশা; কিন্তু দেশ ছেড়ে, বুধাদিত্যকে ছেড়ে চলে গেছে। এমন সময়ে ফোন বেজে ওঠে, বুধাদিত্য বেশ খুশি হয়, নিশ্চয় আয়েশার ফোন। ফোন তুলেই থমকে যায় বুধাদিত্য, ওপর পাশে এক নারী কণ্ঠস্বর, সেই স্বর ঝিলামের নয়, সেই স্বর আয়েশার নয়। কণ্ঠস্বর মিস্টার সুবির গুহর দ্বিতীয় ভার্যা, দেবস্মিতার। ক্ষণিকের জন্য চোখ বন্ধ করে বুকের মাঝে ছলকে ওঠা উত্তপ্ত রক্ত সামলে নেয় বুধাদিত্য।

দেবস্মিতা, “মেনি মেনি হ্যাপি রিটারন্স অফ দা ডে; হ্যাপি বার্থডে, শরীর কেমন আছে? সব ঠিকঠাক?” সেই পুরানো, ভাববাচ্যে কথা। দু’জনেই দু’জনকে কিভাবে সম্বোধন করবে সেটা ঠিক করতে পারে না। কণ্ঠস্বরে মধুঢালা তাও যেন কানের কাছে বড় বাজে। বুধাদিত্যকে চুপ থাকতে দেখে দেবস্মিতা হেসে বলেন, “কি হলো? কথা বলা মানা, আমাদের সাথে? মিস্টার গুহ কথা বলতে চান।”

বুধাদিত্য চিবিয়ে উত্তর দেয়, “ঠিক আছে।”

সুবিরবাবু ফোন ধরে বলেন, “কেমন আছো?”

সুবিরবাবুর গলার আওয়াজে পুরো দিনটা মাটি হয়ে গেল বলে মনে হলো বুধাদিত্যের। চিবিয়ে উত্তর দেয়, “ভালো আছি, খারাপ থাকার তো প্রশ্ন ওঠে না। এতদিন পরেও যে মনে রেখেছো এই বড় কথা।” বিশেষ কথা বাড়াবার ইচ্ছে ছিলোনা বুধাদিত্যের। কিন্তু একটা শিশুর গলার আওয়াজ পাচ্ছিল পেছন থেকে, বায়না ধরেছে কথা বলবে। দেবস্মিতার গলার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে, বারন করে চলেছে বাপ্পাদিত্যকে, কিন্তু সেই ছোটো বাচ্চা শুনতে নারাজ, এই কেঁদে ফেলে প্রায়। বুঝে গেল বুধাদিত্য যে, বাপ্পাদিত্য কথা বলতে চায়। বুধাদিত্যের মন একটু নরম হয়ে গেল সেই কাঁদো কাঁদো গলার আওয়াজ শুনে, সুবিরবাবুকে বলে, “বাপ্পাদিত্যকে ফোন দাও, কি বলছে একটু শুনি।”

হেসে ফেলেন সুবিরবাবু। বাপ্পাদিত্য ফোন ধরেই চেঁচিয়ে ওঠে, “তুমি কে? তোমার নাম কি? আমাকে মা জানো একটা প্লেন কিনে দিয়েছে কালকে। আমি না পড়ে গেছি, পায়ে খুব ব্যাথা তাই আজকে আর স্কুল যাইনি।”

সেই শিশুর মিষ্টি গলা শুনে বুধাধিত্যের মন গলে যায়, হেসে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় পড়ে গেছো? কোথায় লেগেছে?”

বাপ্পাদিত্য, “বাগানে খেলছিলাম, আর না, ধুপ করে পড়ে গেছি। আচ্ছা আমি আসছি, বাই।” বলেই ফোন সুবিরবাবুকে ধরিয়ে দেয়।

বুধাদিত্য কিছু বলার আগেই সুবিরবাবু ওকে বলেন, “ভালো থেকো, আর কি বলবো।”

বুধাদিত্য, “তোমরা ভালো থেকো।” ফোন রেখে দেয়। চুপ করে মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। বাঁধানো কাঁচের ভেতর থেকে মঞ্জুষাদেবী মিটিমিটি হেসে বুধাদিত্যকে তিরিশ বসন্তের শুভেচ্ছা জানায়।

অফিসে দিন মোটামুটি কেটে যায়, অনেকের শুভেচ্ছা, বিশেষ করে যারা নিচে কাজ করে তাদের একটু তেল মারার স্বভাব বেশি থাকে। লাঞ্চের পরে আশা করে বসে থাকে ঝিলামের হয়তো ফোন আসবে কিম্বা হয়তো নিজেই এসে উপস্থিত হবে বাড়ি পৌঁছে দেবার বায়না ধরবে। লাঞ্চ পেরিয়ে যাবার পরেও ঝিলামের ফোন আসেনা। একবার ভাবে নিজেই ফোন করবে, কিন্তু ফোন করতে গিয়েও মন খুঁতখুঁত করে ওঠে, ঠিক যেন সাহস জুগিয়ে পায়না। এমনি দিনে যদি কাজ থাকতো তাহলে ফোন করে দিতে দ্বিধা বোধ করতো না। এই যেমন সপ্তাহ দুই আগে, সি.এম.ও-র ফেয়ারওয়েল পার্টির জন্য ঝিলামকে জিজ্ঞেস করেছিল যে কি দেওয়া যায়। ঝিলাম ওকে বুদ্ধি দিয়েছিল যে চাঁদা তুলে একটা দামী হাতঘড়ি দিতে। তাই করেছিল বুধাদিত্য, অফিসের সবাই সেই বুদ্ধিতে মত দিয়েছিল। কারুর একজনার পকেট থেকে বেশি টাকা খসেনি, উপরন্তু একটা ভালো উপহার কিনে দিতে পেরেছিল ওরা সবাই। বুধাদিত্য রাতের বেলা অবশ্য ঝিলামকে ফোন করে সেই বুদ্ধি দেবার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছিল। ঝিলাম হেসে বলেছিল, মাঝে মাঝে একটু যেন ওর কথা শোনে। লাঞ্চ পেরিয়ে বিকেল হয়ে যায়, অফিস ছুটিও হয়ে যায়। মনের কোনে ক্ষীণ এক ব্যাথা নিয়ে বাড়ি ফেরে বুধাদিত্য। বাড়ি ফিরে নিজের মনেই হেসে ফেলে, ওর জন্মদিন নিয়ে, ঝিলাম বা সমীরের সাথে কোনদিন কোন কথা হয়নি, সুতরাং ওদের জানার কোন প্রশ্ন ওঠেনা। জামা কাপড় খুলে যথারীতি, কফি বানিয়ে চুপ করে ল্যাপটপ খুলে মেইল দেখে। মিউসিক সিস্টেমে মান্না দের গান, তার সাথে কোল্ড ড্রিঙ্কস আর সিগারেট। এমন সময় দরজায় দুমদুম শব্দ। চমকে ওঠে বুধাদিত্য। দরজা খুলে দেখে সমীর আর ঝিলাম।

সমীর হাতে একটা বড় প্যাকেট, একটা ফুলের তোড়া। ঝিলাম পেছনে দাঁড়িয়ে লাজুক হাসে। সমীর এক লাথি মেরে ওকে দরজা থেকে সরিয়ে দিয়ে ঘরে ঢুকে পরে।

সমীর, “বোকা... আজকের দিনে জন্মেছিস শালা পার্টি কি না তোর দেবার কথা আর দিচ্ছি বাড়া আমরা। নে শালা কেক কাট।”

অবাক হয়ে যায় বুধাদিত্য, ঠিক কি হচ্ছে বুঝে উঠতে পারে না। ঝিলামের দিকে তাকায়। ঝিলাম জানায় যে অনির্বাণ নাকি সমীরকে দুপুরবেলা ফোন করেছিল, ওর কাছ থেকে জানতে পারে জন্মদিনের কথা। কিন্তু তারিখ ঠিক মনে ছিল না অনির্বাণের। সমীর বাড়ি ফিরে ওর পুরানো ডায়রি ঘেঁটেঘুটে ঠিক তারিখ উদ্ধার করে।

বুধাদিত্য, “শালা শত্রুর জন্মদিন কি লিখে রেখেছিলি ডায়রিতে?”

সমীর, “না শালা, শত্রু বা বন্ধু নয়, আমার একটা ডায়রিতে স্কুলের সবার জন্মদিনের তারিখ লেখা আছে রে। নে কুত্তা, এবারে কেক কাট, দেখি। তোর জন্য স্পেশাল অর্ডার দিয়ে কেক বানিয়ে এনেছি।”

বুধাদিত্য, “তোরা পাগল নাকি যে এখন আমি কেক কাটবো? বুড়ো হতে চললাম, শালা।”

ঝিলাম, “হ্যাঁ হয়েছে, তুই তিরিশে বুড়ো। বোকা... দেখ গিয়ে বিদেশে, শালা পঞ্চাশ বছরে লোকে বিয়ে করে বাচ্চা পাড়ছে।”

কথাটা খুব গায়ে লাগে বুধাদিত্যের, নিজের বাবা, সুবির গুহ, মনে হয় পঞ্চাশে গিয়ে দ্বিতীয় বার পিতা হয়েছেন। তবে সঠিক জানেনা, আদৌ বাপ্পাদিত্য কার ঔরসজাত, ওর বাবার না অন্য কারুর?

বুধাদিত্য মিচকি হেসে বলে, “ঠিক আছে বাবা, কেক কাটলাম, তারপরে?”

ঝিলাম “তার আর পর নেই, নেই কোন ঠিকানা। জামাকাপড় পরে তৈরি হয়ে বের হও, বেশি দুরে নয়, ওই ইস্ট অফ কৈলাসেই একটা ভাল রেস্টুরেন্ট আছে সেখানে খাওয়াবে চল।”

বুধাদিত্য, “সেখানে কেন? আরও ভালো জায়গা আছে। বল তো পান্ডারা রোড নিয়ে যেতে পারি।”

সমীর, “চল শালা যেখানে নিয়ে যাবি সেখানে যাবো, তবে তোর পকেট মারবো আজকে।”

হেসে ফেলে বুধাদিত্য, ঝিলামের হাসির জন্য, পকেট কেন বুকের পাঁজর খুলে দিতে বললে খুলে দেবে। কিছুক্ষণের মধ্যে বেরিয়ে পড়ে। পান্ডারা রোডের একটা নামি রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার সারে। খাবার সময়ে সমীর আর বুধাদিত্য সেই পুরানো দিনের স্কুলের কথা নিয়ে আবার শুরু হয়ে যায়। ঝিলাম অগত্যা বসে থাকে মাঝে মাঝে ওদের সেই কীর্তি কলাপ শুনে হাসে আর মন্তব্য করে। খাওয়া শেষ সমীরদের বাড়ি পৌঁছে দেয়। গাড়ি থেকে নামার পরে সমীর ঝিলামের দিকে একটু তাকিয়ে কিছু ইঙ্গিত করে। ঝিলাম একটা ছোটো বাটি বের করে ওর কাঁধের ব্যাগ থেকে। বুধাদিত্য ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে।

সমীর বুধাদিত্যের হাতে সেই বাটি ধরিয়ে দিয়ে বলে, “একটু পায়েস খাস ঝিলাম বানিয়েছে তোর জন্য। তুই তো বেশ বড়লোক মানুষ। পায়েস খাবি কি খাবি না, তাই দিতে একটু কেমন লাগছিল।” বুধাদিত্য ঝাপসা চোখে সমীর আর ঝিলামের দিকে তাকায়। সমীর ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “হ্যাঁ রে, কি হলো? মাসিমার কথা মনে পড়ে গেল? ঝিলাম বলল পায়েসের কথা, না হলে আমার মনেও আসতো না।”

বুধাদিত্য দুহাত বাড়িয়ে দু’জনকে জড়িয়ে ধরে বুকের কাছে। ধরা গলায় বলে, “শালা, বন্ধুত্বের মধ্যে কি বড়লোক, কি গরিব লোক রে?”

ওর কথা শুনে ঝিলামের চোখে একটু জল চলে আসে। একটু হাসি, একটু কাঁপা গলায় বলে, “সমু মাসিমার কথা বললো তাই আমার পায়েসের কথা মনে পড়ে গেল। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে পায়েস বানিয়েছিলাম, খেয়ে দেখো।”

ভীষণ খুশি মনে বুধাদিত্য সেই পায়েসের বাটি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। সারারাত ঘুমাতে পারেনা বুধাদিত্য, শুধু মায়ের কথা খুব মনে পড়ে। হস্টেলে থাকার সময় প্রতি বছরে মা ওর জন্য পায়েস বানিয়ে নিয়ে যেতো, আর সেই পায়েস ওর ক্লাসের সবাই খেতো। সারারাত পায়েসের বাটি হাতে করে মায়ের ছবির সামনে বসে থাকে। সকালে কাজের লোক এসেছিল, কাজ করে গেছে, রান্না করে গেছে। তারপরে আবার ঘুমিয়ে পড়ে বুধাদিত্য। যথারীতি পরেরদিন দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে।

ঠিক দুপুর আড়াইটে নাগাদ ঝিলামের ফোন, ওপাশ থেকে চেঁচানি, “তুমি কোথায়? আমি তোমার অফিসে এসে শুনলাম তুমি অফিসে আসোনি। কি হয়েছে?”

বুধাদিত্য ঘুমচোখে উত্তর দেয়, “চেঁচাচ্ছো কেন, আমি কানে কালা নাকি? ঘুমাচ্ছিলাম আমি, এই উঠলাম।”

ঝিলাম, “কেন শরীর খারাপ নাকি? আমি এখুনি আসছি।”

বুধাদিত্য মজা করে বলে, “না মানে তোমার পায়েস খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, কিছু মিশিয়ে দিয়েছিলে নাকি পায়েসের মধ্যে?”

ঝিলাম, “ধ্যাত, সত্যি বলো, শরীর খারাপ?”

বুধাদিত্য, “না আমার শরীর খারাপ হতে যাবে কোন দুঃখে? আমি ভাল আছি, আসল কথা কাল রাতে ঠিক ঘুম আসেনি তাই দেরি করে উঠেছি।”

ঝিলাম একটু নিচু গলায় বলে, “আমি জানি কেন তোমার কাল রাতে ঘুম হয়নি। মাসিমার কথা খুব মনে পড়ছিল তাই না?” বুধাদিত্য চুপ করে থাকে, সত্যি কাল রাতে মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিল। অন্যদিন হলে হয়তো নিজেকে মদে ডুবিয়ে নিতো আর এক সময়ে ঘুমিয়ে পড়তো। কিন্তু মদ ছেড়ে দিয়েছে তাই ব্যাথায় আর ঘুম আসেনি, চোখ বন্ধ করলেই মায়ের মুখ সামনে চলে আসে। ঝিলাম অনুধাবন করে বুধাদিত্যের মনের অবস্থা, বুঝে যায় যে বড় ব্যাথার জায়গায় ঘা দিয়েছে, হয়তো নাড়া দেওয়া ঠিক হয়নি। একটু ক্ষমার সুরে বলে, “প্লিস উলটো পাল্টা কিছু করো না, ভালো থেকো। পরে দেখা হবে।”

ঝিলামের পায়ের ছাপ সোজা বুধাদিত্যের বুকের ওপরে এসে পড়ে। ঝিলাম আর বুধাদিত্যের মাঝে এক প্রগাড় বন্ধুত্বের বন্ধন গড়ে ওঠে।
 
দশম পর্বঃ নোনাধরা প্রাচীর।

এপ্রিলের মাঝামাঝি বুধাদিত্য দুই সপ্তাহের জন্য অস্ট্রেলিয়া যায় অফিসের কাজে। সমীর ঝিলাম দুজনেই ওকে এয়ারপোর্টে ছাড়তে গিয়েছিল। সেই নিয়ে বুধাদিত্যের কি হাসি, বলে ও কি অগস্ত্য যাত্রা করছে নাকি যে একেবারে দল বেধে ছাড়তে এসেছে। অগস্ত্য যাত্রার কথা শুনে ঝিলামের চোখ ছলছল করে ওঠে। সমীর না থাকলে ঝিলাম ওকে জড়িয়ে ধরে বলতো, যে ওইরকম কথা বলতে নেই। যাবার আগে ঝিলাম বারবার ওকে জানায় যে ওখানে পৌঁছে অন্তত একটা এসো.এম.এসো যেন করে দেয় যে ঠিক করে পৌঁছে গেছে, আর যেন ওর ঘুমের ব্যাঘাত না করে। অপেক্ষা করে থাকবে ওর পৌঁছানোর খবরের জন্য। বুধাদিত্য ওকে জানিয়ে দেয় যে পৌঁছে ফোন করে দেবে। বুধাদিত্য মেলবোর্ন পৌঁছেই ফোন করেছিল। ভোরেরবেলা মেলবোর্ন পৌঁছায়, তখন ঝিলাম ঘুমিয়েছিল, মাথার কাছেই ফোন রেখে দিয়েছিল। এক ডাকেই ফোন ধরে ঘুম ঘুম চোখে ওকে বলে, “ভালো করে পৌঁছে গেছো? এবারে আর আমাকে জ্বালাতন কোরো না একটু ঘুমাতে দাও।” বুধাদিত্য হেসে ফেলে ওর ঘুম জড়ানো মিষ্টি গলার আওয়াজ শুনে। হাজার মাইল দূর থেকে সেই গলার আওয়াজ শুনে ফোন বুকের কাছে ধরে বুধাদিত্য। এখানে ওকে কেউ দেখতে যাচ্ছে না, ও কি করছে। মোবাইলে ওর ছবিটা খুলে একবার দেখে ছোটো একটা চুমু খায়।

সিডনি থেকে সমীরের জন্য একটা জিন্স কেনে আর ঝিলামের জন্য একটা ভারসাসের কাঁধের ব্যাগ কেনে। তার সাথে ঝিলামের জন্য একটা হাল্কা বেগুনি রঙের খুব সুন্দর ইভনিং গাউন কেনে। মনের কোনায় সযত্নে একটা স্বপ্ন এঁকে নেয়, ভবিষ্যতে কোনদিন এই গাউন ঝিলামকে পরাবে, তবে সমীরের সামনে নয়। সেদিন শুধু ঝিলাম আর বুধাদিত্য থাকবে, জানেনা সেইদিন কোনদিন আসবে কি না, কিন্তু স্বপ্ন দেখতে ক্ষতি নেই। ফিরে এসে এয়ারপোর্টে নেমেই সমীরকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে দিল্লী পৌঁছে গেছে। সমীর আর ঝিলাম দুজনেই ওর বাড়িতে এসেছিল সেইদিন বিকেলবেলায়। সমীর আর ঝিলাম ওর আনা উপহার পেয়ে খুব খুশি, সমীরের জন্য আলাদা করে এক প্যাকেট সিগারেট কিনে এনেছিল এয়ারপোর্টের ডিউটি ফ্রি দোকান থেকে। ইচ্ছে করেই মদ কেনেনি, কেননা ঝিলামকে কথা দিয়েছিল।

দিনে দিনে সমীরের অফিসের কাজ বেড়ে যায়, মাঝে মাঝেই অফিসের ট্রিপে বাইরে চলে যায় একদিন দুদিনের জন্য। ঝিলাম সেই নিয়ে বিশেষ কথা বাড়ায় না, কেননা কাজের জন্য যায় সমীর। একদিন অষ্ট্রেলিয়া থেকে এক ক্লায়েন্ট আসে, বুধাদিত্য আর সি.টি.ও তাকে নিয়ে লাঞ্চে বের হয়, হোটেল সাংরিলা, অরিয়েন্টাল এভিনিউতে। দিল্লীর বেশ নামী দামী হোটেল। তিনজনে বসে নিজেদের কাজে গল্পে মশগুল হটাত চোখ পড়ে দুরে একটা টেবিলে। পেছন থেকে দেখে মনে হয় যেন লোকটাকে কোথায় দেখেছে। লোকটার সামনে এক সুন্দরী মেয়ে বসে। দুজনের হাবভাব আচার আচরনে দেখে মনে হলো বেশ ভালভাবে পরস্পরকে চেনে আর বেশ হেসে কথা বলছে দুজনে। কিন্তু বুধাদিত্যের চোখ আটকে থাকে সেই লোকটার দিকে। ওর দিকে পিঠ থাকার দরুন মুখ দেখতে পায়না। পেছন থেকে সমীরের মতন দেখতে। বাথরুমে যাবার অছিলায়, ঝিলামকে ফোন করে জানে যে সমীর নাকি আহমেদাবাদ গেছে কোন অফিসের কাজে। কিছু বলেনা বুধাদিত্য, বাথরুম থেকে বেরিয়ে সেই লোকের মুখোমুখি হয়ে যায়। থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে সমীর, যেন ভুত দেখার মতন চমকে ওঠে, সামনে বুধাদিত্য। বুধাদিত্য চুপ করে একবার ওর লাল মুখের দিকে তাকায় আর দুরে টেবিলে বসা সেই মেয়েটার দিকে তাকায়। ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে যে সেই মেয়েটা কে? সমীর আমতা আমতা করে জানায় যে অফিস কলিগ। বুধাদিত্য ওকে জানতে দেয় না যে ঝিলামের কাছে আগে থেকেই সমীরের আহমেদাবাদ যাবার খবর আছে। শুধু একটা কথা বলে চলে যায়, মিথ্যেটা না বললেই ভালো হতো। বলে যে, পরে এই নিয়ে কথা হবে। সমীরের যেন বুকের রক্ত শুকিয়ে যায়। বুধাদিত্যের দিকে এক পা এগিয়ে হাত ধরতে যায়, কিন্তু ততক্ষণে বুধাদিত্য নিজের টেবিলে গিয়ে বসে পড়ে। ঝিলামকে এইসব কথা কিছুই জানায় না। ভাবে একবার সোজা সমীরের সাথে কথা বলে দেখবে আগে।

একদিন দুপুরে ঝিলাম অফিসে না ঢুকে ফোন করে বুধাদিত্যকে নিচে আসার জন্য। গলার স্বরে একটু আহতভাব। নিচে নেমে দেখে যে ঝিলাম বাইরে গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে। অন্যদিনে রিসেপ্সানে বসে থাকে, পেপার বা কোন ম্যাগাজিন পড়ে যতক্ষণ না বুধাদিত্য নেমে আসে। ঝিলামের মুখের ভাব দেখে বুঝে যায় যে সমীরের সাথে হয়তো কোন বিষয়ে মনোমালিন্য ঘটেছে। গাড়ি চেপে বাড়ি ফেরার সময়ে ঝিলাম অস্বাভাবিক ভাবে চুপ। বুধাদিত্য আড় চোখে ওর দিকে তাকায় আর গাড়ি চালায়।

ঝিলামের উচ্ছল গলার আওয়াজ না পেয়ে বড় আহত হয়, জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে? সমীরের সাথে ঝগড়া হয়েছে?”

ঝিলাম মাথা দুলিয়ে বলে, “কই না তো।” ঠোঁটে জোর করে হাসি টেনে বলে, “কেন আমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে নাকি?”

বুধাদিত্য হেসে বলে, “তোমার চোখ মুখ বলছে যে কিছু একটা ঘটেছে আর সেটা সমীরের সাথেই। কি হয়েছে আমাকে বলবে না?”

ঝিলাম একটু আহত গলায় বলে, “একটু দেরি করে অফিসে ফিরলে তোমার অসুবিধে আছে?”

বুধাদিত্য গাড়ি ঘুরিয়ে নেয় অফিসের দিকে। ঝিলামের ম্লান চেহারা বুকের ভেতর কাঁপিয়ে দেয়, ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন কি হয়েছে?”

ঝিলাম নিচু স্বরে বলে, “জানো, কাল ওর একটা ক্রেডিট কার্ডের বিল এসেছিল। সেটা খুলে দেখেছি বলে কত কথা শুনিয়ে দিল আমাকে। আমি যেন ওর কেউ না, এমন একটা ভাব দেখালো সমু।” চোখের কোল ভিজে এসেছে ঝিলামের। “মাঝে মাঝে আজকাল কি রকম আলগা আলগা ব্যবহার করে আমার সাথে। আজকাল আবার মদ খাওয়া ধরেছে, কিছু বলতে গেলেই রেগে যায়।”

বুধাদিত্যের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় ঝিলামের কথা শুনে। অফিস পৌঁছে নিজের ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। বাড়ি না ফিরে ওকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে ফাঁকা এন.এইচ-১ হাইওয়ে ধরে। ঝিলাম চুপ করে পাশে বসে থাকে, কোথায় যাচ্ছে কেন যাচ্ছে কিছুই জিজ্ঞেস করে না। বিকেল গড়িয়ে আসে, দুজনে চুপ। ঝিলামের বুকের মধ্যে একটা চিনচিন ব্যাথা শুরু হয়।

বুধাদিত্য ওকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি সমীরকে সোজাসুজি প্রশ্ন কেন করছো না?”

ঝিলাম ওর দিকে তাকিয়ে বলে, “কি জিজ্ঞেস করবো?”

বুধাদিত্য, “সোজাসুজি জিজ্ঞেস করো, যে ওর কি কাউকে মনে ধরেছে নাকি?”

বুধাদিত্যের মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে ঝিলাম। সমীর ওকে ছেড়ে অন্য কাউকে, না ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না, ঝিলাম। বুধাদিত্যকে বলে, “না না, এটা নয়, হয়তো ওর কাজের জন্য খুব ব্যস্ত থাকে তাই হয়তো মাঝে মাঝে মদ খায় আর রাত করে বাড়ি ফেরে।”

বুধাদিত্য, “একবার জিজ্ঞেস করে দেখো কি বলে।”

ঝিলাম, “তোমার তো বন্ধু, তুমি না হয় একবার জিজ্ঞেস করো।

বুধাদিত্য চুপ করে থাকে, একবার সমীরকে হাতেনাতে ধরতে হবে, প্রমান যোগাড় করে ওর সামনে দাঁড়াতে হবে। না হলে সমীর প্রতিবারের মতন কিছু না কিছু অছিলায় এড়িয়ে যাবে বুধাদিত্যের প্রশ্নবান আর কোন এক গল্প বানিয়ে বলে দেবে। ঝিলামের মন ভোলানোর জন্য ওকে জিজ্ঞেস করে স্কুলের কথা, বাড়ির কথা। বাড়ির জন্য শপিং করেছিল কিন্তু বাড়ি যাওয়া হয়নি। ঝিলাম ভেবে রেখেছে যে গরমের ছুটিতে দুর্গাপুর যাবে। অবশ্য সে কথা এখন সমীরকে জানায়নি, তবে ইচ্ছে আছে। বাড়ি ফিরতে ফিরতে একটু রাত হয়ে যায়। ঝিলাম সমীরকে ফোন করে কিন্তু ফোন রিং হয়ে যায়। ঝিলাম বার কয়েক ফোন করার পরে আর করে না। ঝিলামকে নামিয়ে দেবার পরেও ঝিলাম দাঁড়িয়ে থাকে। বুধাদিত্য জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। ঝিলাম ওকে ঘরে আসতে বলে। ঝিলামের মুখ দেখে বুধাদিত্য আর পিছিয়ে থাকতে পারে না। গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে ওর সাথে হাঁটতে শুরু করে। ঝিলাম কিছু কেনাকাটা করে, বুধাদিত্য ওকে সেই সব ব্যাগ নিতে সাহায্য করে। পাশে বুধাদিত্যকে পেয়ে ঝিলামের মনে যেন একটু বল আসে। বাড়িতে ঢুকেই আগে বুধাদিত্যের জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে আনে। বেশ কিছুক্ষণ গল্প করার পরে ঝিলামের মন একটু হাল্কা হয়। বুধাদিত্য বাড়ি ফিরে যায়।

বুধাদিত্য একদিন সমীরকে সোজাসুজি ফোনে জিজ্ঞেস করে হোটেল সাংরিলায় দেখা মেয়েটার কথা। প্রথমে একটু আমতা আমতা করে সমীর। বুধাদিত্য চেপে ধরে সমীরকে কোন ঠাসা করে বলে দেয় যে সেদিন ঝিলামকে ফোন করে জেনে নিয়েছিল যে সমীর নাকি আহমেদাবাদ গেছে। সমীর ধরা পড়ে যায়, বিকেলে দেখা করার কথা বলে। বিকেলে দেখা হয় দুই বন্ধুর। বুধাদিত্যকে সমীর জানায় যে ওই মেয়েটা আর কেউ নয়, ওদের বম্বের অফিসের একজন। বুধাদিত্য ঠিক মানতে পারে না, পাল্টা জিজ্ঞেস করে যে, যদি অফিস কলিগ হয়ে থাকে তাহলে কেন এতো লুকোচুরি, কেন ঝিলামকে বলেছিল যে আহমেদাবাদ যাচ্ছে? সমীরের কাছে সেই প্রশ্নের কোন উত্তর থাকে না। বুধাদিত্য ওকে সাবধান করে দেয়, বলে যে, নারীসঙ্গ করছো করো, বুধাদিত্য নিজে কিছু কাল আগে পর্যন্ত অনেকের সাথে শুয়ে কাটিয়েছে। কিন্তু কাউকে মনে ধরলে যেন একবার ভেবে দেখে সমীর, ঘরে একজন বউ আছে। সমীর চুপ করে ওর কথা শুনে যায়। শেষে জানায় যে শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্ক আছে সেই মেয়েটার সাথে। বুধাদিত্য জানতে চায় সেই মেয়েটার নাম আর ঠিকানা, সমীর এড়িয়ে যায়। বলে যে একদিনের দেখা, এত প্রশ্নবাণে কেন জর্জরিত করছে? সব ভুলে এবার নতুন করে ঝিলামকে কাছে টেনে নেবে সমীর। বুধাদিত্য ওকে বাড়ি ছাড়ার আগে শেষবারের মতন সাবধান বানী দেয়।

সেদিনের পরে ঝিলামের মুখে আবার হাসি ফিরে আসে। সমীর মাঝে মাঝেই আজকাল তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরে, ঝিলামকে নিয়ে মাঝে মাঝে বাজারে বের হয়। ঝিলাম বেশ খুশি সমীরের আচরনে। ঝিলামের অফিসে হানা দেওয়া একটু কমে গেছে। আগে যেখানে পাঁচ দিনে চারদিন হানা দিয়ে আব্দার করতো বাড়ি পৌঁছে দাও সেখানে আজকাল হয়তো দু’দিন অফিসে আসে। সমীর নতুন বাইক কিনেছে, মাঝে মাঝেই ঝিলামকে স্কুল থেকে নিতে আসে। সমীর ঝিলামকে নিতে আসলে মাঝে মাঝে দু’জনে মিলে বুধাদিত্যের সাথে দেখা করে যায়। ঝিলামের মুখে হাসি দেখে বুধাদিত্যের বেশ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আলমারি খুলে অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা সেই ইভিনিং ড্রেসটা দেখে আর ম্লান হাসে। মনের মধ্যে যে স্বপ্ন গুছিয়ে রেখে দিয়েছিল, সেটা হয়তো এই যাত্রায় আর সফল হবে না। সমীরের এই আচরনে বুধাদিত্যের ভাল লাগে তবে মনের কোনে একটু ব্যাথাও জাগে।

এক মাস কেটে যায়। সমীর আর ঝিলামের সাথে দেখা সাক্ষাৎ অনেক কমে যায়। ঝিলাম মাঝে সাঝে ফোন করে, খবরা খবর নেয়। বুধাদিত্যকে ধন্যবাদ জানায় ঝিলাম, মনে মনে বোঝে যে সমীরের সাথে নিশ্চয় বুধাদিত্য কথা বলেছে তাই সমীর বদলে গেছে।

দেশের খুব বড় একটা মোবাইল অপারেটারের সাথে মিটিং করতে একবার পুনে যায় বুধাদিত্য, দিন দুয়েকের কাজ। এবারে যাবার আগে ঝিলাম বা সমীরের সাথে কোন কথা হয়না। রাতের বেলা কাজের শেষে একদিন বুধাদিত্য অফিসের বাকি লোকদের নিয়ে একটা ভালো রেস্টুরেন্টে যায় কাজের খুশিতে পার্টি দেবার জন্য। সেখানে সমীরের মুখোমুখি হয়। বুধাদিত্য প্রথমে একটু অবাক হয়ে যায় সমীরকে দেখে, জিজ্ঞেস করে কি কারনে পুনেতে? যথারীতি সমীর এক উত্তর দেয় যে অফিসের কাজে এসেছে। রাতের বেলা ঝিলামকে ফোন করে জানতে পারে যে সমীর পুনে গেছে অফিসের কাজে। অনেকদিন পরে ঝিলাম ওর গলার আওয়াজ পেয়ে খুব খুশি হয়, জানায় যে সমীর অনেক বদলে গেছে নাকি। তবে আজকাল অফিসের কাজে হামেশাই বাইরে থাকে। একটু সন্দেহ হয় বুধাদিত্যের, কিছু বলে না, শুধু জানায় যে সমীরের সাথে দেখা হয়েছে ওর। সেটা শুনে ঝিলাম একটু অবাক হয়ে যায়। বুধাদিত্যকে জানায় যে কিছু আগে নাকি সমীরের সাথে কথা হয়েছিল, কিন্তু ওদের দেখা হওয়ার ব্যাপারে সমীর ওকে কিছুই জানায় নি। সমীরকে জিজ্ঞেস করা হয়নি যে কোন হোটেলে উঠেছে না হলে একবার দেখা করে আসতো বুধাদিত্য। ঝিলামের কথা শুনে ওর নাকে একটা সন্দেহের গন্ধ আসে। সমীর খুব বড় একটা খেলা খেলছে ঝিলামের সাথে।

পরেরদিন ভাগ্যবশত সমীরের সাথে একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে দেখা হয় বুধাদিত্যের। এবারে বুধাদিত্য লক্ষ্য করে যে ওর সাথে সেই মেয়েটা যাকে ও হোটেল শাংরিলতে দেখেছে। সমীরের ওপরে যা সন্দেহ করেছিল সেটা চোখে দেখে প্রতীত হয় যে সমীর অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলেছে। লুকিয়ে লুকিয়ে ওদের বেশ কয়েকটা ছবি তোলে নিজের মোবাইলে। একটা ভিডিও তুলে নেয়, যেখানে সমীর বেশ গা এলিয়ে মেয়েটার সাথে হাসছে গল্প করছে, কাঁটা চামচে নুডুলস তুলে খাইয়ে দিচ্ছে। মেয়েটা বেশ হাত ধরে আছে সমীরের, দেখে মনে হলো ওদের প্রেম অনেক গভীর খাদে বয়ে চলেছে। চোখের সামনে ঝিলামের চেহারা ভেসে ওঠে। খাবার পরে বুধাদিত্য সোজা ওদের টেবিলে যায় আর সমীরের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। সমীর ওকে দেখে ভুত দেখার মতন থমকে যায়। এবারে হাতেনাতে ধরা পড়ে গেছে সমীর। পাশে বসা মেয়েটা ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে ব্যাপারটা। বুধাদিত্য সমীরকে বাইরে ডাকে কিছু কথা বলার জন্য।

বাইরে যেতেই বুধাদিত্য সমীরকে চেপে ধরে, “কি ব্যাপার একটু খোলসা করে জানা আমাকে।”

সমীর একটু রেগে যায় ওর কথায়, “তোর সব ব্যাপারে মাথা গলাবার কি দরকার। আমি আমার জীবন নিয়ে কি করবো না করবো সেটা তোকে জানিয়ে করতে হবে নাকি?”

বুধাদিত্যের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, চোখের সামনে ঝিলামের হাসি মাখানো মিষ্টি মুখ ভেসে ওঠে। সমীরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বাইকে বসে ঝিলাম। বুধাদিত্য চিবিয়ে চিবিয়ে সমীরকে বলে, “তোদের দুজনকে দেখে তো মনে হয় না যে তোদের সম্পর্ক শুধুমাত্র শারীরিক। মানসিক দিক থেকেও তুই ওই মেয়েটার দিকে ঝুঁকে গেছিস বলে মনে হচ্ছে?”

সমীর প্রথমে হেসে উড়িয়ে দিতে চায়, “না রে, তোকে বলেছিলাম তো, এই ব্যাস ফ্লারটিং, শালা আর কি, এক রাত ব্যাস কাম খালাস।”

বুধাদিত্য, “এটা এক রাতের ব্যাপার নয় সেটা ভালো করে বোঝা যাচ্ছে সমীর। এই মেয়ে হোটেল শাংরিলাতে ছিল, এই মেয়ে হয়তো কাল তোর সাথে ছিল।”

সমীর কিছু বলতে যাবার আগেই বুধাদিত্যের সব সন্দেহ দূর করে মেয়েটা সমীরের পেছনে দাঁড়িয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে সমু, এনি প্রবলেম?”

বুধাদিত্য চোখ বন্ধ করে নেয়। চোয়াল শক্ত হয়ে যায় ওর, যাক কানে শুনে সন্দেহের ভিত অনেক মজবুত হয়ে গেছে। সমীর মেয়েটাকে ভেতরে যেতে বলে। ওকে বলে যে অনেক পুরানো এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে, তাই একটু কথা বলেই টেবিলে ফিরে যাবে। মেয়েটা একবার বুধাদিত্যের মুখের দিকে তাকায় একবার সমীরের মুখের দিকে তাকায়, তারপরে চলে যায় ভেতরে।

মেয়েটা চলে যেতেই সমীর বুধাদিত্যকে বলে, “ঝিলাম যা চায় সেটা ও পেয়ে গেছে। আমি আমার জীবনে কি করছি না করছি সেটা ওর দেখার দরকার নেই।”

বুধাদিত্য, “সমীর, ঝিলাম তোর বিয়ে করা বউ, তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা? আমি তোর সেক্সুয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন করবো না, ছেলে হয়েছিস যখন তখন যে শালা এদিকে ওদিকে মুখ মারবি সেটা আর নতুন কি? কিন্তু শালা মুখ মারতে গিয়ে প্রেমে পড়বি আর বাড়িতে বউ একা থাকবে?”

সমীর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ, তারপরে জিজ্ঞেস করে রাতে খালি আছে কিনা? বুধাদিত্য নিজের হোটেলের ঠিকানা দিয়ে দেয় আর বলে রাতে ওর জন্য অপেক্ষা করবে। বিস্তারিতভাবে কথা বলতে চায় সমীর ওর সাথে। রাতে সমীর ওর হোটেলের ঘরে আসে। বুধাদিত্য ওকে পরিষ্কার জিজ্ঞেস করে যে দুজনে একসাথে এক রুমে থাকছে কি না। মাথা দুলিয়ে মেনে নেয় সমীর, যে মেয়েটা আর সমীর এক রুমে আছে। বুধাদিত্যের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। বুধাদিত্য কারন জানতে চায়, কেন সমীর ঝিলামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। সমীরের সাথে কথাবার্তা টেপ করার জন্য চুপিচুপি মোবাইলে ভয়েস রেকর্ডার চালিয়ে দেয় বুধাদিত্য।

সমীর বুক ভরে এক নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে, “আগেও তোকে জানিয়েছিলাম ঝিলামের কথা। জানিনা তোর মনে আছে কি না। চাকরি পাওয়ার পরে ঝিলাম যে আরও বদলে যাবে সেটা আমি আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম। ও সুন্দরী, ও ভীষণ আকর্ষণীয়, তার চেয়ে বেশি ও ভীষণ জেদি আর বদরাগী। চাকরি পাওয়ার পরে নিজের অস্তিত্ব জাহির করে সবসময়ে। সকাল পাঁচটায় ঘুম থেকে ওঠে, স্কুলে বেরিয়ে যায় আমি ঘুম থেকে ওঠার আগেই। রাতে আমার দেরি হয় ফিরতে, সেই নিয়ে ওর কথা শুনতে হয়। ওর কথা সাড়ে আটটার মধ্যে খেয়ে নিতে হবে, সাড়ে নটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে হবে। এত নিয়ম কানুন মেনে চলা বড় কঠিন। আমি হাঁপিয়ে উঠেছি এই দুই, তিন মাসে। জোর করে গাড়ি কেনার জন্য, কিন্তু আমি শেষ পর্যন্ত বাইক কিনি। আজকাল আবার আমার পয়সার হিসাব চায়। কই, আমি তো ওর চাকরির পয়সার হিসাব চাই না? আমার আঁতে লাগে যখন আমার খরচ খরচার ওপরে হাত লাগাতে চায়।”

বুধাদিত্য চুপচাপ শুনে যায়। সমীর বলে চলে, “আজকাল জানিস আর আমাদের সেক্স হয়না। কোলকাতায় থাকাকালীন ঝিলাম উদ্দাম ছিল, প্রচন্ড উচ্ছল ছিল, সেই ঝিলাম অনেক বদলে গেছে। আমি বাড়ি ফিরি, ঝিলাম ঘুম চোখে দরজা খুলে আমার জন্য খাবার গরম করে শুতে চলে যায়। আমি চুপচাপ ওকে না ঘাঁটিয়ে নিজের খাবার খাই। এমত অবস্থায় আর কি একসাথে থাকা যায়? তুই জানিস না, এই দিল্লী এসেই ওর একটা মিসক্যারেজ হয়েছিল। তারপরে আমাদের শারীরিক সম্বন্ধ অনেক কমে যায়। আমাকে দোষ দেয় যে আমার নাকি স্পার্ম কাউন্ট কম।”
বুধাদিত্য, “তুই কি সে নিয়ে ডাক্তার দেখিয়েছিলি কোনদিন?”

সমীর, “না আমার কিছু হয়নি, ওর মা হবার ক্ষমতা নেই। ওর গাইনি দেখে বলেছিল যে ওর গর্ভাশয়ে কিছু সমস্যা আছে।”

বুধাদিত্য, “দ্যাখ, আমি সেসব বিশেষ জানি না, তবে আমার মনে হয় তোর একবার ডাক্তার দেখানো উচিত। তবে আমি এইটুকু বলতে পারি যে একটা মিসক্যারেজের পরে একটা মেয়ের মনে বড় আঘাত লাগে, সেই আঘাত কাটতে একটু সময় লাগে। তুই কি সেই সময়টুকু ঝিলামকে দিয়েছিস?”

সমীর চুপ করে থাকে, বুধাদিত্যের বুঝতে কষ্ট হয় না যে ঝিলামের দিকে তারপরে হয়তো আর ফিরেও তাকায়নি ঠিকভাবে। বুধাদিত্য জিজ্ঞেস করে বম্বের সেই মেয়েটার কথা। বুধাদিত্য দু’টো সিগারেট জ্বালায়, একটা সমীরকে দেয়। সমীর সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বলে, “বম্বে অফিসে নন্দিতার সাথে দেখা।” মাথা নাড়ায় বুধাদিত্য, অবশেষে সমীরের জীবনের নতুন নারীর নাম জানা গেল, নন্দিতা। সমীর বলে চলে, “এক বিকেলে মিটিংয়ের পরে আমার মাথায় এই সব চিন্তা ভাবনা ঘোরে, আমি খুব ড্রিঙ্ক করি। আর ড্রিঙ্কের বশে নন্দিতাকে মনের কথা বলে দেই, সেদিন রাতে দু’জনে আমার রুমে এসে পাগলের মতন সহবাস করেছিলাম। আমি তারপরে ওর প্রতি ঝুঁকে যাই। নন্দিতাকে ফেলে দেওয়ার এখন উপায় নেই। আমি সেইজন্য নন্দিতাকে দিল্লীতে ট্রান্সফার করিয়ে নিয়ে এসেছি। একদিকে ঝিলাম, একদিকে নন্দিতা। একজনকে ছাড়তে পারিনা বাড়ির চাপে, আত্মীয় স্বজনের চাপে, অন্যজনকে ছাড়তে পারিনা কেননা মন মানে না।”

সব কথা বলে সমীর চুপ করে থাকে। বুধাদিত্যের কান লাল হয়ে যায় সব কথা শুনে, জিজ্ঞেস করে সমীরকে, “কি করতে চাস তুই? এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। এই রকম দুই নৌকায় পা দিয়ে তো চলা যায় না।”

সমীর সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়ে বলে, “মাঝে মাঝে মনে হয় ডিভোর্স দিয়ে দেই। কিন্তু ওর পরিবার, আমার পরিবার ডিভোর্সের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, এমন কি ঝিলাম আমাকে ডিভোর্স দিতে চাইবে না। আমার সেক্সুয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন করেছিল ঝিলাম, অনেকবার করেছিল। আমি ঝিলামকে দেখাতে চেয়েছিলাম যে আমি এক সবল পুরুষ, যেকোনো নারীকে সঙ্গমের সুখ দিতে পারি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি নন্দিতাকে ভালোবেসে ফেলি। আমি ঝিলামের সেক্সুয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন করবো না কোনদিন। ও আমার সেক্সুয়ালিটি নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবে না কোনদিন। আমি কোথায় কি করছি, না করছি সেটা ওর জেনে দরকার নেই। আমিও দেখতে যাবো না ও কার সাথে ঘুরছে, কার সাথে রাত কাটাচ্ছে।”

ঝিলামের মতন মিষ্টি, পবিত্র মেয়ের নামে ওই কথা শুনে রেগে আগুন হয়ে যায় বুধাদিত্য। মনে হয় এক থাবড়ে মাথা ফাটিয়ে দেয় সমীরের, গর্জে ওঠে বুধাদিত্য, “ঝিলাম কি কোনদিন তোকে ছাড়া বাড়ির বাইরে রাত কাটিয়েছে? ঝিলাম কি কোনদিন তোকে ছাড়া কোথাও ঘুরতে গেছে? ঝিলামের নামে এই কথা বলার আগে তোর বুকে একবারের জন্য বাধলো না? তোকে বুকে আগলে বাঁচিয়ে এনেছে আর তুই মাদা... শালা শুয়োরের বাচ্চা, শেষ পর্যন্ত, বউয়ের নামে এতো জঘন্য অপবাদ দিলি?”

সমীর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে, “সারা জীবন ধরে কি আমাকে সেই এক কথা শুনাতে চাস? ঝিলামের প্রতি তোর অত দরদ কিসের বোকা... তুই কি আমার বউয়ের সাথে শুয়েছিস?”

রাগে কাঁপতে শুরু করে বুধাদিত্য, কান মাথা ভোঁভোঁ করতে শুরু করে দেয়। সত্যি ওর বুকের অনেকটা জায়গা জুড়ে ঝিলামের বসবাস। যদিও ঝিলাম সেই কথা এখন জানেনা জানলেও হয়তো এই জানে যে বুধাদিত্যের মনে কোন পাপ নেই। মনকে শক্ত করে বেঁধে নেয় বুধাদিত্য, হৃদয়ের টান যেন চোখে না এসে যায়। বুধাদিত্য চিবিয়ে চিবিয়ে সমীরের প্রশ্নের উত্তর দেয়, “মাদার... কুত্তারবাচ্চা, এই কথা বলতে তোর একবার বাধলো না? গত ছয় বছর পরে তোদের পেয়ে আমার মনে হয়েছিল যে, দিল্লীতে আমার নিজের বলতে কেউ আছে। আজ আমার বুকের সেই আশা সেই ভালোবাসা খানখান করে দিলি তুই।” সমীরের মুখ চোখ লাল হয়ে যায়। সমীর মনেপ্রানে জানে যে বুধাদিত্য ওকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছে সেই রাতে। চুপ করে থাকে, সমীর, বুধাদিত্য গর্জে ওঠে, “বেরিয়ে যা শালা, বোকা... এখুনি বেরিয়ে যা আমার রুম থেকে, আমার চোখের সামনে থেকে। মাদার... একবার ভেবেছিলাম তোদের থেকে দুরে চলে যাবো, কিন্তু যাবো না এবারে। তোর জ্বালানো এই আগুনের খেলার আমি শেষ দেখে যাবো। ঝিলামের চুলের ডগা যদি এই আগুন ছোঁয়, কথা দিচ্ছি, তুই শালা পরের দিনের সূর্যোদয় দেখতে পাবি না।”

সমীর উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে, রাগে, দুঃখে দুচোখ লাল হয়ে গেছে ওর। রোষ ভরা নয়নে বুধাদিত্যের দিকে তাকিয়ে বলে, “হ্যাঁ আমি চলে যাচ্ছি, আর তুই যদি আমাদের মাঝে আসিস তাহলে সেই আগুনে তোকে জ্বালিয়ে দেবো।” সমীর দরজা খুলে বেরিয়ে যায়, বুধাদিত্য হাতের মুঠি শক্ত করে চেয়ারে বসে থাকে। ভীষণ রাগে সারা শরীর কাঁপতে শুরু করে দেয়, একবার মনে হয় সমীরকে খুন করে ওর কবল থেকে ঝিলামকে ছাড়িয়ে নিজের বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখে। কিন্তু সেই পদক্ষেপ ওকে আইনের চোখে, ঝিলামের চোখে নিচ, ঘৃণ্য অপরাধী বলে প্রমানিত করবে। মাথা কাজ করে না বুধাদিত্যের।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top