What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

pinuram রচনাসমগ্র (7 Viewers)

পর্ব পনেরো – রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#5-117)

একটা মদের গেলাস উঠিয়ে নিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে। এক কোনায় দুইজন মহিলাকে একসাথে দেখে দানা থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। উলঙ্গ দেহের গঠন দেখে কাউকেই চিনতে ভুল করে না দানা। বহুবার এই নারীদের সাথে যৌন সহবাস করেছে। শ্যামবর্ণের কঙ্কনাকে চিনতে ভুল হয় না দানার, প্যান্টির ভেতর থেকে ফোলা যোনির চারপাশ থেকে কুঞ্চিত কেশ উঁকি মারছে। ফর্সা লাস্যময়ী নিটোল স্তনের অধিকারিণী নাস্রিনের দেখা পেয়ে বুকের রক্ত টগবগ করে ফুটতে শুরু করে দেয়। খানিক তফাতে স্থুলকায়া ফর্সা রাগিণীকে চিনতে একটু ভুল হয় না, বড় বড় মেদ যুক্ত ঝুলে পড়া স্তন জোড়া দেখে অতি সহজে চেনা যায়। এদের দেখতে পেয়ে আপনা হতেই গেলাসের চারপাশে ওর হাতের থাবা শক্ত হয়ে বসে যায়। এদের চোখ বাঁচিয়েই ওকে ওদের ওপরে নজর রাখতে হবে। একবার এদের চোখে পড়ে গেলে সর্বনাশ, চারদিকে সসস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী। দানা একদম খাঁচায় আটকা, একটু এদিক ওদিক হলেই মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। চতুর্থ মহিলা, সুন্দরী লাস্যময়ী সিমোনে খৈতান। কেউই কারুর সাথে কথাবার্তা বলছে না, সবাই চুপচাপ। নাস্রিনের উলঙ্গ দেহ আর সিমোনের উলঙ্গ দেহ দেখে দানার মাথার রক্ত আর কামোত্তেজনা, দুটোই একসাথে বেড়ে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে জাঙ্গিয়ার ভেতরে সুপ্ত সিংহ ওদের ছিঁড়ে খাবার জন্য গর্জন করে ওঠে।

অনেকের নজর ওর দিকে, কেউ হয়তো ধারনা করতে পারেনি একজন সুঠাম স্বাস্থের কম বয়সী ছেলে লাল মুখোশ পরিধান করে এই সমাগমে আসবে। সবাই ভেবেছিল সুঠাম স্বাস্থের কম বয়সী ছেলে শুধু মাত্র নীল কার্ড ধারী হবে।

ঠিক সেই সময়ে একটা ঘন্টা বেজে ওঠে হলের মধ্যে। সদস্যেরা সবাই যে যার জায়গায় দাঁড়িয়ে যায়। একপাশের একটা ঘরের দরজা খুলে যায়। এক এক করে সার বেঁধে উলঙ্গ মেয়েরা আর ছেলেরা বেরিয়ে আসে। সবার বাজুতে একটা নীল রঙের কাপড় বাঁধা, তাছাড়া ওদের সারা অঙ্গে একটা সুতো পর্যন্ত নেই। ইন্দ্রাণী কি কোনোদিন এই সমাগমে এসেছিল? ওর মনে পড়ে যায়, একবার ইন্দ্রাণী ওকে বলেছিল যে কঙ্কনার সাথে এক সমাগমে গিয়েছিল, সেখানে সবাই উলঙ্গ হয়ে চরম কামকেলিতে মেতে উঠেছিল। সবার সামনে উলঙ্গ হয়ে সবার সাথে যৌন সঙ্গমে রাজি হয়নি ইন্দ্রাণী তাই আর কঙ্কনার সাথে যায়নি।

ওই ঘর থেকে বেরিয়ে আসা মেয়েরা সবাই সুন্দরী, তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের মুখ চেনা। কেউ টিভি সিরিয়ালের অভিনেত্রী, কেউ সিনেমার অভিনেত্রী, কেউ নামকরা মডেল। সবাইকে দারুন ভাবে সাজানো হয়েছে, চোখের কোলে কাজল, ঠোঁটে গাড় রঙের লিপস্টিক, চোখের পাতার ওপরে রঙ করা, গালে গোলাপি রুজ। এক এক মেয়ে যেন স্বর্গের নর্তকী, উলঙ্গ হয়ে ওদের জাহাজে এসে ওদের মনোরঞ্জন করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। বেশির ভাগ মেয়েরাই ফর্সা, নিটোল বড় বড় স্তনের অধিকারিণী, সুগোল পাছা, পুরুষ্টু ঊরু। কোন মেয়ের ঊরুসন্ধি একদম মসৃণ করে কামানো, কারুর একটু একটু কেশ আছে কারুর যোনি বেদির ওপরে ছোট কেশের পাটি, তবে সবার যোনি চেরা সম্পূর্ণ ভাবে রোমহীন। কোন মেয়ের যোনি পাপড়ি, যোনি চেরা থেকে ফুটে বেরিয়ে উঁকি মারছে।

এদের অনেকের চেহারা টিভিতে, পত্রিকায়, রাস্তার হোর্ডিঙে দেখা যায়। ছোট পর্দার উঠতি নায়িকা রিচা দত্ত, বড় পর্দার স্বনামধন্য নায়িকা কাকলী, কিছুদিন আগেই বিয়ে হয়েছে এক লাস্যময়ী নায়িকা দিব্যা, নামী মডেল বৈশাখী এমন আরো অনেক চেনা চেহারা দেখে দানা অবাক হয়ে যায়। টিভিতে সিনেমার পর্দায় এই অভিনেত্রী মডেলদের মিষ্টি হাসি দেখে বোঝার উপায় নেই এরা টাকার জন্য বহু পুরুষের সামনে কাপড় খুলে উলঙ্গ হয়ে যৌন সঙ্গমে মেতে উঠতে পারে। অবশ্য এই পৃথিবীতে অর্থের নেশার চেয়ে বড় নেশা আর কিছু নয়। লাল কার্ডের মানুষদের কাছে অনেক টাকা, আর সেই টাকা দিয়ে একরাতের জন্য বহু সুন্দরী লাস্যময়ী কোমল নারী যোনির স্বাদ আস্বাদন করবে। ছেলেদের মধ্যেও বেশ কয়েকজনের মুখ চেনা, কয়েকজন মডেল তবে সবাই সুঠাম স্বাস্থ্যবান। এতগুলো মেয়েদের উলঙ্গ দেখে হয়তো ওদের লিঙ্গ আগে থেকেই দাঁড়িয়ে গেছে।

উলঙ্গ ছেলে মেয়েরা মাঝখানের টেবিল ঘিরে গোল করে দাঁড়িয়ে পড়ে। লাল কার্ডের সদস্যেরা সবাই নিজের নিজের জায়গা গ্রহন করে। বাকিদের দেখাদেখি দানাও কঙ্কনা, নাস্রিন আর সিমোনের নজর বাঁচিয়ে ওদের থেকে বেশ দূরে একটা লম্বা সোফার ওপরে হেলান দিয়ে আয়েশ করে বসে পড়ে। উলঙ্গ নীল বাজু বন্ধে বাঁধা ছেলে মেয়েদের চোখে মত্ত কামের রঙ, সবাই কামোন্মাদ হয়ে উঠেছে। হয়তো ওদের ইতিমধ্যে কোন ওষুধ অথবা ড্রাগস খাইয়ে দেওয়া হয়েছে তাই ওদের চেহারায় লালচে রঙ ধরে গেছে, চোখ জোড়া কেমন ভাসাভাসা আর ঢুলুঢুলু। মৃদু সঙ্গীতের তালে তালে ছেলে মেয়েরা লাস্যময়ী নাচ শুরু করে দেয়। এই নির্দেশ যেন আগে থেকেই ওদের দেওয়া ছিল, কখন কি করতে হবে। এক এক করে মেয়েরা নাচতে নাচতে পুরুষ সদস্যদের দিকে এগিয়ে যায় আর ছেলে গুলো বসে থাকা মহিলা সদস্যদের দিকে এগিয়ে যায়।

দানার বুক ঢিপঢিপ করতে শুরু করে, চুপচাপ বসে থাকলে সবার সন্দেহের ঘেরে পড়ে যাবে। দানা মদের গেলাসে চুমুক দিয়ে আঙ্গুলের ইশারা করে বৈশাখী আর রিচাকে কাছে ডেকে নেয়। বৈশাখীর ওপরে মনে হয় পাশের এক বয়স্ক ভদ্রলোকের নজর ছিল, ওর দিকে এগিয়ে যেতেই পাশের ভদ্রলোক দানার দিকে অমায়িক হেসে বৈশাখীকে নিজের কাছে ডাকে। দানা মাথা নাড়িয়ে বৈশাখীকে ওর দিকে যেতে বলে। রিচা কোমরে হাত রেখে ধীর পায়ে মত্ত চালে দানার দিকে এগিয়ে যায়। ওর পেছনে দাঁড়িয়ে সদ্য বিবাহিতা নায়িকা দিব্যাকে দানা কাছে ডেকে নেয়। প্রায় সব পুরুষের ভাগ্যে অন্তত দুটো করে মেয়ে জুটে যায়।

রিচা আর দিব্যা দানার দুইপাশে বসে পড়ে। রিচা ওর বুকের ওপরে হাতের পাতা মেলে ওকে আলতো নখের আঁচড় কেটে কামোত্তেজিত করে তোলে। দুই পেশীবহুল হাতে দুই নারীর কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে টেনে নেয় দানা। দিব্যার ভারী নিটোল স্তন নিজের প্রশস্ত ছাতির ওপরে পিষে ধরে। দানার পেটের ওপরে আলতো নখের আঁচড় কেটে দিয়ে রিচা ওর পেটের ওপরে ঝুঁকে চুমু খেতে শুরু করে দেয়। কামোন্মাদ দানা রিচার মাথা ধরে নিজের যৌনাঙ্গের দিকে ওর মাথা ঠেলে দেয়। জাঙ্গিয়ার বাঁধনে বাঁধা ভিমকায় কঠিন লিঙ্গের ছটফটানি দেখে রিচা মৃদু কামুকী হাসি দেয়। দিব্যার স্তন জোড়া হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে পিষতে শুরু করে দেয় দানা। দিব্যা দুই ঊরু মেলে ধরে নিজের যোনি মেলে দেয় দানার সামনে। ফর্সা গোলাপি কোমল যোনির দেখা পেয়ে দানার শরীরের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। একপাশে রিচা একপাশে দিব্যা, কাকে আগে ভোগ করবে সেটাই ঠিক করতে পারে না। ঠোঁটে চুমু খেতে উদ্যত হয় দানা, দিব্যার চুল টেনে ধরে ওর মাথা নিজের মুখের কাছে নিয়ে আসে। বাদামী রঙ মাখানো রসালো ঠোঁট জোড়া পুরু কালো ঠোঁটে চেপে ধরে। ভীষণ কামাবেগে দিব্যার চোখ বুজে যায়, দানার মুখ আঁজলা করে ধরে ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে জিবের খেলা খেলে চলে দিব্যা। অন্যদিকে রিচা ওর জাঙ্গিয়া নামিয়ে দিয়ে নরম আঙ্গুল দিয়ে ওর কঠিন উত্তপ্ত লিঙ্গ মুঠির মধ্যে ধরে নাড়াতে শুরু করে দেয়। লিঙ্গের ওপরে নরম আঙ্গুলের পরশ পেয়েই দানার শরীর ছটফটিয়ে ওঠে। ঊরুসন্ধির ওপরে রিচার উষ্ণ শ্বাসের পরশ পেয়ে দানার শরীর চঞ্চল হয়ে ওঠে কাম তাড়নায়।

দিব্যার ঠোঁটে চুমু খেতে খেতে, আড় চোখে একবার নাস্রিন আর কঙ্কনার ওপরে নজর করে। শ্যামবর্ণের কঙ্কনার ওপরে আর নীচে দুই সুঠাম স্বাস্থ্যবান ছেলে, একজন ওপরে কঙ্কনা উপুড় হয়ে শুয়ে অন্য জন ওর পিঠের ওপরে। দুই পুরুষের মাঝের ভীষণ কামুকী কঙ্কনা কাম যাতনায় ছটফট করছে। নীচে চিত হয়ে শুয়ে থাকা ছেলেটা কঙ্কনার দুই স্তন হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে বেশ করে চটকে পিষে একাকার করে দেয় অন্যদিকে উপরে থাকা ছেলেটা ওর পাছ ফাঁক করে, কোমর ধরে উঁচিয়ে পেছন থেকে শিক্ত যোনির মধ্যে লিঙ্গ ঢুকিয়ে মন্থনে মেতে ওঠে। নাস্রিন থেমে নেই, এক ছেলের কোলে বসে তার লিঙ্গ নিজের যোনির মধ্যে ঢুকিয়ে মত্ত ছন্দে চরম গতিতে ভীষণ যৌন সঙ্গমে মেতে উঠেছে। কামোন্মাদ হস্তিনী রাগিণী, একটা ছেলের ওপরে উঠে বসে ওর মুখের ওপরে নিজের ঊরুসন্ধি ঘষে ঘষে ওকে প্রায় মেরে ফেলার যোগাড় করছে। সিমোনে একটা ডিভানে দুইপাশে দুটো ছেলেকে নিয়ে চরম কামকেলিতে মত্ত। একজন ছেলে ওর স্তন জোড়া পিষে ডলে একাকার করে দেয় অন্যজনে ওর মেলে ধরা উরুমাঝে মাথা গুঁজে ওর যোনি লেহন করে সুখ প্রদান করে। এক দৃশ্য প্রত্যেক জুটির মধ্যে, কোথাও একটা নারী সদস্যের সঙ্গে তিনটে ছেলে যৌন সঙ্গমে মত্ত, কোথাও একটা পুরুষ সদস্যের সাথে তিনটে মেয়ে যৌন সঙ্গমে মেতে, কোথাও আবার একটা মেয়েকে ডিভানে শুইয়ে দিয়ে, একজন ওর যোনির মধ্যে লিঙ্গ ঢুকিয়ে দিয়েছে, অন্য একজন পায়ুছিদ্রে একজন মাথার কাছে বসে মেয়েটার মুখের মধ্যে লিঙ্গ ঢুকিয়ে দিয়েছে। সারা হল ঘর ময় শুধু মাত্র কামগন্ধে আর কামার্ত মিলিত কণ্ঠ স্বরে ভরে উঠেছে। কোন সদস্যের মুখে কোন কথা নেই শুধু মাত্র তীব্র কামার্ত শীৎকার ছাড়া, “হ্যাঁ হ্যাঁ চোদ চোদ... উফফফ আরো জোরে...” “এই নে মাগী, খানকী মাগী... বড্ড গরম তুই... শালী পর্দায় দেখে তোর পোঁদ মারার খুব শখ ছিল...” ইত্যাদি... রিচা ততক্ষণে দানার লিঙ্গ মুখের মধ্যে নিয়ে চুষতে শুরু করে দেয়। দানা, দিব্যাকে ঠেলে সোফার ওপরে শুইয়ে দেয়। সোফার ওপরে শুয়ে পড়ে দিব্যা দুই ঊরুর বুকের কাছে টেনে ধরে ঊরুসন্ধি দানার সামনে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দেয়।

দানার ওই শিক্ত কোমল যোনি মন্থনে বিশেষ মন ছিল না, কি করে নাস্রিন আর কঙ্কনাকে বাগে আনা যায় সেটাই চিন্তা করে। কিন্তু চুপচাপ বসে থাকলেই কারুর নজরে পড়ে যাওয়ার ভয় আছে। ইতিমধ্যে ওদের চারজনের নজর যে দানার ওপরে পড়েনি কে বলতে পারে। তবে ওরা কেউই এখন পর্যন্ত দানার কাছে আসেনি, সুতরাং দানা একটু নিশ্চিন্ত হয়ে যায়, হয়তো ওরা অবাক হয়েছে কিন্তু চিনতে হয়তো পারেনি।

মেলে ধরা দিব্যার পুরুষ্টু ঊরু যুগল দুই হাতে উপরের দিকে ঠেলে দিয়ে ঊরুসন্ধির ওপরে মাথা নামিয়ে আনে দানা। দিব্যার যোনি থেকে নির্গত ঝাঁঝালো তীব্র কামনা ভরা মাদকতাময় ঘ্রাণ দানাকে পাগল করে তোলে। জিব বের করে দিব্যার যোনি লেহনে মেতে ওঠে। অন্য দিকে চরম কামনা ভরে ওঠে রিচা, ওর লিঙ্গ মুখের মধ্যে নিয়ে চুষে চেটে একাকার করে দেয়। দানার ভিমকায় লিঙ্গ রিচার মুখের মধ্যে ফেটে পড়ার যোগাড় হয়ে যায়। রিচাকে নিজের লিঙ্গের থেকে টেনে দাঁড় করিয়ে দিব্যার ওপরে শুইয়ে দেয়। দুই নারী সমকামী কামকেলিতে মেতে ওঠে, স্তনের সাথে স্তন মিলিয়ে, ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে একে ওপরের শরীর সুধা আস্বাদনে মেতে ওঠে। দানার দিকে দুই উন্মুক্ত যোনি, উপরে রিচার নীচে দিব্যার। দুই নরম ফর্সা ফোলা যোনি দেখে দানার বুকের রক্ত ঊরুসন্ধির দিকে ধেয়ে যায়। রিচার পাছার ওপরে বেশ কয়েকটা চাঁটি মেরে ওদের পেছনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। পাছা জোড়া ফাঁক করে রিচার কোমর উঁচিয়ে নিজের লিঙ্গের সমান্তরালে নিয়ে আসে। দুই আঙ্গুল ঢুকিয়ে দেয় পিচ্ছিল যোনির মধ্যে। বার কতক আঙ্গুল দিয়ে রিচার যোনি মন্থন করার পরে এক ধাক্কায় অর্ধেক লিঙ্গ রিচার কোমল কচি যোনির মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। দিব্যা রিচাকে দুই হাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে নিজের বুকের ওপরে চেপে ধরে। দানা কামোন্মাদ ষাঁড়ের মতন রিচার যোনি মন্থনে মেতে ওঠে। বেশ কিছুক্ষণ রিচার যোনি মন্থন করার পরে ওর যোনি থেকে লিঙ্গ বের করে নীচে শুয়ে থাকা দিব্যার শিক্ত কোমল যোনির মধ্যে ঢুকিয়ে মন্থনে মেতে ওঠে। এই ভাবে একবার দিব্যার যোনি একবার রিচার যোনির মধ্যে লিঙ্গ সঞ্চালন করে নিজের কামক্ষুধা মেটাতে মেতে ওঠে।

চারপাশে শুধু ভীষণ রিরংসা ভরা যৌন সঙ্গমের খেলা। ইতিমধ্যে একজন সদস্য সিমোনের দিকে এগিয়ে যায়। এটা নিয়মে আছে কি নেই সেটা জানা নেই তবে সিমোনে দুই হাত মেলে ওই সদস্যকে নিজের বুকের ওপরে আহবান জানায়। দানার মনে পড়ে যায়, একদা সিমোনে ওকে বলেছিল যে একমাত্র ওর স্বামী ছাড়া আর দানাকে ছাড়া আর কাউকে ওর ওপরে উঠে যৌন সহবাস করতে দেয়নি। তাহলে কি এই মুখোশধারী পুরুষ স্বয়ং মোহন? স্বামী স্ত্রী দুইজনে মিলে এই ভীষণ কামক্রীড়ার মহা কুম্ভে যোগদান করতে এসেছে? হতেও পারে এই তথাকথিত উচ্চবিত্ত ক্ষমতাশালী নর নারীরা নিজের কামক্ষুধা মেটানোর জন্য অনেক কিছুই করতে পারে আর সেটা দানা নিজের জীবন থেকে উপলব্ধি করেছে।

দানা কিছু পরে রিচাকে টেনে দিব্যার ঘর্মাক্ত লাস্যময়ী ক্লেদাক্ত দিব্যার শরীরের ওপর থেকে টেনে নামিয়ে দেয় তারপরে নিজেই সোফার ওপরে শুয়ে পড়ে। দিব্যাকে ইশারায় ওর লিঙ্গের ওপরে বসতে নির্দেশ দেয়। দিব্যা উঠে বসে ওর লিঙ্গ মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে চুষে চেটে পিচ্ছিল করে দেয়। অণ্ডকোষ আঙ্গুলের মাঝে নিয়ে টিপে টিপে ওর অণ্ডকোষে বীর্যের ঝঞ্ঝা তৈরি করে দেয়। দানার লিঙ্গ কঠিন শাল গাছের মতন উপরের দিকে উঁচিয়ে যায়। দুই মেয়েই ওর লিঙ্গের কাছে চলে যায়। রিচা ওর লিঙ্গের মাথা মুখের মধ্যে নিয়ে আলতো করে চুষে চেটে দিতে শুরু করে আর দিব্যা ওর অণ্ডকোষ মুখের মধ্যে নিয়ে চুষতে শুরু করে দেয়। দানার দেহ কাম যাতনায় ছটফট করে ওঠে। ওর বীর্য ঊর্ধ্বমুখী হয়ে আসে। রিচা আর দিব্যাকে ওর লিঙ্গ ছেড়ে নিজেদের যোনির মধ্যে ঢুকাতে নির্দেশ দেয়। দিব্যা মিচকি হেসে রিচাকে সরিয়ে দিয়ে দুই পুরুষ্টু ঊরু মেলে ওর ঊরুসন্ধির উপরে বসে পড়ে। বৃহৎ কঠিন লিঙ্গ দিব্যার শিক্ত কোমল যোনি বরাবর চেপে যায়, ওর লিঙ্গ ইতিমধ্যে দুই মেয়ের মুখের লালায় পিচ্ছিল হয়েছিল, দিব্যা ওর ঊরুসন্ধির ওপরে উঠে বসার ফলে ওর যোনি নির্গত কাম রসে দানার লিঙ্গ ভিজে যায়। বার কতক কোমর আগুপিছু নাড়িয়ে দিব্যা দানার লিঙ্গ নিজের কোমল আঁটো যোনির মধ্যে ঢুকিয়ে নেয়। রিচা দুই হাতে দিব্যার স্তন জোড়া খামচে ধরে পিষে ডলতে শুরু করে দেয়। দানা একবার রিচার পাছা চটকায় একবার দিব্যার আন্দোলিত স্তন চটকায়। দিব্যা ওর লিঙ্গ নিজের আঁটো যোনির শেষ প্রান্তে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে ওর ওপরে লাফাতে লাফাতে নিজের যোনি মন্থনে মেতে ওঠে।

এইভাবে এই ভঙ্গিমায় বেশ কিছুক্ষণ দিব্যার যোনি মধ্যে লিঙ্গ সঞ্চালন করার পরে দানা উঠে বসে আর দিব্যা পা মেলে শুয়ে পড়ে। দানা ওর যোনি মধ্যে থেকে লিঙ্গ বের করে নেয় আর রিচাকে সোফার ওপরে বসিয়ে দেয়। সোফা থেকে নেমে পড়ে, রিচার পা দুটো নিজের কাঁধের ওপরে উঠিয়ে দিয়ে ওর কচি আঁটো নরম যোনির মধ্যে নিজের লিঙ্গ ঢুকিয়ে চরম গতিতে মন্থনে মেতে ওঠে। ধীরে ধীরে দানার কামোত্তেজনা শিখরে উঠে যায়, ওর লিঙ্গের ছটফটানি দেখে রিচা ওকে যোনির মধ্যে থেকে লিঙ্গ বের করে নিয়ে কন্ডোম পরতে অনুরোধ করে। দানার সেই আবেদন শোনার শক্তি নেই, ক্ষিপ্র ষাঁড়ের মতন রিচাকে সোফার সাথে পিষে ধরে ওর যোনির মধ্যে বীর্য স্খলন করে দেয়। দিব্যা ততক্ষণে নিজের যোনির মধ্যে দুই আঙ্গুল ঢুকিয়ে প্রচন্ড বেগে আঙ্গুল সঞ্চালন করে রাগ মোচন করে। কাম ক্ষুধা মেটার পরে তিনজনে নিস্তেজ হয়ে কিছুক্ষণ সোফার ওপরে জড়াজড়ি করে পড়ে থাকে।
 
পর্ব পনেরো – রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#6-118)

আশেপাশের অনেকের এক অবস্থা, অনেকেই অনেক আগেই কাম রস স্খলন করে এলিয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আবার উঠে গিয়ে বার থেকে মদ আর কিছু ট্যাবলেট খেয়ে দ্বিতীয় বারের জন্য যৌন সঙ্গমের প্রস্তুতি নেয়।
দানা দুই নারীকে জড়িয়ে ধরে ওদের গালে চুমু খেয়ে দেয়। দিব্যা আর রিচা দুইজনেই তৃপ্তি সহকারে নিজেদের শরীর দানার বাহুপাশে সমর্পণ করে দেয়। এইভাবে বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পরে একজন পুরুষ সদস্য এসে রিচাকে ডেকে নিয়ে যায়। দানা আলতো মাথা দুলিয়ে রিচাকে তার সাথে ছেড়ে দেয়। এইখানে একজনের কোলে এক মেয়ে বেশিক্ষণ থাকে না। এইখানে এই মেয়েরা সারা রাত যার ইচ্ছে হবে তার সাথেই চরম কামকেলিতে মেতে ওঠার জন্য এসছে।

দিব্যাকে কোলের ওপরে বসিয়ে ওর কোমল শরীর বাহু পাশে বেঁধে নরম স্তন জোড়া টিপতে টিপতে এপাশ ওপাশ ঘাড় ঘুরিয়ে বাকিদের দেখে নেয়। নাস্রিন আর কঙ্কনা শরীর এলিয়ে ডিভানে পড়ে রয়েছে। ওদের শরীর বেশ কয়েকজন ছেলের বীর্যে মাখামাখি। অন্যদিকে রাগিণীকে ঘিরে চার জন ছেলে তখন পর্যন্ত ওর সাথে চরম কামকেলিতে মত্ত। সিমোনে শরীর এলিয়ে এক পুরুষ সদস্যের কোলে একপ্রকার ঢলে পড়ে রয়েছে আর অন্যদিকে একজন ছেলে ওর যোনি ক্ষিপ্র গতিতে মন্থন করে চলেছে।

চরম কামকেলির পরে দানার মাথায় ঘোরে কি ভাবে নাস্রিন আর কঙ্কনাকে আক্রমন করা যায়। কোল থেকে দিব্যাকে নামিয়ে দিয়ে লাল জাঙ্গিয়া পরে বারের দিকে হেঁটে যায়। বার থেকে একটা বড় গেলাস হুইস্কি নিয়ে আর একটা সিগারেট প্যাকেট আর লাইটার নিয়ে হলের বাইরে চলে আসে।
এতক্ষণ মত্ত কাম ক্রীড়ার জন্য ওরা যে জাহাজে ছিল সেটা টের পায়নি। বড় জাহাজ দাঁড়িয়ে ছিল তাই সমুদ্রের ঢেউয়ে কম দুলছিল, কিন্তু হলের বাইরে এসে বুঝতে পারে যে জাহাজ বেশ দুলছে। এতক্ষণ প্রচণ্ড কাম ক্রীড়ার ফলে এই দুলুনি কেউ বুঝতে পারেনি তবে এক প্রস্থ কাম ক্রীড়া শেষ হয়েছে এইবারে হয়তো সবাই বুঝতে পারবে। ডেকে এসে দেখে আকাশ কালো হয়ে গেছে ঘন বর্ষার মেঘে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে শুধু কালো সমুদ্রের জল, থমথমে সমুদ্র। জল যেন থেমে গেছে, আসন্ন ঝঞ্ঝার অপেক্ষায় ঢেউয়ের আন্দোলন নিস্তব্দ হয়ে গেছে। অন্ধকারে জাহাজের চারদিকে কিছুই দেখা যায় না। উপরের ডেকে বেশ কয়েকজন বন্দুকধারী রক্ষী দাঁড়িয়ে, নিচের বড় ডেকে কেউই নেই। এই ডেকের ওপরেও বেশ কয়েকটা সোফা আর ডিভান পাতা রয়েছে। হয়তো রাত বাড়লে হল থেকে জোড়ায় জোড়ায় অথবা নর নারী এইখানে বেরিয়ে এসে যৌন সঙ্গমে মেতে উঠবে।

দানা মদের গেলাসে চুমুক দিতে দিতে ডেকের পেছনের দিকে চলে আসে। এইদিকে বেশ অন্ধকার। একটা সিগারেট জ্বালায় দানা, দূরে ছোট ছোট বেশ কয়েকটা মাছ ধরার নৌকা দেখতে পায়। শঙ্কর, রামিজ মনা এরা কি করছে? দানা নির্দেশ দিয়ে এসেছিল ওকে অনুসরন করতে। ওরা কি মাছ ধরার নৌকা যোগাড় করে এই জাহাজের পিছু করেছে? যদি করে থাকে তাহলে কিছু করে ওদের সঙ্কেত দিতে হবে। দানা লাইটার জ্বালায়, একবার দুইবার তিনবার। যদিও এই সঙ্কেত ওদের বলা ছিলোনা তাও বুক ঠুকে চেষ্টা করে দেখে, অন্ধকারে তীর লাগলেও লেগে যেতে পারে। ঠিক তখনি দূরে একটা নৌকা থেকে একটা টর্চ তিনবার জ্বলে ওঠে। দানা বুঝতে পারে ওই নৌকায় শঙ্কর রামিজ আর দলবল আছে। বুকে বল পায় দানা, এইবারে একবার অন্তত কঙ্কনা অথবা নাস্রিনকে প্রলুব্ধ করে পেছনের ডেকে নিয়ে আসতে হবে। এই মহাসাগরের জল ওর অজানা নয়, মহেন্দ্র বাবুর কাছে থাকাকালীন বহুবার এই সাগরের বুকে কাটিয়েছে, তুমুল ঝড় ঝঞ্ঝা মাথায় করে সমুদ্রের জলে ঝাঁপিয়ে সোনার বাক্স নিয়ে উঠে এসেছে। কিন্তু ওই নৌকা এখন এই জাহাজ থেকে অনেক দূরে। এতটা জল পেরিয়ে একা সাঁতরে যাওয়া সম্ভব কিন্তু সাথে কাউকে নিয়ে সাঁতরে যাওয়া একটু দুঃসাধ্য।

দানা আরো একবার লাইটার জ্বালায়, ওইদিকে নৌকা থেকে একবার টর্চ জ্বলে ওঠে। দানা সিগারেট ধরিয়ে হলের দিকে অগ্রসর হয়, ঠিক তখনি ওকে অবাক করে দুই লাল প্যান্টি পরা মহিলা সদস্য ওর দিকে এগিয়ে আসে। আধো আলো অন্ধকার হলেও ওই মহিলাদের চলন আর দেহের রঙ আর গঠন দেখে বুঝতে অসুবিধে হয় না যে ওরা কঙ্কনা আর নাস্রিন। তাহলে দানা ঠিক ধরেছিল, ওর ওপরে অনেক আগে থেকেই কঙ্কনা আর নাস্রিনের নজর ছিল, শুধু মাত্র সুযোগের অপেক্ষায় ছিল কখন দানাকে একা হাতের কাছে পাবে। হয়তো ইতিমধ্যে বাকি সদস্যরাও জেনে গেছে দানার আসল পরিচয়, বুক ঠুকে বলতে পারে সিমোনেকে এরা বলে দিয়েছে।

চেহারা থেকে মুখোশ খুলে ফেলে দানা, সেই সাথে নাস্রিন আর কঙ্কনা নিজেদের চেহারা থেকে মুখোশ খুলে ওর দিকে এগিয়ে আসে। দানার চোয়াল সঙ্গে সঙ্গে শক্ত হয়ে যায়। ওদের দুই নারীর চোখে ক্ষুধার্ত বাঘিনীর চাহনি এইদিকে দানা খেপা ষাঁড় হয়ে উঠেছে। কঙ্কনা আর নাস্রিনকে দেখে দানা কয়েক পা এগিয়ে যায়।

নাস্রিন আর কঙ্কনা একবার উপরের ডেকের দিকে বন্দুক ধারী রক্ষীদের দিকে তাকিয়ে ওদের অবস্থান দেখে নেয়। পেছন দিকে কোন বন্দুক ধারী রক্ষী নেই তবে সামনের দিকে একটু দুরেই দুই জন রক্ষী দাঁড়িয়ে। লাল কৌপিন পরিহিত এই ক্লাবের সদস্য দেখে ওরা আর এইদিকে আসে না। দুইজনে অন্যদিকে চলে যেতেই দানা একবার ঘাড় ঘুরিয়ে নৌকার অবস্থান দেখে নেয়।

দানার দিকে তাকিয়ে কঙ্কনা প্রশ্ন করে, “তোমাকে এইখানে এই ভাবে দেখতে পাবো আশা করতে পারিনি।”

ওদের কথাবার্তা শুনে দানা বুঝতে পারে যে রমলা তাহলে ওর সম্বন্ধে এদের কিছুই বলেনি। দানা চোয়াল চেপে কঙ্কনা আর নাস্রিনের দিকে চাপা গর্জন করে ওঠে, “অনেকদিন থেকেই তোমাদের খোঁজ করছি। পুরানো পাপের হিসাব নেওয়া বাকি আছে। আমাকে কেন মারতে চেয়েছিলে, নাস্রিন?”

প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে নাস্রিন ক্রুর হেসে বলে, “তোমাকে এইখানে দেখতে পাবো সেটা সত্যি অভাবনীয়। যাই হোক পুরানো দিনের কথা যখন মনে করিয়েই দিলে তাহলে আজ রাতে এই সাগর জলে তোমার সলিল সমাধি ঘটিয়ে দেব।”

এমন সময়ে দমকা ঝোড়ো হাওয়ায় জাহাজ দুলে ওঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রবল বৃষ্টির সাথে তুমুল ঝঞ্ঝা শুরু হয়ে যায়। সাথে সাথে বড় বড় ঢেউয়ের তালে তালে জাহাজ দুলে ওঠে। দানা মনে মনে হেসে ফেলে, অদুরে ওর জন্য একটা নৌকা দাঁড়িয়ে। ওকে ঠেলে ফেলে দিলেও দানা বেঁচে যাবে, তবে এই জাহাজ থেকে যাওয়ার আগে এই দুই ধূর্ত ছলনাময়ী মহিলার কাছ থেকে উত্তর জেনেই যাবে আর পারলে ওদের সাথে নিয়ে এই অতল সাগর জলে ঝাঁপ দেবে। দানা ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দুরের নৌকা দেখে নেয়। ওই নৌকা ততক্ষণে ওদের জাহাজের বেশ কাছে চলে এসেছে।

কঙ্কনা ওর দিকে তাকিয়ে ক্রুর হেসে বলে, “আজ রাত এই পৃথিবীতে তোমাদের শেষ রাত। দিব্যা আর রিচার সাথে বেশ চোদাচুদি করলে দেখলাম। আর তোমার স্ত্রী মহুয়া কেমন আছে, দানা?”

ছলনাময়ী চটুল কঙ্কনার মুখে মহুয়ার নাম শুনে জ্বলে ওঠে দানা। ওদের দিকে তেড়ে এগিয়ে এসে গর্জে ওঠে, “মহুয়ার দিকে চোখ তুলে তাকাবে না, নাস্রিন। চোখ উপড়ে দেব।”

তুমুল ঝড় আর বৃষ্টির সেই সাথে সাগরের ঢেউয়ের ভীষণ গর্জনে নিজের কথাই নিজের কানে পৌঁছায় না। কঙ্কনা আর নাস্রিন মুখ চাওয়াচাওয়ি করে হেসে ফেলে। কঙ্কনা চেঁচিয়ে ওকে উত্তর দেয়, “চারদিকে জল, ওপরে বন্দুকধারী নিরাপত্তা রক্ষী। তুমি চাইলেও আজ এইখান থেকে পালাতে পারবে না দানা। ওই হলে সিমোনে আর মোহন আছে। ওরা তোমাকে চিনে ফেলেছে। ভেতরে গেলে ওরা তোমাকে ছিঁড়ে খাবে আর এইখানে আমরা তোমাকে ছিঁড়ে খাবো। তুমি এইখানে কি করে এসেছো সেটা জানি না তবে খোঁজ লাগিয়ে অতি সহজে জেনে যাবো। তারপরে মহুয়া আর রুহিকে...”

রুহি আর মহুয়ার নাম আবার শুনেই দানা খেপা ষাঁড়ের মতন ওদের দিকে মদের গেলাস ছুঁড়ে মারে। অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে কঙ্কনা সরে যায় আর গেলাস ডেকের মেঝের ওপরে পড়ে ভেঙে যায়। কঙ্কনা আর নাস্রিন হাসতে হাসতে ওর দিকে এগিয়ে আসে। চকিতে দানা দুই মহিলার হাত টেনে ধরে। আচমকা এইভাবে টানার ফলে নাস্রিন টাল সামলাতে না পেরে ডেকের মেঝের ওপরে পড়ে যায় আর কঙ্কনা রেলিঙের ধারে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে কঙ্কনার পা দুটো ধরে রেলিঙের ওপর থেকে সমুদ্রের জলের মধ্যে ওকে ফেলে দেয়। নাস্রিন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ওঠে, কিন্তু তুমুল ঝড় আর উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জনে ওর আর্তনাদ কারুর কানে পৌঁছায় না। ঝড়ের জন্য বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা দুই রক্ষী ডেকের ওপর থেকে ভেতরে চলে গেছে। দানা সঙ্গে সঙ্গে নাস্রিনের মুখ চেপে ধরে ওর কোমর পেঁচিয়ে ধরে জলে ঝাঁপ দেয়।

ওইদিকে নৌকা থেকে ওদের জলে ঝাঁপ দিতে দেখে বেশ কয়েকজন ছেলে কোমরে দড়ি বেঁধে জলে ঝাঁপ দিয়ে দেয়। বিশাল ঢেউয়ের টানে কঙ্কনার দেহ নৌকা থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। নৌকা থেকে কেউ একজন জাল ফেলে কঙ্কনাকে জড়িয়ে ধরে। নাস্রিনের সঙ্গে জলে ঝাঁপ দিতেই তলিয়ে যায় দুইজনে। মাথার ওপরে কালো মেঘে ঢাকা আকাশ, থেকে থেকে প্রবল ঝড় আর বিশাল ঢেউ ওদের একবার উঁচুতে উঠিয়ে আছড়ে ফেলে ডুবিয়ে দিতে প্রস্তুত। শক্তি ততক্ষণে একটা দড়ি নিয়ে সাঁতরে সাঁতরে দানার কাছে চলে আসে। একহাতে নাস্রিনের চুলের মুঠি ধরে অন্য হাতে দড়ি ধরে প্রবল ঢেউ উপেক্ষা করে সাঁতরে সাঁতরে নৌকায় ওঠে। জালে বাঁধা কঙ্কনাকে অন্যকেজন টেনে নৌকায় তুলতেই ওদের নৌকা ছেড়ে দেয়। বিশাল ঢেউয়ের তালে উপর নীচে নাচতে নাচতে ওদের নৌকা জাহাজ থেকে বেশ দূরে চলে যায়।

কঙ্কনা আর নাস্রিন আচমকা এই ঘটনায় থতমত খেয়ে নির্বাক হয়ে যায়, কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে। খাবি খাওয়া মাছের মতন দুই ছলনাময়ী উলঙ্গ মহিলা শ্বাস নিতে চেষ্টা করে। আতঙ্কে আর মৃত্যু ভয়ে ওদের চেহারা রক্ত শূন্য হয়ে যায়। চুল ভিজে শরীর বুকে অসীম আতঙ্ক নিয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে নাস্রিন আর কঙ্কনা বাকিদের দিকে তাকায়। জল থেকে উঠে দুই ভিজে নারী কোনোরকমে এক ওপরকে জড়াজড়ি করে নৌকার পাটাতনের এক কোনার দিকে সরে যায়। ছোট নৌকা বিশাল উঁচু উঁচু ঢেউ উপেক্ষা করে নদীর তীরের দিকে যাত্রা শুরু করে। দুই মহিলার অঙ্গে শুধু মাত্র একটা লাল প্যান্টি ছাড়া আর কোন কাপড় নেই। উত্তাল সমুদ্রের ঠাণ্ডা জল আর সাঙ্ঘাতিক এই ঘটনায় ওরা দুইজনে ভীষণ আতঙ্কিত। দানা দুটো গামছা ওদের দিকে ছুঁড়ে দেয়। মাটি থেকে গামছা তুলে মাথা শরীর মুছে কোন রকমে ভিজে নগ্ন শরীরের ওই গামছা জড়িয়ে নৌকার পাটাতনে চুপচাপ আতঙ্ক মাখা চোখে বসে থাকে।

দানা ততক্ষণে একটা গামছা দিয়ে শরীর মুছে কোমরে জড়িয়ে নেয়। একজনকে জিজ্ঞেস করাতে দানা জানতে পারে যে রাত দশটা বাজে। ভাগিস্য প্যান্টের পকেটে কিছু দরকারি অথবা ওর পরিচয় জানার মতন কিছুই নিয়ে যায়নি। ওর পার্স, গাড়ির চাবি আর বাকি সব কিছু ওর গাড়ির মধ্যেই। মনা আর বাকিদের ওপরে অগাধ বিশ্বাস ছিল। একবার মনা ওকে অনুসরন করে কাবুলি ঘাটে পৌঁছে গেলে ওর গাড়ি আর বাকি জিনিস পত্র সুরক্ষিত থাকবে। জাহাজে ওর জামা কাপড়ের পকেট হাতিয়ে রুমাল আর লাল কার্ড ছাড়া কোন জিনিস পাবে না।

ছোট নৌকা, তুমুল ঝড়ে উলটপালট হওয়ার যোগাড়। শঙ্কর নৌকার হালে দাঁড়িয়ে, রামিজ একটা বড় ধারালো ছুরি নিয়ে তৈরি। দানা একবার নির্দেশ দিলেই এই দুই মহিলার গলা নামিয়ে দিতে প্রস্তুত।

রামিজ স্মিত হেসে দানার কাঁধে হাত রেখে বলে, “নে একটু বস, দেখি এই মাল দুটোকে। ওই ফর্সা মাগীটা বেশ জম্পেশ।” নাস্রিনের নাকের কাছে একটা বড় ছুরি নাড়িয়ে জঘন্য একটা হাসি হেসে প্রশ্ন করে, “এই খানকী তোর নাম কি রে?”

ওর হাতে ধারালো চকচকে ছুরি দেখে নাস্রিন আতঙ্কে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে উত্তর দেয়, “নাস্রিন আখতার।”

রামিজ অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে, “উম্মম তুই আজ রাতে আমাদের খোরাক হবি না মাছেদের?” চারদিকে চোখ বুলিয়ে শক্তি, বলাই, নাসির, আক্রামের দিকে তাকায়। সবার জিব লকলক করছে দুই মহিলাকে ছিঁড়ে খাবার জন্য। রামিজ ওদের দিকে চাপা গর্জন করে ওঠে, “তোরা নাকি দানাকে খুন করতে চেয়েছিলিস?”

কঙ্কনা আর নাস্রিন নির্বাক, ভীষণ আতঙ্কে ওদের গলা শুকিয়ে কাঠ। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ছলছল চোখে হাত জোড় করে ক্ষমা ভিক্ষে করে রামিজের কাছে, “না আমাদের ভুল হয়ে গেছে। আমাদের ছেড়ে দিন। সত্যি বলছি, আমার পুত্র কন্যের শপথ নিয়ে বলছি আর কোনোদিন দানার ছায়া মাড়াবো না।”

দানা ক্রোধে বিতৃষ্ণায় গরগর করে ওঠে, “শালী খানকী, তোরা কি করে মহুয়া আর রুহির কথা জানলি?” কঙ্কনা আর নাস্রিন দুইজনেই কেঁদে ফেলে। দানা ওদের চোখের জল উপেক্ষা করে আবার প্রশ্ন করে, “মহুয়া আর রুহির সম্বন্ধে তোদের কে খবর দিয়েছে?”

দানার গর্জন শুনে নাস্রিন কোন রকমে ঢোঁক গিলে বলতে শুরু করে, “তোমার পরিবারের সম্বন্ধে, সিমোনে আমাদের জানিয়েছে। কিন্তু ওই জাহাজে সিমোনে দানাকে চিনে ফেলেছে সুতরাং দানার নিস্তার নেই।”

দানা দীর্ঘ এক শ্বাস ছেড়ে হেসে বলে, “সিমোনেকে বাগে ফেলার সব উপাদান আমার হাতে, কঙ্কনা। এবারে একটু বলতো কেন আমাকে মারতে চেয়েছিলে? আমি তোমাদের কি ক্ষতি করেছিলাম?”

কঙ্কনা আমতা আমতা করে বলতে শুরু করে, “আমরা কেউই নয়না অথবা রমলাকে চিনতাম না। ওইদিন ইন্দ্রাণীদির বাড়িতে পার্টির নাম শুনেই মনে হল পার্টিতে যাই। রমলাকে ইন্দ্রাণীদির বান্ধবী হিসাবে পরিচয় দিলাম আর রমলা সহজে বিশ্বাস করে নিল। তবে তোমাকে ইন্দ্রাণীদির বাড়িতে দেখে আমাদের সন্দেহ হয়েছিল যে তুমি ইন্দ্রাণীদিকে ভালোবাসো। তাই তোমার বিষয়ে একটু জানতে ইচ্ছে করল। পার্টিতে একজন বেয়ারাকে টাকা দিয়ে তোমার পার্স চুরি করে জানতে পারলাম আসলে তুমি কোন বড় ব্যাবসায়ি নও, তুমি কালী পাড়ার বস্তির সামান্য একজন ট্যাক্সি চালক। তাহলে কি ইন্দ্রানীদি একজন সামান্য ট্যাক্সি চালকের প্রেমে পড়েছে? হতেই পারে। ভেবেছিলাম সেই রাতে তোমার সাথে নেচে তোমাকে হাত করে নিতে পারবো, কিন্তু ইন্দ্রানীদি তোমাকে যেমন ভাবে আঁকড়ে ধরে নিয়ে গেল তাতে একটু হিংসে হল বৈকি। বাইরে গিয়ে দেখলাম ততক্ষণে বাপ্পা নস্কর, বিমান চন্দ, দুলাল মিত্র এরা এসে গেছে। তোমাকে দেখে বিমান চন্দের গাড়ির ড্রাইভার তোমার নাম ধরে চেঁচিয়ে উঠল। আমি বুঝতে পারলাম যে এই গাড়ির ড্রাইভার তোমাকে ভালো ভাবে চেনে। ওর কাছে ইনিয়ে বিনিয়ে তোমার নাম ধাম ঠিকানা ফোন নাম্বার ইত্যাদি যোগাড় করে নিলাম।”
 
পর্ব পনেরো – রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#7-119)

এতদিন পরে দানার কাছে সব পরিষ্কার হল কি ভাবে কঙ্কনা আর নাস্রিন ওর ফোন নাম্বার আর আসল পরিচয় যোগাড় করেছে। দেবুকে একবার যদি হাতের কাছে পেতো, মনে মনে হেসে ফেলে, দেবু অনেক আগেই নিজের পাপের শাস্তি পেয়ে গেছে।

কঙ্কনা একটু থেমে আবার বলতে শুরু করে, “কিন্তু তোমার এই স্বাস্থ্যবান দেহ দেখে আর থাকতে পারলাম না, তোমাকে ইন্দ্রাণীদির কবল থেকে মুক্ত করে নিজেদের কাজে লাগাবো ভাবলাম। আমাদের বাঁধা ছকে তুমি পা দিয়ে ফেঁসে গেলে। তোমাকে খুন করার আমাদের কোন পরিকল্পনা ছিলো না কারন তোমাকে দিয়ে আমাদের বেশ কাজ হচ্ছিল। তুমি উচ্চবিত্ত ক্ষমতাশালী মহিলাদের সাথে সেক্স করতে। এই উচ্চবিত্ত ক্ষমতাশালী মানুষেরা বাগানের মালী, রান্নার লোক, কাজের লোক, গাড়ির চালক এদের মানুষ বলে গন্য করেনা আর সেই সুযোগ আমরা কাজে লাগালাম। তোমাকে যে পেন দেওয়া হতো সেইগুলো আসলে ছোট অত্যাধুনিক মাইক্রোফোন। ওর মধ্যে একটা চিপে কথাবার্তা রেকর্ড করা যায়। ওই পেন থেকে অনেকের গোপন কথোপকথন আমরা জানতে পারলাম। যদিও ওদের ব্লাকমেল করার ইচ্ছে আমাদের ছিল না তবে এই উচ্চবিত্ত সমাজে অন্যের গোপন খবর জানা গেলে তাকে দমিয়ে রাখা সহজ হয়। আমাদের কাছে একটা জায়গার কোন বার্তালাপ ছিল না সেটা হলো, লোকেশের বাড়ির।”

দানার মনে পড়ে যায়, মহুয়া ওকে শোয়ার ঘরে জামা কাপড় খুলে ড্রেসিং গাউন পরে আসতে বলতো তাই যখন মহুয়ার সাথে কথাবার্তা হতো তখন ওর কাছে পেন থাকতো না।

কঙ্কনা বলে, “আসলে কি জানো, লোকেশ বাজপাই অত্যন্ত ধূর্ত আর সাঙ্ঘাতিক মানুষ। কচি মেয়েদের ওপরে ওর খুব লোভ। ইচ্ছে করেই রাজস্থানের ছোট জায়গা থেকে ছেলের জন্য বৌমা খুঁজেছিল। হারামির বাচ্চার কপাল দেখো, মহুয়া ভারী সুন্দরী। ছেলের বিয়ে দেওয়ার পর থেকেই মহুয়ার ওপরে ওর নজর। ছেলে মারা যাওয়ার পরে সেই সুযোগ একেবারে হাতে চলে আসে।”

এই খবর শুনে দানার সাথে সাথে বাকি লোকেরা চমকে যায়। কিন্তু কঙ্কনা যখন জানে যে মহুয়া বর্তমানে দানার স্ত্রী তাহলে নিশ্চয় ওরা মহুয়াকে দেখেছে অথবা মহুয়ার আসল পরিচয় জানে। সিমোনে কি জানে মহুয়া আসলে লোকেশের ছোট ছেলে রাজেশের স্ত্রী?

দানা চোয়াল চেপে গর্জন করে ওঠে, “তোমরা সত্যি বলছো?”

কঙ্কনা কাঁপা কণ্ঠে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ, সত্যি বলছি। বিশ্বাস না হলে লোকেশকে জিজ্ঞেস করে নিও। আসলে কি জানো, আমরা কোনোদিন লোকেশকে ভালো চোখে দেখতাম না। কিন্তু লোকটার অনেক টাকা আর এই যৌন সংসর্গের জন্য প্রচুর টাকা খরচ করতো। ওর বাড়ি আমরা কোনোদিন যাইনি তাই ওর বৌমা, মহুয়াকে কোনোদিন দেখিনি। তবে যখন সিমোনের মুখে তোমার স্ত্রীর নাম মহুয়া শুনলাম তখন আমাদের সন্দেহ হয়েছিল বৈকি। কিন্তু হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম কারন, লোকেশ বেঁচে থাকতে ওর কবল থেকে ওর বৌমাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার সাধ্য কারুর নেই। এই আসল কথা বলি, ওই পনেরো কুড়ি দিন তুমি যে মহুয়ার সাথে যৌন সহবাস করেছিলে তাতে লোকেশের তোমার ওপরে সন্দেহ জাগে। বুড়ো ভয় পেয়ে যায়, বারেবারে এই যৌন সংসর্গ করতে করতে তোমার আর মহুয়ার মধ্যে যদি হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। যদি কোনোদিন তুমি ওর বাড়িতে এসে চড়াও হয়ে মহুয়াকে মুক্ত করে নিয়ে যাও? সেই ভয়ে লোকেশ আমাদের নির্দেশ দিল যে তোমাকে মেরে ফেলতে হবে।”

বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, এরা এখন জানে না যে লোকেশ মারা গেছে। না জেনেই তাহলে নিজের খুনের চক্রান্তের প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছে আর মহুয়াকে মুক্তি দিয়েছে।

দানা প্রশ্ন করে, “যদি লোকেশ তখন আমাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল তাহলে প্রায় একমাস দেরি কেন করলে?”

কঙ্কনা বলতে শুরু করে, “তোমাকে সোজা মেরে ফেলতে হলে অনেক আগেই গুলি মারতাম, কিন্তু সিমোনের কাছে তোমাকে পাঠানো খুব দরকার ছিল। আসলে সিমোনেকে কিছুতেই বাগে ফেলা যাচ্ছিল না। ওই আরেক ধূর্ত কুটিল নারী, নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য যেমন নীচে নামতে প্রস্তুত তেমনি খুন করতেও পিছপা হয়না। ঠিক তাই হলো, তোমাকে সিমোনের কাছে পাঠালাম আর প্রথম দিনেই তুমি আমাদের খবর এনে দিলে। শুধু ওই সাংবাদিকের পরিচয় জানতে পারলাম না তাহলে একসাথে অনেককেই বাগে ফেলতে পারতাম। সিমোনে সেই সাংবাদিককে খুন করার পরিকল্পনা করছিল সেটা জানা গেল। আগে সিমোনে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ছিল। ওর কাছ থেকে সেই পদ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ওই বার্তালাপ কাজে লাগালাম। কোটি কোটি টাকা আসে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবে, সব টাকা খরচ হয়না। একবার সমাগমের পরে কেউই আর সেই টাকার আয় ব্যায়ের হিসাব চায় না, ওই টাকা খুব সহজে এদিক ওদিক করা যায়।”

সব কিছু শোনার পরে দানা চুপচাপ ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে চাপা কণ্ঠে বলে, “আমাকে খুনের চক্রান্তের প্রতিশোধ আমি নেব কঙ্কনা। বল কি ভাবে মৃত্যু বরন করতে চাও? রামিজ ভাইয়ের ছুরির ঘায়ে না এই সাগর জলে সলীল সমাধি লাভ করে।”

কঙ্কনা আর নাস্রিন দুইজনেই কেঁদে ফেলে। হাতজোড় করে ক্ষমা ভিক্ষে করে দানাকে বলে, “দানা আমাদের ছেলে মেয়েরা ছোট ছোট। দয়া করে ওদের মুখ চেয়ে অন্তত আমাদের ছেড়ে দাও।”

দানা বাঁকা হাসি হেসে বলে, “আমি যদি পাখীর সাথে দেখা করতাম তাহলে ওকেও তোমার খুন করতে তাই না? তখন শুচিস্মিতা আর দেবাদিত্যের কথা তোমাদের মনে পড়েনি?”

কঙ্কনা আর নাস্রিন মাথা নিচু করে বসে থাকে। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে নাস্রিন মৃত্যু ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে, “একটা কথা মনে রেখো দানা, তুমি যে আজকে এই ক্লাবের সমাগমে এসেছ তার মাশুল তোমাকে গুনতেই হবে। সিমোনে আর মোহন খৈতান তোমাকে চিনে ফেলেছে। হয়তো তোমার পরিচয় ওই ক্লাবের সবাইকে জানাবে না তবে ওরা তোমাকে ছাড়বে না, কারন তুমি ওদের অনেক গোপন তথ্য জেনে ফেলেছো। নিজেদের বাঁচানোর জন্য ওরা তোমাকে আর তোমার পরিবারকে আক্রমন করবেই। ইতিমধ্যে ওরা হয়তো তোমার বিরুদ্ধে ফাঁদ তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছে।”

দানা মাথা দুলিয়ে হেসে বলে, “ওদের কি ভাবে শায়েস্তা করব সেটা তোমার কাছ থেকে শুনতে চাই না, নাস্রিন। তবে তোমরা যদি আমার কথা মতন কাজ কর তাহলে আমি তোমাদের ছেড়ে দেব।”

দানার কথা শুনে অনেকেই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। রামিজ জিজ্ঞেস করে, “কি বলছিস তুই? এই মহিলারা একবার তোকে খুন করার চেষ্টা করেছে, দ্বিতীয় বার করবে না তার প্রমান কি?”

দানা মৃদু হেসে শঙ্করকে জিজ্ঞেস করে, “ও শঙ্করদা, কাবুলি ঘাট আর কতদুর?”

শঙ্কর উত্তর দেয়, “যা ঝড় উঠেছে তাতে প্রায় এক ঘণ্টার মতন আরো লাগবে রে।”

কালো সমুদ্রের মাঝে উত্তাল ঢেউয়ের দোলায় ছোট মাছ ধরার নৌকা খোলামকুচির মতন দুলতে দুলতে কোনোরকমে মোহনার দিকে এগিয়ে চলেছে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে শুধু অসীম উত্তাল বঙ্গোপসাগর। ওদের অনেক দূরে প্রমোদ জাহাজ। এতক্ষণে নিশ্চয় কঙ্কনা নাস্রিন আর দানার অনুপস্থিতিত সবাই টের পেয়ে গেছে। এতদুর থেকে জাহাজের কিছুই পরিস্কার দেখা যায় না। ওদের কাছে কোন দূরবীন নেই যে ওই জাহাজে কি হচ্ছে সেটা একবার দেখে। প্রচন্ড দুলুনির ফলে নাস্রিন আর কঙ্কনার নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে আসার যোগাড়। নাস্রিন জল খেতে চাইলে একজন ওর দিকে একটা জলের বোতল এগিয়ে দেয়। কঙ্কনা আর থাকতে না পেরে নৌকার পাটাতনের ওপরে বমি করতে শুরু করে দেয়।

দানা ওদের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলে, “জল খাওয়া হয়ে গেলে তোমাদের ছাড়বো।”

কঙ্কনা আর নাস্রিন ওর কথা শুনে পরস্পরের দিকে তাকায়। তারপরে দানার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি বলছো আমাদের ছেড়ে দেবে? আমাদের কি করতে হবে, দানা?”

দানা বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে অঙ্ক কষতে শুরু করে। এমনিতে সিমোনে জেনে গেছে যে দানা ওই জাহাজে ছিল। যদি ওরা কঙ্কনা আর নাস্রিনের দেখা না পায় তাহলে সন্দেহের তীর সোজা দানার দিকেই আসবে। এখুনি কঙ্কনা আর নাস্রিনকে মেরে ওর খুনের প্রতিশোধ নেওয়া ভুল পদক্ষেপ প্রতিপন্ন হবে। এরা যখন রমলাকে বলেনি এইখানে আসার কথা তাহলে নিশ্চয় আগে থেকে সিমোনেকেও বলেনি যে ওরা এই সমাগমে আসবে। এখন যখন ওদের দেখা হয়েই গেছে তখন সিমোনের বিরুদ্ধে এদের ব্যাবহার করা যায়।

দানা ওদের জিজ্ঞেস করে, “তোমাদের মধ্যে কে ভালো প্রতারনা করতে পারে? আশা করি কঙ্কনা তুমি ভালো পারো?” নাস্রিন চুপচাপ বসে থাকে আর কঙ্কনা কি বলবে ভেবে পায় না। নিরুত্তর কঙ্কনার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, “মৌনং সম্মতি লক্ষনম, তাই তো কঙ্কনা। আমি হলফ করে বলতে পারি আমাকে ফাঁদে ফেলার পুরো পরিকল্পনা তোমার মাথা থেকেই এসেছিল। সিমোনেকে ওই কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র সেটাও নিশ্চয় তোমার মাথার উপজ। তাইতো?” কঙ্কনা মৃদু মাথা দোলায়, “হ্যাঁ।” দানা বলতে শুরু করে, “তাহলে আমার কথা মন দিয়ে শোনো। তুমি কাল সকালে সিমোনেকে বলবে তোমরা ডেকে গিয়েছিলে আর প্রবল ঝড়ের ফলে তোমরা ডেক থেকে জলে পড়ে গিয়েছিলে। জাহাজের অদুরে একটা মাছ ধরার লঞ্চ তোমাদের বাঁচায়। আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবে, আমি ওই জাহাজে ছিলাম না। মনে থাকবে?”

কঙ্কনা মাথা দোলায়, “হ্যাঁ, কিন্তু সিমোনে তোমাকে চিনে ফেলেছে দানা। তোমার মতন পেটানো দেহ বহুবার সিমোনেকে যৌন সুখ দিয়েছে, সেই উলঙ্গ দেহ কি করে ভুলবে।”

দানা ওদের বলে, “তুমি গল্প বানিয়ে বলবে, যে ওই ছেলেকে সিমোনের চিনতে ভুল হয়েছে। মুখোশের পেছনে কে ছিল সেটা তোমরা জানো না এবং বিশ্বাসের সাথে বলবে যে ওই ছেলে দানা নয়।”

কঙ্কনা মাথা দোলায়, “ঠিক আছে, সেটা না হয় ওকে আমরা বলবো।”

দানা ওদের বলে, “এবারে আমাকে বল, সিমোনে আমার বিরুদ্ধে কি ষড়যন্ত্র করছে?”

কঙ্কনা আর নাস্রিন দুইজনে মাথা নাড়ায়, “সেটার বিষয়ে জানি না দানা। কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে ওকে সরিয়ে দেওয়ার পরে সেই রকম ভাবে মেলামেশা আর নেই ওর সাথে। তবে জাহাজে তোমাকে দেখে আমাকে বলেছিল যে তোমাকে এইবারে সরাতে হবে। ঠিক কি ষড়যন্ত্র করছে সেটা জানা নেই। সত্যি বলছি দানা আমার ছোট ছেলের মাথার দিব্যি দিয়ে বলছি।”

দানা ওদের কথা বিশ্বাস করে নেয়। সিমোনে আর মোহন প্রচন্ড ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ, অত সহজে কাউকে নিজেদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে জানাবে না। একটু ভেবে কঙ্কনাকে বলে, “তুমি ওকে বলবে যে আমার সাথে তোমার দেখা হয়নি। খবরের কাগজে নিশ্চয় আমার বিষয়ে পড়ে তুমি রমলার পত্রিকার বার্ষিক উৎসবে আসোনি, তাই না?” কঙ্কনা মাথা দোলায়, “হ্যাঁ।” দানা ওদের বলে, “তুমি বলবে যে তোমাদের সাথে আমার দেখা হয়নি। কিন্তু তুমি রমলার মুখ থেকে শুনেছো যে আমি ওকে এই রেড এন্ড ব্ল্যু ক্লাব নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম। এবং নয়না আমাকে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাব সম্বন্ধে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছে।”

কঙ্কনা সঙ্গে সঙ্গে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, সিমোনে আর মোহন কথায় কথায় বলে ফেলেছিল যে ওই নয়নার জন্যেই নাকি ওদের বন্ধু বিমান চন্দের মৃত্যু হয়েছে। কি হয়েছিল আসলে দানা?”

দানা বাঁকা হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ সেটা একপ্রকার সঠিক। ওই নয়না দুই নৌকায় পা রেখে চলতে চেষ্টা করেছিল আর যখন বাপ্পা নস্কর, নয়নার সাথে বিমানের যৌন সম্পর্কের বিষয়ে জেনে ফেলে তখন রাগে ওদের খুন করে। সেই খুনোখুনিতে সবাই মারা যায়।”

কঙ্কনা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “কিন্তু নয়না আর তুমি বেঁচে গিয়েছিলে...”

দানা বাঁকা হেসে বলে, “এত উত্তর দেওয়ার সময় এখন নেই আমার কাছে। তুমি সিমোনেকে গিয়ে বলবে আমাকে খৈতানের প্রকল্পগুলো হাতিয়ে দেওয়ার পেছনে নয়নার হাত ছিল। আসলে নয়না চেয়েছিল রাজনীতিতে নামার, তাই প্রথমে আমাকে ব্যাবহার করে বাপ্পাকে সরাতে চেয়েছিল। একবার বাপ্পা নস্কর সরে গেলে ওর ওপরে বিমান চন্দের বিশ্বাস বেড়ে যেত আর তখনি বিমান চন্দকেও পথের থেকে সরিয়ে দিত নয়না। খৈতানের প্রকল্প গুলো আমাকে দিয়ে হাতানোর পেছনেও নয়নার মাথা কাজ করেছে। কিছু বুঝলে?”

কঙ্কনা আর নাস্রিন স্থম্ভিত হয়ে ওর কথা শুনে যায়। নাস্রিন অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “তুমি সত্যি বলছো?”

দানা মাথা দোলায়, “সব কিছু সত্যি বলছি আর এই সব কিছু তোমাকে সিমোনে আর মোহনের কানে তুলে দিতে হবে।”

কঙ্কনা ওকে বলে, “কিন্তু কোন প্রমান ছাড়া ওরা এই কথা বিশ্বাস করবে না।”

দানা সেটা ভালো ভাবে জানে তবে ওর কাছে এখুনি কোন প্রমান নেই, তাই ওদের বলে, “দেখো তুমি এইসব ওদের বলবে আর বলবে এই সব কথা তুমি রমলার কাছ থেকে শুনেছো। নয়না আর রমলার মাঝে গভীর সম্পর্ক আছে সেটা অবশ্য তোমার অজানা যাই হোক।”

কঙ্কনা আর নাস্রিন মাথা দোলায়, “ঠিক আছে। কিন্তু এটা হলে সিমোনে আর মোহনের সব রাগ নয়নার ওপরে পড়বে। তাতে তোমার কি লাভ?”

দানা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, “সেটাও জেনে তোমার দরকার নেই কঙ্কনা। আমি ঠিক যেমন বলছি তেমন কাজ করলে আমি তোমাদের ছেড়ে দেব। যখন সিমোনে রাগে বিতৃষ্ণায় কাঁপতে শুরু করবে তখন তুমি ওকে নয়নাকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা বলবে।” কঙ্কনা আর নাস্রিন দানার অনেক কথার অর্থ বুঝতে পারে না তাও মাথা নাড়িয়ে যায়। দানা ওদের বলে, “তুমি সিমোনের কাছে গিয়ে বলবে, যদি নয়নাকে বাগে আনতে চায় তাহলে আগে ওর ভাইকে আঘাত করতে হবে। নয়নার প্রান ভোমর ওর ভাই। ওকে যদি কিছু করে অপহরন করতে পারে তাহলে নয়নাকে অতি সহজে ফাঁদে ফেলতে সক্ষম হবে। তুমি এটা ওদের বলবে যে আমি ওদের সব প্রকল্প ফিরিয়ে দিতে রাজি আছি। তুমি বলবে যে আমাকে তোমরা মহুয়াকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে এইসব কথা বের করেছো। বুঝলে?”

কঙ্কনা মাথা দোলায়, “হ্যাঁ সব বুঝেছি।”

দানা ওদের বলে, “যতদিন না আমার কাজ শেষ হচ্ছে ততদিন নাস্রিন আমাদের কাছে থাকবে।”

নাস্রিন চিৎকার করে ওঠে, “না, প্লিস আমাকে ছেড়ে দাও।”

দানা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, “ঠিক আছে তাহলে কঙ্কনা আমাদের কাছে থাকবে আর তুমি এই সব কথা সিমোনেকে বলবে। কে আমাদের কাছে থাকবে সেটা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করে নাও।”

সব কিছু বলার পরে দানা চুপ করে ওদের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। নিরুপায় নাস্রিন মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, যতদিন কঙ্কনা এইসব কাজ করবে ততদিন দানার কাছে বন্দী থাকতে রাজি।
 
পর্ব পনেরো – রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#8-120)

প্রচন্ড ঝড়ের ফলে আর ছোট লঞ্চের ভীষণ দুলুনির ফলে নাস্রিন আর কঙ্কনার শরীর খারাপ হয়ে যায়। একে আতঙ্কে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে ছিল তায় সমুদ্রের ঠাণ্ডা জলো হাওয়ায় ওরা কাবু হয়ে পড়ে। প্রবল ঝড়ের ফলে কাবুলি ঘাট পৌঁছাতে পৌঁছাতে ওদের বেশ রাত হয়ে যায়। রাত প্রায় এগারোটা বেজে যায় যখন ওরা কাবুলি ঘাটে পৌঁছায়। কঙ্কনা জানায় মধ্য মহানগরের একটা বেশ বড় হোটেলে ওরা উঠেছে, সেখান থেকে ভাড়ার গাড়ি করে ওরা কাবুলি ঘাটে এসেছিল। দরকারি সব কিচুই হোটেলের কামরায় তবে ওদের হোটেলের কামরার কার্ড ওই জাহাজে রয়ে গেছে।

মনা ওকে দেখতে পেয়েই তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফোন করতে বলে। মহুয়া চরম উৎকণ্ঠায় কেঁদে কেটে একসা। বিমান বাপ্পার সময়ে ওর হাতে পিস্তল ছিল, সাথে লোকজন ছিল কিন্তু এইবারে যখন মনার মুখে শুনেছে যে দানা একটা লঞ্চে চেপে সমুদ্রের দিকে পাড়ি দিয়েছে, তখন থেকেই বুকের ধুকপুকানি থামেনি।

দানা ফোন করতেই মহুয়া কেঁদে ফেলে, “আমার কথা মেয়ের কথা মনে থাকে না তাই না?” ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে, “কি অদৃষ্টে তোমাকে প্রেম করেছিলাম কে জানে। না তুমি কোথাও যাবে, না আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারি।” দানা চুপ, কি বলবে, ওইপাশ থেকে শুধু ফোঁপানোর শব্দ ছাড়া কিছুই ভেসে আসেনা। মহুয়া কিছুতেই ফোন ছাড়বে না, অন্তত দানার নিঃশ্বাসের শব্দটুকু ওর কানের রন্ধ্রে প্রবেশ করে বুকের মাঝে শান্তির মলয় বইয়ে দেয়। শত হোক ঠিক আছে। বেশ কিছুপরে মৃদু কণ্ঠে বলে, “কখন আসছো বাড়িতে? কিছু খেয়েছো?”

দানা এতক্ষণ পরে মুখ খোলে, “এই সোনা, প্লিস কাঁদে না। দেখো আমি ঠিক আছি, কিছুই হয়নি। তুমি থাকতে আমার গায়ে কি কেউ আঁচড় লাগাতে পারে?”

কান্না ভরা মৃদু হেসে বলে, “হ্যাঁ, আমাকে যেন সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলে।”

দানা হেসে ফেলে, “ওইখানে তোমার না যাওয়াই ভালো। যাই হোক কঙ্কনা নাস্রিনের খবর পাওয়া গেছে। এর কয়েক ঘন্টার মধ্যে কঙ্কনাকে হোটেলে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে সব কিছু বলছি।”

কঙ্কনার বিষয়ে মহুয়ার মাথাব্যাথা নেই, আবার প্রশ্ন করে সুন্দরী প্রেয়সী, “কিছু খেয়েছো? তোমারতো আবার জাহাজে চড়লে মাথা ঘোরায়। বমি টমি করোনিতো?”

সত্যি মেয়েটা বড় ভালোবাসে। হ্যাঁ তা বাসে বৈকি, পারলে আঁচলের তলায় লুকিয়ে রাখতো, কিন্তু দানা শুনলেতো। দানা হেসে বলে, “তুমি কিছু খাওনি আমি কি করে খেতে পারি।”

কান্না ভেজা গলায় হেসে বলে, “তাড়াতাড়ি এসো, আমি আটা মাখছি।”

“আচ্ছা আসছি।” বলে দানা ফোন রেখে দেয়।

শঙ্কর একটা লুঙ্গি দিয়েছিল সেটা কোমরে জড়িয়ে নেয়। কোন এক ছেলে কঙ্কনার জন্য জামা দিয়েছিল, সেটা কোনোরকমে উলঙ্গ কঙ্কনা গায়ে জড়িয়ে দানার গাড়ির পেছনের সিটে উঠে বসে। কঙ্কনাকে নিয়ে দানা বেরিয়ে পড়ে মহানগরের উদ্দেশ্যে আর নাস্রিনকে লঞ্চের মধ্যে বন্দী রেখে বাকিরা হিঙ্গলগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথে যেতে যেতে শহরের এক জায়গায় থেমে কঙ্কনার জন্য কিছু জামা কাপড় কিনে নেয়।

দানা জানতে চায় কেন ওরা এই মহানগর ছেড়ে দিয়ে অন্য শহরে চলে গেছে। তার উত্তরে কঙ্কনা জানায় ওর স্বামী শঙ্কর দেবনাথ আর নাস্রিনের স্বামী আমজাদের নতুন জাহাজের কোম্পানিতে চাকরি হয়ে যায় যার জন্য ওদের এই মহানগর ছেড়ে চলে যেতে হয়। তবে বিত্ত মন্ত্রালয়ের সচিব, রাগিণীর সাথে ওদের যোগাযোগ ছিল। রেড এন্ড ব্লু ক্লাব সম্বন্ধে জানতে চাইলে, কঙ্কনা বলে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের উদ্যোক্তা আসলে রাগিণী আর সিমোনের মতন কয়েকজন প্রচণ্ড কামুকী মহিলা বছর ছয়েক আগে শুরু করে। বছর পাঁচেক আগে একটা পার্টিতে রাগিণীর সাথে কঙ্কনার আলাপ পরিচয় হয়, তারপরে ওরা এই ক্লাবে যোগদান করে। বছরে প্রায় পাঁচ ছয় বার এই রিরংসা মাখা ভীষণ যৌন সহবাসের সমাগম হতো। ক্লাবের সদস্যরা সবাই বিশাল বড়লোক, এক রাতের জন্য তিরিশ চল্লিশ লাখ টাকা দেওয়া ওদের পক্ষে কিছুই না। রাগিণীর কাছে এটাও জানতে পারে যে একবার টাকা দিলে সেই টাকার আয়ব্যায়ের খোঁজ খবর কেউ নেয় না। সিমোনে এই ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত, ক্লাবের টাকা নাকি নিজের ব্যাবসায় খাটিয়েছে সিমোনে। টাকার অঙ্ক দেখে ওদের লোভ হয় আর সেই থেকে ওদের মাথায় ঘোরে কি ভাবে কোষাধ্যক্ষ পদ সিমোনের কাছ থেকে হাতাবে। সেই সুযোগ দানার হাত ধরে ওদের ঝুলিতে এসে পড়ে। সাংবাদিকের খুনের পরিকল্পনা জানিয়ে এই কোষাধ্যক্ষ পদ নিজের নামে করে নেয়। বিভিন্ন পার্টি আর এইরকম গোপন কামক্রীড়ার সমাগমে গিয়ে ওরা নতুন সদস্য খোঁজে।

দানা চুপচাপ সব কিছু শোনার পরে ওকে জানিয়ে দেয় ওর কথা মতন কাজ করলে ওদের ছেড়ে দেবে। কঙ্কনাকে এক সপ্তাহের সময় দেয় দানা, তার মধ্যে যদি কাজ করতে না পারে তাহলে বন্দিনী নাস্রিনের মৃত্যু অবশ্যাম্ভাবী। ছোট বেলার বান্ধবী নাস্রিনের অসহায় অবস্থা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই কঙ্কনা জানিয়ে দেয় ওর কথা মতন কাজ করবে।

বাড়ি ফিরতে আরো রাত হয়ে যায় দানার। মহুয়া জেগেই বসে ছিল, দানা সেই যে দুপুরবেলায় বেরিয়েছিল সেই থেকে ওর বুকের ধুকপুকানি বিন্দুমাত্র কমেনি। কি যে করে না মাঝে মাঝে। কিন্তু সেই সাথে জানে, এই সাপগুলোকে না মারা পর্যন্ত ওরা শান্তিতে চোখ বুজে ঘুমাতে পারবে না। সবসময়ে মাথার মধ্যে মৃত্যু ভয় ঘোরাফেরা করবে।

গাড়ির আওয়াজ পেয়েই দৌড়ে নীচে নেমে জিজ্ঞেস করে, “কিছু খাওয়া দাওয়া করেছো, না কি শুধু...” দানার চেহারা দেখে কথাটা শেষ করতে পারে না মহুয়া।

দানাকে দুইহাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে দেয়। ওর বুকের ধুকপুকানির মাত্রা আর কমতে চায় না কিছুতেই। দানা নিজের বুকের সাথে মহুয়াকে মিশিয়ে দিয়ে ওর মাথা চুম্বন করে বলে, “এই পাপড়ি এইতো আমি এসে গেছি।”

তাও মহুয়া ওকে ছাড়তেই চায় না। জামার কিছু অংশ জলে ভিজে ওঠে। বুকের ওপরে অশ্রুর সিক্ততা অনুভব করে ওর মুখ আঁজলা করে নিজের দিকে তুলে ধরে দানা। দানার দিকে ভিজে চোখে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলে, “চলো না আমরা এইখান থেকে কোথাও চলে যাই।”

দানা মৃদু মাথা দোলায়, “কেন এত ভয় পাচ্ছো পাপড়ি?”

মহুয়া মৃদু ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “কেন ভয় পাই? তুমি বাড়ি থেকে বের হও আর আমার এক লিটার করে রক্ত শুকিয়ে যায়। ছেলেটা সময় মতন বাড়ি ফিরবেতো, পথে কিছু হল নাতো। গত বার তাও তোমার হাতে পিস্তল ছিল, এইবারে একেবারে সমুদ্রের মাঝে। কিছু হয়ে গেলে...”

কথাটা আর শেষ করতে পারল না মহুয়া। দানার প্রশস্ত ছাতির ওপরে মুখ লুকিয়ে কেঁপে ওঠে। ওর বুকের উত্তাপ নিজের চেহারায় মেখে নিয়ে নিজের ঠাণ্ডা দেহখানি উষ্ণতায় ভরিয়ে বাঁচার প্রানশক্তি পুনরায় ফিরে পায়। এতক্ষণ মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁপতে কাঁপতে দানার প্রতীক্ষা করছিল।

মহুয়ার মুখখানি আঁজলা করে নিজের দিকে তুলে ধরে ওর চোখের জল মুছিয়ে দেয়। নরম গালে প্রেমিকের উষ্ণ আঙ্গুলের পরশে প্রান ফিরে পায় মহুয়া। দানা ওকে প্রবোধ উত্তর দেয়, “বেশিদিন নয় পাপড়ি। কঙ্কনা আর নাস্রিনকে জালে জড়িয়ে ফেলেছি। ওদের ব্যাবহার করে সিমোনে আর নয়নাকে জালে জড়াবো তারপরে কাজ শেষ।”

একবার ভাবে ওকে কি সত্যি কথা বলে দেবে, কি কারনে কঙ্কনা আর নাস্রিন ওকে খুন করতে চেয়েছিল? না থাক, পুরানো কথা না উঠানোই শ্রেয়। নিজের বিরুদ্ধে চক্রান্তের প্রতিশোধ আর মহুয়াকে নির্যাতনের প্রতিশোধ অনেক আগেই নিয়ে নিয়েছে দানা। এইবারে বাকি শুধু চার সাংঘাতিক হিংস্র মহিলা, কঙ্কনা দেবনাথ, নাস্রিন আখতার নয়না ওরফে সায়ন্তনি বসাক আর সিমোনে খৈতান। নাস্রিনকে দেখে মনে হয় বেচারি কঙ্কনার সাথে পড়ে ফেঁসে গেছে। তবে সিমোনে আর মোহন খৈতান ক্রোধে ফুঁসছে, যে কোন মুহূর্তে ওর ওপরে আক্রমন করতে পারে ওরা।

এতরাতে রুহির জেগে থাকার কথা নয়। ওর প্রথম স্কুল যাত্রা ঠিক ভাবে উপভোগ করতে পারলো না ভেবে দানার মন খুব খারাপ হয়ে যায়। কোন রকমে জামা কাপড় ছেড়ে ঘুমন্ত রুহিকে জড়িয়ে ধরে।

মহুয়াও না খেয়ে, ঠাকুরের মন্দিরের সামনে হত্যে দিয়ে বসেছিল। কিছু পরে মহুয়া ওকে এসে তুলে দিয়ে, খেতে ডাকে, “এই এসো রুটি হয়ে গেছে।”

সেই বিকেল থেকে পেটে কিছুই ঠিক ভাবে পড়েনি। খাওয়ার কথা একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিল। প্রেয়সীকে পাঁজাকোলা করে তুলে কোলে বসিয়ে নেয়, “কি খাওয়াবে?” বলেই ওর সুডৌল স্তন যুগলের মাঝে মুখ ঘষে দেয়।

ওর মাথার চুল আঁকড়ে বুকের ওপর থেকে মাথা উঠিয়ে বলে, “অনেক প্রেম দেখানো হয়েছে, এইবারে একটু কিছু পেটে দিয়ে আমাকে উদ্ধার করে দাও।”

একপ্রকার কোলের ওপরে বসিয়ে খেতে খেতে রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের ঘটনাবলি বলে। শুনতে শুনতে মহুয়ার গায়ে কাঁটা দিয়ে আসে, “বাপরে, একেবারে মাঝ সমুদ্রে আয়োজন?”

দানার উত্তর দেয়, “হ্যাঁ, ভীষণ কড়া নিরাপত্তা। সব বাইরে থেকে ভাড়া করে আনা রক্ষী, সবার হাতে বন্দুক।”

মহুয়া জিজ্ঞেস করে, “আর কি কি হয়েছিল?”

দানা মিচকি হেসে বলে, “উফফফ মাইরি কি সব মালের আয়োজন, সব বড় বড় মডেল অভিনেত্রী, সবাই উলঙ্গ হয়ে যোনি মেলে এর তার সাথে যৌন সঙ্গমে মত্ত। জানো রিচা কাকলী দিব্যা বৈশাখী সুমনা আরো কত নামকরা সব অভিনেত্রী আর মডেল এসেছিল। বুঝলে এরা সবাই আসলে টাকা চেনে, শরীর নস্বর, টাকাই আসল।”

মহুয়া কপট অভিমান দেখিয়ে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ ওই উলঙ্গ অভিনেত্রীগুলোকে দেখো আর আমার বুকে শক্তিশেল বিঁধিয়ে দাও। মরে গেলে শান্তি পাও তাই না।”

দানা ওর কোমর বেশ জোরে জড়িয়ে ধরে আদর করে বলে, “সামনে শত উলঙ্গ অপ্সরা আসলেও তোমার কথা কি আর ভুলতে পারি পাপড়ি? তুমি মিষ্টি, তুমি অনন্যা, তুমি যে বুকের মধ্যে বাস করো।”

মহুয়া ওর মুখের মধ্যে রুটির টুকরো ঢুকিয়ে দিয়ে মৃদু ঝাঁঝিয়ে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ অনেক প্রেম দেখানো হয়েছে। এইবারে সত্যি করে বলতো, আজ রাতে কার কার সাথে সহবাস করলে?” চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “একদম সত্যি বলবে।”

দানা রুটি চিবোতে চিবোতে বলে, “কি করবো বলো, ওইখানে যদি শুধু মদ নিয়ে বসে থাকতাম তাহলে সবার নজরে পড়ে যেতাম।”

মহুয়া ধমকে ওঠে, “কার সাথে করলে? কে কে ছিল।”

দানা ঢোঁক গিলে বলে, “রিচা আর দিব্যা।”

মহুয়া তিতিবিরক্ত হয়ে কোল থেকে উঠে পড়তে উদ্যত হয় কিন্তু দানার কঠিন বাহুপাশ কাটিয়ে ওঠা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। যদিও শরীর বলে কোল থেকে উঠে পড় কিন্তু মন কি আর চায় প্রেমিকের কোল থেকে উঠতে। এক হাতে দানার গলা জড়িয়ে কোমর উঠাতে চেষ্টা করে আর দানা আরো জোরে ওকে ধরে কোলে বসিয়ে দেয়।

মহুয়া ওকে জিজ্ঞেস করে, “সিমোনে নিশ্চয় তোমাকে চিনে ফেলেছে?”

দানা উত্তর দেয়, “হতে পারে তবে কঙ্কনাকে শাসিয়ে এসেছি।”

মহুয়া ওকে প্রশ্ন করে, “এরপরে কি করতে চলেছো?”

দানা উত্তর দেয়, “আগে নয়নাকে সাজা দিতে হবে তারপরে সিমোনে। তবে এর মধ্যে বিশাল কিন্তু আছে।”

এই বলে দানা নিজের পরিকল্পনা মহুয়াকে জানায়। কঙ্কনাকে ব্যাবহার করে নয়নার বিরুদ্ধে সিমোনেকে দাঁড় করাতে হবে। দুই শত্রু একে ওপরে বিরুদ্ধে দাঁড়ালে এক জন শেষ হয়ে যাবে আর দ্বিতীয় জনকে পুলিসের হাতে তুলে দেবে। তবে কঙ্কনা আর নাস্রিনকে নিজে হাতে শেষ করতে চায় না, চায় কোন ফাঁদে পড়ে ওরা শেষ হয়ে যাক।

সকালে ঘুম ভাঙে ছোট্ট রুহি আলতো চুমুতে, “ডাডা আমি স্তুলে যাবো না।”

ঘুম জড়ানো গলায় মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুইয়ে বলে, “কেন মা কেন যাবি না?”

রুহি ওর গলা আরও কষে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুমি চলো আমি যাবো।”

মহুয়া ঘরে এসে দেখে, মেয়ে আর বাপে কলাকুলি করে গল্পে মেতেছে। রুহিকে উঠিয়ে দিয়ে বলে, “কি হল স্কুলে যেতে হবে না?”

রুহি মাথা নাড়ায়, “না দাব না।”

দানাকে ঝাঁঝিয়ে ওঠে মহুয়া, “ওঠ আর মেয়েকে তৈরি কর।”

দানা মাথা চুলকে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, “যাঃ বাঃবা আমি কিছুই করলাম না আর আমি তোর জন্য বকা খেয়ে গেলাম।”

রুহি খিলখিল করে হেসে ফেলে। মাম্মা আর ডাডা যখন ঝগড়া করে তখন বেশ উপভোগ করে রুহি। বিশেষ করে মাম্মা যখন ডাডাকে মাঝে মাঝে আদর করে চড় চাপাটি দেয় তখন রুহির বেশ মজা লাগে। তিরিং তিরিং করে লাফিয়ে নেচে বলে, “বেশ হয়েছে বেশ হয়েছে।”

রুহিকে স্কুলে ছেড়ে দিয়ে আগের দিনের মতন মহুয়া স্কুলে বসে থাকে, আর পিন্টু গাড়ি নিয়ে গেটের বাইরে। মনার সাথে দানা বেরিয়ে পড়ে হিঙ্গল গঞ্জের উদ্দেশ্যে। যতদিন না কঙ্কনা ওর কথা মতন কাজ করছে ততদিন নাস্রিনকে ছাড়া যাবে না। চাইলে ওই সমুদ্রে ওদের মেরে ফেলতে পারতো কিন্তু তাতে সিমোনে রাগিণী সবাই জেনে যেতো মুখোশের আড়ালে জাহাজে দানাই ছিল। কঙ্কনাকে জ্যান্ত দেখে ওদের সেই সন্দেহ আর হবে না, হাতে কিছু সময় পেয়ে যাবে পরের পরিকল্পনা করার জন্য। কঙ্কনাকে বলা হয়েছে সিমোনেকে কি কি বলতে হবে কিন্তু কি ভাবে নয়নার ভাইকে অপহরন করবে সেটাই এখন ঠিক করে ওঠা হয়নি। এটাও জানা যায়নি, সিমোনে মোহন ওর বিরুদ্ধে কি ষড়যন্ত্র করছে। সেটা অবশ্য কঙ্কনার দ্বারা জানা সম্ভবপর নয় কারন কোষাধ্যক্ষ পদ চলে যাওয়ার পরে নিশ্চয় কঙ্কনা আর সিমোনের সম্পর্ক অনেকটা আদায় কাঁচকলায় পরিনত হয়েছে।

নাস্রিনের জন্য জামা কাপড় কিনে নেয়। হিঙ্গলগঞ্জে গিয়ে মাছ ধরার নৌকায় উঠে নাস্রিনের সাথে দেখা করে। নিচের একটা ছোট ঘরের মধ্যে নাস্রিনকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। দরজার বাইরে তালা মারা, বাইরে আক্রাম আর নাসির বসে। পালা করে গত রাতে নাড়ু, বলাই শক্তি এরা ছিল। দানা ওদের নির্দেশ দেয় যেন কোনোভাবে নাস্রিনকে পালাতে না দেওয়া হয় আর যেন ওর সাথে কোন রকমের অপব্যাবহার না করে।

ছেলেগুলো হেসে ওকে বলে, “মাইরি এত ডবকা সোমত্ত মাগীকে এইভাবে আমাদের কাছে ছেড়ে যাচ্ছিস আর খালি বাঁড়া ধরে বসে থাকবো সেটা হয় কি করে।”

দানা হেসে বলে, “এখন নয়, আগে কাজ হয়ে যাক তারপরে না হয় সবাই মিলে ওকে ভালো করে চুদিস।”

********* পর্ব পনেরো সমাপ্ত **********
 
Last edited by a moderator:
পর্ব ষোল – সাপের কোঠর (#1-121)

দুপুর নাগাদ একবার কঙ্কনার হোটেলে গিয়ে ওর সাথে দেখা করে ওকে আবার সব কথা মনে করিয়ে দেয়। ওর হাতে এক সপ্তাহ সময়, এর মধ্যে কাজ না হলে আগে নাস্রিনকে খুন করবে তারপরে কঙ্কনাকে খুন করবে। কঙ্কনা জানে যে পথেই পা দেবে সেই পথে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবি। সিমোনে রমলা সবার নজর বাঁচিয়ে এই শহরে এসেছিল ওই ক্লাবের যৌন সমাবেশে যোগদান করবে বলে। স্বপ্নেও ভাবেনি যে এইখানে এসে দানার সাথে দেখা হয়ে যাবে আর ওদের অদৃষ্টে এই অঘটন ঘটে যাবে। কঙ্কনা ওকে জানায়, নাস্রিনের সাথে কথা না বলতে পেরে ওর স্বামী আমজাদ বেশ চিন্তিত। দানা শাসিয়ে দেয়, সত্যি কথা জানালে ওর কপালে মৃত্যু আছে। কঙ্কনা জানায় বিকেলেই সিমোনেকে ফোন করে দেখা করার কথা জানাবে।

প্রতিদিন বিকেলে একবার করে কঙ্কনার সাথে দেখা করে জেনে নেয় সিমোনের সাথে কথাবার্তা কতদুর এগিয়েছে। কঙ্কনা জানায়, সিমোনে অতীব চটুল ধূর্ত মহিলা, ওকে অত সহজে বাগে ফেলা সম্ভব নয়। তবে নয়নার সম্বন্ধে সিমোনে বেশ উৎসুক। কঙ্কনা জানায়, সিমোনে নাকি একবার নয়নাকে ফোন করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু ওর ফোন উঠায়নি, তারপর থেকে সিমোনে খুব ক্ষেপে যায় নয়নার ওপরে। ওদের সুহৃদ বন্ধু বিমান চন্দের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নয়নার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে প্রস্তুত। সেইসাথে যখন জানতে পারে যে দানা এর সাথে জড়িত তখন পুরানো কথা ভুলে গিয়ে কঙ্কনার সাথে হাত মেলায় সিমোনে। কঙ্কনা জানায়, ইতিমধ্যে সিমোনের কানে ওর পরিকল্পনার খবর তুলে দিয়েছে। এই খবর পেয়ে দানা মনে মনে খুব খুশি। এক সময়ে এই নয়না বিমানের সাথে এবং সিমোনে মোহনের সাথে চক্রান্ত করে ওর মেয়েকে অপহরন করার ষড়যন্ত্র তৈরি করেছিল। এইবারে সবাই সবার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে গেছে। সবাইকে আরো একবার এক জায়গায় করতে পারলে জতুগৃহ দাহ করা যাবে।

দিন চারেক পরে কঙ্কনা জানায় যে সিমোনে নাকি নাস্রিনের সাথেও দেখা করতে চেয়েছে। সিমোনে জানে একা কঙ্কনা ওর সুহৃদ বান্ধবী নাস্রিন ছাড়া কোথাও বের হয় না। এই কয়দিনে এক কঙ্কনাকে দেখে ওর মনে সন্দেহ হয়, হয়তো এ দুই জনে ওর বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র করছে তাই ওদের একসাথে দেখা করতে চায়। দানা কিছুক্ষণ ভেবে বলে একরাতের জন্য নাস্রিনকে ওর হোটেলে ছেড়ে যাবে, সেই সময়ে যেন সিমোনেকে হোটেলে ডেকে দেখা করিয়ে দেয়।

কথা মতন নাস্রিনকে পঞ্চম রাতে হোটেলে ছেড়ে দেয় দানা। তবে সারা রাত হোটেলের বাইরে গাড়ির মধ্যে বসে পাহারা দেয়। সিমোনে নিশ্চয় ওদের সাথে দেখা করতে আসবে।

একঘণ্টা কেটে যায়, বারেবারে মহুয়া ফোন করে খবরা খবর জানতে চায়। দানা জানায়, কোন সন্দেহজনক লোকের সন্ধান তখন পর্যন্ত পায়নি। রাত বেড়ে ওঠে, কিন্তু সিমোনের গাড়ি অথবা মোহনের গাড়ির দেখা পাওয়া যায় না। চরম উৎকণ্ঠায় সারা রাত কেটে যায়, কিন্তু সিমোনে ওদের সাথে দেখা করতে আসেনা। দানার মনে তখন সন্দেহ জাগে, কঙ্কনা আর নাস্রিন কি তাহলে ওকে ভুলিয়ে আবার পলায়ন করেছে। সেই চিন্তা মাথায় ঢুকতেই দানার গায়ের রক্ত ফুটতে শুরু করে দেয়। হাতের কাছে পেয়েও ওদের ওপরে নিজের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়া হল না। চেয়েছিল এক আর ফল হল আরেক।

সকাল হয়ে যায়, একবার ভাবে হোটেলের কামরায় গিয়ে ওদের সাথে দেখা করবে। সত্যি কি ওরা পালিয়েছে? সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে মনাকে সঙ্গে নিয়ে লবিতে ঢোকে দানা। রিসেপ্সানিস্টকে ওদের কামরার নাম্বার দিয়ে বলে ওদের সাথে দেখা করতে এসেছে। রিসেপ্সানিস্ট ফোন করে কঙ্কনার কামরায়, কিন্তু ফোন বারেবারে বেজে যায়। রিসেপ্সানিস্ট জানায়, গতরাতে অথবা সকাল পর্যন্ত ওদের দুইজনের কেউই হোটেল ছেড়ে যায়নি। বেশ কয়েকবার ফোন করার পরেও যখন কেউ ফোন উঠালো না তখন রিসেপ্সানিস্টের সাথে দানার মনে সন্দেহ জাগে। কি হল কঙ্কনা আর নাস্রিনের। একরাতের মধ্যে এই সদর দরজা দিয়ে কি করে উধাও হতে পারে দুই মহিলা। নামকরা পাঁচতারা হোটেল, এদের নিরাপত্তা রক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে চেক আউট না করেই বেরিয়ে যাওয়া কোন প্রকারে সম্ভব নয়। হোটেলের ম্যানেজার চলে আসে ততক্ষণে। রমলার পত্রিকার নাম নিয়ে জানায় ওই পত্রিকার তরফ থেকে ওদের সাথে দেখা করতে এসেছে কিন্তু অনেকবার ফোন করার পরেও কারুর সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত হাউস্কিপিং স্টাফকে সাথে নিয়ে ম্যানেজার আর দানা ওদের কামরায় যায়।

হোটেলের ম্যানেজার প্রথমে কলিং বেল বাজায়, ওইপাশ থেকে কোন সাড়া শব্দের আওয়াজ না পেয়ে দানা আর বাকিরা সবাই এক ওপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। হাউস্কিপিং স্টাফের লোক দরজার হাতলে হাত রাখতেই দরজা খুলে যায়। সেই দেখে সবাই স্থম্ভিত হয়ে যায়। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই ওদের নজরে পড়ে বিছানার ওপরে কঙ্কনার রক্তাক্ত দেহ। গলায় একটা ছুরির দাগ, শ্বাসনালী কেটে দেওয়া হয়েছে। পাশের সোফার ওপরে নাস্রিনের মৃতদেহ, ওর শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলা হয়েছে। দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, বুঝতে দেরি হয়না এর পেছনে সিমোনের হাত। দুইজনকে একসাথে খুন করবে বলেই নাস্রিনকে ডেকে পাঠিয়েছিল। এইকাজ ভাড়াটে গুন্ডার দ্বারা করানো হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে ম্যানেজার পুলিসে খবর দেয়। আধা ঘন্টার মধ্যেই হোটেল পুলিসে পুলিসে ছয়লাপ হয়ে যায়। নামকরা পাঁচ তারা হোটেল, এই খবর কোন রকমে একবার যদি প্রকাশ হয়ে যায় তাহলে হোটেলের নাম খারাপ হয়ে যাবে। ম্যানেজারের মাথায় হাত, এইদিকে পুলিস ততক্ষণে প্রাথমিক তদন্ত সেরে ফেলে। ওদের সঙ্গের কাগজপত্র ঘেঁটে ওদের পরিচয় উদ্ধার করে। দানা এর মাঝে ওইখান থেকে চুপিচুপি সরে যায়। একবার যদি পুলিসের সন্দেহ ওর ওপরে পড়ে তাহলে মুশকিল। ওর কাছে কোন প্রমান নেই যে এর পেছনে সিমোনে খৈতানের হাত, কিন্তু ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে উল্টে পুলিসের সন্দেহ ওর ওপরে বেশি করে পড়বে।

বাইরে বে্রিয়ে এসেই মহুয়াকে ফোন করে জানাতেই মহুয়া চমকে ওঠে। আর ওইখানে দাঁড়ায় না, সোজা বাড়ি ফিরে যায় দানা। বাড়িতে ফিরে দানা বিস্তারে মহুয়ায়কে সব ঘটনা জানায়। এই সময়ে ওইখানে থাকলে পুলিসের নজরে পড়ে যেতো তাই গোলমালের মধ্যে কোনোরকমে গা ঢাকা দিয়ে ওইখান থেকে চলে এসেছে। তবে ওর দৃঢ় বিশ্বাস এর পেছনে সিমোনের হাত। রমলার কাজ এটা হতেই পারে না কারন রমলা জানেনা যে নাস্রিন আর কঙ্কনা এই শহরে এসেছে।

এমন সময়ে দানার ফোন বেজে ওঠে। ফোন তুলেই দানা স্তম্ভিত হয়ে যায়, সিমোনে কি মনে করে ফোন করেছে?

মহুয়ার ফিসফিস করে ওকে বলে, “ফোন তুলে দেখো কি বলতে চায়। এইরাতেই কঙ্কনা আর নাস্রিনের খুন আর তারপরেই তোমাকে ফোন। ওদের মতিগতি সুবিধের বলে মনে হচ্ছে না জিত। দেখবে ঠিক তোমাকে দেখা করার জন্য ডাকবে। সাবধান জিত আমার কিন্তু মন বড় ছটফট করছে।”

সেটা অবশ্য দানারও করছে। এরপরে সিমোনে কি পদক্ষেপ নেবে সেটা জানাই গেল না। হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি শান্ত করে ফোন তুলে সিমোনেকে জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছেন মিসেস খৈতান?”

সিমোনে মৃদু হেসে বলে, “আমি আর কেমন থাকতে পারি মিস্টার মন্ডল। ভালো মন্দ মিলে এক রকম আছি।”

হটাত ফোন করার কারন জিজ্ঞেস করে দানা, “হটাত কি মনে করে ফোন করা হলো, মিসেস খৈতান?”

সিমোনে হেসে উত্তর দেয়, “অত আদিখ্যেতা করে ফোনে বারেবারে মিসেস খৈতান বলে ডাকতে হবে না দানা। আমি আজকে বাগান বাড়িতে। এখন একাই আছি, এই একটু বিশ্রাম আর...”

ওই কথা শুনে ক্ষণিকের জন্য দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। বুঝতে দেরি লাগে না অতীব ধূর্ত হিংস্র নারী ওকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টায় আছে। মহুয়া কি করে এতসব বুঝতে পারে আগে থেকে? ওর নাক কি কুকুর? দানাও দেখতে চায় কতদুর এরা নাচতে পারে। বাগান বাড়িতে একা মানেই সিমোনে আবার নতুন কোন ছেলেকে পেয়েছে নিজের কাম পিপাসা চরিতার্থ করার জন্য। এহেন কামুক নারীরা কখনই এক পুরুষে সন্তুষ্ট হতে পারে না, রোজ রাতে নতুন দামাল ষাঁড় চাই বিছানায়।

দানা হেসে সিমোনেকে বলে, “আচ্ছা তাই নাকি? নতুন কাকে পেলে?”

সিমোনে মিচকি হেসে উত্তর দেয়, “একা মানে সম্পূর্ণ একা দানা। (কণ্ঠে মধু ঢেলে) কিছু না এমনি, খুব একা লাগছিল তাই ফোন করেছিলাম।”

মহুয়া কটমট করে দানার দিকে তাকায়, এই মহিলা কত রঙ্গ না জানে। মহুয়া রাগে ওই দিকে ফুঁসতে শুরু করে দেয়। পারলে ফোনের মধ্যে ঢুকে সিমোনেকে গলা টিপে হত্যা করে।

দানা ওকে আরো খেলিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন সিমোনে, যাওয়ার আগে কঙ্কনা নতুন কারুর ফোন নাম্বার দিয়ে যায়নি তোমাকে। কি ব্যাপারে ফোন করেছো বললে না তো?”

অতীব ছলনাময়ী সিমোনে হেসে বলে, “কি যে বলো না তুমি। কঙ্কনা শহর ছেড়ে গেছে সে প্রায় এক বছর হয়ে গেল। (সঙ্গে সঙ্গে সিমোনে উৎসুক হয়ে ওঠে) তুমি কি করে জানলে যে কঙ্কনা এই শহরে নেই?”

দানাও বাঁকা হেসে জবাব দেয়, “আমি কেন জানতে পারি না সিমোনে? ফোন করেছিলাম, ফোন পাইনি, বাড়িতে গেছিলাম সেখানেও পাইনি।”

সিমোনের গলা কিঞ্চিত কেঁপে ওঠে, “ওর বাড়ি গিয়েছিলে মানে? তুমি ওর বাড়ি চেন?” কিছুতেই বুঝতে দিতে চায় না যে আসলে কঙ্কনার সাথে ওর কোনোদিন দেখা হয়েছিল।

না কঙ্কনার আসল বাড়ি চেনে না দানা। যেখানে প্রতিবার ওকে নিয়ে যেতো সেটা অন্য কারুর বাড়ি আর সেই মালিক বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে বিদেশ চলে গেছে তাই সেই রহস্যের আর উত্তর পেল না দানা।

দানা এতক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছিল, কিন্তু সিমোনের চাপা কণ্ঠ স্বর শুনে দাঁড়িয়ে পড়ে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি করে বলো সিমোনে, কঙ্কনা কোথায়?”

পাল্টা হেসে জবাব দেয় সিমোনে, “আগে দেখা করো তারপরে জানাবো।”

দেখা ওকে করতেই হবে। কঙ্কনা আর নাস্রিনের মৃত্যুর পরে, কিছুতেই অনুধাবন করা যাচ্ছে না সিমোনের মাথায় কি চলছে। সেটা জানার জন্য ওর সাথে দেখা করা এক মাত্র পথ। ফোনে সেটা সম্ভব নয়, কিন্তু দেখা করলে ভীষণ কিছু একটা হবার আশঙ্কা আছে। দানা একটু ভেবে চিন্তে ওকে বলে, “দেখো সিমোনে, তোমার সম্বন্ধে অনেক কিছুই আমার জানা, সুতরাং যদি ভালোয় ভালোয় কঙ্কনার খবর দাও তাহলে খুব ভালো হয়।”

পাল্টা হেসে সিমোনে জবাব দেয়, “সেটা আমিও জানি দানা। তবে কি জানো সব কিছু ফোনে বলা যায় না। আমি তোমার জন্য আমাদের পুরানো জায়গায় অপেক্ষা করছি। কঙ্কনার খবর জানতে হলে দেখা কর।”

দানা বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে মহুয়ার দিকে তাকায়। মহুয়া বুঝে উঠতে পারে না, দেখা করা ঠিক হবে না না দেখা করা ভালো। সিমোনে যেমন ধূর্ত ছলনাময়ী নারী, দানাকে একা পেয়ে যদি প্রানে মারতে চায় তাহলে মহুয়া সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে। আগে হলে দানার ভয় ডর থাকতো না কিন্তু এখন পাশে প্রেয়সী আর কচি রুহি।

রুহিকে কোলের মধ্যে শক্ত করে ধরে দানার দিকে তাকিয়ে থাকে মহুয়া। কি করবে দানা? একা একা যাবে নাকি ওই সাপের গর্তে? নয়নার মতন এর ছোবল বিষাক্ত, চুপচাপ পড়ে থাকবে পড়ে থাকবে তারপরে হটাত করে ছোবল মারবে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দানা উত্তর দেয়, “ঠিক আছে দেখা করবো।” মহুয়ার চোখ ফেটে জল চলে আসে।

সিমোনে মৃদু হেসে বলে, “সন্ধ্যের পরে আমাদের সেই পুরানো জায়গায় চলে এসো।”

ফোন ছাড়তেই মহুয়া ওকে ভয়ার্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কি করতে চলেছো?”

দানা চোয়াল চেপে জিজ্ঞেস করে, “কি চাও তুমি। সারা জীবন গর্তে ঢুকে বেঁচে থাকি? একদিকে নয়না, একদিকে মোহন সিমোনে। এরা বেঁচে থাকলে আমাদের জীবন দুর্বিষহ করে ছেড়ে দেবে।”

রুহিকে কোলের মধ্যে আঁকড়ে মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “একটু শান্তি নেই জীবনে। যাচ্ছো যাও একটু সাবধানে যেও।”

সত্যি, একটার পর একটা ঝামেলা ওদের জীবনে লেগেই আছে। শুরু হয়েছিল দানার সাথে কিন্তু সেটা ছড়িয়ে পড়ল মহুয়া আর রুহির জীবনে। এখন পর্যন্ত মহুয়াকে সত্যি কথাটা বলতে পারেনি, কি কারনে কঙ্কনা আর নাস্রিন ওকে খুন করতে চেয়েছিল।

চোখের জল মুছে দানাকে বলে, “ওইখানে যেতে দিতে একটা শর্তে পারি। তুমি আক্রাম নাসির বলাই শক্তি সবাইকে সাথে নিয়ে যাও।”

দানা জানে সবাইকে সাথে নিয়ে গেলে সিমোনে মুখ খুলবে না উল্টে অন্য কিছু চাল খেলবে। দানা একাই যাবে ঠিক করে তবে সাথে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যাবে। রুহি জিজ্ঞেস করাতে সঠিক উত্তর দিতে পারে না দানা। বিমানের বাগান বাড়িতে ঢোকার আগে ওর কাছে বেরিয়ে আসার একটা সুচতুর পরিকল্পনা ছিল কিন্তু এইবারে সেই পরিকল্পনা নেই। এক প্রকার সাপের গর্তে মাথা ঢুকাতে চলেছে দানা কিন্তু নিরুপায়। মহুয়া আর রুহিকে বাড়িতে নামিয়ে দেয়। মনা আর পিন্টু বারেবারে ওর সাথে যাওয়ার কথা বলে কিন্তু দানা মানা করে দেয়। ওদের বাড়িতে থাকতে নির্দেশ দেয়, বলে দানার না ফিরে আসা পর্যন্ত যেন মশা মাছি যেন বাড়ির ত্রিসীমানায় না আসে।

সন্ধ্যের পরে একাই গাড়ি নিয়ে সিমোনের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। কোমরের পেছনে একটা পিস্তল, দ্বিতীয় পিস্তল পায়ের গোড়ালিতে। যদি ওই বাড়িতে সিমোনে ছাড়া আরও লোকজন থাকে তাহলে দানার বেঁচে ফেরার আশঙ্কা আছে আর যদি একা থাকে তাহলে সিমোনেকে ওইখানে পুঁতে রেখে আসবে।

বড় রাস্তা ছেড়ে গ্রামের পথে বাঁক নিতেই দানার বুকের ধুকপুকানির মাত্রা বেড়ে ওঠে, কি হবে কি হবে। গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইলে মহুয়া আর রুহির ছবিটা দেখে। মোবাইল স্ক্রিনে ঠোঁট চেপে চুম্বন দেয় রুহি আর মহুয়াকে। আসন্ন উৎকণ্ঠায় জিব শুকিয়ে গেছে, কিন্তু দমে গেলে চলবে না। বাড়ির সামনে আসতেই দরোয়ান বড় লোহার গেট খুলে দেয়। এতদিনে দানার গাড়ি চিনে গেছে বাগান বাড়ির দরোয়ান। বাড়ির সামনে একটা মোটরসাইকেল আর সিমোনের গাড়ি দাঁড় করানো। মোটর সাইকেল দেখে বুঝতে দেরি হয় না সিমোনে এক নয় সাথে কোন পুরুষ সঙ্গী আছে। গাড়ি থেকে নেমে একটা সিগারেট ধরাতেই একটা ছেলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে ওকে ভেতরে ডাকে। ছেলেটা দেখতে সুঠাম স্বাস্থবান, বুঝতে দেরি হয়না নিজের কামক্ষুধা মেটানোর জন্য এই ছেলেকে ধরেছে সিমোনে। ছেলেটার ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত, পরনে শুধু মাত্র একটা প্যান্ট। দানা জানিয়ে দেয় সিগারেট শেষ করে ভেতরে আসবে। ছেলেটা জানায়, সিগারেট নিয়ে ভেতরে ঢুকলে কোন অসুবিধে হবে না। সেটা দানার অজানা নয়, এই বাড়ির শয়ন কক্ষে সিমোনের শরীর নিয়ে বহুবার সঙ্গমে মেতেছিল। ছেলেটার চোখ বাঁচিয়ে কোমরের পেছনে হাত দিয়ে পিস্তল দেখে নেয় আর মোবাইলে রেকর্ডের বোতাম টিপে ওদের বার্তালাপ রেকর্ড করার জন্য চালিয়ে দেয়। তারপরে ছেলেটার পেছন পেছন ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে। ছেলেটা ওকে বসার ঘরের সোফায় বসতে বলে বারের দিকে চলে যায়। কি নেবে জিজ্ঞেস করাতে দানা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় কিছু নেবে না। এই বাড়িতে কারুর ওপরে বিশ্বাস নেই, হয়তো মদের সাথে বিষ মিশিয়ে ওকে মেরে ফেলল। ছেলেটা মাথা দুলিয়ে একটা গেলাসে তরল পানীয় ঢেলে শয়ন কক্ষে ঢুকে যায়।
 
পর্ব ষোল – সাপের কোঠর (#2-122)

কিছু পরে সিমোনে গেলাস হাতে শয়ন কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে। পরনে শুধু মাত্র একটা সাদা তোয়ালে। বুকের অর্ধেকের বেশি অনাবৃত, শরীর জড়িয়ে শুধু মাত্র পাছা কোন রকমে ঢেকে রাখা। বাকি অঙ্গ বস্ত্রহীন, হয়তো ইচ্ছে করেই দানাকে উত্তেজিত করার জন্য তোয়ালে জড়িয়েছে, কিম্বা সদ্য কামকেলি থেকে উঠে এসছে। তোয়ালে ভেদ করে সুগোল স্তন জোড়ার আকার পরিস্কার ফুটে উঠেছে। কাঁধের দিকে তাকালেই বোঝা যায় ব্রা পরা নেই, তোয়ালে ফুঁড়ে কঠিন স্তন বৃন্ত, দানার দিকে উঁচিয়ে হাতছানি দিয়ে ডাক দেয়। বক্ষ বিভাজনের অধিকাংশ উপচে বেরিয়ে। গায়ের সাথে এক প্রকার লেপটে রয়েছে তোয়ালে। হাঁটার ফলে তোয়ালে মাঝে মাঝে সরে যায় ঊরুসন্ধি থেকে আর নরম সাদা প্যান্টি ঢাকা ফোলা যোনি দেশ দেখা যায়। দুই বাহু, দুই কাঁধ সম্পূর্ণ অনাবৃত, অবশ্য উপরিবক্ষে কামকেলির সেই চরম ছাপ নেই। মসৃণ ফর্সা পুরুষ্টু ঊরু যুগলের ওপরে ঘরের আলো পিছলে যায়। অবিন্যাস্ত চুল মাথার ওপরে একটা ক্লিপ দিয়ে আটকানো, তাও বেশ কিছুটা ওর গোল ফর্সা মুখের ওপরে এসে মুখ মন্ডল আরো লাস্যময়ী করে তুলেছে। ওর দিকে তাকিয়ে এক কামুকী হাসি দিয়ে ওর পাশের সোফার ওপরে বসে পড়ে সিমোনে। ছেলেটা কিছু পরে ঘর থেকে জামা পরে বেরিয়ে আসে।

সিমোনে ওর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলে, “ওকে সন্তু, তুমি যেতে পারো। আবার পরে ডাক দেব।” সন্তু বেরিয়ে যেতেই দানার দিকে তাকিয়ে হেসে জিজ্ঞেস করে, “কি হলো এতদিন পরে সময় হল আসার?”

দানা চোয়াল চেপে অল্প হেসে বলে, “দেখা করতে চাইলে দেখা করা যায় সিমোনে।”

সিমোনে ওর চোখে চোখ রেখে পা ভাঁজ করে সোফার ওপরে তুলে দেয়। পা ভাঁজ করার ফলে সিমোনের সুগোল দুই নরম পাছা সম্পূর্ণ দানার চোখের সামনে অনাবৃত হয়ে যায়। পাছার খাঁজের মাঝ দিয়ে ভিজে সাদা এক চিলতে কাপড়ে ঢাকা ফোলা নরম সদ্য মন্থিত যোনি দেখা যায়। যোনি রসে ভিজে সাদা প্যান্টি ফোলা নরম যোনির সাথে লেপটে যোনির আকার অবয়াব পরিস্ফুটিত করে তোলে। কোমরের নিচের প্রায় সবকিছু অনাবৃত দেখে দানার লিঙ্গের ছটফটানি বেড়ে ওঠে। কিন্তু দানা নিজের উত্তেজনা আয়ত্তে রেখে সিমোনের তীব্র যৌন আবেদনময়ী শরীর গোগ্রাসে গিলে নেয়। বাড়িতে কি শুধু এই ছেলেটা ছিল না আরো কেউ আছে? সঠিক জানা নেই। দানার ক্ষুধার্ত দৃষ্টি দেখে সিমোনের বুকের রক্ত কামোত্তেজনায় চঞ্চল হয়ে ওঠে। গেলাসে জিব ঠেকিয়ে চোখে কামুকী হাসি দিয়ে ইশারা করে, কি এত জুলুজুলু করে দেখছে? একসময়ে বিনা বাধায় এই শরীর ওর হাতের মধ্যে চলে যেতো। ইচ্ছে মতন দানার ভারী পেশী বহুল শরীরের নীচে পড়ে থেকে কামক্রীড়াতে মেতে উঠতো।

সিমোনে ওর দিকে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, “হাতে এখন সময় আছে, বুকে তৃষ্ণা এখন বাকি আছে।”

দানা মাথা নাড়িয়ে হেসে বলে, “তুমি আর শুধরাবে না তাই না সিমোনে। কি আলোচনা করতে চাও?”

সিমোনে হাসিতে ফেটে পড়ে, হাসির চোটে স্তন জোড়া ভীষণ ভাবে দুলে ওঠে, “আমার খিদে এখুনি কেন মরতে যাবে দানা।” সঙ্গে সঙ্গে হাসি থামিয়ে বলে, “নয়নার মাথা আমার চাই তবেই আমার খিদে মরবে, দানা।” খিল খিল হাসির পরেই এহেন থমথমে কণ্ঠ শুনে দানা তীক্ষ্ণ চোখে সিমোনের চোখের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। মদের গেলাসে ছোট চুমুক দিয়ে দানাকে বলে, “বিমানের মৃত্যুর পেছনে আসলে নয়না দায়ী। সেটা তুমিও ভালো ভাবে জানো আমিও জানি। বিমান ওকে যে বাড়িটা দিয়েছে সেটা আমার ছিল। মোহনকে বলে ওই আড়াই কোটি টাকার বাড়ি নয়নাকে দিয়ে দিয়েছে। সেটা আমি কি করে সহ্য করি বল? বিমানের মৃত্যুর পরে মোহন খুব ভেঙে পড়েছে। কতবার বিমানকে বললাম, আরে বাবা, আজকাল বাজারে কত নতুন কচি মাগী এসেছে। রিচা দত্ত, সুনয়না ঘোষ, মল্লিকা সেন, আরো কত কচি উঠতি মেয়ে, এদের কাউকে পছন্দ করে মাগী বানিয়ে রাখুক। তা না, বাপ্পা নস্কর যেহেতু ওর গুদ মেরেছে, বিমান সেই গুদ চায়। কি কারন? না ভবিষ্যতে নয়নাকে ব্যাবহার করে বাপ্পাকে সরাবে। আর কি দুর্ভাগ্য দেখো, নিজেই...” বলতে বলতে থেমে গেল সিমোনে। বিমানের মৃত্যুতে সত্যি কি সিমোনে আহত না ওর আড়াই কোটি বাড়ি নয়নার নামে হয়ে গেছে সেই জন্য আহত। একটু থেমে দানাকে বলে, “কেন তুমি নয়নাকে আগলে রেখেছো দানা সেটাই বুঝতে পারছি না। তোমার সাথে আমাদের ব্যাবসায়িক সম্পর্ক, (চোখ টিপে কামুকী হাসি দিয়ে বলে) তোমার সাথে আমার সম্পর্ক মহুয়া আর নয়নার আগের তাই না? আমাদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি করে কি লাভ বলো।”

মহুয়ার সাথে সম্পর্ক সিমোনের আগের সেটা সিমোনে জানে না। মনে মনে হেসে ফেলে দানা, মহুয়া আর রুহি ওর জীবন, ওর পৃথিবী ওর সব কিছু। সামান্য কয়েক কোটি টাকা উপার্জন করার জন্য দানা ব্যবাসায় নামেনি, ওর আসল উদ্দেশ্য ছিল নিজের খুনের প্রতিশোধ নেওয়া, সেই করতে করতে অনেক জালে জড়িয়ে পড়ে আর এক এক করে সবার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়। নয়নাকে এই খৈতানেরা আক্রমন করুক সেটা দানা মনেপ্রানে চায়।

বেশ ভাবনাচিন্তা করার মেকি ভাব দেখিয়ে কিছু পরে দানা ওকে বলে, “দেখো সিমোনে, নয়না এখন প্রচণ্ড সতর্ক হয়ে গেছে। সাদা পোশাকের পুলিস ওর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে। আমাদের সাথে আর বিশেষ সম্পর্ক নেই। শুধু শুধু আমার কথায় নয়না বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসবে সেটা নয়।”

সিমোনে সোফার ওপরে একটু নড়েচড়ে বসে, যার ফলে তোয়ালে কোমরের প্রায় কাছে চলে আসে। ঊরুসন্ধি পর্যন্ত সম্পূর্ণ পেলব মসৃণ ঊরু জোড়া উন্মোচিত হয়ে যায়। দানার চোখ সিমোনের ঊরুসন্ধির দিকে চলে যায়। সিমোনের শরীরের আনাচে কানাচে দানার লোলুপ দৃষ্টি ঘোরাফেরা করে। সেই দেখে বাঁকা হেসে সিমোনে ওকে বলে, “ইসস দানা, কেন মিথ্যে বলছো। তোমার মিসেস মাঝে মাঝেই ওর বাড়িতে যায় সেই খবর আমার কাছে আছে। তুমি চাইলে সব কিছু সম্ভব দানা। কিছু একটা করো।”

ওর বাড়ির ওপরে সিমোনে যে নজর রাখবে সেটা আগে থেকেই অনুধাবন করেছিল তাই বাঁকা হাসি দিয়ে সিমোনেকে বলে, “তুমি আর নয়না এক ধাতুর তৈরি মহিলা। কে কখন কাকে কি ভাবে মৃত্যু পথযাত্রী বানিয়ে দেবে তার নেই ঠিক।”

অনাবৃত উপরি বক্ষে একটু হাত বুলিয়ে, স্তন জোড়া আলতো চেপে সিমোনে কামুকী দিয়ে হিসহিস কণ্ঠে ওকে বলে, “এই বুকে এতদিনে এই দেখলে, দানা?”

অতীব যৌন উদ্রেককারি ভঙ্গিমা দেখে দানা হেসে ফেলে, “অনেক কিছু দেখেছি সিমোনে আর অনেক কিছু বুঝেছি।”

সিমোনে চোখ বেঁকিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা কি কি দেখেছো?”

পায়ের ওপরে পা বদল করে বসে যায় সিমোনে। তোয়ালে কোমর পর্যন্ত উঠে যায়, সামনের ভাঁজ খুলে যায়, হয়তো ইচ্ছে করেই এমন করছে সিমোনে। তোয়ালের দিকে খেয়াল নেই সিমোনের অথবা দানাকে কামোত্তেজিত করার জন্য ইচ্ছে করেই প্যান্টি ঢাকা ঊরুসন্ধি ওর লোলুপ চোখের সামনে মেলে ধরেছে। সাদা ভিজে প্যান্টি ঢাকা ফোলা নরম যোনি দেশ একটুখানি লুকোচুরি খেলে ওর চোখের সামনে মেলে যায়। যোনি চেরার ওপরে চেপে বসে প্যান্টি। পুরুষ্টু ফর্সা ঊরু যুগলের মাঝে মন্মোহক নারী অঙ্গ দেখে দানার বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। হটাত মাথার চুল একটু ঝাঁকিয়ে সোফা ছেড়ে উঠে পড়ে সিমোনে। বারের দিকে ধীর পায়ে পাছা দুলিয়ে হেঁটে যায়। নিজের কামোত্তেজনা দাঁতে দাঁত পিষে সংবরণ করে সিমোনের চূড়ান্ত লাস্যময়ী শরীর দুই চোখে গোগ্রাসে গিলে ফেলে। প্যান্টের ভেতরে ওর লিঙ্গ দামাল হয়ে উঠেছে, মদ ছাড়াই সিমোনের হাসি আর চূড়ান্ত লাস্যময়ী দেহ দেখে দানার নেশা চড়ে গেছে।

বারে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে ঝুঁকে ওর দিকে তাকিয়ে কামুকী হাসি দিয়ে বলে, “তোমার জন্য গ্লেনফিডিক হুইস্কি আনিয়েছিলাম মিস্টার মন্ডল।”

সামনে ঝুঁকে যাওয়ার ফলে তোয়ালের নীচ থেকে সম্পূর্ণ ফর্সা সুগোল নরম পাছা জোড়া অনাবৃত হয়ে যায় দানার লোলুপ চোখের সামনে। পাছা দুলিয়ে দানাকে চরম কামোত্তেজিত করে তোলে সিমোনে। দানাও শেষ পর্যন্ত সিমোনের সাথে ছলনা আর শরীরের খেলায় নেমে পড়ে। কঙ্কনা আর নাস্রিনের খবর ওর চাই, যে করে হোক চাই। আর তার জন্য যদি সিমোনের সাথে ওকে উদ্দাম সঙ্গম করতে হয় তাও রাজি। সোফা ছেড়ে উঠে, সিমোনের পেছনে দাঁড়িয়ে ওর পিঠের ওপরে হাত রাখে দানা। দানার হাতের ছোঁয়া পেয়ে সিমোনে ওর দিকে সরে আসে।

দানা একবারের জন্য সিমোনের মুখ থেকে রাতের ঘটনার সম্বন্ধে শুনতে চায়। ওর পকেটের মোবাইল তখন পর্যন্ত ওদের সংলাপ রেকর্ড করে চলেছে। দানার এক হাত নেমে যায় সিমোনের কোমরে। কোমরে হাত পেঁচিয়ে কাছে টেনে কানেকানে বলে, “কঙ্কনার কি খবর, সিমোনে?”

সিমোনে বাঁকা হাসি দিয়ে দানার বুকের ওপরে নিজের স্তন চেপে ধরে বলে, “এখন ওই কঙ্কনা আর নাস্রিনকে নিয়ে পড়ে আছো কেন? ওরা এইখানে নেই, এইখানে আমি তোমার সামনে।” একটু থেমে চোরা হাসি দিয়ে বলে, “ঠিক কত জনের সাথে শুয়েছো তুমি?”

সিমোনের গোলাপি ঠোঁটের বাঁকা হাসি দানাকে তাতিয়ে দেয়। তোয়ালের তলায় হাত গলিয়ে, সিমোনের নরম পাছা জোড়া থাবার মধ্যে আলতো পিষে ধরে। কঠিন তপ্ত হাতের পরশে সিমোনের দেহ কেঁপে ওঠে, স্তন জোড়া চেপে ধরে দানার প্রশস্ত ছাতির ওপরে। প্যান্টের ভেতরে লিঙ্গ ছটফট করছে, কঠিন হয়ে দাঁড়িয়ে সিমোনের নরম তলপেটের ওপরে চেপে বসে যায়। নিজের দিকে টেনে ওর তলপেটে লিঙ্গ ঘষে সিমোনেকে আর নিজেকে উত্তেজিত করে তোলে দানা। হাতের কাছে এত নরম কোমল শরীর পেয়ে নিজেকে আর আয়ত্তে রাখতে পারে না। সিমোনে মদের গেলাস বারের টেবিলে রেখে দানার গলা দুই হাতে পেঁচিয়ে ওর চোখের দিকে চূড়ান্ত কামনা ভরা চাহনি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। প্যান্টির ওপর দিয়ে নরম সুগোল পাছার ওপরে হাত বুলিয়ে, আর তলপেটে লিঙ্গ ঘষে শরীরের রক্ত গরম হয়ে যায়। ওর মুখের ওপরে সিমোনের তপ্ত শ্বাসের ঢেউ বয়ে চলে। দুইজনের চোখে নির্বাক অসীম কামক্ষুধা। আধা বোজা চোখে ঠোঁট জোড়া অল্প মেলে দানার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যায় সিমোনে।

দানা মাথা নিচু করে ওর চোখের ওপরে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, “কঙ্কনা কোথায় সিমোনে?”

সিমোনে জিব বের করে আলতো করে ওর ঠোঁট চেতে চাপা ফিসফিস কণ্ঠে বলে, “আগে নয়নার খবর দাও তারপরে আমি কঙ্কনার খবর দেবো। নয়নাকে আমার হাতে তুলে দাও, আর বাকিটা আমার ওপরে ছেড়ে দাও।”

সত্যি কি কঙ্কনা ওর পরিকল্পনা মতন কিছুই সিমোনেকে জানায়নি? মাথাটা নামিয়েছিল ওই গোলাপি নরম ঠোঁটে একটা কামড় বসানোর জন্য। কিন্তু চুমুটা খেতে গিয়েও খেলো না। মাথা ঝিমঝিম করছে। বিবেক আর বুদ্ধি একসাথে পরস্পরের সাথে যুদ্ধে নেমেছে। শেষ পর্যন্ত কি করবে দানা? “অশ্বথামা হত – ইতি গজ” চাল না দিলে এই ধুরন্ধর মহিলাকে পরাস্ত করা ওর একার পক্ষে অসম্ভব।

একহাতে সিমোনের সুগোল নরম পাছা জোরে চেপে ধরে, অন্য হাতে কোমর পেঁচিয়ে বাহু বেষ্টনীতে কঠিন ভাবে বেঁধে ওকে বলে, “মাথায় একটা জব্বর পরিকল্পনা আছে। (কিছুক্ষণ থেমে বলে) নয়নার প্রান ভোমরা ওর ভাইয়ের মধ্যে লুকিয়ে। তুমি যদি ওর ভাইকে অপহরন করতে পারো তাহলে খুব সহজেই নয়নাকে ফাঁদে ফেলতে পারবে।”

লাস্যময়ী সিমোনে ওর বাহুপাশে ছটফট করে নিজেকে আরও বেশি করে দানার সাথে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করে, “কিন্তু ওর ভাইকে কি করে ধরবো? শুনেছি ওর ভাই মন্দ বুদ্ধি, বাড়ি থেকে বের হয় না। নয়না ওর ভাইকে চোখে চোখে রাখে সব সময়ে।”

তোয়ালে প্রায় খুলে যাওয়ার যোগাড়। একহাতে সিমোনের সুগোল নরম পাছার আয়েশ করে চটকে চলেছে, অন্য হাত তোয়ালের ভেতরে ঢুকিয়ে সিমোনের পিঠের ওপরে আদর করে নিজের দিকে টেনে ধরে। প্যান্টের ভেতরে ফুঁসে ওঠা লিঙ্গ, সোজা সিমোনের ঊরুসন্ধির কাছে গিয়ে ধাক্কা মারে আর কঠিন লিঙ্গের পরশে সিমোনে বারেবারে নিজের ঊরুসন্ধি দানার ঊরুসন্ধির সাথে পিষে ধরে।

সিমোনের নধর লাস্যময়ী দেহ বেশ করে মর্দন করতে করতে বলে, “হ্যাঁ এটা সত্যি যে নয়না ওর ভাইকে চোখে চোখে রাখে। আমাকে কয়েকদিন সময় দাও। আমি ওর ভাইকে তোমার হাতে তুলে দেবার ব্যাবস্থা করে দেবো। যেদিন তুলে দেব সেইদিন রাতেই তুমি নয়নাকে ফোন করে জানিয়ে দেবে যে ওর ভাই তোমার কবলে। পরেরদিন এই বাড়িতে ডেকে এনে, অথবা যেখানে তোমার খুশি সেখানে ডেকে এনে ওর সাথে বোঝাপড়া করে নিও।”

দানার কঠিন বাহু বেষ্টনীর মাঝে ছটফট করে উঠে কামুকী ধূর্ত হাসি দিয়ে বলে, “দারুন পরিকল্পনা দানা। যেদিন তুমি আমার হাতে ওকে তুলে দেবে সেদিন আমি তোমাকে কঙ্কনার খবর দেব।”

দানার মাথা গরম হয়ে যায় ওই কথা শুনে, সঙ্গে সঙ্গে সিমোনের হাত পেঁচিয়ে ধরে চাপা হুঙ্কার দেয়, “আমার সাথে ছলনা করছো সিমোনে? জানো তোমার মরণ কাঠি আমার হাতের মুঠিতে?”

হাত পেঁচিয়ে ধরার ফলে একটু ব্যাথায় সিমোনের ভুরু কুঁচকে যায়, সেই সাথে মরণ কাঠির কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে যায়। কিসের কথা বলতে চায় দানা, “এই দানা প্লিস ছাড়ো লাগছে। আমি তোমাকে বলেছি তো কঙ্কনার খবর দেব। এত জোরে চেপে ধরলে হাড় মাংস এক হয়ে যাবে যে।”

দানা হেসে বাহু বেষ্টনী আলগা করে দেয়। ওর সামনেই একটা গেলাসে মদ ঢেলে ওকে ধরিয়ে দেয় সিমোনে। মদে এক চুমুক দিয়ে সিমোনেকে জিজ্ঞেস করে, “এইবারে বল কঙ্কনার খবর।”

সিমোনে বাঁকা ধূর্ত হেসে একটু দূরে সরে গিয়ে বলে, “আমি ব্যাবসায়ি মানুষ। আগে কাজ তারপরে দাম।”

দানা চোয়াল চেপে ওকে বলে, “তোমার বিরুদ্ধে আমার কাছে অনেক তথ্য প্রমান আছে। বিমান আর মোহন আমার সামনে স্বীকার করেছিল যে তুমি মৈনাকের মৃত্যুর জন্য দায়ী। সেই আলোচনা আমার কাছে রেকর্ড করা আছে।”

সিমোনে হেসে ফেলে, “কেন নিজেদের মধ্যে মারামারি করছি। তুমি যদি ওই টেপ নিয়ে পুলিসের কাছে যাও, একটা শুনানিতে ওই টেপ মিথ্যে বলে প্রমান করতে আমার এক মিনিট লাগবে না। তুমি কথা রাখো আমিও কথা রাখবো।” চোখ টিপে মদের গেলাসে চুমুক দিয়ে বলে, “তোমার ওপরে আমার কড়া নজর আছে ভুলে যেও না।”

বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, এত সহজে সিমোনের কাছ থেকে খবর বের করা যাবে না সেটা জানতো। দানা যদি বুনো ওল তাহলে সিমোনে বাঘা তেঁতুল। মদের গেলাস শেষ করে বিশেষ কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে। বুকের মধ্যে ধুকপুকানি বেড়ে ওঠে। সিমোনে ওর বাড়ির ওপরে নজর রেখে চলেছে। খুব শীঘ্র কাজ হাসিল করতে হবে, এক ঢিলে দুই পাখী মারতে হবে।

পরবর্তী পদক্ষেপ, কি ভাবে বুবাইকে ওই বাড়ি থেকে বের করে সিমোনের হাতে তুলে দেওয়া যায়। ময়নাকে ব্যাবহার করে নয়নার ভাই বুবাইকে ওর বাড়ি থেকে বের করে আনা সম্ভব। একবার আহত নয়না আর ক্ষুব্ধ সিমোনে মুখোমুখি হলে দুইজনা দুইজনকে খুন করে ফেলবে। ওর পথের কাঁটা সরে যাবে।

সিমোনের বাড়ি থেকে বে্রিয়েই মহুয়াকে ফোনে জানিয়ে দেয় ওর পরিকল্পনার কথা। মহুয়া সব শুনে আঁতকে ওঠে, শেষ পর্যন্ত এক নিরপরাধ ছেলের সাহায্যে নিয়ে নয়নাকে ফাঁসাতে চায় দানা? মন কিছুতেই মানতে চায়না মহুয়ার। দানা মহুয়াকে বুঝিয়ে বলে, নয়না মারা গেলে এই নিষ্ঠুর জগত ওর ভাইকে বাঁচতে দেবে না। আরো বলে সেই ছেলের কামুক প্রবৃত্তি যা তাতে ওর বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ভালো। কত কাজের মেয়ের সর্বনাশ করেছে নয়না আর তার ভাই তার ইয়ত্তা নেই। কাজের ছলে ওদের দেহ ভোগ করেছে বুবাই, টাকা দিয়ে সেই সব মেয়েদের চুপ করিয়ে দিয়েছে নয়না। সেদিন রাতে যদি দানা ওর বাড়িতে না থাকতো তাহলে ওই বুবাইকে দিয়েই সঙ্গীতাকে ধর্ষণ করাতো নয়না। আর বুবাই যা খেপা ছেলে, সঙ্গীতাকে হয়তো আঁচড়ে কামড়ে খিমচে রক্ত মাংস হাড় বের করে দিতো। সেই শুনেই মহুয়ার শরীর, বুবাই আর নয়নার প্রতি তীব্র ঘৃণায় জ্বলে ওঠে। দানাকে একপ্রকার আদেশ দেয় ওদের শেষ করে দিতে।
 
পর্ব ষোল – সাপের কোঠর (#3-123)

ময়নাকে এই ঝামেলার মাঝে টানতে চাইছিল না কিন্তু নিরুপায়, এ ছাড়া ওর কাছে আর কোন রাস্তা খোলা নেই ওর ভাইকে ওই বাড়ি থেকে বের করার জন্য। দানার সাথে ওর ভাই বের হবে না, সোজা নয়নাকে নিয়ে সিমোনের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। একমাত্র রাস্তা ওর ভাই। যদি সিমোনের হাতে ওর ভাই পড়ে তাহলে ভাইকে বাঁচাতে নিশ্চয় নয়না, সিমোনের কাছে ধরা দেবে।

এতদিন পরে দরজায় দানাকে দেখে ময়না অবাক হয়ে যায়। নয়নার গাড়ি চালানোর সময়ে একবার শুধু ফারহান আর ও মিলে ময়নার সাথে সঙ্গমে মেতেছিল, তারপরে ফারহান যদিও মাঝে মাঝে ময়নার কাছে আসতো তবে দানা কোনোদিন আর আসেনি। ওকে দেখেই একটু অবাক হয়ে যায়। আসার কারন জিজ্ঞেস করলে দানা জানায় বিশেষ প্রয়োজনে এসেছে। ময়নার প্রেমিক কৌশিক সেদিন বাড়িতেই ছিল। দানার সাথে আগে পরিচয় ছিল না, নয়না পরিচয় করিয়ে দেয় পুরানো বন্ধু বলে। দানার নাম শুনেই কৌশিক ওকে চিনতে পারে। মিচকি হেসে ওকে বলে যে ওর জন্য ময়নাকে হাতে পেয়েছে। সেই শুনে বেশ কিছুক্ষণ হাসাহাসি চলে।

কৌশিক ওর পিঠে চাপড়ে বলে, “তুমি না তুই না আপনি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। আজকাল অনেক বড়লোক হয়ে গেছিস। টিভিতে খবরের কাগজে এই কয়দিন তোর নামে বেশ খবর ছাপাছাপি হল।”

কৌশিককে “তুই” বলেই সম্বোধন করে দানা, “আরে নানা সেই রকম কিছু নয় রে। সব সময়ে মিথ্যের জয় হবে সেটা মেনে নিতে একটু কষ্ট। যাই হোক যেটা আসল কাজে এসেছিলাম সেটা এখন বলি।”

ময়নাকে সব কিছু খুলে বলতেই ময়নার চক্ষু চড়ক গাছ। দানা বলে কি? ওই মন্দ বুদ্ধি বুবাইয়ের সাথে সহবাস করে যাচ্ছে বটে তবে একেবারে প্রেমের নাটক করতে হবে শুনে একটু ঘাবড়ে যায়। বর্তমান ঝামেলার জন্য বেশ কিছুদিন নয়নার বাড়িতে যাওয়া হয়নি। এরমাঝে কি ভাবে বুবাইকে বাড়ি থেকে বের করে আনবে সেটাই চিন্তার। কিন্তু নয়নাকে ধরতে হটাত বুবাইয়ের সাহায্যের কি দরকার পড়ল সেটা ময়না বুঝতে পারল না। দানা ওকে বুঝিয়ে বলে নয়নার প্রান ভোমরা ওর ভাই বুবাই। বুবাই যদি সিমোনের হাতে পড়ে তাহলে দিগ্বিদিক জ্ঞানশুন্য হয়ে যাবে নয়না আর সিমোনের কাছে ধরা দেবে। ময়নাকে শুধু মাত্র বুবাইকে কোথাও নিয়ে যাবার ছলে ওই বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে আর সোজা সিমোনের হাতে তুলে দিতে হবে। অবশ্য তার জন্য মোটা টাকা দেবে দানা। ময়না টাকা চায় না, ম্লান হেসে ওর হাত ধরে জানিয়ে দেয় দানা যা বলবে সেটা করতে রাজি। তবে দানা এটাও জানায়, বুবাইকে ওই বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসার পরে ওকে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হবে। কৌশিক জানিয়ে দেয়, দানার কথা মতন বুবাইকে ওর হাতে তুলে দিয়ে ওরা কয়েকদিনের জন্য গা ঢাকা দিয়ে থাকবে।

দানা নিজেকে এর মধ্যে জড়াতে চায় না কিন্তু ময়নাকে আর সিমোনেকে বলে এসেছে। কি ভাবে সরাসরি না গিয়ে বুবাইকে সিমোনের হাতে তুলে দেওয়া যায় সেটাই চিন্তায় মগ্ন। রাতের খাওয়ার পরে বারান্দায় বসে একটা সিগারেট ধরিয়ে সেই অঙ্ক কষে।

এমন সময়ে কাঁধের ওপরে প্রেয়সীর নরম হাতের ছোঁয়া পেয়ে সম্বিত ফিরে পায়। কাঁধ ঘাড় নরম আঙ্গুল দিয়ে টিপতে টিপতে মহুয়া ওকে জিজ্ঞেস করে, “শেষ পর্যন্ত বুবাইকে কেন এই ঝামেলার মাঝে টেনে আনছো?”

শেষ পর্যন্ত দানাকে সত্যি উজাগর করতেই হয়, না হলে মহুয়া কিছুতেই এই কাজে ওর সাথে সাথ দেবে না। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মহুয়াকে বলে, “যেদিন বিমানের খুন হলো, সেদিন রাতে ওদের মুখে আমি শুনেছিলাম যে ওরা নাকি মেয়েকে অপহরন করতো।”

কথাটা কানে যেতেই মহুয়ার শরীর কেঁপে ওঠে। মুখ চাপা দিয়ে আঁতকে ওঠে, “কি বলছো?”

দানা ওর হাত ধরে পাশে বসিয়ে বলে, “হ্যাঁ, আর এই নয়নার সাহায্যে রুহিকে ওরা অপহরন করাতো, তাই নয়না আমাদের সাথে এতদিন ভালো সম্পর্ক রেখেছিল।”

মেয়েকে অপহরন করার কথা শুনেই মহুয়ার গায়ে কাঁটা দেয়। দাঁতে দাঁত পিষে ছলছল চোখে দানার দিকে তাকিয়ে নির্বাক হয়ে বসে থাকে। কি বলবে? কার দোষে ওর মেয়েকে এর মাঝে টেনে আনা হয়েছে? শেষ পর্যন্ত মাথা ঝাঁকিয়ে দানাকে বলে, “ওর রক্ত আমার চাই জিত।” দানার বুকের ওপরে কিল মেরে অস্ফুট চেঁচিয়ে ওঠে, “নয়না আর সিমোনের রক্ত আমার চাই, জিত।”

দানা ওকে জড়িয়ে ধরে বসে। বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে অনেকক্ষণ নিথর হয়ে পড়ে থাকে মহুয়া। ওর কপালে কি একটুকু শান্তি উপরওয়ালা লিখে যায়নি? ক্ষুধার্ত হায়নার কবল থেকে বেঁচে এসে কি শেষ পর্যন্ত সাপের কবলে পড়লো? কিন্তু এই বুকের মাঝে যতক্ষণ মুখ গুঁজে থাকে ততক্ষণ ওর হৃদয় জানে এই পৃথিবীতে কারুর সাধ্য নেই ওকে এই বুকের ওপর থেকে কেড়ে নিয়ে যায়।

দানা ওর হাত ধরে কোলের ওপরে বসিয়ে বলে, “কি করে বুবাইকে সিমোনের হাতে তুলে দেব সেটাই ভাবছি।”

একহাতে মহুয়ার কোমর জড়ানো, অন্য হাতের আঙ্গুলে সিগারেট। ধুঁয়ো নাকে যেতেই খুক খুক করে কেশে উঠে রেগে যায় মহুয়া, “আগে সিগারেট ফেলো।” অগত্যা আধা খাওয়া সিগারেটটা দুর করে ফেলে দিতে হয়। কি করা যাবে কোলের প্রেয়সীকে রাগাতে পারে না যে। মহুয়া চোখ মুছে ওর গলা জড়িয়ে বলে, “সরাসরি যেতে হবে না। তুমি সিমোনেকে ময়নার খবর দিয়ে বলো, সোজাসুজি ওর সাথে এই বিষয়ে কথা বলুক। সিমোনেকে এটা বলো, যেন ময়নাকে খুলে কোন বিষয়ে না জানায়। শুধু এটা জানাক যে একবার বুবাইকে দেখতে চায়। সেই সাথে তুমি সিমোনেকে বল, যখন ময়না বুবাইকে নিয়ে সিমোনের কাছে যাবে তখন সিমোনে ময়নার কাছ থেকে বুবাইকে ছিনিয়ে নেবে। ব্যাস তাহলে তুমি এই প্রেক্ষাপটে কোথাও থাকবে না। সিমোনের কাজ হাসিল হয়ে যাবে আর তোমার কাজ হাসিল হয়ে যাবে। শুধু তোমাকে ময়নার ওপরে একটু নজর রাখতে হবে যাতে সিমোনে ওকে না আক্রমন করে বসে।”

দানা মাথা নাড়িয়ে মহুয়াকে এক গাদা চুমু খেয়ে বলে, “তুমি না থাকলে আমার কি হতো বলতো?”

মহুয়া মিচকি হেসে কানেকানে বলে, “এইখানে একা একা বসে ছিঁড়তে আর আঁটি বাঁধতে।” বলেই খিলখিল করে হেসে ফেলে।

ওই হাসি শুনে দানা আর থাকতে পারে না। মহুয়াকে কোলে তুলে ওদের মিলন কক্ষে ঢুকে পড়ে।

পরদিন সকালেই সিমোনে ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে কবে দানা, নয়নার ভাইকে ওর হাতে তুলে দেবে। মহুয়ার সুচতুর পরিকল্পনা দানা সিমোনেকে খুলে বলে। দানা জানায়, স্মিতা নামের এক মডেলের সাথে নয়নার ভাইয়ের বেশ ভালো সম্পর্ক। তাকে টাকা দিয়ে হাত করতে পারলে অতি সহজে বুবাইকে নিজের কবলে করা যাবে। একবার বুবাই সিমোনের কবলে পড়লে নয়নাকে বাগে ফেলা অতি সহজ হয়ে যাবে। এই পরিকল্পনা সিমোনের মনে ধরে যায়, জানিয়ে দেয় স্মিতা নামক মডেলের সাথে এই বিষয়ে কথা বলবে। সেই সাথে দানা এটা জানিয়ে দেয় যেহেতু স্মিতা বাইরের লোক সিমোনে যেন সব কিছু খোলাখুলি ওর সাথে আলোচনা না করে বসে। সিমোনে সাঙ্ঘাতিক ধূর্ত মহিলা, দানাকে জানিয়ে দেয় ওর মাথায় সেইটুকু বুদ্ধি আছে কি ভাবে স্মিতার সাথে কথা বলবে আর কি ভাবে বুবাইকে বের করার পরিকল্পনা করবে। দানা মনে মনে খুব খুশি, এক এক করে ওর শত্রু সংখ্যা কমছে তবে এখন ওর আসল শত্রু, নাস্রিন আর কঙ্কনার হদিস পাওয়া গেলো না। সিমোনেকে জিজ্ঞেস করলেই বলে আগে বুবাই তারপরে ওদের খবর দেবে।

সেদিন বিকেলে ময়না ওকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে সিমোনে ওকে ফোন করেছিল আর বুবাইকে নিয়ে বেড়াতে বের হবার কথা বলেছে। দানা ওকে বলে খুব সন্তর্পণে যেন বুবাইকে নিয়ে বের হয়, ঘুনাক্ষরে যদি নয়না টের পেয়ে যায় যে এই ঘুরতে বের হবার পেছনে কোন দুরভিসন্ধি আছে তাহলে ময়নাকে মেরে ফেলতে ওর হাত কাঁপবে না একটুও। সেই সাথে এটাও জানায় কয়েকদিন ওর সাথে ভালো ব্যাবহার করতে যাতে বুবাই অথবা নয়নার কোন সন্দেহ না হয়। তারপরে চারদিন পরে ময়না যেন বেড়ানোর ছল করে বুবাইকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে আসে। কথা মতন কাজে লেগে পড়ে ময়না।

চারদিন চাপা উৎকণ্ঠায় কেটে যায় মহুয়া আর দানার। সমুদ্র আর সুমিতার চলে যাওয়ার দুঃখ ভোলার জন্য নয়না কাজের মধ্যে ডুবে যায়। ময়না রোজদিন নয়নার বাড়িতে গিয়ে বুবাইয়ের সাথে বেশি করে সময় কাটাতে শুরু করে দেয়। সিমোনে ওই দিকে আহত নরখাদক বাঘিনীর মতন বুবাইয়ের অপেক্ষায় দিন গোনে। ময়নার ঘন ঘন আসা যাওয়াতে নয়না একটু খুশি, এই ঝামেলার ফলে বুবাই খুব ভয় পেয়ে গেছিল, সব সময়ে নিজের ঘরের মধ্যে বন্দি থাকতো। ময়না খবর দেয় যে বুবাইকে নিয়ে বের হতে এইবারে কোন অসুবিধে নেই।

সেদিন সকালে সিমোনেকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ফাঁদ তৈরি, শুধু সিমোনে বলে দিক কোথায় বুবাইকে নিয়ে আসতে হবে। উত্তরে সিমোনে জানিয়ে দেয়, মোহনার দিকের বড় রাস্তায় উঠে বেশ কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পরে একটা সাদা রঙের গাড়ি দেখতে পাবে। বুবাইকে যেন গাড়িতে ছেড়ে ওরা চলে যায়। দানা জানিয়ে দেয়, স্মিতার সাথে আরো একজন থাকবে আর কঙ্কনার খবর না পেলে বুবাইকে ওর হাতে তুলে দেবে না। যদি সিমোনে কোন ছলনা করতে চায় তাহলে সোজা পুলিসকে ফোন করে ডেকে নেবে ওইখানে।

সব শুনে সিমোনে কুটিল এক হাসি দিয়ে বলে, “ইসস দানা, বড় ভুল করছো। পরিকল্পনা তোমার, আমি মানছি আমি স্মিতার সাথে দেখা করেছি কিন্তু তুমি যা পারো সেটা আমি পারিনা ভাবলে কি করে। তোমার পরিকল্পনা রিতিমতন আমার মোবাইলে টেপ করা আছে। সুতরাং বেগড়বাঁই করলে ওই টেপ পুলিসের হাতে চলে যাবে। নাও নাও দানা, নিজেদের মধ্যে বেশি মারামারি করে লাভ নেই। যত তাড়াতাড়ি পারা যায় নয়নাকে হাতের মুঠোর মধ্যে আমার চাই।”

দানা বুঝতে পেরেছিল এইরকম কিছু একটা হতে পারে। যে পথে সিমোনেকে আক্রমন করতে চেয়েছিল সেই পথ ধরে যে সিমোনে এগোবে না সেটা বলে দিতে হয় না।

নয়না নিজের শুটিংয়ে বেরিয়ে গেছে। পরিকল্পনা মাফিক ময়না ওর বাড়িতে বিকেলে পৌঁছে যায়। এই কয়দিনে বুবাইকে রোজ স্বপ্ন দেখিয়ে গেছে যে একটা বড় পার্কে বেড়াতে নিয়ে যাবে। যদিও নয়নার বিশেষ ইচ্ছে ছিল না তবুও বুবাইয়ের জেদের বশে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যায়। স্মিতাকে ভরসা করা যায় না, তাই নিতাকে সঙ্গে যেতে নির্দেশ দেয়। নয়নার বাড়ি থেকে, বুবাই আর নিতাকে নিয়ে বের হতেই দানাকে ফোন করে দেয় ময়না। ওরা একটা ট্যাক্সিতে উঠে মোহনার দিকের বড় রাস্তা ধরে।

পকেটে পিস্তল, মহুয়ার কপালে একটা চুমু খেয়ে বেরিয়ে পড়ে দানা। নিজের গাড়ি নেয় না কারন নিতা আর সিমোনে দুইজনে ওর গাড়ি ভালো ভাবেই চেনে। শক্তিকে দিয়ে অন্য একটা গাড়ি আনিয়ে নেয়। ময়নার বাড়ি থেকে কৌশিককে তুলে নিয়ে মোহনার দিকের বড় রাস্তা ধরে।

ময়না ওকে ট্যাক্সির নাম্বার মোবাইলে পাঠিয়ে দিয়েছিল তাই বড় রাস্তায় পড়ার পরে ট্যাক্সি অনুসরন করতে ওদের অসুবিধে হয় না। ট্যাক্সির মধ্যে ময়না, নিতা আর বুবাই আর পেছনের গাড়িতে শক্তি, কৌশিক আর দানা। দানা শক্ত হাতে গাড়ি চালাতে চালাতে ঘনঘন সিগারেট টেনে চলে, বুকের মধ্যে চাপা উত্তেজনা। ট্যাক্সি হুহু বেগে মোহনার দিকে এগিয়ে চলেছে, বেশ কয়েক কিলোমিটার পার হয়ে যাওয়ার পরেও কোন সাদা রঙের গাড়ির দেখা নেই। দানার সন্দেহ হয়, একি হলো? নিতার হয়তো সন্দেহ হয়ে গেছে আর নয়নাকে ফোনে সব জানিয়ে দিয়েছে। নাকি সিমোনে ওদের দেখে ফেলেছে আর তাই কোথাও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। সামনে পেছনে প্রচুর বাস ট্রাক গাড়ি ঘোড়া, এর মাঝে যদি ওদের কেউ অনুসরন করে চলে তাহলে বোঝার উপায় নেই।

বেশ কিছু পরে ট্যাক্সিটা হটাত এক বাঁক নিয়ে একটা গ্রামের রাস্তায় নেমে পড়ে। দানা চমকে যায়, কি হল ব্যাপারটা। কৌশিক আর দানা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে, এমন কথা ছিল না। সিমোনেকে ফোন করবে কি করবে না। সিমোনেকে ফোন করলে জেনে যাবে যে পেছনে অনুসরন করছে, সেটা জানাতে চায় না। আড়াল করে দেখতে চায় কতদুর কি হতে চলেছে। দানাও ওই গ্রামের রাস্তায় গাড়ি নামিয়ে দেয়। বেশ দুর থেকে গাড়িটাকে অনুসরন করতে করতে এগিয়ে চলে। নিতা নিশ্চয় এতক্ষণে ময়নার দুরভিসন্ধি টের পেয়ে গেছে। একটু দুর যেতেই ট্যাক্সির সামনে একটা কালো রঙের গাড়ি এসে দাঁড়ায়। দানা দূরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে হাতে পিস্তল নিয়ে পাশের মাঠে নেমে পড়ে। ধানের মধ্যে গা ঢাকা দিয়ে ট্যাক্সির দিকে তিনজনে এগিয়ে যায়। ওদের কানে মেয়েলী কণ্ঠস্বরের চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসে। কয়েকজন দুষ্কৃতি গাড়ি থেকে নেমে ট্যাক্সির দিকে বন্দুক উঁচিয়ে এগিয়ে যায়। সবকটা লোকের মুখ কালো জালের মুখোশে ঢাকা, কাউকে চেনার যো নেই। প্রথমে ট্যাক্সির ড্রাইভারকে গাড়ি থেকে বের করে মাথার পেছনে এক ঘা মেরে অজ্ঞান করে দেয়। তারপরে পেছনের দরজা খুলে তিনজনকে টেনে বের করে। মুখোশে ঢাকা লোকগুলো এদিক ওদিকে তাকিয়ে ফোনে তুলে কারুর সাথে কিছু কথা বলে। দানা হলপ করে বলতে পারে ওইপাশের ব্যাক্তি, সিমোনে ছাড়া আর কেউ নয়। ময়না আর নিতার চোখ বেঁধে, নাকের কাছে কিছু একটা শুঁকিয়ে দিয়ে অজ্ঞান করে দেয়। বুবাইকে অজ্ঞান করে দিয়ে কালো গাড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে দুষ্কৃতীরা অন্যপাশের রাস্তা ধরে চলে যায়। দানার কেমন খটকা লাগে, সিমোনে বলেছিল সাদা রঙের গাড়ি বড় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে, সেটা না হয়ে একটা কালো রঙের গাড়ি গ্রাম ছাড়িয়ে মাঠের মাঝে।

কৌশিক এক দৌড়ে ময়নার কাছে গিয়ে ওর চোখের বাঁধন খুলে দেয়। জল আনা হয়নি, কোন রকমে ময়নাকে কোলে তুলে শক্তির আনা গাড়িতে বসিয়ে ওরা চলে যায়। ট্যাক্সি চালক আর নিতাকে রাস্তার ধারে অজ্ঞান অবস্থায় ছেড়ে দেয় দানা। এই কিডন্যাপের খবর অন্তত সিমোনের আগে নয়নার কানে পৌঁছানো উচিত। গাড়ি করে সোজা ওরা মহানগর ফিরে নদীর ওপাড়ে বড় রেলের স্টেসানে চলে যায়।

দানা একটা টাকা ভর্তি ব্যাগ ময়নার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, “তোরা কয়েক দিনের জন্য গা ঢাকা দিয়ে থাক। আমাকে যেন ভুলেও ফোন করিস না আর পারলে নিজেদের ফোন এই কয়দিনে ব্যাবহার করিস না। খবরের কাগজে চোখ রাখিস, এই ঝামেলার খবর কাগজে ছাপা হবেই সুতরাং ওই বুঝে তোরা আবার এই মহানগরে ফিরে আসিস।”

কৌশিক আর ময়নাকে ট্রেনে উঠিয়ে দানা বাড়ি ফিরে আসে।

চরম উৎকণ্ঠায় মহুয়ার জিব শুকিয়ে, বারেবারে ঘর বাহির করে দানার অপেক্ষায়। বাড়ি ফিরেই মহুয়াকে সম্পূর্ণ ঘটনাবলী জানিয়ে নিজের অস্থিরতা ব্যাক্ত করে। এটা আবার সিমোনের কোন নতুন চাল, জায়গাটা ওদের বাগান বাড়ি থেকে অনেকদুরে, সাদা রঙের গাড়ির জায়গায় কালো রঙের গাড়ি। সিমোনে অথবা মোহনকে এই সময়ে ফোন করা ঠিক হবে না। দরকার পড়লে ওরা নিজেরাই ফোন করবে। দানা যে এর সাথে জড়িত সেটা যদি পুলিস জানতে পারে তাহলে বিশাল সমস্যা দেখা দেবে।

একটু পরেই মহুয়ার ফোন বেজে ওঠে। ওইপাশ থেকে নয়না আর্তনাদ করে ওঠে, “ভাইকে কেউ কিডন্যাপ করেছে, মহুয়া। প্লিস এসো...” বলেই কেঁদে ফেলে।

মহুয়া আর দানা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। ওর বাড়িতে এখন যাওয়া উচিত যদিও ওরা জানে কে অপহরন করেছে, তবে একটু সংশয় আছে সেই সম্বন্ধে। নয়নাকে হাতে না পাওয়া পর্যন্ত সিমোনে ওর টেপ পুলিসের কাছে দেবে না। মহুয়া রাগে জ্বলতে থাকলেও ওকে শান্ত হতে অনুরোধ করে জানিয়ে দেয় ওরা কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবে।

চিন্তা মগ্ন দানাকে জিজ্ঞেস করে, “কি করবে? সব চাল যে উলটো পড়ে গেল।”

দানা মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “কি যে হয়ে গেল জানি না। সিমোনে বলেছিল বুবাইকে হাতে পেলে আমাকে কঙ্কনার খবর দেবে। এখন সিমোনেকে ফোন করা একদম যাবে না। ওর কথায় বিশ্বাস করা একদম উচিত হয়নি আমার।” একটু থেমে বলে, “এখন চলো নয়নার বাড়িতে। পুলিসের সাহায্য এইবারে নিতেই হবে না হলে ওদের বাগে ফেলা যাবে না কিছুতেই। ভেবেছিলাম সিমোনে আর নয়না সামনাসামনি হলে একে ওপরকে খুন করবে কিন্তু এখানে মনে হচ্ছে কোন তৃতীয় ব্যাক্তির আগমন হয়েছে। তবে মোহন হলে ক্ষতি নেই কিন্তু অন্য কেউ হলে বড় মুশকিল।”

তৃতীয় ব্যাক্তি কে হতে পারে, শত চিন্তা করেও কিছুতেই দানা আর মহুয়া উদ্ধার করতে পারে না।
 
পর্ব ষোল – সাপের কোঠর (#4-124)

রুহিকে বাড়িতে রেখে দিয়েই মহুয়া আর দানা, নয়নার বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। নয়নার বাড়ির সামনে গিয়ে আক্রামের সাথে দেখা হয়। আক্রাম জানায়, বাড়িতে তখন পুলিস আসেনি, তবে ওর সেক্রেটারি আর ম্যানেজার এসে পৌঁছে গেছে। সবাই হয়তো দানা আর মহুয়ার অপেক্ষা করছে।

মহুয়াকে দেখে নয়না একেবারে ভেঙে পড়ে। কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আমার অদৃষ্ট, আমার পাপের বোঝা আমার ভাইকে কেন পোহাতে হবে মহুয়া। আমার ভাই কারুর ক্ষতি করেনি মহুয়া, প্লিস কিছু একটা করো।”

দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায় ওই কথা শুনে, টাকার জোরে কত কাজের মেয়ের সর্বনাশ এই মন্দ বুদ্ধি ছেলেটা করেছে তার ইয়ত্তা নেই। সেদিন দানা না থাকলে হয়তো সঙ্গীতাকে আঁচড়ে কামড়ে আধমরা করে দিতো। মহুয়ার দুই চোখে আগুন ঠিকরে পড়ছে, যেন বলতে চায়, কোন একসময়ে সুযোগ পেলে আমার মেয়েকে অপহরনের চক্রান্ত করেছিলে তাই না?

ঘর ভর্তি লোকজন, সেক্রেটারি আর ম্যানেজারের সাথে আরো বেশ কয়েক জন লোক এসে গেছে। সবার এক কথা, পুলিসে খবর দাও, আগে ওই স্মিতা নামের মডেলকে ধরা হোক তাহলেই কে অপহরন করেছে সেটা জানা যাবে। ময়নার সাথে যে দানার যোগাযোগ আছে সেটা নয়না জানে না। কিন্তু ময়নাকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়, ইতিমধ্যে শহর ছাড়িয়ে, এই প্রদেশ ছাড়িয়ে ট্রেনে করে ওরা অন্য শহরে গা ঢাকা দিয়ে থাকার জন্য চলে গেছে। এখন পর্যন্ত কোন ফোন আসেনি। নিতা এক কোনায় চুপচাপ বসে। কি চলছে ওর মনে? হয়তো ভাবছে, আপদ বিদায় হয়েছে ভালোই হয়েছে।

মহুয়া আড় চোখে একবার দানার দিকে তাকিয়ে নয়নাকে ধরে সোফার ওপরে বসিয়ে বলে, “কি করে হলো এই সব একটু খুলে বলতো?”

নয়না চোখের জল মুছে সব ঘটনা খুলে বলে, যার অধিকাংশ মহুয়ার জানা। নয়না শুটিংয়ে ব্যাস্ত ছিল, এই কয়দিনে বুবাইয়ের দিকে নজর দেওয়ার একদম সময় পায়নি। স্মিতা নামের মডেলটা বুবাইয়ের মনে ধরে যাওয়াতে ওকে বাড়িতে আসতে বলতো আর বুবাইয়ের সাথে সময় কাটানোর জন্য বেশ ভালো টাকাই দিতো ওকে। সেদিন দুপুরে, বুবাইকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে স্মিতা। প্রথমে গররাজি হয় নয়না অচেনা একজনের সাথে বুবাইকে ছাড়তে নারাজ, কিন্তু বুবাই নাছোড়বান্দা, শেষ পর্যন্ত কাজের মেয়ে নিতাকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার অনুমতি দেয়। বিকেলে নিতাকে সঙ্গে নিয়ে স্মিতা আর বুবাই কোথাও বেড়াতে বের হয়। ট্যাক্সি শহর ছাড়িয়ে বড় রাস্তা ধরলে নিতার সন্দেহ হয়। স্মিতা ওকে বলে শহরের বাইরে একটা বড় পার্ক আছে সেখানে নিয়ে যাবে বুবাইকে। নিতা চুপ করে থাকে, কিন্তু যখন স্মিতাকে কারুর সাথে ফোনে কথা বলতে শোনে তখন নিতার সন্দেহ বদ্ধমূল হয়ে যায় যে স্মিতার অভিসন্ধি অন্য কিছু। সেটা সত্য প্রমানিত করে কিছু পরেই ওদের ট্যাক্সির সামনে একটা কালো রঙের ভ্যান গাড়ি এসে দাঁড়ায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই গাড়ি থেকে জনা চারেক মুখোস পরা ছেলে নেমে ট্যাক্সি চালকের মাথায় মেরে অজ্ঞান করে দেয়। তারপরে নিতাকে আর স্মিতাকে বেঁধে ফেলে, ওদের চোখ বেঁধে নাকের ওপরে রুমাল চপে অজ্ঞান করে দেয়। তার পরে ওরা বুবাইকে নিয়ে কোথাও চলে যায়। ট্যাক্সি চালক আর নিতার জ্ঞান ফিরলে দেখে যে, সেই স্থানে স্মিতা নেই। ওদের কাছের ফোন, টাকা পয়সা যা ছিল সব ওই দুস্কৃতিরা নিয়ে চলে গেছে। ট্যাক্সি চালকের সাহায্যে বাড়ি পৌঁছেই নয়নাকে ফোন করে সব জানিয়ে দেয় নিতা। শুটিং ছেড়ে সঙ্গে সঙ্গে মহুয়াকে ফোন করে নয়না।

ওরা সবাই ফোনের অপেক্ষায় বসে। এক ঘণ্টা দুই ঘণ্টা করে মাঝ রাত হয়ে যায়। চরম উৎকণ্ঠায় নয়নার ওষ্ঠ শুকিয়ে কাঠ। চোখের জল আর ফুরানোর নাম নেই। মহুয়া যত ওকে শান্ত হতে বলে ততোই নয়না কেঁদে ভাসিয়ে দেয়। দানা চুপচাপ গম্ভির ভাবে সোফায় বসে ফোনের অপেক্ষা করে।

মাঝ রাতে নয়নার ফোন বেজে ওঠে। কাঁপা হাতে সবার দিকে তাকিয়ে নয়না ফোন উঠায়। অন্যপাশে এক অচেনা পুরুষের কণ্ঠস্বর ওকে বলে, “তোর ভাই ভালো আছে। যদি ওকে জ্যান্ত দেখতে চাস তাহলে আমার কথা মন দিয়ে শোন। তোর হিতৈষী বন্ধু বিশ্বজিৎ মন্ডলের কাছে মিস্টার মোহন খৈতানের প্রকল্পের যা কাগজপত্র আছে, সেই সব নিয়ে তমালগুড়ির রাস্তা ধর। ওই কাগজপত্র হাতে পেলে আমরা তোর ভাইকে ছেড়ে দেব। বাকি নির্দেশ মহানগর ছাড়ানোর পরে পাবি।”

আগন্তুকের নির্দেশ শুনে দানা আর মহুয়া যেমন স্থম্ভিত হয়ে যায় তেমনি নয়না অবাক হয়ে যায়। নয়না একবার মহুয়ার দিকে তাকায় একবার দানার দিকে। দানা ফাঁদে পড়ে গেছে, এটা যে সিমোনে আর মোহনের কুটিল চাল সেটা বুঝতে একটুকু দেরি লাগলো না। এখন যদি দানা না বলে তাহলে নয়না প্রশ্ন উঠাবে, হয়তো মোহন সোজাসুজি বলে দেবে এই চক্রান্তের পেছনে দানার বুদ্ধি কাজ করছে। সমুদ্রের মৃত্যুতে নয়না একে ক্ষুব্ধ আহত বাঘিনীর মতন ফুঁসছে, যদি জানতে পারে যে ওর ভাইয়ের এই অপহরনের পেছনে দানার হাত আছে তাহলে দানা ঘোর বিপদে পড়ে যাবে। আর যদি দানা নয়নার সাথে কাগজ পত্র নিয়ে যায়, তাহলে ওর বেঁচে ফিরে আসার আশঙ্কা এক প্রকার নেই। ওইখানে নিশ্চয় সিমোনের সামনে পড়লে নয়নাকে সবকিছু খুলে বলে দেবে আর তখন দুইজনে একত্রে মিলে ওকে জ্যান্ত ছাড়বে না। মহুয়া বুক কেঁপে ওঠে সেই সাথে দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। ওর মাথার ওপরে কেউ যেন গরম তরল গলানো লোহা ঢেলে দিয়েছে। আগন্তুক যে মোহন খৈতান নিজে সেটা প্রমান হয়ে যায়। পুলিসের কাছে যাওয়া যাবে না, নয়নার সামনে মুখ খোলা যাবে না। ভীষণ উভয়সঙ্কটে পড়ে যায় মহুয়া আর দানা। পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে চোখে চোখে ইঙ্গিতে কথা সারে।

মহুয়া জিজ্ঞেস করে, “কি করবে?”

দানা ইঙ্গিতে জানায়, “দাঁড়াও দেখি।”

ফোন ছেড়ে মাথা নিচু করে নয়না কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে, তারপরে মাথা নাড়িয়ে ওদের বলে, “মোহন খৈতানের প্রকল্পের কাগজ পত্র মানে ভাইয়ের কিডন্যাপের পেছনে ওদের হাত।” কাতর কণ্ঠে দানার দিকে তাকিয়ে বলে, “কি করবো দানা?”

দানা নিজেও জানে না কি করবে। ভীষণ উভয়সঙ্কটে পড়ে গেছে। যেদিকে পা রাখবে সেদিকে সাক্ষাৎ মৃত্যু। যদি এখুনি নয়নাকে আসল কথা খুলে বলে তাহলেও ওর নিস্তার নেই আর যদি ওর সাথে যায় তাহলেও নিস্তার নেই। দানার চিন্তামগ্ন রূপ দেখে মহুয়ার বুক কেঁপে ওঠে। এইবারে দানাকে একদম জালে আটকে ফেলেছে সিমোনে, এই জাল থেকে ছাড়া পাওয়ার কোন লক্ষন দেখতে পাচ্ছে না কেউই। দানা খানিকক্ষণ ভেবে চিন্তে ঠিক করে, কাগজ পত্র, বন্দুক পিস্তল লোকজন সাথে নিয়েই যাবে। তবে নয়নার চোখের আড়াল করে। আসলে দানা চায় সবাই শেষ হয়ে যাক, কিন্তু নয়না দেখে ফেললে লোকজন নিয়ে যেতে বাধা দেবে।

দানার কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে নয়না আরও বেশি বিচলিত হয়ে ওঠে। মহুয়ার হাত ধরে কাতর প্রার্থনা করে, “কি করবো বলে দাও।”

মহুয়ার চিন্তাশক্তি লোপ পেয়ে যায়। কি করবে ভেবে না পেয়ে উত্তর দেয়, “আমি জানি না নয়না।”

নয়না ওর হাত ধরে বলে, “এক বার শুধু একবার আমার ভাই ফিরে আসুক তারপরে ওদের আমি শেষ করে দেবো।” কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে বলে, “প্লিস দানাকে বলো মোহনের কাগজ পত্র নিয়ে আমার সাথে যেতে।”

দানা আলতো মাথা দুলিয়ে ইশারায় মহুয়াকে হ্যাঁ বলতে বলে। মহুয়া নয়নাকে বলে, “ঠিক আছে আমি ওকে বুঝিয়ে বলছি, তুমি ততক্ষনে তৈরি হয়ে নাও।”

নয়না ঘরে ঢুকতেই, মহুয়া দানাকে একদিকে টেনে মনের আশঙ্কা ব্যাক্ত করে জিজ্ঞেস করে, “এইবারে কি হবে গো? যদি কাগজ পত্র না নিয়ে যাও তাহলে ওইখানে গিয়ে সিমোনে সব কিছু নয়নাকে বলে দেবে আর দুইজনে একত্র হয়ে গেলে আমরা বিপদে পড়ে যাবো। আর যদি নিয়ে যাও তাহলেও বিপদ।”

বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, কিছুক্ষণ ভেবে নিজের পরিকল্পনা জানায়, “আমি কাগজ পত্র আর নয়নাকে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছি। আমাদের যাওয়ার কিছু পরে তুমি বাকিদের আমাকে অনুসরন করতে বলে দেবে। বেশি চিন্তা কোরো না, পাপড়ি।”

মহুয়া ছলছল চোখে ওর দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে, কি বলে? চিন্তা করবে না? আশঙ্কায় উৎকণ্ঠায় এই দশ মিনিটে ওর গায়ের এক লিটার রক্ত শুকিয়ে গেছে আর ছেলেটা চিন্তা করতে বারন করে? মেয়েদের কি কোনোদিন বুঝেছে? ওর জামা খামচে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে মহুয়া, একটু পরেই নয়নাকে সাথে নিয়ে বেরিয়ে যাবে। জানে না সকালে ফিরবে আদৌ না ফিরবে না। যদি না ফেরে তাহলে সোজা পুলিস, কিন্তু ততক্ষণে ওর যা সর্বনাশ হওয়ার সেটা হয়েই যাবে। তাও সিমোনে আর মোহনকে ছাড়বে না মহুয়া। বিমানের বাগান বাড়ি যাওয়ার চেয়েও এটা বেশি ভয়ঙ্কর। সেই সময়ে ওদের কাছে একটা পরিকল্পনা ছিল এইবারে ওদের কাছে কোন পরিকল্পনা নেই। জানেই না মোহন খৈতান কোথায় বুবাইকে লুকিয়ে রেখেছে, জানেই না ওদের সাথে কতজন লোক থাকবে। মহুয়া ওর বাজু শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে, হয়তো ছেড়ে দিলেই উড়ে চলে যাবে চিরতরে। বারেবারে এই যাওয়া আর নিতে পারছে না মহুয়া, রোজদিন দানা বাড়ি থেকে বের হলে ওর বুক কাঁপে, ঠিক ঠাক বাড়িতে ফিরবে তো?

নয়না জিন্স আর শার্ট পরে তৈরি, পায়ে জুতো গলায় স্কার্ফ দেখে মহুয়া আর দানার কিঞ্চিত সন্দেহ হয়। দূরে কোথাও বেড়াতে যাচ্ছে না যে একদম পুরুষ মার্কা পোশাক পরে যেতে হবে।

ওদের দিকে এগিয়ে এসে দানাকে জিজ্ঞেস করে, “তোমার কাছে পিস্তল আছে?”

দানা অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে, “তুমি পিস্তল নিয়ে কি করবে?”

চোয়াল শক্ত করে চোখের জল মুছে দানাকে উত্তর দেয়, “পিস্তল থাকলে দাও দানা।” তারপরে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি জানো না ভাইয়ের জন্য আমি কি করতে পারি। ভাইয়ের গায়ে হাত দিয়েছিল বলে আমি আমার বাবাকে ছাড়িনি। আর এরা পর, এদের মাথায় গুলি করে তবে ফিরবো।”

নয়নাকে ক্ষান্ত করে দানা বলে, “আমি সাথেই আছি, চলো। যা হবার সেটা দুইজনে একসাথে মোকাবিলা করবো আমরা।” ওইদিকে সবাই জানে যে এক মরণ ফাঁদে পা রাখতে চলেছে কিন্তু সেই কথা কেউই মুখ থেকে বলতে চাইছে না।

বের হওয়ার আগে নয়না আর্ত চোখে মহুয়ার হাত ধরে বলে, “পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও মহুয়া। আমি তোমাদের বিরুদ্ধে ভীষণ এক ষড়যন্ত্রের অঙ্গ ছিলাম। এতদিনে বলার সাহস হয়নি। আসলে কি জানো, বাপ্পা নস্করকে সরানোর পরে আমাদের মতলব ছিল দানাকে সরানোর। যে কোন বাবা মায়ের প্রান তার সন্তানের মধ্যে আটকে থাকে। রুহিকে অপহরন করলে দানা ভেঙে পড়বে আর তখন ওকে দিয়ে যা কিছু করিয়ে নেওয়া যাবে।”

কথাটা কানে যেতেই মহুয়ার চোখে আগুন ঠিকরে বের হয়। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে অতীব জ্বলন্ত জ্বালামুখী শান্ত করে হিমশীতল কণ্ঠে উত্তর দেয়, “তুমি এই ষড়যন্ত্র করেছিলে সেটা আমি জানতাম। ভেবেছিলাম নিজে মুখে স্বীকার করবে কোনোদিন কিন্তু করলে না। যাইহোক এখন যাও, দেখ কি হয়।”

বাড়ি থেকে নীচে নেমে নয়না নিজের গাড়িতে ওঠে। দানা, আক্রামের কাছ থেকে আরো দুটো পিস্তল চেয়ে নেয়। নিজের দুইখানা নয়নাকে দেবে আর নিজের কাছে দুইখানা রাখবে। খৈতানের মুখোমুখি হলে কে কার সাথে মিলে যাবে তার ঠিকানা নেই। যদি নয়না আর সিমোনে মিলে যায় তাহলে নিজের আত্মরক্ষার জন্য বন্দুক চাই আর যদি না মেশে তাহলে নয়না সিমোনেকে মারবে তার জন্য ওকে বন্দুক দিতে হবে।

গাড়িতে ওঠার আগে মহুয়া ওর হাত শক্ত করে ধরে ছলছল চোখে বলে, “সকালে ব্রেকফাস্টে কি খাবে?”

কথাটা শুনে দানার নাকের পাটা ফুলে ওঠে, বুকের মাঝে প্রেয়সীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। মহুয়া সর্বশক্তি দিয়ে দানাকে জড়িয়ে ধরে, যদি এটা ওদের শেষ দেখা হয় তাহলে ভোররাতে মা মেয়ে দুইজনে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করবে। এই জীবনে যদি দানা এসে ওর হাত না ধরে তাহলে আর কারুর হাত ও ধরবে না।

বহুকষ্টে মহুয়াকে আলিঙ্গন পাশ থেকে ছেড়ে দিয়ে নয়নার সাথে গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ির স্টিয়ারিং দানার হাতে। মহুয়া অনেকক্ষণ ফ্লাটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, যতক্ষণ না রাতের অন্ধকারে দানার গাড়ি মিলিয়ে যায়। নয়না নির্বাক, দানা নির্বাক, মুখে কোন কথা নেই কারুর, দুইজনে চিন্তায় মগ্ন, কি হবে এরপরে। গাড়ি নিয়ে সোজা নিজের অফিসে যায়, সেখান থেকে খৈতানের প্রকল্পের কাগজপত্র নিয়ে আবার গাড়িতে ওঠে। হাতে একটু সময় আছে, তাই ধীরে ধিরেই গাড়ি চালাতে থাকে।

ঠিক সেই সময়ে আবার নয়নার ফোন বেজে ওঠে। নয়না আর দানা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে, ইঙ্গিতে ফোন উঠাতে বলে নয়নাকে। ফোনে অন্য পাশের আগন্তুক ওকে নির্দেশ দেয়, “বিশ্বজিতের কাছ থেকে কি মোহন খৈতানের প্রকল্পের কাগজপত্র নিয়েছিস?” নয়না উত্তর দেয়, “হ্যাঁ।” আগন্তুক নির্দেশ দেয়, “তাহলে এইবারে বিশ্বজিতকে গাড়ি থেকে নেমে যেতে বল। তোকে বলে দিয়েছিলাম একা আসতে। আমাদের সাথে কোন চালাকি করতে যাস না নয়না।”

কথাটা শুনে মনে হলো ওদের কেউ অনুসরন করছে না হলে এতক্ষণ পরে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করতো না। গাড়ি আবার দানার অফিসে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। চরম উৎকণ্ঠায় নয়নার গলা শুকিয়ে গেছে, কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। একা যাওয়া ভীষণ বিপদ। দানা ওকে শান্ত করে বলে গাড়ির ডিকিতে বন্দী হয়ে ওর সাথেই যাবে। নিরুপায় নয়না দানার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে। গাড়ি ঘুরিয়ে অফিসের পারকিংয়ে চলে যায়। নামার আগে নিজের দুটো পিস্তল নয়নার হাতে তুলে দিয়ে ভালো ভাবে বুঝিয়ে দেয় কি ভাবে গুলি চালাতে হবে। নয়না জানে একবার ওদের হাতে পড়লে ওর নিস্তার নেই সুতরাং যদি মরতে হয় তাহলে ওদের মেরে ফেলে তবেই মরবে আর সেই প্রস্তুতি নেয়। দানা ওকে আরো বলে, কোমরে অথবা পকেটে পিস্তল সবাই রাখে আর ওকে নিশ্চয় মোহনের লোকেরা পরীক্ষা করবে। পকেটে পিস্তল থাকলে অতি সহজে ধরা পড়ে যাবে, সুতরাং পিস্তল দুটো পায়ের গোড়ালিতে বেঁধে দেয়। এত নীচ পর্যন্ত কেউই আর পরীক্ষা করে দেখবে না, সুযোগ বুঝে যেন নয়না গুলি চালায়। দানা পাশেই থাকবে। চুপচাপ সব কথা মন দিয়ে শোনার পরে দানাকে কি বলবে ভেবে পায় না নয়না।

নয়নার ছলছল চোখ দেখে দানার শরীর রিরি করে জ্বলে ওঠে। একবার মনে হয় এইখানেই ওকে মেরে ফেলে দিক কিন্তু নিজের হাতে রক্ত মাখাতে চায় না। কিন্তু যদি সিমোনে ওকে সব কিছু বলে দেয় তাহলে দানার নিস্তার নেই। খৈতানের প্রকল্পের কাগজ পত্র নয়নাকে দিয়ে গাড়ির ডিকির মধ্যে ঢুকে পড়ে। নয়না ডিকি বন্ধ না করে দানাকে ভেতর থেকে টেনে ধরে থাকতে বলে। আক্রামের দেওয়া দুটো পিস্তল নিজের গোড়ালিতে বেঁধে গুটিসুটি মেরে গাড়ির ডিকিতে ঢুকে পড়ে। নয়না ওকে বলে, ওর কাছে যেমন নির্দেশ আসবে, সুযোগ মতন দানাকে জানিয়ে দেবে।

গাড়ি আবার চলতে শুরু করে দেয়, অন্ধকার দম বন্ধ হয়ে আসা ডিকির মধ্যে থেকে কিছুই বোঝা যায় না কোথায় যাচ্ছে। তমালগুড়ির রাস্তা মোহনের বাগান বাড়ির রাস্তা থেকে ভিন্ন দিকে, এইদিকে কোথায় নিয়ে যাবে সেটাই চিন্তা। একটাই ভরসা, ওদের পেছনে হয়তো এতক্ষণে আক্রাম, নাসির শক্তি বলাই সবাই অনুসরন করছে। অবশ্য এই অনুসরনের বিষয়ে নয়নার অজানা।

অনেকক্ষণ গাড়ি চলার পরে নয়নার জোর গলা শোনা যায়, “মেটেবাড়ি পার করেছি।” কিছুপরে, “বাঁ দিকে গ্রামের মধ্যে ঢুকলাম। ...... সামনে একটা পুরানো ভাঙা বাড়ি দেখতে পাচ্ছি। ...... পেছনে একটা গাড়ি আসছে।” গাড়ি যেমন নাচানাচি শুরু করেছে সেটা থেকে অনায়াসে বোঝা গেল যে গাড়ি এবড়ো খেবড়ো রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছো। কিছুদুর গিয়ে গাড়ি থেমে গেল। পাশে আরো একটা গাড়ির আওয়াজ শোনা গেল। অন্ধকারে ছোট বদ্ধ ডিকিতে দম বন্ধ হয়ে আসার যোগাড়।
 
পর্ব ষোল – সাপের কোঠর (#5-125)

একটা পুরুষের কণ্ঠস্বর শোনা গেল, “একা এসেছিস?”

নয়না উত্তর দেয়, “হ্যাঁ।”

পুরুষের কণ্ঠস্বর প্রশ্ন করে, “কাগজ পত্র?”

নয়না চাপা কণ্ঠে গর্জে ওঠে, “আগে ভাইকে দেখি তারপরে।”

পুরুষ কণ্ঠ উত্তর দেয়, “ঠিক আছে। পেছনে আয়।”

কয়েকটা পায়ের আওয়াজ গাড়ির পেছনের দিকে এগিয়ে আসে, মনে হয় দুইজন। সঙ্গে সঙ্গে দানা, গোড়ালি থেকে পিস্তল বের করে হাতে নিয়ে তৈরি হয়ে যায়। কিছুক্ষণ সব নিস্তব্দ, কি দেখলো কে জানে তবে নয়নার সাথে ওই দুষ্কৃতীদের পায়ের আওয়াজ মিলিয়ে যায়। গোড়ালি থেকে দুটো পিস্তল বের করে হাতে তুলে নেয় দানা। অতি সন্তর্পণে ডিকি খুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে বেরিয়ে আসে। সামনে একটা পুরানো ভাঙা বিলিতি আমলের বাড়ি ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা। দেখে অনেকটা ভুতুড়ে বাড়ির মতন মনে হল। দুটো পিস্তলের ডগায় সাইলেন্সার লাগিয়ে হাতে পা টিপে টিপে বাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। ভাঙা জানালার মধ্যে দিয়ে ভেতরের আলো দেখা পেয়ে সেদিকে এগিয়ে যায়। জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখে ভাঙাচোরা বৈঠক খানায় মোহন আর চারজন ছেলে দাঁড়িয়ে। সবার হাতেই বন্দুক। বুবাইকে কোথাও দেখতে পায় না। দুইজন দুষ্কৃতি নয়নার মাথায় পিস্তল রেখে দাঁড়িয়ে।

আহত ক্ষুব্ধ নয়নার দিকে এগিয়ে এসে মোহন দাঁতে দাঁত পিষে গর্জে ওঠে, “শালী তোর জন্য আমার বন্ধু আজ মারা গেছে।”

নয়না পাল্টা সুরে বলে, “নিজের ক্ষমতায় কুলায়নি, শেষ পর্যন্ত ভাইকে হাতিয়ার করে আমাকে ধরলি? ভাবিস না তোরা বেঁচে যাবি।” বলেই বাঁকা হাসি দেয়।

মোহন ওর চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলে, “আজ তুই বাঁচবি না। তোকে শেষ করার জন্য এইখানে ডাকা।” বলে নয়নাকে চেপে ধরে মাটির ওপরে বসিয়ে দেয়।

আহত সাপের মতন ফুঁসে ওঠে নয়না, “আমার ভাই কোথায়?” ওর হাতের ফাইল গুলো মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে।

মাটি থেকে ফাইলগুলো উঠিয়ে এক এক করে দেখে মোহন ক্রুর হাসি দিয়ে বলে, “শালা মাদারচোদ দানা, আমার প্রকল্প হাতাতে গেছিল। তোর ভাইকে অপহরন করার পরিকল্পনা আসলে কার জানিস?”

দানা চোখ বন্ধ করে নেয়, এটা অবশ্যম্ভাবি। মোহন অথবা সিমোনে নয়নাকে বলেই দিতো। নয়না ফুঁসে ওঠে, “মানে?”

অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে মোহন খৈতান, হাতের পিস্তল নয়নার নাকের সামনে নাচিয়ে বলে, “তোর সুহৃদ বন্ধু, তোর হিতৈষী দানার ষড়যন্ত্র এটা।”

নয়নার চোখ জ্বলে ওঠে, মাথা ঝাঁকিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, “না, বিশ্বাস করি না। আগে বলো, আমার ভাই কোথায়?”

পাশের একটা ছেলেকে মোহন নির্দেশ দেয় বুবাইকে আনতে। মোহন কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে হাসতে হাসতে বলে, “দানা তোর হিতৈষী, তোর সাথে আসেনি কেন? তোকে একাই আমার কাছে পাঠিয়েছে মরার জন্য? (চুকচুক করে মোহন) ইসসস আজকে রাতে তুই শেষ হবি আর আমার প্রকল্প গুলো আমার হাতে চলে আসবে।”

নয়না চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে দেখে, হয়তো দানাকেই খুঁজছে ওর চোখ। দুই চোখে ভয়ঙ্কর আগুন নিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, “তোমরা তো ওর মেয়েকে অপহরন করতে চেয়েছিলে তাই না? আর সেটা আমার হাত দিয়েই করাতে। এটা ওর মাথার উপজ কোনোদিন হতে পারে না মোহন, এই পরিকল্পনা সিমোনের মাথার উপজ।”

ঠিক তখনি একটা ছেলে বুবাইকে নিয়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। বুবাইয়ের পেছন পেছন হাসতে হাসতে সিমোনে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। সিমোনেকে এইখানে দেখে একদিকে দানা আর অন্যদিকে নয়না, দুইজনে অবাক হয়ে যায়। ওরা ভাবতে পারেনি সিমোনে নিজে এইখানে আসবে।

বুবাইকে দেখে নয়না কেঁদে ওঠে, “আমার ভাইকে ছেড়ে দাও। তোমার কথা মতন আমি তোমার প্রকল্পের কাগজ পত্র সঙ্গে নিয়ে এসেছি আর নিজেও এসেছি। জানি তুমি আমাকে আজ রাতে শেষ করে দেবে। কিন্তু সত্যি বলছি বিমানের মৃত্যুর পেছনে আমি দায়ী নই।” বুবাইকে ছেলেটা ছেড়ে দিতেই এক দৌড়ে দিদির কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওর মুখে শরীরে হাত বুলিয়ে স্নেহ করে জিজ্ঞেস করে, “কিছু করেছে তোমাকে সোনা?”

বুবাই মাথা নাড়িয়ে সিমোনেকে দেখিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে, “মেরেছে আমাকে।”

হিংস্র নয়নার চোখ থেকে জলের জায়গায় রক্ত ঠিকরে বেরিয়ে আসে। প্রাণপণ শক্তি দিয়ে বুবাইকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে মোহনের দিকে রক্ত চক্ষু হেনে জিজ্ঞেস করে, “একে কেন মেরেছো? এ কি ক্ষতি করেছে তোমাদের?”

সিমোনে চিবিয়ে চিবিয়ে হাসতে হাসতে বলে, “না না এ কোন ক্ষতি করেনি তবে শালা মাদারজাত ভাই তোর। যখন থেকে এসেছে বোকাচোদা ছেলে শুধু দুদু খাবে দুদু খাবে বলে কাঁদছে। অত বড় ছেলেটা শেষে কিনা আমার বুকে হাত দেয়? কোন আস্পর্ধায় আমার বুকে হাত দেয়।” ওর দিকে পিস্তল উঁচিয়ে গর্জে ওঠে, “তোদের দুটোকেই আজকে শেষ করে দেবো।”

নয়না চকিতে গোড়ালি থেকে দুটি পিস্তল একসাথে বের করে “দুম দুম” “দুম দুম” করে পর পর মোহনকে আর সিমোনেকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। দুটো গুলি মোহনের বুক এফোঁড় ওফোঁড় করে বেরিয়ে যায়। সিমোনে কাঁধে লাগে দুটো গুলি। অতর্কিত হামলায় মোহন কিছু বুঝতে পারে না কিন্তু ততক্ষনে গুলি ওর পেট বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে গেছে। বাকি ছেলেগুলো হিংস্র নয়নার রক্ত চক্ষু দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। ক্ষুব্ধ নয়নার পিস্তল ওদের দিকে তাগ করা, এক পা নড়লে গুলি ওদের বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে যাবে।

রক্তাক্ত মোহন খৈতান মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আর সিমোনে চিৎকার করে, “নাআআআ...” মোহনকে জড়িয়ে ধরে। রক্তাক্ত স্বামীর মাথা কোলে তুলে সিমোনে নয়নয়ার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে চেঁচিয়ে ওঠে, “তুই একে গুলি করলি?” বলেই পাশে একটা লাঠির মতন কিছু ছিল সেটা হাতে নিয়ে নয়নাকে মারতে উদ্যত হয়।

হিংস্র ক্ষুব্ধ নয়না ফুঁসতে ফুঁসতে বাকিদের দিকে পিস্তল তাগ করে মোহনের দিকে এগিয়ে যায়। নয়নার হাতে দুটো পিস্তল দেখে সিমোনের চেহারা আতঙ্কে রক্ত শূন্য হয়ে যায়। দানা চুপচাপ জানালা দিয়ে দেখে যায়, এর মধ্যে একজন শেষ, একজন আহত একজন ক্ষুব্ধ। ক্ষুব্ধ নয়নাকে যদি সিমোনে না মারে তাহলে ওর মৃত্যু অবশ্যম্ভাবি। এখন কেন শক্তি, নাসির বলাইদের দেখা নেই, বারেবারে ঘড়ি দেখে দানা। এতক্ষণে ওদের এইখানে এসে যাওয়ার কথা।

মোহন আর সিমোনের দিকে এগিয়ে যায় নয়না। রক্তাক্ত মোহনের গলার ওপরে পা তুলে মাটির সাথে পিষে ধরে নয়না গর্জে ওঠে, “আমার বাবা আমার ভাইকে মারতে গেছিল তাকে পর্যন্ত ছাড়িনি। তোকে কেন ছেড়ে দেব?” বলেই মোহনের মাথা লক্ষ্য করে আরো একটা গুলি করে যার ফলে ওর মাথার খুলি গুঁড়িয়ে যায় আর সিমোনের কামিজ রক্তে ভেসে যায়।

মৃত মোহনের মাথা কোলে করে সিমোনে আর্তনাদ করে ওঠে, “একি করলে তুমি? এই সব দানার ষড়যন্ত্র এইসব না হলে কি আর তোমার ভাইকে আমরা কিডন্যাপ করতে পারি? ওই আমাদের হাতে তোমার ভাইকে তুলে দিয়েছে।”

মোহন শেষ, সিমোনে শেষ পর্যন্ত সত্য উজাগর করেই দিয়েছে। এইবারে দানাকে সামনে আসতেই হবে, নয়নার সম্মুখীন হতেই হবে, জানালার পেছনে আর লুকিয়ে থাকা নয়। তাল ঠুকে শেষ পর্যন্ত পিস্তল হাতে জানালা ভেঙে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। জানালা ভাঙার আওয়াজ শুনে নয়না, ছলছল চোখে একবার ওর দিকে তাকায়। দুই হাতের পিস্তল পাশের ছেলেগুলোর দিকে তাগ করে এগিয়ে আসে নয়নার দিকে।

বুবাই থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে দিদিকে জড়িয়ে ধরে। ভাইকে দুই হাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে মাটিতে বসে পড়ে নয়না। পাশের ছেলেগুলো দানার দিকে এগিয়ে আসতে যায়, সঙ্গে সঙ্গে দানার হাতের পিস্তলের গুলিতে এক এক করে দুইজনে প্রান হারায়। বাকি দুইজন সেখান থেকে কোন রকমে পালিয়ে বাঁচে।

ছলছল চোখে নয়না এক হাতে পিস্তল এক হাতে ভাইকে জড়িয়ে একবার দানার দিকে তাকায়। তারপরে সিমোনের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমাকে মারার ওর সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আমি যদি ওর মেয়েকে অপহরন করতাম যেটা তোমরা করাতে চেয়েছিলে তাহলে কি ও আমাকে ছেড়ে দিতো? কিন্তু আমার ভাই কেন সিমোনে...” উত্তরের অপেক্ষা করে না নয়না। কথাটা শেষ করেই সিমোনের মাথা লক্ষ্য করে একটা গুলি করে ওর মাথার খুলি উড়িয়ে দেয়। প্রাণহীন সিমোনে নিজের প্রাণহীন স্বামী মোহনের পাশে লুটিয়ে পড়ে।

দানার শ্বাস রুদ্ধ হয়ে যায়, এর পরের গুলি ওর মাথা অথবা বুক লক্ষ্য করেই হবে সেটা অজানা নয়। তবুও দানা নয়নার দিকে পিস্তল তাগ করে না। আহত হিংস্র বাঘিনী নয়নার চোখে চোখ রেখে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। দানাও জানে এই নারীকে এইখানে শেষ করে দেওয়া উচিত, নয়না বেঁচে থাকলে ওর সমুহ বিপদ, ওর পরিবারের সমুহ বিপদ।

নয়না আলতো মাথা ঝাঁকিয়ে ম্লান হেসে বলে, “সত্যি আমার মরে যাওয়াই উচিত, তাই না দানা? আমি বেঁচে থাকলে তুমি শান্তিতে ঘুমাতে পারবে না। কিন্তু আমি মরে গেলে আমার ভাইকে কে দেখবে? তুমি দেখবে? না না...” বলতে বলতে বুবাইকে জড়িয়ে ধরে বুকের কাছে। বুবাই দিদিকে দুই হাতে জড়িয়ে কাঁধে মাথা গুঁজে দেয়। জল ভরা চোখে নয়না, একবার ভায়ের মাথায় চুমু খেয়ে ওর কানের ওপরে বন্দুক ধরে। স্মিত হেসে নয়না বলে, “আমি সত্যি ভীষণ পাপী, দানা। এই দেখো, আমি রুহিকে অপহরন করতাম আর অদৃষ্ট ঠিক আমার ভাইকে এদের হাতেই অপহরন করিয়ে সেই শাস্তি আমায় দিল। সমু আর সুমিতা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। এই পৃথিবীতে আমার জন্য আর কেউ অপেক্ষা করে নেই দানা। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি মরে গেলে আমার ভাইকে কেউ দেখবে না দানা।”

“দুম” একটা গুলি সোজা বুবাইয়ের মাথার খুলি ভেদ করে দেয়। দানার সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠে। বুবাই কেঁপে ওঠে, ফুটো মাথা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটে নয়নার সারা চেহারা আর জামা ভিজিয়ে লাল করে দেয়। চোখ বন্ধ করে মৃত ভাইকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। দানা হাত থেকে পিস্তল ফেলে চুপচাপ স্থানুর মতন দাঁড়িয়ে থাকে। নয়না যে নিজের ভাইকে মেরে ফেলবে সেটা দানা স্বপ্নেও ভাবেনি। ভেবেছিল সিমোনে অথবা মোহন হয়তো ওদের পৌঁছানর আগেই বুবাইকে মেরে ফেলবে।

ঠিক তখনি বাড়ির সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ায়। দড়াম করে সামনের দরজা খুলে শক্তি আক্রামের সাথে পুলিস এসে প্রবেশ করে ঘরের মধ্যে। দানার শরীর পাথরের মতন শক্ত হয়ে যায়। মন থেকে চেয়েছিল নয়নার মৃত্যু হোক কিন্তু এইভাবে শেষ পর্যন্ত? দানা ধারনা করতে পারেনি যে নয়না নিজে হাতে নিজের ভাইকে হত্যা করবে। দানা ভেবেছিল সিমোনে অথবা মোহনের হাতে নয়না আর তার ভাই খুন হবে আর কঙ্কনা আর নাস্রিনের খুনে সিমোনেকে ফাঁসিয়ে দেবে। কিন্তু একা নয়না যে সবাইকে হত্যা করবে সেটা ওর ধারনার বাইরে ছিল, বিশেষ করে নিজে হাতে নিজের ভাইকে হত্যা করার ব্যাপারটা।

শক্তি ধীর পায়ে দানার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে ওর হাতে মোবাইল তুলে দেয়। নিথর দানা, শক্তির হাত থেকে মোবাইল নিয়ে ওর দিকে তাকায়। শক্তি ইশারায় জানায় ফোনের অন্যপাশে মহুয়া। দানা মোবাইল তুলে মহুয়ার সাথে কথা বলে।

মহুয়া ওইপাশ থেকে চাপা গলায় বলে, “জিত নয়না আর বুবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে এসো।” দানা স্থম্ভিত হয়ে যায়। একি বলছে মহুয়া? মহুয়া আবার দানাকে বলে, “জিত, প্লিস নয়না আর বুবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে এসো। যে করে হোক ফিরিয়ে নিয়ে এসো।”

নির্বাক দানা এক ভাবে সামনে বসা নয়নার দিকে তাকিয়ে থাকে। কোলে মৃত বুবাই, সারা শরীর ভাইয়ের রক্তে ভেসে গেছে নয়নার। দানা কোনোরকমে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে একটু বলবে?”

মহুয়া উত্তরে বলে, “তুমি যে করে হোক ফিরিয়ে নিয়ে এসো। বাড়ি এসো তারপরে সব বলছি।”

দানা শক্তির দিকে নিস্পলক নয়নে তাকিয়ে থাকে। শক্তি মাথা নাড়িয়ে কিছু বলতে চেষ্টা করে কিন্তু তার আগেই নয়না বলে ওঠে।

নয়না চোখ খুলে দানার দিকে তাকিয়ে বলে, “জানো দানা, জীবনে প্রচুর পাপ করেছি। সমু নেই, আমার ভালোবাসা আমার বন্ধু আমার সবকিছু সেই রাতে হারিয়ে গেছে।” নিজের কানের ওপরে পিস্তল রেখে ছলছল চোখে বলে, “মহুয়া আর রুহিকে নিয়ে ভালো থেকো, দানা। আমি আমার সমুর কাছে চললাম।”

পুলিস ওর দিকে এগিয়ে যায় বিরত করতে। দানা হাত উঠিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, “দাঁড়াও, প্লিস দাঁড়াও। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।”

নয়না স্মিত হেসে জল ভরা চোখ বন্ধ করে মৃত বুবাইকে বুকের কাছে জড়িয়ে নিজের কানের ওপরে গুলি চালায় “দুম”। গুলিটা নয়নার মাথার খুলি ভেদ করে যায়, রক্তের ফিনকি বেরিয়ে আসে। পুলিস, দানা আক্রাম শক্তি সবাই হতভম্ব হয়ে যায়। পুলিস কাউকেই বাঁচাতে পারে না।

দানা মাথা ধরে অনেকক্ষণ চুপচাপ ওইখানে বসে থাকে। ওর হাত থেকে মোবাইল মাটিতে পড়ে যায়। মোবাইলে মহুয়ার অস্ফুট আর্তনাদ শোনা যায়, “না......”

চারপাশে ছড়ানো মোহন খৈতানের প্রকল্পের কাগজ পত্র। শক্তি মনা এক এক করে সেই কাগজ পত্র গুলো উঠিয়ে ফাইল বন্ধ করে। পুলিস নিজের কাজে লেগে পড়ে।

দানা কাঁপতে কাঁপতে মোবাইল তুলে মহুয়াকে বলে, “হটাত কি হলো?”

মহুয়া চাপা আহত কণ্ঠে উত্তর দেয়, “নয়না, বড়দার মেয়ে, সায়ন্তনি। বড়দার ডান হাতের আঘাতের দাগ, কুড়ি বছর আগের ওর মেয়ের দেওয়া। বাড়ি আসো বড়দা বসে আছেন, তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন।”

চোখের সামনে সব কিছু কেমন ঘোলাটে হয়ে যায় দানার। পুলিস ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব কিছু খুলে জানায়। সিমোনে আর মোহন, নয়নার ভাইকে অপহরন করেছিল। বুবাইকে ছাড়ার বদলে ওরা নয়নাকে খুন করতে চেয়েছিল আর চেয়েছিল দানার নামে যে সম্পত্তি আছে সেই গুলো হাতিয়ে নিতে। কিন্তু একা নয়না বাকি সবাইকে মেরে ফেলে আর সেটা চাক্ষুষ পুলিসের সামনেই হয়েছে। পিস্তলের কথা জিজ্ঞাসা করলে দানা জানায় ওর কাছে কোন পিস্তল ছিলো না, নয়না কোথা থেকে পিস্তল যোগাড় করেছে সেটা ওর জানা নেই।

নয়নার মৃত্যু দানাকে বিশেষ নাড়া দেয়না তবে চোখের সামনে নিজের ভাইকে খুন করেছে সেটা দেখে দানা বেশ বিচলিত হয়ে ওঠে।

শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নয়না কি চেয়েছিল সেটাই বোঝা গেল না। অর্থ যশ প্রতিপত্তি না প্রেম ভালোবাসা? কাকে বেশি ভালবাসতো নয়না ওরফে সায়ন্তনি বসাক? উত্তর আসে রক্তাক্ত লুটিয়ে থাকা সায়ন্তনি বসাকের ভগ্ন হৃদয় থেকে, সমুদ্রকে ভালবাসতো সায়ন্তনি বসাক আর অভিনেত্রী নয়না বোসের সুপ্ত ইচ্ছে ছিল রাজনৈতিক দলের নেত্রী হওয়ার। আর দূরে দানার বাড়িতে অপেক্ষায় এক পিতা, হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে কাছে পাবার আশায় হয়তো বসে আছে। এই ছলনাময়ী মহানগর প্রচুর আলেয়ায় ভরা। ওর বাড়িতে অপেক্ষারত এক আলোকের জ্যোতি, মহুয়া।

=========সমাপ্ত=========
 
দ্বিতীয় অঙ্ক
pinuram


ভুমিকা

প্রেম কি মানুষের জীবনে একবার আসে? দ্বিতীয় বার ডাক দিলে কি সাড়া দিতে মানা? ভালোবাসা অকপট, প্রেম অকপট। সেই বাঁধনে যদি প্রাচীর গড়ে ওঠে, মানুষের চিন্তনশীলতায় বাধা আসে, কি করবে ঝিলাম? কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেবে? পারবে কি সে প্রাচীর ভেঙে বেরিয়ে আসতে? পারবে কি নতুন করে পাখনা মেলে এই অনন্ত সাগর জলে সাঁতার কাটতে?
 

Users who are viewing this thread

Back
Top