What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

pinuram রচনাসমগ্র (4 Viewers)

পর্ব তেরো – চৌষট্টি ছক (#7-97)

কি ব্যাপার এমন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো মণি? কার ফোন? অনেকক্ষণ হয়ে গেছে মনা আর পিন্টু, রুহিকে নিয়ে বেরিয়েছে। কিছু হলো না তো? তাহলে এই মহানগরের আর রক্ষে নেই, খোলা পিস্তল হাতে রাস্তায় নেমে পড়বে দানা।

ফোন দেখে স্বস্তি পায় দানা, নয়না ফোন করেছে, কিন্তু হটাত? “হ্যালো, কি খবর?” দানা প্রশ্ন করে।

উত্তর আসে নয়নার, “কি করছো? খালি আছো না মিসেসের সাথে কিছু চলছে।” বলেই ফিকফিক করে হেসে ফেলে।

চোখের সামনে মহুয়ার শায়িত অর্ধনগ্ন দেহ পল্লব ওকে মাতাল করে তোলে। মিচকি হেসে উত্তর দেয়, “কিছু না বলো, কি হয়েছে।”

নয়না ওকে বলে, “একটু পরে আমার বাড়িতে আসতে পারবে। সন্ধ্যের পরে দিকে মোহনের সাথে দেখা করার ছিল।”

বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, নয়না যখন বাড়িতে ডেকেছে তাহলে ওর ওপরে নিশ্চয় সন্দেহ করেনি এখন। রমলা তাহলে নয়নাকে কিছুই বলেনি। কাউকে ওর অভিসন্ধির ব্যাপারে জানতে দেওয়া চলবে না। দানা উত্তর দেয়, “তুমি ঠিকানা বলো আমি চলে যাবো।”

ফিকফিক করে হেসে নয়না বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, বুঝতেই পারছি পাশে মিসেস আছে তাই না।”

দানা মিচকি হাসে, “তা আছে।”

নয়না বলে, “আরে না না সেরকম কিছু নয়। বুঝতেই পারছো এইসব আলোচনা শহরে থেকে করা যায় না। দূরে একটা গ্রামে, নদীর তীরে মোহনের একটা বাগান বাড়ি আছে সেখানে আলোচনা হবে। আমি বিমানকে বলে রেখেছি যে তুমি আমার সাথে আসবে।” গলা নামিয়ে কামুকী কণ্ঠে বলে, “আজ মিস্টার মন্ডলের গাড়িতে যেতে পারি কি?”

দানা বুঝতে পারে কোথায় ডাকা হয়েছে। যেখানে প্রতিবার সিমোনের সাথে সহবাস করতো সেই দুর বাগান বাড়িতে ওদের আলোচনা সভা হবে। নয়না নিশ্চয় সিমোনের সম্বন্ধে অবগত নয় না হলে ওকে নিশ্চয় ইয়ার্কির ছলে কিছু একটা বলতো। বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, “ঠিক আছে সন্ধ্যে নাগাদ আমি তোমার বাড়িতে পৌঁছে যাবো।”

মহুয়া ওদের কথোপকথন শুনে জিজ্ঞেস করে, “কে ফোন করেছিল গো?”

দানা উত্তরে জানায়, নয়না ফোন করেছিল, বিমান চন্দ আর মোহন খৈতানের সাথে আলোচনা সভা আছে সন্ধ্যের পরে। ওর হয়তো আসতে অনেক রাত হয়ে যাবে। মহুয়াকে অভয় দিয়ে বলে, নয়না হাতের মুঠির মধ্যে সুতরাং ভয়ের কোন কারন নেই, বিমান ওর টিকি ছুঁতে পারবে না। এখন পর্যন্ত নয়না ওদের অভিসন্ধি আঁচ করতে পারেনি। ওর দেওয়া চাল মতন সবাই এগিয়ে চলেছে একপা একপা করে। চূড়ান্ত হামলা এখন বাকি। কাকে দিয়ে শুরু করা যায়? কঙ্কনা নাস্রিনকে দিয়েই শুরু করতে চেয়েছিল কিন্তু ওদের আসার এখন অনেক দেরি। বিমান আর সিমোনেকে দিয়েই খেলা শুরু করবে দানা। ধোপ দুরস্ত জামা কাপড় পরে তৈরি, মহুয়ার শখের দামী ছাই রঙের সুট পরে নেয়। কোমরে একটা পিস্তল গোঁজে অন্য পিস্তল পায়ের মোজাতে ছোট বেল্ট দিয়ে বেঁধে নেয়।

মহুয়া সাজ পরিচর্যা ছেড়ে খানিকের জন্য উঠে আসে। মুখে মাথায় তখন পর্যন্ত রঙ মাখানো। ছলছল চোখে ঠোঁট হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে ওকে বলে, “সাবধানে যাও জিত। বুকটা কেমন যেন করছে।” জড়িয়ে ধরতে যায় মহুয়াকে কিন্তু মানা করে দেয় প্রেয়সী, “না না, এই ফেস প্যাক আর রঙ তোমার সুটে লেগে যাবে।”

মহুয়ার হাত ধরে চুমু খেয়ে অভয় দিয়ে বলে, “কিছু হবে না, ওরা এখন পর্যন্ত কিছুই আঁচ পায়নি। আর হ্যাঁ আমি একবার মনা আর পিন্টুকে ফোন করে দিচ্ছি রুহিকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসবে।”

দানা বেরিয়ে পড়ে নয়নার বাড়ির উদ্দেশ্যে। বের হওয়ার আগে মনা আর পিন্টুকে ফোন করে বাড়িতে ডেকে নেয়। নির্দেশ দেয় যতক্ষণ ও বাড়িতে না ফিরছে ততক্ষণ যেন বাড়িতেই থাকে। মনা আর পিন্টু কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ি পৌঁছে যায়।

গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে নয়নার বাড়ির উদ্দেশ্যে। বুকের মাঝে চাপা টানটান উত্তেজনা, বিমান আর মোহনকে ওর চক্রান্তের বিষয়ে বেফাঁস কিছু বলা চলবে না, নয়নাকে ওর অভিসন্ধির সম্বন্ধে কিছু বুঝতে দেওয়া চলবে না।

অনেকদিন পরে এই বাড়িতে পা রাখতেই ওর মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। সুন্দরী লাস্যময়ী অভিনেত্রীর কবলে প্রায় পড়েই গেছিল যদি না নয়না একটা ভুল চাল চালতো, ওই ইন্দ্রাণীর নাম না নিলে হয়তো ওর কথা মেনে বাপ্পা নস্করকে খুন করে দিতো। তবে এখন ওর সামনে সব কিছু পরিস্কার, আগে মৈনাকের খুনের প্রতিশোধ, তারপরে নিজের খুনের প্রতিশোধ নেবেই।

কলিং বেল বাজাতেই কাজের মেয়ের স্থানে সুমিতা এসে দরজা খুলে দেয়। ছাই রঙের দামী সুট পরা দানাকে দেখে প্রায় চমকে ওঠে, একদম চেনা যাচ্ছে না যে এই দানা কয়েক মাস আগে ওদের গাড়ি চালাতো। দেখে মনে হয় বিশাল ক্ষমতাশালী এক ব্যাবসায়ি ওদের বাড়ির দরজায়। অদুরে নয়না বিস্ফোরিত নয়নে ওকে দেখে হেসে ফেলে। দানা বসার ঘরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে, বিশেষ কিছুই বদলায়নি বাড়ির।

দানা জিজ্ঞেস করে, “তৈরি, যেতে পারি?”

নয়না একটা সাদা জিন্স আর একটা টকটকে লাল রঙের শার্ট পরেছে, ওপরে দুধ সাদা দামী ব্লেজার, গলায় একটা স্কার্ফ। অভিনেত্রী তাই সাজের বাহার আলাদা। নধর দেহের গড়ন অনেকটাই উপচে ফুটে উঠেছে চাপা পোশাকের ভেতর থেকে। নরম ঠিকরে বেরিয়ে আসা পাছার খাঁজ দেখে দানার মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। কতবার ওই নরম নিটোল পাছার খাঁজে কঠিন উত্তপ্ত লিঙ্গ ঘষে কামসুখ আস্বাদন করেছে দানা। উন্নত স্তন যুগল দেখে দুই হাত নিশপিশ করে, পারলে এখুনি স্তন জোড়া হাতের মুঠির মধ্যে নিয়ে চটকে পিষে দেয়। দানা মনে মনে হাসে, একা নিভৃতে নির্জন রাস্তায় আবার যদি হটাত করে বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে সেই পুরানো দিনের মতন তাহলে গাড়ির অবস্থা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। নয়নার পোশাক আশাক আর দেহের লাস্যময়ী কামুকতা ওকে হাতছানি দিয়ে বারেবারে ডাক দেয়। যদিও ওই ফাঁদে প্রথমেই পা দিতে নারাজ দানা তাও দেখা যাক এই পরিণতি কি হয়। মহুয়াকে একটা মেসেজ লিখে জানিয়ে দেয় ওরা যাত্রা শুরু করেছে।

দানার পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওর হাত জড়িয়ে মিহি কণ্ঠে বলে, “আজকে তোমাকে দেখে সত্যি তোমার পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে করছে। তোমাকে কি বলে ডাকবো ভেবে পাচ্ছি না, দানা না মিস্টার মণ্ডল?”

মনে মনে হাসে দানা, এই পোশাক আশাক বাহ্যিক আড়ম্বর দেখেই মানুষ চেনে মানুষে। খোলসের ভেতরে কি আছে সেটা দেখার প্রয়োজন কেউ মনে করে না। শুধু মাত্র ইন্দ্রাণী আর মহুয়া ওর অন্দর মহলে উঁকি দিয়েছিল তা ছাড়া আজ পর্যন্ত যত নারীর সংস্পর্শে এসেছে সবাই ওকে একটা খেলার পুতুল বলেই ভেবেছে। যখন ওর পকেটে টাকা ছিল না, পোশাকের ঠিক ঠিকানা ছিল না, চরিত্র গত দোষ থাকা সত্ত্বেও মহুয়া বুক ভরে ভালোবাসা দিয়েছে ওকে।

মৃদু হেসে নয়নাকে বলে, “আমি দুটোই।”

গাড়িতে উঠে নয়না ওকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা দানা, ষাট লাখ টাকার গাড়ি থাকতে, তুমি চল্লিশ লাখ টাকার গাড়ির ড্রাইভারি কেন করতে গেলে একবার বলতে পারো?”

দানা প্রশ্নের মোড় ঘুরিয়ে দেয়, “আজকে ভারী সুন্দর লাগছে তোমাকে।”

নয়না চোখ টিপে বলে, “কম হ্যান্ডসাম লাগছো না তুমি। সুটের রঙ কি মিসেসের পছন্দ?”

দানা মাথা দোলায়, “হ্যাঁ।”

নয়না বলে, “তোমার মিসেস যেমন সুন্দরী তেমনি মার্জিত সুন্দর রুচিবোধ আছে।”

গাড়ি কিছুক্ষণের মধ্যেই শহর ছাড়িয়ে বড় রাস্তা ধরে মাঠের মাঝ দিয়ে হুহু করে এগিয়ে চলে। চালকের আসনে দানা আর পাশে নয়না। অনেকক্ষণ দুইজনে পরস্পরকে শুধু মাত্র দেখে যায়, কিছু কথা নেই। দানা অঙ্ক কষতে ব্যাস্ত, কি ভাবছে নয়না? নিশ্চয় বাপ্পা নস্করকে খুন করার চক্রান্ত করছে। ওর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়, নয়নাকে আর বিমানকে হাতের মুঠোর মধ্যে করার জন্য ওর হাতে কোন ভুয়ো চক্রান্ত থাকা দরকার।

নয়না জিজ্ঞেস করে, “কি এত ভাবছো দানা?”

দানা গাড়ি চালাতে চালাতে বলে, “না তেমন কিছু না, মোহন রাজি হবে তো সেটাই একটু শঙ্কায় আছি।”

ওর হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, “আমি ঠিক করিয়ে দেব চিন্তা কোরোনা, দানা।”

কি করিয়ে দেবে? নয়না কি মোহনের সাথেও সহবাস করেছে? নিজের কাজ হাসিলের জন্য, করতেও পারে এই ধূর্ত কামুকী নারী। সন্ধ্যে অনেক আগেই নেমে গেছে। বিমানকে নয়না ফোনে জানিয়ে দেয় ওদের আসার কথা। বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করাতেই উর্দি পরা একজন লোহার দরজা খুলে দেয়। বাগান বাড়ির সামনের বাগানে একটা টেবিলের চারপাশে পাঁচখানা চেয়ার রাখা। বাগান আলোয় আলোকিত। রাজনৈতিক দল নেতা বিমান চন্দ, শিল্পপতি মোহন খৈতান আর তার সুন্দরী লাস্যময়ী স্ত্রী সিমোনে খৈতান বসে। দামী কালো বি এম ডাবলু ঢুকতে দেখে একটু চমক খেয়ে যায় ওরা। নয়নাকে সাথে নিয়ে দানা গাড়ি থেকে নামে। বিস্ফোরিত চোখে দানাকে দেখে অবাক হয়ে যায় সিমোনে। ক্ষণিকের জন্য চেহারা রক্ত শুন্য হয়ে যায়, যেন ভুত দেখেছে সামনে। সঙ্গে সঙ্গে অবস্থার সামাল দিয়ে দাঁড়িয়ে উঠে ওদের অভ্যর্থনা জানায়। এতদিন দানাকে খুব সাধারন মানুষ হিসাবেই গন্য করে এসেছিল সবাই, কিন্তু দামী সুট, কালো গাড়ি দেখে সেই সব কেটে যায়। দানা মনে মনে হেসে ফেলে, সত্যি এই জগতে বাঁচতে হলে অর্থ চাই, না হলে ক্ষমতা প্রতিপত্তি আসেনা, মানুষ মানুষকে চেনে না। প্রথম যেদিন বিমান দানাকে দেখেছিল সেদিন সামান্য একটা ড্রাইভার হিসাবে দেখেছিল, দ্বিতীয় বার সাক্ষাৎ এক ব্যাবসায়ি অতি সাধারন পোশাক, আর আজকের দানা একদম ভিন্ন। মোহন ওকে কি বলে সম্বোধন করবে ভেবে পায় না। আময়িক হেসে হাত বাড়িয়ে দেয় ওর দিকে।

নয়না ওদের চেহারার ভাব্ব্যাক্তি দেখে মনের কথা বুঝে বলে, “মিস্টার মন্ডলের সাথে কি এই বাগানে বসেই আলোচনা করা হবে?”

বিমান মৃদু হেসে মাথা দোলায়, “অসুবিধে থাকলে ভেতরে যাওয়া যেতে পারে।”

দানা অল্প হেসে বলে, “না না, এখানে বসতে আপত্তি নেই। নদীর হাওয়া বেশ ভালোই লাগছে।”

দানা এতক্ষণ সিমোনেকে তীক্ষ্ণ চোখে জরিপ করে যাচ্ছিল। এই ভাবে দানাকে দেখতে পাবে হয়তো আশা করেনি, না অন্য কিছু। রক্ত শুন্য চেহারায় কোনোরকমে হাসি টেনে আনে সিমোনে। মোহন নিজের স্ত্রীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। সিমোনের চোখে চোখ রেখে হাত বাড়িয়ে দেয় দানা। ওই কঠিন হাতের পরশ সিমোনের অজানা নয়, তাই হাত মেলাতে দ্বিধা বোধ করে সিমোনে। হাত জোর করে ছোট্ট নমস্কার করে। দানা চোয়াল শক্ত করে মৃদু হাসে।

মোহন জিজ্ঞেস করে, “স্কচ নেবেন না ভদকা?”

দানা চেয়ারে বসে পাশের বেয়ারাকে বলে, “স্কচ অন রক্স।”

বেয়ারা মাংসের চপ কাটলেট আরও অনেক কিছু খাদ্য দ্রব্যের সাথে মদের গেলাস দিয়ে যায়। সিমোনের আশ্চর্য তখন ঠিক ভাবে কাটেনি আর সেটা নয়নার চোখ এড়ায় না। দানাকে একটু ঠেলে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপার। দানা মিচকি হেসে বলে ওর আশ্চর্য চকিত নয়নের ভাষার উৎস সম্পর্কে কোন ধারনা নেই।

কেনা বেচা নিয়ে আলোচনার শুরু মোহন করে, “মিস্টার মন্ডল। আপনি প্রায় পনেরোটা প্রকল্প একসাথে হাত দিয়েছেন তাই তো?” দানা মৃদু হেসে মাথা দোলায়, “হ্যাঁ।” মোহন জিজ্ঞেস করে, “কত টাকা বিনিয়োগ করেছেন?”

দানা উত্তর দেয়, “আড়াইশো কোটি টাকা।”

মোহন প্রশ্ন করে, “কি রকম অংশের শরিকানা আছে এই প্রকল্প গুলোতে?”

দানা উত্তর দেয়, “কোনোটায় সত্তর তিরিশ, কোনটায় ষাট চল্লিশ। এইরকম ভাবেই আছে সব কয়টাতে।”

মোহন কিছুক্ষণ থেমে জিজ্ঞেস করে, “আমার কাছ থেকে কত চান সেটা বলো।”

মদের গেলাসে চুমুক দিয়ে চোখে চোখ রেখে দানা উত্তর দেয়, “একশো শতাংশ চাই মিস্টার খৈতান।”

বিমান, সিমোনে আর মোহন আঁতকে ওঠে, ছেলেটা বলে কি? মোহন হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, “আপনার মাথা খারাপ হয়েছে নাকি মিস্টার মন্ডল। আমাদের সাথে আপনি মস্করা করতে এসেছেন নাকি?”

দানা বাঁকা হেসে বলে, “আপনার পথের কাঁটা বাপ্পা নস্কর, ভালো ভাবেই জানে আপনি আর বিমান চন্দ বাল্যবন্ধু। সুতরাং যতক্ষণ না বাপ্পা নস্কর বিশ্বাস করছে যে আমি আপনাদের সব কিছু হাতিয়ে নিয়েছি ততক্ষণ বাপ্পা নস্কর আমাকে কাজে নামতে দেবে না।”

বিমান চিবিয়ে চিবিয়ে দানাকে বলে, “তুমি বড় ধূর্ত, এইরকম চাল চালবে ভেবে পাইনি।”

দানা বাঁকা হেসে গম্ভির কণ্ঠে উত্তর দেয়, “আপনার সামনে আমার প্রস্তাব রাখলাম ভেবে দেখবেন কি করতে চান। সম্পূর্ণ প্রকল্প হাতে না আসলে আমি কাজ করবো না।” নয়নার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি কি আমার সাথেই বাড়ি ফিরতে চাও না অন্য কেউ তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবে।”

এত তাড়াতাড়ি দানা নিজের পক্ষে অটল হয়ে যাবে সেটা বিমান অথবা মোহন চিন্তা করতে পারেনি। ভেবেছিল একটু দর কষাকষি চলবে দানার সাথে কিন্তু দানা যে প্রস্থান করতে উদ্যত। নয়না দেখল এতে হিতে বিপরিত হতে চলেছে, দানাকে হাতে না রাখলে ওদের চক্রান্ত সফল হবে না কিছুতেই।

দানার হাত ধরে বসিয়ে বিমানকে বলে, “তুমি কি চাও দানা এখান থেকে চলে যাক? ও চলে গেলে তোমার পরের নির্বাচনে জেতার আশা ভরসা সব ওর সাথে এই গেট থেকে বেরিয়ে যাবে।” মোহন আর সিমোনের দিকে তাকিয়ে বলে, “গত এক বছর ধরে আপনাদের প্রকল্প শুধু মাত্র ভিত দাঁড় করিয়ে আছে, আগামী পাঁচ বছর ওই ভিতে শ্যাওলা পড়ুক এই চান?”

বিমান বাঁকা হেসে দানাকে প্রশ্ন করে, “তুমি ঠিক কোন পক্ষের মিস্টার মণ্ডল? বাপ্পা নস্করের না আমাদের?”

দানা চোরা হেসে নয়নার দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “আমি আপনাদের মধ্যে কারুর পক্ষের নয় বিমান বাবু। আমি নয়নার পক্ষের।”

দানা ভালো ভাবেই জানে নয়নাকে মাথায় করে রাখলে এই ব্যাবসায়িক লেনদেন ঠিক ওর ঝুলিতে এনে ফেলবেই।
 
পর্ব তেরো – চৌষট্টি ছক (#8-98)

নয়নাকে বড় করে দেখাতেই বেশ খুশি হয়ে যায় তাই মোহনের দিকে তাকিয়ে বলে, “আপনি কি চান মিস্টার খৈতান? এই চাল কিন্তু আমাদের চক্রান্তের একটা খুব বড় অঙ্গ। যতক্ষণ না বাপ্পা নস্কর বিশ্বাস করছে যে দানা আমাদের বাগে ফেলেছে ততক্ষণ ও শান্তি পাবে না। যে মুহূর্তে ও বাপ্পা নস্করের অতি বিশ্বাসী হয়ে উঠবে ঠিক সেই মুহূর্তে আমরা চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেব।”

বিমান আর মোহন পরস্পরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। দানা শ্বাস রুদ্ধ করে হাত মুঠি করে বসে থাকে। চাপা উৎকণ্ঠায় হৃদপিণ্ড ফেটে যাওয়ার যোগাড়।

সিমোনে শেষ পর্যন্ত মুখ খোলে, “মিস্টার মন্ডলের শর্ত মানতে রাজি আছি তবে হ্যাঁ, তিনখানা ছোট প্রকল্প আছে সেইগুলো সব কুড়ি আশি করে দেওয়া হবে আর দুটো বড় আবাসন প্রকল্প আর একটা হোটেল প্রকল্প আছে সেই গুলো পঁয়তাল্লিশ পঞ্চান্ন করতে হবে। আপনি একটু ঝুঁকুন আমরাও একটু ঝুঁকি, ব্যাবসার তাই নিয়ম তাই না মিস্টার মন্ডল।”

সিমোনের ঠোঁটে মিস্টার মন্ডল শুনে দানা মনে মনে যারপরনাই আনন্দিত। একসময়ে এই নারী ওকে শুধু মাত্র পুরুষ বেশ্যা ভেবে যথেচ্ছ ভাবে সহবাসের পুতুল বানিয়েছিল আর আজকে দামী গাড়ি, দামী সুট পরা দেখে এক সন্মান দিয়ে সম্বোধন করছে।

দানা নিজের কথায় অটল থাকে, “আমি আড়াইশো কোটি টাকা নিয়ে ভালো আছি মিসেস খৈতান। বাপ্পা নস্কর পরের পাঁচ বছর থাকলে অচিরে ওই আড়াইশো কোটি টাকাকে এক হাজার কোটি টাকা করে নেব। বাকিটা আপনাদের হাতে ছেড়ে দিলাম আমি।”

নয়না বিমানের দিকে তাকিয়ে রাগত কণ্ঠে ফিসফিস করে বলে, “কতবার তোমাকে এক কথা বুঝাতে হবে?”

নয়নার হাতে আলতো চাপ দিয়ে শান্ত করিয়ে মোহনকে বলে বিমান, “দ্যাখ মনু, নয়নার বিশ্বাসী মানে বুঝতেই পারছিস তুই।” সিমোনের ঠোঁটে বাঁকা হাসি খেলে যায় সেই সাথে দানার ঠোঁটেও বাঁকা হাসি খেলে যায়। বিমান বলে চলে, “তিনটে আবাসনের প্রকল্প আগে ওর নামে করে দে, বাকি গুলো না হয় পরে দেখা যাবে।” দানার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “খুশি মিস্টার মন্ডল?”

চেয়ারে হেলান দিয়ে পায়ের ওপরে পা তুলে ওদের দিকে তাকিয়ে বলে, “খুশি আমি আগেও ছিলাম এখন আছি। দরকার আমার নয় বিমান বাবু, দরকার আপনার। আমি আমার পক্ষ রেখেছি কিন্তু সুতরাং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আপনার হাতে।”

সিমোনে কিছুক্ষণ ভেবে বলে, “ঠিক আছে মিস্টার মন্ডল, পরশু দিনের মধ্যে কাগজ পত্র নিয়ে আমার উকিল আর সি এ আপনার অফিসে চলে আসবে। তিনখানা আবাসন প্রকল্প সম্পূর্ণ আপনার। বড় মাপের প্রকল্প গুলো পরে বিচার বিবেচনা করা যাবে।”

সিমোনে খৈতান, বিমান চন্দ এদের সবাইকে ধূলিসাৎ করতে চায় দানা। শুধু মাত্র কুড়ি কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে মাছি মেরে হাত গন্ধ করতে নারাজ। চোয়াল চেপে মৃদু হেসে সিমোনের দিকে তাকিয়ে বলে, “পনেরো কুড়ি কোটি টাকা দিয়ে মাছি মেরে হাত গন্ধ করতে রাজি নই মিসেস খৈতান। আপনার কাছে এক সপ্তাহ সময় আছে। দুই সপ্তাহ পরে বাপ্পা নস্করের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হবে। আমাকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা দিতে হবে বাপ্পাকে। একবার ওই টাকা যদি আমি বাপ্পার খাতায় ঢালি তাহলে বুঝতেই পারছেন, পরের পাঁচ বছরে ওই টাকার বিশ গুন আমি উশুল করবো।”

বিমান সিমোনে আর মোহন সবাই ভাবনায় পড়ে যায়। নয়না চুপচাপ বসে ওদের দেখে আর হাসে। দানা মনে মনে উৎফুল্ল, এইবারে সঠিক জায়গায় ঘা মেরেছে। এতে কাজ না হলে পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ভাবা যাবে। মোহন আর বিমান ফিসফিস করে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা করে, কি করা যায়, দানা যে অটল।

শেষ পর্যন্ত মোহন মুখ খোলে, “আপনাকে কতটা বিশ্বাস করা যায়, মিস্টার মন্ডল?”

ওই কথা শুনে নয়না ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “বিশ্বাস অবিশ্বাসের কথা কোথা থেকে আসছে এইখানে মিস্টার খৈতান?” বিমানের দিকে অভিমানী চাহনি দিয়ে বলে, “এখন ওকে বিশ্বাস করতে পারছো না? এতদিনে তোমাকে ছিন্নমূল করে ছেড়ে দিতো বাপ্পা নস্কর বুঝলে।”

বিমান মৃদু হেসে মাথা চুলকিয়ে মোহনকে বলে, “নারে মনু, আর কিছু না হোক মিস্টার মন্ডলকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়। তোকে পরে বিস্তারে জানাবো সেই সব।” তারপরে দানার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে, “পরশু দিনের মধ্যে উকিল আর সি এ তোমার অফিসে সব কাগজ পত্র নিয়ে পৌঁছে যাবে।”

দানা ওদের বলে, “একটা কথা আছে, ওই কাগজে এটা যেন লিখতে ভুলবেন না যে দুশো কোটি টাকার বিনিময়ে আমি আপনার কাছ থেকে এই প্রকল্প গুলো কিনে নিয়েছি। বুঝতেই পারছেন, আয়কর বিভাগ এটা কিছুতেই মানতে চাইবে না যে আপনি আমাকে বিনা পয়সায় এত গুলো প্রকল্প এমনি এমনি দিয়ে দিয়েছেন। আয়কর ইত্যাদির চোখে ধুলো দিতে হলে এমন কিছু একটা করতে হবে।”

মোহন হেসে ফেলে, “খেঁকশিয়ালের মাথা আপনার মিস্টার মন্ডল। আচ্ছা তাই হবে কিন্তু দুশো কোটির বদলে দশ কোটি অন্তত আমি পেতে পারি।”

দানা হেসে বলে, “দশ কোটি কেন মিস্টার খৈতান, একবার বাপ্পা নস্কর সরে যাক। দুশো কোটির জায়গায় দুই হাজার কোটি আমাদের হাতে আসবে, অর্ধেক আপনার অর্ধেক আমার। আপনি প্রকল্প আমার হাতে দিয়ে খালাস। আসল কাজ আসল টাকা আমাকেই খাটাতে হবে তাই না?”

মোহন স্মিত হেসে মাথা দোলায়, “হ্যাঁ।” দানা, বিমান আর মোহনের সাথে হাত মেলায়।

সিমোনে আর দানার চোখে চোখে কথা হয়, “তুমি কে দানা?” চোখের উত্তরে দানা বলে, “পরে বলবো।” সিমোনে জিজ্ঞেস করে, “খুব ধূর্ত।” দানা উত্তর দেয়, “তুমি কম নও।”

সিমোনে মৃদু হেসে নয়নাকে বলে, “মিস্টার মন্ডলের সাথে তোমার বেশ খাতির আছে মনে হচ্ছে?”

দানার পাশ ঘেঁসে বসে নয়না উত্তর দেয়, “সে রকম কিছু নয় তবে একটু চেনাজানা আছে এই ব্যাস।” দানার কাঁধে আলতো চাপ দিয়ে বলে, “তাই না মিস্টার মণ্ডল?”

বুক ভরে ঠাণ্ডা নদীর বাতাস নেয় দানা। চূড়ান্ত আঘাত হানার আগের মুহূর্ত, কবে এদের বাগে ফেলতে পারবে আর সঙ্গীতার চোখের জলের প্রতিশোধ নিতে পারবে সেই প্রহর গোনে। রমলা আর নয়না যখন মৈনাককে খুন করেনি তখন নির্ঘাত বিমান চন্দ আর সিমোনে খৈতান ওকে খুন করেছে। সঙ্গীতাকে খুন করতে চেয়েছিল কিন্তু ওর প্রেমিক বেঘোরে প্রান হারায়। মেয়েটার চোখের জল এখন শুকায়নি ঠিক ভাবে। বিমান বন্দরে দেখা পর্যন্ত করতে যেতে পারেনি পাছে ওদের একসাথে কেউ দেখে ফেলে। চোয়াল চেপে, সামনে বসা সবার দিকে রক্ত চক্ষু হেনে তাকিয়ে থাকে দানা। নয়নাকে ছেড়ে দেবে না দুটো কারনে, ইন্দ্রাণীর নাম নিয়ে হুমকি দিয়েছে আর সঙ্গীতাকে ধর্ষণ করাতে চেয়েছে।

ওকে হারিয়ে যেতে দেখে নয়না আলতো ধাক্কা মেরে জিজ্ঞেস করে, “কি হল কোথায় হারিয়ে গেলে? মিসেসের কথা মনে পড়লো না মেয়ের কথা?”

সিমোনে অবাক হয়ে দানাকে জিজ্ঞেস করে, “আপনার মেয়ে আছে?”

ওর হয়ে নয়না হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ, একদম ফুলের মতন সুন্দরী ছোট্ট পরী, রুহি।”

কাজ শেষ, বুকের ভেতরে এক বিজয়ীর জোয়ার ওঠে দানার। হাতের নাগালের মধ্যে সব শত্রু, শুধু মাত্র যদি কেউ ওকে এইখানে আসতে না দেখতো তাহলে সবাইকে এইখানে খুন করে চলে যেতো দানা। না, নিজের হাতে রক্ত মাখাতে চায় না দানা, ছোট্ট রুহির কি হবে? ওর “ডাডা” একজন খুনি? ওর সুন্দরী প্রেয়সীর চোখের জল কে মুছাবে? দানা ঘড়ির দিকে তাকায়, দীর্ঘ আলোচনা পর্ব শেষ হতে হতে রাত দশটা বেজে যায়। ওইদিকে বেয়ারারা আবার রাতের খাবারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একবার মহুয়াকে ফোন করতে হবে, এতখনে নিশ্চয় চাপা উত্তেজনায় বিনিদ্র রজনী কাটাচ্ছে। বিমান আর মোহন কিছু শলা পরামর্শ করার জন্য, মদের গেলাস হাতেই উঠে চলে যায়। নয়না আর সিমোনে গল্পে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।

এর মাঝে দানা মহুয়াকে ফোন করে, “কি গো ঘুমালে নাকি?”

দানার কণ্ঠ স্বর শুনে স্বস্তি পায় মহুয়া, বুকের মাঝে বাঁধা রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে বলে, “তুমি যেখানে গেছো সেখান থেকে না ফেরা পর্যন্ত আমি ঘুমাতে পারি? কি হলো? সব ঠিক ঠাক না গোলমাল?”

দানা মৃদু হেসে বলে, “সব জালে।”

মহুয়া হেসে বলে, “এই না হলে আমার জিত।” বলেই ফোনে একটা দীর্ঘ চুম্বন এঁকে দেয়। “তাড়াতাড়ি বাড়ি আসো। রাত দশটা বাজে।” দানা জানায় এখন রাতের খাবার বাকি তারপরে বাড়ির পথ ধরবে। সেই শুনে মহুয়া ওকে উত্যক্ত করার জন্য বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, জানি জানি। নয়নাকে সঙ্গে নিয়ে গেছো। তুমি এক বাঘ আর ও এক বাঘিনী।” দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বলে, “দেখো বাবা তোমরা মারামারি খামচা খামচি করো তাতে আসে যায় না তবে আমার গাড়ির যেন কিছু না হয়। গত সপ্তাহে কিন্তু সার্ভিসিং আর ড্রাই ওয়াশ করিয়েছি। যা করার ফাঁকা মাঠে সেরে আসবে।”

দানাও ওকে ক্ষেপানোর জন্য বলে, “নয়নাকে আজকে একদম ফুলটুসি মাল দেখাচ্ছে, ভাবছি ফাঁকা রাস্তায় একটু চটকে আদর করবো।”

মহুয়া রেগে কাঁই, “যদি গায়ে মেয়ের গন্ধ পাই তাহলে ছাল ছাড়িয়ে নুন মাখিয়ে চিবিয়ে খাবো কিন্তু।”

দানা হেসে জিজ্ঞেস করে, “কি খাবে শসা? সবুজ না গাড় বাদামী।”

দানার কথার অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে মহুয়ার একবিন্দু কষ্ট হয় না, কপট অভিমানী কণ্ঠে বলে, “আমি আজকে এত কষ্ট করে পরিচর্যা করলাম আর তুমি... রাতে কিন্তু গেস্ট রুমে শুতে হবে জেনে রেখো।”

ওকে শান্ত করিয়ে বলে, “আচ্ছা বাবা আচ্ছা, নয়নাকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়েই তোমার কোলে ঝাঁপ দেব। রুহি কি করছে?”

রুহিকে ফোন ধরিয়ে দেয় মহুয়া। আদো আদো কণ্ঠে কিছুক্ষণ ডাডা আর রুহির বার্তালাপ হয়। অনেক পুতুল কিনেছে, “আইকিম” খেয়েছে, “আন্তেলের” সাথে নাচানাচি করেছে।

মহুয়া সাবধানে বাড়ি ফিরতে বলে। দানা ঘড়ির দিকে তাকায়, বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত একটা বেজে যাবে। এতটা পথ গাড়ি চালিয়ে ক্লান্তি বোধ করবে কিন্তু একবার মহুয়ার মিষ্টি চুমু পেলেই সব ক্লান্তি ভুলে মেতে উঠতে পারে। একটা সিগারেট জ্বালিয়ে বাকি সবার দিকে দেখে, কোথায় কে কি করছে। চোখের সামনে চার বিপক্ষকে একসাথে দেখে বেশ খুশি, সবাইকে মোটামুটি নিজের ফাঁসে আটকাতে পেরেছে। এইবারে জাল গুটিয়ে আনা বাকি। কিছুদিনের মধ্যে জাল গুটাতে শুরু করতে হবে। প্রথমে সিমোনে আর বিমান চন্দ, তারপরে নয়না।

সিমোনেকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে দানা সতর্ক হয়ে যায়, নিশ্চয় অনেক কিছু জিজ্ঞেস করবে। পুরুষ বেশ্যা দানা কি ভাবে কোটিপতি ব্যাবসায়ি মিস্টার বিশ্বজিৎ মণ্ডল হয়ে উঠল। হাতের মদের গেলাস অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। নয়না অন্য দিকে চলে গেছে, বিমান আর মোহন তখন পর্যন্ত গুঢ় আলোচনায় ব্যাস্ত।

সিমোনের চোখে চোখ রেখে দানা এগিয়ে যায়। স্মিত হেসে হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কেমন আছো?”

সিমোনে দানাকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে জিজ্ঞেস করে, “তুমি এখন এই শহরে আছো?”

প্রশ্ন শুনে দানা অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে, “কেন আমি কোথায় যাবো?”

সিমোনে ভুরু কুঁচকে কিছু একটা ভেবে বলে, “না মানে, আমি যতদূর জানতাম তুমি শহর ছেড়ে চলে গেছো।”

দানার মাথার শিরা ওকে জানিয়ে দেয়, নিশ্চয় কঙ্কনা আর নাস্রিন ওর ওপরে নজর রেখেছিল। কালী পাড়ার বস্তি কাউকে না বলেই ছেড়ে চলে গেছিল বেশ কয়েক মাসের জন্য। নিশ্চয় তার মাঝে কঙ্কনা আর নাস্রিন ওর খোঁজ নিতে বস্তিতে লোক পাঠিয়েছিল। ওকে খুঁজে না পেয়ে নিশ্চিন্ত হয় কঙ্কনা আর নাস্রিন, সেই খবর সিমোনেকে দেয়। কঙ্কনা আর নাস্রিনের সাথে সিমোনে, রমলা, রাগিণী, নীলাঞ্জনা এমন অনেক ক্ষমতাশালী নারীদের যোগাযোগ রয়েছে সেটা দানা আগে থেকেই জানে। সিমোনেকে চেপে ধরলে নিশ্চয় কঙ্কনার খবর পাওয়া যাবে সেটা আর বুঝতে বাকি থাকে না। কিন্তু এখুনি সিমোনেকে চাপ সৃষ্টি করা মস্ত বড় ভুল। হাতের থেকে পাখী ফস্কে উড়ে চলে যেতে বাধ্য। আরো একটু রয়ে সয়ে চাল খেলতে হবে ওকে।

দানা বাঁকা হেসে উত্তর দেয়, “তাই নাকি? না না, আমি এই মহানগরে ছিলাম।”

সিমোনে আমতা আমতা করে বলে, “না মানে উড়ো খবর তাহলে। কিন্তু তোমাকে এই রূপে দেখতে পাবো আশা করিনি।”

দানা ভালো ভাবেই জানে এই রূপ অনেকের আশাতীত। শুধু মাত্র প্রেয়সীর জন্য এটা সম্ভব না হলে দানা হয়তো ভেসে যেতো। কোনোদিন প্রতিশোধ নেওয়ার চিন্তা করতো না। দানা একটা বেয়ারাকে ডেকে এক গেলাস মদ আনিয়ে নেয়। মদের গেলাসে চুমুক দিয়ে সিমোনের চোখে চোখ রেখে বলে, “এখন দেখতে পেলে। আর বলো কি চলছে?”

সিমোনে হেসে বলে, “তুমি প্রচন্ড কানিং (খুব ধূর্ত) তাই না? একদিকে বাপ্পা নস্করকে খেলাচ্ছো অন্যদিকে বিমানকে খেলাচ্ছো?”

দানার মাথা সঙ্গে সঙ্গে গরম হয়ে যায়, কিন্তু মেপে উত্তর না দিলে সিমোনে ওর চাল বুঝতে পেরে যাবে। এখুনি কারুর সন্দেহ ভাজন হতে চায় না দানা। মিচকি হেসে নয়নার দিকে ইশারা করে বলে, “আমি না বাপ্পা নস্করের দলের না বিমান চন্দের দলের। আমি নয়নার পক্ষের।”

চোখ পাকিয়ে চটুল হাসি দিয়ে বলে, “আচ্ছা তাই নাকি?” গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলে, “সাবধানে থেকো ওর কাছ থেকে। ও কিন্তু বিমান কেও খেলায়।”

দানা জানে তাও না জানার ভান করে বলে, “আচ্ছা তাই নাকি? এইবারে তাহলে তোমার কাছে শলা পরামর্শ নিতে আসব।”

সিমোনে হেসে বলে, “ঠিক আছে, আগে এই ব্যাবসায়ি লেনদেন হয়ে যাক। একদিন না হয় হারিয়ে যাওয়া দিন গুলো খোঁজা যাবে আর শলা পরামর্শ করা যাবে।”

দানা মিচকি হেসে বলে, “তোমার খাই খাই ভাব এখন সেই রকম আছে না একটু বেড়েছে?”

সিমোনে কামুকী হাসি দিয়ে বলে, “তুমি নেই, কঙ্কনা নাস্রিন চলে গেছে। খুঁজতে একটু অসুবিধে হয় তবে পেয়ে যাই।”

হুম, তাহলে রমলা সঠিক খবর দিয়েছিল। সিমোনে মুখ ফসকে সেই কথা দানাকে জানিয়ে দিল শেষ পর্যন্ত। আর সঙ্গে সঙ্গে দানা কথার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন করে, “তুমি কি জানো কঙ্কনা আর নাস্রিন কোথায়?”

মুখ ফসকে ওদের নাম নিয়ে নেওয়াতে বেশ বিব্রত বোধ করে সিমোনে। কিন্তু মুখের কথা হাতের ঢিল ছুঁড়লে পড়ে বড় মুশকিল। নিজে থেকে ফাঁদে পা দিয়েছে এইবারে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া গতি নেই। ওর চোখে চোখ রেখে উত্তর দেয়, “না সঠিক জানা নেই, তবে যতদূর আমি জানি ওরা আর এই শহরে নেই।” কথায় কথা বাড়ে তাই সিমোনে আর কথা না বাড়িয়ে দানাকে বলে, “চল ডিনার সেরে ফেলি। তুমি আবার নয়নাকে নিয়ে ফিরবে তাই তো?”

দানা মাথা দোলায়, “হ্যাঁ। তোমরা কি আজ রাতে এইখানে কাটাবে?”

সিমোনে ফিক করে হেসে ফেলে, “ওই দুই বুড়ো মদ্দ আর মদ। হ্যাঁ আজ রাতে এইখানেই কাটাবো আমরা।”

রাতের খাবার দাবার শেষ হল আরও বেশ কিছু ব্যাবসায়িক আলোচনায়। মোহন চায় যত তাড়াতাড়ি এই প্রকল্প গুলোতে কাজ শুরু করতে। দানা জানিয়ে দেয়, কাগজ হাতে আসার পর দিন থেকেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। একবার বাপ্পা নস্কর সরে যাওয়ার পরেই নিজের অংশ কেটে বাকি সব কিছু মোহনকে ফিরিয়ে দেবে। মনে মনে দানা জানে, একবার হাতের মুঠিতে এলে আগে এদের সবাইকে পিষে ধরবে তারপরে যা করার করবে। কাউকে এখুনি প্রানে মারার পরিকল্পনা ওর নেই। তবে সময় হলে চারজনকেই চির নিদ্রায় শুইয়ে দেবে। বাপ্পা নস্করকে খেপিয়ে লাভ নেই, অন্তত বাপ্পা নস্কর ওর কোন ক্ষতি করেনি।

বাড়ি ফেরার সারা পথ, নয়নার হাবিজাবি গল্পে কেটে যায়। কিছু কথা কানে ঢোকে কিছু ঢোকে না, ইচ্ছে করেই ঢুকায় না দানা। আর ওই ফাঁদে পা দিতে রাজি নয়। দানা ওকে বিশ্বাস করে সেটা জেনে নয়না ভারী উৎসাহিত। গাড়ি মধ্যেই গলা জড়িয়ে বেশ কয়েকটা চুমু খেয়ে নেয়। দানার সেদিকে বিশেষ ভ্রূক্ষেপ নেই, আগের দানা আর এই দানা অনেক আলাদা। সেটা কিছুক্ষণের মধ্যে ওর শান্ত রূপ দেখে টের পেয়ে যায় নয়না।

গাড়ি থেকে নামার আগে ওর হাত ধরে বলে, “এই দানা, একদিন মিসেস আর মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে এসো।”

দানা মৃদু হেসে বিদায় জানিয়ে বলে, “মিসেস মাঝে মাঝেই তোমার কথা বলে, নিশ্চয় আসবো।”
 
পর্ব তেরো – চৌষট্টি ছক (#9-99)

বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায়, প্রায় একটা। ততক্ষণে রুহি ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু মহুয়ার চোখে কি আর ঘুম আসে? যতক্ষণ না দানা বাড়ি পৌঁছায় ততক্ষণ চোখের পাতা এক করতে পারে না কিছুতেই। বারেবারে বারান্দায় ঘর বাহির করে, কোথায় গেল এতরাতে? নয়নার বাড়ি থেকে এইখানে আসতে কি এত সময় লাগে নাকি? কলিং বেলের আওয়াজ শুনেই দৌড়ে যায়। হাসি হাসি মুখ করে দানা ঘরের মধ্যে ঢোকে। ঢুকেই মহুয়াকে আস্টেপিস্টে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে, মনে হয় যেন এক পক্ষ কাল পরে দুইজনে পরস্পরের সাথে দেখা করছে।

মহুয়া অভিমানী কণ্ঠে বলে, “এত রাত হল কেন তোমার?”

দানা কালিঝুলি মাখা হাত দেখিয়ে বলে, “আর বলো না, শালা এই একটু আগে গাড়ির টায়ার পাঞ্চার হয়ে গেল সেই ঠিক করতে শালা আরও আধা ঘন্টা বেরিয়ে গেল।”

উৎকণ্ঠায় মহুয়ার বুক তখন কাঁপছিল, “কি হল তোমাদের আলোচনা? সিমোনে তোমাকে দেখে কি প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করল?” চোখ টিপে স্মিত হেসে বলে, “বাপরে নিশ্চয় চাঁদের হাট বসেছিল ওইখানে, হ্যাঁ? একপাশে নয়না অন্যপাশে সিমোনে। কার সাথে কি কি করলে?”

দানা ওকে জড়িয়ে ধরে প্রবোধ দেয়, “আরে সিমোনে আমাকে দেখে ভুত দেখার মতন চমকে উঠেছে। ভাবেনি আমি বেঁচে আছি।” তারপরে এক এক করে সবকিছু বলে মহুয়াকে।

শুনতে শুনতে চাপা উত্তেজনায় মাঝে মাঝে প্রশ্ন করে, “আচ্ছা ওরা কিছু টের পেয়ে যায়নি তো?”

দানা হেসে বলে, “কি যে বলো না তুমি? নয়নাকে একটু তুলে দিলাম ব্যাস। বিমান ওর গুদের মধ্যে বাসা বেঁধেছে। নয়নার কথা কি আর ফেলতে পারে বিমান। ঠিক সব কিছু হাতিয়ে নিল খানকী আর সোজা আমার পাতে দিয়ে দিল।”

মহুয়াকে কোলে তুলে দানা সোজা ওদের মিলনের ঘরে ঢুকে পড়ে। শরীর পরিচর্যা করে যেন শতগুন সুন্দরী হয়ে উঠেছে প্রেয়সী। টানা টানা ভুরু, রেশমি কালো ঘন চুল, শরীর থেকে মাদকতাময় আঘ্রান, দানা মাতাল। ঠিক ভাবে হাত মুখ ধোয়ার আগেই মহুয়াকে বিছানায় ফেলে ছিন্নভিন্ন করে দেয়। প্রেমিকের অধর সুধা আর হাতের পেষণে মহুয়া কামার্ত হয়ে ওঠে। পোশাক পরিত্যাগ করে ভালোবাসার খেলা শুরু করতে বেশি সময় লাগে না ওদের। বারেবারে দানা মহুয়াকে চরম সুখের শৃঙ্গে তুলে নিয়ে যায় আর এক আছাড় মারে। প্রেমে কাতর মহুয়া নিজেকে দানার দেহের সাথে বিলীন করে দেয়। একবার নিজে ওর ওপরে উঠে যায়, কখন ওর কোলে বসে ঊরুসন্ধির সাথে ঊরুসন্ধি ঘষে দামাল কাম রতিতে মগ্ন হয়। দুই কাম ক্ষুধার্ত কপোত কপোতী চরমে উঠে একে ওপরকে পিষে ধরে সুখের সাগরে ডুব দেয়।

পরের দিন থেকে আবার কাজ শুরু, অধীর প্রতীক্ষা, কবে মোহনের উকিল আর সি এ কাগজ নিয়ে আসবে। বাপ্পা নস্করের কাছে সব কিছু খুলে বলার পরে বাপ্পা আরো বেশি খুশি। এইবারে ওর বিরোধী পক্ষ একেবারে জালে ফেঁসে গেছে। দানা বাপ্পা নস্করের বিশ্বাসভাজন মানুষ হয়ে ওঠে। আজকাল কিছু হলেই দানার ডাক পড়ে। ইন্দ্রনীল অথবা নিতাইকে ঠিক খেপাতে চায় না দানা, ওদের হাতে রাখলে আগামী দিনে অনেক কাজ হাসিল করতে পারবে। প্রকল্পের কাজে ইন্দ্রনীল আর নিতাই লোকবল দিয়ে অনেক সাহায্য করেছে যদিও তার জন্য দানা টাকা খরচ করেছে। ইতিমধ্যে কোন প্রকল্প সমাপ্ত হয়নি তাই বাপ্পা নস্কর ওর কাছ থেকে টাকা চাইতে দ্বিধা বোধ করে কিন্তু নির্বাচনী প্রস্তুতি অতি শীঘ্র নিতে হবে।

পাঁচ দিনের মাথায়, মোহন নিজেই সি এ আর উকিলকে সঙ্গে করে দানার সাথে দেখা করে। মোহনের তুলনায় ওদের অফিস অনেক অনেক ছোট। মহেশ বাবুকে ডেকে নেয় দানা, উকিল সি এ সাথে করে আগে তাদের দিয়ে ওই প্রকল্পের কাগজ পত্র ঠিক আছে কি না দেখিয়ে নেয়। মাঝে মাঝে দানার উকিল আর মহেশ বাবু প্রশ্ন করে মোহন আর তার উকিলকে। এই সব আইনের মারপ্যাঁচ বিশেষ কিছুই দানার মাথায় ঢোকেনা তাই মহেশ বাবুর ওপরে সব ছেড়ে দেয়। মহেশ বাবু প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে সব কাগজ পত্র দেখে দানাকে বলে, “হ্যাঁ, সব ঠিক আছে। তুই সাক্ষর করে দে।”

মহেশ বাবু পড়ে জানিয়ে দেন যে দুশো কোটি টাকার বিনিময়ে মোহন খৈতান নিজের তিন খানা ছোট আবাসন প্রকল্প, দুই খানা বড় মাপের আবাসন প্রকল্প আর একটা পাঁচ তারা হোটেলের নির্মাণের প্রকল্প দানার কাছে বিক্রি করছে। মোহনের সাথে সাথে দানা মাথা নাড়ায়, “হ্যাঁ।”

সম্পূর্ণ লেনদেন আলোচনা সাক্ষর সব কিছু ক্যামেরা বদ্ধ করে দানা, ভবিষ্যতে অনেক কাজে লাগবে এই ভিডিও। মোহনের সাথে হাত মিলিয়ে সাক্ষর করে দেয় দানা। মোহন ওকে বারেবারে মনে করিয়ে দেয় ওর প্রতিশ্রুতি। দানা মিচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, শুধু মাত্র নয়না এর পরিচালিকা। নয়না ঠিক থাকলে দানাও ঠিক। সেই কথা শুনে মোহন বাঁকা হাসি দেয়। মোহন বেরিয়ে যাওয়ার পরেই দানা চুপচাপ অনেকক্ষণ চেয়ারে বসে থাকে। বিশ্বাস করতে পারে না কিছুতেই যে সাড়ে পাঁচশো কোটি টাকা শুধুমাত্র এক ছলনাময়ীর মুখের কথায় ওর নামে করে দিয়েছে মোহন। এইবারে নিশ্চয় মোহন আর বিমান ওর পেছনে লেগে থাকবে। কতক্ষণে দানা নিজের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাপ্পা নস্কর নামক কাঁটাকে ওদের পথ থেকে চিরতরে সরিয়ে দেবে আর বিমান আর মোহন মিলে এই এলাকা শাসন করবে।

সেদিন বিকেলে বাড়িতে বসে রুহিকে নিয়ে ইংরেজি পড়াচ্ছিল দানা, “মা, বলো এ ফর এপেল...”

রুহি মাথা নাড়ায়, “নান্না নান্না... কারতুন দেখব।”

দানা শত চেষ্টা করে, সামনে একটা নার্সারি স্কুলে এইবারে ভর্তি করিয়ে দিতে হবে, “বলো সোনা, এ ফর এপেল।”

রুহি নাছোড়বান্দা, “আগে কারতুন তা-পয়ে।”

দানা রুহির সামনে হাতজোড় করে, “প্লিস মা শুধু এইটুকু পড়ে নে তারপরে কার্টুন দেখতে দেবো।”

রুহি ওর “ডাডা”র গালে চুমু খেয়ে আদর করে বলে, “প্লিস ডাডা, ইত্তু কারতুন তা-পয়ে।”

রুহিকে বকাঝকা করা দুরের কথা ওর সাথে এমন কি উঁচু গলায় কথা পর্যন্ত বলে না দানা, পাছে যদি কোনোদিন মহুয়া এটা ভেবে বসে যে হেতু রুহি দানার সন্তান নয় তাই ওর ওপরে স্নেহ কম। তবে মহুয়া মনে প্রানে জানে, দানার রুহি অন্ত প্রান, বাবারা একটু মেয়েদের প্রতি বেশি সদয় হয়ে থাকে।

কলিং বেলের আওয়াজ শুনে পড়াশুনা শিকেয় ওঠে রুহির। এইবারে “ডাডা” ওকে ছেড়ে দেবে আর রুহি মজাসে “কারতুন” দেখতে পারবে। স্টাডি থেকে মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে দেখে ফারহান। অনেকদিন পরে দেখা, ইদানিং বাপ্পা নস্করের কাছে আসা যাওয়া কমে গেছে তাই দেখা সাক্ষাৎ কমে গেছে। মদনার দোকানে আর সেই আড্ডা আলোচনা সভা আর বসে না, শক্তি বলাই নিজের কাজে ফিরে গেছে, তবে নাসির আক্রাম এখন নয়নার ওপরে নজর রেখে চলেছে। কখন কি ঘটে প্রত্যকে মিনিটের খবর দানার কাছে ঠিক সময়ে পৌঁছে যায়।

ফারহান ওকে দেখে হেসে বলে, “কি রে শালা” বলেই রুহিকে দেখে থেমে যায়।

এতদিনে “ডাডা”র বন্ধুরা ওর বন্ধু হয়ে গেছে। রুহি দৌড়ে ওর কাছে গিয়ে নালিশ করে, “ডাডা কারতুন দেত্তে দিত্তে না।”

ফারহান ওকে কোলে নিয়ে বলে, “আচ্ছা ডাডাকে বকে দেব।” তারপরে হেসে দানাকে বলে, “বেশ মেয়ে নিয়ে পড়াশুনা করছিস। ম্যাডাম কোথায় রে?”

মহুয়া ওর গলা শুনে বসার ঘরে ঢুকে প্রশ্ন করে, “কি ব্যাপার বিয়ে শাদি কবে তোমার?”

ফারহান হেসে উত্তর দেয়, “এই দুই সপ্তাহ পরে। আপনার কাছে একটা অনুরোধ আছে।”

মহুয়া আর দানা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে, ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে?”

ফারহান মহুয়াকে বলে, “এই একটু কেনাকাটা করতে সাহায্য করতে হবে আপনাকে। মানে আম্মি আর ভাবীজান ঠিক পেরে উঠবে না।”

মহুয়া হেসে বলে, “সে আর বলতে। আচ্ছা এখন বসো। কাল থেকে জারিনাকে নিয়ে তোমার বিয়ের বাজারে বেরিয়ে পড়বো।”

মহুয়া কাজের মেয়েটাকে পানীয় আর খাদ্য নিয়ে আসতে বলে। ওরা বিয়ের গল্পে, জারিনার গল্পে মেতে ওঠে। বেশ কিছু পরে ফারহান দানাকে একপাশে ডেকে বলে, “এই একটু কথা ছিল রে তোর সাথে।”

দানা প্রশ্ন করে, “বল না কি হয়েছে?”

ফারহান এদিক ওদিক তাকায়, মনের মধ্যে বিশাল দ্বিধা বোধ। দানা ওর কাঁধ চাপড়ে অভয় দিয়ে মনের দ্বিধা কাটাতে অনুরোধ করে। ফারহান গলা নামিয়ে বলে, “কিছু টাকা ধার দিতে পারবি, মানে এই এক লাখের মতন। টাকা একটু কম পড়ছে রে।”

দানা হেসে ফেলে। ঠিক পেছনে মহুয়া দাঁড়িয়ে ছিল আর ওদের কথা শুনে ফেলে। মহুয়া হেসে ওকে বলে, “না গো ফারহান আমরা বড় গরীব মানুষ। আমাদের কাছে তোমাকে ধার দেওয়ার মতন টাকা সত্যি নেই।” ফারহান কাঁচুমাচু মুখ করে একবার দানার দিকে তাকায় একবার মহুয়ার দিকে তাকায়। মহুয়া হেসে উত্তর দেয়, “তোমার বিয়ের খরচ পাতি আন্দাজ কত লাগবে?”

ফারহান নির্বাক হয়ে যায়, কি বলবে ভেবে পায় না। মহুয়ার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি হটাত ঝাপসা হয়ে আসে। আমতা আমতা করে মহুয়াকে বলে, “না ম্যাডাম, এ কথা নয়, মানে।”

দানা ওর পিঠে কষে এক চাঁটি কষিয়ে বলে, “বোকাচোদা এই কথা বলতে তোর এত দেরি লাগে। শালা বের হ বাড়ি থেকে, কুত্তা এমন ঝ্যাঁটা পেটা করবো বাল জারিনার...” বাক্য শেষ করল না কারন পেছনে মহুয়া দাঁড়িয়ে না হলে বলে দিতো জারিনার যোনির মধ্যে ঢুকে পড়তে।

মহুয়া ওকে বলে, “আমি আরো একটা কথা ভেবেছিলাম।” দানা আর ফারহান দুইজনেই ওর দিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এই বিষয়ে দানার সাথে এতদিন কোন আলোচনা করেনি মহুয়া। মহুয়া হেসে বলে, “হানিমুনে মরিশাস যাবে না ব্যাঙ্কক যাবে?”

ফারহানের চোখ জোড়া উপচে আসে, “না না ম্যাডাম এটা আমি নিতে পারব না।”

মহুয়া হেসে বলে, “তুমি নাকি এক কালে জিতকে দুই হাজার টাকা ধার দিয়েছিলে? ভেবে নাও এই টাকা সেই ধারের সুদ।”

দানা স্মিত হেসে বলে, “ভাই তুই আমাকে যদি ধরে না আনতিস তাহলে এতদিনে আমি হারিয়ে যেতাম রে।”

মহুয়া সমস্বরে বলে, “স্টেসান থেকে ধরে নিয়ে এসেছিলে বলে আমি ওকে খুঁজে পেয়েছি ফারহান। প্লিস না কোরো না।”

ফারহান না করতে পারে না। মহুয়া একটা দুই লাখ টাকার চেক কেটে ফারহানের হাতে ধরিয়ে দেয়, ফারহান কি করবে বুঝতে পারে না, শেষ পর্যন্ত ওদের জোরাজুরিতে চেক পকেটে নিয়ে নেয়।

পরেরদিন সকালেই গাড়ি নিয়ে রুহিকে সঙ্গে নিয়ে মহুয়া বিয়ের কেনাকাটা করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। ফারহান আগে থেকেই জারিনাকে বলে দিয়েছিল মহুয়ার সম্বন্ধে তাই মুখ ফসকে কিছু বলে না, যদিও মহুয়া সব বিষয়ে জানে। দানা নিজের কাজে খুব ব্যাস্ত, কুড়ি খানা ছোট আবাসন প্রকল্পের কাজ একসাথে চলছে, সেই সাথে দুটো বড় আবাসনের কাজ আর একটা বড় পাঁচ তারা হোটেলের নির্মাণ। নিঃশ্বাস ফেলা সময় নেই ওর কাছে। মাঝে মাঝে মহেশ বাবুর কাছে যায়। মোহনের সাথে নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ হয়। তবে সেদিনের পরে সিমোনের সাথে দেখা হয় না আর। সিমোনের কাছে দানার পুরানো ফোন নাম্বার ছিল তাই আর ফোন করতে পারে না, আর দানাও আগ বাড়িয়ে সিমোনেকে ফোন করেনি। পাছে ওদের মেলামেশা কারুর চোখে পড়ে যায়। তবে এখন বুক ঠুকে চলতে দ্বিধা বোধ নেই, যদি সিমোনের সাথে দেখা করার থাকে তাহলে ফোন করে নেবে। একে বারে মোহনের সামনেই দেখা করার সুযোগ শুধু মাত্র একটু গা বাঁচিয়ে চলা এই আর কি।

হোটেলের কাজের সাইটে দানা গিয়ে দেখে যে সিমোনে উপস্থিত। কি ব্যাপার এইখানে কি করছে সিমোনে? দানাকে দেখে আময়িক হেসে এগিয়ে আসে। পাশেই স্বামী মোহন তাই দানা সংযত হয়ে যায়।

মোহনের সাথে হাত মিলিয়ে হেসে বলে, “কাজের অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্ট, না আরো কিছু করবো?”

মোহন হেসে উত্তর দেয়, “না না এই দুই সপ্তাহে অনেকখানি হয়ে গেছে দেখছি।”

দানা চারদিক দেখে মাথা নাড়ায়, ভিত আগে থেকেই তৈরি ছিল, পিলার তোলা শুরু হয়ে গেছে। মোহন গলা নামিয়ে বলে, “একবার আপনার সাথে একটু অন্য বিষয়ে আলচনা করার ছিল। কাল বিকেলে একটু সময় করে একবার আমাদের বাগান বাড়িতে আসবেন। শুধু আমি আপনি আর বিমান।”

দানা বুঝে যায় কোন দুরাভিসন্ধির বিষয়ে আলোচনা করবে মোহন। কাজ কর্ম সেরে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায়। বাড়ি ঢুকে দেখে এক মেলা বসেছে। ফারহান, নাফিসা, নাফিসার স্বামী তাবিশ, সবাই বাড়িতে উপস্থিত। বসার ঘরে মনা পিন্টু সেই সাথে শক্তি বলাই। ঘরের মাঝে টাল করে জামা কাপড়, নাফিসার জন্য তুঁতে রঙের দামী একটা শাড়ি, ফারহানের জন্য দামী সাদা রঙের শেরওয়ানি। দেখে মনে হল মহানগরের দোকান খালি করে দানার বসার ঘরে উপস্থিত। বিয়ের আনন্দে সবাই মেতে। পিন্টু আবার কাজের মেয়ে মণির সাথে গল্প জুড়ে দিয়েছে। মনা অনেকগুলো বেলুন ফুলিয়ে ঘর ভর্তি করে দিয়েছে আর রুহির সেকি খেলা সেই বেলুন নিয়ে। এই ভিড়ে দানার চোখ খুঁজে বেড়ায়, কোথায় মহুয়া।

তৃষ্ণার্ত চাতকের মতন মুখখানি করে ফারহানকে জিজ্ঞেস করে, “তোরা কখন এলি রে?”

হেহে করে হেসে ফেলে ফারহান, “অনেক ক্ষণ এসেছি রে। তোকে দেখে না ঝড়োকাকের মতন মনে হচ্ছে।”

রুহিকে জিজ্ঞেস করে দানা, “মাম্মা কোথায়?”

রুহির কানে কি আর সেই কথা যায়? বেলুন নিয়ে খেলতে ব্যাস্ত, ডাডা তখন কে চেনে। শুধু মাত্র রাতে ডাডাকে আর মাম্মাকে পাশে না পেলে মনে পড়ে তা ছাড়া সারাদিন মনা আর পিন্টু।

রুহির হয়ে নাফিস উত্তর দেয়, “জারিনার লেহেঙ্গা পছন্দ হচ্ছে না তাই এখন ঘুরছে। একটু আগে ফোন করেছিলাম, হয়তো এখুনি চলে আসবে।”

ফারহান ওকে টেনে একপাশে নিয়ে গিয়ে দুই হাত ধরে বলে, “বাঁড়া তোকে কি বলে ধন্যবাদ জানবো ভেবে পাচ্ছি না রে। ম্যাডাম পারলে সারা বাজার কিনে আনে।”

দানা বসার ঘর দেখে সেটা বুঝে গেছিল। মন ছটফট করছে মহুয়াকে দেখার জন্য। বিকেলে মোহন আর সিমোনের সাথে দেখা হয়েছে, একটা ভুয়ো চক্রান্ত ভাবতে হবে, না হলে কাল কি বলবে ওদের সামনে। মহুয়া না আসা পর্যন্ত বুকের মাঝে চাপা উত্তেজনা বজায় থাকে। এক ঘন্টা পরে, বাজার মাথায় করে জারিনা আর মহুয়া ঘরে ফেরে। ওদের হাতেও কাপড় জামার ব্যাগ। জারিনা নিজের পছন্দ মতন লাল রঙের লেহেঙ্গা কিনে বেশ খুশি।

ঘরে ঢুকেই মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়, “আপনি সত্যি পারেন বটে।”

দানা অদুরে দাঁড়িয়ে মহুয়াকে দেখে যায়। নিয়মিত শরীর পরিচর্যা করার ফলে দিনে দিনে ওর যৌবনের ডালি ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। শাড়ির পরতে পরতে ঢাকা নধর দেহ পল্লব ওকে কাছে ডাকে। দুই চোখের ভাষা, “কি হল তোমার?” দানা মাথা দোলায়, “কিছু না। পরে বলব।” কেনা কাটা বাজার বিয়ের মাতামাতি অনেকক্ষণ চলে। এতজন লোকের খাওয়া দাওয়া, নাফিসা আর জারিনা রান্না ঘরে ঢুকে পড়ে। জানে মহুয়া নিরামিষাশী তাই রান্না নিরামিষ হয়।

রাতের খাওয়া পরে সবাই চলে যাওয়ার পরে দানা আর মহুয়া বসার ঘরে বসে। দানা জানায় বিকেলে মোহন আর সিমোনের সাথে দেখা হয়েছিল। আগামী কাল মোহনের বাগান বাড়িতে যেতে হবে। দানার বিশ্বাস মোহন আর বিমানের সাথে বাপ্পা নস্করকে খুনের চক্রান্ত করা হবে। দানার ভুমিকা এইখানে অনেক বড়, নয়নার বিস্বাসভাজন ব্যাক্তি দানা। ওকে একটা ভুয়ো নিখুঁত চক্রান্ত তৈরি করতে হবে যাতে ওদের সন্দেহ না হয়। তবে আসল দিনের আগেই বাপ্পা নস্করকে সাবধান করে দেবে যাতে বাপ্পা নস্কর সেই জায়গা থেকে সরে যায়। তারপরে এই চক্রান্তের খবর বাপ্পা নস্করের কানে দিয়ে দেবে। ব্যাস, খেলা শুরু। বিমান, মোহন, সিমোনে নয়না একে একে সবাই ফাঁদে পড়ে যাবে। পারলে রমলার সাহায্যে এই চক্রান্তের খবর টিভিতে, খবরের কাগজের শিরোনাম করে দেবে।

মহুয়া জিজ্ঞেস করে, “এই গেল পরের কথা কিন্তু কাল কি বলবে ওদের সামনে?”

দানা জানে না কি করবে তাই উত্তর দেয়, “কাল বিকেলে যেতে যেতে ভাবা যাবে।”
 
পর্ব তেরো – চৌষট্টি ছক (#10-100)

পরের দিন বিকেলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে দানা। এখন পর্যন্ত কারুর সন্দেহের ঘেরে আসেনি দানা তাই মহুয়া একটু নিশ্চিন্ত, তবুও ভয় লাগে ওর। রুহিকে রীতিমত কোলের মধ্যে আঁকড়ে রুদ্ধশ্বাসে ওকে বিদায় জানায়। মনা আর পিন্টু ওর সঙ্গ নিতে চায় কিন্তু দানা বারন করে দেয় কারন এই চক্রান্ত শুধু মাত্র ওর একার, অন্য কাউকে নিয়ে গেলে ওদের সন্দেহ হয়ে যাবে।

চুপচাপ একা একা গাড়ি চালাতে চালাতে দানা নিজের ভুয়ো চক্রান্তের অঙ্ক কষে। ওদের এমন কিছু বলতে হবে যাতে ওরা সবাই দানার কথা বিশ্বাস করে নেয় আর নয়নাকে একটু মাথায় করে রাখতে হবে তাহলে ভবিষ্যতে অনেক কাজ হাসিল করতে পারবে। নয়নাকে জালে একদম শেষে জড়াতে চায় দানা। নারী মাংসের লোভে অনেক কাজ হাসিল হয় পৃথিবীতে আর সেটাই দানা ওকে দিয়ে করাতে চায়।

বাগান বাড়িতে ঢুকতেই বাগানে বিমান চন্দ আর মোহন খৈতানকে দেখতে পায়। ওকে দেখেই দৌড়ে একটা দারোয়ান ওর গাড়ির দরজা খুলে দেয়। দানা দারোয়ানের হাতে গাড়ির চাবি দিয়ে বাগানের মধ্যে হেঁটে এগিয়ে যায়। মোহন আর বিমানের সাথে হাত মেলায়। স্মিত হেসে কুশল আদান প্রদান, কাজের কথা ইত্যাদি চলে কিছুক্ষণ। দানার কাজে মোহন বেশ খুশি, এই কয়দিনে সুনিপুণ হস্তে কাজ এগিয়ে চলেছে। যদিও এর কৃতিত্ব, মহুয়া আর মহেশ বাবুর। ওরা পেছনে না থাকলে দানা কিছুই করতে পারতো না। মহেশ বাবুর ব্যাবসায়িক বুদ্ধি আর মহুয়ার পরিচালনা। মেয়েরা একটা বাড়ি যেমন নষ্ট করতে পারে তেমনি এক পুরুষের জীবন তৈরি করতে পারে আর সেই মহামায়া রূপী নারী, মহুয়া।

মদের গেলাসে চুমুক দিয়ে বিমান ওকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা কি ভাবলে ওই ব্যাপারে?”

দানা খানিক চিন্তা করে উত্তর দেয়, “নয়না থাকলে একটু ভালো হতো।”

বিমান আর মোহন হেসে ফেলে, “তুমি যে নয়না ছাড়া এক পা চলো না দেখছি।”

দানা মুচকি হেসে বলে, “না না, সেটা নয় মানে ওর সাথে অনেকদিন আগে আলোচনা হয়েছিল তাই ও থাকলে একটু ভালো হতো। যাই হোক নয়না যখন নেই তাহলে আর কি করা যাবে। আমার কাছে একটা পরিকল্পনা আছে একদম নিখুঁত। চারদিন পরে জঙ্গিঘাটে বাপ্পা নস্করের একটা পথ সভা আছে, আর তার তিনদিন পরে মনোহরপুরে একটা মিটিং মিছিল আছে। বাপ্পা নস্করকে মারতে হলে আড়ালে আবডালে মারলে হবে না। আজকাল পুলিসের তদন্ত অনেক আধুনিক হয়ে গেছে, ঠিক শুঁকে শুঁকে খুঁজে বের করবে। তাই খুন একদম সামনা সামনি ভিড়ের সাহায্যে করতে হবে। ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে গেলে ধরা অসম্ভব, কিন্তু একা একা কাউকে খুন করলে অনেক ছোট ছোট সুত্র অজান্তেই থেকে যায়। ভিড়ের আড়ালে সেই সুত্র হারিয়ে যাবে। ভিড়ের মধ্যে আমার লোক লুকিয়ে থাকবে। বাপ্পা নস্করের দলের পতাকা নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে ওর দিকে এগিয়ে যাবে। যেই বাপ্পা নস্কর গাড়ি থেকে নামবে ঠিক তখনি ওকে ঘিরে অনেক লোক দাঁড়িয়ে যায়। সেই ভিড়ের মধ্যে আমার লোক লুকিয়ে ওর বুক লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে ওইখান থেকে কেটে পড়বে। চিন্তা নেই আওয়াজ হবে না, পিস্তলে সাইলেন্সার লাগানো থাকবে। যতক্ষণে বাপ্পা নস্করের জামা লাল হবে ততক্ষণে আমার ছেলে ওইখান থেকে পালিয়ে যাবে।”

বিমান আর মোহন মুখ চাওয়াচাওয়ি করে, “হুম খুব ভালো ষড়যন্ত্র ফেঁদেছে। তবে তোমার লোক তোমার বিশ্বাসী নাকি শেষ মুহূর্তে পালিয়ে যাবে?”

দানা হেসে বলে, “না না, খুব বিশ্বাসী ছেলেকে দিয়ে আমি কাজ করাবো। কাজ শেষ হওয়ার পর মুহূর্তে ওই ছেলে শহর ছেড়ে চলে যাবে। তবে প্রথম মিছিলে এই কাজ করবো না, ওই দিন সবকিছু জরিপ করবো। দ্বিতীয় মিছিলে ওর ওপরে হামলা করা হবে।”

বিমান মাথা দোলায়, “হ্যাঁ হ্যাঁ একদম ঠিক কথা। আগে থেকে ওর চাল চলন ভালো ভাবে জরিপ করে নিতে হবে।”

মোহন হেসে বলে, “তাহলে পরের সপ্তাহে একসাথে কাজ করা যাবে?”

দানা হেসে মাথা দোলায়, “সব ঠিক ঠাক থাকলে পরের সপ্তাহ কেন, যেদিন ওর চিতা জ্বলবে সেদিন আমরা এইখানে আগুন জ্বালিয়ে আয়েশ করে মেয়েদের নাচ দেখতে দেখতে কাজের কথা সারবো।”

মোহন আর বিমান একসাথে হেসে ফেলে দানার কথা শুনে। মোহন চোখ টিপে মিচকি হেসে দানাকে প্রশ্ন করে, “আপনি মিস্টার মন্ডল বড় রসিক মানুষ।”

দানা বাঁকা হাসে, হ্যাঁ অনেক রসিক, একসময়ে ওর বৌকে এই বাড়ির শোয়ার ঘরে অনেকবার সঙ্গম সম্ভোগ সুখ প্রদান করেছে আর সেই সাথে নয়নার সাথে কম বার সঙ্গম করেনি।

বিমানের কান একটু লাল হয়ে যায়, মোহনের কাঁধ চাপড়ে হেসে বলে, “তুই শালা হারামি। কাকে আনা যায় বলতো সেইদিন?”

দানা বলতে যাচ্ছিল নয়নাকে আনলে কেমন হয়? কিন্তু থেমে যায়। মোহন বলে, “দেখি একটা সুন্দরী মডেল আছে, বেশ ভালো নাচে মাইরি। বিশেষ করে ন্যাংটো নাচ বেশ ভালো ভাবেই করে।”

কাজ অনেকটাই হাসিল হয়ে গেছে, এইবারে আসল তথ্য জানতে হবে। কে আদেশ দিয়েছিল মৈনাককে খুন করতে, বিমান না সিমোনে, আসল চক্রান্তকারী কে? দানা একটু চিন্তিত ভাব দেখায়। ওর চিন্তিত চেহারা দেখে বিমান জিজ্ঞেস করে, “কি হল কি এত ভাবছ?”

দানা মিচকি হেসে বলে, “না মানে, একদিন রাতে নয়নার বাড়িতে একটা চম্পাকলি মালকে খুব লাগিয়ে ছিলাম।”

বিমান কিছুক্ষণ চিন্তা করে হেসে বলে, “আচ্ছা আচ্ছা বুঝেছি। ওই সাংবাদিক মেয়েটার কথা বলছো তাই তো।”

বিমান তাহলে সঙ্গীতাকে চেনে, সঙ্গে সঙ্গে দানার মাথা গরম হয়ে যায়। চোখের সামনে সঙ্গীতার জল ভরা চোখ ভেসে ওঠে। বিমান হাসতে হাসতে মোহনকে বলে, “তোর মনে আছে মনু, ঐযে কি নাম বেশ। শালীকে মারতে গেলাম কিন্তু ওর পেছনে বসা ছেলেটা শেষ পর্যন্ত মরে গেল।”

মোহন একটু ভেবে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, সঙ্গীতার কথা বলছিস তাই তো?”

দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, কোমরের পেছনে হাত দিয়ে পিস্তল চেপে ধরে। সারা শরীর দাউদাউ করে বিতৃষ্ণা আর ক্রোধে জ্বলে ওঠে, পারলে এইখানে ওদের খুন করে ফেলে। কোন রকমে মাথা ঠাণ্ডা করে জিজ্ঞেস করে, “কি রকম পরিকল্পনা করেছিলেন বিমান বাবু? আসল মানুষকেই মারতে পারলেন না।”

বিমান ওর দিকে তাকিয়ে বলে, “সত্যি বলতে কি জানো, সিমোনের পরিকল্পনায় খুঁত ছিল না। শালা ওই লরির ড্রাইভার সব কেঁচিয়ে দিল। আমরা ভেবেছিলাম যে ওরা বাইকে থাকবে আর পেছনে সঙ্গীতা বসে থাকবে। কিন্তু সেদিন বাইকে নয় সঙ্গীতার স্কুটিতে ওরা বেরিয়েছিল। ধাক্কা ঠিক জায়গায় মারা হয়েছিল কিন্তু ফলাফল উল্টে গেল।”

দানার মাথার শিরা ফেটে পড়ার যোগাড়, মাথায় রক্ত উঠে যায়। আরো এক গেলাস মদ আনিয়ে ঢকঢক করে গিলে ফেলে। এই রক্ত চক্ষু যে ক্রোধের নয়, সুরার সেটা ওদের বুঝাতে হবে না হলে মুশকিল। চেহারায় মেকি হাসি ফুটিয়ে বলে, “মালটা কিন্তু জম্পেশ ছিল আর যাই বলেন। সেদিন সারা রাত ধরে চুদেছিলাম জানেন।”

বিমান আর মোহন একসাথে অবাক হয়ে ওকে বলে, “আচ্ছা তাই নাকি? কোথায়?”

দানা হেসে বলে, “নয়নার বাড়িতে আবার কোথায়।”

মোহন ওর কাঁধ চাপড়ে চোরা হাসি দিয়ে বলে, “তাহলে সেই রাতে নয়নাকেও ডেকে নেওয়া যাবে কি বলেন মিস্টার মন্ডল। না না, অন্য কাউকে চাইলে বলে দেন, যোগাড় করে দেব।”

মদ খেয়ে আরো কিছুক্ষণ গল্প গুজব করে বাড়ি ফিরে আসে দানা। বাড়িতে মহুয়া রুদ্ধশ্বাসে দানার অপেক্ষায়। মোহনের বাগান বাড়ি থেকে বেরিয়েই দানা ফোন করে মহুয়াকে জানিয়ে দেয় সব ঠিক আছে। সেই শুনে মহুয়া স্বস্তির শ্বাস নেয়। বারেবারে এই রকম জালে পা দেয়, যদি কোনোদিন কোনোভাবে কারুর সন্দেহ হয়ে যায় তাহলে ওর রক্ষে নেই। ফিরে এসে রাতের খাওয়ার সময়ে মহুয়াকে সব খুলে বলে। মহুয়া জিজ্ঞেস করে আসলে দানা কি করতে চায় সত্যি কি বাপ্পা নস্করের ওপরে হামলা করবে না শুধু মাত্র একটা নাটক রচনা করবে? দানা জানায়, বাপ্পা নস্করের ওপরে একটা নাটকীয় ভুয়ো হামলা করবে যাতে বিমানের সন্দেহের বাইরে থাকে। তবে আগে থেকে ফারহানের মাধ্যমে বাপ্পা নস্করকে সাবধান করে দেবে। সত্যি কারের নয় মিথ্যে গুলি চলবে আর সেটা অন্য কাউকে লাগবে। আর একবার এই হইচই শুরু হয়ে গেলে, বাপ্পা নস্করের কাছে চলে যাবে দানা, নয়নার আর বিমানের ছবি নিয়ে। খেপা বাপ্পা নিশ্চয় বিমান আর নয়নাকে শেষ করে দিতে উদ্যত হবে। তবে শুধু মাত্র বিমানের মৃত্যু হলে ভালো হয়। নয়নাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে ওকে দিয়ে মোহন আর সিমোনেকে মারতে পারবে।

সকাল থেকে মেঘলা, বর্ষার ফলে আবাসনের কাজ বেশ ধীরে চলছে। ফারহানের বিয়ের প্রস্তুতি জোর কদমে। মহুয়া আজকাল অফিসে কম আর বাজারে বেশি যায়। রুহি কোলে জারিনা আর নাফিসাকে নিয়ে বিয়ের কেনাকাটা করতে ব্যাস্ত। বিয়ের কয়েকদিন আগে থেকে ফারহান ছুটি নেবে। সেদিন দানা খুব ব্যাস্ত ছিল একটা আবাসনের কাজে। ওই মেঘলা আকাশ আর মাথায় বৃষ্টি নিয়েই প্রতিদিনের মতন জারিনা আর নাফিসাকে নিয়ে মহুয়া বেরিয়ে পড়েছে বিয়ের কেনাকাটা সারতে। সেদিন আবার জঙ্গিঘাটে বাপ্পা নস্করের প্রথম নির্বাচনী পথ সভা। বাপ্পা নস্কর অবশ্য আগের দিন দানাকে ফোনে জানিয়েছিল ওর সাথে থাকার জন্য, কিন্তু নিজের নাম কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত করতে চায় না। আসলে বিমানকে এখুনি খেপাতে চায় না দানা তাই কাজের অছিলায় আর যায়নি। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, চার ট্রাক ইঁট আসার কথা ছিল, এখনো এলোনা। ওইদিকে আগামী কাল শ্রমিকের মাইনের তারিখ, সি এ কে মহুয়া কি চেক কেটে দিয়েছে? প্রথমে সি এ কে ফোন করে জেনে নেয় দানা, মহুয়া সকালেই কেনাকাটা করতে বের হবার আগে চেক কেটে দিয়ে গেছে। একটু শান্তি পায়, কিন্তু ইঁটের ট্রাকের কি হলো? সুপারভাইজারকে ডেকে একটু ধমক ধামক দিতে হবে না হলে চলছে না। মোহনের কাজ না হয় পরে করা যাবে কিন্তু বাকিদের কাজ গুলো ফেলে রাখলে চলবে কি করে?

ঠিক সেই সময়ে মহুয়ার ফোন। চাপা আতঙ্কে চেঁচিয়ে ওঠে ওইপাশ থেকে, “জিত তুমি কোথায়? এখুনি হস্পিটালে এসো।”

দানা ভয় পেয়ে যায়, বুক কেঁপে ওঠে, কার কি হলো? চাপা উৎকণ্ঠায় জিজ্ঞেস করে, “রুহি ঠিক আছে? কার কি হয়েছে?”

মহুয়ার কণ্ঠস্বর থরথর করে কাঁপছে, “ফারহানের গুলি লেগেছে তুমি এখুনি হস্পিটালে এসো।”

ওই কথা শুনে দানার গা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়, কেষ্টর পরে ওর প্রিয় বন্ধু ফারহান। কে গুলি মারলো ওকে? আজকে বাপ্পা নস্করের সাথেই ছিল ওই পথ সভায়। গাড়ি তীর বেগে হস্পিটালে ছুটিয়ে দেয় দানা।

দৌড়াতে দৌড়াতে ওপরে উঠে সবাইকে খোঁজে। মনা আর পিন্টুকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে। ছোট্ট রুহি, মনাকে আঁকড়ে ধরে একরকম বুকের মধ্যে লুকিয়ে। চারপাশে এত লোক দেখে আতঙ্কে জড়সড় হয়ে গেছে রুহি। দানাকে দেখেই “ডাডা ডাডা” বলে কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কোনোরকমে মেয়েকে বুকের মধ্যে লুকিয়ে চারপাশ তাকিয়ে দেখে। পুলিস মানুষে লোকে লোকারণ্য। একপাশে ইন্দ্রনীল এবং বাপ্পা নস্করের দলের বেশ কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে। জারিনা মহুয়ার কোলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। দানা মহুয়াকে দেখে এগিয়ে আসে। মহুয়ার চেহারা লাল হয়ে গেছে, চোখ জোড়া ছলছল কিন্তু জল ফেলতে পারছে না কেননা কোলে অজ্ঞান জারিনা। বেদনায় নাফিসার চোখের জল উপচে পড়ছে।

মহুয়াকে জিজ্ঞেস করে কি ভাবে ওরা খবর পেল। মহুয়া জানায়, জারিনাকে নিয়ে কেনাকাটা করতে সকাল থেকেই ব্যাস্ত ছিল। দুপুরের পরে একটা রেস্টুরেন্টে বসে সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করার সময়ে জারিনার কাছে ইন্দ্রনীলের ফোন আসে। সেই শুনেই ওরা দৌড়ে আসে হসপিটালে আর তারপরে দানাকে মহুয়া ফোন করে জানায়।

দানা ইন্দ্রনীলের কাছে যায়, “ফারহানের কি করে গুলি লেগেছে?”

ইন্দ্রনীল বলে, “ফারহানের বুকে আর কাঁধে গুলি লেগেছে।” ইন্দ্রনীল পুরো ঘটনা খুলে বলে দানাকে। জঙ্গিঘাটে পথ সভা ছিল বাপ্পা নস্করের, ফারহান বাপ্পা নস্করের অনেকদিনের ড্রাইভার, বিশ্বাসী লোক। ওর সাথে সাথেই থাকে। অন্যদিন নিতাই সামনে বসে আর বাপ্পা নস্কর ইন্দ্রনীলের সাথে গাড়ির পেছনে বসে। তবে সেদিন পথ সভার জন্য সামনেই বসেছিল বাপ্পা নস্কর। গাড়ি মঞ্চের বেশ কিছুদূরে এসে থামে। গাড়ি থামতেই সামনে থেকে গাড়ির কাঁচ ভেদ করে দুটো গুলি এসে লাগে ফারহানের বুকে আর কাঁধে। ইন্দ্রনীল হলফ করে বলতে পারে ওই গুলি বাপ্পা নস্করকে খুন করার জন্য মারা হয়েছিল কিন্তু ফারহান বসে থাকায় ওই গুলি ফারহানের গায়ে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে অন্য গাড়ি করে ফারহানকে হস্পিটালে নিয়ে আসা হয়।

হাত মুঠি হয়ে যায় দানার। মাথার রক্ত টগবগ করে ফুটতে শুরু করে দেয়। প্রচন্ড বেদনায় শরীর কুঁকড়ে যায়, কেউ যেন ওকে একের পর এক চাবুকের আঘাত করে চলেছে। চক্রান্তের দিন আজকে নয় আর সেটা দানা করবে, বিমানের করার কথা ছিল না। বিমান নিজে থেকে চাল চালতে গেল কেন? ওর পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। একবার বিমানকে হাতে পেলে খুন করে ফেলবে। এটা নিশ্চয় নয়নার চাল। দানার পরিকল্পনার সুত্রপাত নয়নার হাত ধরেই। সেদিন রাতে এই রকমের একটা পরিকল্পনা নয়না ওকে জানিয়েছিল।

দানা জিজ্ঞেস করে, “ফারহান এখন কোথায় আছে?”

ইন্দ্রনীল উত্তর দেয়, “অপারেশান থিয়েটারে নিয়ে গেছে। প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়ে গেছে, জানি না কি হবে।”

চাপা কণ্ঠে দানা গর্জে ওঠে, “ফারহানের কিছু হবে না। ওর কিছু হলে এই মহানগর আমি জ্বালিয়ে দেব।”

দানা জানতে চায় বাপ্পা নস্কর কোথায়? ইন্দ্রনীল জানায়, ওই পথ সভা কয়েক ঘন্টা পরে শুরু হবে তবে ইতিমধ্যে টিভি মিডিয়াতে বাপ্পা নস্কর তার বিরোধী পক্ষদের সাবধান করে দিয়েছে। চরম অস্বস্তিতে এদিক ওদিক পায়চারি করে দানা কিন্তু কিছুতেই স্বস্তি পায় না। ওর গায়ে কেউ যেন গরম ছ্যাঁকা দিয়ে চলেছে। মহুয়ার অবস্থা সঙ্গিন, একদিকে দানার রক্ত চক্ষু মাথা গরম কখন কি করে বসে তার নেই ঠিক। ওইদিকে জারিনা কেঁদে কেঁদে অজ্ঞান হয়ে গেছে। কয়েকদিন পরেই বিয়ে আর তার আগেই এই ঘটনায় জারিনা একদম ভেঙে পড়েছে। সঙ্গীতার সাথে যা হয়েছিল সেটা জারিনার সাথে হতে দিতে পারে না। এর প্রতিশোধ নিতে হবেই আর আজ রাতেই নেবে। যা হবার হবে কিন্তু একটা একটা করে পিস্তলের সব গুলি নয়না আর বিমানের বুকে মাথায় নামিয়ে দেবে।

জারিনার জ্ঞান ফেরে, দানাকে দেখে ডুকরে কেঁদে ওঠে, “একি হল আমার? ফারহান... ফারহান...” বলে বার দুই আঁতকে উঠে আবার মহুয়ার কোলে ঢলে পড়ে।

দাঁতে দাঁত পিষে মহুয়ার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে দানা। মহুয়া ওই চোখের ভাষা পড়ে ফেলে। দানার মাথায় রক্ত চড়ে গেছে। চারদিকে চাপা উত্তেজনা, সবাই শ্বাস আটকে অপারেশান থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে। রুহিকে কোলে নিয়ে নেয় দানা।

রুহি দানার ছলছল চোখ দেখে জিজ্ঞেস করে, “আন্তেলের কি হয়েছে, ডাডা?”

এই নিষ্পাপ শিশুকে কি উত্তর দেবে দানা। মনা আর পিন্টুকে বলে, রুহিকে নিয়ে বাড়ি চলে যেতে। ততক্ষণে মদনা, বলাই শক্তি আক্রাম এরা সবাই খবর পেয়ে হস্পিটালে এসে যায়। শঙ্কর আর রামিজ, ফারহানের আম্মি আর দাদা তাবিশকে নিয়ে পৌঁছে যায়। আরও একবার কান্নার রোল ওঠে। জারিনা আর ফারহানের আম্মিজানের চোখের জল বাঁধ মানে না কিছুতেই।

রুহিকে নিয়ে মনা আর পিন্টু বেরিয়ে যায়। হাতের ঘড়ির কাঁটা আর চলে না। দুই ঘন্টা পরে অপারেশান থিয়েটারের দরজা খুলে যায়। আতঙ্কে আর বেদনায় সবাই উন্মুখ হয়ে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে।

দানা সবার আগে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে, “কেমন আছে ফারহান?”

ডাক্তার উত্তর দেয়, “দুটো গুলি বের করে ফেলা হয়েছে তবে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়ে গেছে। আগামী বাহাত্তর ঘণ্টার আগে কিছুই বলা মুশকিল।”

দানা চাপা গর্জন করে ওঠে, “বলা মুশকিল মানে? ফারহানকে বাঁচাতে হবে ডাক্তার, না হলে এই হস্পিটাল এইখানে দাঁড়িয়ে থাকবে না।”

ওর ওই বেদনা যুক্ত, তীব্র হুঙ্কার শুনে সবাই কেঁপে ওঠে। শঙ্কর দেখে এযে মহা মুশকিল, দানাকে শান্ত না করতে পারলে এখুনি ওই ডাক্তারের টুঁটি চিপে ধরবে। মহুয়া দৌড়ে এসে ওকে টেনে ধরে, “কি হয়েছে, পাগল হয়ে গেছো নাকি তুমি? ডাক্তার বাবু গুলি বের করে দিয়েছেন। বাহাত্তর ঘণ্টার আগে কিছু বলা যাবে না।”

নাকের পাটা ফুলে ওঠে, চোখ জ্বলে ওঠে, প্রচন্ড বেদনায় দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়, “বলা যাবে না মানে? বলতে হবে যে ফারহান উঠে দাঁড়াবে।”

মহুয়া ওকে জড়িয়ে ধরতেই দানা ভেঙে পড়ে, “আমি জানি ফারহান তোমার কাছে কি। ওপর ওয়ালার ওপরে ভরসা রাখো সব ঠিক হয়ে যাবে।”

কিছুক্ষণ পরে চোখ মুছে দাঁতে দাঁত পিষে একবার সবার দিকে তাকিয়ে দেখে দানা। কাকে বিশ্বাস করা উচিত আর কাকে নয়, কিছুই বুঝে উঠতে পারে না। নয়না আর বিমানের কোন দুরাভিসন্ধি নয়তো। জারিনা কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ লাল করে ফারহানের আম্মিজানের কাঁধে মাথা দিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। পাশে নাফিসা, তাবিশকে জড়িয়ে ধরে নিস্তেজ হয়ে গেছে। শঙ্কর রামিজ সবার চোখে উৎকণ্ঠা। মহুয়ার চোখ জোড়া টলটল করছে, একটু টোকা দিলেই উপচে পড়বে।

কোমরে গোঁজা পিস্তলে হাত চলে যায় দানার। দাঁতে দাঁত পিষে মহুয়ার কানে কানে বলে, “আমি একটু আসছি। ফারহানকে আই সি ইউ তে নিয়ে যাওয়ার পরে তুমি বাড়ি চলে যেও।”

ওই রক্তচক্ষু দেখে মহুয়া বুঝতে পেরে ভয় পেয়ে যায়। হাত শক্ত করে ধরে বলে, “এখান থেকে একপা নড়বে না।”

দানা জোরে জোরে মাথা নাড়ায়, “আমার হাতে বাহাত্তর ঘন্টা নেই পাপড়ি। আজ রাতেই ওদের শেষ করে দেব।”

বাইরে তখন মুষলধারে বৃষ্টি, তাও সেই আকাশ ভাঙা বৃষ্টি উপেক্ষা করে দানা বেরিয়ে পড়ে। প্রকৃতি যেমন তান্ডবে মেতেছে, দানার মাথার রক্ত আজ তান্ডবে মেতেছে। মহুয়ার কাতর প্রার্থনা উপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়ে নয়না আর বিমানকে খুন করতে। ওর মাথায় খুনের নেশা, আজ রাতে নয়না বোস, বিমান চন্দ আর মোহন খৈতানের রক্ত পান না করা পর্যন্ত এই তান্ডবের নেশা থামবে না।

গাড়িতে উঠতে যাবে কি তখনি এক অজানা নাম্বার থেকে ফোন আসে ওর কাছে। ওইপাশের অজানা ব্যাক্তি ওকে প্রথমে জিজ্ঞেস করে, “তুই দানা?”

দানা গম্ভির কণ্ঠে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ।”

অচেনা কণ্ঠস্বর ওকে বলে, “আমি জানি ফারহানকে কে খুন করেছে। এক ঘণ্টার মধ্যে হিঙ্গলগঞ্জ ডকে একা চলে আয়।”

দানা কিছু বলার আগেই ফোন কেটে যায়। বারেবারে ওই নাম্বারে ফোন করে কিন্তু ওইপাশ থেকে কোন সাড়া শব্দ আসে না। এটা ঠিক কি হলো ওর সাথে? বিমান আর নয়না আবার নতুন কোন চাল খেলছে? একা আসতে বলেছে মানে এইবারে ওকে মারার চক্রান্ত। পিস্তল দুটি ভালো ভাবে পরীক্ষা করে দেখে নেয়, চার খানা গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন পকেটে। একবার ভাবে বাকিদের জানিয়ে দেবে, কিন্তু একাই মোকাবিলা করতে চায় সবার সাথে।

********** পর্ব তেরো সমাপ্ত *********
 
পর্ব চোদ্দ – রক্তের খেলা (#1-101)

গা হাত পা জ্বলছে দানার, রাগে আর বেদনায় চিড়বিড় চিড়বিড় করে ওঠে ওর সারা শরীর। দুই হাত নিশপিশ করে ওঠে খুনিকে ধরার জন্য। জানতে পারলে সেখানেই ধড় থেকে গলা নামিয়ে দেবে তারপরে কাটা গলার সাথে জিজ্ঞাসাবাদ চলবে। ওর ফোনের রিং আর থামতে চায় না, বারেবারে মহুয়া ফোন করে যায় কিন্তু ওর ফোন উঠালেই বাঁধা পড়ে যাবে দানা। আজকে কারুর ক্ষমতা নেই দানাকে রোখে। হয়তো রুহি থাকলে একমাত্র দানাকে নিরস্ত করা যেতে পারতো। মহুয়ার ফোন করা বন্ধ হয়, শঙ্কর রামিজ অনবরত ফোন করে চলে। গাড়ি চালাতে চালাতে চিড়বিড় করতে করতে সবার মুন্ডপাত করে। একটু পরে নয়নার ফোন আসে, না এই ফোন ওকে উঠাতেই হবে, শালী হারামি কুত্তি শেষ পর্যন্ত কি না ওর বন্ধুকে খুনের প্রচেষ্টা করল? ওর কপালে আজ রাতে মৃত্যু লেখা আছে।

ফোন তুলেই গর্জে ওঠে দানা, “এই শালী খানকী চুদিরবাই মাগী, ফারহান তোর কোন ক্ষতি করেছিল যে তোরা ওকে গুলি করেছিস?”

নয়না থতমত খেয়ে যায়, “তুমি একি বলছো? তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি। মুখ সামলে কথা বলো দানা। মরার কথা বাপ্পা নস্করের আর তুমি নিজেই নিজের বন্ধুকে খুন করে আমাদের নামে দোষ চাপাতে চাইছো?”

এই ছলনায় ভোলার পাত্র নয় দানা তাই উল্টে গর্জে ওঠে, “শালী আমার সাথে নাটক করছিস তুই? খানকী চুদিরবাই মাগী আজকে তোকে মারার আগে চুদে চুদে তোকে হোড় বানাবো তারপরে বিমান আর তোকে একসাথে খুন করবো।”

উল্টে গর্জে ওঠে নয়না, “শোন দানা, ফোন আমি তোমাকে করেছি। যা তা বলে লাভ নেই, আমাদের ওপরে কেন নিজের দোষ চাপাতে চাইছো এখন? আমি জানি তুমি প্রচন্ড ধূর্ত তাই বলে নিজের বন্ধুকে মারবে সেটা ভাবতে পারিনি আমরা। আমরা কেন ফারহানকে মারতে যাবো? ফারহানের গুলি লেগে আমাদের ক্ষতি বেশি হয়েছে দানা। টিভি খুলে দেখো, বাপ্পা নস্কর সমানে বিমান চন্দের মুন্ডপাত করে চলেছে।”

দানা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, “শালী তোদের একদম বিশ্বাস নেই বুঝলি।”

নয়না ওকে শান্ত করে বলে, “বিশ্বাস করো দানা, এই সব তোমার করার কথা, আমাদের নয়। তুমি বাপ্পা নস্করের কাছের লোক, ওর কাছে যাওয়ার বেশি সুবিধে তোমার আমাদের নয়। একটু শান্ত মাথায় চিন্তা করো দানা। বিমান সমানে আমাকে গালাগালি দিয়ে চলেছে, ওইদিকে মোহন থামতে চাইছে না। একি করলে তুমি? সত্যি করে বলতো, কাকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করছো তুমি? আমাদের না বাপ্পা নস্করকে? কেন ফারহানকে শেষ পর্যন্ত গুলি করতে গেলে? তোমার আসল উদ্দেশ্য কি? দেখো দানা, বিমানের কাছে কিন্তু সেই রাতের তোমাদের আলোচনা সব রেকর্ড করা আছে। আমাদের ফাঁসাতে চেষ্টা করলে সেই রেকর্ডিং পুলিসের হাতে তুলে দেব।”

দানার মাথা ভোঁ ভোঁ করে ওঠে, তাহলে কি সত্যি নয়না আর বিমান ফারহানকে গুলি করেনি? কে করেছে ফারহানকে গুলি আর কেনই বা ওকে মারতে চেয়েছে? ওর ভাই তাবিশ কি ফারহান আর নাফিসার গোপন সম্পর্কের বিষয়ে জেনে গেছে আর তাই খুন করার চেষ্টা করেছে? সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে ওর হাতে কিছু নেই, ফারহান তাহলে উচিত শিক্ষা পেয়েছে। তাবিশ তখন হস্পিটালে বসে, ছলছল চোখে স্ত্রী নাফিসাকে প্রবোধ দিয়ে চলেছে। ওই ছলছল চোখ জোড়া কি মিথ্যে কথা বলছে? কিন্তু এই অজানা ফোন তাহলে কে করলো? কি জানে এই অচেনা ব্যাক্তি? একা একা হিঙ্গলগঞ্জ এলাকায় পা রাখা অন্যদের পক্ষে বিপদজনক হলেও দানার জন্য নয়। এই এলাকায় তিন মাস মহেন্দ্র বাবুর কাছে কাটিয়েছে, এই এলাকার অনেকেই ওর চেনা জানা। তাও ঠিক কোথায় যেতে হবে সেটা অজানা। হয়তো নির্জন নদীর পাড়ে ডাকবে ওই অচেনা আগন্তুক। কি করবে কিছু ভেবে পায় না, শক্ত হাতে, কঠিন চোয়ালে গাড়ি ছুটিয়ে দেয় গন্তব্য স্থলের দিকে।

নয়না ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি ভাবছো দানা?”

দানা চাপা কণ্ঠে উত্তর দেয়, “মাথা ভোঁ ভোঁ করছে নয়না, কিছুই বুঝতে পারছি না ফারহানকে কে খুন করতে পারে?”

নয়না জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি হস্পিটালে? মিসেস আর রুহি ঠিক আছে তো?”

দানা উত্তরে বলে একটু কাজে বেরিয়েছে তারপরে ফোন রেখে দেয়। পাকা রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে সরু অলিগলি পেরিয়ে মহেন্দ্র বাবুর বাড়ির দিকে পা বাড়ায় দানা।

ঠিক তখনি ওই আগন্তুকের ফোন আসে, “তুই কি হিঙ্গলগঞ্জ পৌঁছে গেছিস?”

চোয়াল চেপে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ।”

আগন্তুক ওকে নির্দেশ দেয়, দক্ষিন দিকের ভাঙা কালী মন্দিরের চাতালে দেখা করতে। কোমরের পিস্তল আর পায়ের পিস্তল হাতে নিয়ে নেয় দানা। সাইলেন্সার লাগিয়ে স্লাইড টেনে চেম্বারে গুলি নিয়ে তৈরি। দেখা হলে আগে মাথা আর বুক লক্ষ্য করে গুলি করবে তারপরে বাকি কথা। নির্জন নদীর পাড়, ভাঙা কালী মন্দিরের নির্জন চাতাল। নদীর ঠাণ্ডা হাওয়া, মন্দিরের পাশের বট গাছের পাতায় আলোড়ন জাগিয়ে তুলেছে সেই সাথে দানার মনের মধ্যে চূড়ান্ত চাপা উত্তেজনা। এই আগন্তুকের আসল পরিচয় কি? কি জানে এই আগন্তুক? চোয়াল চেপে পা টিপে টিপে এগিয়ে যায় মন্দিরের দিকে। অন্ধকার মন্দিরের আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে চরম উৎকণ্ঠায় শরীর কেঁপে ওঠে। পিস্তলের ট্রিগারে আঙুল, একটু এদিক ওদিক হলেই শব্দ লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে উদ্যত।

এমন সময়ে কাঁধে একটা হাত পড়তেই দানা ঘুরে যায়। পিস্তলের বাঁট দিয়ে সজোরে সেই হাতের মালিকের কানের পাশে বসিয়ে দেয়। অন্ধকারে ঠিক ভাবে মুখ দেখা যায় না, আগন্তুকের মাথায় একটা টুপি, অর্ধেক চেহারা রুমালে ঢাকা। অতর্কিত হামলায় আগন্তুক মাটিতে পড়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে গলায় পা চেপে কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে দেয় দানা।

বুকের ওপরে দ্বিতীয় পিস্তলের নল চেপে গর্জন করে ওঠে, “বল শালা কি জানিস।”

আগন্তুক কাঁপতে কাঁপতে মাথা থেকে টুপি আর নাকের ওপর থেকে রুমাল খুলে দেয়। দানা অবাক হয়ে যায় আগন্তুককে দেখে। এযে আর কেউ নয়, নিতাইয়ের দলের একটা ছেলে, ভুপেন। মাথায় বুকে ঠাণ্ডা পিস্তলের নল আর সামনে অসুর রূপী দানাকে দেখে আতঙ্কে কেঁপে ওঠে ভুপেন।

কাঁপা কণ্ঠে ওকে বলে, “আরে পিস্তল সরা আগে তারপরে বলছি।”

দানা অবাক হয়ে যায়, ভুপেন কেন ওকে এইখানে ডেকেছে? কি বলতে চায়? হাত ধরে টেনে উঠিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুই এইখানে, কি ব্যাপার?”

ভুপেন ওর খোলা পিস্তল মাথার ওপর থেকে সরাতে বলে বলে, “ফারহানকে কে মেরেছে আমি জানি, তবে আগে ওই পিস্তল সরা।”

দানা ওকে জিজ্ঞেস করে, “কে মেরেছে আগে বলো না হলে পিস্তল সরাবো না?”

ভুপেন গলা নামিয়ে কানেকানে বলে, “এই সব বাপ্পা নস্করের চাল।”

হাঁ হয়ে যায় দানা, একি বলতে চাইছে ভুপেন। মাথার ওপরে পিস্তলের নল চেপে চাপা গর্জে ওঠে, “কি শালা আলবাল বকছিস তুই। ফারহান বাপ্পা নস্করের খুব বিশ্বাসী লোক, ওকে কেন মারতে চেষ্টা করবে? ওকে মেরে বাপ্পার কি লাভ?”

ভুপেন ওর হাত ধরে মন্দিরের চাতালে বসিয়ে বলতে শুরু করে, “আগে আমার কথা শোন মন দিয়ে। একটা বাইরের ছেলেকে ভাড়া করে এনে ফারহানের ওপরে গুলি চালানো হয়েছে। তুই টিভি দেখিস নি? কেমন ভাবে বাপ্পা নস্কর বিরোধী দলের ওপরে হামলে পড়েছে? এই সব দুর্নীতির চাল, রাজনীতি নয়। শালা ওই খানকীর বাচ্চা কূটনীতি করছে রক্তের খেলা খেলে। এখন টিভিতে বলে বেড়াচ্ছে, বিরোধী দলের লোক ওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে খুন করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল তাই বাপ্পা নস্কর বেঁচে গেছে। এই বলে এইবারের নির্বাচনী মিছিলে মিটিঙে বক্তৃতা দিয়ে বেড়াবে শালা হারামির বাচ্চা।”

ফারহানকে মারার কারন খুঁজে পায় না দানা। বাপ্পা নস্কর কেন হটাত ওকে মারতে গেল? ফারহান ওর বিশ্বাসী অনেকদিনের ড্রাইভার। দানাও ধূর্ত চক্রান্ত করে বটে কিন্তু কোনোদিন কাছের লোকের রক্ত ক্ষরণ চায়নি। এই রাজনীতির লোকেরা সত্যি মা বাপ ভাই বোন স্ত্রী ছেলে মেয়ে, সবাইকে বেচে দিতে পারে তাহলে সামান্য একজন গাড়ির চালকের প্রানের মুল্য কত হতে পারে।

তাও দানা ওর কথা বিশ্বাস করে না, “প্রমান দে আগে। তুই চিনিস সেই ছেলেটাকে?”

ভুপেন মাথা দোলায়, “আলবাত চিনি, কিন্তু এতক্ষনে হয়তো এই শহর ছেড়ে চলে গেছে।”

দানা ওর কলার ধরে গর্জে ওঠে, “শালা আমাকে এইখানে রাজা রানীর গল্প শুনাতে এসেছিস তুই? তোকে শালা ওই বিমান আর নয়না টাকা দিয়েছে তাই না?”

ভুপেন ওর হাত ধরে উল্টে গর্জে ওঠে, “আরে বাল তুই আগে মাথা ঠাণ্ডা করে ভাব। ফারহান আমার মায়ের চিকিৎসার জন্য পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছিল আমি কেন ওর বিরুদ্ধাচরণ করবো রে। আমি জানি একমাত্র তোকে জানালে এই চরম আঘাতের প্রতিশোধ নেওয়া যাবে।”

বাপ্পা নস্কর, কিছুতেই দানা আর ভাবতে পারছে না। মাথা ধরে ভিজে মাটির ওপরে শুয়ে পড়ে। ভুপেন ওর পিস্তল তুলে ওর হাতে ধরিয়ে বলে, “আমি যদি মিথ্যে বলি এই তোর পিস্তল আর এই আমার মাথা। তুই সানন্দে আমার মাথায় গুলি মারিস আমি একটা শব্দ করবো না কথা দিলাম। তবে ওঠ দেখি, এখুনি যদি রেল স্টেসানে যাওয়া যায় তাহলে ওই ছেলেটাকে হয়তো ধরতে পারা যাবে।”

দানা সঙ্গে সঙ্গে লাফিয়ে ওঠে, “বলছিস ধরতে পারা যাবে?”

ভুপেন বলে, “আশা করি হ্যাঁ। কারন নিতাই ওকে সরিয়ে নিয়ে কোথাও একটা লুকিয়ে রেখেছিল, এই একটু আগে ওকে রেল স্টেসানে ছেড়ে এসেছে নিতাইয়ের লোক তাই তোকে ফোন করলাম। তাড়াতাড়ি চল আর যদি তোর লোকজন থাকে তাহলে ডেকে নে। রেল স্টেসানে আশা করি ওকে একা পাওয়া যাবে।”

সঙ্গে সঙ্গে শঙ্কর রামিজকে ফোনে বিস্তৃত খবর জানিয়ে দেয়। ফারহানের খবর জিজ্ঞেস করে জানতে পারে ওকে আই সি ইউ তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মহুয়া এখন বাকি সবার সাথে হস্পিটালে বসে। শঙ্কর মহুয়াকে ফোন ধরাতে যায় কিন্তু দানা মানা করে দেয়। জানে আবার মহুয়া খুব শঙ্কায় থাকবে। শঙ্কর রামিজকে মহুয়ার চোখ ফাঁকি দিয়ে ওইখান থেকে সোজা রেল স্টেসানে আসতে অনুরোধ করে।

ভুপেনের সাথে দানা কিছুক্ষণের মধ্যে স্টেসানে পৌঁছে যায়। গভীর রাত, সব দুর পাল্লার যাত্রী। কিছুক্ষণের মধ্যে শঙ্কর আর রামিজ জনা দশেক ছেলে নিয়ে রেল স্টেসানে পৌঁছে যায়। সবার চোখে মুখে চাপা উত্তেজনা, সবাই ফারহানের খুনিকে ধরতে উদ্যত। একটা ক্ষুধার্ত বাঘের দল খুঁজে বেড়াচ্ছে খাদ্য। রেল স্টেসান লোকে লোকারণ্য। এত লোকের মাঝে কোথায় খুঁজে পাবে ওই ছেলেটাকে? সারি দিয়ে প্রচুর প্লাটফর্ম সব কয়টা প্লাটফর্ম খোঁজা কয়েকজন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। ভুপেন ছাড়া আর কেউ ওই ছেলেটাকে চেনে না।

শঙ্কর দানাকে জিজ্ঞেস করে, “কি করে খুঁজবি রে দানা?”

দানা মাথা চুলকায়, “জানি না শঙ্করদা কিন্তু কি করা যাবে।”

ভুপেন বলে, “শালা ওই ছেলেটা চিনেদের মতন দেখতে, ছোট ছোট চোখ, নাক চ্যাপ্টা ফর্সা রঙ। বাংলা জানে সুতরাং মনে হয় উত্তর বঙ্গের দিকে থাকে। উত্তর বঙ্গের একটা ট্রেন এখন দশ নাম্বার প্লাটফর্ম থেকে ছাড়বে। যদি আমার অনুমান ঠিক হয় তাহলে ওই প্লাটফর্মে ছেলেটাকে পাওয়া যাবে।”

সঙ্গে সঙ্গে সবাই দশ নাম্বার প্লাটফর্মের দিকে দৌড় লাগায়। লোক ভর্তি, ঠ্যালা ঠেলি, জন সমুদ্রকে ধাক্কা দিয়ে ওরা এদিক ওদিকে চোখ রেখে এগিয়ে চলে। কিছুদুর যেতেই ভুপেন দানার জামা টেনে অদুরে একটা ছেলেকে দেখিয়ে দেয়। দানার সাথে সাথে শঙ্কর রামিজ আর বাকি ছেলেরা ওই ছেলেটাকে ঘিরে ধরে।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই দানা ওর কানের কাছে এসে চাপা গর্জে ওঠে, “চুপচাপ আমাদের সাথে চল না হলে এই ট্রেনের নিচে ধাক্কা মেরে ফেলে দেব।”

ওর পেছনে ভুপেনকে দেখে ছেলেটার চেহারা, ভয়ে রক্তশুন্য হয়ে যায়। বুঝতে দেরি হয় না কি কারনে ওকে ধরা হয়েছে। প্রথমে ছেড়ে দেওয়ার জন্য হাতজোড় করে কাতর প্রার্থনা জানায়, বলে ও কিছুই জানে না, কিছু করেনি। দানার হাতের এক বিরাশি সিক্কার দাবড়া খেয়ে মাথা ঝনঝন করে ওঠে। কিছুক্ষণ এদিক ওদিক দেখে হাত ছাড়িয়ে পালাতে চেষ্টা করে কিন্তু রামিজ ওকে মাটি থেকে তুলে ধরে। চারপাশে ওকে ঘিরে দাঁড়িয়ে জনা দশেক ষণ্ডা মার্কা ছেলে, পালানোর সব পথ বন্ধ। একপ্রকার ছেলেটাকে ঘিরে ধরে টানতে টানতে গাড়িতে এনে তোলা হয় আর সোজা হিঙ্গলগঞ্জ এলাকায় এনে ফেলা হয়। শঙ্কর রামিজ আর বাকি ছেলেরা ওই ছেলেটাকে মারতে মারতে নৌকায় তোলে তারপরে একটা খুঁটির সাথে বেঁধে উত্তমমধ্যম লাথি ঘুষি চলে ছেলেটার ওপরে।

দানা রাগে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে ছেলেটার গলার ওপরে পা তুলে গর্জন করে ওঠে, “ফারহানকে গুলি করতে কে বলেছে তোকে?” মার খেয়ে ছেলেটার মুখ ফেটে গেছে, কপাল গাল ঠোঁটের কষ থেকে রক্ত বের হচ্ছে। মুখের ওপরে জল ছিটিয়ে ওকে দাঁড় করিয়ে আবার জিজ্ঞেস করে দানা, “এই মাদারচোদ বল কে বলেছে ফারহানকে গুলি করতে?”

ছেলেটা হাতজোড় করে কাঁপতে কাঁপতে বলে, “আমাকে ছেড়ে দিন আপনাদের আসল দোষী অন্য কেউ আমি শুধু গুলি চালিয়েছি মাত্র।”

শঙ্কর পিস্তল বের করে ওর কানের ওপরে ঠেকিয়ে গর্জে ওঠে, “কে কে কি করেছে সোজাসুজি বলে দে।”

কাঁপতে কাঁপতে ছেলেটা সব উগরে দেয়, “নিতাই, নিতাই আমাকে বলেছিল ফারহানকে গুলি করতে। একটা গুলি বুকে একটা মাথায়, কিন্তু ধাক্কা ধাক্কির ফলে মাথার গুলি কাঁধে লাগে। আমি আর কিছু জানি না।”

ভুপেন রাগে কেঁপে ওঠে, “এই বানচোদ নিতাইকে একবার হাতের কাছে পেলে খুন করে দেব।”

দানা ছেলেটাকে মাটিতে ফেলে আবার মারতে শুরু করে দেয়, “শালা যদি ফারহানের জানের কিছু হয় তাহলে তুই বাঁচবি না।” ওর সারা শরীর রাগে ঠকঠক করে কাঁপছে, রক্ত গরম হয়ে টগবগ করে ফুটতে শুরু করে দিয়েছে। এখুনি ওকে খুন করে ফেলে।
 
পর্ব চোদ্দ – রক্তের খেলা (#2-102)

শঙ্কর আর কয়েকজন মিলে ওকে ধরে ফেলে বলে, “কয়েকজনকে নিয়ে তুই হস্পিটাল ফিরে যা। ফারহান বেঁচে গেলে বাপ্পার কপালে দুঃখ আছে। শালা মাদারচোদ নিশ্চয় ওই হস্পিটালে ওকে মারার মতলব করবে।”

কথাটা কানে যেতেই দানা ভেঙে পরে, অস্ফুট চিৎকার করে ওঠে, “না, ফারহানের কিছু হতে পারে না।”

শঙ্কর আর রামিজ ওকে বুঝায়, হস্পিটালে ফিরে যেতে বলে। মহুয়া একা, জারিনা, তাবিশ নাফিসা সবাই খুব বিপদে। ইন্দ্রনীল ঠিক কোন পক্ষের বোঝা যাচ্ছে না তবে নিতাই আর বাপ্পা নস্কর, দানার শত্রুদের তালিকায় নাম লিখিয়ে নিয়েছে। আগে বাপ্পা নস্কর আর নিতাইকে শেষ করতেই হবে। এতদিন ওকে বাঁচিয়ে রাখার জল্পনা পরিকল্পনা করছিল দানা, কিন্তু এহেন ধূর্ত ভয়ঙ্কর মানুষের স্থান এই পৃথিবীতে নেই, ওকে সরাতেই হবে।

রামিজ একটা বড় ছুরি বের করে, ছেলেটার গলা এক হাতের মধ্যে পেঁচিয়ে অন্য হাতে ছুরি ধরে ওর গলার ওপরে ধরে। দানার দিকে তাকিয়ে বলে, “শোন দানা, তুই রক্তারক্তিতে যাস না। তোর মাথার বুদ্ধি যেমন সেই রকম বুদ্ধি আমাদের নেই। এতদিনে আমরা মারামারি কাটাকাটিতে নেমে পড়তাম কিন্তু তুই অনেক চতুর। তুই তোর বুদ্ধির জোরে ওদের বাজি মাত কর কিন্তু এই ছেলেটা আর কালকের সূর্য দেখতে পাবে না। অন্তত রুহি আর মহুয়ার জন্য, তুই ফিরে যা।”

দানা আর ভুপেন সঙ্গে কয়েকজন, নৌকা থেকে নেমে যায়। রামিজ চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ বিড়বিড় করে ছেলেটার গলায় ছুরি চেপে এক টান, ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটে যায়। নৌকার পাটাতন রক্তে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে, ছেলেটা ছটফট ছটফট করতে থাকে। মুখের ওপরে পা তুলে মুখ বন্ধ করে আরেক টান, শ্বাস নালী হাঁ হয়ে যায় ছেলেটার। কাটা ছাগলের মতন কাঠের পাটাতনে পড়ে ছটফট ছটফট করতে করতে একসময়ে নিথর হয়ে যায় ছেলেটার প্রাণহীন দেহ। নৌকা ছেড়ে দেয়। শঙ্কর ওদের ফিরে যেতে বলে, জানিয়ে দেয় বিকেলে হস্পিটালে দেখা হবে। এখন এই ছেলেটার মৃতদেহ কুচিকুচি করে কেটে মাছেদের খাদ্য বানিয়ে তবে ফিরবে।

দানা গাড়িতে উঠে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে, চিন্তা শক্তি লোপ পেয়ে যায়। রাগে কাঁপতে কাঁপতে ঘড়ি দেখে, রাত একটা বাজে। ভুপেন আর একজন ছেলে দানাকে এক বোতল জল খেতে দেয়। কিছু জল খেয়ে কিছু জল মাথার ওপরে ঢেলে চুপচাপ বসে থাকে। নাড়ু ওকে জিজ্ঞেস করে কোথায় যাবে। ভুপেন দানার হয়ে জানিয়ে দেয় হস্পিটালে যেতে। গাড়ির পেছনে দানা থম মেরে বসে যায়, শেষ পর্যন্ত বাপ্পা নস্কর? নিজের বিশ্বাসী ড্রাইভারকে খুনের পরিকল্পনা? নিতাইকে ছাড়া চলবে না কিছুতেই, ইন্দ্রনীল কি ওদের দলে না বিপক্ষে? নাড়ু গাড়ি চালিয়ে হসপিটালে নিয়ে আসে ওদের। মহুয়াকে খবর দিতেই দৌড়ে নিচে নেমে আসে। গাড়ির মধ্যে দানার রক্তাক্ত চোখ আর বিধস্ত চেহারা দেখে খুব ভয় পেয়ে যায়। ওকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে, বাকিরা সবাই ওদের ঘিরে আড়াল করে দেয়।

কাঁদতে কাঁদতে মহুয়া জিজ্ঞেস করে, “কোথায় গেছিলে একা একা? তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি কি করতাম বলতো? তোমার মাথায় একটু বুদ্ধি সুদ্ধি নেই নাকি? আমাকে এইখানে একা ফেলে কোথায় গেছিলে।”

দানা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ছলছল চোখে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “কিছু হতে দিতাম না তোমাকে। কিছু হলে পৃথিবী জ্বালিয়ে দিতাম।”

মহুয়া চেঁচিয়ে ওঠে, “হয়ে যাওয়ার পরে না জ্বালাতে, ততক্ষণে যা সর্বনাশ হওয়ার সেটা হয়েই যেতো।”

দানা ওর মুখ আঁজলা করে ধরে বলে, “আমি কথা দিচ্ছি পাপড়ি, কারুর কিছু হবে না।”

তারপরে এক এক করে ভুপেন আর দানা মহুয়াকে সব খুলে বলে। এত কাছের লোক যে আঘাত হানবে সেটা আশাতীত। যত হোক ফারহান চোখ বুজে বাপ্পা নস্করের ওপরে ভরসা করতো, ওর অন্নদাতা তাই চর গিরি করলেও বাপ্পাকে মারার পরিকল্পনা করলেই বাধা দিতো। মহুয়া জানায় ফারহান এখন চোখ খোলেনি, জারিনা আর ওর আম্মিজান আই সি ইউ তে বসে। লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে ফারহানকে রাখা হয়েছে। হৃদয়ের খুব কাছে লেগেছে একটা গুলি, এক ইঞ্চি একটু এদিক ওদিক হলে বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে যেতো আর অন্য গুলি ডান কাঁধে ঠিক গলার কাছে, শ্বাস নালী থেকে একটু দূরে। জারিনার অপার ভালোবাসা ওকে এই যাত্রায় বাঁচিয়ে এনেছে।

মহুয়াকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়, বলে একটু বিশ্রাম নিয়ে সকালে আবার আসতে। দানাকে ছেড়ে কিছুতেই যেতে চায় না কিন্তু ছোট মেয়ে বাড়িতে একা, এতক্ষণে কেঁদে কেঁদে সারা হয়ে গেছে। একজনের সাথে গাড়ি দিয়ে মহুয়াকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। সবাইকে সতর্ক করে দেয় আর ভুপেনকে ওইখান থেকে চলে যেতে বলে। বাপ্পা নস্করের লোকজন যদি ভুপেনকে ওদের সাথে দেখে ফেলে তাহলে সব কিছু জেনে যাবে আর ওরাও সতর্ক হয়ে যাবে।

যাওয়ার আগে দানা ভুপেনকে বলে, “শোন, তুই আমার হয়ে একটা কাজ করবি?”

ভুপেন বলে, “একটা কেন রে, ফারহানের জন্য দশ খানা কাজ করবো। বল কি করতে হবে।”

দানা ওকে বুঝিয়ে বলে, বাপ্পা নস্করের ওপরে কড়া নজর রাখতে হবে, নিতাইয়ের দলের মধ্যে একদম মিশে যেতে হবে। ওদের প্রতিটি পদক্ষেপের খবর যেন দানা পায়। ভুপেন মাথায় টুপি পরে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় ওর কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে, চাইলে সবার খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে রাতের মধ্যেই শেষ করে দেবে। দানা মানা করে দেয়। ভুপেন চলে যাওয়ার পরে বাকি ছেলেদের চলে যেতে বলে।

একা একা দানা হস্পিটালে ঢোকে, রাত দুটোতে হসপিটাল চত্তর খালি হয়ে গেছে। টিভিতে তখন বিকেলের খবর বড় বড় করে চলছে। বাপ্পা নস্করের হাত পা নাচিয়ে উত্তেজক বক্তৃতা, এই অরাজকতা বন্ধ করতে হবে, ওকে সরানোর চক্রান্ত করা হয়েছে, এলাকার উন্নয়ন চায় না বিরোধী পক্ষ, ওরা চায় খুনোখুনি। হাসিহাসি মুখে হাতজোড় করে লোকের হাততালি আর শুভেচ্ছা কুড়িয়ে নিচ্ছে নীচ, ধূর্ত খুনি বাপ্পা নস্কর। সেই ছবি দেখে দানার শরীর জ্বলে ওঠে। ডাক্তার ততক্ষণে চলে গেছে, নার্সেরা আছে হয়তো। উপরে উঠে আই সি ইউর সামনে গিয়ে তাবিশ আর নাফিসার দেখা পায়। ভাইয়ের এই মৃত্যু শয্যা দেখে বেদনায় তাবিশের চেহারা পাংশু হয়ে গেছে। ক্লান্ত নাফিসা একটা চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়েছে, পাশের একটা চেয়ারে ওর আম্মিজান ভাসাভাসা চোখ নিয়ে দানার দিকে তাকিয়ে থাকে।

ওকে দেখেই ডুকরে কেঁদে ওঠে ফারহানের মা, “এই কয়দিন পরে বিয়ে আর কেন এমন হলো? ফারহান কারুর ক্ষতি করেনি।”

সত্যি ফারহান কারুর খারাপ দেখতে পারে না। দানাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিল, এমন কিছু পরিচয় ছিল না যখন ওই রেল স্টেসান থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল। ভুপেনের মায়ের চিকিৎসার জন্য টাকা দিয়েছিল। ভালো লোকেরাই মরে আর খারাপ মানুষেরা বরাবর জিতে যায়। মিথ্যের পরাজয় এটাই আজকের যুগের চরম সত্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাঘ কোনোদিন বাঘের মাংস খায় না, কিন্তু মানুষ মানুষের রক্ত খেতে চায়। চিরটা কাল তাই হয়ে এসেছে।

দানা ফারাহানের মায়ের হাত জোড় করে ধরে পায়ের কাছে বসে প্রবোধ দেয়, “চাচী, ফারহানের কিছু হবে না। আমি ফারহানকে বাঁচিয়ে আনবো। জারিনা ফারহানের বিয়ে হবে আপনার ঘর আলো করে আপনার ছোট বৌমা আসবে।”

ফারহানের মা ওর কথা শুনে কেঁদে ফেলে। দানা ওর মায়ের হাত ধরে বলে, “চাচী আপনি বাড়ি যান আমি এখানে আছি।”

ফারহানের মা কেঁদে ফেলে, “ছেলেকে একা ফেলে কি করে যাই বলো? মেয়েটা কেঁদে কেঁদে শুকিয়ে গেছে।”

দানা মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ বসে থাকার পরে আই সি ইউতে ঢুকে দেখে, বুকে গলায় সাদা ব্যান্ডেজে বাঁধা, অচৈতন্য ফারহান নিথর হয়ে চোখ বুজে পড়ে আছে। নাকের মধ্যে অক্সিজেনের নল, বুকে কপালে কত কিছু লাগানো। ওর হাত ধরে চুপচাপ ওর পাশে পাথরের মতন হয়ে বসে জারিনা। দানা জানে ওই হাত কিছুতেই ছাড়ানো যাবে না। আজ রাতেই ফারহানকে এইখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। সকালে নিশ্চয় সাংবাদিক টিভি ক্যামেরার সাথে বাপ্পা নস্কর হামলে পড়বে হস্পিটালে। কিছুক্ষণ ঝরাবে ওর মেকি কুমীরের অশ্রু তারপরে পান চিবোতে চিবোতে বেরিয়ে যাবে শালা হারামির বাচ্চা বাপ্পা নস্কর। পা টিপে টিপে জারিনার মাথায় হাত রাখে। কেঁদে কেঁদে মেয়েটার চোখ মুখ ফুলে গেছে। দানার দিকে জল ভরা চোখে তাকিয়ে ফ্যাকাসে রক্তহীন ঠোঁট জোড়া কেঁপে ওঠে।

দানা ওর মাথা চেপে প্রবোধ দেয়, “চোখের জল মোছো, হানিমুনে যাবে না? এই চেহারা নিয়ে হানিমুনে গেলে ফারহান আর ভালবাসবে না তোমাকে?”

হাসবে না কাঁদবে ভেবে পায় না জারিনা, কিন্তু বিয়ের কথা শুনে ডুকরে কেঁদে ওঠে। দানা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ফারহানকে দেখে আই সি ইউ থেকে বেরিয়ে আসে। কেউ নেই আসেপাসে কার কাছে সাহায্য চাইবে? এই অবস্থায় ফারহানকে কোথায় নিয়ে যাওয়া যায়? ডক্টর মানস সোমের কথা মনে পড়ে যায়। মহুয়াকে লোকেশের হাত থেকে বাঁচানোর সময়ে সাহায্য করেছিল। সব থেকে আগে, বাকি ছেলেদের আবার ডাক দেয়। জানিয়ে দেয় রাতের মধ্যে ফারহানকে এই হস্পিটাল থেকে সরিয়ে কোথাও নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে হবে যেখানে বাপ্পা নস্কর হাত বাড়াতে পারবে না। তারপরে ডক্টর মানস সোমকে ফোন করে দানা। সব কিছু শোনার পরে খুব চিন্তায় পড়ে যায় ডক্টর মানস সোম। দানাকে জিজ্ঞেস করে ফারহানের চিকিৎসকের নাম, কারন অত সহজে একটা হস্পিটাল থেকে কোন অসুস্থ ব্যাক্তিকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ নয় তার ওপরে এটা পুলিস কেস। দানার সাথে সাথে ফারহানের আম্মা, ভাই সবাই সমস্যায় পড়ে যাবে। নার্সদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ডাক্তারের নাম জেনে নেয় দানা, তারপরে ডক্টর মানস সোমকে জানায়। তিনি জানিয়ে দেন, নিজের যে নারসিং হোম আছে বটে কিন্তু সেইখানে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম নেই তবে ওর চেনাজানা একটা বড় নারসিং হোমে এই সুবিধা আছে। এক ঘন্টার মধ্যে সব ব্যাবস্থা করে এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে চলে আসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।

হাতে আবার পিস্তল নিয়ে নেয় দানা। ছেলেরা চলে আসে ততক্ষণে। আই সি ইউর সামনে জটলা দেখে নিরাপত্তা রক্ষী ওদের চুপ থাকতে অনুরোধ করে, কিন্তু দানার আর ছেলেদের চেহারা দেখে মাথার মধ্যে সব কিছু গুলিয়ে যায়। ডক্টর মানস সোম এবং সাথে আরো দুইজন ডাক্তার এসে পৌঁছে যায় হস্পিটালে। ডক্টর মানস সোমের হাত ধরে কাতর প্রার্থনা করে দানা। সাথে চিকিৎসারত ডাক্তার অভিজিৎ ভুঁইয়া আর ডক্টর মানস সোম আই সি ইউতে ঢুকে একবার ফারহানকে পরীক্ষা করে দেখে।

ডক্টর অভিজিৎ ভুঁইয়া আর ডক্টর মানস সোম অনেকক্ষণ আলোচনা করার পরে দানাকে বলে, “দেখুন নিয়ে যেতে দিতে পারি তবে খুব সাবধান। ফারহানের অবস্থা খুব খারাপ, এমত অবস্থায় নড়াচড়া করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবে ওর প্রাণহানির আশঙ্কা শুনে ওকে বাঁচাতে সব প্রচেষ্টা করবো।”

সেই রাতেই হস্পিটালের সব লোক ডেকে ডক্টর অভিজিৎ ভুঁইয়া বুঝিয়ে দিলেন, যে ফারহান নামে কোন ব্যক্তি ওদের হস্পিটালে কোনোদিন কোন চিকিৎসা করতে আসেনি। হস্পিটালের কম্পিউটার, খাতা, এমনকি সারভিলেন্স ক্যামেরা থেকে সব কিছু মুছে দেওয়া হয়। দুই ডাক্তারের হাত ধরে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানায় দানা। জারিনা, নাফিসা, ফারহানের দাদা আর মাকে একটা গাড়ি করে আগে থেকে ওই নারসিং হোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নার্সেরা ফারহানের লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম বদলে দেয়। এ্যাম্বুলেন্স করে রাতারাতি হস্পিটাল থেকে সরিয়ে অন্য নারসিং হোমে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয় ফারহানের। সবকিছু সারতে সারতে সকাল হয়ে যায়।

সারা রাত ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারেনি মহুয়া, ভোরের আলো পুব দিকে উঁকি মারতেই দানাকে ফোন করে, “কি খবর গো? ফারহান কেমন আছে।”

সারা রাতে ফারহানকে স্থানান্তরিত করার ঝামেলায় মহুয়াকে আর ফোন করা হয়নি, তাই মহুয়াকে সব কিছু খুলে বলে। মহুয়া ওকে বলে “শোন জিত, সকাল হলেই বাপ্পা নস্কর কিন্তু লোকজন, সাংবাদিক পুলিশ ইত্যাদি নিয়ে নিশ্চয় হস্পিটালে মেকি কান্না কাঁদতে আসবে। তার আগে তুমি বাড়িতে ঢুকে যাও। ফারহানের পরিবারকে মহেন্দ্র বাবুর বাড়িতে লুকিয়ে ফেলো না হলে বাপ্পা নস্করের পরবর্তী আঘাত ওর পরিবারের ওপরে হবে। জিত, যুদ্ধ এইবারে সামনা সামনি এসে পড়েছে, জাল গুটানোর সময় এসে গেছে।”

দানাও সেই কথায় সায় দেয়, যুদ্ধ এইবারে একদম বাড়ির দোরগোড়ায়। সব কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে কিছু ছেলেকে ওই নারসিং হোমে পাহারায় রেখে বাড়ি ফিরে আসে। বিধস্ত দানাকে দেখে মহুয়া খুব বিচলিত হয়ে যায়। এইবারে বাপ্পা নস্কর একদম সামনে থেকে ওর ওপরে আঘাত হানবে, কি করে সেই হামলা থেকে নিজেকে বাঁচানো যায় সেই চিন্তা। গতকাল সকাল থেকে দৌড়ে বেড়াচ্ছে, প্রথমে কাজের সাইট, তারপরে হস্পিটাল আর ঝামেলা। দানার শরীর আর চলছে না। কোনোরকমে স্নান সেরে দুটো মুখে গুঁজে শুয়ে পড়ে দানা। মনা আর পিন্টু যথারীতি সকালেই বাড়িতে পৌঁছে খোলা পিস্তল হাতে নিয়ে বসার ঘরে তৈরি। ওইদিকে নারসিং হোমে শক্তি আর বলাই। বাপ্পা নস্করের ওপরে তীক্ষ্ণ নজর রেখে চলেছে ভুপেন।

কিছু পরে ভুপেন ফোন করে জানায় যে বাপ্পা নস্কর হস্পিটালের জন্য বেরিয়েছে, সাথে ইন্দ্রনীল, নিতাই আর বেশ কিছু রাজনৈতিক কর্ম কর্তা, বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আর টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা ম্যান। ভুপেনকে দলের সাথে গা বাঁচিয়ে থাকতে নির্দেশ দেয়, ভুপেন সেই মতন কাজ করে।
বেশ কিছু পরে ভুপেন জানায় যে বাপ্পা নস্কর ওর বাড়িতে আসছে। মহুয়ার বুকের মধ্যে চাপা উত্তেজনা, রুহিকে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে। একবার ভাবে মহেন্দ্র বাবুকে ফোন করে জানাবে। না একাই মোকাবিলা করবে বাপ্পা নস্করের সাথে। বাড়িতেই না একটা রক্তারক্তি কান্ড ঘটে। মনা আর পিন্টুর মাথায় রক্ত চড়ে যায়। সবথেকে আগে রুহিকে বাড়ি থেকে সরানো দরকার। মনা আর পিন্টু ওকে নিয়ে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। মহুয়া কিছুতেই দানার পাশ ছাড়বে না, কি করা যায়, নাছোড়বান্দা। বুকের মধ্যে ঝড়ের মোকাবিলা করার প্রস্তুতি। দানার মাথায় টগবগ করে রক্ত ফুটছে, সাদা মারবেলের মেঝে রক্তে না লাল হয়ে ওঠে। দানাকে বারেবারে শান্ত হয়ে কথা বলার জন্য অনুরোধ করে, কারন বাপ্পা নস্কর নিশ্চয় পুলিস লোকজন নিয়েই ওর বাড়িতে আসবে। বাড়িতে শুধু দানা আর মহুয়া বুকের মধ্যে চাপা উৎকণ্ঠা আর উত্তেজনা নিয়ে বসার ঘরে বসে। রুদ্ধশ্বাসে দুইজনে কলিং বেল বাজার অপেক্ষা করে।

ভুপেন প্রতি মিনিটের খবর দানার কাছে পৌঁছে দেয়, বাপ্পা নস্কর ওর বাড়ির সিঁড়ি চড়ছে। দরজা খুলে রাখে দানা। কোমরের পেছনে পিস্তল গুঁজে তৈরি, সোফায় বসে একটা সিগারেট ধরিয়ে শান্ত মনে ঝড়ের অপেক্ষা করে।
 
পর্ব চোদ্দ – রক্তের খেলা (#3-103)

খোলা দরজা দিয়ে লোকজন, পুলিস নিয়ে বাপ্পা নস্কর ঘরে ঢুকেই কঠিন কণ্ঠে গর্জে ওঠে, “এইসবের মানে কি দানা? ফারহানকে কোথায় সরিয়েছিস তুই?”

দানা চোয়াল চেপে বাঁকা হেসে হিমশীতল কণ্ঠে উত্তর দেয়, “কার কথা বলছেন বাপ্পাদা?”

পেছনে পুলিস, নিতাই ইন্দ্রনীল সঙ্গে আরো অনেকে। বাপ্পা নস্কর এগিয়ে আসে ওর দিকে, “শালা মাদারচোদ, আমার সাথে বেইমানি।”

“বেইমান” কথা শুনে দানার মাথায় রক্ত চড়ে যায়। কোমরে রাখা পিস্তলে হাত চলে যায়। এমন সময়ে মহুয়া, কাজের মেয়ে মণিকে নিয়ে একটা ট্রেতে বেশ কয়েক কাপ চা নিয়ে ঘরে ঢোকে। বাপ্পার রক্ত চক্ষু দেখে ক্ষণিকের জন্য বিচলিত হয় কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সামলে নিয়ে আময়িক হেসে বলে, “কি হলো বাপ্পাদা, এত সকালে একেবারে সবাইকে নিয়ে বাড়িতে হাজির।”

মহুয়ার আময়িক হাসি দেখে বাপ্পা নস্কর কি উত্তর দেবে ভেবে পায়না। চোয়াল চেপে দানার দিকে রক্ত চক্ষু হেনে তাকিয়ে থাকে। দানা একটা চায়ের কাপ ওর হাতে ধরিয়ে হিমশীতল কণ্ঠে বলে, “চা খান, ঠাণ্ডা হন। ফারহানের সম্বন্ধে আপনার জেনে কি লাভ?”

পাশে দাঁড়ানো পুলিস ইন্সপেক্টর, ধীমান এগিয়ে এসে বলে, “ফারহানকে খুনের চেষ্টা করা হয়েছে, এটা পুলিস কেস মিস্টার মন্ডল।”

মহুয়া আর দানা ভালোভাবে বুঝতে পারে ওদের একটু মাথা গরম অথবা অসংযত পদক্ষেপ ওদের কোণঠাসা করে দেবে। বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, উত্তেজিত হলে একদম চলবে না, মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। মহুয়া ওর হয়ে উত্তর দেয়, “আপনাদের হাসপাতালে যাওয়া উচিত আমার বাড়িতে নয়, আমার বাড়িতে ডাক্তার বদ্যি নেই।”

পুলিস ইন্সপেক্টর, ধীমান ওদের বলে, “আপনি আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না মিসেস মন্ডল।”

অতি সংযত মহুয়া মৃদু হেসে উত্তর দেয়, “আমার হাতে চায়ের কাপ, আইন আপনাদের হাতে। আর মিস্টার ধীমান, বাজারে গিয়ে একটা আলুর দোকানে আলু পছন্দ না হলে নিশ্চয় আপনি অন্য দোকানে যাবেন, তাই না।”

হতবাক ধীমান, বাপ্পা নস্কর কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে যায়। মহুয়ার উত্তর শুনে পেছনে দাঁড়ানো বেশ কয়েকজন ছেলের সাথে ইন্দ্রনীলও মুখ টিপে হেসে ফেলে। ইন্দ্রনীলের হাসি শুনে বাপ্পা নস্কর আরো ক্ষেপে যায়। মহুয়ার উত্তর শুনে পুলিস কি বলবে ভেবে পায়না। হস্পিটালে কেউ মানতে চায় না যে ফারহানকে গত কাল এই হস্পিটালে আনা হয়েছিল। খাতা কম্পিউটার ঘেঁটেও পুলিস কিছু উদ্ধার করতে পারেনি।

পুলিস ইন্সপেক্টর দানার দিকে এগিয়ে এসে বলে, “আপনাকে আমি গ্রেফতার করতে পারি জানেন?”

দানা চাপা হেসে বলে, “কি কারনে?”

পুলিস ইনস্পেক্টর উত্তর দেয়, “আইনের কাজে বাধা দেওয়ার জন্য।”

মহুয়ার সাথে সাথে চোখে চোখে কথা হয় দানার, মহুয়া ইশারায় জানায় চরম চাল চালতে। সামনে পুলিস, সামনে অনেক লোকজন। দানা আলতো মাথা নাড়িয়ে বাপ্পা নস্করের দিকে একপা এগিয়ে যায়। ওই ভাবে এগিয়ে আসতে দেখে বাপ্পা নস্কর থতমত খেয়ে যায়। কি চলছে দানার মাথায়? ইন্দ্রনীল নিতাই সবাই দানার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে। মহুয়ার ঠোঁটে বাঁকা হাসি, সোফায় বসে আলতো করে চায়ের কাঁপে চুমুক দিয়ে বাপ্পা নস্করের দিকে তির্যক দৃষ্টি হানে।

দানা বাপ্পা নস্করের কাঁধে হাত রেখে কানে ফিসফিস করে বলে, “অভিনেত্রী নয়না বোস আর আপনার গোপন সম্পর্কের একমাত্র সাক্ষী আমি। এই জমি বন্টন, প্রমোটারি ব্যাবসার অনেক গোপন তথ্য আমার হাতে আছে। আপনি কবে কোন প্রমোটারকে খুন করেছেন, কবে কোন কাগজে হেরফের করেছেন, কোন আমলাকে কত টাকা খাইয়েছেন, কোন কোন পুলিস কত টাকা খেয়েছে। সব তথ্য প্রমান আমার কাছে আছে। আমি কিন্তু ওই তথ্য প্রমান সঙ্গে নিয়ে আর ফারহানকে নিয়ে সোজা খবরের চ্যানেল, পুলিস আর খবরের কাগজের দফতরে চলে যাবো।” বাপ্পা নস্কর বিস্ফারিত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। কি বলছে দানা, এত কথা কি করে জানলো? দানা ওর কাঁধে আলতো চাপ দিয়ে ফিসফিস করে বলে, “কি করতে চান। চুপচাপ এইখান থেকে চলে যেতে চান না ওই তথ্য প্রমান নিয়ে আমি পুলিস আর মিডিয়ার কাছে যাই সেটা চান।”

দানার কথা শুনে বাপ্পা নস্করের বুক থরথর করে কেঁপে ওঠে। বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা দেয় কপালে, চেহারা রক্ত শুন্য হয়ে যায়, গলা শুকিয়ে যায়। কম্পিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “মানে তুই...”

দানা আলতো মাথা দোলায়, “হ্যাঁ, অনেকদিন থেকেই জানি।”

বাপ্পা নস্কর চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, “শালী খানকী চুদিরবাই মাগী নয়না। মেয়েছেলের পেটে কথা থাকে না বাঁড়া। শালী রেন্ডীকে হাতে পেলে খুন করে দেব।”

দানা মাথা নাড়ায়, “না না, নয়না নয়। এরমধ্যে আবার নয়নাকে টানছেন কেন?” একটু থেমে চারপাশে দেখে ওকে বলে, “কি করতে চান? চুপচাপ চলে যাবেন না ওই তথ্য প্রমানের সাথে পুলিসের হাজতে যেতে চান? ওই খবর একবার বের হলে, বিমান চন্দ দুলাল মিত্র কিন্তু আপনাকে ছিঁড়ে খাবে।”

বাপ্পা নস্কর ফাঁদে পড়ে গেছে দেখে চোয়াল চেপে চাপা গর্জন করে ওঠে, “শালা তুই আস্তিনের সাপ। নিশ্চয় নয়না এই সব কথা তোকে বলেছে। মাগী যেমন আমাকে ঘুরিয়েছে ঠিক তেমনি তোকেও নাচিয়েছে, তাই না। আমি কি করতে পারি সেটা তোর ধারনার বাইরে। তোর এই কন্সট্রাক্সান সাম্রাজ্য আমি শেষ করে দেব। শালা আমার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া আমি বের করে দেব।”

দানা ক্রুর হেসে ফিসফিস করে বলে, “আপনিও অনেকের মাথায় বন্দুক রেখে আম জাম কাঁঠাল লিচু অনেক কিছু খেয়েছেন, তাই না? আর ওই পুলিস ইনস্পেক্টর ধিমান আপনার সাথী।” মহুয়ার দিকে চোখ টিপে ইশারায় জানায়, কাজ হয়েছে।

মহুয়া মোবাইল তুলে ফোন কোন একজনকে করে, “হ্যালো, হ্যাঁ সময় হয়েছে এইবারে। তুমি তৈরি?... ঠিক আছে... একখানা কপি নিয়ে সোজা “আপনার পাশে” খবরের চ্যানেলে পাঠিয়ে দাও, একখানা কপি সোজা “সকাল সকাল” খবরের কাগজে আর একখানা কপি নিয়ে সোজা ডেপুটি কমিশনার সাত্যকি চ্যাটারজির দফতরে চলে যাও।”

ওই কথা শুনে বাপ্পা নস্কর, ইন্সপেক্টর ধীমান মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। একবার এই টেপ সর্ব সমক্ষে এলে সবাই ফেঁসে যাবে। নিতাই হাত মুঠি করে মহুয়ার দিকে এগিয়ে যায়। মহুয়া ক্ষণিকের জন্য আতঙ্কে কেঁপে ওঠে কিন্তু কানের ওপর থেকে মোবাইল সরায় না। ধীমান মনে হয় ইচ্ছে করেই পেছনে সরে যায়।

সেই দেখে দানা, বাপ্পার গলা বাজুর মাঝে কঠিন ভাবে চেপে ধরে হুঙ্কার দিয়ে ওঠে, “এক পা এগোলে কিন্তু...”

এমন সময়ে সবাইকে অবাক করে মহেন্দ্র বাবু, পুলিসের ডেপুটি কমিশনার সাত্যকি চ্যাটারজিকে নিয়ে বাড়িতে ঢোকেন। পেছন পেছন শক্তি বলাই নাড়ু কমল আর বেশ কয়েকজন পুলিস। সাত্যকি চ্যাটারজিকে দেখে সবাই বিস্ময়ে একে ওপরের দিকে তাকায়। দানার হাতের থাবার মধ্যে বাপ্পা নস্কর থরথর করে কেঁপে ওঠে। পুলিস ইনস্পেক্টর ধীমান কি করবে কিছু ভেবে পায় না। বাপ্পাকে চোখের ইশারায় জানায় সে নিরুপায়। সাত্যকি চ্যাটারজি আর মহেন্দ্র বাবুকে দেখে মহুয়া আর দানাও কম অবাক হয়নি। কে খবর দিয়েছে মহেন্দ্র বাবুকে? মনা আর পিন্টু নিশ্চয়। বাপ্পা নস্কর আর বাকি ছেলেদের উপেক্ষা করে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে সাত্যকি চ্যাটারজি একটু মাথা নুইয়ে অভিবাদন সারে। মহেন্দ্র বাবু একটা সোফায় বসে পড়েন।

সাত্যকি চ্যাটারজি মহুয়াকে বলেন, “বৌমা সেই সকালে বেরিয়েছি, ভালো করে চা খেতে পারিনি। এক কাপ চা দাও আগে।”

মহুয়া স্মিত হেসে মাথা নুইয়ে কাজের মেয়ে মণিকে চা বানানোর নির্দেশ দেয়।

সাত্যকি চ্যাটারজি সবার দিকে একবার তাকিয়ে ধীমানকে কঠিন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেন, “কি ব্যাপার ধীমান এইখানে এত সকালে? কার কি হয়েছে?”

ধীমানের পায়ের তলার মাটি সরে যায়। আমতা আমতা করে বলে, “না মানে এইখানে ওই কালকের কেসের সম্বন্ধে এসেছিলাম।”

সাত্যকি চ্যাটারজি জিজ্ঞেস করেন, “এইখানে কেন? দানার বাড়ি কি হস্পিটাল?”

ধীমান কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে উত্তর দেয়, “না মানে মিস্টার বাপ্পা নস্করের অনুমান যে মিস্টার মন্ডল ফারহানকে হসপিটাল থেকে সরিয়ে দিয়েছে।”

সাত্যকি চ্যাটারজি হুঙ্কার দিয়ে ওঠেন, “সরিয়ে দিয়েছে মানে? এত সংবেদনশীল একটা কেস আর রাতে তুমি হসপিটালে পাহারা রাখোনি? কেন রাখোনি? আর বাপ্পা নস্কর কে? ওর অনুমান অনুযায়ী কি তুমি চলো?”

ধীমানের গলা শুকিয়ে আসে। বাপ্পা নস্করের কাঁধের ওপরে দানার হাতের থাবা আরো শক্ত হয়ে বসে যায়। নিতাইয়ের সঙ্গে আসা ছেলেগুলো চুপিসারে দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু দরজায় দাঁড়িয়ে শক্তি আর আক্রাম। ইন্দ্রনীল এক কোনায় দাঁড়িয়ে মিচকি মিচকি হেসে ঘরের চারদিকে দেখে। কিছু পরে কাজের মেয়ের সাথে মহুয়া একটা ট্রেতে চায়ের কাপ নিয়ে বসার ঘরে আসে। মহেন্দ্র বাবুর হাতে চায়ের কাপ দেওয়ার সময়ে তিনি ওর মাথায় হাত দিয়ে অভয় প্রদান করেন।

মহুয়ার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে সাত্যকি চ্যাটারজি ওকে জিজ্ঞেস করে, “বৌমা তোমাদের কি এরা হুমকি দিয়েছে?”

ওই কথা শুনে নিতাইয়ের গা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। বাপ্পা নস্কর দরদর করে ঘামতে শুরু করে দেয়। মহুয়া স্মিত হেসে দানার দিকে তাকায়। বাপ্পা নস্কর কাতর চাহনি নিয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। সবাই উন্মুখ মহুয়া কি বলে।

মহুয়াকে চুপ থাকতে দেখে সাত্যকি চ্যাটারজি ধীমানকে কড়া কণ্ঠে বলেন, “কি এমন বলেছো যে বৌমা কথা বলতে পারছে না? হ্যাঁ।” ওর ধ্যাতানি খেয়ে ধীমানের হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। সাত্যকি চ্যাটারজি ওকে বলেন, “তোমার সামনে হুমকি দিয়েছে আর তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে গেছো? এই সব লোকেদের বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নিয়েছো? আইপিসি ধারা পাঁচশো তিন, বাড়িতে চড়াও হয়ে ধমকি দেওয়া, আইপিসি ধারা চারশো একচল্লিশ, চারশো বিয়াল্লিশ। কি ধীমান লেখো, না হলে এইবারে তোমার বিরুদ্ধে আমাকে পদক্ষেপ নিতে হবে।” ধীমানের চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। বাঘের মতন সাত্যকি চ্যাটারজি এক এক করে সবাইকে বধ করছেন।

বাপ্পা নস্কর ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে, “না মানে। আমি হলফ করে বলতে পারি যে ফারহানকে দানাই ওই হস্পিটাল থেকে সরিয়েছে।”

সাত্যকি চ্যাটারজি যেন হটাত বাপ্পা নস্করকে দেখতে পায় এমন ভাব দেখায়। ওর দিকে ভীষণ চাহনি নিয়ে তাকিয়ে বলে, “আপনি বাজারে যান?” বাপ্পা নস্কর মাথা দোলায়, “হ্যাঁ” সাত্যকি চ্যাটারজি গম্ভির কণ্ঠে বলেন, “গিয়ে দেখলেন একটা দোকানের আলু ভালো নয়। আপনি কি ওই দোকান থেকে আলু কিনবেন না অন্য দোকানে যেখানে ভালো আলু পাওয়া যাবে সেখানে যাবেন?” দানার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি সত্যি সরিয়েছো ফারহানকে?”

দানা আলতো মাথা দোলায়, “হ্যাঁ, স্যার।”

সাত্যকি চ্যাটারজি হুঙ্কার দিয়ে ওঠেন, “কেন সরিয়েছো? জানো না এটা বড় সংবেদনশীল মামলা।”

কি বলতে চাইছেন সাত্যকি চ্যাটারজি? দানা একবার মহুয়ার দিকে তাকায় একবার মহেন্দ্র বাবুর দিকে তাকায়। দুইজনে মাথা নাড়িয়ে বলে কিছুই বুঝতে পারছে না। দানার মনে হয়, সাত্যকি ওর প্রশ্নের মাঝে উত্তর দিয়ে দিয়েছেন তাই সেই উত্তর হাতড়ে উত্তর দেয়, “ফারহান আমার খুব ভালো বন্ধু। ওই হসপিটালে ওর চিকিৎসা ঠিক মতন হবে না তাই ওকে সরাতে বাধ্য হয়ছি।”

সাত্যকি চ্যাটারজি স্মিত হেসে ধীমানের দিকে তাকিয়ে বলেন, “এবারে বুঝলে কেন সরানো হয়েছে। যাই হোক গতকাল তুমি ফারহানের স্টেটমেন্ট নিয়েছো?”

ধীমান মাথা নাড়ায়, “না স্যার, মানে ডাক্তাররা বলেছিলেন যে বাহাত্তর ঘন্টার আগে ফারহানের জ্ঞান ফিরবে না।”

সাত্যকি চ্যাটারজি আবার একটা হুঙ্কার দেয়, “তাহলে এইখানে কি মেলা লেগেছে যে এইখানে এসেছো? যাও।”

ধীমান আর বাকি পুলিসেরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। নিতাই আর বাকি ছেলেরা ওদের বাড়ি থেকে মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়। ঘরে শুধু মাত্র ইন্দ্রনীল, মহুয়া আর দানার থাবার মধ্যে ছুঁচোর মতন বাঁধা পড়া বাপ্পা নস্কর, মহেন্দ্র বাবু আর সাত্যকি চ্যাটারজি। বাড়ি খালি হয়ে যাওয়ার পরে দানা বাপ্পা নস্করের ঘাড়ের ওপর থেকে হাতের বেড় হাল্কা করে। ছাড়া পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ছটফটিয়ে ওঠে বাপ্পা নস্কর।

সাত্যকি চ্যাটারজি বাপ্পা নস্করের চোখে চোখ রেখে বলে, “একবার শুধু আপনার বিরুদ্ধে প্রমান যোগাড় করা বাকি। তাহলেই...”

বাপ্পা নস্কর আমতা আমতা করে বলে, “না মানে আমি...”

দানা হিমশীতল কণ্ঠে বাপ্পা নস্করের চোখে চোখ রেখে শাসায়, “আমার পরিবারের দিকে চোখ তুলে তাকাতে চেষ্টা করবেন না একদম। চোখ উপড়ে হাতে ধরিয়ে দেব। রেল স্টেসানের পাশে আগে চোরাই চাল বিক্রি করতেন ঠিক সেইখানে বসে ভিক্ষে করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না কিন্তু বাপ্পা নস্কর।”

বাপ্পা নস্কর রাগে অপমানে গজগজ করতে করতে ইন্দ্রনীলকে সঙ্গে নিয়ে খোলা দরজা দিয়ে বেরিয়ে যায়। এতক্ষণ যেন একটা বিশাল ঝড় বয়ে গেছে ওদের বসার ঘরে। ওরা বেরিয়ে যেতেই সাত্যকি চ্যাটারজি আসল ঘটনা জানতে চান। দানা আর মহুয়া ওকে জানায় ওদের অনুমান বাপ্পা নস্কর, ফারহানের গুলি লাগার পেছনে দায়ী। ভুপেনের দেখানো ছেলেটার সম্বন্ধে চেপে যায় দানা, কারন সেই ছেলেটা ইতিমধ্যে মাছেদের খাদ্য হয়ে গেছে। দানা জানায়, যদিও ওদের হাতে কোন প্রমান নেই তবে আজকের সকালের বাপ্পা নস্করের আহত রূপ দেখে ওদের বদ্ধমূল ধারনা প্রথিত হয়। মহেন্দ্র বাবুকে না জানানোর জন্য তিনি একটু বকাবকি করেন। মনা আর পিন্টু রুহিকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। ওরা বাপ্পা নস্কর আর পুলিস দেখে বেশ ভয় পেয়ে মহেন্দ্র বাবুকে ফোন করেছিল। দানা জানিয়ে দেয় হাতে তথ্য প্রমান এলে সাত্যকি চ্যাটারজির হাতে তুলে দেবে, নিজের হাতে আইন তুলে নেবে না। কথাটা বলেই দানা আর মহুয়া চোখের ইশারায় একটু হেসে নেয়।

মহেন্দ্র বাবু আর সাত্যকি চ্যাটারজি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেই দানা আর মহুয়া হেসে ফেলে কিন্তু সেই সাথে জানে ওদের খুব সাবধানে থাকতে হবে। রক্তা রক্তির খেলা ওদের জন্য নয়। সুচতুর বুদ্ধির জোরে একে একে সবাইকে মারতে চায় ওরা। তবে মাঝে মাঝে গায়ে যে আঁচর কামড় লাগবে সেটার জন্য প্রস্তুত, ঠিক একটু আগেই যেমন একটা আঁচর লেগে গেল, যদিও রক্তক্ষরণ হয়নি। ওরা বুঝতে পারে যে ওদের ওপরে এইবারে বাপ্পা নস্কর নজর রাখবে। খুব বেশিদিন এই খেলা আর খেলা উচিত নয়, এইবারে ওদের জাল গুটাতে হবে।

সারাদিন ঝড়ের বেগে কেটে যায়। দানা আর মহুয়া বেশ লুকিয়ে চুরিয়ে নারসিং হোমে পৌঁছায়, জানে ওর পেছনে চর লেগে। তাই প্রথমে হিঙ্গলগঞ্জ, মহেন্দ্র বাবুর কাছে যায়। সেখানে ওরা ওইখানে বেশ ভুষা বদলে নকল চুল দাড়ি লাগিয়ে আর মহুয়া একটা বোরখা পরে অন্য গাড়ি করে নারসিং হোমে যায়।

ডক্টর অভিজিৎ ভুঁইয়া আর ডক্টর মানস সোম, ফারহানের জ্ঞান ফেরানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফারহান তখন পর্যন্ত অজ্ঞান। ডাক্তারেরা বেশ চিন্তিত, হৃদপিণ্ড চলছে কিন্তু খুব ধীরে। জারিনা ওর হাত ছাড়বে না কিছুতেই। গতকাল থেকে সেই যে হাতখানি ধরে ছিল আর সেটা ছাড়ানো যাচ্ছে না। ভয়, যদি হাত ছেড়ে দিলে ফারহান চিরদিনের মতন পালিয়ে যায়। ওর অবস্থা দেখে বাকিদের আশঙ্কা আরো বেড়ে যায়। মহুয়া আর ফারহানের মায়ের প্রচেষ্টা বিফল। ফারহানের সাথেই খাবার খাবে, জেদ ধরেছে মেয়েটা। মেয়েটার না কিছু হয়ে যায় শেষ পর্যন্ত। এক রাতের মধ্যে জারিনা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। উন্মাদনার শেষ সীমানায় দানা, জারিনার ওই ফোলা ফোলা লাল চোখ দেখে নিজেকে সংবরণ করতে পারে না কিছুতেই।

দুপুরে একবার নয়নার ফোন এসেছিল, ফারহানের শারীরিক উন্নতির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। দানা জানিয়ে দেয় এখন ওর চোখ খোলেনি খুব পীড়নের মধ্যে দিয়ে সময় কাটছে ওদের। নয়নার বাড়ি থেকে পাহারা উঠিয়ে পালা করে এক এক জনে নারসিং হোম পাহারা দিয়ে চলেছে। অচেনা কাউকে দেখলেই আক্রাম, নাসির, বলাই, শক্তিরা হামলে পড়ে। আই সি ইউতে অচেনা কাউকে ঢুকতেই দিচ্ছে না ওরা। নারসিং হোম আর নারসিং হোম নেই, এক দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিনত হয়ে গেছে। দুপুরের পরে ফারহানের মা আর নাফিসা বাড়িতে ফিরে যান। মহেন্দ্র বাবু ফারহানের পরিবারকে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেয়।

আগের দিনের মতন সেই বক্তৃতার ছড়াছড়ি আর টিভিতে নেই। সারাদিন বাপ্পা নস্কর এক প্রকার গৃহ বন্দী হয়ে থাকে। কোন সাংবাদিক ওর সাথে সারাদিনে কথা বলতে পারে না। মহুয়া আর দানা ভালো ভাবে বুঝে যায় যে ওদের বিরুদ্ধে বাপ্পা নস্কর ষড়যন্ত্র রচে চলেছে।

রাত দুটো বাজে। রুহি হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে কাদা। দানা অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু মহুয়া তখন জেগে। ঘুমন্ত দানার হাতখানি বুকের কাছে আঁকড়ে ধরে চিন্তা মগ্ন, কিন্তু মাথা একদম খালি।

ঠিক সেই সময়ে কলিং বেল বেজে ওঠে। ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসে দানা আর মহুয়া। চোখে মুখে ছাপিয়ে ওঠে উৎসুক উত্তেজনা, এত রাতে কে এলো? কান পেতে শোনে আওয়াজ। এইবারে কলিং বেল নয়, খুব ধীরে দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ। মহুয়া ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “কে এলো?” দানা উঠে দাঁড়িয়ে পায়জামা গলিয়ে ওকে অভয় প্রদান করে। বিছানার পাশের ক্যাবিনেট থেকে পিস্তল বের করে হাতে তুলে নেয়। মহুয়া সঙ্গে সঙ্গে একটা মোটা গাউন চড়িয়ে নেয়। চরম উৎকণ্ঠায় ওর বাজু খামচে ধরে। বুকের মধ্যে উত্তেজনার হাতুড়ি পিটতে শুরু করে মহুয়ার। রুদ্ধশ্বাসে দানা বসার ঘরের দিকে খোলা পিস্তল হাতে এগিয়ে যায়। সদর দরজার ওপরে একটা ছোট সারভিলেন্স ক্যামেরা লাগানো আছে। দরজার পাশেই তার ছোট স্ক্রিন। স্ক্রিনে আগন্তকের ছবি দেখে দানা হতভম্ব হয়ে যায়। সহস্র প্রশ্ন মাথার মধ্যে কিলবিল করে ওঠে। এত রাতে, একা, হটাত, কেন?
 
পর্ব চোদ্দ – রক্তের খেলা (#4-104)

মহুয়া ভুরু নাচিয়ে প্রশ্ন করে, “কে এসেছে?”
হতবাক দানা ফিসফিস করে উত্তর দেয়, “ইন্দ্রনীল।”
“একা?”
“হ্যাঁ।”
“কি চায়?”
“আমি কি জানি। তুমি ভেতরে গিয়ে একটা কিছু পর আমি দেখছি।”

দরজা না খুলেই দানা জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার এতরাতে কেন?”
দরজার কাছে মাথা এনে ফিসফিস করে উত্তর দেয় ইন্দ্রনীল, “দরজা খোল কথা আছে।”
দানা গম্ভির কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “ফোনে বল।”
ইন্দ্রনীল বলে, “ফোনে বলা যাবে না, দানা। দরজা খোল।”

মহুয়া ততক্ষণে একটা সালোয়ার কামিজ পরে নিয়ে তারপরে গাউন জড়িয়ে বসার ঘরে ঢুকে পড়ে। পিস্তল শক্ত করে ধরে দরজা খোলে দানা। সঙ্গে সঙ্গে দরজায় এক ধাক্কা মেরে চোরের মতন ঘরে ঢুকে পড়ে ইন্দ্রনীল। দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে মহুয়া আর দানার দিকে তাকায়। দানার হাতে পিস্তল দেখে একটু ভয় পেয়ে যায়।

মহুয়ার দিকে মাথা নুইয়ে কাঁপা কণ্ঠে বলে, “সরি ম্যাডাম এত রাতে এসেছি, তা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।”

দানা কঠিন কণ্ঠে বলে, “এদিক ওদিক না ঘুরে সোজা কথা বল, এতরাতে কেন এসেছিস?” বাপ্পা নস্করের কোন লোকের ওপরে দানার একফোঁটা বিশ্বাস নেই।

ইন্দ্রনীল ওকে বলে, “প্লিস দানা আমাকে ভুল বুঝিস না।” দানা আর মহুয়া মুখ চাওয়াচাওয়ি করে, কি বলতে চাইছে ইন্দ্রনীল? ইন্দ্রনীল বলে, “ফারহানের খুনের পেছনে বাপ্পা নস্করের হাত আছে। এটা খুব বড় একটা চাল, আসন্ন নির্বাচনে ভোট পাওয়ার জন্য এই জঘন্য খেলা খেলেছে বাপ্পা নস্কর। ফারহানের গুলি লাগার পর থেকেই আমি আর আমার পরিবার খুব ভয়ে ভয়ে আছি।”

দানা হিমশীতল কণ্ঠে বলে, “আমার সাথে ছলনার খেলা খেলতে চেষ্টা করিস না ইন্দ্রনীল। আমি জানি বাপ্পা নস্কর ফারহানকে খুন করার চেষ্টা করেছে। তুই এতরাতে কেন এসেছিস? আমাদের ওপরে চর গিরি করতে তোকে পাঠিয়েছে?” পিস্তল খানা তখন পর্যন্ত ওর হাতে।

ইন্দ্রনীল ওকে বলে, “না না না, আমি ওর চরগিরি করতে তোর এখানে আসিনি। শুধু তোকে সাবধান করতে এসেছি। বাপ্পা নস্কর কিন্তু তোদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তোর বাড়ির ওপরে নজর রেখেছে। ম্যাডাম আর মেয়েকে কোথাও সরিয়ে দে।”

দানা ঠাণ্ডা মাথায় ওকে বলে, “তোকে বিশ্বাস করার কোন কারন আমি খুঁজে পাচ্ছি না ইন্দ্রনীল। তোর বাপ্পা নস্করকে জানিয়ে দিস, আমার পরিবারের দিকে তাকালে ওর গলা নামিয়ে দেব আমি।”

ইন্দ্রনীল মহুয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, “ম্যাডাম আপনি বলুন, আমি যদি বাপ্পা নস্করের দলের হবো তাহলে কেন রাত দু'টোতে অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে আপনার বাড়িতে আসব? আমি সত্যি বলছি ম্যাডাম, ফারহানের ঘটনার পরে আমি খুব ভয় পেয়ে গেছি। নিজেকে বাঁচাতে আমি আপনাদের সাহায্য করতে চাই। এতদিনের পুরানো ড্রাইভারকে যদি বাপ্পা নস্কর নিজের স্বার্থে এমন ভাবে মারতে পারে তাহলে নিজের স্বার্থে আমাকেও একদিন মেরে ফেলতে কুণ্ঠা বোধ করবে না।”

দানা ক্রুর হেসে বলে, “তোর সাহায্য আমি চাই না, তোকে কোথায় পাঠাবে সেই নিয়ে আমার কোন মাথাব্যাথা নেই। আমার অনেক লোক আছে এমনকি পুলিসের ডেপুটি কমিশনার সাত্যকি চ্যাটারজি আমার চেনা। সুতরাং আমার টিকি ছোঁয়ার আগে তোর বাপ্পা নস্কর দশ বার ভাববে।”

ইন্দ্রনীল ম্লান হেসে বলে, “আজকেই দেখেছি তোর আসল ক্ষমতা। তুই ওকে যমের বাড়ি পাঠা আর যেখানে খুশি ইচ্ছে পাঠা আমার তাতে কোন ক্ষতি নেই। আমি শুধু তোকে সাবধান করতে এলাম ব্যাস।” মহুয়ার দিকে তাকিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে, “ম্যাডাম, প্লিস আমার কথা একটু বিশ্বাস করুন।”

মহুয়া ওকে একটা সোফায় বসতে বলে দানাকে অনুরোধ করে ওর কথা শোনার জন্য। ইন্দ্রনীলের চোখে মুখে চাপা উত্তেজনার ছাপ, সেটা মেকি না সত্যি বলা মুশকিল। মহুয়া ওর উলটো দিকের সোফায় বসে ফারহানকে খুনের পেছনের আসল উদ্দেশ্য জিজ্ঞেস করে। ইন্দ্রনীলের কথা শুনে দানার শরীর জ্বলে ওঠে।

ইন্দ্রনীল বলে, “নিতাই, বাইরে থেকে একটা ভাড়া করা গুন্ডা এনে ফারহানকে খুন করিয়েছে। আসল উদ্দেশ্য বিরোধী পক্ষকে আক্রমন করা। তোরা গত কালের বক্তৃতা শুনিস নি? কেমন ভাবে নেচে কুঁদে চিৎকার চেঁচামেচি করছিল।” দানা মহুয়া গতকাল ফারহানের জন্য চিন্তিত ছিল, ওরা টিভিতে বাপ্পা নস্করের জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেখার সময় পায়নি। ইন্দ্রনীল মোবাইলে তোলা গতকালের বক্তৃতার ভিডিও দেখায়। ফারহানের গুলি লাগার কিছুক্ষণ পরেই বাপ্পা নস্কর মঞ্চে উঠে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেয়। “বিরোধী পক্ষ চায় না এই রাজ্যে ধার্মিক শান্তি বজায় থাকুক, বিরোধী পক্ষ চায় অরাজকতা, ধর্মের নামে মারদাঙ্গা। আমরা শাসক দল সেটা কিছুতেই হতে দেব না। আজকে আমার চার বছর পুরানো অতি বিশ্বস্ত ড্রাইভার ভাই, ফারহানকে গুলি করা হয়েছে। কালকে ফারহানের ভাই বন্ধুদের গুলি করে মারা হবে। এটা আমরা কিছুতেই হতে দিতে পারি না। বিমান চন্দ, দুলাল মিত্র জঘন্য রক্তের খেলায় মেতে উঠেছে। জনগণ আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন। আমাদের দেশ ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ, সব ধর্মের মানুষকে আমরা সমান চোখে দেখি। তবে আমার ভাই সমান ফারহানকে কেন গুলি করতে গেল? আমাকে গুলি মারতে পারতো ওরা। আমি এই দেশের স্বার্থে এই জনগনের স্বার্থে বুকে গুলি খেতাম। না, ওদের লক্ষ্য আমার ভাই সমান ফারহান ছিল। বন্ধুগণ, মায়েরা, বোনেরা, ভাইয়েরা, এই খুনের প্রতিকার আমাদের চাই। আসল খুনি ধরা পড়ুক এটাই আমরা চাই......” ইত্যাদি ইত্যাদি...

দানার কান গরম হয়ে যায়, সেই সাথে মহুয়া চোখ বুজে নেয়। ক্ষোভে বিতৃষ্ণায় ঘৃণায় ওর চোখে জল চলে আসে। সত্যি এত নীচ এই রাজনীতি, থুড়ি দুর্নীতি। দানার হাত মুঠি হয়ে, ফারহানকে গুলি মারার আসল কারন ওর সামনে পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রচন্ড ক্ষোভে ফেটে পড়ে দানা, চোয়াল চেপে নিজের কপালে করাঘাত করে।

ওদের দিকে স্মিত হেসে ইন্দ্রনীল বলে, “সাত্যকি চ্যাটারজিকে তোর বাড়িতে দেখে বাপ্পা নস্কর একদিনে গর্তে ঢুকে গেছে মাইরি। শালার হাত পা থরথর করে কাঁপছে, শালা কারুর সাথে কথা বলা দুরের কথা, দেখা পর্যন্ত করছে না।”

মহুয়া আর দানা তখনো পর্যন্ত ওকে বিশ্বাস করে না। হতে পারে এটা বাপ্পা নস্করের একটা চাল তাই বাঁকা হাসি হেসে বলে, “দ্যাখ ইন্দ্রনীল, তুই এতরাতে একা এসেছিস বলেই যে তোকে বিশ্বাস করে নেব এমন গরু আমরা নই।”

ইন্দ্রনীল ম্লান হেসে বলে, “সেটা তোদের ওপরে দানা। তবে ফারহানের এই ঘটনার পরে সত্যি আমি খুব বিচলিত হয়ে পড়েছি বিশেষ করে আমার মা আমার স্ত্রী খুব ভয় পেয়ে গেছে।”

দানা বাঁকা হেসে উত্তর দেয়, “আচ্ছা, এতদিন যখন এত লোককে খুন করছিল তখন এইসব মাথায় আসেনি তোর? এখন যেহেতু ফারহান আহত হয়েছে তখন টনক নড়েছে? তুই এতদিন ওর সাথে থেকে কাজ করেছিস। ওর নাড়ি নক্ষত্রের সম্বন্ধে সব কিছু জানিস। তাহলে সেটাই কাজে লাগা ওর বিরুদ্ধে, ব্যাস।”

ইন্দ্রনীল উত্তর দেয়, “করতে চাইলেই করা যায় না। নিতাই আসলে ওর খুড়তুতো ভাই, তাই ছায়ার মতন ওর পাশে ঘোরাফেরা করে।”

বলে এক এক করে সব কিছু বলতে শুরু করে ইন্দ্রনীল। ঠিক যা যা, সঙ্গীতা তদন্ত করে উজাগর করেছে সব কিছু ইন্দ্রনীলের মুখে শোনে। দানা হেসে উত্তর দেয় এই সবকিছু আগে থেকেই জানে। সেই শুনে ইন্দ্রনীল আরো বিস্মিত হয়ে যায়। জিজ্ঞেস করে তাহলে এতদিন ওকে কেন কোণঠাসা করেনি? উত্তরে দানা জানায় সময়ে অপেক্ষায় ছিল আর বাপ্পা নস্কর যেহেতু ওকে সরাসরি কোন আঘাত হানেনি তাই ওকে এতদিন ওর বিরুদ্ধাচরণ করেনি। তবে এইবারে ঘা একদম হৃদয়ে লেগেছে তাই দানা এর প্রতিশোধ নেবে। দানাকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দেয় ইন্দ্রনীল, কিন্তু অত সহজে ভোলার মানুষ মহুয়া আর দানা নয় তাই জানিয়ে দেয় সময় হলে ওর সাহায্য নেবে।

ইন্দ্রনীল চলে যাওয়ার পরে মহুয়া আর দানা অনেকক্ষণ বসার ঘরে বসে থাকে, ভাবে এইবারে জাল উঠিয়ে নেওয়া উচিত। এতদিন যাদের ওপরে নজর রেখছিল তারা কখন কোন দিক থেকে আঘাত হানবে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে বাপ্পা নস্কর বাড়ি এসে হুমকি দিয়ে গেছে সুতরাং খুব শীঘ্র একে সরাতে হবে। নয়না আর বিমান ওদের সম্পর্কে সব কিছু জেনে গেছে, সুতরাং আশঙ্কায় বুক দুরুদুরু করে ওঠে। এমন কিছু একটা করতে হবে যাতে অনেকে একসাথে শেষ হয়ে যায়।

মহুয়ার বেশ কিছুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে বলে, “বিমান আর বাপ্পাকে সামনা সামনি দাঁড় করিয়ে দাও, তাহলে দুইজনা দুইজনকে মেরে ফেলবে। ওইদিকে নয়নাকে একা মারলে চলবে না। সুমিতা আর সমুদ্র ওর খুব কাছের লোক। ওদেরকে কিছু করে সরাতে হবে না হলে ভবিষ্যতে আমাদের ওপরে হামলা করতে পারে। বিমান মরে গেলেই সিমোনে আর মোহন ক্ষেপে উঠবে তখন কিছু একটা করে ওদের সরাতে হবে। সেটা পরে ভাবা যাবে তবে আগে বাপ্পাকে সরানো খুব দরকার।”

দানা বাঁকা হেসে বলে, “তুমি এমন ভাবে বলছো যেন আমি ওদের বলব আর ওরা একে ওপরের সামনে চলে আসবে। ছেলের হাতে মোয়া আর কি তাই না?” তারপরে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে বলে, “তুমি শুতে যাও আর আমাকে একটু চিন্তা করতে দাও।”

মহুয়া হেসে ওকে জড়িয়ে বলে, “রাত পোহালে বুদ্ধি বাড়ে। সিগারেট শেষ করে আমার সাথে শুতে চল।”

সিগারেট টানতে টানতে দানার মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়, মহুয়াকে সবিস্তারে নিজের পরিকল্পনা বুঝিয়ে বলে। সব থেকে আগে নয়না আর বিমান চন্দের গোপন সম্পর্কের বিষয়টা বাপ্পার কানে তুলতে হবে আর সেটা নিতাইকে দিয়ে করাতে হবে। নিতাই নিশ্চয় মাঝে মাঝে মদ খায়, অথবা পান বিড়ি খায়। সেইখানে দানার ছেলেরা জটলা পাকিয়ে গল্পে গল্পে নয়না আর বিমানের গোপন সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করবে। সেই কথা নিতাইয়ের কানে গেলেই বাপ্পার কাছেও পৌঁছে যাবে। বাপ্পা নস্কর নিশ্চয় নিতাইকে বলবে নয়নার ওপরে নজর রাখতে। সেই সময়ে দানা একটু সাবধান করে দেবে নয়নাকে। কিছুদিন পরে দানা, নিজেই নয়নাকে বিমানের সাথে দেখা করার জন্য উস্কিয়ে দেবে, বলবে বাপ্পা নস্করকে হুমকি দিয়েছে তাই এত শান্ত হয়ে গেছে। বিমান চন্দ, নয়না দুইজনে বেশ খুশি এই ফাঁকে ওদের ওই বাগান বাড়িতে দেখা করার কথা উঠাবে দানা, আর যাতে সঙ্গে সমুদ্র আর সুমিতা থাকে সেই কথাও বলবে। ও বলবে সবাই মিলে একরাত চুটিয়ে মজা করতে চায়। নয়না এই ফাঁদে নিশ্চয় পা দেবে সেই সাথে বিমান চন্দ পা দেবে। ওইদিকে নিতাই যেহেতু নয়নার ওপরে নজর রেখে চলেছে সুতরাং যেই নয়না ওই দুর বাগান বাড়িতে পৌঁছাবে সঙ্গে সঙ্গে ওই খবর বাপ্পা নস্করের কানে পৌঁছে যাবে। একাকী নির্জন নিরালা বাগান বাড়িতে বিমান চন্দ আর নয়নাকে একসাথে খুন করার লোভ বাপ্পা নস্কর ছাড়তে পারবে না। নিতাই আর বেশ কয়েকজন বিস্বস্ত ছেলে নিয়ে বাগান বাড়িতে গিয়ে খুনোখুনি করবে। সবাই শেষ, বাকি যারা বেঁচে থাকবে তাদের দানার ছেলেরা শেষ করে দিয়ে বেরিয়ে চলে আসবে। সবাই ভাববে গোষ্ঠি দ্বন্দে দুই রাজনেতা, অভিনেত্রী প্রান হারিয়েছে আর বাকিরা প্রান হারিয়েছে।

মহুয়া সব শুনে মুচকি হেসে বলে, “বউয়ের কথা মাঝে মাঝে শুনতে হয় বুঝলে। এইবারে কাল সকালে যা করার কোরোখানে।” বলে এক প্রকার কোলের ওপরে ঢলে পড়ে। সকাল পাঁচটা বাজতে যায় তখন।

ঘুম থেকেই উঠতে দেরি হয়ে যায় দানার। ফারহানের অবস্থার এখন কোন পরিবর্তন নেই, অফিসে যাওয়া একপ্রকার বন্ধ হয়ে গেছে। ভুপেন খবর দিয়েছে, নিতাইয়ের একজন ছেলে নাকি ওর বাড়ির ওপরে নজর রেখে চলেছে। ভুপেন আরো জানায় বাপ্পা নস্কর গতদিন আর বাড়ি থেকেই বের হয়নি। ইন্দ্রনীল নিতাই আর কয়েকজন বিশ্বস্ত কর্মী ছাড়া আর কারুর সাথে দেখা পর্যন্ত করেনি। দানা চিন্তায় পড়ে যায়, ইন্দ্রনীলকে বিশ্বাস করা উচিত না অনুচিত। জল্পনা করে কি ভাবে নিতাইয়ের কানে নয়না আর বিমানের গোপন সম্পর্কের বিষয় তোলা যায়, সেই সাথে নয়না আর বিমানকে কিভাবে বাকিদের সাথে ওই দুর গ্রামের বাগান বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ফেলা যায়।

দানা বিকেলের দিকে ডাক্তারদের ফোন করে আর বাকিদের ফোন করে ফারহানের শরীর স্বাস্থের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করে। অন্তত ফারহান চোখ না খোলা পর্যন্ত স্বস্তি নেই, জারিনা সকালের দিকে একটুখানি নাকি ঘুমিয়ে পড়েছিল ওই পায়ের কাছে মাথা দিয়ে। যাক মেয়েটা দুইদিন পরে একটু ঘুমিয়েছে তাহলে। চারপাশে সব কিছু এঁটে বসে গেছে।

এমন সময়ে নয়নার ফোন, “কি ব্যাপার তোমার? গতকাল থেকে বাপ্পা নস্কর একদম ঘুম মেরে গেছে?” হেসে জিজ্ঞেস করে, “একদম আছোলা বাঁশ ঢুকিয়ে দিয়েছো নাকি ওর পোঁদে?”

দানা বাঁকা হেসে বলে, “হ্যাঁ সেই রকম। তা বিমান আর মোহন কেমন আছে?”

নয়না উত্তর দেয়, “গতকাল থেকে অনেক ভালো মতিগতি। এইবারে বাপ্পার বিরুদ্ধে নামার পরিকল্পনা করো আর কি। সামনের সপ্তাহে বাপ্পা নস্করের আরো একটা পথসভা আছে। লোহা গরম, এই সুযোগে হাতুড়ি পিটিয়ে দাও দানা।”

দানা মুচকি হাসে, “হ্যাঁ সেটাই করতে চলেছি।” মনে মনে হাসে, এইবারে সবাইকে একসাথে এক জায়গায় এনে ফেলতে চায়। একে ওপরে হাত দিয়ে মারতে চায়। দানা ওকে বলে, “আরে শোনোনা, বিমানকে বলো একটু মস্তি করা যাক। বিমান, তুমি, আমি, সুমিতা সমুদ্র সবাই মিলে ওই গ্রামের বাগান বাড়িতে।”

নয়না মুচকি হেসে বলে, “আবার কি করতে চাও, বলতো?”

দানা মাথা চুলকিয়ে হেসে বলে, “আরে না না... বিমান থাকবে সমুদ্র থাকবে। এই দেখো মেয়ের কান্ড, তুমি সেদিন নিজে থেকে বলেছিলে বলেই একটু রগরগে সঙ্গম ধর্ষকাম হয়ে গেছিলো, নাহলে আগে কি কোনোদিন তোমার সাথে করেছি ওই সব।”

নয়না মুচকি হেসে বলে, “শয়তান ছেলে, পাশে মিসেস নেই মনে হচ্ছে।”

মহুয়া পাশেই বসে ছিল আর ওদের কথোপকথন বেশ মন দিয়ে শুনছিল। কি চক্রান্ত দানা ফাঁদছে সেটা জানা দরকার, না হলে চোখের ইশারায় কখন কি করতে হবে সেটা বুঝবে কি করে। দানা মহুয়াকে কোলের কাছে জড়িয়ে বলে, “না না, মিসেস আর রুহি একটু বেরিয়েছে তাই তোমার সাথে একটু কথা বলতে পারছি।”

নয়ন ওকে বলে, “ভালো একটা পরিকল্পনা ফেঁদেছো। হ্যাঁ একটা আলোচনার দরকার আছে। মানে কি করে এরপরের পথসভায় তুমি কাজ করবে সেটা একটু বিষদে জানতে ইচ্ছে করছে। এইবারে একসাথে হলে, সুমিতাকে বিমানের কোলে ফেলে দেব, নে শালা করবি কর। সুমিতাও নতুন একটা বাঁড়া পাবে আর আমি আর তুমি ব্যাস।”

মহুয়া কটমট করে দানার দিকে তাকায়, ওই চাহনি দেখে ক্ষণিকের জন্য দানা কেঁপে ওঠে কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সামলে নয়নাকে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, একদম সারা রাত ধরে। তবে কি জানো, আমার মনে হয় পরের সপ্তাহে এই মস্তির পার্টি রাখলে ভালো হয়। এখন লোহা গরম আছে সুতরাং বাপ্পাও গরম আছে। এখন তুমি একটু চুপচাপ থাকো।” দানার আসল উদ্দেশ্য আগে নিতাইয়ের কানে খবর পৌঁছানো। সেটা হয়ে যাওয়ার পরে নয়নাকে খেলানো। নয়না উত্তরে জানিয়ে দেয় পরের সপ্তাহে বিমানের সাথে ওই বাগান বাড়িতে দেখা করার চেষ্টা করবে। দানার হাতে বেশি দিন সময় নেই, যত তাড়াতাড়ি ওর চাল ধরার আগেই সবাইকে জালে গুটাতে হবে।

মহুয়া কিছুক্ষণ দানার দিকে কটমট করে তাকিয়ে থাকে। তারপরে একটু ভেবে ওকে বলে, “এখুনি নয়নাকে শেষ কোরো না। ওর সাহায্যে, সিমোনে আর মোহনকে আমরা কুপোকাত করতে পারবো। নয়নাকে আরও কয়েকদিন বাঁচিয়ে রাখতে হবে।”

দানা জিজ্ঞেস করে, “অর্থাৎ?”

মহুয়া মুচকি হেসে বলে, “সময় হলে জানিয়ে দেব। এখন ঘুমাও।”
 
পর্ব চোদ্দ – রক্তের খেলা (#5-105)

দানার লোকজনকে নিতাই ঠিক ভাবে চেনেই না, চেনার কথাও নয়। তাই ওর বেশ সুবিধে হয়। আক্রাম নাসির শক্তি বলাই এমন আরও অনেক জনকে পালা করে নিতাইয়ের পেছনে লাগিয়ে দেয়। নিতাই যেহেতু সবসময়ে বাপ্পা নস্করের সাথে সাথে থাকে সুতরাং ওকে চিনতে কারুর কষ্ট হয় না। পানের দোকানে, চায়ের দোকানে, মদের আড্ডায় নিতাইকে অনুসরন করতে নির্দেশ দেয় দানা। নিজেদের কথার ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মাঝে নয়না আর বিমানের গোপন সম্পর্কের ব্যাপারে বলতে নির্দেশ দেয়। ভুপেন দানাকে জানায় যে নিতাইয়ের কানে যে খবর পৌঁছাতে চেয়েছিল দানা সেটা শুধুমাত্র পৌঁছায়নি, একেবারে মজ্জাগত হয়ে গেছে তবে নিতাই নিজে থেকেই নয়নার ওপরে নজর রেখে চলেছে। সত্যতা যাচাই না করে বাপ্পা নস্করকে খবর দিতে চাইছে না। বড় মুশকিল হয়ে গেল। বাপ্পা নস্করের কানে খবর না পৌঁছালে ওর মাথায় রক্ত কি করে চড়বে? দানার পরিকল্পনা সম্পূর্ণ ভেস্তে যাবে। এইখানে ইন্দ্রনীল সাহায্য করতে পারে হয়তো।

মহুয়াকে বুঝিয়ে বলে যে একবার অন্তত নয়নার সাথে দেখা করতে হবে ওকে। দেখা করে নিজেদের কিছু একান্ত মিলনের সহবাসের ছবি তুলতে চায়। আর সেই ছবি ইন্দ্রনীলের সাহায্যে বাপ্পা নস্করের কাছে পৌঁছে দিতে চায়। মহুয়া একটু মনঃক্ষুণ্ণ হলেও জানে ওর ভালোবাসা ওর কাছেই ফিরে আসবে তাই গররাজী হয়েও সম্মতি দিয়ে দেয়।

বেশ ভুষা বদলে নারসিং হোমে গিয়ে দেখে অবশেষে ফারহান চোখ খুলেছে। জারিনার খুশির জোয়ার দেখে কে, দানা মহুয়াকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে। ফারহানের মা স্বস্তির শ্বাস নেয় অবশেষে। এমত অবস্থায় ওকে বলা যাবে না কে ওকে মারার চেষ্টা করেছে, কারন ফারহান এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেনি।

দানা ওর পাশে বসে কানেকানে বলে, “কি রে বোকাচোদা কতদিন এইভাবে শুয়ে থাকবি তুই? বিয়ে করতে হবে না? জারিনাকে চুদতে হবে, লিঙ্গ চোষা শেখাতে হবে আরো কত কি বাকি আছে রে, শালা হারামি। ওঠ তাড়াতাড়ি ওঠ।”

কোনরকমে হেসে ফেলে ফারহান, “বাঁচিয়েই আনলি তাহলে বল।”

ওর ক্ষীণ কণ্ঠস্বর শুনে দানার চোখ ফেটে জল চলে আসে। কানেকানে বলে, “কুত্তা, তোর জন্য নয়, জারিনার জন্য তোকে ফিরিয়ে এনেছি, না হলে শালা আমি নিজে হাতে তোকে মেরে ফেলতাম।”

নারসিং হোমে একটা খুশির আমেজ। ডক্টর মানস সোম আর ডক্টর অভিজিৎ ভুঁইয়া জানিয়ে দিয়েছেন ফারহানের সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরো দিন দশেক লাগবে, তারপরে যদি স্বাস্থের উন্নতি হয় ছেড়ে দেবেন। দানা ডাক্তারদের অশেষ ধন্যবাদ জানায়।

এর মাঝে বিমান চন্দের সাথে অথবা মোহন খৈতানের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়নি দানার। কাজে যেতে পারেনি বেশ কয়েকদিন। নারসিং হোম থেকে বেরিয়ে সোজা কাজের জায়গায় চলে আসে। মহুয়া আর রুহি নারসিং হোমে থাকে। মনা আর পিন্টুকে বারেবারে বলে দেয় যেন এক বিন্দুর জন্যেও মহুয়া আর রুহিকে চোখের আড়াল না করে। মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় মনা আর পিন্টু, যদি একটা মশা পর্যন্ত কাছে আসে তাহলেও তাকে মৃত্যু বরন করতে হবে।

নয়না নতুন সিনেমার কাজে বেশ ব্যাস্ত, কিন্তু ওর সাথে দেখা করা খুব জরুরি। দানা কোনোদিন নিজেদের একান্ত মুহূর্তের ছবি তোলেনি তবে এই বারে তুলতে হবে নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য।

নয়নাকে ফোন করে দানা, জানায় একবার দেখা করতে চায়। কারন জানতে চাইলে জানায়, এই বাপ্পা নস্করের ব্যাপারে একটু কথা বলতে চায়। নয়নাকে এই কয়দিনে মোহন খৈতান আর বিমান চন্দ সমানে কড়া কথা বলে তিতিবিরক্ত করে দিয়েছে। নয়নাকে প্রবোধ দিয়ে বলে, ওদের শান্ত করতে।

সন্ধ্যের পরে দানা নয়নার বাড়িতে পৌঁছায়। এতোকিছু ঘটে যাওয়ার পরে নয়না ঠিক ভাবে দানাকে বিশ্বাস করতে পারে না, আর সেটা দানা বেশ ভালো ভাবেই বুঝতে পারে।

দানা ওর চোখের ওপরে চোখ রেখে মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করে, “বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তাই না, নয়না?”

ধূর্ত নয়না মিচকি হেসে বলে, “হ্যাঁ, সেটা বটেই। তুমি কি চক্রান্ত করছো সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।”

দানা মাথা নাড়িয়ে চোখ টিপে বলে, “আমি আজকে একটু তোমাকে একা পেতে এসেছি।”

নয়না হাঁ করে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে, “কেন মিসেস কোথায়?”

দানা বাঁকা হেসে সিগারেট ধরিয়ে মাথা চেপে বলে, “ধুস শালা সব দিন এক ক্যাচাকেচি। আর ভালো লাগে না বুঝলে। বাড়িতে সিগারেট খাওয়া চলবে না, সাইট থেকে ঠিক সময়ে বাড়ি ফিরতে হবে, বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারা চলবে না... ইত্যাদি ইত্যাদি। আর ঠিক তাল মেলাতে পারছি না নয়না।”

নয়না ওর পাশে এসে বসে বলে, “ভেতরে যাবে?”

নয়নার পাতলা কোমরে হাত রাখে দানা, কাছে টেনে বলে, “হুইস্কি আছে, না তুমি নেশা চড়াবে?”

নয়না ওর কাছে ঘন হয়ে এসে বলে, “কোন নেশা ঠিক চাও, আমাকে না হুইস্কি? সেদিন মোহনের বাগান বাড়ি থেকে আসার সময়ে ভাবলাম তুমি গাড়িতে কিছু করবে কিন্তু এত ঠাণ্ডা দেখে মনে হলো তুমি অন্য দানা।”

ওর গালে টোকা দিয়ে বলে, “দানা সেই আগের মতন আছে নয়না শুধু সময় বদলে গেছে।”

নয়না হেসে বলে, “আচ্ছা তাই নাকি?”

দানা হেসে বলে, “হুম। জানো বাপ্পা নস্কর এখন আমার বাড়ির ওপরে নজরদারি রেখেছে।”

নয়না অবাক হয়ে যায়, “তোমার বাড়ির ওপরে, কেন?”

দানা দাঁতে দাঁত পিষে বলে, “শালাকে বলে দিলাম যে আমি ওর গোপন খবর জানি, কোথায় কি কি কুকর্ম করেছে সেটা সব জানি।” তারপরে সঙ্গে সঙ্গে হেসে বলে, “যদিও আমার কাছে কোন তথ্য প্রমান নেই তবুও ওর দিকে তেড়ে যেতে দোষ কি? তাই না বলো। যেমনি বলা তেমনি কাজ, দেখো প্রথম দিনে কত তড়বড়িয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিল শালা মাদারচোদ আর তারপরে একদম চুপ মেরে গেছে।”

নয়না ওর কানেকানে ফিসফিস করে বলে, “চলো তাহলে রাতে একটা ভালো হোটেলে যাই, ডিনার করবো আর তারপরে কামরায় একসাথে...” চোখ টিপে বলে, “মিসেসকে কি বলবে?”

না রাতের মধ্যে এই ছবি ইন্দ্রনীলের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, রাতে ওর সাথে কাটালে চলবে না, কিন্তু সুন্দরীর ধূর্ত মস্তিস্ক একবার যদি ওর চাল পড়ে ফেলে তাহলে ওর সব পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। মহুয়াকে একটা মেসেজ করে জানিয়ে দেয় রাতে বাড়ি ফিরবে না। মহুয়া খুব রেগে যায় ওই খবর পেয়ে, অভিমানী মুখ ফুলিয়ে বসে যায়। দানার উভয়সঙ্কট, একদিকে প্রেয়সীর অভিমান একদিকে সুন্দরী লাস্যময়ী নয়নার সঙ্গ। কাকে ছাড়বে দানা? শেষ পর্যন্ত ঠিক করে না রাতে মহুয়ার কাছেই ফিরে যাবে তবে নয়নাকে একটু খেলিয়ে তবেই যাবে। একটা মেসেজ করে দিল মহুয়াকে যাতে দুই ঘন্টা পরে ওকে ফোন করে। ছোট্ট একটা উত্তর এলো, “ঠিক আছে।”

কাজের মেয়েরা মনে হয় নিজের নিজের কাজে ব্যাস্ত। দানা নিজেই উঠে গিয়ে দুই গেলাসে মদ ভরে আনে। ঠোঁটে কামুকী ক্ষুধার্ত এক হাসি মাখিয়ে নয়না ওর পাশে এসে দাঁড়ায়। চোখের তারায় আসন্ন কাম লীলার উত্তেজনার ঝিলিক। এক সুন্দরী স্ত্রীর হাত থেকে এক সুঠাম পুরুষকে ছিনিয়ে নিয়েছে সেই জয়ের ঝিলিক সারা অঙ্গে। দুরন্ত সহবাসের আগের মুহূর্তের কামোত্তেজনার জোয়ার ওর অঙ্গে অঙ্গে। এক ঢোঁকে মদের গেলাস অর্ধেক করে দেয় দানা, হাতে সময় কম আর ছবি না তুলে চলে যাওয়া যাবে না।

ছোট ছোট চুমুকে মদের গেলাস খালি করে দানার দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তর সইছে না তাই না?” নয়নার কোমর জড়িয়ে একপ্রকার মাটি থেকে তুলে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে দানা। কোমল লাস্যময়ী দেহ পল্লব পিষে ধরে ফিসফিস করে জানিয়ে দেয়, আর সবুর সইছে না দানার। এতক্ষণ কোলে চড়ে আসার ফলে বুকের মাঝের তীব্র কামনার আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। নয়নার চোখে তীব্র কামনার আগুন, নিচের ঠোঁট চেপে লাস্যময়ী কামুকী হাসি দিয়ে দানার দিকে তাকিয়ে। কারুর মুখে কোন কথা নেই, শুধুই চোখে চোখে কথা হয়।

নিভৃত শোয়ার ঘরে ঢুকেই দানা, কোমল লাস্যময়ী নয়নার ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে। একটানে পরনের ঢিলে টপ খুলে দেয়। দুই উন্নত স্তন জোড়া একটা সাদা ব্রার বাঁধন থেকে মুক্তি পাবার জন হাঁসফাঁস করতে থাকে। দানা একটা রুমাল দিয়ে নয়নার চোখ বেঁধে বলে, “আজকে শুধু চোখ বেঁধে দেব।”

নয়না সানন্দে ওর চোখের ওপরে রুমাল বেঁধে নেয়। ওর বুকের ওপরে হাত রেখে এক এক করে জামার বোতাম খুলতে খুলতে মিহি কামঘন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে তোমার? এত বেশি উত্তেজিত কেন? আবার ধর্ষকামে আমাকে নাস্তানাবুদ করতে চাও নাকি?”

দানা ওর জিন্সের প্যান্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলে, “না না, শুধুমাত্র একটু আদর করতে চাই। তুমি না, এখন ওইসব মনে রেখেছো দেখছি।”

ঠোঁট কেটে কামুকী হাসি দিয়ে বলে, “বাপরে ওই ভাবে কেউ আজ পর্যন্ত আমাকে উত্তেজিত করেনি। তবে একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম, শেষ পর্যন্ত কি করবে আর।”

দুইজনে প্রায় উলঙ্গ হয়ে যায়, পরনে শুধু অন্তর্বাস, বাকি পোশাক মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। নয়নাকে দেয়ালের সাথে পিষে ধরে দানা, খোলা মসৃণ পিঠে, পাছায় হাত বুলিয়ে আদর করে চটকে দেয়। বাসনার আগুনে প্রজ্বলিত নয়না, ওর মাথার চুল মুঠি করে ধরে ফেলে। ওর মাথা টেনে নামিয়ে, পুরু কালো ঠোঁটে গোলাপি নরম ঠোঁট বসিয়ে দেয়। দানার প্রশস্ত ছাতির সাথে নয়নার কোমল স্তন জোড়া পিষে যায়, পেটের সাথে পেট। দুই পেলব পুরুষ্টু ঊরুর মাঝে দানার লোমশ ঊরু ঢুকে ওর ঊরুসন্ধি জানু দিয়ে চেপে ধরে। কালো প্যান্টি ভিজে ওর জানুর ওপরে নারীর রসের ছোঁয়া লাগে। নয়না পাগলের মতন দানার ঠোঁট, গাল চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দেয়। টাকা নিয়ে কারুর নিচে শোয়া আর সমুদ্র অথবা দানার সাথে সহবাস করা, অনেক আলাদা। এদের কাছে মনের সুখে নিজের কামসুখ আস্বাদন করতে পারে।
একটানে নয়নার ব্রা খুলে উন্নত স্তন জোড়া বাঁধন মুক্ত করে দেয়, সঙ্গে সঙ্গে এক এক করে স্তন হাতের থাবার মধ্যে নিয়ে পিষে চুষে একাকার করে নয়নাকে কামোত্তেজনার চরমে পৌঁছে দেয় দানা। ও জানে এই নারীর কোন অঙ্গে কত মধু, বহুবার এই নারীকে চরম কামসুখ দিয়েছে।

স্তনের ওপরে কঠিন হাতের পেষণ আর চোষণ উপভোগ করতে করতে মিহি কণ্ঠে নয়না ওকে বলে, “উফফফ এত হুড়োহুড়ি কেন করছো? রাতে হোটেলে যাবো তো।”

দানা ওর স্তন জোড়া পিষে চটকে চুষে দিতে দিতে বলে, “রাতের কথা রাতে হবে এখন একটু আদর করি আগে।”

তীব্র কামনার জ্বালায় দানার কান কামড়ে বলে, “রাতে আমাকে চুদে চুদে শেষ করে দিও দানা।”

ওর স্তন জোড়া চুষতে চুষতে বলে, “ইসসস এতদিন মনে হয় কেউ ভালো ভাবে তোমার মাই চোষেনি।” নয়না শুধু মাত্র ছোট একটা “হু” করে। দানা ওর স্তন চটকাতে চটকাতে বলে, “অনেক শক্ত হয়ে গেছে বোঁটা, উফফ বোঁটা জোড়া দেখলেই মনে হয় চুষে খাই...”

স্তন জোড়া বেশ কিছুক্ষণ চটকানোর পরে দানা ধীরে ধীরে দুই স্তন একত্র করে মাঝখানে চুমু খায়। নয়নার শরীর শিউরে ওঠে সেই কামঘন পরশে। মধ্যচ্ছদা বরাবর চুমু খেতে খেতে নিচের দিকে নামতে শুরু করে। নয়নার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে এক হাতে প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে নেয়। নয়না চোখ বাঁধা, কি চলছে সেটা আর দেখতে পায় না। দানা ওই অর্ধ নগ্ন নয়নার বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নেয়। নাভির ওপরে চুমু খেতেই নয়না সাপের মতন হিসহিস করতে করতে নড়ে ওঠে। একহাতে পাছা চেপে নাভির ওপরে চুমু খাওয়ার বেশ কয়েকটা ছবি তোলে।

তারপরে তলপেটে ঠোঁট বসিয়ে লালার দাগ কাটতে কাটতে বলে, “উফফফ সেক্সি নয়না, তোমার পেট সত্যি ভীষণ নরম। এই পেটের ওপরে মাথা রেখে শুতে ইচ্ছে করছে।”

ওর চুলের মধ্যে আঙ্গুল ডুবিয়ে তলপেটের ওপরে চেপে ধরে নয়না কামঘন কণ্ঠে বলে, “রাতে শুও দানা এইবারে কিছু করো আমাকে।”

ঊরুসন্ধি ভিজে গেছে যোনিরসে, প্যান্টি ভিজে যোনি বেদির ওপরে লেপটে যায়। যোনি চেরা ফুটে ওঠে ভিজের প্যান্টির নীচ থেকে, দানার নাকে ভেসে আসে তীব্র ঝাঁঝালো নারী সুধার ঘ্রাণ। মোবাইল ছেড়ে দুই থাবার মধ্যে নরম পাছা চটকে নয়নার ঊরুসন্ধির ওপরে ঠোঁট বসিয়ে দেয় দানা। তীব্র ঝাঁঝালো নারী সুধার ঘ্রাণ দানার মাথায় ঢুকে ওকে কামোন্মাদ করে তোলে। পাছা চটকে ধরে ভিজে প্যান্টির ওপর দিয়েই যোনি বেদির ওপরে ঠোঁট বসিয়ে দেয়। নয়নার শরীর কেঁপে ওঠে, সারা অঙ্গে বিজলীর ঝলকানির মতন শিহরণ খেলে যায়। দুই ঊরু গলতে শুরু করে দেয়। মসৃণ ঊরুর ভেতর দিকে আঁচড় কেটে নয়নাকে আরোও পাগল করে তোলে দানা। কামোন্মাদ লাস্যময়ী রমণী দানার মাথা চেপে নিজের যোনি ওপরে মাথা আনতে চেষ্টা করে। নয়নার পেলব জঙ্ঘার ওপরে নখের আঁচড় কেটে যোনি পর্যন্ত নিয়ে যায়।

নয়না থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বলে, “উফফফ কি করছো তুমি দানা, আমাকে ছিঁড়ে ফেললে দেখছি... প্লিস প্যান্টি খুলে দাও আর গুদে মুখ দাও আর থাকতে পারছি না ...”

দানা ওর বাঁধা চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “ইসসস সেক্সি চুদিরবাই, একটু দাঁড়াও, একটু রসিয়ে রসিয়ে যদি এতদিন পরে না চুদতে পারলাম তাহলে আর মজা কোথায়?”

নয়না মাথা ঝাঁকিয়ে কামার্ত শীৎকার করে ওঠে, “না না না... আর নয় ওইভাবে আর উত্তেজিত কোরো না প্লিস।”

নয়নার যোনির ওপরে চুমু খায় দানা আর সেই সাথে ওই ভঙ্গিমায় আবার বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নেয়। এই ছবির কয়েকটা ইন্দ্রনীলের সাহায্যে বাপ্পা নস্করের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, তাহলেই খেলা শুরু হয়ে যাবে।

যোনির ওপর থেকে প্যানটি সরিয়ে শিক্ত পিচ্ছিল যোনি চেরা চুষতে চাটতে শুরু করে। দুই হাতের থাবায় পাছার নরম মাংস চটকাতে চটকাতে যোনি চেরা বরাবর লেহন করে যোনির রস চুষে নেয়। ভগাঙ্কুরে জিবের ডগা দিয়ে ডলে নয়নাকে চরম উত্তেজিত করে তোলে। ঠোঁটের মাঝে যোনি পাপড়ি নিয়ে চুষে টেনে ধরে। প্রচন্ড কামাবেগে নয়নার শরীর কেঁপে ওঠে। শিক্ত যোনির মধ্যে দানার উষ্ণ শ্বাসের ফলে নয়না কাম রস স্খলন করে দেয়। দশ আঙ্গুল দানার মাথার চুল আঁকড়ে নিজের যোনির ওপরে চেপে ওর মুখ ঠোঁট ভাসিয়ে দিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। শরীর নিঙড়ে সব রস বের করে দিয়েছে দানা। দুই পায়ে আর কোন শক্তি নেই ওর। নয়নার শিক্ত পিচ্ছিল যোনি চোষার বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নেয় দানা।

ঠিক তখনি দানার ফোন বেজে ওঠে। কাম সুখে ঘর্মাক্ত পরিতৃপ্ত নয়না চোখের বাঁধন খুলে মেঝের ওপরে দানাকে জড়িয়ে ধরে বসে পড়ে। দুইজনে জড়াজড়ি করে বসে থাকার সময়ে দানা ফোন উঠানোর অছিলায় নিজেদের বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নেয়। তারপরে ফোন উঠিয়ে দেখে মহুয়ার ফোন।

ওইপাশ থেকে মহুয়া ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “কি আর কতক্ষণ?”

নয়নার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে হটাত করে তড়বড়িয়ে ওঠে দানা, “কি কি হয়েছে? রুহির জ্বর? একটা মেয়েকে ঠিকভাবে দেখতে পারো না? সারাদিন জল নিয়ে খেলা করবে আর তুমি বাড়িতে থাকো করো কি? আচ্ছা আমি আসছি। কোনো ওষুধ খাইয়েছো? তুমি না মাঝে মাঝে কি যে করো না, মাথা খারাপ হয়ে যায়। একটু ক্রোসিন দিতে পারতে। হ্যাঁ হ্যাঁ, জানা আছে, বাচ্চাদের ক্রোসিন কাউকে দিয়ে আনিয়ে নিলেই পারতে। যাই হোক আমি এখুনি আসছি...”

ওইপাশে ওই ভাবে দানাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে দেখে মহুয়া প্রথমে ঘাবড়ে যায়, তবে বুদ্ধিমতী প্রেয়সীর বুঝতে ক্ষণিকের সময় লাগে না যে কবল থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য এই নাটক করছে। তাই মিচকি হেসে বলে, “বাড়িতে এসো তারপরে কেমন তোমার ধোলাই করি দেখ?”

দানা চোখ বড় বড় করে আঁতকে ওঠে, “কি বলো? একশো তিন উঠে গেছে? আমি আসছি এখুনি আসছি।” ফোন রেখে মুখ কাঁচুমাচু করে নয়নার গালে ঠোঁটে বেশ কয়েকটা চুমু খেয়ে বলে, “প্লিস কিছু মনে কোরো না। মেয়ের হটাত জ্বর এসেছে তাই যেতে হবে।”

নয়না ক্ষুণ্ণ মনে ওর দিকে ম্লান হেসে বলে, “না না, মেয়ের জ্বর যাও। কিছু মনে করার নেই দানা, আগে মেয়ে তাই না? যাও যাও।”

পোশাক পরে কার্যসিদ্ধি করে নয়নার বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে দানা। মনের মধ্যে জয়ের হাসি যে কাজ করতে গেছিল খুব সহজে সেটা হয়ে গেছে। রাত বেশ গভীর, আশে পাশে বেশ কয়েক জন লোক, কাউকে কি চেনা যায়? হ্যাঁ, অদুরে একজনকে দেখে দানা চিনতে পারে। নিতাইয়ের দলে একজন, ওর ওপরেই নজর রেখেছিল আর ওকে অনুসরন করতে করতে নয়নার বাড়িতে এসেছে। তাহলে ওর চাল কিছুটা কাজ করেছে।
 
পর্ব চোদ্দ – রক্তের খেলা (#6-106)

দানা ওইদিকে না দেখার ভান করে, গাড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। বাড়িতে ঢুকেই মহুয়া ওর ওপরে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “কেন বাড়িতে এলে কেন? ওইখানে ওই নয়না আর কিছু খেতে দেয়নি।”

মহুয়াকে ক্ষেপানোর জন্য ওকে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ রাতে ডিনার করার কথা ছিল আমাদের আর তারপরে হোটেলের রুমে।”

মহুয়ার মুখ ভার করে টিভির আওয়াজ জোর করে দেয়। দানা দেখে প্রেয়সী একদম চরম খাপ্পা, একে শান্ত না করলে উপায় নেই। জড়িয়ে ধরে চুমুতে চুমুতে ব্যাতিব্যাস্ত করে তোলে প্রেয়সীকে। শেষ পর্যন্ত চোখে অভিমানের জল আর ঠোঁটে মিষ্টি হাসি নিয়ে ওকে মারতে মারতে বলে, “তুমি না ...”

দানা, ওর নাকের ওপরে নাকের ডগা ঘষে বলে, “জানি সোনা আমি একটা মস্ত বড় শয়তান।”

মহুয়া ওর গলা জড়িয়ে আদুরে কণ্ঠে বলে, “শয়তান বলে ভয় নয় গো, ভয় এই আশেপাশের লোকেদের নিয়ে। কখন কোথায় কি হবে সেটাই ভয় করে।”

মহুয়াকে সান্ত্বনা দেয় দানা, “আমাদের কিছু হবে না। আজ রাতেই ইন্দ্রনীলের মাধ্যমে বাপ্পার কানে কথা উঠিয়ে দেবো।”

রাতের খাওয়া দাওয়া হয়ে যাওয়ার পরে ইন্দ্রনীলকে ফোন করে দানা বাড়িতে ডাকে। যথারীতি রাত দুটো নাগাদ ইন্দ্রনীল ওর বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ে। ইন্দ্রনীল জানায় দানার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে রাজি। দানা ওকে নয়নার আর নিজের বেশ কয়েকটা অন্তরঙ্গ ছবি দেখিয়ে বলে এই খবর বাপ্পা নস্করের কানে তুলে দিতে। ইন্দ্রনীল অবাক হয়ে যায়, কেউ কি এই ভাবে নিজের পায়ে কুড়ুল মারে নাকি? দানা মুচকি হেসে জানিয়ে দেয় এটা ওর চক্রান্তের একটা অঙ্গ। যদি ইন্দ্রনীল করতে পারে তবে ভালো না হলে অন্য রাস্তা দেখবে। ইন্দ্রনীল ওর কাছে সম্পূর্ণ পরিকল্পনা জানতে চাইলে দানা স্মিত হেসে জানিয়ে দেয় আগে ওর কাজ হয়ে যাক তারপরে নিজেদের দলে সামিল করবে। নিজেকে দানার বিশ্বাসভাজন প্রমান করার জন্য ইন্দ্রনীল জানিয়ে দেয় এই ছবি আর এই খবর বাপ্পা নস্করের কানে কাল সকালেই উঠিয়ে দেবে। দানা ওকে আরো বলে, বাপ্পা নস্কর এই ছবির উৎস সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে ইন্দ্রনীল যেন বলে নয়নার বাড়ির কাজের লোককে হাত করে এই ছবি তুলিয়েছে। ব্যাস তাহলেই বাপ্পা নস্কর আরো ক্ষেপে যাবে ওর আর নয়নার ওপরে। সেই সাথে দানা আরো একটা ছবি দেখায় ইন্দ্রনীলকে। বিমান আর নয়নার একান্ত ছবি। সেই দেখে ইন্দ্রনীল আরো বিস্মিত হয়ে যায়। দানা ওকে বলে, এই ছবি ওকে কাল দুপুরে পাঠাবে, আগে এই ছবি আর খবর বাপ্পা নস্করের কানে পৌঁছে দিক সেই সাথে যেন আগাম আভাস দেয় যে নয়নার সাথে বিমান চন্দের গোপন সম্পর্ক আছে।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। পরেরদিন দুপুর নাগাদ ইন্দ্রনীল ফোন করে ওকে জানায় যে বাপ্পা নস্কর এই দুই খবর শুনে রাগে জ্বলে উঠেছে। লোহা একদম গরম, এইবারে হাতুড়ি না মারলেই নয়। বাপ্পা নস্কর বিস্তারে ইন্দ্রনীলকে এই বিষয়ে খোঁজখবর নিতে নির্দেশ দিয়েছে। নয়না আর বিমানের একত্র একটা ছবি ইন্দ্রনীলের মোবাইলে পাঠিয়ে ওকে নির্দেশ দেয় রাতের দিকে এই ছবি যেন বাপ্পা নস্করকে দেখায়। ইন্দ্রনীল যতই ওর পরিকল্পনা জানতে চায় দানা তত পিছিয়ে যায়। এত সহজে ইন্দ্রনীলকে বিশ্বাস করা অনুচিত।

বিকেল বেলা নয়নাকে ফোন করে দানা, “সরি ডারলিং, কাল ঠিক ভাবে তোমার সাথে মস্তি করা গেল না।”

নয়না মৃদু হেসে বলে, “রুহির জ্বর কেমন আছে?”

মহুয়া মিচকি হেসে পাশ থেকে উত্তর দেয়, “রুহি এখন আগের থেকে ভালো আছে।”

মহুয়ার কণ্ঠ স্বর শুনেই নয়না চমকে ওঠে, “এই কি গো, মিসেস পাশে নাকি?”

দানা অল্প মাথা দোলায়, “হ্যাঁ, এই মেয়ে শুয়ে ওর মাথার কাছেই বসে আছি তাই।”

নয়না মিচকি হেসে বলে, “আচ্ছা তাহলে পরে কথা বলবো কি বল।”

দানা এইবারে নয়না আর নয়নার সঙ্গী সাথীদের আর বিমানকে ওই গ্রামের বাড়িতে নিয়ে ফেলতে চায়। দানাকে অনুসরন করে নিতাই নিশ্চয় ওইখানে পৌঁছে যাবে। একবার বাপ্পা নস্করের কানে এই খবর পৌঁছে গেলেই ওর পরিকল্পনা সফল হয়ে যাবে। দানা গলা নামিয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় জানতে চায়, “কি গো কিছু বলতে হবে?”

মহুয়া চোখ পাকিয়ে কপট অভিমান করে ঠোঁট উল্টে বলে, “যাও যাও ওই নয়নার কাছেই বাসা বাঁধো। আমার দিকে ওই ভাবে চেয়ে কি হবে?” তারপরে হাত নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, “বলো, আর অপেক্ষা করছো কেন?”

দানা গলা নিচু করে নয়নাকে ফোনে বলে, “শোন না, পরশুদিন ওই বাগান বাড়িতে একটা আসরের আয়োজন করো। সুমিতা, সমুদ্র, তুমি আমি আর বিমান চন্দ। দারুন হবে। বিমানের বাঁড়া সুমিতা গুদে আর আমি তোমাকে নিয়ে সারা রাত পড়ে থাকবো। মিসেসকে কিছু ভাবে ম্যানেজ করে নেব চিন্তা নেই।”

নয়না মুচকি হেসে জানিয়ে দেয় বিমানকে হাত করে নেবে। হাতে আর একটা দিন সময় নিখুঁত পরিকল্পনা করার। ফোন ছেড়েই মহুয়াকে বলে বেরিয়ে পড়ে হিঙ্গলগঞ্জের উদ্দেশ্যে। বাড়িতে বসে এই পরিকল্পনা করতে গেলে অনেক সমস্যা, কারন ওর বাড়ির ওপরে বাপ্পা নস্করের লোক নজর রেখে চলেছে, হয়তো ইন্দ্রনীলও নজর রেখে চলেছে।

মহেন্দ্র বাবুর বাড়িতে আলোচনা সভা বসে। বিমানের বাড়ির ছবি এঁকে সবাইকে বুঝিয়ে দেয় কাকে কি কি করতে হবে। সবাই যেন নিজেদের মোবাইল বাড়িতে রেখে যায়। পুলিস আজকাল মোবাইলের অবস্থান খুঁজে বের করে আততায়ীকে ধরে। সব থেকে ভালো, মোবাইল গুলো একটা নৌকায় করে দূরে নিয়ে যেতে তাহলে বেশ কিছুক্ষণ পরেই মোবাইল সীমানার বাইরে চলে যাবে। ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে আর হাতের ইশারায় সবাই কাজ করবে। বাগান বাড়ির পেছনে একটা পুকুর আছে আর পুকুরের পেছনে আম জাম কাঁঠাল ইত্যাদির বড় বড় গাছপালা। সেই গাছের আড়ালে চারজন লুকিয়ে থাকবে। সামনের দিকে বেশ কিছু ঝোপ ঝাড় আছে সেখানে দুই জন লুকিয়ে থাকবে। বড় রাস্তায় বাপ্পা নস্করের গাড়ি দেখার জন্য একজন দাঁড়িয়ে থাকবে। গাড়ি দেখতে পেলেই শিস দিয়ে বাগান বাড়িতে জানিয়ে দেবে। দানার ইশারা না পেলে কেউ নিজেদের জায়গা ছেড়ে একদম বের হবে না। সবাই পিস্তল নিয়ে তৈরি থাকবে কিন্তু খুব দরকার না পড়লে কেউ যেন গুলি না করে। পরিস্থিতি বুঝে কাজ যদি শেষ পর্যন্ত হাসিল না হয় তাহলেই যেন গুলি চালায় না হলে সবাই লুকিয়ে থাকবে। দানা আগে বাড়িতে ঢুকবে, যদি নয়নার সাথে সুমিতা আর সমুদ্র থাকে তাহলে দানা একটা সিগারেট জ্বালাবে না হলে একাই ঢুকবে।

পরের সারাদিন চাপা উৎকণ্ঠায় কেটে যায়। ইন্দ্রনীল ফোনে জানিয়ে দেয় যে পাগলা কুকুরের মতন ক্ষেপে উঠেছে বাপ্পা নস্কর। নয়নাকে ফোনে ধমকি দিতে পারছে না কিছুতেই কারন দানার হাতের নাগাল ওর থেকেও ওপর মহলে পৌঁছে গেছে। এতদিন দানাকে সামান্য একজন গাড়ির ড্রাইভার ভেবে এসেছিল কিন্তু ওর হাতে নিজের বিরুদ্ধে এত তথ্য প্রমান চলে গেছে জেনে বাপ্পা নস্কর ল্যাংড়া কুকুরের মতন গতকাল থেকে ঘেউঘেউ করে বেড়াচ্ছে। ভুপেন জানায় যে, নিতাইয়ের লোক দানার বাড়ির ওপরে নজর রেখে চলেছে।

পরেরদিন দুপুরের পরেই পরিকল্পনা মাফিক, দানা ছাড়া বাকি সবাই দুরের গ্রামের বিমান চন্দের বাগান বাড়িতে পৌঁছে যায়। দানার পরিকল্পনা মতন সবাই নিজের নিজের জায়গা নিয়ে রাতের অন্ধকারের অপেক্ষা করে। তাড়াতাড়ি আসার একটাই কারন, যাতে ওরা বিমান অথবা বাপ্পা নস্করের চোখে না পড়ে। নিজেদের গাড়ি পাতার আড়ালে, খড়ের আড়ালে লুকিয়ে ফেলে। গ্রাম থেকে বেশ দূরে বাগান বাড়ি তাই ওদের বেশ সুবিধা হয়।

মহুয়ার বুকে চাপা উৎকণ্ঠা, একেবারে সাপের গর্তের মধ্যে পা রাখতে চলেছে দানা। একপাশে বিমান নয়না অন্য পাশে বাপ্পা নস্কর নিতাই। ওর চারপাশে শত্রু, একপা একটু ওদিক হলেই প্রানহানীর আশঙ্কা প্রবল। চোখ জোড়া সকাল থেকেই ছলছল, বুক দুরুদুরু করে ওঠে বারেবারে। সকাল থেকেই রুহিকে আঁকড়ে ধরে থাকে দানা, নিজেও জানে কত বড় ঝুঁকি নিতে চলেছে। সন্ধ্যের পরে বের হওয়ার আগে মহুয়া আর রুহিকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে।

রুহি ওর গালে চুমু খেয়ে বলে, “ডাডা ডিনার?”

আদো আদো মিষ্টি গলা শুনে দানার চোখ ফেটে জল চলে আসে, তাও হেসে মেয়েকে চুমু খেয়ে বলে, “ডিনার একসাথে করবো মা। ঘুমিয়ে পড়িস না।”

মহুয়ার কপালে ঠোঁট চেপে ধরতেই প্রায় ভেঙে পড়ে। তাও বুক চেপে স্মিত হেসে ওকে বিদায় জানায়। বুকের মধ্যে চাপা আশঙ্কা, আগামী কাল সকাল কেমন হবে জানে না, রক্তিম রক্ত মাখা ভোর না সুন্দর মিষ্টি সকাল।

বের হওয়ার আগে নয়নাকে ফোন করে জানিয়ে দেয়, দুই ঘন্টার মধ্যে ওই বাগান বাড়িতে পৌঁছে যাবে। নয়না বাকিদের নিয়ে ওর আগেই পৌঁছে যাবে বলে কথা দেয়। পকেটে একটা পিস্তল, দ্বিতীয় পিস্তল পায়ের গোড়ালিতে বেঁধে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে দানা। দুরদুর বুক, শ্বাস মাঝে মাঝেই বুকের মধ্যে থেমে যায়। চোখের সামনে শুধু মাত্র মহুয়ার ছলছল চোখ জোড়া আর রুহির মিষ্টি আবেদন, রাতের খাবার একসাথে খেতে চায়। বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, ফারহানের আততায়ীকে মারতেই হবে, মৈনাকের খুনিকে শাস্তি দিতেই হবে। ওর পরিকল্পনা যদি সফল হয় তাহলে এই রাতে বেশির ভাগ শত্রু নির্মূল হয়ে যাবে আর যদি সফল না হয় তাহলে ওর কপালে মৃত্যু ছাড়া আর কিছু নেই। মহুয়া আর রুহির জীবন বিপন্ন হয়ে যাবে। শুধু মাত্র নিজের জেদের বশে এই শহরে থেকে গেল মহুয়া, কিছুতেই দানার পাশ ছেড়ে যাবেনা মেয়েটা।

নিজের ফোন না নিয়ে অন্য একটা ফোন নিয়ে যায় যাতে ভুপেন ওকে বাপ্পার খবর জানাতে পারে। ফোন খানা প্যান্টের চোরা পকেটে লুকিয়ে রাখে। আসার পথে একটা গাড়ি ওকে অনেকক্ষণ থেকেই অনুসরন করছিল, সেটা দেখেই বুঝে যায় নিতাইয়ের লোক ওকে অনুসরন করছে। দুই ঘন্টা টানা গাড়ি চালিয়ে, গ্রামে পৌঁছে যায় দানা। বাগান বাড়ির বেশ কিছু দূরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে একবার ভালো ভাবে বাড়ির দিকে দেখে। বিমানের গাড়ি উপস্থিত, দেবুকে দেখতে পায়, একটা সিগারেট ধরিয়ে নয়নার গাড়ির ড্রাইভারের সাথে গল্প করছে। বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, অতল জলে ডুব দেওয়ার আগের প্রস্তুতি নেয়, অশান্ত মনকে শান্ত করার চেষ্টা করে প্রানপনে। বিচলিত চিত্তে এগোলে একদম কাজে দেবে না। গাড়ি থেকে নেমে পকেটের পিস্তল আর পায়ের পিস্তল হাতিয়ে দেখে নেয় শেষ বারের জন্য। এইদুটো নিজে হাতে কাজে লাগাতে চায় না, চায় সুমিতা অথবা সমুদ্রের হাতে তুলে দিতে। হয়তো বিমান চন্দের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকতে পারে কিন্তু সমুদ্র সুমিতার কাছে থাকবে না। একটু খানি আড়ামোড়া ভেঙ্গে মন শান্ত করে সোজা হয়ে হেঁটে যায় বাড়ির দিকে। ভুপেন একটা মেসেজ করে জানিয়ে দেয় যে নিতাইয়ের লোক নিতাইকে ওর খবর পৌঁছে দিয়েছে আর সেই খবর কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো বাপ্পা নস্করের কানে পৌঁছে যাবে। দানা ওকে নিতাইয়ের ওপরে কড়া নজর রাখতে নির্দেশ দেয়। দানাকে ওই ভাবে আসতে দেখে দেবু আর নয়নার ড্রাইভার সতর্ক হয়ে যায়। অন্ধকারে প্রথমে ঠিক ঠাহর করতে পারে না, কিন্তু পাশে আসার পরে যখন দানাকে দেখে তখন দেবু হেসে ফেলে। দানা ওকে জিজ্ঞেস করে বাড়িতে কে কে এসেছে।

দেবু চোখ টিপে মিচকি হেসে বলে, “শালা তোকে দেখে বোঝার উপায় নেই কিছুদিন আগে পর্যন্ত তুই কালী পাড়ার বস্তিতে থাকতিস। যা যা তোর নয়না ম্যাডাম আজকে নিজের সেক্রেটারি আর ম্যানেজারকে নিয়ে এসেছে। যা চোদনা মদ গিলে মস্তি কর। আমরা শালা এইখানে বিড়ি খাই আর হাত মারি ততক্ষণে।”

দানা মিচকি হেসে ভুরু নাচিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলে, “কাকে লাগাতে চাস? নয়নাকে না সুমিতাকে?”

দেবু হেসে ফেলে, “না রে বাল অত উঁচু স্বপ্ন আমি দেখিনা। মিনতি বৌদির গুমটির আলো, সিমি, পিঙ্কি জিন্দাবাদ।”

সিগারেটে কয়েকটা টান মেরে আশেপাশে দেখে নেয় দানা, একবার নিজের ঘড়ির দিকে দেখে। দূরে একটা কুকুরের ঘেউঘেউ আওয়াজ শোনা যায়, সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে একটা বেড়াল মিউ মিউ করে ওঠে। ওই ডাক শুনে মনে হয় কয়েকটা পাখী ডেকে ওঠে বাড়ির পেছন থেকে। দানা চোয়াল চেপে চোরা হাসি দেয়, সবাই নিজের নিজের জায়গায় পৌঁছে গেছে তাহলে। এইবারে বাড়ির মধ্যে ঢোকা উচিত। আরো একবার ফোন বেজে ওঠে। ভুপেনের সংবাদ আসে, বাপ্পা নস্কর আর নিতাই, দুইজন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। বাপ্পা নস্কর আর নিতাইয়ের চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছে, যাকে পাবে হাতের সামনে তাকে কুটিকুটি করে কেটে ফেলবে। দানা চোখ বুজে মহুয়া আর রুহির চেহারা স্মরন করে। হাত মুঠি করে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে টানটান উত্তেজনা দমিয়ে নেয়। তারপরে দরজায় করা নেড়ে অপেক্ষা করে। কিছু পরে সমুদ্র একটা কোমরে একটা তোয়ালে জড়িয়ে এসে দরজা খুলে একগাল হেসে ওকে বাড়ির মধ্যে ডাকে।

দানা ওকে দেখে মেকি হাসি দিয়ে বলে, “কি রে দারুন মস্তি করছিস, তাই না?”

সমুদ্র চোখ টিপে বলে, “উফফফ মাইরি, শালা আমি আর নয়না শুধু দেখে গেলাম মাইরি। নতুন মাল পেয়ে সুমিতাকে খুব চোদান চুদেছে বিমান। গুদে চুল দেখে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছে।” বলেই হিহি করে হেসে ফেলে।

দানা মিচকি হেসে জিজ্ঞেস করে, “কয় রাউন্ড হলো তোদের?”

সমুদ্র হেসে বলে, “আরে বাল আমরা তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম, তুই আসবি একটু মদ খাবো তারপরে রাত পড়ে আছে আর কি।”

দানা চোয়াল চেপে হেসে বলে, “আচ্ছা তাই নাকি রে? তাহলে নয়না গুদ মেলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে বল।”

সমুদ্র ওর পিঠে এক চাপড় মেরে বলে, “বিমানের কোল থেকে যদি সরাতে পারিস তাহলে নয়না তোর।”

দানা মিচকি হেসে বলে, “যা যা একটা গেলাস নিয়ে আয় আমি দেখি বাঁড়া ওরা কি করছে।”
 

Users who are viewing this thread

Back
Top