What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

pinuram রচনাসমগ্র (2 Viewers)

পর্ব ২৭

উটি থেকে ফেরার পরে দেবায়ন বসে ছিল না, নিবেদিতাকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন হোটেলের জায়গাগুলোতে কাজের জন্য বেরিয়ে পড়েছিল। সাতদিন এদিক ওদিক ঘুরে কাজ সেরে এই গতকাল বাড়িতে ফিরেছে। প্লেন থেকে নেমে সোজা পন্ডিতিয়া, অনুপমার বাড়িতে।

কান পেতে শুনলে বাইরে ইলশেগুঁড়ির শব্দ শোনা যায়। ইসসস এই ভোরে উঠতে কারুর ভালো লাগে নাকি? তাও আবার প্রেমিকের কোল ছেড়ে? চাদরের তলায় আস্টেপিস্টে ওকে জড়িয়ে ধরে দেবায়ন ঘুমিয়ে। ঘাড়ের ওপরে তপ্ত শ্বাস গতরাতের কথা মনে করিয়ে দেয়। চাদরের তলায় দুইজনেই নগ্ন। নরম পাছার মসৃণ ত্বকের ওপরে দেবায়নের উত্তপ্ত লিঙ্গের ছোঁয়ায় শরীরে শিহরণ দেখা দেয়। গত রাতের পাগলামির ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠতেই ওর হাতখানি গালের কাছে টেনে চুমু খায়। রাতের খাবার পরেই গেস্টরুমে ঢুকে পড়েছিল দুইজনে।

মা মজা করে ওর কানে ফিসফিস করে বলেছিল, “দেখিস হ্যান্ডসাম যেন খাট না ভেঙে ফেলে?”

অনুপমা মায়ের কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে বলেছিল, “হ্যাঁ, তোমার গালের রঙ দেখে বুঝতে পারছি বেশ।”

মেয়ের মুখে ওই কথা শুনে লজ্জায় পড়ে গেছিলো পারমিতা। এক বছরের ওপরে হয়ে গেছে, শুধুমাত্র স্বামী সোমেশ ছাড়া আর কারুর সাথে যৌন সঙ্গম করেনি আর হবু জামাই দেবায়নের সঙ্গে নয়। মেয়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ভালোবাসার খেলা খেলতে একটুর জন্য যে মন চায়নি সেটা নয় কিন্তু মেয়ের মুখ দেখে আর সেই পথে পা বাড়ায়নি।

গতরাতে খাওয়ার টেবিলে বসে সেই প্রথম দিনের মতন অনুপমার পায়ের ওপরে পা রেখে দেবায়ন সুরসুরি দিয়েছিল। ভাগ্যিস এইবারে আর ভুল করে পারমিতার ঢিলে প্যান্টে পা দেয়নি অথবা সোজা যোনির মধ্যে আক্রমন করেনি। ভুলের এইবারে কোন জায়গা ছিল না কারন পারমিতা একটা ঢিলে প্যান্ট পরেছিল আর অনুপমা একটা ছোট স্কারট পরেছিল। পায়ের পাতাতে পা রাখতেই দেবায়ন বুঝে গিয়েছিল কার পায়ের ওপরে এইবারে সুরসুরি দিচ্ছে। পাশে অঙ্কন বসেছিল তাই বিশেষ কিছু করতে পারেনি। তাও ওই বদমাশ ছেলেটা হাঁটু পর্যন্ত নখের আঁচড় কেটে বারেবারে ওকে উত্যক্ত করে তুলেছিল গত রাতে। আর রাতের কথা? বাথরুম থেকে শুরু আর বিছানায় শেষ, উদ্দাম পাগল হয়েছিল দুইজনে। উটির এক সপ্তাহ পরে দেবায়নকে কাছে পেয়ে তৃষ্ণার্ত চাতকের মতন হাঁ করে চেয়েছিল প্রেমের বারিধারা। যা দিয়েছে তাই হৃদয় ভরে গ্রহন করেছে।

কোনোরকমে দেবায়নের বাহুপাশ থেকে নিজেকে মুক্ত করে উঠে পড়ে অনুপমা। ওর চুলে বিলি কেটে খোঁচা দাড়ি ভর্তি গালের ওপরে চুমু খায়। এতক্ষণে পায়েল অঙ্কন নিশ্চয় উঠে গেছে। অঙ্কন সকাল সকাল বেরিয়ে যায় কলেজে তাই পায়েল সকাল সকাল উঠে পড়ে। অবশ্য বাড়ির বাকিরাও উঠে পড়ে। তবে সেদিন অনুপমার উঠতে দেরি হয়ে যায়, আর তার কারন স্বরূপ আরো একবার চুমু খায় দেবায়নের গালে। চাদর উঠিয়ে একবার ওর নেতিয়ে পড়া অস্ত্রটা দেখে নেয়। ইসসস, এইটা দিয়েই ঘায়েল করেছিল ওকে।

গালে হাত বুলিয়ে ওকে ডাকে, “উঠে পড়, অফিস আছে।”

ঘুমঘুম চোখ খুলেই ওকে জড়িয়ে ধরে নিজের ওপরে ফেলে দেয় দেবায়ন। চুলের মধ্যে নাক মুখ গুঁজে আদুরে গলায় বলে, “আর একটু শুতে দে না প্লিস। এতো তাড়াতাড়ি কোথায় যাবো?”

ওর নাকের ওপরে নিজের নাক ঘষে মিষ্টি করে বলে, “অফিসে যেতে হবে না? গত রাতে বাড়ি যাসনি, মামনি এইবারে প্যাঁদাবে।” দেবায়ন ওর মাথার পেছনে হাত রেখে মাথাটা নিজের ওপরে টেনে ধরে। ঠোঁটের ওপরে আলতো চুমু দেয়। অনুপমার চোখ বুজে আসে, সকাল সকাল এমন ভাবে জড়িয়ে ধরলে কি কারুর আর বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করে? আলতো আলতো চুমু খেয়ে বহু কষ্টে ঠোঁট ছেড়ে বলে, “দাঁত মেজে স্নান সেরে ফেলো।”

গেস্ট রুম ছেড়ে বাইরে বের হতেই মায়ের মুখোমুখি। পারমিতা মেয়েকে মিচকি হেসে জিজ্ঞেস করে, “কি রে হ্যান্ডসাম এখন পর্যন্ত ওঠেনি?” ওর টোপা দুই গালে চিমটি কেটে আদর করে বলে, “উফফফ কি ভাগ্য, নীচে মেয়ে জামাই আর ওপরে ছেলে বৌমা। কি যে করি আমি!” বলেই হেসে ফেলে।

অনুপমা ভুরু নাচিয়ে মিচকি হেসে মাকে বলে, “কেন গো, তোমার খুব হিংসে হচ্ছে নাকি আমাকে? যাও না, ভেতরে যাও, তোমার হ্যান্ডসামকে ঘুম থেকে তুলে দাও।” মাকে জড়িয়ে কানে কানে ইয়ার্কি মেরে বলে, “সকালের দিকে কিন্তু বেশি ভালো লাগে বুঝলে।” বলেই মায়ের নধর গোল নরম পাছা জোড়া একটু চেপে ধরে।

পারমিতা সকাল সকাল মেয়ের মুখে কামুক ভাষা শুনে কিঞ্চিত উত্তেজিত হয়ে যায়।

ঠিক সেই সময়ে ওর বাবা ওপর থেকে স্নান সেরে নীচে নেমে এসে দেখে মা মেয়েতে কোলাকুলি করছে। হেসে মেয়েকে আর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করে, “এমন কি আলোচনা চলছে।”

পারমিতা স্বামীকে হেসে বলে, “মা মেয়ের কথা, এতে বাইরের কারুর আসার দরকার নেই।” সত্যি এক ধাক্কায় ওদের জীবন অনেক পালটে গেছে। আর যে পালটে দিয়েছে সে এখন গেস্ট রুমে চাদরের তলায় উলঙ্গ হয়ে শুয়ে।

অনুপমা উপরে নিজের ঘরে চলে যায়। পায়েল স্নান সেরে তৈরি, ভাইয়ের জন্য খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছে। তাড়াতাড়ি স্নান সেরে জামা কাপড় পরে নীচে নেমে দেখে দেবায়ন উঠে গেছে। স্নান সারেনি, এখন চোখ ঘুম ঘুম ভাব লেগে। বাবার সাথে বসে কি সব ব্যাবসা সংক্রান্ত আলোচনা চলছে। এতো সকালে ওই আলোচনা শুনে বিরক্তবোধ করে অনুপমা।

দেবায়ন আর বাবার ওপরে ঝাঁঝিয়ে উঠে বলে, “সকাল সকাল অন্য কিছুর আলোচনা হতে পারে কি? আর তুই এখন স্নান করিস নি কেন?”

সোমেশ মাথা নাড়িয়ে আক্ষেপের সুরে দেবায়নকে বলে, “যাও তৈরি হয়ে নাও।” দেবায়ন গেস্ট রুমে ঢুকে যায়, তৈরি হওয়ার জন্য।

খাবার টেবিলে বসে সোমেশ মেয়েকে জিজ্ঞেস করে, “একবার তোর একাউন্টেন্টকে বলিস ব্যালেন্স সিটটা নিয়ে দুপুরের পরে আমার কেবিনে আসতে।”

অনুপমা বাবাকে জিজ্ঞেস করে, “কেন কি হয়েছে?”

সোমেশ মেয়েকে জিজ্ঞেস করে, “কত ব্যালেন্স পড়ে আছে?”
 
অনুপমা খানিক চিন্তা করে উত্তর দেয়, “সাড়ে চার কোটির মতন। এই পুজোর পরে কয়েকটা প্রোজেক্ট ডেলিভার হয়ে যাবে তখন কিছু টাকা আসবে।”

সোমেশ ওকে জিজ্ঞেস করে, “ইউরোপের জন্য ছেলে খুঁজেছিস?”

অনুপমা মাথা নাড়ায়, “না।”

সোমেশ মেয়েকে মৃদু বকুনি দেয়, “করিস কি?”

অনুপমা মুখ বেঁকিয়ে উত্তর দেয়, “আমি কি জানি, কি লাগবে না লাগবে। এখুনি তো দেবায়নের সাথে আলোচনা করছিলে, ওকেই বল না।”

সোমেশ মেয়ের রাগ দেখে হেসে ফেলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ ওকে বলে দিয়েছি, আজকে অফিসে গিয়ে দীপঙ্করের সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করবে। আর হ্যাঁ, শ্রেয়ার কথা কিছু ভাবলি?”

অনুপমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “মানে? ওর কি হলো? ওকি তোমার কাছে এসেছিল?”

সোমেশ হেসে বলে, “না রে, ও কেন আমার কাছে আসতে যাবে। আমি এমনি জিজ্ঞেস করলাম এই আর কি।”

মাথা নাড়ায় অনুপমা, শ্রেয়ার কথা একদম যে মনে ছিল না সেটা নয়। তবে উটি থেকে ফেরার পরে দেবায়ন আবার বেরিয়ে গিয়েছিল তাই আর সেই বিষয়ে আলোচনা করা হয়নি। উটি থেকে ফিরে শ্রেয়া নিত্যদিনের মতন অফিস করে গেছে, নিজের শেয়ার অথবা মাইনে নিয়ে কিছুই উচ্যবাচ্য করেনি। একবার ভেবেছিল শ্রেয়াকে ডেকে ওর শেয়ার ফিরিয়ে দেয়, তারপরে মনে হয়েছিল যার জন্য পায়েলকে ডাইরেক্টর বানানো হয়েছিল সেটার আর দরকার নেই। পায়েলের শেয়ার শ্রেয়াকে দিলে কেমন হয়। কিন্তু এইসব নিয়ে দেবায়নের সাথে কোন কথাবার্তা হয়নি ওর।

ওদের একটু দেরি হয়ে যায় অফিসের দিকে যাত্রা করতে। বাড়িতেই সাড়ে ন’টা বাজে। দেরি দেবায়নের জন্য হয়েছিল, ছেলেটাকে তাড়াতাড়ি স্নান সারতে বলল, কিন্তু বাথরুমে ঢুকে আর বের হয়না। শেষ পর্যন্ত অনুপমা গেস্ট রুমের বাথরুমে ঢুকে পড়ে দেখার জন্য আর সেটাই কাল হলো। সকাল সকাল বাথরুমের দরজা বন্ধ না করেই উলঙ্গ হয়ে সাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিল দেবায়ন। অনুমাকে দেখে আর থাকতে পারেনি, ওর মুখ চেপে, বেসিনের ওপরে ঝুঁকিয়ে দিয়ে পেছন থেকে ওর স্কারট টেনে নামিয়ে দেয়। কচলাকচলির ফলে ওর যোনি শিক্ত হয়ে ওঠে আর সঙ্গে সঙ্গে দেবায়ন ওর টপের ওপর দিয়ে দুই স্তন মুঠি করে ধরে এক ধাক্কায় পেছন থেকে লিঙ্গ ঢুকিয়ে দেয় যোনির মধ্যে। একটু দুরেই সবাই বসার ঘরে বসে, ধরা পড়ে যাওয়ার উত্তেজনায় দুইজনের কামোত্তেজনা চরমে উঠে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে দেবায়নের গলা জড়িয়ে পাছা উঁচু করে কঠিন লিঙ্গের সঞ্চালন নিজের শিক্ত পিচ্ছিল যোনির মধ্যে উপভোগ করতে করতে রাগমোচন করে। ইসসস কি যে করে না ছেলেটা। সারা অঙ্গে কামকেলির তীব্র সুখের ছটা মাখিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসে অনুপমা। গেস্ট রুমে ঢুকে সঙ্গে সঙ্গে নিজের জামা কাপড়, চুল চেহারা ঠিক করে নেয়। বাইরে বেরিয়ে দৌড়ে নিজের ঘরে, ঠোঁটের লিপস্টিক দেবায়নের পেটে, গালের লালিমা বেশ ভালোই লাগছে।

ব্রেকফাস্ট সেরে তিনজনে অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়ে। গাড়িতে বসে কিছুতেই আর অশান্ত মনকে শান্ত করতে পারে না, ওইদিকে দেবায়ন বেশ নিরুত্তাপ। সেই দেখে আরো রেগে যায় অনুপমা। একবার ভাবে অশান্ত মনকে শান্ত করার জন্য শ্রেয়ার ব্যাপারে আলোচনা শুরু করবে। কিন্তু পাশে পায়েল, যদি পায়েল ভেবে বসে ওকে খর্ব করা হচ্ছে তাই আর শ্রেয়া সংক্রান্ত কোন আলোচনা করে না। এই কয়দিনে দেবায়ন আর নিবেদিতা যেখানে ঘুরে বেড়িয়েছে সেই নিয়ে ওদের গল্প চলে। উটি থেকে ব্যাঙ্গালোর হয়ে বিন্সার, ডালহৌসি, সোলাং ভ্যালি সর্বত্র ঘুরে বেড়িয়েছে, কাজে না অন্য কিছু? দেবায়নকে বারেবারে খেপিয়ে তোলে অনুপমা।

দেবায়ন হেসে মাথা দুলিয়ে ওকে আরো উত্যক্ত করে জবাব দেয়, “উফফফ নিবেদিতা, মাইরি মারাত্মক মাল। বিন্সারে রুম খালি ছিল না তাই একটা রুমেই রাত কাটাতে হয়েছে।”

অনুপমা ওই কথা শুনে হতবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “মানে? গতকাল রাত্রে এইসব বলিসনি তো?” বলেই ওর চুলের মুঠি ধরে আদর করে মারতে শুরু করে দেয়।

দেবায়ন হেসে পেছনে বসা পায়েলকে বলে, “দ্যাখ দ্যাখ, আমি কিছু করিনি তাই এতো মার খেতে হচ্ছে। দেখিস ভাইকে, কোথাও কোন মেয়েকে দেখলে যেন এইভাবে মারিস না।”

পায়েল চুপচাপ মিচকি হেসে উত্তর দেয়, “অঙ্কন ওইসব করে না।”

অনুপমা পায়েলের গালে আলতো চাঁটি মেরে বলে, “বাপ রে এতো বিশ্বাস? সব ছেলে এক বুঝলি, প্যান্টের মধ্যে একটা...” সামনে ড্রাইভার বসে তাই আর কথাটা শেষ করলো না।

অফিসে ঢুকে দেখে ইতিমধ্যে শ্রেয়া এসে গেছে, রূপক খোঁড়াতে খোঁড়াতে একবার ডেভেলপার দিকে একবার অপারেশান টিমের দিকে ব্যতিব্যস্ত হয়ে ঘোরাফেরা করছে। সুপর্ণা ম্যাডাম মাথায় হাত দিয়ে বসে, অপারেশান টিমের সবাই রুপকের হুঙ্কারে কাঁপছে। এই অবস্থা দেখে কি ঘটেছে জানার জন্য অনুপমা আর দেবায়ন এগিয়ে যায়।

জিজ্ঞেস করাতে রূপক জানায়, “আরে আমাদের সার্ভার হ্যাক হয়েছে। জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের প্রোজেক্ট আর ডেটা উড়ে গেছে।”

অনুপমা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। দেবায়ন প্রশ্ন করে, “ব্যাকআপ ছিল না?”

রূপক উত্তর দেয়, “ব্যাক আপ ছিল, রেস্টোর করতে একদিন লাগবে। সেটা চিন্তার নয়, চিন্তার হচ্ছে ফায়ারওয়াল থাকা সত্ত্বেও কি করে হ্যাক হয়।” মাথা চুলকে বলে, “শালা বড় ঘাঘু মাল যে করেছে, চেক রিপাব্লিকের আই পি এড্রেস, শালা ধরা মুশকিল।”

শ্রেয়া দাঁতে দাঁত পিষে বলে, “শালা আমি জানি কে করেছে। একবার হাতে পেলে মেরে ফেলবো। এটা নির্ঘাত ইন্দ্রনীলের কাজ।”
 
অনুপমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “ইন্দ্রনীল? ও তো মারকেটিংয়ের লোক, এই নেটওয়ার্ক সম্বন্ধে এতো সব জানবে কি করে?”

শ্রেয়া মাথা নাড়িয়ে বলে, “না না আমার মন বলছে এটা নির্ঘাত ইন্দ্রনীলের কাজ। ইউরোপে ওর অনেক বন্ধু বান্ধব আছে, তাদের কাউকে দিয়ে অতি সহজে এই কাজ করানো যেতে পারে।”

দেবায়ন রূপককে শান্ত করে বলে, “আচ্ছা ঠিক আছে রে বাবা। একদিন সময় লাগবে তো, ঠিক আছে। তুই ওই রেস্টোর করা শুরু করে দে।”

তারপরে দেবায়ন চলে যায়। অনুপমা আর শ্রেয়া নিজের কাজে ডুবে যায়। একটু পরে অনুপমা দেবায়নের কেবিনে ঢুকে শ্রেয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। দেবায়নের মত আছে, তবে এখুনি পায়েলকে ডাইরেক্টর পদ থেকে সরালে হয়তো পায়েল আহত হবে তাই বলে নিজেদের থেকে পাঁচ পারসেন্ট শেয়ার শ্রেয়াকে দিয়ে দিতে। অনুপমা খুব খুশি হয়ে শ্রেয়াকে কেবিনে ডাকে।

শ্রেয়া কেবিনে ঢুকতেই দেবায়ন ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “উম্মম সুন্দরী কেমন আছিস? সকাল সকাল মাথা গরম?”

শ্রেয়া রাগে গজগজ করতে করতে বলে, “মাদার চোদ ইন্দ্রনীল, হাতের কাছে পেলে ওকে কেটে গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দেবো।”

অনুপমা হেসে বলে, “আচ্ছা থাক সেই কথা। কিছু আলোচনা করার আছে তোর সাথে একটু বস।”

শ্রেয়া একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “কি বিষয়ে?”

অনুপমা ওর হাত দুইখানি নিজের হাতের মধ্যে ধরে বলে, “তুই ওই রেজিগনেশানের ব্যাপারে কিছু বললি নাতো আর?”

শ্রেয়া ম্লান হেসে উত্তর দেয়, “সেটা তোর ব্যাপার, আমার কাজ কাজ করা সেটাই করে যাচ্ছি আর কিছু চাই না।”

দেবায়ন ওর মাথায় চাঁটি মেরে বলে, “সকাল সকাল গীতা পড়েছিস নাকি রে?”

শ্রেয়া মিচকি হেসে বলে, “নারে গীতা নামে আমাদের কোন বান্ধবী নেই যার শরীর আমি পড়বো।”

অনুপমা ঠোঁট ফুলিয়ে বলে, “এই আমি মজা করছি না কিন্তু। আমরা একটা চিন্তা ভাবনা করেছি।” শ্রেয়ার চোখে হাজার প্রশ্ন, তার উত্তরে অনুপমা ওকে বলে, “আমরা ভেবেছি তোর শেয়ার বাড়িয়ে সতেরো করে দেবো।”

শ্রেয়া ভুরু কুঁচকে হাত টেনে প্রশ্ন করে, “হটাত এক লাফে সতেরো, কি ব্যাপার?”

দেবায়ন তার উত্তরে বলে, “না মানে রূপক একবার বলেছিল অনুকে তাই।”

ওই কথা শুনে শ্রেয়া বড় আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করে, “কি বলেছিল কবে বলেছিল?”

অনুপমা মিচকি হেসে বলে, “ওই জলপাইগুড়িতে রূপক আমাকে বলেছিল বারো পারসেন্ট থেকে বাড়িয়ে দিতে। তাই আমরা ভেবেছি যে পায়েলের শেয়ার তোকে দিয়ে দেবো।”

শ্রেয়া একটু আশ্চর্য চকিত হয়ে প্রশ্ন করে, “সত্যি রূপক বলেছিল? আচ্ছা, দেখি ওর সাথে কথা বলে।” একটু থেমে চিন্তিত কণ্ঠে বলে, “পায়েলের পাঁচ পারসেন্ট আমাকে কেন? ওকে সরিয়ে দিলে মনঃক্ষুণ্ণ হতে পারে। আর হ্যাঁ, আমি শেয়ার চাই না আর ডাইরেক্টর হতে চাই না। শুধু ডিজাইনার আছি ভালো আছি।”

অনুপমা অভিমানী কণ্ঠে বলে, “এতো রাগ আমাদের ওপরে?”

শ্রেয়ার চোখ জোড়া ছলকে ওঠে, “না রে রাগ অভিমান কিছু নয়, এই এমনি বেশ ভালো আছি। বন্ধুত্বের মধ্যে টাকা পয়সা এসে গেলে সম্পর্কের টান কমে যায়, ওটা পারলে রুপকের নামে করে দিস না হলে থাক।”

দেবায়ন শ্রেয়ার গাল টেনে বলে, “না রুপকের নামে হবে না। তোর ছিল তোর থাকবে। তুই ভেবে নিস তোকে কিছু দেওয়া হয়নি ব্যাস তাহলে আর কোন চিন্তা থাকবে না।”

শ্রেয়া টলটল চোখে অনুপমাকে বলে, “তোরা দুটো না একদম পাগল।”
 
অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আর তুইও, পাগলে পাগল চেনে...”

দেবায়ন দুইজনকে জড়িয়ে ধরে বাক্যটা শেষ করে বলে, “আমি চিনি গুদু...”

শেয়ার নিয়ে শ্রেয়া নির্বিকার, টাকার অঙ্ক বাড়ল কি কমল সেটা নিয়ে ওর বিশেষ মাথাব্যাথা নেই। আগের মতন কাজে ডুবে যায় কিন্তু হাতে বেশি টাকা পেয়ে রূপক বেশ খুশি। কে বা কারা ওদের সারভার হ্যাক করেছিল সেটা আর ধরা যায় না তবে কাজের বিশেষ ক্ষতি হয়নি, কারন ডেটা আর প্রোগ্রামের ব্যাকআপ ছিল, একদিনের মধ্যে ডেটা রেস্টোর করে কাজ শুরু হয়ে যায়।

কয়েকদিন পরেই ওদের গ্রুপ কোম্পানির এনুয়াল মিটিং, হোটেলের মালিকদের আর ম্যানেজারদের ডাকা হয়েছে, দুটো কস্ট্রাক্সান কোম্পানির কর্মচারীদের ডাকা হয়েছে সেই সাথে অনুপমাদের সফটওয়্যার কোম্পানির সবাইকে ডাকা হয়েছে। নিবেদিতা আর অনুপমার ওপরে এনুয়াল মিটের সব ভার তাতেই ওরা দুইজনে খুব ব্যস্ত। মিস্টার হেরজোগ আর মিস্টার মেরকেল, জারমেনিয়া এয়ারলাইন্স আর এয়ার বার্লিনের আই টি ডিপার্টমেন্টের কর্তারা আসবে বলে জানিয়েছে।

দেবায়ন মিটের জায়গা ঠিক করার জন্য বাবার সাথে হোটেল রেডিসন গেছে। ওই হোটেলে বেশ বড় লন আছে সেই সাথে গঙ্গার ধারে বেশ ভালো হবে। অনুপমা চুপচাপ নিজের কেবিনে বসে এনুয়াল মিটের কথা চিন্তা করছিল। কি মেনু হবে, কারা কারা আসছে তাদের ফাইনাল লিস্ট, বাইরে থেকে যারা আসবে তাদের কারুর কারুর জন্য রেডিসনে রুম বুক করা হয়েছে, কারুর জন্য পার্কে অথবা হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশানালে। লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে সেটা খেয়াল নেই ওর। এমন সময়ে শ্রেয়া আর পায়েল দড়াম করে ওর দরজা খুলে কেবিনে ঢুকে পড়ে। ওদের ওই ভাবে ঢুকতে দেখ একটু আশ্চর্য হয়ে যায় অনুপমা।

শ্রেয়া সামনের চেয়ার টেনে বলে, “এই তুই কি রে, লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে আর এতো কি নিয়ে পড়ে আছিস তুই?” পায়েল চুপচাপ শ্রেয়ার পাশে একটা চেয়ার নিয়ে সামনে বসে পড়ে।

অনুপমা হেসে জিজ্ঞেস করে, “কি এনেছিস আজকে?”

শ্রেয়া ওর ল্যাপটপ বন্ধ করে বলে, “দেবু নেই বলে কি খাওয়া দাওয়া ভুলে গেছিস?”

অনুপমা হেসে উত্তর দেয়, “না না সেরকম কিছু নয়। এই এনুয়াল মিটের ব্যাবস্থা করছিলাম। নিবেদিতা ম্যাডামের সাথে এর পরে দেখা করতে যাবো।”

শ্রেয়া ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “ওই সব জানিনা, সামনে পুজো, পুজোর বাজারের কি হবে?” পায়েলের দিকে তাকিয়ে বলে, “কিরে আমি কি সব বলবো আর তুই বেশ আম খাবি তাই না।”

পায়েল স্মিত হেসে ওকে বলে, “তুই যে ভাবে আক্রমন করেছিস তাতে আমি আর কি বলবো।” তারপরে অনুপমাকে বলে, “রূপক এইবারে ধরেছে ট্রেকিংয়ে যেতে। কি করবো?”

উফ, এই রূপক, কয়েকদিন থেকে নেচে বেড়াচ্ছে ট্রেকিংয়ে যাবে। কে কে যাবে এখন সেটাই ঠিক করা হলো না, কে না কে ওকে ইমেল করেছে আর সেই নিয়ে খাটলিং গ্লেসিয়ার যাবে তাই নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু করে দিয়েছে।

শ্রেয়া ওর হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বলে, “আজকে আর কোন কাজ নয়, চলো পুজোর বাজার করতে বেরিয়ে পড়ি।”

অনুপমা পায়েলের দিকে তাকায়, পায়েল স্মিত হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয় যে পুজোর বাজার করতে যেতে রাজি। অনুপমা জানায় ওকে একবার নিবেদিতার কাছে যেতে হবে কিছু বিষয়ে আলোচনা করার জন্য। পায়েল, শ্রেয়া কেউ নিবেদিতাকে চেনে না তাই ওকে প্রশ্ন করে নিবেদিতার পরিচয়। অনুপমা একটু ভেবে নিবেদিতার পরিচয় দেয়, ওদের কন্সট্রাক্সান কোম্পানির কর্ণধার হিসাবে।

তিনজনে রাসেল স্ট্রিটের অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা মিন্টো পার্কে, নিবেদিতার অফিসে চলে যায়। ওদের দেখে নিবেদিতা একটু অবাক হয়ে যায়। কোনোদিন অনুপমা ওদের অফিসে আসেনি আর যখন এসেছে একেবারে সাথে দুই বান্ধবী নিয়ে এসেছে।

নিবেদিতা একটু ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়ে অনুপমাকে দেখে। অনুপমা ওকে ক্ষান্ত করে বলে, “আরে এতো হুড়োহুড়ি কেন লাগিয়েছো? সবাই বান্ধবী।” পায়েল আর শ্রেয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।

নিবেদিতা হেসে পায়েলকে বলে, “কেমন আছো?”

পায়েল অবাক হয়ে যায়, অনুপমা আলতো মাথা দুলিয়ে ইশারায় জানায় নিবেদিতা ওর সম্পর্কে সব কিছু জানে। তারপরে অনুপমা ওকে জানায় যে ওরা সবাই পুজোর বাজার করতে বের হবে, যদি নিবেদিতা সঙ্গে যায় তাহলে খুব ভালো হয়। সেই শুনে নিবেদিতাও বেশ খুশি হয়ে যায়। অনুপমার মাথায় শুধুমাত্র একটা চিন্তা ঘোরাফেরা করে, সত্যি কি বিন্সারে নিবেদিতা আর দেবায়ন একটা রুমে ছিল?

অদম্য কৌতূহল শেষ পর্যন্ত দমিয়ে রাখতে না পেরে অনুপমা নিবেদিতাকে এক সময়ে কানে কানে প্রশ্ন করে, “বিন্সারে কি হয়েছিল?”

হটাত ওই প্রশ্ন শুনে নিবেদিতা ঘাবড়ে যায়, উত্তর দেয়, “কি হয়েছিল?”

অনুপমা ওর চেহারা দেখে বুঝতে পারে দেবায়ন ওকে ইয়ার্কি মেরে বলেছে, তাও প্রশ্ন করে, “রিসোর্ট কেমন ছিল?”
 
নিবেদিতা স্মিত হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ ঠিকঠাক, তবে অনেক কাজ বাকি। একটা সুইমিং পুল, একটা বাচ্চাদের পার্ক, বেশ কিছু এক্সপান্সানের কাজ করতে হবে এই যা। কেন দেবায়ন তোমাকে কিছু বলেনি এই ব্যাপারে?”
অনুপমা মাথা নাড়ায়, “না গো, এই সবে আমার কি কাজ। আজকাল কোথায় কি কি করে আসে আমাকে সব বলে নাকি?”

নিবেদিতা হেসে বলে, “এই রকম বোলো না, সারাটা সপ্তাহ শুধু তোমার গুণগান করে বেরিয়েছে।” ওর গাল টিপে বলে, “এক সময়ে আমার কান ঝালাপালা হয়ে গেছিলো পুচ্চির কথা শুনে।”

“পুচ্চি” এই ডাক শুধুমাত্র দেবায়ন আর ওর মধ্যে সীমিত। সেই নাম নিবেদিতার ঠোঁটে শুনে বুঝতে পারে, না সারাটা সময় শুধুমাত্র ওর কথাই হয়েছে এদের মাঝে।

মিন্টো পার্কের নিবেদিতার অফিস থেকে চারজনে বেরিয়ে, গাড়ি নিয়ে সোজা এস্প্লানেড। আকাশে কালো মেঘ তাও বাঙালীরা পুজোর বাজার করতে বেরিয়েছে, পুজো বলে কথা, সামান্য কালো মেঘ কি আর তাতে বাধ সাধতে পারে। রাস্তায় তিল ঠাঁইয়ের জায়গা নেই, চারদিকে লোকে লোকারণ্য। কোন ছেলে সঙ্গে নেই, ভিড় ঠেলে এগুতে একটু অসুবিধে হয়, এতো ভিড়ে কেনাকাটা করতে অনুপমা অভ্যস্ত নয়। এতদিন দেবায়ন অথবা মায়ের সাথে বেরিয়েছে, ওকে আগলে রাখার জন্য পাশে দেবায়ন থাকতো এইবারে নেই। ভিড় ঠেলে এগোতে এগোতে এমন সময়ে ওর মামনি, দেবশ্রীর ফোন আসে।

দেবশ্রী ফোন করে বলে, “হ্যাঁ রে তুই কোথায়?”

অনুপমা উত্তর দেয়, “এই শ্রেয়া আর পায়েলকে নিয়ে একটু শপিং করতে বেরিয়েছি। কি হয়েছে বলো না?”

দেবশ্রী একটু থেমে ওকে প্রশ্ন করে, “দেবু কখন বাড়ি ফিরবে কিছু বলে গেছে কি?”

অনুপমা জানে দেবায়নের ফিরতে রাত হবে, রেডিসন থেকে সোজা আবার ব্যান্ডেল যাবে বাবার সাথে তারপরে ফিরবে। তাই দেবশ্রীকে উত্তর দেয়, “ওর ফিরতে রাত হবে কেন কিছু কাজ আছে নাকি?”

দেবশ্রীর একটু চিন্তিত কণ্ঠে ওকে বলে, “এখুনি একটু বাড়িতে আসতে পারবি? একটু কথা ছিল।”

বন্ধুদের নিয়ে শপিং করতে বেরিয়েছে এর মাঝে মামনির ফোন। মামনির গলা শুনে মনে হলো একটু চিন্তিত তাই পাল্টা প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে তোমার?”

দেবশ্রী উত্তর দেয়, “তেমন কিছু না। মণির ছেলে হয়েছে...”

সেই খবর শুনে অনুপমা আনন্দিত হয়ে বলে, “এ তো ভালো খবর কিন্তু তোমাকে কে খবর দিল?”

দেবশ্রী একটু থেমে ওকে বলে, “না রে ওরা এখানে মানে... তুই একটু বাড়িতে আসতে পারবি, জরুরি দরকার আছে।”

সূর্য মনিদিপা কোলকাতায় শুনে অনুপমা আশ্চর্য হয়ে যায়। ওদের জলপাইগুড়ি থাকার কথা, সেই মতন দেবায়নকে রাজি করিয়ে ওদের ছয় লাখ টাকা দিয়ে এসেছিল দোকান করার জন্য। মনিদিপা ছেলে হয়েছে সেটা সুখবর বটে কিন্তু ওদের বারবার করে বলে এসেছিল যাতে ওরা কোনোদিন মামনির সাথে সম্পর্ক করার চেষ্টা না করে তা সত্বেও ওরা ফোন করেছে? ভাবতেই রাগে অনুপমার গা জ্বলে ওঠে।

অনুপমা মামনিকে প্রশ্ন করে, “কোথায় আছে ওরা, কি কথা হয়েছে ওদের সাথে?”

দেবশ্রী ওর কণ্ঠস্বর শুনে একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলে, “তুই প্লিস দেবুকে কিছু বলিস না পারলে একটু তাড়াতাড়ি মানে দেবু বাড়ি ফিরে আসার আগে আমার এখানে আয়।”

তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমতী অনুপমার বুঝতে দেরি হয় না যে মনিদিপা আর সূর্য সোজা মামনির বাড়িতে এসেছে। শ্রেয়া আর পায়েলকে বলে অফিসে চলে যেতে আর নিবেদিতার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। বলে একটা জরুরি কাজে ওকে এখুনি বের হতে হবে। শ্রেয়া বারেবারে জিজ্ঞেস করলেও উত্তর দেয় না। নিবেদিতা বাকিদের নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অফিসে দিকে আর অনুপমা একটা ট্যাক্সি ধরে সোজা লেক টাউনে দেবায়নের বাড়ি পৌঁছে যায়।

দেবশ্রী ওর জন্য বসার ঘরে অপেক্ষা করছিল। বাড়িতে ঢুকেই মনিদিপা আর সূর্যকে দেখে আশ্চর্যের সাথে সাথে রেগে ওঠে। দেবশ্রী অনুপমার চেহারা দেখে বুঝতে পারে যে অনুপমার রেগে গেছে ওদের দেখে, কিন্তু নিরুপায়।

অনুপমা কঠিন কণ্ঠে সূর্য আর মনিদিপাকে প্রশ্ন করে, “কি মনে করে একেবারে এই বাড়িতে আসা হয়েছে?”

সূর্য এক কোনায় দাঁড়িয়ে, মনিদিপা ছোট ছেলে কোলে ওকে বলে, “প্লিস খুব বিপদে পড়ে বৌদির শরণে এসেছি। আমি জানতাম তুমি রেগে যাবে কিন্তু আমরা বড় নিরুপায়।”

অনুপমা হিমশীতল কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “কেন নিরুপায়? তোমাকে ছয় লাখ টাকা দিয়ে এসেছিলাম দোকান দিতে। চুপচাপ ওইখানে ব্যাবসা করতে পারতে। আবার আমাদের জীবনে কোন ব্যাঘাত ঘটাতে এসেছো? আর এসেছো যখন তখন এই বাড়িতে কেন?” সূর্যের দিকে আঙুল তুলে বলে, “তোমার মনে নেই কি বলেছিলাম?”
 
ওর কঠিন কণ্ঠস্বর শুনে দেবশ্রী ওকে শান্ত করে বলে, “যা হবার হয়ে গেছে, এইবেলা ওদের ক্ষমা করে দে, মা।”

অনুপমা অবাক হয়ে মামনিকে বলে, “তুমি কি মানুষ মামনি? যা হবার হয়ে গেছে আর আমরা ভুলে যাবো?”

দেবশ্রী মাথা নিচু করে বসে থাকে সেই সাথে সূর্য আর মনিদিপার মাথা নিচু হয়ে যায়। অনুপমা ওদের কোলকাতা আসার কারন জিজ্ঞেস করে।

উত্তরে সূর্যের বদলে মনিদিপা বলে, “কিছুটা আমাদের ভুল আর আমাদের কপাল। তুমি যে ছয় লাখ টাকা দিয়েছিলে তার মধ্যে তিন লাখ দিয়ে একটা ছোট দোকান খুলেছিল সূর্য আর বাকি তিন লাখ একটা চিটফান্ডে দিয়েছিল। সেই চিট ফান্ড টাকা খেয়ে পালিয়ে গেছে। দোকানের অনেক কিছু বাকি পড়ে যায়, দোকান কয়েক মাস পরে উঠে যায়। আবার আমরা সেই পথে বসে যাই।”

অনুপমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, কঠিন কণ্ঠে মনিদিপাকে বলে, “সেটা তোমাদের আগে ভাবা উচিত ছিল মনিদিপা। বারেবারে তোমাদের টাকা আমি দিতে পারবো না। সেবারে অনেক কষ্টে দেবায়নকে রাজি করিয়ে টাকা দিয়েছিলাম কিন্তু আর নয়।” কিছুক্ষণ থেমে বলে, “এখন কোথায় উঠেছো?”

মনিদিপা মাথা নাড়িয়ে বলে, “সোজা জলপাইগুড়ি থেকে এইখানে এসেছি আর কোথায় যাবো বলো?”

অনুপমা আহত সাপের মতন ফোঁস করে ওঠে, “কেন, তোমাদের অসুবিধে আমাকে ফোন করতে পারোনি?”

আহত সূর্য মিনমিন করে বলে, “না মানে, ভাবলাম তুমি সেই বারে টাকা দিয়েছো এইবারে যদি বৌদি...”

মামনি সামনে বসে আছে সেটা অনুপমা ভুলে যায়, প্রচন্ড রাগে চেঁচিয়ে বলে, “মামনি কি করবে? দেবায়ন আসার আগে তোমাদের এই বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে।”

সূর্য কাতর কণ্ঠে বলে, “কোথায় যাবো? এইখানে আর কে আছে আমাদের?”

অনুপমা মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “এতদিন এই কোলকাতায় ছিলে কোন চেনাজানা কারুর বাড়িতে থাকো কিন্তু আর এক পয়সা তোমরা পাবে না।”

অগ্নিশর্মা অনুপমাকে শান্ত করে দেবশ্রী বলে, “তুই একটু শান্ত হয়ে দেখ কি করা যেতে পারে। এই ছোট বাচ্চা নিয়ে ওরা কোথায় যাবে?”

তখনি কোলের ছোট বাচ্চাটা কেঁদে ওঠে, সেই কান্না শুনে অনুপমার মন কিছুটা গলে যায়। মনিদিপা আর সূর্যকে বলে, “তোমাদের মাথা গোঁজার জায়গা আছে কি?” সূর্য মাথা দুলিয়ে জানায় আছে। অনুপমা ওদের বলে, “আচ্ছা তাহলে সেইখানে থাকো। কয়েকদিনের মধ্যে আমি দেখি কি করতে পারি।”

অনুপমা মনিদিপার কোল থেকে ছোট ছেলেটাকে কোলে নিয়ে দেখে, বেশ টাবুটুবু গোলগাল মিষ্টি দেখতে বাচ্চাটা। ছোট্ট নরম হাত বাড়িয়ে অনুপমার গাল ছুঁয়ে দেয়। অনুপমা শেষ পর্যন্ত রাগ ভুলে ছেলেটাকে কোলে নিয়ে হেসে ফেলে। আলতো মাথা নাড়িয়ে স্মিত হেসে বলে, “এই তোর জন্য বুঝলি রে শয়তান ছেলে...”

বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতন বাড়ির সামনে অনুপমার বাবার গাড়ি এসে দাঁড়ায়। ওই গাড়ি থেকে দেবায়নকে নামতে দেখে বাড়ির মধ্যে সবার গা হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। অনুপমা আর দেবশ্রী মুখ চাওয়াচাওয়ি করে, কিছু করে হোক দেবায়নকে সরাতে হবে। যদি দেবায়ন ওদের বাড়িতে সূর্য আর মনিদিপাকে দেখে ফেলে তাহলে মাথায় রক্ত চড়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে অনুপমার মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়, নিজের ব্যাগ উঠিয়ে মামনির গালে ছোট্ট চুমু খেয়ে বেরিয়ে যায়।

দেবায়ন বাড়িতে ঢোকার আগেই সামনের দরজা খুলে এক গাল হেসে ওকে বলে, “তুই এতো তাড়াতাড়ি ফিরে এলি? রেডিসন ফোরটে কি হলো?”

ওদের বাড়িতে এই বিকেলে অনুপমাকে দেখে দেবায়ন আশ্চর্য হয় না, কেননা ওর জন্য এই বাড়ির দরজা সবসময়ে খোলা। তাও স্মিত হেসে জিজ্ঞেস করে, “মা কখন বাড়িতে ফিরেছে?”

অনুপমা ওকে বাইরেই দাঁড় করিয়ে রেখে বলে, “আরে না আমার একটু কাজ ছিল তাই এসেছিলাম।” ওর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে, “তুই প্লিস আমার সাথে একটু পুজোর শপিং করতে যাবি?”

দেবায়ন অবাক হয়ে ওকে বলে, “সেই রায়চক থেকে এসেছি একটু বাড়িতে বসতে দে তারপরে না হয় যাবো।”

অনুপমা কাতর কণ্ঠে আবদার করে, “প্লিস প্লিস, ওই দেখ গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে চল না একটু।”

সুন্দরী প্রেয়সীর কাতর কণ্ঠের ডাক উপেক্ষা করার যো ওর নেই তাই অগত্যা আবার গাড়িতে উঠে অনুপমার সাথে শপিং করতে বের হতে হয় ওকে। গাড়িতে উঠেই দেবায়নের চোখ বাঁচিয়ে দেবশ্রীকে একটা এস এম এস করে জানিয়ে দেয় সূর্য আর মনিদিপাকে বাড়ি থেকে সরিয়ে দিতে আর রাতে ফোন করে এই বিষয়ে কথাবার্তা বলবে। ঘুণাক্ষরে যদি দেবায়ন এই বিষয়ে টের পায় তাহলে আর রক্ষে নেই।
 
সেদিনের মতন সূর্য আর মনিদিপাকে দেবায়নের হাত থেকে বাঁচাতে সক্ষম হয় অনুপমা। সেদিন শপিং করতে বিশেষ মন ছিল না ওর, মাথায় শুধু ঘুরছিল সূর্য আর মনিদিপাকে কি করে ওর চোখ বাঁচিয়ে সাহায্য করা যায়। ব্যাঙ্কে ওদের জয়েন্ট একাউন্ট, এতগুলো টাকা তুললে অতি সহজে দেবায়নের কাছে ধরা পড়ে যাবে, যদিও দেবায়ন কোনোদিন প্রশ্ন করে না ব্যাঙ্কের খাতা কোনোদিন নিজে খুলে দেখেও না। টাকার দরকার পড়লে ওর পার্স হাতড়ায় না হলে ওর কাছেই হাত পাতে। কিন্তু তাই বলে এতোগুলো টাকা দেবায়নকে না বলে দেবে, সেটা মন মেনে নিতে পারে না। সূর্য আর মনিদিপা যখন আবার কোলকাতা ফিরে সোজা দেবায়নের বাড়িতে এসছে, নিশ্চয় কিছু কুমতলবে এসেছে। যদি সত্যি ওদের টাকার প্রয়োজন হতো অথবা বিপদে পড়তো তাহলে হয়তো একবারের জন্য ওকে ফোন করতো কিন্তু সেটা করেনি। কত টাকা চায় ওরা, কত টাকা দিলে সূর্য আর মনিদিপা চুপ থাকবে? একবার মনিদিপার শারীরিক অবস্থা দেখে বিগলিত হয়ে টাকা দিয়েছিল, এইবারে আবার কোলে ছোট ছেলে নিয়ে এসেছে। ফেলে দিতে চাইলেও ফেলে দেওয়া যায় না কিছুতেই। অন্তত ওর হৃদয় অতটা পাথর হয়ে যায়নি এখন। শত ভাবনা মাথায় ভর করে। দেবশ্রীও এই বিষয়ে দেবায়নকে কিছু জানায় না।

কয়েকদিন পরে সূর্যের দেওয়া ঠিকানায় অনুপমা একা গিয়ে ওদের সাথে দেখা করে।

কয়েকদিন পরে সূর্যের দেওয়া ঠিকানায় অনুপমা একা গিয়ে ওদের সাথে দেখা করে। জলপাইগুড়ির থেকে সর্বস্বান্ত হয়ে কোলকাতায় ফিরে মনিদিপা আর সূর্য একটা ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করেছে। কথায় কথায় অনুপমা জানতে পারে, সূর্য ওর দেওয়া টাকা একটা চিটফান্ডে ঢুকিয়েছিল, ওর সাথে আরো অনেকে টাকা দিয়েছিল সবাই টাকা হারিয়ে এক রকম পথে বসে গেছে। অনুপমা ওদের বলে যদি এতই ওদের টাকার দরকার ছিল তাহলে ওকে বলতে পারতো, কিন্তু ভুয়ো চিটফান্ডে টাকা কেন দিতে গেল। নিরুত্তর সূর্য আর মনিদিপা। অনুপমা ভেবে পায় না কি ভাবে কোথা থেকে টাকা যোগাড় করবে।

ওর কাছে দশ হাজার টাকা ছিল সেইগুলো মনিদিপার হাতে তুলে দিয়ে বলে, “এই টাকা এখন রাখো, পরে দেখছি কি করতে পারি।”

মনিদিপা ওর হাত ধরে কাতর কণ্ঠে বলে, “সত্যি বলছি আমরা এইখানে কোন বদমতলবে আসিনি। ভেবেছিলাম গতবার তোমার কাছে হাত পেতেছি এইবারে যদি বৌদি ক্ষমা করে দিয়ে থাকে তাহলে হয়তো বৌদি আমাদের সাহায্য করবে।”

অনুপমা কঠিন কণ্ঠে উত্তর দেয়, “মামনির কাছে যাওয়াটা তোমাদের বড় ভুল হয়ে গেছে। দেবায়নের বাড়ি যাওয়া তোমাদের মোটেও উচিত হয়নি। তোমাদের কোলকাতায় থাকা মোটেও চলবে না, জলপাইগুড়ি ফিরে যাও। কারন একবার যদি দেবায়ন এই সব জানতে পারে তাহলে কিন্তু তোমাদের নিস্তার নেই। এই শেষ বারের মতন আমি টাকা দেবো আর নয় এর পরে কিন্তু তোমাকে কথা দিতে হবে যে আর মামনির ধারে কাছে আসবে না। যদি আসো তাহলে আমি নিজে দেবায়নকে সব বলে দেবো আর তোমাদের ওই...”

মনিদিপা আঁতকে ওঠে, “জলপাইগুড়ি ফিরে যাওয়ার মতন অবস্থা নেই আমাদের। ওইখানে ফিরে গেলে সূর্যকে কেউ ছেড়ে দেবে না। ওকে ধরে মেরে ফেলবে। না না এই শেষ বারের মতন আর আমরা তোমাদের ধারে কাছে আসবো না।”

অনুপমা প্রশ্ন করে, “কি করেছে সূর্য? কারা ওকে মেরে ফেলবে?”

মনিদিপা মাথা নিচু করে বলে, “সূর্যের সাথে সাথে অনেকের টাকা ওই চিটফান্ডে লেগেছে। সূর্য দোকানের সাথে সাথে ওই চিটফান্ডের এজেন্ট ছিল। যাদের টাকা গেছে তারা হন্যে হয়ে সূর্যকে খুঁজছে। সবার ধারনা সূর্য এই সব জানতো। সেই জন্য আমরা একরাতের মধ্যে জলপাইগুড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছি।”

বড় ভাবনায় পড়ে যায় অনুপমা। এমন সময়ে মনিদিপার ছোট ছেলেটা শিশু কণ্ঠে কিছু একটা আওয়াজ করে ওঠে। মনিদিপার ছোট ছেলেকে দেখে অনুপমার মন গলে যায়, ওকে কোলে নিয়ে মনিদিপাকে জিজ্ঞেস করে, “কি নাম রেখেছো?”

মনিদিপা স্মিত হেসে উত্তর দেয়, “শুভায়ন বোস।”

মিচকি হাসে অনুপমা, বাচ্চাটাকে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে বলে, “দেখিস তোর দাদার মতন হস নে যেন।”

ওর কথা শুনে অনুপমার সাথে সাথে মনিদিপাও হেসে ফেলে। তারপরে ওর হাত ধরে কাতর প্রার্থনা জানিয়ে বলে, “প্লিস কিছু একটা করো। আমি কথা দিচ্ছি এরপরে এমন ভুল আর হবে না।”

কিছুদিন পরে অনুপমা নিবেদিতার কাছ থেকে কোন এক অছিলায় টাকা চেয়ে প্রায় তিন লক্ষ টাকার মতন সূর্যকে দেয়। অনুপমার টাকা চাওয়াটা নিবেদিতার মনে একটু খটকা লাগে, কোটিপতির মেয়ে, নিজের এতো বড় কোম্পানি, দেবায়ন ঘুরে ঘুরে এতো টাকা কামায় তাও কেন অনুপমা ওর কাছে হাত পাতলো?

জিজ্ঞেস করাতে শেষ পর্যন্ত নিবেদিতাকে গল্প বানিয়ে বলে অনুপমা, “কিছু না গো, আমার এক বন্ধু খুব বিপদে পড়েছে। ওই বন্ধুর ব্যাপারে দেবায়ন কিছুই জানে না তাই তোমার কাছ থেকে চাইলাম। আসলে কি জানো, বাড়িতে কারুর কাছে হাত পাতলে সবাই দেবায়নকে বলে দেবে।”

নিবেদিতা ইয়ার্কি মেরে ওকে জিজ্ঞেস করে, “হটাত এমন কোন বন্ধু তোমার যে শেষ পর্যন্ত দেবায়নকে লুকিয়ে টাকা দিতে হচ্ছে?” ওর অর্থ অনুপমা কি দেবায়ন ছাড়া অন্য কারুর সাথে প্রেম করে?

অনুপমা মিচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে, “তুমি যা ভাবছো সেই রকম কিছুই নয়। তবে প্লিস দেবায়নকে এই সব যেন বোলো না তাহলে খুব বিপদে পড়ে যাবো।”

নিবেদিতা ওর হাত ধরে অভয় দিয়ে বলে, “আমার যা কিছু তা সব তোমার আর কথা দিলাম দেবায়ন এর সম্বন্ধে কিছুই জানবে না।”

এনুয়াল মিটের দিন কাছে চলে আসে। অনুপমার সব বন্ধুদের আমন্ত্রন জানানো হয়। দেবায়ন আর সোমেশবাবু, শান্তনু আর একজন এডমিনের লোক নিয়ে সকালেই রেডিসন ফোরটে পৌঁছে গেছে। এনুয়াল মিটের জন্য অনুপমা একটা দামী ডি.এন.কে.অয়াই কালো রঙের ব্যাকলেস ইভিং গাউন পরে। পারমিতা যথারীতি শাড়ি পরে সেই সাথে পায়েলকেও শাড়ি পরতে হয়। ওরা অঙ্কনকে নিয়ে বিকেলের মধ্যেই রায়চকের দিকে রওনা দেয়। যাবার আগে অনুপমা বারেবারে মাকে সাবধান করে দিয়ে বলে যেন মিটে বেশি মদ না খায়, মনের মধ্যে বহু পুরানো ভয়টা আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। পারমিতা একপ্রকার মদ খাওয়ায় ছেড়ে দিয়েছে, শুধু বাড়িতে সোমেশের সাথে মাঝে মাঝে সাঝে একটু আধটু প্রেম করার সময় খায়। মাথা নাড়িয়ে বাধ্য মেয়ের মতন জানিয়ে দেয় যে মদ খাবে না একদম।

অনুপমা জানিয়ে দেয়, মামনিকে সঙ্গে নিয়ে ও ঠিক সময়ে রেডিসন ফোরটে পৌঁছে যাবে। গাড়ি নিয়ে লেকটাউন পৌঁছে দেখে দেবশ্রী তখন তৈরি হয়নি।
মামনিকে এক ধ্যাতানি দিয়ে বলে, “কি হলো যাবে না, তাড়াতাড়ি তৈরি হও।”

দেবশ্রী মিষ্টি হেসে উত্তর দেয়, “তোদের অফিসের এনুয়াল পার্টিতে আমি গিয়ে কি করবো বল? ওইখানে সব অফিসের লোকজন থাকবে। আমি বুড়ি মানুষ, বড় বেমানান লাগবে। প্লিস সোনা কিছু মনে করিস না।”
 
ছোটবেলা থেকে মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত। ভাই আর বোন একে ওপরের পরিপূরক হয়েই বড় হয়েছে। মাকে পেয়েছে দেবায়নের সাথে প্রেম করার পরে। তবে পারমিতা যে ছেলে মেয়েদের ভালবাসতো না সেটা কখনই নয়। মায়ের ভালোবাসা অনেকটা মামনি ওকে দিয়েছে।

অনুপমা নাছোড়বান্দা, দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুমি বুড়ি কে বলেছে, মামনি? এনুয়াল মিট হয়েছে তো কি হয়েছে। তোমার জন্য এই এনুয়াল মিট, তোমার আশীর্বাদ ছাড়া কি আর আমরা এতটা পথ পারো করে আসতে পারতাম? কখনই না।” আদুরে কণ্ঠে বলে, “মামনি তুমি না গেলে কিন্তু আমিও যাবো না। প্লিস মামনি তোমাকে যেতেই হবে।”

শেষ পর্যন্ত মেয়েটার জোরাজুরিতে দেবশ্রী তৈরি হয়ে নেয়। পথে যেতে যেতে সঙ্গীতা আর প্রবালকে সঙ্গে নিয়ে নেয়। শ্রেয়া আর রূপক, বাকিদের নিয়ে পৌঁছে যাবে। অনেকদিন পরে সঙ্গীতার সাথে দেখা হওয়াতে বেশ গল্পে মেতে ওঠে। প্রায় ঘন্টা খানেক বাদে, সন্ধ্যে নাগাদ ওদের গাড়ি রায়চকে পৌঁছে যায়।

এর মাঝে নিবেদিতা বারেবারে ফোন করে জানতে চায়, উদ্যোক্তার দেরি হলে কি করে হবে। সত্যি কথা, অনুপমা আর নিবেদিতা এই মিটের উদ্যোক্তা আর নিজের দেরি হয়ে গেল। ফোনে ক্ষমা চেয়ে নেয় নিবেদিতার কাছে। সেদিনের পরে দেবায়নকে আর ওদের বন্ধুত্বের মাঝে মধ্যস্ততা করতে হয়নি, আপনা থেকেই কেমন যেন নিজের মতন করে মিশে গেছে অনুপমা আর নিবেদিতা। নিবেদিতাকে বেশ কয়েকবার নিজের বাড়িতে ডেকেছিল অনুপমা কিন্তু কাজের অছিলায় অতি সুকৌশলে আমন্ত্রন এড়িয়ে গেছে। ওদের দেখা সাক্ষাৎ সবসময়ে বাড়ির বাইরেই হয়েছে, এক নয় অফিসে না হয় কোন রেস্টুরেন্টে অথবা নিবেদিতার বাড়িতে।

গাড়ি থেকে নামতেই নিবেদিতার মুখোমুখি। মেয়েরা সব রূপের ডালি সাজিয়ে এসেছে এই মিটে। নিবেদিতার পরনে একটা গাড় নীল রঙের পাতলা শাড়ি, হাতকাটা ব্লাউজ যার পিঠের দিক অনেকটা উন্মুক্ত। অতীব সুন্দরী লাস্যময়ী নিবেদিতাকে দেখে একটু হাসে অনুপমা।

ওকে দেখেই কপট ঝাঁঝিয়ে ওঠে নিবেদিতা, “দেখো মেয়ের কান্ড, এতো দেরি করলে হয়? সবাই প্রায় এসে গেছে আর আসল লোকের দেখা নেই। এইদিকে আবার আকাশের অবস্থা খারাপ। মিটিং লনে হবে না ব্যাঙ্কোয়েট করা হবে?”

অনুপমাদের নামতে দেখে দেবায়ন এগিয়ে আসে ওদের দিকে। মাকে দেখতে পেয়ে বেশ খুশি। দেবশ্রী ছেলেকে হেসে বলে, “তুই তো আর দেখিস না আমাকে তাই এই মেয়েটার সাহায্য নিতে হয়।”

দেবায়ন মাথা চুলকিয়ে উত্তর দেয়, “আমি আর ও আলাদা কোথায় হলাম মা?”

অনুপমা একটু লজ্জা লাগে সেই কথা শুনে তাই বলে, “তুই চুপ কর তো, আলাদা অনেক আলাদা। এই যেমন তুই মামনিকে দেখিস না আমি দেখি। তুই কোলকাতা থাকিস না আমি থাকি।”

নিবেদিতার সাথে মামনির পরিচয় করিয়ে বলে, “মিস নিবেদিতা চৌধুরী, বাবার কন্সট্রাক্সান কোম্পানির...” নিবেদিতা করজোড় করে দেবশ্রীর সাথে কুশল বিনিময় করে।

কথাটা টেনে বাকিটা দেবায়ন পরিচয় দেয়, “নিবেদিতা ম্যাডাম আমাদের ভালো বান্ধবী বলতে পারো, এই পরিবারের একজন।”

নিবেদিতার চেহারা হটাত করে ফ্যাকাসে হয়ে যায়, দেবায়ন স্মিত হেসে মাথা নাড়ায় নিবেদিতাকে দেখে। অনুপমা বিষয়টা লক্ষ্য করে, সত্যি পরিবারের মতন নিবেদিতা কারন অনেক দিন ধরেই বাবার সাথে নিবেদিতার ব্যাবসায়িক সম্পর্ক, যদিও বাড়িতে যাতায়াত নেই।

অনুপমাও হেসে বলে, “হ্যাঁ মামনি, নিবেদিতা ম্যাডাম আমাদের খুব ভালো বান্ধবী।”

দেবশ্রীকে দেখে মনীষা এগিয়ে এসে কুশল বিনিময় করে। অনেকদিন পরে শান্তনু আর মনীষার সাথে দেবশ্রীর দেখা হয়। ওদের দেখে পারমিতা এগিয়ে আসে, কিন্তু পাশে নিবেদিতাকে দেখে একটু দুরেই দাঁড়িয়ে পড়ে। দেবশ্রীর সাথে চোখাচুখি হওয়াতে দেবশ্রী ওর কাছে চলে যায়। মেয়েরা যারাই শাড়ি পরে এসেছে তাদের শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ছটা বিচ্ছুরিত হচ্ছে। একমাত্র দেবশ্রী ছাড়া বাকিদের শাড়ি যেন সুন্দরী লাস্যময়ীদের দেহ অনাবৃত করে দেখাতে প্রস্তুত। পারমিতার পরনে একটা কালো ফিনফিনে শাড়ি, গভীর বক্ষবিদলনের বেশ কিছুটা উন্মুক্ত। আঁচলে যদিও ঊর্ধ্বাঙ্গ ঢাকা তবে পাতলা আঁচলের নীচে কিছুই যেন আর ঢেকে নেই। সেই এক অবস্থা নিবেদিতার। পিঠের দিকটা অনেক কাটা, মনে হয় অন্তর্বাস পরেনি এমন মনে হচ্ছে দেখে।

পারমিতাকে দেখে দেবশ্রী হেসে বলে, “মেয়ে যত বড় হচ্ছে তত যেন তোমার বয়স কমছে।”

পারমিতা দেবশ্রীর হাত চেপে হেসে বলে, “কি যে বলেন না দিদি। আসুন বাকি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।” বলে দেবশ্রীকে নিয়ে অন্যদিকে হাঁটা দেয়।

নিবেদিতা দেবায়নকে একপাশে টেনে জিজ্ঞেস করে, “তুমি অনন্যাকে ফোন করেছিলে?”

অনন্যা আসবে সেটা অনুপমা জানতো না তাই অবাক হয়ে ওদের প্রশ্ন করে, “অনন্যাদি আসছে নাকি? কই গেস্ট লিস্টে নাম নেইতো।”

নিবেদিতা মিচকি হেসে ওকে উত্তর দেয়, “না না আছে, ফাইনাল গেস্ট লিস্টে ওর নাম আছে।”

দেবায়ন মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দেয় অনন্যাকে ফোন করে এমনকি ওকে কার্ড পাঠিয়ে আমন্ত্রন জানানো হয়েছে। ওর হয়তো শুটিং সেরে আসতে একটু দেরি হবে কিন্তু যখন কথা দিয়েছে তখন নিশ্চয় আসবে। সেই সাথে চোখের ইশারায় নিবেদিতার সাথে দেবায়নের কিছু কথা হয়ে যায় যেটা অনুপমার বোধগম্য হয়না।

নিবেদিতা চলে যাওয়ার পরে অনুপমা ওর বাজু আঁকড়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, “আমাকে কেমন লাগছে বললি নাতো?”
 
দেবায়ন ওর কাঁধের ওপরে হাত রেখে কাছে টেনে বলে, “তুই পোশাকেও সুন্দরী আর বিনা পোশাকেও সুন্দরী।” বলেই ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে নেয়।

সর্ব সমক্ষে এইভাবে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতেই অনুপমা একটু লজ্জা পেয়ে যায়। ওইদিকে ওদের বন্ধু বান্ধবীরা সবাই এসে গেছে। শ্রেয়া, পায়েল, ঋতুপর্ণা, সঙ্গীতা সেই সাথে তাদের সাথীরাও। কিন্তু বেশিক্ষণ ওদের সাথে গল্প করতে পারে না অনুপমা আর দেবায়ন। ওদের ডাক সব দিকে, এক এক করে সবার সাথে ঘুরে ফিরে একটু কথা বলতে হয়।

একদিকে নাচের জায়গা, সেটা এখন খালি। একদিকে লম্বা টেবিলে বুফে খাবারের ব্যবস্থা, একদিকে মদের বার আর স্টার্টারের ব্যবস্থা।

এমন সময়ে ওর বাবা ওদের কাছে এসে দেবায়নকে ডেকে বলে, “কি হলো দেবায়ন এইবারে মিটের বক্তৃতাটা দাও। এটা কোম্পানির আমাদের প্রথম মিট সুতরাং তোমার হাত দিয়েই শুরু হোক।”

দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে মৃদু হেসে বলে, “না কাকু আমার হাত দিয়ে নয়, এটা অনুপমার হাত দিয়ে শুরু করা হোক।”

অনুপমার সাথে সাথে সোমেশ বাবু অবাক হয়ে যায়। অনুপমা মুখ চেপে আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ আমাকে বলির পাঁঠা পেয়েছিস তাই না? প্লিস সোনা আমি যাবো না।”

দেবায়ন ওর হাত দুটো ধরে অভয় প্রদান করে বলে, “মনে রাখিস একটা কথা, তুই কারুর চেয়ে কোন অংশে কম নস। তুই এগিয়ে যা আমি তোর পেছনে আছি। আর মনে রাখিস, এই যে চারপাশে যা দেখছিস সেই সবের পেছনে দুই মহিলার অসামান্য অবদান আছে।” অনুপমা চোখের ইঙ্গিতে প্রশ্ন করে, “কে?”

উত্তরে দেবায়ন ওর কানে কানে বলে, “মিমি আর নিবেদিতা।” অবাক চোখে অনুপমা ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।

দেবায়ন ধীরে ধীরে ওর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মঞ্চের দিকে যেতে বলে। ধীর পায়ে মঞ্চের দিকে হাঁটতে হাঁটতে অনুপমা একবার জনারন্যের দিকে তাকিয়ে দেখে। প্রায় দুশোর মতন লোক ওর দিকে উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে। কোলকাতার বেশ কয়েক নামী ব্যক্তি এসেছেন, দুটো কন্সট্রাক্সান কোম্পানির কর্মচারীরা এসেছে, ওদের সফটওয়্যার কোম্পানির সবাই এসেছে, বাইরে থেকে হোটেলের মালিক আর হোটেলের ম্যানেজারেরা এসেছে, বিদেশ থেকে লোকজন এসেছে। এতো লোকের সামনে দাঁড়িয়ে হটাত করে অনুপমার বড় একা মনে হয়। কিন্তু ওর পেছনে দাঁড়িয়ে, ঋজু দেহের লম্বা চওড়া ছেলেটা, যার বাহুপাশে চোখ বুজলে ঘুম পায়, যার বুকে মাথা রাখলে নিরাপত্তার আভাস পাওয়া যায়, তার ছোঁয়ায় এক জাদু আছে। ওকে দেখে স্মিত হেসে মাথা দোলায় দেবায়ন। ওর ওই হাসি দেখে অনুপমা বুকে বল পায়। কিন্তু দেবায়ন ওর কানে কানে কি বলতে চাইল? মঞ্চে উঠতেই একজন ওর দিকে মাইক এগিয়ে দেয়। না এতটা কোনোদিন আশা করেনি অনুপমা। হ্যাঁ, দেবায়নের সাথে দেখা হওয়ার আগে ভেবেছিল ওর জীবন খুব সাধারন হবে, পড়াশুনা শেষে একটা বড় লোকের বাড়িতে বিয়ে হবে, হয়তো চাকরি করবে কি করবে না সেটা জানা নেই, অনিশ্চয়তা ওর জীবনের একটা বড় অঙ্গ হতে পারতো। মাইক হাতে নিয়ে একবার মায়ের দিকে দেখে, একবার নিবেদিতার দিকে দেখে একবার ওর মিষ্টি মামনির দিকে দেখে। সবাই হাঁ করে ওর দিকে চেয়ে।

অনুপমা খানিকক্ষন চুপ করে থাকার পড়ে মাইক নিয়ে বলে, “আজকে আমাদের সেন গ্রুপ অফ কোম্পানির প্রথম এনুয়াল মিট।” সবাই চুপ, সবার কান ওর দিকে। অনুপমা বলে, “আমি জানিনা এনুয়াল মিটে কি বলতে হয়, তাও সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। একটা ছাদ দাঁড় করাতে গেলে অন্তত পক্ষে তিন খানা থামের দরকার পড়ে। এই গ্রুপ কোম্পানির বিষয়ে জানি না তবে আমার জীবনের তিন খানা থাম, তিন মহিলা...” সবাই উৎকণ্ঠায় ওর দিকে তাকিয়ে। অনুপমা প্রথমে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে ডেকে বলে, “আমার মা, মিসেস পারমিতা সেন, যার ভালোবাসায় এতদুর এসেছি।” পারমিতার চোখে জল চলে আসে। চোখের কোল মুছতে মুছতে মেয়ের দিকে এগিয়ে যায়। তারপরে অনুপমা, দেবশ্রীর দিকে তাকিয়ে হাত নেড়ে মঞ্চে ডেকে বলে, “আমার মামনি, মিস্টার দেবায়নের মা, যার আশীর্বাদে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি।” দেবশ্রী অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, কি বলছে মেয়েটা? অনুপমা কাতর চোখে মামনিকে মঞ্চে আসতে অনুরোধ করে। অগত্যা দেবশ্রী ধীর পায়ে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যায়। তারপরে অনুপমা নিবেদিতার দিকে তাকিয়ে কাছে ডেকে বলে, “আমার বান্ধবী, মিস নিবেদিতা চৌধুরী যার অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য আজকে আমরা এইখানে একত্রিত হয়েছি।” হতবাক নিবেদিতা দাঁতের মাঝে আঙুল কেটে চোখের জল সংবরণ করে অনুপমার দিকে নিস্পলক নয়নে তাকিয়ে থাকে। অনুপমা ওকেও হাত নাড়িয়ে কাছে ডাকে। তারপরে মাইকে বলে, “মহিলারাই এই জগতের জন্মদাত্রী। আজকের রাত তাই মেয়েদের রাত। এই পৃথিবী সব মেয়েদের জন্য” হাত মুঠি করে হাওয়ায় উঁচিয়ে চিৎকার করে বলে, “লেডিস, ড্যান্স ফ্লোর অনেকক্ষণ থেকেই খালি পড়ে। আজকে নো ব্যালেন্স সিট, নো বড় এন্ড ছোট, কার কাছে কি আছে, কার কাছে কি নেই। একটা রাত এইসব ভুলে... লেটস পার্টি হার্ড...” মঞ্চে দাঁড়িয়ে চার মহিলাকে দেখে সবাই হাততালি দেয়। গুঞ্জনে ভরে ওঠে রেডিসনের লন, আকাশে মেঘের গুরগুর শুরু হয়ে যায়। সেই উপেক্ষা করে অনুপমা মাইক নিয়ে চেঁচিয়ে, “মেয়েরা দেখিয়ে দাও, ওই আকাশের কালো মেঘের গুরগুর চড়চড় ধ্বনি আমরা ভয় করিনা।”

মঞ্চ থেকে নেমে এসেই দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা গুঁজে দেয়। ওর মাথা বুকে চেপে নিচু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কি হলো তোর?”

মাথা নাড়ায় অনুপমা, “কিছু না।” ওর গলা ধরে এসেছে এতক্ষণে। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। মনে হচ্ছে, এই বুকের মধ্যে ঢুকে পড়লে ভালো হতো।

ওকে ওইভাবে দেবায়নের বুকে মাথা গুঁজে থাকতে দেখে নিবেদিতা ওদের দিকে এগিয়ে এসে ওর কাঁধে হাত রাখে। নরম হাতের পরশে অনুপমার সম্বিত ফিরে আসে। নিবেদিতাকে দেখে চোখের কোল মুছে মিষ্টি হাসি দেয়। নিবেদিতা স্মিত হেসে ওকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি ওইখানে উঠে একটু পাগল হয়ে গেছিলে?”

অনুপমা দেবায়নের বাজু দুই হাতে আঁকড়ে ধরে বলে, “আমাকে পাগল করার লোক আর ঠিক করার লোক আমার পাশেই আছে।”

মিটের সাথে পার্টি কিছুক্ষণের মধ্যে জমে ওঠে। পারমিতা আর নিবেদিতা পরস্পরকে অতি মার্জিতভাবে অতি সুকৌশলে এড়িয়ে চলেছে। পারমিতা দেবশ্রীকে নিয়ে একপাশে গল্পে মেতে ওঠে। নিবেদিতা আর অনুপমা কথা বলতে বলতে ভিড়ের দিকে এগিয়ে যায়। কম বয়সী ছেলে মেয়েরা ততক্ষণে নাচের জায়গায় উঠে নাচ করতে শুরু করে দিয়েছে।

ভিড়ের এক কোনায় হটাত করে ওর চোখ ধৃতিমানের দিকে চলে যায়। ধৃতিমানের হাতে একটা মদের গেলাস, ওর ঠাণ্ডা বরফের মতন চোখের সাথে চোখাচুখি হতেই ওর মেরুদন্ড দিয়ে হিমশীতল এক ধারা বয়ে যায়। একপাশে নিবেদিতাকে দেখে, অন্য পাশে দূরে দাঁড়িয়ে মায়ের সাথে মামনিকে দেখে। বাবার কোম্পানিতে চাকরি করছে ধৃতিমান, এই মিটে আসবে সেটা স্বাভাবিক কিন্তু ওর কথা একদম মাথায় ছিল না অনুপমার। এই সমাগমে কিছু করে বসবে নাতো? অতটা সাহস নেই তবে যদি মামনির সামনে পড়ে যায় তখন কি হবে? সঙ্গে সঙ্গে হন্তদন্ত হয়ে দেবায়নের কাছে দৌড় লাগায়।

হাঁপাতে হাঁপাতে দেবায়নকে একদিকে টেনে নিয়ে গিয়ে বলে, “সর্বনাশ হতে একটু বাকি আছে রে।”

দেবায়ন অবাক হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে একটু খুলে বল।”

দূরে এক কোনায় দাঁড়িয়ে থাকা ধৃতিমানের দিকে দেখিয়ে অনুপমা বলে, “ধৃতিমানের কথা একদম ভুলে গিয়েছিলাম। একদিকে মামনি অন্যদিকে নিবেদিতা। ওদের সামনে পড়ে গেলে কি হবে?”

দেবায়নের সাথে ধৃতিমানের চোখাচুখি হয়, ওর ওই চাহনি দেখে চিন্তায় পড়ে যায়। খানিকক্ষণ পরে কিছু একটা চিন্তা করে ওর কাঁধে চাপ দিয়ে অভয় প্রদান করে বলে, “চিন্তা করিস না, আমি ওকে কিছু করে হোক এখান থেকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।”

ঠিক সেই সময়ে রূপক ওইখানে চলে আসে। ওকে দেখে দুইজনে চুপ হয়ে যায়। রূপক ওদের ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকার কারন জিজ্ঞেস করাতে দেবায়ন জানায় ওরা এমনি দাঁড়িয়ে আছে। মঞ্চের বক্তৃতা দেওয়ার পরে অনুপমা একটু ভাবাবেগে গলে গিয়েছিল তাই ওর কাছে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের ওইখানে ছেড়ে দিয়ে দেবায়ন ভিড়ের মধ্যে এগিয়ে যায় ধৃতিমানের দিকে।
 
রূপক সেটা লক্ষ্য করে অনুপমাকে প্রশ্ন করে, “হ্যাঁ রে ওই লোকটা সেই লোকটা না, যাকে আমরা মিস চৌধুরীর সাথে জলপাইগুড়িতে দেখেছিলাম?”

অনুপমার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়, ভেবেছিল হয়তো রূপক চিনতে পারবে না কিন্তু। অনুপমা মাথা নাড়িয়ে অসম্মতি জানিয়ে বলে, “কই নাতো?”

হাতের গেলাসে চুমুক দিয়ে ধৃতিমানের দিকে ভালো ভাবে তাকিয়ে রূপক ওকে বলে, “আরে কিছু একটা লুকাচ্ছিস তুই। ওই ভদ্রলোক জলপাইগুড়ির সেই ভদ্রলোক, কিন্তু এই মিটে কেন?”

অনুপমা ধরা পড়ে গেছে তাই ওকে সত্যি বলে দেয়, “আসলে ওই ভদ্রলোক বাবার কন্সট্রাক্সান কোম্পানিতে চাকরি করে।”

রূপক মাথা দুলিয়ে বলে, “হুম, তাহলে মিস চৌধুরীর সাথে কিছু একটা হবে।”

অনুপমা ম্লান হেসে উত্তর দেয়, “না, নিবেদিতাকে ওর হাত থেকে বাঁচানোর জন্যেই দেবায়ন গেছে। এই মিটে কিছু যদি করে বসে সেই ভয়ে।”

রূপক ভুরু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “মানে? ওর সাথে মিস চৌধুরীর সম্পর্ক কেটে গেছে?”

অনুপমা মাথা দোলায়, “হ্যাঁ।”

রূপক হাতের গেলাস এক চুমুকে শেষ করে বলে, “ওই লোকটাকে কি এইখান থেকে তাড়াতে হবে? বল এখুনি লেগে পড়ছি।”

অনুপমা ওর বাজুতে ছোট চাঁটি মেরে বলে, “তুই আর পুচ্চু, মারামারি কাটাকাটি ছাড়া কিছু জানিস?”

ওর কাঁধে হাত রেখে কাছে টেনে কানে কানে বলে, “আরো একটা জিনিস করতে পারি কিন্তু শালা ছেলে না হলে ঠিক লাগিয়ে দিতাম।” বলেই হেসে ফেলে।

অনুপমা ওকে নিয়ে বন্ধু বান্ধবীরা যেখানে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল সেই দিকে এগিয়ে যায়। শ্রেয়া, পায়েল, ভাই অঙ্কন, সঙ্গীতা প্রবাল, ধীমান ঋতুপর্ণা সবাই একদিকে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে গল্পে মশগুল। কিছু পরে দেবায়ন ফিরে এসে ওদের সাথে যোগদান করে। অনুপমার সাথে চোখের ইশারায় কথা হয়ে যায় যে ধৃতিমানকে ঠিক করে দিয়েছে। বহু লোকের মাঝে তারপরে আর ধৃতিমানকে দেখা যায় না।

অনুপমা আর দেবায়ন আবার বন্ধুদের ছেড়ে সবার সাথে দেখা করার জন্য বেরিয়ে পড়ে। এমন সময়ে ওদের দেখা অনন্যার সাথে হয়। অনন্যাকে দেখে অনুপমা বেশ আশ্চর্য হয়ে যায়, ওর পাশে আবার এক অচেনা আগন্তুক।
অনন্যা ওর হাত ধরে হেসে বলে, “বাপ রে তুই একদম পাক্কা বিজনেস ওম্যান হয়ে গেছিস দেখছি।”

অনুপমা স্মিত হেসে দেবায়নের বাজু আঁকড়ে ধরে বলে, “হ্যাঁ, এই ছেলেটার জন্য হতে হলো।”

অনন্যা পাশের আগন্তুকের সাথে দেবায়নের পরিচয় করিয়ে বলে, “সত্যজিত, বলেছিলাম তোকে মনে আছে?”

অনুপমা হাত বাড়িয়ে সত্যজিতের সাথে হাত মিলিয়ে কুশল সম্ভাষণ আদান প্রদান করে।

দেবায়ন অনন্যাকে প্রশ্ন করে, “তোমার মানে...”

অনন্যা কাতর চোখে ওর দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “প্লিস আজকে নয়।” তারপরে অনুপমাকে বলে, “হ্যাঁ রে একটু সময় হবে তোর?” অনুপমা ভুরু নাচিয়ে প্রশ্ন করে কি ব্যাপারে কথা বলতে চায়। উত্তরে অনন্যা ওকে বলে, “তোরা দুইজনেই এইখানে আছিস আর সত্যজিত এসেছে। মানে ঐযে মিস্টার বসাক বলেছিল।”

অনুপমা বুঝতে পারে কি বিষয়ে অনন্যা ওর সাথে আলোচনা করতে চায় তাই হেসে ওকে বলে, “সরি অনন্যাদি, আজকে রাতে শুধু পার্টি। তুমি সময় করে একদিন আমার অফিসে এসো না হয় বাড়িতে এসো ওইখানে এইসব নিয়ে আলোচনা করা যাবে।”

দেবায়ন মিচকি হেসে ওকে জিজ্ঞেস করে, “কত টাকার ধাক্কা লাগাতে চাও?”

অনন্যা সত্যজিতের দিকে একবার দেখে বলে, “সেই রকম একটা প্ল্যান করে নিয়েছি তবে হাতে টাকা নেই তাই শুরু করতে পারছি না।”
 

Users who are viewing this thread

Back
Top