What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

pinuram রচনাসমগ্র (1 Viewer)

দেবায়ন ওর গালে হাত দিয়ে আদর করে বলে, “কিছু না রে।”

চোখ টিপে মিচকি হেসে ওকে প্রশ্ন করে, “নিবেদিতার সাথেও কিছু হয়েছে নাকি রে তোর? একটু ঝেড়ে কাস বাছাধন। না হলে কিন্তু আর আমাকে ছুঁতে দেবো না।”

দেবায়ন হেসে ফেলে, “কি যে বলিস না। নিবেদিতা ভালো মেয়ে, খুব ভালো মেয়ে।” গলা নামিয়ে ওকে উত্যক্ত করে ফিসফিস করে বলে, “যা ফিগার মাইরি আর যা সুন্দরী ভেবেছিলাম লাগাবো কিন্তু না...”

সঙ্গে সঙ্গে অনুপমা ওর বুকের ওপরে এক চাঁটি বসিয়ে দিয়ে চাপা অভিমানী কণ্ঠে বলে, “ফুটো থাকলেই হলো তাই না শয়তান।”

ওকে আলতো জড়িয়ে ধরে দেবায়ন উত্তর দেয়, “বর্তমানে একটাতেই খুশি আছি।”

ইসসস স্থান কাল একদম দেখে না পুচ্চু। সামনে অঙ্কুশ বসে, ওইপাশে নিবেদিতা হয়তো রান্নাঘর থেকে ওদের দেখে ফেলেছে। এইভাবে সর্ব সমক্ষে ওকে যে কোনোদিন জড়িয়ে ধরেনি সেটা নয় তবে সেই সব ভিন্ন পরিস্থিতি ছিল। হয়তো কোন মলে অথবা পার্কে অথবা বন্ধু বান্ধবীদের মাঝে কিন্তু একজনের বাড়িতে এসে এইভাবে জড়িয়ে ধরবে। লজ্জা বড় লজ্জা।

আলতো করে ওর হাত ছাড়িয়ে বলে, “ওইদিকে তোর জন্য ক্যাভিয়ার আর ক্রাব আনা হয়েছে।”

দেবায়নের চোখ কপালে উঠে যায়, “সত্যি বলছি এর বিষয়ে আমার অজানা। আর সত্যি বলছি এই উপহারের বিষয়ে আমার অজানা ছিল।”

অনুপমা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “তার মানে আগে থেকে এই লাঞ্চের ইনভিটেশান ছিল। তুই আমাকে বলিসনি কেন তাহলে? দেখ একদম খালি হাতে এসে গেছি। বাড়িতে একটা ছোট ছেলে তার জন্যেও কিছুই আনা হয়নি।”

দেবায়ন মাথা চুলকে উত্তর দেয়, “আসলে কি জানিস একটু ধন্ধে ছিলাম। হয়তো আগে তোকে বললে তুই মানা করে দিতিস। আমি চাইছিলাম তোকে এই পরিবারের সাথে মিশাতে।”

অনুপমা প্রশ্ন করে, “কারন কি জানতে পারি কি?”

ততক্ষণে রান্না ঘর থেকে নিবেদিতা ওকে ডাক দেয়, “অনুপমা একটু এদিকে আসবে?”

রান্না ঘরে ঢুকে দেখে এক এলাহি ব্যাপার সাজিয়ে বসে নিবেদিতা। একেবারে বিদেশী কুজিন সাজানো। বেশ বড় লাল অস্ট্রেলিয়ান ক্রাব, রেড ওয়াইন আর বিভিন্ন হার্বস দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখা। গ্রিলে ঢুকিয়ে দিল, তৈরি হতে বেশ কিছুটা সময় লাগবে। নিবেদিতা ওকে বলে শুধু দাঁড়িয়ে থাকতে। নিজের বাড়িতে রান্না ঘরে কোনোদিন ঢোকেনি, তবে মামনির কাছে গেলেই রান্নাঘরে ঢুকে পড়ে। মামনির ওপরে ওর সব জোর খাটে। কচি মেয়ে হয়ে যায় মামনিকে পেলে। রান্নাঘরের স্লাবে বসে ছোট্ট মেয়ের মতন পা দোলাতে দোলাতে গল্পে মেতে ওঠে বৌমা আর শ্বাশুরি। ওর জন্য আপেল, পেয়ারা কলা ইত্যদি কেটে কেটে দেয় আর খেতে খেতে পা দুলিয়ে গল্পে মাতে। অফিসে কি কি হলো, কার সাথে কি হলো। মাঝে মাঝেই দেবায়নের নামে নালিশ ইত্যাদি।

ওইদিকে বাইরে ঝড় শুরু হতেই অনুপমা একটু চিন্তায় পড়ে যায়। পায়েলের জন্য গাড়িটা অফিসেই ছেড়ে এসেছে। ঝড় বৃষ্টি হবে সেটা যে একদম বুঝতে পারেনি তা নয়। তবে অনেকদিন পরে পুচ্চুর সাথে খোলা বাইকে বসে কোলকাতার বৃষ্টিতে ভেজার মজাই আলাদা। আজকাল মাসের মধ্যে কুড়ি পঁচিশ দিন বাইরে কাটায়, কাছে আর থাকে কতক্ষণ। ওর চিন্তামগ্ন চেহারা দেখে নিবেদিতা অভয় দিয়ে বলে, বেশি ঝড় হলে ওর গাড়ি ওকে ছেড়ে আসবে। হেসে মাথা নাড়ায় অনুপমা। আসার পর থেকে যে পরিমান আন্তরিকতা দেখিয়েছে তাতে সন্দেহ নেই হয়তো শেষ পর্যন্ত বললেই ফেলল, এতো ঝড় বৃষ্টি নিয়ে আর বাড়ি ফিরে কাজ নেই রাতে ওর বাড়িতেই থেকে যেতে।

রাত ন'টার আগে কোনোদিন খায় না অনুপমা তবে দশটার মধ্যে ওদের খাওয়াদাওয়া শেষ হয়ে যায়। সকাল সকাল সবাইকে উঠতে হয়। যখন কলেজ ছিল তখন না হয় দেরি করে ঘুম থেকে উঠতো কিন্তু এখন অফিস থাকে।

সন্ধ্যের পরেই নিবেদিতা ওদের খেতে দিয়ে দেয়। খাওয়ার সময়ে বসে নিবেদিতা আর অনুপমা কোথায় কোথায় ঘুরতে গেছে সেই নিয়ে গল্পে মেতে ওঠে। এই কর্মসুত্রে দেবায়ন এদিকে ওদিকে একটু আধটু বেড়িয়েছে, কিন্তু অনুপমা আর নিবেদিতার মতন বিদেশ ভ্রমন করেনি। পিসা, লিওন থেকে নরওয়ে সুইডেনের গল্প, অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ থেকে গিজের পিরামিডের গল্প।

সেই সাথে অঙ্কুশ যোগদান করে ওদের বলে, “জানো, ইজিপ্টে গিয়ে উঠের পিঠে চেপে মাম্মার কি ভয় করেছিল। আমি কিন্তু একটুও ভয় পাইনি।”

ঠিক একদম অঙ্কনের মতন, জন্তু জানোয়ারদের একটুও ভয় পায়না। ছোটবেলায় মায়ের কাছে আবদার করেছিল কুকুর পুষবে কিন্তু অনুপমার একদম ইচ্ছে ছিল না বাড়িতে কোন জন্তু জানোয়ার আসুক। এমা, কুকুর বেড়াল ওর পায়ের কাছে ঘোরাফেরা করবে, আবার আদিখ্যেতা দেখিয়ে ওর বিছানায়, ছিছি।

খাওয়া দাওয়া পর্বের মাঝে ওর কাছে পায়েলের ফোন আসে। ফোন তুলেই আশঙ্কাজনক কণ্ঠে ওকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে তুই আর দেবায়ন কোথায় আছিস?”

অনুপমা ওর আতঙ্কে ভরা কণ্ঠ শুনে প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে এমন কাঁপছিস কেন?”

পায়েল ওকে বলে, “তাড়াতাড়ি বেলভিউতে চলে আয়। রুপকের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।”

সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সব স্নায়ু সতর্ক হয়ে যায়। খাওয়া থামিয়ে দেবায়নের দিকে ছলছল আশঙ্কাজনক চেহারা নিয়ে বলে, “রুপকের এক্সিডেন্ট হয়েছে।”

দেবায়ন আঁতকে ওঠে, “কি করে কখন হলো?”
 
পায়েল সেই সমন্ধে কিছুই জানায় নি শুধুমাত্র ওদের বেলভিউতে যেতে বলেছে। নিবেদিতার অত সাজানো খাবার আর খাওয়া হলো না। অবশ্য সেটা নিবেদিতাও বুঝতে পারে। ওই দিকে বাইরে ঝড়ের সাথে সাথে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এইভাবে বাইকে করে যাওয়া অসম্ভব ব্যাপার। নিবেদিতা দেবায়নের হাতে গাড়ির চাবি ধরিয়ে ওদের তাড়াতাড়ি হসপিটালে রওনা হবার জন্য বলে। নিবেদিতাকে কি বলে ধন্যবাদ জানাবে অনুপমা বুঝতে পারে না।

বুকের মধ্যে ধুকপুকানি বেড়ে ওঠে। কিছুদিন পরেই বোর্ড মিটিং আর তার আগেই রুপকের দুর্ঘটনা। হটাত করে চারদিক কেমন যেন গুলিয়ে যায় অনুপমার। শক্ত হাতে বৃষ্টি মাথায় করে গাড়ি ছুটিয়ে দেয় দেবায়ন। বাইপাস ধরে সল্টলেক থেকে পার্ক স্ট্রিট যেতে বেশি সময় যদিও লাগে না কিন্তু বৃষ্টির দিনে কোলকাতার রাস্তা গাড়ি চালানোর পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। পাকা ঝাঁ চকচকে রাস্তা আর গ্রাম্য মাটির রাস্তার মধ্যে কোন তফাৎ থাকে না। তাও এপাশ ওপাশ থেকে গাড়ি গুলোকে কোনোরকমে পেছনে ফেলে দুরন্ত গতিতে দেবায়ন গাড়ি চালায়।

অনুপমা ততক্ষণে বাবাকে ফোন করে জানতে পারে যে রুপক বিকেলে অফিসে পরে বাড়িতে ফিরছিল। সাথে শ্রেয়া ছিল না, কাজের জন্য অফিসে ছিল। শ্রেয়াকে বাড়িতে নিয়ে যাবে বলে অপেক্ষা করেছিল কিন্তু শ্রেয়া ইচ্ছে করেই ওকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বাড়ি যাওয়ার পথে একটা স্করপিও ওর বাইকের পেছনে ধাক্কা মারে যার ফলে, পেছনের চাকা গাড়ির নীচে চলে যায়। রাস্তায় জল থাকার ফলে রুপক বাইক থেকে পড়ে যায়। বিশেষ চিন্তার কোন কারন নেই, মাথায় হেলমেট ছিল তাই রক্ষে আর পরনে রেনকোট ছিল তাই বেশি লাগেনি। তবে ডান পায়ের হাড়ে একটু চিড় দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা যদিও সামান্য তবুও দেবায়ন আর অনুপমার মনে সন্দেহ হয়। হটাত বোর্ড মিটিংয়ের আগেই রুপকের এক্সিডেন্ট? কি ব্যাপার? এর পেছনে কি শ্রেয়ার হাত আছে? ইন্দ্রনীলের সাথে কি শ্রেয়া কোন চক্রান্ত করছে? কিন্তু তাই বলে ওর এতদিনের ভালোবাসার ওপরে নিশ্চয় আঘাত হানবে না। কি জানি শ্রেয়ার মতিগতি ইদানিং খুব সন্দেহজনক। অফিসে রুপকের চেয়ে বেশি ইন্দ্রনীলের সাথে কাটায়।

হন্তদন্ত হয়ে নারসিং হোমে ঢুকে দেখে ওর বাবা, শ্রেয়ার দাদা, রুপকের বাড়ির লোকজন উপস্থিত। ইন্দ্রনীলকে দেখে অনুপমা একটু আশ্চর্য হয়। ইন্দ্রনীল ওদের দেখে একটু তফাতে সরে যায়। এইভাবে চোরা চাহনি নিয়ে তাকানো ঠিক ভালো মনে মেনে নিতে পারেনা অনুপমা। দেবায়ন ওকে শান্ত হতে অনুরোধ করে। অনুপমা বাবাকে জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারে শ্রেয়া আগে পায়েলকে ফোন করেছিল, তাই পায়েল ওদের ফোন করে।

দেবায়নকে সাথে নিয়েই রুপকের সাথে দেখা করতে যায়। বেডের ওপরে শুয়ে রুপক, পায়ে হাতে ব্যান্ডেজ। শ্রেয়ার চোখ জোড়া ছলছল, রুপকের হাতখানি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে পাশে বসে।

ওদের দেখতে পেয়েই শ্রেয়া চাপা চেঁচিয়ে ওঠে, “কেন এসেছিস? রুপক মরে গেছে না বেঁচে আছে সেটা দেখতে এসেছিস?”

দেবায়ন আর অনুপমা দুইজনে অবাক হয়ে যায় ওর কথা শুনে। কি বলছে শ্রেয়া? অনুপমা ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে প্রশ্ন করে, “তুই কি যা তা বলছিস?”

শ্রেয়া ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “ওই তোর দেবায়ন আমার রুপককে এক্সিডেন্ট করিয়েছে।”

অনুপমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। এখুনি ঠাস করে একটা চড়ে শ্রেয়ার দাঁতগুলো ফেলে দিতে ইচ্ছে করে ওর। কিন্তু পেছনে তাকিয়ে দেখে দরজায় ইন্দ্রনীল ওর বাবা আর বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে। শ্রেয়াকে এক কোনার দিকে টেনে নিয়ে গিয়ে বলে, “মাথা ঠাণ্ডা কর তুই। সামান্য একটা এক্সিডেন্টে এতো মাথা খারাপ করলে কি হয়? পুচ্চু এই কাজ কেন করতে যাবে? পুচ্চু আর রুপক ভালো বন্ধু, তুই আমার ভালো বান্ধবী।”

শ্রেয়া চিবিয়ে চিবিয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ জানা আছে তুই আমার কত ভালো বান্ধবী। আমি শেয়ার বাড়াতে চেয়েছিলাম তাই রুপককে তোরা মেরে ফেলতে চেয়েছিলিস তাই না?”

অনুপমা ওর হাতের ওপরে মুঠি শক্ত করে ধরে বলে, “দ্যাখ শ্রেয়া, এটা হসপিটাল না হলে এক চড়ে তোর দাঁত ভেঙে দিতাম আমি।” মাথা ঝাঁকিয়ে আক্ষেপের সুরে বলে, “বাবার কথা অনেক আগেই আমার শোনা উচিত ছিল।”

শ্রেয়া দাঁতে দাঁত পিষে ছলছল চোখে ওকে বলে, “হ্যাঁ, এখন আমাদের কোম্পানি থেকে সরাতে পারলে নিজেদের লাভ। বাইরের প্রোজেক্টগুলো এসে গেছে এবারে আর আমাদের কেন দরকার পড়বে বল। রুপকের মাথা কাজে লাগিয়ে নিজের কোম্পানি দাঁড় করালি আর এখন যখন কাজ শেষ হয়ে গেল তখন সরিয়ে দেওয়ার মতলব করলি।” কিছুক্ষণ থেমে ওকে বলে, “এই বোর্ড মিটিংয়ে আমি রেজিগনেশান দেবো, আমার শেয়ারের টাকা তৈরি রাখিস।”

রাগে দুঃখে অনুপমার শরীর কেঁপে ওঠে। আশে পাশে লোকজন না থাকলে সপাটে একটা চড় কষিয়ে দিতো শ্রেয়ার গালে।

দেবায়ন এতক্ষণ চুপচাপ ওদের কথা শুনে যাচ্ছিল। অনুপমার কথা শেষ হতেই ওর দিকে তেড়ে গিয়ে বলে, “শোন শ্রেয়া, আমি যদি সত্যি চাইতাম রুপককে সরাতে তাহলে ওই পা ভেঙে পড়ে থাকতো না। তোকে ওর চিতা জ্বালাতে হতো। আর তুই কোন মুখে শেয়ারের কথা বলছিস রে? এই একটা বছর শুধু গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিস আর কিছুই করিসনি। গত কয়েক মাস একটু গা হাত পা নাড়িয়েছিস শুধু। যদি রুপক বলে তবেই শেয়ার পাবি।”

শ্রেয়া একবার আশেপাশে দেখে দেবায়নের দিকে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “তোকে পুলিসে দেইনি তোর ভাগ্য ভালো।”

আর থাকতে পারে না অনুপমা, শেষ পর্যন্ত ওর হাত উঠে যায়। থাপ্পড়টা মারতে গিয়েও মারামারিতে যায় না, দাঁতে দাঁত পিষে ওর দিকে রক্ত চক্ষু হেনে বলে, “তোর টাকা এই কোম্পানিতে নেই, সুতরাং তুই একটা পয়সাও পাবি না।”

শ্রেয়া চোয়াল শক্ত করে উত্তর দেয়, “কোম্পানি আইন আমার জানা আছে অনু। আমি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি না। আমার পাওনা বাবদ দশ কোটি টাকা তৈরি রাখিস। পরশুদিন বোর্ড মিটিং আমার পাওনা আমাকে মিটিয়ে দিস।”

দেবায়ন তেড়ে যায় ওর দিকে, “তুই আমাদের আইন দেখাবি?”

অনুপমা সমস্বরে বলে ওঠে, “একটা টাকাও দেবো না তোকে। কি করতে পারিস আমি দেখে নেব।” তারপরে দেবায়নের হাত ধরে ওর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় অনুপমা।

বাইরে দাঁড়িয়ে লোকজনের সাথে ইন্দ্রনীল দাঁড়িয়ে ছিল। ওদের কথাবার্তা নিশ্চয় ইন্দ্রনীল শুনেছে। বাবাকে সাথে নিয়ে ওরা নারসিং হোম থেকে বেরিয়ে পড়ে। ততক্ষণে বৃষ্টি বেশ কিছুটা ধরে গেছে, তাই অনুপমা ওর বাবার সাথে গাড়ি করে বাড়ি ফেরে আর নিবেদিতার গাড়ি ফেরত দেওয়ার জন্য দেবায়ন বেরিয়ে পড়ে। যাওয়ার আগে অনুপমা ওকে রাতের বেলা ফোন করার কথা বলে দেয়।

মাথা কাজ করছে না কিছুতেই। হটাত করে রুপকের এক্সিডেন্ট হলো কি করে? বাইকের অবস্থা নাকি বেশ সঙ্গিন কিন্তু সেই তুলনায় রুপকের এমন কিছু আঘাত লাগেনি। হতে পারে ভাগ্যের জোরে রুপক বেঁচে গেছে। পুচ্চুকে ফাঁসানোর জন্য কে আক্রমন করতে পারে রুপককে? শ্রেয়া না ইন্দ্রনীল? শ্রেয়ার কথাবার্তা শুনে মনে হয় অনেক গভীর জলের মাছ এই মেয়ে। বাবা ওকে সাবধান করে দিয়েছিল কিন্তু সেই সময়ে বান্ধবী প্রীতি দেখিয়ে সেই সব উপেক্ষা করে দিয়েছিল। তখন যদি একবার বাবার কথা শুনতো তাহলে এই দিন দেখতে হতো না ওদের।
 
অনুপমা সারা রাস্তা গাড়িতে এক প্রকার গজগজ করতে করতে বাড়ি ফেরে। সোমেশ একবার শুধু জিজ্ঞেস করে মেয়েকে কি হয়েছে হসপিটালে। আগে মেয়ে একদম কথাবার্তা ঠিক ভাবে বলতো না, ইদানিং একটু আধটু বলে তাও বেশির ভাগ ওই কোম্পানি সংক্রান্ত। সোমেশ পারমিতা কোনোদিন ছেলে মেয়ের কাছের লোক ছিল না।

অনুপমা উত্তর দেয়, “তোমার কথা অনেক আগেই শোনা উচিত ছিল আমার, জানো।”

সোমেশ মেয়েকে জিজ্ঞেস করেন, “তোর কি মনে হয়, কি কারন হতে পারে? দেবায়ন কি কিছু ধরতে পেরেছে?”

অনুপমা মাথা নাড়ায়, “না গো, আমরা কিছুই ঠিক ভাবে বুঝে উঠতে পারছি না। তবে বাবা, তোমাকে বলে দিচ্ছি, অনিমেশ আঙ্কেলের ছেলে যদি এর মধ্যে হয় তাহলে কিন্তু কাউকেই আমি ছেড়ে দেবো না।”

সোমেশের কপালে চিন্তার রেখা দেখা দেয়, “এর মধ্যে ইন্দ্রনীল আবার কি করলো?”

অনুপমা বলে, “ইদানিং শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীল বেশ গভীর ভাবে মেলামেশা করছে। দুইজনে একসাথে জার্মানি গেছে। এই যে ইন্দ্রনীল এসেছে, অফিসে কাজের চেয়ে বেশি ইন্দ্রনীলের সাথে ঘোরাফেরা করে শ্রেয়া।”

সোমেশ চিন্তামগ্ন হয়ে শুধুমাত্র একটা হুম করে শব্দ করেন। বাড়ি প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে, সেই সাথে বৃষ্টিটাও একটু ধরে গেছে। ড্রাইভার ওদের নামিয়ে দিয়ে গ্যারেজে গাড়ি রাখতে চলে যায়। বাড়িতে ঢোকার আগে সোমেশ মেয়েকে বলে, “তোর সাথে একটু কথা আছে। তুই ড্রেস চেঞ্জ করে নীচে আসিস।”

অনুপমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকায়। সচরাচর ব্যাবসা কোম্পানি সংক্রান্ত যা কথাবার্তা আলোচনা হয় সব দেবায়নের সাথেই করে। কোনোদিন ওর সাথে ব্যাবসা অথবা কোম্পানি সংক্রান্ত কোন আলোচনা করে না। করলেও ওর মাথায় কিছুই ঢোকে না। যতক্ষণ না দেবায়ন শুদ্ধ বাংলা ভাষায় ওকে বুঝিয়ে দেয় ততক্ষণ সবকিছু কেমন যেন আরবি, ফার্সি ভাষার মতন মনে হয়। অনুপমা মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দেয় আসবে।

বাড়িতে ঢুকতেই পায়েলের সামনাসামনি। এতক্ষণ উৎকণ্ঠায় জেগে ছিল বাকিরা। শ্রেয়ার সাথে যে রাগারাগি হয়েছে সেটা খুলে আর বলে না শুধু জানিয়ে দেয় যে বাইকের এক্সিডেন্ট এমন কিছু গুরুতর নয়, শুধুমাত্র ডান পায়ের হাড়ে একটু চিড় ধরেছে, ক্রেপ ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়েছে ডাক্তার, আগামী কাল সকালের মধ্যে ছুটি পেয়ে যাবে। নিজের ঘরে ঢুকে জামা কাপড় ছেড়ে আগে দেবায়নকে ফোন করে। কি করছে ছেলেটা, যা মাথা গরম রাতেই না কিছু করে বসে। তবে মামনি নিশ্চয় এতক্ষণে ওকে বকে ঝকে শান্ত করিয়ে দিয়েছে। ফোন বারেবারে রিং হয়ে গেল, একটু চিন্তায় পড়ে যায় অনুপমা। সঙ্গে সঙ্গে মামনিকে ফোন করে। দেবশ্রী জানিয়ে দেয় এখন পর্যন্ত বাড়িতে ফেরেনি, এইসবে নিবেদিতার বাড়িতে পৌঁছেছে, ওর বাড়িতে গাড়ি রেখে বাড়ি পৌঁছালে ফোন করতে বলবে।

রাত জেগে বসে থাকে অনুপমা, বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ ধপাস করে শুধু। এত দেরি লাগে নাকি সল্টলেক থেকে লেকটাউন আসতে? না নিশ্চয় বাইক নিয়ে কোথাও আবার বেরিয়ে পড়েছে।

একটু পরেই দেবায়নের ফোন পেয়ে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “কোথায় মরতে গেছিলিস তুই? ফোন করতে পারিস না।”

প্রেয়সীকে শান্ত করিয়ে বলে, “বাইরে বৃষ্টি পড়ছে সেটা খেয়াল আছে? বাইক নিয়ে কি করে ভিজতে ভিজতে বের হওয়া যায় বলতো?”

অনুপমা জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখে, এক নাগারে ইলশেগুড়ি ঝরে পড়ছে। সেদিকে খেয়াল ছিল না এতক্ষণ, এসির আওয়াজে বৃষ্টির ছাটের শব্দ কানে যায়নি। ঘরে পায়েল থাকলে না হয় তাও কিছু একটা বলতো, কিন্তু সে তো এতক্ষণে ভাইয়ের কোলে মাথা রেখে কোথায় চলে গেছে কে জানে।

অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “কি করা যায় বলতো? এদের সাথে নিয়ে চলা খুব মুশকিল।” হটাত খেয়াল হয় দরজার বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে।

সোমেশ গলা খ্যাঁকরে জানিয়ে দেয় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। ইসসস, অনুপমা সঙ্গে সঙ্গে স্লিপের ওপরে ড্রেসিং গাউন চাপিয়ে নেয়। বাবা কিছু বলবে বলছিলেন কিন্তু সেই কথা বেমালুম খেয়ে ফেলেছে। দেবায়নকে পরে ফোন করবে বলে উঠে চলে যায়। বাবাকে বলে, “একটু দাঁড়াও আমি আসছি।”

সোমেশ উত্তরে বলেন, “ঠিক আছে, তুই ঠিকঠাক হয়ে নীচে আয়, আমি অপেক্ষা করছি।”

দৌড়ে বাবার পেছন পেছন নীচে নেমে যায় অনুপমা। হটাত মধ্যরাত্রে কি আলোচনা করবে বাবা? চাপা উত্তেজনায় মন চঞ্চল হয়ে ওঠে।

সোফায় বসে বাবাকে জিজ্ঞেস করে, “কি বলবে বলছিলে?”

সোমেশ একটা ফাইল থেকে একটা কাগজ বের করে ওর হাতে দিয়ে বলে, “একটা কথা তোদের জানানো হয়নি। মানে ইচ্ছে করেই তখন জানাইনি। আসলে তোদের ওই কোম্পানিতে অনিমেশের দশ কোটি টাকা লগ্নি করা আছে।”

অনুপমা আকাশ থেকে পড়ে, “তুমি বলেছিলে সব টাকা নাকি তোমার?”

সোমেশ মাথা দোলায়, “হ্যাঁ সব টাকা আমার। তবে অনিমেশ অনেক ধরেছিল তাই ওর দশ কোটি টাকা তোর কোম্পানিতে লগ্নি করিয়েছি এই যা।”

অনুপমা ঝাঁঝিয়ে ওঠে বাবার ওপরে, “আজ এক বছর হতে চললো, এতদিন কেন বলোনি এই কথা?”

সোমেশ ওকে শান্ত করে বলেন, “দ্যাখ, ইন্দ্রনীল যদি শ্রেয়ার সাথে মিলিত থাকে তাহলে তোদের কোম্পানির পক্ষে একটা আশঙ্কাজনক খবর এটা। আমি এতো বুঝতে পারিনি আগে। আমার যতদূর মনে হয়, তুই যে ইন্দ্রনীলকে বোর্ড মেম্বার না বানিয়ে পায়েলকে বানিয়েছিস তার প্রতিশোধ স্বরূপ ওরা তোদের কাবু করতে চেষ্টা করবে।”
 
অনুপমা ভাবনায় পড়ে যায়, “কি করতে বলছো তাহলে? একটু পরামর্শ দাও।”

সোমেশ একটু চিন্তিত হয়ে বলেন, “শোন, যদি শ্রেয়া রেজিগনেশান দেয় আর তোর কাছ থেকে শেয়ারের টাকা চায় তাহলে ওকে সোজা কোর্টে নিয়ে যাবি। টাকা ওর হাতে একদম দিবি না। দ্বিতীয়, যদি ইন্দ্রনীল এই দশ কোটি টাকার বিষয়ে কিছু বলে তাহলে ওকে সোজা বলে দিবি ওর বাবা যেন আমার সাথে দেখা করে। তুই বলে দিবি ওই দশ কোটি টাকার সম্বন্ধে তুই কিছু জানিস না। অনিমেশ আমাকে টাকা দিয়েছিল। ওর বাবা যেন এই সব আলোচনা আমার সাথে করে, তোর সাথে নয়।”

অনুপমা বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। শ্রেয়া হুমকি দিয়েছে রেজিগনেশান দিয়ে দেবে। শ্রেয়া ছেড়ে দিলে রূপক নিশ্চয় ছেড়ে দেবে। ওদের সাথে যদি ইন্দ্রনীল মিলিত থাকে তাহলে সেও ছেড়ে দেবে। ওদের কোম্পানি অথৈ জলে ভেসে যাবে তাহলে। চিন্তিত অনুপমা বাবাকে জিজ্ঞেস করে, “ইন্দ্রনীল, শ্রেয়া আর রুপক একসাথে যদি কোম্পানি ছেড়ে দেয় তাহলে কোম্পানি ভেসে যাবে। বাইরের প্রোজেক্টগুলোর প্রচণ্ড ক্ষতি হয়ে যাবে। সেটাই খুব চিন্তার।”

সোমেশ বলেন, “কাল একবার দীপঙ্করকে আমার অফিসে পাঠিয়ে দিস। দেখা যাক কি করা যেতে পারে। এই দুই দিন দেখ ওরা কি করছে। আর আগামী পরশু তো তোদের বোর্ড মিটিং তাই না?” অনুপমা মাথা দোলায়, “হ্যাঁ।” সোমেশ বলেন, “ঠিক আছে। বেশি চিন্তা করিস না। আমি না হয় নিজেই একবার জার্মানি যাবো আর মিস্টার মেরকেল আর হেরজোগের সাথে আলোচনা করে আসবো।”

রাতে আর দেবায়নকে ফোন করা হলো না।

পায়েলকে এইসব ঝামেলার থেকে দূরে সরিয়ে রাখাই বাঞ্ছনীয়, তাই বিশেষ কিছুই ওকে বলেনি। পরের দিন রূপক হসপিটাল থেকে ছুটি পেয়ে যায়, তাই শ্রেয়া সারাদিন ওর বাড়িতেই কাটিয়ে দেয় অফিসে আসেনি। তবে ইন্দ্রনীল অফিসে এসেছিল। তারপরের দিন বোর্ড মিটিং। মিটিংয়ের প্রস্তুতিতে সেদিন কেটে গেল দুই জনার। একবার দিপঙ্কদার সাথে দেবায়ন আর অনুপমা আলোচনা সেরে নিল, যদি ইন্দ্রনীল অফিস ছেড়ে দেয় তাহলে কি করা যেতে পারে। জার্মানি আর ইউরোপের জন্য অতি শীঘ্র একটা ছেলে খুঁজতে হবে। বাবার নির্দেশ মতন দুপুরের পরে দীপঙ্করকে বাবার সাথে আলোচনা করতে বলে। বাইরের প্রোজেক্টগুলো সুপর্ণা ম্যাডামের তদারকিতে কাজ হচ্ছিল তাই তাতে বিশেষ অসুবিধে হওয়ার কথা নেই। তবে এগ্রিমেন্ট অনুযায়ী এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলো চাইলে মাঝপথে প্রোজেক্ট বন্ধ করে দিতে পারে বলে মনীষা ওদের জানিয়ে দেয়, সেই নিয়ে বেশ চিন্তিত দেবায়ন আর অনুপমা।

অনুপমা পায়েলকে সঙ্গে নিয়ে সকালেই অফিসে পৌঁছে গিয়েছিল। বৃষ্টি মাথায় করে, দেবায়ন সময় মতন অফিসে পৌঁছে যায়। যদিও ওদের বোর্ড মিটিং দ্বিতীয় অর্ধে, ইন্দ্রনীল এসে গেছে আর নিজের ডেস্কে বসে কাজে মগ্ন। শ্রেয়া আর রূপক তখনো আসেনি। একবার মনীষাকে জিজ্ঞেস করে, ওদের খবর নিতে। মনীষা ফোন করাতে শ্রেয়া জানিয়ে দেয়, দ্বিতীয় অর্ধে বোর্ড মিটিংয়ের আগেই ও আর রূপক অফিসে পৌঁছে যাবে। কার মনে কি চলছে কিছুই ঠিক ভাবে বোঝা যাচ্ছে না। এতো সকালে ইন্দ্রনীলকে নিজের ডেস্কে বসে থাকতে দেখে ধন্ধে পড়ে যায় অনুপমা।

দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার বলতো?”

দেবায়ন হেসে বলে, “হবে হয়তো নিজের রেজিগনেসান লেটার টাইপ করছে।”

সেদিন পায়েল শাড়ি পরে এসেছিল, দেবায়ন ওকে নিয়েই মেতে ওঠে। “কি রে মাল একদম ফুলটুসি হয়ে সেজে এসেছিস। গতকাল রাতে ভাই বেশ লাগিয়েছে তাই না?” পায়েল লজ্জায় লাল হয়ে যায়, আর দেবায়ন ততই চেপে ধরে ওকে, “হ্যাঁ রে, সত্যি করে বলতো কে বেশি ভালো লাগিয়েছে? আমি না ভাই।”

অনুপমা ওর ওপরে রেগে গিয়ে বলে, “তুই ওকে ছেড়ে একটু আমার কথা শুনবি।”

ওর কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে বলে, “না শুনবো না দেখবো। একটু নাচ?”

অনুপমা এক চাঁটি মারে ওর ঊরুসন্ধির ওপরে, “ধ্যাত, একটু পরে বোর্ড মিটিং। মাথা কাজ করছে না আর ছেলে বাঁড়া নিয়ে পড়ে আছে।”

পায়েল ওদের দেখে লজ্জায় লাল হয়ে বলে, “এই আমি আসছি রে। সময় হলে আমাকে ডেকে নিস।”

দেবায়ন ওর হাত ধরে কাছে টেনে বলে, “ইসসস লজ্জায় মরে যাই। যাচ্ছিস কোথায় রে?” দেবায়নের একপাশে প্রেয়সী অনুপমা, অন্যপাশে পায়েল। ওদের কাঁধে হাত দিয়ে গলা নামিয়ে বলে, “বোর্ড মিটিং করা হবে না বোর্ড সেক্স করা যায় বলতো।” বলেই পায়েলের নধর গোলগাল নরম পাছার ওপরে আলতো চাঁটি মারে। সুগোল মাংসল পাছা জোড়া দুলে ওঠে আর দেবায়ন ওর নরম পাছা আলতো করে চেপে ধরে।

পায়েল ওর হাত নিজের পাছার ওপরে থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে, “তুই তোর বৌকে নিয়ে পড়ে থাক আমি চললাম।”

অনুপমাও রেগে যায় একটু, “অফিসের মধ্যে করিস কি বলতো?”

দেবায়ন হেসে বলে, “কেন অফিসে বুঝি সেক্স করা মানা?”

অনুপমা ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “হ্যাঁ মানা। অন্তত অন্যদের সাথে মানা।”

দেবায়ন ওকে পেছন থেকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে দিয়ে বলে, “তোর সাথে মানা নেই যখন তাহলে চলো কনফারেন্স হলে। টেবিলটা বেশ বড়, ওর ওপরে তোকে শুইয়ে দিয়ে চালু করি।”

অনুপমা অভিমানী কণ্ঠে বলে, “ছাড় ছাড়।” পায়েলকে বলে, “তুই বের হ কেবিন থেকে। এই পাগলা ষাঁড় ক্ষেপে গেছে। এই দুঃশাসন যদি তোর বস্ত্র হরনে নামে তাহলে কোন কেষ্ট তোকে বাঁচাতে পারবে না কিন্তু।”
 
পায়েল ওদের দেখে মিচকি হেসে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। দেবায়ন ওর ঘাড়ের ওপরে মাথা গুঁজে মরালী গর্দানে চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দেয়। সকাল সকাল প্রেমিকের উত্তপ্ত ঠোঁটের ছোঁয়ায় অনুপমার বুকের রক্তে হিল্লোলের দেখা দেয়। সারা অঙ্গ শিরশির করে ওঠে ভালোবাসার জ্বালায়। দেবায়নের হাত দুইখানি নিজের শরীরের চারপাশে শক্ত করে বেঁধে চোখ বুজে চুপচাপ ওর পুরু উষ্ণ ভিজে ঠোঁটের পরশ সারা গালে, গর্দানে কানের লতিতে মাখিয়ে নেয়। মনের মধ্যে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে কামোত্তেজনা চরমে উঠে যায় দুইজনার। বেশ কিছুক্ষণ প্রেমিকের হাতের নিবিড় আলিঙ্গন পাশে বদ্ধ হয়ে থাকে। এমন সময়ে কেবিনের ফোন বেজে ওঠে। দেবায়ন ফোন তুলতেই, মনীষা জানিয়ে দেয় যে শ্রেয়া আর রূপক এসে গেছে।

অনুপমা মিহি কণ্ঠে দেবায়নকে বলে, “এইবারে ছাড়। দেখ গিয়ে রুপকের কি অবস্থা।”

দেবায়ন শেষ বারের মতন দুই হাতে ওকে পিষে ধরে বলে, “ইসসস এই বৃষ্টি ভেজা দিনে তোকে ছাড়তে একটুও ইচ্ছে করছে না।”

আদুরে কণ্ঠে অনুপমা ওকে বলে, “তোর শরীরের উষ্ণতা কাটিয়ে আমারও যেতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু কি করা যাবে বল। শিরে সঙ্ক্রান্তি, ওরা দুইজনে এসে গেছে। হয়তো এতক্ষণে ইন্দ্রনীলের সাথে একসাথে বসে জল্পনা শুরু করে দিয়েছে।”

দেবায়নের বাহুপাশ থেকে নিজেকে মুক্ত করে কেবিন থেকে দুইজনে বেরিয়ে আসে। ইন্দ্রনীল নিজের ডেস্কে তখন পর্যন্ত বসে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে রূপক ওদের দিকে হাসিহাসি মুখ করে এগিয়ে আসে। দেবায়ন আর অনুপমা পরস্পরের দিকে চাওয়াচায়ি করে।

দেবায়ন হেসে রূপককে বলে, “কি বাল ছাল ছেলে তুই। ঠিক ভাবে বাইক চালাতে জানিস না নাকি রে?”

রূপক মৃদু হেসে জবাব দেয়, “আরে এতো বৃষ্টি হচ্ছিল যে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। তার ওপরে কি ভাবে শালা ওই স্করপিওটা পেছন থেকে ধাক্কা মারল। বাল।”

অনুপমা ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে, “শ্রেয়ার কি খবর।”

রূপক গলা নামিয়ে উত্তর দেয়, “একটু পরেই মিটিং, ওইখানে সব পরিস্কার হয়ে যাবে।”

অনুপমা ওকে প্রশ্ন করে, “একটা সত্যি কথা বল। তুই কি রেজিগনেসান দিচ্ছিস?”

রূপক কিছু না বলে একটু হেসে দেয়। ওদের সন্দেহ হয়, কিন্তু রূপক কোন উত্তর দেয় না।

লাঞ্চের পরে কনফারেন্স রুমে বসে মিটিং শুরু হয়। লম্বা বিশাল টেবিলের একপাশে দেবায়ন বসে, ওর বাম পাশে অনুপমা আর ডান পাশে পায়েল। ঠিক দেবায়নের উলটো দিকে শ্রেয়া বসে, যেন একটা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়েই বসেছে। হিমশীতল কঠিন চেহারা দেখে মনের ভাব আঁচ করা কঠিন। ওর একপাশে রূপক অন্য পাশে ইন্দ্রনীল। শ্রেয়া এক মনে নিজের ট্যাবলেটে কিছু একটা লিখে চলেছে। মাঝে মাঝে দেবায়নের দিকে আড় চোখে দেখে নেয়। দীপঙ্করদা, মনীষা আর সুপর্ণা ম্যাডাম এসে গেছেন। শুরু হয়, ওদের সারা বছরের কাজকর্ম নিয়ে। দেবায়ন বলতে শুরু করে, শ্রেয়া চুপচাপ শুনে যায়। মনীষা তারপরে ব্যালেন্স সিট নিয়ে আলোচনা শুরু করে, তারপরে দীপঙ্করদা ওদের আগামী বছরের মারকেটিং স্ট্রাটেজি নিয়ে কথাবার্তা বলে। অর্ধেক আলোচনা অনুপমার মাথার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। তীক্ষ্ণ চোখে শুধুমাত্র শ্রেয়াকে জরিপ করে যায়। শ্রেয়া কম যায় না, ওর চোখে চোখ রেখে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। হটাত করে অনুপমার ফোনে একটা এস এম এস আসে। এস এম এস পড়ে অনুপমার চক্ষু চড়ক গাছ। শ্রেয়া পাঠিয়েছে। ছোট্ট এস এম এস, শুধু লেখা, “আই এম সরি।” শ্রেয়ার দিকে তাকাতেই শ্রেয়া, আলতো করে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ইশারা করে। ওর মাথা ঘুরে যায়, কি চলছে আসল শ্রেয়ার মনে ভেতরে। সেদিনের হসপিটালে দেখা শ্রেয়ার চোখ আর এই মুহূর্তে শ্রেয়ার চোখ একদম আলাদা।

সব শেষে দেবায়ন শ্রেয়ার উদ্দেশ্যে বলে, “তোর কিছু বলার নেই?”

শ্রেয়া গলা নামিয়ে ইন্দ্রনীলের সাথে কিছু কথাবার্তা বলে। অনুপমা দেবায়নকে, শ্রেয়ার পাঠানো এস এম এস দেখায়। দেবায়ন অবাক হয়ে রূপক আর শ্রেয়ার দিকে তাকায়। ওদের চোখে আবার আগের সেই দৃঢ়তা, কুটিল রেখা। কি চলছে সেটার আভাস পাওয়া যায় না।

শ্রেয়া গলা খ্যাঁকরে বলতে শুরু করে, “সব ডাইরেক্টর যখন এইখানে আছে তখন আমার কয়েকটা বিষয়ে কিছু বলার আছে। সবাই ওয়ার্কিং বোর্ড মেম্বার, কিছু না কিছু করে এই কোম্পানিতে দিয়েছি। পায়েল কি দিয়েছে?”

ওই কথা শুনে দেবায়নের কান লাল হয়ে যায়। অনুপমার চোখে রক্ত উঠে যায়। দৃঢ় কণ্ঠে উত্তর দেয়, “আমার পাশে থাকে সেটাই তোর পক্ষে জানা যথেষ্ট। এর থেকে বেশি কৈফিয়ত তোকে দেবো না আমি।”

শ্রেয়া স্মিত হেসে বলে, “বেশতো তাহলে গত বোর্ড মিটিংয়ে ইন্দ্রনীলকে কেন মেম্বার বানানো হয়নি? একটা কারন দে?”

অনুপমা একবার দেবায়নের দিকে তাকিয়ে ওকে উত্তর দেয়, “ওকেও বানানোর কথা চিন্তা করা হয়েছে। কিন্তু হটাত করে এই কথা এইখানে উঠছে কেন?”

শ্রেয়া স্মিত হেসে বলে, “দ্যাখ, তোর কোম্পানি বলে তুই যা ইচ্ছে তাই করতে পারিস না। আমার এই কোম্পানিতে বারো পারসেন্টের শেয়ার আছে সুতরাং আমিও কথা বলতে পারি।”

অনুপমা ঠাণ্ডা গলায় উত্তর দেয়, “নিশ্চয় বলতে পারিস। তোর কাজ কর্ম নিয়ে কোনোদিন আমরা তোকে কিছু বলিনি। জার্মানি থেকে ফিরে এসে তুই ভীষণ ভাবে কাজে ডুবে গেছিস সেটা আমাদের কোম্পানির পক্ষে খুব ভালো। নিজেই ডিজাইনিং সামলে নিয়েছিস, নিজে থেকে জার্মানি ঘুরে ওদের সাথে কথাবার্তা আলোচনা করেছিস।”

শ্রেয়া ঠাণ্ডা গলায় বলে, “হ্যাঁ করেছিলাম, ভেবেছিলাম কাজ করলে অন্তত আমার শেয়ার বেড়ে যাবে। কিন্তু ফল হলো উলটো। পায়েলকে শেয়ার দেওয়া হলো কিন্তু আমার কাজের ফল স্বরূপ আমার শেয়ার বাড়ানো হলো না। কারন জানতে চাই না।”
 
পায়েলকে খুব কম, নাম মাত্র শেয়ার দিয়ে বোর্ড মেম্বার বানানো হয়েছিল, যাতে অনুপমার দল ভারী হয়। সেই খবর শ্রেয়ার কাছে চলে গেছে। ইদানিং ব্যালেন্স সিট, কাগজ পত্র নিয়ে বেশ ঘাঁটাঘাঁটি করেছে সেটা অনুপমার অবিদিত নয়। ওর চেহারা কঠিন হয়ে যায়। ঠাণ্ডা গলায় শ্রেয়াকে উত্তর দেয়, “কারন যখন জানতে চাস না তাহলে নিজের কথাটা বল। তুই কি চাস।”

শ্রেয়া কিছুক্ষণ থেমে ওর দিকে একটা কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলে, “আমি ডাইরেক্টর পদ থেকে রেজিগনেসান দিচ্ছি।”

এটা আগে থেকেই ওরা বুঝতে পেরে গেছিল। তাই বিশেষ আশ্চর্য হলো না অনুপমা। কাগজ হাতে নিয়ে দেবায়নের দিকে এগিয়ে দিল। সাদা কাগজে শুধুমাত্র দুই লাইন লেখা, শ্রেয়া অবিদিত কারনে ডাইরেক্টর পদ স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিচ্ছে। দেবায়ন একবার পড়ে নিয়ে পায়েলের দিকে এগিয়ে দিল পড়ার জন্য।

শ্রেয়া বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলে, “প্লিস যদি কিছু মনে না করো তাহলে আমাদের একটু একা ছেড়ে দেবে প্লিস।” ওর কাতর কণ্ঠের আবেদন শুনে সবাই দেবায়ন আর অনুপমার দিকে তাকায়। দেবায়ন একবার শ্রেয়া রুপকের দিকে দেখে, একবার দীপঙ্করদা, মনীষা আর সুপর্ণা ম্যাডামের দিকে তাকায়। অনুপমা ওদের অনুরোধ করে কনফারেন্স হল থেকে চলে যাওয়ার জন্য। শ্রেয়া এ আবার কোন নতুন খেলায় নেমেছে। সেটা অনুধাবন করতে বেশ অসুবিধে হচ্ছে।

বাকিরা চলে যাওয়া পরে, কনফারেন্স হলের টেবিলের একদিকে পায়েল, অনুপমা আর দেবায়ন বসে, আর ঠিক তার উলটো দিকে শ্রেয়া, ইন্দ্রনীল আর রূপক বসে।

শ্রেয়া ওদের উদ্দেশ্যে বলে, “আমার শেয়ারের টাকা তৈরি আছে কি?”

অনুপমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, “তুই কোর্টে যা, সেইখানে তোকে দেখবো।”

শ্রেয়া স্মিত হেসে বলে, “আচ্ছা তাই হবে।” তারপরে ইন্দ্রনীলের দিকে দেখে বলে, “তোমার কিছু বলার নেই?”

ইন্দ্রনীল গলা খ্যাঁকরে বলে, “হ্যাঁ মানে, আমিও রেজিগনেসান দিচ্ছি। মানে এইভাবে বাইরে বাইরে কাটিয়ে কাজ ভালো লাগছে না। ভেবেছিলাম ওই দুটো এয়ারলাইন্সের প্রোজেক্ট আসার পরে আমি ডাইরেক্টর হব কিন্তু সেটা হতে পারলাম না তাই ছেড়ে দেবো বলে ঠিক করেছি।”

অনুপমা বাঁকা হেসে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, “এইগুলো তাহলে সব তোর ফন্দি।”

শ্রেয়া বাঁকা হেসে বলে, “হ্যাঁ।”

দেবায়ন চাপা গর্জন করে ওঠে, “তুই আস্তিনের সাপ।”

শ্রেয়ার চোখ ছলছল করে ওঠে, ঠোঁট একটু কেঁপে ওঠে, কিন্তু ওর কথার উত্তর না দিয়ে চোখের কোল মুছে নেয়। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ইন্দ্রনীলকে বলে, “তোমার রেজিগনেসান লেটার কি মেল করে দিয়েছো না প্রিন্ট আউট দেবে?”

ইন্দ্রনীল পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে ওর দিকে এগিয়ে দেয়। শ্রেয়া একবার পড়ে নীচে সই করতে অনুরোধ করে। দেবায়ন আর অনুপমার দিকে ইন্দ্রনীলের রেজিগনেসান লেটার এগিয়ে দেয়। পাকা গাল ভরা ইংরেজিতে লেখা বেশ লম্বা চওড়া রেজিগনেসান পত্র, শ্রেয়ার ছোট চিঠির থেকে অনেক অনেক আলাদা।

দেবায়ন ওই চিঠিতে চোখ বুলিয়ে রুপকের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে, “এইবারে কি তুই রেজিগনেসান দিচ্ছিস?”

রূপক কিছু না বলে চুপ করে চোখ টিপে কিছু একটা ইশারা করে জানাতে চায়। সেই ইশারা ওদের বোধগম্য হয় না। শ্রেয়া উঠে দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে, “ইন্দ্রনীল একটা নতুন কোম্পানি খুলতে চায় আর তার জন্য টাকার দরকার। ওর কাছ থেকে আমি জেনেছি এই কোম্পানিতে ওর দশ কোটি টাকা লগ্নি করা আছে।” অনুপমার চোয়াল শক্ত হয়ে যায় সেই কথা শুনে। এই বিষয়ে দুইদিন আগে বাবার মুখে শুনেছিল, শ্রেয়া যে এতো ডুবে ডুবে জল খেয়েছে সেটা আগে থেকে বুঝতে পারেনি। শ্রেয়া ইন্দ্রনীলের উদ্দেশ্যে বলে, “ওই টাকা তোমার নয় নিশ্চয়।”

ইন্দ্রনীল মাথা নাড়ায়, “না, ওই টাকা বাবা সেন আঙ্কেলকে দিয়েছিল।”

শ্রেয়ার কণ্ঠ স্বর হটাত করে বদলে যায়, “তাহলে ওই টাকার ওপরে তোমার কোন অধিকার নেই। অনিমেশ আঙ্কেলকে বল সেন কাকুর সাথে কথা বলতে।”

শ্রেয়ার এই কণ্ঠস্বর শুনে অনুপমা আর দেবায়ন বিস্মিত হয়ে যায়। এই কথাটাই ওর বাবা সেদিন রাতে ওকে বলেছিল, তাহলে কি এই বিষয়ে শ্রেয়া ওর বাবার সাথে আলোচনা করে নিয়েছে?

ইন্দ্রনীল কিছু বুঝতে না পেরে ওকে প্রশ্ন করে, “মানে? এতদিন কি তাহলে তুমি আমার সাথে ছলনা করে গেছো?”
 
শ্রেয়া কঠিন চোখে ইন্দ্রনীলের দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি করোনি আমাদের সাথে?” অনুপমার দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে বলে, “সরি রে সোনা। তোকে আগলে রাখার জন্য গেম খেলতে হয়েছিল।” চোখের কোল মুছে বজ্র কণ্ঠে ইন্দ্রনীলকে বলে, “এইখানে আসার আসল উদ্দেশ্য সেটা একবার ঝেড়ে কাসো, না হলে ওই” দেবায়নের দিকে আঙুল দেখিয়ে আর রুপকের দিকে তাকিয়ে বলে, “দুই বাঘ বসে আছে তোমাকে ছিঁড়ে খাবার জন্য।” ইন্দ্রনীলের গলা শুকিয়ে আমতা আমতা করে কিছু বলতে চেষ্টা করে। শ্রেয়া ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “প্রথম দিন থেকেই তোমার ওপরে আমার সন্দেহ ছিল। তুমি ভালো মনে এইখানে আসোনি। তবে তোমার আসল উদ্দেশ্য ধরার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে হয়েছিল।” অনুপমার কান লাল হয়ে যায় এই কথা শুনে। কি বলছে শ্রেয়া? শ্রেয়া বলে চলে, “তাই না ইন্দ্রনীল? তুমি আর তোমার বাবা এইখানে এসেছিলে আসলে অনুপমাকে হাতাতে। র‍্যাডিসন ফোরটের সমাবেশে যখন তোমার বাবা দেখলেন যে সেন আঙ্কেলের বিশাল টাকা, তখন যেচে এই কোম্পানিতে টাকা ঢাললেন আর তোমাকে এইখানে ওকে হাতানোর জন্য পাঠালেন। বাবা ছেলে মিলে বেশ ফাঁদ পেতেছিলে তাই না?” কাঁপা কান্না জড়ানো অথচ দৃঢ়কণ্ঠে বলে, “তোমার পেট থেকে কথা বের করার জন্য শেষ পর্যন্ত তোমার সাথে শুতে হয়েছে। তবে মদের নেশায় আর আমার শরীরে নেশায় তোমার পেট থেকে কথা বের হয়েছে।”

ইন্দ্রনীল আহত কণ্ঠে বলে, “তুমি আমার সাথে এতো বড় প্রতারনা করলে?”

শ্রেয়া চেঁচিয়ে ওঠে ওর দিকে, “চুপ, একটা কথা বলবে না। প্রতারনা? কাকে বলে প্রতারনা তুমি জানো। তুমি কি কি করেছো আমার সাথে আর কি কি বলেছো সেই সব আমার কাছে রেকর্ড করা আছে। বল তো নন্দনে সত্তর এম এম ফিল্ম চালাতে পারি।”

ইন্দ্রনীল রুপকের দিকে দেখিয়ে বলে, “ওর এক্সিডেন্ট, সেটা?”

দেবায়ন অনুপমা অবাক, কি চলছে কনফারেন্স হলে? শ্রেয়া প্রায় কেঁদে ফেলে, “তোমাকে বিশ্বাস করানোর জন্য ওই জঘন্য খেলা খেলতে হয়েছিল। স্করপিওর ড্রাইভার আমার চেনা তাই শুধুমাত্র ওকে ফেলে দিতে বলেছিলাম। আর আসলে রূপক জানতো কিন্তু বৃষ্টি পড়ে থাকায় হাড় ভেঙেছে, না হলে সেটাও হতো না। জানো কত বড় পাথর বুকে রেখে আমাকে তোমার সাথে এই ছলনার খেলায় নামতে হয়েছে? প্রতিবার কান্না পেতো কিন্তু ওই দুইজনকে আগলে রাখার জন্য আমাকে করতে হয়েছিল না হলে তুমি আর তোমার বাবা বেশ নিখুঁত ফন্দি এঁটেই এসেছিলে রাজকন্যে আর রাজ্য হাতিয়ে নিতে। আমার অনু আর দেবুকে এইভাবে বিচ্ছেদ করা? না, কারুর পক্ষে সম্ভব নয়।”

ইন্দ্রনীল আহত কণ্ঠে বলে, “তুমি যে রেজিগনেসান দিয়েছো, সেটা তাহলে কি মিথ্যে?”

অনুপমার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে, “সেটা ওর ব্যাপার। চিঠিটা ঠিক ভাবে পড়লে দেখতে পারতে। আমি শুধুমাত্র ডাইরেক্টর পদ থেকে রেজিগনেসান দিয়েছি, কাজ করবো না সেটা কোথাও লেখা নেই। এর পরে আমাকে রাখবে কি রাখবে না সেটা ওর ব্যাপার। তবে ওর সাথে ছলনা? আমার গলায় পাড়া দিলেও করতে পারবো না। জানো ওরা কি ধরনের? ওই পায়েল বসে আছে, দেখেছো? ওকে ওরা কোথা থেকে বাঁচিয়ে এনেছে সেটা তোমার ধারনার বাইরে। কেন আমি ব্যালেন্স সিট দেখতাম জানো? গত এক বছরে কুড়ি কোটি টাকার মধ্যে পনেরো কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে, আর আয় বলতে মাত্র পাঁচ কোটি টাকা। আমি শুধু নেচেই বেড়াতাম আর টাকা উড়িয়ে বেড়াতাম। যা দিয়েছে ওই মেয়েটা দিয়েছে আর যা করেছে ওই ছেলেটা করেছে।” অনুপমার দিকে তাকিয়ে বলে, “হ্যাঁ আমি সব জানি। প্লিস আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিস।”

ইন্দ্রনীল উঠে দাঁড়িয়ে চাপা কণ্ঠে চিবিয়ে শ্রেয়া আর বাকিদের উদ্দেশ্যে বলে, “তোমাদের সবাইকে আমি দেখে নেব।”

শ্রেয়া ওর দিকে এক পা এগিয়ে এসে বলে, “বেশি দেখতে যেও না ইন্দ্রনীল। এতদিন আমার সাথে কি কি করেছো, সেই সিডি তোমার পেয়ারের গার্ল ফ্রেন্ড, কি নাম যেন? ও হ্যাঁ, মনিকা দেলাকরিক্স, লন্ডনে থাকে তাই না? এতক্ষণে পৌঁছে গেছে। রাইন না হলে টেমসের জলে তোমাকে কেটে ভাসিয়ে দেবে। ইমেল দেখতে চাও?” বলে হাতের ট্যাবলেট খুলে দেখায় ওকে।

আহত ইন্দ্রনীল কাঁপতে কাঁপতে শ্রেয়ার দিকে তেড়ে আসে। অনুপমা উঠে দাঁড়ায় সাথে সাথে রূপক ভাঙা পা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে গর্জে ওঠে ইন্দ্রনীলের দিকে, “এক পা এগোলে, ধড় থেকে মাথা আলাদা করে দেবো।”

রূপককে ওই ভাবে গর্জে উঠতে দেখে দেবায়ন উঠে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুই জানতিস তাহলে বলিস নি কেন?”

রূপক মাথা নাড়িয়ে ইন্দ্রনীলের দিকে দেখিয়ে বলে, “শ্রেয়ার বারন ছিল তাই বলিনি, সরি।”

আহত পরাজিত ইন্দ্রনীল রাগে ক্ষোভে গজগজ করতে করতে সব কিছু হারিয়ে চলে যেতে উদ্যত হয়। সবার দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, “কি ভাবে ওই প্রোজেক্ট গুলো তোমাদের হাতে আসে সেটা দেখে নেব আমি।”

শ্রেয়া হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, “সে গুড়ে বালি ইন্দ্রনীল। তোমার সাথে আমি বার্লিন, হেগ ফ্রাঙ্কফারট এমনি এমনি ঘুরে বেড়াইনি। আসলে আমি ওই জায়গায় গিয়ে এয়ারলাইন্স কোম্পানির বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্ম কর্তাদের সাথে আলোচনা করেছি। মিস্টার হেরজোগ আর মিস্টার মেরকেলের সাথেও দেখা সাক্ষাৎ করেছি। দুইজনে আমাকে আস্বস্ত করেছিলেন যে দেবায়ন যখন আছে তখন এই প্রোজেক্ট কিছুতেই হাতছাড়া হবে না।”

ইন্দ্রনীল মাথা নিচু করে পরাজিত হয়ে ক্ষোভে গজগজ করতে করতে কনফারেন্স হল থেকে বেরিয়ে যায়।

ইন্দ্রনীল চলে যেতেই। শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে অনুপমা বলে, “এতো কিছু হয়ে গেল আর তুই আমাকে একটুর জন্য জানালি না কেন?”

দেবায়ন রূপককে একটা লাথি কষিয়ে বলে, “শালা বাল চোদা চোদনা ছেলে আমাদের বললে কি ক্ষতি হতো?”

শ্রেয়া চোখের কোল মুছে মৃদু হেসে উত্তর দেয়, “আসলে বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ইন্দ্রনীল অনেক ঘাঘু মাল। মারকেটিংয়ের ছেলে অনেক লোক চরিয়ে বেড়ায়। আমাদের কথাবার্তার ধরন ধারন দেখলেই আঁচ করতে পারতো যে আমি তোদের সব কিছু বলে দিয়েছি। তোদের এই যে ক্ষোভের দুঃখের অভিব্যক্তি এখন ফুটে উঠেছে, তোরা যদি আগে থেকে জেনে যেতিস তাহলে সেটা আর ফুটে উঠতো না। সেটা যদি একবারের জন্য ইন্দ্রনীল টের পেয়ে যেতো তাহলে ওর পেট থেকে কথা বের করতে পারতাম না। তবে হ্যাঁ, আরো একজন এই বিষয়ে জানতো।”

দেবায়ন আর অনুপমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কে?”

পায়েল ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “আমি।”

অনুপমা কেঁদে ফেলে প্রায়, “তুই? কিন্তু...” শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে অনুপমা, “তুই না সত্যি একটা মেয়ে মাইরি।”

তিনজনে একপ্রকার একটু মেয়েলী কান্না কাটি সেরে ফেলে। রুপকের ভাঙা পায়ের ওপরে এক লাথি কষিয়ে জিজ্ঞেস করে, “সেই জন্যে শালা তুই হসপিটালে চুপ মেরে ছিলিস তাই না?”
 
রূপক মাথা দোলায়, “হ্যাঁ, আর তোদের পেছনে ইন্দ্রনীল দাঁড়িয়ে ছিল।”

পায়েল ওদের বলে, “আমি ইচ্ছে করেই তোদের ঘাঁটাইনি কেননা বুঝতেই পারছিস। বেশি ঘাঁটালে যদি আমার পেট থেকে কথা বের হয়ে যায় তাই। আর শ্রেয়া শুরু থেকে আমাকে বলে রেখেছিল।”

দেবায়ন ওকে আলতো চাঁটি মেরে বলে, “আজ রাতে তোকে বেশ আদর করবো।”

পায়েল ওর পাশে সরে এসে বলে, “মেরে ফেলবো এইবারে।”

অনুপমা শ্রেয়ার চোখের জল মুছিয়ে বলে, “এই সব করতে করতে তোর যদি কিছু হয়ে যেতো?”

শ্রেয়া হেসে বলে, “হতো না, মনিকাকে বলা আছে সব। জার্মানিতে ফিরলে ওর জন্য খাঁড়া নিয়ে অপেক্ষা করছে।”

দেবায়ন হাত পা ছুঁড়ে বলে, “উফফফ শালা এই কয় মাস যা গেল কি যে বলি।”

শ্রেয়া বলে, “হ্যাঁ জানি।”

দেবায়ন ওর গালে টোকা দিয়ে বলে, “ফ্রাঙ্কফারটের হোটেলের বাকিটা তাহলে রাতে সেরে ফেলি কি বল?”

শ্রেয়া ওর পাশে ঘন হয়ে বলে, “যদি অনু অনুমতি দেয় তাহলে।”

রূপক চেঁচিয়ে ওঠে, “এই বাল, নিজের বৌকে লাগা না শালা।”

পায়েল মৃদু হেসে বলে, “এই আমি এইবারে আসছি রে।”

শ্রেয়া চেঁচিয়ে ওঠে, “কেন কোথায় যাবি? আজকে আর কাজ নয় আজকে...”

দেবায়ন ওর কথা টেনে বলে, “সারা রাত জম্পেশ পার্টি।”

অনুপমা খিলখিল করে হেসে ফেলে, “ভদকা এন্ড রাম...”

রূপক বলে, “উফফফ মাইরি, তোর পেটে একবার হুইস্কি পড়লে তুই যে কি হয়ে যাস।”

অনুপমার কান লজ্জায় লাল হয়ে যায়, “যাঃ এমন কি হয়েছে রে?”

শ্রেয়া ভুরু কুঁচকে রুপকের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কবে কোথায় কি করেছো?”

দেবায়ন অবাক হয়ে রূপককে জিজ্ঞেস করে, “কি রে বাল, শ্রেয়া জানেনা জলপাইগুড়ির কথা?” শ্রেয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুই শালী ফ্রাঙ্কফারটে আমাকে লাগাতে দিলি না ওইদিকে জলপাইগুড়ি গিয়ে রূপক আর আমার বৌ হুইস্কি মেরে নিজেদের বাঁড়া গুদ এক করে দিয়েছিল।”

শ্রেয়া দেবায়নের গালের ওপরে চাঁটি মেরে বলে, “এই একদম মিথ্যে কথা বলবি না। আমি এসেছিলাম, তুই শালা আদিখ্যেতা দেখিয়ে আমাকে চটকে আদর করে পাঠিয়ে দিলি।”

দেবায়ন আর রূপক সমস্বরে বলে ওঠে, “তাহলে আজ রাতে পার্টি। অঙ্কনের কি হবে?”

পায়েল ওদের থেকে একটু তফাতে সরে দাঁড়িয়ে বলে, “যাঃ পাগল আমি নেই। মদ খেয়ে তোরা যা শুরু করবি সেটা আমার জানা আছে।”

রূপক বলে, “আচ্ছা বাবা ঠিক আছে। বুঝতে পারছি, অঙ্কনের সামনে অনুকে ওইভাবে...”

অনুপমা ওর দিকে তেড়ে যায়, “আর একটা পা বাকি আছে কুত্তা, এইবারে ওইটা ভেঙে দেবো।”

রূপক ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুই আমার তৃতীয় পা ভাঙিস।”

অনুপমা হাসতে হাসতে কনুই দিয়ে ওর বুকে গুঁতো দিয়ে বলে, “ভাবছি বাকিদের ডেকে নেব, কিন্তু জায়গা? সেইবারে মামনি বাড়ি ছিল না তাই পুচ্চুর বাড়িতে করতে পেরেছিলাম এইবারে?”

দেবায়ন হেসে বলে, “চিন্তা নেই, আগামী কাল উটির রিসোর্টে যাবো। এখুনি চারদিকে ফোন করে দেখ কে কে যাবে, শান্তনুকে বলে সেই মতন প্লেনের টিকিট করিয়ে নেই।”

পায়েল মাথা নাড়িয়ে বলে, “আমি আর অঙ্কন যাবো না।”

অনুপমা হেসে বলে, “না তোদের যেতে হবে না।”

শ্রেয়া ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ইসসস তোকে খুব মিস করবো।”

পায়েল ওর গালে আলতো টোকা দিয়ে বলে, “সেটা একটু করবো তবে...”

শ্রেয়া বলে, “জানি, ভাইয়ের প্রেমে এখন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস তুই।”
 
ওইখানে বসে সবাইকে ফোন করা হয়, একদিনের মধ্যে যাওয়া একটু মুশকিল, তাও ধীমান আর ঋতুপর্ণা জানিয়ে দেয় বিকেলের মধ্যে ওদের জানিয়ে দেবে। সঙ্গীতা যাওয়ার জন্য লাফিয়ে ওঠে কিন্তু শান্ত শিষ্ট প্রবাল জানে ওইখানে গেলে কি হবে তাই পিছিয়ে যায়। জারিনার বাড়ি থেকে মানা করে দেয় তাই পরাশর পিছিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ঠিক হলো, ছয়জনে মিলে উটি যাবে। সেই মতন শান্তনুকে বলে প্লেনের টিকিট কাটা হয়। দেবায়ন মিস্টার পারিজাতকে বলে দেয় ওরা কইম্বাতুর হয়ে আগামী কাল বিকেলের মধ্যে উটি পৌঁছে যাবে। সব একদম তৈরি, শুধু রাত পার
করা বাকি।

সন্ধ্যের মধ্যে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সবাই মেতে ওঠে আগামী কালের ভ্রমনের জন্য। ভাঙা পা নিয়ে রূপক কি করে যাবে সেটাই শ্রেয়ার চিন্তা, কিন্তু রূপক নাচানাচি করতে শুরু করে দেয়। একটা পা ভেঙেছে কি হয়েছে, আসল পা একদম ঠিক আছে।

শান্তনু জানায় পরেরদিন ভোরের বেলা প্লেন, চেন্নাই হয়ে কইম্বাতুর যেতে হবে। সরাসরি প্লেনের টিকিট পাওয়া যায়নি। ঋতুপর্ণা আর ধীমান রাতের বেলাতেই ব্যাগ গুছিয়ে হাজির হয়ে যায় অনুপমার বাড়িতে। রূপক আর দেবায়ন জানিয়ে দেয় সকালে এয়ারপোর্টে দেখা হবে, দুইজনে মদ খাবে বলে বাইকে করে বৃষ্টি মাথায় করে অফিসের পরে বেরিয়ে যায়। শ্রেয়া রাতের মধ্যে নিজের জিনিস পত্র গুছিয়ে অনুপমার বাড়িতে পৌঁছে যায়।
বাড়িতে হুলুস্থুল কান্ড। অনুপমার ঘরে আড্ডার আসর বসে। অনেকদিন পরে সবাইকে একসাথে দেখে বাড়ির লোকেরাও বেশ খুশি, বিশেষ করে পায়েল। এক বছর আগে, অফিস খোলার সময়ে ঋতুপর্ণার সাথে দেখা হয়েছিল তারপরে আর দেখা সাক্ষাৎ হয়নি ওর সাথে। পায়েল যাচ্ছে না শুনে ঋতুপর্ণা আক্ষেপ করে কিন্তু শ্রেয়া কারন জানাতে ঋতুপর্ণা ওকে আর অঙ্কনকে খুব ক্ষেপায়। একবার দিদির দিকে লাল মুখো বাঁদরের মতন মুখ করে তাকিয়ে ওদের ওইখান থেকে বেরিয়ে যায়। চারজন মেয়ে মিলে বাড়ি মাথায় করে তোলে, একা ধীমানের পক্ষে সামলানো মুশকিল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে শ্রেয়া আর অনুপমা ধীমানকে একপ্রকার কোণঠাসা করে ধরে।

শ্রেয়া ধীমানের মাথায় চাঁটি মেরে বলে, “কি রে এতদিন তোদের দেখা পাইনি কেন? ঋতুর ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে নাকি?”

ঋতুপর্ণা মিচকি হেসে উত্তর দেয়, “তোদের কি অবস্থা? এক অফিসে কাজ করিস, এক সাথে থাকিস। মনে হচ্ছে প্রতিদিন এপিঠ ওপিঠ করে বাঁড়া বদল করা হয়?”

অনুপমা হেসে ফেলে, “হলো আর কই...” শ্রেয়ার দিকে অভিমানী চাহনি নিয়ে তাকায়, “মেয়েটা গত ছয় মাসে...”

পায়েল ওর কথা টেনে বলে, “কাজে খুব ব্যস্ত ছিল শ্রেয়া। ফ্রাঙ্কফারট, হেগ, বার্লিন এইসব করে বেড়িয়েছে।”

ঋতুপর্ণা কিঞ্চিত বিস্ময়ে ওদের দিকে তাকিয়ে বলে, “বাপরে, এর মধ্যে কয়বার বিদেশ গেলি?”

শ্রেয়া অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “কাজের জন্য গিয়েছিলাম। এ না থাকলে এই ভারতের চৌহিদ্দি পেরাতে পারতাম না।”

অনুপমা ওর গালে চুমু খেয়ে বলে, “তুই এক কাজ কর, আমি হোটেল দেখি আর তুই সফটওয়্যার কোম্পানিটা দেখ।”

শ্রেয়ার চোখ জোড়া চিকচিক করে ওঠে, মাথা নাড়িয়ে বলে, “না আর নয়। এইবারে শুধু কাজ, আগামী বছরের মধ্যে দ্বিতীয় এয়ারলাইন্সের প্রোজেক্ট কমপ্লিট করে ডিপ্লয় করতে হবে। তারপরে আবার দেখি ...”

অনুপমা ওর গালে চাঁটি মেরে বলে, “অন্তত আগামী দুইদিন কাজের কথা ছেড়ে অন্য কিছু বল।”

শ্রেয়া নেচে ওঠে, “ঠিক আছে।”

পায়েল আড়ামোড়া খেয়ে লাজুক হেসে বলে, “এই আমি শুতে চললাম।”

বলে স্লিপের কাপবোর্ড খুলে স্লিপ হাতে বাথরুমে ঢুকে পড়ে। ওর দিকে তাকিয়ে শ্রেয়া আর ঋতুপর্ণা অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “কি রে কোথায় যাচ্ছে ও?”

অনুপমা মিচকি হেসে উত্তর দেয়, “আর কোথায় যাবে। মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত আর পায়েলের দৌড় ভাইয়ের ঘর পর্যন্ত।”

সেই শুনে সবার চক্ষু চড়ক গাছ। ধীমান গলা নামিয়ে বলে, “কাকু কাকিমা অনুমতি দিয়ে দিয়েছে?”

অনুপমা মাথা দোলায়, “কি আছে, ঘরের বৌমা কয়েকদিন আগেই না হয় ঘরে চলে এসেছে এই যা। ভাইয়ের কলেজ শেষ হলেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে না হলে কন্ডম আর পিলে বেশি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে।”

সবাই হেসে ফেলে অনুপমার কথা শুনে। পায়েলকে গোলাপি পাতলা স্লিপ পরে বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখে ধীমান নিজের লিঙ্গ একটু ঠিক করে নেয়। নধর গোলগাল পায়েলের পাছার দুলুনি সেই আগের মতন। বড় বড় মাংসল পাছার দুলুনি দেখে ধীমানের লিঙ্গ ফুঁসতে শুরু করে দেয়। গোলাপি স্লিপের তলায় ব্রা পরেনি, নিচের গাড় রঙের প্যান্টির রঙ পরিস্কার দেখা যাচ্ছে।

শ্রেয়া, ঋতুপর্ণা ওর দিকে দেখে বলল, “ওহে সোহাগিনী কামিনী। এতো ফুলটুসি সেজে যাচ্ছো, দেখো খাট যেন ভেঙে না পড়ে। আর হ্যাঁ, ওই প্যান্টি পরে কি লাভ সেই তো খুলেই শুবি, এইখানে খুলে দে।”
 
পায়েলের চোখ মুখ কান গরম হয়ে যায় লজ্জায়, সঙ্গে সঙ্গে নিজের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে একটা তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে নেয়। বাইরে ছেলে মেয়েগুলো যেভাবে বুভুক্ষুর মতন ওর দিকে তাকিয়ে আছে, তাতে ধীমানের চেয়ে শ্রেয়া আর ঋতুপর্ণাকে বেশি ভয় লাগলো। পায়েল আর ঋতুপর্ণা, শ্রেয়ার কান্ড দেখে মনে মনে হেসে ফেলে অনুপমা। এই পায়েল দুই বছর আগে, বন্ধু বান্ধবীদের সামনে উলঙ্গ হতে লজ্জা পেতো না। মুখে কোন কথা আটকাতো না, যাকে যা পারতো বলে দিতো। আগে কত জনের সাথে যৌন সঙ্গমে মেতেছে তার ঠিক নেই আর সেই পায়েল আমূল বদলে গেছে। পর্দার আড়াল থেকে গলা খাঁকরানির আওয়াজ অনুপমা ফিকফিক করে হেসে ফেলে।

চোখ পাকিয়ে পায়েলকে বলে, “এটা খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে পায়েল। ভাইকে বলে দিস এতো বাড়াবাড়ি কিন্তু ভালো নয়।”

পায়েল একটু লজ্জা পায়, নবৌঢ়া বধুর মতন মাথা নাড়িয়ে বলে, “ঠিক আছে।”

শ্রেয়া বুক চেপে, “উফফফফ মাইরি আর পারিনা।” দরজার দিকে তাকিয়ে অঙ্কনের উদ্দেশ্যে বলে, “নাক টিপলে দুধ বের হবে আর এখুনি ওইখান থেকে দুধ বের করতে...” অনুপমা কটমট করে তাকাতেই শ্রেয়া চুপ করে যায়।

ঋতুপর্ণা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত এগারোটা বাজতে চলল। ধীমানকে বলে একবার দেবায়ন আর রূপককে ফোন করে দেখতে। যদি আসতো তাহলে বেশ মজা হতো। শ্রেয়া জানিয়ে দেয় ওদের আজকে না ডাকাই ভালো, দুইজনে কোথায় মদ খেয়ে পড়ে থাকবে তার নেই ঠিক। এই বাড়িতে এলে কারুর রক্ষে নেই। ধীমান জানিয়ে দেয় ওর ঘুম পাচ্ছে, ঋতুপর্ণা ওকে বলে দেয় নিচের গেস্টরুমে গিয়ে শুয়ে পড়তে। অনুপমার ঘরেই তিন বান্ধবী রাত কাটাবে।

ধীমান ইয়ার্কি মেরে কাতর কণ্ঠে শ্রেয়া আর অনুপমাকে বলে, “দেখিস বাবা, পাঁচটা দশটা নয় ওই একটা বউ আমার। পারলে আমার জন্য সকালে একটু রেখে দিস, না হলে আর কি করবো বল।”

ঋতুপর্ণা ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “তুমি যাও তো এইখান থেকে।”

অনুপমা ঋতুপর্ণাকে বলে, “তোর ইচ্ছে থাকলে ওর সাথে চলে যেতে পারিস, কোন আপত্তি নেই।” বলেই ধীমানের দিকে চোখ টিপে হেসে বলে, “দেখ ভাই, ভেসলিন আছে পেছনের জন্য। চাই নাকি বল?”

ঋতুপর্ণা কটমট করে অনুপমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। আসলে অনুপমার ইচ্ছে ছিল শ্রেয়ার সাথে একটু একান্তে থাকার। এতদিন যে শ্রেয়া একাই যুদ্ধ করে গেছে সেই সব কথা জানার খুব ইচ্ছে ছিল। ঋতুপর্ণা আর ধীমান নীচে গেস্ট রুমে শুতে চলে যায়।

শ্রেয়া নিজের জিন্স খুলে, ব্রা খুলে গায়ে স্লিপ গলিয়ে নেয়। দুই বান্ধবী শুধুমাত্র গায়ে একটা স্লিপ গলিয়ে বিছানার ওপরে শুয়ে পড়ে। শ্রেয়া বালিশ খানা বুকের ওপরে আঁকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ পড়ে থাকে। ওকে ওইভাবে চুপ হয়ে পড়ে থাকতে দেখে অনুপমা ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি রে তোর কি হলো।”

স্মিত হেসে শ্রেয়া উত্তর দেয়, “কিছু না এই এমনি ভাবছি ওই দুটোর কথা। একটা বারের জন্য ফোন করলো না শালা গান্ডুচোদা ছেলেগুলো।” বলেই শ্রেয়া হেসে ফেলে। ওর চোখ দুটো হটাত করে অনুপমাকে দেখে কেমন ভাসাভাসা হয়ে যায়।

অনুপমা ওর মনের অবস্থা বুঝে জিজ্ঞেস করে, “তুই এতো সব একা একা কেন করতে গেলি?”

শ্রেয়া ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “কিছু না এমনি। ছাড় না ওইসব।”

অনুপমা ওকে জোর করে জিজ্ঞেস করে, “এমনি এমনি কি করে তোকে ছেড়ে দেই বল। তুই যেখানে পা রেখেছিলিস সেখানে তোর আসন্ন বিপদ হতে পারতো। ওই বিদেশে তোর অভিসন্ধি যদি ইন্দ্রনীল ধরতে পেরে যেতো তাহলে কি হতো?”

শ্রেয়া বালিশ আঁকড়ে মাথা নিচু করে বলে, “জানি না কি হতো। মাঝে মাঝে ভয় যে করেনি তা নয় তবে...”

অনুপমা ওর মুখ আঁজলা করে ধরে কপালে চুমু খেয়ে বলে, “আর এমন পাগলামি করবি না। প্লিস অন্তত আমাকে না জানিয়ে করবি না।”

শ্রেয়া মাথা নাড়ায়, “না আর করবো না।”

অনুপমা ধরা গলায় বলে, “জানিস যখন মনে হতো আমার শ্রেয়া আর আমার নেই তখন...”

শ্রেয়া কেঁদে ফেলে, “জানি, তোর চোখ দেখে নিজের কেবিনে বসে, নিজের খাটে শুয়ে কাঁদতাম। কিন্তু তোকে বলে ফেললেই সব ভন্ডুল হয়ে যেতো।” তারপরে দাঁতে দাঁত পিষে বলে, “ইন্দ্রনীলকে আমি ছাড়ব না। ওর শেষ...”

শ্রেয়াকে শান্ত করে বলে, “দেখা যাক বাবা কি করেন। এইবারে একটু ঘুমা তো, অনেক করেছিস।”

শ্রেয়া অনুপমার গলা জড়িয়ে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয়। দুই কমনীয় সুন্দরীর শরীর একে অপরকে ধীরে ধীরে নিজেদের বাহু ডোরে বেঁধে ফেলে। অনেকদিন পরে এক নারীর ছোঁয়া পেয়ে অনুপমার শরীরে আগুনের মাতন লেগে গেল। কলেজের শুরুর দিকে, যখন দেবায়নের সাথে দেখা হয়নি, তখন ওর সঙ্গিনী ছিল প্রানের বান্ধবী পায়েল। সেই পায়েল আজকাল ভাইয়ের অঙ্ক শায়িনী, আগের পায়েল আর নেই। শ্রেয়ার গভীর আলিঙ্গনে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে খুব। স্লিপের ওপর দিয়েই শ্রেয়ার পিঠের ওপরে হাত বুলিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে শ্রেয়ার হাত ওর পিঠের ওপরে ঘুরে বেড়াতে শুরু করে দেয়। দুই জনে দুইজনার মুখের দিকে তাকায়। দুইজোড়া চোখে এক অব্যক্ত আগুন, শ্রেয়ার স্তন জোড়া একটু একটু ফুলে উঠেছে। অনুপমার স্তনের বোঁটা জোড়া ফুলে ওঠে শ্রেয়ার নরম স্তনের ছোঁয়ায়। স্লিপের ভেতর থেকে দুইজনের শরীরের আগুন ওপরের শরীরের ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়না।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top