দিলিপ বাবু তির্যক হেসে বলে, “দুধ খেতে হলে কি আর গাই কিনতে হয় মিস সেন? আমি বিয়ে করিনি মিস সেন।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “কেন করেন নি? আপনি একজন ধনী সুপুরুষ ব্যক্তি।”
দিলিপ বাবুর কোন পুরাতন জায়গায় খোঁচা লাগে আর সেই জায়গা অনুপমা আর দেবায়নের অজানা নয়। তাও দিলিপ বাবু দেঁতো হাসি হেসে বলে, “আরে তুমি দেখি আমার বিয়ে নিয়ে পড়ে আছো। ছাড়ো না ওই সব কথা। হোটেল দেখো, বার দেখো।”
অনুপমা দিলিপ বাবুর হাত ধরে অনুনয়ের সুরে জিজ্ঞেস করে, “বলুন না দিলিপ বাবু, আপনি কেন বিয়ে করেন নি।”
অনুপমার উষ্ণ নরম হাতের ছোঁয়ায় হটাত করে যেন দিলিপ বাবুর মন উদাস হয়ে যায়। একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে। নিচের ঠোঁট কামড়ে মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, “জীবনে টাকা কামাতে কামাতে ঠিক জীবন সাথী পেলাম না তাই আর বিয়ে করা হলো না।”
অনুপমা হেসে ওর হাত ধরে বলে, “আপনার কত বয়স হয়েছে যে আপনি এখন আর বিয়ে করতে পারবেন না? আপনি চাইলেই আপনার বাড়ির সামনে লম্বা লাইন লেগে যাবে।”
ব্যাথা ভরা হাসি দিয়ে দিলিপ বাবু উত্তর দেয়, “হ্যাঁ মিস সেন, জানি। সত্যি কথা বলতে কি জানো বাড়ির সামনে... ছাড়ো ওইসব কথা...” কথাটা বলতে বাধা পায় দিলিপ বাবু আর তাঁর কারন অনুপমা দেবায়নের অজানা নয় যে কাদের লাইন লাগে রোজ রাতে।
অনুপমাঃ “চলুন একটু আপনার রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি।”
রেস্টুরেন্টে ঢুকেতেই সবাই একপায়ে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। হোটেলের দুই মালিক একসাথে রেস্টুরেন্টে ঢুকেছে। দেবায়ন আর অনুপমা টেবিলের একপাশে বসে আর দিলিপ বাবু ওদের সামনে বসে। দিলিপ বাবু খাবারের কথা জিজ্ঞেস করাতে অনুপমা জানায় যে ওরা খেতে আসেনি, আসলে দিলিপ বাবুর রুমের সিগারেটের ধোঁয়াতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছে। অনুপমার কথা শুনে হাসিতে ফেটে পড়ে দিলিপ বাবু। হাসতে হাসতে ওর পেট ফেটে যাবার জোগাড়, টেবিল চাপড়ে বলে, এই কথা ওকে কেউ আজ পর্যন্ত বলেনি। সবাই চোখ বুজে নাক বুজে ওর রুমের সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধ সহ্য করে নেয়।
দিলিপ বাবু বলে, “সত্যি বলতে বিগত পনেরো বছরে হাসতে ভুলে গেছি আমি।” তারপরে ওদের অবাক করে বলে, “আমি সব জানি মিস্টার বসাক। মিস অনুপমা সেন আপনার বাগদত্তা, আমি জানি।”
দেবায়ন আর অনুপমা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। এমন সময়ে দিলিপ বাবুর ফোনে কারুর ফোন আসে। দিলিপ বাবু ফোন ধরে বলেন, “না জেসমিন আজকে নয়। আজকে রাতে আমি একটু ব্যস্ত থাকবো। আরে না না... অন্য কেউ নয়... তোমার সাথে পরে কথা বলবো... আরে না না... রাজিবকে বলে দেবো তোমার টাকা দিয়ে দেবে...”
ওর কথাবার্তা শুনে বুঝে গেল যে রাতে জেসমিন নামে একটা মেয়ের আসার কথা ছিল ওর বাড়িতে। কিন্তু কি কারনে তাকে কাটিয়ে দিল সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারল না ওরা।
দিলিপ বাবু ওদের দিকে তাকিয়ে বলে, “আজ রাতে কি করছো তোমরা?”
দেবায়নঃ “কিছুই নয়। অনুপমাকে নিয়ে একটু শহর দেখবো তারপরে কালকে বাড়ি ফিরবো।”
দিলিপ বাবু দেবায়নের হাত ধরে বলে, “সত্যি বলতে অনেকদিন পরে আজকে একটু মন কেমন লাগছে। প্লিস আজ রাতে আমার বাড়িতে এসো, একসাথে ডিনার করবো।”
অনুপমা হেসে বলে, “ঠিক আছে রাতে আপনার বাড়িতে আসবো।”
আরও বেশ কিছুক্ষণ দিলিপ বাবুর সঙ্গে বসে ওরা হোটেলে ফিরে যায়। হোটেলে ফিরে দেবায়ন কিঞ্চিত সংশয় ব্যক্ত করে অনুপমার কাছে, কিন্তু অনুপমা ওকে আস্বস্ত করে বলে যে দিলিপ বাবু রাতে তাঁর মনের কথা খুলে বলবে আর সেই সময়ে অনুপমা ওকে মুসৌরি ঘুরতে যাওয়ার কথা বলবে। দেখা যাক মুসৌরি বেড়াতে যাওয়ার কথা শুনে দিলিপ বাবু কি উত্তর দেন।
রাতে ওদের নিতে গাড়ি পৌঁছে যায়। গাড়ি করে দিলিপ বাবুর বাড়িতে পৌঁছায়। বেশ বড়সড় একতলা বাড়ি, দুটো সবসময়ের চাকর, ড্রাইভার ছাড়া আর কেউ থাকে না বাড়িতে। বসার ঘরে ওদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন দিলিপ বাবু। সকালের সেই লোলুপ চোখের চাহনি আর তাঁর চেহারায় নেই। ওদের দেখে আময়িক হেসে অভ্যর্থনা জানায়। বাড়ির চাকর এসে ওদের সামনে খাদ্য পানীয় রেখে চলে যায়। অনুপমা আর দেবায়ন এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখে। বড়োলোক তাই অনেক রকমের জিনিস পত্রে শোকেস ঠাসা। বাড়ির পরিচালনা চাকরদের হাতেই বলা চলে।
দেবায়ন দিলিপ বাবুকে প্রশ্ন করে, “আপনি একাই থাকেন এতো বড় বাড়িতে?”
দিলিপ বাবুঃ “হ্যাঁ, একাই থাকি।”
দেবায়নঃ “আপনার বাবা মা ভাই বোন?”
দিলিপ বাবুঃ “বাবা মা অনেকদিন আগেই স্বর্গে চলে গেছেন আর ভাই হায়দ্রাবাদে থাকে।”
অনুপমাঃ “আপনার একা থাকতে ভালো লাগে? মানে মাঝ মাঝে কি মনে হয় না যে সাথে কেউ থাকলে বড় ভালো হতো?”
দিলিপ বাবু কাষ্ঠ হেসে বলেন, “হ্যাঁ মন চায় আর সেটা মাঝে মাঝে পুষিয়ে যায়।” কথাটার তাৎপর্য দুইজনেই বুঝতে পারে।
কিছুপরে দিলিপবাবু ওদের মদের কথা জিজ্ঞেস করাতে দেবায়ন জানায় যে হুইস্কিতে ওর কোন অসুবিধা নেই, অনুপমা মদ খাওয়ার কথা মানা করে দেয়। দিলিপ বাবু চাকরকে ডেকে হুইস্কি আনতে বলে।
অনুপমা একটা কোল্ড ড্রিঙ্কসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আপনি কিন্তু আমার কথার উত্তর দিলেন না।”
দিলিপ বাবু পালটে প্রশ্ন করেন, “কি কথা?”
অনুপমা মিষ্টি হেসে বলে, “আপনি কেন বিয়ে করেন নি।”
দিলিপ বাবু বললেন, “কি হবে জেনে আমার কথা। এই তোমাদের দেখে বড় ভাল লাগছে এই শান্তি।”
অনুপমা আব্দার করে চেপে ধরে, “বলুন না প্লিস, কেন বিয়ে করলেন না। কেউ কি আপনাকে আঘাত দিয়েছে যে সেই আঘাত থেকে আর উঠতে পারলেন না আর......”
গুমরে ওঠেন দিলিপ বাবু, “না... কেউ আমাকে আঘাত করেনি। না ও আমাকে আঘাত করতেই পারে না।”
দেবায়ন দিলিপ বাবুর হাতে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, “নাম কি তাঁর?”
দিলিপ বাবু মদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে ছলছল চোখে দেবায়ন আর অনুপমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন আমার অতীত জানতে চাইছো তোমরা?”
অনুপমা ওর হাতের উষ্ণ পরশ ছুঁইয়ে বলে, “আপনার ওই চোখের পেছনে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে। আপনি এতো মদ খান কাউকে ভুলে থাকার জন্য। কেন নিজেকে এতো কষ্ট দিচ্ছেন? একবার কাউকে মনের কথা খুলে বলুন দেখবেন মন অনেক হাল্কা হয়ে যাবে।”
এক ঢোঁকে হাতের গ্লাস শেষ করে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে দিলিপ বাবু। হাত কাঁপতে শুরু করে দেয়, চোখের কোল একটু ছলকে ওঠে। দেবায়ন ওর হাতের চাপ বাড়িয়ে দিলিপ বাবুর মনে বল যোগায়।
দিলিপ বাবু বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে পকেট থেকে পার্স বের করে একটা সুন্দরী মেয়ের ছবি অনুপমার হাতে দেয়। ছবিটা দেখিয়ে বলেন, “কণিকা আমার প্রথম আর অন্তিম ভালোবাসা... ” কিছুক্ষণ চুপ থাকেন, কণ্ঠস্বর কেঁপে ওঠে, “কণিকার সাথে দেখা হয়েছিল কলেজে পড়ার সময়ে। বড় মিষ্টি মেয়ে, ওর চোখ দুটো আমাকে বড় টানতো। কিন্তু ওরা নিচু জাতের ছিল মানে সিডুল কাস্ট আর আমরা ব্রাহ্মণ আর বিশাল বড়োলোক। কণিকার বাবা সামান্য সরকারি কেরানি আর আমার বাবা বিশাল ব্যাবসাদার। এই টাকা পয়সা প্রতিপত্তি আমাদের প্রেমের মাঝে চলে আসে। আমি বাবার সামনে দাঁড়াতে পারলাম না। আমার বাবা কণিকার বাড়িতে গিয়ে ওর বাবাকে যাচ্ছেতাই বলে অপমান করে আর তারপরে কনিকারা এই শহর ছেড়ে চলে যায়। তারপরে আমি প্রতিজ্ঞা করি যে আমি কোনদিন বিয়ে করবো না। বাবা মারা যাওয়ার পরে আমি কণিকাকে খুঁজতে বের হয়েছিলাম। খুঁজে খুঁজে হায়দ্রাবাদ পৌঁছে জানতে পারলাম যে কণিকার বিয়ে হয়ে গেছে। নিজেকে ধিক্কার দিলাম যে সময় মতন নিজের প্রেমকে বাঁচাতে পারিনি বলে। তাই আর বিয়ে করা হলো না, এই বুকে আর কাউকে রাখতে নারাজ, মিস সেন। তাই নিজেকে সবসময়ে মদে ডুবিয়ে রাখি।”
অনুপমা দিলিপ বাবুর হাত ধরে বলে, “আপনি আমাদের সাথে ঘুরতে যাবেন?”
অনুপমার কথা শুনে চমকে ওঠে দিলিপ বাবু, একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে তাকায়, “কি বলছো তুমি? কোথায় বেড়াতে যাবো?”
দেবায়নঃ “মুসৌরি বেড়াতে যাবেন আমাদের সাথে?”
দিলিপ বাবু প্রশ্ন করে, “এতো জায়গা থাকতে হটাত মুসৌরি কেন?”
দেবায়ন হেসে জবাব দেয়, “খুব সুন্দর পাহাড়ে ঘেরা জায়গা তাই। এই দুই বছর আগে আমরা মুসৌরি বেড়াতে গিয়েছিলাম।”
দিলিপ বাবুর মনে সন্দেহ হয় তাও হেসে জিজ্ঞেস করেন, “তোমরা ঠিক কি চাও বলতো? তোমাদের ঠিক সুবিধার বলে মনে হচ্ছে না। মুসৌরি নিয়ে গিয়ে কি আমাকে মেরে ফেলতে চাও?”
অনুপমা মিষ্টি হেসে জবাব দেয়, “একবার আমাদের বিশ্বাস করে দেখুন।”
দিলিপ বাবু প্রশ্ন করেন, “ঠিক আছে, কবে যেতে হবে মুসৌরি?”
দেবায়ন উত্তরে বলে, “কালকেই আমরা বেরিয়ে পড়ি।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “কেন করেন নি? আপনি একজন ধনী সুপুরুষ ব্যক্তি।”
দিলিপ বাবুর কোন পুরাতন জায়গায় খোঁচা লাগে আর সেই জায়গা অনুপমা আর দেবায়নের অজানা নয়। তাও দিলিপ বাবু দেঁতো হাসি হেসে বলে, “আরে তুমি দেখি আমার বিয়ে নিয়ে পড়ে আছো। ছাড়ো না ওই সব কথা। হোটেল দেখো, বার দেখো।”
অনুপমা দিলিপ বাবুর হাত ধরে অনুনয়ের সুরে জিজ্ঞেস করে, “বলুন না দিলিপ বাবু, আপনি কেন বিয়ে করেন নি।”
অনুপমার উষ্ণ নরম হাতের ছোঁয়ায় হটাত করে যেন দিলিপ বাবুর মন উদাস হয়ে যায়। একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে। নিচের ঠোঁট কামড়ে মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, “জীবনে টাকা কামাতে কামাতে ঠিক জীবন সাথী পেলাম না তাই আর বিয়ে করা হলো না।”
অনুপমা হেসে ওর হাত ধরে বলে, “আপনার কত বয়স হয়েছে যে আপনি এখন আর বিয়ে করতে পারবেন না? আপনি চাইলেই আপনার বাড়ির সামনে লম্বা লাইন লেগে যাবে।”
ব্যাথা ভরা হাসি দিয়ে দিলিপ বাবু উত্তর দেয়, “হ্যাঁ মিস সেন, জানি। সত্যি কথা বলতে কি জানো বাড়ির সামনে... ছাড়ো ওইসব কথা...” কথাটা বলতে বাধা পায় দিলিপ বাবু আর তাঁর কারন অনুপমা দেবায়নের অজানা নয় যে কাদের লাইন লাগে রোজ রাতে।
অনুপমাঃ “চলুন একটু আপনার রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি।”
রেস্টুরেন্টে ঢুকেতেই সবাই একপায়ে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। হোটেলের দুই মালিক একসাথে রেস্টুরেন্টে ঢুকেছে। দেবায়ন আর অনুপমা টেবিলের একপাশে বসে আর দিলিপ বাবু ওদের সামনে বসে। দিলিপ বাবু খাবারের কথা জিজ্ঞেস করাতে অনুপমা জানায় যে ওরা খেতে আসেনি, আসলে দিলিপ বাবুর রুমের সিগারেটের ধোঁয়াতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছে। অনুপমার কথা শুনে হাসিতে ফেটে পড়ে দিলিপ বাবু। হাসতে হাসতে ওর পেট ফেটে যাবার জোগাড়, টেবিল চাপড়ে বলে, এই কথা ওকে কেউ আজ পর্যন্ত বলেনি। সবাই চোখ বুজে নাক বুজে ওর রুমের সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধ সহ্য করে নেয়।
দিলিপ বাবু বলে, “সত্যি বলতে বিগত পনেরো বছরে হাসতে ভুলে গেছি আমি।” তারপরে ওদের অবাক করে বলে, “আমি সব জানি মিস্টার বসাক। মিস অনুপমা সেন আপনার বাগদত্তা, আমি জানি।”
দেবায়ন আর অনুপমা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। এমন সময়ে দিলিপ বাবুর ফোনে কারুর ফোন আসে। দিলিপ বাবু ফোন ধরে বলেন, “না জেসমিন আজকে নয়। আজকে রাতে আমি একটু ব্যস্ত থাকবো। আরে না না... অন্য কেউ নয়... তোমার সাথে পরে কথা বলবো... আরে না না... রাজিবকে বলে দেবো তোমার টাকা দিয়ে দেবে...”
ওর কথাবার্তা শুনে বুঝে গেল যে রাতে জেসমিন নামে একটা মেয়ের আসার কথা ছিল ওর বাড়িতে। কিন্তু কি কারনে তাকে কাটিয়ে দিল সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারল না ওরা।
দিলিপ বাবু ওদের দিকে তাকিয়ে বলে, “আজ রাতে কি করছো তোমরা?”
দেবায়নঃ “কিছুই নয়। অনুপমাকে নিয়ে একটু শহর দেখবো তারপরে কালকে বাড়ি ফিরবো।”
দিলিপ বাবু দেবায়নের হাত ধরে বলে, “সত্যি বলতে অনেকদিন পরে আজকে একটু মন কেমন লাগছে। প্লিস আজ রাতে আমার বাড়িতে এসো, একসাথে ডিনার করবো।”
অনুপমা হেসে বলে, “ঠিক আছে রাতে আপনার বাড়িতে আসবো।”
আরও বেশ কিছুক্ষণ দিলিপ বাবুর সঙ্গে বসে ওরা হোটেলে ফিরে যায়। হোটেলে ফিরে দেবায়ন কিঞ্চিত সংশয় ব্যক্ত করে অনুপমার কাছে, কিন্তু অনুপমা ওকে আস্বস্ত করে বলে যে দিলিপ বাবু রাতে তাঁর মনের কথা খুলে বলবে আর সেই সময়ে অনুপমা ওকে মুসৌরি ঘুরতে যাওয়ার কথা বলবে। দেখা যাক মুসৌরি বেড়াতে যাওয়ার কথা শুনে দিলিপ বাবু কি উত্তর দেন।
রাতে ওদের নিতে গাড়ি পৌঁছে যায়। গাড়ি করে দিলিপ বাবুর বাড়িতে পৌঁছায়। বেশ বড়সড় একতলা বাড়ি, দুটো সবসময়ের চাকর, ড্রাইভার ছাড়া আর কেউ থাকে না বাড়িতে। বসার ঘরে ওদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন দিলিপ বাবু। সকালের সেই লোলুপ চোখের চাহনি আর তাঁর চেহারায় নেই। ওদের দেখে আময়িক হেসে অভ্যর্থনা জানায়। বাড়ির চাকর এসে ওদের সামনে খাদ্য পানীয় রেখে চলে যায়। অনুপমা আর দেবায়ন এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখে। বড়োলোক তাই অনেক রকমের জিনিস পত্রে শোকেস ঠাসা। বাড়ির পরিচালনা চাকরদের হাতেই বলা চলে।
দেবায়ন দিলিপ বাবুকে প্রশ্ন করে, “আপনি একাই থাকেন এতো বড় বাড়িতে?”
দিলিপ বাবুঃ “হ্যাঁ, একাই থাকি।”
দেবায়নঃ “আপনার বাবা মা ভাই বোন?”
দিলিপ বাবুঃ “বাবা মা অনেকদিন আগেই স্বর্গে চলে গেছেন আর ভাই হায়দ্রাবাদে থাকে।”
অনুপমাঃ “আপনার একা থাকতে ভালো লাগে? মানে মাঝ মাঝে কি মনে হয় না যে সাথে কেউ থাকলে বড় ভালো হতো?”
দিলিপ বাবু কাষ্ঠ হেসে বলেন, “হ্যাঁ মন চায় আর সেটা মাঝে মাঝে পুষিয়ে যায়।” কথাটার তাৎপর্য দুইজনেই বুঝতে পারে।
কিছুপরে দিলিপবাবু ওদের মদের কথা জিজ্ঞেস করাতে দেবায়ন জানায় যে হুইস্কিতে ওর কোন অসুবিধা নেই, অনুপমা মদ খাওয়ার কথা মানা করে দেয়। দিলিপ বাবু চাকরকে ডেকে হুইস্কি আনতে বলে।
অনুপমা একটা কোল্ড ড্রিঙ্কসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আপনি কিন্তু আমার কথার উত্তর দিলেন না।”
দিলিপ বাবু পালটে প্রশ্ন করেন, “কি কথা?”
অনুপমা মিষ্টি হেসে বলে, “আপনি কেন বিয়ে করেন নি।”
দিলিপ বাবু বললেন, “কি হবে জেনে আমার কথা। এই তোমাদের দেখে বড় ভাল লাগছে এই শান্তি।”
অনুপমা আব্দার করে চেপে ধরে, “বলুন না প্লিস, কেন বিয়ে করলেন না। কেউ কি আপনাকে আঘাত দিয়েছে যে সেই আঘাত থেকে আর উঠতে পারলেন না আর......”
গুমরে ওঠেন দিলিপ বাবু, “না... কেউ আমাকে আঘাত করেনি। না ও আমাকে আঘাত করতেই পারে না।”
দেবায়ন দিলিপ বাবুর হাতে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, “নাম কি তাঁর?”
দিলিপ বাবু মদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে ছলছল চোখে দেবায়ন আর অনুপমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন আমার অতীত জানতে চাইছো তোমরা?”
অনুপমা ওর হাতের উষ্ণ পরশ ছুঁইয়ে বলে, “আপনার ওই চোখের পেছনে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে। আপনি এতো মদ খান কাউকে ভুলে থাকার জন্য। কেন নিজেকে এতো কষ্ট দিচ্ছেন? একবার কাউকে মনের কথা খুলে বলুন দেখবেন মন অনেক হাল্কা হয়ে যাবে।”
এক ঢোঁকে হাতের গ্লাস শেষ করে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে দিলিপ বাবু। হাত কাঁপতে শুরু করে দেয়, চোখের কোল একটু ছলকে ওঠে। দেবায়ন ওর হাতের চাপ বাড়িয়ে দিলিপ বাবুর মনে বল যোগায়।
দিলিপ বাবু বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে পকেট থেকে পার্স বের করে একটা সুন্দরী মেয়ের ছবি অনুপমার হাতে দেয়। ছবিটা দেখিয়ে বলেন, “কণিকা আমার প্রথম আর অন্তিম ভালোবাসা... ” কিছুক্ষণ চুপ থাকেন, কণ্ঠস্বর কেঁপে ওঠে, “কণিকার সাথে দেখা হয়েছিল কলেজে পড়ার সময়ে। বড় মিষ্টি মেয়ে, ওর চোখ দুটো আমাকে বড় টানতো। কিন্তু ওরা নিচু জাতের ছিল মানে সিডুল কাস্ট আর আমরা ব্রাহ্মণ আর বিশাল বড়োলোক। কণিকার বাবা সামান্য সরকারি কেরানি আর আমার বাবা বিশাল ব্যাবসাদার। এই টাকা পয়সা প্রতিপত্তি আমাদের প্রেমের মাঝে চলে আসে। আমি বাবার সামনে দাঁড়াতে পারলাম না। আমার বাবা কণিকার বাড়িতে গিয়ে ওর বাবাকে যাচ্ছেতাই বলে অপমান করে আর তারপরে কনিকারা এই শহর ছেড়ে চলে যায়। তারপরে আমি প্রতিজ্ঞা করি যে আমি কোনদিন বিয়ে করবো না। বাবা মারা যাওয়ার পরে আমি কণিকাকে খুঁজতে বের হয়েছিলাম। খুঁজে খুঁজে হায়দ্রাবাদ পৌঁছে জানতে পারলাম যে কণিকার বিয়ে হয়ে গেছে। নিজেকে ধিক্কার দিলাম যে সময় মতন নিজের প্রেমকে বাঁচাতে পারিনি বলে। তাই আর বিয়ে করা হলো না, এই বুকে আর কাউকে রাখতে নারাজ, মিস সেন। তাই নিজেকে সবসময়ে মদে ডুবিয়ে রাখি।”
অনুপমা দিলিপ বাবুর হাত ধরে বলে, “আপনি আমাদের সাথে ঘুরতে যাবেন?”
অনুপমার কথা শুনে চমকে ওঠে দিলিপ বাবু, একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে তাকায়, “কি বলছো তুমি? কোথায় বেড়াতে যাবো?”
দেবায়নঃ “মুসৌরি বেড়াতে যাবেন আমাদের সাথে?”
দিলিপ বাবু প্রশ্ন করে, “এতো জায়গা থাকতে হটাত মুসৌরি কেন?”
দেবায়ন হেসে জবাব দেয়, “খুব সুন্দর পাহাড়ে ঘেরা জায়গা তাই। এই দুই বছর আগে আমরা মুসৌরি বেড়াতে গিয়েছিলাম।”
দিলিপ বাবুর মনে সন্দেহ হয় তাও হেসে জিজ্ঞেস করেন, “তোমরা ঠিক কি চাও বলতো? তোমাদের ঠিক সুবিধার বলে মনে হচ্ছে না। মুসৌরি নিয়ে গিয়ে কি আমাকে মেরে ফেলতে চাও?”
অনুপমা মিষ্টি হেসে জবাব দেয়, “একবার আমাদের বিশ্বাস করে দেখুন।”
দিলিপ বাবু প্রশ্ন করেন, “ঠিক আছে, কবে যেতে হবে মুসৌরি?”
দেবায়ন উত্তরে বলে, “কালকেই আমরা বেরিয়ে পড়ি।”