What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

pinuram রচনাসমগ্র (6 Viewers)

দিলিপ বাবু তির্যক হেসে বলে, “দুধ খেতে হলে কি আর গাই কিনতে হয় মিস সেন? আমি বিয়ে করিনি মিস সেন।”

অনুপমা প্রশ্ন করে, “কেন করেন নি? আপনি একজন ধনী সুপুরুষ ব্যক্তি।”

দিলিপ বাবুর কোন পুরাতন জায়গায় খোঁচা লাগে আর সেই জায়গা অনুপমা আর দেবায়নের অজানা নয়। তাও দিলিপ বাবু দেঁতো হাসি হেসে বলে, “আরে তুমি দেখি আমার বিয়ে নিয়ে পড়ে আছো। ছাড়ো না ওই সব কথা। হোটেল দেখো, বার দেখো।”

অনুপমা দিলিপ বাবুর হাত ধরে অনুনয়ের সুরে জিজ্ঞেস করে, “বলুন না দিলিপ বাবু, আপনি কেন বিয়ে করেন নি।”

অনুপমার উষ্ণ নরম হাতের ছোঁয়ায় হটাত করে যেন দিলিপ বাবুর মন উদাস হয়ে যায়। একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে। নিচের ঠোঁট কামড়ে মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, “জীবনে টাকা কামাতে কামাতে ঠিক জীবন সাথী পেলাম না তাই আর বিয়ে করা হলো না।”

অনুপমা হেসে ওর হাত ধরে বলে, “আপনার কত বয়স হয়েছে যে আপনি এখন আর বিয়ে করতে পারবেন না? আপনি চাইলেই আপনার বাড়ির সামনে লম্বা লাইন লেগে যাবে।”

ব্যাথা ভরা হাসি দিয়ে দিলিপ বাবু উত্তর দেয়, “হ্যাঁ মিস সেন, জানি। সত্যি কথা বলতে কি জানো বাড়ির সামনে... ছাড়ো ওইসব কথা...” কথাটা বলতে বাধা পায় দিলিপ বাবু আর তাঁর কারন অনুপমা দেবায়নের অজানা নয় যে কাদের লাইন লাগে রোজ রাতে।

অনুপমাঃ “চলুন একটু আপনার রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসি।”

রেস্টুরেন্টে ঢুকেতেই সবাই একপায়ে খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। হোটেলের দুই মালিক একসাথে রেস্টুরেন্টে ঢুকেছে। দেবায়ন আর অনুপমা টেবিলের একপাশে বসে আর দিলিপ বাবু ওদের সামনে বসে। দিলিপ বাবু খাবারের কথা জিজ্ঞেস করাতে অনুপমা জানায় যে ওরা খেতে আসেনি, আসলে দিলিপ বাবুর রুমের সিগারেটের ধোঁয়াতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছিল তাই রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছে। অনুপমার কথা শুনে হাসিতে ফেটে পড়ে দিলিপ বাবু। হাসতে হাসতে ওর পেট ফেটে যাবার জোগাড়, টেবিল চাপড়ে বলে, এই কথা ওকে কেউ আজ পর্যন্ত বলেনি। সবাই চোখ বুজে নাক বুজে ওর রুমের সিগারেটের ধোঁয়ার গন্ধ সহ্য করে নেয়।

দিলিপ বাবু বলে, “সত্যি বলতে বিগত পনেরো বছরে হাসতে ভুলে গেছি আমি।” তারপরে ওদের অবাক করে বলে, “আমি সব জানি মিস্টার বসাক। মিস অনুপমা সেন আপনার বাগদত্তা, আমি জানি।”

দেবায়ন আর অনুপমা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। এমন সময়ে দিলিপ বাবুর ফোনে কারুর ফোন আসে। দিলিপ বাবু ফোন ধরে বলেন, “না জেসমিন আজকে নয়। আজকে রাতে আমি একটু ব্যস্ত থাকবো। আরে না না... অন্য কেউ নয়... তোমার সাথে পরে কথা বলবো... আরে না না... রাজিবকে বলে দেবো তোমার টাকা দিয়ে দেবে...”

ওর কথাবার্তা শুনে বুঝে গেল যে রাতে জেসমিন নামে একটা মেয়ের আসার কথা ছিল ওর বাড়িতে। কিন্তু কি কারনে তাকে কাটিয়ে দিল সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারল না ওরা।

দিলিপ বাবু ওদের দিকে তাকিয়ে বলে, “আজ রাতে কি করছো তোমরা?”

দেবায়নঃ “কিছুই নয়। অনুপমাকে নিয়ে একটু শহর দেখবো তারপরে কালকে বাড়ি ফিরবো।”

দিলিপ বাবু দেবায়নের হাত ধরে বলে, “সত্যি বলতে অনেকদিন পরে আজকে একটু মন কেমন লাগছে। প্লিস আজ রাতে আমার বাড়িতে এসো, একসাথে ডিনার করবো।”

অনুপমা হেসে বলে, “ঠিক আছে রাতে আপনার বাড়িতে আসবো।”

আরও বেশ কিছুক্ষণ দিলিপ বাবুর সঙ্গে বসে ওরা হোটেলে ফিরে যায়। হোটেলে ফিরে দেবায়ন কিঞ্চিত সংশয় ব্যক্ত করে অনুপমার কাছে, কিন্তু অনুপমা ওকে আস্বস্ত করে বলে যে দিলিপ বাবু রাতে তাঁর মনের কথা খুলে বলবে আর সেই সময়ে অনুপমা ওকে মুসৌরি ঘুরতে যাওয়ার কথা বলবে। দেখা যাক মুসৌরি বেড়াতে যাওয়ার কথা শুনে দিলিপ বাবু কি উত্তর দেন।

রাতে ওদের নিতে গাড়ি পৌঁছে যায়। গাড়ি করে দিলিপ বাবুর বাড়িতে পৌঁছায়। বেশ বড়সড় একতলা বাড়ি, দুটো সবসময়ের চাকর, ড্রাইভার ছাড়া আর কেউ থাকে না বাড়িতে। বসার ঘরে ওদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন দিলিপ বাবু। সকালের সেই লোলুপ চোখের চাহনি আর তাঁর চেহারায় নেই। ওদের দেখে আময়িক হেসে অভ্যর্থনা জানায়। বাড়ির চাকর এসে ওদের সামনে খাদ্য পানীয় রেখে চলে যায়। অনুপমা আর দেবায়ন এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখে। বড়োলোক তাই অনেক রকমের জিনিস পত্রে শোকেস ঠাসা। বাড়ির পরিচালনা চাকরদের হাতেই বলা চলে।

দেবায়ন দিলিপ বাবুকে প্রশ্ন করে, “আপনি একাই থাকেন এতো বড় বাড়িতে?”

দিলিপ বাবুঃ “হ্যাঁ, একাই থাকি।”

দেবায়নঃ “আপনার বাবা মা ভাই বোন?”

দিলিপ বাবুঃ “বাবা মা অনেকদিন আগেই স্বর্গে চলে গেছেন আর ভাই হায়দ্রাবাদে থাকে।”


অনুপমাঃ “আপনার একা থাকতে ভালো লাগে? মানে মাঝ মাঝে কি মনে হয় না যে সাথে কেউ থাকলে বড় ভালো হতো?”

দিলিপ বাবু কাষ্ঠ হেসে বলেন, “হ্যাঁ মন চায় আর সেটা মাঝে মাঝে পুষিয়ে যায়।” কথাটার তাৎপর্য দুইজনেই বুঝতে পারে।

কিছুপরে দিলিপবাবু ওদের মদের কথা জিজ্ঞেস করাতে দেবায়ন জানায় যে হুইস্কিতে ওর কোন অসুবিধা নেই, অনুপমা মদ খাওয়ার কথা মানা করে দেয়। দিলিপ বাবু চাকরকে ডেকে হুইস্কি আনতে বলে।

অনুপমা একটা কোল্ড ড্রিঙ্কসের গ্লাসে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আপনি কিন্তু আমার কথার উত্তর দিলেন না।”

দিলিপ বাবু পালটে প্রশ্ন করেন, “কি কথা?”

অনুপমা মিষ্টি হেসে বলে, “আপনি কেন বিয়ে করেন নি।”

দিলিপ বাবু বললেন, “কি হবে জেনে আমার কথা। এই তোমাদের দেখে বড় ভাল লাগছে এই শান্তি।”

অনুপমা আব্দার করে চেপে ধরে, “বলুন না প্লিস, কেন বিয়ে করলেন না। কেউ কি আপনাকে আঘাত দিয়েছে যে সেই আঘাত থেকে আর উঠতে পারলেন না আর......”

গুমরে ওঠেন দিলিপ বাবু, “না... কেউ আমাকে আঘাত করেনি। না ও আমাকে আঘাত করতেই পারে না।”

দেবায়ন দিলিপ বাবুর হাতে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, “নাম কি তাঁর?”

দিলিপ বাবু মদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে ছলছল চোখে দেবায়ন আর অনুপমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন আমার অতীত জানতে চাইছো তোমরা?”

অনুপমা ওর হাতের উষ্ণ পরশ ছুঁইয়ে বলে, “আপনার ওই চোখের পেছনে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে। আপনি এতো মদ খান কাউকে ভুলে থাকার জন্য। কেন নিজেকে এতো কষ্ট দিচ্ছেন? একবার কাউকে মনের কথা খুলে বলুন দেখবেন মন অনেক হাল্কা হয়ে যাবে।”

এক ঢোঁকে হাতের গ্লাস শেষ করে নিচের ঠোঁট চেপে ধরে দিলিপ বাবু। হাত কাঁপতে শুরু করে দেয়, চোখের কোল একটু ছলকে ওঠে। দেবায়ন ওর হাতের চাপ বাড়িয়ে দিলিপ বাবুর মনে বল যোগায়।

দিলিপ বাবু বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে পকেট থেকে পার্স বের করে একটা সুন্দরী মেয়ের ছবি অনুপমার হাতে দেয়। ছবিটা দেখিয়ে বলেন, “কণিকা আমার প্রথম আর অন্তিম ভালোবাসা... ” কিছুক্ষণ চুপ থাকেন, কণ্ঠস্বর কেঁপে ওঠে, “কণিকার সাথে দেখা হয়েছিল কলেজে পড়ার সময়ে। বড় মিষ্টি মেয়ে, ওর চোখ দুটো আমাকে বড় টানতো। কিন্তু ওরা নিচু জাতের ছিল মানে সিডুল কাস্ট আর আমরা ব্রাহ্মণ আর বিশাল বড়োলোক। কণিকার বাবা সামান্য সরকারি কেরানি আর আমার বাবা বিশাল ব্যাবসাদার। এই টাকা পয়সা প্রতিপত্তি আমাদের প্রেমের মাঝে চলে আসে। আমি বাবার সামনে দাঁড়াতে পারলাম না। আমার বাবা কণিকার বাড়িতে গিয়ে ওর বাবাকে যাচ্ছেতাই বলে অপমান করে আর তারপরে কনিকারা এই শহর ছেড়ে চলে যায়। তারপরে আমি প্রতিজ্ঞা করি যে আমি কোনদিন বিয়ে করবো না। বাবা মারা যাওয়ার পরে আমি কণিকাকে খুঁজতে বের হয়েছিলাম। খুঁজে খুঁজে হায়দ্রাবাদ পৌঁছে জানতে পারলাম যে কণিকার বিয়ে হয়ে গেছে। নিজেকে ধিক্কার দিলাম যে সময় মতন নিজের প্রেমকে বাঁচাতে পারিনি বলে। তাই আর বিয়ে করা হলো না, এই বুকে আর কাউকে রাখতে নারাজ, মিস সেন। তাই নিজেকে সবসময়ে মদে ডুবিয়ে রাখি।”

অনুপমা দিলিপ বাবুর হাত ধরে বলে, “আপনি আমাদের সাথে ঘুরতে যাবেন?”

অনুপমার কথা শুনে চমকে ওঠে দিলিপ বাবু, একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে তাকায়, “কি বলছো তুমি? কোথায় বেড়াতে যাবো?”

দেবায়নঃ “মুসৌরি বেড়াতে যাবেন আমাদের সাথে?”

দিলিপ বাবু প্রশ্ন করে, “এতো জায়গা থাকতে হটাত মুসৌরি কেন?”

দেবায়ন হেসে জবাব দেয়, “খুব সুন্দর পাহাড়ে ঘেরা জায়গা তাই। এই দুই বছর আগে আমরা মুসৌরি বেড়াতে গিয়েছিলাম।”

দিলিপ বাবুর মনে সন্দেহ হয় তাও হেসে জিজ্ঞেস করেন, “তোমরা ঠিক কি চাও বলতো? তোমাদের ঠিক সুবিধার বলে মনে হচ্ছে না। মুসৌরি নিয়ে গিয়ে কি আমাকে মেরে ফেলতে চাও?”

অনুপমা মিষ্টি হেসে জবাব দেয়, “একবার আমাদের বিশ্বাস করে দেখুন।”

দিলিপ বাবু প্রশ্ন করেন, “ঠিক আছে, কবে যেতে হবে মুসৌরি?”

দেবায়ন উত্তরে বলে, “কালকেই আমরা বেরিয়ে পড়ি।”
 
ঠিক হয় যে আগামী কাল দিল্লী হয়ে মুসৌরির পৌঁছাবে। দিলিপ বাবু সঙ্গে সঙ্গে ওদের টুর অপারেটরকে বলে প্লেনের টিকিট, দিল্লী থেকে মুসৌরি যাবার জন্য গাড়ি, হোটেল বুকিং ইত্যাদি সেরে ফেলেন। সবকিছু হয়ে যাবার পরে রাতে হোটেলে ফিরে দেবায়ন সংশয় ব্যক্ত করে। অনুপমা বলে মুসৌরি গিয়ে যা হবার দেখা যাবে, দেবায়নের সংশয় অবান্তর নয় সেটা ভালো ভাবেই জানে। কস্তূরী ওদের কণিকার স্কুলের ফোন নাম্বার বাড়ির ঠিকানা ইত্যাদি দিয়েছিল।

পরেরদিন ভোরের প্লেন ধরে দিল্লী পৌঁছে যান তিনজনে। দিল্লী থেকে গাড়ি করে মুসৌরি পৌঁছাতে পৌঁছাতে ওদের রাত হয়ে যায়। সারা রাস্তা দিলিপ বাবু বেশ চিন্তিত থাকেন আর বারেবারে দেবায়নকে প্রশ্ন করে হটাত এই ঘুরতে আসার জন্য। দেবায়ন ওকে জানায় যে পরের দিন ওরা মুসৌরি ঘুরে বেড়াবে তারপরের দিন ওরা ধনোল্টি বেড়াতে যাবে। বেড়াবার প্ল্যান শুনেও আস্বস্ত হতে পারেন না দিলিপ বাবু।

পাহাড় বরাবর অনুপমাকে টেনেছে, দেশে বিদেশের নানা পাহাড়ি জায়গায় বাবা মায়ের সাথে ঘুরে বেড়িয়েছে কিন্তু এই বারের ঘুরতে আসা ঠিক অন্যবারের মতন নয়। এই বারে ওরা এসেছে দুই পুরানো প্রেমিক প্রেমিকাকে মেলানোর জন্য যদিও তাঁর পেছনে ওদের অভিসন্ধি অন্য কিছু পাওয়ার। দেবায়ন একটু বিরক্ত হয় এতকিছু করার পরেও যদি হোটেলের মালিকানা স্বত্ত্ব হাতে না আসে তাহলে কি হবে, কিন্তু অনুপমার হাসিমুখ দেখে চুপ করে যায়। অনুপমার মাথায় ওই হোটেল, ব্যাবসা টাকা পয়সা নেই, ওর একটাই লক্ষ্য কণিকা আর দিলিপ বাবুর মিলন।

সকালে উঠেই অনুপমা আগে কণিকার স্কুলে ফোন করে জেনে নেয় ওদের ছুটি কখন হয়। সেই মতন সারাদিন মুসৌরি ঘুরে বিকেলের দিকে গাড়ি নিয়ে ঠিক স্কুলের সামনে পৌঁছে যায়। দিলিপ বাবু অবাক হয়ে ওদের প্রশ্ন করে যে ওরা কেন ওকে স্কুলে এনেছে। স্কুলের ছুটি হতেই অনুপমার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে যায়। চোখ বন্ধ করে একবার কণিকার ছবি মনে এঁকে নিতে চেষ্টা করে। দিলিপ বাবুর কাছে দেখা ছবির সাথে কস্তূরী দেওয়া ছবির মুখের আদলে মিল থাকলেও কণিকা অনেক বদলে গেছে। দেবায়ন বারেবারে ঘড়ির দিকে তাকায় আর স্কুলের গেটের দিকে তাকিয়ে থাকে।

কিছু পরে কণিকা স্কুলের গেট থেকে বেরিয়ে আসে। দেবায়ন দিলিপ বাবুর কাঁধে হাত রেখে স্কুলের গেটের দিকে তাকাতে বলে। স্কুলের গেটের দিকে তাকাতেই দিলিপ বাবু থমকে যান, কাকে দেখছে, নিজেকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারে না। ঋজু কঠিন স্বভাবের মানুষটা শেষ পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। অবাক হয়ে দেবায়নের দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে।

ওই দিকে অনুপমা কণিকার দিকে এগিয়ে যায়। অনুপমা কণিকার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আপনি নিশ্চয় মিস কণিকা?”

অনুপমাকে দেখে কণিকা চিনতে পারে না। কণিকা মাথা নাড়িয়ে “হ্যাঁ” বলে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে অনুপমার দিকে। অনুপমা ওকে আঙুল দিয়ে দুরে দাঁড়িয়ে থাকা দিলিপ বাবু আর দেবায়নের দিকে দেখায়। পনেরো বছর পরে দিলিপ বাবুকে দেখে কণিকা থমকে যায়। হটাত মনে হয় যেন স্বপ্ন দেখছে, মাথা ধরে টলে পড়ে কিন্তু তাঁর আগেই দিলিপ বাবু দৌড়ে এসে কনিকাকে ধরে ফেলে। কণিকা জল ভরা চোখ মেলে নিস্পলক তাকিয়ে থাকে দিলিপ বাবুর মুখের দিকে। সময় যেন ওদের চারপাশে দাঁড়িয়ে যায়। কণিকা নিথর হয়ে দিলিপ বাবুর মুখের দিকে চেয়ে থাকে অনেকক্ষণ।

অনেকক্ষণ না অল্পক্ষণ, কণিকা ধিরে ধিরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দিলিপ বাবুকে প্রশ্ন করে, “তুমি আমাকে খুঁজে পেলে কি করে?”

দিলিপ বাবুর কণ্ঠ স্বর জড়িয়ে আসে, “কেমন আছো তুমি, কণিকা?”

নিজের নাম শুনে, কণিকা চোখ বন্ধ করে নেয়। অনুপমার ওর মুখের দিকে চেয়ে বুঝতে পারে যে এতদিন পরে দিলিপ বাবুর কণ্ঠ স্বর শুনে নিজেকে সামলাতে পারছেন না।

কণিকা ধরা গলায় উত্তর দেয়, “ভালো আছি।”

এতদিন পরে পুরানো প্রেমিকাকে দেখে দিলিপ বাবু কি বলবেন কিছু ভেবে পান না। কিছু পরে নিজেকে সামলে নিয়ে কণিকা, অনুপমাদের পরিচয় জানতে চায়। দিলিপ বাবু ওদের পরিচয় দেন, কিন্তু কি ভাবে অনুপমা ওদের খুঁজে পেয়েছে সেটা দিলিপ বাবুর জানা নেই। অনুপমা আর দেবায়ন, ওদের অদুরে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ দিলিপ বাবু আর কণিকা নিজেদের মধ্যে কিছু কথাবার্তা বলে তারপরে কণিকা ওদের সবাইকে বাড়িতে আসতে নিমন্ত্রন জানায়। কণিকার পুত্র প্রেমজিতের স্কুলের ছুটি আগেই হয়ে গেছিল তাই ওরা পৌঁছানোর আগেই সে বাড়িতে ছিল। বাড়ি পৌঁছে কণিকা, বাকিদের সাথে প্রেমজিতের পরিচয় করিয়ে দেয়। প্রেমজিত, মুসৌরির এক স্কুলে পড়ে, এখানেই বড় হয়েছে।

কণিকার বাড়ি একটা বাগানে ঘেরা এক তলা বাড়ি, দুটো ঘর একটা বসার ঘর, ছোটো হলেও খুব সুন্দর। সামনে বাগান, পেছনে সবুজে ঢাকা পাহাড় দেখে অনুপমা দেবায়নকে নিজের মনের ইচ্ছে ব্যক্ত করে জানায় যে ভবিষ্যতে এমন একটা বাড়ি চাই ওর। সেই শুনে দেবায়ন একটু হেসে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে ডালহৌসি অথবা সোলাং উপত্যকায় যেখানে ওদের রিসোর্ট আছে সেখানে ইচ্ছে হলেই থেকে আসতে পারে।

রাতের খাওয়ার পরে দিলিপ বাবু জানান যে কনিকাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসেছে। কণিকা জানিয়ে দেন যে এই বয়সে দ্বিতীয় বার বিয়ে করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় আর ছেলেও অনেক বড় হয়ে গেছে। বিগত দিনের কথা জিজ্ঞেস করাতে জানা যায় যে, দিলিপ বাবুর পিতা কণিকার বাবাকে অপমান করে আর তারপরে তারা সবাই ব্যাঙ্গালোর ছেড়ে অন্য এক শহরে চলে যায়। সেখানে কলেজের পড়াশুনা শেষ করে কণিকা আর তারপরেই তার বিয়ে হয়ে যায়। তাঁর স্বামী সেই সময়ে দেরাদুনে ন্যাশানাল ডিফেন্স একাডেমিতে চাকরি করতেন। বিয়ের ছয় বছর পরেই এক গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়। তারপরে কণিকা আর ব্যাঙ্গালোর ফিরে যায়নি, মুসৌরিতে একটা মিশনারি স্কুলে চাকরি নিয়ে এখানেই থেকে গেছে।

অনুপমা আর দেবায়ন কনিকাকে অনেক বুঝাতে চেষ্টা করে যে এক ধাক্কায় কোনদিন কারুর জীবন শেষ হয়ে যায় না। কণিকা বলেন যে তাঁর ছেলে এখন ক্লাস ফোরে পড়ে, সে যদি প্রশ্ন করে এই নতুন ভদ্রলোক কে, তাহলে কি জবাব দেবে কণিকা? এতদিন পরে হটাত করে এসে হাত চাইলেই হয় না। ছেলের ইচ্ছে তাঁর চাহিদা সেটাই বর্তমানে কণিকার কাছে সব থেকে প্রধান তাই কণিকা মুসৌরি ছেড়ে যেতে নারাজ।

অনুপমা আর দেবায়ন, দিলিপ বাবুকে বুঝিয়ে বলে যে তাকে আরও বেশ কিছুদিন কণিকার সাথে মুসৌরিতে থেকে যেতে আর প্রেমজিতের সাথে মেলামেশা করতে। দিলিপ বাবুও কণিকার মনের অবস্থা অনুধাবন করেন। দুই দিনে ছোটো প্রেমজিতের চোখে অনেক প্রশ্ন, কে এই ভদ্রলোক, একে আগে কোনদিন দেখেনি, কেন ওর মায়ের সাথে এতো হৃদ্যতা ইত্যাদি। ওর চোখের চাহনি দেখে দিলিপ বাবু থেকে যেতে রাজি হয়ে যান আর সেই সাথে কণিকার মন গলে যায়। কনিকাও চাইছিল যাতে দিলিপ বাবু কয়েক দিন ওদের সাথে থাকুক, প্রেমজিতের সাথে মেলামেশা করলে পরস্পরকে জানতে বুঝতে সুবিধে হবে। সময় মতন কণিকা পুত্রকে বুঝিয়ে উঠতে পারবেন তাঁর মনের ইচ্ছে।

এই দুই দিনে অনুপমা আর দেবায়ন হোটেলেই ছিল কিন্তু দিলিপ বাবু প্রথম দিন হোটেলে থাকার পরে কণিকার বাড়িতে থেকে গিয়েছিল। দেবায়ন যে কাজে এসেছিল সেটা আর তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব হলো না, তাই সেই বিষয়ে একটু চিন্তিত কিন্তু অনুপমা একপ্রকার খুশি। পনেরো বছর পরে দিলিপ বাবু তাঁর হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছে সেটা দেখেই অনুপমা খুশি।

ফিরে আসার আগের দিন রাতে কণিকার বাড়িতে রাতের খাবার সময়ে সবাই একসাথে বসে।

কণিকা অনুপমাকে প্রশ্ন করে, “তোমরা এতো খবর কোথা থেকে পেলে সত্যি বলতো?”

অনুপমা কথা ঘুরিয়ে, কনিকাকে শেষ অনুরোধ করে, “আপনি দিলিপ বাবুর সাথে ফিরে চলুন ব্যাঙ্গালোর।”

কণিকা একবার একটু দুরে বসা প্রেমজিতের দিকে দেখে আর একবার দিলিপ বাবুর মুখের দিকে তাকায়। শেষ পর্যন্ত হেসে বলেন, “দিলিপ যখন এতো কষ্ট করে আমাকে খুঁজে বের করেছে তাহলে না ফিরে আর স্বস্তি নেই। তবে আমার কিছু সময়ের দরকার, মানে প্রেমজিতকে বুঝিয়ে রাজি করানো। বর্তমানে ওকে বড় করা ওকে মানুষ করা আমার প্রধান উদ্দেশ্য।”

দিলিপ বাবু কণিকার হাতের ওপরে হাত রেখে আস্বস্ত কণ্ঠে বলেন, “এবারে আর কোন উদ্দেশ্য তোমার একার হতে পারে না কণিকা। একবার যখন রাজি হয়েছো, তাহলে আমরা দুইজনে মিলে মিশে প্রেমজিতকে বড় করবো। আমি জানি আমাদের দুইজনের পক্ষেই একটু বেশি কষ্টকর, তাই আমি কিছুদিনের জন্য এখানে থেকে যাবো তোমাদের সাথে। প্রেমজিতের সাথে মেলামেশা না করলে ও আমাকে কি ভাবে আপন করে নেবে?”

স্বস্তির শ্বাস নেয় অনুপমা। খাওয়া শেষে দিলিপ বাবু দেবায়নের হাত চেপে ধরে বলেন, “তোমাদের এই উপকার কি ভাবে পূরণ করবো আমি ভেবে পাচ্ছি না।” অনুপমা চোখ টিপে ইশারা করে দেবায়নকে। অনুপমার সেই চোরা ইশারা দিলিপ বাবু দেখে ফেলে হেসে দেন। দিলিপ বাবু বলেন, “তোমরা সত্যি অনেক দুষ্টু, অনেক শয়তান। প্রথম যেদিন এসেছিলে সেদিন বুঝে গিয়েছিলাম যে তোমরা এমনি এমনি আসোনি। কিন্তু তারপরে এই কয়দিনে যা ঘটিয়ে দিলে আমার জীবনে, আমার সব অঙ্ক ভুল হয়ে গেলো। আমি জানি তোমরা কি চাও। চিন্তা নেই মিস্টার বসাক, তুমি আমাকে যা দিয়েছো তার বদলে আমার সব কিছু তোমার পায়ে লুটিয়ে দিলেও এই ঋণ আমি শোধ করতে পারবো না। আমি ব্যাঙ্গালোর ফিরি তারপরে তোমাদের একদিন ডাকবো।” অনুপমার মাথায় হাত রেখে বলে, “আমি তোমাকে আশীর্বাদ করি তুমি দীর্ঘজীবী হও, মানুষের মন জয় করো। টাকা পয়সা রোজগারের শত কোটি পন্থা আছে কিন্তু মানুষের মন জয় করার একটাই পন্থা, সেটা ভালোবাসা। কোনদিন কোন রকমের কোন সমস্যায় পড়লে আমাকে একবার খবর দিও। আমি তোমাদের পাশে এসে দাঁড়াবো, আমার এই প্রান তোমাদের কাছে ঋণী।”

এরপরে অনুপমা আর দেবায়ন কোলকাতা ফিরে আসে পালা, তিলোত্তমা কোলকাতার বুকে।

***** পঞ্চ বিংশ পর্ব সমাপ্ত *****
 
ষষ্ঠ বিংশ পর্ব।

পাহাড় বরাবর অনুপমাকে খুব টানে। বাবা, মা ভাইয়ের সাথে আল্পস থেকে হিমালয় নানা পাহাড়ি জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছে। শেষের বার দেবায়নের সাথে এই মুসৌরি এসে অন্য এক অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এইবারের অভিজ্ঞতা বিগত সব অভিজ্ঞতা ছাপিয়ে গেছে। আঁকা বাঁকা পথ ধরে নেমে চলেছে গাড়ি, ধিরে ধিরে আবহাওয়া গরম হতে শুরু করেছে। গাড়ি এসি কিন্তু অনুপমা ইচ্ছে করেই এসি না চালিয়ে শেষ বারের মতন প্রকৃতির ঠাণ্ডা হাওয়া শরীরে মাখিয়ে নিতে চেষ্টা করে। চুপচাপ দেবায়নের কাঁধে মাথা রেখে ওর হাত নিয়ে খেলা করে আর বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওর চিন্তার তারে কিছুই বাঁধা নেই।

এই কয়দিন মুসৌরির নামকরা রিসোর্টে ছিল ওরা। মুসৌরি থেকে গাড়ি ভাড়া করে সোজা দিল্লী, দিল্লীতে একরাত কাটিয়ে তারপরের দিনের সকালের ফ্লাইটে কোলকাতা। অনুপমা রাস্তার খাবার একদম খেতে পারে না, তাই কণিকা ওদের জন্য রান্না করে খাবার প্যাক করে দিয়েছিল। ফিরে আসার দিন সকালে আরেকবার গাড়ি নিয়ে কণিকা আর দিলিপ বাবুর সাথে দেখা করতে যায়। কণিকা, দিলিপ বাবু আর প্রেমজিত, এই তিনজনের হাসি হাসি মুখ দেখে অনুপমার চোখের কোণে একচিলতে জল চলে আসে।
মুসৌরিতে কণিকা আর দিলিপ বাবুকে দেখার পরে পাশের ছেলেটাকে একবিন্দুর জন্য চোখের আড়াল করতে নারাজ। কে জানে এই জীবন পথের কোন বাঁকে কি লুকিয়ে আছে। বড় ভালোবাসে দেবায়নকে আর জানে যে ওর দেবায়ন ওকে ছেড়ে যাবে না কিন্তু ভবিষ্যতের কথা কি আর বলা যায়।


দেবায়ন ওর মনের কথা বুঝতে পেরে ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে তোর, এতো চুপচাপ কেন বসে আছিস?”

দেবায়নের বাজুর ওপরে নাক ঘষে বলে মিহি কণ্ঠে বলে, “কিছু না, এমনি বসে আছি। তোর কোলে মাথা রাখতে ভারী ভালো লাগছে তাই চুপচাপ বসে আছি।”

দেবায়ন ওর কপালে গালে কয়েকটা চুমু খেয়ে বলে, “সত্যি বলতে কি জানিস, আমি একা যদি আসতাম তাহলে হয়তো এতো হৃদয় জিতে ফিরতাম না। কিছু না কিছু করে হোক হোটেলগুলো কিনতাম কিন্তু তোর জন্য আজকে যে মানুষগুলোর ভালোবাসা আর আশীর্বাদ নিয়ে বাড়ি ফিরছি সেইগুলো শুধু আমার পুচ্চি সোনার পক্ষেই সম্ভব।”

অনুপমা হেসে ওর গালে গাল ঘষে বলে বলে, “পাগল ছেলে, একহাতে কোনদিন তালি বাজে না। তুই আমার পরিপূরক তাই আমি সম্পূর্ণ।” গালে গাল ঘষতে গিয়ে অনুভব করে যে দেবায়ন দাড়ি কাটেনি তাই কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “দাড়ি কাটতে পারিস না? গালের চামড়া উঠে গেল আমার।”

দেবায়ন ইচ্ছে করেই ওর গালে জোর করে গাল ঘষে বলে, “নে নে আরেকটু নে। তোর নরম গাল যা মাখন মনে হচ্ছে গালের ওপরে লেপে গেছে।” দুইহাতে ওকে জড়িয়ে পিষে ধরে বলে, “বড় ইচ্ছে করে তোকে আলুসিদ্ধের মতন চটকে মেখে পকেটে পুরে রেখে দেই।”

অনুপমা নাক কুঁচকে মিচকি হেসে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ জানা আছে আর আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না। তোর প্রেম শুধুমাত্র মুখের, কর্মে লবডঙ্কা। তাইতো আমাকে না নিয়ে আসার প্ল্যান ছিল তোর। আমি জেদ না করলে একাই আসতিস তাই না? আর হয়তো বা কস্তূরীর সাথে এমন কি মেহেকের সাথে রাত কাটিয়ে দিতিস।”

দেবায়ন হেসে ফেলে, “উম্মম্মম কস্তূরীর কথা জানি না তবে মেহেকের কথা মনে করিয়ে দিয়ে আমার প্যান্ট ছোটো করে দিলি। শেষ কবে মেহেকের ফোন এসেছে? ঠিকভাবে মান্ডি পৌঁছে গেছে?”

অনুপমা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে মেহেকের ফোন এসেছে, মেহেক ঠিকভাবে মান্ডিতে ওর বান্ধবীর বাড়িতে পৌঁছে গেছে। মেহেকের সাথে শুভমের কথাবার্তা হয়ে গেছে। মাস তিনেক পরে শুভম দেশে ফিরবে আর তারপরে ওরা সবাই দেশ ছেড়ে চলে যাবে। মেহেকের কথা শুনতে শুনতে দেবায়নের চোখ চকচক করে ওঠে আর অনুপমা কপট অভিমান দেখিয়ে বলে মেহেক যাবার আগে একবার ওদের দেখা করার জন্য ডেকেছে।

অনুপমা ভাবতে বসে যে সূর্য মনিদিপার কথা অথবা ধৃতিমান নিবেদিতার কথা দেবায়নকে জানাবে কি না। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত সূর্য আর মনিদিপার কথা দিয়ে শুরু করে। অনুপমা জানায় যে মনিদিপা মামনিকে ফোন করে ক্ষমা চেয়েছিল, সেই কথা শুনে অনুপমা প্রথমে রেগে যায় আর জলপাইগুড়ি যায়। মনিদিপা ফোন করেছিল সেটা শুনেই রেগে ওঠে দেবায়ন, পারলে এখুনি জলপাইগুড়ি গিয়ে ওদের খুন করে। অনুপমা ওকে শান্ত করে, মনিদিপার শারীরিক অবস্থা আর ওদের আর্থিক দুরাবস্থার কথা জানায়। অনুপমার মুখে সব শুনে শেষ পর্যন্ত দেবায়ন ক্ষান্ত হয়। দেবায়ন একবার সূর্য আর মনিদিপার সাথে দেখা করার ইচ্ছে ব্যক্ত করে কিন্তু অনুপমা ওকে চেনে তাই বারেবারে বলে দেয় যে দেখা করলেও ওদের সাথে আর যেন কোন দ্বন্দে না যায়। দেবায়ন হাসি মুখে জানায় যে অনুপমার আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা ছাড়া ওর কাছে আর কোন গতি নেই।

ধৃতিমান আর নিবেদিতার কথা জানাতে দেবায়ন অনেকক্ষণ চুপ করে বসে অনুপমার মুখের দিকে চেয়ে থাকে। ওর মুখ দেখে অনুপমা ভাবনায় পড়ে যায়, এই নির্বাক চেহারা এক বিশাল ঝড়ের পূর্বাভাস। দেবায়ন জানায় যে নিবেদিতার ওপরে আলাদা নজর রাখবে আর ধৃতিমানের আসল উদ্দেশ্য জানতে চেষ্টা করবে।

এরপরে অফিসের কথা, জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের কথা, কবে থেকে এই প্রোজেক্টে টাকা আসতে শুরু করবে ইত্যাদি। দেবায়নের কাছে অনুপমা জানতে পারে যে দুটো প্রোজেক্ট প্রফিট শেয়ারিং হিসাবে। যেদিন ওদের সফটওয়্যার ওই এয়ারলাইন্স কোম্পানিতে বসানো হবে তাঁর পরের দিন থেকেই ওদের একাউন্টে টাকা আসতে শুরু করবে।

বিকেলের মধ্যে দিল্লী পৌঁছে যায়। রাতে অনুপমা বাবাকে ফোনে সব জানিয়ে দেয়। এক রাত দিল্লী কাটিয়ে ওরা তার পরের দিন কোলকাতা ফিরে এলো। মিস্টার সেন মেয়ের আর দেবায়নের কাজে ভারী খুশি। দেবায়ন আর অনুপমার মুখে সম্পূর্ণ বিবরন শুনে অবাক হয়ে যান। হেসে বলেন যে কন্যে উপযুক্ত পাত্র খুঁজেছে নিজের জন্য। পারমিতা প্রথমে একটু সংশয় ব্যক্ত করলেও সব কিছু শুনে আর বুঝে ওঠার পরে কিছু বলে না। কৃতজ্ঞ চাহনি নিয়ে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে, দেবায়ন তার কথা রেখেছে।

সেদিন রাতে পায়েলকে দেখে বড় খুশি। ওর পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে, পায়েল অধীর অপেক্ষায় ছিল কখন অনুপমা বাড়ি ফিরবে আর ওর সাথে মন খুলে গল্প করবে। সারা রাত দুইজনে চোখের পাতা এক করেনা, পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন, পায়েলের সাথে অনুপমার কত সমকামী খেলা, অনুপমার জন্মদিনের কথা, যেখানে সবাই সবার সাথে সঙ্গমে মত্ত হয়েছিল। অঙ্কনের কথা বলতেই দুইজনে চুপ করে যায়। ভাইয়ের কথা শুনতে অনুপমার একটু লজ্জা লাগে আর পায়েল মুখ ফুটে ঠিক বলে উঠতে পারে না অঙ্কনের কথা। তাও ওদের প্রেমের কথা আর সেই সাথে এই কয়দিন কি ভাবে কাটিয়েছে সেই সব গল্প করে।

পায়েল অফিসে যাওয়ার জন্য বায়না ধরে। অনুপমা জানায় যে মায়ের সাথে আর দেবায়নের সাথে কথা বলার পরেই পায়েলকে অফিসে যেতে দিতে পারে। দেবায়ন মানা করে না, অনেকদিন পায়েলের দেখা নেই। পুরানো দুষ্টু মিষ্টি পায়েল ফিরে এসেছে শুনেই দেবায়নের চোখ চকচক করে ওঠে আর অনুপমা ওকে ধমকে মেরে চুপ করিয়ে দেয়। মাকে জিজ্ঞেস করলে, পারমিতাও মেয়েকে বলে যে বাড়িতে থেকে থেকে পায়েলের একঘেয়ে লেগে গেছে তাই ওকে অফিসে জয়েন করিয়ে নিতে।

পরীক্ষার পরে প্রথম যেদিন পায়েল অফিসে জয়েন করবে সেদিন পায়েলকে বেশ আধুনিকা সাজে সাজায়। পায়েলের ইচ্ছে ছিল সাধারন একটা সালোয়ার কামিজ পরে যাওয়ার কিন্তু অনুপমার ইচ্ছেতে ওকে একটা সাদা চাপা জিন্স আর টকটকে লাল রঙের শার্ট পরতে হয়। ঠোঁটে গাড় বাদামি রঙ, চোখের কোলে কাজল, মেখে পায়েল যেন সারা কোলকাতা মাতিয়ে দিতে বেরিয়েছে।

অফিসে পৌঁছানো মাত্রই দেবায়ন আর রূপক ওকে দেখে পাগল। সারাদিন পায়েলকে নিয়েই দেবায়ন আর রূপক মেতে থাকে। ওদের এই আতিশয্যায় পায়েল হাঁফিয়ে ওঠে। অনুপমা চেয়েও ওকে দেবায়ন আর রূপকের হাত থেকে রেহাই দিতে পারে না। একবার পায়েলকে দেবায়ন নিজের কেবিনে বসিয়ে রাখে তারপরে লাঞ্চের পরে রূপক ওকে নিজের কেবিনে বসিয়ে রাখে।

অনুপমা পায়েলকে মনীষার সাথে কাজে লাগিয়ে দেয়। ওকে মনীষার সাথে এইচ আর এডমিনিস্ট্রেসান শিখতে বলে। রোজ লাঞ্চের সময়ে সব বন্ধুরা একসাথে মিলেই লাঞ্চ খায়। কোনদিন শ্রেয়ার কেবিনে কোনদিন অনুপমার কেবিনে দেবায়ন অথবা রূপকের কেবিন একেবারে মাছের বাজারের মতন, এদিকে ল্যাপটপ, ওদিকে কাগজ পত্র, একদিকে প্রিন্টার একদিকে আবার প্রেমিকার ফটো টেবিলে থাকতেই হবে। এই ছেলে দুটোর যেন নিজের প্রেম জাহির করা একটা স্বভাব। লাঞ্চের সময়ে বেশ হসি ঠাট্টা হয়। বিশেষ করে দেবায়ন আর রূপক মাঝে মাঝে পায়েলের পেছনে পড়ে যায়, না হলে মনীষা আছেই। অফিসে মেয়েদের সংখ্যা কম নয়, মাঝে মাঝে কে কি পোশাক পরে এসেছে অথবা কার পোশাকের ভেতর থেকে কোন অন্তর্বাস দেখা যাচ্ছে সেই সব নিয়ে গভীর আলোচনা শুরু হয়ে যায় রূপক আর দেবায়নের মাঝে। অনুপমা তিতিবিরক্ত হয়ে শ্রেয়া আর পায়েলকে নিয়ে মাঝে মাঝেই ওদের ছেড়ে উঠে আসে। ধুত্তোর ছেলে দুটো কোম্পানি চালাবে না সেই কলেজের মতন এর তার ব্রা প্যান্টির রঙ দেখে বেড়াবে।
 
এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট সমাপ্তির দিকে আর জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের কাজ দ্রুত গতিতে সমাপনের দিকে। শ্রেয়ার তত্বাবধানে কাজ খুব সুস্থভাবে এগিয়ে চলছে। একদিকে দুই কোম্পানির আই টি সাথে আলোচনা করা, অন্যদিকে সুপর্ণা ম্যাডামের সাথে বসে টেকনিকাল ব্যাপারে আলোচনা করা, অতি নিপুণ হস্তে কাজ করে চলেছে। কাজের বিষয়ে শ্রেয়ার কোন ফাঁকি নেই কিন্তু সেই পুরানো শ্রেয়া হারিয়ে যাওয়াতে অনুপমার বড় ব্যাথা লাগে। লাঞ্চের সময়ে মাঝে মাঝে শ্রেয়া হারিয়ে যায় নিজের কাজের মধ্যে। ঠিক কি কাজে হারিয়ে যায় না ওর মাথায় অন্য কিছু ঘুরছে সেটা বুজে উঠতে পারে না অনুপমা। ওদের সামনে রূপকের সাথে ভালোই ব্যবহার করে, কিন্তু অনুপমার শ্যেন দৃষ্টিতে বুঝতে পারে যে শ্রেয়া আর রূপকের মাঝে আগের যে বাঁধন ছিল সেটা অনেক কমে এসেছে। আজকাল রূপক কাজের চাপে দেরি করে বাড়ি ফেরে, আগে শ্রেয়া ওর জন্য অপেক্ষা করতো কিন্তু ইদানিং শ্রেয়া আর অপেক্ষা করে না। ট্যাক্সি ধরে না হয় মনীষা আর শান্তনুর সাথে বাড়ি ফিরে যায়। দেবায়ন আর অনুপমার সাথে সেই আগের হৃদ্যতা যেন ধিরে ধিরে কমে এসেছে। কারন জিজ্ঞেস করলেই এড়িয়ে যায়, হেসে জানায় যে শুধু কাজের চাপে ব্যস্ত থাকে। শত চেষ্টা করেও শ্রেয়ার পেট থেকে ওরা কেউ কোন কথা বের করতে পারে না। তবে অনুপমা একটা আঁচ করতে পেরেছিল যে হয়তো শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীল মিলে কিছু একটা অভিসন্ধি ফাঁদছে।

এদিকে বর্ষা কাল এসে যায়, কিছুদিনের মধ্যে এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট ডিপ্লয় করতে আবার শ্রেয়া জার্মানি যাবে এবারে সাথে কয়েক জন টেকনিকাল লোকজন যাবে। শ্রেয়া এই প্রোজেক্ট ডেলিভারি আর জার্মানি যাওয়ার জন্য বেশ ব্যস্ত।

সকাল থেকেই ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি, বিশেষ কোন কাজ না থাকায় কিছুতেই একা মন বসাতে পারে না। একবার পায়েলকে ফোন করেছিল কিন্তু সে মনীষার সাথে ব্যস্ত। দেবায়নের ফোন কয়েকবার বেজে গেল উঠাল না দেখে চিন্তায় পড়ে গেল। এই দুপুরে কি হলো ছেলেটার। দেবায়নের কেবিনে ঢুকে দেখে যে কোন টেলিফোন বিল নিয়ে সে ব্যস্ত। জিজ্ঞেস করাতে দেবায়ন বলে যে এইগুলো শ্রেয়ার গত চার মাসের মোবাইল বিল আর তার কল রেকর্ডস।

একটা চেয়ার টেনে পাশে বসে বিল দেখতে দেখতে প্রশ্ন করে করে, “কিছু পেলি নাকি?”

দেবায়ন উত্তরে মাথা নাড়িয়ে বলে, “না রে ঠিক আঁচ করতে পারছি না। বড় ঘাঘু মাল দুইজনে।”

অনুপমাঃ “কেন? কি পেয়েছিস?”

দেবায়ন ওকে বিলগুলো হাতে ধরিয়ে বলে, “দ্যাখ একবার। প্রায় প্রত্যেক দিন রাতে ইন্দ্রনীল আর শ্রেয়ার কথা হয়, এক নয় শ্রেয়া কল করে অথবা ইন্দ্রনীল কল করে। কিন্তু কোন কল দশ থেকে বারো সেকেন্ডের বেশি নয়। যদি ওদের মধ্যে কথাবার্তা, আলাপ আলোচনা, প্রেম প্রীতি চলে তাহলে এই কলগুলো নিশ্চয় দশ বারো সেকেন্ডের হবে না, তার চেয়ে বেশি হবে।”

অনুপমা খানিক মাথা চুলকে বলে, “ওরে পাগল, এখন ইন্টারনেটের যুগ। ওরা ফোনে কেন কথা বলতে যাবে, স্কাইপে আছে সোজাসুজি ভিডিও চ্যাট করতে পারে ওরা।”

দেবায়নঃ “হুম, সেটা পারে। তুই কি শ্রেয়াকে কিছু জিজ্ঞেস করেছিস এই বিষয়ে?”

অনুপমাঃ “আমি আর করিনি তবে পায়েল কথা বলতে চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছুই জানতে পারেনি। এখন সত্যি মনে হচ্ছে ওকে কোম্পানিতে না নিলেই হয়তো ভালো হতো। এতো গভীর জলের মাছ যে হাতের নাগালেই আসছে না। তবে এইটুকু বলতে পারি যে শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীল মিলে কোন অভিসন্ধি আঁটছে। কি করা যায় বলতো?”

দেবায়ন কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে, “বড় চিন্তায় পড়ে গেলাম। শ্রেয়াকে নাড়ানো মহা মুশকিল। ওকে নাড়াতে সাহস পাচ্ছিনা কারন ওকে নাড়ালেই রূপক হয়তো ক্ষেপে যেতে পারে। রূপক এই কোম্পানির রুটি জোগাড় করে, দৈনন্দিন টাকা কামায় রূপকের এই ছোটো ছোটো প্রোজেক্টগুলো। আবার ওইদিকে ইন্দ্রনীলকে ঘাঁটানো বিপদজনক। অনিমেশ আঙ্কেলের সাথে মিস্টার হেরজোগের বেশ মেলামেশা। এই দুটো বড় প্রোজেক্ট ওর হাত ধরেই এসেছে, তার ওপরে মিস্টার হেরজোগ আমাদের কন্সট্রাক্সান কোম্পানিতে টাকা ঢেলেছে।” খানিকক্ষণ মাথা চুলকে উৎসাহিত হয়ে বলে, “একটা উপায় আছে।”

অনুপমা উৎসুক হয়ে প্রশ্ন করে, “কি উপায়?”

দেবায়নঃ “শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীলের মধ্যে ফাটল ধরিয়ে দিতে পারলে কেমন হয়।”

অনুপমাঃ “সেটা কিভাবে করতে চাস?”

মাথা চুলকায় দেবায়ন ভেবে উঠতে পারে না কি ভাবে ফাটল ধরাবে, “ইন্দ্রনীল জানে শ্রেয়া রূপকের গার্ল ফ্রেন্ড সুতরাং সেইখানে গুড়ে বালি। উলটে যদি আমাদের হাতে ইন্দ্রনীল আর শ্রেয়ার কিছু তথ্য প্রমান চলে আসে তাহলে সেই দেখিয়ে রূপকের মনে চাপ সৃষ্টি করা যেতে পারে। আর সত্যি যদি শ্রেয়া রূপককে এখন ভালোবাসে তাহলে এই সব ছেড়ে দেবে আর রূপকের কাছে ফিরে আসবে আর যদি ওর মাথায় অন্য কিছু চলে তাহলে অনায়াসে আমরা রূপককে দিয়ে শ্রেয়াকে আমাদের কোম্পানি থেকে বের করে দিতে পারি।”

অনুপমা একটু চিন্তা করে। ওর মনে পড়ে যায় জলপাইগুড়ির রাতের কথা। রূপক ওকে জানিয়েছিল যে শ্রেয়া ইদানিং খুব টাকা নিয়ে মেতে উঠেছে। হতে পারে যে ইন্দ্রনীল ওকে কোন স্বপ্ন দেখিয়েছে আর শ্রেয়া সেই আলেয়া ধরার জন্য ছুটছে ইন্দ্রনীলের পেছনে। এবারে যদি নিজেই ওদের সাথে জার্মানি যায় তাহলে শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীলের ওপরে নজর রাখতে পারবে।

অনুপমা ভেবে চিনতে বলে, “এবারে ভাবছি আমি ওদের সাথে জার্মানি যাবো।”

দেবায়ন হেসে বলে, “তুই কি গোয়েন্দা হতে চাস নাকি?”

অনুপমা চোখ টিপে বলে, “তাহলে কস্তূরীকে ডেকে নিলে হয়।”

দেবায়নঃ “ধুর শালা এখানে শুধু খরচ হয়ে যাবে, আসলে কোন আয় হবে না তাই কস্তূরীকে কাজে নামাতে চাই না। আমি ভাবছি যেমন চলছে চলতে দে, যেদিন গলা পর্যন্ত জল উঠে আসবে সেদিন ওকে চেপে ধরব। এখন পর্যন্ত সবকিছু শান্তিতে চলছে। এবার থেকে পায়েলকে বলে দিস ওর পেছনে যেন বেশি মাথা না ঘামায়।”
 
এমন সময়ে পায়েল এসে ওদের ঘরে ঢোকে। অফিস জয়েন করার পর থেকে পায়েল অনেক বদলে গেছে, অনেক হাসিখুশি খোলামেলা হয়ে উঠেছে। দেবায়ন দুষ্টু চাহনি নিয়ে পায়েলের দিকে তাকায়। পায়েল একটা হাঁটু পর্যন্ত নীল জিন্স আর চাপা শার্ট পরে এসেছিল, ওর নধর গোলগাল পাছার দুলুনি দেখেই দেবায়ন অস্থির হয়ে যায়।

দেবায়নের চোখের চাহনি দেখে অনুপমা কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে বলে, “তুই আর শুধরাবি না তাই না?”

দেবায়ন একটা দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলে, “আমার শালা কি রোজ খেজুরের রস চুষছে?”

পায়েল লাজুক হেসে অনুপমার দিকে তাকায়।

অনুপমা ওকে একটা চাঁটি মেরে বলে, “আমার ভাইয়ের বৌ, একদম ওর দিকে নজর দিবিনা।”

দেবায়ন প্যান্টের সামনের দিকটা একটু ঠিকঠাক করে বলে, “তোর ভাইয়ের বউকে আমি লাগাতেই পারি আর ভাইয়ের বৌ হবার আগেই লাগিয়েছি যখন আমার শালী ছিল।”

পায়েল একটু লজ্জা পেয়ে রেগে গিয়ে দেবায়নকে দুম দুম বেশ কয়েকটা কিল মেরে বলে, “এই তুই একটু থামবি? আমার কিছু কথা ছিল।”

দেবায়ন চোখ টিপে মিচকি হেসে বলে, “তুই আমার কোলে বসলে আমি তোর সব কথা শুনতে রাজি।”

অনুপমা ওর কান ধরে টেনে বলে, “শয়তান এটা অফিস। এটা আমার তোর বাড়ি নয়। কোলে বসাবে? ছেলের শখ দেখো।” পায়েলের দিকে তাকিয়ে বলে, “তুই এই ছ্যাঁচোরটার কাছে আসতে গেলি কেন? চলো আমার কেবিনে।” দেবায়নের কান টেনে বলে, “এই শালা কুত্তাটা একা একা ডান্ডা নাড়াক। কাল রাতে আর আমার কাছে আসতে চেয়েছিস কি কেটে হাতে ধরিয়ে দেবো।”

যেহেতু দুই বাড়ির মধ্যে সবার জানা তাই মাঝে মাঝে অনুপমা দেবায়নের বাড়িতে রাতে থেকে যায় না হলে দেবায়ন অনুপমার বাড়িতে রাতে থেকে যায়।

দেবায়ন দুই সুন্দরী রমণীর হাতে নির্যাতিত হয়ে হেসে বলে, “তোদের মার খেতেও মিষ্টি লাগে। আচ্ছা বল কি বলার জন্যে এসেছিলিস?”

পায়েল ঠোঁট বেঁকিয়ে মিচকি এসে বলে, “আমি তোর কাছে আসিনি আমি অনুর খোঁজে এসেছিলাম।”

অনুপমা পায়েলকে নিয়ে দেবায়নের রুম থেকে বেরিয়ে ওকে প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে?”

পায়েল খিল খিল করে হেসে বলে, “বিশেষ কিছু হয়নি রে। তোর ভাইয়ের সাথে একটা পার্টিতে যাওয়ার আছে তাই বলছিলাম যে কখন বাড়ি যাবি?”

অনুপমা বড় বড় চোখ করে বলে, “হুম, সেখান থেকে কখন ফেরা হচ্ছে?”

পায়েল ফিসফিস করে বলে, “কাকিমাকে সামলে নিস হয়তো রাতে নাও ফিরতে পারি।”

অনুপমা ওর গাল টিপে হেসে বলে, “ওরে শয়তান, মেয়ে কোথায় যাচ্ছিস তোরা?”

পায়েলঃ “বেশি দুরে নয়, ওর এক বন্ধুর জন্মদিন তাই যাচ্ছি।”

অনুপমা হেসে ফেলে, “জন্মদিন! কি রকম জন্মদিন যে রাত কাটাতে হবে?”

পায়েল বুঝে যায় অনুপমার প্রশ্নের মানে তাই মিচকি হেসে বলে, “তুই পাগল নাকি? ওইসব কিছুই হবে না অন্তত তোর ভাই আমার সাথে থাকলে কারুর জো নেই আমার ধারে কাছে আসে।”

অনুপমা ওর গালে হাত দিয়ে আদর করে বলে, “ওকে যাচ্ছিস যা, পারলে রাতেই ফিরে আসিস নাহলে একটা ফোন করে দিস।”

পায়েলঃ “ঠিক আছে ফোন করে দেবো।”
 
পায়েল ওর সিটে চলে যায় এমন সময়ে শ্রেয়া নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে ওকে দেখতে পেয়ে ডাক দেয়, “একটু শুনিস তো?”

অনুপমা ওর কেবিনে ঢুকে দেখে শ্রেয়া কারুর সাথে ফোনে কথা বলছে। ফোনের আওয়াজ শুনে বুঝে যায় যে শ্রেয়া ইন্দ্রনীলের সাথেই কথা বলছে।

অনুপমাকে ইশারায় চুপ থাকতে বলে শ্রেয়া ইন্দ্রনীলকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা এই যে নতুন প্রোজেক্টের কোন কোম্পানি? তুমি কি দীপঙ্করদার সাথে কথা বলেছো?”

ইন্দ্রনীলঃ “না এখন বলিনি, শুধু তোমাকে বলছি। তুমি না হয় বুঝে শুনে দিপঙ্করদার সাথে অনুপমার সাথে কথা বল।”

শ্রেয়াঃ “কিসের প্রোজেক্ট?”

ইন্দ্রনীলঃ “সুইজারল্যান্ডের একটা ওষুধের কোম্পানির প্রোজেক্ট। এটা পাতি একটা এপ্লিকেশানের কাজ আর তার মেন্টেনেন্স করা। প্রোজেক্ট বেশ বড় সড় আর এককালীন বেশ মোটা অঙ্কের টাকা পাওয়া যাবে, তারপরে প্রতি মাসে মেন্টেনেন্স আছেই।”

শ্রেয়াঃ “ঠিক আছে তুমি আমাকে সবিস্তারে মেল কর আমি দেখছি কি করা যায়। এই নিয়ে আমি অনুর সাথে আর দেবুর সাথে কথা বলে নেব।”

ইন্দ্রনীল ফোন রেখে দিতেই অনুপমা ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার কিসের প্রোজেক্ট?”

শ্রেয়া বলে, “একটা ওষুধের কোম্পানির জন্য এপ্লিকেশান ডেভেলপ করতে হবে।”

অনুপমা শ্রেয়ার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে শ্রেয়ার মনের অভিপ্রায়, মেয়েটা আসলে কি করতে চলেছে। অনুপমা কিছুক্ষণ পরে ওকে প্রশ্ন বলে, “তুই যাচ্ছিস জার্মানি। তুই কি এইবারে এই ডিল করে ফিরবি?”

শ্রেয়া হেসে উত্তর দেয়, “তুই যদি বলিস তাহলে করেই ফিরব না হলে আবার যাওয়া সে অনেক খরচ। আমি ভাবছিলাম যে এইবারে যদি এই প্রোজেক্ট করি তাহলে রূপককে সাথে নিয়ে যাবো। এইটা সফটওয়্যার এপ্লিকেশান এটা ওর ডিপার্টমেন্ট করবে আশা করি।”

অনুপমা হেসে বলে, “তুই যা ভালো বুঝিস তাই করিস।”

শ্রেয়া কিছুক্ষণ অনুপমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “হ্যাঁ রে একটা সত্যি কথা আমাকে বলবি?”

অনুপমা মাথা নাড়ায়, “কি কথা?”

শ্রেয়াঃ “তুই কি আমার ওপরে ক্ষেপে আছিস?”

অনুপমাঃ “কেন?”

শ্রেয়াঃ “আমি জানি এই কয়দিনে আমি তোদের সাথে ঠিকভাবে মেলা মেশা করিনি তাই তোরা সবাই আমার ওপরে ক্ষেপে আছিস। আমি সব বুঝতে পারি এই যে মাঝে মাঝে পায়েল এসে আমাকে প্রশ্ন করে, তুই করিস।”

অনুপমা বুক ভরে শ্বাস নেয়, এই হচ্ছে মোক্ষম সময় ওকে চেপে ধরার তাই ওকে প্রশ্ন করে, “আচ্ছা তুই আমাকে একটা সত্যি কথা বল। এখানে সবাই ব্যস্ত, সবাই নিজেদের কাজে মেতে আছে, রূপক ব্যস্ত, দেবু ব্যস্ত, সুপর্ণা ম্যাডাম ব্যস্ত কিন্তু তোর রুপ এতো ভিন্ন কেন? তুই কেন নিজেকে সবার থেকে আলাদা করে রেখেছিলিস?”

শ্রেয়া খিলখিল করে হেসে বলে, “এই দ্যাখ কাজ হলেই তোকে ডাক দিলাম। দুপুরে লাঞ্চ এক সাথেই করি সবাই। তাহলে কই আলাদা করে রেখেছি?”

অনুপমা সোজাসুজি প্রশ্ন করে, “তোর সাথে ইন্দ্রনীলের বেশ হৃদ্যতা বেড়ে গেছে মনে হচ্ছে। এই যে আজকের ব্যাপারটা, ইন্দ্রনীল তোকে ফোন করলো কিন্তু আমাকে অথবা দেবায়ন অথবা দীপঙ্করদাকে করলো না। তোদের মাথায় ঠিক কি চলছে একটু খুলে বলবি? তোরা নিশ্চয় কিছু উলটোপালটা প্ল্যান করছিস না।”

শ্রেয়া হটাত ভুরু নাচিয়ে চাপা হেসে বলে, “উম্মম্ম, সরি অনু এখন কিছু বলতে পারছি না। সময় হলে সব বুঝিয়ে দেবো।”

অনুপমা ভেবে পায়না আগামী দিনে ওর জন্য কি অপেক্ষা করছে। শ্রেয়া কি ওদের ভালো চায় না খারাপ চায়।
 
কিছু দিনের মধ্যে রূপকের সাথে শ্রেয়া আর একদল টেকনিশিয়ান জার্মানি যাত্রা করে। এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট ওদের সারভারে ডিপ্লয় করা হয় আর সেই সাথে ইন্দ্রনীল, শ্রেয়া আর রূপককে নিয়ে সুইজারল্যান্ডের ওষুধের কোম্পানির প্রোজেক্ট ফাইনাল করে ফেলে।

এইবারে শ্রেয়ার সাথে রূপকের যাওয়াতে অনুপমার মনের দ্বন্দ আরও বেড়ে যায়। জলপাইগুড়িতে রূপক ওকে বলেছিল যে শ্রেয়া আর রূপকের হৃদ্যতা কমে এসেছে, কিন্তু এই বিজনেস ট্রিপে যাওয়ার ফলে অনুপমা বুঝে যায় যে রূপক হয়তো ওদের সাথে জড়িত। হতে পারে এই বড় বড় প্রোজেক্টের আড়ালে ওরা নিজেদের কোন ছোটো ছোটো কাজ হাতিয়ে নিচ্ছে। একাউন্টস দেখে অথবা কাগজপত্র দেখে কিছু বুঝে ওঠার উপায় নেই কারন বাইরের কাজ হয়তো বাইরে সেরে নেয় রূপক।

একদিন অনুপমার বাবার সাথে ওরা তিনজনে বসে এই গ্রুপ কোম্পানি নিয়ে আলোচনা করে। পুনের হোটেলের মালিকানা অচিরেই ওদের হাতে চলে আসবে। ইতিমধ্যে মেহেকের সাথে কথা বার্তা হয়ে গেছে আর সেই মতন ট্রান্সফার কাগজ তৈরি হয়ে গেছে। দিলিপ বাবু জানিয়েছেন যে তাঁর দ্বিতীয় হোটেল মিস্টার সেনের নামে করে দেবেন। দুটো কন্সট্রাক্সান কোম্পানি বেশ ভালো আয় করছে আর প্রতিশ্রুতি মাফিক মিস্টার হেরজোগকে তাঁর পাওনা সময় মতন মিটিয়ে দেওয়ায় হচ্ছে। সেই আলোচনায় দেবায়ন জানায় যে পায়েলকে বোর্ড মেম্বার বানানো হোক আর সেই সাথে ওদের মারকেটিংয়ের প্রধান দীপঙ্করদাকেও বোর্ডে নেওয়া হোক। পায়েলের ব্যাপারে অনুপমা একটু দোনামনা করে, পায়েলকে কোন কিছুতে জড়াতে নারাজ। অফিসে গেলেও অনুপমা ওকে খুব আগলে রাখে আর বাড়িতে বাকিরা আগলে রাখে। দেবায়ন অনুপমা আর মিস্টার সেনকে বুঝিয়ে বলে শ্রেয়ার ব্যবহার দিনে দিনে সন্দেহ উদ্রেক করেছে, ভবিষ্যতে বোর্ডে ওদের হাতে বেশি মেম্বার থাকলে শ্রেয়া যদি কিছু উলটো পাল্টা করার চেষ্টা করে তাহলে ওকে ছাড়িয়ে দিতে অসুবিধে হবে না। অনুপমা বুঝতে পারে যে পায়েলকে শুধুমাত্র দল ভারী করার জন্য বোর্ড মেম্বারে নেওয়া হচ্ছে। আগামী বোর্ড মিটিংয়ে এই নতুন সদস্যদের নামাঙ্কিত করা হবে আর বাকিদের জানানো হবে।

কিছুদিন পরেই ওদের তৃতীয় বোর্ড মিটিং ডাকা হয়। ততদিনে শ্রেয়া আর রূপক জার্মানি থেকে ফিরে আসে আর সেই ওষুধের কোম্পানির ডিল করে আসে। এইবারে ইন্দ্রনীল জার্মানি থেকে আসে। অনুপমাই দেবায়নের হয়ে কথা বলতে শুরু করে। প্রথমে ওদের আয় ব্যয় নিয়ে আলোচনা চলে। এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট সাথে চুক্তি ছিল প্রফিট শেয়ারিং তাই প্রথম সপ্তাহ থেকেই টাকা আসতে শুরু করে। মাস দুয়েক পরে জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের প্রোজেক্ট ডিপ্লয় করলে একই রকম ভাবে আয় শুরু হয়ে যাবে। প্রথম বছর শেষ হওয়ার আগেই ওদের আয় বেশ কয়েক গুন বেড়ে যাবে তবে ব্রেক ইভেন পয়েন্টে পৌঁছতে অনেক দিন লাগবে। বোর্ড মিটিংয়ে নতুন দুইজনকে বোর্ডে নেওয়ার কথা বলে অনুপমা, একজন পায়েল আর দ্বিতীয় দীপঙ্করদা। সুপর্ণা ম্যাডাম আর মনীষা আগে থেকেই বোর্ড মেম্বার ছিল এবারে পায়েল আর দীপঙ্করদা নিযুক্ত হওয়াতে ইন্দ্রনীল ছাড়া বাকি সবাই খুশি। ইন্দ্রনীলের হাবভাব দেখে মনে হলো সে বোর্ড মেম্বার হলে ভালো হতো। রূপক জানায় যে সুইজারল্যান্ডের সফটওয়ারের কাজ বেশ এগিয়ে গেছে, সেটাও মাস দুয়েকের মধ্যে ডিপ্লয় করা যেতে পারে। মনীষা জানায় যে গত তিন কোয়াটারে অনেক খরচের ফলে আগামী বছরে ওদের মাইনে বাড়ানোর ব্যাপারে একটু চাপ আছে কারন, গত তিন চার মাসে যে হারে লোকবল বেড়েছে সেই হারে আয় বাড়েনি। এখন ওদের আয়ে সবার মাইনে দিতে পারে না। মনীষার কথা শুনে শ্রেয়া আর রূপক একটু দমে যায়, মুখ শুকনো করে অনুপমার দিকে চেয়ে থাকে। অনুপমা সবাইকে আস্বস্ত করে বলে, যেহেতু এই বছরে তিনটে বড় প্রোজেক্ট এসেছে সুতরাং এই বছরে মাইনে ঠিক মতন না বাড়াতে পারলেও পুজোর সময়ে সবাইকে ভালো বোনাস দেওয়ার চেষ্টা করবে। দেবায়ন চুপচাপ সবার কথা শুনে যায়। অনুপমা ওর মতামতের কথা জিজ্ঞেস করলে বলে পরে জানিয়ে দেবে।

গ্রীষ্মের গরম কাটিয়ে বর্ষা ঋতু নেমে আসে জলের ধারা নিয়ে। সারা গ্রীষ্ম ওদের অফিস কাজেই গরম ছিল। বর্ষা নামতেই তৃষ্ণার্ত গাছ পালার মতন সবাই যেন গরম থেকে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। এর মাঝে দেবায়ন আর অনুপমা, পুনের হোটেলের ট্রান্সফার কাগজ তৈরি করে মান্ডি গিয়ে মেহেকের স্বাক্ষর নিয়ে আসে। সেখানে শুভমের সাথে দেখা হয়, আর শুভম ওদের জানায় যে মেহেককে নিয়ে কিছু দিনের মধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়া চলে যাবে। অনুপমা ওদের হাতে পাঁচ কোটি টাকার চেক তুলে দেয় আর ওদের শুভেচ্ছা জানায়। মিস্টার সেন আগেই পুনে পৌঁছে যান নতুন হোটেল ম্যানেজার নিযুক্ত করার জন্য। হোটেলের কাগজ পত্র নিয়ে দেবায়ন আর অনুপমা পুনে পৌঁছায়। মিস্টার সেন আলাদা করে একবার রজত বাবুর সাথে দেখা করে, অবশ্য সেই আলোচনায় দেবায়ন অথবা অনুপমা ছিল না তাই ওরা জানে না ওদের মাঝে কি কথা হয়। তবে রজত বাবুর সাথে কথা বলে আসার পরে মিস্টার সেনের চেহারা বদলে যায়, বেশ গম্ভির হয়ে দেবায়ন আর অনুপমার দিকে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ তারপরে একপাশে ডেকে নিয়ে হেসে ফেলেন। তিনি বলেন কিছু কিছু জায়গায় চক্রান্ত করা ভালো কিন্তু একটু ভেবে চিন্তে চক্রান্ত করা উচিত। রজত বাবু পুনের বেশ বড় লোক কিন্তু মিস্টার সেন কম যায় না, তিনি উলটে রজত বাবুকে শাসিয়ে এসেছেন যে যদি ভবিষ্যতে ওদের দিকে চোখ তুলে তাকায় তাহলে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতে হবে না চার কাঁধে তুলে নিয়ে যেতে তাকে।

পুনের পরে ওরা সবাই উটি যায়। উটি হোটেলের বোর্ড মিটিংয়ে, মিস্টার পারিজাত হোটেলের নতুন মালিকের নাম ঘোষণা করে আর সেই সাথে মিস্টার সেনকে অভ্যর্থনা জানায়। কারতিকেয়নকে দেবায়ন আলাদা করে অনেক টাকা দেয় আর ভবিষ্যতে তাঁর জন্য জমি কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।

ব্যাঙ্গালোরে ওদের জন্য বেশ বড় একটা চমক অপেক্ষা করেছিল। দিলিপ বাবু কনিকাকে নিয়ে ব্যাঙ্গালোর ফিরে এসেছেন, কিছুদিনের মধ্যেই তাঁরা বিবাহ বন্ধনে বন্ধিত হবেন। প্রেমজিতের সাথে দিলিপ বাবুর আন্তরিকতা বেশ বেড়ে গেছে, যেখানেই যায় প্রেমজিতকে সাথে নিয়ে যায়। কণিকা ব্যাঙ্গালোরের একটা স্কুলে চাকরি পেয়ে গেছে। দিলিপ বাবু ওদের জানান যে কথা মতন দ্বিতীয় হোটেলের পঁচাত্তর শতাংশের মালিকানা দেবায়ন আর অনুপমার নামে লিখে দিতে চান আর বর্তমান হোটেলের আগে যেমন পঁচিশ শতাংশ মিস্টার সেনের নামে ছিল সেটা তেমনি থাকবে। দেবায়ন আর মিস্টার সেন খুশি, কিন্তু তার চেয়ে বেশি খুশি হয় অনুপমা। দিলিপ বাবু মদ ছেড়ে দিয়েছেন, কণিকার কড়া তত্ত্বাবধানে রোজ সকালে উঠে ব্যায়াম করা, হাঁটতে যাওয়া ইত্যাদি করার ফলে অনেক সুস্থ হয়ে উঠেছেন। দিন তিনেক ব্যাঙ্গালোরে ছিল আর সেই কয়দিনে দিলিপ বাবুর মুখে শুধুমাত্র অনুপমা আর দেবায়নের জয়গান। আসার আগে অনুপমা, দিলিপ বাবু আর কণিকাকে জানিয়ে দেয় যে কি করে ওদের খুঁজে পেয়েছিল। অনুপমার মুখে সব কথা শুনে দিলিপ বাবু অবাক হলেও হেসে ফেলেন। তিনি বলেন অনেক সময়ে কয়লা খুঁড়তে খুঁড়তে হীরের সন্ধান পাওয়া যায়, হয়তো তার জীবনের এই ঘটনা এমন এক উদাহরন।

কোলকাতায় বর্ষা শেষ হতে অনেক বেশি সময় নেয় এমন কি মাঝে মাঝে দুর্গা পুজোর সময়ে বৃষ্টি নেমে আসে। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বর্ষা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু বর্ষা যেন আর কোলকাতা ছাড়তে চায় না। বিগত ছয় মাসে দেবায়ন একবারের জন্য বাইরে যায়নি, দুই একদিনের কাজ ছাড়া আর সেই জন্য অনুপমা ভীষণ খুশি। পায়েলের সাথে গাড়িতে করে অফিসে আসতো কিন্তু ফেরার সময়ে দেবায়নের বাইকে ফিরতো। কোনদিন বৃষ্টিতে কাক ভিজে হয়ে গেলে দেবায়নের বাড়িতেই থেকে যেতো অথবা দেবায়ন ওর বাড়িতে থেকে যেতো। অফিস ফেরত, কোনদিন ফ্লুরিসে বসে গল্প করতো, কোনদিন আহেলিতে গিয়ে বসতো, কোনদিন পার্ক স্ট্রিটের মোড়ে দাঁড়িয়ে এগ রোল খেতো। কাজের সাথে ভালোবাসার এক অদ্ভুত মেল বন্ধনে দুইজনেই ভেসে বেড়ায়।

সেদিন সকাল থেকেই ঝম ঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছিল। কারুর কাজে তেমন মন ছিল না। লাঞ্চের পরে অনুপমা ব্যাঙ্কের একাউন্ট ডিটেলস দেখছিল, এক বছর ঘুরে আসার সময় এসে গেছে। ঠিক এক বছর আগে, এমন এক পুজোর আগেই ওদের কোম্পানি শুরু হয়েছিল। আজ এক বছর পরে বিগত এক বছরের আয় আর ব্যায় খুলে বসে। কুড়ি কোটি টাকা দিয়ে শুরু কোম্পানি, শুধুমাত্র পাঁচ কোটি টাকা ওর আর দেবায়নের জয়েন্ট একাউন্টে পড়ে রয়েছে। বাকি সব আয় কোম্পানি একাউন্টে, এই এক বছরে আয় শুধুমাত্র পাঁচ থেকে ছয় কোটি যার সবটাই মাইনে দিতে, ট্যাক্স দিতে, অফিসের ভাড়া দিতে ইত্যাদি বিল মেটাতে মেটাতে খরচ হয়ে গেছে। এদিকে দুই সপ্তাহ পরেই কোম্পানির বার্ষিক মিটিং। জার্মানি থেকে অনিমেশ আঙ্কেল এসেছেন আর ইন্দ্রনীল এসেছে। ইন্দ্রনীল আসাতে শ্রেয়ার চলন বলন বদলে গেছে সেটা সবার চোখে না পড়লেও অনুপমা আর দেবায়নের চোখ এড়াতে পারেনি। মাঝে মাঝেই ইন্দ্রনীলকে শ্রেয়ার কেবিনে দেখা যায়, লাঞ্চের সময়টুকু ওদের সাথে লাঞ্চ করে কিন্তু বাকি সময়ে শ্রেয়া বেশ ছাড়া ছাড়া থাকে।

সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ওর চোখ পড়ে নিবেদিতার দেওয়া দুই কোটি টাকার ওপরে, হ্যাঁ এক সময়ে নিবেদিতা ওর একাউন্টে দুই কোটি টাকা দিয়েছিল। সেই সাথে মনে পড়ে যায় ছয় মাস আগে জলপাইগুড়িতে নিবেদিতার সাথে আচমকা দেখা হয়ে যাওয়া। দেবায়নকে সেই ঘটনা জানিয়েছিল কিন্তু তারপরে কাজের চাপে সেই কথা মাথা থেকে উবে গেছে। দেবায়ন কি নিবেদিতা আর ধৃতিমানের ব্যাপারে কিছু খোঁজ খবর নিয়েছে? একবার জিজ্ঞেস করলে হয় কি হলো। এমন সময়ে দেবায়ন ওর কেবিনের দরজা খুলে ঢোকে।

অনুপমা মিষ্টি হেসে বলে, “তুই না একশো বছর বাঁচবি। আমি তোর কথা মনে করছিলাম এখুনি।”

দেবায়ন ওর কাছে এসে গাল টিপে আদর করে বলে, “তুই আমার সাথে থাকবি তো?”

অনুপমা চেয়ারে বসে ছিল তাই ওর কোমর জড়িয়ে পেটের ওপরে মুখ ঘষে বলে, “তুই থাকলে আমিও থাকবো। এবারে বল কেন এসেছিলি?”

দেবায়ন মাথা চুলকে বলে, “যদি কিছু মনে না করিস তাহলে আমার সাথে একটু বের হবি।”

অনুপমা ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে যে দেবায়নের ঠোঁটে মিচকি হাসি। কি চলছে আবার এই ছেলেটার মাথায়? দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “বৃষ্টি যেকোনো মুহূর্তে আসতে পারে। কোথায় যেতে হবে?”

দেবায়ন ওর হাত ধরে টেনে উঠিয়ে বলে, “আমার ওপরে বিশ্বাস আছে তো? তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছিস কেন?”

অনুপমা ওর গালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলে, “বিষ দিলেও অমৃত ভেবে গিলে নেব। চলো কোথায় নিয়ে যেতে চাস।”

এইরকম জল ভেজা আবহাওয়ায় গাড়িতে চড়তে ইচ্ছে করে না তাই ব্যাগ গুছিয়ে দেবায়নের বাইকে চেপে বেরিয়ে গেল। যাবার আগে পায়েলকে বলে গেল যেন অফিস ছুটি হলেই বাড়ি ফেরে। আকাশে কালো মেঘের খেলা, দুপুরের পড়ে বৃষ্টি একটু ধরে এসেছে তাই বাতাস বেশ ঠাণ্ডা আর ভিজে। রাস্তায় এদিকে ওদিকে জল জমে, দুইপাশের গাছ গুলো যেন এই স্নান সেরে উঠেছে। সূর্যের দেখা নেই, বিকেলের দিকে আবার বৃষ্টি নামতে পারে। পেছনে বসে দুই হাতে আস্টেপিস্টে দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে নিজের শরীর মিশিয়ে দেয় ওর পিঠের ওপরে। নরম শরীর দেবায়নের উত্তাপ শুষে নিতে তৎপর হয়ে ওঠে। নরম বুকে পিঠের পেশির ছোঁয়ায় কেঁপে ওঠে অনুপমা, এই বৃষ্টির দিনে বড় দুষ্টুমি করতে ইচ্ছে করে, কিন্তু লোক মাঝে নিজেকে সামলে নেয়।

রাস্তায় যেতে যেতে অনুপমা দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে, তোকে ধৃতিমানের ব্যাপারে একটু খোঁজ খবর নিতে বলেছিলাম সেটা কি নিয়েছিস?”

দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ নিয়েছি। ব্যাটা অনেক ঘাঘু মাল। নিবেদিতা ম্যাডামের কোম্পানিতে মারকেটিং হেড হিসাবে জয়েন করেছিল এই জানুয়ারিতে। নিবেদিতা ম্যাডামকে একা পেয়ে হাত মারতে চেষ্টা করেছিল, এক লেঙ্গি মেরে শালাকে চুপ করিয়ে দিয়েছি।”

অনুপমা ওর মামনির সাথে ধৃতিমানের হৃদ্যতা অনেক আগেই আঁচ করেছিল কিন্তু কোনদিন সেটা দেবায়নকে খুলে বলেনি কারন দেবশ্রীর বারন ছিল। এবারে আবার নিবেদিতার পেছনে পড়েছে? লোকটা তাঁর মানে বিশেষ সুবিধের নয়।

অনুপমা প্রশ্ন করে, “মানে?”
 
দেবায়ন, “যেদিন তুই আমাকে নিবেদিতা আর ধৃতিমানের ব্যাপারে জানালি সেইদিন থেকেই ধৃতিমানের ব্যাপারে আমি একটু খোঁজ খবর লাগিয়েছিলাম। ওর ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধৃতিমান নিবেদিতা ম্যাডামকে গল্প বলেছিল যে তাঁর স্ত্রী, রেনুকা এক গাড়ি দুর্ঘটনায় অনেক বছর আগে গত হয়েছেন, আর সেই গাড়ি দুর্ঘটনার আসল কারন তাঁর পুরনো প্রেমিকা, কল্পনার স্বপ্ন। এই গল্প শুনে আমার মন বলল এর পেছনের আসল ঘটনা অন্য কিছু। খোঁজ নেওয়ার জন্য এখানে ধৃতিমানের বাড়িতে গেলাম, পরিচয় দিলাম ওর কোম্পানির কর্তা হিসাবে। ধৃতিমানের মেয়ে, মল্লিকার সাথে দেখা হলো। মল্লিকা বেশ বড় হয়েছে ক্লাস ইলেভেন পড়ে এখন, আমাকে দেখেই চিনতে পারল আর তোর কথা জিজ্ঞেস করলো। আমি ওর সাথে কথা বললাম বেশ কিছুক্ষণ তারপরে ধৃতিমানের শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে কথা বললাম। ওদের সাথে কথা বলে একটা বিষয়ে একটু সন্দেহ জাগল মনের মধ্যে। ধৃতিমানের শ্বশুর মশায় আমাকে বললেন যে তাঁর কন্যের সাথে তাঁর জামাইয়ের সুহৃদ সম্পর্ক ছিল না। ধৃতিমান আগে একজনকে ভালবাসতো, সেটা ফলপ্রসু না হওয়ার পরে রেনুকার সাথে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পরে কয়েক মাস পর থেকে নাকি ওই কল্পনার সাথে আবার প্রেম ভালোবাসা শুরু হয়। তারপরে ধৃতিমানের মুম্বাইয়ের ঠিকানা চাইলাম ওদের কাছে, সেটা পেতে কোন অসুবিধে হলো না। তোর মনে আছে গত মাসে দিন দুয়েকের জন্য মুম্বাই গেছিলাম আমি?”

অনুপমা মাথা নাড়ায়, “হ্যাঁ মনে আছে। তুই বলেছিলিস নিজের কোন কাজে যাচ্ছিস। তুই এই কাজে গেছিলিসি আমাকে বলিসনি কেন?”

দেবায়ন হেসে বলে, “মেয়েদের পেটে কি আর কথা থাকে, তাই আর তোকে বলিনি। তুই জানলে যদি মাকে বলে দিতিস তাই।”

অনুপমা ওর মাথায় চাঁটি মেরে বলে, “কুত্তা, বাকি পাঁচ জনের মতন আমি নই যে পেটের কথা রাষ্ট্র করে বেড়াব। জলপাইগুড়ির কথা মামনির কাছে বেমালুম চেপে গেছি আমি। মামনি কিছুই জানে এই সব বিষয়ে, উলটে আমার ভয় ছিল তোকে বললে তুই কি করে বসিস। তা মুম্বাই গিয়ে কি খবর নিয়ে এলি?”

দেবায়নঃ “মুম্বাই গিয়ে ধৃতিমানের মায়ের সাথে কথা বলে বিশেষ কিছু জানতে পারলাম না। তবে এইটুকু বললেন যে রেনুকা আর ধৃতিমানের সম্পর্ক বিশেষ ভালো ছিল না। তখন আমার মনের মধ্যে সন্দেহ জাগলো, এই দুর্ঘটনা হয়তো ইচ্ছাকৃত ভাবে করা হয়েছে।”

অনুপমা আঁতকে ওঠে, “মানে?”

দেবায়নঃ “মানে ধৃতিমানের শ্বশুরের কথা আর ধৃতিমানের মায়ের কাছে সব কিছু শোনার পরে আমার কেমন যেন সন্দেহ হলো। কোলকাতা ফিরে অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়লাম। একদিন ধৃতিমানকে ডাকলাম আমাদের কন্সট্রাক্সান অফিসে। আমাকে দেখে ভুত দেখার মতন চমকে উঠলো। আমি ওকে চেপে ধরলাম সেই সাথে বললাম যে আমি বেহালা গিয়েছিলাম, মুম্বাই গিয়েছিলাম ইত্যাদি। আমি চেপে ধরে বললাম যে ওই কল্পনাকে খুঁজে পেতেও আমার কোন অসুবিধে হবে না। সুতরাং আসল কথা বলে ফেলা ভালো। ধৃতিমানের গলা শুকিয়ে কাঠ, আমি ওকে বললাম সত্যি কথা না বললে, আমি ওর মেয়েকে এখানে ডাকবো আর তাঁর স্ত্রীর সাথে কেমন সম্পর্ক ছিল সেটা খুলে জানিয়ে দেবো। ধৃতিমান অবশেষে ভেঙে পড়ল, জানালো যে গাড়ি দুর্ঘটনা হয়েছিল সেটা সত্যি কিন্তু তিনি ড্রাইভার সিটে বসে ছিল যতক্ষণ না রেনুকার রক্তাক্ত দেহ প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে প্রানহীন হয়ে গেল। ঠিক সময়ে লোকজন ডাকলে রেনুকা বেঁচে যেতো কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবেই ধৃতিমান রেনুকাকে ওইখানে মরার জন্য ছেড়ে দিয়েছিল।”

সব শুনে অনুপমার শরীরের রক্ত টগবগ করে ফুটতে শুরু করে দেয়, চাপা হুঙ্কারে দেবায়নের কানের কাছে বলে, “শুয়োরের বাচ্চাটা কোথায়?”

দেবায়নঃ “চিন্তা নেই, ওই সাপের বিষ দাঁত ভেঙে দিয়েছি। নিবেদিতার সাথে কিছু করবে না।”

অনুপমাঃ “কোথায় আছে? নিবেদিতার কোম্পানিতেই আছে নাকি এখন?”

দেবায়নঃ “নিবেদিতা ম্যাডামের কাছে আমি সবকিছু খুলে বলেছিলাম, নিবেদিতা ম্যাডাম একটুখানি ভেঙে পড়েছিল কিন্তু সামলে নিয়েছে। কাজ ভালো করে লোকটা, এই কয় মাসে প্রচুর দুই নম্বরি করে টাকা কামিয়ে দিয়েছে আমাদের দুই কোম্পানিকে। তাই ওকে নিবেদিতা ম্যাডামের কোম্পানিতে থেকে ছাড়িয়ে সোজা আমাদের কোম্পানিতে নিযুক্ত করেছি। কাকুর সামনে আওয়াজ উঠানোর শক্তি আর সাহস নেই। আর আমার হাতে মোক্ষম অস্ত্র রয়েছে বেশি বেগড়বাই করলে সবার সামনে উলঙ্গ করে পেটাবো।”

অনুপমা ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুই না একটা সত্যি...”

দেবায়নঃ “আমি কি?”

অনুপমা ঠোঁট কুঁচকে ওর ঘাড়ের কাছে আলতো চুমু খেয়ে বলে, “একটা দুষ্টু মিষ্টি পুচ্চু সোনা।”

কিছু পরে দেবায়ন একটা বাজারে বাইক থামিয়ে অনুপমাকে একটা বড় ফুলের তোড়া আর বেশ কিছু চকোলেট কিনতে বলে। অনুপমা প্রশ্ন করলে শুধুমাত্র হেসে জানায় যেখানে যাচ্ছে সেখানে এই উপহারগুলো লাগবে। অনুপমা চিন্তায় পড়ে যায়, কার বাড়িতে কার সাথে দেখা করার জন্য ওকে নিয়ে যাচ্ছে। বারেবারে প্রশ্ন করেও সঠিক উত্তর না পেয়ে কিঞ্চিত অভিমান করে বসে থাকে।

সারাটা রাস্তা অভিমানিনী অনুপমা একটাও কথা বলে না, কিন্তু তাতে কি হয়, দেবায়ন কি আর চুপ করে থাকার ছেলে। বারে বারে ক্লাচ ব্রেক কষে নিজের পিঠের ওপরে ঝাঁকিয়ে ফেলে দুষ্টু মিষ্টি পুচ্চি সোনাকে।

ধ্যাত কি যে করে না ছেলেটা বলেই মাথায় একটা চাঁটি কষিয়ে বলে, “ঠিকভাবে বাইক চালালে চালা না হলে নেমে যাবো।”

দেবায়ন হেসে উত্তর দেয়, “উফফফ মাইরি, শেষ পর্যন্ত বাইকের ব্রেকের চোটে তোর মুখ ফুটলো।”

অনুপমা আর থাকতে না পেরে পেছন থেকে দেবায়নের কোমর জড়িয়ে নিজের সুউন্নত কোমল স্তন যুগল ওর পিঠের ওপরে পিষে উত্তপ্ত করে বলে, “এই ফুলের বোকে নিয়ে আমাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস একটু বল না রে।”

দেবায়ন মিচকি হেসে উত্তর দেয়, “আরে বাবা একটু দাঁড়া, একটু পরেই দেখতে পাবি।”

বাইপাস ছাড়িয়ে তেরো নম্বর ট্যাঙ্ক দিয়ে সল্টলেকে ঢুকতেই অনুপমার শরীরে চাপা উত্তেজনা দেখা দেয়। এই এলাকায় নিবেদিতার বাড়ি, তাহলে কি দেবায়ন ওকে নিবেদিতার বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে নাকি? মনের মধ্যে সংশয় কিন্তু দেবায়ন উত্তর দিতে নারাজ। ওদের চেনাজানা আর কোন বন্ধুবান্ধবী এই এলাকায় থাকে না। এপাশ ওপাশ দেখতে দেখতে বাইক রাস্তার পর রাস্তা পার করে একটা দুইতলা বেশ সুন্দর বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। অনুপমা এর আগে কোনোদিন নিবেদিতার বাড়িতে আসেনি। শুধু কয়েকবার বাবার পার্টি গুলোতে মাঝে মাঝে দেখা পাওয়া যায়, তা ছাড়া নিবেদিতার সাথে কোন সম্পর্ক বিশেষ নেই। বেশ কয়েকদিন আগে জলপাইগুড়িতে গিয়ে ধৃতিমান আর নিবেদিতাকে একসাথে দেখেছিল। তার আগে কোনোদিন কথা পর্যন্ত বলেনি ওর সাথে।
 
অনুপমা শত প্রশ্ন নিয়ে দেবায়নের দিকে তাকায়। দেবায়নের বাইকের আওয়াজ শুনেই একটা চাকর নীচে এসে দরজা খুলে দেয়। অনুপমা আরো অবাক হয়ে যায়, এরা কি আগে থেকেই ওদের প্রতীক্ষা করছিল? কার বাড়ি, কি পরিচয়, কিছুই জানা নেই? তবে হাতের চকোলেট আর ফুলের স্তবক দেখে ওর সন্দেহ শেষ পর্যন্ত দুর হয়ে যায়। নিশ্চয় এই চকোলেট অঙ্কুশের জন্য আর ফুলের স্তবকটা নিবেদিতার জন্য। দেবায়নের ওপরে রাগ করবে না খুশি হবে কিছুই বুঝে পায়না।

দেবায়ন অনুপমাকে ইঙ্গিতে বাড়ির দিকে যেতে অনুরোধ করে। ধীর পায়ে বসার ঘরে ঢুকে সন্দেহ দুর করে অনুপমা। অনুপমা এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখে, ওদের বাড়ির মতন অত বড় না হলেও বেশ বড় বসার ঘর। এক পাশের দেয়াল জুড়ে বিশাল কাপবোর্ড, তার মাঝে নিবেদিতার সাথে ছোট্ট অঙ্কুশের অনেক ছবি। অঙ্কুশকে কোনোদিন চাক্ষুষ দেখেনি অনুপমা তবে ছোট ছেলেটার মাথায় ঝাঁকড়া চুল, গাল দুটো টোপা টোপা, বেশ নাদুসনুদুস মায়ের আদরের ছেলে। ওকে দেখেই নিজের ভাইয়ের কথা মনে পড়ে যায় অনুপমার। ছোট বেলায় অঙ্কন অনেকটা এইরকম দেখতে ছিল। যত বড় হলো তত বাঁদরামি বেড়ে গেলেও কোনোদিন দিদির আঁচল ছাড়েনি। ইসসস, ওর আঁচল, কোনোদিন শাড়ি পরেনি অনুপমা।

মিষ্টি এক কণ্ঠস্বরে অনুপমা ঘুরে তাকায়, “কেমন আছো? আমি ভেবেছিলাম তোমরা লাঞ্চে আসবে।”

নিবেদিতা দেখতে বেশ সুন্দরী, পরনে একটা ঢিলে প্যান্ট আর শার্ট। ততক্ষণে বাইক পার্ক করে দেবায়ন বসার ঘরে ঢুকে পড়েছে। অনুপমা স্মিত হেসে নিবেদিতার হাতে ফুলের স্তবক ধরিয়ে দিয়ে বলে, “ভালো আছি।” দেবায়ন মৃদু মাথা দোলায় নিবেদিতাকে দেখে। ওদের এই কুশল সম্ভাষণ দেখে অনুপমার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়। দেবায়ন যা ছেলে, মেয়ে দেখলেই খোঁড়া হয়ে যায়, লাগাতে পারলেই হলো। আর যদি নিবেদিতার মতন সুন্দরী আর শিক্ষিতা হলে কথাই নেই।

নিবেদিতা অনুপমার হাত ধরে সোফায় বসিয়ে বলে, “তোমাদের অনেক আগেই আমার ডাকা উচিত ছিল।”

অনুপমা মাথা দোলায়, সত্যি হ্যাঁ। ছোটবেলা থেকে ওদের এই কন্সট্রাক্সান কোম্পানি নাকি একপ্রকার নিবেদিতার রক্ষণাবেক্ষণে ছিল তাও কেন বাবা এই মহিলাকে নিজের বাড়িতে কোনোদিন নিয়ে আসেনি। শুধু কি মায়ের জন্য? না এর পেছনে আরো কিছু লুকিয়ে আছে, যেটা হয়তো ওর পুচ্চু জানে কিন্তু ওকে কিছুতেই বলছে না। দেবায়নের মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝার উপায় নেই। আজকাল অফিসে বসে চারদিকে ঘোরাফেরা করে দিনে দিনে অনেক বদলে গেছে ওর পুচ্চুসোনা।

অনুপমা স্মিত হেসে উত্তরে বলে, “এই তো চলে এলাম। কিন্তু তোমার ছেলেকে দেখতে পাচ্ছি না যে? কোথায় গেল?”

নিবেদিতা হেসে উত্তর দেয়, “দাদুর সাথে সামনের পার্কে খেলতে গেছে একটু পরেই চলে আসবে। তোমার কথা বলো। অনেক বড় হয়ে গেছো, নিজে একটা কোম্পানি সামলাচ্ছো। তার ওপরে আবার এদিক ওদিকের দেখা শোনা।”

অনুপমা হেসে বলে, “না না, আমি কিছুই দেখি না। বাইরের কাজ দেবায়ন দেখে, মারকেটিংয়ের জন্য দিপঙ্করদা আছে আর ...”

নিবেদিতা হেসে বলে, “আমি সব জানি। তোমার কোম্পানিতে কে আছে, কে কি করে সেই সব আমি জানি।”

নিবেদিতাকে ঠিক কি বলে সম্বোধন করবে সেটা বুঝে উঠতে পারে না অনুপমা। কাকি না মাসি না শুধু নিবেদিতা? নিবেদিতা ওর চেয়ে বয়সে বড়, এইভাবে নাম ধরে ডাকতে কেমন যেন গলায় আটকে যায়। একটা কাজের মেয়ে ততক্ষণে ওদের জন্য ঠাণ্ডা পানীয় আর বেশ কিছু মিষ্টি ফল তার সাথে প্যাস্ট্রি, একটা বড় কেক ইত্যাদি নিয়ে সেন্টার টেবিলের ওপরে রেখে চলে যায়। খাবারের পরিমান দেখে অনুপমার চক্ষু চড়ক গাছ। স্বল্পাহারী অনুপমা, তায় আবার অফিসে বসে বসে ইদানিং মোটা হয়ে যাচ্ছে বলে পায়েলের কাছে নালিশ জানায়, এতো খাবার খাবে কি করে?

অনুপমা খাবারের পরিমান দেখে আঁতকে উঠে বলে, “একি করেছো তুমি? একে দেখো মোটা হয়ে যাচ্ছি আর তুমি একদিনে আমাকে খাইয়ে মেরে ফেলবে নাকি?” দেবায়ন মিচকি হাসে ওর দিকে তাকিয়ে। অনুপমা ওকে বলে, “কি রে কিছু বল?”

দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে বলে, “না না, এর মধ্যে আমি নেই। তোমরা দুইজনে ঠিক করে নাও কি করবে।”

নিবেদিতা ওর হাত ধরে বলে, “দেখো অনুপমা, আমি কিন্তু লাঞ্চে ডেকেছিলাম, তোমার দেবায়ন যদি না নিয়ে আসে তাহলে কি করতে পারি বল। কিন্তু ডিনার এইখানে সেরে যেতেই হবে।”

অনুপমা আকাশ থেকে পড়ে, “ডিনার? না না, মাকে বলা নেই চিন্তা করবে।”

নিবেদিতা হেস ফেলে, “আচ্ছা আমি না হয়, সোমে... তোমার বাবাকে ফোন করে দিচ্ছি।”

তৎক্ষণাৎ অনুপমার কান খাড়া হয়ে যায়, বাবার নাম ধরতে গিয়েও ধরলো না নিবেদিতা। একদম ঘাসে মুখ দিয়ে চলার মেয়ে নয়, মাথায় বেশ বুদ্ধি রাখে। যদিও অনেক কিছুই ওর অজানা আর সংশয়ের উত্তর পাওয়ার মতন সুত্র ওর হাতে নেই তাও নিবেদিতার আতিথেয়তায় বেশ অবাক হয়ে যায়।
নিবেদিতা শেষ পর্যন্ত ওর বাবাকে ফোন করে জানিয়ে দেয়, যে অনুপমা আর দেবায়ন রাতের খাওয়া দাওয়া সেরেই বাড়ি ফিরবে। অগত্যা অনুপমা একবার দেবায়নের দিকে তাকায়। ছেলেটা একটা কথাও বলছে না, চুপচাপ খবরের কাগজ মুখস্ত করছে আর মাঝে ওদের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখে নেয়। কি হলো, ওর? সবাইকে সন্দেহ করতে পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুচ্চু? হতেই পারে না, কেউ যদি ওর পায়ের তলায় নিজের গলা কেটেও বলে দেবায়ন প্রতারক তাতেও অনুপমা বিশ্বাস করবে না। এই ছেলেটার জন্য, ওর প্রানের বান্ধবী পায়েলকে ফিরে পেয়েছে, এই ছেলেটার জন্য বাবা অনেকটা সোজা হয়েছে, মায়ের সাথে হারিয়ে যাওয়া সম্পর্ক আবার সেতুবন্ধ হয়েছে। কি চলছে এই ছেলেটার মনে? বলবে না, আজকাল অনেক কথাই সহজে বলে না। এদিক ওদিক করে এড়িয়ে যায় তবে পরে নিজের মুখেই বলে।

অঙ্কুশ আর নিবেদিতার বাবা বেশ কিছু পরে ঘরে ঢোকে। নিবেদিতার বাবাকে দেখে দুইজনেই উঠে দাঁড়িয়ে পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করে। অনুপমা অঙ্কুশকে কাছে ডেকে হাতে চকোলেট ধরিয়ে দেয়। লাজুক ছেলে মায়ের দিকে একবার তাকায় তারপরে হেসে ওর হাত থেকে চকোলেট নিয়ে এক পাশে বসে। দেবায়ন আর অঙ্কুশ বন্ধুত্ব পাতিয়ে নেয় কিছুক্ষণের মধ্যেই। অঙ্কুশকে চোখের সামনে দেখে অনুপমা হেসে ফেলে, একদম ছোট বেলায় অঙ্কন যেমন লাজুক ছিল ঠিক তেমন।

ওকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করে, “কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?”

অঙ্কুশ জবাব দেয়, “ক্লাস ফোরে।”

নিবেদিতা ওকে ডেকে বলে, “ছেলেদের নীচেই ছেড়ে দাও, চলো আমার সাথে একটু উপরে চলো।”
 
অগত্যা অনুপমা কি করে, শেষ পর্যন্ত দেবায়ন, অঙ্কুশদের নীচে বসার ঘরে ছেড়ে দিয়ে নিবেদিতার পেছন পেছন উপরে চলে আসে। ওদের মতন ডুপ্লেক্স বাড়ি, নীচে রান্না ঘর, খাওয়ার ঘর, লবি স্টাডি আর একটা অতিথিদের ঘর, উপরের সব শোয়ার ঘর। উপরে ওঠার সময়ে নিবেদিতা জানায়, যেহেতু তার বাবার একটু চলাফেরা করার অসুবিধে আছে তাই বাবা নীচেই থাকেন। ছেলেকে নিয়ে নিবেদিতা উপরে থাকে। ছেলের ঘর আলাদা। নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে বিছানার উপরে অনুপমাকে বসিয়ে দিয়ে আলমারি খোলে নিবেদিতা।

আলমারি থেকে একটা দামী জিন্স আর জ্যাকেট বের করে ওর হাতে দিয়ে বলে, “এটা আমার বাড়িতে আসার উপহার।”

অনুপমা আশ্চর্য চকিত হয়ে নিবেদিতার দিকে তাকিয়ে থাকে। এতদিনে কিছুই করেনি আর হটাত এতো আন্তরিকতার অর্থ কি? অনুপমা মানা করে, “না না, এই সব আমি নিতে পারবো না।”

নিবেদিতা ওর হাত ধরে বলে, “কেন নিতে পারবে না? আমি কি পর? ছোটবেলা থেকে তোমাদের জানি, শুধু এই কয় বছরে সেই মতন ভাবে তোমাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়নি এই যা।” একটু থেমে বলে, “তুমি সত্যি বড় ভাগ্যবান, অনুপমা। দেবায়নের মতন একজনকে পাশে পেয়েছো।” বলে স্মিত হাসে।

নিবেদিতা কতটা দেবায়নকে চেনে? অনন্যার মতন না ওর মায়ের মতন করে চেনে? বড় প্রশ্ন, আজকাল কোথায় কি লুকিয়ে করে আসে জানা যায় না।

দেবায়নের জন্য একটা দামী সুটের পিস বের করে হাতে ধরিয়ে বলে, “এটা দেবায়নের” আরো একটা একটা সুটের পিস ওকে হাতে দিয়ে বলে, “এটা অঙ্কনের জন্য।” তারপরে একটা বেশ সুন্দর ডিজাইনার সালোয়ার কামিজ বের করে ওর হাতে দিয়ে বলে, “এটা পায়েলের জন্য।”

অনুপমা অবাক চোখে একবার জিনিসের দিকে দেখে একবার নিবেদিতার স্মিত হাসিহাসি মুখের দিকে চেয়ে থাকে। পায়েলের কথাও এর অজানা নয়। অর্থাৎ নিবেদিত ওদের পরিবারের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে। একবার অন্তত জিজ্ঞেস করা উচিত কি ভাবে এতো কথা জানতে পারল।

শেষ পর্যন্ত কৌতুহল দমিয়ে না রেখে অনুপমা প্রশ্ন করে, “আচ্ছা তুমি এতো সব আমাদের জন্য কিনতে গেলে কেন?”

নিবেদিতা উত্তর দেয়, “কিছু না এমনি কিনেছি। বন্ধুদের কি উপহার দিতে মানা আছে নাকি?”

কিন্তু অনুপমা ওর জন্য কিছুই আনেনি যে। সব দেবায়নের দোষ, যদি আগে থেকে ছেলেটা সব জানতো তাহলে ওকে কেন বলল না। অবশ্য ওকে বললে কোনোদিন এই বাড়িতে পা রাখতো না অনুপমা।

অনুপমা উপহারের পরিমান দেখে বিস্মিত হয়ে যায়, প্রত্যেকটাই বেশ দামী আর দারুন সুন্দর। নিবেদিতাকে মজার ছলে বলে, “এই দেখো, এতগুলো জিনিস কি করে নিয়ে যাবো বলতো? এসেছি বাইকে তার ওপরে আবার বৃষ্টি বাদলার দিন।”

নিবেদিতা হেসে ফেলে, “তুমি আর বোলো না বুঝলে। আমি গাড়ি করে তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবো খানে। নাও চলো এবারে নীচে যাওয়া যাক। তোমাদের জন্য ক্রাব আনিয়েছিলাম, ওইটাকে ম্যারিনেট করে রেখেছি। একটু গ্রিল করতে হবে সেই সাথে ফ্রেঞ্চ ব্রেড। তুমি ক্যাভিয়ার খাও?”

অনুপমা হাঁ করে বেশ খানিকক্ষণ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার পরে প্রশ্ন করে, “তুমি করেছে কি? আমাদের আজকে শেষ খাওয়া খাওয়াবে নাকি? আর সত্যি বলতে ক্যাভিয়ার আমার কেমন যেন খেতে লাগে, তবে ভদকায় আপত্তি নেই।” বলেই হেসে ফেলে।

নিবেদিতা মাথা দোলায়, “আচ্ছা, চলো নীচে চলো। রেড ওয়াইন দিয়ে ক্রাবটা ভালোই লাগবে। ক্যাভিয়ার খেতে হবে না। আমারো বিশেষ ভালো লাগে না, কিন্তু তুমি আসবে জেনেই ওই সব আনা।”

অনুপমা মাথা নাড়ায়, “মাত্র তিনজনে খাবে আর তার জন্য ক্যাভিয়ার? তুমি না সত্যি...”

নিবেদিতা উত্তরে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে হেসে বলে, “আমরা কি বান্ধবী হতে পারি।”

বাড়ির সব থেকে বড় অনুপমা, মায়ের আদর সম্প্রতি পেয়েছে, তবে ওর কোনোদিন মনে হয়নি ওর একটা বড় দিদি হোক তাও নিবেদিতাকে দেখে মনে হলো একটা দিদি থাকলে মনে হয় ভালো হতো। কিন্তু মনের গভীরে একটা সংশয় দেখা দেয়। হটাত করে এতো অন্তরিকতা, এতো হৃদ্যতা। পুচ্চুকে জিজ্ঞেস করতেই হবে এর অর্থ। নিশ্চয় এর পেছনে গুঢ় কোন রহস্য লুকিয়ে আছে যেটা কিছুতেই ওর চোখের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে না। একবার বাবার নাম ধরে ডাকতে গিয়েও ডাকেনি। তবে কি? হতেও পারে নাও হতে পারে। জলপাইগুড়িতে সচক্ষে ধৃতিমানের সাথে রেষ্টুরেন্টে বেশ আন্তরিক মুহূর্তে দেখা পেয়েছিল। বাবার সাথে হলে হটাত আবার ধৃতিমানের সাথে হৃদ্যতা কেন বাড়াতে যাবে?

একটা বড় ব্যাগের মধ্যে নিবেদিতা উপহার গুলো গুছিয়ে ওর হাতে ধরিয়ে দেয়। নিবেদিতার পেছন পেছন নীচে নেমে এসে দেখে দেবায়ন আর অঙ্কুশ টিভিতে ভিডিও গেম খুলে বসে গেছে। ওকে নীচে নামতে দেখে দেবায়ন একবার ওদের দিকে তাকায়। নিবেদিতা রান্না ঘরে ঢুকে যায়। কাজের মেয়ে ততক্ষণে সবজি কাটাকাটি সেরে ফেলেছে।

অনুপমা হাতের জিনিসপত্রের ব্যাগ দেখিয়ে দেবায়নকে বলে, “এইগুলো তোর, নিয়ে যা।”

দেবায়ন হাসে, “আমাকে দিয়েছে নাকি যে আমি নেব? ওইগুলো তোর জন্যে আনা হয়েছে।”

ওর পাশে এসে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, “আসার পর থেকে ঘাপটি মেরে পড়ে আছিস। ব্যাপারটা কি একটু খোলসা করে বলতো? তোর ওই মিচকি হাসি দেখে মনে হচ্ছে তুই অনেক কিছুই জানিস কিন্তু বলছিস না আমাকে।”
 

Users who are viewing this thread

Back
Top