What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

pinuram রচনাসমগ্র (3 Viewers)

অনুপমাঃ “কিসের মার প্যাঁচ?”

দেবায়নঃ “গত বার কাকু গেছিল, কিন্তু কাজ হয়নি। আমি অবশ্য অনেক আগে থেকেই একজন প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর লাগিয়েছিলাম ওই তিন হোটেলের মালিকের পেছনে। কিন্তু কাকু যখন গেছলেন ততদিনে ওর সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়নি।”

অনুপমা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর, সেটা কেন? কি জানতে চাস তুই ওদের ব্যাপারে?”

দেবায়ন হেসে জানায়, “কে কখন কোথায় থাকে, কার সাথে শোয়, কার সাথে খায়, কোথায় যায় সব নাড়ি নক্ষত্রের খবর জানা দরকার।”

অনুপমাঃ “কেন?”

দেবায়নঃ “এই সব বড় হোটেলের মালিকেরা কখনো ধোয়া তুলসি পাতা হয়না। ওদের ফাঁক খুঁজে আড় পেতে কোপ না মারলে ওরা মচকাবে না। আর যদি না মচকায় তাহলে আমার কাজ হাসিল হবে না।” একটু দোনামনা করে তারপরে বলে, “অনেক সময়ে নারীর শরীর কাজে আসে না, সেইখানে মাথা খাটাতে হয়, আঙুল বেঁকাতে হয় আর ওদের কোণঠাসা করতে হয়।”

অনুপমাঃ “মানে?”

দেবায়ন হেসে জবাব দেয়, “মুম্বাই পৌঁছালেই সব জানতে পারবি।”

দুপুরের পরেই ওরা দুইজনে মুম্বাই পৌঁছে যায়। মুম্বাইয়ের এক নামকরা পাঁচতারা হোটেলে ওদের সুইট ভাড়া করা ছিল। রুমের মধ্যে ঢুকেই অনুপমাকে দুই হাতে জড়িয়ে মিশিয়ে নেয় নিজের সাথে। কোলকাতায় থাকলে, বাড়িতে অথবা অনুপমার বাড়িতে ঠিক একা পাওয়া যায় না। সেই বিরহ বেদনা দুই হাত দিয়ে আঁকড়ে নিঙড়ে নিতে চায়। দুইজনে একসাথে স্নান সেরে, ধবধবে নরম বিছানায় গা ভাসিয়ে দেয়। প্রেমের রসে পরস্পরকে ভিজিয়ে দেয়।

দুপুরের খাওয়া সেরে সারাদিন দুইজনে গাড়িতে চড়ে মুম্বাইয়ের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। মুম্বাইয়ের সব থেকে আকর্ষণীয়, জুহু বিচে বিকেলে এসে বসে। সূর্য বেশ কিছু আগেই পশ্চিমে ঢলে গেছে, পৌনে আটটা বাজে তাও আকাশে কমলা রঙের মাখামাখি। পেছনে সারি সারি নিওন বাতির মেলা, সারি সারি গাড়ি ধেয়ে চলেছে নিজেদের গন্তব্য স্থলে। গ্রীষ্মের গরম থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সমুদ্রতটে প্রচুর লোকের ভিড়। জুহু বিচ যেন একটা মেলা। শিয়ালদা স্টেসানের চেয়ে মনে হয় তিন গুন লোক জড়ো হয়েছে বিচে। ওদের গাড়ি বিচের কিছু দুরেই দাঁড়ানো।

দেবায়নের ডান হাত নিজের দুই হাতে আঁকড়ে ধরে শরীরের সাথে শরীর মিশিয়ে হাঁটে। দুইজনে খালি পায়ে অনেকক্ষণ নোনা জলে ভেজা বালির ওপর দিয়ে পা ভিজিয়ে হাঁটে। এক যুগ পরে দুইজনের মনে হয় যেন পরস্পরকে আবার ফিরে পেয়েছে। আঙ্গুলের সাথে আঙুল পেঁচিয়ে যায়, অনুপমার বুক ভরে যায় শান্তিতে। দেবায়ন হাত ছাড়িয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। চোখের তারা পরস্পরের মণির ওপরে নিবদ্ধ হয়ে যায়। হটাত করে দুইজনের মনে হয় যেন চারপাশের কোলাহল কোথায় যেন উধাও হয়ে গেছে। এই কমলা রঙের বিস্তীর্ণ আকাশের নিচে, এই নির্জন সমুদ্র সৈকতে ওরা দুই নরনারী ছাড়া আর কেউ নেই। অনুপমার হাত উঠে আসে দেবায়নের বুকের কাছে। দুই হাতে অনুপমার কোমর ধরে নিজের দিকে টেনে নেয়। ঠোঁট নামিয়ে আনে ওই লাল গোলাপের পাপড়ির মতন নরম দুই কোয়ার ওপরে। ভালোবাসার চুম্বনে ঠোঁট মিলিয়ে হারিয়ে যায় দুইজনে। অল্পক্ষণ না অনেকক্ষণ, সময়ের চক্র যেন দুইজনের চারদিকে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে। চোখ বুজে আসে আবেগে, সেই চুম্বনে কোন রুদ্রতা নেই, নেই কামনার লেলিহান অগ্নি শিখা, আছে শুধু হারিয়ে যাওয়ার ভালোবাসা।

ঠোঁট ছেড়ে দেবায়নের চোখের দিকে তাকিয়ে মিহি সুরে প্রশ্ন করে, “আমার পাশে সবসময়ে এই রকম ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবি তুই?”

দেবায়ন ওর মুখ আঁজলা করে ধরে নিয়ে বলে, “কেন থাকবো না, নিশ্চয় থাকবো।”

অনুপমা ওর হাতের ওপরে হাত রেখে, ওর তালুর উষ্ণতা গালে মাখিয়ে বলে, “তুই এই যে ঘুরে বেড়াস, মাঝে মাঝে ভয় হয়। এতো কিছু পেয়ে যাওয়ার পরে হটাত যদি...” কথাটা শেষ করতে পারে না অনুপমা, বুক দুরুদুরু করে কেঁপে ওঠে ওর, চোখের কোনে জল চিকচিক করে ওঠে।

দেবায়ন বুঝতে পারে ওর অব্যক্ত ক্রন্দনের কারন। অনুপমার মাথা বুকের কাছে চেপে ধরে বলে, “আরে পাগলি তুই ভাবলি কি করে যে আমি তোকে ছেড়ে যেতে পারি। তুই আছিস বলেই আমি আছি। এই যে দেবায়ন তোর সামনে দাঁড়িয়ে এটা তোর জন্য দাঁড়িয়ে। তোকে যদি না পেতাম তাহলে আমি এতক্ষণে কোলকাতার কোন এক এঁদো কোম্পানিতে কেরানীর চাকরি করতাম। এই যে আজকে আমার মা আমাকে এতো ভালোবাসে, তোর জন্য ভালোবাসে, নাহলে দিন দিন আমাদের মাঝে ব্যাবধান বেড়ে যেতো আর একদিন হয়তো দুইজনে দুইদিকে হারিয়ে যেতাম।”

এই এক কথা অনুপমার পক্ষেও প্রযোজ্য। ওর আলিঙ্গনে বদ্ধ যে ছেলেটা তার জন্য নিজের বাবা মাকে কুড়ি বছর পরে ফিরে পেয়েছে। ওর বাড়িটা এক প্রকার সরাইখানার মতন ছিল, কেউ কারুর খোঁজ খবর বিশেষ রাখতো না, সবাই যেন নিজের মধ্যে মত্ত। কোন এক জাদুর কাঠির ছোঁয়ায় দেবায়ন যেন সব কিছু ঠিক করে দিয়েছে। কুড়ি দিন হয়ে গেছে, জলপাইগুড়ির কথা কিছুই জানানো হয়নি, না মনিদিপা সূর্যের কথা, না নিবেদিতা ধৃতিমানের কথা না রূপকের সাথে সেই রাতের কথা। এই কয়দিনে বহুবার চেষ্টা করেছিল দেবায়নকে খুলে বলার, কিন্তু যেই বলতে যায় ওমনি ওর গলা শুকিয়ে আসে, জিব জড়িয়ে আসে। দেবায়ন অনায়াসে যেখানে যা করেছে ঠিক তারপরের দিন ওর কাছে এসে বলেছে। এমন কি মায়ের সাথে সেক্স করার পরেও ওকে এসে বলেছে। সেই কথা জেনে বুক ফেটে গেছিল কিন্তু ভালোবাসায় চিড় ধরেনি। আজ রাতে ওকে মনের কথা খুলে বলতেই হবে না হলে মরমে মরে যাবে অনুপমা।

দেবায়ন ওকে বলে, “চলো এবারে রুমে যাই। কিছু কাজ বাকি আছে।”

হোটেলে ঢুকেই রিসেপ্সানিস্ট জানায় যে এক মহিলা ওদের জন্য কফিশপে অপেক্ষা করছে। মহিলার কথা শুনেই অনুপমার মনে প্রশ্ন জাগে, হটাত করে মহিলার সাথে দেখা? কেন? দেবায়নের মুখের দিকে তাকাতেই, দেবায়ন মিচকি হেসে ওকে চুপ থাকতে বলে। জানিয়ে দেয় যে অচিরে সব পরিস্কার হয়ে যাবে।

কফিশপে ঢুকে এদিক ওদিক দেখতেই একটা পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের সুন্দরী মেয়ে ওদের দেখে হাত নাড়ায়। মেয়েটির পরনে গাড় নীল রঙের হাঁটু পর্যন্ত স্কার্ট, ছোটো হাতার গোলাপি টপ। টপের সামনের দিক বেশ উঁচু হয়ে ওদের দিকে উঁচিয়ে, মনে হলো যেন দুই ভারী স্তন এখুনি পরিধান ফাটিয়ে বেরিয়ে পড়বে। দুই পায়ে হাল্কা কালো রঙের ফিনফিনে স্টকিংস। মেয়েটির ত্বক উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের হলেও দেহের গঠন বেশ নধর আর লাস্যময়ী। প্রকৃতি দেবতা বেশ ভালো ভাবেই সাজিয়ে গুছিয়ে পাঠিয়েছে মেয়েটাকে ওদের সামনে। ঠিক যেই অঙ্গে যতটুকু প্রয়োজন তার থেকে কিছুটা অধিক দিয়েই পাঠিয়েছে যাতে শরীর নিয়ে ভালোই খেলতে পারে। মেয়েটা অনুপমার মতন অত লম্বা না হলেও ভালো উচ্চতা।

মেয়েটার ঠোঁটের হাসি দেখেই অনুপমার মাথা গরম হয়ে যায়। ও না আসলে কি দেবায়ন এর সাথে রাত কাটাতো? দেবায়ন এখন কি চায়? এই মেয়েটাকে সাথে নিয়ে ত্রিকোণ যৌনখেলায় মেতে উঠতে চায় নাকি? ও ভেবে এসেছিল, দেবায়নের সাথে নিভৃতে একাকী প্রেম করবে আর বুকের মাঝে জমে থাকা কথাগুলো উজাড় করবে।

ওরা কাছে আসতেই, অনুপমার দিকে হাত বাড়িয়ে মেয়েটা নিজের পরিচয় দেয়, “আমি মিস কস্তুরী রঙ্গনাথন, প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর। গ্ল্যাড টু মিট ইউ মিসেস অনুপমা বসাক। কালকেই বসাক স্যার বলছিলেন যে মিসেস সাথে আসছেন।”
 
অনুপমা হতবাক হয়ে মেয়েটার সাথে হাত মিলিয়ে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। দেবায়ন চোখ টিপে ওর মুখ বন্ধ করতে ইশারা করে। চেয়ারে বসে পড়ে অনুপমা আর দেবায়ন, ওদের সামনের চেয়ারে বসে কস্তূরী।

দেবায়ন কস্তূরীকে প্রশ্ন করে, “এখানে না বসে রুমে গেলে ভালো হয়। সেখানে ডিনারের সাথে সাথে বাকি আলোচনা করা যাবে।”

অনুপমা চোখের ইশারায় দেবায়নকে প্রশ্ন করে যে সুইটে কেন ডাকা হচ্ছে। দেবায়ন ওকে শান্ত হওয়ার জন্য অনুরোধ করে। সুইটে ঢুকে, দেবায়ন খাবারের অর্ডার দেয় ডিনারে স্মোকড স্যালমন, লাজানিয়া আর রেড ওয়াইন। শুরুতে সাথে দামী স্কচ আর স্টারটারের জন্য ছোটো ছোটো চিংড়ি মাছ আর কাবাব।

বসার ঘরের একটা ছোটো কাউচে কস্তূরী আরাম করে বসে আর ওর সামনের লম্বা কাউচে দেবায়ন আর অনুপমা বসে। অনুপমার বুকের মাঝে হাজার প্রশ্ন ভিড় করে আসে, কেন এই মেয়েটা এখানে এসেছে, কি কাজের জন্য প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর নিযুক্ত, কি খবর নিয়ে এসেছে কস্তূরী আর সেই খবর নিয়ে দেবায়ন কি করতে চলেছে। ইতিমধ্যে রুম সার্ভিস এসে হুইস্কি আর কাবাব দিয়ে চলে যায়।

দেবায়ন একটা হুইস্কির গ্লাসে চুমুক দিয়ে, কস্তূরীকে জিজ্ঞেস করে, “কাজ আশা করি শেষ হয়ে গেছে। কি খবর এনেছ?”

সামনের টেবিলের ওপরে ল্যাপটপ খুলে কস্তূরী উত্তর দেয়, “তুমি যা যা বলেছিলে সেই মতন সব খবর জোগাড় করে নিয়েছি আর তোমার কথা অনুযায়ী কাজ সেরে ফেলেছি।”

অনুপমা একবার কস্তূরীর দিকে তাকায় একবার দেবায়নের দিকে।

দেবায়ন কস্তূরীকে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে দেখি কি খবর এনেছো?”

ল্যাপটপ খুলে কস্তূরী বলতে শুরু করে, “প্রথম উটির হোটেলের মালিক, এন.আর.পারিজাত। অমায়িক ভদ্রলোক, খুঁজে পেতে স্বভাবে কোন ফাক ফোঁকর পাওয়া গেল না। স্ত্রী ছেলে মেয়েকে খুব ভালোবাসে। এক ছেলে ক্লাস টুয়েলভে পড়ে আর মেয়ে ক্লাস এইটে পড়ে। তাঁর স্ত্রী, গৃহবধূ। উটি ছাড়াও, মুন্নারে একটা হোটেল আছে, দুটো হোটেল বেশ ভালোই চলে, বেশ ভালো টাকা। ওইখানে কাজ হাসিল করতে তোমার পন্থা নিতে হয়।”

দেবায়নঃ “কাকে হাত করেছিলে? এইচ.আর ম্যানেজার না ফাইনেন্স ম্যানেজার?”

কস্তূরী হেসে দেয়, “তুমি বলেছিলে এইচ.আরকে হাত করতে সেটাই করেছি। আর যেমন ভাবা তেমন কাজ। ইতিমধ্যে বেশ কিছু লোক ছেড়ে চলে গেছে, নতুন লোকের অভাবে রিক্রুটমেন্ট বন্ধ। আর সেই জন্য গত দুইমাসে হোটেলে খুব চাপ। খালি হোটেল কিন্তু ফুল অকুপেন্সি দেখাতে হচ্ছে লোকের অভাবে। ওদিকে লোক নিযুক্ত হচ্ছে না এইচ.আরের কারনে। তুমি গেলে গত কোয়াটারের ব্যালেন্স সিট দেখতে চাইবে। আমি খবর নিয়ে দেখেছি, গত কোয়াটারে ওদের আয় হয়েছে চার কোটি আর এই কোয়াটারে আরও কমে গেছে। তার আগের দুই কোয়াটারে ওদের বেশ আয় হয়েছিল, একবার দশ কোটি আর পরের বার আট কোটি। এবারে একেবারে নেমে যাওয়াতে হাঁফিয়ে উঠেছে পারিজাত। শুধু একটু ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে। যদি না পড়ে...”

দেবায়ন হেসে বলে, “না পড়লে এবারে নিস্তার নেই, আরও দুই কোয়াটার ওকে এই ভাবেই কাটাতে হবে।”

কস্তূরী হেসে বলে, “তোমার মাথা বড় প্যাঁচালো। যাই হোক যেটা ভালো বুঝবে সেটা করবে। আর হ্যাঁ, ওদের এইচ.আরে লোকটা, মিস্টার কারতিকেয়ন ওর সাথে তোমার মিট হবে পরশু দিন পুনেতে। সেইভাবে ওকে বলা আছে।”

দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, ঠিক আছে। অনুপমা হতবাক হয়ে দেবায়নের ব্যাবসার প্যাঁচ বুঝতে চেষ্টা করে।

দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “পুনের কি খবর? মিস্টার রজত পানিক্কর কেমন আছেন? ওর সম্বন্ধে কি জানতে পেরেছ?”

তার উত্তরে হেসে কস্তূরী বলে, “বহাল তবিয়েতে আছে বুড়ো। ও বুড়ো বেটা ঘাঘু মাল, এই বয়সেও মালের টনটন করে কিন্তু মাল পড়েনা ঠিক জায়গায়।”

দেবায়ন হেসে ফেলে চোখ টিপে জিজ্ঞেস করে, “কেন তোমার সাথে কিছু করেছিল নাকি?”

কস্তূরীর গাল লাল হয়ে যায়, অনুপমা বুঝতে পারে শরীর কাজে লাগিয়ে কস্তূরী ওর কাজ হাসিল করেছে সেইখানে। লাজুক হেসে কস্তূরী উত্তর দেয়, “কিছুটা ঢলে পড়তে হয়েছে তবে তার সব টাকা আমি তোমার কাছ থেকে উসুল করে নেব।”

দেবায়ন হেসে দেয়, “সব পুষিয়ে দেবো একবার এই তিনটে হোটেল হাতে আসুক।”

কস্তূরী হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে, “পাঁচ লাখ টাকা এখন বাকি আছে, সেটা মনে আছে তো?”

দেবায়ন হেসে উত্তরে বলে, “হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ, পাঁচ লাখ দেবো তোমাকে। আর হানিমুনে তুমি স্কটল্যান্ড যেতে চেয়েছিলে তার বিজনেস ক্লাসের আসা যাওয়ার ভাড়া দেবো।”

কস্তূরী দেবায়নের দিকে হাওয়ায় একটা চুম্বন ছুঁড়ে অনুপমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “কিছু মনে কোরো না যেন।”
 
অনুপমা কপট অভিমান দেখিয়ে হেসে কস্তূরীকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি আবার আমার বরের সাথে ঢলে যাওনি তো?”

কস্তূরী হেসে জবাব দেয়, “না না মিসেস বসাক। আজ প্রথম মিস্টার বসাকের সাথে সামনা সামনি দেখা হচ্ছে। এতদিন ভিডিও চ্যাটিং করে গেছি আর ইমেলে কথা বার্তা হয়েছে।”

দেবায়ন অভিমান ভরা চাহনি নিয়ে অনুপমার দিকে তাকায়। অনুপমা ওর হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কোলের মধ্যে।

কস্তূরী বলতে শুরু করে, “বুড়ো রজতের অনেক কেচ্ছা। বৌ থাকা কালিন একটা অন্য মেয়ের সাথে মেলামেশা ছিল। বৌ জানতে পারে ওদের ব্যাপার আর তারপরে আত্মহত্যা করে। এই নিয়ে কেস চলেছিল কিন্তু টাকা খাইয়ে সব বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওর তিন ছেলের মধ্যে দুই জন বর্তমান। বড় জনের অনেকদিন আগেই গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। বাকি দুইজনের কেউই হোটেল বিজনেসে আসবে না বলে ধরে নেওয়া যায়। কারন দুই ছেলেই ডাক্তার, একজন থাকে লন্ডনে আর একজন নিউজিল্যান্ডে। বুড়ো মরলে হোটেল পাবে ওর বড় বৌমা।” কস্তূরী চোখ টিপে হেসে বলে, “কারন বর্তমানে বুড়োর এফেয়ার ওর বড় বৌমা, মেহেকের সাথে। মেহেক, চূড়ান্ত সেক্সি মহিলা, শরীরের আনাচে কানাচে যেন ক্ষিধে। বুড়োর পিঠের পেছনে মেহেক আবার একটা এফেয়ার করে বসে আছে এক ছোকরা ছেলের সাথে। বুড়ো শুধু ওর শরীর নিয়ে পড়ে থাকে, মেহেক ছেলেটাকে ভালোবাসে কিন্তু বুড়োর কবল থেকে মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত কিছু করতে পারছে না। ছেলেটার নাম সুভম, পুনের একটা আই টি কোম্পানিতে চাকরি করে, দিন পাঁচেক হলো ক্যালিফোর্নিয়া গেছে কিছু অফিসের কাজে।”

এই বলে ল্যাপটপে বেশ কিছু ছবি দেখায়। ছবি দেখিয়ে এক এক করে পরিচয় করিয়ে দেয়, রজতের সাথে, মেহেকের সাথে আর সুভমের সাথে। বেশ কিছু ছবিতে বুড়ো রজত আর বড় বৌমা মেহেক বেশ পাশাপাশি জড়াজড়ি করে বসে। সিসিলির কোন সমুদ্র সৈকতে রজতের সাথে মেহেকের কিছু অন্তরঙ্গ ছবিও আছে। কোন ছবিতে রজতের হাত মেহেকের পিঠের খালি অংশে, কখন কাঁধে, কখন রজত আর মেহেক পরস্পরকে চুমু খাচ্ছে। এর পরে কস্তূরী, মেহেক আর সুভমের বেশ কিছু অন্তরঙ্গ ছবি দেখাতে শুরু করলো। বেশ কয়েকটা ছবি গোয়ার সমুদ্র সৈকতে তোলা, সেখানে মেহেক সাগরের ঢেউয়ে ছোটো বিকিনি পরে দোল খাচ্ছে আর তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করছে সুভম। কস্তূরী এরপরে দেবায়নকে বিস্তারিত ভাবে সবার ঠিকানা, সবার ফোন নাম্বার, গাড়ির নাম্বার ইত্যাদি জানালো।

সব ছবি দেখার পরে দেবায়ন হেসে বলে, “ঠিক আছে পুনের ব্যাপার আমি সামলে নেব। এবারে ব্যাঙ্গালোরের কি খবর? মিস্টার দিলিপ কি করছে?”

ইতিমধ্যে রুম সার্ভিস এসে ওদের ডিনার দিয়ে যায়। স্মোকড স্যালমনের সাথে রেড ওয়াইন খেতে খেতে ওরা গল্প করে। অনুপমা জানতে পারল যে কস্তূরী, ব্যাঙ্গালোরের মেয়ে, সাইকোলজি নিয়ে পড়াশুনা করেছে। ইচ্ছে ছিল পুলিসে যাওয়ার কিন্তু গেল না, লোকের ওপরে নজর রাখার আর মেলামেশার বড় শখ তাই একটা প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর কোম্পানিতে চাকরি নেয়। ওর কাজ ছিল রিসেপ্সনিস্টের কিন্তু ওর বসো, প্রদীপের নেক নজরে কিছুদিনের মধ্যে চলে আসে ছোটো ছোটো কাজ হাতে নেয়। এর পরে নিজে থেকেই আলাদা হয়ে একা কাজ করে। দেবায়নের এই কাজ ওর কর্ম জীবনের সব থেকে বড় কাজ আর সেইজন্য দেবায়নকে ধন্যবাদ জানায় ওর ওপরে বিশ্বাস করার জন্য। ওর অনেকদিনের প্রেমিক, রুদ্রনাথ নায়ার, তার সাথে বিয়ে করতে চায়। ডিনার শেষে কস্তূরী ব্যাঙ্গালোর হোটেলের মালিক দিলিপের ব্যাপারে বলতে শুরু করে।

দিলিপ বিয়ে-থা করেনি, শুধু টাকা চেনে আর কিছু চেনে না। টাকা ছাড়া আরও দুটো জিনিসের প্রতি ওর টান, এক মদ দ্বিতীয় মেয়ে। যেহেতু বিয়ে করেনি তাই অবাধে মেয়েদের সাথে মেলামেশা করে, রোজ রাতে বিছানায় মেয়ে চাই। দিলিপের বিয়ে না করার কারন খুঁজতে গিয়ে জানা যায় যে কলেজে পড়াকালীন কণিকা নামের একটা মেয়েকে ভালবাসত। তাঁর সাথে বিয়ে না হওয়াতে শেষ পর্যন্ত আর বিয়ে করলো না। সেই থেকে শুধু মদ, মেয়ে আর টাকা নিয়ে পড়ে থাকে। কস্তূরী আরো খোঁজ নিয়ে দেখেছে যে কণিকা বর্তমানে বিধবা। এইখানে দেবায়ন বেশ ফাঁপরে পড়ে যায়। ভাবতে বসে কি ভাবে মিস্টার দিলিপকে জব্দ করা যায়।

দেবায়ন প্রশ্ন করে, “এই কণিকার ব্যাপারে কোন খোঁজ খবর নিয়েছো কি?”

কস্তূরী হেসে উত্তর দেয়, “নিশ্চয় মিস্টার বসাক। বর্তমানে কণিকা মুসৌরির কাছে একটা মিশনারি স্কুলে চাকরি করে, একটা ছোটো ছেলে আছে তাঁর।”

দেবায়ন মাথা চুলকে প্রশ্ন করে, “তার মানে দিলিপ এই কণিকার বর্তমান অবস্থার ব্যাপারে কিছুই জানে না।”

কস্তূরী মাথা নাড়ায়, “না জানে না। জানলে হয়তো মুসৌরি থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতো।”

দেবায়ন ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায়। দিলিপের কাছে টাকা আর নারী শরীরের প্রাচুর্য বর্তমান। ওকে এই সব দিয়ে ঠিক ভোলানো যাবে না। দেবায়ন ভেবে কুল পায়না, এই ব্যাঙ্গালোরের ডিল কি করে সম্ভব হবে। চিড়িক করে জ্বলে ওঠে অনুপমার চোখ, কিন্তু কস্তূরীর সামনে চুপ করে থাকে, সময় হলে দেবায়নকে বুঝিয়ে দেবে।

ডিনার শেষে দেবায়ন চেকবই বের করে একটা পাঁচ লাখ টাকার চেক কেটে কস্তূরীর হাতে ধরিয়ে দেয়। কস্তূরী, ল্যাপটপ গুটিয়ে, দেবায়নের হাতে একটা ছোটো মাইক্রো কার্ড দিয়ে জানিয়ে দেয় ছবি, তথ্য, কাগজ পত্রের স্ক্যান কপি, ঠিকানা, ফোন নাম্বার, গাড়ির নাম্বার ইত্যাদি যা যা দেবায়ন চেয়েছিল সব আছে এই মাইক্রো কার্ডে।

কস্তুরী চলে যাওয়ার পরে অনুপমা পোশাক বদলের জন্য বাথরুমে ঢোকে। সারাদিনের ক্লান্তি আর সারা সন্ধ্যের উত্তেজনা ধুয়ে ফেলে শরীর থেকে। ওদিকে বিছানায় একটা বারমুডা পরে দেবায়ন তাঁর প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করে। পরনের কাপড় বদলে একটা পাতলা ফিনফিনে স্লিপ চড়িয়ে দেয় গায়ে। স্লিপের নিচে শুধু ব্রা আর প্যান্টি পরা। স্লিপ ফিনফিনে হওয়ার জন্য ভেতরের ব্রা আর প্যান্টি পরিষ্কার দেখা যায়। অনুপমার গজ দাঁতের মোহিনী হাসি আর লাস্যময়ী রুপ থেকে দেবায়ন আর থাকতে পারে না। এক ঝটকায় অনুপমার নধর তুলতুলে দেহপল্লব কোলে তুলে আছড়ে দেয় বিছানার ওপরে। দেবায়নের বলিষ্ঠ শরীরের নিচে পিষে যায় অনুপমার নধর কমনীয় দেহপল্লব। চোখ বুজে দুই হাতে দয়িতের গলা জড়িয়ে নিজেকে উজাড় করে দেয়।

হটাত মনের কোণে উদয় হয় অব্যক্ত এক বেদনা, বন্ধ দ্বারের পেছনে অনেক কিছু লুকিয়ে রাখা কথা। না জানালে ওর বুক যে আজ রাতে ফেটে যাবে কিন্তু তাঁর আগে জানতে চায় যে সত্যি কি জার্মানি গিয়ে দেবায়ন আর শ্রেয়া কিছু করেছিল?

অনুপমার ঠোঁটে চুমু খাওয়ার সময়ে দেবায়ন অনুভব করে যে ওর প্রেয়সী হটাত করে ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। অনুপমার চোখের কোণ চকচক দেখে দেবায়ন প্রশ্ন করে, “এই পুচ্চিসোনা তোর আজকে হয়েছে কি বলতে পারিস? বিকেল থেকে শুধু তোর চোখে জল দেখছি।”

অনুপমাকে বুকের ওপরে জড়িয়ে দেবায়ন চিত হয়ে শুয়ে পড়ে। অনুপমা ওর বুকের ওপরে মাথা রেখে হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি শোনে মন দিয়ে। তার কিছু পড়ে মিহি দ্বিধা ভরা কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ঠিক ঠিক উত্তর দিবি?”

অনুপমার সুন্দর গোল মুখ আঁজলা করে ধরে উত্তর দেয়, “আমি তোর কাছে খোলা বই তাও কি জানতে চাস বল।”

দ্বিধা জড়ানো কণ্ঠে অনুপমা প্রশ্ন করে, “জার্মানি গিয়ে তুই আর শ্রেয়া কি কিছু করেছিস?”

দেবায়ন হেসে ফেলে অনুপমার প্রশ্ন শুনে, “না রে পাগলি মেয়ে। তোকে না জানিয়ে কি কারুর সাথে আজ পর্যন্ত শুয়েছি?”

অনুপমার মনে তাও যেন একটা প্রশ্ন থেকে যায়, “সত্যি বলছিস আমাকে না আমার মন রাখার জন্য মিথ্যে বলছিস?”
 
দেবায়ন ওর গালে কপালে সারা মুখে অজস্র চুমু খেয়ে বলে, “এই তোকে ছুঁয়ে বলছি। আসলে জার্মানি গিয়ে অনেক কিছু ঘটেছে যেটা ঠিক আমিও বুঝে উঠতে পারছি না তাই আর তোকে বলা হয়নি।”
অনুপমা প্রশ্ন করে, “মানে? কি হয়েছে আর কি বুঝতে পারিস নি?”

দেবায়ন জানায় যে ওরা ফ্রাঙ্কফারটে পৌঁছানোর পরে দেবায়ন ব্যস্ত হয়ে যায় মিস্টার হেরজোগের সাথে আর মিস্টার মেরকেলের সাথে ওদের কন্সট্রাক্সান কোম্পানির ব্যাপারে। সুপর্ণা ম্যাডাম আর দীপঙ্করদা, জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের আইটি ডিপার্টমেন্ট আর মারকেটিং ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে যায়। প্রথম কয়েক দিন শ্রেয়া সবার সাথেই ছিল, ইন্দ্রনীলও সাথেই ছিল। দিন দুই যেতে না যেতেই শ্রেয়া আর ইন্দ্রনীলের ব্যবহার ওর চোখে লাগে। ইন্দ্রনীলের সাথে এই অন্তরঙ্গ ব্যবহারের ব্যাপারে বেশ কয়েকবার ওকে জিজ্ঞেস করেছে এই ব্যাপারে কিন্তু শ্রেয়া প্রতিবার সঠিক জবাব এড়িয়ে উত্তরে জানিয়েছিল যেহেতু ইন্দ্রনীল ওদের এই ব্যাবসা আনতে সাহায্য করেছে তাই ওর সাথে ভালো ব্যবহার করছে। শ্রেয়া খুব চালাক মেয়ে, আর ওর মাথার মধ্যে কোন এক অভিসন্ধি চলছে, কিন্তু কোনদিকে ওর পা চলছে সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারল না। একরাতে দেবায়ন ওকে খেলাতে চেয়েছিল, ডিনারের পরে নিজের রুমে নিয়ে হুইস্কি খেতে দিয়েছিল কিন্তু শ্রেয়া সেই টোপ গেলেনি। খুব সুন্দর ভাবে এড়িয়ে গেছে দেবায়নকে।

সব শুনে অনুপমার বুক ফেটে চৌচির হয়ে যায়। প্রথমে নিজেকে ধিক্কার জানায় যে রূপকের কথায় ভেসে গিয়ে রূপকের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছিল আর দ্বিতীয় ওই জলপাইগুড়ির কথা লুকিয়েছে।

অনুপমার চোখের বেদনা দেবায়ন ঠিক পড়ে ফেলে আর প্রশ্ন করে, “এইবারে ঠিক ঠিক বলতো কি হয়েছে তোর?”

অনুপমা মাথা নিচু মুখ ঢেকে কাঁপা গলায় বলে, “আমি আর রূপক একদিন...”

হটাত করে দেবায়নের মাথা ঝনঝন করে ওঠে। অনুপমার মুখ নিজের দিকে তুলে দেখে যে ওর চোখ বন্ধ আর চোখের কোল থেকে একটা সরু জলের দাগ। দেবায়ন বুঝতে পারে যে কুণ্ঠাবোধে অনুপমার বুক ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। পাপ পুন্য, ভালোবাসা প্রতারণা সব কিছু মানুষের মনের বিভিন্ন অভিব্যক্তি। ওর অনুপমা ওকে ভাল না বাসলে বুক ঠুকে এই কথা বলতে পারতো না। যদি লুকিয়ে রাখতো তাহলে হয়তো দেবায়ন কোনদিন জানতেও পারতো না ওদের মাঝে কি হয়ে গেছে।

অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকে দেবায়ন, তারপরে ওর গালে হাত দিয়ে বলে, “এতদিন চুপ করে ছিলিস কেন?”

অনুপমার গলা শুকিয়ে আসে, দুই চোখে শ্রাবনের বারিধারা, “জানিনা, বলতে সাহস পাচ্ছিলাম না। তোর সামনে করা এক জিনিস আর পেছনে করা অন্য জিনিস।”

দেবায়নঃ “সে তো আমিও অন্যের সাথে শুয়ে এসেছি, তাতে এতো মাথা ব্যাথা কেন? লুকিয়ে রাখলেই পারতিস। তোকে দেখে অথবা রূপককে দেখে আমি এবারে সন্দেহ করতে পর্যন্ত পারিনি।”

অনুপমা ভাষা হারিয়ে চোখ বন্ধ করে ওর বুকে মাথা গুঁজে অঝোরে কাঁদে, “আমি আর পারছি না। রোজ মনে হতো কেউ যেন আমাকে চড় মারছে। আমি তোকে খুব ভালোবাসি বাকি তোর ওপরে...”

দেবায়ন ওর চোখের জল মুছে ওকে সান্তনা দিয়ে বলে, “শোন পুচ্চিসোনা, আমি তোকে ভালোবাসি আর তুই আমাকে ভালোবাসিস। আমাদের মাঝে সেটা বেঁচে থাকলেই সব থেকে বড়। জানি কিছু কথা বললে মনে হবে এক বিজ্ঞ ব্যাক্তির কথা, কিন্তু এই দেহ, এই রুপ কতদিন ধরে রাখা যায়? কেউ চিরকুমার নয়। যেখানে হৃদয়ের মিল থাকে সেখানে কোনদিন শারীরিক আনন্দ ফলপ্রসু হয় না। আজ আমরা এর সাথে ওর সাথে সেক্স করে, মদ খেয়ে, টাকা উড়িয়ে নেচে বেড়াচ্ছি কিন্তু একসময়ে এই সব তেতো হয়ে যাবে। আসল প্রেম হচ্ছে একসাথে বুড়ো হওয়া, পরস্পরের সাদা চুলে রঙ মাখিয়ে দেওয়া, নকল দাঁত জলের গ্লাসে রাখা, চশমা খুঁজে দেওয়া, তখন তুই থাকবি আমার পাশে আর আমি তোর পাশে। গতকাল একটু বয়ে গিয়ে রূপকের সাথে কি করেছিস, অথবা আগামী কাল অন্য কারুর সাথে শুয়ে কাটাবি সেই নিয়ে আমার বিশেষ মাথা ব্যাথা নেই। যেদিন বুঝবো যে সত্যি তুই আর...”

কথা শেষ করার আগেই দেবায়নের ঠোঁটের ওপরে হাত চেপে ফুঁফিয়ে কেঁদে ফেলে অনুপমা, ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নিজেকে উজাড় করে দেয় দেবায়নের বাহুপাশে। সেই রাতে দুই নরনারী প্রেমের সুখের সাগরে অনন্ত কালের জন্য ভেসে যায়। প্রথম মিলনের চেয়েও সেই রাতের মিলন ওদের যেন আরও মধুর মনে হয়। অনুপমার মনে হয় যেন হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা আবার খুঁজে পেয়েছে।

সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট টেবিলে অনুপমা, দেবায়নকে দুষ্টু হেসে প্রশ্ন করে, “আমি না আসলে তুই কি কস্তূরীর সাথে রাত কাটাতিস?”

দেবায়ন মিচকি হেসে বলে, “যা সেক্সি মাল, ওকে দেখে যে কারুর মাল বসে বসে পড়ে যাবে।”

অনুপমা ওর গালে একটা আলতো চাঁটি মেরে কপট অভিমান দেখিয়ে বলে, “বৌ পাশে বসে তাও অন্য মেয়ের কথা চিন্তা করে।”

দেবায়ন টেবিলের তলা থেকে ওর তলপেটের কাছে হাত নিয়ে আলতো টিপে বলে, “সোনা, ওর কথা তুই এনেছিস আমি আনিনি। তার মানে ওর সাথে তোর করার ইচ্ছে ছিল।”

অনুপমা আবার একটা চাঁটি মেরে বলে, “ধুর শয়তান। হাত সরা ওইখান থেকে।”

দেবায়নের হাত বেশ নিচে নামতে গিয়েও থেমে যায়।

অনুপমা ওকে জিজ্ঞেস করে, “তুই এই সব তথ্য নিয়ে কি ভাবে প্যাঁচ লাগাবি?”

দেবায়ন অনুপমার থুতনি নাড়িয়ে বলে, “আমি আগেই বলেছি, অনেক সময়ে চিরাচরিত পন্থা, মেয়েদের শরীর কাজে দেয় না। এই তিন জায়গা ঠিক সেই রকম জায়গা তাই কাকুর একটু অসুবিধে হয়েছিল। প্রথম হচ্ছে উটি, আমরা উটি যাবো পারিজাতকে ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলবো যে আমার হাতে হোটেল তুলে দিলে আবার স্বমহিমায় ফিরে আসবে না হলে এই যে গত কোয়াটারে চার কোটি আয় হয়েছে, সেটা কমে লাখে চলে আসবে। যদি না মানে তাহলে কিছুই করবো না, ওর হোটেলের কর্মীদের একটু খেপিয়ে দেবো। আগামী তিন চার মাসের মধ্যে কাজ হয়ে যাবে। কেননা আমাদের হাতে ওই হোটেলের পঁচিশ শতাংশ। আয় কমে গেলেই, বোর্ড মিটিংয়ে ওকে যা তা বলে অপমান করবো। যদিও আসলে সেটা আমি করতে চাইনা, ওকে শুধু ভয় দেখাতে চাই। এই ভয়ে যদি কাজ হাসিল হয় তাহলে ব্যাস, হোটেলের পঞ্চান্ন শতাংশ আমাদের হাতে।”
 
অনুপমা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “এটা কি ঠিক উপায় হলো, পুচ্চু?”

দেবায়ন বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে, “কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে, একজন অনেক আলবাল বকে অনেকের হত্যা করিয়েছিল, সেই কথা পড়ে সবাই তাকে বাহবা দেয়। এইখানে কোনটা ভুল কাজ করছি আমি?”

অনুপমাঃ “না মানে...”

দেবায়নঃ “ব্যাবসায় সব ঠিক আর আমি ওকে ব্ল্যাকমেল করছি না পুচ্চি। রীতিমতন টাকা দিয়ে কিনতে চাই ওর হোটেল। এর পরে ওকে টাকাও দেবো না।”

অনুপমাঃ “আর এই পুনের হোটেল? হোটেলের আয় ভালো, মিস্টার রজত কেন তোকে ওর শেয়ার বিক্রি করে দেবে? এই রজত আর মেহেক, দুইজনেই বেশ পাক্কা খেলোয়াড়। এখানে ওদের প্যাঁচে খেলাতে বেশ মুশকিল হবে মনে হয়।”

দেবায়ন মাথা চুলকে বলে, “ওইখানে একটু ভাবতে হবে ঠিক কাকে আগে প্যাঁচে ফেলা যায়। দুইজনের অবৈধ সম্পর্ক সুতরাং যে কোন কাউকে জালে ফেলতে পারলে অন্য জন জালে জড়িয়ে যাবে। এখন কথা হচ্ছে আগে মেহেক না আগে রজত। একজনকে বাগে পেলেই দ্বিতীয় জন হাতের মুঠোর মধ্যে চলে আসবে।”

অনুপমা হেসে বলে, “আমার কি মনে হয় জানিস, প্রথমে আমাদের মেহেকের সাথে কথা বলা উচিত।”

দেবায়ন ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “মেহেকের সাথে? আমি ভাবছিলাম রজতের সাথে সরাসরি কথা বলে পরিষ্কার হয়ে যাওয়া। মেহেকের সাথে কি কথা বলা যায়?”

অনুপমা হেসে বুক ঠুকে বলে, “না, মেহেকের সাথে কথা বললে বেশি কাজে দেবে। ওর সাথে আমাকে কথা বলতে দে।”

দেবায়ন চাপা গর্জে ওঠে, “না, আমি তোর মাথা ছুঁয়ে মিমির কাছে প্রতিজ্ঞা করছিলাম যে আমার কোন কাজে তোকে নামাবো না। শুধু তোর জেদের জন্য তোকে নিয়ে আসা, দয়া করে এই সবে একদম মাথা গলাস না, প্লিস পুচ্চি।”

ওর কথা শুনে অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে বলে, “একদিন আমি তোর অর্ধাঙ্গিনী হব। তখন তোর পাপ পুণ্যের বোঝা সবকিছু আমাকে মেপে নিয়ে ভাগ করতে হবে। মাকে কিছু না জানালেই হলো আর আমি মেহেকের সাথে কথা বলতে চাই ব্যাস, তাহলেই কাজ হয়ে যাবে। তুই নিজেই বলেছিস যে মায়ের পথে আমাকে হাঁটাবি না, আমি সেই পথে হাঁটছিনা শুধু মাথা খেলাতে চাই।”

দেবায়ন বড় শ্বাস নিয়ে বলে, “ঠিক আছে আলাপ দিয়ে শুরু করিস আমি শেষ করবো।”

অনুপমাঃ “ওকে, সেটাই করবো। কিন্তু মেহেককে কি ভাবে প্যাঁচে ফেলা যায় বলতো?”

দেবায়ন মিচকি হেসে বলে, “মিস্টার রজত রাঘব বোয়াল কিন্তু ওর হাতের চাবিকাঠি মেহেকের হাতে। মেহেক একদিকে রজতকে খেলাচ্ছে কারন ওইখানে টাকা পয়সা আছে, অন্যদিকে শুভমকে মনে হয় ভালোবাসে। মেহেককে এটা জানাতে হবে যে এই শুভমের ব্যাপারে রজতকে জানিয়ে দিলে ওর কি অবস্থা হতে পারে। এর মধ্যে অন্ধকারে একটা ঢিল ছোঁড়া যেতে পারে।”

অনুপমা মন দিয়ে ওর কথা শোনে। দেবায়ন বলে, “রজতের বড় ছেলে, রাজেশের মৃত্যুর পেছনে কে দায়ী। যদি একটু খুঁচিয়ে দেখা যায় তাহলে দেখবি আসল কথা বেরিয়ে যাবে। আমার যতদূর মনে হয়, রজতের সাথে ওর বড় বৌমার অবৈধ সম্পর্ক রাজেশ মারা যাওয়ার আগে থেকেই ছিল। হতে পারে যে রজত আর মেহেক মিলে রাজেশকে মেরে ফেলেছে।”

অনুপমা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে ওর মুখের দিকে, এতো শত ভেবে দেখেনি অনুপমা। দেবায়ন হেসে ওর মুখ বন্ধ করে বলে, “দাঁড়া পুচ্চি ডারলিং, একবার সামনা সামনি পেলে মেহেকের কত চর্বি আছে সেটা বোঝা যাবে।”

অনুপমা মিচকি হেসে বলে, “মেহেক যা সেক্সি মহিলা, তুই খুব সহজে কিন্তু ওকে বিছানায় ফেলতে পারতিস আর সব উগড়ে দিতো।”

দেবায়ন, অনুপমার থুতনি নাড়িয়ে আদর করে বলে, “না ডারলিং না, মেহেক সেক্সি বটে কিন্তু মাথায় জটিল বুদ্ধি ধরে। ওর সাথে যৌন সঙ্গম করলেও ওর পেট থেকে অত সহজে কথা বের হবে না। ওকে সাপের প্যাঁচে না ফেললে ওই মাল কথা বলবে না। ওকে হাত করা সহজ কাজ কেননা আমাদের কাছে ওদের বিরুদ্ধে প্রচুর তথ্য আছে আর অনেক ফাক ফোঁকর আমাদের জানা যেখানে কোপ মারলেই ওরা নড়ে উঠবে।” একটু থেমে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে বলে, “মুশকিল হচ্ছে দিলিপ বাবুকে নিয়ে। সেইখানে কোন কিছুই খাটতে দেখছি না। ওইখানে শরীর দিয়ে অথবা টাকা দিয়ে কাজ হবে না। দিলিপের কাছে মেয়ের শরীর কোন কাজে আসবে না আর টাকার ব্যাপারে বেশ আঁটসাঁট।”

অনুপমা হেসে বলে, “পুচ্চুসোনা, দিলিপের ব্যাপার হৃদয়ের ব্যাপার, প্রেমের ব্যাপার। খুব সন্তর্পণে যদি দিলিপের নাড়ি ধরতে পারি তাহলে আমাদের কাছে চিরকাল ঋণী হয়ে থাকবে দিলিপ।”

দেবায়নঃ “মানে?”

অনুপমাঃ “খুব সরল ব্যাপার কিন্তু কঠিন রাস্তা, দুই বিরহ কাতর প্রেমিক প্রেমিকাকে মিলিয়ে দাও। দেখবি তোর পায়ের ধুলো মাথায় করে রাখবে।”

দেবায়ন প্রশ্ন করে, “মানে কি বলতে চাইছিস? আমরা কণিকার সাথে দেখা করবো আর ওকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ব্যাঙ্গালোর নিয়ে আসবো?”

অনুপমা হেসে ওর গাল টিপে বলে, “এই তো সোনা ভাবতে শিখেছে। কিন্তু আমরা উলটোটা করবো। মানে দিলিপ বাবুর সাথে আগে দেখা করবো তারপরে ওকে নিয়ে যাবো মুসৌরি।”

দেবায়নঃ “তাহলে কাকে দিয়ে শুরু?”
 
অনুপমা, “পুনে দিয়ে শুরু। ভুরি ভোজের আগে যেমন শুক্তো পাতে দেওয়া হয় তেমনি, শুরুতে লড়াই, তারপরে বুদ্ধির খেলা, শেষে ভালোবাসা। আগে আমরা পুনের কাজ হাসিল করবো। প্রথমে মেহেকের সাথে দেখা করবো তারপরে মিস্টার রজত। একবার আমাদের প্যাঁচে পড়ে গেলে ওইখান থেকে কাজ হাসিল করতে বেশি দেরি হবে না। তারপরে উটি মিস্টার পারিজাত, সেখানে তুই যে ভাবে চলতে চাস সেই ভাবে খেলে যাস। তারপরে আমরা যাবো ব্যাঙ্গালোর, মিস্টার দিলিপের সাথে দেখা করতে হবে বন্ধু হিসাবে, বিজনেস ম্যান হিসাবে একদম নয়। দিলিপের সাথে আমি কথা বলবো। পুরানো প্রেমের কথা শুনে আশা করি দিলিপ বাবু গলে যাবে আর ওকে নিয়ে আমরা যাবো মুসৌরি, সেখানে কণিকার সাথে মিলন। এইসবের মাঝে ঘুনাক্ষরেও যেন বিজনেসের কথা না ওঠে। কণিকার সাথে দেখা হওয়ার পরেই হোটেলের কথা উঠাবি তার আগে নয়।”

খাওয়া শেষ করে দেবায়ন অনুপমার গালে একটা চুমু খেয়ে বলে, “তাহলে আজ বিকেলেই বেরিয়ে পড়া যাক পুনের উদ্দেশ্যে।”

খাওয়া শেষ করে দুইজনে রুমে ফিরে যায়। রুমে ঢুকে দেবায়ন অনুপমা বলে, মেহেককে ফোন করতে; সেই অনুযায়ী অনুপমা মেহেককে ফোন করে। অনুপমার গলার আওয়াজ শুনে মেহেক প্রথমে ওকে চিনতে পারে না। অনুপমা নিজের পরিচয় দেয় আর তারপরে মেহেক ওকে চিনতে পারে। মেহেক জিজ্ঞেস করে ফোনে কি কথা জানাতে চায়। অনুপমা জানায় যে রাতে ওর সাথে দেখা করতে চায় এবং ব্যাবসা সংক্রান্ত আর আনুসঙ্গিক কিছু বিষয়ে কথা বলতে চায়। মেহেক নিজের বাড়ির ঠিকানা দিয়ে বলে যে বিকেলে বাড়িতে ওদের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে।

দেবায়ন জিজ্ঞেস করে কেমন মনে হলো মেহেকের সাথে কথা বলে। জবাবে অনুপমা জানায় যে মেহেক বেশ চতুর মহিলা, অনুপমার ফোন পেয়েই বুঝে গেছে যে হোটেলের ব্যাপারে কথা বলতে চায়।

বিকেলের ফ্লাইট ধরে দুইজনে পুনে চলে আসে। যে হোটেল কেনার ছিল, সেইখানে না উঠে একটা বড় হোটেলে রুম বুক করে। সন্ধ্যের পরে দুইজনে মেহেকের ফ্লাটে পৌঁছে যায়। উচ্চবিত্ত সমাজের মেয়ে অনুপমা, ভালো ভাবে জানে কি ভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে হয় এই সব কাজের জন্য। হাঁটু পর্যন্ত চাপা ফর্মাল গাড় নীল রঙের স্কার্ট, গায়ে সাদা ডোরা কাটা জামা, গলায় একটা স্কার্ফ আর তার ওপরে একটা সামার কোট। দুই পায়ে ন্যুড স্টকিংস, হাতে ট্যাবলেট আর ডান হাতের কব্জিতে সোনার ঘড়ি। দেখে মনে হয় কঠোর এক ব্যাবসাদার নারী কাজ হাসিল করতে বেরিয়েছে। ওর কথা মতন দেবায়ন গাড় বাদামি রঙের সুট পরে।

গাড়ি করে যেতে যেতে অনুপমা আরও একবার ট্যাবলেট খুলে মেহেক আর রজতের সব তথ্য দেখে নেয়। বহুতল ফ্লাট কমপ্লেক্সের দশ তলায় বেশ বড় ফ্লাট নিয়ে মেহেক থাকে তার ছোটো ছেলেকে নিয়ে। কলিং বেল বাজাতেই বাড়ির চাকর এসে দরজা খুলে দেয় আর ওদের বসার ঘরে বসতে বলে। বেশ বড়সড় ফ্লাট, সুন্দর ভাবে সাজানো গোছানো। অফুরন্ত টাকার ছড়াছড়ি সেটা দেয়ালের পেন্টিং আর শো কেসে রাখা পুতুল দেখেই বোঝা যায়। এই চেয়ে বেশি প্রাচুর্যে অনুপমা বড় হয়েছে তাই ওর চোখে এই সব খুব সামান্য বলে মনে হয়।

কিছু পরে মেহেক বসার ঘরে ঢুকে অনুপমাকে আপাদমস্তক দেখে থমকে যায়। মেহেক ভাবতে পারেনি যে অনুপমা এতো রুচিশীল মেয়ে। ওর পোশাক আর চেহারার অভিব্যক্তি দেখে হন্তদন্ত হয়ে চাকরকে বলে ড্রিঙ্কস আনতে।

মেহেক ওদের বসতে বলে, “দাঁড়িয়ে কেন বসো তোমরা। আমার সত্যি ভাগ্য যে মিস্টার বসাক এসেছে আমার বাড়িতে। এমনিতে প্রতিবার হোটেল দেখেই ফিরে যায়। আজকেই কি কোলকাতা থেকে এখানে আসা হয়েছে।”

অনুপমা মেহেককে দেখে মিচকি হেসে বলে, “এতো তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। কিছু বিশেষ কথা আছে তাই আসা।”

দেবায়ন মেহেকের সাথে হাত মিলিয়ে সোফায় বসে। অনুপমা মেহেককে জরিপ করে নেয় আপাদমস্তক। কস্তূরী ঠিক বলেছিল, সুন্দরী আর লাস্যময়ী মহিলা মেহেক। শরীরের গঠন গোলগাল নধর আর চূড়ান্ত কামনার মাখামাখি। গায়ের রঙ অনুপমার চেয়ে একটু কম কিন্তু ফর্সা বলাই চলে। হাঁটু পর্যন্ত একটা চাপা ইভনিং ড্রেস পরা, তাতে শরীরের প্রতি অঙ্গ আর আকার ভালো করে বোঝা যাচ্ছে। স্তন বিভাজিকার অনেকটাই পোশাকের উপর থেকে বেরিয়ে এসেছে। স্তন জোড়ার আকার বেশ সুন্দর গোলগাল। বিশেষ পাতলা না হলেও বেশ সুন্দর নরম কোমর আর বিশেষ দ্রষ্টব্য ওর দুই পাছা। নধর গোলগাল নরম পাছা একটু বেশি বড় আর পেছনের দিকে ফুলে রয়েছে। তার নিচে গোলগাল মসৃণ থাই, আলো যেন পিছলে পড়ছে ওই থাই জোড়ার মসৃণ ত্বকের ওপরে। ওর টানাটানা চোখ আর চাহনি দেখেই দেবায়ন বুঝতে পারে যে এই শরীরে অনেক ক্ষিধে, টাকার ক্ষিধে আর সেই সাথে যৌনতার ক্ষিধে দুটোই আছে। এখন এই অসামান্য সর্পিণী কিভাবে দমন করবে অনুপমা সেটাই দেখার।

মেহেক সামনের ছোটো কাউচে বসে পানীয়ের গ্লাস ওদেরকে দিয়ে অনুপমাকে প্রশ্ন করে, “গত বার তোমার বাবা একা এসেছিলেন, তার আগে অবশ্য মিস্টার বসাক আর মিস্টার সেন এক বার ঘুরে গেছেন। এবারে তোমরা এলে কি ব্যাপার?”

অনুপমা হেসে বলে, “না এমনি, এবারে আমার মিস্টার একাই আসতো, কিন্তু ওকে একা ছাড়তে ঠিক মন করলো না।”

মেহেক অবাক চোখে প্রশ্ন করে, “তোমরা কবে বিয়ে করলে?”

দেবায়ন হেসে ফেলে, “সমাজের চোখে বিয়ে অনুষ্ঠান হয়নি ঠিক কিন্তু মন বাঁধা তাই না নিয়ে এসে পারলাম না।”

মেহেক মিচকি হেসে বলে, “হ্যাঁ সত্যি বলেছো। তা কি বিষয়ে কথা বলতে চাও আমার সাথে?”

অনুপমা কিছু একটা বলতে উদ্যত ছিল, কিন্তু দেবায়ন ওকে থামিয়ে দিয়ে নিজেই বলতে শুরু করলো, “এবারে ভাবলাম যে হোটেলের ভবিষ্যতের মালকিনের সাথে আগে দেখা করে যাই তাই তোমার কাছে আসা।”

মেহেক এক মন মোহিনী হাসি দিয়ে বলে, “আমি ওই হোটেলের বিষয়ে কিছুই জানি না। হোটেলের সব কিছু আমার শ্বশুর মশাই দেখেন।”

দেবায়ন পালটা হেসে জবাব দেয়, “আমি জানি তুমি হোটেলের বিষয়ে মাথা ঘামাও না। তুমি যে বিষয়ে মাথা ঘামাও সেই বিষয়ে কথা বলতে এসেছি আমরা।”

কথা শুনে মেহেকের ভুরু কুঁচকে যায়, গ্লাস নামিয়ে প্রশ্ন করে, “তোমার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না।”

দেবায়ন ওর চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে, “তাহলে একটু খুলেই কথা বলা যাক তোমার সাথে। মিস্টার সেন, মানে আমার শ্বশুর মশাই এই হোটেল কিনতে চায়। এবারে বল কি করলে ওই হোটেল সুস্থ ভাবে আমাদের হাতে আসবে।”

মেহেক হেসে জবাব দেয়, “আগেই বলেছি হোটেলের ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। কেন আমার সাথে এই ব্যাপারে কথা বলছো ঠিক বুঝতে পারছি না। তুমি ভালো ভাবে জানো আমি শ্বশুরের এই সব বিষয়ে একদম মাথা গলাই না।”
 
দেবায়ন মেহেকের চোখের ওপর থেকে চোখ না সরিয়ে দৃঢ় শীতল কণ্ঠে বলে, “তুমি হবু মালিক হতে চলেছো। এটা ঠিক কথা না ভুল?”

মেহেক কপট হেসে জবাব দেয়, “শ্বশুর মশাই যা করবেন সেটা তাঁর ব্যাপার। আমি ছাড়া আরও দুই ছেলে আছে তাঁর।”

অনুপমা প্রশ্ন করে, “তোমার স্বামী, কতদিন হলো গত হয়েছেন?”

মেহেকের গলার স্বর কঠিন হয়ে যায়, “হটাত এই প্রশ্নের কি মানে?”

অনুপমাঃ “তুমি চাকরি বাকরি কিছু করো না তাও এই বাড়ি কি ভাবে মেন্টেন করছো?”

মেহেক একটু রেগে যায় অনুপমার প্রশ্ন শুনে, “সেটা তোমার জেনে দরকার?”

অনুপমা তির্যক হেসে বলে, “আমার দরকার শুধু এই জন্যে যে কি ভাবে ওই হোটেলের মালিকানা সত্ত্ব আমি কিনতে পারবো।”

দেবায়ন মেহককে প্রশ্ন করে, “তুমি কি শুভম নামে কাউকে চেন?”

মেহেকের চেহারা হটাত করে ফ্যাকাসে হয়ে যায়, কিন্তু বুদ্ধিদিপ্তা নারী চট করে নিজেকে সামলে নিয়ে জবাব দেয়, “কে শুভম? ওই নামে আমি কাউকে চিনি না। আর কেনই বা এই সব কথা আমাকে বলছো তুমি? আসলে কি চাই তোমাদের?”

অনুপমা হিম শীতল কণ্ঠে বলে, “হোটেলের মালিকানা চাই আর সেটার চাবি কাঠি তোমার হাতে। আমি তোমাকে ঠকিয়ে হোটেল চাইছি না, রীতিমতন টাকা দিয়ে কিনতে চাই হোটেল।”

এক সাথে দুই দিক থেকে প্রশ্নের বাণে জর্জরিত হয়ে মেহেক হাঁফিয়ে ওঠে। চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, চেহারা লাল হয়ে যায়, “আমি বুঝতে পারছি না তুমি কি বলতে চাইছো।”

অনুপমা কিছু বলতে যায় কিন্তু দেবায়ন ওকে থামিয়ে হিম শীতল কণ্ঠে মেহেককে বলে, “দেখো মেহেক, আমরা তোমার ব্যাপারে আর মিস্টার রজতের ব্যাপারে আর শুভমের ব্যাপারে সব জানি।” এবারে মোক্ষম অস্ত্র ছাড়ে অনুপমা, “আমি জানি তোমার সাথে মিস্টার রজতের অবৈধ সম্পর্ক আছে। নৈতিকতার কথায় যাবো না, কিন্তু তুমি সম্পর্কে মিস্টার রজতের বৌমা।”

মেহেক গর্জে ওঠে, “কি উল্টো পালটা বলছো। বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে না হলে আমি এখুনি পুলিস ডাকবো কিন্তু।”

অনুপমা ট্যাবলেট খুলে ওর সামনে মিস্টার রজত আর মেহেকের সিসিলিতে তোলা বেশ কয়েকটা অন্তরঙ্গ ছবি দেখিয়ে বলে, “এর পরেও কি পুলিস ডাকতে চাও তুমি?”

ওই ছবি দেখে আতঙ্কে শিউরে ওঠে মেহেকের শরীর। চেহারা থেকে কেউ ওর সব রক্ত শুষে নিয়েছে। ঠোঁট কাঁপতে শুরু করে দেয়, কপালে ঘামের বিন্দু, গলা শুকিয়ে আসে মেহেকের। রক্ত চক্ষু থেকে চাহনি বদলে ভয়ার্ত রুপ নেয়। কম্পিত কণ্ঠে অনুপমা আর দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “কি করে পেয়েছো এই ছবি?”

অনুপমা শীতল কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “এটা সত্যি না মিথ্যে?”

নির্বাক মেহেক, কথা বলার শক্তি হারিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে।

দেবায়ন সোফা ছেড়ে উঠে মেহেকের কাউচের পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। ওর কাঁধের কাছে হাত রেখে ঝুঁকে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, “আরো ছবি আছে আমাদের কাছে মেহেক। তোমার আর শুভমের গোয়ার অন্তরঙ্গ ছবি আছে। দেখতে চাও কি? একবার ভেবে দেখো মেহেক। তোমার আর মিস্টার রজতের ছবি পুলিসের হাতে চলে গেল আর তোমার স্বামীর মৃত্যুর বিষয়ে কেউ আবার ওদের কানে কিছু ফুসফুস করে বলে দিল। অথবা ওই ছবিগুলো নিউজিল্যান্ড আর লন্ডনে তোমার দুই দেওরকে পাঠিয়ে দিলাম। কি হবে তারপরে মেহেক? মিস্টার রজত কি করবে?”

শ্মশানের নিস্তব্ধতা নেমে আসে বসার ঘরে। শুধুমাত্র এসির শব্দ শোনা যায়। লাস্যময়ী মেহেকের চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। মাথা নিচু করে বারেবারে সেই জল মুছে নেয় কিন্তু অনুপমার দিকে তাকাতে সাহস পায় না। দেবায়নের ঠোঁটে ভেসে ওঠে এক ক্রুর হাসি, এবারে মাছ জালে ফেঁসে গেছে।

মেহেকের ফ্যাকাসে চেহারা আর চোখের জল অনুপমাকে একটু নাড়িয়ে দেয়, ওকে সান্তনা দিয়ে বলে, “শোনো মেহেক কেঁদো না। আমি তোমার ক্ষতি করতে এখানে আসিনি।”

দেবায়ন মেহেকের দুই কাঁধে আলতো হাতের চাপ দিয়ে আস্বস্ত কণ্ঠে বলে, “মেহেক আমরা শুধু এইটুকু চাই যে তুমি মিস্টার রজতকে রাজি করাও। আমাদের চূড়ান্ত অফার চল্লিশ শতাংশের জন্য ত্রিশ কোটি টাকা দিতে রাজি। এর পরেও তোমার কাছে কিন্তু হোটেলের ত্রিশ শতাংশ মালিকানা থেকে যাবে। আমি বিনা পয়সায় তোমাকে ঠকিয়ে তোমার হোটেল হাতিয়ে নিচ্ছি না। ভেবে নাও এটা তোমার বদনামের দাম আমাদের চুপ থাকার দাম।”
 
ডুকরে কেঁদে ওঠে মেহেক, “আমি কি ইচ্ছে করে ওর সাথে জড়িয়েছি।” অনুপমা দেবায়নকে ইঙ্গিতে ফোনের রেকর্ডার চালু করতে বলে। মেহেক তার দুঃখের কাহিনী ওদের সামনে মেলে ধরে, “আমার শ্বশুর আমাকে টেনে নামিয়েছে এই বিপথে। আমার স্বামী আমাকে ঠিক ভাবে ভালবাসতে পারতো না আর সেই সুযোগ নেয় আমার শ্বশুর। আমি কচি মেয়ে ছিলাম, যৌন ক্ষিধেতে জর্জরিত আমার পা পিছলে যায় আর আমার শ্বশুর আমাকে সেই দেহের সুখ দেয়। তারপরে নিয়মিত আমাকে ওর বিছানা গরম করতে হয়। ওই রজত আমার শরীর একা ভোগ করার জন্য রাজেশকে পথ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। হ্যাঁ, শরীরের ক্ষিধে মেটানোর জন্য আমি বিপথে গেছি আর বলতে পারো আমার স্বামীর মৃত্যুর জন্য একপ্রকার আমি দায়ী। কিছুদিন পরে বুঝলাম যে বুড়োর জ্বালা শুধু চোখের জ্বালা, আমার শরীর নিয়ে আরও কিছু করতে চায়। রাজেশ মারা যাবার পরে আমার শারীরিক চাহিদা বলে কিছু ছিল, রজত সেটা নিজের বিজনেসের কাজে লাগাল। আমি অবাধে অনেকের সাথে যৌন সঙ্গম করলাম, আর রজত হোটেল বিজনেস বাড়িয়ে নিল, সেই সাথে একটা গাড়ির শোরুম খুলে ফেলল। আর দিনে দিনে আমাকে টাকা দিয়ে সাজিয়ে দিল। আমাকে ভালোবাসার আর কেউ রইল না। কি না করেছি ওকে উত্তেজিত করার জন্য। উলঙ্গ হয়ে ওর সামনে নেচেছি, বারান্দায় ব্রা প্যান্টি পরে দিনের বেলা দাঁড়িয়েছি, ওর সাথে পার্টিতে গেলে আমাকে ছোটো ড্রেস পরে যেতে হতো আর নিচে প্যান্টি পরতে দিতো না, কখন কোন রেস্টুরেন্টে বসে আমার যোনির ওপরে হাত দিয়ে আমাকে উত্তেজিত করেছে কিন্তু বিছানায় এলেই পাঁচ মিনিটে শেষ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত আমি ভালোবেসে ফেললাম একজনকে। চার বছর আগে একটা পার্টিতে গিয়ে শুভমের সাথে দেখা। খুব শান্ত শিষ্ট ভালো ছেলে। সেই রাতে আমি মদে চুড় হয়ে গেছিলাম, আমার শরীর হাতানোর জন্য আশেপাশের মানুষ যেন উপচে পড়েছিল। শুভম আর তাঁর একজন বন্ধু আমাকে সেখান থেকে উঠিয়ে আমার ফ্লাটে পৌঁছে দিয়েছিল। তারপরে আমি শুভমের প্রেমে পড়ে যাই। হ্যাঁ হ্যাঁ আমি শুভমকে ভীষণ ভালোবাসি। কিন্তু এইসব রজত জানেনা, জানলেই শুভমকে সরিয়ে দেবে অথবা আমার ছেলের ক্ষতি করবে। আমি এক প্রকার রজতের কেনা বাঁদি হয়ে আছি।”

কথা গুলো শুনতে শুনতে দেবায়নের মনে হলো যেন দ্বিতীয় পারমিতাকে চোখের সামনে দেখছে। অনুপমার হৃদয় শেষ পর্যন্ত নরম হয়ে যায় মেহেকের কথা শুনে।

ছলছল চোখে অনুপমা আর দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “তোমরা আমার সাথে কি করতে চাও? আমাকে পুলিসে দিতে চাও না আমাকে রজতের সামনে উলঙ্গ করতে চাও?”

অনুপমা মেহেকের হাত নিজের হাতের মুঠিতে নিয়ে বলে, “মেহেক তুমি কি চাও?”

অনুপমার হাতের ওপরে মেহেকের চোখের জল টপটপ করে পড়তে থাকে। দেবায়ন ওই চোখের জলে ভুলে যাওয়ার মতন মানুষ নয় তাই গর্জে ওঠে, “ওই কুমিরের কান্না আমার সামনে দেখিও না মেহেক। তুমি মিস্টার রজতকে রাজি করাবে সেটা...”

অনুপমা ওকে থামিয়ে দিয়ে শান্ত কণ্ঠে মেহেককে বলে, “তুমি কি চাও মেহেক?”

মেহেক ফুঁফিয়ে উঠে বলে, “আমি আমার অতীত ভুলে আমার ছোটো ছেলে নিয়ে এই বন্দিনী জীবন থেকে মুক্তি পেতে চাই। কিন্তু রজতের লোলুপ চোখ আমাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে বেড়ায়। সপ্তাহে তিন চার রাত ওর জন্যে ধরা বাঁধা, ওর গোলাম হয়ে থাকতে হয় আমাকে।”

অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “শুভম কি বলছে? তোমাকে নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে না কেন?”

মেহেক কাঁদতে কাঁদতে বলে, “ও খুব নিরীহ ভালো ছেলে তাই ওকে এই সব থেকে দুরে রেখেছি।”

অনুপমা বলে, “তুমি কি পারবে রজতের কাছ থেকে সাইন আদায় করতে?”

মেহেক চোখের জল মুছে কিছুক্ষণ ভেবে বলে, “আমি রজতের শেষ দেখতে চাই। তোমরা আমার পেছনে দাঁড়াবে?”

অনুপমা আর দেবায়ন মুখ চাওয়াচায়ি করে মেহেককে বলে, “তুমি যদি রজতকে খুন করতে চাও তাহলে কিন্তু আমরা তোমার সাথে নেই। আমরা খুনোখুনিতে কারুর সংগ দিতে নারাজ মেহেক। তোমাকে অন্য পন্থা অবলম্বন করতে হবে।”

মেহেক চিবিয়ে বলে, “খুব ইচ্ছে করে রজতকে খুন করি কিন্তু আমার পুত্রের জীবন ভেসে যাবে। তোমাদের চিন্তা নেই, কিন্তু আমাকে পাঁচ কোটি টাকা দিতে হবে।”

দেবায়ন ওর হাতে হোটেলের ফাইল তুলে দিয়ে হেসে বলে, “ঠিক আছে তোমার নামে পাঁচ কোটি টাকা, তবে এই কাগজে রজতের স্বাক্ষর চাই। আর কোন চালাকি নয়, মেহেক।”

মেহেক ফাইলে হাত না দিয়ে চোখের জল মুছে বলে, “কাল দুপুরে তোমরা আমার ফ্লাটে এসো, আমি রজতকে এইখানে ডেকে নেব। ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে একদম দুটোতে কলিং বেল বাজাবে। দু’বার বাজাবে তাহলে আমি বুঝে যাবো তোমরা এসেছো। বাকি আমার ওপরে ছেড়ে দাও, আমি ওকে নাচিয়ে দেবো কালকে।”

অনুপমা হেসে বলে, “তোমার মাথা বেশ চলে।”

মেহেক অনুপমার হাত চেপে কানে কানে বলে, “মাথার চেয়ে আমার শরীর ওর কাছে বেশি চলে।”

দেবায়ন মেহেকের কথায় বিশ্বাস করতে পারে না। ওর ভিজে চোখের দিকে ভীষণ ভাবে তাকিয়ে বলে, “কোন চালাকি করতে চেষ্টা কোরো না মেহেক। পুনেতে আমার অনেক চেনাজানা আছে আর আমাদের কাছে তোমাদের ছবি আছে। যদি একটু এদিক ওদিক করেছো তাহলে এই সব ছবি কিন্তু তোমার দুই দেওরের কাছে পৌঁছে যাবে। আর সেই সাথে পুলিসের কাছে তোমার বয়ান চলে যাবে যে তুমি আর রজত মিলে রাজেশকে হত্যা করেছো।”

মেহেক অনুপমার দুই হাত ধরে কাতর কণ্ঠে বলে, “না না, এমন কোরোনা প্লিস। আমি আমার একমাত্র পুত্রের নামে প্রতিজ্ঞা করছি কোন উলটো পাল্টা কিছু করবো না। তোমরা কালকে এসো আমি তৈরি থাকবো রজতকে নিয়ে।”

অনুপমা ওকে শান্ত করে বলে, “ঠিক আছে মেহেক কাল আমরা দুপুরে আসবো। কিন্তু মেহেক তোমাকে পাঁচ কোটি টাকা এখুনি দেওয়া সম্ভব নয়। তোমাকে ত্রিশ পারসেন্ট দেবো আবার পাঁচ কোটি, অনেক বেশি হয়ে গেল মেহেক।”

মেহেক চোখ টিপে মৃদু হেসে বলে, “না না, হোটেল পুরো তোমাদের হয়ে যাবে। রজত এমনিতেই ওর সত্তর পারসেন্ট আমাকে দিয়ে দিয়েছে শুধুমাত্র কাগজে স্বাক্ষর করেনি। আমার সত্তর পারসেন্ট তোমাকে দিয়ে দেবো, তুমি শুধু আমাকে পাঁচ কোটি টাকা দিও, আমি আর শুভম এই সব ছেড়ে ক্যালিফোর্নিয়া চলে যাবো।”
 
অনুপমা প্রশ্ন করে, “ক্যালিফোর্নিয়া?”

মেহেকঃ “শুভম কয়েকদিন আগে অফিসের কাজে ক্যালিফোর্নিয়া গেছে। ওখানে ওর এক বন্ধু আছে যে ওকে বলেছে ওখানে ওর চাকরি করিয়ে দেবে। রজত বেঁচে থাকতে আমি যদি দেশে থাকি তাহলে আমাকে ও শেষ করে দেবে তাই দেশ ছেড়ে চলে যাবো। এক ভিন্ন দেশে আর সেখানে গিয়ে আমরা এক নতুন জীবন শুরু করবো।”

অনুপমাঃ “শুভম কি জানে এই বিষয়ে?”

মেহেকঃ “শুভম একবার আমাকে বলেছিল এই কথা। এখান থেকে যদি তোমরা আমাকে বাঁচাতে পারো তাহলে আমি ওর সাথে কথা বলে নেব।”

দেবায়ন আর অনুপমা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে, মেহেকের কথায় ওদের ঠিক বিশ্বাস হয় না। কিন্তু মেহেক নিজের ছেলের নামে কথা দিয়েছে যে ও কোন কারচুপি করবে না।

দেবায়ন আর অনুপমা মেহেকের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে। হোটেলে ফিরে দুইজনে জল্পনায় বসে, যদি মেহেক কিছু কারচুপি করে তাহলে ওদের সামনে কি কি পথ আছে খোলা। ওদের দুটো কস্ট্রাক্সান কোম্পানি এখানে আগেও কাজ করেছে, এখানের অনেক লোক, অনেক গুন্ডা ওদের চেনাজানা। দেবায়নের লোকবলের প্রয়োজন, যদি রজত কিছু উলটোপাল্টা পদক্ষেপ নেয় তাহলে এক যুদ্ধের জন্য তৈরি থাকতে হবে ওকে। দেবায়ন একজন চেনা করপোরেটরকে ফোনে জানায় যে ওর কিছু লোক প্রয়োজন। সংক্ষিপ্ত ভাবে কাজের বিবরন দেয় আর বলে দরকার পড়লে চড়াও হতে না হলে শুধুমাত্র পাশে দাঁড়াতে হবে। ওই করপোরেটর মিস্টার সেনকে চিনতেন তাই আর না করে না। সারারাত দুইজনে আগামী দিনের উত্তেজনায় ঘুমাতে পারে না। সারা রাত জেগে নানা চিন্তা মাথার মধ্যে ভর করে আর ভাবে কিভাবে নিজেদের বাঁচানো যায় যদি ওরা কোন মুশকিলে পড়ে। শেষে দেবায়ন ঠিক করে যে অনুপমা ওপরে যাবে আর দেবায়ন নিচে বাকি লোকেদের সাথে দাঁড়িয়ে থাকবে। যদি অনুপমা মেহেকের বাড়িতে ঢোকার পরে ওকে দশ মিনিটের মধ্যে ফোন না করে তাহলে লোকজন নিয়ে দেবায়ন মেহেকের বাড়ি চড়াও হবে আর সেই সাথে পুলিসের কাছে যাবে। সব ঠিকঠাক করে শেষ রাতের দিকে ঘুমাতে যায় অনুপমা আর দেবায়ন।

ঠিক দুপুর বারোটা নাগাদ, লাঞ্চ সেরে মেহেকের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। পথে বাকি লোকজনকে ডেকে নেয়। ওদের মারসেডিজের পেছনে সার বেঁধে দুটো সাদা স্করপিও ভর্তি জনা দশেক লোক। অনুপমার বুক ধুকপুক করতে শুরু করে দেয়, কি হবে কি হবে সেই আশঙ্কায়। যদি মেহেক ওর কথা রাখে তাহলে কোন চিন্তা নেই কিন্তু সাবধানের মার নেই তাই আগে থেকে তৈরি হওয়া ভালো। দেবায়ন ওকে আস্বস্ত করে, অহেতুক চিন্তা করতে বারন করে। আশঙ্কা আর দুরন্ত উত্তেজনায় কাঁপতে শুরু করে অনুপমা, এটা যেন একটা নতুন এডভেঞ্চার ওর কাছে। নিয়মিত অফিসের কাজের চেয়ে এই উত্তেজনা ওকে বেশি উত্তেজিত করে তোলে। সারা রাস্তা দেবায়ন ওকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে।

ঠিক সময় মতন অনুপমারা পৌঁছে যায় মেহেকের ফ্লাটে। লিফট দিয়ে দশ তলায় চড়ে দুইজনে। দেবায়ন লিফটের কাছেই দাঁড়িয়ে থাকে আর অনুপমা এগিয়ে যায় মেহেকের ফ্লাটের দরজার দিকে। বুক ভরা শ্বাস নিয়ে একবার কলিং বেল বাজায়, একবার পেছন ফিরে ডেকে দেবায়নের দিকে। দেবায়ন ওকে সাহস দিয়ে দ্বিতীয় বার কলিং বেল বাজাতে বলে। অনুপমা দ্বিতীয় বার কলিং বেল বাজিয়ে দরজায় কান পেতে অপেক্ষা করে। দরজার ওপর পাশে পায়ের আওয়াজ শোনা যায়। অনুপমা ঘাড় ঘুরিয়ে দেবায়নকে দেখে ইশারায় জানায় যে কেউ আসছে আর দেবায়নকে লুকিয়ে যেতে অনুরোধ করে।

দরজা খুলে যায়। অনুপমা মেহেককে দেখে অবাক হয়ে যায়। সুন্দরী লাস্যময়ী মেহেক একটা ছোটো ফিনফিনে স্লিপ পরে। স্তন জোড়া স্লিপের উপর থেকে ছলকে বেরিয়ে এসেছে। স্তনের দিকে তাকাতেই অনুপমার শরীর ছনছন করে ওঠে, পীনোন্নত স্তন দুটো ওর দিকে উঁচিয়ে, স্তনের বোঁটা ফুলে রয়েছে আর পরিষ্কার ফুটে উঠেছে ফিনফিনে স্লিপের ভেতর থেকে। স্লিপের নিচে মেহেকের কমনীয় লাস্যময়ী অঙ্গ নিরাভরণ। ব্রা পরেনি তাই স্তনের গাড় বাদামি বোঁটা দুটো পরিস্কার দেখা যায় স্লিপের নিচে। নিচের দিকে চোখ যেতেই অনুপমা বুঝতে পারে যে মেহেক প্যান্টিও পরেনি। দুই মসৃণ জানুর মাঝে কালো কুঞ্চিত কেশের গুচ্ছ চেখে অনুপমার শরীরে কামনার আগুন লাগে। অনুপমার যোনি শিক্ত হয়ে ওঠে সামনের লাস্যময়ী নারীর কমনীয় অঙ্গ দেখে। ওর কোমর পাতলা আর দুই পাছা সেই তুলনায় বেশ বড় আর থলথলে। মেহেকের শরীরের কামুকতা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফুটে উঠেছে। ঠোঁটে এক মন মোহিনী হাসি, চোখের তারায় কামনার আগুন আর শরীরের আনাচে কানাচে লেগে রয়েছে যৌনতা। ওর অবিন্যস্ত চুল আর লাল গাল দেখে বোঝা যায় যে বাড়িতে মেহেক একা নয়, সাথে রজত আছে আর দুইজনেই অন্তরঙ্গ শারীরিক সুখে মগ্ন ছিল।

মেহেক ওর দিকে চোখ টিপে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ইশারা করে চুপচাপ বসার ঘরে আসতে। বসার ঘরে ঢুকে দেখে যে সারা বাড়ির পর্দা নামানো, সারা বাড়িতে এক আলো আঁধারির খেলা চলছে যেন। মেহেক ওর চোখে কামনার আগুন দেখে চটুল হাসে আর ইশারায় জানায় যে ওর ঘরে রজত উলঙ্গ। দেবায়নের কথা জিজ্ঞেস করাতে অনুপমা ইশারায় জানায় যে ও সিগারেট খেতে নিচে গেছে, একটু পরে চলে আসবে। মেহেক ইঙ্গিতে জানিয়ে দেয় যে ও ঘরে ঢুকে দুই বার কাশলে যেন অনুপমা ঢুকে পড়ে।

এমন সময়ে ঘরের ভেতর থেকে রজত আওয়াজ দেয়, “কে এসেছে?”

মেহেক অনায়াসে বলে, “কেউ না। কেউ হয়তো ভুল করে কলিং বেল বাজিয়ে দিয়েছে।”

রজতঃ “তোমার এতো দেরি হচ্ছে কেন তাড়াতাড়ি এসো?”

মেহেকঃ “এই ডারলিং, এই আসছি জল খেয়ে।”

এই বলে মেহেক ফ্রিজ খুলে একটা জলের বোতল বের করে কিছুটা জল স্তনের ওপরে ছিটিয়ে দেয়। ভিজে স্লিপ স্তনের সাথে লেপটে যায় আর ওর দুই বড় বড় নরম স্তন সম্পূর্ণ অনাবৃতের মতন ফুটে ওঠে। অনুপমার শরীরের প্রতিটি ধমনী চঞ্চল হয়ে ওঠে। মেহেক ওর দিকে এক কামুকী হাসি দিয়ে স্তন নাড়িয়ে, পাছা দুলিয়ে শোয়ার ঘরে ঢুকে যায়। সোফায় বসে অনুপমা জানু চেপে ধরে, তলপেটের পেশিতে লেগেছে আগুন, সারা শরীর কামনার লেলিহান শিখায় জ্বলতে শুরু করে। চুপচাপ বসে দেবায়নকে এস এম এস করে জানিয়ে দেয় যে পথ পরিষ্কার।

কিছু পরে দেবায়ন এসে ঘরে ঢোকে আর অনুপমা ওকে ইশারায় জানিয়ে যে শোয়ার ঘরে রজত আর মেহেকের মধ্যে খেলা শুরু হয়ে গেছে। কিছু পরে শোয়ার ঘর থেকে দুই বার কাশির আওয়াজ শুনে অনুপমা আর দেবায়ন উঠে দাঁড়ায়। ধির পায়ে শোয়ার ঘরের পর্দা সরিয়ে ঘরের ভেতরে উঁকি মেরে দেখে যে, বিছানায় সামনের দিকে পা ছড়িয়ে উলঙ্গ হয়ে বুড়ো রজত আধা শোয়া। সুন্দরী মেহেক ওর দুই পায়ের মাঝে হাঁটু গেড়ে বসে, পাছা উঁচু করে মাথা নিচু করে রজতের অর্ধ শক্ত লিঙ্গ মুখের মধ্যে নিয়ে চুষছে। পাছার ওপর থেকে স্লিপ সরে গিয়ে মেহেকের দুই ফর্সা গোল নরম পাছা পেছন দিকে বেরিয়ে এসেছে। দুই জানুর মাঝে ওর কুঞ্চিত কালো কেশে ঢাকা ফোলা যোনি দেখা যাচ্ছে। মেহেকের উলঙ্গ লাস্যময়ী দেহপল্লব আর রজতের লিঙ্গ চোষার দৃশ্য দেখে দেবায়নের পুরুষাঙ্গ মুহূর্তের মধ্যে কঠিন হয়ে যায়। আর অনুপমার যোনির ভেতরে তিরতির করে রসে ভরে যায়। নিজের অজান্তেই অনুপমা জানু চেপে ধরে আর বুকের কাছে হাত নিয়ে স্তন জোড়ার ওপরে আলতো বুলিয়ে আদর করে নেয়। ওর স্তনের বোঁটা ফুলে গেছে সামনের দৃশ্য দেখে। ওইদিকে বৃদ্ধ রজত, মেহেকের দুই স্তন হাতের মধ্যে নিয়ে টিপছে আর চোষার ফলে গোঙাচ্ছে।

অনুপমা মৃদু গলা খ্যাঁকরে নিজেদের অস্তিতের জানান দেয় আর রজত ধড়মড়িয়ে ওঠে। চটুল মেহেক সেই সাথে ধড়মড়িয়ে উঠে গায়ের ওপরে চাদর ঢেকে দেয়। রজত কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মতন একবার মেহেকের দিকে তাকায় একবার দেবায়ন আর অনুপমার দিকে তাকায়। রজত অনুপমাকে চেনেনা কিন্তু দেবায়নের সাথে আগে দেখা হয়েছে তাই ওকে চিনতে অসুবিধে হয় না।

বৃদ্ধ রজত আহত কণ্ঠে গর্জে ওঠে, “এ সবের মানে কি?” মেহেকের চুলের মুঠি ধরে এক থাপ্পড় কষিয়ে দেয় নরম গালের ওপরে আর চেঁচিয়ে বলে, “তুই শালী রেন্ডি আমাকে ব্ল্যাকমেল করতে চাস?”

দেবায়ন বিছানার পাশে এসে রজতের গলা চেপে ধরে বজ্র কঠিন কণ্ঠে বলে, “মিস্টার রজত পানিক্কর। তোমার অনেক রুপ দেখেছি, তোমার এই রুপ দেখে নিলাম এবারে।”

মেহেক নিজেকে রজতের কবল থেকে ছাড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। রজতের দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে, “তোমাকে অনেক সহ্য করেছি রজত। বিগত দশ বছর তুমি আমার শরীর নিয়ে যথেচ্ছ খেলা করে গেছো আর নয় রজত।”

রজত চেঁচিয়ে ওঠে মেহেককে গালাগালি দিতে শুরু করে, “তুই কামিনি রেন্ডি, তুই আমাকে ধোঁকা দিলি শেষ পর্যন্ত। তোকে টাকায় সাজিয়ে রেখেছিলাম। এই ফ্লাট, এই আসবাব পত্র, এই বিলাসিতা সব আমি তোকে দিয়েছিলাম, আর তুই কি না আমার সাথে..”
 
মেহেক কষিয়ে এক থাপ্পড় মারে রজতের গালে আর বলে, “তুই আমার রাজেশকে মেরেছিস, নিজের ছেলেকে মেরেছিস আমার শরীর ভোগ করার জন্য। আমি পাগলি ছিলাম, শরীরের ক্ষিধের জন্য তোর সঙ্গ দিয়েছিলাম কিন্তু আর নয়। আমি একটু ভালোবাসা চাই, একটু বাঁচতে চাই আমার ছেলেকে নিয়ে আমি বাঁচতে চাই।”

রজত দেবায়নের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে, “কি চাও তোমরা? আমার একটা ফোনে পুলিস, গুন্ডা সব এখানে চলে আসবে আর তোমাদের এখানে কেটে ফেলে দেবে।”

দেবায়ন অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে, “মিস্টার রজত, আমি অতটা বোকা নই যে প্রস্তুতি ছাড়াই সাপের ঘরে হাত দেবো। একবার জানালা দিয়ে নিচে চেয়ে দেখো। এই এরিয়ার করপোরেটর নিচে লোকজন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটু বেগড়বাই করলে ওরা উপরে উঠে আসবে আর তোমাকে এই অবস্থায় দেখে ফেলবে।”

রজত বিশ্বাস করতে পারে না দেবায়নের কথা তাই কোমরে একটা তোয়ালে জড়িয়ে জানালার কাছে গিয়ে নিচে দেখে। নিচে দুটো কালো স্করপিও গাড়ি আর অনেক লোকজন দেখে ওর সংশয় দূর হয়। বুড়ো রজত রাগে ক্ষোভে কাঁপতে কাঁপতে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে।

বৃদ্ধ রজত জালে জড়িয়ে ভেঙে যায়। কাঁপা গলায় দেবায়নকে বলে, “কি চাই তোমাদের?”

দেবায়ন জবাব দেয়, “হোটেলের মালিকানা।” আর মেহেকের দিকে তাকিয়ে ইশারায় ফাইল আনতে বলে।
রজত ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে, “আমার সবকিছু আমি দুই ছেলের নামে করে যাবো।”

মেহেক বিছানার পাশের একটা ক্যাবিনেট থেকে একটা নীল রঙের ফাইল বের করে রজতের হাতে দিয়ে বলে, “অনেক লুকোচুরি খেলেছো আমার সাথে। বিগত দশ বছর ধরে আমার শরীর নিয়ে যথেচ্ছ খেলা করে গেছো। তুমি প্রত্যেক বার বলো হোটেল আমার নামে করে দেবে কিন্তু আজ পর্যন্ত শুধুমাত্র কাগজ দেখিয়ে রেখে গেছো। এবারে এই কাগজে স্বাক্ষর কর।”

দেবায়ন চোয়াল শক্ত করে রজতের দিকে তাকিয়ে বলে, “মিস্টার রজত, চুপচাপ স্বাক্ষর করে দাও, না হলে ভিন্ন পথ অবলম্বন করতে আমি পিছ পা হব না।”

কাঁপা হাতে নীল ফাইল খুলে হোটেলের কাগজে স্বাক্ষর করে দেয় রজত পানিক্কর। বৃদ্ধ রজত, ক্ষুধ হায়নার মতন তিনজনের দিকে তাকিয়ে আহত কণ্ঠে বলে, “তোমাদের সবাইকে আমি দেখে নেব।”

মেহেক ওই ফাইল অনুপমার হাতে তুলে দেয় আর চুপচাপ অনুপমার পেছনে এসে দাঁড়ায়।

দেবায়ন ওর ঘাড়ের পেছনে ধরে মাথা জোরে নাড়িয়ে দিয়ে বলে, “চুপচাপ এইবারে মেহেককে ছেড়ে এখান থেকে বেরিয়ে যাও। ভবিষ্যতে যদি মেহেকের পেছনে লেগেছো তাহলে তোমার নিস্তার নেই। নিজের বড় ছেলেকে খুন করেছো শুধুমাত্র বৌমার শরীরের লোভে, নরকেও তোমার জায়গা হবে না মিস্টার রজত পানিক্কর।”

ফাইল খুলে দেবায়ন একবার কাগজ ঠিক ভাবে দেখে নেয়। মেহেকের স্বাক্ষর আগে থেকেই ওই কাগজে করা ছিল, সেই সাথে রজতের স্বাক্ষরের সাথে সাথে হোটেলের সত্তর শতাংশের মালিক হয়ে যায় মেহেক। রজত চুপচাপ, নিজের জামা কাপড় পরে আহত শেয়ালের মতন একপ্রকার টলতে টলতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

এতক্ষণ যেন ঘরে একটা যুদ্ধ হয়ে গেছে। মেহেকের ঠোঁটে মুক্তির হাসি আর বিজয়ীর হাসি ফুটে ওঠে দেবায়ন আর অনুপমার ঠোঁটে। মেহেকের পরনে তখন ভিজে স্লিপ। এতক্ষণ ঠিক ভাবে মেহেককে দেখেনি দেবায়ন। মেহেকের হাসির ফলে ওর দুই ভারী স্তন নড়ে ওঠে আর সেই সাথে স্তন বিভাজিকা স্লিপ ছেড়ে বেরিয়ে আসে। মেহেক নিজের উন্মুক্ত লোভনীয় শরীর ঢাকার বিশেষ তাড়া দেখায় না।

সারা অঙ্গে ছন্দ তুলে, দেবায়ন আর অনুপমার দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “বাপরে একটা ঝড় গেল মনে হচ্ছে।” তারপরে কিঞ্চিত চিন্তামগ্ন হয়ে বলে, “কিন্তু আমার ভয় করছে এখানে থাকতে। রজত যদি আমার সাথে অথবা আমার ছেলের সাথে কিছু করে?”

দেবায়ন ওকে আস্বস্ত করে বলে, “যতদিন না তুমি ক্যালিফোর্নিয়া যেতে পারছো ততোদিনের জন্য আমি করপোরেটরকে বলে যাবো তোমার ওপরে নজর রাখতে।” এরপরে ফাইল দেখিয়ে বলে, “এর ট্রান্সফার কাগজ হাতে না পেলে আমি তোমাকে পাঁচ কোটি দেবো না কিন্তু।”

মেহেক একটু ভেবে জবাব দেয়, “আমাকে এই রজতের কবল থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমাকে আজ রাতেই এই ফ্লাট ছাড়তে হবে কারন এই ফ্লাট রজতের। আমার ছেলে স্কুল থেকে ফিরলেই ভাবছি আজ রাতেই ছেলেকে নিয়ে পুনে ছেড়ে মান্ডি চলে যাবো আমার এক বান্ধবীর কাছে। ওর ঠিকানা আমি তোমাকে দিয়ে যাবো। তুমি ট্রান্সফারের কাগজ পত্র তৈরি করে আমার কাছে চলে এসো আমি স্বাক্ষর করে দেবো।”

অনুপমা মেহেকের সাথে হাত মিলিয়ে বলে, “এবারে আমাদের যাওয়া উচিত, মেহেক। তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ আমাদের সাহায্য করার জন্য।”

মেহেক অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে এক দুষ্টু মিষ্টি বলে, “মিষ্টি মুখ না করেই এমনি এমনি চলে যাবে।” অনুপমার হাত দুটি ধরে বিছানায় বসিয়ে বলে, “এতো সুন্দরী একটা বান্ধবী পেলাম এতো তাড়াতাড়ি এমনি এমনি ছেড়ে দেবো না।”

অনুপমা আর দেবায়ন মুখ চাওয়াচায়ি করে। মেহেকের হাবভাব দেখে অনুপমার সন্দেহ জাগে, ওর মাথায় সত্যি অন্য কিছু নেই তো? হয়তো ওর সাথে শরীরের খেলায় মেতে উঠলো আর অন্য কেউ এসে ওদের খুন করে অথবা আঘাত করে চলে গেল।

দেবায়ন মেহেককে বলে, “সন্ধ্যের সময়ে একজনের সাথে দেখা করার আছে তাই আমাদের যাওয়া উচিত।”

মেহেক বুঝতে পারে যে দেবায়ন আর অনুপমা ওকে ঠিক মতন বিশ্বাস করতে পারছে না। মেহেক অনুপমার হাতে হাত রেখে চেপে ধরে বলে, “এখন আমাকে অবিশ্বাস? সত্যি কি একটু বিশ্বাস আমাকে করতে পারো না।”
 

Users who are viewing this thread

Back
Top