What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

pinuram রচনাসমগ্র (1 Viewer)

দেবায়ন জিজ্ঞেস করাতে জানতে পারে যে, দিন তিনেকের মধ্যে শ্রেয়া ফিরে আসবে। এয়ার বার্লিনের প্রোজেক্ট ওরা পেয়ে গেছে, সেই সাথে জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের সাথে কথাবার্তা হয়েছে। দেবায়ন অনুপমাকে নিয়ে বেরিয়ে যাবার আগে রুপককে বলে যে রাতে তিনজনে মিলে ডিস্কো যাবে। অনেকদিন পরে মোহময়ী, কল্লোলিনী কোলকাতার নিশার সৌন্দর্য আহরণ করতে চায়। অনুপমার বুক থমথম করে ওঠে, কিছুতেই রূপকের সাথে স্বাভাবিক হতে পারছে না।

নিজের কেবিনে ঢুকে অনুপমাকে আবার জড়িয়ে ধরে। অনুপমা কপট অভিমান দেখিয়ে বলে, “এই কি করছিস, ছাড় শালা কুত্তা। এটা অফিস।”

দেবায়ন হেসে ওর গালে চুমু খেয়ে বলে, “আমার অফিস, আমার বৌ। যা ইচ্ছে তাই করবো, যেখানে ইচ্ছে প্রেম করবো।”

এমন সময়ে হটাত রূপক এসে কেবিনের দরজা খুলে ঢুকে পড়ে। ভাবতে পারেনি যে দেবায়ন আর অনুপমা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে থাকবে, তাই বলে “তোরা প্রেম করে নে, একটু পরে আসছি তাহলে।”

অনুপমা মাথা নিচু করে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে, ওদিকে দেবায়ন ওকে টেনে ধরে বুকের সাথে মিলিয়ে রূপকের উদ্দেশ্যে বলে, “বাল তুই যখন ওর জন্মদিনের রাতে ওর সাথে করেছিলিস তখন এতো লজ্জা পেতিস না। আজকে কি হলো?”

কান লাল হয়ে যায় রূপকের, অনুপমার গলা শুকিয়ে যায়। অনুপমার ফ্যাকাসে চেহারা দেবায়নের চোখ এড়াতে পারে না। ওর থুতনি নাড়িয়ে রূপকের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে, “তোদের মাঝে কি কিছু হয়েছে? আসার পর থেকে দেখছি তোরা বেশ ছাড়াছাড়া।”

রূপক আমতা আমতা করে বলে, “না না কিছুই হয়নি।”

অনুপমা কি করবে ভেবে পায়না, দেবায়ন ওকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। নিজেকে কোনরকম ছাড়িয়ে গলা নিচু করে বলে, “তুই কাজ কর, আমি এখন আসছি। লাঞ্চের সময়ে কথা হবে।”

অনুপমার চুপচাপ হাবভাবে সন্দেহ হয় দেবায়নের, “কি ব্যাপার পুচ্চি সোনা, তোর আর রূপকের চেহারায় রঙ নেই কেন?” চোখে চোখ রেখে অনুপমার থুতনি নাড়িয়ে বলে, “দুইজনে মিলে আমার পেছনে দুষ্টুমি করিস নি তো?” অনুপমা রূপকের দিকে তাকাতে পারছে না, রূপক মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। দেবায়ন বুঝতে পারে আসল ঘটনা আর ওদের চেহারা দেখে হেসে ফেলে, “বাল, এতে এতো চোর পুলিশ খেলার কি আছে।” রূপকের দিকে চোখ নাচিয়ে অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে চিবিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেমন লাগলো আমার পুচ্চিকে।”

কান লাল হয়ে যায় অনুপমার, কোনোরকমে দেবায়নের বুকের মধ্যে সেঁধিয়ে যেতে চেষ্টা করে। রূপকের গলা শুকিয়ে যায়, কিন্তু হাসি টেনে বলে, “কই কিছু হয়নি তো।”

দেবায়ন হেসে বলে, “ধুর বাল, আমি কি বলেছি যে কিছু হয়েছে? তোর আর অনুর চেহারা বলছে যে অনেক কিছু হয়েছে, কিন্তু ঠিক জায়গায় মাল পড়েনি তাই দুইজনে দুইজনকে এড়িয়ে যাচ্ছিস।”

অনুপমা অবাক হয়ে যায় দেবায়নের পর্যবেক্ষণ শক্তি দেখে, এই দেবায়ন তো একমাস আগে কোলকাতা ছাড়েনি? তাহলে ওর আলিঙ্গনে যে দেবায়ন বদ্ধ, সেই কি তার পুচ্চু সোনা না অন্য কেউ?

দেবায়ন হেসে রূপককে কাছে ডেকে ফিসফিস করে বলে, “আমরা চারজনে মিলে কোথাও বেড়াতে যাবো। মনের সুখে যেটা অধরা রেখেছিস সেটা পূরণ করে নিস।”

বিকেলের মধ্যে, ডিস্কোথেকে গিয়ে মদ উড়িয়ে, নেচেকুঁদে মন হাল্কা করে নেয় দেবায়ন। মনের মধ্যে প্রথমে একটু খচখচ করে উঠেছিল ঠিক, কিন্তু নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে, অনুপমা ছাড়া কত মেয়েদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছে, এমন কি অনুপমার মায়ের সাথেও। সেই অনুপমা যদি কিঞ্চিত ভুলবশত ওর বন্ধুর সাথে শারীরিক মিলন করে ফেলে তার জন্যে ওর মনে কিছু করার নেই। রূপক আর অনুপমাও শেষ পর্যন্ত পরস্পরের কাছে স্বাভাবিক হয়ে যায়।

কয়েক দিন পরে ফিরে আসে শ্রেয়া। যে শ্রেয়া কোলকাতা ছেড়েছিল আর বার্লিন জার্মানি থেকে যে শ্রেয়া ফিরে আসে, দুই জনের মধ্যে অনেক তফাৎ লক্ষ্য করা যায়। অনুপমা বুঝতে পারে যে শ্রেয়া কোলকাতা ছেড়েছিল, সে কাজ না করে ফল খেতে বেশি ভালবাসতো, সারাদিন শুধু ল্যাপটপে চ্যাটিং করতে ভালবাসতো আর ল্যাপটপে সিনেমা দেখতো। যে শ্রেয়া ফিরে এসেছে, সে বেশ পরিপক্ক, কাজের ভার নিজের কাঁধে নিতে শিখেছে। একটা ডিলে সই করে এই কদিনে নিজেকে সত্যিকারের ডাইরেক্টর হিসাবে ভাবতে শিখেছে। অনুপমার কেবিনে বসলে অথবা লাঞ্চে একসাথে বসলে সেই পুরানো শ্রেয়াকে দেখা যায় না হলে, অফিসে বাকি সবার কাছে এক নতুন শ্রেয়া। কাজে বুঁদ, প্রোডাক্ট ডিজাইনিং নিয়ে বেশ তৎপর, এমন কি আজকাল আয় ব্যায়ের, একাউন্ট স্টেটমেন্ট মাঝে মাঝে চেয়ে দেখে, মাঝে মাঝে একাউন্টসে গিয়ে বসে কথাবার্তা বলে। শ্রেয়ার এই রুপ দেখে অনুপমার বেশ ভালো লাগে সেই সাথে একটু খটকাও লাগে, কেন শ্রেয়া একাউন্টস নিয়ে এতো মাথা ঘামাচ্ছে?

একদিন লাঞ্চের সময়ে চারজনে একসাথে বসে সেসময়ে অনুপমা শ্রেয়াকে প্রশ্ন করে, “কি ব্যাপার তোর? আজকাল দেখছি তুই বেশ একাউন্টস দেখছিস?”

শ্রেয়া হেসে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “লেজার বুক দেখা কি আমার জন্য মানা? আমিও একজন ডাইরেক্টর।”

শ্রেয়ার চোখের চমক অনুপমার চোখ এড়ায়না, ওর চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, “জার্মানি বেড়িয়ে এলি আমাদের জন্য কিছু নিয়ে এলি না।”

শ্রেয়া কপট দুঃখ প্রকাশ করে বলে, “ইসসসস একদম ভুলে গেছি, শুধুমাত্র রূপকের কথা মনে ছিল তাই ওর জন্য আনা হয়েছে।”

অনুপমাঃ “আমাদের ভুলে গেলি না ওখানে গিয়ে অনেক কিছু হয়েছে যেটা লুকাতে চাইছিস?”

শ্রেয়া হাসিতে ফেটে পড়ে, “কি যে বলসি না তুই। যাঃ, শুধু কাজ করে গেছি ওই কয়দিনে।”
 
অনুপমা হেসে জিজ্ঞেস করে, “কেন দীপঙ্করদা বলছিল যে তুই নাকি ইন্দ্রনীলের সাথে বার্লিন, ফ্রাঙ্কফারট, হেগ গেছিলিস?”

শ্রেয়া বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলে, “হ্যাঁ গিয়েছিলাম ওই সব জায়গায়। এয়ার বার্লিনের বেশ কয়েকটা অফিসে যেতে হয়েছিল, প্রোডাক্টের জন্য বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে যেতে হয়েছিল আমাকে।”

অনুপমা মাথা নাড়ায়, “ঠিক আছে বুঝতে পারছি, তুই এখন বেশ ব্যস্ত মানুষ। আর যাই হোক, আমাদের ভুলে গেলেও চলবে কিন্তু দেখিস এই দৌড়ে যেন রূপককে ভুলে যাস না?”

শ্রেয়া রূপকের হাতখানা নিজের হাতের মুঠির মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলে, “দশ খানা নয়, পাঁচ খানা নয় আমার এই একখানা সোনামণি, এর কথা কি করে ভুলে যাব।”

শ্রেয়ার এই রুপ বদলের কথা দেবায়নকে জানায়। অনুপমার তীক্ষ্ণ চোখে কিছুই এড়াতে পারে না, ওর দৃষ্টি সবসময়ে শ্রেয়ার ওপরে নিবদ্ধ। অনেক কিছু লুকিয়ে রেখেছে শ্রেয়া, যেন অনেক কিছু জেনে ফেলেছে। সত্যি কি জানে যে ওদের দুটো কন্সট্রাক্সান কোম্পানি আছে, জানে কি যে ওদের ছয়খানা হোটেল আছে? জানলে হয়তো একবার দেবায়ন অথবা ওকে প্রশ্ন করতো, কিন্তু করেনি যখন তখন হয়তো জানে না এই সব বিষয়ে। শ্রেয়া ফিরে আসার পরেও শ্রেয়ার মতিগতি দেখে অনুপমা, ওকে অথবা রূপককে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বলেনি।

মার্চে অঙ্কনের হাইয়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষা আর তারপরে ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ট্রান্সের পরীক্ষা। পায়েলের কলেজের ফাইনাল জুলাইয়ে। অনুপমার কথা অনুযায়ী, পায়েল অফিসে আসা বন্ধ করে দিয়েছে, বাড়িতে বসে পড়াশুনায় মনোযোগ দিয়েছে। প্রতিদিন অফিস ফেরত দেবায়ন দেখা করে যায়। ধিরে ধিরে অনেক সহজ হয়ে উঠেছে পায়েল। দেবায়নের সাথে হেসে কথা বলে, অঙ্কনের পরীক্ষার সময়ে ওর সাথে প্রত্যেক দিন স্কুলে গেছে। সব মিলিয়ে আগের পায়েল খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে। আজকাল দেবায়নের সাথে খোশমেজাজে গল্প করে, রাতে বসে দুই বান্ধবী অনেকক্ষণ ধরে কলেজের গল্প করে। মাঝে মাঝে ছাড় পেলেই অঙ্কনের রুমে রাত কাটিয়ে আসে। ঢিলে চুড়িদার ছেড়ে চাপা সালোয়ার কামিজ, অথবা জিন্স টি শার্ট, বাড়িতে থাকলে হাফ প্যান্ট না হলে স্কার্ট পরে ঘুরে বেড়ায়। অনুপমা সব লক্ষ্য করে, মাঝে মাঝেই অঙ্কন ওর প্রেমিকাকে নিভৃতে একা পেলে জড়িয়ে ধরে চুমু খায়, এদিক ওদিকে হাত বুলিয়ে আদর করে দেয়।

অঙ্কন যাদবপুরে ইলেক্ট্রনিক্স টেলিকমিউনিকেশান পায়। বাড়ির সবাই খুশি। সেই খুশিতে একটা বড় পার্টি দেওয়া হয়, পার্টিতে অঙ্কনের বন্ধু বান্ধবী ছাড়াও অনুপমার বন্ধু বান্ধবীদেরকেও আমন্ত্রন জানানো হয়। অনেকদিন পরে সঙ্গীতা আর প্রবালের সাথে দেখা হয়, ঋতুপর্ণা আর ধিমানকেও নিমন্ত্রন জানায়, পরাশর আর জারিনাও আসে সেই পার্টিতে। পুরানো পায়েলকে দেখে সবাই আনন্দিত। পায়েল নিজের পুরানো রুপ ফিরে পায়, কিন্তু এক মুহূর্তের জন্য অঙ্কনের কাছ ছাড়ে না। সেই দৃশ্য দেখে দেবায়ন আর অনুপমার বেশ ভালো লাগে।

এক বিকেলে অনুপমা দেবায়নকে প্রশ্ন করে, “হ্যাঁ রে, আমার একাউন্টে দুই কোটি টাকা কেউ জমা দিয়েছে। কি ব্যাপার, কোথা থেকে এসেছে ওই টাকা?”

দেবায়নঃ “আরে বাবা আমি একদম ভুলে গেছিলাম ওই টাকার কথা। ওই টাকা নিবেদিতা ম্যাডাম দিয়েছে।”

অনুপমা অবাক হয়ে যায় নিবেদিতার কথা শুনে, “নিবেদিতা দিয়েছে মানে?” মুখ হাঁ হয়ে যায় অনুপমার, কি ব্যাপার কিছুই বুঝতে পারে না।

দেবায়ন হেসে বলে, “ওইটা কন্সট্রাক্সানের কাঁচা টাকা। পেছনের তারিখে একটা সফটওয়্যার ডিল দেখাতে হবে ওর কোম্পানির সাথে, তাহলেই ওই টাকা সাদা হয়ে যাবে।”

অনুপমা প্রশ্ন করে, “তুই ঠিক কি করছিস একটু খুলে বলবি? এই যে বাবার সাথে ঘুরে বেড়াস, এই দুটো কন্সট্রাক্সান কোম্পানি এর ওপরে ছয়খানা হোটেল ডিল করছিস, এতো সব টাকা কোথা থেকে আসছে?”

দেবায়ন হেসে উত্তর দেয়, “তোর সফটওয়্যার কোম্পানিতে কিছু আঁচ লাগবে না সেটা কথা দিচ্ছি।”

অভিমান হয় অনুপমার, কি লুকাতে চায় দেবায়ন, “সেটা না হয় বুঝলাম কিন্তু আমাকে জানাতে দোষ আছে কি?”

দেবায়ন বুঝতে পারে যে প্রেয়সী একটু অভিমান করেছে, সবকিছু খুলে না বলা পর্যন্ত মানিনীর মান ভাঙানো সম্ভব নয় তাই বলতে শুরু করে, “পুচ্চিসোনা, টাকায় টাকা বাড়ে। এই যে মাখন, দই নাড়াতে নাড়াতে অবশেষে দইয়ের ওপরে মাখন ভেসে ওঠে। ঠিক তেমনি টাকা, এদিক থেকে ওদিকে না নাড়ালে টাকা বাড়ে না। কখনো এই কস্ট্রাক্সান কোম্পানি থেকে ওই কন্সট্রাক্সান কোম্পানিতে টাকা নিয়ে যেতে হয়। দেখাতে হয় এই কোম্পানি ওকে কাজের অফার দিয়েছে। হোটেলের টাকা কন্সট্রাক্সানে ঢুকাতে হয় কখনো, দেখাতে হয় যে হোটেলের কন্সট্রাক্সান আমাদের কন্সট্রাক্সান কোম্পানি করেছে। এই ভাবে সফটওয়ারে কাজ করাতে হয়। ভুয়ো কাজ দেখিয়ে টাকা ঘুরিয়ে কাঁচা টাকাকে সাদা করাতে হয়, কোনসময়ে কাজ দেখিয়ে নেট প্রফিট কম করিয়ে দেখাতে হয়। এই ভাবে টাকা ঘুরাতে ঘুরাতে, এর লেজার থেকে ওর লেজারে টাকা ঘুরে বেড়ায়। সফটওয়ারে টাকা দেরিতে আসে, কন্সট্রাক্সানে তাড়াতাড়ি আসে, হোটেলে মন্দ আয় হয় না। মাঝে মাঝে হোটেলের আয় কম দেখাতে হয়, কেননা হোটেলে অনেক রকমের ট্যাক্স, সেই সব বাঁচানোর জন্য হোটেলের আয় কম দেখাতে হয় আর সেইখানে দেখাতে হয় যে সফটওয়ারে খরচ অথবা এটা ওটা কন্সট্রাক্সানে খরচ। কন্সট্রাক্সানে প্রচুর কাঁচা টাকা এদিক ওদিক থেকে চলেই আসে। বুঝেছিস কিছু?”

অনুপমা কতকটা বোঝে কতকটা বুঝতে পারে না, শুধু দেবায়নের গলা দুইহাতে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুই আছিস তো আমাকে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য তাহলে আমার চিন্তা কোথায়?”

দেবায়নঃ “সেই জন্য বলি টাকার চিন্তায় এতো মাথা ঘামাস না। তুই সফটওয়্যার নিয়ে থাক, এখন এয়ার বার্লিন এরপরে জারমেনিয়া এয়ারলাইন্স তারপরে দ্যাখ ইউরোপে কেন আফ্রিকায় পা রাখবে আমাদের কোম্পানি।”

চোখ বড় বড় করে দেখে দেবায়নের দিকে, “কি বলছিস তুই?”

দেবায়নঃ “হ্যাঁ রে, শুধু জার্মানি নয়, মিস্টার হেরজগের সাথে আমার কথা হয়েছে। এই যে আমাদের কন্সট্রাক্সানে এতো টাকা ঢেলেছে আর তার উপযুক্ত মুনাফা পাচ্ছে তাতে বেশ খুশি মিস্টার হেরজোগ। সাউথ আফ্রিকায় একটা রিয়াল এস্টেটে টাকা লাগাতে চলেছে, সেখানে আমাদের কোম্পানি কাজ করবে।”

অনুপমা বিশ্বাস করতে পারে না দেবায়নের কথা, “কি বলিস? সাউথ আফ্রিকা?”

দেবায়ন মিচকি গালের ওপরে আলতো চুমু খেয়ে বলে, “হ্যাঁ ডারলিং সাউথ আফ্রিকা। তবে সোজাসুজি কাজ নয়, কাজ করবে আমাদের লোক ভিন্ন নামে। ওই প্রোজেক্টের আরকিটেকচার, ডিজাইন, ইন্টেরিওর সব আমাদের লোক করবে, বেনামে করবে আর বেনামে টাকা আসবে। ইউরোতে পেমেন্ট হবে, ডলারের চেয়ে বেশি আয় হবে তাতে।”

অনুপমাঃ “আমাদের কোম্পানি বাইরে যাবে?”

দেবায়ন হেসে বলে, “আমাদের মানে নিবেদিতার কোম্পানির লোক বাইরে যাবে। ওই কোম্পানিতে টাকা আনাতে চাই আমি। কিছু কাজ আমাদের কোম্পানিতে আসবে, না হলে মিস্টার হেরজোগের সন্দেহ হয়ে যাবে। সেটা হলে আমি দেখাতে পারবো যে আমাদের নিজের কোম্পানিতে বিশেষ কাজ হয়নি, আয় হয়নি আর সেই সাথে মিস্টার হেরজোগ যে পরিমান লাভ এইবারে আশা করেছেন সেই পরিমান তাকে দেওয়া হবে না। আমাদের টাকা উপার্জন কিছু উপায় করতে হবে তো নাকি?”

অনুপমা মাথা চুলকিয়ে বলে, “এই সবের প্যাঁচ ঘোঁচ কিছুই বুঝতে পারছি না।”

থুতনি নাড়িয়ে দুষ্টু হেসে বলে, “পুচ্চি ডারলিং, তোকে এতো মাথা ঘামাতে হবে না, তুই তোর সফটওয়্যার ফার্ম নিয়ে থাক।”

***** চতুর্বিংশ পর্ব সমাপ্ত *****
 
পঞ্চ বিংশ পর্ব।

এক মে মাস ঘুরে অন্য মে মাস চলে আসে। গত মে মাসে ওদের পরীক্ষা চলছিল আর এই মে মাসে, অনুপমা আবার একা বসে নিজের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে। এবারে জারমেনিয়া এয়ারলাইন্সের ডিল করতে শ্রেয়ার সাথে দেবায়ন গেছে। মিস্টার হেরজোগের সাথে দেখা হয়ে যাবে আর বেশ কিছু ব্যাবসা সংক্রান্ত কথাবার্তা বলে আসবে। আজকাল বেশ ব্যস্ত দেবায়ন, মাথার ওপরে শুধুমাত্র আইটি কোম্পানি নয়, সেই সাথে দুটো কন্সট্রাক্সান কোম্পানি আর ছয় খানা হোটেল দেখাশোনা করতে হয়। অনুপমা শুধু ছায়ার মতন ওর পেছনে লেগে থাকে, ওর ধমনীর রক্ত, ওর প্রান শক্তি। অফিসে থাকলে, মাঝে মাঝেই কেবিনে ঢুকে জিজ্ঞেস করা, “ফল খেয়েছিস?” “জুসটা একটু খেয়ে নে বাবা, প্লিস সোনামণি।” “সিগারেট এতো না খেলেই নয় কি? ধুর দে তোর প্যাকেট, আমি এবারে তোর সাথেই সিগারেট খাবো।” “চলো আর কাজ করতে হবে না, মামনি ডিনারের জন্য অপেক্ষা করছে।”

যতটা সময় কাছে পায়, এক পলকের জন্য চোখের আড়াল করে না, কাজের চাপে ওর চোখ মুখ, ওর চেহারা দেখে মাঝে মাঝে বড় কষ্ট হয়। চব্বিশ বছর বয়সে, বাবার সাথে থেকে ওই ফিসিক্স পড়া ছেলেটা কত বড় হয়ে গেছে। মোবাইলে ওর ফটোর দিকে এক ভাবে তাকিয়ে থাকে, আজ তিনদিন হলো ফ্রাঙ্কফারট গেছে, এবারে ফোনে বেশি লম্বা কথা বলা যায়নি, শুধুমাত্র, “কেমন আছিস? সাবধানে থাকিস। ঠিক সময়ে খাওয়া দাওয়া করিস।” এই সব ছাড়া আর কিছু কথা বলা গেল না।

গ্রীষ্মের খাঁ খাঁ দুপুরে, জানালার বাইরে তাকায়। কালো কাঁচের এপার থেকে বাইরের গরম যদিও বোঝা যায় না তবে, বেশ কিছু কাকের আনাগোনা আর দুরে নিচে মানুষের মাথার ছাতা জানিয়ে দেয় যে বাইরে খুব গরম। বুকের ভেতরটা খালি হয়ে যায়। মাঝে মাঝেই ঘুরতে বেরিয়ে যায়, যদিও কাজেই যায় তাও কেন যায় বলে মনে হয়। অনুপমা কি চেয়েছিল এই জীবন? শুধু চেয়েছিল একটা ভালো বর যে দশটা পাঁচটা অফিস করে ওর কোলে ফিরে আসবে। নিজের একটা ছোটো বাড়ি হবে, দেয়ালে ওদের প্রেমের নাম লেখা থাকবে। পন্ডিতিয়ার বাড়িতে গত তেইশ বছরে ভালোবাসা খুঁজে পায়নি, দেবায়ন আসার পরেই ওই বাড়িতে ভালোবাসা বলে যে একটা মনের ভাব আছে সেটা সবাই যেন জানতে পারে। এতক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে ছিল, হটাত ফোনটা বেজে উঠতেই ঘোর কেটে গেল। অচেনা মোবাইল নাম্বার, কে আবার এখন ফোন করেছে? ধুর ব্যাঙ।

“হ্যালো, আমি কি মিস অনুপমা সেনের সাথে কথা বলছি?” ওপাশে এক সুরেলা নারীর কণ্ঠ স্বর।

সেই কণ্ঠস্বর চিনতে পারল না অনুপমা তাই প্রশ্ন করে, “হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কে? আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।”

খিল খিল করে হেসে ওঠে ওপাশের কণ্ঠ স্বর, “আমি অনন্যা, মানে অনন্যা বাসু। মনে আছে কি আমাকে?”

চিড়িক করে মাথার বাতি জ্বলে ওঠে, অনন্যা বাসু মানে ছোটো পর্দার নায়িকা অনন্যা বাসু। অনেকদিন দেখা সাক্ষাত নেই, শেষ দেখা হয়েছিল বাবার জি.এম হওয়ার পার্টিতে। ছোটবেলায় মায়ের সাথে ওর ফ্লাটে গেছে কিন্তু বিশেষ মেলামেশা কোনদিন ছিল না।

অনুপমা হেসে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার অনেকদিন পরে মনে পড়েছে?”

অনন্যা খিলখিল করে হেসে উত্তর দেয়, “না রে, তোর বরের ফোন ট্রাই করছিলাম, পেলাম না তারপরে পারমিতা ম্যাডামকে ফোন করলাম, ম্যাডাম আমাকে তোর নাম্বার দিল।”

অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “বাপরে আমার নাম্বার খুঁজতে তাহলে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়েছে।”

অনন্যাঃ “কেমন আছিস তুই? সেই স্কুল ফাইনাল দেওয়া সময়ে একবার ম্যাডাম তোকে নিয়ে আমার বাড়িতে এসেছিলেন, তারপরে তুই কোনদিন আমার বাড়িতে এলি না।”

অনুপমা হেসে বলে, “তুমি খুব ব্যস্ত নায়িকা অনন্যাদি, তোমার কাছে আমাদের মতন চুনোপুঁটিদের জন্য কি আর সময় থাকে?”

অনন্যা একটু ব্যাথা ভরা স্বরে বলে, “সেই কবেকার কথা এখন ধরে রেখেছিস?”

অনুপমা তির্যক হেসে বলে, “না না, অনন্যাদি ছাড়ো সে সব কথা।”

অনন্যাঃ “কি করছিস আজকাল? তোর বর, মিস্টার বসাক, বিশাল বিজনেস ম্যান তাই না?”

অনুপমা মিচকি হেসে উত্তর দেয়, “বড় কি না জানি না, তবে খুব ব্যস্ত থাকে এই যা।”

অনন্যা খিলখিল করে হেসে দেয়, “সব ছেলেগুলোই এই রকম হয়। একবার কাজ হাতে পেলে, শুধু টাকা আর টাকা, বউয়ের কথা আর মনে থাকে না ওদের। তুই শুনলাম অফিসে? কিসের অফিস তোর?”

অনুপমাঃ “এই ছোটো খাট একটা সফটওয়্যার কোম্পানি খুলেছি।”

অনন্যাঃ “বাপরে নিজের কোম্পানি। তুই তো বিজনেসে ঢুকে গেলি একেবারে। এই তোদের অফিসটা কোথায় রে?”

অনুপমাঃ “রাসেল স্ট্রিটে, কেন?”

অনন্যাঃ “তোদের সাথে অনেকদিন দেখা হয়নি তাই ভাবছিলাম একবার দেখা করবো।”
 
অনুপমা অবাক হয়ে যায় দেখা করার কথা শুনে, “কি ব্যাপার অনন্যাদি, হটাত দেখা করতে চাও?” মনে পড়ে যায় দেবায়নের কথা, গোয়াতে গিয়ে দেবায়ন অনন্যাকে বলেছিল যে ওর রেস্টুরেন্ট খুলতে টাকা দিয়ে সাহায্য করবে। সেই টাকা চাই নাকি অনন্যার? সোজাসুজি প্রশ্ন করে অনুপমা, “তুমি কি দেবায়নের বিষয়ে কথা বলতে চাও? পরিস্কার করে বলতে পারো দ্বিধা বোধ করোনা।”

অনন্যা এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে ঠিক আশা করেনি, তাই আমতা আমতা করে বলে, “না মানে। এমনি তোদের সাথে দেখা করতে চাইছিলাম। যাই হোক তুই এখন ব্যস্ত তাহলে ফোন রাখি। মিস্টার বসাক ফিরলে বলিস যে আমি ফোন করেছিলাম।”

হেসে ফেলে অনুপমা, “বলে ফেলোনা, কি হয়েছে। আমি আর দেবায়ন আলাদা নয়। ও কোথায় কি কি করেছে সব আমার জানা, আমার দেবায়ন আমার কাছ থেকে আজ পর্যন্ত কিছু লুকায় নি।”

অনন্যার গলা বসে আসে, “তাই মাঝে মাঝে ভয়। আমার ছোঁয়াতে তোদের এই অটুট বন্ধনে যদি কিছু হয়ে যায়। ছাড় তুই খুব ব্যস্ত নিশ্চয় এখন? মিস্টার বসাক কবে ফিরছে?”

অনুপমাঃ “দেবায়নের ফিরতে দিন চারেক দেরি আছে। তুমি স্টুডিও থেকে বাড়িতে কখন ফিরবে? তাহলে না হয় একবার দেখা করতাম।”

অনন্যা হেসে বলে বলে, “এই কয়দিন আউটডোর শুটিং করে শরীর খুব ম্যাজ ম্যাজ করছে তাই আজকে আর স্টুডিও যাইনি। বাড়িতে আসতে চাস নাকি?”

অনেকদিন দেখা হয়নি অনন্যার সাথে, এই প্রচন্ড গরমে মনের ভেতর খাঁখাঁ করছে, একটু বের হলে বড় ভালো হয়। অনুপমা একটু ভেবে বলে, “ঠিক আছে আমি একটু পরে আসছি তোমার বাড়িতে।”

ব্যাগ গুছিয়ে, ড্রাইভারকে বলে সোজা অনন্যার বাড়িতে পৌঁছে যায়। একটা বহুতল ফ্লাট বাড়ির একটা বড় ফ্লাটে একা থাকে। অনেকদিন আগে এসেছে কিন্তু বাড়ি চিনতে ভুল হয় না অনুপমার। কলিং বেল বাজাতেই, অনন্যা নিজেই এসে দরজা খুলে দেয়। বসার ঘরে এসি চলছে, জানালায় পর্দা নামানো, বেশ একটা সুন্দর গন্ধে ঘর মমমম করছে। অনন্যা মনে হয় একটু আগেই স্নান করেছে, এলো চুলে গায়ে একটা ছোটো সিল্কের ড্রেসিং গাউন জড়িয়ে মিষ্টি হেসে অনুপমাকে ঘরের মধ্যে ডাকে। ঘরের চারদিকে তাকিয়ে দেখে, দেয়াল জুড়ে অনেক ছবি টাঙানো, সব কটাই অনন্যার। টিভিতে যে সব এড দেখে, সেখানে অনেক মেকআপের কারসাজি থাকে, ছবির কারসাজি থাকে। অনন্যাকে দেখে মনে হলো, একটু গোলগাল হয়ে গেছে আর কাজের চাপে চোখের কোলে কালি পড়ে গেছে। ওর শরীর থেকে মাদকতাময় এক মিষ্টি সুবাস নাকে এসে লাগে।

অনন্যা ওর হাত ধরে সোফায় বসিয়ে বলে, “বাপরে তাহলে মহারানীর এতদিন পরে আমার বাড়িতে আসার সময় হলো।”

অনুপমা হেসে বলে, “তুমি মহারানী তাই তো তোমার দেখা পাওয়া ভার।”

অনন্যাঃ “না রে আমি আর কি হতে পারলাম। কি খাবি? বিয়ার নিবি না ব্রিজার?”

হেসে ফেলে অনুপমা, “না না, আমি কিছু খাবো না। তুমি বসো তো, কাজের লোক নেই নাকি?”

অনন্যা দুটো পেপসি ফ্রিজ থেকে বের করে একটা অনুপমার হাতে ধরিয়ে ওর পাশে এসে বসে। পানীয়ের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে, “নারে কাল অনেক রাতে উটি থেকে ফিরেছি তাই আর আজকে কাজের লোক আসেনি। তোকে দেখে পাক্কা কর্পোরেট বিজনেস উম্যান লাগছে। তুই কেমন আছিস বল। মিস্টার বসাক কোথায়?”

অনুপমা হেসে শার্টের ওপরে দুটো বোতাম খুলে ফেলে, এসি চালানো অবস্থায়ও যেন একটু গরম লাগছে ওর। অনন্যার প্রশ্নের উত্তরে বলে, “দেবায়ন জার্মানি গেছে।”

এমন সময়ে অনন্যার ফোনে একটা ফোন আসে। অনন্যা ফোন নিয়ে ওকে বসতে বলে ভেতরে চলে যায় কথা বলতে। অনুপমা পানীয়ের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখে। বসার ঘর বেশ সাজানো গুছানো, এক নায়িকার বাড়ি যেমন সাজানো উচিত ঠিক সেই রকম আড়ম্বর আছে। ঘরে একটা সুরেলা বাদ্য যন্ত্রের সঙ্গীত বেজে চলেছে, মনে হয় পন্ডিত শিব কুমার শর্মার সন্তুর। কেমন যেন স্বপ্ন পুরীর মতন মনে হয় বসার ঘর। বেশ আয়েশ করে বসে সোফার ওপরে।

অনন্যা কিছু পরে ড্রেসিং গাউন ছেড়ে একটা জিন্সের হাফপ্যান্ট আর একটা ঢিলে টপ পরে নিজের বেডরুম থেকে বেরিয়ে আসে। বড় গলার টপ এতই ঢিলে যে বাঁ কাঁধের নিচে নেমে এসেছে। বুকের দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে নিচে ব্রা পরেনি আর তাই নরম স্তন যুগল দুলে উঠছে অনন্যার হাঁটার ফলে। টপের পাতলা কাপড় ফুঁড়ে ওর স্তনের বোঁটা ফুটে উঠেছে।

অনুপমার পাশে বসে বলে, “তুই কিছু খাবি? পিৎজা অর্ডার করবো নাকি?”

অনুপমা হেসে বলে, “না না। তুমি বসো আমার কাছে।”

এটা সেটা, কাজের কথা, অকাজের কথা, পারমিতার কথা এই সব কথায় সময় কেটে যায়। তারপরে অনন্যা লাজুক হেসে বলে, “জানিস একটা ছোঁড়া আমার প্রেমে পড়েছে, এই তার ফোন এসেছিল।”

অনুপমা চোখ বড়বড় করে প্রশ্ন করে, “কে সে? ফিল্ম লাইনের লোক না কোন বিজনেস ম্যান।”

অনন্যা তির্যক হেসে বলে, “বিজনেস ম্যানেরা সব বড় কুচুটে হয়, বিয়ের পরে ট্রফি ওয়াইফ হিসাবে রাখে। পারলে ক্লায়েন্টের বিছানায় দিতেও দ্বিধা বোধ করবে না। আমার এই বন্ধুটি একজন ফ্যশান ফটোগ্রাফার। আমার বেশ কয়েকটা মডেলিংয়ের এসাইন্মেন্ট করেছে আর সেই থেকে আলাপ। ছেলেটা মনে হয় বেশ ভালো।” অনন্যা ওর মোবাইলে একটা ছেলের ছবি দেখিয়ে বলে, “সত্যজিত দত্ত, আমার চেয়ে দুই বছরের ছোটো।”
 
অনুপমা প্রশ্ন করে, “তাহলে আর দেরি কিসের, বিয়েটা সেরে ফেলো আর কি। কত হলো আসল বয়স, আঠাশ হবে তাই না?”

অনন্যা ওর থুতনি নাড়িয়ে বলে, “তুই দেখি আমার বয়স মনে রেখেছিস?” সত্যজিতের ছবির দিকে তাকিয়ে বলে, “না রে, আগে একটু বাজিয়ে দেখি কেমন ছেলে। সবাই তো আর মিস্টার বসাকের মতন হয় না রে।”

অনুপমা মিচকি হেসে বলে, “হুম সবকিছু বুঝলাম। তা হটাত কি ভেবে মনে পড়ল? সত্যি কথা বলতো?”

অনন্যা মিচকি হেসে বলে, “আঠাস হয়ে গেছে একটু মুটিয়ে গেছি তাই না?”

অনুপমাঃ “কি যে বলো না তুমি? এখন দারুন সুন্দরী তুমি।”

অনন্যা চোখ বড়বড় করে অনুপমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার তো সব ক্যামেরা, মেকআপের কারসাজি, আসল সুন্দরী তো তুই।” এই বলেই জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু খেয়ে নেয়।

অনুপমা গালে গাল ঠেকিয়ে হেসে বলে শরীর চেপে ধরে আদর করে বলে, “হুম্মম... কি হয়েছে তোমার? কাজের পরে কি খুব গরম লাগছে? মনে হচ্ছে অনেকদিন সত্যজিৎ কাছে আসেনি।”

অনন্যা ওর গাল টিপে আদর করে বলে, “ধ্যাত, তুই না যা তা, তার চেয়ে বল যে তুই গরম হয়ে আছিস। মিস্টার বসাক খুব আদর করছে তোকে সেটা তোর শরীর দেখেই বুঝতে পারছি।”

অনুপমা পানীয়ের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে, “আমাকে আদর করার আর সময় পায় কোথায়? সবসময়ে বাইরে থাকে যে।”

অনন্যা চোখ গোল গোল করে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ জানা আছে। তোর বুক জোড়া যেমন ভাবে ফুলেছে তাতে বেশ বোঝা যাচ্ছে যে মিস্টার বসাকের হাত পড়েছে।”

লজ্জায় লাল হয়ে যায় অনুপমার গাল। অনন্যার গালে আলতো টোকা মেরে বলে, “তুমি না ভারী দুষ্টু মেয়ে অনন্যাদি।”

অনন্যাও কম যায়না, “সত্যি বল, খুব ভালোবাসে না তোকে?”

অনুপমা ওর হাতদুটি নিজের হাতের মুঠিতে নিয়ে বলে, “ছাড়ো অনন্যাদি। দেবায়ন তোমাকে কিছু দেবে বলেছিল, তাই না। কি করতে চাও ওই টাকা দিয়ে?”

হটাত অনুপমার মুখে এই কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় অনন্যা। কি বলবে ভেবে পায় না, সত্যি কি মানুষ এতো খোলা মনের হয়? ওকে কবে দেবায়নকে বলেছিল সেই কথা আর এই মেয়েটা জানে আর মনে রেখেছে?

অনন্যা অনুপমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি ভাবছিলাম বর্তমানে আমার কেরিয়ার এখন একদম তুঙ্গে। তাই এই তুঙ্গে থাকতে থাকতে সব কিছু গুছিয়ে নেওয়া ভালো, পরে হয়তো হাতে সময় থাকবে না। মিস্টার বসাক অনেকদিন আগে একটা আইডিয়া দিয়েছিল ছিল রেস্টুরেন্ট শুরু করার, আমারও বেশ লেগেছিল সেই আইডিয়াটা। কিন্তু সত্যজিতের ইচ্ছে একটা মেয়েদের পত্রিকা শুরু করার। এই ছোটো ছোটো প্রবন্ধ, গল্প, ফ্যাশানের ছবি। ওর এই পাব্লিকেশানেও বেশ জানাশুনা আছে।”

অনুপমা বুক ভরে শ্বাস নিয়ে প্রশ্ন করে, “পত্রিকা শুরু করার জন্য কত টাকা চাই তোমার?”

অনন্যা খিলখিল করে হেসে বলে, “এই বিষয়ে সত্যজিতের সাথে বিশেষ কথা হয়নি। কিন্তু তুই এতো মাথা ঘামাচ্ছিস কেন?”

অনুপমা অনন্যার হাতে চাপ দিয়ে মনোবল জুগিয়ে বলে, “তুমি চিন্তা কোরোনা অনন্যাদি, আমরা আছি। দেবায়ন ফিরে আসুক ওর সাথে কথা বলবো। তুমি একটা এস্টিমেট বলে দিও সেই মতন ব্যবস্থা করে দেবো চিন্তা নেই।”

অনন্যা দুইহাতে জড়িয়ে ধরে অনুপমাকে, “তুই না খুব ভালো মেয়ে।” বলেই গালে একটা ভিজে চুম্বন এঁকে দেয়।

নারীর চুম্বনে অনভ্যস্ত নয়, পায়েলের সাথে বহুবার সমকামী খেলায় রত হয়েছে তাও কেমন যেন অস্বস্তি লাগে অনুপমার, “যাঃ অনন্যাদি ছাড়ো।”

অনন্যা ওর গালে হাত বুলিয়ে চিবুক নাড়িয়ে বলে, “তুই বড্ড সুন্দরী, সেই কবে ছোটো বেলায় তোকে দেখেছিলাম আর আজকের এই অনুপমা অনেক বেশি মিষ্টি রসালো আর সুন্দরী হয়ে উঠেছে। তোকে না...” অনুপমার মুখ আঁজলা করে ধরে কপালে একটা চুমু খায় অনন্যা।
 
অনুপমার হাত পা হটাত এই নারী চুম্বনের ছোঁয়ায় যেন অবশ হয়ে আসে। ধিরে ধিরে অনন্যার ঠোঁট নামতে থাকে, ছোটো ছোটো বেশ কয়েকটা চুমু খায় ওর কপালে, ভুরুর ওপরে, শেষ পর্যন্ত ঠোঁটের কাছে এসে থেমে যায় অনন্যার ঠোঁট। অনুপমার হাত আপনা হতেই অনন্যার কোমর জড়িয়ে ধরে। অনন্যার চিকচিক করা দুই চোখের তারার ওর চোখের মণি নিবদ্ধ হয়ে যায়। অনন্যার আধাখোলা ঠোঁটের মাঝের উষ্ণ শ্বাস ওর ঠোঁট, থুতনির ওপরে বয়ে চলে। কেমন যেন একটা নেশার ঘোর লাগে অনুপমার, পানীয়ের সাথে কি কিছু মেশানো ছিল, না অনন্যার ঠোঁটের মাদকতায় নেশা লেগেছে ওর রক্তে। অনন্যার মাথার পেছনে হাত নিয়ে গিয়ে চুলের মুঠি ধরে, ওর লাল নরম ঠোঁট অনন্যার ফ্যাকাসে গোলাপি ঠোঁটের ওপরে বসিয়ে দেয়। দুই নারীর ঠোঁট মিলেমিশে যায়, আচ্ছাদনের ওপর দিয়েই দুই নারীর উন্নত স্তন জোড়া পরস্পরের সাথে পিষে সমতল হয়ে যায়।

অনুপমাকে ঠেলে সোফার ওপরে শুইয়ে দিয়ে ওপরে উঠে যায় অনন্যা। ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে চুমু খেতে খেতে ওর স্তনের ওপরে হাত নিয়ে যায়। জামার ওপর দিয়েই একটা স্তন আলতো করে মুঠির মধ্যে নিয়ে আদর করে দেয়। অনুপমা দুই হাতে অনন্যার কোমর জড়িয়ে ধরে, রক্তে কামনার আগুন জেগে ওঠে, জানুর মাঝে শিরশিরানি শুরু হয়ে যায়। নারীর চুম্বনে এতো মাদকতা, অনেকদিন পরে সেই নারীর কোমল অধরের স্বাদ পেল। নিচের ঠোঁট দাঁত দিয়ে টেনে কামড়ে চিবিয়ে দিতে শুরু করে দিল। অনন্যার প্যান্টের ওপর দিয়েই ওর নরম তুলতুলে পাছার মাংস টিপে পিষে দিতে শুরু করে। পাছার ওপরে অনুপমার নরম আঙুলের খামচি অনুভব করতেই অনন্যা, মিহি শীৎকার করে ওঠে, “উম্মম্ম আহহহহহ”... অনন্যা, অনুপমার জামার ওপর দিয়েই ওর নরম তুলতুলে স্তন জোড়া খামচে ধরে চটকাতে শুরু করে।

অনুপমার শরীরে লাগে তীব্র কামনার আগুন। অনন্যার জানু মাঝে থাই গুঁজে দিয়ে চেপে ধরে অনন্যার যোনি দেশ। সাথে সাথে অনন্যা ওর মাইয়ের মাঝে হাত ঢুকিয়ে জিন্সের ওপর দিয়েই চেপে ধরে যোনি বেদি। একে অপরের যোনির ওপরে মৃদু আক্রমন চালায়। কুলকুল করে যোনি রস বইতে শুরু করে অনুপমার যোনির ভেতর থেকে। অনন্যার হাতের চাপের ফলে কেঁপে ওঠে অনুপমার সারা শরীর। বেশ কিছুক্ষণ দুই মত্ত নারী একে অপরের শরীর নিয়ে জামা কাপড়ের ওপর দিয়েই খেলে যায়। দুইজনে কিছুক্ষণ শরীর নিয়ে কামড়া কামড়ি চটকা চটকি করে খেলে উঠে বসে। অনন্যার চেহারায় ফুটে ওঠে এক কামুক হাসি আর অনুপমার চেহারা ভেসে যায় কামনার লালিমা।

অনুপমা মিচকি হেসে অনন্যার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুমি না খুব দুষ্টু, অনন্যাদি।” বলে নিজের ঠোঁট মুছে নেয়। তীব্র চুম্বনের ফলে গালের লালিমা বেড়ে গেছে, চুল খানিকটা অবিন্যস্ত হয়ে গেছে।

অনন্যা একটা দুষ্টু মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে, “সত্যি বলতে কি জানিস অনু। তোর এই সেক্সি দেহ দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না।” বলেই টুক করে একটা চুমু খেল অনুপমাকে।

অনুপমা গ্লাসের শেষ পানীয়টুকু গলায় ঢেলে বলল, “এবারে আমি আসি।”

অনন্যা ওর দুই হাত ধরে অনুনয় করে বলে, “এই কিছু মনে করিস না প্লিস। আমি না একটু এই রকম।”

অনুপমা ওর গালে হাত চোখ টিপে বলে, “না না কিছু না, বেশ একটু এঞ্জয় করলাম। তোমার না একদিন দেবায়নের সাথে ব্রেকফাস্ট খাওয়ার কথা আছে? সেদিন আমি আসবো তোমাদের সাথে ব্রেকফাস্ট খেতে।”

অনন্যা পারলে মুখ লুকিয়ে ফেলে, “মিস্টার বসাক সেইসব কথা তোকে বলেছে?”

অনুপমা দুষ্টুমি ভরা একটা হাসি দিয়ে বলে, “দেবায়ন আমার কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কিছু লুকায় নি। সত্যি বলতো কয়বার দেবায়নের সাথে সঙ্গম করেছো তুমি?”

ওই কথা শুনে অনন্যার গাল কান লাল হয়ে যায় লজ্জায়, “যা শয়তান মেয়ে। তোকে ভীষণ আদর করে সেটাই অনেক। তোরা ভালো থাকলেই ভালো। মিস্টার বসাক এলে আসিস একদিন। আমি সত্যজিতকে বলে রাখবো তাহলে ওর সাথে দেখা হয়ে যাবে তোদের।”

অনুপমা দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে বলে, “কোন কুমতলব নয়তো? তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে আমি করতে নারাজ কিন্তু।”

অনন্যা প্রচন্ড ভাবে মাথা নাড়ায়, “ওরে বাবা, না রে না একদম না। এই মাঝে মাঝে ক্লায়েন্টদের সাথে যাই, ওকে না জানিয়ে করতে হয় এইসব। তোদের কথা সত্যজিত কিছুই জানে না আর তোদেরকে ওর সামনে ওইভাবে নিচু হতে দিতে পারি নাকি?”

অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি কথাটা বললে না কিন্তু অনন্যাদি। দেবায়নের সাথে কয়বার সঙ্গম করেছিলে? কেমন লাগলো আমার দেবুকে?”

অনন্যা মিচকি হেসে চোখ টিপে বলে, “দুই বার করেছি তোর মিস্টারের সাথে। একবার র‍্যাডিসন ফোরটে আর একবার গোয়াতে। খুউউউউউব ভালো রে তোর মিস্টার। মন ভরিয়ে দিয়েছিল।”

অনুপমা ওর গালে আলতো টোকা মেরে বলে, “হ্যাঁ সোনা দিদি, বুঝতেই পারছি যে আমার ছোঁড়াটাকে এবারে বেঁধে রাখতে হবে।”

অনন্যা ওর গালে গাল ঠেকিয়ে বলে, “তোদের দেখে একটা গান গাইতে ইচ্ছে করছে।”

অনুপমা প্রশ্ন করে, “কি গান?”

অনন্যা গেয়ে ওঠে, “ও চাঁদ, সামলে রেখো জোছনাকে। কারো নজর লাগতে পারে। মেঘেদের উড়ো চিঠি উড়েওতো আসতে পারে ও চাঁদ... সামলে রাখো জোছনাকে।”

অনুপমাঃ “বুঝছি মনের মধ্যে অনেক প্রেম জেগেছে তোমার। সত্যজিৎকে ডেকে নাও আর ভালো করে আদর খাও। সোনাদিদি তাহলে আজকে আসছি। তুমি সত্যজিতের সাথে কথাবার্তা বলে ঠিক করে নাও।”

অনন্যাঃ “হ্যাঁ সে সব দেখেই তোদের ফোন করবো। মাঝে মাঝে ফোন করিস, ভালো লাগে।” চোখ টিপে বলে, “ব্রেক ফাস্টের কথা ভুলিস না। তোর মিস্টারকে সেই কবে বলেছিলাম, সেই যে গেল আর দেখা দিল না।”
 
অনুপমা মিচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে বিদায় জানায়। গাড়িতে উঠে আবার অফিসের দিকে রওনা দিচ্ছিল কিন্তু এমন সময়ে মামনির ফোন পেয়ে অবাক হয়ে যায়।

অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে মামনি? হটাত এমন সময়ে ফোন করলে।”

দেবশ্রী হেসে ওকে জিজ্ঞেস করে, “রাতে কি খাবি, কাঁকড়া কিনে নিয়ে যাবো?”

অনুপমা বাচ্চা মেয়ের মতন খিলখিল করে হেসে ওঠে, “তুমি না সত্যি পারো বটে।”

দেবশ্রীঃ “না রে, চোখের সামনে একটা অস্ট্রেলিয়ান কাঁকড়া দেখে তোর কথা মনে পড়ে গেল। তুই কাঁকড়া খেতে ভালবাসিস তাই।”

অনুপমাঃ “আচ্ছা বাবা আচ্ছা।”

দেবশ্রীঃ “তুই একটু তাড়াতাড়ি আসিস কিছু জরুরি কথা আছে।”

অনুপমা প্রশ্ন করে, “কি ব্যাপার মামনি?”

দেবশ্রীর কণ্ঠ স্বর কিঞ্চিত গম্ভির হয়ে যায়, “তুই আগে বাড়িতে আয় তারপরে বলবো।”

অনুপমার আর অফিসে গেল না, ড্রাইভারকে বলে সোজা গাড়ি নিয়ে চলে আসে দেবায়নের বাড়িতে। দেবশ্রী আগেই বাড়িতে পৌঁছে যায়। ছেলে না থাকলেই এই মেয়েটা এসে দেখা করে যায়, বসে গল্প করে, বাচ্চা মেয়ের মতন এটা খাবে ওটা খাবে আব্দার করে। দেবশ্রী যথাসম্ভব চেষ্টা করে হবু বৌমার শিশু সুলভ আব্দারগুলো পূরণ করতে।

বাড়িতে ঢুকে দেখে যে মামনি কাঁকড়া ধুতে ব্যস্ত। অনুপমা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ছোটো খুকির মতন আব্দার করে, “মামনি এবারে কাঁচা আমের সরবত খাওয়ালে না কিন্তু।”

দেবশ্রী হেসে বলে, “আচ্ছা বাবা কালকে না হয় বানিয়ে দেবো। কাঁকড়ার সাথে কি খাবি, ফ্রাইড রাইস না শুধু ভাত?”

অনুপমা মামনির পেটে কাতুকুতু দিয়ে বলে, “তোমার মনে ছিল কাঁকড়ার কথা?”

দেবশ্রী হেসে ওঠে, “আরে বাবা ছাড় ছাড়, শয়তান মেয়ে কোথাকার।”

অনুপমা রোজকার মতন রান্নাঘরের স্লাবের ওপরে পা তুলে বসে পড়ে হাতে একটা আম নিয়ে। দেবশ্রী ওকে আমটা কেটে দিতে চায় কিন্তু অনুপমা আম খানা জলে ধুয়ে, টিপে টিপে নরম করে নিচের দিকে একটা ছোটো ফুটো করে চুষতে শুরু করে। ঠোঁটের কষ বেয়ে আমের রস নিচের দিকে বেয়ে পড়ে আর অনুপমা উলটো হাতে আবার সেই রস মুছে নেয়। সেই দেখে দেবশ্রী হেসে ফেলে।

আম চুষে খেতে খেতে অনুপমা প্রশ্ন করে, “তুমি কি বলবে বলছিলে?”

দেবশ্রী খানিকক্ষণ চুপ থাকার পরে অনুপমার চোখের ওপরে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, “যা জিজ্ঞেস করবো সব ঠিক ঠিক উত্তর দিবি?”

মামনির এই চোখ কোনদিন দেখেনি অনুপমা তাই একটু ভয় পেয়ে যায়, দুচোখে বিস্ময় আর হাজার প্রশ্ন নিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি হয়েছে মামনি?” বুকের ভেতরের ধুকপুকানি বেড়ে ওঠে। মামনি কি দেবায়নের রুমের মধ্যে কিছু পেয়েছে? এমন কিছু যাতে মামনির সন্দেহ হয়েছে। প্যান্টির বাক্স অথবা ব্যাঙ্কের স্টেটমেন্ট অথবা অন্য কিছু। কি জানে মামনি?

দেবশ্রীর কাঁকড়ায় তেল নুন মাখাতে মাখাতে জিজ্ঞেস করে, “তোরা সূর্য আর মনিদিপাকে কি বলেছিস বা করেছিস?”

মাথায় বাজ পড়ার মতন চমকে ওঠে অনুপমা, এতো দিন পরে সূর্য মনিদিপার প্রশ্ন কেন উঠছে? অনুপমার গলা শুকিয়ে কাঠ। হাতের সামনে মনিদিপা অথবা সূর্যকে পেলে ছিঁড়ে খাবে এমন মনের অবস্থা। ক্রোধ সামলে নিয়ে হাসি টেনে মামনির উত্তরে বলে, “কই কিছু করিনি তো? শুধু ওদের অনুরোধ করেছিলাম কোলকাতা ছেড়ে চলে যেতে।”
 
দেবশ্রী কাজ থামিয়ে ভুরু কুঁচকে অনুপমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “অনুরোধ করেছিলিস, সত্যি বলছিস?”

ভেতরের রাগ লুকিয়ে খিলখিল করে হেসে ওঠে অনুপমা, “হ্যাঁ মামনি সত্যি বলছি। কিন্তু এতদিন পরে এই সব প্রশ্ন করছো কেন?”

দেবশ্রী আবার কাঁকড়া মেরিনেট করতে মন দেয়, “আজকে সকালে মণি ফোন করেছিল।”

কথাটা শুনতেই গলা শুকিয়ে আসে অনুপমার। মনিদিপা কি সবকিছু মামনিকে বলে দিয়েছে, তাহলে দেবায়ন আর ওর রক্ষে নেই। কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কি বলেছে?”

দেবশ্রী বলে, “খুব কাঁদছিল মেয়েটা, বারেবারে আমার কাছে ক্ষমা চাইছিল আর বলছিল যে দেবু যাতে ওদের সর্বনাশ না করে।”

চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে, রাগে কান লাল হয়ে যায় তাও কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রেখে জিজ্ঞেস করে, “আর কি বলেছে মামনি?”

দেবশ্রী ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “এ ছাড়া বেশি কথা বলেনি আর বলেছে আমি যেন দেবায়নকে এই বিষয়ে কোন কথা না জানাই, তাই তোকে জিজ্ঞেস করলাম যে তোরা কি করেছিলি বা বলেছিলি ওদের। তোরা সত্যি বলতো কি করেছিস ওদের সাথে?”

অনুপমা বুঝতে পারে যে মনিদিপা ওর কথা রেখে দেবশ্রীকে কিছু জানায়নি, একটা স্বস্তির শ্বাস নেয় আর সেইসাথে রাগে গায়ের রক্ত গরম হয়ে যায়। কেন মনিদিপা এতদিন পরে ফোন করেছে? ওকি মামনিকে জানাতে চায় যে ওর সাথে দেবায়ন আর অনুপমা কি কি করেছে?

অনুপমা হাসি টেনে বলে, “না গো কিছুই করিনি ওর সাথে। তুমি ভালো করেই চেনো সূর্য আর মনিদিপাকে, ওরা সব বানিয়ে বলছে তোমার কাছে।”

দেবশ্রী স্বস্তির শ্বাস নিয়ে বলে, “হ্যাঁ তা জানি যে ওরা কেমন। যাক শুনে শান্তি পেলাম যে তোরা ওদের কিছু করিস নি। কিন্তু দেবুর সর্বনাশের কি কথা বলছিল ও?”

অনুপমা আম খাওয়া ছেড়ে মামনিকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ছাড়ো ওদের কথা। সব মিথ্যে কথা বলছে।”

খাওয়ার সময় কেটে যায় একথা সেকথায়, কিন্তু অনুপমার মনে ভিড় করে থাকে মনিদিপার ফোনের কথা? আবার কি ওরা দুইজনে কিছু বদ মতলব আঁটছে মামনিকে ফাঁসানোর জন্য। দেবায়ন নেই, দেবায়ন থাকলে না হয় একটা পরামর্শ নেওয়া যেতো। কিন্তু দেবায়নের মাথা গরম, দেবায়নের জন্য অপেক্ষা করলে হয়তো রক্তারক্তি কান্ড ঘটিয়ে বসবে। সাপ যখন আবার ফনা তুলেছে, ফোঁস করার আগেই এবারে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে না হলে ভবিষ্যতে ফোঁস করার সাহস পেয়ে যাবে। কি করা যায়, সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফেরার সময়ে রূপককে ফোন করে সব জানায়। আরো জানায় যে আগামীকাল সকালে জলপাইগুড়ি যেতে চায় সূর্য আর মনিদিপার সাথে দেখা করতে। কিন্তু জানে না ওদের ঠিকানা অথবা ফোন নাম্বার। শেষ পর্যন্ত ঋতুপর্ণার আশ্রয় নিতে হয় অনুপমাকে। ঋতুপর্ণা জানিয়ে দেয় যে ওর বড়দা ওদের জন্য বাগডোগরা এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করবে। কথা হয় যে ঋতুপর্ণার দাদা মনিদিপার বাড়ি চেনে, সেই চিনিয়ে দেবে আর সাথেই থাকবে।

সকালের ফ্লাইট ধরে রূপক আর অনুপমা জলপাইগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। মনের মধ্যে অজানা আশঙ্কা, কি হবে কি হবে। যদিও ওদের কাছে ওই রাতের সব ঘটনার ভিডিও করা আছে তাও এক অজানা আশঙ্কায় বুক দুরদুরু করে কেঁপে ওঠে।

রূপক ওর হাতের ওপরে চাপ দিয়ে মনে বল জুগিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি ভাবছিস এতো? আমি আছি তো সব ঠিক করে দেবো।”

অনুপম হেসে বলে, “তোর আর দেবায়নের এক কথা, সব ঠিক করে দেবো। মারামারি খুনোখুনি ছাড়া আর কি ভাবে জানিস ঠিক করতে?”

রূপক হেসে ফেলে, কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে, “আরো একটা উপায় জানি কি করে অবস্থার সামাল দিতে হয়।”

অনুপমা না বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করে, “কি ভাবে?”

রূপকঃ “দেবায়ন যেমনভাবে মনিদিপাকে চরিয়ে খেলিয়ে ছিপে তুলেছিল ঠিক সেইরকম ভাবে আমিও তুলতে জানি।”

কথা শুনে অনুপমার গাল লাল হয়ে যায়, “ধ্যাত শয়তান ছেলে।”

রূপকের উষ্ণ হাতের চাপে মনে বল পায় অনুপমা।

বেশ বেলার দিকে ফ্লাইট বাগডোগরা পৌঁছায়। ঋতুপর্ণার দাদা গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল। ঋতুপর্ণা বিস্তারে ওর দাদাকে জানায়নি, শুধু এইটুকু জানিয়েছে যে যদি ওদের কোন সাহায্য লাগে তাহলে যেন সাহায্য করে। মনিদিপার বাড়ি যাওয়ার পথে ঋতুপর্ণার দাদা রূপককে প্রশ্ন করে আসার কারন। রূপক কথা ঘুরিয়ে বলে একাজ সেকাজের কথা বলতে শুরু করে দেয়। সূর্যের বাড়ির কিছু দুরে গাড়ি থামিয়ে ঋতুপর্ণার দাদা বাড়ি দেখিয়ে দেয়। ওদের ফোন নাম্বার দিয়ে বলে যে কোন কিছুর অসুবিধে হলে যেন ডাকে। এই পাড়া ওর চেনা, কোন গন্ডগোল হলে এক ডাকে লোক জড় করে নিতে পারবে। অনুপমা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে অত কিছুর হয়তো দরকার পড়বে না।
 
রূপক আর অনুপমা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। দুইতলা বাড়ি, ঋতুপর্ণার দাদা বলেছে যে একতলার একটা ছোটো কামরা নিয়ে থাকে সূর্য আর মনিদিপা। কি পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে সেই আশঙ্কায় অনুপমার দুক দুরুদুরু করে ওঠে। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে দরজার কড়া নাড়িয়ে অপেক্ষা করে। মাথার ওপরে কাঠফাটা রোদ যেন ঝলসে দেয় কোমল অনুপমাকে। এক অজানা আশঙ্কায় রোদে দাঁড়িয়ে দরদর করে ঘামতে শুরু করে দেয়।

কিছু পরে এক মহিলা দরজা খুলে ওদেরকে জিজ্ঞেস করে কে এসেছে। মহিলাকে দেখে প্রথমে ঠিক চিনতে পারে না অনুপমা, অবাক হয়ে থাকিয়ে থাকে মনিদিপার দিকে, একি হয়ে গেছে মনিদিপার শরীর। রোগা হয়ে গেছে, গলার কন্ঠি বেরিয়ে এসেছে, দুই টানা টানা চোখ কোঠরাগত, টোপা টোপা লালচে গালে সেই লালিমা নেই, পরনে একটা রঙ ওঠা কমদামি সুতির ম্যাক্সি। পেটের দিকে নজর যেতেই বুঝতে পারল যে মনিদিপা গর্ভবতী। মনিদিপার চোখ জোড়া ছলকে ওঠে, ঠোঁট জোড়া কেঁপে ওঠে, ওদের হটাত করে সামনে দেখে আতঙ্কে চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায়।

অনুপমা বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে মনিদিপার শুকনো চেহারা আর গর্ভবতী দেখে কি বলতে এসেছে সেটা ভুলে যায়। রূপকের হাতের ছোঁয়া পেতে সম্বিৎ ফিরে আসে অনুপমার।

মনিদিপা কাঁপা কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “আচমকা কি মনে করে?”

অনুপমা মৃদু হেসে বলে, “কিছু না এমনি তোমাদের দেখতে এলাম।”

মনিদিপা একবার রূপকের দিকে তাকায় একবার অনুপমার দিকে, ভেতরে ডাকবে কি ডাকবে না এই ভাবে। অনুপমার তীক্ষ্ণ চাহনি ওর মনের দ্বিধা এড়াতে পারে না, নিজেই মনিদিপাকে বলে, “এতো দূর থেকে এসেছি একবার ভেতরে ডাকবে না?”

দরজা থেকে সরে দাঁড়ায় মনিদিপা। অনুপমা ঘরে ঢুকে চারদিক তাকিয়ে দেখে। ঘরটা এতো ছোটো যে কেউ যদি আড়মোড়া ভাঙে তাহলে হাত গিয়ে দেয়ালে ঠেকবে। মাথার ওপরে একটা সিলিং ফ্যান ঘুরছে নয় যেন কাঁদছে। এক পাশে একটা ছোটো রান্নাঘর, এতো ছোটো যে একজন দাঁড়ালে দ্বিতীয় জনের দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না। বিছানার চাদর রঙ ওঠা কিন্তু পরিষ্কার, খাটের তলায় যাবতীয় আসবাব পত্রে ভর্তি। ছয় বাই ছয়ের খাটটা ঘরের বেশির ভাগ জায়গা জুড়ে রয়েছে। একপাশে একটা ছোটো ফ্রিজ আর তার ওপরে একটা ছোটো টিভি। ঘরের আনাচে কানাচে দীনতার ছাপ কিন্তু বেশ ছিমছাম পরিষ্কার করে রাখা। মনিদিপাকে দেখে মনে হলো যেন শুয়ে ছিল, মাথার চুল অবিন্যস্ত। অনুপমাকে খাটের ওপরে বসতে বলে মনিদিপা। রূপক, তীক্ষ্ণ চোখ একভাবে চেয়ে থাকে মনিদিপার দিকে, বুঝতে চেষ্টা করে কি চায় এই মহিলা আর তার স্বামী।

অনুপমা মনিদিপাকে প্রশ্ন করে, “তুমি কাল মামনিকে, মানে দেবায়নের মাকে ফোন করেছিলে?”

মনিদিপা উত্তরে কি বলবে ভেবে পায় না, “না মানে বউদিকে এমনি ফোন করেছিলাম।”

অনুপমা শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “হটাত এতদিন পরে কি মনে করে?”

রূপক মনিদিপার চোখে চোখ রেখে কঠোর কণ্ঠে প্রশ্ন করে, “কোন বদ মতলব নিশ্চয় নয়। ওই দিনের সব ঘটনা কিন্তু ক্যামেরা বন্দি, সেটা নিশ্চয় খেয়াল আছে। তোমাদের মনে কি আছে কি নেই বলা মুশকিল।”

মনিদিপার গলা কেঁপে ওঠে ওই হিম শীতল গম্ভির কণ্ঠস্বর শুনে, “এতদিন পরেও আমাদের সর্বনাশ করতে চাও। মড়ার ওপরে খাঁড়ার ঘা না মারলে কি তোমাদের প্রানে জল আসবে না?” ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলে, “বড় কষ্টে আছি তাই ক্ষমা চেয়ে ফোন করেছিলাম যাতে আমাদের কষ্টের কিছু লাঘব হয়।”

অনুপমা রূপককে মৃদু ধমক দিয়ে শান্ত করিয়ে মনিদিপার হাত ধরে পাশে বসিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “কাঁদছো কেন? কেঁদো না।”

মনিদিপা ডুকরে কেঁদে ওঠে, “কি করবো বল? মা সমান বৌদির সাথে আমরা যা করেছি তাতে ভগবান আমাদের কোনদিন ক্ষমা করবে না।” পেটের ওপরে হাত বুলিয়ে কেঁদে বলে, “কোলকাতা ছেড়ে চলে আসার পরে আমি গর্ভবতী হয়েছিলাম কিন্তু সেই বাচ্চাটা পাঁচ মাসেই পেটের মধ্যে মারা যায়। আমি দিনরাত ঠাকুরকে ডাকতাম কিন্তু পাপের বোঝা আমাদের ঘাড় থেকে মনে হয় আর নামবে না, যদি না বৌদি আমাদের ক্ষমা করে।”

মনিদিপার চোখের জলে অনুপমার মন ভিজে যায়। রূপককে একটু বাইরে যেতে বলে, মনিদিপাকে জিজ্ঞেস করে, “বর্তমানে কত মাস চলছে তোমার?”

মনিদিপা চোখের জল মুছে পেটের ওপরে হাত বুলিয়ে বলে, “পাঁচ মাস চলছে।”

তারপরে অনুপমা ওদের কথা জিজ্ঞেস করাতে মনিদিপা এক এক করে সব খুলে বলে। কোলকাতা থেকে জলপাইগুড়িতে এসে সূর্য প্রথমে কোন কাজ পায়নি। বেশ কয়েক মাস বাপের বাড়িতে বসে ছিল কিন্তু কতদিন আর বসে খাওয়া যায়। বাবা নেই, গত হয়েছেন, দাদার ঘাড়ে বসে খেতে সূর্যের ভালো লাগে না। এই ছোটো ঘরে উঠে আসে ওরা আর ওর সব গয়না বিক্রি করে ঘর ভাড়ার টাকা আর খাওয়ার টাকা জোগাড় করে। তারপরে একটা কাঠের কারখানায় ক্যাসিয়ারের কাজ পায়। যা পায় তাতে কষ্টেশিষ্টে দুইজনের চলে যায়। প্রথম বাচ্চার সময়ে টাকার অভাবে ভালো ডাক্তার দেখাতে পারেনি, সরকারি হাসপাতালে দেখিয়েছিল কিন্তু কিছু ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হতো। একটা প্রাইভেট ডাক্তার বলেছিল যে মনিদিপাকে খুব সাবধানে রাখতে আর নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়ে দিতে কিন্তু সেই সময়ে ওদের কাছে কানা কড়িটাও ছিল না যে নার্সিং হোমে ভর্তি করাবে। দাদার কাছ থেকে ওষুধের খরচা পেয়েছিল কিন্তু নার্সিংহোমে ভর্তি করার মতন পয়সা জুগিয়ে উঠতে পারেনি। কথাগুলো শুনতে শুনতে অনুপমার দুই চোখ দিয়ে জলের ধারা বয়ে আসে।

গত বারের সময়ে বেশ কিছু ধার দেনা হয়ে গেছে ওদের তাই এইবারে অবস্থা আরও সঙ্গিন। এই বাচ্চাটা ওরা ঠিক চায়নি কিন্তু হটাত করে এসে গেছে। মা হওয়ার ইচ্ছে সব মেয়েদের থাকে তাই এটাকে বাঁচিয়ে রাখতে তৎপর হয়ে ওঠে। কিন্তু ঠিক ভাবে সব হবে সেই ভেবে কুল কিনারা পায় না। ঠিক মতন খাওয়ার পয়সা নেই, ডাক্তারের পয়সা কোথা থেকে দেবে?

অনুপমা মনিদিপার গলায় হাত দিয়ে দেখে যে কণ্ঠহাড় দেখা যাচ্ছে, খুব শীর্ণকায় হয়ে গেছে একসময়ের সুন্দরী মনিদিপা। ও ভেবে এসেছিল যে মনিদিপা আর সূর্যকে শাসিয়ে যাবে মামনিকে ফোন করার জন্য কিন্তু এখানে এসে পরিস্থিতি দেখে মাথার মধ্যে সব অঙ্ক গুবলেট হয়ে যায়। ঘর বাড়ির পরিস্থিতি আর মনিদিপার অবস্থা দেখে বুক ফেটে এক অব্যক্ত কান্না বেরিয়ে আসে। কি করবে অনুপমা, বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মনিদিপার গালে মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেয়।

ব্যাগে চার হাজার টাকা ছিল, সেটা বের করে ওর হাতে দিয়ে বলে, “এটা রাখো এখন আর তোমার বরের ব্যাঙ্ক একাউন্ট নাম্বার বল। আমি টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি এখুনি।”

চার হাজার টাকা হাতে নিয়ে মনিদিপা অনুপমার হাত ধরে ভেঙে পড়ে কান্নায়, “তুমি সত্যি দেবী।”
 
অনুপমা ওর চোখের জল মুছিয়ে বলে, “আমি তোমাদের যথাযথ সাহায্য করতে পারি কিন্তু একটা শর্তে?”

মনিদিপা কান্না ভুলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, “কি শর্ত আবার?”

অনুপমা বড় শ্বাস নিয়ে বলে, “তুমি প্রতিজ্ঞা করেছিলে যে মামনিকে কোনদিন ফোন করবে না, সেই প্রতিজ্ঞা কিন্তু তোমরা রাখোনি, মণি।”

মনিদিপা হাতের টাকা ওর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, “আমাদের সর্বনাশ না করলে যেন তোমার প্রানে শান্তি আসবে না।”

অনুপমা মাথা ঠাণ্ডা রেখে ওর হাত ধরে পাশে বসিয়ে বলে, “আমার কথা পুরো না শুনে কেন বাজে বকছো, মণি? দয়া করে আগে আমার কথা পুরো শোনো তারপরে বোলো।” চুপ করে বসে পড়ে মনিদিপা। অনুপমা বলে, “সূর্যকে বলো কিছু একটার দোকান দিক আমি টাকা দেবো তোমাদের। কত টাকা লাগবে এক লাখ, দুই লাখ না পাঁচ লাখ? যা লাগবে বলো আমি দিতে রাজি।”

মনিদিপা হাঁ করে চেয়ে থাকে অনুপমার মুখের দিকে, এই মেয়ের বুকে কে বাস করে? সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা দেবীকে যেন সামনে দেখছে।

এমন সময়ে ধড়াম করে দরজা খুলে সূর্য ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে, পেছনে রক্ত চক্ষু রূপক।

সূর্য অনুপমাকে দেখে চেঁচিয়ে ওঠে, “এতদিন পরে দলবল নিয়ে আমাদের সর্বনাশ করতে এসেছো? বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে। আমি আমার মৃত বাচ্চার কসম খেয়ে বলছি যেদিন দেবায়নকে হাতের সামনে পাবো সেদিন মেরে ফেলবো...”

অনুপমা সূর্যকে রুদ্ররুপে দেখে থতমত খেয়ে যায়। মনিদিপা অস্ফুট চিৎকার করে সূর্যকে চুপ করতে বলে, “ওগো কিছু বোলো না গো। ওরা আমাদের সর্বনাশ করতে আসেনি।” হাতের টাকার তোড়া দেখিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে, “আমাদের ভালোই করতে এসেছে ওরা। দয়া করে তুমি একটু ঠাণ্ডা হও।”

অনুপমা রূপকের দিকে তাকায়। রূপক গর্জে ওঠে সূর্যের ওপরে, কলার ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে, “আগে কথা শুনে তবে কথা বলবে না হলে মেরে এখানে এই মেঝের নিচে পুঁতে চলে যাবো কাকপক্ষি টের পাবে না।”

অনুপমা রূপককে ধমক দিয়ে সূর্যকে ছেড়ে দিতে বলে। রূপক সূর্যকে ধরে বসিয়ে দেয় খাটের ওপরে।

রূপক সূর্যের নাকের সামনে আঙুল নাড়িয়ে বলে, “আমরা ভেবেছিলাম যে তোমরা চুপচাপ থাকবে কিন্তু কাকিমাকে ফোন করে খুব ভুল করেছো। ভাগ্য ভালো যে দেবায়ন আসেনি। আমরা ওকে না জানিয়ে এখানে এসেছি। যদি ও জানতে পারে তাহলে এখানে এসে তোমাদের কচুকাটা করবে।”

অনুপমা এবারে রূপকের ওপরে রেগে গিয়ে বলে, “তুই একটু চুপ থাকবি? আমি ওদের সাথে কথা বলছি, আমাকে বলতে দে।”

অনুপমা সূর্যকে বুঝিয়ে বলার পরে সূর্য ক্ষান্ত হয়, “দেখো, আমি এখানে এসেছিলাম অন্য এক মনোভাব নিয়ে কিন্তু এখানে এসে তোমাদের অবস্থা দেখার পরে আর মনিদিপার এই অবস্থা দেখার পরে আমি ভাবনায় পড়ে গেলাম। তুমি এখানে কিছু একটার দোকান দিতে পারো, তাতে আমি সাহায্য করবো চিন্তা নেই।” তারপরে হেসে মনিদিপার গালে হাত বুলিয়ে, “এতো সুন্দরী বৌটার কি অবস্থা করেছো? আর ওই যে আসছে তাকে নিয়ে ভালো ভাবে থাক।”

মনিদিপা ওকে সব কিছু খুলে বলে আরও বলে যে অনুপমা ওদের টাকা দেবে দোকান করতে। সব কিছু শুনে হতবাক হয়ে সূর্য, কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে। কি ভেবেই না দেবশ্রী বৌদিকে ব্ল্যাকমেল করেছে আর নিজেদের কামনা চরিতার্থ করেছে। সূর্য ক্ষান্ত হয় নিজের ভুল বুঝে। অনুপমা ওর কাছ থেকে ব্যাঙ্কের একাউন্ট নাম্বার নিয়ে পাঁচ লাখ টাকার একটা আর টি জি এস করে বলে টাকা আসতে দিন চারেক লাগবে ততদিনের জন্য এই চার হাজার টাকায় চালায় আর বউকে যেন ভালো ডাক্তার দেখায়। সব কিছু দেখেশুনে সূর্যের চেহারা লজ্জায় আর নিজের প্রতি ঘৃণায় কুঁকড়ে যায়। বারেবারে অনুপমার কাছে বিগত দিনের কার্যকলাপের জন্য ক্ষমা চায়।

বিকেল হয়ে মনিদিপা আর সূর্যের বাড়ি থেকে বের হতে। একদিকে দুপুরে কিছু খায়নি, তাই প্লেনে ওঠার আগে একটা বড় রেস্টুরেন্টে ঢোকে দুজনে। আকাশের সূর্য পশ্চিমে ঢলে গেছে, সন্ধ্যের ফ্লাইট মনে হয় ধরতে পারবে না। এদিকে বাড়িতে আসল ঘটনা কিছুই বলে আসা হয়নি। অনুপমা জানতো যদি মামনিকে বলে তাহলে মামনি ওকে খুব বকবে আর মাকে বলাও যায় না এইসব কথা। কাজের অছিলায় দুইজনে বেরিয়ে এসেছে।

খেতে খেতে রূপক ওকে জিজ্ঞেস করে, “আজ তাহলে আর বাড়ি ফেরা হচ্ছে না।”

অনুপমা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে, “না আজ মনে হচ্ছে এখানেই থেকে যেতে হবে। বড্ড দেরি হয়ে গেল সরি।”

রূপক চোখ টিপে হেসে বলে, “শালী আধি ঘর ওয়ালি, রাতে একসাথে থাকতে না পারি একটু ছোঁয়া পেতেই পারি।”

অনুপমার গাল লাল হয়ে যায় লজ্জায়, “ধ্যাত শয়তান ছেলে, তুই আলাদা রুমে থাকবি আর আমি আলাদা রুমে থাকবো।”

রূপক ওকে আরও উত্যক্ত করে বলে, “সে না হয় থাকলাম কিন্তু ... এই গরমে তুই যে বেশ গরম হয়ে থাকবি। ঠাণ্ডা কে করবে তোকে?”
 

Users who are viewing this thread

Back
Top