দেবায়ন খানিক ক্ষণ চোখ বন্ধ করে ভাবতে চেষ্টা করে একাউন্টসের হিসেব নিকেশ, তারপরে গম্ভির কণ্ঠে বলে, “না মিস্টার ধিলন, আপনার অঙ্কে ভুল আছে। চল্লিশ কোটি হয়। আপনি যত টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, তার পাঁচ গুন লাভ আপনি এতদিনে পেয়ে গেছেন। গত কুড়ি বছরে, আপনাকে কবে কত দেওয়া হয়েছে তার পুরো হিসাব আমার কাছে আছে। সেই হিসাব যদি এখানে খুলে বসি তাহলে চল্লিশের চেয়ে কম পাওনা হয় আপনার।”
পরমিত জানতো যে পারমিতা এইসবের ব্যাপারে কোনদিন কিছু বলেনা তাই সে প্রশ্নটা পারমিতাকে করেছিল। কিন্তু দেবায়ন ওর হয়ে উত্তর দেবে সেটা ঠিক ভাবেনি। দেবায়নের মুখের উত্তর শুনে পরমিত বাঁকা হেসে বলে, “যদি কাগজে স্বাক্ষর না করি?”
পারমিতা আবার টেবিলের তলা দিয়ে দেবায়নের হাত চেপে ধরে। ইঙ্গিতে জানায় কোন বচসায় না যেতে। দেবায়ন পরমিতকে বলে, “আমি ছোটো, আমি এই খেলায় নতুন। কিন্তু কাকুর সাথে থেকে একটু খেলা আমি শিখে গেছি। কোম্পানি ডিসল্ভ করে দেবো। এই চল্লিশের এক টাকাও আপনি পাবেন না। আর বাকি অংশ নিয়ে আমি কি করবো সেটা আমি আপনাকে কেন বলতে যাবো?”
অনন্যার মাথার ওপর দিয়ে এইসব কথাবার্তা বেরিয়ে যায়, পারমিতার দিকে চেয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপারে কথাবার্তা হচ্ছে। পারমিতা চোখের ইশারায় চুপ করে থাকতে বলে।
পরমিত হেসে ফেলে, “আরে না না, মিস্টার বসাক। আমি এমনি জানতে চাইছিলাম যে দুশো কোটি টাকা নিয়ে তুমি কিসে বিনিয়োগ করতে চলেছো। হে হে... মানে আমাকেও তাহলে একটু সুযোগ দিও ভবিষ্যতে এই আর কি।”
দেবায়ন বুঝে যায়, কোন প্রকৃতির মানুষ মিস্টার পরমিত সিং ধিলন। এতক্ষণ ওর কণ্ঠে সম্ভ্রমের ছোঁয়া ছিলোনা, দেবায়নের কথা শুনে পরমিতের গলার স্বর পালটে গেছে। দেবায়ন বাঁকা হেসে বলে, “আমি জানি আপনি মজা করছিলেন। তবে আপনাকে চল্লিশ আর মিসেস চৌধুরীকে পঞ্চাস দেবার পরে এমন কিছু বাঁচবে না যাতে একটা বড় কোম্পানি খোলা যাবে। আগে টাকা আসুক তারপরে রোডম্যাপ তৈরি করবো।”
পরমিতঃ “তোমার মতন মানুষ, কখন টাকার জন্য অপেক্ষা করে না, মিস্টার বসাক। তুমি পরবর্তী পদক্ষেপ ভেবেই রেখেছো, বলতে চাইছো না সেটা আলাদা ব্যাপার।”
ড্রিঙ্ক আর স্টারটার শেষে, দেবায়ন ফাইল এগিয়ে দেয় পরমিতের দিকে। পরমিত হেসে বলে, “ডিনার শেষ হোক, তুমি ম্যাডামের হাতে ফাইল পাঠিয়ে দিও আমি সই করে দেবো।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “দুটো কাগজ আছে ওইখানে। একটা চল্লিশ একটা পঁয়তাল্লিশ, কোনটা সই করবেন?”
পরমিত হেসে বলে, “আরে বাবা মিস্টার বসাক, সি.এম.ডি বসে আছে, একটু আলাপ করবো না? তুমি মিসেস সেনের হাতে ফাইল দিয়ে দিও, আমি একদম ঠিক কাগজে সই করে দেবো। তুমি চিন্তা কোরো না।”
দেবায়ন চিবিয়ে বলে, “আপনাকে চল্লিশে সই করতে হবে না। আমার সামনে আপনি পঁয়তাল্লিশে সই করে দিন, সেই সাথে কাকিমাও সই করে দেবে ট্র্যান্সফার কাগজ। দুটো কপি করা আছে, একটা আপনার কাছে থাকবে, আসলটা আমার কাছে।”
পরমিত হতভম্ব হয়ে যায় দেবায়নের কথা শুনে। তিনি পাক্কা ব্যাবসাদার। নারী মাংসের চেয়ে টাকা বেশি চেনে, তবে শেষ বারের মতন পারমিতাকে ভোগ করার লোভ ছাড়তে পারে না। পরমিত মানতে পারে না, যে কালকের একটা ছেলে ওকে নাস্তানাবুদ করে দেবে। পরমিত বুঝে যায় যে দেবায়ন ঘাসে মুখ দিয়ে চলে না, পরমিতের আসল উদ্দেশ্য ধরে ফেলেছে আর তাই পাঁচ কোটি টাকা ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে। পরমিত ম্লান হেসে বলে, “দাও কোথায় সই করতে হবে দেখি।”
পারমিতা দেবায়নের শক্ত চোয়াল দেখে মনের অবস্থা বুঝে যায়। দেবায়ন এক দৃষ্টে পরমিতের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এ যেন দুইজনের মুক যুদ্ধ। পারমিতা অবস্থার সামাল দেওয়ার জন্য দুইজনকে হেসে বলে, “আরে বাবা, থামো তোমরা। ডিনার করে ফেলি। কাবাবসে এসেছি এখানকার গলোটি কাবাব খেয়ে দেখো, জিবে দিলেই গলে যাবে এমন দারুন বানায়।” পারমিতা অনন্যাকে ইশারায় কথা বলতে বলে, দেবায়নকে শান্ত করতে ইশারা করে।
পরমিত আর দেবায়নের কথাবার্তা আলোচনায় ডিনারের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অনন্যা টেবিলের তলা দিয়ে দেবায়নের থাইয়ের ওপরে নরম হাত চেপে ঠাণ্ডা করে। দেবায়নের দিকে আলতো হেসে বলে, “এই তোমরা অনেকক্ষণ ধরে শুধু বিজনেসের প্যাঁচ নিয়ে কথা বলে যাচ্ছো। একটু থামবে? আমাদের মাথায় কিছু ঢুকছে না এই সব ব্যাপার।” পরমিতের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “চিন্তা করবেন না মিস্টার ধিলন, আমি আপনার কাছে ফাইল নিয়ে চলে যাবো।”
দেবায়ন কাষ্ঠ হেসে বলে, “মিস্টার ধিলনের এখানকার কাবাব কি আর ভালো লাগবে? খোদ দিল্লীর মানুষ, পুরানো দিল্লীতে দারুন কাবাব পাওয়া যায় নিশ্চয়। কি বলেন মিস্টার ধিলন?”
পরমিত দেবায়নকে বলে, “হ্যাঁ, একবার দিল্লীতে এসো। লাল কিলার কাছে পরাঠে ওয়ালা গলিতে ভালো পারাঠা আর কাবাব খাওয়াবো তোমাকে।”
দেবায়ন বলে, “হ্যাঁ এবারে যেতে হবে দিল্লী।”
ডিনার দিয়ে যায় ওয়েটার। ব্যাবসা ছেড়ে কথার মোড় অন্যদিকে ঘুরে যায়, অনন্যার সিনেমার কথা হয়। মিস্টার ধিলনের মেয়ে একজন ক্যানাডিয়ান এন.আর.আই কে বিয়ে করেছে, সেই নিয়ে কথা হয়। উত্তপ্ত পরিবেশ শান্ত হয়ে যায়। খাওয়া শেষে, মিস্টার ধিলন জিজ্ঞেস করেন সাক্ষর করার কথা। দেবায়ন অনন্যার হাতে ফাইল ধরিয়ে দেয়। পরমিত একটু হাসে সেই দেখে। অনন্যাকে বলে, একটু টিয়া মারিয়াতে গিয়ে ড্রিঙ্কস নেবে তারপরে রুমে চলে যাবে। অনন্যা বলে, রুমে পৌঁছে গেলে একবার যেন দেবায়নকে ফোনে জানিয়ে দেয়, তাহলে সেই মতন ফাইল নিয়ে চলে যাবে। অনন্যা আর পারমিতা কটেজে চলে যায়। দেবায়ন আর পরমিত বারের দিকে হাঁটা দেয়। পরমিত বারে ঢুকে যায়।
দেবায়ন একটা বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে সমুদ্র তটের দিকে হাঁটতে শুরু করে। ঠাণ্ডা কনকনে হাওয়া বইতে থাকে সমুদ্রের দিক থেকে। ঘন কালো অন্ধকারে সমুদ্রের ঢেউ মাঝে মাঝে চিকচিক করে, সাদা ঢেউয়ের ফেনা আছড়ে পড়ে পায়ের কাছে। কোন এক ছোটো বেলায় মায়ের সাথে দিঘা ঘুরতে গেছিল, সে কথা মনে নেই। একা নির্জন সমুদ্র তটে হাঁটতে হাঁটতে সব কিছু কেমন স্বপ্নের মতন মনে হয়। স্বপ্নের মতন এক সুন্দরী ওর হাতে ধরা দিল, সেই সুন্দরীর হাত ধরে লক্ষ্মী একসময়ে ধরা দিল। এই টাকা পয়সা প্রতিপত্তি ওকে কোথায় নিয়ে যাবে সেই চিন্তা করে। অনুপমার কথা মনে পড়তেই প্রেয়সীকে ফোন করে। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পরে মাকে ফোন করে দেবায়ন। মন খুশিতে ভরে ওঠে, অনুপমার গলা শুনে।
পরমিত কিছু পরে দেবায়নকে ফোন করে জানিয়ে দেয় রুমে পৌঁছে গেছে। পরমিত দেবায়নকে বলে, “মিস্টার বসাক, তোমার যখন জন্ম হয়নি তখন থেকে আমি ব্যাবসা করি। টাকা কিভাবে অর্জন করতে হয় তোমার থেকে ভালো ভাবে জানি, কিন্তু তুমি একজন মানুষকে কিভাবে তাঁর সন্মান তাঁর সমাদর করতে হয় সেটা জানো। আমি বুঝি, একশো কোটি টাকার মধ্যে পাঁচ কোটি টাকার কত মুল্য। আমার দূরদৃষ্টি বলে, তুমি টাকার সাথে সাথে মানুষের মন জয় করবে। হ্যাঁ, তুমি হয়তো আমার মতন উপায়ে টাকা অর্জন করবে না কিন্তু ভবিষ্যতে তুমি যেটা অর্জন করবে সেটা অমুল্য। সেই জিনিস কোটি টাকা দিয়ে কেনা যায়না। আজকে আমি যদি চোখ বন্ধ করি, তাহলে কেউ আমার পরিবারের পাশে নিঃস্বার্থে এসে কেউ দাঁড়াবে না। যারা দাঁড়াবে তারা আমার সম্পত্তির লোভে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু তোমার অবর্তমানে তোমার পরিবারের পাশে এসে অনেকে দাঁড়াবে সেটা তুমি কোটি টাকার বিনিময়ে কিনতে পারবে না। ভগবান তোমার সাথে থাকুক এটাই আমার কাম্য।”
পরমিত জানতো যে পারমিতা এইসবের ব্যাপারে কোনদিন কিছু বলেনা তাই সে প্রশ্নটা পারমিতাকে করেছিল। কিন্তু দেবায়ন ওর হয়ে উত্তর দেবে সেটা ঠিক ভাবেনি। দেবায়নের মুখের উত্তর শুনে পরমিত বাঁকা হেসে বলে, “যদি কাগজে স্বাক্ষর না করি?”
পারমিতা আবার টেবিলের তলা দিয়ে দেবায়নের হাত চেপে ধরে। ইঙ্গিতে জানায় কোন বচসায় না যেতে। দেবায়ন পরমিতকে বলে, “আমি ছোটো, আমি এই খেলায় নতুন। কিন্তু কাকুর সাথে থেকে একটু খেলা আমি শিখে গেছি। কোম্পানি ডিসল্ভ করে দেবো। এই চল্লিশের এক টাকাও আপনি পাবেন না। আর বাকি অংশ নিয়ে আমি কি করবো সেটা আমি আপনাকে কেন বলতে যাবো?”
অনন্যার মাথার ওপর দিয়ে এইসব কথাবার্তা বেরিয়ে যায়, পারমিতার দিকে চেয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপারে কথাবার্তা হচ্ছে। পারমিতা চোখের ইশারায় চুপ করে থাকতে বলে।
পরমিত হেসে ফেলে, “আরে না না, মিস্টার বসাক। আমি এমনি জানতে চাইছিলাম যে দুশো কোটি টাকা নিয়ে তুমি কিসে বিনিয়োগ করতে চলেছো। হে হে... মানে আমাকেও তাহলে একটু সুযোগ দিও ভবিষ্যতে এই আর কি।”
দেবায়ন বুঝে যায়, কোন প্রকৃতির মানুষ মিস্টার পরমিত সিং ধিলন। এতক্ষণ ওর কণ্ঠে সম্ভ্রমের ছোঁয়া ছিলোনা, দেবায়নের কথা শুনে পরমিতের গলার স্বর পালটে গেছে। দেবায়ন বাঁকা হেসে বলে, “আমি জানি আপনি মজা করছিলেন। তবে আপনাকে চল্লিশ আর মিসেস চৌধুরীকে পঞ্চাস দেবার পরে এমন কিছু বাঁচবে না যাতে একটা বড় কোম্পানি খোলা যাবে। আগে টাকা আসুক তারপরে রোডম্যাপ তৈরি করবো।”
পরমিতঃ “তোমার মতন মানুষ, কখন টাকার জন্য অপেক্ষা করে না, মিস্টার বসাক। তুমি পরবর্তী পদক্ষেপ ভেবেই রেখেছো, বলতে চাইছো না সেটা আলাদা ব্যাপার।”
ড্রিঙ্ক আর স্টারটার শেষে, দেবায়ন ফাইল এগিয়ে দেয় পরমিতের দিকে। পরমিত হেসে বলে, “ডিনার শেষ হোক, তুমি ম্যাডামের হাতে ফাইল পাঠিয়ে দিও আমি সই করে দেবো।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “দুটো কাগজ আছে ওইখানে। একটা চল্লিশ একটা পঁয়তাল্লিশ, কোনটা সই করবেন?”
পরমিত হেসে বলে, “আরে বাবা মিস্টার বসাক, সি.এম.ডি বসে আছে, একটু আলাপ করবো না? তুমি মিসেস সেনের হাতে ফাইল দিয়ে দিও, আমি একদম ঠিক কাগজে সই করে দেবো। তুমি চিন্তা কোরো না।”
দেবায়ন চিবিয়ে বলে, “আপনাকে চল্লিশে সই করতে হবে না। আমার সামনে আপনি পঁয়তাল্লিশে সই করে দিন, সেই সাথে কাকিমাও সই করে দেবে ট্র্যান্সফার কাগজ। দুটো কপি করা আছে, একটা আপনার কাছে থাকবে, আসলটা আমার কাছে।”
পরমিত হতভম্ব হয়ে যায় দেবায়নের কথা শুনে। তিনি পাক্কা ব্যাবসাদার। নারী মাংসের চেয়ে টাকা বেশি চেনে, তবে শেষ বারের মতন পারমিতাকে ভোগ করার লোভ ছাড়তে পারে না। পরমিত মানতে পারে না, যে কালকের একটা ছেলে ওকে নাস্তানাবুদ করে দেবে। পরমিত বুঝে যায় যে দেবায়ন ঘাসে মুখ দিয়ে চলে না, পরমিতের আসল উদ্দেশ্য ধরে ফেলেছে আর তাই পাঁচ কোটি টাকা ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে। পরমিত ম্লান হেসে বলে, “দাও কোথায় সই করতে হবে দেখি।”
পারমিতা দেবায়নের শক্ত চোয়াল দেখে মনের অবস্থা বুঝে যায়। দেবায়ন এক দৃষ্টে পরমিতের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এ যেন দুইজনের মুক যুদ্ধ। পারমিতা অবস্থার সামাল দেওয়ার জন্য দুইজনকে হেসে বলে, “আরে বাবা, থামো তোমরা। ডিনার করে ফেলি। কাবাবসে এসেছি এখানকার গলোটি কাবাব খেয়ে দেখো, জিবে দিলেই গলে যাবে এমন দারুন বানায়।” পারমিতা অনন্যাকে ইশারায় কথা বলতে বলে, দেবায়নকে শান্ত করতে ইশারা করে।
পরমিত আর দেবায়নের কথাবার্তা আলোচনায় ডিনারের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অনন্যা টেবিলের তলা দিয়ে দেবায়নের থাইয়ের ওপরে নরম হাত চেপে ঠাণ্ডা করে। দেবায়নের দিকে আলতো হেসে বলে, “এই তোমরা অনেকক্ষণ ধরে শুধু বিজনেসের প্যাঁচ নিয়ে কথা বলে যাচ্ছো। একটু থামবে? আমাদের মাথায় কিছু ঢুকছে না এই সব ব্যাপার।” পরমিতের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “চিন্তা করবেন না মিস্টার ধিলন, আমি আপনার কাছে ফাইল নিয়ে চলে যাবো।”
দেবায়ন কাষ্ঠ হেসে বলে, “মিস্টার ধিলনের এখানকার কাবাব কি আর ভালো লাগবে? খোদ দিল্লীর মানুষ, পুরানো দিল্লীতে দারুন কাবাব পাওয়া যায় নিশ্চয়। কি বলেন মিস্টার ধিলন?”
পরমিত দেবায়নকে বলে, “হ্যাঁ, একবার দিল্লীতে এসো। লাল কিলার কাছে পরাঠে ওয়ালা গলিতে ভালো পারাঠা আর কাবাব খাওয়াবো তোমাকে।”
দেবায়ন বলে, “হ্যাঁ এবারে যেতে হবে দিল্লী।”
ডিনার দিয়ে যায় ওয়েটার। ব্যাবসা ছেড়ে কথার মোড় অন্যদিকে ঘুরে যায়, অনন্যার সিনেমার কথা হয়। মিস্টার ধিলনের মেয়ে একজন ক্যানাডিয়ান এন.আর.আই কে বিয়ে করেছে, সেই নিয়ে কথা হয়। উত্তপ্ত পরিবেশ শান্ত হয়ে যায়। খাওয়া শেষে, মিস্টার ধিলন জিজ্ঞেস করেন সাক্ষর করার কথা। দেবায়ন অনন্যার হাতে ফাইল ধরিয়ে দেয়। পরমিত একটু হাসে সেই দেখে। অনন্যাকে বলে, একটু টিয়া মারিয়াতে গিয়ে ড্রিঙ্কস নেবে তারপরে রুমে চলে যাবে। অনন্যা বলে, রুমে পৌঁছে গেলে একবার যেন দেবায়নকে ফোনে জানিয়ে দেয়, তাহলে সেই মতন ফাইল নিয়ে চলে যাবে। অনন্যা আর পারমিতা কটেজে চলে যায়। দেবায়ন আর পরমিত বারের দিকে হাঁটা দেয়। পরমিত বারে ঢুকে যায়।
দেবায়ন একটা বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে সমুদ্র তটের দিকে হাঁটতে শুরু করে। ঠাণ্ডা কনকনে হাওয়া বইতে থাকে সমুদ্রের দিক থেকে। ঘন কালো অন্ধকারে সমুদ্রের ঢেউ মাঝে মাঝে চিকচিক করে, সাদা ঢেউয়ের ফেনা আছড়ে পড়ে পায়ের কাছে। কোন এক ছোটো বেলায় মায়ের সাথে দিঘা ঘুরতে গেছিল, সে কথা মনে নেই। একা নির্জন সমুদ্র তটে হাঁটতে হাঁটতে সব কিছু কেমন স্বপ্নের মতন মনে হয়। স্বপ্নের মতন এক সুন্দরী ওর হাতে ধরা দিল, সেই সুন্দরীর হাত ধরে লক্ষ্মী একসময়ে ধরা দিল। এই টাকা পয়সা প্রতিপত্তি ওকে কোথায় নিয়ে যাবে সেই চিন্তা করে। অনুপমার কথা মনে পড়তেই প্রেয়সীকে ফোন করে। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পরে মাকে ফোন করে দেবায়ন। মন খুশিতে ভরে ওঠে, অনুপমার গলা শুনে।
পরমিত কিছু পরে দেবায়নকে ফোন করে জানিয়ে দেয় রুমে পৌঁছে গেছে। পরমিত দেবায়নকে বলে, “মিস্টার বসাক, তোমার যখন জন্ম হয়নি তখন থেকে আমি ব্যাবসা করি। টাকা কিভাবে অর্জন করতে হয় তোমার থেকে ভালো ভাবে জানি, কিন্তু তুমি একজন মানুষকে কিভাবে তাঁর সন্মান তাঁর সমাদর করতে হয় সেটা জানো। আমি বুঝি, একশো কোটি টাকার মধ্যে পাঁচ কোটি টাকার কত মুল্য। আমার দূরদৃষ্টি বলে, তুমি টাকার সাথে সাথে মানুষের মন জয় করবে। হ্যাঁ, তুমি হয়তো আমার মতন উপায়ে টাকা অর্জন করবে না কিন্তু ভবিষ্যতে তুমি যেটা অর্জন করবে সেটা অমুল্য। সেই জিনিস কোটি টাকা দিয়ে কেনা যায়না। আজকে আমি যদি চোখ বন্ধ করি, তাহলে কেউ আমার পরিবারের পাশে নিঃস্বার্থে এসে কেউ দাঁড়াবে না। যারা দাঁড়াবে তারা আমার সম্পত্তির লোভে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু তোমার অবর্তমানে তোমার পরিবারের পাশে এসে অনেকে দাঁড়াবে সেটা তুমি কোটি টাকার বিনিময়ে কিনতে পারবে না। ভগবান তোমার সাথে থাকুক এটাই আমার কাম্য।”