What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

pinuram রচনাসমগ্র (4 Viewers)

দেবায়ন খানিক ক্ষণ চোখ বন্ধ করে ভাবতে চেষ্টা করে একাউন্টসের হিসেব নিকেশ, তারপরে গম্ভির কণ্ঠে বলে, “না মিস্টার ধিলন, আপনার অঙ্কে ভুল আছে। চল্লিশ কোটি হয়। আপনি যত টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, তার পাঁচ গুন লাভ আপনি এতদিনে পেয়ে গেছেন। গত কুড়ি বছরে, আপনাকে কবে কত দেওয়া হয়েছে তার পুরো হিসাব আমার কাছে আছে। সেই হিসাব যদি এখানে খুলে বসি তাহলে চল্লিশের চেয়ে কম পাওনা হয় আপনার।”

পরমিত জানতো যে পারমিতা এইসবের ব্যাপারে কোনদিন কিছু বলেনা তাই সে প্রশ্নটা পারমিতাকে করেছিল। কিন্তু দেবায়ন ওর হয়ে উত্তর দেবে সেটা ঠিক ভাবেনি। দেবায়নের মুখের উত্তর শুনে পরমিত বাঁকা হেসে বলে, “যদি কাগজে স্বাক্ষর না করি?”

পারমিতা আবার টেবিলের তলা দিয়ে দেবায়নের হাত চেপে ধরে। ইঙ্গিতে জানায় কোন বচসায় না যেতে। দেবায়ন পরমিতকে বলে, “আমি ছোটো, আমি এই খেলায় নতুন। কিন্তু কাকুর সাথে থেকে একটু খেলা আমি শিখে গেছি। কোম্পানি ডিসল্ভ করে দেবো। এই চল্লিশের এক টাকাও আপনি পাবেন না। আর বাকি অংশ নিয়ে আমি কি করবো সেটা আমি আপনাকে কেন বলতে যাবো?”

অনন্যার মাথার ওপর দিয়ে এইসব কথাবার্তা বেরিয়ে যায়, পারমিতার দিকে চেয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপারে কথাবার্তা হচ্ছে। পারমিতা চোখের ইশারায় চুপ করে থাকতে বলে।

পরমিত হেসে ফেলে, “আরে না না, মিস্টার বসাক। আমি এমনি জানতে চাইছিলাম যে দুশো কোটি টাকা নিয়ে তুমি কিসে বিনিয়োগ করতে চলেছো। হে হে... মানে আমাকেও তাহলে একটু সুযোগ দিও ভবিষ্যতে এই আর কি।”

দেবায়ন বুঝে যায়, কোন প্রকৃতির মানুষ মিস্টার পরমিত সিং ধিলন। এতক্ষণ ওর কণ্ঠে সম্ভ্রমের ছোঁয়া ছিলোনা, দেবায়নের কথা শুনে পরমিতের গলার স্বর পালটে গেছে। দেবায়ন বাঁকা হেসে বলে, “আমি জানি আপনি মজা করছিলেন। তবে আপনাকে চল্লিশ আর মিসেস চৌধুরীকে পঞ্চাস দেবার পরে এমন কিছু বাঁচবে না যাতে একটা বড় কোম্পানি খোলা যাবে। আগে টাকা আসুক তারপরে রোডম্যাপ তৈরি করবো।”

পরমিতঃ “তোমার মতন মানুষ, কখন টাকার জন্য অপেক্ষা করে না, মিস্টার বসাক। তুমি পরবর্তী পদক্ষেপ ভেবেই রেখেছো, বলতে চাইছো না সেটা আলাদা ব্যাপার।”

ড্রিঙ্ক আর স্টারটার শেষে, দেবায়ন ফাইল এগিয়ে দেয় পরমিতের দিকে। পরমিত হেসে বলে, “ডিনার শেষ হোক, তুমি ম্যাডামের হাতে ফাইল পাঠিয়ে দিও আমি সই করে দেবো।”

দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “দুটো কাগজ আছে ওইখানে। একটা চল্লিশ একটা পঁয়তাল্লিশ, কোনটা সই করবেন?”

পরমিত হেসে বলে, “আরে বাবা মিস্টার বসাক, সি.এম.ডি বসে আছে, একটু আলাপ করবো না? তুমি মিসেস সেনের হাতে ফাইল দিয়ে দিও, আমি একদম ঠিক কাগজে সই করে দেবো। তুমি চিন্তা কোরো না।”

দেবায়ন চিবিয়ে বলে, “আপনাকে চল্লিশে সই করতে হবে না। আমার সামনে আপনি পঁয়তাল্লিশে সই করে দিন, সেই সাথে কাকিমাও সই করে দেবে ট্র্যান্সফার কাগজ। দুটো কপি করা আছে, একটা আপনার কাছে থাকবে, আসলটা আমার কাছে।”

পরমিত হতভম্ব হয়ে যায় দেবায়নের কথা শুনে। তিনি পাক্কা ব্যাবসাদার। নারী মাংসের চেয়ে টাকা বেশি চেনে, তবে শেষ বারের মতন পারমিতাকে ভোগ করার লোভ ছাড়তে পারে না। পরমিত মানতে পারে না, যে কালকের একটা ছেলে ওকে নাস্তানাবুদ করে দেবে। পরমিত বুঝে যায় যে দেবায়ন ঘাসে মুখ দিয়ে চলে না, পরমিতের আসল উদ্দেশ্য ধরে ফেলেছে আর তাই পাঁচ কোটি টাকা ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে। পরমিত ম্লান হেসে বলে, “দাও কোথায় সই করতে হবে দেখি।”

পারমিতা দেবায়নের শক্ত চোয়াল দেখে মনের অবস্থা বুঝে যায়। দেবায়ন এক দৃষ্টে পরমিতের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এ যেন দুইজনের মুক যুদ্ধ। পারমিতা অবস্থার সামাল দেওয়ার জন্য দুইজনকে হেসে বলে, “আরে বাবা, থামো তোমরা। ডিনার করে ফেলি। কাবাবসে এসেছি এখানকার গলোটি কাবাব খেয়ে দেখো, জিবে দিলেই গলে যাবে এমন দারুন বানায়।” পারমিতা অনন্যাকে ইশারায় কথা বলতে বলে, দেবায়নকে শান্ত করতে ইশারা করে।

পরমিত আর দেবায়নের কথাবার্তা আলোচনায় ডিনারের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অনন্যা টেবিলের তলা দিয়ে দেবায়নের থাইয়ের ওপরে নরম হাত চেপে ঠাণ্ডা করে। দেবায়নের দিকে আলতো হেসে বলে, “এই তোমরা অনেকক্ষণ ধরে শুধু বিজনেসের প্যাঁচ নিয়ে কথা বলে যাচ্ছো। একটু থামবে? আমাদের মাথায় কিছু ঢুকছে না এই সব ব্যাপার।” পরমিতের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “চিন্তা করবেন না মিস্টার ধিলন, আমি আপনার কাছে ফাইল নিয়ে চলে যাবো।”

দেবায়ন কাষ্ঠ হেসে বলে, “মিস্টার ধিলনের এখানকার কাবাব কি আর ভালো লাগবে? খোদ দিল্লীর মানুষ, পুরানো দিল্লীতে দারুন কাবাব পাওয়া যায় নিশ্চয়। কি বলেন মিস্টার ধিলন?”

পরমিত দেবায়নকে বলে, “হ্যাঁ, একবার দিল্লীতে এসো। লাল কিলার কাছে পরাঠে ওয়ালা গলিতে ভালো পারাঠা আর কাবাব খাওয়াবো তোমাকে।”

দেবায়ন বলে, “হ্যাঁ এবারে যেতে হবে দিল্লী।”

ডিনার দিয়ে যায় ওয়েটার। ব্যাবসা ছেড়ে কথার মোড় অন্যদিকে ঘুরে যায়, অনন্যার সিনেমার কথা হয়। মিস্টার ধিলনের মেয়ে একজন ক্যানাডিয়ান এন.আর.আই কে বিয়ে করেছে, সেই নিয়ে কথা হয়। উত্তপ্ত পরিবেশ শান্ত হয়ে যায়। খাওয়া শেষে, মিস্টার ধিলন জিজ্ঞেস করেন সাক্ষর করার কথা। দেবায়ন অনন্যার হাতে ফাইল ধরিয়ে দেয়। পরমিত একটু হাসে সেই দেখে। অনন্যাকে বলে, একটু টিয়া মারিয়াতে গিয়ে ড্রিঙ্কস নেবে তারপরে রুমে চলে যাবে। অনন্যা বলে, রুমে পৌঁছে গেলে একবার যেন দেবায়নকে ফোনে জানিয়ে দেয়, তাহলে সেই মতন ফাইল নিয়ে চলে যাবে। অনন্যা আর পারমিতা কটেজে চলে যায়। দেবায়ন আর পরমিত বারের দিকে হাঁটা দেয়। পরমিত বারে ঢুকে যায়।

দেবায়ন একটা বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে সমুদ্র তটের দিকে হাঁটতে শুরু করে। ঠাণ্ডা কনকনে হাওয়া বইতে থাকে সমুদ্রের দিক থেকে। ঘন কালো অন্ধকারে সমুদ্রের ঢেউ মাঝে মাঝে চিকচিক করে, সাদা ঢেউয়ের ফেনা আছড়ে পড়ে পায়ের কাছে। কোন এক ছোটো বেলায় মায়ের সাথে দিঘা ঘুরতে গেছিল, সে কথা মনে নেই। একা নির্জন সমুদ্র তটে হাঁটতে হাঁটতে সব কিছু কেমন স্বপ্নের মতন মনে হয়। স্বপ্নের মতন এক সুন্দরী ওর হাতে ধরা দিল, সেই সুন্দরীর হাত ধরে লক্ষ্মী একসময়ে ধরা দিল। এই টাকা পয়সা প্রতিপত্তি ওকে কোথায় নিয়ে যাবে সেই চিন্তা করে। অনুপমার কথা মনে পড়তেই প্রেয়সীকে ফোন করে। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পরে মাকে ফোন করে দেবায়ন। মন খুশিতে ভরে ওঠে, অনুপমার গলা শুনে।

পরমিত কিছু পরে দেবায়নকে ফোন করে জানিয়ে দেয় রুমে পৌঁছে গেছে। পরমিত দেবায়নকে বলে, “মিস্টার বসাক, তোমার যখন জন্ম হয়নি তখন থেকে আমি ব্যাবসা করি। টাকা কিভাবে অর্জন করতে হয় তোমার থেকে ভালো ভাবে জানি, কিন্তু তুমি একজন মানুষকে কিভাবে তাঁর সন্মান তাঁর সমাদর করতে হয় সেটা জানো। আমি বুঝি, একশো কোটি টাকার মধ্যে পাঁচ কোটি টাকার কত মুল্য। আমার দূরদৃষ্টি বলে, তুমি টাকার সাথে সাথে মানুষের মন জয় করবে। হ্যাঁ, তুমি হয়তো আমার মতন উপায়ে টাকা অর্জন করবে না কিন্তু ভবিষ্যতে তুমি যেটা অর্জন করবে সেটা অমুল্য। সেই জিনিস কোটি টাকা দিয়ে কেনা যায়না। আজকে আমি যদি চোখ বন্ধ করি, তাহলে কেউ আমার পরিবারের পাশে নিঃস্বার্থে এসে কেউ দাঁড়াবে না। যারা দাঁড়াবে তারা আমার সম্পত্তির লোভে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু তোমার অবর্তমানে তোমার পরিবারের পাশে এসে অনেকে দাঁড়াবে সেটা তুমি কোটি টাকার বিনিময়ে কিনতে পারবে না। ভগবান তোমার সাথে থাকুক এটাই আমার কাম্য।”
 
দেবায়ন হেসে ধন্যবাদ জানায় মিস্টার ধিলনকে। অনন্যাকে ফোনে বলে দেয়, পরমিত রুমে পৌঁছে গেছে। কথাটা বলার সময়ে দেবায়নের গলা কেঁপে ওঠে। মনেপ্রানে মেনে নিতে কষ্ট হয় এক মেয়েকে পাঠাতে হবে পরমিতের কাছে। অনন্যার সাথে কথা বলার পরে, রাগে বিতৃষ্ণায় ফোন ছুঁড়ে ফেলে বালিতে। ধুপ করে ঠাণ্ডা বালিতে বসে হাতের বোতল সমুদ্রের দিকে ছুঁড়ে দেয়। অন্ধকার কালো সমুদ্রের জলে হারিয়ে যায় বিয়ারের বোতল। অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে বালির ওপরে। অনন্যাকে পাঠানো উচিত হয়নি পরমিতের কাছে। ডিনারের সময় সাক্ষর করিয়ে নিলে ভালো হতো।

চুপচাপ রুমের দিকে পা বাড়ায় দেবায়ন। ওর জামাকাপড় সব কটেজে রাখা। পারমিতা সেই রাতে কাছে আসতে বারন করে দিয়েছে। এতো রাতে কটেজে যাওয়া ঠিক হবে না। এই রুমটা অনন্যার জন্যে বুক করা হয়েছিল। আলমারিতে অনন্যার জামা কাপড় রাখা। আলমারি খুলে অনন্যার গন্ধে মাখা পোশাক গুলোর দিকে চোখ যায়। অন্য সময় হলে, দেবায়ন ওর কাপড় নিয়ে নাকে মুখে চেপে হস্ত মৈথুন করতো হয়তো। কিন্তু অনন্যার জামা কাপড় দেখে ওর মন আরও ভারী হয়ে যায়। রুমে ঢুকে জামা কাপড় খুলে, কোমরে তোয়ালে জড়িয়ে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে থাকে। মাথা একদম খালি হয়ে যায়, যেন অসীম শূন্য আকাশে বিচরন করছে। চোখের সামনে রুমের ছাদ, কিন্তু দেবায়নের চোখ যেন ছাদ ফুঁড়ে, মাথার ওপরের কালো আকাশে বিচরন করছে। চোখের সামনে অসংখ্য তারা, নক্ষত্র জ্বল জ্বল করছে। অনেকক্ষণ না অল্পক্ষণ, সময়ের খেয়াল থাকে না, একসময়ে ঘুমিয়ে পড়ে দেবায়ন।
কত রাত হবে ঠিক জানে না, এমন সময়ে দরজায় বেশ জোরে জোরে ধাক্কার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। এতো রাতে কে হতে পারে? পারমিতা আসবে না। অনন্যাকে পেয়ে পরমিত মজে গেছে এতক্ষণে। গোয়াতে আর কাউকে চেনেনা দেবায়ন। চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানা ছেড়ে উঠে ঘড়ির দিকে তাকায়, বেশি সময় ঘুমাতে পারেনি। বাইরে সমুদ্র থেকে ভেসে আসা হাওয়ার আওয়াজ। দরজা খুলে সামনে অনন্যাকে দেখে ঘুম উবে যায় নিমেষের মধ্যে।

সামনে দাঁড়িয়ে অনন্যা। সুন্দরীর সৌন্দর্য বিদ্ধস্ত, মাথার চুল বেনুনি করা ছিল, সেটা একটা হাত খোঁপায় ঘাড়ের কাছে দুলছে। চোখের কোনের কাজল একটু লেপে গেছে, ঠোঁটের লিপস্টিক নেই, কপালে টিপ নেই। গোলাপি শাড়িটা কোনোরকমে শরীরের সাথে জড়ানো। দেবায়ন ওই চেহারা দেখে মাথা নিচু করে নেয়। অনন্যার চোখের দিকে তাকানোর ক্ষমতা নেই ওর। ইচ্ছে করেই, নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য অনন্যাকে পাঠিয়েছিল পরমিতের কাছে। সেই অনন্যা, ওর সামনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে বাদামি রঙের ফাইল বাড়িয়ে দেয়। দেবায়নকে চুপ দেখে ধির পায়ে রুমে ঢুকে পড়ে। হাতের ফাইলটা ছুঁড়ে ফেলে বিছানার ওপরে। হাঁটার সময়ে পা একটু টলে যায়। দেবায়ন দৌড়ে অনন্যাকে ধরতে যায়। অনন্যা ওর দিকে হাত দেখিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে ইঙ্গিত করে।

অনন্যা ওর দিকে ছলছল চাহনি নিয়ে বলে, “কাজ হয়ে গেছে দেবায়ন।”

দেবায়ন চুপ, মাথা চিন্তা শূন্য হয়ে যায়। সারা শরীরে মৌমাছি যেন হুল ফুটিয়ে দিয়েছে।

অনন্যা টলতে টলতে বাথরুমের দিকে এগিয়ে যায়। বুকের থেকে আঁচল খসে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। একটানে গা থেকে শাড়িটা খুলে ফেলে। শাড়ির প্যাঁচে খুলে যেতেই অনন্যার চওড়া পিঠ দেখা দেয়। পেছনে দুটো পাতলা দড়ি দিয়ে বাঁধা ব্লাউস। চওড়া পিঠে আঙ্গুলের দাগ দেখে দেবায়নের কান গরম হয়ে যায়। আগে থেকে জানতো যে পরমিত সঙ্গম খেলার সময়ে উন্মাদ হয়ে ওঠে। অনন্যা গা থেকে ব্লাউস খুলে একদিকে ছুঁড়ে মারে। এমন ভাব দেখায় যেন রুমের মধ্যে একা। অতি ক্ষুদ্র ব্রাটা কোনোরকমে বুকের ওপরে ঝুলে আছে। অনন্যা ওর দিকে একটু বেঁকে তাকায়। দেবায়নের চোখ যায় অনন্যার স্তনের ওপরে। স্তনের বোঁটার চারপাশে লাল ছোপ ছোপ দাগ। স্তনের ওপর দিকে দাঁতের দাগ। পরমিত ক্ষুধার্ত হায়নার মতন অনন্যাকে পিষে কচলে সম্ভোগ করেছে। ব্রা খুলে খালি সায়া পরে দেবায়নের দিকে ঘুরে তাকায়। দেবায়ন কি করবে ভেবে পায় না। অনন্যা বাথরুমের দরজা ধরে টলে যায়। দেবায়ন হাত বাড়িয়ে অনন্যাকে ধরতে যায়।

অনন্যা ওকে বলে, “কাপবোর্ড থেকে আমার একটা স্লিপ বের করে দিতে পারো?”

দেবায়ন সঙ্গে সঙ্গে আলমারি খুলে একটা স্লিপ বের করে অনন্যার হাতে দেয়। ততক্ষণে অনন্যা সায়ার দড়ি খুলে দিয়েছে। নিচে প্যান্টি নেই। পায়ের ফাঁকে, দুই নধর জঙ্ঘায় দৃষ্টি যায় দেবায়নের। দুই মসৃণ জঙ্ঘায় আঁচড়ের দাগ। যোনির পাপড়ি যোনির চেরা থেকে বেরিয়ে এসেছে।

দেবায়ন অনন্যাকে বলে, “চলো তোমাকে স্নান করিয়ে দিচ্ছি।”

অনন্যা ওর হাত থেকে স্লিপ নিয়ে বলে, “না থাক। তুমি বরং ফাইল চেক করে নাও। সব ঠিক আছে কিনা একবার দেখে নাও। কাল সকালে পরমিত চলে যাবে দিল্লী আর তোমরা চলে যাবে কোলকাতা। যাও নিজের কাজ ঠিকঠাক হয়েছে কিনা দেখে নাও।”

দেবায়নের মানসিকতা সেই ফাইল দেখার মতন নেই। হাত বাড়িয়ে অনন্যার হাত ছোঁয়। অনন্যা ওর হাত টেনে বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। দেবায়ন চুপচাপ মাথা ধরে জানালার পাশে একটা কাউচে এসে বসে পড়ে। সত্যি দেবায়ন এতো নিচে নেমে গেছে? না, ও চেয়েছিল পঁয়তাল্লিশ কোটি টাকা দিতে। ও ভেবেছিল যে পরমিত হয়তো অনন্যার গায়ে হাত দেবে না। দেবায়নের একবার মনে হয় যে পরমিতের রুমে ঢুকে এক ঘুসিতে নাক ফাটিয়ে দেয়। কিন্তু আসল দোষী কে? দেবায়ন নিজে।

রুমের মধ্যে মৃদু হলদে আলো। সামনের বড় কাঁচের জানালার পাশে বসে এক দৃষ্টে কালো অন্ধকারের দিকে চেয়ে থাকে। খুট করে একটা আওয়াজে পেছন ফিরে তাকায়। অনন্যা বাথরুম থেকে বেরিয়ে চুপচাপ বিছানায় উঠে একটা কম্বল টেনে শুয়ে পড়ে। দেবায়ন কি করবে ভেবে পায় না। ওর পাশে শোয়া উচিত? কি ভাববে অনন্যা? বড় ইচ্ছে করে একবার ওকে জড়িয়ে ধরে একটু প্রবোধ দিতে। কিন্তু কি প্রবোধ দেবে দেবায়ন? এটা যে কর্ম, এটাই ভবিতব্য। অনন্যা এখানে এসেছিল পরমিতের সাথে শুতে। অনন্যাকে এখানে ডাকার পরিকল্পনা দেবায়নের। যদি পারমিতা আর দেবায়ন আসতো তাহলে ওই ডাইনিং টেবিলে বসে সই করিয়ে নিতো। দেবায়ন একটা সিগারেট জ্বালায়। বুক ভরে ধোঁয়া টানতেই মাথা ভোঁভোঁ করে ওঠে।

“তুমি কি সারা রাত ওইখানে বসে সিগারেট খাবে?” অনন্যা ওকে জিজ্ঞেস করে। দেবায়ন ঘাড় ঘুরিয়ে অনন্যার দিকে তাকায়। বিছানায় একপাসে শুয়ে পুরো কম্বলে মুড়ি দিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে কথাগুলো।

দেবায়ন আমতা আমতা করে বলে, “না মানে আমি কাউচে শুয়ে পড়বো। তুমি আরাম করে বিছানায় ঘুমাও।”

অনন্যা তির্যক হেসে বলে, “কেন, একটা কলগার্লের সাথে এক বিছানায় শুতে ঘৃণা বোধ হচ্ছে, মিস্টার দেবায়ন বসাক? আমি একটু আগে পরমিতের সাথে সেক্স করে এসেছি আর তোমার সাথে করিনি তাই তোমার ঘৃণা করছে? র‍্যাডিসন ফোরটে তোমার সেই রকম কিছু মনে হয়নি। আমার সাথে তখন দিব্যি রাত কাটিয়েছিলে। পারলে সারা রাত ধরে সেক্স করতে, শুধু সময় ছিল না বলে।”

দেবায়ন কান গরম হয়ে যায় অনন্যার কথা শুনে, চাপা স্বরে বলে, “না, সে কথা নয় অনন্যা। তুমি আমাকে ভুল বুঝছো।”

অনন্যাঃ “কি ভুল এখানে দেবায়ন? কে ভুল এখানে? তুমি আমার সাথে সেক্স করতে চাও, চলে এসো। পারমিতা ম্যাম আমাকে দুই লাখ টাকা দিয়েছে এবারে। একটু আগে পরমিত যা করেছে তাতে দুই লাখ পূরণ হয়নি। এসো বিছানায়, আমার শরীর দিয়ে বাকি টাকাটা উসুল করবে না?”

দেবায়ন চোয়াল চেপে বলে, “তুমি বিশ্বাস করো আমি ভাবিনি যে পরমিত তোমার সাথে সেক্স করবে।”

অনন্যা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে, “রাত এগারোটার সময়ে একটা বেশ্যা, বিজনেস ডিলের ফাইল নিয়ে একজনের রুমে যাবে। এর মানে আর কি হতে পারে মিস্টার বসাক? আমার সাথে কি পরীর গল্প করার জন্যে আমাকে দুই লাখ টাকা দিয়ে এখানে ডেকেছো?”

দেবায়ন অনন্যার পাশে এসে বসে বলে, “অনন্যা প্লিস ভুল বুঝোনা আমাকে। আমি ওই টেবিলে ডিল সাইন করতে চেয়েছিলাম। পাঁচ কোটি টাকার চেয়ে তুমি আমার কাছে অনেক দামী।”

তির্যক হাসে অনন্যা, “তাহলে দুই লাখ টাকা দিয়ে এখানে কেন ডেকেছো আমাকে? গল্প করার জন্য? কেউ আমার সাথে গল্প করতে আসে না মিস্টার বসাক। যে টাকা দেয় সে আমার শরীর ব্যবহার করতে আসে।”
 
দেবায়ন অনন্যার হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, “প্লিস তুমি একটু ঘুমাবে? আমি জানি তুমি আমার ওপরে প্রচন্ড রেগে।” একটা হাত গালের ওপরে নিয়ে আলতো করে নরম গালে হাত বুলিয়ে দেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

দেবায়নের উষ্ণ হাতের পরশ পেয়ে অনন্যার চোখ ছলছল করে ওঠে, “প্রচুর মানুষ দেখলাম দেবায়ন। কত জনের সাথে সেক্স করেছি গুনতে ভুলে গেছি। এই রকম বিজনেস ডিল আমাদের দিয়েই হয়। আগেও প্রচুর হয়েছে। সবাই নিজের টাকা উসুল করতে ব্যস্ত। পরমিত সেটাই করেছে। আমি জেনেই এসেছিলাম যে পরমিতের সাথে আমাকে শুতে হবে। পারমিতা ম্যাম আমাকে আগেই বলে রেখেছিল ক্লায়েন্টের ব্যাপারে। শুধু এইটুকু বলেনি যে, পরমিত আসলে ম্যামের সাথে সেক্স করতে চায়। পরমিত বড় ক্ষুণ্ণ হয়ে যায় আমাকে দেখে। মুখে কিছু না বললেও আমার সাথে পাশবিক ব্যবহার করার সময়ে আমি ওর মনের অভিপ্রায় বুঝতে পেরেছিলাম। তুমি জানতে মিস্টার ধিলন ম্যামের জন্য অপেক্ষা করে বসেছিলেন। তুমি চাইছিলে না যে ম্যাম যাক তাই আমাক এখানে এনেছো, তাই না?” দেবায়ন অনন্যাকে জড়িয়ে ধরে। অনন্যা ওর বুকের ওপরে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ওঠে, “আমার কান্না সেখানে নয় দেবায়ন। রুমে তোমাকে দেখে আমার চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এল। আমি জানিনা আমার কি হচ্ছে... দেবায়ন।”

দেবায়ন ওর মাথা বুকের ওপরে চেপে, দুই হাতে অনন্যাকে জড়িয়ে বলে, “চুপচাপ ঘুমাও। কাল সকালে আমি আর তুমি এই সি বিচে বেশ আনন্দ করবো।”

অনন্যা চোখের জল মুছে, দেবায়নের বুকে ঠোঁট চেপে বলে, “আজ রাতে একটু জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকো। কাল সকালে আমি চলে যাবো। এখানে দিনের বেলা আমি তোমার সাথে বের হতে পারবো না। কত মানুষের কত রকমের মতলব থাকে। কেউ একটা ছবি তুলে যদি কোন ম্যাগাজিনে দিয়ে দেয় তাহলে আবার বদনামের ভয় আছে। কত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, আপনার সাথের এই ছেলেটা কে? আপনার নতুন প্রেমিক? ইত্যাদি। শুধু আজকের রাতটা আমাকে জড়িয়ে ধরে থাকো।”

দেবায়ন অনন্যাকে জড়িয়ে ধরে। অনন্যা দেবায়নের প্রশস্ত বুকের ওপরে মাথা রেখে, একটা পা দিয়ে দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে। বুকের ওপরে নখের আঁচড় কেটে দেয়।

দেবায়ন ওর ঘন কালো রেশমি চুলের মধ্যে বিলি কেটে আদর করে জিজ্ঞেস করে, “কি ভাবছো এতো?”

অনন্যার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়, “উম্মম্মম এই ঠাণ্ডায় এইরকম ভাবে জড়িয়ে ধরে থাকলে আর কি ঘুম আসে? মনে হয় সারা রাত এই ভাবে বুকে মাথা রেখে জেগে কাটিয়ে দেই।”

দেবায়ন বুঝতে পারে যে অনন্যার বুকে এই অন্য টান জেগেছে। দেবায়ন সেই চুম্বকের টানে সাড়া দেয় না। নিস্তেজ হয়ে আলিঙ্গন শিথিল করে নেয় অনন্যার শরীর থেকে। অনন্যা বুঝতে পেরে যায় দেবায়নের মনের দ্বন্দ। হেসে বলে, “না গো, অনুর জায়গা আমি চাইছি না।”

দেবায়ন হেসে ফেলে, “তাহলে কি চাও।”

অনন্যাঃ “আমাকে কিছু টাকা দেবে, আমি একটা বিজনেস করতে চাই।”

দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “তোমার অনেক টাকা, তুমি আবার আমার কাছ থেকে টাকা চাইছো?”

অনন্যা ম্লান হেসে বলে, “আমার কাছে টাকা নেই। যে রকম আয় হয়, সেই রকমের খরচ হয়। আমাদের এই চকমকে সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক টাকা বেরিয়ে যায়। সবসময়ে কাজ থাকে না, সেই দিন গুলোতেও আমাকে চলতে হয়। আমার কাছে তেমন কিছু ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স নেই, দেবায়ন।”

দেবায়নঃ “টাকা এখন আমার কাছে নেই।”

অনন্যা মৃদু হেসে বলে, “তুমি মিথ্যে কথা বলছো। তুমি এতো বড় একটা বিজনেস ম্যান, তোমাকে সব বিজনেস ডিলে দেখা যায় আর তুমি বলছো যে তোমার কাছে টাকা নেই? তুমি আমাকে টাকা দেবে না সেটা পরিষ্কার বলে দিলেই পারো।”

দেবায়ন অনন্যাকে বুঝাবে কি করে, এই সব মিস্টার সেনের জন্য হচ্ছে। দেবায়ন বলে, “তোমাকে এক বছর অপেক্ষা করতে হবে।”

অনন্যা জিজ্ঞেস করে, “কেন এক বছর কেন?”

দেবায়ন নিজের আসল পরিচয় লুকিয়ে বলে, “একটা বড় প্রোজেক্টে অনেক টাকা চলে গেছে। এক বছর অপেক্ষা করো, তারপরে তোমাকে টাকা দেবো। কিন্তু তুমি কি বিজনেস করতে চাও?”

অনন্যাঃ “জানি না। তবে ভাবছি জামশেদপুর ফিরে যাবো। ওখানে গিয়ে কিছু একটা খুলবো।”

দেবায়নঃ “জামশেদপুর ফিরে কেন যাবে? এই কোলকাতায় কোন বিজনেস করতে পারো। রেস্টুরেন্ট খুলতে পারো, বুটিক করতে পারো, চাইলে মডেলিং এজেন্সি করতে পারো।”

অনন্যা মডেলিং এজেন্সির নাম শুনে হেসে বলল, “না গো এই আলোর ঝকমকি থেকে দুরে যেতে চাই। মডেলিং এজেন্সি খুলবো না। ওই রকম এজেন্সি শেষ পর্যন্ত হাই প্রোফাইল পিম্প হয়ে যায়। আমি ওই সব থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। তোমার এই রেস্টুরেন্টের আইডিয়া বেশ ভালো।”

দেবায়নঃ “ঠিক আছে, আমি তোমাকে টাকা দেবো।”
 
অনন্যাঃ “আমি তোমাকে সব শোধ করে দেবো ধিরে ধিরে। টাকা দিয়ে যদি শোধ না করতে পারি তাহলে তুমি যখন যেখানে আমাকে আসতে বলবে সেখানে আমি চলে আসবো।”

দেবায়ন হেসে বলল, “তোমাকে শোধ করতে হবে না। আমি তোমাকে প্রেসেন্ট করবো তোমার রেস্টুরেন্ট।”

কথাটা শুনে অনন্যার বুক খালি হয়ে যায়, বিশ্বাস করতে পারে না নিজের কানকে, “তুমি সত্যি বলছো?”

দেবায়ন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলে, “হ্যাঁ সত্যি বলছি।”

দেবায়নের বুকে মাথা রেখে একসময়ে অনন্যা চোখ বন্ধ করে নেয়। সারা রাত দেবায়নের চোখে ঘুম আসে না। অনন্যার মাথা বুকের ওপরে রেখে সারা রাত জেগে কাটিয়ে দেয়। সকালের দিকে চোখ একটু লেগে যায়।
ঘুম ভাঙলে দেখে যে রুমে অনন্যা নেই। সকাল গড়িয়ে অনেক সময় কেটে গেছে। ঘড়িতে দেখে দশটা বাজে। ঠিক সেই সময়ে অনুপমার ফোন আসে। অনুপমা জিজ্ঞেস করে গত রাতের কথা। দেবায়নের মাথায় তখন অনন্যার চিন্তা ছিল। কোনোরকমে অনুপমার সাথে ফোনে কথা বলে ফোন রেখে দেয়। ফোন রেখে সঙ্গে সঙ্গে বাথরুমের দিকে চোখ যায়। বাথরুম খালি, আলমারি দেখে, আলমারিতে অনন্যার ব্যাগ না দেখতে পেয়ে দেবায়ন বুঝে যায় যে অনন্যা বেরিয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে অনন্যাকে ফোন করে কিন্তু অনন্যার ফোন বন্ধ। শেষ বারের মতন কথা বলে যেতে পারলো না দেবায়ন। সাইড টেবিলে রাখা একটা সাদা কাগজে চোখ পড়ে দেবায়নের। একটা চিঠি লিখে গেছে অনন্যা, ছোটো দুই তিনটে লাইন।

“ডিয়ার দেবায়ন, তোমাকে ঘুমাতে দেখে আর জাগাতে ইচ্ছে করলো না, তাই না বলেই বেরিয়ে গেলাম। তোমার কাছে থাকতে ইচ্ছে করছিল খুব। কিন্তু কি করা যাবে, ইচ্ছে করলেও থাকা দায়। কে কখন দেখে ফেলে, নামের চেয়ে বদনাম আগুনের মতন দাউদাউ করে ছড়ায় বেশি। ব্রেকফাস্টের কথা ভুলে যেও না যেন, আমি অপেক্ষা করে থাকবো। পাঁচ বছর পরে গতরাতে বেশ ভালো ঘুম হয়েছে। ইতি, সুলেখা।”

একটু পরে পারমিতাকে দেখে দেবায়ন অনন্যার কথা ভুলে যায়। দুইদিন দুইরাত পারমিতা আর দেবায়ন মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। পারমিতা যেন শেষবারের মতন দেবায়নকে পাচ্ছে এমন ভাবে শেষ রাতে দেবায়নের সাথে মিলিত হয়। আসার দিন পারমিতার চেহারায় এক অন্য ধরনের আলোক ছটা দেখতে পায় দেবায়ন।

প্লেনে বসে পারমিতা নিচু গলায় ওকে বলে, “কোলকাতা গিয়ে আমাদের মনে হয় না আর দেখা হবে।”

দেবায়ন জানে, একজনের সাথে ক্রমশ শরীরের খেলা চলতে চলতে মনের টান আসা স্বাভাবিক। দেবায়ন চায় না, অনুপমা ছাড়া আর কাউকে ভালবাসতে। প্রচন্ড কাম লালসার চুম্বকীয় টানে পারমিতার সাথে মিলিত হয়েছিল। দেবায়ন চুপ করে থাকে, অনেকদিন আগে ভেবেছিল পারমিতাকে সারা জীবন ওর মেয়ের সাথে সাথে উপভোগ করে যাবে। কিন্তু একরাতে পারমিতার ক্রন্দন ভরা ডাক শুনে দেবায়ন পিছিয়ে গেছিল। আবার এই গোয়াতে এসে পরপর বেশ কয়েক বার মিলিত হয়ে পারমিতার বুকে সেই পুরানো টান ফিরে আসে।

দেবায়নকে চুপ থাকতে দেখে পারমিতা ম্লান হেসে বলে, “হ্যান্ডসাম অত চিন্তা কোরো না। শুধু মজা করছিলাম তোমার সাথে। আমার কিছু হয়নি। আমি জানি, সোমেশকে আগের মতন পাবো না। তবে যতটুকু পাবো সেই নিয়ে থাকবো। তোমাকে কথা দিচ্ছি, সোমেশ ছাড়া আর কেউ আমাকে আর ছোঁবে না।”

দেবায়ন চুপচাপ পারমিতার কথা শুনে যায়। পারমিতা বলে, “অনু কখনোই আমাকে ভালো চোখে দেখতো না। ওর বোঝার শক্তি অনেক আগে থেকেই জন্মে গেছিল। তখন ছেলের জন্য বাঁচতাম। তোমার একরাতের জাদুর কাঠির ছোঁয়ায়, অনুকে ফিরে পেলাম। বর্তমানে আমার বাড়িতে পায়েলের আগমন। এবারে মনে হয় এই সব ছেড়ে ওদের জন্য বাঁচি। অনুকে দেখার জন্য তুমি আছো, দেবশ্রীদি আছে। পায়েল আর অঙ্কনকে আমাকেই দেখতে হবে।”

পারমিতার এক নতুন রুপ দেখতে পায় দেবায়ন। পারমিতার নরম হাত নিজের হাতের মুঠিতে নিয়ে বলে, “তুমি একা নও মিমি। আমি আর অনু তোমার সাথে থাকবো সবসময়ে।”

!!!!!!!!!! দ্বাবিংশ পর্ব সমাপ্ত !!!!!!!!!!
 
ত্রয়োবিংশ পর্ব।

গোয়া থেকে ফিরে আসার পরে দেবায়ন আর অনুপমা নিজেদের ডুবিয়ে নেয় কম্পিউটার ক্লাসে, কলেজের পড়াশুনায়। দেবশ্রীর কড়া তত্বাবধানে কোন কিছু ফাঁকি দেওয়ার অবকাশ পায় না দেবায়ন। মে মাসের শেষে বি.এস.সি ফাইনাল পরীক্ষা হবার কথা ছিল, পরীক্ষার দিন পিছিয়ে যায় জুলাই মাসে।

অনুপমা আর পারমিতার তত্ত্বাবধানে, পায়েল সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। পায়েল নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে চাইলে, অনুপমা বারন করে দেয়। পারমিতা বলে যে একা একা অত বড় বাড়িতে থাকা ঠিক নয় আর যখন মিস্টার সেন আর পারমিতা, অঙ্কন আর পায়েলের সম্পর্ক মেনে নিয়েছেন তখন একটু আগেই না হয় ওর বাড়িতে চলে এসেছে। এতদিন কলেজ আর পড়াশুনা থেকে দুরে থাকার ফলে, পায়েল ঠিক করে যে পরের বছর পরীক্ষা দেবে। পায়েলের স্বভাবে আমূল পরিবর্তন হয়। চঞ্চলা মৌমাছির মতন পায়েল, যে এক সময়ে উড়তে ভালবাসতো, নেচে হেসে জীবনকে উপভোগ করার স্বপ্ন দেখতে ভালবাসতো; মা মারা যাবার পরে আর বাবার কারাদন্ডের পরে আমূল বদলে যায়। প্রচন্ড রকমের শান্ত আর লাজুক হয়ে যায়। অনুপমা, পারমিতা, অঙ্কন আর দেবায়ন ছাড়া কারুর সাথে বিশেষ কথা বলে না। কোন বন্ধু বান্ধবী ওর সাথে দেখা করতে এলেও খুব চুপচাপ থাকে। অঙ্কন ভালো মার্কসে ক্লাস টুয়েল্ভে ওঠে।

পায়েলের বাবা আর পায়েলের পিসির বিরুদ্ধে পায়েলের মাকে খুন করার মামলা চলে। মামলা চলাকালীন বেশ কয়েকবার পায়েলকে নিয়ে দেবায়ন আর রূপককে কোর্টের চক্কর কাটতে হয়েছিল। দেবায়ন ইচ্ছে করে বাকি সবাইকে এর থেকে দুরে সরিয়ে রেখেছিল। সবাই ওদের সাথে কোর্টে এসেছিল বটে। মিস্টার সেন, কোলকাতার সব থেকে বড় ক্রিমিনাল উকিল নিযুক্ত করেন পায়েলের বাবা আর পিসির বিরুদ্ধে। নিরঞ্জন বাবু আর কোলকাতা ক্রাইম ব্রাঞ্চ, আদালতে সব তথ্য প্রমান দেন। কোর্টে বাবাকে দেখে পায়েল ডুকরে কেঁদে ওঠে। ওকে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হয়। আইন তাদের যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দণ্ডিত করে।

অনুপমা আগে থেকে শ্রেয়াকে কোম্পানির ব্যাপারে কিছু আভাস দিয়ে রেখেছিল। শ্রেয়া আর রূপককে অনুপমা বলেছিল যে ওদের পরীক্ষা শেষ হলে বিস্তারিত ভাবে এই ব্যাপারে কথা বলবে।

জুলাইয়ের বৃষ্টি মাঝে ওদের পরীক্ষা শেষ। যেদিন পরীক্ষা শেষ হয় সেদিন সকাল থেকে প্রচন্ড বৃষ্টি। সব বন্ধু বান্ধবীরা পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে হাঁফ ছেড়ে ওঠে।

শর্বরী বৃষ্টির মাঝে একটু নেচে ভিজে বলে, “সেই কে.জি থেকে বই পড়া শুরু, এবারে আমি আর বই খাতার মুখ দেখবো না।”

অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “তাহলে কি করবি?”

শর্বরীঃ “হাতে অঢেল সময়, এবারে একটা চুটিয়ে প্রেম করবো।”

সবাই হেসে ফেলে। মনিষ পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল, শর্বরীর গায়ে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলে, “লাইনে আছি একটু দেখিস।”
 
আবার হাসির কল্লোল ফেটে পড়ে বন্ধুদের মধ্যে। সমুদ্র এককোনায় দাঁড়িয়ে তনিমার দিকে তাকিয়ে ছিল। একবছর আগের, দেবায়নের বাড়ির পার্টির কথা মাথায় ঘুরছিল ওর। তনিমা বুঝতে পারে যে সমুদ্র ওর দিকে তাকিয়ে আছে, তাও বাঁকা হেসে বলে, “তোর কিছু হবে না।”

সমুদ্রঃ “আমি কি বলেছি কিছু হতে? আমি শুধু চান্সের অপেক্ষায়।”

শ্রেয়াঃ “সে গুড়ে বালি। এবারে বাল ছিঁড়ে আঁটি বাঁধিস রাতে আর সকালে সেইগুলো খুলে আবার ঠিক জায়গায় বেঁধে নিস।”

শ্রেয়ার কথা শুনে সমুদ্র বলে, “নিজের কাজ হয়ে গেছে তাই বেশ ফুর্তিতে আছিস তাই না। বেগুন শশার দরকার পড়ে না তোর। আমার অবস্থা ভাব তো। দ্যাখ শালা প্রবালকে, কি কপাল করে এসেছিল।”

সঙ্গীতা প্রবালের হাতখানা মুঠির মধ্যে ধরে দাঁড়িয়েছিল। সবার চোখ প্রবালের দিকে চলে যায়। প্রবাল বলে, “আমার দিকে হাঁ করে দেখছিস কেন তোরা?”

দেবায়নঃ “তোদের কি কিছু হলো, না ওই হাত ধরা পর্যন্ত এগিয়েছিস। এর পরে দুটি সূর্যমুখি ফুলকে চুমু খাইয়ে বলে দিবি আমাদের প্রেম হয়ে গেছে।”

ধিমানঃ “না না, সূর্যমুখি নয় রে আমি ওদের বড় এক প্যাকেট ফ্লেভারড কন্ডমের ব্যাবস্থা করেছি। বাল যদি না করে তাহলে ওর বিয়েতে কনডমের বেলুন উপহার দেবো।”

সঙ্গীতার কান গাল লজ্জায় লাল হয়ে যায়। প্রবালের পেছনে পারলে মুখ লুকিয়ে ফেলে। অনুপমা ওকে বলে, “সখীর লজ্জা দেখো। কি রে তোদের কি কামসুত্র দিতে হবে না লাইভ দেখবি বল?”

শ্রেয়া হেসে ফেলে, “মাল্টুসকে সেদিন রাতে রেখে দিলে হতো। বড় হয়ে যেতো ছেলে মেয়ে দুটো। দ্যাখ দ্যাখ, প্রবাল এইবারে মাটির মধ্যে ঢুকে যাবে।”

প্রবাল বিরক্ত হয়ে বলে, “এই তোরা থামবি?”

দেবায়নঃ “কি করেছি যে থামবো? তোর বউকে কোলে করেছি, তোর নুনু ধরে টান মেরেছি?”

মৃগাঙ্ক সঙ্গীতার মাথায় চাঁটি মেরে বলে, “তুই সেই রাতে কি এমন চিকেন পকোড়া বানিয়েছিল রে?”

সঙ্গীতাঃ “কেন, তুই খাসনি সেই রাতে?”

মৃগাঙ্কঃ “খেয়ে আমি তো উলটে পড়েছিলাম। আমার ইচ্ছে ছিল হাত মারার কিন্তু প্রবাল কি স্পেশাল দিল সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।”

সবাই আবার হো হো করে হেসে ওঠে। তনিমা অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে পায়েল থাকলে বড় ভালো হতো।”

কথাটা শুনে সবাই চুপ করে যায়। হাসি ঠাট্টার মধ্যে নেমে আসে গভীর কালো ছায়া। বিশেষ করে অনুপমার বুকে বড় বেজে ওঠে পায়েলের কথা। ছোটো বেলা থেকে এক সাথে পড়েছে, কলেজে থাকাকালিন একসাথে সব করেছে। কারন কারুর অজানা নয়। অনুপমার চোখ ছলছল করে ওঠে, “আগের থেকে অনেক ভালো আছে এখন।”

তনিমাঃ “ফোন করলে ধরে না কেন তাহলে?”

অনুপমাঃ “জানিস তো কারুর সাথে আজকাল আর কথা বলে না। বাড়ি ফিরে দেখবো হয়তো চুপচাপ টিভি দেখছে না হয় রুমে বসে গল্পের বই পড়ছে।”

তনিমাঃ “ওকে নিয়ে আমাদের একবার কোথাও যাওয়া দরকার। ওই বাড়ির মধ্যে থেকে থেকে ওকে তোরা আরও বেঁধে রেখেছিস।”

অনুপমা হাল্কা হাসি দিয়ে বলে, “শুধুমাত্র ভাইয়ের সাথেই বের হয় তাও আবার সামনের পার্ক পর্যন্ত। একবার চেষ্টা করেছিলাম শপিংয়ে নিয়ে যাওয়ার, গাড়ি মিন্টো পার্ক থেকে ঘুরিয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে হয়েছিল।”

শ্রেয়া একসময়ে দেবায়নকে একদিকে ডেকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে তুই যে কি সব বলছিলিস, সফটওয়্যার ফার্ম খুলবি? সেসব কি আদৌ হবে না এমনি গুলতানি মেরেছিলি আমাদের?”
 
দেবায়ন ওর কাঁধে হাত দিয়ে বলে, “ডারলিং, সব হবে সব হবে। আজ সবে আমাদের পরীক্ষা শেষ হলো। এবারে আমার আর পুচ্চির দৌড়ানো শুরু, মাথা ব্যাথা শুরু। অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে কিন্তু আমি তোকে কথা দিচ্ছি, সফটওয়্যার ফার্ম হবে।”

শ্রেয়াঃ “দ্যাখ ভাই, রূপক ক্যম্পাসে মুম্বাইয়ের একটা বড় কোম্পানিতে চাকরির অফার পেয়েছে। পরের মাসে জয়েনিং।”

দেবায়ন প্রশ্ন করে, “মানে? অনু আর আমি যে তোদের আগে থেকে একটু বলে রেখেছিলাম।”

শ্রেয়াঃ “জানি বলে রেখেছিলি। ঝোপের মধ্যে দশ খানা পাখীর চেয়ে হাতের একটা পাখীর দাম অনেক। তুই আগে ফার্ম তৈরির কিছু ব্যাবস্থা কর তারপরে রূপকের সাথে কথা বলিস, কেমন।”

দেবায়নঃ “হ্যাঁ সেটা ঠিক। দেখি কিছুদিনের মধ্যেই শুরু করবো এই নিয়ে ভাবনা চিন্তা।”

শ্রেয়াঃ “অনু বলছিল যে টাকার ব্যাপারে কোন অসুবিধে নেই, ওর কাছে নাকি টাকা আছে। কি ব্যাপার, একটা সফটওয়্যার ফার্ম খোলার মতন এতো টাকা পেলি কোথায় তোরা?”

দেবায়ন বাঁকা হাসি হেসে বলে, “পরে বিস্তারিত জানাবো। আর আমার পুচ্চিটা কিছুই পেটে রাখতে পারে না।”

গল্প মজা শেষে বাড়ি ফেরার পথে দেবায়ন অনুপমাকে ধমক দিয়ে বলে, “তুমি শ্রেয়াকে টাকা পয়সার কথা বলে দিয়েছো নাকি?”

অনুপমা হেসে বলে, “না মানে একটুখানি জানিয়েছি যে বাবা টাকা দেবে।”

দেবায়নঃ “আজ জিজ্ঞেস করছিল আমাকে। তুমি কোন কথা পেটে রাখতে পারো না? এখুনি ওই সব বলার কি দরকার, টাকা কোথা থেকে আসবে, কি করতে চলেছি। পরীক্ষা শেষ হলো আজকে। এবারে আগে কাকুর সাথে কথা বলতে হবে। আর সব থেকে বড় ব্যাপার আমার মা। মা একবার বেঁকে বসলে কিন্তু কিছুই করা সম্ভব হবে না।”

অনুপমা দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে বলে, “মামনিকে আমি ঠিক পটিয়ে নেব।” দেবায়ন জানে, মিস্টার সেনের কথার চেয়ে অনুপমা আর দেবায়নের আব্দার বেশি কাজে দেবে ওর মায়ের কাছে। বেশি যুক্তি তক্ক মায়ের সামনে খাটে না। যে কাজ মায়ের পছন্দ নয় সেটা মা কখনই করবে না অথবা করতে দেবে না। মায়ের কাছে আদর করে আব্দার করলে মা কথা রাখবে।

বাইকে বসে পেছন দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেবায়ন অনুপমার গালে চুমু খেয়ে বলে, “হ্যাঁ তা জানি। তোমার মামনিকে একমাত্র তুমি বশ মানাতে পারবে।”

সেদিন রাতে খাবার সময়ে দেবশ্রী ছেলেকে জিজ্ঞেস করে ওর পরীক্ষার ব্যাপারে আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ব্যাপারে। দেবায়ন জানায় যে মিস্টার সেনের সাথে কথা বলবে ওদের ভবিষ্যতের সফটওয়্যার ফার্মের ব্যাপারে। দেবায়ন মাকে মনে করিয়ে দেয় এক বছর আগের মুসৌরির কথা। দেবশ্রীর মনে আছে এক বছর আগে মুসৌরিতে ছেলে কি বলেছিল। দেবশ্রীর মনে আছে এক বছর আগে মুসৌরিতে আর কি কি হয়েছিল। হটাত মুসৌরির কথা মনে পড়ে যাওয়াতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায়। দেবায়ন বলে যে কয়েক দিনের মধ্যে মিস্টার সেনের সাথে বিস্তারিত কথা বার্তা বলবে ওদের সফটওয়্যার ফার্মের ব্যাপারে সেই মতন পরের পদক্ষেপের কথা চিন্তা করবে। দেবশ্রী বলেন যে তিনি একবার মিস্টার সেনের সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে চান। দেবশ্রী বলেন যে অফিস থেকে একদিন ফোন করবে মিস্টার সেনকে এবং বাড়িতে ডাকবেন।

এক রবিবার বিকেলে, পারমিতা দেবশ্রীকে বাড়িতে ডিনারের জন্য ডাকে। সেই সাথে জানায় যে দেবায়ন আর অনুপমার ভবিষ্যতের সফটওয়্যার ফার্মের ব্যাপারে কথা বলতে চায়।

দেবায়ন আর অনুপমার দিকে একবার দেখে, মিস্টার সেন বলতে শুরু করেন, “এদের পরীক্ষা শেষ, কলেজ শেষ। দুই জনে যথেষ্ট বড় হয়েছে। নিজেদের ভালো মন্দ বিচার বিবেচনা করতে শিখেছে। আমি ওদের কথা ভাবছিলাম অনেক দিন থেকে।”

দেবশ্রীঃ “তার কিছুটা দেবু আর অনু আমাকে বলেছে। এরা একটা সফটওয়্যার ফার্ম খুলতে চায়। সেইজন্য এরা কম্পিউটার শিখেছে।”

মিস্টার সেনঃ “হ্যাঁ, আমার একবার মনে হয়েছিল। কম্পিউটার শিখলে এই ফিল্ডে ভালো কাজ করতে পারবে। বর্তমানে এই ফিল্ডে বেশ টাকা। তাই ওদের একটা সফটওয়্যার ফার্ম খুলে দেবো ভাবছি। দুইজনে নিজদের বুদ্ধি দিয়ে, শক্তি দিয়ে সেটা তৈরি করুক।”

দেবশ্রীঃ “সব বুঝলাম। কিন্তু আমার মনে হয় এতো তাড়াতাড়ি ওদের সফটওয়্যার ফার্ম খোলা উচিত নয়। কয়েক বছর ওরা দুইজনে আরও কিছু পড়াশুনা করে নিক, কোন একটা সফটওয়্যার ফার্মে চাকরি করুক একটু অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিক তারপরে না হয় নিজেদের একটা ফার্ম খুলবে।”

দেবায়ন আর অনুপমা পরস্পরের মুখ চাওচাওয়ি করে। দেবায়ন চেয়েছিল কলেজের পরেই ফার্ম খুলতে। জানে একবার মা যদি দেরি করায় তাহলে ধিরে ধিরে মা ওকে চাকরি করতে বলবে। অনুপমা দেবশ্রীকে বলে, “মামনি, নিজের ফার্মে কাজ করতে করতে সেই অভিজ্ঞতা অর্জন করা যেতে পারে।”

দেবশ্রী হেসে বলে, “না রে। যখন নিজের ফার্ম হবে তখন তোদের ঘাড়ে সেই ফার্মের সব ভার এসে পড়বে। তোদের মাথায় চিন্তা ঢুকবে কি করে ফার্ম টিঁকিয়ে রাখা যায়, কি ভাবে বিজনেস বাড়ানো যায়, কি ভাবে টাকা রোজগার করা যায়। এই সব একবার মাথায় ঢুকে গেলে পড়াশুনা মাথা থেকে বেরিয়ে যাবে।”

দেবায়নঃ “মা, আমি আর রূপক ভেবে রেখেছি যে আমরা টেকনিকাল দিকটা দেখবো। বাকিটা কাকু আর তোমার সাহায্য নিয়ে এগিয়ে যাবো।”

দেবশ্রী অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “আমি মানে?”
 
মিস্টার সেন বলে, “দিদি, ব্যাপারটা ঠিক দেবায়ন বলে বুঝাতে পারছে না।” দেবশ্রী দেখে মিস্টার সেনের দিকে। মিস্টার সেন বলেন, “ওদের ফার্ম খুলে দেবো। সব কিছু ওদের হাতে থাকবে, কিন্তু ওদের সাথে কয়েক জন এডভাইসর হিসাবে থাকবে যারা এই বিজনেস, এডমিনিস্ট্রেসান আর একাউন্টস দেখবে। ওরা নিজেদের মতন টেকনিকাল নিয়ে থাকতে পারে, আর সেই সাথে যদি ওরা আরও কয়েক জনকে খুঁজে পায় তাহলে ভালো হবে। আর আপনার ছেলের কথা বলি। আপনার ছেলের মাথায় এই বুদ্ধি ভালো আছে। গত ডিসেম্বরে, র‍্যাডিসন ফোরটের মিটিংয়ে দেবায়ন সবাইকে অবাক করে অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত নেয়। ওর পরিকল্পনা জানার পরে আমার বিশ্বাস আছে যে ওর হাত ধরে ওদের কোম্পানি অনেক উঁচুতে যাবে।”

দেবশ্রীর বুক ছেলের কথা শুনে গর্বে ফুলে ওঠে। ছেলের দিকে চেয়ে হেসে জিজ্ঞেস করে, “কি এমন করেছিলি রে তুই?”

মিস্টার সেন হেসে বলে, “ওর সিদ্ধান্তের জন্য আমার লাভের অংশ বেড়ে গেছে।”

দেবশ্রীঃ “বুঝলাম সব। কিন্তু বড্ড তাড়াতাড়ি সব করছে এটাই একটু ভাবনার বিষয়।”

মিস্টার সেন হেসে বলেন, “অনুপমা আমার একমাত্র মেয়ে আর দেবায়ন আপনার একমাত্র ছেলে। ওরা দুইজনে ভেবেই রেখেছে যে ওদের ভবিষ্যৎ একসাথে বাঁধা। এই বিষয়ে আমার কোন অমত নেই, ওর মায়ের নেই আপনার নেই। তবে মেয়ের পিতা হিসাবে আমার একটা কর্তব্য আছে বিয়ের পরে মেয়ের সংসার যাতে সুখ শান্তিতে ভরে ওঠে।”

দেবশ্রী জিজ্ঞেস করে, “আপনি কি বলতে চাইছেন? অনুকে আমি অনেক আগেই আমার বৌমা হিসাবে মেনে নিয়েছি। আমার ছেলে ওকে এক কাপড়ে বাড়িতে নিয়ে এলেও আমি কিছু বলবো না।”

পারমিতা অবস্থার সামাল দেবার জন্য মুখ খোলে, “না দেবশ্রীদি, তুমি যেটা ভাবছো সোমেশ ঠিক সেই ব্যাপারে কিছু বলতে চায়নি। সোমেশ বলতে চাইছে যাতে ওরা দুইজনে ভালো থাকে। যতদিন আমাদের ক্ষমতা আছে ততদিন আমরা ওদের জন্য করে যাবো, তারপরে ওদের ব্যাপার।”

মিস্টার সেন বুঝতে পারেন যে কথাটা অনেকটা বিয়ের যৌতুকের মতন হয়ে গেল। তাই ক্ষমা চেয়ে বলেন, “দুঃখিত দিদি। আমার কথা অনেকটা বিবাহের যৌতুকের মতন হয়ে গেল। আমি ঠিক সেটা বলতে চাইনি। আমি বলতে চেয়েছিলাম যে ওদের ফার্মের ইনিশিয়াল ক্যাপিটাল আমি লোন হিসাবে দেবো।”

দেবশ্রী জিজ্ঞেস করে, “আপনার এই পরিকল্পনা একবার জানতে পারি কি?”

মিস্টার সেন এই এক বছরে বুঝে গেছেন সামনে বসা ভদ্রমহিলা সব কিছু না শুনে, ঠিক মতন বিচার বিবেচনা না করে মত দেবেন না। তিনি হেসে বলেন, “নিশ্চয় জানতে পারবেন। আপনাকে না জানিয়ে কিছু করা ভুল। আমি ভেবে রেখেছি ওদের ফার্মের জন্য কুড়ি থেকে ত্রিশ কোটি দেবো। এই যে এডমিনিস্ট্রেসান সেখানে আপনার সাহায্য পেলে ভালো হয়। একাউন্টসের জন্য চেনা জানা লোক আছে। বাকি মার্কেটিং না হয় প্রথম প্রথম আমি একটু দেখে দেবো। টেকনিকাল ওরা নিজেরা ঠিক করে নেবে।”

দেবশ্রী জিজ্ঞেস করে, “কোন প্রোজেক্ট প্ল্যান ছাড়াই সফটওয়্যার ফার্ম খোলা হবে? রোডম্যাপ কই, বিজনেস প্ল্যান কই? খালি হাতে একটা ফার্ম খোলার পরে কি ওরা বাজারে বের হবে বিজনেস তুলতে? এই রকম করলে কয়েক মাসের মধ্যে আপনার টাকা গুলো জলে যাবে। এটা ঠিক নয়, আগে ওরা একটা প্রোজেক্ট প্ল্যান করুক। আপনি দেখুন আমি দেখি, বিচার বিবেচনা করি। আমি বেশ কয়েক জনের সাথে আলাপ আলোচনা করবো এই বিষয়ে তারপরে আমার মতামত জানাবো।”

মিস্টার সেন চিন্তিত হয়ে দেবায়নকে বলে, “দেবায়ন, দেবশ্রীদির কথা একদম ঠিক। আগে তুমি রূপক আর শ্রেয়ার সাথে কথা বলে দেখো। ওদের সাথে মিলে একটা প্রোজেক্ট প্ল্যান বানাও। যদি ওরা না আসে তাহলে আমি দেখি কয়েক জনকে বলে। সফটওয়ারে কি বিজনেস করা যায় সেই নিয়ে তাহলে ভাবনা চিন্তা করা যাবে।”

পারমিতা দেবশ্রীকে আস্বস্ত করে বলে, “দেবশ্রীদি তোমার হ্যাঁ বলার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। দেবায়ন আর অনুর ওপরে আমার বিশ্বাস আছে।”

দেবশ্রী একবার অনুপমা আর দেবায়নের দিকে তাকায়। দেবায়ন আর অনুপমা কাঁচুমাচু মুখ করে দেবশ্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে। জানে, ওই একমাত্র মানুষ এইখানে যার সম্মতি না পেলে ওদের সফটওয়্যার কোম্পানির স্বপ্ন স্বপ্ন হয়ে থেকে যাবে।

অনুপমা দেবশ্রীর পাশে বসে আদুরে কণ্ঠে বলে, “মামনি আমরা সব ঠিক করে নেব। প্লিস মামনি না কোরো না।”

পারমিতা হেসে ফেলে মেয়ের কথা শুনে, দেবশ্রীকে বলে, “দেখেছো দিদি, আমার থেকে তোমার দাম বেশি।”

দেবশ্রী আর হাসি চাপতে পারে না, শেষ পর্যন্ত বলে, “ঠিক আছে আমার মত আছে তোদের এই সফটওয়্যার ফার্মে।”

মায়ের সম্মতি পেয়ে দেবায়ন খুব খুশি। দেবশ্রী ছেলেকে শুধু একটা কথা বলে, এই টাকা পয়সা, নাম যশে যেন নিজের মান সন্মান বজায় রেখে চলে। মাকে জড়িয়ে ধরে দেবায়ন আস্বস্ত করে। দেবশ্রী জানায় ওদের দিল্লী অফিসে একটা ছেলে এডমিনে ছিল, নাম শান্তনু দুবে। ছেলেটা বিহারী কিন্তু আসানসোলে বাড়ি। দেবশ্রীর আগের অফিসের কাজ ছেড়ে দিয়েছে এবং দিল্লীতেই চাকরি করছে কিন্তু কোলকাতা ফিরতে চায়, বাড়ির কাছে কোথাও চাকরি করতে চায়। দেবায়নের সফটওয়্যার ফার্ম হলে ওকে যেন একটা কাজ দেয়। সেই সাথে শান্তনুর স্ত্রী, মনীষা জিন্টা সে আগে দেবশ্রীর নিচে কাজ করতো। এইচ.আর হিসাবে সে ভালোই কাজ করবে। দেবায়ন জানিয়ে দেয়, ওদের ফার্মে লোকজনের দরকার পড়বে, চেনাজানা হলে ভালো হয়।

মিস্টার সেন নিজের চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি ব্যাবসা দেখতে শুরু করে দিয়েছেন। পুরানো গাড়ি বিক্রি করে দুটো গাড়ি কেনা হয়। একটা অনুপমার বাড়ির জন্য টয়োটা ক্যাম্রি আর মিস্টার সেন নিজের জন্য কেনেন, অডি এ-সিক্স। দেবায়ন বলে, নিজের জন্য পরে গাড়ি কিনবে। এখন ওর বুলেটে ঘোরার শখ কমেনি। গাড়ি থাকলেও অনুপমা ওর সাথেই বাইকে চেপে সব জায়গায় যায়। অনুপমার গাড়ি বেশির ভাগ দিন বাড়িতেই থাকে।

এক বছর বাদ গেছে পায়েলের। তবে নিজেকে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করছে আশেপাশের আবহাওয়ার সাথে। অনুপমা ওকে কলেজে পৌঁছে দিয়ে তারপরে দেবায়নের সাথে কাজে বের হয়। বিকেলে গাড়ি ওকে কলেজ থেকে বাড়ি নিয়ে আসে। পায়েলের দৌড় এই বাড়ি থেকে কলেজ আর কলেজ থেকে বাড়ি। এছাড়া কোথাও বের হতে চায় না।
 
এক বিকেলে মিস্টার সেন দেবায়নের সাথে এই সফটওয়্যার ফার্মের ব্যাপারে আলোচনা করে বুঝিয়ে দেয় কার সাথে কি ভাবে কথা বলে বশ করবে। মিস্টার সেন বলেন যে, ফার্ম প্রাইভেট লিমিটেড করতে হলে কমপক্ষে তিন জন ডাইরেক্টর চাই। অনুপমাকে ডাইরেক্টর করে দিলে ভালো। কারন ডাইরেক্টর লাভের অংশ পাবে এবং সাথে সাথে মাইনে। কিন্তু শুরুতে যতদিন না কোম্পানি ব্রেক ইভেনে পৌঁছাবে ততদিন বাকিদের খাতিরে অনুপমা কোন মাইনে নেবে না। দেবায়ন যদি মাইনে নিয়ে চাকরি করে তাহলে বিয়ের পরে টাকার সমস্যা থাকবে না। দেবায়ন বুঝতে পারল এই কোম্পানির প্যাঁচ। মিস্টার সেন আরো জানালেন যে, শ্রেয়ার সাথে ঠিক যেন সেই রকম করে। শ্রেয়াকে যেন বেশি শেয়ার না দেয়, কারন টাকা লাগাবে মিস্টার সেন, বুদ্ধি আর মাথা লাগাবে দেবায়ন। শ্রেয়ার নামে দশ থেকে বারো শতাংশ দিলেই হবে। যদি রূপক অন্য কোথাও চাকরি করতে চায় তাহলে অন্য কিছু ভাববে এই সফটওয়্যার ফার্মের ব্যাপারে। সবকিছু বুঝে শুনে যেন কথাবার্তা বলে দেবায়ন আর অনুপমা। ব্যাবসা এক জিনিস আর বন্ধুত্ব অন্য। ব্যাবসার মধ্যে বন্ধুত্ব আনা ভালো কিন্তু একটা সীমা পর্যন্ত। তৃতীয় ডাইরেক্টর হিসাবে মিস্টার সেন থাকবেন।

মিস্টার সেন আরো জানান, যে প্রথমে একটা অফিসের জন্য জায়গা যোগাড় করতে হবে। কোম্পানির নাম রেজিস্টার করাতে হবে, সব ডাইরেক্টরদের নাম ধাম দিতে হবে। তারপরের বিজনেস আর জনবল যোগাড় করা। মিস্টার সেন বললেন, শুরু দিকে ওদের আগের কোম্পানির যে ছেলেটা একাউন্টস দেখতো তাকে দিয়ে কাজ করাবেন। দেবায়ন বলে, মা একজন এইচ.আর এর কথা বলেছে। বিজনেসের জন্য মিস্টার সেন খুঁজবেন, কারন সফটওয়্যার মারকেটিং আর অন্য মারকেটিংয়ের মধ্যে অনেক তফাত। সময়ের আগেই সব যোগাড় করে নেবেন। মিস্টার সেন বললেন দেবায়ন বড় হয়ে গেছে, এবারে যেন নিজের ভালো মন্দ বুঝে শুনে সবার সাথে এই ব্যাবসা আর বাকি কাজ নিয়ে কথাবার্তা বলে।

দেবায়ন মিস্টার সেনকে জিজ্ঞেস করে নিবেদিতার কোম্পানির ব্যাপারে। মিস্টার সেন বলেন যে ওদের কন্সট্রাক্সান কোম্পানির জন্য মিস্টার সেন ডাইরেকটর যোগাড় করেছেন। যাদের সাথে এতদিন কাজ করে এসেছিলেন তাদের মধ্যে দুই জনকে নিয়েছেন। তাদের নামে শেয়ার নেই, তারা নামেই ডাইরেক্টর। আর নিবেদিতার কোম্পানির জন্য মিস্টার সেন চল্লিশ কোটি টাকা দিয়েছে। নিবেদিতা মিন্টো পার্কের কাছে অফিস নিয়েছে। মিস্টার সেন বলেন, ওদের এই গ্রুপ কোম্পানির জন্য রাসেল স্ট্রিটের পুরনো অফিসের নিচের তলায় অফিস খুলতে। মিস্টার সেন বলেন শ্রেয়া আর রূপকের সাথে কথাবার্তা বলার পরে ওরা নিজেরাই এইসব দেখতে যেতে পারে। ওদের সাথে নিয়ে গেলে ওদের ভালো লাগবে, ওরা বুঝবে যে ওদের কথার দাম দেওয়া হয়েছে। এইভাবে মানুষকে বশে করা যায়। দেবায়ন হেসে ফেলে মিস্টার সেনের কথা শুনে।

একদিন বিকেলে শ্রেয়া আর রূপকের সাথে আলোচনায় বসে দেবায়ন আর অনুপমা।

দেবায়ন প্রথম কথা শুরু করে, “আমি আর অনুপমা ঠিক করেছি একটা সফটওয়্যার ফার্ম খুলবো।”

রূপক, “হ্যাঁ, শ্রেয়া আমাকে জানিয়েছিল অনেক আগে। কিন্তু আমি মুম্বাইয়ে একটা বড় সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছি।” দেবায়ন আর অনুপমা পরস্পরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। রূপক বলে, “আগে তোদের পুরো পরিকল্পনা শুনি তারপরে সিদ্ধান্ত নেব কোথায় জয়েন করবো। তোদের কাছে কি কোন প্রোজেক্ট প্ল্যান আছে এই কোম্পানির ব্যাপারে? মানে কি নিয়ে কোম্পানি বিজনেস করবে, কি কি প্রোডাক্ট হবে এই সব আর কি?”

অনুপমা আর দেবায়ন মাথা নাড়ায়, “না ওই সব ব্যাপারে কিছু জানি না বলেই তোকে ডাকা।”

রূপক হেসে দেয়, “তার মানে আমার সাহায্য চাই। কিন্তু এতে আমাদের লাভ?”

অনুপমা বলে, “লাভ মানে, তুমি আমাদের সাথে থাকবে। এই কোম্পানির এক অংশীদার হবে।”

রূপক শ্রেয়ার দিকে তাকায়। শ্রেয়া জিজ্ঞেস করে, “টাকা কে দেবে?”

অনুপমাঃ “টাকার কথা চিন্তা করিস না। টাকা আমি আর দেবায়ন যোগাড় করে নেব। তোরা শুধু এইটুকু জানা যে তোরা কি আমাদের সাথে থাকবি?”

রূপক এক বার শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আমি মুম্বাইয়ে যে কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছি সেই কোম্পানি দুশো কোটি টাকার কোম্পানি। আমার জয়েনিং স্যালারি পঁচিশ হাজার এবং সাথে আরও অনেক সুযোগ সুবিধে আছে।”

দেবায়ন হেসে বলে, “দ্যাখ ভাই, আমি এখুনি বলছি না যে আমরা তোকে ওই মাইনে দিতে পারবো। তবে তোর ওপরে নির্ভর করবে ভবিষ্যতে এই কোম্পানিকে তুই কোথায় নিয়ে যেতে চাস। তার ওপরে নির্ভর করবে তোর মাইনে আর বাকি সুযোগ সুবিধে।”

রূপকঃ “তাহলে একটু খুলেই বল। কত টাকা দিয়ে শুরু করবি। আমি সেই মতন প্রোজেক্ট প্ল্যানে মন দেবো।”

অনুপমা একবার দেবায়নের দিকে তাকায়। দেবায়ন বলে, “আমাদের ইনিশিয়াল ইনভেস্টমেন্ট হবে কুড়ি থেকে ত্রিশ কোটি টাকা।”

টাকার অঙ্ক শুনে শ্রেয়া আর রূপক অবাক হয়ে যায়। শ্রেয়া জিজ্ঞেস করে, “এতো টাকা আসবে কোথা থেকে?”

অনুপমা হেসে বলে, “তুই শুধু এবারে বল যে আমাদের সাথে কি তোরা যোগ দিবি?”

শ্রেয়া একটু ভেবে রূপককে বলে, “তুমি কি ভাবছো?”

রূপকঃ “আমি ভাবছি পরের কথা। ওরা যে অঙ্ক নিয়ে কোম্পানি শুরু করার কথা ভাবছে। এই কোলকাতা শহরে এই অঙ্কে বেশ বড় কোম্পানি খোলা যাবে।”

দেবায়ন রূপকের দিকে হাত বাড়িয়ে বলে, “তাহলে কি ভেবে নেব যে তুই আমাদের সাথে আছিস?”

রূপকঃ “একদম গুরু। আমি যেখানে জয়েন করতাম সেই কোম্পানি ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট করে, ছোটো খাটো সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করে। আমরা সেই পন্থা অবলম্বন করতে পারি। ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট দিয়ে শুরু করতে পারি, সেই সাথে ওয়েব এপ্লিকেশান আছে, বিভিন্ন ছোটো ছোটো কোম্পানির জন্য সফটওয়্যারের কাজ আছে। তুই কিছু জানিস আমি কিছু জানি, বাকি করতে করতে হয়ে যাবে। তবে আমি কয়েক জন সিনিয়ারের সাথে কথা বলে একটা প্রোজেক্ট প্ল্যান করে নেব।”

দেবায়ন, “হ্যাঁ তাহলে তুই একটা প্রোজেক্ট প্ল্যান করে ফেলো। ইতিমধ্যে দেখি কাউকে বলে কয়ে যদি বিজনেসের ব্যাপারে কিছু হয়। কোন সফটওয়্যার ডিল যদি করা যায় তাহলে বেশ ভালো হবে।”

শ্রেয়া জিজ্ঞেস করে, “আমি কি করবো এখানে?”
 
অনুপমা হেসে ফেলে, “তুমি কি করতে চাও সোনামণি? তুই মাঝে মাঝে অফিসে এসে রূপককে একটু দেখা দিয়ে যাস তাহলেই হবে।”

শ্রেয়া রূপকের বাজু জড়িয়ে বলে, “কি গো, তোমার সামনে ঘোরাফেরা করলে তুমি কাজ করবে তো?”

চারজনে হেসে ফেলে শ্রেয়ার কথা শুনে। দেবায়ন বলে, “এবারে একটা সিরিয়াস কথা। দ্যাখ তুই আমার কোম্পানিতে চাকরি করবি, সেটা হয় না। চাকরির চেয়ে বড় তুই আমার বন্ধু। আমি ভেবে রেখেছি তুই একজন ডাইরেক্টর হবি এই কোম্পানিতে।”

রূপক অবাক হয়ে যায় দেবায়নের প্রস্তাবে, “তুই সত্যি বলছিস?”

দেবায়নঃ “হ্যাঁ। এই কোম্পানির শেয়ার দেবো তোকে। আমি তোকে শুধুমাত্র মাইনে দিয়ে রাখবো সেটা ভালো নয়। প্রধানত যেখানে তুই আমার জন্য এতো করবি।”

রূপক বার কয়েক চোখের পাতা নাড়ায়। শ্রেয়া দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “কত পারসেন্ট শেয়ার পাবে রূপক?”

দেবায়ন বলে, “না আমার পরিকল্পনা একটু ভিন্ন। শ্রেয়া হবে ডাইরেক্টর আর রূপক চাকরি করবে।”

রূপক বুঝতে পারে না। দেবায়ন মিস্টার সেনের সাথে থেকে থেকে ব্যাবসার প্যাঁচ বেশ শিখে গেছে, তবে বন্ধুদের ভালো করতে চায় তাই বলে, “দ্যাখ ভাই। আমি যদি রূপকের নামে শেয়ার দেই তাহলে যতদিন না কোম্পানি লাভের অংশ দেখছে ততদিন শুধু আঙুল চুষে একটা সামান্য মাইনে নিতে হবে। আমি চাইছিলাম যে শেয়ার হবে শ্রেয়ার নামে, তাতে যখন লাভ হবে তখন তোরা মোটা টাকা লাভের অংশ থেকে পাবি। কিন্তু এই কয় বছর চলার জন্য টাকা চাই, তাই রূপককে মাইনে দেওয়া হবে।”

শ্রেয়া জড়িয়ে ধরে দেবায়নকে, “তুই মাল এতো বুদ্ধি কোথায় রেখেছিলি রে।”

রূপক মিচকি হেস শ্রেয়াকে বলে, “নৈহাটির রাতে তুমি তো ছিলে না তাই জানো না। ওর মাথায় যে কখন কি আসে সেটা ওই জানে।” দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “যাই হোক ভাই, সেসব নিয়ে আমার চিন্তা নেই তুই যা ভালো বুঝিস সেটা করিস।”

শ্রেয়া দেবায়নের গলা জড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে, আমি ডাইরেক্টর হবো আমাকে একটা কেবিন দিবি?”

অনুপমা হেসে ফেলে ওর কথা শুনে, “কেন মাল কেবিনে বসে কি করবি? রূপকের কোলে বসে থাকবি নাকি?”

শ্রেয়াঃ “কেন রূপক কেন? কোম্পানির ডাইরেক্টর যখন দেবায়ন, তখন ওর কোলে বসবো।”

অনুপমা হেসে বলে, “হে হে সোনামণি। কোম্পানির ডাইরেক্টর আমি, পুচ্চু নয়। তুই আর আমি ডাইরেক্টর হবো আর আমাদের বরগুলো গাধার মতন খাটবে।”

দেবায়নঃ “শ্রেয়ার নামে বারো পারসেন্ট শেয়ার থাকবে।”

শ্রেয়া জিজ্ঞেস করে, “এতো কম, বারো পারসেন্ট কেন?”

অনুপমাঃ “সবে শুরু। এখন তুই কিছুই পাবি না। রূপকের মাইনে দিতে, বাকিদের মাইনে দিতে হিমশিম খেয়ে যাবো।”

শ্রেয়া রূপককে বলে, “কি গো কিছু বলবে? বন্ধুত্ব এক জায়গায় আর বিজনেস এক জায়গায়। কিন্তু তাই বলে বারো পারসেন্ট?”

দেবায়ন শ্রেয়াকে বুঝিয়ে বলে, “শোন। একবার ব্রেক ইভেনে পৌঁছে গেলে বারো পারসেন্ট অনেক টাকা। আর রূপক প্রতি মাসে ভালো মাইনে পাবে।”

শ্রেয়া মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “না না, বারো পারসেন্ট অনেক কম। আমি গরু নাকি? রূপক প্রোজেক্ট প্ল্যান করবে, রূপক কাজ করবে আর শেয়ারের বেলায় শুধুমাত্র বারো পারসেন্ট। কুড়ি থেকে পঁচিশ না হলে রূপক কাজ করবে না।” শ্রেয়া মনক্ষুণ্ণ হয়ে যায়।

শ্রেয়ার বেগতিক দেখে দেবায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। টেবিলের তলা দিয়ে অনুপমা ওর হাত চেপে শান্ত করে শ্রেয়াকে বলে, “দ্যাখ ভাই, একা রূপকের মাথায় কাজ হচ্ছে না। আমার পুচ্চুর আর রূপকের মাথা মিলে এই কোম্পানির টেকনিকাল তৈরি হবে। আমি সেই সাথে একটু এডমিনিস্ট্রেসান দেখবো, একাউন্টসের জন্য, এইচ.আরের জন্য লোক জন থাকবে। আমাকে পুরোটা খরচ করতে হবে। ভবিষ্যতে কোম্পানি বড় হলে তখন দেখা যাবে।”
 

Users who are viewing this thread

Back
Top