রূপক শ্রেয়াকে বুঝিয়ে বলে, “তোমার একি হলো? রাম না হতে রামায়ন কেন গাইছো তুমি? আমি একা তো করছি না। দেবায়নের মাথা লাগছে, অনুপমার টাকা লাগছে। সত্যি কথা বলতে আমাদের গ্যাঁটের থেকে কিছু যাচ্ছেনা একবার ভেবে দেখো। ওরা যে আমাদের একটা এতো বড় অফার দিয়েছে সেটাই বড় কথা।”
শ্রেয়া চাপা গলায় বলে, “আমাদের দরকার তাই এসেছে আমাদের কাছে। কিন্তু পনেরো হতেই পারে।”
শ্রেয়ার কথা শুনে দেবায়ন বলতে যাচ্ছিল যে তুই না হলে আমি অন্য কাউকে দেখে নেব। অনুপমা দেবায়নের হাতে চিমটি কেটে চুপ করে যেতে বলে। সূর্য মনিদিপার সময়ে, পায়েলের সময়ে শ্রেয়া ওর পাশে দাঁড়িয়েছিল। একটা ভালো বান্ধবীকে হারাতে চায় না অনুপমা। অনুপমা তাই কথা না বাড়িয়ে বলে, “ওকে বাবা, পনেরো দেবো। এবারে শান্তি? কিন্তু এখুনি পনেরো দিতে পারছি না। দুই বছর যাক তারপরে পারসেন্টেজ বাড়িয়ে দেবো।”
রূপক শ্রেয়াকে শান্ত করে বলে, “তুমি না একদম যাতা। আগে কোম্পানি শুরু হোক, টাকা আসুক তারপরে।” দেবায়নকে বলে, “ভাই তুই যা ভালো বুঝিস সেটা করিস। ওর কথায় বেশি কান দিস না।”
রূপকের কথায় শ্রেয়া একটু আহত হয়। ভেবেছিল রূপক ওর হয়ে কথা বলবে। শ্রেয়ার চেহারায় কালো মেঘের ছায়া দেখে অনুপমা বড় ব্যাথা পায়। বান্ধবী ভেবে ওর সাথে কাজের কথা ভেবেছিল, ভাবেনি যে এর মধ্যেই বিজনেসের প্যাঁচ চলে আসবে। রূপক অনুপমার চোখের ভাষা পড়ে কথা ঘুরিয়ে অন্য কথা বলতে শুরু করে।
এরপরে একদিন রূপকের সাথে দেবায়ন আর অনুপমা রাসেল স্ট্রিটের অফিস দেখতে যায়। চার হাজার স্কোয়ার ফিটের বেশ বড় অফিস। একই বিল্ডিংয়ে মিস্টার সেনের কন্সট্রাক্সান কোম্পানি। জায়গা দেখার পরে মিস্টার সেনের সাথে কথা বলে ভাড়া এবং বাকি কাজ সেরে ফেলে। এবারে কথা ওঠে লোকজন যোগাড়ের। দেবশ্রী বলেছিল শান্তনু আর মনীষার কথা। দেবশ্রী ওদের দিল্লী থেকে ডেকে পাঠায়। শান্তনু আর মনীষার সাথে দেখা করে সবাই। দেবশ্রী ওদের দেখে ভারী খুশি হয়। মনীষা এইচ.আরের ভার গ্রহন করে আর শান্তনু এডমিন দেখে। শান্তনুর ঘাড়ে অফিস সাজানোর দায়িত্ব পড়ে। ইলেক্ট্রিকের কাজ, কেবিন, ফারনিচার ইতাদ্যির কাজ শুরু হয়। পাঁচখানা কেবিন, একটা বড় কনফারেন্স হলো আর একশ জনের মতন বসার জায়গা করা ঠিক করা হয়। ইতিমধ্যে অনুপমা আর দেবায়নের যৌথ একাউন্টে মিস্টার সেন কুড়ি কোটি টাকা দিয়ে বলেন, ওদের ভবিষ্যৎ এবারে ওদের হাতে, এই টাকা যেন বিচার বিবেচনা মতন খরচ করা হয়। একটা বড় ব্যাঙ্কে কোম্পানি একাউন্ট খোলা হয়। মিস্টার সেন তাঁর অফিসের একাউন্টসের সুজিতকে নিযুক্ত করে অনুপমার কোম্পানির একাউন্টস দেখার জন্য। মারকেটিংয়ের জন্য দেবশ্রী পুরানো অফিসের দীপঙ্কর সরকারকে অফার দেয় দেবায়নের কোম্পানিতে জয়েন করতে।
ইতিমধ্যে রূপক ওর কলেজের সিনিয়ারদের সাথে আলাপ আলোচনা করে একটা প্রোজেক্ট প্ল্যান তৈরি করে কোম্পানির জন্য। কি ভাবে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের কাজ হবে, কি কি সফটওয়্যার লাগবে, ইত্যাদি। রূপক আর দেবায়ন সেই প্রোজেক্ট প্ল্যান মাকে দেখায়। দেবশ্রী ছেলে মেয়েদের উৎসাহ উদ্দিপনা দেখে খুশি হয়ে বলেন যে তাঁর আশীর্বাদ সবসময়ে ওদের সাথে আছে। কোম্পানির একটা নাম ঠিক করা হয় আর কাজের জন্য লোক নিযুক্ত করা শুরু হয়। ওরা চারজনে ঠিক করে যে পুজোর আগেই কোম্পানির কাজ শুরু করে দেবে। সেই মতন বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনার সাথে কাজ শুরু হয়। অফিস সাজানো, ফার্নিচার, ইত্যাদিতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। ছোটো অফিস, পুজোর আগেই ভরে ওঠে লোকে। রূপকের তত্ত্বাবধানে থাকে টেকনিকাল, শ্রেয়া নামেই ডাইরেক্টর। অনুপমা আর দেবায়নের ঘাড়ে সব কিছু দেখার ভার এসে পড়ে। দেবায়ন বুঝতে পারে যে ভবিষ্যতে শ্রেয়াকে নিয়ে কোম্পানির মধ্যে একটা গণ্ডগোল পাকাতে পারে। ওদের কম্পিউটার শিক্ষিকা মিস সুপর্ণা চ্যাটারজির কথা মাথায় আসে। অনুপমা আর দেবায়ন, সুপর্ণাকে অনুরোধ করে ওদের কোম্পানিতে জয়েন করার জন্য। দেবায়নের কথা শুনে সুপর্ণা যেন আকাশ থেকে পড়ে। অনুপমা সুপর্ণাকে রাজি করায়, ম্যাডাম অনেকদিন থেকে কম্পিউটার ফিল্ডে আছে, তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায়। সুপর্ণা ওদের কোম্পানিতে সি.টি.ও হিসাবে জয়েন করে।
পুজোর আগেই ওদের ছোটো কোম্পানিতে কাজ শুরু হয়ে যায়। প্রথম দিনে, সব বন্ধুদের ডাকে। দেবায়ন আর অনুপমার সাথে সাথে রূপক আর শ্রেয়ার পরিবারের সকলে উপস্থিত। দেবশ্রী আর পারমিতা বেশ খুশি, ছেলে মেয়ে নিজের চেষ্টায় একটা বড় পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই দাঁড় করাতে চেষ্টা করছে।
ওদের এই সফটওয়্যার ফার্মে ছোটো ছোটো কাজ আসতে শুরু হয়। প্রথম কয়েক মাস সবাই কাজে ডুবে যায়। একদিন মিস্টার সেন দেবায়নকে ডেকে বলেন যে ওকে এই সফটওয়্যার ফার্ম ছেড়ে হোটেলের দিকে একটু নজর দিতে হবে। সফটওয়্যার ফার্মের পরিচালনা করার জন্য অনেক লোকজন আছে। হোটেল বিজনেসের ব্যাপারে দেয়ায়ন শুধুমাত্র অনুপমাকে জানিয়ে রেখেছিল।
কাঁচের দরজার পেছনে বসে দেবায়ন, সামনে বড় টেবিল একটা ল্যাপটপ। ঘষা কাঁচের দরজায় ওর পোস্ট লেখা, অপারেশান ম্যানেজার। কোনদিন স্বপ্নে ভাবেনি এতো তাড়াতাড়ি নিজের একটা কোম্পানি হয়ে যাবে। স্বপ্ন সাকার হবার পরে দেবায়নের সাথে সাথে অনুপমা বেশ খুশি। সামনে ল্যাপটপ খোলা। ডিসেম্বরের ঠাণ্ডা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায় তাই অফিসে আসতে দেরি হয়ে যায়। অফিসে ঢুকে নিজের মেল দেখে একটু চুপচাপ বসে। টেবিলে ওর মায়ের আর অনুপমার ছবি। ধনোলটি গিয়ে মায়ের সাথে অনুপমার একটা ছবি তুলেছিল। ওর জীবনের সব থেকে বড় দুই স্থম্ভকে দেখে, হবু বৌমা তাঁর মামনিকে জড়িয়ে ধরে। এমন সময়ে অনুপমা কাঁচের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে।
অনুপমা চেয়ারে বসে বলে, “তোমার সাথে খুব জরুরি কথা আছে।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “কার কি হলো আবার? শ্রেয়া কিছু বলেছে? পায়েলের কিছু হয়েছে?”
অনুপমাঃ “না এসব কথা নয়। বাবা কালকে আমাকে বলছিল যে তুমি নাকি পরের মাস থেকে বাইরে যাবে ওই হোটেলের কাজে?”
দেবায়নঃ “হ্যাঁ। এর পর থেকে এইখানে আমার কাজ একটু একটু করে কমাতে হবে। তুমি এই অপারেশান দেখবে আর সুপর্ণা ম্যাম আছেই তোমাকে হেল্প করার জন্য। রুপক টেকনিক্যালে আছে, সুতরাং চিন্তার কোন কারন নেই।”
অনুপমাঃ “দীপঙ্করদা একবার আমাকে বলছিল যে বাইরের কিছু প্রোজেক্ট এলে ভালো হয়। সেই নিয়ে বাবার সাথে আমার গত রাতে কথা হচ্ছিল। বাবা আমাকে বলল যে অনিমেশ আঙ্কেলের ছেলে ইন্দ্রনীল নাকি আমাদের কোম্পানিতে জয়েন করতে চায়।”
দেবায়নঃ “ইন্দ্রনীল? মানে যার সাথে তোমার একসময়ে...”
অনুপমা হেসে ফেলে, “হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ। ওই ইন্দ্রনীলের সাথে বাবা আমার এনগেজমেন্ট ঠিক করেছিল। যাইহোক সেটা পুরানো ব্যাপার, ওই নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। ইন্দ্রনীল নাকি আমাদের ওভারসিস বিজনেস দেখবে।”
দেবায়ন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “ইন্দ্রনীল আমাদের কোম্পানি জয়েন করবে এই কথা আমাকে এতদিন কেন জানায়নি কাকু?”
অনুপমাঃ “আমি ঠিক এই কথা বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। বাবা বললেন যে, ওই কথা নাকি একদম মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিল। তোমার সাথে নাকি এই নিয়ে আলোচনা করতো পরে। মানে তুমি আর বাবা যখন ওই বিন্সারের রিসোর্ট কিনতে যাবে তখন তোমার সাথে এই নিয়ে আলোচনা করতো। যাই বল, এই পদক্ষেপ আমার ঠিক ভালো বলে মনে হচ্ছে না।”
দেবায়নঃ “কারন?”
অনুপমা, “তুমি বলেছিলে যে, কন্সট্রাক্সান কোম্পানির ভি.সি জোগাড় করতে অনিমেশ আঙ্কেল হেল্প করেছিল। এখন আবার ওর ছেলে আমাদের কোম্পানি জয়েন করতে চায়। অনিমেশ আঙ্কেলের আসল উদ্দেশ্যটা কি?”
শ্রেয়া চাপা গলায় বলে, “আমাদের দরকার তাই এসেছে আমাদের কাছে। কিন্তু পনেরো হতেই পারে।”
শ্রেয়ার কথা শুনে দেবায়ন বলতে যাচ্ছিল যে তুই না হলে আমি অন্য কাউকে দেখে নেব। অনুপমা দেবায়নের হাতে চিমটি কেটে চুপ করে যেতে বলে। সূর্য মনিদিপার সময়ে, পায়েলের সময়ে শ্রেয়া ওর পাশে দাঁড়িয়েছিল। একটা ভালো বান্ধবীকে হারাতে চায় না অনুপমা। অনুপমা তাই কথা না বাড়িয়ে বলে, “ওকে বাবা, পনেরো দেবো। এবারে শান্তি? কিন্তু এখুনি পনেরো দিতে পারছি না। দুই বছর যাক তারপরে পারসেন্টেজ বাড়িয়ে দেবো।”
রূপক শ্রেয়াকে শান্ত করে বলে, “তুমি না একদম যাতা। আগে কোম্পানি শুরু হোক, টাকা আসুক তারপরে।” দেবায়নকে বলে, “ভাই তুই যা ভালো বুঝিস সেটা করিস। ওর কথায় বেশি কান দিস না।”
রূপকের কথায় শ্রেয়া একটু আহত হয়। ভেবেছিল রূপক ওর হয়ে কথা বলবে। শ্রেয়ার চেহারায় কালো মেঘের ছায়া দেখে অনুপমা বড় ব্যাথা পায়। বান্ধবী ভেবে ওর সাথে কাজের কথা ভেবেছিল, ভাবেনি যে এর মধ্যেই বিজনেসের প্যাঁচ চলে আসবে। রূপক অনুপমার চোখের ভাষা পড়ে কথা ঘুরিয়ে অন্য কথা বলতে শুরু করে।
এরপরে একদিন রূপকের সাথে দেবায়ন আর অনুপমা রাসেল স্ট্রিটের অফিস দেখতে যায়। চার হাজার স্কোয়ার ফিটের বেশ বড় অফিস। একই বিল্ডিংয়ে মিস্টার সেনের কন্সট্রাক্সান কোম্পানি। জায়গা দেখার পরে মিস্টার সেনের সাথে কথা বলে ভাড়া এবং বাকি কাজ সেরে ফেলে। এবারে কথা ওঠে লোকজন যোগাড়ের। দেবশ্রী বলেছিল শান্তনু আর মনীষার কথা। দেবশ্রী ওদের দিল্লী থেকে ডেকে পাঠায়। শান্তনু আর মনীষার সাথে দেখা করে সবাই। দেবশ্রী ওদের দেখে ভারী খুশি হয়। মনীষা এইচ.আরের ভার গ্রহন করে আর শান্তনু এডমিন দেখে। শান্তনুর ঘাড়ে অফিস সাজানোর দায়িত্ব পড়ে। ইলেক্ট্রিকের কাজ, কেবিন, ফারনিচার ইতাদ্যির কাজ শুরু হয়। পাঁচখানা কেবিন, একটা বড় কনফারেন্স হলো আর একশ জনের মতন বসার জায়গা করা ঠিক করা হয়। ইতিমধ্যে অনুপমা আর দেবায়নের যৌথ একাউন্টে মিস্টার সেন কুড়ি কোটি টাকা দিয়ে বলেন, ওদের ভবিষ্যৎ এবারে ওদের হাতে, এই টাকা যেন বিচার বিবেচনা মতন খরচ করা হয়। একটা বড় ব্যাঙ্কে কোম্পানি একাউন্ট খোলা হয়। মিস্টার সেন তাঁর অফিসের একাউন্টসের সুজিতকে নিযুক্ত করে অনুপমার কোম্পানির একাউন্টস দেখার জন্য। মারকেটিংয়ের জন্য দেবশ্রী পুরানো অফিসের দীপঙ্কর সরকারকে অফার দেয় দেবায়নের কোম্পানিতে জয়েন করতে।
ইতিমধ্যে রূপক ওর কলেজের সিনিয়ারদের সাথে আলাপ আলোচনা করে একটা প্রোজেক্ট প্ল্যান তৈরি করে কোম্পানির জন্য। কি ভাবে ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের কাজ হবে, কি কি সফটওয়্যার লাগবে, ইত্যাদি। রূপক আর দেবায়ন সেই প্রোজেক্ট প্ল্যান মাকে দেখায়। দেবশ্রী ছেলে মেয়েদের উৎসাহ উদ্দিপনা দেখে খুশি হয়ে বলেন যে তাঁর আশীর্বাদ সবসময়ে ওদের সাথে আছে। কোম্পানির একটা নাম ঠিক করা হয় আর কাজের জন্য লোক নিযুক্ত করা শুরু হয়। ওরা চারজনে ঠিক করে যে পুজোর আগেই কোম্পানির কাজ শুরু করে দেবে। সেই মতন বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনার সাথে কাজ শুরু হয়। অফিস সাজানো, ফার্নিচার, ইত্যাদিতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। ছোটো অফিস, পুজোর আগেই ভরে ওঠে লোকে। রূপকের তত্ত্বাবধানে থাকে টেকনিকাল, শ্রেয়া নামেই ডাইরেক্টর। অনুপমা আর দেবায়নের ঘাড়ে সব কিছু দেখার ভার এসে পড়ে। দেবায়ন বুঝতে পারে যে ভবিষ্যতে শ্রেয়াকে নিয়ে কোম্পানির মধ্যে একটা গণ্ডগোল পাকাতে পারে। ওদের কম্পিউটার শিক্ষিকা মিস সুপর্ণা চ্যাটারজির কথা মাথায় আসে। অনুপমা আর দেবায়ন, সুপর্ণাকে অনুরোধ করে ওদের কোম্পানিতে জয়েন করার জন্য। দেবায়নের কথা শুনে সুপর্ণা যেন আকাশ থেকে পড়ে। অনুপমা সুপর্ণাকে রাজি করায়, ম্যাডাম অনেকদিন থেকে কম্পিউটার ফিল্ডে আছে, তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চায়। সুপর্ণা ওদের কোম্পানিতে সি.টি.ও হিসাবে জয়েন করে।
পুজোর আগেই ওদের ছোটো কোম্পানিতে কাজ শুরু হয়ে যায়। প্রথম দিনে, সব বন্ধুদের ডাকে। দেবায়ন আর অনুপমার সাথে সাথে রূপক আর শ্রেয়ার পরিবারের সকলে উপস্থিত। দেবশ্রী আর পারমিতা বেশ খুশি, ছেলে মেয়ে নিজের চেষ্টায় একটা বড় পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই দাঁড় করাতে চেষ্টা করছে।
ওদের এই সফটওয়্যার ফার্মে ছোটো ছোটো কাজ আসতে শুরু হয়। প্রথম কয়েক মাস সবাই কাজে ডুবে যায়। একদিন মিস্টার সেন দেবায়নকে ডেকে বলেন যে ওকে এই সফটওয়্যার ফার্ম ছেড়ে হোটেলের দিকে একটু নজর দিতে হবে। সফটওয়্যার ফার্মের পরিচালনা করার জন্য অনেক লোকজন আছে। হোটেল বিজনেসের ব্যাপারে দেয়ায়ন শুধুমাত্র অনুপমাকে জানিয়ে রেখেছিল।
কাঁচের দরজার পেছনে বসে দেবায়ন, সামনে বড় টেবিল একটা ল্যাপটপ। ঘষা কাঁচের দরজায় ওর পোস্ট লেখা, অপারেশান ম্যানেজার। কোনদিন স্বপ্নে ভাবেনি এতো তাড়াতাড়ি নিজের একটা কোম্পানি হয়ে যাবে। স্বপ্ন সাকার হবার পরে দেবায়নের সাথে সাথে অনুপমা বেশ খুশি। সামনে ল্যাপটপ খোলা। ডিসেম্বরের ঠাণ্ডা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায় তাই অফিসে আসতে দেরি হয়ে যায়। অফিসে ঢুকে নিজের মেল দেখে একটু চুপচাপ বসে। টেবিলে ওর মায়ের আর অনুপমার ছবি। ধনোলটি গিয়ে মায়ের সাথে অনুপমার একটা ছবি তুলেছিল। ওর জীবনের সব থেকে বড় দুই স্থম্ভকে দেখে, হবু বৌমা তাঁর মামনিকে জড়িয়ে ধরে। এমন সময়ে অনুপমা কাঁচের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে।
অনুপমা চেয়ারে বসে বলে, “তোমার সাথে খুব জরুরি কথা আছে।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “কার কি হলো আবার? শ্রেয়া কিছু বলেছে? পায়েলের কিছু হয়েছে?”
অনুপমাঃ “না এসব কথা নয়। বাবা কালকে আমাকে বলছিল যে তুমি নাকি পরের মাস থেকে বাইরে যাবে ওই হোটেলের কাজে?”
দেবায়নঃ “হ্যাঁ। এর পর থেকে এইখানে আমার কাজ একটু একটু করে কমাতে হবে। তুমি এই অপারেশান দেখবে আর সুপর্ণা ম্যাম আছেই তোমাকে হেল্প করার জন্য। রুপক টেকনিক্যালে আছে, সুতরাং চিন্তার কোন কারন নেই।”
অনুপমাঃ “দীপঙ্করদা একবার আমাকে বলছিল যে বাইরের কিছু প্রোজেক্ট এলে ভালো হয়। সেই নিয়ে বাবার সাথে আমার গত রাতে কথা হচ্ছিল। বাবা আমাকে বলল যে অনিমেশ আঙ্কেলের ছেলে ইন্দ্রনীল নাকি আমাদের কোম্পানিতে জয়েন করতে চায়।”
দেবায়নঃ “ইন্দ্রনীল? মানে যার সাথে তোমার একসময়ে...”
অনুপমা হেসে ফেলে, “হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ। ওই ইন্দ্রনীলের সাথে বাবা আমার এনগেজমেন্ট ঠিক করেছিল। যাইহোক সেটা পুরানো ব্যাপার, ওই নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। ইন্দ্রনীল নাকি আমাদের ওভারসিস বিজনেস দেখবে।”
দেবায়ন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “ইন্দ্রনীল আমাদের কোম্পানি জয়েন করবে এই কথা আমাকে এতদিন কেন জানায়নি কাকু?”
অনুপমাঃ “আমি ঠিক এই কথা বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। বাবা বললেন যে, ওই কথা নাকি একদম মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিল। তোমার সাথে নাকি এই নিয়ে আলোচনা করতো পরে। মানে তুমি আর বাবা যখন ওই বিন্সারের রিসোর্ট কিনতে যাবে তখন তোমার সাথে এই নিয়ে আলোচনা করতো। যাই বল, এই পদক্ষেপ আমার ঠিক ভালো বলে মনে হচ্ছে না।”
দেবায়নঃ “কারন?”
অনুপমা, “তুমি বলেছিলে যে, কন্সট্রাক্সান কোম্পানির ভি.সি জোগাড় করতে অনিমেশ আঙ্কেল হেল্প করেছিল। এখন আবার ওর ছেলে আমাদের কোম্পানি জয়েন করতে চায়। অনিমেশ আঙ্কেলের আসল উদ্দেশ্যটা কি?”