কিছু তথ্য আমার জানা ছিলো না, তা আজ জানলাম, তবে যদি বাংলা উচ্চারণ সহ লিখতেন তবে যারা আরবি পড়তে পারেনা তাদের জন্য একটু সহজ হতো, ভালো লেখার জন্য ধন্যবাদ ।
পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, মামা। আরবি এমন একটা ভাষা, যার উচ্চারনের সাথে অর্থের ভিন্নতা সম্পৃক্ত। প্রায় একই রকম শব্দ শুধু উচ্চারনের ভিন্নতার কারনে পজেটিভ থেকে নেগেটিভ হয়ে যেতে পারে। উদহারন স্বরূপ "লা " শব্দটিই যদি ধরেন তবে এটি যদি লম্বা টানে পড়েন তবে এর অর্থ হবে "না " আবার যদি স্বাভাবিক টানে পড়েন তবে এর অর্থ হবে " নিশ্চয় " আমাদের পবিত্র কালিমার শুরুর কথাটাই বিবেচনা করুন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ... এর অর্থ হচ্ছে "নাই কোনো মা'বুদ আল্লাহ ছাড়া " এখানে "লা " শব্দটি লম্বা টানে পড়ার কারনেই অর্থ হয়েছে " নাই " আবার যদি এই "লা " শব্দটা স্বাভাবিক উচ্চারনে পড়া হতো, তবে তার অর্থ দাঁড়াতো "অবশ্যই আল্লাহ ছাড়া মাবুদ আছে " !! এবার বুঝুন, শুধু মাত্র উচ্চারনের কারনে অর্থের কতোটা ভিন্নতা চলে আসে। সে কারনেই সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদে অতি প্রয়োজন ছাড়া আরবি শব্দের বাংলা উচ্চারন দেয়াটা আমি যৌক্তিক মনে করিনি। তবে আপনার মন্তব্যটা খুবই ভালো হয়েছে। সে জন্য আপনাকে আবারো ধন্যবাদ, মামা !
(খ) পেশাব করার সময় ডান হাত দ্বারা পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করা :
عَنْ أَبِيْ قَتَادَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : إِذَا شَرِبَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَتَنَفَّسْ فِي الإِنَاءِ، وَإِذَا أَتَى الْخَلاَءَ فَلاَ يَمَسَّ ذَكَرَهُ بِيَمِيْنِهِ، وَلاَ يَتَمَسَّحْ بِيَمِيْنِهِ.
আবু কাতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন পান করে, তখন সে যেন পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়ে। আর যখন শৌচাগারে যায়, তখন তার পুরুষাঙ্গ যেন ডান হাত দিয়ে স্পর্শ না করে এবং ডান হাত দিয়ে শেŠচকার্য না করে’। (বুখারী, ‘ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য করা নিষেধ’ অনুচ্ছেদ, হা/১৫৩; বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ১/৮৬।)
অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ قَتَادَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ : إِذَا بَالَ أَحَدُكُمْ فَلاَ يَأْخُذَنَّ ذَكَرَهُ بِيَمِيْنِهِ، وَلاَ يَسْتَنْجِيْ بِيَمِيْنِهِ، وَلاَ يَتَنَفَّسْ فِي الإِنَاءِ.
আবু কাতাদাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তোমাদের কেউ যখন পেশাব করে তখন সে যেন কখনো ডান হাত দিয়ে তার পুরুষাঙ্গ না ধরে এবং ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য না করে এবং পান করার সময় যেন পাত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস না ছাড়ে’। (বুখারী, ‘ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য করা নিষেধ’ অনুচ্ছেদ, হা/১৫৪; বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ১/৮৭।)
‘তোমরা অভিশপ্ত দুই ব্যক্তি হ’তে বেঁচে থাক’। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! অভিশপ্ত দুই ব্যক্তি কে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘যে ব্যক্তি লোকজনের চলাচলের রাস্তায় এবং তাদের ছায়ায় পেশাব-পায়খানা করে’। (মুসলিম, ‘রাস্তায় পেশাব-পায়খানা করা নিষেধ’ অনুচ্ছেদ, হা/২৬৯।)
(ঘ) পেশাব-পায়খানা করা অবস্থায় কুরআন তেলাওয়াত করা অথবা কুরআন নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করা :
কুরআন আল্লাহর কালাম বা কথা, যা অন্যান্য সকল কালাম অপেক্ষা ফযীলতপূর্ণ ও সম্মানিত।
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি নবী করীম (ছাঃ)-এর ওযূ ও ইস্তিন্জার ব্যবহারের জন্য পানি ভর্তি পাত্র নিয়ে পিছনে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ তিনি তাকিয়ে বললেন, কে? আমি বললাম, আমি আবু হুরায়রাহ। তিনি বললেন, আমাকে কয়েকটি পাথর তালাশ করে দাও। আমি তা দিয়ে ইস্তিন্জা করব। তবে হাড্ডি ও গোবর আনবে না। আমি আমার কাপড়ের কিনারায় কয়েকটি পাথর এনে তাঁর কাছে রেখে দিলাম এবং আমি সেখান থেকে কিছুটা দূরে গেলাম। তিনি যখন ইস্তিন্জা হ’তে বের হ’লেন, তখন আমি এগিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হাড্ডি ও গোবরের ব্যাপার কি? তিনি বললেন, এগুলো জিনের খাবার। আমার কাছে নাছীবীন নামক জায়গা হ’তে জিনের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তারা ভাল জিন ছিল। তারা আমার কাছে খাদ্যদ্রব্যের আবেদন জানাল। তখন আমি আল্লাহ্র নিকট দো‘আ করলাম যে, যখন কোন হাড্ডি বা গোবর তারা লাভ করে তখন তারা যেন তাতে খাদ্য পায়। (বুখারী, ‘জিনদের উল্লেখ’ অনুচ্ছেদ, হা/৩৮৬০; বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ৩/৬১৭।)
অত্র হাদীছ হ’তে জানা যায় যে, পাথর বা তার বিকল্প জিনিস যথা- ঢিলা, টিস্যু, কাগজ ইত্যাদি দিয়ে ইস্তিন্জা করা বৈধ। অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ أَنَّهُ سَمِعَ جَابِرًا يَقُوْلُ نَهَى رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يُتَمَسَّحَ بِعَظْمٍ أَوْ بِبَعْرٍ.
আবু যুবাইর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি জাবের (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ করেছেন হাড্ডি ও গোবর দ্বারা ইস্তিন্জা করতে’। (মুসলিম, হা/২৬৩।)
উকবা ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘কোন মুসলমানের কবরের উপর দিয়ে আমার হেঁটে যাওয়া অপেক্ষা জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর দিয়ে অথবা তরবারির উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া অথবা আমার জুতাজোড়া আমার পায়ের সাথে সেলাই করা আমার নিকট অধিক প্রিয়। কবরস্থানে পায়খানা করা এবং বাজারের মাঝখানে পায়খানা করার মধ্যে আমি কোন পার্থক্য দেখি না’। (ইবনু মাজাহ, হা/১৫৬৭, নাছিরুদ্দীন আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন। দ্রঃ ইরওয়াউল গালীল ১/১০২।)
পেশাব-পায়খানাকারীর জন্য মাকরূহ বা অপসন্দনীয় কাজ সমূহ :
(ক) খোলা জায়গায় প্রবাহিত বাতাসের বিপরীত মুখে পেশাব করতে বসা :
কেননা তাতে পেশাব শরীরে লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
(খ) পেশাব-পায়খানা করা অবস্থায় সালাম ও উত্তর দেওয়া :
عَنِ ابْنِ عُمَرَ أَنَّ رَجُلاً مَرَّ وَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَبُوْلُ فَسَلَّمَ فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيْهِ.
ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, এক ব্যক্তি পথ চলছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পেশাব করছিলেন। অতঃপর ঐ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সালাম দিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কোন উত্তর দিলেন না’। (মুসলিম, ‘তায়াম্মুম’ অনুচ্ছেদ, হা/৩৭০।)
(গ) কোন ছিদ্র বা গর্তে পেশাব করা :
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَرْجِسَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى أَنْ يُبَالَ فِى الْجُحْرِ. قَالَ قَالُوْا لِقَتَادَةَ مَا يُكْرَهُ مِنَ الْبَوْلِ فِى الْجُحْرِ قَالَ كَانَ يُقَالُ إِنَّهَا مَسَاكِنُ الْجِنِّ.
আব্দুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) গর্তে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, তারা কাতাদাকে জিজ্ঞেস করল, গর্তে পেশাব করা অপসন্দের কারণ কি? তিনি বললেন, বলা হয়ে থাকে এটা জিনদের আবাস স্থল। ( আবু দাউদ, হা/২৯, নাসাঈ, হা/৩৪; হাফেয ইবনে হাজার হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন। দ্রঃ তালখীছুল হাবীর ১/১০৬।) অতএব জিন অথবা অন্য কোন প্রাণীর আবাসস্থল হ’লে তারা কষ্ট পাবে।
(ঘ) কোন যরূরী প্রয়োজন ছাড়া এমন কিছু নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করা মাকরূহ বা অপসন্দনীয় যাতে আল্লাহর নাম লিখা আছে।
কেননা তাতে আল্লাহ নামের অসম্মান করা হয়।
পক্ষান্তরে যদি যরূরী প্রয়োজনে কেউ আল্লাহর নাম লিখা আছে এমন জিনিস নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করে তাহ’লে তাতে কোন সমস্যা নেই। যেমন- টাকার উপরে যদি আল্লাহর নাম লিখা থাকে, তাহ’লে তা নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করলে কোন সমস্যা নেই। কেননা তা বাইরে রেখে প্রবেশ করলে হারিয়ে যাওয়ার অথবা ভুলে যাওয়ার আশংকা থাকে। তবে কুরআন নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করা তা প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক, হারিয়ে যাওয়ার বা ভুলে যাওয়ার আশংকা থাকুক বা নাই থাকুক তা হারাম।