তিনি অন্যত্র বলেছেন, وَأَنْزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً طَهُوْرًا ‘আর আমি আকাশ থেকে পবিত্র পানি বর্ষণ করেছি’ (ফুরক্বান ৪৮)। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: سَأَلَ رَجُلٌ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّا نَرْكَبُ الْبَحْرَ وَنَحْمِلُ مَعَنَا الْقَلِيْلَ مِنَ الْمَاءِ فَإِنْ تَوَضَّأْنَا بِهِ عَطِشْنَا أَفَنَتَوَضَّأُ بِمَاءِ الْبَحْرِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم هُوَ الطَّهُوْرُ مَاؤُهُ الْحِلُّ مَيْتَتُهُ-
আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা সমুদ্রে (নৌকায়) আরোহণ করেছি এবং আমরা সঙ্গে অল্প কিছু পানি নিয়েছি। যদি আমরা সেই পানি দ্বারা ওযূ করি তাহ’লে আমরা পিপাসিত হব। অতএব আমরা কি সমুদ্রের পানি দ্বারা ওযূ করতে পারি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তার (সমুদ্রের) পানি পবিত্র এবং তার মধ্যেকার মৃত হালাল। (আবু দাউদ হা/৮৩; তিরমিযী হা/৬৯; নাসাঈ হা/৫৯; ইবনু মাজাহ হা/৩২৪৬।)
(খ) طَاهِرٌ (ত্বাহের): অর্থাৎ যে পানি নিজে পবিত্র। কিন্তু অন্যকে পবিত্র করতে পারে না। যেমন- পেপসি, ফলের জুস, দুধ মিশানো পানি ইত্যাদি। এগুলো নিজে পবিত্র কিন্তু কোন অপবিত্রকে পবিত্র করতে পারে না। অর্থাৎ এগুলো দ্বারা ওযূ বৈধ নয় এবং শরীরে কোন নাপাকী লেগে গেলে এগুলো দ্বারা ধৌত করাও বৈধ নয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَى أَوْ عَلَى سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لاَمَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوْا مَاءً فَتَيَمَّمُوْا صَعِيْدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوْا بِوُجُوْهِكُمْ وَأَيْدِيْكُمْ مِنْهُ-
‘আর যদি অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা যদি তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা যদি স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত তা দ্বারা মাসেহ কর’ (মায়েদা ৬)। অতএব যদি পানি ব্যতীত জুস, পেপসি ইত্যাদি দ্বারা ওযূ জায়েয হ’ত তাহ’লে পানি না পেলে আল্লাহ তা‘আলা সরাসরি মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করার নির্দেশ দিতেন না। বরং পানি জাতীয় জিনিস দ্বারা ওযূ করার নির্দেশ দিতেন।
(ঘ) نجس (নাজাস): অর্থাৎ যে পানি নিজে পবিত্র নয় এবং অন্যকেও পবিত্র করতে পারে না। এমন পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা জায়েয নয়।
পানির সাথে অপবিত্র বস্ত্তর মিশ্রণ হ’লে তার হুকুম :
পানি কম হোক কিংবা বেশী হোক তার সাথে অপবিত্র বস্ত্তর মিশ্রণের ফলে যদি রং, স্বাদ ও গন্ধ এই তিনটি গুণের কোন একটির পরিবর্তন হয়, তাহ’লে সেই পানি অপবিত্র হয়ে যাবে। এই পানি ব্যবহার করা জায়েয নয় এবং তা অন্যকে পবিত্র করতেও সক্ষম নয়। পক্ষান্তরে যদি রং, স্বাদ ও গন্ধ এই তিনটি গুণের সবগুলি ঠিক থাকে তাহ’লে তা পবিত্র বলে গণ্য হবে এবং তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّا نَتَوَضَّأُ مِنْ بِئْرِ بُضَاعَةَ وَهِيَ يُلْقَى فِيْهَا الْحِيْضُ وَلُحُوْمُ الْكِلاَبِ وَالنَّتْنُ فَقَالَ إِنَّ الْمَاءَ طَهُوْرٌ لاَ يُنَجِّسُهُ شَيْءٌ- আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাঃ)! আমরা কি ‘বুযাআ’ কূপের পানি দ্বারা ওযূ করতে পারি? অথচ তা এমন একটি কূপ, যাতে হায়েযের নেকড়া, মরা কুকুর ও পূতিগন্ধময় আবর্জনা নিক্ষিপ্ত হয়ে থাকে। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, পানি পবিত্র, কোন জিনিসই তাকে অপবিত্র করতে পারে না। (মুসনাদে আহমাদ ৩/১৫; আবু দাউদ হা/৬১; নাসাঈ হা/২৭৭; মিশকাত হা/৪৪৮; বঙ্গানুবাদ, এমদাদিয়া ২/১১৫।)
না, কথাটা ঠিক নয় ! সেক্স করার পর স্বামী-স্ত্রী উভয়েরই গোসল ফরয হয়ে যায়। আর যতোক্ষন পর্যন্ত ফরয গোসল সম্পন্ন করা না হবে, ততোক্ষন পর্যন্ত নামায আদায় করা যাবে না। আর ফরয গোসলের জন্য সমস্ত শরীর ধৌত করতে হবে। চুলের গোড়া থেকে নিয়ে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অংশে পানি ধারা ধৌত করার নামই হচ্ছে ফরয গোসল। যদিও এই কার্যক্রমের সুনির্দিস্ট একটা নিয়ম পদ্ধতি আছে। সুন্দর প্রশ্নের জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, মামা।
পানির সাথে যদি কোন পবিত্র বস্ত্তর মিশ্রণ হয়। যেমন- বৃক্ষের পাতা, সাবান, কুল বা বরই ইত্যাদি এবং রং, স্বাদ, গন্ধ এই তিনটি গুণের সবগুলোই ঠিক থাকে তাহ’লে তা পবিত্র বলে গণ্য হবে এবং তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ। কিন্তু যদি উলিলখি তিনটি গুণের কোন একটি নষ্ট হয়ে যায় তাহ’লে সেই পানি طَاهِرٌ তথা পবিত্র বটে কিন্তু তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ নয়। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أُمِّ عَطِيَّةَ الأَنْصَارِيَّةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا قَالَتْ دَخَلَ عَلَيْنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم حِيْنَ تُوُفِّيَتِ ابْنَتُهُ فَقَالَ اغْسِلْنَهَا ثَلاَثًا أَوْ خَمْسًا أَوْ أَكْثَرَ مَنْ ذَلِكَ إِنْ رَأَيْتُنَّ ذَلِكَ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ وَاجْعَلْنَ فِي الآخِرَةِ كَافُورًا أَوْ شَيْئًا مِنْ كَافُوْرٍ- উম্মু আতিয়্যাহ আনছারী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কন্যা যায়নাব (রাঃ) মৃত্যুবরণ করলে তিনি আমাদের নিকট এসে বললেন, তোমরা তাঁকে তিনবার বা পাঁচবার বা প্রয়োজন মনে করলে তার চেয়ে অধিকবার বরই পাতাসহ পানি দিয়ে গোসল দাও। শেষবারে কর্পুর বা কিছু কর্পুর ব্যবহার করবে...। ( বুখারী ‘বরই পাতার পানি দিয়ে মৃতকে গোসল ও ওযূ করানো’ অনুচ্ছেদ, হা/১২৫৩, বাংলা অনুবাদ, তাওহীদ পাবলিকেশন্স ২/৮।) অত্র হাদীছ প্রমাণ করে যে, পবিত্র বস্ত্তর মিশ্রণে পানি অপবিত্র হয় না।
(ক) যদি কোন অপবিত্র বস্ত্তকে জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করে পানি গরম করা হয়। অর্থাৎ যদি কেউ গাধা বা ঘোড়ার পায়খানা জমা করে এবং তাকে জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করে পানি গরম করে এবং পাত্রের মুখ খোলা থাকে, তাহ’লে তা মাকরূহ বা অপসন্দনীয়। কেননা অপবিত্র বস্ত্ত নিসৃত ধোঁয়া ঐ পানিতে পতিত হওয়ার ফলে তার গন্ধ পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে পক্ষান্তরে যদি পাত্রের মুখ বন্ধ করা থাকে, তাহ’লে তাতে কোন সমস্যা নেই। (শারহুল মুমতে আলা যাদিল মুসতাকনি ১/৩৩-৩৪।)
(খ) যদি কোন পবিত্র বস্ত্তকে জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করে পানি গরম করে অথবা সূর্যের তাপে পানি গরম করে, তাহ’লে তাতে কোন সমস্যা নেই। (শারহুল মুমতে আলা যাদিল মুসতাকনি ১/৩৫।)