What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মনীষী চরিতঃ আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর (2 Viewers)

এ ঘটনার পর আল্লামা যহীরও তাঁর বন্ধুরা বাহাইয়াদের মাহফিল, খৃষ্টানদের ইনস্টিটিউট সমূহ এবং কাদিয়ানীদের কেন্দ্র সমূহে যাতায়াতের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। এমনকি তিনি কাদিয়ানীদের কেন্দ্র ‘রাবওয়া’তে গিয়েও তাদের সাথে বিতর্ক করে বিজয়ী হন। (আল-কাদিয়ানিয়্যাহ, পৃঃ ৮-৯।)পরবর্তীতে তিনি প্রত্যেক সপ্তাহের বৃহস্পতিবার শিয়ালকোটে যেতেন এবং কাদিয়ানী সেন্টারে গিয়ে তাদের সাথে বিতর্ক করতেন ও তাদের বইপত্র সংগ্রহ করে আনতেন। (ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত পৃঃ ২১৭।)
মাধ্যমিক স্তরে পড়াশুনা করার সময় একদিন তিনি বাহাইয়াদের একটি সভার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। বক্তারা আক্বীদা সম্পর্কিত একটি বিষয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তিনি সেই সভায় গিয়ে তাদের বক্তব্য শুনেন। ইতিপূর্বে তাদের সম্পর্কে তাঁর কোন ধারণাই ছিল না। তিনি ৮ দিন ঐ সভায় গিয়ে তাদের বক্তব্য শুনে তাদের আক্বীদা ও ত্রুটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে অবগত হন এবং জনগণকে এবিষয়ে সজাগ করেন। ফলে সেই সভা বন্ধ করে দেয়া হয়। (‘আল-আরাবিয়্যাহ’, সঊদী আরব, সংখ্যা ৮৭, রবীউছ ছানী, ১৪০৫ হিঃ, পৃঃ ৯১।)
দেশে লেখাপড়া শেষ করার পর আল্লামা যহীর উচ্চ শিক্ষার জন্য মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে ধর্মতত্ত্বে শিক্ষকদের জ্ঞানের অপ্রতুলতা লক্ষ্য করে তিনি এ বিষয়ে লেখালেখি শুরু করেন। সেখানে অধ্যয়নকালেالقاديانيةعمليةللاستعمارশিরোনামে আরবীতে প্রথম তাঁর একটি প্রবন্ধ দামেশকের ‘হাযারাতুল ইসলাম’ পত্রিকার ১৩৮৬ হিজরীর তৃতীয় সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এ প্রবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিদ্বানমহলে সাড়া পড়ে যায়। বন্ধু-বান্ধব ও শিক্ষকবৃন্দ তাঁকে কাদিয়ানীদের সম্পর্কে এ জাতীয় প্রবন্ধ লেখার জন্য উৎসাহিত করেন। ফলে তিনি আরবীতে এ বিষয়ে প্রবন্ধ লেখা অব্যাহত রাখেন। (আল-কাদিয়ানিয়্যাহ, পৃঃ ৯-১০।)মদীনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরে তিনি দ্বীনের প্রচার-প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন। এসময় তিনি বক্তৃতা জগতে সুদৃঢ়ভাবে পদচারণা অব্যাহত রাখেন এবং বিভিন্ন বাতিল ফিরকার ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাস জনসম্মুখে তুলে ধরা তাঁর বক্তব্যের অবিচ্ছেদ্য উপজীব্য হয়ে দাঁড়ায়। সেজন্য বক্তব্যের প্রয়োজনে তাঁকে এ বিষয়ে ব্যাপক পড়াশুনা করতে হয় বলে মাহবূব জাবেদকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন। (মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৪৬-৪৭।)
 
ধর্মতত্ত্বের উপর বক্তৃতা দেয়া ও লেখালেখির জন্য প্রচুর পড়াশুনার প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে বাতিল ফিরকাগুলোর আক্বীদা বিশ্লেষণ এবং দলীল ও যুক্তিভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে সেগুলোর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়ার জন্য। আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীরের মধ্যে এই গুণ পুরামাত্রায় বিদ্যমান ছিল। তিনি ছাত্র জীবনেই কাদিয়ানীদের সম্পর্কে বইপত্র পড়া শুরু করেন। যেমন ‘আল-কাদিয়ানিয়্যাহ’ গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি বলেন, فدرستهذهالحركةأثناءدراستيفيالمدارسالشرعية،بواسطةكتبشيخالإسلامالعلامةثناءاللهالأمرتسري،وإمامعصرهالشيخمحمدإبراهيمالسيالكوتي،وشيخناالجليلالعلامةالمحدثالحافظمحمدجوندلوي،وغيرهممنالعلماء. ‘ইসলামিয়া মাদরাসাগুলোতে পড়াশুনা করার সময় শায়খুল ইসলাম আল্লামা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী, স্বীয় যুগের ইমাম শায়খ মুহাম্মাদ ইবরাহীম শিয়ালকোটী, আমাদের সম্মানিত শায়খ আল্লামা মুহাদ্দিছ হাফেয মুহাম্মাদ গোন্দলবী ও অন্যান্য আলেমদের বইপত্রের বদৌলতে আমি এই আন্দোলন সম্পর্কে অধ্যয়ন করি’। (আল-কাদিয়ানিয়্যাহ, পৃঃ ৭।) তিনি গবেষণার ক্ষেত্রে পরিশ্রমকে মোটেই ভয় পেতেন না। ‘আল-ব্রেলভিয়া’ শীর্ষক গ্রন্থটি লেখার জন্য তিনি তিন শতাধিক বই অধ্যয়ন করেন। (ইহসান ইলাহী যহীর, আল-ব্রেলভিয়া আকাইদ ওয়া তারীখ (লাহোর : ইদারাতু তারজুমানিস সুন্নাহ, ৬ষ্ঠ সংস্করণ, ১৪০৪ হিঃ/১৯৮৪ খৃঃ), পৃঃ ১১।)
তাঁর একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরী ছিল। নানাবিধ কর্মব্যস্ততার মাঝে তিনি যখনই সময় পেতেন তখনই এই লাইব্রেরীতে বসে জ্ঞানসমুদ্রের মণি-মাণিক্য আহরণে মশগুল হয়ে যেতেন। মাহবূব জাবেদকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি যখনই অবসর সময় পাই তখনই সেই সময়টুকু আমার বাড়ির লাইব্রেরীতে কাটাই। আমার ব্যক্তিগত লাইব্রেরীতে বিভিন্ন ফিরকার উপর পৃথিবীর যেকোন বড় লাইব্রেরীর চেয়ে বেশী বই আছে। আমার ব্যক্তিগত লাইব্রেরীতে হাযার হাযার বই মজুদ রয়েছে। এগুলো সবই আমি অধ্যয়ন করেছি। আপনি এটা জেনে আশ্চর্য হবেন যে, আমি ৩/৪ ঘণ্টা ঘুমাই। সারাজীবন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৪ ঘণ্টার বেশী আমি কখনো ঘুমাইনি। যখন পৃথিবী ঘুমের সাগরে ডুবে থাকে, তখন আমি আমার লাইব্রেরীতে অবস্থান করি। আমি আমার বিবিধ কর্মব্যস্ততার মাঝেও কাগজ-কলমের সাথে যোগসূত্র বজায় রেখে আসছি’। (মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৫০।)
 
কাদিয়ানী, শী‘আ, বাহাইয়া, বাবিয়া, ব্রেলভী, ইসমাঈলিয়া, ছূফী প্রভৃতি ভ্রান্ত ফিরকাগুলোর ধ্যান-ধারণা জনসম্মুখে তুলে ধরে ইসলামের নির্মল রূপ প্রকাশ করাই তাঁর ধর্মতত্ত্ব গবেষণার মূল উদ্দেশ্য ছিল। কাউকে সন্তুষ্ট, ক্রুদ্ধ অথবা স্রেফ গবেষণার জন্য তাঁর লেখালেখি পরিচালিত হয়নি। তিনি বলেছেন, ‘আমি কঠোর পরিশ্রম করে বিভিন্ন ফিরকার উপর প্রামাণ্য বইপত্র লেখার চেষ্টা করেছি। ধর্মতত্ত্বের উপর বই লিখে আমি ইসলামের খিদমত করেছি; বিভেদ সৃষ্টি করিনি। ভ্রান্ত ফিরকাগুলোর আক্বীদা বর্ণনা করেছি মাত্র। মানুষকে রাসূল (ছাঃ) আনীত ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তন করার এবং ইসলামকে স্রেফ কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিতে দেখার জন্য উৎসাহ যুগিয়েছি’। (মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৪৮।) তিনি ‘আল-ইসমাঈলিয়্যাহ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, হককে বাতিল থেকে, সঠিককে বেঠিক থেকে, হেদায়াতকে পথভ্রষ্টতা থেকে, ইসলামকে কুফরী থেকে পৃথক করা এবং মানুষকে বক্র পথ, শয়তানী আদর্শ ও মানুষের মতামত থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে রাসূল (ছাঃ)-এর রেখে যাওয়া শ্বেত-শুভ্র-নিষ্কলঙ্ক পথের দিশা প্রদান করে ইসলামের পবিত্রতার প্রতিরক্ষা-ই বাতিল ফিরকাসমূহ সম্পর্কে কলমী জিহাদ চালানোর পিছনে আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। যেমন তিনি বলেন,
فهذاهوالهدف،وهذههيالحقيقةمنالبحثوالكتابةفيالفرقالضالة،المنحرفة،والطوائفالباغيةالخارجةعلىالإسلامممنكتبناعنهمحتىاليوم.
‘পথভ্রষ্ট, ভ্রান্ত ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাওয়া বিদ্রোহী দলগুলোর যাদের সম্পর্কে অদ্যাবধি আমরা লিখেছি, তার উদ্দেশ্য ও বাস্তবতা এটিই’।
(ইহসান ইলাহী যহীর, আল-ইসমাঈলিয়্যাহ তারীখ ওয়া আকাইদ (লাহোর : ইদারাতু তারজুমানিস সুন্নাহ, ১৪০৬ হিঃ), পৃঃ ২৮-২৯।)
এক্ষণে প্রশ্ন হল, তিনি তাঁর মাতৃভাষা উর্দূ বাদ দিয়ে আরবীতে কেন ধর্মতত্ত্ব সম্পর্কিত বই লিখলেন তাঁর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মাহবূব জাবেদকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমি ধর্মতত্ত্বের উপর বেশী বই লিখেছি। এই বইগুলো গোটা মুসলিম বিশ্বে পড়ানো হোক সে উদ্দেশ্য ছিল। এজন্য আমি আমার এই বইগুলো আরবীতে লিখেছি’। (মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৪৫।) আরবীতে বই লেখার আর একটা কারণ হল- এসব বাতিল ফিরকাগুলোর আক্বীদা-বিশ্বাসধারী বিভিন্ন ফিরকা মুসলিম দেশগুলোতে বিভিন্ন নামে বিদ্যমান আছে। ‘আল-ব্রেলভিয়া’ গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি বলেন,
إنهاجديدةمنحيثالنشأةوالإسم،ومنفرقشبهالقارةمنحيثالتكوينوالهيئة،ولكنهاقديمةمنحيثالأفكاروالعقائد،ومنالفرقالمنتشرةالكثيرةفيالعالمالإسلاميبأسماءمختلفةوصورمتنوعةمنالخرافيينوأهلالبدع،لذلكأردتأنأكتبعنهمفياللغةالعربيةكماكتبتعنالفئاتالضالةالمنحرفةالأخرى.
‘নাম ও উদ্ভব এবং গঠন ও আকৃতির দিক থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের ফিরকাগুলোর মধ্যে এটা নতুন। কিন্তু চিন্তাধারা ও আক্বীদা এবং মুসলিম বিশ্বে বিভিন্ন নাম ও আকৃতিতে বিস্তৃত বহু বিদ‘আতী ও কুসংস্কারপন্থী ফিরকার দিক থেকে এটা পুরাতন। এজন্য আমি এদের সস্পর্কে আরবীতে লিখতে মনস্থ করেছি, যেমনভাবে অন্যান্য পথভ্রষ্ট ভ্রান্ত ফিরকাগুলো সম্পর্কে লিখেছি’।
(আল-ব্রেলভিয়া, পৃঃ ৭।)
 
ধর্মতত্ত্ব গবেষণায় তাঁর মানহাজ বা পদ্ধতি ছিল ভিন্ন স্টাইলের। তিনি যেই ফিরকার উপর বই লিখতেন সেই ফিরকার লিখিত বই-পত্র থেকেই তাদের ইতিহাস ও আক্বীদা-বিশ্বাস বর্ণনা করতেন। ‘আশ-শী‘আ ওয়াসসুন্নাহ’ গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি বলেছেন, وقدالتزمنافيهذاالكتابأنلانذكرشيئامنالشيعةإلامنكتبهم،وبعباراتهمأنفسهم،معذكرالكتاب،والمجلد،والصفحة،والطبعة،بحولاللهوقوته.
‘আমরা এই গ্রন্থে এ নীতি অবলম্বন করেছি যে, শী‘আদের থেকে আমরা যা-ই উল্লেখ করব আল্লাহ প্রদত্ত শক্তিতে তা তাদের বই-পুস্তক থেকেই নাম, খন্ড, পৃষ্ঠা ও ছাপা সহ তাদের উদ্ধৃতি দিয়েই উল্লেখ করব’। (ইহসান ইলাহী যহীর, আশ-শী‘আওয়াস সুন্নাহ (লাহোর : ইদারাতু তারজুমানিস সুন্নাহ, ২৪ তম সংস্করণ, ১৪০৪ হিঃ/১৯৮৪ খৃঃ), পৃঃ ১৫।) এ পদ্ধতি কঠিন, কণ্টকাকীর্ণ ও দুর্গম হলেও এটাই ধর্মতত্ত্ব গবেষণার ‘সঠিক পদ্ধতি’ (الطريقةالصحيحةالمسةقيمة) বলে তিনি মনে করেন। (ইহসান ইলাহী যহীর, আত-তাছাওউফ আল-মানশা ওয়াল মাছাদির (লাহোর : ইদারাতু তারজুমানিস সুন্নাহ, ১৪০৬ হিঃ), পৃঃ ৫০।) এজন্য তিনি আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাওয়ার ব্যাপারেও দৃঢ় বিশ্বাসী। (আল-ব্রেলভিয়া, পৃঃ ১১।)
২. আল্লামা যহীর বাতিল ফিরকাগুলোর আক্বীদা-বিশ্বাস বর্ণনার ক্ষেত্রে পূর্ণ আমানতদারিতার পরিচয় দিয়েছেন। যে শব্দে ও বাক্যে তাদের বইগুলোতে সেগুলো উদ্ধৃত হয়েছে তিনি কোন প্রকার কমবেশী করা ছাড়াই তা হুবহু উল্লেখ করেছেন। ‘আল-ইসমাঈলিয়্যাহ’ গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি বলেছেন, إنمدارالاستشهادوالاستدلالليستإلاعلىكتبالقومأنفسهمبالأمانةالعلميةونقلالعباراتالكاملةبدونتحريفوتبديلوتغييرالتيبهاامتازتكتبناومؤلفاتنابفضلمناللهوتوفيقه.
‘ইলমী আমানত এবং কোনপ্রকার পরিবর্তন ও বিকৃতি ছাড়াই পূর্ণবর্ণনা উদ্ধৃত করার মাধ্যমে গোষ্ঠীটির নিজেদের গ্রন্থাবলীই যুক্তি-প্রমাণের কেন্দ্রবিন্দু। আল্লাহর অনুকম্পায় আমাদের সকল গ্রন্থই এবৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্য মন্ডিত’।
(আল-ইসমাঈলিয়্যাহ, পৃঃ ২৭।) যেমন ‘আশ-শী‘আ ওয়াল কুরআন’ গ্রন্থে কুরআনের বিকৃতি সাধন সম্পর্কে শী‘আ মুহাদ্দিছ নেয়ামাতুল্লাহ জাযায়েরীর (জন্ম : ১০৫০হিঃ) লিখিত ‘আল-আনওয়ারুন নু‘মানিয়া’ (২/৩৫৭) গ্রন্থ থেকে হুবহু উদ্ধৃতি পেশ করেছেন। (ইহসান ইলাহী যহীর, আশ-শী‘আওয়াল কুরআন (লাহোর : ইদারাতু তারজুমানিস সুন্নাহ, ৫ম সংস্করণ, ১৪০৪ হিঃ/১৯৮৩ খৃঃ), পৃঃ ৬৭-৬৮।)
 
৩. তিনি বাতিল ফিরকাগুলোর মত খন্ডনের ক্ষেত্রে কুরআন, হাদীছ ও সালাফে ছালেহীনের বুঝের উপর নির্ভর করেছেন। ভ্রান্ত ফিরকা ইসমাঈলিয়ারা মনে করে যে, ‘আল্লাহর কোন নাম ও গুণাবলী নেই’। আল্লামা যহীর তাদের এই ভ্রান্ত মত খন্ডন করতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন যে, এটি কুরআন-সুন্নাহ ও সালাফে ছালেহীনের মানহাজের খেলাফ। কুরআন-সুন্নাহ প্রমাণ করে যে, আল্লাহর নাম ও গুণাবলী রয়েছে। এর প্রমাণে তিনি কুরআন মাজীদের ৩৫টি আয়াত উদ্ধৃত করেন। (দ্রঃ আল-ইসমাঈলিয়্যাহ, পৃঃ ২৭৩।) ব্রেলভীদের আক্বীদা- ‘নবী, রাসূল ও অলী-আওলিয়া অদৃশ্যের খবর জানেন’-এর খন্ডনে নামল ৬৫, ফাতির ৩৮, হুজুরাত ১৮, হূদ ১২৩, ইউনুস ২০, আন‘আম ৫৯, লুকমান ৩৪ মোট ৭টি আয়াত পেশ করেছেন। (আল-ব্রেলভিয়া, পৃঃ ৮৫-৮৬।) অনুরূপভাবে ঈদে মীলাদুন্নবী সম্পর্কে ব্রেলভীদের মত খন্ডন করতে গিয়ে একে ‘বিদ‘আত’ বলে আখ্যা দেন এবং এর প্রমাণে مَنْأَحْدَثَفِيْأَمْرِنَاهَذَامَالَيْسَمِنْهُفَهُوَرَدٌّ. ‘যে ব্যক্তি আমাদের শরী‘আতে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/১৪০।) হাদীছটি উল্লেখ করেছেন। (আল-ব্রেলভিয়া, পৃঃ ১২৬-২৭।) তাছাড়া ছূফীদের বৈবাহিক জীবনে অনীহার খন্ডনে কুরআন ও হাদীছ থেকে দলীল উল্লেখের পর ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)-এর বক্তব্য উদ্ধৃত করেন। মহামতি ইমাম বলেন, ليسالعزوبةمنأمرالإسلامفيشيء. ‘চিরকুমার থাকা ইসলামী শরী‘আতের কোন বিধানই নয়’। (আত-তাছাওউফ, পৃঃ ৬২।)
৪. শক্তিশালী যুক্তির মাধ্যমে তিনি বাতিল ফিরকাগুলোর মতামত খন্ডন করেছেন। শী‘আ ইমাম মুহাম্মাদ বিন বাকির আল-মাজলেসী (১০৩৭-১১১১ হিঃ) তাঁর ‘হায়াতুল কুলূব’ গ্রন্থে (২/৬৪০) উল্লেখ করেছেন যে, ‘রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর আবূ যর গিফারী, মিকদাদ বিন আসওয়াদ ও সালমান ফারেসী-এই তিনজন ব্যতীত সবাই মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল’ (নাঊযুবিল্লাহ)। আল্লামা যহীর শক্তিশালী যুক্তির অবতারণা করে তার এ ভ্রান্ত মত খন্ডন করে বলেন,
ولسائلأنيسألهؤلاءالأشقياءوأينذهبأهلبيتالنبىبمافيهمعباسعمالنبى،وابنعباسابنعمه،وعقيلأخلعلى،وحتىعلى نفسه،والحسنانسبطارسولالله؟
‘এই হতভাগ্যদেরকে কোন প্রশ্নকারীর জিজ্ঞেস করা উচিত, তাহলে রাসূল (ছাঃ)-এর আহলে বায়েত বা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত তাঁর চাচা আববাস, চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ বিন আববাস, আলী (রাঃ)-এর ভাই আকীল এমনকি খোদ আলী এবং রাসূল (ছাঃ)-এর নাতিদ্বয় হাসান ও হুসাইন তখন কোথায় গিয়েছিলেন’?
(ইহসান ইলাহী যহীর, আশ-শী‘আওয়া আহলুল বায়েত (লাহোর : ইদারাতু তারজুমানিস সুন্নাহ, ৬ষ্ঠ সংস্করণ, ১৪০৪হিঃ/১৯৮৪ খৃঃ), পৃঃ ৪৬।)
 
অনুরূপভাবে ব্রেলভীদের আক্বীদা- ‘রাসূল (ছাঃ) সর্বত্র হাযির ও সবকিছু দেখেন’-এর খন্ডনে সূরা ফাতহ-এর ১৮নং আয়াত উল্লেখ করেন, যেখানে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তো মুমিনগণের উপর সন্তুষ্ট হলেন যখন তারা গাছের নিচে তোমার নিকট বায়‘আত করল’। এরপর তিনি এত্থেকে যুক্তিসিদ্ধ দলীল সাব্যস্ত করে বলেন, فكانهذافيالحديبيةفيالعامالسادسبعدالهجرةحيثلميكنفىالمدينةكمالميكنفيمكةولميكنفيالحديبيةموجوداقبلهولميبقىفيهابعدرجوعهإلىالمدينة.
‘হিজরতের পরে ষষ্ঠ বর্ষে হুদায়বিয়াতে এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। তখন তিনি যেমন মদীনায় ছিলেন না, তেমনি মক্কাতেও ছিলেন না। আর ইতিপূর্বে তিনি হুদায়বিয়াতে উপস্থিত ছিলেন না এবং সেখান থেকে মদীনায় ফিরে আসার পর সেখানেও অবস্থান করেননি’। (আল-ব্রেলভিয়া, পৃঃ ১১০।)
৫. একটি মাসআলায় বাতিল ফিরকাগুলোর বই থেকে একাধিক বর্ণনা উল্লেখ করেছেন, যাতে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ-সংশয়ের বিন্দুমাত্র অবকাশ না থাকে। তাঁর সকল গ্রন্থেই এই বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যেমন- শী‘আদের ইমাম মাহদী সম্পর্কে বিশ্বাস সম্পর্কে ৬৯টি, ইসমাঈলিয়াদের আল্লাহ সম্পর্কে বিশ্বাস সম্পর্কে ৭৬টি, ছূফীদের সন্ন্যাসব্রত সম্পর্কে ১৪৬টি, ব্রেলভীদের গায়েব সম্পর্কিত আক্বীদার ব্যাপারে ত্রিশোর্ধ এবং কাদিয়ানীদের ভন্ড নবী গোলাম আহমাদকে রাসূল (ছাঃ)-এর উপর প্রাধান্য দেয়া সম্পর্কে বিশোর্ধ বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। (ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩০৩-৩০৪।)
৬. কখনো কখনো বাতিল ফিরকাগুলোর মতামত ও আক্বীদা উল্লেখের ক্ষেত্রে দীর্ঘ উদ্ধৃতি (এক থেকে তিন বা তারও বেশী পৃষ্ঠা) পেশ করেছেন। (দ্র. আশ-শী‘আ ওয়া আহলুল বায়েত, পৃঃ ১৭৭-১৮২; আশ-শী‘আ ওয়াল কুরআন, পৃঃ ৫৭-৫৮।)
 
৭. আল্লামা যহীর বাতিল ফিরকাগুলোর বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন। সেজন্য যেকোন ফিরকার উপর বই লেখার পূর্বে তাদের সম্পর্কে সাধ্যানুযায়ী যতগুলো সম্ভব বইপত্র সংগ্রহ করতেন এবং এজন্য বিভিন্ন দেশ সফর করতেন এবং অর্থ-সম্পদ ব্যয় করতেন। যাতে তাদের বই থেকেই তাদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে সত্যকে মানুষের সামনে উদ্ভাসিত করা যায় এবং বাতিলপন্থীরা তার দলীল ও যুক্তির সামনে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়।
একবার তিনি ধর্মতত্ত্বের উপর বই সংগ্রহের জন্য রিয়াদ অতঃপর কায়রোর বইমেলায় যান। কায়রোতে গিয়ে তিনি শুনেন যে, ইসমাঈলী আলেম আল-মাগরেবী লিখিত ‘আল-মাজালিস ওয়াল মুসায়ারাত’ নামক তিউনেসীয় ছাপা বইটি বইমেলায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু মেলায় গিয়ে দেখেন, বইটির সব কপি ফুরিয়ে গেছে। ফলে সেটি সংগ্রহের জন্য তিনি তিউনিসিয়ায় গিয়ে বইটির প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ করেন। (‘আল-জুনদী আল-মুসলিম’, সংখ্যা ৪৮, ১৪০৮ হিঃ, পৃঃ ১৮; ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৩২।)
তিনি ‘আশ-শী‘আ ওয়াত তাশাইয়ু’ গ্রন্থে ২৫৯টি, ‘আশ-শী‘আ ওয়া আহলুল বায়েত’ গ্রন্থে ২৩০টি, ‘আশ-শী‘আ ওয়াস সুন্নাহ’ গ্রন্থে ৮৮টি, ‘আর-রাদ্দুল কাফী’ গ্রন্থে ২৫৯ টি, ‘আশ-শী‘আ ওয়াল কুরআন’ গ্রন্থে ৮৪টি, ‘আল-ইসমাঈলিয়্যাহ’ গ্রন্থে ১৬৯টি, ‘আত-তাছাওউফ আল-মানশা ওয়াল মাছাদির’ গ্রন্থে ৩৫৬টি, ‘দিরাসাত ফিত তাছাওউফ’ গ্রন্থে ৩৫৪টি, ‘আল-বাবিয়া’ গ্রন্থে ১৭৪টি, ‘আল-বাহাইয়া’ গ্রন্থে ২১৭টি, ‘আল-কাদিয়ানিয়্যাহ’ গ্রন্থে ১৫০টি ও ‘আল-ব্রেলভিয়া’ গ্রন্থে ১৮৫টি গ্রন্থ তথ্যসূত্র হিসাবে ব্যবহার করেছেন। (ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩০০-৩০২।) মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘শায়খ ইহসান ইলাহী যহীর মানহাজুহু ওয়া জুহূদুহু ফী তাক্বরীরিল আক্বীদা ওয়ার রাদ্দি আলাল ফিরাকিল মুখালিফাহ’ শিরোনামে পিএইচ.ডি ডিগ্রী অর্জনকারী ড. আলী বিন মূসা আয-যাহরানী বলেন, وعندجمعيلمراجعالشيخومصادرهفيجميعكتبهوجدتهابلغتألفينوخمسمائةوخمسةوعشرينمرجعاومصدرا. ‘শায়খের সকল বইয়ের তথ্যসূত্র একত্রিত করে আমি সর্বমোট সংখ্যা পেয়েছি ২ হাযার ৫২৫টি’। ( ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ -৩০২।)
 
৮. তিনি বাতিল ফিরকাগুলোর আক্বীদা-বিশ্বাসকে অন্যান্য ধর্ম ও মতাদর্শের আক্বীদা-বিশ্বাসের সাথে তুলনা করেছেন। যেমন শী‘আদের ‘বেলায়াত’ সম্পর্কিত আক্বীদাকে ইহুদীদের সাথে, ছূফীদের বিভিন্ন আক্বীদাকে শী‘আ, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃষ্টানদের সাথে, ইসামাঈলিয়াদের আল্লাহর পিতৃত্ব সম্পর্কিত আক্বীদাকে খৃষ্টানদের সাথে এবং শী‘আ ও আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আক্বীদার মধ্যে (বিশেষ করে ছাহাবীদের ব্যাপারে) তুলনামূলক আলোচনা করেছেন। (বিস্তারিত আলোচনা দ্রঃ ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩৪৫-৭৫।)
৯. ভ্রান্ত ফিরকাগুলোর মত খন্ডনের সময় তাদের যে সকল ব্যক্তি প্রসিদ্ধ, মধ্যপন্থী ও সাধারণের কাছে বিশ্বস্ত বলে পরিচিত তাদের বক্তব্যের ভিত্তিতেই বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন। এজন্য তিনি ‘আত-তাছাওউফ’ গন্থে চরমপন্থী ছূফী মনসূর হাল্লাজ (মৃঃ ৩০৯) ও তার অনুসারীদের কোন বর্ণনাই উদ্ধৃত করেননি। (আত-তাছাওউফ, পৃঃ ৯, ১১।)
১০. গালি-গালাজ না করে বাতিল ফিরকাগুলোর মুখোশ উন্মোচনের সময় বাহাছ-মুনাযারার শিষ্টাচার বজায় রেখেছেন এবং তাদেরকে বাতিল মত ও পথ ছেড়ে হকের পথে ফিরে আসার জন্য আহবান জানিয়েছেন। যেমন- ‘আল-কাদিয়ানিয়্যাহ’ গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি বলেছেন, وراعيتفيالكتابكلهأنلاأخرجعنأسلوبالبحثوآدابالمناظرة. ‘গোটা বইয়ে আমি বাহাছ-মুনাযারার স্টাইল ও শিষ্টাচার থেকে বহির্গত না হওয়ার প্রতি খেয়াল রেখেছি’। (আল-কাদিয়ানিয়্যাহ, পৃঃ ১২।) উক্ত গ্রন্থে ‘গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর ভবিষ্যদ্বাণী সমূহ’ শীর্ষক আলোচনায় তার প্রত্যেকটি ভবিষ্যদ্বাণী যে মিথ্যায় পর্যবসিত হয়েছিল তা বর্ণনা করার পর উপসংহারে এসে আল্লামা যহীর বলেন, فهاهيالحقائق. واللهنسألأنيريهمالحقحقاويرزقهماتباعه،ويريهمالباطلباطلاويرزقهماجتنابه،وهونعمالمولىونعمالنصير... ‘এগুলোই হল বাস্তবতা। আল্লাহর কাছে আমাদের প্রার্থনা, তিনি যেন তাদেরকে হককে হক হিসাবে দেখিয়ে তার অনুসরণের এবং বাতিলকে বাতিল হিসাবে দেখিয়ে তাত্থেকে বিরত থাকার তৌফিক দেন। তিনিই উত্তম অভিভাবকও সাহায্যকারী’। (আল-কাদিয়ানিয়্যাহ, পৃঃ ১৯৮।)
 
১১. প্রতিপক্ষের পরস্পর বিপরীতমুখী বর্ণনা উল্লেখ করে তাদেরকে কুপোকাত করেছেন। যেমন শী‘আ আলেম তূসী লিখিত ‘কিতাবুল গায়বাহ’তে বলা হয়েছে যে, তাদের প্রতীক্ষিত মাহদী মুহাম্মাদ বিন হাসান আল-আসকারী শেষ যামানায় মক্কায় আবির্ভূত হবে এবং কা‘বা ঘরের নিকট জিবরীল (আঃ) তার হাতে বায়‘আত গ্রহণ করবেন। এরপর তিনি শী‘আ বিদ্বান আরবিলীর ‘কাশফুল গুম্মাহ’ গ্রন্থ থেকে বর্ণনা পেশ করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে, রাসূল (ছাঃ)-এর অন্তিম সময়ে জিবরীল এসে তাঁকে বললেন, আজকেই আমার দুনিয়ায় অবতরণের শেষ দিন। (বিস্তারিত দ্রঃ ইহসান ইলাহী যহীর, আশ-শী‘আ ওয়াত তাশাইয়ু ফিরাক ওয়া তারীখ (লাহোর : ইদারাতু তারজুমানিস সুন্নাহ, ১০ম সংস্করণ, ১৪১৫ হিঃ), পৃঃ৩৬১-৩৭৪।) এ দু’টি বর্ণনা পরস্পর বিপরীতধর্মী। একটিতে তাদের কথিত মাহদীর নিকট জিবরীলের আগমনের কথা বলা হচ্ছে, আর অন্যটিতে তা নাকচ করা হচ্ছে। এভাবে তাদের ভ্রান্ত আক্বীদার গ্যাঁড়াকলে তারা নিজেরাই আটকে পড়েছে।
১২. আল্লামা যহীর পূর্ববর্তী আলেম ও গবেষক এবং কখনও কখনও প্রাচ্যবিদদের বক্তব্য দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন। যেমন ছূফীদের জ্ঞানার্জন থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে ইবনুল জাওযী (মৃঃ ৫৯৭হিঃ)-এর মত উল্লেখ করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, وكانأصلتلبيسهعليهمأنهصدهمعنالعلموأراهمأنالمقصودالعمل. فلماأطفأمصباحالعلمعندهمتخبطوافيالظلمات. ‘ছূফীদের মধ্যে ইবলীসের সংশয় সৃষ্টির মূল বিষয় হল- তাদেরকে জ্ঞানার্জন থেকে বিরত রাখা এবং আমল করাই মুখ্য উদ্দেশ্য একথা বুঝানো। যখন সে তাদের নিকট জ্ঞানের আলো নিভিয়ে দিল, তখন তারা অন্ধকারে হাবুডুবু খেতে লাগল’।
(ইহসান ইলাহী যহীর, দিরাসাত ফিত তাছাওউফ (লাহোর : ইদারাতু তারজুমানিসসুন্নাহ, ১ম প্রকাশ, ১৪০৯ হিঃ), পৃঃ ১৩১; ইবনুল জাওযী, তালবীসু ইবলীস (বৈরূত : মুআস্সাসাতুত তারীখ আল-আরাবী, তাবি), পৃঃ ১৭৪।) প্রাচ্যবিদদের মধ্যে গোল্ড যিহের, নিকলসন, ব্রকলম্যান, ডোজি, মিলার, ভনহ্যামার প্রমুখের বক্তব্য ‘বাহ্যিক সাক্ষ্য’ (شهاداةخارجية) হিসাবে উল্লেখ করেছেন। (আশ-শী‘আ ওয়াত তাশাইয়ু, পৃঃ ১১৬; ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪১৮-১৯।)
১৩. তিনি সূক্ষ্ম ও যথার্থভাবে বাতিল ফিরকাগুলোর মতামত পর্যালোচনার পর তাঁর নিকট গ্রহণযোগ্য মত উল্লেখ করেছেন। যেমন- শী‘আদের ‘আহলুল বায়েত’ সম্পর্কিত আক্বীদার ভ্রান্তি নিরসনে তিনি ‘আহল’ ও ‘বায়েত’ শব্দ দু’টির অর্থ সম্পর্কে ভাষাবিদ, মুফাসসির ও গবেষকদের মতামত উল্লেখ ও পর্যালোচনার পর বলেছেন, فالحاصلأنالمرادمنأهلبيتالنبىأصلاوحقيقةأزواجهعليهالصلاةوالسلام،ويدخلفيالأهلأولادهوأعمامهوأبنائهمأيضاتجاوزا. ‘মোদ্দাকথা, নবী পরিবার দ্বারা মূলত ও প্রকৃত অর্থে রাসূল (ছাঃ)-এর স্ত্রীগণ উদ্দেশ্য। তাঁর সন্তান-সন্ততি, চাচারা ও তাদের সন্তানগণও বৃহত্তর অর্থে নবী পরিবারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে’। (আশ-শী‘আ ওয়া আহলুল বায়েত, পৃঃ ১৯।) উল্লেখ্য যে, শী‘আরা আলী, ফাতেমা, হাসান ও হুসাইন (রাঃ) এবং তাদের বংশধরদেরকেই শুধুমাত্র আহলে বায়েত বা নবী পরিবার বলে গণ্য করে। (আশ-শী‘আ ওয়া আহলুল বায়েত, পৃঃ ২০।)
 
রক্তস্নাত লাহোর ট্র্যাজেডি :
১৯৮৭ সালের ২৩ মার্চ সোমবার লাহোরের কেল্লা লছমনসিংহ ফোয়ারা চক রাভী পার্কে ‘আহলেহাদীছ ইয়ুথ ফোর্স’ লছমনসিংহ এলাকার উদ্যোগে একটি বিরাট ইসলামী জালসায় আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর তদানীন্তন পাকিস্তানের দুর্দশা ও তার প্রতিকার সম্পর্কে বক্তৃতা করছিলেন। হামদ ও ছানার পর তিনি তাঁর বক্তব্যের প্রথম দিকে বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমাদের দেশ কঠিন দুঃসময় অতিক্রম করছে। একথা শুধু পাকিস্তানের বেলায়ই প্রযোজ্য নয়; বরং গোটা মুসলিমবিশ্ব বর্তমানে যে দুঃসন্ধিক্ষণের সম্মুখীন হয়েছে, তা কখনো মুসলিম বিশ্বে আপতিত হয়নি। বর্তমান বিশ্বে মুসলমানদের সংখ্যা অনেক। চৌদ্দশ বছরের মুসলিম ইতিহাসে বর্তমানের ন্যায় এতো জনসংখ্যা কখনো ছিল না। বর্তমানে মুসলিম জনসংখ্যা ১২০ কোটির বেশি। এখন পৃথিবীতে ৪৫টির বেশি মুসলিম রাষ্ট্র রয়েছে। এর পাশাপাশি বর্তমানে মুসলমানদের কাছে এত সম্পদ রয়েছে যার কল্পনাই করা যায়না। ... ধন-সম্পদ, জনসংখ্যা এবং রাষ্ট্র সত্ত্বেও মুসলমানদের উপর লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে’ (বাক্বারাহ ৬১) আজ মুসলমানরা যতটা লাঞ্ছিত-অপমানিত, কিংকর্তব্যবিমূঢ়, দুর্বল, অসহায়, পরাভূত-নির্যাতিত, ততটা বিশ্বের ইতিহাসে কখনো ছিল না। আমরা কখনো কি একথা চিন্তা করেছি যে, আমাদের সংখ্যা ও সম্পদ সবচেয়ে বেশি এবং রাষ্ট্র অসংখ্য হওয়া সত্ত্বেও আমরা কেন সীমাহীন লাঞ্ছনার শিকার। আসলে এর কারণ কি? কেন এমনটা হল’? এরপর তিনি তাঁর বক্তৃতায় জেনারেল যিয়াউল হকের কঠোর সমালোচনা করেন। কারণ তিনি ভারত সফরে গিয়ে সোনিয়া গান্ধীর সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে করমর্দন করেছিলেন। এভাবে বক্তব্যের এক পর্যায়ে আল্লামা ইকবালের কবিতা
كافرﮨﮯتوشمشيرﭙﮫكرتاﮨﮯبهروسا
مؤمنﮨﮯتوڊﮯتيغبهى ......
এ পর্যন্ত বলা মাত্রই রাত ১১-টা ২০ মিনিটের দিকে একটি শক্তিশালী টাইমবোমা বিস্ফোরিত হয়। তখন তিনি মাত্র ২০/২২ মিনিট বক্তৃতা করেছেন।
(‘শহীদে মিল্লাত কা আখেরী পয়গাম’, মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৭০-৮১; বিশেষ সংখ্যা-২, পৃঃ ১১৩-১৪।)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top