What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মনীষী চরিতঃ আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর (1 Viewer)

রাজনীতির ময়দানে যহীর :
১৯৬৮ সালে লাহোরে ঈদের মাঠে আইয়ূব খানের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর যে জ্বালাময়ী বক্তব্য প্রদান করেছিলেন তা তাঁকে রাজনীতির দৃশ্যপটে আবির্ভূত হ’তে উদ্বুদ্ধ করে। তিনি বলেন, ‘ঈদের ছালাতের খুৎবায় আমি যে বক্তব্য প্রদান করি তাকে আমার প্রথম রাজনৈতিক ভাষণও বলা যেতে পারে’। তাঁর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও বাগ্মী আগাসুরেশ কাশ্মীরী বলেছিলেন, ‘তুমি যদি ভবিষ্যতে বক্তৃতা দেয়া ছেড়েও দাও তাহ’লে তোমার এই এক বক্তৃতার দ্বারাই তোমাকে পাক-ভারতের কতিপয় বড় বক্তাদের মাঝে গণ্য করা যেতে পারে’। আগা সুরেশ কাশ্মীরীর এই প্রশংসাসূচক মন্তব্য সম্পর্কে আল্লামা যহীর বলেন, ‘আগা সুরেশ কাশ্মীরীর এই কথাগুলো আমার আগ্রহের পারদ বাড়িয়ে দেয় এবং আমার এই বক্তৃতা আমাকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত করে তুলে। অনেক দিন পর্যন্ত আমার এই বক্তব্যের গর্জন দেশময় শুনা গিয়েছিল। এই বক্তব্যের প্রতিধ্বনিতে পুরা লাহোর শহর কেঁপে উঠেছিল। বস্ত্তত আমার এই বক্তব্য আমাকে রাজনীতির কণ্টকাকীর্ণ ময়দানে নিয়ে এসেছিল’। (মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, সেপ্টেম্বর ’৮৭, পৃঃ ৫২। ) এভাবে আইয়ূব খানের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে তিনি শরীক হন। নওয়াবযাদাহ নাছরুল্লাহ খান আইয়ূব খানের বিরুদ্ধে ‘জমহূরী মাহায’ নামে আন্দোলন জোরদার করলে আল্লামা যহীর তার সাথে যোগ দেন। (শাহাদত, মার্চ ২০০৮, পৃঃ ২৩। ) ইয়াহ্ইয়া খান, যুলফিকার আলী ভুট্টো (মৃঃ ১৯৭৯) ও যিয়াউল হকের (১৯২৪-৮৮) সময়ও তিনি রাজনীতিতে পুরাপুরি সক্রিয় ছিলেন। এসব স্বৈরশাসকদের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে তিনি সবসময়ই সোচ্চার ছিলেন। এজন্য তাঁকে জেলের ঘানিও টানতে হয়েছে। ভুট্টোর সময় তাঁর বিরুদ্ধে ৯৫টি রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়। যার মধ্যে হত্যা মামলাও ছিল। (শাহাদত, মার্চ ২০০৮, পৃঃ ২৩। ) তিনি মাহবূব জাবেদকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘যদি আপনি যুলফিকার আলী ভুট্টোর শাসনামলে ইসলামী দলগুলোর প্রতি দৃষ্টি দেন তাহ’লে সেগুলোর মধ্যে জমঈয়তে আহলেহাদীছ এবং এর নওজোয়ান মুখপাত্র ইহসান ইলাহী যহীর-এর ভূমিকা যেকোন ইসলামী সংগঠন বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের তুলনায় কম কার্যকর দেখবেন না। যুলফিকার আলী ভুট্টোর সময় আমাকে জেল-যুলুমের সম্মুখীন হ’তে হয়েছে। ওলামায়ে কেরাম এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে আমিই বৃষ্টির প্রথম ফোঁটার ভূমিকা পালন করেছিলাম। আমাকে শারীরিকভাবে কষ্টও দেয়া হয়েছিল’। (মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৫২।)উল্লেখ্য, জেল-যুলুমে নাস্তানাবুদ করেও বাগে আনতে না পেরে ভুট্টোর পক্ষ থেকে তাঁকে তাঁর পসন্দমত যেকোন আরব রাষ্ট্রে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আপোষহীন ইহসান ইলাহী যহীর সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (Dr. Ali bin Musa az-Zahrani, The Life of Shaykh Ihsan Ilahi Zahir, p. 78.)
 
ইস্তেকলাল পার্টিতে যোগদান :
(১৯৭২ সালের ১লা মার্চ রাওয়ালপিন্ডিতে এই পার্টির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে। এয়ার মার্শাল আছগরখান এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান ছিলেন। পূর্বপাকিস্তানে এটি ‘গণঐক্য আন্দোলন’ নামে পরিচিত ছিল। (দ্রঃ Nadeem Shafiq Malik, The formation of the Tehrik-i-Istiqlal and the General Elections of 1970, Pakistan Journal of History and Culture, Vol. 13, No. 2, July-December 1992, National Institute of Historical and Cultural Research, Islamabad, Pakistan, p. 89-92. )
রাজনৈতিক তৎপরতা ও জ্বালাময়ী বক্তব্যের কারণে আল্লামা যহীর ভুট্টো সরকার বিশেষত পাঞ্জাবের তদানীন্তন গভর্ণর গোলাম মোস্তফা খের-এর কোপানলে পড়েন। পাকিস্তানের প্রায় সকল শহরেই তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়। একা তাঁর পক্ষে এ সকল মামলার মোকাবিলা করা অসম্ভব ছিল। তাঁর ভাষায়, ‘মোকদ্দমাগুলো পরিচালনার জন্য প্রত্যেক শহরে উকিলের প্রয়োজন হ’ত। আমি চিন্তা করলাম, আমাকে কোন রাজনৈতিক দলে যোগদান করতে হবে। আমি এয়ার মার্শাল আছগর খানের ব্যক্তিত্ব দ্বারা প্রভাবিত ছিলাম। আমি (১৯৭২ সালে) ‘তাহরীকে ইস্তেকলাল’ পার্টিতে যোগদান করি এবং আমাকে এ পার্টির কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক বানানো হয়। ১৯৭৭ সালের আন্দোলনের সময় আমি তাহরীকে ইস্তেকলাল-এর ভারপ্রাপ্ত প্রধানও ছিলাম’। ১৯৭৮ সালে নিম্নোক্ত কারণে তিনি এ দল ত্যাগ করেন। এক- উক্তপার্টিতে যোগদানের পর আছগর খানের রাজনৈতিকঅদূরদর্শিতা ও অদক্ষতা লক্ষ্যকরেন। আল্লামা যহীর আরো খেয়াল করেন যে, আছগর খান চামচা স্বভাবের লোকদের বেশী পসন্দ করেন। যারা তাঁর সব কথায় ‘জো হুকুম’ বলে কপট আনুগত্য প্রকাশ করে। এ ধরনের লোকদেরকেই তিনি দলের সক্রিয় (?) নেতা-কর্মী বলে মনে করতেন। দুই- উক্ত পার্টি ত্যাগ করার দ্বিতীয় কারণ ছিল মালেক উযীর আলী। যহীর বলেন, ‘ইনি এক আজব কিসিমের লোক ছিলেন। যখনই দলের উপর কোন ঝক্কি-ঝামেলা আসত, তখনই ইনি ছুটি নিতেন’। ইনিও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী ছিলেন না। সেজন্য রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী যারা দলে ছিল তাদের বিরুদ্ধে আছগর খানের কান ভারি করতেন। তাছাড়া তিনি সমাজতান্ত্রিকও ছিলেন। ইসলামকে মোটেই সহ্য করতেন না। তিনি আছগর খানকে ক্ষমতা দখলের চোরাগলি দেখাতেন। ফলে আছগর খানও তার প্ররোচনায় ক্ষমতা লাভের নেশায় মদমত্ত হয়ে উঠেন। তার যেন আর ত্বর সইছিল না। ভুট্টোর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার যোগ্য মনে করতে থাকেন। জেনারেল যিয়াউল হক তার এই উচ্চাভিলাষ অাঁচ করতে পেরে তাকে প্রধানমন্ত্রী করার লোভ দেখান। এতে তিনি যিয়াউল হকের কাছে ঘেঁষতে থাকেন। এদিকে যিয়াউল হক তাঁর ক্ষমতা নিষ্কণ্টক ও মার্শাল ল’ প্রলম্বিত করার জন্য ভুট্টোর পতনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী রাজনৈতিক জোট ‘পাকিস্তান কওমী ইত্তেহাদ’ (Pakistan National Alliance) ভেঙ্গে যাক তা মনে-প্রাণে কামনা করছিলেন। তাই তিনি আছগর খানকে ইরান সফরে গিয়ে ইরানী প্রেসিডেন্ট রেযা শাহ পাহলভীর এন.ও.সি (নন অবজেকশন সার্টিফিকেট) নিয়ে আসতে বলেন। ইরান থেকে ফিরে আছগর খান ‘কওমী ইত্তেহাদ’-এর সাথে ‘ইস্তেকলাল পার্টির’ সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করেন। ফলে রাগে-ক্ষোভে-অভিমানে যহীর ইস্তেকলাল পার্টি ত্যাগ করেন। তাঁর ভাষায়, ‘আমার নিকট ঐ দুঃসন্ধিক্ষণে ‘কওমী ইত্তেহাদ’-এর সাথে সম্পর্কহীনতা ঘোষণা জাতির সাথে বড় ধরনের গাদ্দারির শামিল ছিল’। (মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৫৪-৫৫।) সক্রিয় রাজনীতিতে থাকা অবস্থায় তিনি কখনো আপোষকামিতাকে বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দিতেন না। কোন লোভ-লালসা তাঁকে কখনো স্পর্শ করেনি। জেনারেল যিয়াউল হক তাঁকে ধর্মমন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। (The Life of Shaykh Ihsan Ilahi Zahir, P. 78. )
 
আহলেহাদীছ আন্দোলনে অবদান :
১৯৭৮ সালে ইস্তেকলাল পার্টি ত্যাগের পর অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁকে জমঈয়তে আহলেহাদীছে ফিরে এসে আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রচার-প্রসারে আত্মনিয়োগ করার নিবেদন করেন। ইতিপূর্বে উক্ত পার্টিতে যোগ দিলেও তাঁর ভাষায় তিনি কখনো ‘চিন্তাধারার’ দিক থেকে জমঈয়ত থেকে পৃথক হননি। অবশেষে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে তাঁর উদ্যোগে ১৯৮১ সালে জামে‘আ মুহাম্মাদিয়া, গুজরানওয়ালাতে বিশাল সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এই সম্মেলনে জমঈয়তে আহলেহাদীছ নতুনভাবে গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চার হাযার আলেমের মধ্য থেকে বাছাইকৃত ৮ জন বিশিষ্ট আলেমের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত কমিটি ইহসান ইলাহীকে জমঈয়তের আমীর করার সুফারিশ করে। কিন্তু তিনি উক্ত দায়িত্ব নিতে অসম্মতি জ্ঞাপন করে জমঈয়তের একজন সদস্য হিসাবে কাজ চালিয়ে যাওয়াকে প্রাধান্য দেন। ফলে ‘জমঈয়তে আহলেহাদীছ পাকিস্তান’ নামে উক্ত সম্মেলনে গঠিত নতুন এই সংগঠনের প্রথম আমীর হন শায়খুল হাদীছ মাওলানা আব্দুল্লাহ এবং সেক্রেটারী জেনারেল হন মাওলানা মুহাম্মাদ হুসাইন শেখুপুরী। (মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৫৭-৫৮; বিশেষ সংখ্যা-২, পৃঃ ১১৯; আহলেহাদীছ আন্দোলন, পৃঃ ৩৭৯-৮০। )
‘জমঈয়তে আহলেহাদীছ পাকিস্তান’ গঠনের পর সংগঠনটি প্রেসিডেন্ট যিয়াউল হকের কোপানলে পড়ে। আল্লামা যহীরের উপর মিথ্যা মামলার খড়গ ঝুলানো হয়। কিন্তু তাতে তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি। তিনি বলেন, ‘মার্শাল ল’ সরকারের পক্ষ থেকে আমাকে যখন বার বার হেনস্তা করা হ’তে থাকে তখন আমার আহলেহাদীছ বন্ধুবর্গ জমঈয়তের দায়িত্ব পালনের জন্য জোরাজুরি শুরু করেন। জমঈয়তের জেনারেল সেক্রেটারী আমার জন্য পদত্যাগ করেন এবং আমাকে সেক্রেটারী জেনারেল মনোনীত করা হয়’। (মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৫৮-৫৯। ) ১৯৮২ সালে বাধ্য হয়ে উক্ত পদ গ্রহণের পর তিনি ঘুমন্ত আহলেহাদীছ সমাজকে জাগানোর প্রাণান্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ড. আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আযীয ইয়াহ্ইয়া বলেন, There is no doubt that he presented as much as he was able to at the time all of which had a good effect for Ahl ul-Hadeeth in Pakistan and their Salafi brothers in other parts of the world. ‘এতে কোন সন্দেহ নেই যে, সে সময় তিনি তাঁর সাধ্যানুযায়ী যতটুক করতে পেরেছিলেন, পাকিস্তানের আহলেহাদীছ এবং বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে তাদের সালাফী ভাইদের জন্য তার একটা কার্যকর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছিল’। (The Life of Shaykh Ihsan Ilahi Zahir, P. 64. )
 
পাকিস্তান ও বহির্বিশ্বে জমঈয়তের পরিচিতি বৃদ্ধিতে তিনি পালন করেন অগ্রণী ভূমিকা। জালসা, সম্মেলন, প্রেসকনফারেন্স প্রভৃতির মাধ্যমে তিনি আহলেহাদীছ আন্দোলনে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেন। ড.অছিউল্লাহ মুহাম্মাদ আববাস বলেন, He was an example of sincerity and dedication to dawah to Allah via the media, sermons in masajid, general gatherings. He also has huge efforts in guiding the youth to the salafi aqeedah and made many long travels in the path of dawah. ‘মিডিয়া, মসজিদের খুৎবা, জালসা-সম্মেলন প্রভৃতির মাধ্যমে আল্লাহর পথে দাওয়াতের ক্ষেত্রে তিনি আন্তরিকতা ও উৎসর্গের এক দৃষ্টান্ত ছিলেন। যুবকদেরকে সালাফী আক্বীদার দিকে পরিচালিত করার জন্য তাঁর দারুণ প্রচেষ্টা ছিল এবং দাওয়াতের জন্য তিনি দীর্ঘ সফর করেছেন’। (Ibid, P. 61. ) যুবক-বৃদ্ধ সবাই তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে দাওয়াতী ময়দানে নেমে পড়ে। খতমে নবুঅত কনফারেন্সে তিনি বলেছিলেন, ‘সম্মানিত ভ্রাতৃমন্ডলী! আহলেহাদীছের একজন সামান্য খাদেম হিসাবে আমার জন্য এটা বড়ই সৌভাগ্যের কথা যে, এমন একসময় এ ঘরের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব আমার উপর অর্পণ করা হয়েছিল, যখন ঘরের লোকেরা নিদ্রামগ্ন ছিল।... অল্প কিছুদিন দায়িত্ব পালনের পর আমি অনুভব করছি যে, এখন ঘরের মালিক জেগে উঠেছে। আমার এই বিশ্বাস ছিল যে, ঘুমন্ত সিংহ যখন জেগে ওঠে তখন সে সিংহমূর্তিই ধারণ করে। আর আজ এই সিংহ শুধু জেগেই ওঠেনি; বরং স্বীয় আবাস থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছে’। (মিয়াঁ জামীল আহমাদ, ‘খতমে নবুঅত কা কনফারেন্স সে আখেরী খেতাব’, মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৬৬। ) রাজনৈতিক বিষয়ে ‘মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছে’র (প্রতিষ্ঠা :২৪শে জুলাই ১৯৪৮) নীরব ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে আল্লামা যহীর ‘জমঈয়তে আহলে হাদীছ পাকিস্তান’ গঠনের পর জমঈয়তকে দেশের রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেন এবং আহলেহাদীছ যুবকদের জন্য ‘আহলেহাদীছ ইয়ুথ ফোর্স’ গঠন করেন। তাদেরকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে ঐক্যবদ্ধ জনশক্তিতে পরিণত করেন। (শাহাদত, মার্চ ২০০৮, পৃঃ ২৩। ) যুবকদেরকে সচেতন করার ক্ষেত্রে তাঁর আগ্রহ ছিল প্রবাদতুল্য। ১২ রবীঊল আউয়াল ১৪০৭ হিজরীতে জিন্নাহ হল, লাহোরে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ميرى ايک ﮨﯽ خواﮨش ﮨﮯ ميرى ايک ﮨﯽ آرزو ﮨﮯ- ميرى تـﮓ ودو كاايك ﮨﯽمقصد ﮨﮯ- ميرى جد وجهد كا ايک ﮨﯽ مطلوب ﮨﮯ اور وه يه ﮨﮯ كه اﮨلحديث كے جوان اﭘنےآقا كى شجاعت كو اﭘنے سينے ميں بهر ليں- خدا كى قسم ﮨﮯاگر يه آقا كى شجاعت كےوارث بن جائيں تو پورے پاكستان كى كوئى قوت ان كےمقابل كهڑا ﮨونے كى جرات نهيں كرسكتى-
‘আমার একটাই আকাঙ্ক্ষা, একটাই বাসনা, আমার দৌড় ঝাঁপ ও উদ্যম-প্রচেষ্টার একটাই উদ্দেশ্য। আর তা হ’ল- আহলেহাদীছ যুবকরা স্বীয় প্রতিপালক প্রদত্ত সাহস নিজেদের বুকে পুরে নিক। আল্লাহর কসম! যদি তারা আল্লাহ প্রদত্ত সাহসিকতার উত্তরাধিকারী হয়ে যায় তাহ’লে সমগ্র পাকিস্তানের এমন কোন শক্তি নেই যা তাদের মোকাবিলায় দাঁড়ানোর দুঃসাহস রাখে’।
(মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-২, পৃঃ ৪।)
 
১৯৮৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী কাছূর-এ এক জালসায় তিনি বলেন,لوگو! سن لو اهل حديث كسى كى بهيڑ بكرى نهيں هيں- اهل حديثاس كائناتكى وه قوت اور طاقت هيں كه اگر اسے احساس ذوق هو جائے تو دنياكى كوئى جماعت اس كامقابلة نهيں كر سكتى.
‘লোক সকল, শুনো! আহলেহাদীছ কারো ভেড়া-বকরী নয়। আহলেহাদীছ এই জগতের ঐ শক্তির নাম, যদি তাদের আত্মোপলব্ধি হয় তাহ’লে দুনিয়ার কোন জামা‘আত তাদের মুকাবিলা করতে পারবে না’। তিনি আরো বলেন, ‘আমার জাতির যুবকেরা জাগো! তোমাদের মাসলাক ও জামা‘আতের তোমাদের আজ বড়ই প্রয়োজন। কিন্তু কেন? হকের ঝান্ডা উড্ডীন করার জন্য, দেশে কুরআন-সুন্নাহর ঝান্ডা উড্ডীন করার জন্য, রাসূল (ছাঃ)-এর নাম উচ্চকিত করার জন্য, তাওহীদের প্রচার-প্রসার, শিরক ও ভ্রষ্টতা দূর এবং কুরআন-সুন্নাহর প্রসারের জন্য’। তিনি আরো বলেন,انشاء الله ايك دن آنے والا ﮨﮯ جب پاكستان كى فضاؤں ميں پرچملهرائے گايا تو كتاب الله كا لهرائے گا يا سنت رسول الله كا لهرائے گااور اس دن طلوع هونےسے دنيا كى كوئى طاقت نهيں روك سكتى.
‘ইনশাআল্লাহ, একদিন এমন আসবে যখন পাকিস্তানের আকাশে কুরআন মাজীদ ও হাদীছের ঝান্ডা উড়বে এবং ঐ দিন আসতে দুনিয়ার কোন শক্তি বাধা দিতে পারবে না’।
(মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৮১।) তিনি দেশময় বড় বড় সম্মেলনের আয়োজন করে জ্বালাময়ী বক্তব্য ও সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে পাকিস্তানে আহলেহাদীছ আন্দোলনে গতি সঞ্চারে কার্যকর ভূমিকা পালন করেন এবং আহলেহাদীছদের নতুন করে গাত্রোত্থানের জানান দিতে থাকেন। ১৯৮৬ সালের ১৮ এপ্রিল মুচী দরজা, লাহোরে তিনি এক বিশাল সম্মেলনের আয়োজন করেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘১৯৮৬ সালে মুচী দরজায় হওয়া সব সম্মেলন থেকে এটি বড় ছিল। (জেনারেল যিয়া বিরোধী) এম.আর.ডি (Movement for the Restoration of Democracy) এবং জামায়াতে ইসলামীর সম্মেলন থেকেও বড় ছিল। জামায়াতে ইসলামী সর্বশক্তি দিয়ে উক্ত জায়গায় আমাদের চেয়ে বড় সম্মেলন করার চেষ্টা করে। কিন্তু তাদের সম্মেলনের উপস্থিতি আমাদের সম্মেলনের তুলনায় দশমাংশের দশমাংশও (১/১০০) ছিল না। সে সময় এম.আর.ডির উত্থানের যুগ ছিল। কিন্তু আল-হামদুলিল্লাহ, জমঈয়তেআহলেহাদীছ এম.আর.ডির চেয়েও বড় সম্মেলন করেছিল। আমাদের এক সপ্তাহ পূর্বে ‘জমঈয়তে ওলামায়ে পাকিস্তান’-এর সম্মেলনও উক্ত স্থানে হয়েছিল। কিন্তু পত্রিকার ফাইলগুলো সাক্ষী রয়েছে যে, আমাদের সম্মেলন সবার চেয়ে বড় ছিল। এই প্রথমবারের মতো জনগণের বোধোদয় হয় যে, জমঈয়তে আহলেহাদীছের ব্যাপারে এ ধারণা ভুল যে, এটি একটি ছোট জামা‘আত। এরপর আমরা ধারাবাহিকভাবে রাওয়ালপিন্ডি, হায়দরাবাদ, ফয়ছালাবাদ, সাহিওয়াল, শিয়ালকোট (২ মে ১৯৮৬), মুলতান এবং গুজরানওয়ালায় (৯ মে ১৯৮৬) সম্মেলন করি। এসকল সম্মেলন দারুণভাবে সফল হয়েছিল’। ((মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৫৯।)
 
জমঈয়তের অত্যাধুনিক অফিস তৈরির জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন দেখা দেয়। এক অনুষ্ঠানে এজন্য প্রথম তিনি ৫০ হাযাররূপী দান করেন। তখন উপস্থিত জনগণ তাদের সাধ্যানুযায়ী দান করতে থাকেন। এভাবে এজন্য ৭ মিলিয়ন (৭০ লাখ) রূপী সংগ্রহ করা হয়। (The Life of Shaykh Ihsan Ilahi Zahir, P. 34-35. ) এ অর্থ দিয়ে তিনি ৫৩ লরেন্স রোড, লাহোরে বিশাল জায়গা ক্রয় করেন। এখানে তিনি নবআঙ্গিকে একটি মসজিদ, হাসপাতাল, মাদরাসা, অডিটরিয়াম এবং জমঈয়তের অফিস স্থাপনের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করতেন। এখানে তিনি তারাবীহ ছালাতের জামা‘আত এবং দরসে কুরআনের প্রোগ্রামও শুরু করেছিলেন। বহু লোক তাঁর দরসে অংশগ্রহণ করতে থাকে। ১৯৮৭সালের ২৯ মার্চ তিনি এখানে জুম‘আর খুৎবা দেয়ার মনস্থির করেছিলেন। কিন্তু এরপূর্বেই বোমা বিস্ফোরণে তাঁর জীবন প্রদীপ নিভে যায়। (মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-২, পৃঃ ১২০। ) উল্লেখ্য, ৫০, লোয়ারমাল রোডে প্রশস্ত জমির উপর বর্তমানে ‘জমঈয়তে আহলেহাদীছ পাকিস্তান’-এর সর্বাধুনিক ব্যবস্থাপনা সজ্জিত বিরাট অফিস অবস্থিত। (আহলেহাদীছ আন্দোলন, পৃঃ ৩৮০। ) আহলেহাদীছরা তাক্বলীদের ঘোর বিরোধী; ইজতিহাদের প্রবক্তা। এজন্য যুগ-সমস্যার সমাধান কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে প্রদানের জন্য আল্লামা যহীর সঊদী আরবের ‘হায়আতু কিবারিল ওলামা’ ও মিসরের ‘আল-মাজলিসুল আ‘লা লিশ-শুউনিল ইসলামিয়াহ’-এর আদলে মুহাক্কিক্ব আহলেহাদীছ আলেমদের সমন্বয়ে একটি ফৎওয়া বোর্ড প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। যেখানে আলেমরা প্রত্যেক মাসে উপস্থিত হয়ে নিত্য-নতুন মাসআলার ব্যাপারে তাদের গবেষণালব্ধ মতামত ব্যক্ত করবেন। এতদুদ্দেশ্যে ১৯৮৭ সালের ১৮ মার্চ নিজ বাড়ীতে তিনি ওলামায়ে কেরামের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আহবান করেন। এ মিটিংয়ে আল্লামা যহীর ইসলামের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন এবং আগামী মিটিংয়ে তাহক্বীক্বের জন্য ‘মুরাবাহা’ ক্রয় আলোচনার বিষয় নির্ধারণ করেন। উক্ত মিটিংয়ে তিনি উপস্থিত ওলামায়ে কেরামকে এ সুসংবাদ দিয়েছিলেন যে, এই তাহক্বীক্বী কাজের জন্য তিনি ২০ লাখ রূপীতে কম্পিউটার ক্রয় করেছেন। এই কম্পিউটার এবং ৫৩, লোয়ারমাল রোডে অবস্থিত জমঈয়তের অফিসে অবস্থান করে প্রায় ১ লাখ পুস্তক সংবলিত তাঁর ব্যক্তিগত লাইব্রেরী থেকে তারা উপকৃত হ’তে পারেন। তিনি এও বলেছিলেন যে, ‘আপনাদের থাকা-খাওয়া, যাতায়াত ও অন্যান্য সব খরচ আমি বহন করব’। (মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-২, পৃঃ ১২৫-২৬। ) মোদ্দাকথা, ইহসান ইলাহী যহীরের গতিশীল নেতৃত্বে পাকিস্তানে আহলেহাদীছদের মাঝে নবচেতনার উন্মেষ ঘটে। মানুষের মাঝে কুরআন-সুন্নাহর মর্মমূলে জমায়েত হওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। তাঁর ঈর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, জ্বালাময়ী বক্তব্য, দাওয়াতী কর্মতৎপরতা ও বিশ্বব্যাপী পরিচিতির কারণে জমঈয়তের উত্তরোত্তর অগ্রগতি সাধিত হয়। তিনি যদি রাজনীতির গ্যাড়াকলে জড়িয়ে না পড়ে নিরঙ্কুশভাবে আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রচার-প্রসারে নিজেকে নিয়োজিত করতেন, তাহ’লে পাকিস্তানে আহলেহাদীছ আন্দোলন আরো বেশী মযবুত ভিত্তির উপর দন্ডায়মান হ’ত এবং আহলেহাদীছ জামা‘আত তাঁর কাছ থেকে আরো বেশী খেদমত পেত।
 
রাজনীতিতে যোগ দেয়ার কারণ :
আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর (রহঃ) নিছক ক্ষমতালিপ্সার বশবর্তী হয়ে রাজনীতিতে জড়াননি; বরং পাকিস্তানে ইসলামী শরী‘আহ বাস্তবায়নের জন্যএটিকে আল্লাহর পথে দাওয়াতের একটা ক্ষেত্র হিসাবে তিনি বেছে নিয়েছিলেন। তিনি রাজনীতিতে জড়িত থাকা অবস্থায় আক্বীদার ব্যাপারে কখনো আপোষকামিতাকে প্রশ্রয় দেননি এবং আহলেহাদীছ চিন্তাধারার প্রচার-প্রসারে ও নিজেকে আহলেহাদীছ বলে পরিচয় দিতে কখনো বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হননি। রাজনৈতিক অঙ্গনে তাঁর উপস্থিতি সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে আহলেহাদীছদেরকে পরিচিত করেছিল-এতে কোন সন্দেহ নেই। (The life of Shaykh Ihsan Ilahi Zahir, P. 77.)
২. তিনি মনে করতেন যে, ইসলাম সকল যুগ-কাল ও জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। রাষ্ট্রীয় অঙ্গন থেকে ধর্মকে বিদায় দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার বিরুদ্ধে তিনি সর্বদা উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদকে তিনি ইসলামের বিরুদ্ধে সুগভীর ষড়যন্ত্র বলে মনে করতেন। (‘আল-ইস্তিজাবা’, সংখ্যা ১২, যুলহিজ্জাহ ১৪০৭ হিঃ, পৃঃ ৩৫। )
৩. রাজনীতির ময়দানে সক্রিয় থাকাকালে তিনি কখনো সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ (الأمربالمعروفوالنهيعنالمنكر)থেকে বিরত থাকেননি; বরং যখনই রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে শরী‘আত বিরোধী কোন কাজ সংঘটিত হতে দেখেছেন তখনই নির্ভীকভাবে দৃঢ়কণ্ঠে তার প্রতিবাদ করেছেন। যেমন-
ক. একবার এক স্থানে কয়েকজন মন্ত্রী একত্রিত হয়েছিলেন। পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আল্লামা যহীর সেখানে শিরক ও ব্রেলভীদের সম্পর্কে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। অথচ উপস্থিতির মধ্যে অধিকাংশই ব্রেলভী ছিলেন এবং অনেক মন্ত্রীও ব্রেলভীদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তিনি সেখানে বলেন, ‘ব্রেলভীরা মৃত ব্যক্তিদের নিকট সাহায্য চায় এবং এতদুদ্দেশ্যে তাদের কবর যিয়ারত করে। এটা প্রকাশ্য শিরক’। তাঁর বক্তব্য শুনে অনেকে বলা শুরু করে, যদি এটাই ওহাবীদের আক্বীদা হয়, তাহলে আমরাও ওহাবী। কারণ আমাদের অনেকেই মৃত ব্যক্তির নিকট সাহায্য চাওয়া এবং এজন্য তাদের কবর যিয়ারত করায় বিশ্বাস করে না। তাছাড়া ব্রেলভীদের বিরুদ্ধে ‘আল-ব্রেলভিয়া আকাইদ ওয়া তারীখ’ নামে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ লিখেছিলেন। যদি ক্ষমতার প্রতি মোহাবিষ্ট হয়ে তিনি রাজনীতি করতেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের বই লিখে তাদের ক্রোধের পাত্র হতেন না। কারণ সে সময় অনেক মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সাধারণ অনেক মানুষ ব্রেলভী মতবাদে বিশ্বাসী ছিল।
(ড. আলী বিন মূসা আয-যাহরানী, শায়খ ইহসান ইলাহী যহীর মানহাজুহু ওয়াজুহূদুহু ফী তাক্বরীরিল আক্বীদা ওয়ার রাদ্দি আলাল ফিরাকিল মুখালিফাহ (রিয়াদ : দারুল মুসলিম, ১ম প্রকাশ, ১৪২৫হিঃ/২০০৪ খৃঃ), পৃঃ ২২৭-২৮। )
 
খ. একদিন পাঞ্জাবের জনৈক গভর্ণর (সম্ভবত গোলাম মোস্তফা খার) আলেমদেরকে ডেকে তাদেরকে গালি-গালাজ করে শাসান এবং অসম্মান করেন। সেখানে আল্লামা যহীরও উপস্থিত ছিলেন। গভর্ণর তাঁর বক্তব্য শেষ করলে নির্ভীক আল্লাম যহীর তাঁর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন এবং আলেমদেরকে অসম্মান করার পরিণতি ভাল হবে না বলে উল্টো গভর্ণরকে হুঁশিয়ার করে দেন। তাঁর এই সাহসী ভূমিকার জন্য আলেমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। (ড. আলী বিন মূসা আয-যাহরানী, শায়খ ইহসান ইলাহী যহীর মানহাজুহু ওয়াজুহূদুহু ফী তাক্বরীরিল আক্বীদা ওয়ার রাদ্দি আলাল ফিরাকিল মুখালিফাহ (রিয়াদ : দারুল মুসলিম, ১ম প্রকাশ, ১৪২৫হিঃ/২০০৪ খৃঃ), পৃঃ ৫২/৫৩-২৮। )
গ. পাঞ্জাবের আরেকজন গভর্ণর ছূফী মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ৫ম শতকের লাহোরের খ্যাতিমান ছূফী আলী হুজূরী লাহোরীর (মৃঃ ৪৬৫ হিঃ) কবরে গিয়ে বরকত হাছিল করতেন এবং গোলাপজল দিয়ে তার কবর ধুয়ে দিতেন। আল্লামা যহীর তাকে এ শিরকী ও শরী‘আত বিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন। (ড. আলী বিন মূসা আয-যাহরানী, শায়খ ইহসান ইলাহী যহীর মানহাজুহু ওয়াজুহূদুহু ফী তাক্বরীরিল আক্বীদা ওয়ার রাদ্দি আলাল ফিরাকিল মুখালিফাহ (রিয়াদ : দারুল মুসলিম, ১ম প্রকাশ, ১৪২৫হিঃ/২০০৪ খৃঃ), পৃঃ ৫৩-২৮।)
৪. যুলফিকার আলী ভুট্টো তাঁকে তাঁর পসন্দমত যেকোন আরব রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হওয়ার এবং জেনারেল যিয়াউল হক ধর্মমন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। (The life of Shaykh Ihsan Ilahi Zahir, p. 78. ) এসব প্রস্তাবকে পাকিস্তানে ইসলামী শরী‘আহ বাস্তবায়নের আন্দোলন এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ থেকে বিরত রাখার একটা সস্তা মূল্য ও অপকৌশল মনে করে তিনি এ দু’টি প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। যদি তিনি ক্ষমতাগৃধুণ হতেন তাহলে এসব লোভনীয় প্রস্তাব কখনই ফিরিয়ে দিতেন না।
 
৫. জেনারেল যিয়াউল হক তাঁকে ওলামা এডভাইজারী কাউন্সিলের সদস্য করেছিলেন। তিনি পাকিস্তানে ইসলামী শরী‘আহ বাস্তবায়নে আন্তরিক ভেবেই আল্লামা যহীর এই কাউন্সিলে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ভাষায় ‘যখন আমার এই দৃঢ় প্রত্যয় জন্মেছিল যে, জেনারেল মুহাম্মাদ যিয়াউল হক ইসলামী শরী‘আহ বাস্তবায়নে আন্তরিক নন, তখন আমি এডভাইজারী কাউন্সিলের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলাম। (১০/১২ জন আলেমের মধ্যে) আমিই একমাত্র সদস্য ছিলাম, যে নিজেইএডভাইজারী কাউন্সিলকে ত্যাগ করেছিল। আমার সাথে অন্য যে ব্যক্তিরা সেই কাউন্সিলে ছিল তাদেরকে এডভাইজারী কাউন্সিলই পরিত্যাগ করেছিল। তারা শেষ অবধি ওটাকে আঁকড়ে ধরেছিল’। (মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৫৭।) এডভাইজারী কাউন্সিল ত্যাগের পর তিনি যিয়াউল হকের তীব্র বিরোধিতা শুরু করেন। তিনি তাঁকে বলতেন, ‘যদি আপনি কথায় নয় বাস্তবে ইসলামী শরী‘আহ বাস্তবায়ন করেন, তাহলে আমি কস্মিনকালেও আপনার বিরোধিতা করব না’। (ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৫১।) মোটকথা, পাকিস্তানে ইসলামী শরী‘আহ বাস্তবায়নের ঈপ্সিত লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তিনি রাজনীতিতে পদার্পণ করেছিলেন, কিন্তু তাঁর সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। বরং এতে আহলেহাদীছ আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
 
ধর্মতাত্ত্বিক হিসাবে যহীর :
আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীরের বাল্যকাল কাটে জন্মস্থান শিয়ালকোটে। যেখানে কাদিয়ানী, বাহাইয়া, ব্রেলভী, শী‘আ, দেওবন্দী, হানাফী, আহলেহাদীছ প্রভৃতি দলের লোকজন বসবাস করত। প্রত্যেক দলের লোকজন পরস্পর বাহাছ-মুনাযারায় প্রায়শই লিপ্ত হত। আল্লামা যহীরের ভাষায়, ‘এই পরিবেশে জ্ঞানের চোখ উন্মীলন করে দ্বীনীজ্ঞান অর্জনের জন্য শহর-নগর, দেশ-দেশান্তর পরিভ্রমণ করা ইহসান ইলাহী যহীরের চেয়ে ধর্মতত্ত্ব আর কে ভাল বুঝতে পারে’? (মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৪৮।) ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর মধ্যে এসব ফিরকা সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রবলভাবে পরিলক্ষিত হয়। তখন তিনি বন্ধু-বান্ধবদের সাথে নিয়ে বাহাইয়া, কাদিয়ানী ও খৃষ্টানদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতেন তাদের বক্তব্য শোনার জন্য ও তাদের সাথে বাহাছ করার জন্য। শিয়ালকোটে একবার তাঁকে কাদিয়ানী মুবাল্লিগের সাথে মুনাযারার জন্য আহবান জানানো হলে তিনি তাদের প্রস্তাবে সম্মত হন। তবে শর্ত হ’ল- গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর বই তাঁকে পড়ার জন্য ধার দিতে হবে। কাদিয়ানীরা এ শর্তে রাজি হয়ে তাকে ‘আনজামে আছেম’, ‘ইযালাতুল আওহাম’, ‘দুর্রেছামীন’, ‘হাকীকাতে অহী’, ‘সাফীনায়ে নূহ’-এই পাঁচটি বই পড়তে দেয়। প্রথম ও তৃতীয় বইটি তিনি এক রাতে পড়ে শেষ করেন। অন্য বইগুলোও দুই/তিন দিনে পড়ে শেষ করেন। নির্ধারিত দিনে কয়েকজন বন্ধুসহ কাদিয়ানী মসজিদে যান। সেখানে বিতর্কের বিষয় নির্ধারিত হয় ‘গোলাম আহমাদের ভবিষ্যদ্বাণী সমূহ’। কারণ সে তার ভবিষ্যদ্বাণীগুলোকে মিথ্যা নবুঅতের মানদন্ড হিসাবে পেশ করেছিল। তিনি বিতর্কে বলেন যে, গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, আব্দুল্লাহ আছেম ১৫ মাসের মধ্যে মৃত্যুবরণ করবে। (১৮৯৩ সালে আব্দুল্লাহ আছেম নামে এক খৃষ্টান অমৃতসরে গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীর সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়। দীর্ঘ বিতর্কে তারা কেউই বিজয়ী হতে পারেনি এবং কোন ফলাফলে পৌঁছতে পারেনি। ফলে নিজের লজ্জা ঢাকবার প্রয়াসে গোলাম আহমাদ ১৮৯৩ সালের ৫ জুন ঘোষণা করে যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে জানানো হয়েছে যে, পনের মাস তথা ১৮৯৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আব্দুল্লাহ আছেম মারা যাবে। কিন্তু ঐদিন সে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ না করার ফলে ভন্ড নবী গোলাম আহমাদের ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যায় পর্যবসিত হয়। আব্দুল্লাহ আছেম এরপরেও অনেক দিন বেঁচেছিলেন। যহীর তাঁর বিতর্কে এ বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। দ্র. আল-কাদিয়ানিয়্যাহ, পৃঃ ১৬৩-১৬৭।) কিন্তু সে এ সময়ের মধ্যে মরেনি। কাজেই তোমাদের কথিত ভন্ড নবীর ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক না হওয়ায় সে যে মিথ্যা নবুঅতের দাবীদার তা সপ্রমাণিত হল। কারণ নবীদের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো সঠিক হয়। যহীরের এ যুক্তিতে কাদিয়ানী মুবাল্লিগের চেহারা বিবর্ণ হয়ে যায়। সে প্রত্যুত্তর দেয়ার চেষ্টা করে যহীরের অকাট্য দলীলের কাছে ব্যর্থ হয়ে নতি স্বীকার করে বলে, আমি তার্কিক নই। ‘রাবওয়া’ থেকে কাদিয়ানী বিতার্কিক আসলে আমি তোমাদেরকে তার সাথে বাহাছের জন্য ডাকব। এভাবে সেখান থেকে যহীর ও তার বন্ধুরা বিজয়ীবেশে ফিরে আসেন এবং কাদিয়ানীদের আরো কিছু বই পড়ার জন্য ধার নিয়ে আসেন। আল্লামা যহীরবলেন, وهكذابدأةأدرسهذاالمذهببدونأيةواسطة. ‘এভাবে কোন মাধ্যম ছাড়াই আমি এই ফিরকা সম্পর্কে অধ্যয়ন করতে শুরু করি’। (আল-কাদিয়ানিয়্যাহ, পৃঃ ৭-৮।)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top