What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মনীষী চরিতঃ আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর (3 Viewers)

দেশে কোন ফিকহ চলবে :
এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা কোন ফিকহের-ই বাস্তবায়ন চাই না। কেননা মানুষেরা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় কোন নির্দিষ্ট ফিকহ বাস্তবায়নের জন্য জীবন উৎসর্গ করেনি। ইসলামের নামে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এবং এখানে স্রেফ কুরআন ও সুন্নাহর ইসলাম বাস্তবায়ন হওয়া উচিত। কুরআন ও সুন্নাহ এমন দু’টি জিনিস যার উপর সকল শ্রেণী ও রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত হতে পারে’। (মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১, পৃঃ ৫৯।)
ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে আল্লামা যহীর :
১.সাবেক সঊদী গ্র্যান্ড মুফতী শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ) বলেন, الشيخإحسانإلهيظهيررحمهاللهمعروفلدينا،وهوحسنالعقيدة،وقدقرأتبعضكتبهفسرنيماتضمنتهمنالنصحللهولعبادهوالردعلىخصومالإسلام. ‘শায়খ ইহসান ইলাহী যহীর (রহঃ) আমাদের নিকট সুপরিচিত। তাঁর আক্বীদা ভাল। আমি তাঁর কতিপয় গ্রন্থ পড়েছি। আল্লাহ ও তাঁর বান্দাদের জন্য তাতে যে নছীহত এবং ইসলামের শত্রুদের প্রত্যুত্তর রয়েছে, তা আমাকে আনন্দিত করেছে’। তিনি বলেন, نعمالرجلوجهودهطيبةفيالدعوةإلىالله. ‘তিনি অত্যন্ত ভাল ব্যক্তি। আর আল্লাহর পথে দাওয়াতের ক্ষেত্রে তাঁর প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়’। তিনি আরো বলেন, لهمآثرجميلة،ومؤلفاةطيبةنافعة. ‘তাঁর চমৎকার কীর্তি ও উপকারী ভাল বইপত্র রয়েছে’।
২. শায়খ আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-জিবরীন বলেন, كرسالشيخرحمهاللهجهودهفيالردعلىالمبتدعةوالذبعنالسنةونصرها. ‘শায়খ যহীর (রহঃ) বিদ‘আতীদের মত খন্ডন এবং হাদীছের প্রতিরক্ষা ও সহযোগিতায় তাঁর প্রচেষ্টা নিয়োজিত করেছিলেন’।
৩. মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ বলেন, ولهجهودطيبةفيالردعلىأهلالبدعوكشفباطلهم،ولهمؤلفاتكثيرةفيذلك. ‘বিদ‘আতীদের মত খন্ডন ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদার স্বরূপ উন্মোচনে তাঁর প্রচেষ্টা ছিল প্রশংসনীয়। এ বিষয়ে তাঁর অনেক বই-পুস্তকও রয়েছে’।
৪. মক্কার হারামের ইমাম শায়খ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আস-সুবাইল বলেন, فضيلةالشيخإحسانإلهيظهيرعالمجليلوداعيةبصيرمنعلماءأهلالسنةوالجماعةفيباكستانومنالدعاةالمشهورينهناك. ‘মাননীয় শায়খ ইহসান ইলাহী যহীর পাকিস্তানের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের সম্মানিত আলেম এবং সেখানকার দূরদর্শী ও খ্যাতিমান দাঈ’। তিনি আরো বলেন, ويتمتعبقوةفيالحجةوشدةفيالتأثيرفيخطبهومواعظه. ‘তিনি দলীল-প্রমাণের বলিষ্ঠতা এবং তাঁর বক্তৃতা ও ওয়ায-নছীহতে প্রচন্ড প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন’।
(ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৯৩-৯৭।)
 
৫.সঊদী সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ সদস্য শায়েখ ছালেহ বিন মুহাম্মাদ আল-লিহীদান বলেন, وكانلحماسهواندفاعهفيدفاعهعنالعقيدةأثرهفيبلادالباكستانوغيرها. ‘আক্বীদার প্রতিরক্ষায় তাঁর উৎসাহ-উদ্দীপনার পাকিস্তান ও অন্যত্র প্রভাব ছিল’। (দিরাসাত ফিত-তাছাওউফ, পৃঃ ৫।) তিনি আরো বলেন, فقدكانمجاهدابلسانهوقلمه. ‘তিনি তাঁর বক্তৃতা ও লেখনীর মাধ্যমে একজন মুজাহিদ ছিলেন’।
৬. শায়খ আব্দুর রহমান আল-বাররাক বলেন, اشةهربجهادهللرافضة. ‘তিনি রাফেযীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিলেন’।
৭. শায়খ আব্দুল্লাহ আল-গুনায়মান বলেন, قلَّأنيُوجدمثلهفيشجاعتهفيمواجهةالباطلوردهبالأدلةالمقنعة. ‘বাতিলের প্রতিরোধ ও যথোপযুক্ত দলীল দ্বারা তার জবাব দানের ক্ষেত্রে তাঁর মতো দুঃসাহসী ব্যক্তির নাগাল খুব কমই পাওয়া যায়’।
৮.ড. অছিউল্লাহ মুহাম্মাদ আববাস বলেন, ولهجهودجبارةفيةوجيهالشبابإلىالعقيدةالسلفية. ‘যুবকদেরকে সালাফী আক্বীদার দিকে পরিচালিত করার জন্য তাঁর দারুণ প্রচেষ্টা ছিল’।
৯.মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য প্রফেসর শায়খ রবী আল-মাদখালী বলেন, عرفتهمجاهدافيميدانالعقيدة. ‘আক্বীদার ময়দানে আমি তাঁকে একজন মুজাহিদ হিসাবে জেনেছি’।
১০.শায়খ আব্দুল আযীয আল-ক্বারী বলেন, إنهكانمقاتلامنالطرازالأول،لابالسنانولكنبالفكروالتعلمواللسان. ‘তিনি প্রথমশ্রেণীর যোদ্ধা ছিলেন। তবে বর্শা তথা অস্ত্রের মাধ্যমে নয়; বরং চিন্তা-গবেষণা, শিক্ষা-দীক্ষা ও বক্তৃতার মাধ্যমে’।
১১. শায়খ মুহাম্মাদ নাছের আল-উবূদী বলেন, لقدعاشالشيخإحسانإلهيحميداومضىشهيداإنشاءالله. ‘শায়খ ইহসান ইলাহী প্রশংসিত ব্যক্তিরূপে বেঁচে ছিলেন এবং ইনশাআল্লাহ শহীদ হয়েই (পরপারে) চলে গেছেন’
১২. ড. মারযূক বিন হাইয়াস আয-যাহরানী বলেন, كانعالماذكيافذًّاشجاعا،حسنالأخلاق،يقولرأيهولايهابالعواقب. ‘তিনি অত্যন্ত মেধাবী, অনন্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, সাহসী ও চরিত্রবান আলেম ছিলেন। পরিণামের ভয় না করে তিনি তাঁর মত ব্যক্ত করতেন’।
(ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৯৯-১০৩, ১০৫-১০৬।)
 
১৩. জীবনীকার মুহাম্মাদ বিন ইবরাহীম আশ-শায়বানী বলেন,كانشجاعافيقولهالحق،باحثاعنالحقيقة،ناصحالأمته. ‘তিনি হক কথা বলায় সাহসী, সত্যানুসন্ধানী এবং তাঁর জাতিকে নছীহতকারী ছিলেন’। (শায়বানী, ইহসান ইলাহী যহীর, পৃঃ ২।)
১৪. ড. আলী বিন মূসা আয-যাহরানী বলেন, كانصاحبخلق،وورع،وكرم،قويالإيمان،شديدالتمسكبدينهقويفيالصدعبالحق. ‘তিনি চরিত্রবান, আল্লাহভীরু, দানশীল, সুদৃঢ় ঈমানের অধিকারী, দ্বীনকে কঠিনভাবে অাঁকড়ে ধারণকারী এবং হক কথা প্রচারে নির্ভীক ছিলেন’। (ড. যাহরানী, প্রাগুক্ত, পৃঃ ৪৯।)
১৫. ড. লোকমান সালাফী বলেন, هوالخطيبالمسقعالعظيمالذيلميعرفلهمثيلفيتاريخباكستان،وقدشهدلهبالعظمةفيهذاالشأنالقاصي،والداني،والصديق،والعدو. ‘তিনি অনলবর্ষী শ্রেষ্ঠ বাগ্মী, পাকিস্তানের ইতিহাসে যার সমতুল্য কেউ নেই। এক্ষেত্রে তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে নিকটবর্তী-দূরবর্তী এবংশত্রু-মিত্র সবাই সাক্ষ্য প্রদান করেছে’। (‘আল-ইস্তিজাবাহ’, সংখ্যা ১২, যুলহিজ্জাহ ১৪০৭হিঃ, পৃঃ ৩৩-৩৪; ‘আদ-দাওয়াহ’, সংখ্যা ১০৮৭, ১৫/৮/১৪০৭ হিঃ, পৃঃ ৪০-৪১।) তিনি আরো বলেন, هوالكاتبالبارعالفذالذيقمعبقلمهالسيالقصورالباطل،وهدمبنيانالفرقالباطلةهدماليسبعدههدم. ‘তিনি সেই শ্রেষ্ঠ ও অনন্য লেখক, যিনি তাঁর গতিশীল লেখনীর মাধ্যমে বাতিলের রাজপ্রাসাদকে পর্যুদস্ত করেছিলেন এবং বাতিল ফিরকাগুলোর ভিত্তিগুলোকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন’। (‘আল-ইস্তিজাবাহ’, সংখ্যা ১২, যুলহিজ্জাহ ১৪০৭ হিঃ।)
 
১৬. ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জমঈয়তে আহলেহাদীছের শুববান বিভাগের সাবেক পরিচালক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের তদানীন্তন সহকারী অধ্যাপক (বর্তমানে প্রফেসর ও আমীর, আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ) মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব আল্লামা যহীরের মৃত্যুতে লাহোরে একটি শোকবার্তা পাঠান। যেটি লাহোর থেকে প্রকাশিত ‘মুমতায ডাইজেস্ট’ বিশেষ সংখ্যা-১, সেপ্টেম্বর ’৮৭-তে ‘মাকতূবে বাংলাদেশ : আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর কি শাহাদত পর ইযহারে গাম’ (বাংলাদেশের চিঠি : আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীরের শাহাদতে শোক প্রকাশ) শিরোনামে প্রকাশিত হয়। উর্দূ ভাষায় প্রেরিত উক্ত শোকবার্তায় তিনি বলেন, ‘জমঈয়তে আহলেহাদীছ পাকিস্তান-এর সেক্রেটারী জেনারেল আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীরের শাহাদতে আমরা সবাই আন্তরিকভাবে ব্যথিত ও মর্মাহত। বাংলাদেশের আহলেহাদীছ ছাত্র ও যুবকদের পক্ষ থেকে আমি গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। আল্লাহপাক মরহূম আল্লামাকে স্বীয় খাছ রহমত ও মাগফিরাতে সম্মানিত করুন এবং তাঁর উত্তরাধিকারী ও আত্মীয়-স্বজনকে পরম ধৈর্যধারণের ক্ষমতা দান করুন। আমীন!
 
আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর ছিলেন তার সময়ের অতুলনীয় বাগ্মী, লেখক, সংগঠক, আলেমে দ্বীন ও আহলেহাদীছ আন্দোলনের নির্ভীক মুজাহিদ। মুশরিক, বিদ‘আতী ও দ্বীন বিকৃতকারীদের বুকে কম্পন সৃষ্টিকারী, নির্ভীক সত্যভাষী আল্লামা যহীরের মৃত্যু এভাবে হওয়াটাই মর্যাদাকর ছিল। জিহাদের ময়দানের সেনাপতিকে খ্যাতির শীর্ষে চমকানো অবস্থায় মহান প্রভু স্বীয় রহমতের ছায়াতলে টেনে নিলেন। আল্লামা যহীর কি চলে গেছেন? শত্রুরা তাকে মেরে ফেলেছে? কখনোই না। আল-কাদিয়ানিয়াহ, আল-বাহাইয়াহ, আশ-শী‘আহ ওয়াল কুরআন, আল-ব্রেলভিয়া এবং তার অন্যান্য মূল্যবান গ্রন্থাবলী, সংবাদপত্র, তার তর্জুমানুল হাদীছ, জমঈয়তে আহলেহাদীছ সবই তো তাঁর জীবন্ত কীর্তি। ফেব্রুয়ারী ’৮৫-এর ঢাকা কনফারেন্সে তাঁর অগ্নিঝরা ভাষণ তো আমরা এখনো শুনতে পাচ্ছি। বাংলাদেশে আগামী সফরে তিনি বাংলায় ভাষণ দিবেন বলে ওয়াদা করে গেছেন। আর আমরা ‘আহলেহাদীছ যুব সংঘে’র পক্ষ থেকে তাঁকে সেদিন ‘শেরে পাকিস্তান’ খেতাব দিয়ে সম্মানিত করব বলে দৃঢ় সংকল্প নিয়েছিলাম। এখন মৃত্যুর পরে কি তাঁকে আমরা উক্ত লকব দিতে পারি না? এরূপ অতুলনীয় নেতার মৃত্যুতে পাকিস্তানীদের এবং বিশেষ করে আহলেহাদীছ জামা‘আত ও জমঈয়তের যে অপরিসীম ক্ষতি সাধিত হয়েছে, আল্লাহ পাক তাঁর খাছ রহমতে তার উত্তম বিনিময় দান করুন! আমীন’!! (অনূদিত) (মুমতায ডাইজেস্ট, বিশেষ সংখ্যা-১ (লাহোর : সেপ্টেম্বর ১৯৮৭), পৃঃ ১২৩।) ২৪.০৯.২০১১ তারিখে লেখককে দেওয়া এক লিখিত তথ্যে তিনি বলেন, ‘যহীর আমার সাময়িককালের বন্ধু ছিলেন। প্রথমে কলমী, পরে সরাসরি। আমি তাঁকে ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমায় বক্তা হিসাবে দাওয়াতনামা পাঠিয়েছিলাম। তিনি তা কবুল করেছিলেন। কিন্তু তার আগেই তিনি শাহাদাত লাভ করেন।
 
১৯৮৫ সালে ঢাকায় জমঈয়ত কনফারেন্সে তাঁকে আনার মূল ভূমিকায় ছিলাম আমি। কেন জানিনা ডক্টর ছাহেব তাঁকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারেননি। তাই তাঁকে মাত্র ১৫ মিনিট সময় দেন বক্তৃতার জন্য। যার জন্য হাযারো মানুষের আগমন, যার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে হাযারো শ্রোতা, তাঁর জন্য এত সংক্ষিপ্ত সময় নির্ধারণ কেউই মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু সভাপতির আদেশ শিরোধার্য। আমার বিরূপ মনোভাব বুঝতে পেরে যহীর মাইকের কাছে যাওয়ার আগে আমার হাতে হাত রেখে বললেন, ‘দিল খারাব না কী জিয়ে’ (মন খারাব করবেন না)। তারপর মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে হামদ ও ছানা শেষে ভাষণ শুরুর এক পর্যায়ে ঝলসে উঠে বললেন, ছদরে জালসা মুঝে পন্দ্রা মিনিট টাইম দিয়ে হ্যাঁয়। ওহ নেহী জানতে হ্যাঁয় কে যহীর কো গরম হোনেকে লিয়ে পন্দ্রা মিনিট লাগতা হ্যায়’ (সভাপতি ছাহেব আমাকে ১৫ মিনিট সময় দিয়েছেন। উনি জানেন না যে, যহীরের গরম হ’তেই ১৫ মিনিট সময় লাগে)। এতেই শ্রোতারা সব গরম হয়ে উঠলো। ওদিকে যহীরের বক্তৃতায় আগুনের ফুলকি বের হতে লাগলো। শুরু হ’ল আহলেহাদীছের সত্যতার উপরে একের পর এক কোটেশন টানা ও তার আবেগঘন ব্যাখ্যা। অগ্নিঝরা ভাষণ, অপূর্ব বাকভঙ্গি, যুক্তি আর চ্যালেঞ্জের দাপট, সব মিলে পুরা সম্মেলনটাই হয়ে গেল যহীরময়। সভাপতি ছাহেবও অপলক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছেন এই তরুণ পাকিস্তানী সিংহের প্রতি। ১৫ মিনিট পেরিয়ে কখন যে সময় ঘণ্টার কাছাকাছি চলে গেছে, কারুরই খেয়াল নেই। যহীর এবার শেষ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন-‘বিদ‘আতী লোগো! আগার আহলেহাদীছ কা এক মাসআলা ভী তোম ছহীহ হাদীছ কে খেলাফ দেখানা সেকো তো লে আও। তোমহারে লিয়ে যহীর হাফতা ভর হোটেল মেঁ ইন্তেযার করে গা’ (বিদ‘আতীরা শোনো। যদি তোমরা আহলেহাদীছের একটি মাসআলাও ছহীহ হাদীছের খেলাফ দেখাতে পারো, তবে নিয়ে আস। তোমাদের জন্য যহীর হোটেলে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করবে)। সমস্ত সম্মেলন মুহুর্মুহু তাকবীর ধ্বনিতে ফেটে পড়ল। দক্ষ শিল্পীর মত যহীর এবার দপ করে নিভে গেলেন ও ভাষণ শেষ করে পিছন ফিরে আমার হাত ধরে মঞ্চ থেকে নেমে এসে সোজা একটানে হোটেল ‘শেরাটন’। সেখানে এসে চলল বহুক্ষণ তার সরস আলাপচারিতা। সেই সাথে রাগ-ক্ষোভ অনেক কিছু। পাকিস্তান জমঈয়তের নেতাদের সাথে বাংলাদেশ জমঈয়তের নেতার মনোভঙ্গি ও আচরণের সাথে তিনি অনেক মিল খুঁজে পেলেন এবং আমাকে হিম্মত নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার ব্যাপারে উৎসাহ দিলেন। তার তেজস্বিতা, ও জস্বিনী ভাষণ, খোলামেলা আলাপচারিতা ও এক দিনের বন্ধুসুলভ আচরণ আমি আজও ভুলতে পারিনা। শত্রুর বোমা তাকে সরিয়ে নিয়ে গেছে আমাদের কাছ থেকে। কিন্তু ঢাকায় তার ঐতিহাসিক ভাষণের অগ্নিঝরা কণ্ঠ আজও আমাদের কানে ভাসছে। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নছীব করুন- আমীন!’
১৭. Wikipedia-তে বলা হয়েছে, Allama Ihsan Elahi Zaheer was a Ahle-Hadeeth Muslim great scholar of Islam as well as Author from Pakistan. ‘আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর একজন বড় মাপের পাকিস্তানী আহলেহাদীছ আলেম ও লেখক ছিলেন’।
(ww. wikipedia. org.)
 
উপসংহার :
পরিশেষে বলা যায়, আল্লামা ইহসান ইলাহী যহীর (রহঃ) বিংশ শতকে আল্লাহর পথে দাওয়াতের ময়দানে নিয়োজিত এক নিবেদিত প্রাণ অকুতোভয় সিপাহসালার ছিলেন। পাকিস্তানে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের ঝান্ডা উড্ডীন করার দৃপ্ত শপথ নিয়ে তিনি ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। অগ্নিঝরা বক্তৃতা, ক্ষুরধার লেখনী ও সাংগঠনিক তৎপরতার মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানে আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রচার-প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ঘুমন্ত আহলেহাদীছ জামা‘আতকে অল্প সময়ের মধ্যেই জাগিয়ে তুলে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও আত্মোপলব্ধির বীজ বপন করেন।
শী‘আ, কাদিয়ানী, ব্রেলভী, বাহাইয়া, বাবিয়া প্রভৃতি বাতিল ফিরকাগুলো ইসলামের শ্বেত-শুভ্র রূপকে কালিমালিপ্ত করার যে অপপ্রয়াস চালাচ্ছিল, তার বিরুদ্ধে আল্লামা যহীর গবেষণালব্ধ বই-পত্র লিখে বিশ্বের কাছে তাদের স্বরূপ উন্মোচন করেছিলেন। এসব পথভ্রষ্ট ফিরকার আক্বীদা-বিশ্বাস তাদের লিখিত গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করে শক্তিশালী দলীল ও যুক্তির মাধ্যমে তিনি সেগুলো এমনভাবে খন্ডন করতেন যে, তারা তা মুকাবিলা করার দুঃসাহস দেখাত না। তাঁর বই-পুস্তক পড়ে এসব ফিরকার অনেকেই তওবা করে সঠিক পথে ফিরে এসেছেন।ফালিল্লাহিল হামদ


‘খতীবে মিল্লাত’ ‘খতীবে কওম’ রূপে অভিহিত আল্লামা যহীর ছিলেন সময়ের সেরা বাগ্মী। তাঁর অগ্নিঝরা বক্তৃতা হক পিয়াসীদের মনে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের প্রদীপ প্রজ্বলিত করত, আর বাতিলপন্থীদের বুকে থরথর কম্পন সৃষ্টি করত। তাঁর বলিষ্ঠ চ্যালেঞ্জের কাছে বিদ‘আতী, কবরপূজারী ও পথভ্রষ্ট ফিরকার লোকজন ছিল অসহায়-নিরুপায়। আল্লাহর পথে দাওয়াতে অন্তঃপ্রাণ এই বিরল আহলেহাদীছ প্রতিভা খ্যাতির শীর্ষে দেদীপ্যমান থাকা অবস্থায় কুচক্রীদের বোমার আঘাতে মাত্র ৪২ বছর বয়সে ১৯৮৭ সালের ৩০ মার্চ দপ করে নিভে যান। মহান আল্লাহ তাঁকে তাঁর রহমতের বারিধারায় সিক্ত করুন এবং জান্নাতুল ফেরদৌসে ঠাঁই দিয়ে সম্মানিত করুন! আমীন!!
 

Users who are viewing this thread

Back
Top