অনেকেই হয়তো জানি না, তরমুজের লাল অংশটি ছাড়াও এর বাকি অংশও খাওয়া যায়। তরমুজের খোসাও বেশ উপকারী এবং দারুণ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে পানি, সামান্য ক্যালরি, ভিটামিন, মিনারেল ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। তাই পুষ্টিকর অংশ ফেলে না দিয়ে বরং এর উপযুক্ত ব্যবহার করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
বাজারে যেসব মৌসুমি ফল পাওয়া যাচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো তরমুজ। একদিকে গ্রীষ্মকাল অন্যদিকে রমজান মাস হওয়ায় রসাল মিষ্টি স্বাদযুক্ত ফলটির চাহিদা বেশ। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদানসমৃদ্ধ তরমুজ আমাদের শরীরে প্রশান্তি আনে, পূরণ করে পানির ঘাটতি। কিন্তু আমরা অনেকেই হয়তো জানি না, তরমুজের লাল অংশটি ছাড়াও এর বাকি অংশও খাওয়া যায়। অর্থাৎ, এর খোসাও বেশ উপকারী এবং দারুণ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ।
তরমুজের খোসায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং সামান্য ক্যালরি। এ ছাড়া অল্প পরিমাণে হলেও আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি ৬ এবং জিঙ্ক। আরও আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড, সিট্রালিন, লাইকোপেন, ফেনলিক যৌগ, ফ্ল্যাভোনয়েডসহ আরও নানা পুষ্টি উপাদান। এসব পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে
তরমুজের খোসায় ক্যালরির পরিমাণ কম থাকায় এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে দারুণ সহায়ক। এ ছাড়া এতে থাকা ফাইবার বা আঁশ বিপাকক্রিয়াতেও সাহায্য করে। যাঁরা ওজন কমাতে চাইছেন, তাঁরা খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন তরমুজের খোসা। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই খোসার শুধু সাদাটে অংশটুকু গ্রহণ করবেন, বাইরের দিকে সবুজ অংশটি ফেলে দেবেন। তা না হলে হজমে গোলযোগ দেখা দিতে পারে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে
তরমুজের খোসায় রয়েছে ভিটামিন সি। আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভিটামিন সি দারুণ কার্যকরী এক উপাদান। করোনাকে প্রতিহত করতে সচেতনতার পাশাপাশি জরুরি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ। তাই এরপর থেকে তরমুজের শুধু লাল অংশটিই নয়, গ্রহণ করুন খোসাও।
ত্বকের সুস্থতায়
বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ত্বকে বলিরেখা তৈরি হয়, দেখা দেয় নানা রকম দাগ। তরমুজের খোসায় রয়েছে লাইকোপেন, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট উপাদান। এগুলো ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং বলিরেখা, দাগ ইত্যাদি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করে।
ছবি: উইকিপিডিয়া
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
তরমুজের খোসায় উপস্থিত সিট্রালিন একধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড। এটি রক্তনালিগুলোকে প্রসারিত করতে এবং রক্তসঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে। এতে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে। এ ছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, সিট্রালিন পুরুষের যৌন সুস্থতায় কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
সুনিদ্রায় সহায়তা করে
তরমুজের খোসায় জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি থাকায় দেহের পানিশূন্যতা পূরণ করে, দেহকে সতেজ রাখার পাশাপাশি খাদ্য দ্রুত হজমেও সাহায্য করে। এতে ঘুম ভালো হয়। এ ছাড়া লাইকোপেন–জাতীয় উপাদানের উপস্থিতি থাকায় তরমুজের খোসা জ্বালাপোড়া কমিয়ে আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে মজাদার তরমুজের দাম এখন একটু চড়া আর খোসা ফেলে দিলে আসলে এর অনেকখানি অংশই অপচয় হয়ে যায়। তাই এই পুষ্টিকর অংশটি ফেলে না দিয়ে এর উপযুক্ত ব্যবহার করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। এখন কথা হলো, কীভাবে খাবেন এই খোসা? তরমুজের খোসার একটি জনপ্রিয় রেসিপি হলো এর খোসা টুকরো টুকরো করে কেটে তরকারি রান্না করা। অনেকে ডাল বা চিংড়ি মাছসহ বিভিন্ন মাছ দিয়ে রান্না করেন।
কেউ আবার ভাজি করেও খান। তবে পুষ্টিমান অটুট রাখতে কাঁচা খাওয়াই উত্তম। এ ক্ষেত্রে হালকা লেবু, বিট লবণ মিশিয়ে সালাদ বানাতে পারেন। আবার চাইলে বরফকুচি, পুদিনাপাতা ও লেবুর রসসহযোগে ব্লেন্ড করে জুস বানিয়েও খেতে পারেন। এ ছাড়া সাধারণ খাওয়ারযোগ্য পানিতে বরফের টুকরা, তরমুজের খোসার টুকরা, পুদিনাপাতা, লেবু ইত্যাদি ভিজিয়ে রেখে ডিটক্স ওয়াটার বানাতে পারেন।