২
থানায় ঢোকার আগে হাত পা গুলো থর থর করে কাঁপছিল। এর আগে যে আমি কোনোদিন থানায় আসিনি তা নয়, কর্মসূত্রে বহুবারই থানায় আসতে হয়েছে। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। খুনের কেসে তলব পড়েছে এবং তলব পড়েছে মানে আমি নিশ্চয়ই সন্দেহভাজনদের তালিকায় রয়েছি। কোনরকমে মনটা শক্ত করে ভেতরে ঢুকলাম। দেখি সামনেই দুখানা হাবিলদার দাঁড়িয়ে আছে আর বারান্দায় বেশ কয়েকটা চেয়ার পাতা। ভেতরে ঢুকতেই বুকে কিছুটা বল পেলাম কারন চেয়ারে রবি, আমাদের ম্যানেজার মৃণাল ও মার্কেটিং হেড চিন্ময় বসে আছে। আমাকে দেখা মাত্র রবি এগিয়ে এলো। রবি আমার জুনিয়র, বরাবর আমার সাথে ওর সম্পর্ক ভালো।
“আরে বিপ্লবদা কি বিপদ বলতো। তোমরা নাহয় একসাথে কাজ করেছ মনীন্দ্রবাবুর সাথে কিন্তু আমি তো জয়েন করার ২-৩ বছর আগেই উনি মুম্বাইয়ের ব্রাঞ্চে ট্রান্সফার হয়ে গিয়েছিলেন।” রবির চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ছেলেটা খুব ভয় পেয়ে গেছে।
পেছন থেকে মৃণাল স্যার বলে উঠলেন “আহ রবি, সব জায়গায় এরকম ইমম্যাচিওরড বিহেভ কোরোনা। থানায় কাউকে ডাকা মানেই খুনের কেসে আসামী বানিয়ে দেওয়া নয়। আর তুমি কি একা নাকি, আমাদের সবাইকেই তো ডেকেছে?”
রবি হয়ত কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু ম্যানেজারের ওপর কথা বললে যে প্রোমোশন হবেনা। এটাকে কর্পোরেট লাইফে অভ্যাসে পরিনত করে ফেলতে হয়। আমি মৃণালবাবুর পাশে বসে পড়লাম।
“বিপ্লব, কি মনে হচ্ছেও তোমার?” মৃণালবাবু ঠিক কি জিজ্ঞেস করেছেন তা বোঝার আগেই উনি বলে উঠলেন “আমার মনে হয় দাম্পত্য প্রবলেম। মিসেস বসু এখনো ভেতরেই আছেন। প্রায় ২ ঘণ্টা হয়ে গেলো পুলিশ ওনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।”
আমার মুখ ফস্কেই হয়তো কথাটা বেরিয়ে গেলো “না স্যার, আমি বৌদিকে খুব ভালো করেই চিনি। এটা অন্য কোন ব্যাপার। আচ্ছা, স্যার, আমি তো কিছুই এখনো শুনিনি। মনিদার মৃত্যুটা কি করে হল?”
বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে মৃণালবাবু বলে উঠলেন “বিপ্লব, এটাই তো সবচেয়ে গোলমেলে। সোজা চোখে যা লাগছে আর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সম্পূর্ণ বিপরীত।” আমি কিছুই বুঝলাম না। মৃণালবাবুকে আরোও বিশদে জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ একজন হাবিলদার ভেতর থেকে এসে বলল “চলুন আপনাদের বড়বাবু ডাকছেন।” হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম এই ভেবে যে আলাদা করে জেরা করা হবেনা। আমরা সবাই একসাথেই যাবো। এক এক করে সবাই ভেতরে ঢুকলাম।
চেয়ারে বসে আছেন একজন মধ্যবয়স্ক ভুঁড়িওয়ালা রাশভারী লোক। সেই মুহূর্তেই বৌদি অর্থাৎ প্রয়াত মনীন্দ্রদার স্ত্রী চেয়ার থেকে উঠে বাইরের দিকে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ খ্যারখ্যারে গলায় সেই ভদ্রলোক চেঁচিয়ে বলে উঠলেন “এই যে ম্যাডাম, আপনাকে কিন্তু বাইরে অপেক্ষা করতে বলেছি, এখান থেকে যাওয়ার অনুমতি দিইনি।”
এতক্ষন মনের মধ্যে যে সাহসের সঞ্চার হয়েছিল তা তো নিভে গেছিলোই কিন্তু তার পরের কথাটা শুনে তো আমার বিচি মাথায় উঠে গেলো। বড়বাবু আবার সেই খ্যারখ্যারে গলাটায় চেঁচিয়ে বললেন (হয়তো ইঙ্গিতটা আমাদের সবার দিকেই ছিল) “পাশের বাড়ির লোককে চেনেনা শালা ফেসবুকে বন্ধুত্ব পাতানো হচ্ছে, অচেনা লোকের সাথে।”
“হ্যাঁ বলুন এক এক করে আপনাদের নাম বলুন।” হাতে একটা সাদা চিরকুট নিয়ে ইঙ্গিতটা যে বড়বাবু আমাদের দিকেই করলেন তা আমরা বুঝলাম। এক এক করে সবাই নিজের নাম বলা শুরু করল। সবার শেষে রবি নিজের নামটা বলল। হঠাৎ করে বড়বাবু নিজের চশমাটা একটু ওপরে তুলে খেঁকিয়ে বলে উঠলেন “রবি মানে রবীন মিত্র তাইতো। আচ্ছা আপনি তো ৩ বছর এই ব্রাঞ্চে আছেন। আপনি মনীন্দ্র বাবুর ফ্রেন্ডলিস্টে আসেন কি করে?” রবির কপাল দিয়ে ততক্ষনে ঘাম ঝরতে শুরু করে দিয়েছে। বড়বাবুও সেটা খেয়াল করলেন ও পেশাদার গোয়েন্দার মত নিজের মেজাজটা আরও উঁচু করে বলে উঠলেন “কি হল উত্তর দিন। মনীন্দ্র বাবু ৫ বছর আগে মুম্বাইয়ে শিফট করেছিলেন। আপনি ওনাকে কি করে চিনলেন? ওনার স্ত্রী সুমিতা দেবীর ফ্রেন্ডলিস্টেও বা আপনার নাম কি করে এলো? উত্তর দিন।”
রবি কপালের ঘামটা ঝাড়তে ঝাড়তে উত্তর দিলো “স্যার, সত্যি বলছি মনীন্দ্র বাবুকে চিনিনা। ফেসবুকে আমাদের ব্যাঙ্কের নামের একটা পেজ রয়েছে। সেখান থেকে জানতে পেরেছিলাম উনি আমাদের ব্যাঙ্কের এক ম্যানেজার। তাই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম।” উত্তরটা যে বড়বাবুর খুব একটা পছন্দ হয়নি তা ওনার মুখ দেখে ও পরের প্রশ্নটা শুনেই বোঝা গেলো “তা ওনার বউ কোন ব্যাঙ্কে চাকরি করে যে ওনাকেও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টটা পাঠাতে গেলেন?” আমি একবার রবির মুখের দিকে ও একবার বড়বাবুর মুখের দিকে তাকাচ্ছি। জানি রবি একদম ঘাবড়ে গেছে। চিন্ময় এমবিএ করা ছেলে, চিন্ময়ই নিজের ম্যানেজমেন্ট সেন্স নিয়ে এগিয়ে এলো।
“স্যার, ফেসবুকে আমিও অনেক অচেনা অজানা লোককে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই। তাদের কাউকে আমি চিনিওনা জানিওনা। এটা কোন অনৈতিক কাজ নয়।” চিন্ময়ের কথা শুনে মনে মনে বলে উঠলাম সাবাশ চিনু তোর ইনসেন্টিভ আটকায় কে আমিও দেখছি। চিন্ময়ের দেখাদেখি মৃণাল স্যারও বলে উঠলেন “স্যার, আমরা কেউ চোর ডাকাত নই। আমরা ব্যাঙ্কের কর্মী, প্রত্যেকেই অত্যন্ত সুনামের সাথে কাজ করি। আমরা এটা কথা দিচ্ছি যে আমরা পুলিশকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করব।” আমি একবার বড়বাবুর মুখের দিকে আর একবার ওদের মুখের দিকে তাকাচ্ছি। বড়বাবুর মুখটা দেখে মনে হল উনি একটু হলেও আমাদের বিশ্বাস করেছেন। কিন্তু ওই যে পুলিশের স্বভাব; সন্দেহ আর মেজাজ ছাড়া কি পুলিশ হয় নাকি। একটু নিচু স্বরে বড়বাবু বলে উঠলেন “জানি আপনারা চোর ডাকাত নন। আর এই খুনটা কোন চোর ডাকাত করেনি, আপনাদের মত ঠাণ্ডা মাথার লোকই করেছে।” কেউ কিছু বলছেনা দেখে আমিই বলে উঠলাম-
“স্যার, খুনটা কিভাবে হয়েছে?” বড়বাবু একবার আমার দিকে কটমট করে তাকালেন, রবি আমার পায়ে প্রচণ্ড জোরে একটা চিমটি কাটল। আমি বুঝলাম বেফাঁস কথা মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে।
“আপনাদের ব্যাঙ্কের ঠিক উল্টোদিকের যে বিল্ডিংটা আছে তার ৫ তলা থেকে নীচে ফেলে দেওয়া হয়েছে। শুধু এটাই নয়, মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার আগে মদের সাথে বিষ মেশানো হয়েছিল। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপারটা হল এটা এমন একধরনের বিষ যা সাধারনত এক বিশেষ প্রজাতির ছত্রাক থেকে তৈরি হয়। আফ্রিকার ৩-৪ তে দেশের জঙ্গলেই শুধু এই ছত্রাক পাওয়া যায়। ভারত কেন এশিয়ারও কোন দেশে এই ছত্রাক পাওয়া সম্ভব নয়। আর এই বিষ হাতে গোনা কিছু গবেষণাগারেই রয়েছে। কি করে খুনী এই বিষ প্রয়োগ করল তা সত্যিই খুব আশ্চর্যের!”
বড়বাবু কথাগুলো প্রায় এক নিঃশ্বাসে শেষ করলেন। সত্যিই অদ্ভুত ব্যাপার, মনিদার মত নির্ভেজাল ভালো মানুষকে কেউ এভাবে খুন কেন করতে যাবে। “শুনুন আপনাদের বেশিক্ষন আটকাবো না, কয়েকটা প্রশ্ন আছে, ঠিক ঠিক জবাব দিয়ে দিন, কোন ঝামেলায় পড়তে হবেনা।” বড়বাবুর কথা শুনে সকলেই একটু নড়ে চড়ে বসল। আমাদের দিকে তাকিয়ে বড়বাবু প্রশ্ন করা শুরু করলেন।
“আচ্ছা, আপনারা কেউ আগ্নেয় ট্রাস্ট ফান্ড নামে কোন এনজিওর নাম শুনেছেন?” আমার বুকটা ধড়াস করে উঠল। মনে হল এই বুঝি হার্ট ফেল হয়ে যাবে। সবাই দেখছি আমার দিকে তাকাচ্ছে। ওদের চাহুনি দেখে বড়বাবুও গোলগোল চোখ করে আমার দিকে তাকালেন। বুঝলাম এই মুহূর্তে কোন জবাব না দিলে আরও বিপদ বাড়বে।
“ওটা আমার এনজিও। আমার ছেলে বাবাইয়ের ভালো নাম আগ্নেয়। ও ১০ বছর আগে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। ওর স্মৃতিতে আমিই ওই এনজিওটা শুরু করি। মূলত কলকাতার বস্তির ছেলেদের পড়াশুনা ও খেলাধুলার...” বড়বাবু আমায় কথাটা শেষ করতে দিলেন না। তার আগেই ধমক দিয়ে বলে উঠলেন “সে আপনি চ্যারিটি করুন, কিন্তু আপনার সংস্থাকে হঠাৎ মনীন্দ্র বাবু ১০ লাখ টাকা ডোনেশন দেওয়ার কথা ভাবলেন কেন?”
সবাই দেখছি বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার তো বিচি আউট। শালা ১০ লাখ ডোনেশন অথচ আমিই জানিনা। কই আজই সকালে তো চেক করেছি। ১ পয়সাও তো ব্যাল্যান্স বাড়েনি। কোনরকমে আমতা আমতা করে বলে উঠলাম “স্যার, আমার সাথে মনিদার শেষ কথা হয়েছে প্রায় ৬ মাস আগে। উনি কেন এতো টাকা আমার এনজিওকে দান করার কথা ভাবলেন আমি জানিনা!” বড়বাবু বেশ কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকলেন তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন “বিপ্লব বাবু আপনার যতগুলো মোবাইল আছে ও টেলিফোন আছে তাদের নাম্বারগুলো এইখানে লিখুন, আমরা আপনার কললিস্ট দেখতে চাই। আর একটা কথা, আমাকে না জানিয়ে কলকাতার বাইরে যাবেন না।”
কোত্থেকে যে কি হয়ে গেলো আমার কিছুই মাথায় ঢুকছে না। আমি নিজের সবকটা নাম্বারই লিখে দিলাম। বড়বাবু কর্কশ গলায় বলে উঠলেন “আপনারা এখন আসুন। প্রয়োজনে আপনাদের আবার ডাকা হবে।”
বাইরে বেরোনোর পর দেখি সবাই একদম থমকে গেছে। সম্ভবত ওই ১০ লাখের ব্যাপারটা নিয়েই ওদের মধ্যে যত চিন্তা। আমি বুঝলাম আমাকেই কিছু একটা করতে হবে নয়ত অফিসের রেপুটেশনটা একদম মাটিতে মিশে যাবে। আমি রবির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম “রবি, মনে হয় সেদিনের আমার কথাগুলো মনিদা খুব আন্তরিকভাবে নিয়েছিলেন।” রবি কোন উত্তর দিলনা বাকিরা আমার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো। আমি আবার বললাম “আমার সাথে মনিদার শেষ কথা হয়েছে মাস ছয়েক আগে। তখন বলেছিলাম আমার এনজিওটার কথা। ভাবিনি মানুষটা এতটা গভীরভাবে নেবে ব্যাপারটা। সত্যি মনিদাকে আজ প্রনাম করতে ইচ্ছে হচ্ছে।” বাকিরাও আমার কথায় সম্মতি জানালো, কিন্তু প্রত্যেকেই চায় থানা থেকে দ্রুত চলে যেতে তাই যে যার গাড়ি নিয়ে রওনা হলাম। আমার রুটটা একদম আলাদা। তাই আমি আলাদাই গেলাম। ওরা তিনজনই নর্থে থাকে তাই একই সাথে রওনা দিলো। জানি সারা রাস্তা আমাকে নিয়ে ও এই খুনে আমার যোগের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে করতেই ওরা পুরো রাস্তাটা কাটাবে। সে করুক, অন্যের মুখ তো আর বন্ধ করা যায়না। বাড়ি থেকে আর কয়েক মিনিটেরই রাস্তা বাকি আছে। হঠাৎ একটা সাদা আম্বাসাডার গাড়ি আমার পাশে এসে দাঁড়াল। এই গাড়িটা আমি খুব ভালো করে চিনি। ভেতর থেকে শর্মাজী হাত নেড়ে ইশারা করে আমায় দাঁড়াতে বলল। ঠিক বানচোদটা টাকা চাইতে চলে এসেছে। মনে মনে ঠিক করলাম আজই ওকে অগ্রীম নেওয়া টাকাটা ফেরত দিয়ে দেবো। গম্ভীর মুখ করে স্কুটারটা ফুটপাথের ধারে পার্ক করলাম।
“আরে দাদা, মালটা একটু বেশীই খেয়ে ফেলেছিলাম। মাফ করেন দাদা। আপনি লোণটা না পাইয়ে দিলে যে মারা পড়ব। পুরো ১০ লাখের বিনিয়োগ আছে। পাইয়ে দিন দাদা যেভাবে হোক। এই লিন আমারই চপ্পল, মারুন আমার গালে দু' টা, দেখবেন ঠিক শুধরে গেছি।” আমি ভাবতেও পারিনি শর্মাজী এরকমভাবে কারুর কাছে কাকুতি মিনতি করতে পারেন বলে। আমিও প্রফেশনাল ব্যাংকার, এরকম কত গালাগাল আমি খেয়েছি। আমিও একটু হাসিহাসি মুখ করে বললাম “আরে শর্মাজী বাজে বিহেভ তো আমিও করেছি। তাই সব ভুলে যান। আমি সত্যিই চেষ্টা করছি। কিন্তু লোণটা তো আমি দিই না দেয় ব্যাংক। তাই একটু সময় তো লাগবেই।” শর্মাজীর কালো কালো পান খাওয়া দাঁতগুলো প্রায় সব বাইরে বেরিয়ে এলো। আমার দু' হাত জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন “দাদা, আপনাকে পুরো বিশ্বাস আছে আমার, আপনি ঠিক আমায় লোণটা পাইয়ে দেবেন, তবে দাদা...” আমি জানি ও ঠিক কি বলতে যাচ্ছে। আমিও সঙ্গে সঙ্গে ওকে বাধা দিয়ে বললাম “না, শর্মাজী, আমি শুধু আপনাকে লোণটা পাইয়ে দেওয়ার জন্য টাকা নিয়েছি। আপনার দ্বিতীয় প্রপোসালটা আমার পক্ষে মানা সম্ভব নয়।”
জানিনা কেন শর্মাজী আজ একদম নাছোড়বান্দা হয়ে আছেন। “দাদা পুরো এক করোরের প্রফিট। নিন আজকে আপনার জন্য আরও ভালো কমিসন নিয়ে এসেছি। ৫০ আপনি আর ৫০ আমি।” কথাটা শুনে মাথা খারাপ হয়ে গেলো আমার। শালা ৫০ লাখ দেওয়ার জন্যও মালটা তৈরি আছে। ৫০ লাখ আমি জীবনেও কামাতে পারবো না। কিন্তু যে কাজটা ও আমায় দিয়ে করাতে চায় তাতে প্রতিটা সেকেন্ডে রিস্ক। রিস্কটা কি নেবো না ছেড়ে দেবো, এই ভাবছি। আমার মুখের অবস্থা দেখে শর্মাজীই বলে উঠলেন “আরে দাদা, কোন ব্যাপার নয়। আপনি টাইম লিন। ভাবুন। একটা কথা মাইন্ডে রাখুন যে যেমন রিস্ক আছে তেমন টাকা ভি আছে।” আমিও ঠিক প্রফেশনাল ব্যাংকারের মত বলে উঠলাম “ওকে শর্মাজী, আমার একটু সময় চাই তারপর আপনাকে জানাচ্ছি।” শর্মাজী আমার এই উত্তর শুনে দাঁত কেলিয়ে এমন একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিলো যে পারলে গুড বাই কিসটাও দিয়ে দেয়।
আমি আবার স্কুটারটা স্টার্ট দিয়ে বাড়ির দিকে যেতে শুরু করলাম। কিছুটা দূর যাওয়ার পরই মোবাইলটা বেজে উঠল। বার করে দেখি রমা ফোন করেছে। ফোনটা রিসিভ করলাম, ওপাশ থেকে রমার মিষ্টি কণ্ঠস্বরটা ভেসে এলো। “কিগো এখনো হয়নি। রঞ্জনদা অনেকক্ষণ হল এসে বসে আছে। একটু তাড়াতাড়ি আসো।” আমি শুধু হুম বলে ফোনটা কেটে দিলাম। বানচোদটা এসে গেছে। এর আগেরবার যখন এসেছিল তখন বউকে সাথে এনেছিল। তাও রমার কাঁধে, পিঠে, পেটে হাত মারতে দু' বার ভাবেনি। আর রমাটাও ঠিক সেরকমই গবেট একখানা মাল, কিছুই বোঝেনা। প্রায় ১২-১৩ বছর হল বিয়ে হয়ে গেছে তাই সেই লাজুক ভাবটাও আর নেই। বাড়িতে সাধারনত স্লিভলেস ব্লাউজ পরেই থাকে। ওই ৩৬ সাইজের চোদন খাওয়া মাগীর দুধ কি আর একটা স্লিভলেস ব্লাউজে ঢাকা থাকে। যে পারে তাই চোখ সেঁকে নেয়। আমি যখন বেরিয়েছিলাম রমার তখনও স্নান হয়নি, এতক্ষনে নিশ্চয়ই হয়ে গেছে। স্নানের পর আজ রমা কি ড্রেস পরতে পারে, সেই নীল ফিনফিনে ম্যাক্সিটা নাকি শাড়ি। মনের মধ্যে রমার ডাগর ফিগারটা বারবার করে ঘুরতে লাগলো আর তারসাথে রঞ্জনের চকচকে চোখটা। এইসব ভাবতে ভাবতেই একদম ফ্ল্যাটের কাছেই এসে পৌঁছালাম।
গাড়িটা গ্যারেজে রেখে ওপরে এসে কলিং বেলটা বাজিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই রমা এসে গেটটা খুলে দিলো। রমার দিকে তাকিয়ে আমারও মাথা খারাপ হয়ে গেলো। একি করেছে রমা। ফ্ল্যাটে শুধু আমরা দুজন থাকি তখন এগুলো মানায়। কালো ব্লাউজটার ভেতর দিয়ে পিঙ্ক ব্রাটা একদম স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। মনে মনে বললাম তাও ভালো বুদ্ধি করে ব্রাটা পরেছে। নয়ত রঞ্জন আজ সারাদিন রমার খয়েরি এবড়ো খেবড়ো বোঁটা দুটো দেখতো আর যখন তখন হাত মারতো। শালা পাগলা ষাঁড়ের থেকে গাভীকে যতটা সম্ভব দূরে সরিয়ে রাখাই ভালো।
রমার এসব দিকে কোন হুঁশ নেই। দরজা আগলে দাঁড়িয়েই বকবক করতে শুরু করে দিলো। “তুমি কি গো, রঞ্জনদা কখন এসে গেছে। জানো রঞ্জনদা এবার কোথা থেকে আসছে? আফ্রিকা!” আমার চোখটা শুধুই রমার ব্লাউজের দিকে। বারবার খালি মনে হচ্ছে ঠিক কতক্ষন ধরে রঞ্জন ওই বুকের দিকে তাকিয়ে আছে। শালা ঝাঁট জ্বলার আরও অনেক কিছুই বাকি ছিল। রমার ঠিক পেছনে এসে দাঁড়াল রঞ্জন, নিমেষের মধ্যে হাতদুটো আলতো করে কাঁধের ওপর রেখে ডলতে শুরু করল আর আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে রমাকে বলল “আরে আমার দুষ্টু মিষ্টি শালী ওকে ভেতরে তো আসতে দাও আগে। তারপর গল্প হবে।” শালা কি যে হচ্ছে মনের মধ্যে তা তো আর কাউকে বোঝাতে পারবো না। যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি, রমা পুরো উলঙ্গ হয়ে আমারই বেডরুমে শুয়ে আছে আর রঞ্জন দু' হাত দিয়ে পাগলের মত ওর পাছা, কোমর, গুদ, মাই সব চটকে চলেছে।
কোনরকমে নিজেকে শান্ত করে ভেতরে ঢুকলাম। শুরু হল রঞ্জনের গল্প।
“বুঝলে বিপ্লব এতদিন ছিল হীরে রপ্তানির বিজনেস। তুমি তো জানোই সাউথ আফ্রিকায় হিরের প্রচুর খনি আছে। তো সেখানে কাজ করতে করতেই একটা অদ্ভুত জিনিসের সন্ধান পেলাম। একটা ছত্রাক। যার থেকে তৈরি হয় ভয়ঙ্কর এক বিষ। মানুষকে প্রয়োগ করলে ঠিক ৬ ঘণ্টা পর মৃত্যু হয়। আমাদের দেশে তো এগুলো বেআইনি কিন্তু ইউরোপে অনেক জায়গাতেই বিভিন্ন রকম ফার্মাসী এই বিষগুলো কেনে। জানো বাজার দর কত? হীরের চেয়েও বেশী। এক বন্ধুর উপদেশ মেনে এই নতুন বিজনেসটা স্টার্ট করলাম। মুনাফাই মুনাফা।”
মাথাটা পুরো নড়ে গেলো। তাহলে কি মনিদার খুনে রঞ্জনের কোন যোগ আছে? আমার কি সবকিছু বড়বাবুকে জানানো উচিত?
থানায় ঢোকার আগে হাত পা গুলো থর থর করে কাঁপছিল। এর আগে যে আমি কোনোদিন থানায় আসিনি তা নয়, কর্মসূত্রে বহুবারই থানায় আসতে হয়েছে। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। খুনের কেসে তলব পড়েছে এবং তলব পড়েছে মানে আমি নিশ্চয়ই সন্দেহভাজনদের তালিকায় রয়েছি। কোনরকমে মনটা শক্ত করে ভেতরে ঢুকলাম। দেখি সামনেই দুখানা হাবিলদার দাঁড়িয়ে আছে আর বারান্দায় বেশ কয়েকটা চেয়ার পাতা। ভেতরে ঢুকতেই বুকে কিছুটা বল পেলাম কারন চেয়ারে রবি, আমাদের ম্যানেজার মৃণাল ও মার্কেটিং হেড চিন্ময় বসে আছে। আমাকে দেখা মাত্র রবি এগিয়ে এলো। রবি আমার জুনিয়র, বরাবর আমার সাথে ওর সম্পর্ক ভালো।
“আরে বিপ্লবদা কি বিপদ বলতো। তোমরা নাহয় একসাথে কাজ করেছ মনীন্দ্রবাবুর সাথে কিন্তু আমি তো জয়েন করার ২-৩ বছর আগেই উনি মুম্বাইয়ের ব্রাঞ্চে ট্রান্সফার হয়ে গিয়েছিলেন।” রবির চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ছেলেটা খুব ভয় পেয়ে গেছে।
পেছন থেকে মৃণাল স্যার বলে উঠলেন “আহ রবি, সব জায়গায় এরকম ইমম্যাচিওরড বিহেভ কোরোনা। থানায় কাউকে ডাকা মানেই খুনের কেসে আসামী বানিয়ে দেওয়া নয়। আর তুমি কি একা নাকি, আমাদের সবাইকেই তো ডেকেছে?”
রবি হয়ত কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু ম্যানেজারের ওপর কথা বললে যে প্রোমোশন হবেনা। এটাকে কর্পোরেট লাইফে অভ্যাসে পরিনত করে ফেলতে হয়। আমি মৃণালবাবুর পাশে বসে পড়লাম।
“বিপ্লব, কি মনে হচ্ছেও তোমার?” মৃণালবাবু ঠিক কি জিজ্ঞেস করেছেন তা বোঝার আগেই উনি বলে উঠলেন “আমার মনে হয় দাম্পত্য প্রবলেম। মিসেস বসু এখনো ভেতরেই আছেন। প্রায় ২ ঘণ্টা হয়ে গেলো পুলিশ ওনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।”
আমার মুখ ফস্কেই হয়তো কথাটা বেরিয়ে গেলো “না স্যার, আমি বৌদিকে খুব ভালো করেই চিনি। এটা অন্য কোন ব্যাপার। আচ্ছা, স্যার, আমি তো কিছুই এখনো শুনিনি। মনিদার মৃত্যুটা কি করে হল?”
বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে মৃণালবাবু বলে উঠলেন “বিপ্লব, এটাই তো সবচেয়ে গোলমেলে। সোজা চোখে যা লাগছে আর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সম্পূর্ণ বিপরীত।” আমি কিছুই বুঝলাম না। মৃণালবাবুকে আরোও বিশদে জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম, হঠাৎ একজন হাবিলদার ভেতর থেকে এসে বলল “চলুন আপনাদের বড়বাবু ডাকছেন।” হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম এই ভেবে যে আলাদা করে জেরা করা হবেনা। আমরা সবাই একসাথেই যাবো। এক এক করে সবাই ভেতরে ঢুকলাম।
চেয়ারে বসে আছেন একজন মধ্যবয়স্ক ভুঁড়িওয়ালা রাশভারী লোক। সেই মুহূর্তেই বৌদি অর্থাৎ প্রয়াত মনীন্দ্রদার স্ত্রী চেয়ার থেকে উঠে বাইরের দিকে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ খ্যারখ্যারে গলায় সেই ভদ্রলোক চেঁচিয়ে বলে উঠলেন “এই যে ম্যাডাম, আপনাকে কিন্তু বাইরে অপেক্ষা করতে বলেছি, এখান থেকে যাওয়ার অনুমতি দিইনি।”
এতক্ষন মনের মধ্যে যে সাহসের সঞ্চার হয়েছিল তা তো নিভে গেছিলোই কিন্তু তার পরের কথাটা শুনে তো আমার বিচি মাথায় উঠে গেলো। বড়বাবু আবার সেই খ্যারখ্যারে গলাটায় চেঁচিয়ে বললেন (হয়তো ইঙ্গিতটা আমাদের সবার দিকেই ছিল) “পাশের বাড়ির লোককে চেনেনা শালা ফেসবুকে বন্ধুত্ব পাতানো হচ্ছে, অচেনা লোকের সাথে।”
“হ্যাঁ বলুন এক এক করে আপনাদের নাম বলুন।” হাতে একটা সাদা চিরকুট নিয়ে ইঙ্গিতটা যে বড়বাবু আমাদের দিকেই করলেন তা আমরা বুঝলাম। এক এক করে সবাই নিজের নাম বলা শুরু করল। সবার শেষে রবি নিজের নামটা বলল। হঠাৎ করে বড়বাবু নিজের চশমাটা একটু ওপরে তুলে খেঁকিয়ে বলে উঠলেন “রবি মানে রবীন মিত্র তাইতো। আচ্ছা আপনি তো ৩ বছর এই ব্রাঞ্চে আছেন। আপনি মনীন্দ্র বাবুর ফ্রেন্ডলিস্টে আসেন কি করে?” রবির কপাল দিয়ে ততক্ষনে ঘাম ঝরতে শুরু করে দিয়েছে। বড়বাবুও সেটা খেয়াল করলেন ও পেশাদার গোয়েন্দার মত নিজের মেজাজটা আরও উঁচু করে বলে উঠলেন “কি হল উত্তর দিন। মনীন্দ্র বাবু ৫ বছর আগে মুম্বাইয়ে শিফট করেছিলেন। আপনি ওনাকে কি করে চিনলেন? ওনার স্ত্রী সুমিতা দেবীর ফ্রেন্ডলিস্টেও বা আপনার নাম কি করে এলো? উত্তর দিন।”
রবি কপালের ঘামটা ঝাড়তে ঝাড়তে উত্তর দিলো “স্যার, সত্যি বলছি মনীন্দ্র বাবুকে চিনিনা। ফেসবুকে আমাদের ব্যাঙ্কের নামের একটা পেজ রয়েছে। সেখান থেকে জানতে পেরেছিলাম উনি আমাদের ব্যাঙ্কের এক ম্যানেজার। তাই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিলাম।” উত্তরটা যে বড়বাবুর খুব একটা পছন্দ হয়নি তা ওনার মুখ দেখে ও পরের প্রশ্নটা শুনেই বোঝা গেলো “তা ওনার বউ কোন ব্যাঙ্কে চাকরি করে যে ওনাকেও ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টটা পাঠাতে গেলেন?” আমি একবার রবির মুখের দিকে ও একবার বড়বাবুর মুখের দিকে তাকাচ্ছি। জানি রবি একদম ঘাবড়ে গেছে। চিন্ময় এমবিএ করা ছেলে, চিন্ময়ই নিজের ম্যানেজমেন্ট সেন্স নিয়ে এগিয়ে এলো।
“স্যার, ফেসবুকে আমিও অনেক অচেনা অজানা লোককে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই। তাদের কাউকে আমি চিনিওনা জানিওনা। এটা কোন অনৈতিক কাজ নয়।” চিন্ময়ের কথা শুনে মনে মনে বলে উঠলাম সাবাশ চিনু তোর ইনসেন্টিভ আটকায় কে আমিও দেখছি। চিন্ময়ের দেখাদেখি মৃণাল স্যারও বলে উঠলেন “স্যার, আমরা কেউ চোর ডাকাত নই। আমরা ব্যাঙ্কের কর্মী, প্রত্যেকেই অত্যন্ত সুনামের সাথে কাজ করি। আমরা এটা কথা দিচ্ছি যে আমরা পুলিশকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করব।” আমি একবার বড়বাবুর মুখের দিকে আর একবার ওদের মুখের দিকে তাকাচ্ছি। বড়বাবুর মুখটা দেখে মনে হল উনি একটু হলেও আমাদের বিশ্বাস করেছেন। কিন্তু ওই যে পুলিশের স্বভাব; সন্দেহ আর মেজাজ ছাড়া কি পুলিশ হয় নাকি। একটু নিচু স্বরে বড়বাবু বলে উঠলেন “জানি আপনারা চোর ডাকাত নন। আর এই খুনটা কোন চোর ডাকাত করেনি, আপনাদের মত ঠাণ্ডা মাথার লোকই করেছে।” কেউ কিছু বলছেনা দেখে আমিই বলে উঠলাম-
“স্যার, খুনটা কিভাবে হয়েছে?” বড়বাবু একবার আমার দিকে কটমট করে তাকালেন, রবি আমার পায়ে প্রচণ্ড জোরে একটা চিমটি কাটল। আমি বুঝলাম বেফাঁস কথা মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে।
“আপনাদের ব্যাঙ্কের ঠিক উল্টোদিকের যে বিল্ডিংটা আছে তার ৫ তলা থেকে নীচে ফেলে দেওয়া হয়েছে। শুধু এটাই নয়, মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার আগে মদের সাথে বিষ মেশানো হয়েছিল। সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপারটা হল এটা এমন একধরনের বিষ যা সাধারনত এক বিশেষ প্রজাতির ছত্রাক থেকে তৈরি হয়। আফ্রিকার ৩-৪ তে দেশের জঙ্গলেই শুধু এই ছত্রাক পাওয়া যায়। ভারত কেন এশিয়ারও কোন দেশে এই ছত্রাক পাওয়া সম্ভব নয়। আর এই বিষ হাতে গোনা কিছু গবেষণাগারেই রয়েছে। কি করে খুনী এই বিষ প্রয়োগ করল তা সত্যিই খুব আশ্চর্যের!”
বড়বাবু কথাগুলো প্রায় এক নিঃশ্বাসে শেষ করলেন। সত্যিই অদ্ভুত ব্যাপার, মনিদার মত নির্ভেজাল ভালো মানুষকে কেউ এভাবে খুন কেন করতে যাবে। “শুনুন আপনাদের বেশিক্ষন আটকাবো না, কয়েকটা প্রশ্ন আছে, ঠিক ঠিক জবাব দিয়ে দিন, কোন ঝামেলায় পড়তে হবেনা।” বড়বাবুর কথা শুনে সকলেই একটু নড়ে চড়ে বসল। আমাদের দিকে তাকিয়ে বড়বাবু প্রশ্ন করা শুরু করলেন।
“আচ্ছা, আপনারা কেউ আগ্নেয় ট্রাস্ট ফান্ড নামে কোন এনজিওর নাম শুনেছেন?” আমার বুকটা ধড়াস করে উঠল। মনে হল এই বুঝি হার্ট ফেল হয়ে যাবে। সবাই দেখছি আমার দিকে তাকাচ্ছে। ওদের চাহুনি দেখে বড়বাবুও গোলগোল চোখ করে আমার দিকে তাকালেন। বুঝলাম এই মুহূর্তে কোন জবাব না দিলে আরও বিপদ বাড়বে।
“ওটা আমার এনজিও। আমার ছেলে বাবাইয়ের ভালো নাম আগ্নেয়। ও ১০ বছর আগে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। ওর স্মৃতিতে আমিই ওই এনজিওটা শুরু করি। মূলত কলকাতার বস্তির ছেলেদের পড়াশুনা ও খেলাধুলার...” বড়বাবু আমায় কথাটা শেষ করতে দিলেন না। তার আগেই ধমক দিয়ে বলে উঠলেন “সে আপনি চ্যারিটি করুন, কিন্তু আপনার সংস্থাকে হঠাৎ মনীন্দ্র বাবু ১০ লাখ টাকা ডোনেশন দেওয়ার কথা ভাবলেন কেন?”
সবাই দেখছি বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার তো বিচি আউট। শালা ১০ লাখ ডোনেশন অথচ আমিই জানিনা। কই আজই সকালে তো চেক করেছি। ১ পয়সাও তো ব্যাল্যান্স বাড়েনি। কোনরকমে আমতা আমতা করে বলে উঠলাম “স্যার, আমার সাথে মনিদার শেষ কথা হয়েছে প্রায় ৬ মাস আগে। উনি কেন এতো টাকা আমার এনজিওকে দান করার কথা ভাবলেন আমি জানিনা!” বড়বাবু বেশ কিছুক্ষন চুপ করে বসে থাকলেন তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন “বিপ্লব বাবু আপনার যতগুলো মোবাইল আছে ও টেলিফোন আছে তাদের নাম্বারগুলো এইখানে লিখুন, আমরা আপনার কললিস্ট দেখতে চাই। আর একটা কথা, আমাকে না জানিয়ে কলকাতার বাইরে যাবেন না।”
কোত্থেকে যে কি হয়ে গেলো আমার কিছুই মাথায় ঢুকছে না। আমি নিজের সবকটা নাম্বারই লিখে দিলাম। বড়বাবু কর্কশ গলায় বলে উঠলেন “আপনারা এখন আসুন। প্রয়োজনে আপনাদের আবার ডাকা হবে।”
বাইরে বেরোনোর পর দেখি সবাই একদম থমকে গেছে। সম্ভবত ওই ১০ লাখের ব্যাপারটা নিয়েই ওদের মধ্যে যত চিন্তা। আমি বুঝলাম আমাকেই কিছু একটা করতে হবে নয়ত অফিসের রেপুটেশনটা একদম মাটিতে মিশে যাবে। আমি রবির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম “রবি, মনে হয় সেদিনের আমার কথাগুলো মনিদা খুব আন্তরিকভাবে নিয়েছিলেন।” রবি কোন উত্তর দিলনা বাকিরা আমার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো। আমি আবার বললাম “আমার সাথে মনিদার শেষ কথা হয়েছে মাস ছয়েক আগে। তখন বলেছিলাম আমার এনজিওটার কথা। ভাবিনি মানুষটা এতটা গভীরভাবে নেবে ব্যাপারটা। সত্যি মনিদাকে আজ প্রনাম করতে ইচ্ছে হচ্ছে।” বাকিরাও আমার কথায় সম্মতি জানালো, কিন্তু প্রত্যেকেই চায় থানা থেকে দ্রুত চলে যেতে তাই যে যার গাড়ি নিয়ে রওনা হলাম। আমার রুটটা একদম আলাদা। তাই আমি আলাদাই গেলাম। ওরা তিনজনই নর্থে থাকে তাই একই সাথে রওনা দিলো। জানি সারা রাস্তা আমাকে নিয়ে ও এই খুনে আমার যোগের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে করতেই ওরা পুরো রাস্তাটা কাটাবে। সে করুক, অন্যের মুখ তো আর বন্ধ করা যায়না। বাড়ি থেকে আর কয়েক মিনিটেরই রাস্তা বাকি আছে। হঠাৎ একটা সাদা আম্বাসাডার গাড়ি আমার পাশে এসে দাঁড়াল। এই গাড়িটা আমি খুব ভালো করে চিনি। ভেতর থেকে শর্মাজী হাত নেড়ে ইশারা করে আমায় দাঁড়াতে বলল। ঠিক বানচোদটা টাকা চাইতে চলে এসেছে। মনে মনে ঠিক করলাম আজই ওকে অগ্রীম নেওয়া টাকাটা ফেরত দিয়ে দেবো। গম্ভীর মুখ করে স্কুটারটা ফুটপাথের ধারে পার্ক করলাম।
“আরে দাদা, মালটা একটু বেশীই খেয়ে ফেলেছিলাম। মাফ করেন দাদা। আপনি লোণটা না পাইয়ে দিলে যে মারা পড়ব। পুরো ১০ লাখের বিনিয়োগ আছে। পাইয়ে দিন দাদা যেভাবে হোক। এই লিন আমারই চপ্পল, মারুন আমার গালে দু' টা, দেখবেন ঠিক শুধরে গেছি।” আমি ভাবতেও পারিনি শর্মাজী এরকমভাবে কারুর কাছে কাকুতি মিনতি করতে পারেন বলে। আমিও প্রফেশনাল ব্যাংকার, এরকম কত গালাগাল আমি খেয়েছি। আমিও একটু হাসিহাসি মুখ করে বললাম “আরে শর্মাজী বাজে বিহেভ তো আমিও করেছি। তাই সব ভুলে যান। আমি সত্যিই চেষ্টা করছি। কিন্তু লোণটা তো আমি দিই না দেয় ব্যাংক। তাই একটু সময় তো লাগবেই।” শর্মাজীর কালো কালো পান খাওয়া দাঁতগুলো প্রায় সব বাইরে বেরিয়ে এলো। আমার দু' হাত জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন “দাদা, আপনাকে পুরো বিশ্বাস আছে আমার, আপনি ঠিক আমায় লোণটা পাইয়ে দেবেন, তবে দাদা...” আমি জানি ও ঠিক কি বলতে যাচ্ছে। আমিও সঙ্গে সঙ্গে ওকে বাধা দিয়ে বললাম “না, শর্মাজী, আমি শুধু আপনাকে লোণটা পাইয়ে দেওয়ার জন্য টাকা নিয়েছি। আপনার দ্বিতীয় প্রপোসালটা আমার পক্ষে মানা সম্ভব নয়।”
জানিনা কেন শর্মাজী আজ একদম নাছোড়বান্দা হয়ে আছেন। “দাদা পুরো এক করোরের প্রফিট। নিন আজকে আপনার জন্য আরও ভালো কমিসন নিয়ে এসেছি। ৫০ আপনি আর ৫০ আমি।” কথাটা শুনে মাথা খারাপ হয়ে গেলো আমার। শালা ৫০ লাখ দেওয়ার জন্যও মালটা তৈরি আছে। ৫০ লাখ আমি জীবনেও কামাতে পারবো না। কিন্তু যে কাজটা ও আমায় দিয়ে করাতে চায় তাতে প্রতিটা সেকেন্ডে রিস্ক। রিস্কটা কি নেবো না ছেড়ে দেবো, এই ভাবছি। আমার মুখের অবস্থা দেখে শর্মাজীই বলে উঠলেন “আরে দাদা, কোন ব্যাপার নয়। আপনি টাইম লিন। ভাবুন। একটা কথা মাইন্ডে রাখুন যে যেমন রিস্ক আছে তেমন টাকা ভি আছে।” আমিও ঠিক প্রফেশনাল ব্যাংকারের মত বলে উঠলাম “ওকে শর্মাজী, আমার একটু সময় চাই তারপর আপনাকে জানাচ্ছি।” শর্মাজী আমার এই উত্তর শুনে দাঁত কেলিয়ে এমন একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিলো যে পারলে গুড বাই কিসটাও দিয়ে দেয়।
আমি আবার স্কুটারটা স্টার্ট দিয়ে বাড়ির দিকে যেতে শুরু করলাম। কিছুটা দূর যাওয়ার পরই মোবাইলটা বেজে উঠল। বার করে দেখি রমা ফোন করেছে। ফোনটা রিসিভ করলাম, ওপাশ থেকে রমার মিষ্টি কণ্ঠস্বরটা ভেসে এলো। “কিগো এখনো হয়নি। রঞ্জনদা অনেকক্ষণ হল এসে বসে আছে। একটু তাড়াতাড়ি আসো।” আমি শুধু হুম বলে ফোনটা কেটে দিলাম। বানচোদটা এসে গেছে। এর আগেরবার যখন এসেছিল তখন বউকে সাথে এনেছিল। তাও রমার কাঁধে, পিঠে, পেটে হাত মারতে দু' বার ভাবেনি। আর রমাটাও ঠিক সেরকমই গবেট একখানা মাল, কিছুই বোঝেনা। প্রায় ১২-১৩ বছর হল বিয়ে হয়ে গেছে তাই সেই লাজুক ভাবটাও আর নেই। বাড়িতে সাধারনত স্লিভলেস ব্লাউজ পরেই থাকে। ওই ৩৬ সাইজের চোদন খাওয়া মাগীর দুধ কি আর একটা স্লিভলেস ব্লাউজে ঢাকা থাকে। যে পারে তাই চোখ সেঁকে নেয়। আমি যখন বেরিয়েছিলাম রমার তখনও স্নান হয়নি, এতক্ষনে নিশ্চয়ই হয়ে গেছে। স্নানের পর আজ রমা কি ড্রেস পরতে পারে, সেই নীল ফিনফিনে ম্যাক্সিটা নাকি শাড়ি। মনের মধ্যে রমার ডাগর ফিগারটা বারবার করে ঘুরতে লাগলো আর তারসাথে রঞ্জনের চকচকে চোখটা। এইসব ভাবতে ভাবতেই একদম ফ্ল্যাটের কাছেই এসে পৌঁছালাম।
গাড়িটা গ্যারেজে রেখে ওপরে এসে কলিং বেলটা বাজিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষনের মধ্যেই রমা এসে গেটটা খুলে দিলো। রমার দিকে তাকিয়ে আমারও মাথা খারাপ হয়ে গেলো। একি করেছে রমা। ফ্ল্যাটে শুধু আমরা দুজন থাকি তখন এগুলো মানায়। কালো ব্লাউজটার ভেতর দিয়ে পিঙ্ক ব্রাটা একদম স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। মনে মনে বললাম তাও ভালো বুদ্ধি করে ব্রাটা পরেছে। নয়ত রঞ্জন আজ সারাদিন রমার খয়েরি এবড়ো খেবড়ো বোঁটা দুটো দেখতো আর যখন তখন হাত মারতো। শালা পাগলা ষাঁড়ের থেকে গাভীকে যতটা সম্ভব দূরে সরিয়ে রাখাই ভালো।
রমার এসব দিকে কোন হুঁশ নেই। দরজা আগলে দাঁড়িয়েই বকবক করতে শুরু করে দিলো। “তুমি কি গো, রঞ্জনদা কখন এসে গেছে। জানো রঞ্জনদা এবার কোথা থেকে আসছে? আফ্রিকা!” আমার চোখটা শুধুই রমার ব্লাউজের দিকে। বারবার খালি মনে হচ্ছে ঠিক কতক্ষন ধরে রঞ্জন ওই বুকের দিকে তাকিয়ে আছে। শালা ঝাঁট জ্বলার আরও অনেক কিছুই বাকি ছিল। রমার ঠিক পেছনে এসে দাঁড়াল রঞ্জন, নিমেষের মধ্যে হাতদুটো আলতো করে কাঁধের ওপর রেখে ডলতে শুরু করল আর আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে রমাকে বলল “আরে আমার দুষ্টু মিষ্টি শালী ওকে ভেতরে তো আসতে দাও আগে। তারপর গল্প হবে।” শালা কি যে হচ্ছে মনের মধ্যে তা তো আর কাউকে বোঝাতে পারবো না। যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি, রমা পুরো উলঙ্গ হয়ে আমারই বেডরুমে শুয়ে আছে আর রঞ্জন দু' হাত দিয়ে পাগলের মত ওর পাছা, কোমর, গুদ, মাই সব চটকে চলেছে।
কোনরকমে নিজেকে শান্ত করে ভেতরে ঢুকলাম। শুরু হল রঞ্জনের গল্প।
“বুঝলে বিপ্লব এতদিন ছিল হীরে রপ্তানির বিজনেস। তুমি তো জানোই সাউথ আফ্রিকায় হিরের প্রচুর খনি আছে। তো সেখানে কাজ করতে করতেই একটা অদ্ভুত জিনিসের সন্ধান পেলাম। একটা ছত্রাক। যার থেকে তৈরি হয় ভয়ঙ্কর এক বিষ। মানুষকে প্রয়োগ করলে ঠিক ৬ ঘণ্টা পর মৃত্যু হয়। আমাদের দেশে তো এগুলো বেআইনি কিন্তু ইউরোপে অনেক জায়গাতেই বিভিন্ন রকম ফার্মাসী এই বিষগুলো কেনে। জানো বাজার দর কত? হীরের চেয়েও বেশী। এক বন্ধুর উপদেশ মেনে এই নতুন বিজনেসটা স্টার্ট করলাম। মুনাফাই মুনাফা।”
মাথাটা পুরো নড়ে গেলো। তাহলে কি মনিদার খুনে রঞ্জনের কোন যোগ আছে? আমার কি সবকিছু বড়বাবুকে জানানো উচিত?