পিরিয়ডের সময়ে শরীরে নানা রকম হরমোনের পরিবর্তন হয়। এ কারণে শরীরে দুর্বলতা, ব্যথা, খাবারে রুচি কমে যাওয়াসহ আরও অনেক রকম সমস্যা তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, করোনায় আক্রান্তকালে পিরিয়ড হলে শারীরিক সমস্যাগুলো অনেক ক্ষেত্রে বাড়ে। এমনকি করোনা ভালো হওয়ার পরও হতে পারে পিরিয়ডসংক্রান্ত সমস্যা। করোনা ও পিরিয়ড দুটি সময়েই সুস্থ থাকতে খাবারের গুরুত্ব অনেক। সঠিক পরিমাণ ও উপায়ে খাবার না খেলে বাড়ে শারীরিক জটিলতা। আবার পিরিয়ডের সময়ে পুষ্টিকর খাবার শরীরের হরমোনে শক্তি জোগায়।
করোনার সময়ে পিরিয়ডে বা পরবর্তী সময়েও সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকা সম্ভব। কিন্তু তার জন্য গুরুত্ব দিতে হবে সঠিক খাদ্যাভ্যাসে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে দীর্ঘদিন এর দুর্বলতা থেকে যায় শরীরে। এমনকি দুর্বলতার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু সমস্যাও দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সমস্যা সমাধানে আয়রনজাতীয় খাবারকে গুরুত্ব দিলেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের পুষ্টি বিভাগের সাবেক প্রধান পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার। তিনি বলেন, করোনা হলে প্রোটিন, ভিটামিন, ক্যালসিয়ামজাতীয় খাবার খুব বেশি খেতে হবে। পিরিয়ডে শরীরে রক্ত কমে যায় বলে আয়রন আছে, এমন খাবারের কোনো বিকল্প নেই। করোনার এই সময়ে কীভাবে নিতে হবে বাড়তি খাদ্যযত্ন, তা নিয়েই এই পুষ্টিবিদ দিয়েছে কিছু পরামর্শ।
সুস্থ থাকতে আয়রন
পিরিয়ড মানেই শরীরে আয়রনের পরিমাণ কমে যাওয়া। তাই শুধু ওষুধের ওপর নির্ভর করা যাবে না এবং খেতে হবে আয়রনসমৃদ্ধ খাবার। দিনে দুটি ডিম, গরু ও মুরগির কলিজা, কচুশাক, লালশাক, ছোট মাছ, শাপলা, চিংড়ি মাছ, অ্যালার্জি না হলে গরুর মাংস এ সময়ে শরীরে আয়রনের পরিমাণ ঠিক রাখে।
ভিটামিন সি
করোনা হলে এবং সেরে যাওয়ার পর বেশি বেশি ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। আবার পিরিয়ড হলেও ভিটামিন সি খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে বললেন এই পুষ্টিবিদ। তিনি বলেন, একসময় ভাবা হতো পিরিয়ডে টকজাতীয় খাবার খাওয়া ঠিক নয়। কিন্তু পুষ্টিবিজ্ঞানে বলা হয়, এ সময়ে ভিটামিন সি খুব দরকার। লেবু বা লেবুর শরবত ভিটামিন সি পাওয়ার সহজ উপায়। এখন বাজারেও পাওয়া যায় নানা ধরনের টক ফল। যেমন কাঁচা আম, তেঁতুল, আমলকী, পেয়ারা, ডেউয়া, জাম্বুরা ইত্যাদি। এগুলোও ভিটামিন সির ঘাটতি কমায়। এ ছাড়া ধনেপাতা ও পুদিনাপাতায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি।
প্রতি বেলায় মাছ, মাংস, দুধ
করোনা হলে শারীরিক দুর্বলতা থাকে অনেক দিন। তাই প্রয়োজনমতো খাওয়াদাওয়া না করলে তার প্রভাব পড়ে পিরিয়ডে। শরীরে শক্তি রাখতে প্রতি বেলাতেই মাছ, মাংস, দুধ থাকতে হবে। অনেকেই কিছুদিন পর প্রোটিন খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেন। কিন্তু এতে দুর্বলতা বেড়ে পিরিয়ড বন্ধ বা পেটব্যথার মতো সমস্যা তৈরি হবে। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ধরে রাখতে হলে প্রোটিন সব থেকে কার্যকরী।
হলুদ
আমরা স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিনের খাবারে হলুদ ব্যবহার করি। হলুদে পাওয়া যায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিসেপটিক, যা যেকোনো ধরনের সংক্রমণ কমাতে পারে। এ ছাড়া আয়রন, মিনারেল, পটাশিয়ামে পরিপূর্ণ হলুদ। এক কাপ হালকা গরম পানিতে সামান্য হলুদ ও আধা চামচ মধু মিলিয়ে খাওয়া বেশ উপকারী। চাইলে হলুদের ক্যাপসুলও খাওয়া যেতে পারে। পিরিয়ডে সংক্রমণের হার অনেক বেড়ে যায়। এমনকি স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারে ত্বকে সংক্রমণ, যেমন ঘা, চুলকানি হয়। হলুদ এ ক্ষেত্রে ভালো উপকার দেবে। এতে শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বাড়ে।
মৌসুমি ফল
পিরিয়ডে শরীর সুস্থ রাখতে খেতে হবে মৌসুমি ফল। সে ক্ষেত্রে আপেল বা আঙুর না খেয়ে যেকোনো দেশি বা মৌসুমি ফল খাওয়া যাবে, যা প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ দেয়। এখন তরমুজের মৌসুম আর তরমুজ রক্তস্বল্পতা কমায়। আবার পিরিয়ডের সময় অনেকের ইউরিন ইনফেকশন হয়, যা তরমুজ কমাতে সাহায্য করে।
চা খাওয়া যাবে না
পিরিয়ডের সময় চা বা কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এতে থাকা ক্যাফেইন পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি বাড়ায়।
ওজন ঠিক রাখতে খাওয়া
করোনার সময়ে বা পরে মাসিক বন্ধ হয়ে গেলে বা অনিয়মিত হলে তার একটি কারণ ওজন বেড়ে বা কমে যাওয়া। ওজন বেড়ে গেলে তেল বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না। আর ওজন কমলে হিমোগ্লোবিনও কমে যায়। তখন পিরিয়ড হতে চায় না। সে ক্ষেত্রে পুষ্টিকর খাবারের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে।
* রিফাত পারভীন