next update
মধুরিমা প্রচন্ড ভাবে রেগে আছে....পিতার কৃত্ত আজ তাকে অনেক বিভ্রান্ত আর হতাশাগ্রস্ত করে তুলেছে. মনেকে বিশ্বাস করানো যাচ্ছে না.তার নিজের বাবা তার সাথে এমন ঘৃণ্য কাজ করার চেষ্টা করেছে.
শুধু একবার নিজের মাথায় হাত দিচ্ছে আর একবার করে....নিজের চোখের মধ্যে অনায়াসে গড়িয়ে যাওয়া অশ্রু কে মুছে নিচ্ছে.
এ সকাল তার কাছে এক কালো অধ্যায়ের মতো.....জানালার বাইরে দিকে তাকিয়ে....সে এখন খুব অসহায় মনে করছে নিজেকে...
পরিতোষ বাবু তখনও মেয়ের ঘরের মধ্যেই দাঁড়িয়ে ছিলেন. তিনিও নিজেকে একপ্রকার মৃত বলে মনে করছিলেন.হাত পা তার একদম শূন্য....শুধু হৃদপিন্ড জোর গতিতে কাজ করছিলো তার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলেন.
মেয়েকে কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু গলা থেকে আওয়াজ বেরিয়ে আসছিলো না .
গলা শুকিয়ে কাঠ....
মনে মনে শুধু এর দীর্ঘ পরিণতি কি হতে পারে....সেটার কথা চিন্তা ভাবনা করছিলেন..
এযে এক অপরাধ তার দ্বারা হয়ে গিয়েছে, সেটার আভাস পেতে শুরু করে দিয়ে ছিলেন.
শরীর ও মনের সর্বস্য শক্তি দিয়ে...ভয় ও অবসাদ কে পশ্চাদে ফেলে...নিজের পা বাড়িয়ে মেয়ের দিকে এগিয়ে গেলেন.
ধরা ধরা আড়ষ্ট গলায় বললেন, “মা আমার ভুল হয়ে গেছে....তুই আমাকে ক্ষমা করে দে....আমি তোর বাবা....”
মধুরিমা চুপ... তার মুখ থেকেও একটা কথা বেরোলো না.
পরিতোষ বাবু আরও কিছু বলতে চাইছিলেন, মেয়েকে মানানোর প্রানপন চেষ্টা করবেন....ঠিক আগের মতোই পিতা পুত্রীর সম্পর্ক তৈরী হয়ে যাক এটাই স্থির মনে প্রার্থনা করছিলেন...মেয়ের সাথে সহবাস...ছিঃ সত্যিই এটা একটা ঘৃণ্য আর জঘন্য কাজ...সাময়িক আনন্দের জন্য...একটা পবিত্র সম্পর্ককে জলাঞ্জলি দেওয়া...সত্যিই কঠোর ভাবে অনুচিত...
নিজের অবৈধ কামনা পূর্তির পরিণতি কি হলো...সেটাই তিনি ভাবতে লাগলেন.
পরিতোষ বাবু মেয়ের ঘরের মধ্যে আরও কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন....মেয়ে তাকে কিছু একটা কথা বলুক...তাকে তিরস্কার করুক...গালাগালি দিক.
কিন্তু কিছু একটা বলুক...এভাবে মধুরিমার মৌন থাকা, পরিতোষ বাবুর কাছে অসহনীয় হয়ে উঠছিলো.
ভাবলেন এভাবে এই অকস্মাৎ বিপদ থেকে এতো সহজে মুক্তি পাওয়া যাবে না...একটু সময় লাগবে...তাছাড়া মেয়ের রাগ কমে গেলে...ব্যাপারটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে.
তাই তিনি আর সে মুহূর্তে কথা বাড়ালেন না...বেরিয়ে গেলেন মেয়ের রুম থেকে.
নিজের রুমে ফিরে এসে...গালে হাত দিয়ে...গভীর চিন্তনে মনোনিবেশ করলেন পরিতোষ বাবু.
আজ তার এই কৃত কর্মের জন্য কি যে দূর্গামী পরিণতি হতে পারে সেটাই বার বার মনে করছিলেন তিনি.
আবেগপ্রবনা মেয়ে মধুরিমা কোনো অঘটন না ঘটিয়ে ফেলে...
একবার মনে হচ্ছিলো নিজেকে ক্ষত বিক্ষত করে নিতে...মন অস্থির হয়ে উঠছিলো...শুধু সবকিছু আগের মতো হয়ে যাক...মনে মনে শুধু এটাই প্রার্থনা করে যাচ্ছিলেন.
দুশ্চিন্তার কালো মেঘ তার মাথার উপর ঘোরপাক করতে লাগলো.
সারা রাত জাগা আর দুশ্চিন্তা পরিতোষ বাবুকে ক্লান্ত এবং অবসন্ন করে তুলল.একবার মেয়ের কাছে যাবেন ঠিক করলেন.
দরজার সামনে গিয়ে ফিরে এলেন, মধুরিমার স্নানের শব্দ আসছিলো বাথরুম থেকে.
নিজের বিছানায় এসে শুয়ে পড়লেন.
কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন বুঝতেই পারলেন না....যখন ঘুম ভাঙলো, ঘড়িতে তখন সকাল সাড়ে আটটা.
হঠাৎ মধুরিমার কথা মাথায় এলো...কি করছে এখন মেয়েটা??
যদি দেখেন যে ওর রাগ কমেছে...তাহলে আরও একবার মানানোর চেষ্টা করবেন.
বিছানা থেকে উঠে বেসিনের কাছে মুখ ধুতে গেলেন পরিতোষ বাবু...আয়নায় নিজের মুখটা দেখতে লজ্জা পাচ্ছিলেন তিনি.
রাতের কথা গুলো মনে পড়ে যাচ্ছিলো...মেয়ের নরম কুমারী যোনি ছিদ্রে নিজের লিঙ্গের ডগা ঘষছিলেন....
উফঃ একবার যদি মেয়েটা তার সাথে সহযোগিতা করতো তাহলে এই দশা হতো না তাদের.
মধুরিমা যেমন সুন্দরী তেমন তেজি মেয়ে...তার কাছে অজ্ঞাত ছিলো.
যাইহোক সে একটা চরম ভুল করে ফেলেছে...তার মাসুল তাকে গুনতে হবে...
মুখ ধুতে ধুতে একটা দীর্ঘস্বাস ফেললেন তিনি...
যায় মেয়ের ঘরের দিকে...তেমন হলে...মেয়ের পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নেবো...মনে মনে স্থির করলেন পরিতোষ বাবু.
নিজেকে সেভাবেই তৈরী করলেন তিনি...এবার মেয়ের রুমের দিকে যাবার পালা.
কিন্তু ঘরটা হঠাৎ...এতো শান্ত কেন মনে হচ্ছিলো তার...চারিদিক কেমন যেন সুমসাম...
মেয়ের ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে নিজেকে আবার একবার শক্ত করে নিলেন পরিতোষ বাবু.
একবার হাফ ছাড়লেন...
এবার দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন...ক্যাচ করে শব্দ উঠল...দরজা খোলার শব্দ.
ভেতরে মধুরিমার কোনো অস্তিত্ব নেই, ঘর ফাঁকা..
পরিতোষ বাবু ক্ষনিকের মধ্যে...চঞ্চল হয়ে উঠলেন....চারিদিক তাকিয়ে দেখলেন....নাহঃ মেয়ে কোথাও নেই.
সারা ঘর ফাঁকা...
বুকের ধুকপুকানি বাড়তে লাগলো...কোথায় গেলো মধুরিমা...??
তড়িঘড়ি নিজের মোবাইল ফোনটা নিয়ে মধুরিমা কে ফোন করতে লাগলেন...
রিং হচ্ছিলো...তবে তার আওয়াজ ঘরের মধ্যে থেকে আসছিলো না...
মেয়ে নিশ্চয় বাড়ির বাইরে আছে...তিনি যখন ঘুমাচ্ছিলেন...সেই ফাঁকে..মেয়ে বাড়ির বাইরে চলে গেছে...
কিন্তু কোথায়...??
পরিতোষ বাবু...একপ্রকার কাঁদো কাঁদো...হয়ে উঠলেন...না মধুরিমা...এমন করিস না...দয়া করে ফোনটা তোল...নিজেই নিজেকে বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন.
না ফোনের পুরো রিং বেজে কেটে গেলো...ফোন কেউ তুলল না...
বিন্দু বিন্দু ঘাম তার কপালে জমা হতে লাগলো....বুকটা সজোরে কাঁপছে....কম্পিত গলায় শুধু বলে চলে ছেন, মা মধুরিমা কোনো অঘটন ঘটিয়ে নিস্ না...তোকে ছাড়া আমি একলা বাঁচতে পারবো না...
আবার মেয়েকে ফোন করলেন... কিছু ক্ষণ পর রিং হয়ে আবার ফোনটা কেটে গেলো...
দুশ্চিন্তার কালো বাদল মাথার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে...কি করবেন...কোথায় যাবেন...ভেবে পাচ্ছিলেন না.
বিছানায় এসে আবার ধপাস করে বসে পড়লেন মাথায় হাত.....
সেই মুহূর্তেই...বাইরে একটা গাড়ি থামার শব্দ পেলেন পরিতোষ বাবু.
দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এলেন...সামনে তার শ্যালক মশাই...মুখে হাসি...একটু আশ্চর্য হলেন...
পরিতোষ বাবুর শ্যালক বললেন, “দাদা...মধুরিমার জিনিস পত্র গুলো নিতে এসেছি...”
পরিতোষ বাবু একটু অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে দেখলেন...শ্যালক মশাই হাসলেন...”আপনার মেয়ে বলছে...এখানে ওর একাকী লাগছে....দিদা...মামিমার জন্য মন খারাপ...হচ্ছে...তাই এখানে আর থাকবে না..”
শ্যালকের কথায় একটু আস্বস্ত হলেন পরিতোষ বাবু...মনে মনে ভাবলেন মেয়ে মধুরিমা তাহলে...মামার বাড়ি চলে গিয়েছে...
একটা জোর হাফ ছাড়লেন...চাপ মুক্ত মনে করছিলেন কিছুটা....
বললেন, “আচ্ছা এই ব্যাপার....ঠিক তো...নিয়ে যাও..ওর জিনিস পত্র...আমিও ভাবছিলাম আগামী কাল বেরিয়ে পড়ব...আমার ও এখানে বেকার বেকার লাগছে থাকতে...”.
পরিতোষ বাবু মনে মনে মধুরিমাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিল...গত রাতের কথা যেন কারো কাছে না প্রকাশ করে...
শ্যালক মশাই বললেন, “কি দাদা মশাই...আপনার একমাসের ছুটি ছিলো...এতো তাড়াতাড়ি গিয়ে কি করবেন...আমাদের সাথে থাকুন..ভালো লাগবে আপনার..”
পরিতোষ বাবু আবার একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন “নাহঃ...আর ছুটি কাটাতে ভালো লাগছে না...ফিরে গিয়ে কাজে মন দি বরং..”.
শ্যালক মশাই কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলেন...
শেষে বললেন, “দুপুরের খাবার টা ওখানে করে নিতেন.....”
পরিতোষ বাবু তাতেও কোনো রকম উৎসাহ দেখালেন না...বললেন “নাহঃ থাক আমি একটু অফিসে ফোন করি...কাল সকাল সকাল এখান থেকে বেরিয়ে পড়ব...”.
শ্যালক মশাই আর কিছু বললেন না...মধুরিমার ব্যাগ সুইটকেস নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন.
পরিতোষ বাবু আবার হতাশাগ্রস্থ হয়ে চেয়ার এ বসে পড়লেন....গালে হাত দিয়ে...গভীর চিন্তনে মগ্ন হলেন...কি চেয়েছিলেন আর কি হলো....
দুপুরবেলা বেশ কয়েকবার মেয়েকে ফোন করলেন.. মধুরিমা ফোনের কোনোরকম উত্তর দিল না...রিং হয় আর কেটে যায়...
শ্যালক কে ফোন করে জানেন মধুরিমা মন খারাপ করে নিজের ঘরের মধ্যে বসে আছে....
এই মুহূর্তে পরিতোষ বাবুর শুধু প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছু করার ছিলোনা...
সেদিন পুরো রাত একপ্রকার দমবন্ধ ও কষ্টের মধ্যে কাটালেন...মেয়ে কি আর তার সাথে কথা বলবে না...
পর দিন খুব ভোর বেলা কলকাতা ছেড়ে দিলেন পরিতোষ বাবু...শুধু শ্যালক মশাই কেই ফেরত যাবার কথাটা জানালেন তিনি.
মধুরিমা তো আর ফোনের জবাব দিচ্ছে না...
ফিরে এসে ব্যাংকে নিজের কাছে মনোনিবেশ করলেন....নৃপেন বাবুকেও এড়িয়ে চলছিলেন....আর মধুমিতা.....তার সাথেও দেখা কোনো চেষ্টা করেননি পরিতোষ বাবু .
তিন চার দিন এভাবেই কেটে গেলো তার....পরিতোষ বাবু পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন...
একদিন ব্যাংক থেকে নিজের স্টাফ কোয়ার্টারে ফেরার সময় তার একটা ফোন আসে....দেখেন মধুমিতা....বুকটা কেমন করে উঠেছিল.
ফোন তুলে মধুমিতা ও পাশ থেকে বলে, “স্যার...একমাস শেষ হয়ে আসছে....আপনি কবে ফিরছেন....?? “.
পরিতোষ বাবু বলেন, “আমি...এই পাঁচদিন হলো...ফিরেছি....”.
মধুমিতা একটু আশ্চর্য হয়ে বলল ,”কি স্যার আপনি এসেছেন... তা আমাকে জানালেন না....কত দিন ধরে আপনার আসার অপেক্ষা করছিলাম আমি...”.
পরিতোষ বাবু মধুমিতার কথা শুনে খুশি হলেন....মনে মনে ভাবলেন...যাক কেউ হয়তো আছে তার জন্য চিন্তা ভাবনা করে..
“মধুমিতা...তুমি....কেমন আছো...আমার সাথে দেখা করবে??? “ একপ্রকার অনায়াসে মধুমিতাকে বলে ফেললেন পরিতোষ বাবু.
পরিতোষ বাবুর কথা শুনে মধুমিতা হাঁসলো....আর বলল হ্যাঁ নিশ্চই স্যার কোথায় দেখা করবেন বলুন...
“ওই ক্যাফেটেরিয়াতে....” বললেন পরিতোষ বাবু.
পরের দিন তারা দুজনে একসাথে দেখা করলেন...যাবার সময় মার্কেট থেকে কিছু উপহার মধুমিতার জন্য কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন...এবারে যেন কয়েক যুগ পর দেখছেন মধুমিতাকে, পরিতোষ বাবুর মনে হলো...
এই সুন্দরী মেয়ের মায়ায় এমন...সব দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে দেয়...
একে বার বার দেখলে যেন নতুন মনে হয়..স্নিগ্ধ হাঁসি...আর কোমল আচরণ...
নিজের মেয়ে মধুরিমাকে অনেক খানি ভুলতে সাহায্য করে...
ওই দিন মধুমিতার সাথে অনেক ক্ষণ কথা হয়ে ছিলো পরিতোষ বাবুর...মেয়ে টার প্রতি কি ধরণের সম্পর্ক তৈরী হচ্ছে...তিনি নিজেও বুঝতে পারছিলেন না.
এভাবেই একদিন মধুমিতা পরিতোষ বাবুকে জিজ্ঞেস করে ফেলল, “কি স্যার এবারে কলকাতা থেকে ফিরে আসার পর থেকে আপনাকে বেশ চেঞ্জ লাগছে...আয় মিন...আয় থিঙ্ক...ইউ আর ভেরি স্যাড....”
পরিতোষ বাবু মধুরিমার কথার কোনো উত্তর দেন না....
“স্যার বলুন...কি...হয়েছে...আয় এম লাইক ইওর ডটার...” বলল মধুমিতা.
পরিতোষ বাবু মনে মনে ভাবছিলেন....কি করে বলবেন...তার মনের দুঃখের কথা....
এটা কি বলা যায়...যে....তিনি তার কন্যার দ্বারা তরিষ্কৃত...মেয়ের সাথে সহবাস করতে ইচ্ছুক...আর মেয়ে সেটা কদাপি চায়না...
সে মুহূর্তে অনেক কিছু ভাবছিলেন...কিন্তু কি বলবেন...সেটা বুঝে উঠতে পারছিলেন না...
অবশেষে বললেন “মধুমিতা...আমার আপনজন আমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে...আর সেটার জন্য সম্পূর্ণ রূপে দায়ী আমি নিজেই...”
মধুমিতা তার কথা গুলোকে বুঝবার চেষ্টা করছিলো...সে বলল, “স্যার আপনি খুব ভালো মানুষ....আপনার সাথে এমনটা হওয়া উচিত নয়...আমি আপনার সাথে আছি...”
পরিতোষ বাবু মুচকি হাসলেন....মধুমিতার দিকে চেয়ে দেখলেন...আর বললেন...”অসংখ্য ধন্যবাদ মধুমিতা...আমার পাশে থাকার জন্য....”.
আসতে আসতে তাদের দুজনের দেখা সাক্ষাৎ ও মেলা মেশা বাড়তে লাগলো....
হয়তো মধুমিতা, পরিতোষ কে তার মেয়ে মধুরিমার কথা ভুলতে সাহায্য করছিলো কিন্তু সে পুরোপুরি ভুলিয়ে রাখতে পারেনি...
যখনি পরিতোষ বাবু একাকী থাকেন মেয়ে মধুরিমা তার খেয়ালে চলে আসে...সেই সুন্দরী...সেই লস্যময়ী কন্যা মধুরিমা...যার সৌন্দর্যতা আছে...রূপ আছে...আর আছে রাগ আর অভিমান.
পরিতোষ বাবু সাহস করে মেয়েকে...ফোন করে...খবর নেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু পাননা....
মেয়ের খবর নেওয়ার একমাত্র মাধ্যম তার শ্যালক মশাই...
তিনি শ্যালক মশাইয়ের কাছে থেকে জানতে পারেন...মেয়ে ওই রকমই আছে উদাসীন আর এলোমেলো...
পরিতোষ বাবু মনে মনে কষ্ট পান...
এদিকে মধুমিতা ও পরিতোষ বাবুকে সাথে পেয়ে ভীষণ খুশি...তারসাথে সবসময় দেখা করার বাহানা খোঁজে...
সে হয়তো পরিতোষ বাবুর ধাত বুঝতে পারে...তাইতো সেদিন অবসন্ন পরিতোষকে দেখে তার হাতের উপর হাত চেপে রেখে ছিলো...
কচি মেয়ের নরম হাত পরিতোষ বাবুর হাতের উপর পড়াতে...তার মনে একটা ঝংকারের সৃষ্টি হয়ে ছিল.
এখন তারা আর তাদের পুরোনো আড্ডা ক্যাফেটোরিয়া তে দেখা করেন না....
মনে পড়ে সেই গুপ্ত রাস্তা...যেখানে পরিতোষ বাবু, নৃপেন বাবুকে একটা মেয়ের সাথে হাতেনাতে ধরে ফেলে ছিলেন, যেখানে অন্ধকারে জোয়ান ছেলে মেয়ে গুলো ফষ্টিনষ্টি করে...
হ্যাঁ সেখানেই এখন নতুন আড্ডা তাদের...মধুমিতা মেয়েটার প্রতি একটা আশ্চর্য আর গভীর টান তৈরী হয়ে গিয়েছে...সেকারণে পরিতোষ ওর জন্য সবসময় নানা রকম উপহার নিয়ে যায়....যেটা মেয়েটাকে খুব খুশি আর আনন্দ দেয়...একপ্রকার পরিতোষ বাবু মধুমিতার নতুন অভিভাবক হয়ে গিয়েছে....
মধুমিতা, পরিতোষ বাবুর পাশে বসে আর নিজের হাত তার হাতের সাথে মিশিয়ে দেয়..আর মাঝে মধ্যে পিতার বয়সী পরিতোষ বাবুর কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে বসে থাকে...
প্রথম প্রথম পরিতোষ বাবুর সেগুলোতে একটা অস্বস্তি তৈরী হয়ে যেত...কিন্তু এখন সেগুলো সয়ে গেছে...এখন বেশ ভালো লাগে তার.
যতই হোক একটা মানসিক ধাক্কা থেকে মধুমিতা তাকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেছে.
সমস্যা শুধু ঐখানে যখন পরিতোষ বাবু বাড়িতে একা থাকেন....মেয়ের জন্য মন কেমন করে....কি হবে তাদের এই সম্পর্কের.
মেয়ে কবে তাকে আপন করে নেবে...নাকি আদৌ আপন করে নেবে না...
একমাসের উপর হয়ে গেলো পিতা পুত্রীর মধ্যে কথা বার্তা নেই....যে মেয়ে সর্বদা বাবা বাবা করতো সেই মেয়ে এখন বাবার ফোন পর্যন্ত তোলে না.. কি হবে তার মেয়েকে ছাড়া বাঁচা প্রায় এক অসম্ভব ব্যাপার.
মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকেন....মেয়ের এই ক্ষোভ যেন কমে যায় তাড়াতাড়ি....তিনি মানেন ভুল অবশেষে তারই কিন্তু আর কত দিন এভাবে চলবে...ভুলের কি কোনো ক্ষমা নেই.
এই ভাবেই দিন পেরোতে থাকে....
হঠাৎ একদিন পরিতোষ বাবুর শ্যালক তাকে ফোন করেন....
পরিতোষ বাবু ফোন তুলেন, ওই পাশ থেকে শ্যালক মশাই বলেন, “দাদা কেমন আছেন আপনি....? “
“বেশ ভালো আছি ভাই....তুমি কেমন আছো....? “ পরিতোষ বাবু নিজের সব দুঃখ বেদনা চেপে বললেন.
“আমি ও ভালো আছি দাদা....” বললেন শ্যালক মশাই.
পরিতোষ বাবু একটু চুপ মেরে রইলেন তারপর আবার প্রশ্ন করলেন, “ইয়ে মানে....মধুরিমা এখন কেমন আছে....”
কথাটা শুনে পরিতোষ বাবুর শ্যালক হাঁসলেন....বললেন ওর জন্যই তো আপনাকে ফোন করে ছিলাম...
পরিতোষ বাবু একটু বিস্মিত হলেন...
প্রশ্ন করলেন হ্যাঁ বলো কি হয়েছে...
শ্যালক মশাই হেঁসে বললেন, “মধুরিমার ফাইনাল ইয়ার এক্সামের রেজাল্ট বেরিয়ে দাদা....আর ও খুব ভালো স্কোর করেছে....”
মেয়ের ভালো রেজাল্ট এর কথা শুনে পরিতোষ বাবু খুব খুশি হলেন....বললেন “বেশ তো খুব খুশির খবর...”
মধুরিমার মামা আবার বললেন, “আরও খুশির খবর আছে দাদা....আপনার মেয়ে মাস কমিউনিকেশনর এক্সট্রান্স এক্সাম দিয়েছিলো...সেটাতেও কোয়ালিফাই করেছে...”
পরিতোষ বাবু আপ্লুত হয়ে শুধু হুম বলে তার বহিঃপ্রকাশ করলেন.
শ্যালক মশাই বললেন, “মাস কম দুই বছরের কোর্স....আর সেটা করতে মেয়ে দিল্লী যাবে বলছে...”
পরিতোষ বাবু, তার কথা শোনা মাত্রই বুকে একটা আঘাত লাগার মতো কিছু অনুভব করলেন....
“কি...কি....বলছো....দিল্লী....!!!...দিল্লী যাবে বলছে...”
“কিন্তু কেন....শহরে অনেক ভালো ভালো ইনস্টিটিউট আছে তো....সেখানে এডমিশন নেক....”.
পরিতোষ বাবু হাফ ছেড়ে বললেন....
তার কথা শুনে শ্যালক মশাই বললেন, “না দাদা....আসলে ওখানকার প্লেসমেন্ট ভালো...তাছাড়া ওর কয়েকটা বন্ধু বান্ধবী ও সেখানে চান্স পেয়েছে...সেহেতু ওর দিল্লী যেতে কোনো অসুবিধা হবে না....আর এডমিশনের দিন থেকে হোস্টেল এলোটমেন্ট অবধি আমি ওখানে মধুরিমার সাথে থাকছি...আপনি একদম চিন্তা করবেন না....”
পরিতোষ বাবু আতঙ্কিত হতে লাগলেন....ব্যাপার টা মেয়ের পড়াশোনার জন্য নয়...মেয়ে মধুরিমা তার থেকে দূরে চলে যেতে চায়....তাকে কষ্ট দিতে চায়....
তিনি এই মুহূর্তে শ্যালক মশাই কে কি বলবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না....
শেষ মেস শুধু এটাই বললেন তিনি তার মেয়ের সাথে এই বিষয়ে কথা বলে নেবেন...
ফোন টা রাখার পর....পুনরায় মেয়েকে ফোন লাগান পরিতোষ বাবু...মনে মনে বলেন মা মধুরিমা দয়া করে ফোন টা তোল...আমি কিছু বলতে চায়...আমি ক্ষমা চাইতে চাই...
কিন্তু না মধুরিমা আগের মতোই ফোন তোলে না....
পরিতোষ বাবুর হতাশা রাগ দুঃখ কষ্ট সব মিলে মিশে একাকার....অবশেষে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেন...
সেদিন মধুমিতা ও তাকে বেশ কয়েকবার ফোন করে ছিল কিন্তু তিনি তার ফোন তোলেন নি..
ভেবে ছিলেন মধুমিতা নামক ওষুধ টা তার মেয়ের একাকিত্ব কে কাটিয়ে তুলে দেবে...কিন্তু না মধুরিমা তো মধুরিমা ই...যতই হোক নিজ মেয়ে...
এভাবে প্রায় দু সপ্তাহ কেটে গেলো....
অফিসে নৃপেন বাবু এখন তার একমাত্র ভরসা এইসব জীবন জ্বলানো সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার....
একদিন কথার চলে পরিতোষ বাবু নৃপেন বাবুকে বলেই ফেললেন....”আচ্ছা নৃপেন বাবু আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি...?? ‘.
নৃপেন বাবুর সেই সদা হাস্যমান হাঁসি নিয়ে মুখ বাড়িয়ে বললেন...”হ্যাঁ নিশ্চই মশাই...আমি তো আপনাকে আগেই বলেছি....আপনি নির্দ্বিধায় আমাকে সব কিছু বলতে বা জিজ্ঞাসা করতে পারেন...”.
নৃপেন বাবুর কথা শুনে পরিতোষ বাবু জিজ্ঞাসা করলেন, “আচ্ছা আপনি আজ পর্যন্ত কতো জনের সাথে সেক্স করেছেন...”
নৃপেন বাবু তার কথা শুনে একটু ঢোক গিললেন....”ইয়ে মানে এটা কি ধরণের প্রশ্ন মশাই...আপনি কি চান সেটা সরাসরি আমায় বলুন না...”.
“হ্যাঁ ধরে নিন আমিও আপনার মতো ওই রকম অভিজ্ঞতা করতে চাই....”বললেন পরিতোষ.