ইফতারিতে খেজুর না থাকলে যেন টেবিলে পরিপূর্ণতা আসে না। খেজুর খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি খুবই পুষ্টিকর খাবার। খেজুরকে প্রাকৃতিক শক্তির উৎস বলা হয়। ভিটামিন, আঁশ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্কসমৃদ্ধ খেজুর একজন সুস্থ মানুষের শরীরে আয়রনের চাহিদার প্রায় ১১ ভাগই পূরণ করে। রোজার সময় ইফতারিতে খেজুর রাখা ভালো। এ ছাড়া অন্য সময়ে প্রতিদিন সকালে ৩-৪টি খেজুর খেলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। বিশেষত যাঁরা কোনো ধরনের পেটের রোগে ভুগছেন, তাঁদের জন্য তো ফলটি মহৌষধ।
খেজুরের পুষ্টিগুণ
খেজুর সুস্বাদু আর বেশ পরিচিত একটি ফল, যা ফ্রুকটোজ ও গ্লাইসেমিক–সমৃদ্ধ। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। খেজুরের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলা হয়, প্রতি ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি, ১ গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২ দশমিক ৮ গ্রাম ফাইবার এবং আরও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। তাই খেজুর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়। আছে প্রচুর ভিটামিন বি, যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
খেজুর শরীরে শক্তি জোগায়
শুকনা খেজুর ওজনের শতকরা ৮০ ভাগই চিনি এবং সে কারণেই সরাসরি রক্তে চলে যায়। শুকনা খেজুরকে মরুভূমির গ্লুকোজ বলা হয়ে থাকে।
ব্লাড প্রেশারে
বিশেষজ্ঞের মতে, খেজুরে থাকা উচ্চমাত্রার ভিটামিন ‘বি’ নার্ভকে শান্ত করে রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। তাই যাদের ব্লাড প্রেসার আছে তারা খেজুর খেতে পারেন।
খেজুর মনকে উৎফুল্ল করে
খেজুরে রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড ও ট্রিপটোফেন, যা সিরোটোনিন হরমোন তৈরিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া এই মিষ্টি ফল মনে আনন্দের অনুভূতি ছড়িয়ে দেয়, খুশি রাখে।
স্ট্রেস কমায়
স্ট্রেস ও নার্ভাসনেসের কারণে মাথাব্যথা হলে তা সহজেই দূর করতে পারে খেজুর। খেজুরে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, যা স্ট্রেস দূর করতে সহায়ক।
হাড় শক্ত করতে
ভিটামিন কে-তে ভরপুর খেজুর। হাড়কে মজবুত রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে ভিটামিন কে।
খেজুর হাড় শক্ত করে
রক্তস্বল্পতায় দূর করে
রক্তস্বল্পতায় ভোগা রোগীরা প্রতিদিন খেজুর খেতে পারেন। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে যতটুকু আয়রন প্রয়োজন, তার প্রায় ১১ ভাগ পূরণ করে খেজুর।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় রাতে পানিতে খেজুর ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সকালে খেজুর ভেজানো পানি পান করুন। দূর হবে কোষ্ঠকাঠিন্য।
খুসখুসে কাশি দূর করে
সাধারণত যাঁদের খুসখুসে কাশি হয়, তারা ২০-২৫ গ্রাম খেজুর, ২ কাপ গরম পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ওই খেজুর চটকে শরবতের মতো করে খেলে খুসখুসে কাশি থেকে ১৫ দিনের মধ্যে উপকার পাবেন।
ত্বককে টানটান রাখে
অনেক সময়ে বয়স বাড়ার ফলে মুখের চামড়া কুঁচকে যায়। খেজুরে থাকা ভিটামিন বি ত্বকের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৪-৫টি খেজুর নিয়ম করে খান। দেখবেন, আস্তে আস্তে দাগ মিলিয়ে যাবে। রোজার সময় খেতে পারেন ইফতারিতে।
মস্তিষ্ক সচল রাখে
খেজুরের সব থেকে বড় গুণ হলো খেজুর মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত রাখে। আমাদের ক্লান্ত শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ শক্তির জোগান দিতে সক্ষম এই খেজুর।
সংরক্ষণ করবেন যেভাবে
তাজা খেজুর সরাসরি ফ্রিজে রাখা ভালো এবং কয়েক দিনের মধ্যেই তা খেয়ে ফেলা উচিত। তবে শুকনা খেজুর বা খোরমা কিছুদিন রেখে খাওয়া যায়। তবে লক্ষ রাখতে হবে, তাতে যেন পোকা বা ফাঙ্গাস না পড়ে। এমন হলে খেজুর ফেলে দেওয়া উচিত।
যাঁরা খেজুর খাবেন না
যাঁদের মাইগ্রেন বা প্রচণ্ড মাথাব্যথার সমস্যা রয়েছে, তাঁদের খেজুর না খাওয়াই ভালো। কারণ, ছোট মিষ্টি খেজুরে টিরামিন বলে যে পদার্থটি রয়েছে, তা মাথাব্যথা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তা ছাড়া যাঁরা ডিপ্রেশনে ভুগছেন, তাঁদের জন্যও খেজুর খাওয়া ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যাঁদের দেহে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি, তাঁরা খেজুর খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
যাঁদের ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে, খেজুর গ্রহণের আগে অবশ্যই নিকটস্থ পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করুন।