গরম এসেছে। এসেছে শরবত খাওয়ার দিন। বাজারে উঠেছে তরমুজ, কাঁচা আম। পাওয়া যাচ্ছে তেঁতুল। দুদিন পর পাওয়া যাবে ফুটি বা বাঙ্গি। শরবতি বা কাগজি লেবুও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। বাঙালি এই সবকিছু দিয়েই শরবত খায়। আসলে এগুলো দিয়ে শরবত খাওয়ার চল আবহমান কাল থেকেই। প্রচণ্ড গরমে মৌসুমি এ ফলগুলোর ঠান্ডা ঠান্ডা শরবত শরীর ও মন জুড়িয়ে দেবে।
তেঁতুলের টক-মিষ্টি-ঝাল শরবত
তেঁতুলের শরবত
উপকরণ
তেঁতুল ১ কাপ, পানি ৬ কাপ, চিনি বা গুড় ১ কাপ, শুকনা মরিচগুঁড়া ২টা, বিট লবণ ১ চা-চামচ, টালা জিরাগুঁড়া ১ চা-চামচ, পুদিনাবাটা আধা চা-চামচ।
প্রণালি
তেঁতুলের সঙ্গে সব উপকরণ মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। বরফ দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
কেন খাবেন
তেঁতুলে টারটারিক অ্যাসিড থাকায় এটি হজমশক্তি বাড়ায়। তাই পেট ফাঁপা ও কাশি দূর করতে পুরোনো তেঁতুল গুলে, পরিমাণমতো পানি, লবণ, গুড় অথবা চিনি মিশিয়ে শরবত খেতে হবে। অ্যালকোহলের বিষাক্ততা নিরাময়ে তেঁতুলের শরবত বেশ কার্যকর। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি, সি ও ক্যালসিয়াম। এ ছাড়া রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম৷ তেঁতুল ত্বক, চুল, দাঁত ও হাড়কে করে মজবুত এবং রাতকানা, চোখ ওঠা, চোখের পাতায় সংক্রমণজনিত সমস্যাগুলোও দূর করে৷ অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বা জীবাণুরোধক গুণ আছে তেঁতুলের৷ তাই এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। প্রচুর ভিটামিন সি থাকায় কাটাছেঁড়া শুকাতে সাহায্য করে৷
কাঁচা আমের শরবত
কাঁচা আমের শরবত
উপকরণ
কাঁচা আমের কুচি ১ কাপ, পানি দেড় থেকে দুই কাপ, চিনি আধা কাপ, কাঁচা মরিচ ১টি, বিট লবণ ১ চা-চামচ, পুদিনাপাতা ১ টেবিল চামচ।
প্রণালি
সব উপকরণ একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ছেঁকে কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে পরিবেশন করতে হবে
কেন খাবেন
আমে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও উচ্চ পরিমাণে খাদ্য আঁশ থাকায় এটি কোলন ক্যানসার, স্তন ক্যানসার, রক্তস্বল্পতা, লিউকেমিয়া ও প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমে প্রচুর খাদ্য আঁশ থাকায়, তা হজমে সাহায্য করে। এতে বিদ্যমান উচ্চ বিটা ক্যারোটিন অ্যাজমা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের অতিরিক্ত আম খাওয়া ক্ষতিকর। তাঁরা আম পরিমিত খাবেন। সুস্থ মানুষের জন্য পাকা বা কাঁচা হোক—সব আমই উপকারী।
তরমুজের শরবত
উপকরণ
তরমুজকুচি ২ কাপ, চিনি আধা কাপ, বরফ টুকরা ৩-৪টি।
প্রণালি
তরমুজ ব্লেন্ড করে ছেঁকে নিতে হবে। এবার চিনি মিশিয়ে বরফ দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
কেন খাবেন
তরমুজে প্রচুর পরিমাণে পানি, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, শর্করা, ভিটামিন সি পাওয়া যায়। সারা দিনের ক্লান্তি ও দুর্বলতা কাটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই শরবত। আবার টাইফয়েড জ্বরের তীব্রতা কমাতেও ভূমিকা রাখে তরমুজ। পুরুষের বন্ধ্যত্ব ঘোচাতেও তরমুজের জুড়ি মেলা ভার।
বেলের শরবত
উপকরণ
বেল মাঝারি ২টি, পানি ৬ গ্লাস, চিনি ১ কাপ, বরফ আধা কাপ।
প্রণালি
বেলের শাঁস বের করে অর্ধেক পরিমাণ পানিতে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার বেলের বিচি ছেঁকে বাকি সব উপকরণ মিশিয়ে ঠান্ডা করে পরিবেশন করতে হবে।
কেন খাবেন
সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে বেলের শরবতের জুড়ি মেলা ভার। বেলের ভিটামিন সি দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে শক্তিশালী করে, যা বসন্ত গ্রীষ্মকালীন ছোঁয়াচে রোগ প্রতিরোধ করে। এই ফলে আঁশের পরিমাণ অনেক বেশি থাকায় তা হজমশক্তি বাড়ায়, গ্যাস-অ্যাসিডিটির পরিমাণ কমায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এ ছাড়া ভিটামিন এ চোখের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে পুষ্টি জোগায়। আবার যাঁরা নিয়মিত বেল খান, তাদের কোলন ক্যানসার, গ্লুকোমা, জেরোসিস, জেরোপথ্যালমিয়া (ইত্যাদি চোখের অসুখ) হওয়ার প্রবণতা তুলনামূলক কম থাকে।
বাঙ্গি বা ফুটির শরবত
ফুটির শরবত
উপকরণ
বাঙ্গি বা ফুটি ১ কাপ, পানি ১ কাপ, লেবুর রস ১ চা-চামচ, পুদিনাপাতা ১ চা-চামচ।
প্রণালি
বাঙ্গির সঙ্গে সব উপকরণ মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ফ্রিজে রেখে অথবা বরফ দিয়ে ঠান্ডা করে পরিবেশন করতে হবে।
কেন খাবেন
ব্রণ বা একজিমার সমস্যায় ভুগলে প্রতিদিন এক গ্লাস বাঙ্গির শরবত খান। বাঙ্গি বা ফুটি ভিটামিন বি, সি, শর্করা ও সামান্য ক্যারোটিনসমৃদ্ধ। বাঙ্গি ত্বকের বয়সের ছাপ দূর করে। বাঙ্গির প্রোটিন কম্পাউন্ড ত্বককে করে সুন্দর। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ইন্সনিটোল চুল নতুন করে গজাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া প্রতিরোধ করে থাকে। তাই নিয়মিত বাঙ্গি খেলে চুলের অনেক উপকার পাওয়া যায়। বাঙ্গিতে আছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ডায়াটারি ফাইবার, যা খাদ্য হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। এই ফলের পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে সক্ষম।