সিরাজ সাহেব অতি ভদ্রলোক, অতি সরল। তাঁর সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করলেই এই ধরনের ভরসা পাওয়া যায়। মনে হয় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবার মতো কিছু ঘটে নি। ভদ্রলোকের শরীর যেমন ভারী গলার স্বরও ভারী। তিনি কথা বলেন গলা নামিয়ে। প্রতিটি শব্দ এমনভাবে উচ্চারণ করেন যে মনে গেথে যায়।
এসডিপিও সাহেব শোনেন, আপনি আমি অর্থাৎ আমরা যারা পিরোজপুরে মোটামুটি আন্দামানটাইপ জায়গায় পড়ে আছি তাদের অবস্থাটা বুঝতে পারছেন? তারা আছে আল্লাহর খাস রহমতের তালিকায়। বুঝিয়ে বলি, পাকিস্তানি মিলিটারি মারামারি কাটাকাটি করতে থাকবে বড় বড় শহরে। তারা বিগ সিটি সামলাতেই এখন ব্যস্ত। তারপর যাবে ডিসট্রিক্ট লেভেলে, তারপর সাবডিভিশন। তার আগেই খেল খতম।
কীভাবে খেল খতম?
যা ঘটার ঘটে যাবে। হয় পাকিস্তান, না হয়। বাংলাদেশ। মাঝামাঝি ধরনের কিছু হবার সম্ভাবনাও আছে। লুজ ফেডারেশন টাইপ। কিংবা ধরেন আমেরিকার মতো United States of Pakistan. সেখানে বাংলাদেশ একটা রাষ্ট্র, পাঞ্জাব একটা, সিন্ধু, বেলুচিস্তান… বুঝেছেন?
বোঝার চেষ্টা করছি।
পাকিস্তানিরা খুব মারামারি কাটাকাটি যে করতে পারবে তাও না। জাতিসংঘ আছে না? বড় বড় রাষ্ট্র আছে। রাশিয়ার পদগোনি যদি এক ধমক দেয়। ইয়াহিয়ার পাতলা পায়খানা শুরু হয়ে যাবে। সেই পায়খানা বন্ধ করা ডাক্তারের সাধ্য না। বোতলের ছিপি ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নাই। আচ্ছা, মনে করেন। কেউ কোনো ধমক ধামক দিল না, তারপরেও এক হাজার মাইল দূর থেকে উড়ে এসে যুদ্ধ কলা? যুদ্ধ এত সোজা? যুদ্ধ কি মামার বাড়ির উঠানে ডাংগুলি খেলা?
যত সহজ সমাধানের কথা। আপনি বলছেন, তত সহজ আমার কাছে মনে হচ্ছে না।
আপনার কাছে জটিল মনে হচ্ছে?
জি।
আপনি তো ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ। কোরআন শরীফ বিশ্বাস করেন?
কী বলেন, কোরআন শরীফ বিশ্বাস করব না মানে?
পাক কোরআনে সূরা বনি ইসরাইলে আল্লাহপাক বলেছেন, আমি তোমাদের ভাগ্য তোমাদের গলায় হারের মতো ঝুলাইয়া দিয়াছি। কাজেই আমাদের কী হবে না হবে সব আগে থেকেই ঠিক করা। যা আগে থেকে ঠিক করা তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করে লাভ আছে?
না, লাভ নেই। যা হবার তা হবে। তারপরেও আমরা নিশ্চয়ই হাত-পা কোলে নিয়ে বসে থাকব না।
কী করবেন?
বিপদের জন্যে তৈরি হবো।
কীভাবে? মিলিটারি আসবে মেশিনগান, রকেট লাঞ্চার নিয়ে, আর আপনারা যুদ্ধ করবেন। একশ বছরের পুরনো থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে? ওদের আছে যুদ্ধের ট্রেনিং, আর আপনাদের ট্রেনিং হলো চোৱের পিছনে দৌড় দেয়া। মাথা থেকে সব চিন্তা-ভাবনা ঝেড়ে ফেলুন। ভাবিকে ভালো করে চা বানাতে বলুন। চা খেতে খেতে গল্প করব। খামাখা দুশ্চিন্তা করে ব্লাড প্রেসার বাড়াবেন না। Do ফুর্তি।
ফয়জুর রহমান সাহেব বাগানে রাখা বালতিতে হাত ধুলেন। ইরা পেছনে পেছনে আসছে। পানি খেতে চায় হয়তো। তিনি বালতি নিচু করে ধরলেন। বালতিতে মুখ ঢুকিয়ে চুমুক দিয়ে পানি খাচ্ছে ইরা। গরু ভেড়া ছাগল সবাই চুমুক দিয়ে পানি খায়। অথচ কুকুর শ্রেণী পানি খায় জিভ ড়ুবিয়ে। এর মানে কী? বড় ছেলেকে কি ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করবেন? সে দিনরাত বই পড়ে। এই প্রশ্নের জবাব নিশ্চয়ই সে জানে। তাছাড়া এ ধরনের টুকটাক কথাবার্তা দিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবার পথ হয়তো তৈরি হবে। তিনি লক্ষ করলেন, বড় ছেলের হাতে চায়ের কাপ। সে চোখ বন্ধ করে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। এই অবস্থাতেই চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। এর মানে কী? তিনি ছেলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে গলাখ্যাকড়ি দিলেন। ছেলে চমকে তার দিকে তাকাল। ছেলের চোখ দেখেই মনে হচ্ছে সে ভয় পাচ্ছে। জড়সড় হয়ে গেছে। ভয় পাবার কী আছে? তিনি বললেন, কী করছিস?
কিছু না।
চোখ বন্ধ করে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?
ছেলে জবাব দিল না। বিব্ৰত ভঙ্গিতে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। বাবার সামনে থেকে চলে যেতে পারলে সে বাঁচে। অথচ তার কিছুক্ষণ কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে। তিনি বললেন, স্বরূপকাঠির একটা লোক আছে, তার না-কি জীন সাধনা। সে ঘরের ভেতর জীন নামাতে পারে। সেই জীন কথা বলে। মাথায় হাত দিয়ে দােয়া করে। ভাবছি লোকটাকে আনাই। দেখি ঘটনা কী। আনাব?
ছেলে আগ্রহের সঙ্গে বলল, জি আনান। কবে আনাবেন?
ইচ্ছা করলে আজকেই আনা যায়। দেখি।
তিনি লক্ষ করলেন, উৎসাহ এবং উত্তেজনায় ছেলের চোখ চকচক করছে। ছেলে খুবই মজা পাচ্ছে। তিনি পুরনো প্রসঙ্গে ফিরে গেলেন। তিনি বললেন, চোখ বন্ধ করে সূর্যের দিকে তাকিয়ে ছিলি কেন?
তাঁর ধারণা এইবার ছেলে প্রশ্নের জবাব দেবে। তাকে কিছুটা হলেও সহজ করা হয়েছে। তার ধারণা ঠিক হলো, ছেলে কথা বলতে শুরু করল। তিনি আগ্ৰহ নিয়ে শুনছেন। ছেলের কথা বলার মধ্যে মাস্টার মাস্টার ভাব আছে। যেন সে ক্লাসে বক্তৃতা দিচ্ছে। তাঁর এই ছেলে কি ভবিষ্যতে মাস্টার হবে?
এসডিপিও সাহেব শোনেন, আপনি আমি অর্থাৎ আমরা যারা পিরোজপুরে মোটামুটি আন্দামানটাইপ জায়গায় পড়ে আছি তাদের অবস্থাটা বুঝতে পারছেন? তারা আছে আল্লাহর খাস রহমতের তালিকায়। বুঝিয়ে বলি, পাকিস্তানি মিলিটারি মারামারি কাটাকাটি করতে থাকবে বড় বড় শহরে। তারা বিগ সিটি সামলাতেই এখন ব্যস্ত। তারপর যাবে ডিসট্রিক্ট লেভেলে, তারপর সাবডিভিশন। তার আগেই খেল খতম।
কীভাবে খেল খতম?
যা ঘটার ঘটে যাবে। হয় পাকিস্তান, না হয়। বাংলাদেশ। মাঝামাঝি ধরনের কিছু হবার সম্ভাবনাও আছে। লুজ ফেডারেশন টাইপ। কিংবা ধরেন আমেরিকার মতো United States of Pakistan. সেখানে বাংলাদেশ একটা রাষ্ট্র, পাঞ্জাব একটা, সিন্ধু, বেলুচিস্তান… বুঝেছেন?
বোঝার চেষ্টা করছি।
পাকিস্তানিরা খুব মারামারি কাটাকাটি যে করতে পারবে তাও না। জাতিসংঘ আছে না? বড় বড় রাষ্ট্র আছে। রাশিয়ার পদগোনি যদি এক ধমক দেয়। ইয়াহিয়ার পাতলা পায়খানা শুরু হয়ে যাবে। সেই পায়খানা বন্ধ করা ডাক্তারের সাধ্য না। বোতলের ছিপি ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নাই। আচ্ছা, মনে করেন। কেউ কোনো ধমক ধামক দিল না, তারপরেও এক হাজার মাইল দূর থেকে উড়ে এসে যুদ্ধ কলা? যুদ্ধ এত সোজা? যুদ্ধ কি মামার বাড়ির উঠানে ডাংগুলি খেলা?
যত সহজ সমাধানের কথা। আপনি বলছেন, তত সহজ আমার কাছে মনে হচ্ছে না।
আপনার কাছে জটিল মনে হচ্ছে?
জি।
আপনি তো ধর্ম বিশ্বাসী মানুষ। কোরআন শরীফ বিশ্বাস করেন?
কী বলেন, কোরআন শরীফ বিশ্বাস করব না মানে?
পাক কোরআনে সূরা বনি ইসরাইলে আল্লাহপাক বলেছেন, আমি তোমাদের ভাগ্য তোমাদের গলায় হারের মতো ঝুলাইয়া দিয়াছি। কাজেই আমাদের কী হবে না হবে সব আগে থেকেই ঠিক করা। যা আগে থেকে ঠিক করা তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করে লাভ আছে?
না, লাভ নেই। যা হবার তা হবে। তারপরেও আমরা নিশ্চয়ই হাত-পা কোলে নিয়ে বসে থাকব না।
কী করবেন?
বিপদের জন্যে তৈরি হবো।
কীভাবে? মিলিটারি আসবে মেশিনগান, রকেট লাঞ্চার নিয়ে, আর আপনারা যুদ্ধ করবেন। একশ বছরের পুরনো থ্রি নট থ্রি রাইফেল দিয়ে? ওদের আছে যুদ্ধের ট্রেনিং, আর আপনাদের ট্রেনিং হলো চোৱের পিছনে দৌড় দেয়া। মাথা থেকে সব চিন্তা-ভাবনা ঝেড়ে ফেলুন। ভাবিকে ভালো করে চা বানাতে বলুন। চা খেতে খেতে গল্প করব। খামাখা দুশ্চিন্তা করে ব্লাড প্রেসার বাড়াবেন না। Do ফুর্তি।
ফয়জুর রহমান সাহেব বাগানে রাখা বালতিতে হাত ধুলেন। ইরা পেছনে পেছনে আসছে। পানি খেতে চায় হয়তো। তিনি বালতি নিচু করে ধরলেন। বালতিতে মুখ ঢুকিয়ে চুমুক দিয়ে পানি খাচ্ছে ইরা। গরু ভেড়া ছাগল সবাই চুমুক দিয়ে পানি খায়। অথচ কুকুর শ্রেণী পানি খায় জিভ ড়ুবিয়ে। এর মানে কী? বড় ছেলেকে কি ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করবেন? সে দিনরাত বই পড়ে। এই প্রশ্নের জবাব নিশ্চয়ই সে জানে। তাছাড়া এ ধরনের টুকটাক কথাবার্তা দিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবার পথ হয়তো তৈরি হবে। তিনি লক্ষ করলেন, বড় ছেলের হাতে চায়ের কাপ। সে চোখ বন্ধ করে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছে। এই অবস্থাতেই চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। এর মানে কী? তিনি ছেলের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে গলাখ্যাকড়ি দিলেন। ছেলে চমকে তার দিকে তাকাল। ছেলের চোখ দেখেই মনে হচ্ছে সে ভয় পাচ্ছে। জড়সড় হয়ে গেছে। ভয় পাবার কী আছে? তিনি বললেন, কী করছিস?
কিছু না।
চোখ বন্ধ করে সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?
ছেলে জবাব দিল না। বিব্ৰত ভঙ্গিতে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। বাবার সামনে থেকে চলে যেতে পারলে সে বাঁচে। অথচ তার কিছুক্ষণ কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে। তিনি বললেন, স্বরূপকাঠির একটা লোক আছে, তার না-কি জীন সাধনা। সে ঘরের ভেতর জীন নামাতে পারে। সেই জীন কথা বলে। মাথায় হাত দিয়ে দােয়া করে। ভাবছি লোকটাকে আনাই। দেখি ঘটনা কী। আনাব?
ছেলে আগ্রহের সঙ্গে বলল, জি আনান। কবে আনাবেন?
ইচ্ছা করলে আজকেই আনা যায়। দেখি।
তিনি লক্ষ করলেন, উৎসাহ এবং উত্তেজনায় ছেলের চোখ চকচক করছে। ছেলে খুবই মজা পাচ্ছে। তিনি পুরনো প্রসঙ্গে ফিরে গেলেন। তিনি বললেন, চোখ বন্ধ করে সূর্যের দিকে তাকিয়ে ছিলি কেন?
তাঁর ধারণা এইবার ছেলে প্রশ্নের জবাব দেবে। তাকে কিছুটা হলেও সহজ করা হয়েছে। তার ধারণা ঠিক হলো, ছেলে কথা বলতে শুরু করল। তিনি আগ্ৰহ নিয়ে শুনছেন। ছেলের কথা বলার মধ্যে মাস্টার মাস্টার ভাব আছে। যেন সে ক্লাসে বক্তৃতা দিচ্ছে। তাঁর এই ছেলে কি ভবিষ্যতে মাস্টার হবে?