গতো রাতে আমার বাসার পাশে সরকারী গার্লস স্কুলের ভর্তি পরিক্ষার ফলাফল দিয়েছে। সন্ধ্যা থেকেই অভিবাবকদের ভীড় লাগা শুরু হয়। রাত এগারোটার দিকে আশেপাশের কোনো খালি জায়গাই আর খালি ছিলো না। নারী পুরুষে আশেপাশের পুরো এলাকাটা একেবারে সয়লাব হয়ে গিয়েছিলো। আমার ছোট শালার বড় মেয়েটা পরিক্ষা দিয়েছিলো। সারাদিন আর সন্ধ্যার পর রাত দশটা পর্যন্ত তাদেরকে বাসায় আটকে রাখা গিয়েছিলো এরপর স্কুলের গেইটের সামনে এসে তারা অবস্থান নিয়েছে। আমি বাসায় যাবার পর গিন্নী বললো, একটু দেখে আসো না, তাদের কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা। সাথে আবার ছোট মেয়েটাও যে আছে। দেরি না করে স্কুলের সামনে গিয়ে খুঁজে পেতে তাদের বের করলাম। গেইটের ঠিক পাশেই একটা নিরাপদ স্থানে দাঁড়িয়ে আছে তারা। শালার কাছ থেকে জানতে পারলাম আরো আধা ঘণ্টাখানেক লেগে যাবে রেজাল্ট শীট দেয়ালে সাঁটিয়ে গেইট খুলে দেয়ার জন্য। এতোক্ষন সে বেঞ্চের উপর দিয়ে উঁকি মেরে ভিতরের অবস্থা পর্যবেক্ষন করছিলো। ভাবলাম, এই ফাঁকে একটা বিড়ি ফুঁকে আসি... দোকানে দাঁড়িয়ে বিড়িতে দুটো টান দিতে না দিতেই স্কুলের গেইট খোলার শব্দে সচকিত হয়ে হাতের বিড়ি ফেলে দৌড়ালাম মেইন গেইটের দিকে। এই ভিড়ের মাঝে অন্তত ছোট মেয়েটাকে আমার কাছে রাখতে পারলেও তারা কিছুটা স্বস্তি পাবে সে আশায়। কিন্তু দৌড়ে গিয়েও গেইটের পাশে তাদের কারোর দেখা পেলাম না। মেইন গেইট খোলার সাথে সাথেই পানির স্রোতের মতো মানুষের সেই স্রোত ঢুকে গিয়েছিলো স্কুলের মাঠে। স্রোতে ভেসে শালা, শালার বউ আর বাচ্চা দুটোও নিজের অজান্তেই ঢুকে গেছে স্কুলের অভ্যন্তরে... আমি তাদেরকে খোঁজার জন্য ভিতরের মাঠে আতিপাতি করে হাতড়াচ্ছি... আর সমানে তাদের নাম্বারে রিং দিয়ে যাচ্ছি। যদিও খুব ভালো করেই জানি এই হুড়নুড় অবস্থা আর হৈ চৈ ছাপিয়ে আমার মোবাইলের কল তাদের মোবাইলের রিং হয়ে বাজবে না। তবুও চেস্টা চালিয়ে গেলাম মিনিট পনেরো পর্যন্ত। অবশেষে শালার বউ আমার কল ধরতে পারলো। শালার বউয়ের বর্ণিত নির্দিস্ট স্থানে পৌছে দেখলাম ভিড়ের পাশেই একটা মোটামুটি খালি জায়গায় তার অবস্থান। দুই মেয়ে নিয়ে নিরাপদেই আছে। কাছে যেতেই শালার বউ বলে উঠলো- ইশ্... দুলাভাই,আপনি দেখি একেবারে ঘেমে গেছেন !
ততক্ষনে খেয়াল করলাম আসলেই আমি ঘেমে একেবারে নেয়ে উঠেছি... মানুষের ভিড় বলে কথা। রানী খালা একেবারে সত্য কথা বলেছেন। মানুষের শরীরের উত্তাপের চাইতে বড় লেপ-কম্বল আর কিছুই নেই। ধন্যবাদ, ছোট মামা। আপনি যে পদ্ধতিটার কথা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন।
এবার বুঝেন, দিপু মামা যেখানে জমে ক্ষীর হয়ে যাবার অবস্থায়, সেখানে আমি ঘেমে নেয়ে নিয়েছিলাম গতো রাতে !!