What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected আমার প্রিয় কবিতাগুলো............ (1 Viewer)

যাতায়াত-হেলাল হাফিজ
কেউ জানে না আমার কেন এমন হলো।
কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না
রাত কাটে তো ভোর দেখি না
কেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকে না কেউ জানে না।
নষ্ট রাখীর কষ্ট নিয়ে অতোটা পথ একলা এলাম
পেছন থেকে কেউ বলেনি করুণ পথিক
দুপুর রোদে গাছের নিচে একটু বসে জিরিয়ে নিও
কেউ বলেনি ভালো থেকো সুখেই থেকো
যুগল চোখে জলের ভাষায় আসার সময় কেউ বলেনি
মাথার কসম আবার এসো
জন্মাবধি ভেতরে এক রঙিন পাখি কেঁদেই গেলো
শুনলো না কেউ ধ্রুপদী ডাক,
চৈত্র াগুনে জ্বলে গেলো আমার বুকের গেরস্থালি
বললো না কেউ তরুণ তাপস এই নে চারু শীতল কলস।
লন্ডভন্ড হয়ে গেলাম তবু এলাম।
ক্যাঙ্গারু তার শাবক নিয়ে যেমন করে বিপদ পেরোয়
আমিও ঠিক তেমনি করে সভ্যতা আর শুভ্রতাকে বুকে নিয়েই দুঃসময়ে এতোটা পথ একলা এলাম শুশ্রূষা হীন।
কেউ ডাকেনি তবু এলাম, বলতে এলাম ভালবাসি।
 
আমি ভালো নেই-শ্রীজাত
জানো মা, আমি ভালো নেই।
ভাবছিলাম- তোমাকে বলবো বলবো ;
কিন্তু কেমন যেন লজ্জা হয়।
আসলে কখনো তো, জিজ্ঞেস করিনি তোমাকে--
"মা, কেমন আছো তুমি"?
-
তোমার ভালোবাসা পেতে পেতে
পাওয়ার অভ্যাসটা-- কেমন অধিকার হয়ে গেছে।
একরকম ধরেই নিয়েছি--
ভালোবাসা শুধু, তোমারই ভীষণ কর্তব্য
আমার একদম নয়।
-
মা, ভালো আছো তুমি ?
কেমন করে, ভালো থাকবে তুমি ?
আমি ভরা সংসার, আর ভরা পকেট নিয়ে
ভালো থাকতে পারিনা ;
আর তুমি-- শূন্য ঘরে, শূন্য হৃদয়ে
কর্পদক শূন্য হয়ে--
কেমন করে ভালো থাকবে ?
-
তোমার গেঁটে বাতটা কেমন আছে, মা ?
সরি। তুমি বলেছিলে কয়েকবার -
যে- বাতটা তোমাকে বড় ভোগাচ্ছে।
আমি তা কেবলই ভুলে যাই।
-
কেন জানি, তবুও মনে হয়-
তুমি আমাকে, আগের মতোই ভালোবাসো।
এখনো তুমি, আমার যন্ত্রণায়-
ঠিক আগের মতোই হাত বুলিয়ে দেবে।
-
আচ্ছা মা
তোমার ভালোবাসার ক্লান্তি নেই কেন?
আমার ভালোবাসার ক্লান্তি আছে ;
মালবিকার ভালোবাসার ক্লান্তি আছে ;
শুধু তোমার-টার ক্লান্তি নেই।
কেন মা ?
-
খুব তাড়াতাড়িই তোমার কাছে আসবো।
তুমি একটু, আমার বুকে হাত বুলিয়ে দেবে।
আমি ছটফট করছি ;
যন্ত্রণায় ছটফট করছি, মা।
-
এসেছিলাম, সাত সাগর পেরিয়ে
আকাশ ধরতে ;
আকাশ-টা, আকাশেই রয়ে গেলো ;
শুধু মাটি-টা, পায়ের থেকে সরে গেলো
মা-টা, বুকের থেকে সরে গেলো
মানুষজন, হৃদয় থেকে সরে গেলো।
-
জনারণ্য নিউয়র্কের রাস্তায়-
আজকাল-- তোমার আঙুল খুঁজে বেড়াই ;
ভয় হয় ; বুঝি কোন
অজানা জঙ্গলে হারিয়ে যাচ্ছি।
ওরা সবাই কেমন অপরিচিত-
কথা হয় ; কিন্তু হৃদয়ের সংযোগ হয় না।
স্পর্শ হয় ; কিন্তু অনুভূতি হয় না।
-
জানো মা
অভ্যাসের একটা ক্ষয়িষ্ণু ক্ষমতা আছে ;
অমৃতও ধীরে ধীরে, কেমন যেন নোনতা হয়ে যায় !
তোমার ভালোবাসাও কেমন যেন, প্রতিদিনকার অভ্যাস হয়ে গেছিলো।
প্রতিদিন মধু খেলে, মধুকে আর মধু মনে হয় না।
আজ- বহুদূরে, সাত সাগরের পাড়ে
তোমার স্নেহ-চ্যুত আমি ;
তোমার একটু ভালোবাসার জন্য, আকুল হয়ে আছি।
-
হয়তো ক্ষয়িষ্ণুতার কারণে ;
মালবিকার মধুতেও, আজকাল তৃপ্তি আসে না।
আমাদের সম্পর্কটাও কেমন যেন
নিছকই একটা অভ্যাস হয়ে গেছে।
নদী আছে, স্রোত নেই ;
বায়ু আছে, বেগ নেই ;
জীবন আছে, প্রবাহ নেই।
সবই যেন কেমন মৃয়মান !
-
আচ্ছা মা, বলো তো-
জীবনে প্রবাহ কিভাবে ধরে রাখা যায় ?
মাঝে মাঝে ভাবি -
আমাদের অভ্যাসে আসক্তিই এর কারণ।
চেনা ঘর, চেনা জগতের বাইরে যেতে-
আমাদের বড় ভয়।
মানুষ জানে- অভ্যাসে জীবনের মৃত্যু ;
তবুও সে, অভ্যাস ত্যাগ করতে পারে না।
-
তাইতো জীবন প্রবাহ হারায়।
আর তখনই জমতে থাকে-- বিষাদ, আর যন্ত্রণার শ্যাওলা।
-
মা, আমার তো কিছুরই অভাব নেই
তবু বুকটা কেন এতো, শূন্য বলো তো ?
মালবিকা বুকে হাত বুলিয়ে দেয় ;
কিন্তু যন্ত্রণা-টা আবার ফিরে ফিরে আসে।
-
আমি ভালো নেই, মা।
ক্রমশ-- বিষাদের ছায়ায় আবিষ্ট হয়ে যাচ্ছি।
কেমন যেন- নিজেরই পাতা যন্ত্রণা-জালে
দিন দিন জড়িয়ে যাচ্ছি।
-
বাড়ি-গাড়ি, ধন-ঐশ্বর্য্যকে
ভেবেছিলাম সুখের বাহক।
আজ দেখছি-
এগুলো সবই কেমন, আমার যন্ত্রণার ধারক।
-
আজ আমার-
সুন্দর দাঁত আছে, হাসি নেই।
চকচকে কলেবর আছে, হৃদয় নেই।
বড় ঘর আছে, সুখ নেই।
-
এমন কেন হলো, মা ?
এখন দেখছি-
পরিশ্রম করলেই, সুখ আসে না।
বড় হলেই, মহান হয় না।
আমি কি তবে, জীবনের গন্তব্য-টাই হারিয়ে ফেলেছি ?
-
এখন- তোমার কথা মনে পরে, মা।
তুমি বলতে -
খোকা, জীবনে খুব হাসবি ;
তবেই সুখী হবি।
আমি, আজকাল আর হাসি না।
পল্টু বলে - "পাপ্পা, তোমার মুখটা
সবসময় কেমন- পচা-পচা।
তুমি হাসো না কেন, পাপ্পা ?"
-
আমি হাসতে ভুলে গেছি, মা-
আমি ভালো নেই।
 
ত্যাজ- দেবব্রত সিংহ


‘মু জামবনির কুঁইরি পাড়ার শিবু কুঁইরির বিটি সাঁঝলি বটে।’

কাগজওয়ালারা বইললেক,
“উঁ অতটুকু বইললে হবেক কেনে?
তুমি এবারকার মাধ্যমিকে পত্থম হইছ।
তোমাকে বইলতে হবেক আরো কিছু।”

পঞ্চায়েতের অনি বৌদি, পধান, উপপধান, এইমেলে, এম.পি-
সব একেবারে হামলিয়ে পড়ল আমাদের মাটির কুঁইড়েঘরে।

জামবনি ইস্কুলের হেডমাস্টার
কোন বিহান বেলায় টিনের আগর খুইলে,
হেইকে, ডেইকে, ঘুম ভাঙাই- খবরটা যখন পথম শুনালেক
তখন মাকে জড়াই শুয়ে ছিলুম আমি।
কুঁড়াঘরের ঘুটঘুইটা আঁধারে হেডমাস্টার মশাইরে দেইখে
চোখ কচালে মায়ের পারা আমিও হাঁ – হয়ে ভাইবে ছিলেম।
-একি স্বপন দেখছি নাকি-
স্যার বইলল, এটা স্বপুন লয়, স্বপুন লয়, সত্যি বইটে।
কথাটো শুইনে কেঁইনদে ভাসায়েছিলুম আমরা মা বিটি।

আজ বাপ বেঁইচে থাইকলে
আমি মানুষটাকে দেখাইতে পাইত্থম। দেখাইতে পাইতত্থেম বহুত কিছু-
আমার বুকের ভিতর
যে তেজালো সইনঝা বাতিটা জ্বালায়ে ছিল মানুষটা।
সেই বাতিটা আজকে কেমন আমাদের কুঁইড়ে ঘরটাকে আলো কইরেছে।
সেটো দেখাইতে পাইত্থম।

আপনারা বইলছেন বটে
“তুমাদের মতো মেইয়ারা যদি উঠে আসে তবে ভারতবর্ষ উঠে আসে।”
কথাটা খুবই সত্যি, কিন্তু
উঠে আসার রাস্তাটা যে এখোন তৈয়ার হয় নাই।
খাড়া পাহাড়ে উঠা যে কি জিনিস।
বহুত দম লাগে। বহুত ত্যাজ লাগে…

আমি জামবনির কুঁইরি পাড়ার শিবু কুঁইরির বিটি সাঁঝলি।
যখন থেকে হুঁশ হইছে তখন থেকে শুইনে আসছি
“বিটি না মাটি’
ঠাকুমা বইলথক্,
পরের ঘরে হেঁইসেল ঠেইলবেক্ তার আবার লিখাপড়া’

গাঁয়ের বাবুরা বইলথক্
“দ্যাখ সাঁঝলি – মন খারাপ কইরলি তো হেইরে গেলি।
শুন যে যা বইলছে বলুক্। সে সব কথা এক কানে সিধালে
আর এক কানে বার কইরে দিবি।’

তখ্যান বাবুপাড়ার দেঘইরা ঘরে কামিন খাইটতক মা।
ক্ষয় রোগের তাড়সে-মায়ের গতরটা ভাঙে নাই অতোটা।
মাঝে মইধ্যে জ্বরটর আইত বটে, জ্বর এলে মা
চুপচাপ এঙনাতে তালাই পাইতে শুইয়ে থাইকতো।
মনে আছে সে ছিল এক জাঁড় কালের সকাল।
রোদ উঠেছিল ঝলমলানি ঝিঙা ফুলা রোদ।
আমি সে রোদে পিঠ দিয়া গা দুলাই পড়ছিলাম
ইতিহাস…
কেলাস সেভেনের সামন্ত রাজাদের ইতিহাস।

দে ঘরের গিন্নি লোক পাঠাইছিল বারকতক।
মায়ের জ্বর সে তারা শুইনতে নাই চায়!
আমাদের দিদি বুঢ়ি তখনো বাঁইচে।
ছেঁড়া কম্বল মুড়হি দিয়ে বিড়ি ফুকছিল বুড়হি।
শেষতক্ বুড়হি সেদিন পড়া থেকে উঠাই
মায়ের কাইজ টুকুন কইরতে পাঠাই ছিল বাবু ঘরে।

পুরানো ফটক ঘেরা উঠান-অতোবড়ো দরদালান- অতোবড়ো বারান্দা,
সব ঝাঁট ফাট দিয়ে সাফ সুতরো করে আসছিলুম চইলে,
দেঘইরে গিন্নি নাই ছাইড়ল্যাক, একগাদা এটাকাটা-জুঠা বাসন
আমার সামনে আইনে ধইরে দিলেক। বইল্লুম
“আমি তোমাদের জুঠা বাসন ধুইতে লাইরবো,”
বাবু গিন্নির সেকি রাগ’-
“কি বইল্লি তুই যতবড়ো মু লয় তত বড়ো কথা? জানিস,
তর মা, তর মায়ের মা, তার মায়ের মা সবাই এতক্কাল
আমাদের জুঠা বাসন ধুয়ে গুজারে গ্যালো
আর তুই আমাদের জুঠা বাসন ধুইতে লাইরবি!”
বল্লুম “হ আমি তোমাদের জুঠা বাসন ধুইতে লাইরবো।
তোমরা লোক দেখে লাওগা। আমি চইল্লোম”
কথাটো বইলে গটগট গটগট কইরে বাবু গিন্নির মুখের সামনে
আমি বেড়োই চইলে আইলম।”

তা বাদে সে লিয়ে কি কাইন্ড। কি ঝাম্যালা।
বেলা ডুবলে মাহাতোদের ধান কাট্টে বাপ ঘরে ফিরে আইলে
দুপাতা লিখাপড়া করা লাত্নির ছোট মুখে বড়ো থুতির কথা
সাতকাহন কইরে বইলেছিল বুড়হি দিদি।

মা কুনো রা কাড়ে নাই।
আঘর মাসের সইন্ ঝা বেলাই এঙ্গ্নাতে আগুন জ্বেইলে
গা-হাত-পা সেঁকছিল মা।

একমাথা ঝাঁকড়া চুল ঝাঁকানো বাপের পেটানো পাথরের মুখটা
ঝইলকে উঠেছিল আগুনের আঁচে।
আমি বাপের অমুন চেহারা কুনোদিন দেখি লাই।
বাপ সেদিন মা আর দিদি বুড়ির সমুখে আমাকে কাইছে ডেইকে
মাথায় হাত বুলাই গম্ গইমা গলায় বইলেছিল –

যা কইরেছিস্! বেশ্ কইরেছিস্।
শুন্, তর মা, তর মায়ের মা, তার মায়ের মা- সবাই কইরেছে কামিনগিরি।
বাবুঘরে গতর খাটাই খাইয়েছে। তাইতে হইছে টা কি।
তাতে হইছে টা কি! ই-কথাটো মনে রাখবি সাঝ্লি,
তুই কিন্তু কামিন হবার লাগে জম্মাস লাই।
যত বড় লাট সাহেবই হোক কেনে কারু কাছে মাথা নোয়াই
নিজের ত্যাজ বিকাবি লাই।
এই ত্যাজ টুকুর ল্যাইগে লিখাপড়া শিখাচ্ছি তুকে।
না হলে আমাদের মতো হা-ভাতা মানুষের ঘরে আর আছে টা কি?”

আমি জামবনির কুইরি পাড়ার শিবু কুইরির বিটি সাঁঝলি,
কবেকার সেই কেলাস সেভেনের কথা ভাবতে যায়ে
কাগজওয়ালা টিভিওয়ালাদের সামনে এখুন কি যে বলি…

তালপাতার রদ দিয়ে ঘেরা গোবুর লতার এঙ্গনাতে লুকে এখন লুকাকার।
তার মাঝে বাঁশি বাজাই, জিপগাড়িতে চেইপে
আগুপিছু পুলিশ লিয়ে মন্ত্রী আইল্যাক ছুটে।
‘কুথায় সাঁঝলি কুইরি কুথায়’, বইলতে বইলতে
বন্দুকধারী পুলিশ লিয়ে সুজা আমাদের মাটির কুইড়ে ঘরে,

হেডমাস্টার বইললে ‘পনাম কর, সাঁঝলি পনামকর’
মন্ত্রী তখন পিঠ চাপড়াইল্যাক। পিঠ চাপরাই বইল্লেক,
“তুমি কামিন খেইটে মাইধ্যমিকে পথম হইছ,
তাই তুমারে দেইখতে আইলম্, সত্যিই বড় গরীব অবস্থা বটে।
তুমাদের মতো মিয়ারা যাতে উঠে আসে
তার লাগেই তো আমাদের পার্টি, তার লাগেই তো আমাদের সরকার।
– এই লাও, দশ হাজার টাকার চেকটা এখুন লাও।
শুন আমরা তুমাকে আরো ফুল দিব, সম্মর্ধ্বনা দিব,
আরো দ্যাদার টাকা তুলে দিব।–
এই টিবির লোক, কাগুজের লোক, কারা আছেন, ই-দিকে আসেন।“

তক্ষুনি ছোট বড় কতরকমের সব ঝইলকে উঠল ক্যামেরা,
ঝইলকে উঠল মন্ত্রীর মুখ। না না মন্ত্রী লয়, মন্ত্রী লয়,
ঝইলকে উঠল আমার বাপের মুখ।
গন্ গনা আগুনের পারা আগুন মানুষের মুখ।
আমি তক্ষুনি বইলে উঠলম-
“না না ই টাকা আমার নাই লাইগব্যাক। আর আপনারা
যে আমায় ফুল দিব্যান, সম্মর্ধ্বনা দিব্যান বইলছেন তাও আমার নাই লাইগব্যাক।’

মন্ত্রী তখন ঢোক গিলল্যাক।
গাঁয়ের সেই দেঘইর‍্যা গিন্নির বড় ব্যাটা এখুন পাটির বড় ল্যাতা।
ভিড় ঠেলে সে আইসে বইলল্যাক-
“ ক্যানে, কি হইছেরে সাঁঝলি,
তুই তো আমাদের বাড়ি কামিন ছিলি।
বল তর কি কি লাইগব্যাক, বল, তর কি কি লাইগব্যাক খুলে বল খালি,”

বইল্ লম –
“ আমার পারা শয়ে শয়ে আর অনেক সাঁঝলি আছে।
আর শিবু কুইরির বিটি আছে গাঁ গিরামে। তারা যদ্দিন
অন্ধকারে পইড়ে থাইকবেক তারা যদ্দিন লিখ-পড়ার লাগে কাঁইদে বুলব্যাক্।
তদ্দিন কুনো বাবুর দয়া আমার নাই লাইগব্যাক্। শুইনছ্যান আপনারা
তদ্দিন কুনো বাবুর দয়া আমার নাই লাইগ্ ব্যাক।
 
ও মেয়ে তোর বয়স কত-শতাব্দি রায়
ও মেয়ে তোর বয়স কত?
-কি জানি গো!
মা থাকলে বলে দিত।
সেই যে বারে দাঙ্গা হলো,
শ’য়ে শ’য়ে লোক মরলো।
হিন্দুদের ঘর জ্বললো,
মুসলমানের রক্ত ঝরলো।
তখন নাকি মা পোয়াতি!
দাঙ্গা আমার জন্মতিথি।
ও মেয়ে তোর বাবা কোথায়?
-মা বলেছে গরীবদের বাবা হারায়,
কেউ তো বলে বাপটা আমার হারামি ছিল।
মায়ের জীবন নষ্ট করে অন্য গাঁয়ে ঘর বাঁধলো।
মা বলতো শিবের দয়ায় তোকে পেলাম।
শিবকেইতাই বাপ ডাকলাম।
ও মেয়ে তোর প্রেমিক আছে?
ছেলেরা ঘোরে ধারে কাছে?
-প্রেমিক কী গো?
মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে!
স্বপ্ন দেখায় দিন-দুপুরে!
চুরি-কাজল মেলাতে কেনায়,
ঝোপের ধারে জামা খোলায়!
এসব নন্দ কাকা করেছে দু’বার,
প্রেমিক ওকেই বলবো এবার।
ও মেয়ে তোর পদবি কি?
-বাপই নাকি দেয় শুনেছি!
পদবি থাকলে ভাত পাওয়া যায়?
বাপের আদর কাঁদায় হাঁসায়!
ওটা কি বাজারে মেলে?
কিনবো তবে দু-দশে দিলে।
দামী হলে চাই না আমার,
থাক তবে ও বাপ-ঠাকুরদার।
ও মেয়ে তুই রুপসী?
-লোকে বলে ডাগর গতর সর্বনাসী।
রুপ তো নয় চোখের ধাঁ ধাঁ,
যৌবনেতে কুকুরী রাধা।
পুরুষ চোখের ইশারা আসে,
সুযোগ বুঝে বুকে পাছায় হাতও কষে।
রুপ কি শুধুই মাংসপেশী?
তবে তো আমি খুব রুপসী।
ও মেয়ে তোর ধর্ম কী?
-মেয়ে মানুষের ধর্ম কী গো?
সব কিছু তো শরীর ঘিরে!
সালমা বলে ধর্ম ওই মানুষ বানায়।
সন্ধেবেলায় যখন দাঁড়ায়,
কেউ তো বলে না হিন্দু নাকি?
সবাই বলে কতয় যাবি!
বিছানা নাকি ধর্ম মেলায়,
শরীর যখন শরীর খেলায়।
তাই ভাবছি এবার থেকে
ধর্ম বলবো শরীর বা বিছানাকে
 
মেয়েদের অ আ ক খ-মল্লিকা সেনগুপ্ত
অনেক তো হল মানবিকতার ভাষ্য
পৃথিবীটা তবু একচুলও এগোল না
এবার তাহলে মানবিকতাই হোক
একুশ শতকে স্বপ্ন দেখার চোখ

স্বরবর্ণ

অয় অজগর আসছে তেড়ে
ছোট্ট মেয়ের স্বপ্ন ঘেরে

আমার তোমার সবার চোখে
ময়াল সাপের মতন ও কে ?

ইঁদুর ছানা ভয়েই মরে
ধর্ষিত সে ভীষণ ঝড়ে

ঈগল পাখি দ্বিতীয় ভয়
থানা পুলিশ কোর্টে রয়

উট চলেছে উল্টোপুরাণ
মধ্যযুগে সে অভিযান

ঊনো জমির দুনো ফসল
বঙ্গদিশি মেয়ের দল

ঋতুবেলায় অশুচি নারী
অন্য সময় ঠেলবে হাঁড়ি

৯-কার কেমন ডিগবাজি খায়
লুপ্ত হওয়ার লাজ শঙ্কায়

একুশ থেকে ইচ্ছা-পোশাক
যে দেখে তার চক্ষু টাটাক

ঐ দেখো ওর ঘোমটা খোলা
বোরখা খোলা আপন ভোলা

ওল খেও না ধরবে গলা
ময়ালকে তা মিছে বলা

ঔষধে যে ময়াল মরে
সে ঔষধ কি আছে ঘরে

**********************
ব্যঞ্জনবর্ণ

কন্যাশিশুর বিপদ বাড়ছে
যৌতুক যত সীমানা ছাড়াছে

খনার জিভ বাতাসে নড়ে
মুখ ফোটে না সাতাশ চড়ে

গণিকালয় কারা বানায়
ভিয়েতনামে হাড়কাটায়

ঘর তোমার রাজ তোমার
আমি পুতুলখেলা তোমার

ঙ নৌকা মাঝি ব্যাঙ
পুরুষতন্ত্র ড্যাডাং ড্যাং

চৌকাঠের ভাঙন ওরা
লাবণ্য সীতা ইলেকট্রা নোরা

ছবির মতো না, ওরা স্বয়ং
ছবি বানায় রং-বেরং

জরায়ু যার বাচ্চা তার
আধাফসল থাক পিতার

ঝগড়াঝাঁটি ঝিঁঝির ডাক
মেয়ে পুরুষ জড়িয়ে থাক

ঞিহার পূজা প্রণাম বন্ধ
“পরমেশ্বরে” মানুষ গন্ধ !

টাকার গরম ওঠা নামায়
দাদু একাই টাকা কামায়

ঠাকুরমার জীবনভর
পরিশ্রমের দাম তো ধর

ডিম আগে না মুরগি আগে
ইভ জাগে কি আদম জাগে !

ঢিসুম ঢিসুম পেশির জোর
আসমুদ্দুর পৃথিবী তোর

মূর্ধণ্য নাকের পরে
ইভ এখনও পচছে ঘরে

ত্র্যহস্পর্শে গেরস্থালি
মা হওয়া আর রূপের ডালি

থ হবেন না বাবুমশাই
ভালবেসেই এ চড় কষাই

দেরিদা জানে পাতায় পাতা
বিনির্মাণের খেরোর খাতা

ধর্মের কল পুরুষ নাড়ে
ধর্ম ছুড়ে ভীষণ মারে

নারীবাদের একুশ শতক
মেয়েরা চায় নিজস্ব হোক

পুরুষ তোমার এক ভাগ জল
তিনভাগ তুমি জলঅচল

ফেনার ভেনাস তোমার স্বপ্নে
আমি তবু বলি, “আমার সব নে”

বিবাহ মানে সারা জীবন
ভাঙাগড়ার অবগাহন

ভালবাসার গুপ্তধন
এক জীবন অন্বেষণ

মানবী সম্পদের দল
আমরা সব জলঅচল

যোনি আমার উপনিবেশ
শিবঠাকুরের আপন দেশ

ব়্যাডিক্যালিস্ট রাগিণী মেয়ে
পুরুষ তাকে পাবে না চেয়ে

লেসবিয়ান লেসবিয়ান
যৌনতার বিনির্মাণ

বিবাহ তবু শেষ আশ্রয় !
হতেও পারে প্রণয়ময়

শাখা সিঁদুর শাক ঢাকা মাছ
শয্যা শরীর শেকল গাছ

ষোড়শী কিছু আন্তিগোনে
বিদ্রোহের প্রহর গোনে

সাফো ছিলেন প্রথমা শ্লোক
সরস্বতী আশিরনখ

হিংসা যখন ঘরের ভেতর
প্রিয়তমই মৃত্যু যে তোর

“ড়” যন্ত্রের সামনে ষ
লিঙ্গ রাজনীতির দ

ঢ়-এর মাথা কামড়ে খায়
মেয়েপুঁথির সরলরেখা

ৎ-এ ক্রান্তিকাল
“পারসোনাল ইজ পলিটিকাল”

য় ছিল খুব নির্ভরশীল
সংসারে তার চেরনোবিল

ং টি ক্লোনিং শাবক
জনকহীনের জন্মছক

ঃ-এর বাবার নাম
ভিয়েতনাম লাল সেলাম
 
মেহেদী পাতা-আবুল হোসাইন খোকন


অনন্ত, মেহিদি পাতা দেখেছ নিশ্চয়?
উপরে সবুজ, ভেতরে রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত-
নিজেকে আজকাল বড় বেশি মেহেদি পাতার মতো,
মনে হয় কেন?
উপরে আমি অথচ ভিতরে কষ্টের যন্ত্রনার-
এমন সব বড় বড় গর্ত যে-
তার সামনে দাড়াতে নিজেরী ভয় হয়, অনন্ত।
তুমি কেমন আছো?
বিরক্ত হচ্ছ না তো?
ভালোবাসা যে মানুষকে অসহায়ও করে তুলতে পারে-
সেদিন তোমায় দেখার আগ পর্যন্ত-
আমার জানা ছিলো না।
তোমার উদ্দাম ভালোবাসার দূতি-
জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে ফেলেছে আমার ভিতর-
আমার বাহির-
আমার হাতে গড়া আমার পৃথিবী।
অনন্ত, যেই মিথিলা শুখী হবে বলে-
ভালোবাসার পূর্ণ চঁন্দ গিলে খেয়ে-
ভেজা মেঘের মতো উড়তে উড়তে চলে গেল,
আজ অন্য শূন্য, অনন্তকে আরো শূন্য করে দিয়ে-
তার মুখে এসব কথা মানায় না,
আমি জানি-
কিন্তু আমি আর এভাবে এমন করে পারছি না
আমার চারদিকের দেয়াল জুড়ে থই থই করে-
আমার স্বপ্ন খুনের রক্ত।
উদাস দুপুরে বাতাসে শিষ দেয়
তোমার সেই ভালোবাসা
পায়ে পায়ে ঘুরে ফেরে ছায়ার মতোন-
তোমার স্বৃতি।
আমি আগলাতেও পারি না,
আমি ফেলতেও পারি না।
শুখী হতে চেয়ে এখন দাড়িয়ে আমি-
একলা আমি-
কষ্টের তুষার পাহারে।
অনন্ত তোমার সামনে দাড়ানোর কোন –
যোগ্যতাই আজ আমার অবশিষ্ট নেই।
তবুও,
তবুও তুমি একদিন বলেছিলে-
ভেজা মেঘের মতো-
অবুজ আকাশে উড়তে উড়তে-
জীবনের সুতোয় যদি টান পরে কখনো?
চলে এসো, চলে এসো-
বুক পেতে দেব-আকাশ বানাবো
আর হাসনা হেনা ফুটাবো।
সুতোয় আমার টান পরেছে অনন্ত,
তাই আজ আমার সবকিছু,
আমার এক রোখা জেদ,
তুমি হীনা শুখী অনেক স্বাপ্ন!
সব, সবকিছু জলাঞ্জলী দিয়ে-
তোমার সামনে আমি নত জানু-
আমায় তোমাকে আর একবার ভিক্ষে দাও।
কথা দিচ্ছি- তোমার অমর্যাদা হবে না কোনদিন।
অনন্ত, আমি জানি-
এখন তুমি একলা পাষান কষ্ট নিয়ে ঘুরে বেড়াও,
প্রচন্ড এক অভিমানে-
ক্ষনে ক্ষনে গর্জে উঠে অগ্নিগিরি।
কেউ জানে না, আমি জানি-
কেন তোমার মনের মাঝে মন থাকে না,
ঘরের মাঝে ঘর থাকে না,
উঠোন জোরার উপর কলস-
তুলসি তলের ঝড়া পাতা,
কুয়ো তলার শূন্য বালতি-
বাসন-কোসন, পূর্নিমা-অমাবর্ষা,
একলা ঘরে এই অনন্ত-
একা শুয়ে থাকা।
কেউ জানে না, আমি জানি-
কেন তুমি এমন করে কষ্ট পেলে-
সব হরিয়ে বুকের তলের চিতানলে-
কেন তুমি নষ্ট হলে?
কার বিহনে চুপি চুপি, ধীরে ধীরে-
কেউ জানে না, আমি জানি-
আমিই জানি।
আগামি শনিবার ভোরের ট্রেনে তোমার কাছে আসছি।
অনন্ত, আমার আর কিছু না দাও- অন্তত শাস্তিটুকু দিও।
ভালো থেকো!
তোমারি হারিয়ে যাওয়া মিথিলা।
 
আমার বন্ধু নিরঞ্জন -
ভাস্কর চৌধুরী

অনেক কথা বলবার আছে আমার
তবে সবার আগে নিরঞ্জনের কথা বলতে হবে আমাকে ৷
নিরঞ্জন আমার বন্ধুর নাম
আর কোন নাম ছিল কি তার ?
আমি জানতাম না ৷
ওর একজন বান্ধবী ছিল
অবশ্য কিছুদিনের জন্য সে তাকে প্রীতম বলে ডাকত ৷
ওর বান্ধবীর নাম ছিলো জয়লতা ৷
নিরঞ্জন জয়লতা সম্পর্কে আমাকে কিছু বলেনি তেমোন ৷
জয়লতাকে কখনো কোন চিঠি লিখেছিলো কিনা
সে কথাও আমাকে সে বলেনি ৷
তবে জয়লতার চিঠি আমি দেখেছি
একটা চিঠি ছিল এরকম -
প্রীতম,
সময় গড়িয়ে যাচ্ছে ৷ তুমি বলেছ , এখন দু:সময় -
কিন্তু আমি জানি , সব সময়ই সুসময় , যদি কেউ ব্যবহার করতে জানে তাকে ৷
আমি বুঝি বেশি দিন নেই ৷
যদি পার এক্ষুনি তুলে নাও
নইলে অন্য পূরুষ ছিবড়ে খাবে আমাকে -
আমার ঘরে বসে সিগারেট টানতে টানতে
নিরঞ্জন চিঠিটা চুপ করে এগিয়ে দিয়ে বলেছিল
"বিভূ, চিঠিটা পড়ুন ৷"
আমি প্রথমে পড়তে চাইনি ৷
পরে ঐটুকু পড়ে তার দিকে তাকিয়েছিলাম --
না - ঐ সিগারেটের ধুয়োয়
আমি কোন নারী প্রেম-তাড়িত মানুষের ছায়া দেখিনি -
ভয়ানক নির্বিকার ৷
কিছু বলছেন না যে ?- আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম
কি বলব ?
এই ব্যাপারে ৷
কোন ব্যাপারে ?
এই যে জয়লতা ৷
বাদ দিন ৷
আমি বাদ দিয়েছিলাম ৷
নিরঞ্জন আমার ঘরে বসে অনেকক্ষণ সিগারেট
টেনে টেনে ঘরটাকে অন্ধকার করে চলে গিয়েছিল সেদিন ৷
জয়লতার সংগে অন্য পূরুষের বিয়ে হয়েছিল ৷
আমি জয়লতা এবং অন্য পূরুষটিকে দেখেছি বহুবার
বিশ্ববিদ্যালয়েই ৷
জয়লতা আরো দেমাগী আরো সুন্দরী হয়ে উঠেছিল৷
অন্য পূরুষ ছিবড়ে খেলে মেয়েরা বুঝি
আরো সুন্দরী হতে থাকে ?
এ কথার সূত্রে নিরঞ্জন আমাকে বলেছিল ,
" মানুষকে এত ক্ষুদ্রার্থে নেবেন না ৷
মানুষ এত বড় যে ,
আপনি যদি 'মানুষ ' শব্দটি একবার উচ্চারণ করেন
যদি অন্তর থেকে করেন উচ্চারণ
যদি বোঝেন এবং উচ্চারণ করেন ' মানুষ' -
তো আপনি কাঁদবেন ৷
আমি মানুষের পক্ষে , মানুষের সন্গে এবং মানুষের জন্যে ৷
হ্যাঁ , মানুষের মুক্তির জন্য নিরঞ্জন মিছিল করতো
আমি শুনেছি নিরঞ্জন বলছে
তুমি দুষ্কৃতি মারো , বান্গালী মারো ,
হিন্দু-মুসলমান মারো , গেরিলা - তামিল মারো ,
এভাবে যেখানে যাকেই মারো না কেন
ইতিহাস লিখবে যে এত মানুষ মরেছে ৷
বড়ই করুণ এবং বড়ই দু:খজনক
শক্তির স্বপক্ষে তুমি যারই মৃত্যু উল্লেখ করে
উল্লাস কর না কেন
মনে রেখো মানুষই মরেছে ৷
এই ভয়ংকর সত্য কথা নিরঞ্জন বলেছিল
মিছিলে হাত উঠিয়ে বলেছিল ,
এভাবে মানুষ মারা চলবে না ৷
মানুষকে বাঁচতে দাও ৷
নিরঞ্জন আমার বন্ধু।
নিরঞ্জন বাঁচেনি।
তার উদ্যত হাতে লেগেছিল
মানুষের হাতে বানানো বন্দুকের গুলি ৷
বুকেও লেগেছিল-
যেখান থেকে " মানুষ ' শব্দটি
বড় পবিত্রতায় বেরিয়ে আসতো ৷
সে লাশ --
আমার বন্ধু নিরঞ্জনের লাশ -
আমি দেখেছি -
রক্তাক্ত ছিন্ন ভিন্ন লাশ ,
মানুষ কাঁধে করে
তাকে বয়ে এনেছিল মানুষের কাছে ৷
জয়লতা সে লাশ দেখেছিল কিনা
সে প্রশ্ন উঠছে না ৷
দেখলেও যদি কেঁদে থাকে সে প্রকাশ্যে অথবা গোপনে ,
তাতে নিরঞ্জনের কোন লাভ হয়নি ৷
মানুষ কেঁদেছিল
আমি জানি , তাতে নিরঞ্জনের লাভ ছিল ৷
নিরঞ্জন প্রমাণ করতে পেরেছিল
গতকাল মিছিলে
আইন অমান্যের অভিযোগে
যে দুষ্কৃতি মারা গিয়েছে
তার নাম নিরঞ্জন --
সে আসলে " মানুষ" ৷
 
আমিই সেই মেয়ে- শুভ দাশগুপ্ত
আমিই সেই মেয়ে।
বাসে ট্রেনে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন
যার শাড়ি, কপালের টিপ কানের দুল আর পায়ের গোড়ালি
আপনি রোজ দেখেন।
আর
আরও অনেক কিছু দেখতে পাবার স্বপ্ন দেখেন।
স্বপ্নে যাকে ইচ্ছে মতন দেখেন।
আমিই সেই মেয়ে।

বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনের আলোয় যার ছায়া মাড়ানো
আপনার ধর্মে নিষিদ্ধ, আর রাতের গভীরে যাকে বস্তি থেকে
তুলে আনতে পাইক বরকন্দাজ পাঠান আপনি
আর সুসজ্জিত বিছানায় যার জন্য অপেক্ষায় অধীন হয়
আপনার রাজকীয় লাম্পট্য
আমিই সেই মেয়ে।

আমিই সেই মেয়ে- আসামের চাবাগানে ঝুপড়ি কামিন বস্তি থেকে
যাকে আপনি নিয়ে যেতে চান সাহেবি বাংলোয় মধ্যরাতে
ফায়ার প্লেসের ঝলসে ওঠা আলোয় মদির চোখে দেখতে চান
যার অনাবৃত শরীর
আমি সেই মেয়ে।

রাজস্থানের শুকনো উঠোন থেকে পিপাসার জল আনতে যাকে আপনি
পাঠিয়ে দেন দশ মাইল দূরে সরকারি ইঁদারায়- আর কুড়ি মাইল
হেঁটে কান্ত বিধ্বস্ত যে রমণী ঘড়া কাঁখে ঘরে ফিরলেই যাকে বসিয়ে দেন
চুলার আগুনের সামনে আপনার রুটি বানাতে
আমিই সেই মেয়ে।

আমিই সেই মেয়ে- যাকে নিয়ে আপনি মগ্ন হতে চান গঙ্গার ধারে কিংবা
ভিক্টোরিয়ার সবুজে কিংবা সিনেমা হলের নীল অন্ধকারে, যার
চোখে আপনি একে দিতে চান ঝুটা স্বপ্নের কাজল আর ফুরিয়ে যাওয়া
সিগারেটের প্যাকেটের মত যাকে পথের পাশে ছুঁড়ে ফেলে আপনার ফুল সাজানো
গাড়ি শুভবিবাহ সুসম্পন্ন করতে ছুটে যায় শহরের পথে-
কনে দেখা আলোর গোধুলিতে একা দাঁড়িয়ে থাকা
আমিই সেই মেয়ে।

আমিই সেই মেয়ে- এমন কি দেবতারাও যাকে ক্ষমা করেন না। অহংকার
আর শক্তির দম্ভে যার গর্ভে রেখে যান কুমারীর অপমান
আর চোখের জলে কুন্তী হয়ে নদীর জলে
বিসর্জন দিতে হয় কর্ণকে। আত্মজকে।
আমিই সেই মেয়ে।

সংসারে অসময়ের আমিই ভরসা।
আমার ছাত্র পড়ানো টাকায় মায়ের ওষুধ কেনা হয়।
আমার বাড়তি রোজগারে ভাইয়ের বই কেনা হয়।
আমার সমস্ত শরীর প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।
কালো আকাশ মাথায় নিয়ে
আমি ছাতা হয়ে থাকি।
ছাতার নিচে সুখে বাঁচে সংসার।

আপনি
আপনারা
আমার জন্য অনেক করেছেন।
সাহিত্যে কাব্যে শাস্ত্রে লোকাচারে আমাকে
মা বলে পুজো করেছেন।
প্রকৃতি বলে আদিখ্যেতা করেছেন- আর
শহর গঞ্জের কানাগলিতে
ঠোঁটে রঙ মাখিয়ে কুপি হাতে দাঁড় করিয়েও দিয়েছেন।
হ্যা, আমিই সেই মেয়ে।
একদিন হয়ত
হয়ত একদিন- হয়ত অন্য কোন এক দিন
আমার সমস্ত মিথ্যে পোশাক ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে
আমিই হয়ে উঠবো সেই অসামান্যা !
খোলা চুল মেঘের মত ঢাকবে আমার খোলা পিঠ।
দু চোখে জ্বলবে ভীষণ আগুন।
কপাল-ঠিকরে বেরুবে ভয়ঙ্কর তেজরশ্মি।
হাতে ঝলসে উঠবে সেই খড়গ।
দুপায়ের নুপুরে বেজে উঠবে রণদুন্দভি।
নৃশংস অট্টহাসিতে ভরে উঠবে আকাশ।
দেবতারাও আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে বলতে থাকবেন
মহামেঘপ্রভাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাং
কালিকাং দক্ষিণাং মুণ্ডমালা বিভুষিতাং।

বীভৎস দাবানলের মত
আমি এগোতে থাকবো ! আর আমার এগিয়ে যাবার পথের দুপাশে
মুণ্ডহীন অসংখ্য দেহ ছটফট করতে থাকবে-
সভ্যতার দেহ
প্রগতির দেহ-
উন্নতির দেহ-
সমাজের দেহ

হয়ত আমিই সেই মেয়ে ! হয়ত ! হয়ত বা।
 
দেশমাতার কাছে চিঠি -তপন মাহমুদ
মা,
এখন মাঝরাত। আমি জানি তুমিও আমাদের মতো ঘুমাওনি। একটা সময় ছিলো তুমি রাতে বিশ্রাম নিতে, এখন আর সেই ফুসরত কই। তোমার বুকে যে ২৪ ঘণ্টাই ঘুরে অর্থনীতির চাকা। তাই অসময়েই তোমাকে স্বরণ করছি।
মা,
৯ মাসের অবিচল ধৈর্য আর উত্তাল বেদনার পরেই তো তুমি মা। শৈশবে যে শিশু উজ্জল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতো, যৌবনে প্রাচুর্যের মোহে সে লাগামহীন টাট্টু ঘোড়া। বেয়ারাপণা তাঁর রন্ধ্রে রন্ধ্রে। দু’দশক আগেও এটাকে বোধয় দুষ্টুমি বলা যেত, কিন্তু এখন নষ্টামি বলা ছাড়া আর কোনো গতি দেখছিনা। তোমার প্রসব বেদনার কবছর আগে যে ধ্বনি বা বর্ণমালার জন্য জীবন হারিয়ে শহীদ পেলাম সেই ছালাম, বরকত, রফিক, জব্বারের রক্তে ভেজা শার্ট জাদুঘরে না থেকে ওই শার্টের একটি সুতাও আমার হৃদয়ে থাকতো তাহলে বুলিতে যে মিথ্যা আর ঝুলিতে যে পাপ তার শাপ কিছুটা হলেও মোচন হতো।

সুখ বা শোক দিবস দুটোই এখন বাণিজ্যিক হায়েনার খাদ্য। ১৬-ই ডিসেম্বর বা ২১-শে ফেব্রুয়ারী সবই ফুরফুরে হলিডে। কনসার্ট, কনফারেন্স, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এমনকি সংসদ অধিবেশন সব এখন স্পন্সার্ড। সার্বজনীন পুরুষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে লাখ টাকার আতশবাজি ফুটে। আর সেই একই অনুষ্ঠানে গলায় প্লেকার্ড লাগিয়ে ভিক্ষা করে একজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা। যে মানচিত্রের সীমানা লাখো শহীদের রক্তের কালিতে আঁকা, সে সীমানায় আজও রক্ত ঝরে। যে সার্বভৌমত্তের বড়াই করে বলি আমরা বাংলাদেশী, সে সার্বভৌমত্ত কেনা-বেচা হয় আন্তর্জাতিক মীমাংসার টেবিলে। কূটের সাথে নীতি যায়না বলেই বোধয় কূটনীতি না বলে সবাই ডিপ্লোমেসি বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। আর প্রতিনিয়ত নিজের সাথে প্রতারণা করা জনগণ বোঝেনা যে ৫ বছর পর পর তারা একই ভুল করে। থোড়-বড়ি-খাড়া আর খাড়া-বড়ি-থোর; বার বার খাল কেটে কুমির আনা কবে শেষ হবে তোর?


মা,
জানি তুমি মমতাময়ী। একটাও আগ্নেয়গিরি নেই তোমার বুকে, আছে কেবল জালের মতো বিছিয়ে রাখা নদী। তোমার শোকের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সেখানে প্রায়ই চর পড়ে। তোমার ক্ষোভ দেখি টর্নেডোতে-ভূমিকম্পে-জলোচ্ছ্বাসে। তোমার কি একবারও মনে হয়না মা__ এ অস্তিত্তের কোন মানে নেই, এ ঘর ঠিকানাবিহীন। তোমার কি মনে হয়না আঁতুড়ঘরেই লবন দিয়ে শেষ করে দেয়া উচিত ছিল তোমার পথভ্রষ্ট সন্তানকে। মনে হয়না সাফারি পার্ক থেকে জঙ্গল ভালো।
আমারতো মনে হয় ছোট খাঁচা থেকে মুক্ত হয়ে আরো বড় খাঁচায় এলাম। জেলখানাতেই আছি এখনও.....এখান থেকেই চিঠিটা পোস্ট করবো। পেলে উত্তর দিও...............।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top