What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected আমার প্রিয় কবিতাগুলো............ (1 Viewer)

তুমি ও কবিতা
– মহাদেব সাহা

তোমার সাথে প্রতিটি কথাই
কবিতা, প্রতিটি
মুহুর্তেই উৎসব-
তুমি যখন চলে যাও
সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর
সব আলো নিভে যায়,
বইমেলা জনশূন্য হয়ে পড়ে,
কবিতা লেখা ভুলে যাই।
তোমার সান্নিধ্যের প্রতিটি মুহূর্ত
রবীন্দ্রসঙ্গীতের মতো
মনোরম
একেটি তুচ্ছ বাক্যালাপ অন্তহীন
নদীর কল্লোল,
তোমার একটুখানি হাসির অর্থ
এককোটি বছর
জ্যোৎস্নারাত
তুমি যখন চলে যাও
পৃথিবীতে আবার হিমযুগ
নেমে আসে;
তোমার সাথে প্রতিটি কথাই
কবিতা, প্রতিটি গোপন কটাক্ষই
অনিঃশেষ বসন্তকাল
তোমার প্রতিটি সম্বোধন ঝর্নার
একেকটি কলধ্বনি,
তোমার প্রতিটি আহ্বান একেকটি
অনন্ত ভোরবেলা।
তাই তুমি যখন চলে যাও মুহূর্তে সব
নদীপথ বন্ধ হয়ে যায়
পদ্মার রুপালি ইলিশ তার সৌন্দর্য
হারিয়ে ফেলে,
পুষ্পোদ্যান খাঁখাঁ মরুভূমি হয়ে ওঠে;
যতোক্ষণ তুমি থাকো আমার
নিকটে থাকে
সপ্তর্ষিমণ্ডল
মাথার
ওপরে থাকে তারাভরা রাতের
আকাশ,
তুমি যতোক্ষণ থাকো আমার এই
হাতে
দেখি ইন্দ্রজাল
আঙুলে বেড়ায় নেচে চঞ্চল হরিণ;
তুমি এলে খুব কাছে আসে সুদূর
নীলিমা!
তোমার সান্নিধ্যের প্রতিটি মুহূর্ত
সঙ্গীতের অপূর্ব মূর্ছনা
যেন কারো অবিরল গাঢ় অশ্রুপাত;
তোমার সাথে প্রতিটি বাক্য
একেকটি কবিতা
প্রতিটি শব্দ শুভ্র শিশির।
 
বেঁচে আছি এই তো আনন্দ
---মহাদেব সাহা।
বেঁচে আছি এই তো আনন্দ,
এই আনন্দের জন্য আমি
সবকিছু মাথা পেতে নেবো,
যে কোনো দুঃখ, যে কোনো শাস্তি--
শুধু এই ভোরের একটু আলো দ্যাখার জন্য
আমি পথের ভিক্ষুক হতে রাজি।
এই যে গোলাপ ফুলটির দিকে যতোক্ষণ
খুশি
তাকিয়ে থাকতে পারি
এই সুখে আমি হাসিমুখে সব দুঃখ
মাথা পেতে নেবো।
বেঁচে আছি এই তো আনন্দ, এই আনন্দের
কাছে
কোনো দুঃখই কিছু নয়
এই নির্বাসন, এই শাস্তি,
এই দ্বীপান্তর;
এই মেঘ, এই ঝুম বৃষ্টি, এই শিশিরের শব্দের
জন্য
আমি সহস্র বছরের কারাদন্ড মাথায়
নিয়েও
বেঁচে থাকতে চাই।
বেঁচে আছি এই তো আনন্দ, এই আনন্দে সব
আঘাত আমি মাথা পেতে নেবো।
 
শুধু কবিতার জন্য-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


শুধু কবিতার জন্য এই জন্ম, শুধু কবিতার
জন্য কিছু খেলা, শুধু কবিতার জন্য একা হিম সন্ধেবেলা
ভূবন পেরিয়ে আসা, শুধু কবিতার জন্য
অপলক মুখশ্রীর শান্তি একঝলক;
শুধু কবিতার জন্য তুমি নারী, শুধু
কবিতার জন্য এত রক্তপাত, মেঘে গাঙ্গেয় প্রপাত
শুধু কবিতার জন্য, আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে লোভ হয়।
মানুষের মতো ক্ষোভময় বেঁচে থাকা, শুধু কবিতার
জন্য আমি অমরত্ব তাচ্ছিল্য করেছি।
 
মুক্তি
-- তসলিমা নাসরিন
যদি ভুলে যাবার হয়, ভুলে যাও।
দূরে বসে বসে মোবাইলে,
ইমেইলে হঠাৎ হঠাৎ জ্বালিয়ো না,
দূরে বসে বসে নীরবতার বরফ
ছুড়ে ছুড়ে এভাবে বিরক্তও করো না।
ভুলে গেলে এইটুকু অন্তত
বুঝবো ভুলে গেছো,
ভুলে গেলে পা কামড়ে রাখা জুতোগুলো খুলে একটু
খালি পায়ে হাঁটবো,
ভুলে গেলে অপেক্ষার কাপড়চোপড়
খুলে একটু স্নান করবো,
ভুলে গেলে পুরোনো গানগুলো আবার
বাজাবো,
ভুলে গেলে সবগুলো জানালা খুলে একটু
এলোমেলো শোবো।
রোদ বা জোৎস্না এসে শরীরময়
লুকোচুরি খেলে খেলুক, আমি না হয়
ঘুমোবো,
ঘুমোবো ঘুমোবো করেও নিশ্চিন্তের
একটুখানি ঘুম ঘুমোতে পারিনা কত
দীর্ঘদিন!
কেবল অপেক্ষায় গেছে।
না ঘুমিয়ে গেছে। জানালায়
দাঁড়িয়ে গেছে।
কেউ আমাকে মনে রাখছে, কেউ
আমাকে মনে মনে খুব চাইছে,
সমস্তটা চাইছে,
কেউ দিনে রাতে যে কোনও সময় দরজায়
কড়া নাড়বে,
সামনে তখন দাঁড়াতে হবে নিখুঁত, যেন
চুল, যেন মুখ, যেন চোখ, ঠোঁট,
যেন বুক, চিবুক এইমাত্র জন্মেছে,
কোথাও ভাঙেনি, আঁচড় লাগেনি,
ধুলোবালি ছোঁয়নি।
হাসতে হবে রূপকথার রাজকন্যার মতো,
তার ক্ষিধে পায় যদি, চায়ের
তৃষ্ঞা পায় যদি!
সবকিছু হাতের
কাছে রাখতে হবে নিখুঁত!
ভালোবাসতে হবে নিখুঁত!
নিমগ্ন হতে হবে নিখুঁত!
ক্ষুদ্র হতে হবে নিখুঁত!
দুঃস্বপ্নকে কত কাল সুখ
নামে ডেকে ডেকে নিজেকে ভুলিয়েছি!
ভুলে যেতে হলে ভুলে যাও, বাঁচি।
যত মনে রাখবে, যত চাইবে আমাকে, যত
কাছে আসবে,
যত বলবে ভালোবাসো, তত
আমি বন্দি হতে থাকবো তোমার হৃদয়ে,
তোমার জালে,
তোমার পায়ের তলায়, তোমার হাতের
মুঠোয়, তোমার দশনখে।
ভুলে যাও, মুখের রংচংগুলো ধুয়ে একটু
হালকা হই, একটুখানি আমি হই।
--
 
আর কবে পাবো তোমার টেলিফোন
_____ মহাদেব সাহা

এক লক্ষ আশি হাজার বছর আমি তোমার
টেলিফোনের আশায় বসে আছি
না, তোমার ডায়াল ঘুরলো না আমার দিকে ;
পৃথিবীর সব ঘঁড়ির কাঁটা কতো লক্ষবার
উত্তর মেরু দক্ষিন মেরু ঘুরে এলো
আমেরিকা আবিষ্কার করে,
তবু একবার সিক্স ডিজিট সাঁকো
অতিক্রম করতে পারলে না তুমি ।
তোমার একটি টেলিফোনের অপেক্ষায়
আকাশের সব তারা গুনে শেষ করলাম
শেলফের একটা বই কতোবার
হাতে উঠলো আমার,
তবু তুমি একবার ঘুরাতে পারলেনা তোমার
টেলিফোন ।
কিন্তু এর মধ্যে কতো অসংখ্যবার
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিলো ব্রজেন দাস,
তুমি এই সামান্য দূরত্বটুকু
অতিক্রম করতে পারলেনা ।
তুমি যখনই টেলিফোন তোলো
তখনই নাকি পৃথিবীর সব টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন
হয়ে যায়
এক লক্ষ বছরেও কখনোই নাকি ডায়ালটোন
পেলে না তুমি,
অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যস্ততম নগরীর
রাজপথেও এর মধ্যে কতো লক্ষ যানজট
খুলে গেলো ।
তোমার একটি টেলিফোনের জন্যে
কতো সহস্রবার জরুরী বার্তা পাঠালাম
নিসর্গলোকে
টিএন্ডটির অভিযোগ খাতার সব পৃষ্ঠা ভরে গেলো
না, তারপরও তোমার ডায়াল ঘুরলো না,
তোমার স্বর্গীয় টেলিফোন আর কবে পাবো !
 
আপনি বলুন, মার্কস………
– মল্লিকা সেনগুপ্ত

ছড়া যে বানিয়েছিল, কাঁথা বুনেছিল
দ্রাবিড় যে মেয়ে এসে গমবোনা শুরু
করেছিল
আর্যপুরুষের ক্ষেতে,
যে লালন করেছিল শিশু
সে যদি শ্রমিক নয়, শ্রম কাকে বলে ?
আপনি বলুন মার্কস, কে শ্রমিক,
কে শ্রমিক নয়
নতুন যন্ত্রের যারা মাসমাইনের
কারিগর
শুধু তারা শ্রম করে !
শিল্পযুগ যাকে বস্তি উপহার দিল
সেই শ্রমিকগৃহিণী
প্রতিদিন জল তোলে, ঘর মোছে,
খাবার বানায়
হাড়ভাঙ্গা খাটুনির শেষে রাত হলে
ছেলেকে পিট্টি দিয়ে বসে বসে কাঁদে
সেও কি শ্রমিক নয় !
আপনি বলুন মার্কস, শ্রম কাকে বলে !
গৃহশ্রমে মজুরী হয়না বলে মেয়েগুলি শুধু
ঘরে বসে বিপ্লবীর ভাত রেঁধে দেবে
আর কমরেড শুধু যার
হাতে কাস্তে হাতুড়ি !
আপনাকে মানায় না এই অবিচার
কখনো বিপ্লব হলে
পৃথিবীর স্বর্গরাজ্য হবে
শ্রেণীহীন রাষ্ট্রহীন আলোপৃথিবীর
সেই দেশে
আপনি বলুন মার্কস,
মেয়েরা কি বিপ্লবের সেবাদাসী
হবে ?
 
নেশা-মোফাজ্জল করিম

বাপজান আশা করি কুশলেই আছেন,
পরসমাচার এই যে,
সেদিন আপনি যে কান্ডটা করিলেন
তার জন্য এই পত্রটি না লিখিয়া পারিতেছিনা
দেখিতেছি যতই বয়স বাড়িতেছে, ততই আপনার কান্ড
একেবারেই লোপ পাইতেছে!

আপনি কি করিয়া সেদিন আমার ড্রইংরুমে,
অর্থাৎ বৈঠকখানায় বেমোক্কা ঢুকিয়া পড়িলেন,
বুঝিলাম না
সারাগায়ে ঘামের গন্ধ, ময়লা তেল চিপচিপে পান্ঞ্জাবী,
বগলে ছেঁড়া ছাতা, মাথায় চিতিপড়া কিস্তি টুপি,
যেনো আকবর বাদশার উর্নিশ আর কি!
হাতে মাটির হাড়ি, সর্বোপরি দু'পায়ের চামড়ার
কুচ কুচে কালো রং, বোধহয় লজ্জায় ঢাকিয়া ফেলিবার
আশায়, রাস্তার সবটুকু ধুলি মাখাইয়া
পা দু'টিকে মনে হইতেছিল চুনকাম করাইয়াছেন।
কি লজ্জা, আপনার ঐমূর্তি দেখিয়া আমার বন্ধুগন
এবং তাদের সুন্দরী স্ত্রীরা, বজ্রাহতের মতো তাকাইয়া রহিলো।
যেনো তাহারা চাক্ষুস ভুত দেখিতেছে
আর আমার অবস্হাটা একবার ভাবিয়া দেখুন,
মান, সম্মান, মর্যাদা সব জাহান্নামে গেল,
তাও-না হয়, আপনি যদি দয়া করিয়া একটু চুপ থাকিতেন
তবু একটা কথা ছিল!
তা-না আপনার আবার আহল্লাদে মুখ দিয়া
কথার ফোয়ারা ছুটিতে লাগিলোঃ
"বাবা কেমন আছো? বৌমা কোথায়?"
বলিহারে ভাগ্যিস সেই মুহুর্তে ও সেখানে ছিল না!
থাকিলে সে বেচারির হার্ট এটাক হইয়া যাইতো,
সে তো আবার হঠাৎ কোনো খারাপ দৃশ্য
মোটেই সহ্য করিতে পারেনা,
বড় কোমল হৃদয়ের মানুষ কিনা!
বাপজান তোমাকে সাবধান করিয়া দিতেছি
আর যাই করো, এইভাবে আমাকে ডুবাইয়ো না
টাকা-পয়সা লাগিলে চিঠি দিও পারিলে পাঠাইবো,
আর অতো টাকা পয়সাও যে কেন লাগে তোমাদের তাও বুঝিনা
তোমাদের আবার অতো খরচ কিসের
ক্লাবে যাওনা, পার্টি দাওনা
ইসুবগুল, আর চিরতার পানি ছাড়া
আরতো কোনো নেশাও করো না।

এইটুকু পড়িয়া দরিদ্র স্কুল মাস্টার
পিতা আনমনে বলিয়া উঠিলেনঃ
না, না ভুল বললিরে বাবা
নেশা একটা আছে, বড় পুরানো নেশা
কিছুতেই ছাড়িতে পারিনা সেই নেশা
তোর জন্মের পর থেকে সারাক্ষণ তোকে দেখার নেশা
কিছুতেই ছাড়িতে পারিনা বাপ, কিছুতেই ছাড়িতে পারিনা।।
 
সেই মেয়েটা- সৌমেন অনন্ত

সেই মেয়েটার আকাশ কালো চুল ছিলো
খোপায় গোঁজা মাতাল করা ফুল ছিলো,
সেই মেয়েটার কাল সকালে স্কুল ছিলো,
আজ মেয়েটা সিলিং ফ্যানে ঝুলছিল
ঐ মেয়েটার মেয়ে হওয়াটাই ভুল ছিলো।
এই মেয়েটা নারী হতেই বাড়ছিলো,
ওদের ভাষায় তার রুপেতে ধার ছিলো।
নদীর শরীর-খুব স্বাভাবিক বাঁক ছিলো,
নদীর পাড়ে সেই সে লোভী কাক ছিলো।
এই মেয়েটা মাংস ছিল জানতো না,
জানলে কি আর মায়ের কথা মানতো না?
এই মেয়েটার মানুষ হবার পণ ছিলো,
এই মেয়েটার শরীরটা তার ভুল ছিলো।
হায়েনাগুলো উঠিয়ে নিলো জোড় করে
ফিরিয়ে দিলো " রাত্রি কালো" ভোর করে,
সেই মেয়েটা শুণ্য চোখের দৃষ্টিতে
রক্তে ভিজে আকাশ দেখে বৃষ্টিতে।
এই মেয়েটার কেউ ছিলনা তার পরে,
মানুষ মরে একবারে সে রোজ মরে।
কুকুরগুলো দেখলে তাকে রোজ হাসে,
সেই দোষি হায় হাঁপায় সমাজ নাগপাশে।
এই মেয়েটার প্রতিটা দিন খুব ভারি
সব ফেলে তাই মুক্তি ছিল দরকারি।
এই মেয়েটার নিজেরও এক ঘর ছিলো
শেষ বেলাতে সেই ঘরে সে পর ছিলো।
সেই মেয়েটার স্বাস ছিল, কাল ঝুলছে আজ!
আমার কি তায়? ব্যস্ত আমি অনেক কাজ।
এই মেয়েটার আজ সকালে স্কুল ছিলো,
এই মেয়েটার মেয়ে হওয়াটাই ভুল ছিলো।
 
প্যারিসের চিঠি-লতিফুল ইসলাম শিবলী
..................
প্রিয় আকাশি,
গতকাল ঠিক দুপুরে তোমার চিঠি পেয়েছি । খামের উপর নাম ঠিকানা পড়েই চিনতে পেরেছি তোমার হাতের লেখা , ঠিকানা পেলে কিভাবে লিখনি ,
কতদিন পর ঢাকার চিঠি, তাও তোমার হাতের লেখা,
ভাবতে পারো আমার অবস্থা ?

গতকাল প্যারিসে ঝড়েছিল এ বছরের রেকর্ড ভাঙ্গা তুষারপাত ।
তামাক ফুরিয়ে গেছে আনতে পারিনি
এই প্রথম আমি অনেকটা সময় নিয়ে ভুলেছিলাম তামাকের গন্ধ ।

তোমার চিঠিতে পরিবর্তন আর বদলে যাওয়ার সংবাদ
তুমি কষ্ট পেয়ে লিখেছো,
রাত্রির ঢাকা এখন নিয়নের স্নিগ্ধতা ছেড়ে নিয়েছে,
উৎকট সোডিয়ামের সজ্জা,
আমাদের প্রিয় রমনা রেস্তোরা এখন কালের সাক্ষী,
শীতের বই মেলা পরিনত হয়েছে মিনাবাজারে,
টি এস সি র চত্বর যেন উত্তপ্ত বৈরুত।

বদলে যাওয়া কষ্টের অপর নাম স্মৃতি,
এখন তাই নিয়ে বুঝি মেতে আছো,
এই পরবাসে আমার চোখের সামনেও
বদলে যেতে দেখলাম কত সুদৃঢ় ইতিহাস
বালির বাঁধের মত ভেসে গেল পুর্ব ইউরোপ
নদীর পাড় ভাঙ্গার মত ভেঙ্গে গেল বার্লিন প্রাচীর
ইংলিশ চ্যানেলের তল দিয়ে হুইসেল বাজিয়ে চলছে ট্রেন
ইউরোপের মানচিত্র এখন রুটি হয়ে গেছে ,
ক্ষিদে পেলেই ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাও …
স্বাধীনতা মানেই যেন উদর পুর্তি

তুমি লিখেছ “তোমাকে ভুলে গেছি কিনা ?”

প্রিয় আকাশি,
আমি জেনে গেছি
পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ
ভুলে থাকা।
স্মৃতি থেকে পালিয়ে বাঁচার জন্য
এই সুদীর্ঘ প্রবাসের অর্ধেকটা কাটিয়েছি
বোহেমিয়ানদের মত ঘুরে ঘুরে
মাদ্রিদ থেকে হামবুর্গ,
নিউক্যাসল্ নেপোলি থেকে প্রাগ বুখারেষ্ট মাসিডোনিয়া
নর্থ সি থেকে মেডিটোরিয়ান কিংবা ব্ল্যাক সি।
তবু বাঁচতে পারিনি স্মৃতি থেকে,
ফ্রাঙ্কফুটের বই মেলায় নতুন বইয়ের গন্ধে মনে পড়েছে তোমাকে।
সিসটাইন চ্যাপেলের “লাষ্ট জাজমেণ্টে”র মত মহান সৃষ্টি পিয়েতা”র সামনে দাঁড়িয়ে
প্রথমেই মনে পড়েছে তোমাকে।
সিসিলির কার্নিভেলে
এথেন্সের কফি শপের জমজমাট কবিতা পাঠের আসরে, মনে পড়েছে তোমাকে ।
সুইজারল্যন্ডের লেকের কাছে স্বচ্চ জলে নিজের ছায়ার পাশে যাকে খুঁজেছি,সে তুমি।
ভ্যাটিক্যানের প্রার্থনা সভা শেষে
এক গ্রীক তরুনীকে বাংলায় কি বলেছিলাম জানো ?
বলেছিলাম- “তুমি আমার আকাশী হবে ?”
ভুলতে পারিনি তোমাকে,
শত চেষ্টা করেও পারিনি ।

আর কেউ না জানুক
অসংখ্য জিপসি রাত জানে সেই না ভুলতে পারার ইতিহাস।

তুমি জানতে চেয়েছো প্যারিসের কথা -
সত্যি বলতে কি -
প্যারিস খুলে দিয়েছে আমার আত্নার চোখ
সংগীত আর শিল্পের অভিন্ন সুর আমি শুধু প্যারিসেই শুনেছি ।
ক্লিয়নে কনসার্টে যতবার মোৎসার্ট
কিংবা বিটোভেন শুনেছি
ততবারই কেন যেন চিরদুঃখী পাগল ভিনসেন্ট ভ্যানগগের কথা মনে পড়েছে।
সমস্ত প্যারিসের রাস্তায়, গ্যালারিতে, ফেষ্টিভেলে ,খুঁজে ফিরেছি ভিনসেন্টের কষ্ট ।
তোমার প্রিয় গায়ক
জিম মরিসনের শেষ দিনগুলো কেটেছে এই প্যারিসে ।
প্যারিসেই জিমের কবর ।
অগনিত শিল্পীর কষ্ট থেকে প্যারিস পেয়েছে সৌন্দর্য,
কষ্টই প্যারিসের ঐশ্বর্য ।

আমাদের সুবর্ন সময়ের স্বপ্নের প্যারিসে
আজ নিজেকে ভীষন একা মনে হয়
এলোমালো পড়ে আছি
শিল্প সাহিত্যের এই জাগ যজ্ঞে।
তীব্র শীতের শ্বাসকষ্ট ভোগায় মাঝে মাঝে
এইতো সেদিন
আবারও বদলালাম চশমার কাঁচ।
প্রতিনিয়ত হেরে যাচ্ছি, সময়ের কাছে,
তুমি মনে রেখো
পরিবর্তনের দমকা হাওয়ায়
আমি বদলাইনি এতটুকু ।
বাইজেনটাইন সম্রাজ্ঞীর মত
তোমাকে ঘিরে থাক পৃথিবীর সমস্ত সুখ ।
তুমি অনিন্দ্য সুন্দরী হয়ে ওঠো তোমার সৃষ্টিতে ।

তুমি ভালো থেকো …….
 
যা চেয়েছি যা পাবো না-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়.
..............
মেয়ে= কী চাও আমার কাছে ?

ছেলে= কিছু তো চাইনি আমি ।

মেয়ে= চাওনি তা ঠিক । তবু কেন
এমন ঝড়ের মতো ডাক দাও ?

ছেলে= জানি না । ওদিকে দ্যাখো
রোদ্দুরে রুপোর মতো জল
তোমার চোখের মতো
দূরবর্তী নৌকো
চর্তুদিকে তোমাকেই দেখা

মেয়ে= সত্যি করে বলো, কবি, কী চাও আমার কাছে ?

ছেলে= মনে হয় তুমি দেবী...

মেয়ে,= আমি দেবী নই ।

ছেলে= তুমি তো জানো না তুমি কে !

মেয়ে=কে আমি !

ছেলে= তুমি সরস্বতী, শব্দটির মূল অর্থে
যদিও মানবী, তাই কাছাকাছি পাওয়া
মাঝে মাঝে নারী নামে ডাকি

মেয়ে= হাসি পায় শুনে । যখন যা মনে আসে
তাই বলো, ঠিক নয় ?

ছেলে= অনেকটা ঠিক । যখন যা মনে আসে-
কেন মনে আসে ?

মেয়ে= কী চাও, বলো তো সত্যি ? কথা ঘুরিয়ো না

ছেলে= আশীর্বাদ !

মেয়ে= আশীর্বাদ ? আমার, না সত্যি যিনি দেবী

ছেলে=-তুমিই তো সেই ! টেবিলের ঐ পাশে
ফিকে লাল শাড়ি
আঙ্গুলে ছোঁয়ানো থুতনি,
উঠে এসো
আশীর্বাদ দাও, মাথার ওপরে রাখো হাত
আশীর্বাদে আশীর্বাদে আমাকে পাগল করে তোলো
খিমচে ধরো চুল, আমার কপাল
নোখ দিয়ে চিরে দাও

মেয়ে= যথেষ্ট পাগল আছো ! আরও হতে চাও বুঝি ?

ছেলে= তোমাকে দেখলেই শুধু এরকম, নয়তো কেমন
শান্তশিষ্ট

মেয়ে =-না দেখাই ভালো তবে ! তাই নয় ?

ছেলে=-ভালো মন্দ জেনে শুনে যদি এ-জীবন
কাটাতুম
তবে সে-জীবন ছিল শালিকের, দোয়েলের
বনবিড়ালের কিংবা মহাত্মা গান্ধীর
ইরি ধানে, ধানের পোকার যে-জীবন

মেয়ে= -যে জীবন মানুষের ?

ছেলে= আমি কি মানুষ নাকি ? ছিলাম মানুষ বটে
তোমাকে দেখার আগে

মেয়ে=-তুমি সোজাসুজি তাকাও চোখের দিকে
অনেকক্ষণ চেয়ে থাকো
পলক পড়ে না

কী দেখো অমন করে ?

ছেলে= তোমার ভিতরে তুমি, শাড়ি-সজ্জা খুলে ফেললে
তুমি
তার আড়ালে যে তুমি


মেয়ে=-সে কি সত্যি আমি ? না তোমার নিজের কল্পনা

ছেলে=-শোন্ খুকী

মেয়ে=-এই মাত্র দেবী বললে-

ছেলে=-একই কথা ! কল্পনা আধার যিনি, তিনি দেবী-
তুই সেই নীরা
তোর কাছে আশীর্বাদ চাই

মেয়ে= -সে আর এমন কি শক্ত ? এক্ষুনি তা দিতে পারি

ছেলে= -তোমার অনেক আছে, কণা মাত্র দাও

মেয়ে= -কী আছে আমার ? জানি না তো

ছেলে= -তুমি আছো, তুমি আছো, এর চেয়ে বড় সত্য নেই

মেয়ে= -সিঁড়ির ওপরে সেই দেখা
তখন তো বলোনি কিছু ?

আমার নিঃসঙ্গ দিন, আমার অবেলা
আমারই নিজস্ব--শৈশবের হাওয়া শুধু জানে

ছেলে=-দেবে কি দুঃখের অংশভাগ ? আমি
ধনী হবো

মেয়ে= -আমার তো দুঃখ নেই--দুঃখের চেয়েও
কোনো সুমহান আবিষ্টতা
আমাকে রয়েছে ঘিরে
তার কোনো ভাগ হয় না
আমার কী আছে আর, কী দেবো তোমাকে ?


ছেলে=-তুমি আছো, তুমি আছো, এর চেয়ে বড় সত্য নেই !
তুমি দেবী, ইচ্ছে হয় হাঁটু গেড়ে বসি
মাথায় তোমার করতল, আশীর্বাদ...
তবু সেখানেও শেষ নেই
কবি নয়, মুহূর্তে পুরুষ হয়ে উঠি
অস্থির দু'হাত
দশ আঙুলে আঁকড়ে ধরতে চায়
সিংহিনীর মতো ঐ যে তোমার কোমর
অবোধ শিশুর মতো মুখ ঘষে তোমার শরীরে
যেন কোনো গুপ্ত সংবাদের জন্য ছটফটানি

মেয়ে=-পুরুষ দূরত্বে যাও, কবি কাছে এসো

তোমায় কী দিতে পারি ?

ছেলে=-কিছু নয় !

মেয়ে=-অভিমান ?

ছেলে=-নাম দাও অভিমান !

মেয়ে=-এটা কিন্তু বেশ ! যদি
অসুখের নাম দিই নির্বাসন
না-দেখার নাম দিই অনস্তিত্ব
দূরত্বের নাম দিই অভিমান ?

ছেলে=-কতটুকু দূরত্ব ? কী, মনে পড়ে ?

মেয়ে=-কী করে ভাবলে যে ভুলবো ?

ছেলে= -তুমি এই যে বসে আছো, আঙুলে ছোঁয়ানো থুতনি
কপালে পড়েছে চূর্ণ চুল
পাড়ের নক্সায় ঢাকা পা
ওষ্ঠাগ্রে আসন্ন হাসি-
এই দৃশ্যে অমরত্ব
তুমি তো জানো না, নীরা,
আমার মৃত্যুর পরও এই ছবি থেকে যাবে ।


মেয়ে= -সময় কি থেমে থাকবে ? কী চাও আমার কাছে ?

ছেলে=-মৃত্যু ?

মেয়ে=-ছিঃ , বলতে নেই

ছেলে=-তবে স্নেহ ? আমি বড় স্নেহের কাঙাল

মেয়ে=-পাওনি কি ?

ছেলে=-বুঝতে পারি না ঠিক । বয়স্ক পুরুষ যদি স্নেহ চায়
শরীরও সে চায়
তার গালে গাল চেপে দিতে পারো মধুর উত্তাপ ?


মেয়ে=-ফের পাগলামি ?

ছেলে=-দেখা দাও ।

মেয়ে=-আমিও তোমায় দেখতে চাই ।

ছেলে=-না !

মেয়ে=-কেন ?

ছেলে=-বোলো না । কক্ষনো বোলো না আর এ কথা
আমি ভয় পাবো ।
এ শুধুই এক দিকের

আমি কে ? সামান্য, অতি নগণ্য, কেউ না
তুবি এত স্পর্ধা করে তোমার রূপের কাছে--

মেয়ে=-তুমি কবি ?

ছেলে= -তা কি মনে থাকে ? বারবার ভুলে যাই
অবুঝ পুরুষ হয়ে কৃপাপ্রার্থী

মেয়ে=-কী চাও আমার কাছে ?

ছেলে= -কিছু নয় । আমার দু'চোখে যদি ধুলো পড়ে
আঁচলের ভাপ দিয়ে মুছে দেবে ?
 

Users who are viewing this thread

Back
Top