What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

কুরআনে বর্ণিত হুদহুদ পাখি দেখেছেন? (1 Viewer)

Joined
Sep 21, 2022
Threads
17
Messages
135
Credits
2,584
পবিত্র কুরআনে বর্নিত হযরত সুলাইমান (আ:) এর কাজ করতো হুদহুদ পাখি।

হজরত সুলায়মান (আ.)-এর ছিল অবিস্মরণীয় এক রাজত্ব। মানুষের পাশাপাশি জিন জাতি, বায়ুমণ্ডল, পশু-পাখি ইত্যাদিও ছিল তার রাজত্বের অধীন। বিশেষ কিছু পাখি ছিল রাজকর্মে নিয়োজিত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি পাখি ছিল হুদহুদ। এ পাখির দায়িত্ব ছিল হজরত সুলায়মান (আ.) মরুভূমি বা জনমানবহীন প্রান্তরে বের হলে পানি অন্বেষণ করা। একবার হঠাৎ করেই হুদহুদ পাখি উধাও হয়ে গেল। কিছু না জানিয়ে এভাবে উধাও হওয়ায় সুলায়মান (আ.) রাগান্বিত হলেন এবং যথাযথ কারণ দর্শাতে না পারলে কঠিন শাস্তি প্রদানের ওয়াদা করলেন। বেশ কিছু সময় পর হুদহুদ ফিরে এলো।

সুলায়মান (আ.) জানতে চাইলেন সে কোথায় গিয়েছিল। হুদহুদ বলল, 'আপনি অবগত নন, এমন একটি বিষয়ে আমি অবগত হয়েছি। আমি আপনার কাছে সাবা থেকে নিশ্চিত সংবাদ নিয়ে আগমন করছি। আমি এক নারীকে সাবাবাসীদের ওপর রাজত্ব করতে দেখেছি। তাকে সবকিছুই দেওয়া হয়েছে এবং তার একটা বিরাট সিংহাসন আছে। আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সেজদা করছে।' (সুরা নামল : ২২-২৪)

বর্তমান ইয়েমেন অঞ্চলে সাবাবাসীর সেই রানীর নাম ছিল বিলকিস। সুলায়মান (আ.) হুদহুদের সংবাদ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইলেন এবং তাদেরকে সূর্যপূজা ছেড়ে এক আল্লাহর ইবাদত করতে বললেন। তিনি হুদহুদ পাখির কাছে একটি চিঠি লিখে দিয়ে বললেন, 'তুমি আমার এই পত্র নিয়ে যাও এবং এটা তাদের কাছে অর্পণ করো। অতঃপর তাদের কাছ থেকে সরে পড় এবং দেখ, তারা কী জবাব দেয়।' (সুরা নামল : ২৮)। সেই চিঠির ভাষ্য ছিল এমন'এই পত্র সুলায়মানের পক্ষ থেকে এবং তা অসীম দাতা, পরম দয়ালু, আল্লাহর নামে শুরু। আমার মোকাবিলায় শক্তি প্রদর্শন করো না এবং বশ্যতা স্বীকার করে আমার কাছে উপস্থিত হও।' (সুরা নামল : ২৯-৩০)

পত্র পেয়ে রানী বিলকিস সভাসদদের জরুরি তলব করলেন এবং নিজেদের করণীয় বিষয়ে পরামর্শ চাইলেন। সভাসদগণ নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য ও সৈন্যবাহিনীর কথা উল্লেখ করল। তারা বলল, আমরা শক্তিশালী এবং কঠোর যোদ্ধা। এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আপনারই। প্রকারান্তরে তারা বশ্যতা স্বীকার না করে যুদ্ধের পরামর্শ দিল। কিন্তু রানী বিলকিস আরও গভীরে গিয়ে বাস্তবমুখী চিন্তা করলেন। রানী বললেন, 'রাজা-বাদশারা যখন কোনো জনপদে প্রবেশ করে, তখন তাকে বিপর্যস্ত করে দেয় এবং সেখানকার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গকে অপদস্থ করে। তারাও এরূপই করবে। আমি তার কাছে কিছু উপঢৌকন পাঠাচ্ছি; দেখি প্রেরিত লোকেরা কী জবাব আনে।' (সুরা নামল : ৩৪ -৩৫)

রানী বিলকিসের উপহার সামগ্রী নিয়ে রাজকীয় প্রতিনিধিদল হজরত সুলায়মান (আ.)-এর কাছে পৌঁছল। সুলায়মান (আ.) সেই উপহার সামগ্রীর দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করলেন না। ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে বললেন, 'তোমরা কি ধনসম্পদ দ্বারা আমাকে সাহায্য করতে চাও? আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন, তা তোমাদেরকে প্রদত্ত বস্তু থেকে উত্তম। বরং তোমরাই তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে সুখে থাকো।' (সুরা নামল : ৩৬)। সুলায়মান (আ.) এখানেই ক্ষান্ত হলেন না। আনুগত্য ও বশ্যতা স্বীকার না করলে তাদের দেশে সৈন্যবাহিনী প্রেরণের হুমকিও পুনর্ব্যক্ত করে বললেন, 'এখন অবশ্যই আমি তাদের বিরুদ্ধে এক সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসব, যার মোকাবিলা করার শক্তি তাদের নেই। আমি অবশ্যই তাদেরকে অপদস্থ করে সেখান থেকে বহিষ্কৃত করব এবং তারা হবে লাঞ্ছিত।' (সুরা নামল : ৩৭)

প্রতিনিধিদল রানী বিলকিসের কাছে গিয়ে সফরের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরল। সব শুনে রানী বিলকিস সিদ্ধান্ত নিলেন হজরত সুলায়মান (আ.)-এর বশ্যতা মেনে নেবে এবং নিজে তার কাছে উপস্থিত হবে। রানী বিলকিসের বশ্যতা স্বীকার এবং আগমনের সংবাদ পেয়ে সুলায়মান (আ.) সভাসদদের ডাকলেন। রানী বিলকিসকে চমকে দিতে পরিকল্পনা করলেন। রানীর বিখ্যাত সিংহাসনকে কত দ্রুত এনে হাজির করতে পারবে জিজ্ঞেস করলেন। তখন 'জনৈক দৈত্য-জিন বলল, আপনি আপনার স্থান থেকে ওঠার আগে আমি তা এনে দেব এবং আমি এ কাজে শক্তিবান, বিশ^স্ত। কিতাবের জ্ঞান যার ছিল, সে বলল, আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার আগেই আমি তা আপনাকে এনে দেব।' (সুরা নামল : ৩৯-৪০)। চোখের পলকে হাজির হলো রানীর সিংহাসন। সেই সিংহাসনের অবয়ব কিছুটা পরিবর্তন করে দিলেন সুলায়মান (আ.)।

রানী আগমন করল। রাজপ্রাসাদের স্বচ্ছ কাচের সড়কে ভ্রমে পড়ে গেল এবং গোড়ালির কাপড় টেনে ওপরে তুলে ফেলল। কোরআন মাজিদে বলা হয়েছে, 'তাকে বলা হলো, এই প্রাসাদে প্রবেশ করুন। যখন সে তার প্রতি দৃষ্টিপাত করল সে ধারণা করল যে, এটা স্বচ্ছ গভীর জলাশয়। সে তার পায়ের গোছা খুলে ফেলল। সুলায়মান (আ.) বললেন, এটা তো স্বচ্ছ স্ফটিক নির্মিত প্রাসাদ!' (সুরা নামল : ৪৪)। এটা ছিল রানীর জন্য প্রথম বিস্ময়। রাজপ্রাসাদে তার জন্য অপেক্ষা করছিল আরেক বিস্ময়। রানীর যে সিংহাসনটি জিনেরা নিয়ে এসেছিল সেটি দেখে রানী বেশ আশ্চর্য হলো। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, তোমার সিংহাসন কি এ রূপই? বিলকিস বিস্ময়াবিভূত হয়ে বলল, 'মনে হয় এটা সেটাই। আমরা আগেই সমস্ত অবগত হয়েছি এবং আমরা আজ্ঞাবহও হয়ে গেছি।' (সুরা নামল : ৪২)। রানী বিলকিস তৎক্ষণাৎ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনেন এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কোরআন মাজিদে এসেছে, 'বিলকিস বলল, হে আমার পালনকর্তা, আমি তো নিজের প্রতি জুলুম করেছি। আমি সুলায়মানের সঙ্গে বিশ^জাহানের পালনকর্তা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করলাম।' (সুরা নামল : ৪৪)। তারপর রানী বিলকিসের মাধ্যমে একটি সাম্রাজ্যে ঈমানের আলো ছড়িয়ে পড়ে।

হজরত সুলায়মান (আ.) এক অমর কীর্তি বাইতুল মুকাদ্দাস প্রতিষ্ঠা। জিনদের মাধ্যমে তিনি এই মসজিদ পুনঃনির্মাণ করেন। এই মসজিদ নির্মাণের মাঝপথেই হজরত সুলায়মান (আ.)-এর মৃত্যু উপস্থিত হয়। সুলায়মান (আ.) তখন একটি লাঠিতে ভর দেওয়া ছিলেন। যথানিয়মে সুলায়মান (আ.)-এর মৃত্যুও হয়। কিন্তু এরপর ঘটে অবিস্মরণীয় এক ঘটনা। মৃত্যুর পরও তিনি লাঠিতে ভর দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রায় এক বছর অতিবাহিত হয়ে যায় এভাবে। জিনেরা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি সুলায়মান (আ.) ইন্তেকাল করেছেন। তারা সুলায়মানকে (আ.) জীবিত ভেবে হরদম কাজ করে বাইতুল মুকাদ্দাসের নির্মাণকাজ সমাপ্ত করে। অবশেষে উইপোকা তার লাঠি খেয়ে ফেলে এবং লাঠি ভেঙে তার শবদেহ মাটিতে পড়ে যায়। জিনেরা তখন বুঝতে পারে সুলায়মান (আ.)-এর ইন্তেকাল হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'যখন আমি সুলায়মানের মৃত্যু ঘটালাম, তখন ঘুণ পোকাই জিনদেরকে তার মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত করল। সুলায়মানের লাঠি খেয়ে যাচ্ছিল। যখন তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন, তখন জিনেরা বুঝতে পারল যে, অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান থাকলে তারা এই লাঞ্ছনাপূর্ণ শাস্তিতে আবদ্ধ থাকত না।' (সুরা সাবা : ১৪)

কালেক্টেড।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top