What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বাংলা নব জাগরণের পথিকৃৎ পুরুষ রাজা রামমোহন রায় স্মরণে (1 Viewer)

BRICK

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Dec 12, 2019
Threads
355
Messages
10,073
Credits
81,757
T-Shirt
Glasses sunglasses
Calculator
Watermelon
Pistol
Pistol
অস্থির ভাবে পায়চারি করছিলেন রাজা। বড় হতাশ লাগছে তাঁর। মানুষই যদি বিরোধিতা করে, তাহলে তিনি লড়বেন কাদের নিয়ে? আর করবেনই বা কাদের জন্য? ধুস, আর লড়াই করে লাভ নেই।

এমন সময় দারোয়ান এসে বলল একজন গেঁয়ো ব্রাহ্মন দেখা করতে চাইছে। একটু বিরক্ত হয়ে তিনি বললেন, এখন আমার সময় নেই বলে দে। দারোয়ান বলল, বলেছি। কিন্তু উনি যেতে চাইছেন না। তখন রাজা বললেন, পাঠিয়ে দে।

এক ব্রাহ্মন ঘরে ঢুকলো। খাটো ধুতি, গায়ে নামাবলি, মাথায় টিকি। টিকি দেখলেই রাজার মাথাটা যায় গরম হয়ে। রুক্ষ স্বরে বললেন কী চাই? ব্রাহ্মন বলতে শুরু করলেন।

আমি নদীয়ার মহাদেব ভট্টাচার্য।থামলেন একটু,বোধহয় গুছিয়ে নিলেন একটু। আবার শুরু করলেন।জানেন,সেদিন ছিল বৈশাখ মাস। টোল থেকে ফিরতেই অপর্ণা এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো কোলে। জল দিলো, গামছা দিলো, বাতাস দিলো পাখা করে।আমার জন্য তার যতো চিন্তা।বাপে মেয়েতে আদর খাচ্ছি। তখন ওর মা ডাকলো ঘর থেকে। ভেতরে যেতে বলল, মেয়ের তো ৭ বছর বয়স হোল। আর কতদিন ঘরে বসিয়ে রাখবে? পাড়ায় যে কান পাতা দায়। আমি বললাম,পাত্র পাচ্ছি কই? যার কাছেই যাই। ১০০০ টাকার কমে পন নেবেনা কেউ। মন্দিরা ফিসফিস করে বলল, সবার তো কপাল সমান হয়না। কিন্তু জাত ধর্ম তো রাখতে হবে। কাল নদীপথে একজন কুলীন ব্রাহ্মন এসেছেন। বয়সটা বেশি। ৭০ এর ঘরে। কিন্তু বংশ উঁচু। ৫০ টাকায় কন্যা উদ্ধার করেন তিনি। আমাদের অপুকে ওর হাতে গৌরি দান করো। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম, না না এ হবেনা। কিন্তু সমাজের চাপতো বুঝি। বুঝি সংসারের চাপও। নিজের সঙ্গে অনেক লড়াই করে অপুর সাথে বিবাহ দিলাম। লাল চেলি, গয়না, আলতা, সিঁদুরে মেয়েকে আমার দেবীর মতো লাগছিলো। সে যে কী রূপ কী বলবো!! বোধয় বাপের নজরটাই লেগেছিল সেদিন।
পরদিনই মেয়েকে ছেড়ে জামাই বাবাজীবন আবার পাড়ি দিলেন নদীপথে। আরও কারোর কন্যা উদ্ধার করতে। বলে গেলেন আবার আসবো পরের বৎসর।

আমাদের বাপ মেয়ের আনন্দের জীবন চলছিলো বেশ। সারাক্ষন আমার পিছনে। সব কাজ শিখে গেলো। পারতো না শুধু রান্না। একদিন হাতে ফোস্কা পড়ে কী অবস্থা। আমি ওর মা কে বলে দিলাম, ওকে রান্নার কাজে লাগাবেনা। আগুনে ওর কষ্ট হয়। কী খুশি সেদিন মেয়ে। আমাকে জড়িয়ে ধরে কতো আদর।

আশ্বিন মাস গড়িয়ে যায়। পুজো আসছে, চারদিকে সাজো সাজো রব। আমি হাট থেকে মেয়ের জন্য লালটুকটুকে শাড়ি, আলতা সব নিয়ে এলাম। মেয়ে খুব খুশি। বলল ওঃ!! কখন যে পড়বো এইসব।বাবা, আমাকে রানীর মতো লাগবে, বলো? আনন্দে আমার চোখ ভিজে উঠলো। অভাবী সংসারে খুশি উপচে পড়লো।

ঠিক তার পরের দিন, জানেন ঠিক পরের দিন। সকাল দশটা হবে। মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে লোক এলো পত্র নিয়ে। গতকাল নারায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় দেহ রেখেছেন। যথাবিহিত বিধি অনুসারে কন্যাকে সতী করার নির্দেশ দিয়েছেন তারা। ভেবেছিলাম, পত্র ছিঁড়ে ফেলবো। কিন্তু পত্রবাহক গ্রামের মাতব্বরদের জানিয়েই এসেছেন আমার বাড়ি। কোন উপায় ছিল না। রাজা বলে উঠলেন তারপর???

তারপর মেয়েকে সাজালাম। নতুন লাল চেলির শাড়ি, গয়না, আলতা, সিঁদুরে মেয়ে সেদিন অপরূপা। গ্রামে উৎসব, ঢাক বাজছে। এয়োরা সবাই ওর মাথার সিঁদুর,ওর আলতা নিচ্ছে। আর ও নিজে কী খুশি সেজেগুজে। ওর পছন্দের দধি মিষ্টান্ন এসেছে ঘর ভরে। জানেন, তার মধ্যেও ও সেসব আমাকে খাওয়াবে বলে ব্যস্ত। কথা বন্ধ হয়ে আসে ব্রাহ্মনের। চোখটা মুছে আবার শুরু করেন। খালি সে বুঝতে পারেনি উৎসবটা কিসের।
এরপর খবর এলো নদীর তীরে চিতা সাজানো সমাপ্ত। সতীমাতাকে নিয়ে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন কুলীন সমাজ। মেয়েকে কোলে নিয়ে চললাম। কাঁদিনি একটুও। ওকে বুঝতে দিতে চাইনি কিছুই। চিতার পাশে সমস্ত আনুষ্ঠানিক কাজ মিটলো। মেয়ে অবাক হয়ে দেখছিল সব। আগুন দেওয়া হোল চিতায়। দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো চিতা। মেয়ে বলল বাবা, বাড়ি চলো। আগুনে আমার বড় ভয়। আমি বললাম, আমার গলাটা একবার ছাড় মা। কচি হাত দুটো গলাটা ছাড়তেই ছুঁড়ে দিলাম অগ্নিকুণ্ডে। আগুনের মধ্যে থেকে একটা রিনরিনে গলা পাওয়া গেল, বাবাআআআআ.....
সেই ডাক আমি ভুলতে পারিনি। তারপর থেকে একদিনও রাত্রে ঘুম হয়নি। উঠতে বসতে খেতে শুতে শুধু এক আওয়াজ। বাবাআআআআআআআ। আমি পারিনি তাকে বাঁচাতে। আপনি পারেন। পায়ে ধরি আপনার। মেয়েগুলাকে বাঁচান। কতো মেয়ে গ্রাম ঘরে আপনার মুখ চেয়ে আছে। আছি আমরা, মেয়ের বাপ মা রা। বলতে পারিনা সমাজের ভয়ে। কিন্তু আপনি পারবেন।

উঠে দাঁড়ালেন রাজা রামমোহন রায়। বললেন,আমায় আপনি শক্তি দিলেন। পারতে আমাকে হবেই। এখানে না হলে ব্রিটেন যাবো। প্রিভি কাউন্সিলে দরবার করবো। কথা দিলাম আপনাকে।

বাকিটা ইতিহাস। সেই যুগে দাঁড়িয়ে তাঁর সেই লড়াই কতোটা কঠিন ছিল বলে বোঝানো যাবেনা। কলকাতার রাজ পরিবার থেকে ভারতের পণ্ডিত সমাজ সকলে ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। কম নিন্দা অপমানের ঝড় বয়নি তাঁর ওপর দিয়ে। কিন্তু বটবৃক্ষের মতো অটুট ছিলেন তিনি।
রাজা রামমোহন রায়, ভারতের 'প্রথম আধুনিক মানুষ |

আজ জন্মদিন | হে মহামানব, প্রনমি তোমায়।

© পার্থ চক্রবর্তী। (সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সংগৃহীত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top