What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

।।। পাহাড়ী সান্যালের রান্নার লোক ।।। (1 Viewer)

BRICK

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Dec 12, 2019
Threads
355
Messages
10,073
Credits
81,757
T-Shirt
Glasses sunglasses
Calculator
Watermelon
Pistol
Pistol
*
ছোটবেলা খুব সুখকর নয়। সৎমা-র কাছে মানুষ। স্কুল যাওয়া-আসার পথে একটা রেকর্ডের দোকানে করিম খানের গান বাজত, আর ছোট্ট ছেলেটি মুগ্ধ হয়ে সেই গান শুনত, শুনে শুনে নিজে গাওয়ার চেষ্টাও করত।

বয়স তখন এগারো। এক দিন, রুটিতে ঘি কম মাখিয়েছে মা, এই নিয়ে রাগারাগি করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। ঘটনাটা নিয়ে পরবর্তীতে বলেছিলেন, আমি তখন গান শিখতে চাইছিলাম। বাড়ি থেকে পালিয়ে গান শিখতে হত। তাই পালানোর একটা ছুতো খুঁজছিলাম মাত্র।

সেই বয়সেই উনি শুনেছিলেন গ্বালিয়রে নাকি খুব ভাল ক্লাসিকাল মিউজিকের চর্চা হয়। আর হাফিজ আলি খান সাহেব, মানে আমজাদ আলি খানের বাবা, খুব বড় সঙ্গীতজ্ঞ। বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠে পড়লেন। গন্তব্য গ্বালিয়র। কিন্তু টিকিট চেকার তাঁর তাগিদের মর্ম কী বুঝবে? জরিমানার পয়সা তো নেই‌ই। অতএব ট্রেন থেকে নামিয়ে শ্রীঘরে পাঠিয়ে দিল। এই ভাবে কোথাও ক'দিন জেলে কাটিয়ে, কোথাও রাস্তায় শুয়ে থেকে, ফের বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠে, ফের চেকারের গলাধাক্কা খেয়ে, তিন মাস পর পৌঁছলেন গ্বালিয়রে।

হাফিজ আলি খানকে গান শুনিয়েছিলেন। চমকে গিয়েছিলেন খান সাহেব। এত কমবয়সি একটা ছেলের গলায় ধ্রুপদ গানের এমন সম্ভাবনা ! উনি ভর্তি করে দিলেন গ্বালিয়রের সিন্ধিয়া স্কুলে। স্কুলে তালিম পেতেন বটে, তবে তেমন শিখতে পারতেন না। রেওয়াজ ছিল ওঁর একমাত্র নিস্তার। নিজে নিজেই রেওয়াজ করতেন। তবে কিনা স্কুল যেতেই হত, কারণ এক বেলা ফ্রি খাবার জুটত। আর রাতের দিকে নাকি খান সাহেবের খাবার সময় তাঁরই বাড়িতে ঘুরঘুর করতেন, ফলে রাতের খাবারও জুটে যেত ওখানেই।
খান সাহেবও পাকা জহুরি ছিলেন, তা না হলে, এত কম বয়সে নিজে উনি দরবারি শেখাতেন না ওই ছেলেটিকে।

এই তালিমে কেটে গেল দুটো বছর। এখানেই ছেলেটি শুনেছিল, কলকাতায় ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায় বলে এক জন গুরু আছেন, যিনি ভগবান। পালিয়ে এলেন কলকাতায়। কিন্তু শিখবেন কী করে?
সে খবরও জোগাড় হল। অভিনেতা পাহাড়ী সান্যালকে গান শেখাতে আসতেন ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়। ছেলেটি তখন কাজ নিয়ে নিলেন পাহাড়ী সান্যাল মশাইয়ের বাড়িতে। রান্না করতেন, টিফিন কেরিয়ারে করে খাবার পৌঁছে দিতেন সিনেমার সেটে, আর লুকিয়ে গান শিখতেন।

পাহাড়ী সান্যালের কাছে বছর দুয়েক থেকে, চলে গেলেন জলন্ধরে। সেখানে তখন বছরে এক বার রমরমিয়ে বসে হরবল্লভ সংগীত সম্মেলন। আসেন ভারতবিখ্যাত সব ধ্রুপদী শিল্পীরা। সেখানে এক জন দৃষ্টিহীন ধ্রুপদী সংগীতশিল্পীর কাছে গান শিখতে শুরু করে দিলেন । সেখানেও ছিলেন বছর দুয়েক। সামনের একটা হোটেলে দু'বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন সেই পুণ্যাত্মা।

এই হরবল্লভ সংগীত সম্মেলনে গান শুনলেন সওয়াই গন্ধর্ব-এর | তিনি ছিলেন পুণের কাছেই ধারওয়ারের বাসিন্দা। সেই ছেলেটি তাঁর কাছে গিয়ে, পাকাপাকি ভাবে নাড়া বাঁধলেন তাঁর কাছে। সেখানে গুরুগৃহে থাকার মতো করেই সব পাঠ নিলেন। গুরুর স্নান-খাওয়ার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে গুরুগৃহ পরিষ্কার করার ভারও পালন করেছিলেন ।

শিক্ষা শেষ হলে চলে আসেন মুম্বইতে। অল ইন্ডিয়া রেডিয়োতে গান করেন। তার পর এইচএমভি থেকে তাঁর রেকর্ড বেরোয়। আর তার পর যা, সে তো ইতিহাস জানে |

বেশ কয়েকবছর পরের কথা। একবার কলকাতায় গান গাইতে এসেছেন। সামনের সারিতে এসে বসলেন পাহাড়ী সান্যাল। গান শেষ হওয়ার পর, তিনি পাহাড়ী সান্যালকে গিয়ে বললেন, 'ম্যায় আপ কা ওহি জোশী হুঁ।'
পাহাড়ী সান্যাল এত চমকে গেলেন, রিঅ্যাক্টও করতে পারলেন না। যে তাঁকে টিফিন পৌঁছে দিত, সে এত নামকরা গায়ক হয়েছে ! পাহাড়ীবাবুর সেই মুখটা তিনি ভোলেননি।

চিনতে পারলেন ?
কিংবদন্তি ভীমসেন জোশী | ১৯৭২-এ পদ্মশ্রী, '৭৫-এ সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি, '৮৫ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০০৮ সালে দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার ভারতরত্ন |

কি ? চমকে গেলেন ?

মহান শিল্পীকে প্রণাম।
তথ্য : পাহাড়ী সান্যালের রান্নার লোক (গুলজার)

সংগৃহীত ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top