What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

যা খুশি বলাই বাক স্বাধীনতা না। (1 Viewer)

Joined
Sep 21, 2022
Threads
17
Messages
135
Credits
2,584
মুখের ওপর জবাব না দিলে মানুষ পেয়ে বসে। কোন কথা কোথায় বলতে হবে, এটা সবার আগে শিখতে হয়। কথা বলতে জানি মানেই যা খুশী বলব, ওটাকে বাক স্বাধীনতা বলে না, ওটাকে অসভ্যতা বলে।

ঘটনাটা আজকের। ট্রেন ধরব বলে বসে আছি প্ল্যাটফর্মে, আমার পাশেই বসে ছিল একটি ছেলে। বয়স ত্রিশ একত্রিশ হবে। কানে হেডফোন, একটা ফানি ভিডিও দেখছিল নিজের মোবাইলেই। কিছুক্ষণ পর মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রলোক ছেলেটির সামনে এসে দাঁড়ালেন। ছেলেটির মনোযোগ তখন মোবাইলে। খুব স্বাভাবিক সেটা। কে কখন সামনে এসে দাঁড়াবে, সেটা দেখার দায়িত্ব তো তার নয়। মিনিট খানেক দাঁড়িয়ে থাকার পর ভদ্রলোক নিজে থেকেই ছেলেটিকে বললেন,

-কি রে আজকাল দেখেও না দেখার ভান করিস যে।

ছেলেটি কান থেকে হেডফোনটা খুলে ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বললেন,

-আরে তুমি! বুঝতেই পারি নি।

-বুঝবি কি করে! চাকরি পেয়ে গেলে এমনটাই হয়।

ছেলেটি একটু লজ্জা পেয়ে বলল,

-কি যে বলো কাকু, আমি আসলে খেয়াল করিনি। বসো না, দাঁড়িয়ে আছো কেন।

ছেলেটির কথাতে বিনয়ের ভাব। ছেলেটি আমার দিকে একটু সরে আসতেই ভদ্রলোক পাশে বসলেন। বসেই বললেন,

-বড়ো লোক হয়ে যাচ্ছিস, এখন কি আর কথা বলতে চাইবি? ব্যাঙ্কের চাকরি বলে কথা! ভালোই তো বেতন!

কথা গুলো বলছেন বটে, কথা গুলোর মধ্যে একটা ব্যঙ্গ লুকিয়ে আছে, সেটা আমি বুঝতেই পারছিলাম। ছেলেটি ভদ্রতার খাতিরে কথা গুলো মেনেই নিচ্ছিল দেখলাম। ভদ্রলোক বললেন,

-হ্যাঁ রে চাকরিটা যে পেয়েছিস, কোনো লোক ধরতে হয়েছিল নাকি?

এমন কথায় ছেলেটির যে খারাপ লেগেছে, ছেলেটির রিপ্লাই দেখেই বুঝেছি। ছেলেটি বলল,

-কেন? চাকরিটা পাওয়ার জন্য আমার কোনো যোগ্যতা ছিল না?

ভদ্রলোক বললেন,

-এই তো না, কথাটা মাইণ্ডে নিয়ে নিলি তো? এত কম ধৈর্য্য হলে হবে? কত খারাপ কথা শুনতে হবে চাকরি করতে গিয়ে। জানি তুই পড়াশোনায় ভালো, কত ভালো ছেলে আছে, তারাও তো চাকরি পায়নি।

এমন ভাবে কথা বলছিল যেন, ছেলেটি একেবারেই অযোগ্য। এমন কথা যে ছেলেটির ভালো লাগেনি, এক ঝলক ওর মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝে গিয়েছি। ভদ্রলোক বেশ বেশ মিষ্টি মিষ্টি বচনে ছেলেটিকে অপমানই করছিলেন। খুব রাগ হচ্ছিল আমার। বয়সে বড়ো বলেই কি যা খুশি বলা যায়? নাকি ছোটো বলে তার মান সম্মান নেই? মনে হচ্ছিল দুটো কথা আমিই শুনিয়ে দিই। ছেলেটি চুপ করেই আছে। ভদ্রলোক এর পর শুরু করলেন অন্য প্রসঙ্গ। বললেন,

-তোর এজ কত হবে এখন? তিরিশের কম না তিরিশের বেশি?

-তিরিশের বেশি। তা কেন?

-বিয়ে করার তো বয়স পেরিয়ে গেল। কবে বিয়ে করবি? বিয়ে হয়ে গেলে তোর ছেলে মেয়ে এতদিনে স্কুলে পড়ত।

কতক্ষণ আর অপমান সহ্য করা যায়? চাণক্য'র একটা কথা আছে, প্রশংসা তুমি যত ইচ্ছে করো, কিন্তু অপমান ভেবেচিন্তে করো। কারণ অপমান হলো সেই ঋণ, যা সুযোগ পেলে সবাই সুদসহ ফেরত দেয়। " এতক্ষণ ধরে ভদ্রলোকের কথা সহ্য করতে করতে সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেল। সেটাই তো হওয়া খুব স্বাভাবিক তাই না? অপমান সহ্য করার মধ্যে কোনো গৌরব নেই। ছেলেটি মেজাজের সুর নরম করে ভদ্রলোককে বললেন,

"কেন কাকু, আমি বিয়ে করিনি বলে তোমার চিন্তা হচ্ছে?

-আরে ধুরর। বয়স তো হচ্ছে নাকি! তাছাড়া ভালো চাকরি করিস, ভালো টাকা বেতন পাস। তোর বিয়েতে খেতে হবে না?

-আমার ও তো খেতে ইচ্ছে করছে, তবে বিয়েতে নয়, শ্রাদ্ধে। কবে খাব কাকু?

-এই তুই কি আমার সাথে মজা করছিস?

-না কাকু তোমার সাথে মজা করতে পারি। তুমি কি আমার সাথে এতক্ষণ মজা করলে? কি যে বলো তুমি! তোমার সাথের মজা করা মানে পাপ বাড়বে।

-তোকে বলতে যাওয়াটাই ভুল হয়েছে আমার। ভালো চাকরি করছিস, ভালো বেতন পাচ্ছিস বলেই বললাম।

ছেলেটি এবারে সিরিয়াস হয়ে বলল,

-ভালো চাকরি করি, ভালো বেতন পাই,তাতে তোমার কি!

-শোন তুই পাড়ার ছেলে। তোর কি খারাপ চাইব?

ছেলেটি এবার হেসে ফেলল‍। হাসতে হাসতেই বলল,

-ভাবছিলাম আর কথা বাড়াব না। চুপ করে থাকব, কিছু মনে করো না কাকু। তো এতই যখন আমার ভালো চাইছ, এতদিন কোথায় ছিলে? যখন টাকার অভাবে ভালো জায়গায় পড়তে পেলাম না, টাকার অভাবে ভালো স্যারের কাছে টিউশন নিতে পারলাম না, পুজোতে যখন নতুন জামা প্যান্ট কিনতে পারতাম না, তখন কোথায় ছিলে তুমি? কোনোদিনও একটা খোঁজ নিয়েছিলে? লক ডাউনে যখন বাবার কাজ ছিল না তখন উঁকি মেরে দেখেছিলে? আর এখন ভালো চাইতে এসেছো? ভালোই তো বয়স হলো,নিজের জন্য চিন্তা করো,শরীর স্বাস্থ্য খেয়াল রাখো, আমার বিয়ে হলো কি হলো না এ নিয়ে টেনশন করো না। আমার বিয়ে হলে মাইকটা বাজবে। তোমার বাড়ির সামনে এক্সট্রা একটা মাইক দেব। বুঝতে পারবে বিয়েটা হচ্ছে। আর শোনো আমার বিয়ে নিয়ে আমার বাবা মায়ের মাথা ব্যথা নেই, আর তোমার কিনা চিন্তার শেষ নেই? পরের দিন এসব কথা জিজ্ঞেস করতে এসো না। অনেকক্ষণ ধরে মাথা খাচ্ছ। নিজের সম্মান রাখতে শেখো। তা না হলে তোমাকে যে সম্মান দিয়ে কাকু বলে ডাকি, ওই ডাকটাই ভুলে যাব। কথা গুলো বলেই ছেলেটি উঠে গেল।

ভদ্রলোক কি বলবেন, আর ভেবে পাচ্ছিলেন না। ছেলেটি উঠে চলে যাওয়ার পর ভদ্রলোক বললেন, চাকরি পেয়ে এত অহংকার? মানুষকে সম্মান করতে শেখ আগে।

পুরো কথোপকথনের সাক্ষী আমি। ভদ্রলোক হতে গেলে যে ব্যবহারটাও ভদ্র হতে হয়। তবে হ্যাঁ, ছেলেটি ঠিকই করেছে। যোগ্য জবাব একেই বলে। জোঁকের মুখে নুন না দিলে জোঁক তো রক্ত খেয়েই যেত। যারা শোধরায় না তাদের যতই বলো, তবে এদের মতো মানুষদের জবাব দিতেই হয়। আজকাল অনেকের কাছেই শুনি এখনকার ছেলে মেয়েরা সম্মান করতে শেখেনি। তা এমন কাকুদেরকে সম্মান দেবে কি করে? কে বিয়ে করবে, কে বিয়ে করবে না সেটা তার চয়েজ। তাকে তার মতো থাকতে দিন না! যে কথা বললে মানুষ অপ্রস্তুতে পড়বে, যে কথা বলল মানুষ লজ্জায় কুঁকড়ে যাবে, যে কথা বললে মানুষ অপমানিত হবে, সে কথা গুলো বলা বন্ধ করুন। সম্মান দিন, অবশ্যই সম্মান পাবেন।

কালেক্টেড
 

Users who are viewing this thread

Back
Top