What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

আলোয়ারের সেই বুড়িমা'কে ভুলতে পারেন নি বিবেকানন্দ। (1 Viewer)

BRICK

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Dec 12, 2019
Threads
355
Messages
10,073
Credits
81,757
T-Shirt
Glasses sunglasses
Calculator
Watermelon
Pistol
Pistol
সে অনেকদিন আগেকার কথা – ঠাকুরের দেহরক্ষার পর যখন তরুণ পরিব্রাজকরূপে তিনি ছুটে চলেছেন সারা দেশে, তখনই কোনও একটা সময়ে এসে ক'দিন আলোয়ারেও ছিলেন। সেই সময়ে দু'বেলা পেট চলে ভিক্ষার অন্নে। যেদিন কিছুই জোটে না ভিক্ষায়, সেদিন সন্ন্যাসীর জঠরাগ্নির জ্বালা কমায় এলাকার আরেক ভিখারিনি – বুড়িমা। পথের ধারে তাঁর জরাজীর্ণ কুঁড়ে ঘর; দিনশেষে ক্লান্ত, অবসন্ন, ক্ষুধার্ত সেই তরুণ এসে বসলে বুড়ি আস্তে আস্তে কিছুটা বজরার আটা বার করে – ভিক্ষারই ধন সে সব। তারপর সে আটা মেখে, হাতের চাপে চ্যাপ্টা করে, আগুনে পুড়িয়ে খানকতক রুটি বানিয়ে সন্ন্যাসীর দিকে এগিয়ে দেয়, "এ নে, খা রে লালা।" ও, বলা হয়নি, সন্ন্যাসীকে বুড়ি ডাকে "মেরে লালা" বলে; আর সন্ন্যাসী তাঁকে ডাকে "মাঈ"। বজরার রুটির সঙ্গে কাঁচালঙ্কা কামড়ে কামড়ে খেয়ে তৃপ্তির হাসি হাসে 'লালা', বুড়ির আদ্ধেক খাওয়া তাতেই হয়ে যায়।

তারপর অনেকদিন পেরিয়ে গেছে; বুড়ি জানেও না যে দেশ পেরিয়ে, মহাদেশ পেরিয়ে, সমুদ্র পেরিয়ে 'লালা' আজ স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে আবার ফিরে এসেছেন আলোয়ারে। না, এখন তিনি ভিক্ষাজীবী নন, রাজার অতিথি। সকাল থেকে সন্ধে রাজসভায় হাজার হাজার লোক আসে যায়, স্বামীজীকে দেখে, কথা বলতে চায়, আশীর্বাদ পেতে চায়। দু'পা এদিক ওদিক গেলে সবসময় সঙ্গে থাকে রাজার দেওয়া দুই পাহারাদার – মন হাঁপিয়ে ওঠে এসবে বিবেকানন্দের। মনে পড়ে এখানে এর আগেকার আসা – আধপেটা কিন্তু স্বাধীন পায়ে ঘুরে বেড়ানো। নিমেষে মনে পড়ে যায় 'মাঈ'র কথা। সেই কুঁড়েঘরে বসে গরম গরম বজরার রুটি, বুড়ির মুখের সেই হাসি ... আহা! কেমন আছে সে, কে জানে! আদৌ আছে তো? একবার দেখে এলে হয়। প্রহরীর চোখের আড়ালে, সন্ধের মুখে একাই বেরিয়ে পড়েন বিবেকানন্দ।

জায়গাটা খুঁজে পেতে অসুবিধে হয় না, এই ক'বছরে আলোয়ার বদলায় নি তেমন একটা। ওই তো বুড়ির কুঁড়েঘর, যেন আরও কিছুটা জীর্ণ। দরজায় একটা নোংরা কাঁথা ঝুলছে। বাইরে থেকেই স্বামীজী হাঁক দিলেন, "মাঈ! ও মাঈ!"
ভিতর থেকে কর্কশ স্বর আসে বুড়ির, "ওহ! বুড়ো মানুষ, দুটো কাজ সারছি, তাতে শান্তি নেই! কে চেল্লাস এই সন্ধে করে?"
"আরে বাইরে এসেই দেখো না, কে!"
হেঁয়ালি সইতে পারে না বুড়ি, ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "ওহ, কে আমার রাজপুত্তুর এল রে, বেরিয়ে তাকে দেখতে হবে! কে রে বেটা তুই?"
"আরে, তোর লালা ... মনে নেই মাঈ? তোর লালা এসেছে।"

হাড়-জিরজিরে বুড়িমা উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে আসে, "কই ... সত্যিই তুই লালা? তুই ... ফিরে এসেছিস? কই, কাছে আয় দেখি... দেখতে পাই না তো চোখে ভালো..."
কাঁপা হাতে স্বামীজীর গাল ছুঁয়ে, অনেক কষ্টে নিজের চিবুক উঁচু করে তাকায় বুড়ি, "সত্যিই তো, আমার লালা! কোথায় গেছিলি? কোথায় চলে গেছিলি বাপ, মাঈকে ছেড়ে?"
"সে সব অনেক গল্প রে মাঈ, হবে 'খন। দুটো খেতে দে তো আগে, বড্ড খিদে পেয়েছে!"
"ওই দ্যাখো! তখনও লালার পেটে আগুন জ্বলতো, আর এখনও! বলি, এ ক'বছর কিছু খাস নি, নাকি? বলি আমার কাছে কী আছে, যে তোকে খেতে দেবো এই অবেলায়?"
"কেন, তোর সেই বজরার রুটি দিবি না? লঙ্কা দিয়ে?"

কয়েকমুঠো বজরার আটা মেখে, গনগনে আঁচে পোড়ানো রুটি এগিয়ে দেয় মাঈ, তাঁর লালাকে। ছেলের মুখে সেই তৃপ্তির হাসি দেখে ফোকলা মা'ও হেসে ফেলে। নিজের ছেলেই তো তাঁর! বুড়ির পেটের ছেলে জোয়ান বয়সে চলে গিয়েছিল; সেই থেকে এক লালা ছাড়া আর কাউকেই তেমন আপন ভেবে বাঁচেনি বুড়ি। লালাও পালিয়েছিল বছর কয়েক আগে; এবার ফিরে এসেছে যে, আর সহজে যেতে দেবো না – এই ভেবে চোখ মোছে বুড়িমা।

"আহা, কী স্বাদ রে মাঈ! কোথায় লাগে এসবের পাশে রাজবাড়ির মণ্ডা মেঠাই!"

"আরে ও লালা, শুনেছিস –", কী যেন মনে করে সোজা হয়ে বসে বুড়ি, "শুনেছিস, এখানের রাজবাড়িতে নাকি মস্ত এক সাধু এসেছে! সঙ্গে কত লোকজন, সাহেব মেম, ভক্ত! সে নাকি বিরাট নামডাক করেছে; এ পথ দিয়ে কত লোক রোজ যাচ্ছে তাকে দেখতে, জানিস? তুই যাবি নাকি দেখা করতে, হ্যাঁ?" লালা উত্তর দেওয়ার আগেই বুড়ি আবার বলে, "না না, থাক! তোর গিয়ে কাজ নেই! পেটই ভরলো না তোর ভালো করে, আর কয়েকটা রুটি দিই? তোর ওদিকে গিয়ে কাজ নেই!"

"কেন রে মাঈ? গিয়ে কাজ নেই কেন?"

"ও বাবা, না, ও সাধু বড়লোক, বিরাট লেখাপড়া করা! কী বলতে শেষে কী বলে দেবে, আমার লালার মনে কষ্ট হবে শুধুশুধু..."

মুখে সাঙ্ঘাতিক এক দুষ্টুমির হাসি নিয়ে তাঁর লালা ঝুঁকে পড়ে, বুড়ির কাছে এসে বলে, "এ মাঈ! একটা মজা করবি? চল, তুই-আমি দুজনেই গিয়ে ওই স্বামীজীকে দেখে আসি! চল চল, যাবি?"

"ধুর ক্ষ্যাপা! রাজবাড়িতে আমাকে ঢুকতে দেবে, না তোকে? ধ্যাতানি খেয়ে ফিরে আসতে হবে! কোত্থাও যেতে হবে না তোকে, আমার কাছে বোস তো!"

"মাঈ, শোন...", যেন কিছুটা গাম্ভীর্যের ছলেই বিবেকানন্দ বলেন, "বলছি, সেই সাধু যদি আমিই হই? তবে?..."

একপল নীরব থেকে খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে ফোকলা বুড়িমা। "কথা শোনো আমার পাগলা বেটা'র! তুই? তুই হবি সেই সাধু? বড় হয়েও মজা করার স্বভাব গেল না তোর, বল? ওরে তুই তো আমার লালা! আমিও গরিব, তুইও গরিব! ও'সব বড় বড় সাধুর বেশি বেশি কথায় কাজ নেই আমাদের!"

আশপাশটা বড় একটা বদলায় নি মাঝের কিছু বছরে। সন্ধেবেলায় চাঁদ উঠেছে, সেই চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে আলোয়ার, তার জনবসতি, পথঘাট। আর সেই পথের ধারের কুঁড়েঘরে বসে এক মাঈ আর তাঁর লালা আগুন-পোড়া বজরার রুটি খেতে খেতে হাসিতে, খুনসুটিতে, আহ্লাদে, আদরে উড়িয়ে দিচ্ছে জীবনের একটা সন্ধে, সেই রাজঅতিথি সন্ন্যাসীর থেকে বহু, বহু দূরে।

(তথ্যঋণ : 'বন্ধু বিবেকানন্দ' – শঙ্করী প্রসাদ বসু)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top