What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected কুয়াশা রবে না আর (1 Viewer)

Able31

Community Team
Elite Leader
Joined
Sep 21, 2021
Threads
25
Messages
5,640
Credits
31,899
Mosque
Automobile
Mosque
Audio speakers
Watermelon
Thermometer
গল্প: কুয়াশা রবে না আর
লেখক: রুবাইয়াত হোসাইন


শোভা যখন আমাকে ওর ভয়ংকর সংগ্রহশালাটাকে দেখালো, তখন ওর সাথে আমার পরিচয়ের তিন বছর চলছে। ও মানুষকে ধরে ধরে তাঁদের যৌনাঙ্গ কেটে ফেলতো, তারপর সেগুলোকে সংরক্ষণ করতো ফরমালিনে ডুবিয়ে...
অথচ যৌবন তাঁর সমস্ত সৌন্দর্য নিয়ে বিকশিত হওয়ার সময়ে থেকেই শোভাকে আমি চিনতাম। অত্যন্ত অবস্থাসম্পন্ন ঘরের মেয়ে ছিলো ও। শহরের অভিজাত এলাকায় ওদের ফ্ল্যাট হলেও মেয়েটা বাস করতো গাজিপুরের বিশাল রিসোর্টটাতে। শুনেছি রবীন্দ্রনাথের বাবা নাকি ছেলেকে স্কুলে না পাঠিয়ে বাসায় শিক্ষাদীক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। শোভার পিতাও এক অর্থে এই সময়ের জমিদার ছিলেন, সুতরাং আমার মত দু' চারজন শিক্ষককে কিনে নেয়া তাঁর জন্য ডালভাত বললেও কম বলা হতো। বিশেষত আমরা যারা দারিদ্র্যের কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েও পড়ালেখা চালাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিলাম, যাদের নিজেদের ব্যক্তিগত খরচ যোগানোর পাশাপাশি ঐ বয়েসেই বাড়িতে টাকা পাঠানোর মত দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়েছিলো সময়ের আগেই, তাঁদের জন্য শোভার মত দু'একজন ছাত্র পেয়ে যাওয়াটা আশীর্বাদ ছাড়া ভিন্ন কিছু ছিলো না তখন। এটা ঠিক- ওদের পরিবারের অনেক কিছুই আমার নিকটে খুব অস্বাভাবিক বলে মনে হতো , কিন্তু প্রশ্ন করতাম না টিউশনি চলে যাওয়ার ভয়ে। তাছাড়া যে আমি এক অতি নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছিলাম, তাঁর কাছে এরকম উচ্চবিত্তদের কর্মকান্ড রহস্যময় মনে হওয়াটাই তো স্বাভাবিক - এ যুক্তিতে শোভার ব্যাপারে, শোভার পরিবারের ব্যাপারে নাক গলানো বন্ধ করে দিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যায়ের এক কিংবা সর্বোচ্চ দু'টো বিষয় পড়ানোর বিনিময়ে মাসে পনেরো হাজার টাকা পেয়ে যাওয়টা সামান্য বিষয় ছিলো না আমার জন্য, তাই যে কোনো মূল্যে চাকরিটুকু টিকিয়ে রাখাই মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে উঠেছিলো আমার কাছে ....

অবশ্য শোভার পরিবার বলতেও তেমন কেউ ছিলো না আসলে। মেয়েটা তার গৃহকর্ত্রীর কাছে মানুষ। মা মারা গেছিলো একদম ছোটবেলায়। মেয়ের অযত্ন হবে ভেবে শোভার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি। আপনারা অন্য কিছু ভাববেন না তাই বলে, শোভার বাবা খুব উন্নত চরিত্রের এক মানুষ বলে সুনাম ছিলো সবার মাঝে। ওদের গ্রামেও বাসিন্দারা একবাক্যে ভদ্রলোকের প্রশংসা করতো। তাঁর সাথে আমার জীবনে মাত্র কয়েকবার দেখা হয়েছে বলে ওসব কথার সত্যতা যাচাই করতে পারি নি, তবে যদি কেউ সন্তানকে দেখে তাঁর পিতার চরিত্রটুকু আঁচ করতে বলে, তবে আমি নিঃসন্দেহে শোভার বাবাকে হায়েস্ট গ্রেড দিতাম, কেননা ওর সেই ভয়ংকর সংগ্রহশালাটা দেখানোর আগ পর্যন্ত শোভাও আমার কাছে ছিলো অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, জ্ঞানী আর ভাবুক একটা মেয়ে। শোভাকে আমার কাছে টলটলে কোনো দীঘি বলেই মনে হতো, যার স্থির নিভৃতি দীঘিটাকে আয়নার সৌন্দর্য দিয়েছিলো....

তবে সময়ের সাথে সাথেই শোভা আরো চুপচাপ হয়ে গেছিলো হঠাৎ । ওর কোনো বন্ধুবান্ধব আছে বলেও শুনি নি, অথচ এতো সুন্দর এক মেয়ের পেছনে ছেলেদের লাইন লেগে যাওয়ার কথা। টানা চোখ আর চিকন থুতনির শোভাকে কিছুটা প্রাচ্যদেশীয় নারীদের মত দেখাতো। মাঝে মাঝে মনে হতো- যেনো চীনদেশীয় কোনো অতীত, অভিজাত রাজকন্যার পুনরুত্থান ঘটেছে শোভার মধ্য দিয়ে। গোলাপি মধুমালতীর মত ঠোঁটের নীচে বামপাশে একটা তিল ছিলো ওর, দেখে ভ্রান্তি জন্মাতো যেনো কালো ভ্রমর এক ফুলের বাগান ছোঁয়ার জন্য অপেক্ষা করছে অনন্তকাল ধরে। তবে মানুষের চেহারা কখনোই দীর্ঘমেয়াদে অন্যের হৃদয় স্পর্শ করতে পারে না, তাঁর নাগাল বড়জোড় মানুষের ইন্দ্রিয় অবধি। বরং মন জয় করে গল্প। শোভাও তাঁর ভালোবাসা, তাঁর স্বপ্ন-সাধ-প্রেম এসবের কাহিনী বলে আমার মন জয় করে নিয়েছিলো.... আমরা প্রতি সপ্তাহে এক দিন গল্প করার জন্য রাখতাম, সেদিন পড়াশোনা বাদ দিয়ে শোভাদের বিশাল এস্টেটের মত বাড়ি, বাগান, বন ঘুরে বেড়াতাম গল্প করতে করতে। ক্লান্ত হয়ে মাঝে মাঝে বসতাম ওদের ওয়াক-ওয়ের পাশে মার্বেল পাথরে বাধানো বেঞ্চের ওপর দু'জন। পাশাপাশি....

শোভার জীবনে প্রথম ভালোবাসা ছিলো ওর মা। শুনেছিলাম, ওর মা-ও নাকি নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। শোভা বারবার ওর বাবা আর মায়ের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে বলতো। খুব নাকি ভালোবাসাময় আর উথালপাথাল প্রেম ছিলো ওদের। "ছেলেমেয়েরা নাকি তাঁর বাবামায়ের স্বভাব পায়, আমি বোধহয় ভালোবাসার ক্ষমতাটুকু পেয়েছি ওদের কাছ থেকে। বিভূতিভূষণের একটা কথা আছে জানেন স্যার, তীব্র ভালোবাসা নাকি একদমই সহজলভ্য কোনো বস্তু নয়। গভীরভাবে ভালোবাসার জন্যও নাকি প্রতিভা থাকা লাগে..."- শোভা পবিত্র চোখ আর শিশুদের মত দৃষ্টি উজাড় করে করে শোনাতো !
সত্যি ওর সে প্রতিভা ছিলো। একটু বেশিমাত্রাতেই বলা যায়। টিনেজ বয়সে ও নাকি একজনকে ভালোবেসেছিলো সমস্ত মনপ্রাণ দিয়ে। তখন এম্নিতেই মানুষের আবেগ অনিয়ন্ত্রিত থাকে, তবে শোভা যে কেবল ঝোঁকের বশেই এমন একটা সম্পর্কে জড়িয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো, এ আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি না। ঝোঁকের বশে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে এতো বছর পর এসেও ঐ মানুষের কথা বলার সময় তাঁর গলার স্বর কেঁপে কেঁপে উঠতো না, চোখ ভিজতো না জলে। ভেজা চোখের শোভাকে আমার বড় অসহায় লাগতো দেখতে। মনে হতো- জবুথবু বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় এই শহরের বিষণ্ণ, নির্জন কোনো পথ বুঝি ও...

আমি বুঝতাম না কেনো একজন ছেলেকে শোভার মত অমন শান্ত, মায়ামায়া এক সঙ্গিনীকে ছেড়ে যেতে হবে ?! অবাকই হয়েছিলাম প্রথম প্রথম ঐ গল্প শুনে। তবে পরক্ষণেই মনে হলো- শোভার অনুভূতি হয়তো কৈশোরের ভেসে যাওয়া আবেগ না হতে পারে, কিন্তু তাঁর ভালোবাসার মানুষের বেলায় ব্যাপারটা হয়তো ভিন্ন। ঐ ছেলে হয়তো সাময়িক আবেগের বশেই শোভাকে ভালোবেসেছিলো। শত হলেও ১৪/১৫ বছরের একজন মানুষ ভালোবাসার বা বোঝেই কি?
আমি ঠিক জানি না, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হবার কারণেই শোভার মধ্যে নিষ্ঠুরতা জন্ম নিয়েছিলো কি না। তবে মেয়েটা ভীষণভাবে ভেঙ্গে পরলো। আগে থেকেই শান্তশিষ্ট চুপচাপ ধরণের মানুষ ছিলো সে, তখন কথাবার্তা বলা আরো কমিয়ে দিয়েছিলো নাকি ! শোভা বলতো- "ভাগ্য ভালো তখনই বাবা আপনাকে আমার টিচার হিসেবে নিয়োগ দিলেন। আমি কথা বলার একটা মানুষ পেয়েছিলাম তাই। সেটা না হলে বোধহয়... আমি জানি না স্যার, বোধহয়.... আত্মহত্যা করতাম।"

আগেই বলেছি, গল্প করতো শোভা আমার সাথে। ওর মায়ের গল্প। বাবার গল্প। মা নাকি প্রতি রাতে তাঁকে রূপকথা শুনিয়ে ঘুম পাড়াতো ছোটবেলায়। বাবা প্রতিদিন অফিস থেকে আসার পথে হাওয়াই মিঠাই কিনে আনতো, কেননা হাওয়াই মিঠাই খুব পছন্দ ছিলো মেয়েটার। তাঁর যখন সাত বছর বয়স তখন মায়ের ক্যান্সার ধরা পরলো। টাকাপয়সার অভাব ছিলো না শোভাদের, পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্যান্সার হাসপাতালেই ট্রিটমেন্ট হয়েছিলো, কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। মাত্র এক বছরের মাথায় শোভার মা মারা গেলেন। জীবনে প্রথমবারের মত একাকীত্বের দেখা পেতে শুরু করলো মেয়েটা...
সে একাকীত্ব দূর করতে যে মানুষটা নিজের অজান্তেই ভূমিকা রেখেছিলো, সে-ই ছিলো শোভার প্রেমিকা। জ্বি, আমি ভুল লিখি নি ! শোভা আর মুক্তারা পাশাপাশি বিল্ডিং এ থাকতো। মুক্তার মা খুব আদর করতেন শোভাকে, অল্পবয়সে এতিম হওয়ার শোক ভোলাতে চাইতেন নিজের মাতৃত্বকে প্রসারিত করার মাধ্যমে। মুক্তাও ওর মা'র মত হয়েছিলো। ছোট্ট বুকেই বন্ধুর জন্য এক সাগর ভালোবাসা জমা করলো। প্রাকৃতিক নিয়মেই শৈশবের সে ভালোবাসা কৈশোরে পৌঁছে যৌনতার ছায়া ধারণ করতে থাকে দ্রুত, ভালোবাসা পালটে গেলো প্রেমে... তখনই শোভার জীবনে ২য় ধাক্কাটা আসতে থাকে কুৎসিত মাকড়সার মতন। বিরল এক মেডিক্যাল কন্ডিশনে ছেলে থেকে মেয়েতে রূপান্তর ঘটতে থাকে শোভার। শোভন নামের যে ছেলেটা জন্ম নিয়েছিলো মার্চের ১৭ তারিখে, সে সতেরো বছর এক মাসের মাথায় সম্পূর্ণ ছেলে থেকে মেয়েতে পালটে গেলো ..... শোভন হয়ে উঠলো শোভা!

"ঐ ঘটনার পরই মুক্তা আমাকে ছেড়ে চলে যায়। বলে- এমন একজন মানুষকে তাঁর বাবা-মা কিংবা সমাজ কেউই মেনে নেবে না। আমি অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম । বললাম- আজকাল প্রযুক্তি কত উন্নত হয়েছে ! এসবের অনেক থেরাপি বেরিয়েছে এখন। অপারেশনের মাধ্যমে আমি আবার ছেলেতে পালটে যেতে পারবো, কিন্তু মুক্তা সে সাহস আমার জন্য দেখাতে পারে নি। অবশ্য আমি ওকেও যে পুরোপুরি দোষ দেই- ব্যাপারটা এমন না। ক'জনই বা এমন পরিস্থিতিতে দৃঢ়তা দেখাতে পারবে স্যার, বলেন? ভাগ্যটাকে এমন একজন মানুষের সাথে জড়িয়ে জটিল করে ফেলার থেকে বরং সরে যাওয়া ভালো, বিশেষত পুরো একটা জীবন যেখানে সামনে পরে আছে..."

এরপর থেকেই সেক্স আইডেন্টিটির ব্যাপারে শোভার একটা গভীর বিদ্বেষভাব চলে আসে। তাঁর ধারণা হলো- মানব-মানবীর মাঝে যে সম্পর্ক তৈরি হয়, সেখানে ভালোবাসাটা কেবল উপলক্ষ্য মাত্র, যৌনতাই আসল। সময়ের সাথে কুৎসিত বিকারে আচ্ছন্ন হলো ওর মন, নিজের ভেতরকার ঝড় ভয়ংকর এক দানবের রূপ ধরে বেরিয়ে এসেছিলো একসময়। ছেলেদেরকে প্রেমের আর মেয়েদের চাকরির লোভ দেখিয়ে টেনে নিয়ে আসতো ও তাদের রাজত্বের মত রিসোর্টে। সেখানেই মাত্র চার বছরের ব্যবধানে পাঁচ-পাঁচটা হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিলো শোভা। তারপর ভিক্টিমের যৌনাঙ্গ কেটে সংরক্ষণ করলো গোপনে। আমাকে হিসহিস করে বলেছিলো একদিন- "ওগুলো আমি কুকুরকে দিয়ে খাওয়াবো..."

আমি ঠিক নিশ্চিত না- শোভা কেন আমার কাছে এসব প্রকাশ করে দিলো। সম্ভবত ও আমাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতো। অবশ্য শোভার এক বড় নির্ভরতার জায়গা ছিলো ওর বাবার প্রতিপত্তি। আমি ঘটনা ফাঁস করে দিলেও শোভার কিছুই হতো না আসলে, টাকাওয়ালারা সব যুগে, সব স্থানেই নিরাপদ। তবে আমি এ সব শুনে ওদের বাসায় যাওয়াটা পুরোপুরি বন্ধ করে দিলাম। আমার জায়গাতে অন্য যে কেউ হলেও অবশ্য তা-ই করতো। তাছাড়া ততদিনে আমারও একটা স্কলারশিপের অফার চলে এসেছে। শুধু ফ্লাইটের দিন শোভাকে একটা ফোন দিলাম বিদায় নেয়ার জন্য। কেন যে দিয়েছিলাম ঠিক জানি না যদিও, মানুষের মন বড় জটিল ! ওর অচিন্ত্যনীয় নৃশংসতার কথা শুনে, নিজ চোখে ওর বিকারগ্রস্ততার নমুনা দেখার পর মেয়েটার ব্যাপারে ঘৃণা ছাড়া অন্য কোন অনুভূতি ছিলো না আমার, তারপরো দিলাম। শোভা ফোন রিসিভ করে নি যদিও.... একটু খুঁতখুঁত ভাব নিয়েই দেশ থেকে আমেরিকায় উড়াল দিয়েছিলাম সেদিন। কেমন একটা অনুভূতি যেনো হচ্ছিলো, দীর্ঘদিনের পুরনো বাতাস একটা ঘরে আটকে থাকলে যেমন হয়, ওরকম.... শুধু মনে হচ্ছিলো- শোভা মেয়েটাকে আদর দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা দরকার। ওর মানসিক বিকার সারিয়ে তোলার জন্য আসলে এমন একজনকে খুব প্রয়োজন, যে শোভাকে বুকে টেনে নেবে আকাশের উদারতায়...
 

Users who are viewing this thread

Back
Top