What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

।। *এক ব্যতিক্রমী দুর্গাপুজোর কথা*।। (1 Viewer)



সুইডেনের শেষ প্রান্তের একটি ছোট্ট শহর সীটন।ছোট্ট মানে একেবারেই ছোট।যাকে হ্যামলেট বলে সেই ধরণের।জনসংখ্যা মাত্র আটষট্টি।তার অধিকাংশই আবার বৃদ্ধ বৃদ্ধা।তাঁরা জনপদটিকে সন্তানের মত স্নেহ করেই যেন এখানে রয়ে গেছেন।এমনিতে তো বরফে সবকিছু জমে থাকে বছরের চার চারটি মাস।তবু ওই বাল্টিক সাগরের দক্ষিণ থেকে আসা উষ্ণ স্রোত যা একটু উত্তাপ দেয় ওই বৃদ্ধ মানুষকটির হৃদয়ের অভ্যন্তরে।

জনসংখ্যায় নগণ্য হলেও শুধু খ্রীষ্টান নয়, মুসলমান,ইহুদিরাও আছেন।আর আছেন একজন হিন্দু।তাঁরা সবাই সুইডিশ নাগরিক হলেও আপনাপন ধর্মাচারণে এই শহরের মানুষ কখনও কাউকে বাধা দেন নি।একে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন অপরকে।সবাই মিলে তৈরি করেছেন এক আদর্শ সমাজ।

এই সমাজের প্রাণভোমরা এক দম্পতি।আবেল রনবার্গ আর তাঁর স্ত্রী রীনা।আবেল জন্মসূত্রে ইহুদি আর রীনা ভারতীয়,এবং বাঙালি।ওঁরা দুজনেই জার্মানির হ্যামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন।ফিজিক্স আর ভারতীয় ইতিহাসের প্রেম আর পরিণয়ও সেখানেই।বেশীদিন জার্মানিতে ভালো না লাগায় তাঁরা স্টকহোম চলে আসেন।সেখান থেকে এই মুল্লুকে।দুজনেই সত্তরোর্ধ হলেও প্রাণস্পন্দনে ভরপুর।সব ধর্মের আনন্দ অনুষ্ঠানে তাঁরা সক্রিয় সহযোগিতা করেন।হ্যাঁ,ছোট্ট করে করেন একটা দুর্গাপুজোও।

রীণা চ্যাটার্জী হুগলির মেয়ে।ছোটবেলা থেকে তাঁদের শরিকি বাড়িতেই দুর্গাপুজো হত।তাই দুর্গাপুজোর সঙ্গে তাঁর আত্মিক টানটুকু রয়ে গেছে আজ অবধি।তারপর কলকাতা,দিল্লী,লন্ডন,হ্যামবুর্গ যেখানেই থেকেছেন,পুজোর সময়টুকু চিরকাল মায়ের পায়েই নিবেদন করেছেন।তাছাড়া তিনি সংস্কৃতে সুপন্ডিত ছিলেন বলে পুজোর মন্ত্রপাঠ ও পদ্ধতি নিয়েও ভাবতে হয় নি কোনদিন।

সীটন এর পুজো গতবছর অবধি বেশ সাড়ম্বরেই হত।তবে দুদিন।ওই অষ্টমী আর নবমী।রান্না হত পায়েস।দুর্গার পটচিত্র ছিল রীণার বাড়িতে।সেখানেই পুজো হত ফুল ফলাদি সহযোগে।রীণা মন্ত্র পড়ে সকলকে টীকা পরিয়ে শান্তির জল দিতেন।গঙ্গা তো নেই,তাই সমুদ্রের জলের সঙ্গে জর্ডনের হোলি ওয়াটার মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতেন সবার মাথায়।কারো শান্তির অভাব ছিল না।

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ যখন রীণাকে কেড়ে নিল তখন স্বামী আবেলের মতই পুরো সীটন শহরটাই সাময়িক স্বব্ধ হয়ে গিয়েছিল শোকে।সেটা জুলাই মাস।মাস্ কনডোলেন্স হয়েছিল স্থানীয় চার্চে।সেখানে তখন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।রীণার সবচেয়ে ভালোবাসার ছিল যে দুর্গাপুজো,তা চালিয়ে যেতে হবে।সীটনের সবাই মিলে তাঁকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানোর সেটাই হবে সবচেয়ে সেরা পদ্ধতি।রীণার আত্মা নিশ্চয়ই তাতে শান্তি পাবে।

অনলাইনে পুজোর তারিখ খুঁজে নিতে অসুবিধা হল না।ঠিক হল স্থানীয় চার্চের এনেক্সে একটা ঘর পুজোর জন্যে খুলে দেওয়া হবে।ফুল আর ফলের অভাব নেই।পায়েস রান্না দেখে দেখে শিখে নিয়েছেন অনেকেই।তবু চাল নয় ওটসের পায়েস হবে ঠিক হল।কারণ চাল সিদ্ধ করার অভিজ্ঞতা নেই কারোরই।

সমস্যা হল পুজোর মন্ত্রপাঠ নিয়ে।সংস্কৃত দূর অস্ত,ইংরেজি জানা নেই প্রায় কারও।সুতরাং অষ্টমীতে রীণার ইহুদী স্বামী আবেল আর নবমীতে এক প্রবীন পাঠান ইউসুফ আজমের ওপর দ্বায়িত্ব পড়ল মন্ত্র পড়ার।মুলতানে ইউসুফের বাড়ির পাশেই একটা শিবমন্দির ছিল।তিনি জানেন কি ভাবে মন্ত্র পড়তে হয়।তিনি সানন্দে রাজি হলেন।

পুজো হয়ে গেল।এবারের পুজো যেন একটু অন্যরকম!সে হোক!তবু বড়ই আন্তরিক।কান্ডারি নেই বটে।কিন্তু তাতে কি?পরিবার তো আছে!মানুষের পরিবার।আত্মীয়তার বাঁধন সেথায় নাই থাক,মানবিকতার দৃঢ় এক বন্ধন আছে!আর আছে পারষ্পরিক সম্মান, আবেগ,ভালোবাসা।মা দুর্গাও তো মানবী।মন্ত্রতন্ত্র নয়,সহজ সরল 'মা' ডাকে কি তিনি কাছে আসেন না?তবে তিনি কেমন মা?

বোধহয় সত্যি আসেন।মায়াবী চোখ দুখানি তুলে তাকান।আশীর্বাদ করেন।কোভিডে রীণা মারা যাওয়ার পর আর কেউ আক্রান্ত হননি সীটনে।বৃদ্ধ মানুষ ক'টির সহজ সরল জীবনযাত্রা আগের মতই শিথিল শ্লথ গতিতে আজও চলছে।রীণার বাড়ির বৈঠকখানায় পটের দুর্গা আগের মতই স্মিত হাসিমুখে বিরাজ করছেন।তাঁর পুজো সামনের বছরও হবে একথা তিনি জানেন।তিনি যে অন্তর্যামী!

(সংগৃহীত লেখা)
সুইডেনের শেষ প্রান্তের একটি ছোট্ট শহর সীটন।ছোট্ট মানে একেবারেই ছোট।যাকে হ্যামলেট বলে সেই ধরণের।জনসংখ্যা মাত্র আটষট্টি।তার অধিকাংশই আবার বৃদ্ধ বৃদ্ধা।তাঁরা জনপদটিকে সন্তানের মত স্নেহ করেই যেন এখানে রয়ে গেছেন।এমনিতে তো বরফে সবকিছু জমে থাকে বছরের চার চারটি মাস।তবু ওই বাল্টিক সাগরের দক্ষিণ থেকে আসা উষ্ণ স্রোত যা একটু উত্তাপ দেয় ওই বৃদ্ধ মানুষকটির হৃদয়ের অভ্যন্তরে।

জনসংখ্যায় নগণ্য হলেও শুধু খ্রীষ্টান নয়, মুসলমান,ইহুদিরাও আছেন।আর আছেন একজন হিন্দু।তাঁরা সবাই সুইডিশ নাগরিক হলেও আপনাপন ধর্মাচারণে এই শহরের মানুষ কখনও কাউকে বাধা দেন নি।একে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন অপরকে।সবাই মিলে তৈরি করেছেন এক আদর্শ সমাজ।

এই সমাজের প্রাণভোমরা এক দম্পতি।আবেল রনবার্গ আর তাঁর স্ত্রী রীনা।আবেল জন্মসূত্রে ইহুদি আর রীনা ভারতীয়,এবং বাঙালি।ওঁরা দুজনেই জার্মানির হ্যামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন।ফিজিক্স আর ভারতীয় ইতিহাসের প্রেম আর পরিণয়ও সেখানেই।বেশীদিন জার্মানিতে ভালো না লাগায় তাঁরা স্টকহোম চলে আসেন।সেখান থেকে এই মুল্লুকে।দুজনেই সত্তরোর্ধ হলেও প্রাণস্পন্দনে ভরপুর।সব ধর্মের আনন্দ অনুষ্ঠানে তাঁরা সক্রিয় সহযোগিতা করেন।হ্যাঁ,ছোট্ট করে করেন একটা দুর্গাপুজোও।

রীণা চ্যাটার্জী হুগলির মেয়ে।ছোটবেলা থেকে তাঁদের শরিকি বাড়িতেই দুর্গাপুজো হত।তাই দুর্গাপুজোর সঙ্গে তাঁর আত্মিক টানটুকু রয়ে গেছে আজ অবধি।তারপর কলকাতা,দিল্লী,লন্ডন,হ্যামবুর্গ যেখানেই থেকেছেন,পুজোর সময়টুকু চিরকাল মায়ের পায়েই নিবেদন করেছেন।তাছাড়া তিনি সংস্কৃতে সুপন্ডিত ছিলেন বলে পুজোর মন্ত্রপাঠ ও পদ্ধতি নিয়েও ভাবতে হয় নি কোনদিন।

সীটন এর পুজো গতবছর অবধি বেশ সাড়ম্বরেই হত।তবে দুদিন।ওই অষ্টমী আর নবমী।রান্না হত পায়েস।দুর্গার পটচিত্র ছিল রীণার বাড়িতে।সেখানেই পুজো হত ফুল ফলাদি সহযোগে।রীণা মন্ত্র পড়ে সকলকে টীকা পরিয়ে শান্তির জল দিতেন।গঙ্গা তো নেই,তাই সমুদ্রের জলের সঙ্গে জর্ডনের হোলি ওয়াটার মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতেন সবার মাথায়।কারো শান্তির অভাব ছিল না।

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ যখন রীণাকে কেড়ে নিল তখন স্বামী আবেলের মতই পুরো সীটন শহরটাই সাময়িক স্বব্ধ হয়ে গিয়েছিল শোকে।সেটা জুলাই মাস।মাস্ কনডোলেন্স হয়েছিল স্থানীয় চার্চে।সেখানে তখন একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।রীণার সবচেয়ে ভালোবাসার ছিল যে দুর্গাপুজো,তা চালিয়ে যেতে হবে।সীটনের সবাই মিলে তাঁকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানানোর সেটাই হবে সবচেয়ে সেরা পদ্ধতি।রীণার আত্মা নিশ্চয়ই তাতে শান্তি পাবে।

অনলাইনে পুজোর তারিখ খুঁজে নিতে অসুবিধা হল না।ঠিক হল স্থানীয় চার্চের এনেক্সে একটা ঘর পুজোর জন্যে খুলে দেওয়া হবে।ফুল আর ফলের অভাব নেই।পায়েস রান্না দেখে দেখে শিখে নিয়েছেন অনেকেই।তবু চাল নয় ওটসের পায়েস হবে ঠিক হল।কারণ চাল সিদ্ধ করার অভিজ্ঞতা নেই কারোরই।

সমস্যা হল পুজোর মন্ত্রপাঠ নিয়ে।সংস্কৃত দূর অস্ত,ইংরেজি জানা নেই প্রায় কারও।সুতরাং অষ্টমীতে রীণার ইহুদী স্বামী আবেল আর নবমীতে এক প্রবীন পাঠান ইউসুফ আজমের ওপর দ্বায়িত্ব পড়ল মন্ত্র পড়ার।মুলতানে ইউসুফের বাড়ির পাশেই একটা শিবমন্দির ছিল।তিনি জানেন কি ভাবে মন্ত্র পড়তে হয়।তিনি সানন্দে রাজি হলেন।

পুজো হয়ে গেল।এবারের পুজো যেন একটু অন্যরকম!সে হোক!তবু বড়ই আন্তরিক।কান্ডারি নেই বটে।কিন্তু তাতে কি?পরিবার তো আছে!মানুষের পরিবার।আত্মীয়তার বাঁধন সেথায় নাই থাক,মানবিকতার দৃঢ় এক বন্ধন আছে!আর আছে পারষ্পরিক সম্মান, আবেগ,ভালোবাসা।মা দুর্গাও তো মানবী।মন্ত্রতন্ত্র নয়,সহজ সরল 'মা' ডাকে কি তিনি কাছে আসেন না?তবে তিনি কেমন মা?

বোধহয় সত্যি আসেন।মায়াবী চোখ দুখানি তুলে তাকান।আশীর্বাদ করেন।কোভিডে রীণা মারা যাওয়ার পর আর কেউ আক্রান্ত হননি সীটনে।বৃদ্ধ মানুষ ক'টির সহজ সরল জীবনযাত্রা আগের মতই শিথিল শ্লথ গতিতে আজও চলছে।রীণার বাড়ির বৈঠকখানায় পটের দুর্গা আগের মতই স্মিত হাসিমুখে বিরাজ করছেন।তাঁর পুজো সামনের বছরও হবে একথা তিনি জানেন।তিনি যে অন্তর্যামী!

(সংগৃহীত লেখা)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top