What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made গল্পের নাম:- ধর্ষকের পিতা (1 Viewer)

Joined
Apr 9, 2022
Threads
100
Messages
100
Credits
7,417
গল্পের নাম:- ধর্ষকের পিতা

লেখক:- মোঃ আব্দুল্লা-হিল-মারুফ (তামিম)

..............




-) আমারে ছাইড়া দেন রতন ভাই, আপনের পায়ে পড়ি।

-) চুপ থাক আমেনা বেশি চিল্লাইলে কিন্তু গলা চাইপ্পা মাইরা ফেলামু।

-) রতন ভাই আমার এই সর্বনাশ কইরেন না আপনে যা কইবেন আমি তাই করমু কিন্তু আমারে ছাইড়া দেন। আমি কাউকে কিচ্ছু কমু না দরকার হয় আব্বারে লইয়া এই গ্রাম ছাইড়া দূরে চইলা যামু কিন্তু আমারে ছাইড়া দেন।

-) ছাড়ার জন্যে ত তোকে এই বাশবাগানে ধইরা আনি নাই আমেনা, আইজ তোরে আমি ভালো কইরা দেখমু এত ভালো কইরা দেখুম যে তুই নিজেও কোনোদিন এইভাবে দেখিস নাই নিজেরে। আমারে চড় মারা তাই না? আইজ তোর সব দেমাগ ছুটাইতাছি।




আমেনা'র কোনো কথায় তোয়াক্কা না করে রতন তার পৈশাচিক কর্মে মেতে উঠল।

....




রাত ২ টা বেজে গিয়েছে কিন্তু আফজাল হোসেন এর চোখে এখনও ঘুম নেই, বাড়ির বাইরে উঠানে চেয়ার পেতে বসে রয়েছেন তিনি।

ষাট বছর এর বেশি বয়সী আফজাল হোসেন একসময়ে ছিলেন এই গ্রামের একজন ভয়ংকর মানুষ যার ভয়ে গ্রামবাসীরা কাঁপতে থাকত।

মানুষের জায়গা জমি অবৈধভাবে দখল এবং অত্যাচার জুলুম করা ছিল তার দৈনন্দিন জীবনের অংশ।

কিন্তু কোনো এক কারণে তিনি আর সেই আগের আফজাল হোসেন নেই এখন মানুষ তাকে অন্য রূপে চেনে এবং সম্মান করে।

তিনি বর্তমানে মানুষের সেবায় সবসময় নিজেকে নিয়জিত রাখেন যার জন্য মানুষের চোখে তিনি একজন সম্মানের পাত্র।

..

উঠানে চেয়ারে বসে কখন যে চোখ লেগে যায় তিনি বুঝতে পারেন না হঠাত করে ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় তার।

চেয়ার ছেড়ে দ্রুত পায়ে ঘরে যান ফোন ধরার জন্য।

....

চেয়ারে বসে কাগজপত্র নিয়ে ঘাটাঘাটি করছেন থানায় কর্মরত এস,আই শফিকুল ইসলাম। কিছুক্ষন আগে গ্রামবাসীর সাহায্যে একজন ধর্ষককে তিনি গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন।




এখন সেই ধর্ষককে নিয়ে আসা হয়েছে থানাতে এবং তার বাড়ির লোকদেরকে খবর দেওয়া হয়েছে।

...

কিছুক্ষণ পর হন্তদন্ত হয়ে থানায় প্রবেশ করলেন আফজাল হোসেন। কিছুক্ষণ আগে তাকে থানা থেকে ফোন করে জানানো হয়েছে তার একমাত্র ছেলে রতন'কে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

"হ্যা ঠিক ধরেছেন রতন হল আফজাল হোসেন এর একমাত্র সন্তান। জন্মের সময় রতনের মা মারা যাওয়ার পর আফজাল হোসেন নিজেই তাকে এত বড় করেছেন।

রতন সবেমাত্র কলেজ পাশ করে এখন বসে আছে বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্তি হওয়ার জন্য।

বাজে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সেও বাজে কাজ করতে শুরু করে কিন্তু সেগুলো সব তার বাবার আড়ালে।

বাবার সামনে সে যতই ভালো ছেলে হয়ে থাকুক না কেন ভিতরে সে অনেক খারাপ একজন মানুষ।

যার জন্য আজ সে রমিজউদ্দিনের মেয়ে আমেনা'কে ধর্ষণ করেছে।

বেশকিছুদিন ধরে সে আমেনা'কে নানাভাবে বিরক্ত করে যাচ্ছিল।

কয়েকদিন আগে তার বিরক্তের সীমা পার হয়ে গিয়েছিল যার ফলে আমেনা তাকে জনসম্মুখ এ চড় দেয় এবং এরপর থেকেই সে ভাবতে থাকে কীভাবে আমেনা'র ক্ষতি করা যায়।

অবশেষে আজ সেই সুযোগ পেয়ে যায় সে,আমেনা বান্ধবীর বাড়ি থেকে একা নিজের বাড়িতে ফিরছিল অনেক রাত করে আর তখনই তাকে অপহরণ করে রতন এবং নিয়ে যায় গ্রামের শেষ প্রান্তে বাশ বাগানের ভিতর যেখানে রাত্রে মানুষ চলাচল করে না বেশি একটা।

সেখানেই রতন তার সব রাগ মিটিয়ে নেয় কিন্তু গ্রামের একজন পাহারাদার তাদেরকে দেখতে পেয়ে তখনই অন্যান্য গ্রামবাসীদের সাহায্যে ধরে ফেলে এবং পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।"

..

আফজাল হোসেন'কে থানায় প্রবেশ করতে দেখে সকল পুলিশ দাঁড়িয়ে যায় কারণ তাকে সবাই শ্রদ্ধাভক্তি করে।




এস,আই শফিকুল উঠে এসে আফজাল হোসেন'কে নিয়ে চেয়ারে বসালেন এবং বললেন-




শফিকুল:- আপনাকে যে জন্য ডাকা হয়েছে আফজাল সাহেব।

আফজাল:- হ্যা বলুন,আমার ছেলে কী করেছে?

শফিকুল:- আসলে কীভাবে যে বলব কথাটি,আপনি অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় একজন মানুষ কিন্তু আপনার ছেলে যে কাজটি করেছে সেটি খুবই জঘন্যতম এবং লজ্জাজনক।

আফজাল:- দেখুন দারোগা সাহেব আপনি কিন্তু আমাকে শুধু শুধু চিন্তায় ফেলছেন। এমন না করে সঠিক কী হয়েছে সেটি বলুন।

শফিকুল:- আচ্ছা নিজেকে শক্ত করুন উত্তেজিত হবেন না।

আফজাল:- আমি ঠিক আছি আপনি বলুন এবার।

শফিকুল:- আসলে আপনার ছেলে রতন এই গ্রামের রমিজউদ্দিনের মেয়ে আমেনা'কে ধর্ষণ করেছে।

আফজাল:- কী বলছেন এসব? (রাগী কণ্ঠে)

শফিকুল:- প্লিজ আপনি শান্ত হয়ে বসুন একটু বোঝার চেষ্টা করুন।

আফজাল:- আমার ছেলে এসব কিছু করতে পারে না তাকে আমি খুব ভালো করেই চিনি। আমি এসব বিশ্বাস করি না।

শফিকুল:- দেখুন বিশ্বাস অবিশ্বাস আপনার কাছে। কিন্তু এটিই সত্যি যে আপনার ছেলে একজন ধর্ষক চাইলে ছেলের কাছ থেকে জেনে নিন সত্যিটা।




এই কথা বলার পর শফিকুল সাহেব একজনকে ডেকে এনে রতন'কে তার কাছে নিয়ে আসার জন্য বললেন।

..

কিছুক্ষণ পর রতন'কে নিয়ে আসা হল আফজাল হোসেন এর কাছে।

বাবাকে থানায় দেখে রতন ভয়ে এবং লজ্জায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে চুপ করে,সে বুঝে ফেলেছে যে এতক্ষণে তার কুকর্মের কথা বাবা জেনে গিয়েছে। ছোটবেলা থেকেই সে জেনে এসেছে বাবার রাগ এর বিষয়ে কিন্তু কখনও তাকে সেই রাগ ছুতে পারে নাই। তবে আজ তার বাবার দিকে তাকাতে ভয় করছে বিশেষ করে বাবার চোখের দিকে একবার তাকিয়ে বুঝতে পেরেছে তার বাবা কতটা রেগে আছেন।

...

আফজাল হোসেন চোখ তুলে তাকিয়ে তার ছেলেকে ভালো করে দেখে নিলেন। রতনের শরীরে এখনও কাদামাটি লেগে আছে এবং চেহারায় অপরাধীর ছাপ রয়েছে যা দেখে তার বুঝতে বাকী রইল না যে তার ছেলে সত্যিই এই জঘন্যতম অপরাধ করেছে।

....

চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালেন আফজাল হোসেন এবং রতনের দিকে এগিয়ে যান।

বাবাকে এভাবে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয়ে রতনের প্রাণপাখি যায় যায় অবস্থা।

থানার সবাইও খুব চিন্তায় পড়ে যায় কারণ আফজাল হোসেন এর রাগ সম্পর্কে সবারই কম বেশি ধারণা রয়েছে।

...

আফজাল হোসেন তার ছেলের কাছে গিয়ে দাঁড়ান এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে রতনের শরীরে লেগে থাকা মাটি ঝেড়ে ফেলে দেন এরপর এস,আই শফিকুল ইসলাম'কে উদ্দেশ্য করে বললেন-

আফজাল:- দারোগা সাহেব আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য কী কী করতে হবে?

শফিকুল:- কী বলছেন এসব? আপনার ছেলে একজন ধর্ষক তাকে কীভাবে ছেড়ে দিব? সে একটি মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে আর আপনি বলছেন তাকে ছেড়ে দিতে এ কাজ আমি করতে পারব না।

আফজাল:- রমিজউদ্দিন কী আমার ছেলের নামে কোনো মামলা করেছে থানায়?

শফিকুল:- নাহ তারা কোনো মামলা করে নাই।

আফজাল:- তাহলে তাকে কোন ভিত্তিতে ধরে এনেছেন?

শফিকুল:- গ্রামবাসীরা তাকে ধরেছে হাতে নাতে তাই তাকে থানায় নিয়ে এসেছি।

আফজাল:- আপনারা আমার ছেলেকে ছেড়ে দিন আর গ্রামবাসীকে আমি সামলে নিব দরকার হয় তাকে অনেক দূরে পাঠিয়ে দিব। রমিজউদ্দিনের মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে দিব কিন্তু আমার ছেলেকে ছেড়ে দেন।

শফিকুল:- এ কীভাবে সম্ভব বলুন আইন বলে ত একটা ব্যাপার আছে।

আফজাল:- কত টাকা লাগবে আপনার যা লাগে তাই দিব এই কথা শুধু আমরাই জানব আর কেউ নয়।

শফিকুল:- আচ্ছা আমি ব্যবস্থা করছি।




অবশেষে আফজাল হোসেন তার ছেলে রতন'কে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বের হয়ে আসেন।

...

থানা থেকে বের হতে হতে প্রায় সকাল হয়ে যায়।

থানা থেকে বের হয়ে আফজাল হোসেন তার ছেলের সাথে একটি কথাও বলেন নি চুপচাপ বাইক চালিয়ে যাচ্ছেন।

সকালের আলো ফুটতেই গ্রামের অনেক লোকজন রাস্তায় বেরিয়েছে এবং সবাই তাকিয়ে রয়েছে তাদের দিকে কারণ ইতিমধ্যে গ্রামে জানাজানি হয়ে গিয়েছে গতরাতের বিষয়টা।

....

বাবাকে এভাবে চুপ করে থাকতে দেখে রতনও কিছু বলছে না। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর বুঝতে পেরেছে তারা বাড়ি যাচ্ছে না কারণ এই পথ তাদের বাড়ির নয়।

তাই আর চুপ করে থাকতে পারল না রতন অবশেষে জিজ্ঞাসা করেই বসল তার বাবাকে-

রতন:- আব্বা আমরা কই যাচ্ছি?

আফজাল:- গেলেই দেখতে পারবি।(ভারী কন্ঠে)




বাবার এমন কন্ঠ শুনে রতন আর কিছু বলল না চুপ করে বসে রইল।

....

কিছুক্ষণ পর তারা একটি বাড়ির সামনে এসে থামে। বাড়িটি দেখে রতন চিনতে পারে এবং তার বাবার দিকে তাকায়।

আফজাল হোসেন সোজা বাড়ির ভিতর ঢুকে ডাকতে শুরু করে "রমিজ মিঞা বাড়ি আছো নাকি?"




কিছুক্ষণ পর একজন বৃদ্ধমতো লোক বাইরে বেরিয়ে আসেন এবং তার বাড়ির উঠানে আফজাল হোসেন আর তার ছেলেকে দেখে ভয় পেয়ে যায়।




আফজাল হোসেন সেই বৃদ্ধকে উদ্দেশ্য করে বললেন-

আফজাল:- তোমার মেয়ে কই রমিজ মিঞা?

রমিজ:- মালিক আমাদের ক্ষমা কইরা দেন আমরা এই গ্রাম ছাইড়া চইলা যামু, আমরা আপনার পোলার নামে কোনো মামলা করি নাই, গত রাইতে গ্রামের লোকেরাই তাকে থানায় নিছিল। এবারের মতো আমার মাইয়ারে ছাইড়া দেন জীবনেও আর এইখানে আমু না।

আফজাল:- কী বোকা বোকা কথা বল তুমি? তোমরা কোথায় যাইবা এইডাই তোমাগের বাড়ি ঘর। তুমি খালি তোমার মাইয়া আমেনারে ডাইক্কা আনো আমি একটু কথা কইয়া চইলা যাইব।




আফজালের কথামতো আমেনা'কে ঘর থেকে রমিজউদ্দিন আস্তে আস্তে ধরে নিয়ে বাইরে এলেন।




আমেনার চেহারা দেখে আফজালের চোখে পানি চলে এসেছে সে ভাবতেও পারে নাই তার ছেলে এত বড় জঘন্য কাজ করতে পারবে।

....

আফজাল হোসেন আর রতন'কে দেখতে পেয়ে আমেনা ভয়ে তার বাবাকে চেপে ধরে।




আফজাল হোসেন এগিয়ে যান আমেনার কাছে এবং তার সামনে হাটু গেড়ে বসে পা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাদতে থাকেন আর বলেন-

"আমারে তুই ক্ষমা কইরা দে মা আইজ আমার পোলার লাগি তোর এতবড় সর্বনাশ হইল। জীবনে অনেক পাপ করছি কিন্তু কোনোদিন কোনো মাইয়া মাইনষের দিকে হাত বাড়াই নাই আর আইজকা আমার পোলাই তোর এত বড় ক্ষতি করল। এটা মনে হয় আমার পাপের ফল ছিল। কিন্তু আমি কথা দিতাছি মা তোর সব কিছুর দায়িত্ব আমি নিমু তোরে পড়াশোনা করাইমু তোর ভবিষ্যৎ গইড়া দিমু। তুই খালি আমার পোলাডারে মাফ কইরা দে নাইলে ওয় যে মইরাও শান্তি পাইব না। "

আফজাল হোসেন'কে এভাবে কাঁদতে দেখে রমিজউদ্দিন তাকে টেনে তুললেন এবং শান্ত করলেন। এই সব দৃশ্য রতন স্বচক্ষে দেখেও কিছু বলার সাহস পেল না তাই চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।

সে বুঝতে পেরেছে আজ তার এই কাজের জন্য কতটা নিচে নামতে হয়েছে তার বাবাকে।

...

মান অভিমানের পালা শেষ করে রতন'কে নিয়ে আফজাল হোসেন তার বাড়িতে ফিরে যায়।

.....




আজকে রাত্রে হঠাত করে বৃষ্টি শুরু হয়েছে বেশকিছুদিন ধরে বৃষ্টির কোনো নাম গন্ধ ছিল না কিন্তু আজ অনেক বৃষ্টি হচ্ছে আসলে এসব কিছু সৃষ্টিকর্তার খেলা। থানায় বসে বসে জানালা থেকে বাইরে বৃষ্টি দেখছেন এস,আই শফিকুল ইসলাম, আজকেও তার রাত্রে ডিউটি পড়েছে থানাতে।

রাত্রে কাজ করতে তার খুব ভালো লাগে কারণ এই রাত্রে কোনো ঝামেলা থাকে না চুপচাপ আরাম করে বসে থাকা যায় তাই সে চেষ্টা করে রাত্রে ডিউটি করার জন্য।

বসে বসে আরাম করে বৃষ্টি দেখছেন তখনই একজন কনস্টেবল এসে তাকে ইমার্জেন্সি ডেকে বাইরে নিয়ে যান।

এক রাশ বিরক্তি নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখেন তার সামনে আফজাল হোসেন দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

....

আজকের আফজাল হোসেন'কে দেখতে অন্য রকম লাগছে, সারা শরীর ভিজে পানি টপ টপ করে পড়ছে এবং তার চোখ দুটি বেশ লাল হয়ে আছে মনে হয় সেখানে আগুন জ্বলছে।

...

আফজাল হোসেন এস,আই শফিকুল ইসলামকে দেখে তার কাছে এগিয়ে যান এবং জামার তল থেকে কাপড়ে মোড়ানো একটি পুটলি বের করে সামনের দিকে এগিয়ে ধরেন।




শফিকুল ইসলাম তাকিয়ে অবাক হয়ে যান। তিনি দেখেন আফজাল হোসেন এর হাতে ধরে রাখা কাপড়ে মোড়ানো পুটলিটি রক্তেমাখা।

....

সবাইকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আফজাল হোসেন নিজেই পুটলিটিকে খুলতে শুরু করলেন।

কিছুক্ষনের মধ্যে তিনি পুটলিটি সম্পূর্ণ খুলে ফেললেন।

...

পুটলিটি খুলে ফেলার পর এর ভিতরে যা ছিল সেটি দেখে সবার পরাণ চমকে উঠে।

কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই আফজাল হোসেন এর, তিনি ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন পুটলিটিকে মেলে ধরে।

....

তার হাতে ধরে রাখা পুটলিটির ভিতর রয়েছে একজন পুরুষের পুরুষাঙ্গ যা রক্তে মাখামাখি অবস্থায়।

সবাইকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তিনি নিজেই বললেন " এই অঙ্গের জন্য কত মেয়ের জীবন নষ্ট হইয়া যায় তাই দিছি এইডারে কাইট্টা শুধু তাই না ধর্ষকটারেও মাইরা ফেলাইছি।"




কথাটি শেষ করে তিনি মাটিতে বসে কাঁদতে শুরু করলেন। তখন তাকে কয়েকজন পুলিশ এসে ধরে চেয়ারে বসালেন এবং এস,আই শফিকুল ইসলাম তার কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলেন-

শফিকুল:- আপনি এগুলো কী করেছেন,আপনার ছেলে কোথায়?

আফজাল:- বললাম না ধর্ষকটারে মাইরা ফেলাইছি।

শফিকুল:- কী বলছেন এসব? নিজের ছেলেকে কেন মারলেন?

আফজাল:- কোনো ধর্ষক আমার সন্তান হতে পারে না দারোগা সাহেব।




কথাটি বলে আফজাল হোসেন আবার কাঁদতে শুরু করেন। কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায়ে তিনি স্থির হয়ে বলতে শুরু করলেন-

"জানেন দারোগা সাহেব জীবনে অনেক পাপ কামাইছি মাইনষের জমি দখল করা অত্যাচার-জুলুম কত কিছু যে করছি কিন্তু বিশ্বাস করেন কোনোদিন কোনো মাইয়ার ইজ্জতের দিকে হাত বাড়াই নাই। মাইয়ারা হইল মায়ের জাত সেই জাতের অসম্মান আমি কোনোদিন করি নাই কারণ আমিও মায়ের সন্তান।

আমারে গ্রামের সবাই আফজাল গুন্ডো কইয়া ডাকত কিন্তু এতকিছুর পরেও একজনের চোখে আমি খুব ভালো ছিলাম আর সে হইল কুলসুম, আমাগের গ্রামের পাশের গ্রামে বাড়ি ছিল। মা মরা মাইয়া ঘরে ছিল সৎ মা যার অত্যাচার এ সবসময় জর্জরিত হইত।

আমারে শুধু কইত যদি তারে বিয়া না করি তাইলে সে বিষ খাইয়া মইরা যাইব। তাই আর উপায় না পাইয়া তারে বিয়া কইরা নিলাম।

বিয়া করার পর দুইজনে খুব ভালোভাবে সংসার করতেছিলাম, আমাদের দুইজনের ভিতরে ভালোবাসার অভাব ছিল না।

তার ভালোবাসায় আমি আস্তে আস্তে সব খারাপ কাম কাজ ছাইড়া দিতে শুরু করি আর যাদের জমি দখল করছিলাম তাদের সবকিছু ফিরায় দিয়া সবাইর কাছ থেইকা ক্ষমা চাইয়া নেই।

এরপর থেকে এই পর্যন্ত সবাই আমাকে খুব সম্মান করে ভালোবাসে।

..

কিছুদিন পর খবর পাইলাম কুলসুম মা হইব এই খবরে আমার থেকে খুশি আর কেউ হইছিল না। সারা গ্রামের মানুষদের বাড়ি ডাইক্কা নিজ হাতে রাইন্ডা খাওয়ায়ছিলাম।




কয়েকদিন পর কুলসুমের ব্যাথা শুরু হয় সে এক মরণ ব্যাথা। আমি দৌড়ায় যাইয়া দাইমা রে খবর দেই সে আইসে কুলসুমরে দেইখা কয় এহনই তার বাচ্চা হইব তাই সবকিছু ব্যবস্থা করতে হইব। আমিও তার কথামতো সব ব্যবস্থা কইরা দিলাম এবং সে তার কাম শুরু কইরা দিল।




মেলাক্ষন পর ঘর থেইকা দাইমা বাইর হইয়া আইলো কোলে একখান ফুটফুইট্টা বাচ্চা লইয়া। আমার হাতে দিয়া কয় এইডাই আমার পোলা।




পোলারে কোলে লইয়া মনে হইল আমি এই দুনিয়ার সুখী মানুষ।

কিন্তু কুলসুমের কথা জিগানোর পর জানতে পারি ওয় আর নাই আমাগের ছাইড়া চইল্লা গেছে অনেক দূরে।




অনেক ভাইঙ্গা পড়ছিলাম কুলসুমরে হারানোর পর কিন্তু পোলার মুখের দিকে তাকাইয়া সব কষ্ট চাইপ্পা রাইখা তারে বড় করার জন্য চেষ্টা চালাইয়া যাই।




সবাই কইতাছিল ফিরে বিয়া কইরতে কিন্তু বিয়া কইরলে আমি বউ পামু কিন্তু আমার পোলাডা মা পাইব না তাই আর বিয়া করি নাই একা একা জীবন পার কইরা দিছি পোলারে নিয়া।

কখনও তার কোনোকিছুর অভাব রাখি নাই যা চাইছে তাই দিছি।

কিন্তু আমি আইজ ব্যর্থ, পোলারে ঠিক শিক্ষাডা দিতা পারলাম না। এইডাই আমার পাপের শাস্তি দারোগা সাহেব। "




আর কোনো কথা তিনি বলতে পারলেন না কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।




তাকে আবার শান্ত করে শফিকুল ইসলাম জিজ্ঞাসা করলেন-

শফিকুল:- তাই বলে এভাবে নিজের ছেলেকে মেরে ফেলবেন? দেশে আইন কানুন বলে কিছু একটা আছে তাই না?

আফজাল:- দারোগা সাহেব যহন কেউ আপনেরে কইবে ঐ দেখ ধর্ষকের বাপ যাইতাছে তখন কেমন লাগবে? আর আইন এর কথা কইতাছেন হা হা আপ্নাগের যে আইন তা আমার জানা আছে কয়ডা টাকার লাগি আমার পোলারে ছাইড়া দিছেন। ধরেন তারে আমি ছাড়াইতে আসি নাই তারপরও আপ্নের আইন কইব আমার পোলায় প্রাপ্তবয়স্ক না ছোট মানুষ ভূল কইরা ফেলাইছে কয়বছর জেল দিয়া ছাইড়া দিব কিন্তু একখান কথা কইবেন আমারে দারোগা সাহেব?

শফিকুল:- কী বলুন?

আফজাল:- ধরেন আমার পোলা ছোটমানুষ ভূল করছে কিন্তু যেই মাইয়ার ক্ষতি হইল সে ত কোনো ভূল করে নাই আর আমার পোলার ছোটমানুষির লাইগা সাজা কম হইব কিন্তু ঐ মাইয়ার ত সারাজীবন এই ক্ষতি লইয়া বাইচতে হইব?

আমাদের সমাজে অপরাধীর বয়সসীমা অনুযায়ী সাজা হয় কিন্তু যার উপরে অন্যায় হয় তাকে ত সারাজীবন সেই কষ্ট সহ্য করে যেতে হয় আমরাত বলি না এর বয়স এত এই বয়স অনুযায়ী তার সাথে যে অন্যায় হয়েছে সেগুলো আমরা এতদিন মনে রাখব কিন্তু না আমরা যত পারি তাকে অপমান অপদস্থ করে থাকি। আর একটা কথা দারোগা সাহেব শয়তান এর কোনো বয়স হয় না শয়তান চাইলে বুড়োগের দিয়াও খারাপ কাজ করাইতে পারে আবার ছোটমানুষগের দিয়াও কাজ করাইতে পারে। বয়স দিয়া কোনো বিচার হয় না, অন্যায় সবই সমান।




শফিকুল:- হ্যা আমি বুঝতে পেরেছি কিন্তু সব সময়ত পুরুষের জন্য নারীরা ধর্ষণ হয় না অনেক ক্ষেত্রে তাদের পোশাক চলাফেরা এসবের উপরেও নির্ভর করে। তাছাড়া মেয়েটা এত রাত্রে বাইরে যাবে কেন?




আফজাল:- আপ্নের কাম থাইকলে আপনি বাইর হন না রাইতেরবেলায় তাইলে একটা মাইয়া কেন পারবে না? আর কি কইলেন পোশাক আর চলাফেরার লাগি মাইয়ারা ধর্ষণ হয়, তাইলে একজন পর্দানশীন মাইয়া কেন ধর্ষিত হয় তার ত কোনো অঙ্গই দেখা যায় না সবকিছু ঢাকা থাকে তারপরও তাকে ধর্ষণের শিকার হইতে হয়। একটা মাইয়া ধর্ষিত তার পোশাকের জন্য হয় না, ধর্ষিত হয় এই আমাদের মত পুরুষদের মানসিকতার জন্য। আচ্ছা একটা বিষয় লক্ষ্য করছেন বাজারে আমরা কত খাবার খোলাভাবে দেখতে পাই কিন্তু আমরা কখনও যেয়ে হাত বাড়িয়ে সেগুলোকে ধরি না অনুমতি ছাড়া। অথচ একজন মেয়ে হেটে গেলেই আমাদের লোভ বেড়ে যায় তাহলে এর জন্য কী আমাদের মানসিকতা দায়ী না? আপনার মন যদি সাড়া না দেয় তাহলে আপনাকে কেউ জোর করেও কিছু খাওয়াইতে পারবে না এইডা মাথায় রাইখেন। আমি যদি নিজেকে ঠিক রাখতে পারি তাইলে কেউ আমাকে ভূল কিছু করাইতে পারবে না।




শফিকুল:- হ্যা আপনার কথা ঠিক আছে কিন্তু নিজের ছেলেকে হত্যা করে এখন যে খুনি হয়ে গেলেন।

আফজাল:- একজন ধর্ষকের বাপ হওনের থেইকা খুনি হইয়া মইরা যাওয়াডাও ভালা। সকালে আমি পোলারে যহন ছাড়াইয়া লইয়া গেছি তহন লোকে আমারে ছিঃ ছিঃ করছেল কিন্তু কেউ জানত না যে আমি কি করণের লাগি পোলারে টাকা দিয়া ছাড়ায় লইয়া গেছি। পোলারে মাইরা নিজের পাপ কিছুডা হইলেও শোধ করলাম এখন আর কোনো চিন্তা নাই। দারোগা সাহেব আপ্নে আমারে জেলে নিয়া যাইতা পারেন আমি কিছুই করমু না। সকালে টাকা দিয়া পোলারে ছাড়াইয়া লইয়া গেছিলাম আর এহন টাকা দিতাছি সব টিভি পত্রিকাদের খবর দেন সবাইকে জানাইয়া দেন একজন ধর্ষকের তার পরিবারের কাছেও জায়গা হয় না। সবাই আমারে দেইখা শিক্ষা নিক। আর এইডাও কইবেন যে থানার কর্মরত দারোগা শফিকুল ইসলামও ধর্ষককে সাহায্যের লাগি আফজাল হোসেন এর হাতে খুন হইছে।




শফিকুল:- কী বলছেন এসব আমাকে খুন করবেন মানে?




আফজাল:- তোরে কেন খুন করুম না তুই যদি ভালা পুলিশ হইতি তাইলে টাকার লোভে মোর পোলারে ছাইড়া দিতি না বাইন**। তুই সৎ হইলে আমারেও আটকাইয়া রাখতি পোলার লগে কিন্তু তুই টাকা দেইখাই বিক্রি হইয়া গেছোস তাই তোর মত পুলিশের লাগি আইজ কত ধর্ষক রাস্তায় ঘুইরা বেড়াইতাছা আর ধর্ষিতারা আত্মহত্যা করতাছে। তোর বাচার কোনো অধিকার নেই জানোয়ার।




কথা শেষ করে চোখের পলকেই আফজাল হোসেন তার কোমরে লুকিয়ে রাখা ধারালো ছুরিটি বের করে টেনে দিলেন এস,আই শফিকুলের গলার নিচে শিরা বরাবর যার ফলে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে এবং মুহুর্তের মধ্যে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।




কয়েক মুহুর্তের ভিতর এমন একটা ঘটনা ঘটবে কেউ বুঝতেও পারে নাই কিন্তু থানার সবাই আফজাল হোসেন এর এই ভয়ংকর রূপ দেখে সাহস করে তার কাছে এগিয়ে যাচ্ছে না।

...

রক্তমাখা ছুড়িটি নিজের জামায় মুছে নিয়ে সামনে রাখা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে সবার দিকে তাকিয়ে বললেন "গুণ্ডামি ছাড়ছিলাম বহুত আগে কিন্তু সেই রস এখনও শুকায় নাই। বয়স বাড়ছে কিন্তু শরীরে সেই জোর এহনও আছে চাইলে সবাইরে মাইরা চইলা যাইতে পারি কিন্তু যামু না। গ্রামের সবাইরে খবরডা জানাইয়া দাও।"




...

পরদিন সকালে থানার সামনে অনেক জনতার ভীড়। সবাই গতকাল রাতের ঘটনা জানতে পেরে এখানে এসেছে একটিবারের জন্য আফজাল হোসেন'কে দেখার জন্য। গ্রামবাসী তাকে নানারকম অপবাদ দিয়েছিল কিন্তু তিনি সবাইকে ভূল প্রমাণ করে দিলেন। তার এই কাজের জন্য এখন গ্রামের মানুষের কাছে আরও প্রিয় হয়ে গিয়েছেন। আর হবেন নাই বা কেন তিনি নিজের সন্তানকে হত্যা করেছেন ধর্ষণের অপরাধে।

তিনি এমন একজন বাবা যিনি নিজের সন্তানের অপরাধকেও প্রশ্রয় দেন নাই।

...

পুলিশের গাড়িতে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিচারের উদ্দেশ্যে। তবে তার মনে কোনো আক্ষেপ নেই কারণ তিনি একজন ধর্ষককে সাজা দিয়েছেন নিজ হাতে। অন্ততপক্ষে কেউ তাকে ধর্ষকের পিতা বলে ডাকবে না।

এসব কিছু ভাবতে ভাবতে তিনি চোখ বন্ধ করে গাড়ির দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে দিলেন।




গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে তার গন্তব্যস্থানে হয়ত সেখানেই কাটতে পারে আফজাল হোসেন এর বাকীটা জীবন।

....




সমাপ্ত...




(ভূলত্রুটি ক্ষমা করবেন। গল্পটি কেমন হল অবশ্যই জানাবেন। মূল্যবান সময় ব্যয় করে গল্পটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকবেন এবং সুস্থ্য থাকবেন।)




Copyright:- November 13, 2020 at 05:15 PM

Maruf Tamim (Author).
 

Users who are viewing this thread

Back
Top