What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

RecG8zK.jpg


কোনো দুর্ঘটনাই বলে–কয়ে আসে না। মুহূর্তের মধ্যে জীবনকে তছনছ করে দিয়ে রেখে যায় শুধু কিছু দীর্ঘশ্বাস। তেমনই একটি ভয়ংকর দুর্ঘটনা হলো বার্ন বা পুড়ে যাওয়া। চলুন আজ জেনে নিই বার্নের কথকতা, কেন এসব দুর্ঘটনা ঘটে, কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যেতে পারে, আর যদি ঘটে যায়ই, তবে কী করব এবং কী করব না, কোথায় নিয়ে যাব, কখন নিয়ে যাব ইত্যাদি।

বার্ন কীভাবে হয়?

পোড়া বলতে সাধারণ অর্থে আমরা ধরে নিই, এটা বুঝি শুধু আগুন দিয়ে হয়। যদিও আগুন পুড়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ, তবে এ ছাড়া এই পোড়া হতে পারে গরম পানি বা তরল, রাসায়নিক, বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা, কোনো গরম বস্তুর সংস্পর্শ, ছাই, এমনকি বরফ থেকেও। কারণের সঙ্গে সঙ্গে বার্নের ব্যাপ্তি, গভীরতা, ভয়াবহতা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে।

বার্ন থেকে বাঁচার উপায়

  • ১. আগুনে পোড়া বা ফ্লেম বার্ন
    * বাসাবাড়ির রান্নাঘরের গ্যাসের লাইন নিরাপদ কি না, নিশ্চিত করতে হবে। কোনো গ্যাস লিকেজ ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড। রান্নাঘরের একটি জানালা বা ভেন্টিলেটর সব সময় খোলা রাখতে হবে। নিয়মিত গ্যাসলাইনের জোড়গুলো সাবান–পানির বুদ্‌বুদ দিয়ে পরীক্ষা করে নিতে হবে যে কোনো গ্যাস বের হচ্ছে কি না।
    * গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই তা মানসম্পন্ন হতে হবে। আর নিয়মিত চেক করিয়ে নিতে হবে।

LtgacId.jpg


* রান্নার সময় কাপড় খুব সাবধানে আগুন থেকে দূরে রাখতে হবে। দাহ্য পদার্থ, আগুন ও বিদ্যুতের উৎস থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখতে হবে। দেশলাই বা লাইটার শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
* কোনো সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয় রীতিতে আগুনের প্রদীপ জ্বালালে সেটা খুবই সাবধানে এবং প্রতীকী হিসেবে জ্বালাতে হবে।
* ধূমপান বর্জন করাই শ্রেয় , তবে যদি করেই থাকেন, তবে অবশিষ্ট অংশটির আগুন দায়িত্ব নিয়ে নেভাবেন।
* বাথরুমে কোনোভাবেই ধূমপান করা যাবে না।

  • ২. স্ক্যাল্ড বা তরলে পোড়া
    * গরম চা-কফি, রান্না করা পাত্র কখনোই বাচ্চাদের নাগালে রাখা যাবে না। চা বা কফি বাচ্চাদের থেকে দূরে গিয়ে পান করতে হবে।
    * বাসায় গরম পানি রান্নাঘর থেকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তা বালতিতে করে নিতে হবে এবং তা কখনোই বালতির উচ্চতার এক-তৃতীয়াংশের বেশি হবে না। বালতিতে পানি নিয়ে যাওয়ার আগে বেশ উঁচু আওয়াজেই বাসার সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে এবং শিশুদের সেই পথ থেকে সরিয়ে নিতে হবে।
    * গরম পানি দিয়ে গোসলের ক্ষেত্রে তা গায়ে ঢালার আগে অল্প একটু মগে নিয়ে তাপটা পরখ করে নিন।
    * রান্নার সময় তেলের ছিটা প্রতিরোধের জন্য কড়াইয়ে সাবধানে খাবার দিতে হবে এবং হাতমোজা ও গাউন ব্যবহার করলে ভালো।

1bbmek4.jpg


  • ৩. বৈদ্যুতিক পোড়া বা ইলেকট্রিক বার্ন
    * বৈদ্যুতিক লাইন এবং খুঁটিতে যাঁরা কাজ করবেন, তাঁরা অবশ্যই হাতে মোটা রাবারের গ্লাভস, পায়ে সেফটি শু এবং মাথায় হেলমেট ব্যবহার করবেন।
    * বাচ্চারা কোনোভাবেই ছাদে বা বারান্দার বাইরের মোটা বৈদ্যুতিক তার যেন হাতে রড বা ধাতব কিছু দিয়ে¯স্পর্শ না করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ধরনের তার মানুষের নাগালে থাকলে তা অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিভাগকে লিখিত অভিযোগ করে জানাতে হবে।
    * কোনো বৈদ্যুতিক বা ইলেকট্রনিক যন্ত্র যেমন মুঠোফোন, এসি, ল্যাপটপ অতিরিক্ত গরম হলে তা অতিসত্বর মেরামত করাতে হবে।
  • ৪. রাসায়নিক পোড়া বা কেমিক্যাল বার্ন
    ল্যাব বা কারখানায় কাজের সময় অবশ্যই নিরাপত্তা পোশাক ব্যবহার করতে হবে।
৫. কনটাক্ট বার্ন
অতিরিক্ত গরম কোনো বস্তু, যেমন মোটরসাইকেলের সাইলেন্সার, গরম ধাতব পদার্থ ইত্যাদি সাবধানে ব্যবহার করতে হবে।
এ ছাড়া বাচ্চাদের আগুন, ছাই, গরম পানি ইত্যাদি থেকে সব সময় নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।

uRRIzAT.jpg


শীতকালে বাড়তি সতর্কতা

  • আমাদের গ্রামাঞ্চলে শীতকালে আগুনে তাপ নেওয়ার একটি চল আছে। এই খারাপ অভ্যাসের জন্য প্রতিবছর শীতকালে অনেককে প্রাণ হারাতে হয় এবং যাঁরা বেঁচে থাকেন, তাঁদেরও পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ।
  • গরম পানি দিয়ে গোসলের ক্ষেত্রে অনেকেই মনের ভুলে সরাসরি গরম পানি শরীরে ঢেলে ফেলেন।
  • বাচ্চাদের গরম পানি পানে বা গোসল করানোতে প্রয়োজন অতিরিক্ত সতর্কতা।

কোভিডকালীন দুর্ঘটনা

এই করোনাকালে আমরা অহরহ স্যানিটাইজার ব্যবহার করে থাকি। স্যানিটাইজার হলো মূলত অ্যালকোহল যা প্রচণ্ড দাহ্য। তাই স্যানিটাইজার হাতে দিয়ে তা না শুকানোর আগে আগুনের সংস্পর্শে এলে ঘটে যেতে পারে ভয়ংকর দুর্ঘটনা।

কী করবেন পুড়ে গেলে?

যদি আগুন ধরেই যায়, তবে সবার প্রথমে আপনি সেই আগুনটা নেভাবেন। কীভাবে?
স্টপ-ড্রপ-রোল। অর্থাৎ যেখানেই আছেন দাঁড়িয়ে পড়ুন, এরপর মাটিতে শুয়ে পড়ুন, এরপর গড়াগড়ি দিন। আগুন জ্বলন্ত অবস্থায় ছোটাছুটি করলে আগুন তো কমবেই না, বরং বাড়বে। আশপাশে কেউ থাকলে ভারী কম্বল বা কম্বলজাতীয় ভারী কাপড় দিয়ে জড়িয়ে ধরুন। আগুনটা চাপা দিয়ে নেভাতে হবে।

এই করোনাকালে আমরা অহরহ স্যানিটাইজার ব্যবহার করে থাকি। স্যানিটাইজার হলো মূলত অ্যালকোহল যা প্রচণ্ড দাহ্য। তাই স্যানিটাইজার হাতে দিয়ে তা না শুকানোর আগে আগুনের সংস্পর্শে এলে ঘটে যেতে পারে ভয়ংকর দুর্ঘটনা।

আগুন নেভার পর পরিধানের সব কাপড় খুলে ফেলতে হবে। এরপর একজন সাহায্যকারী হাসপাতালে নেওয়ার জন্য পরিবহন ও অন্যান্য ব্যবস্থা করবেন, আরেকজন সাহায্যকারী স্বাভাবিক তাপমাত্রার বহমান পানি দ্বারা ক্ষতস্থানটি ধুতে থাকবেন। এভাবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ধোয়া হতে হতে অন্য সব ব্যবস্থাও হয়ে যাবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব কাছের বার্ন ইউনিটে রোগীকে নিয়ে আসতে হবে। হাসপাতালের চিকিৎসক রোগীকে দেখে পরীক্ষা করে পরবর্তী চিকিৎসার নির্দেশনা দেবেন। অন্যান্য পোড়ার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

কী করা যাবে না

পুড়ে যাওয়ার পর সাধারণত যেসব ভুল আমাদের সমাজে মানুষজন অহরহ করে থাকেন, সেসব সম্পর্কে জেনে নিন।

পোড়া স্থানে ডিম লাগানো যাবে?—না।
টুথপেস্ট?—তাও না।
ঘাস, পাতা?—না।
গোবর?—একেবারেই না।
চুল বা তাবিজ?—না না না।

কিন্তু কেন নয়?

কারণ, এসব বস্তু একটি জীবাণুমুক্ত ক্ষতকে জীবাণুযুক্ত করে ও ক্ষতটাকে গভীর ও জটিল করে তোলে।
তাহলে করবটা কী? শুধু স্বাভাবিক তাপমাত্রার বহমান পানি দিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ধুয়ে আনুন, এতটুকুই। বাকিটা করার জন্য আমরা তো আছিই।

লেখক: ডা. এ কে এম এম জামান | প্লাস্টিক সার্জন ও বার্ন বিশেষজ্ঞ | শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top