What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বিয়েতে যেসব ভুল পরে আপনাকে ভোগাবে (1 Viewer)

MlvUNRR.jpg


বিয়ের তারিখ ঠিক। অতিথিদের দাওয়াত, খাবারের পদ, বিয়ের আলোকচিত্রী, পোশাক, গয়না থেকে শুরু করে সব আয়োজন ঠিকঠাক। আর এই কাজগুলো যতটা মনোযোগ দিয়ে আমরা করি, দেখা যায়, তার সিকিভাগও বিয়ে পড়ানো বা বিয়ের কাগজপত্র সঠিকভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে আমরা দিই না। যে কারণে পরে অনেক সময় বড় মাশুল গুনতে হয় নতুন দম্পতিকে। পড়তে হয় নানা ঝক্কিঝামেলায়। বিয়েতে ধর্মীয় রীতিনীতির পাশাপাশি বিয়েসংক্রান্ত আইনি বিষয়গুলোতেও খেয়াল রাখা উচিত।

বর-কনের বয়স ও নাম-ঠিকানা

প্রচলিত আইন অনুযায়ী বর ও কনেকে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে। বরের বয়স কমপক্ষে ২১ বছর এবং কনের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। এ বয়স হতে হবে জন্মসনদ কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লেখিত জন্মতারিখ অনুসারে। অনেক সময় দেখা যায়, জন্মসনদ কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স কম উল্লেখ করা হলেও আসল জন্মতারিখ অনুযায়ী বর বা কনে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছেন। বর বা কনে পক্ষের পরিবারের লোকজন মনে করেন, যেহেতু আসল জন্মতারিখ অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছেন, বিয়ের দলিলে বয়স সেটাই উল্লেখ করা যায়। কিন্তু এতে জটিলতা বাড়ে। ভবিষ্যতে বিদেশে যাওয়া থেকে শুরু করে নানা কাজে জটিলতা তৈরি হয়। জন্মসনদ কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রে উল্লেখিত জন্মতারিখ অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্ক না হলে তা বাল্যবিবাহ হিসেবেও গণ্য হতে পারে, আইন অনুযায়ী যা অপরাধ। এ ছাড়া অনেক সময় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কাবিননামা বা বিয়ের দলিলে বর–কনের নাম ভুল লেখা হয়ে যায়, বানানের মিল থাকে না। জন্মসনদ কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী যিনি বিয়ের দলিল সম্পাদন করছেন, তিনি যেন ঠিকঠাক লেখেন, সেটি খেয়াল করতে হবে অভিভাবকদের।

নিবন্ধনের বিকল্প নেই

প্রতিটি মুসলিম বিয়ে অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। আর এ কাজ মূলত বরপক্ষের। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিয়ে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। অনেক সময় কাজি বা হুজুর ডেকে বিয়ে পড়ানো হয়। পরে বিয়েটি যথাযথভাবে নিবন্ধন করতে গড়িমসি করেন কেউ কেউ। বিয়ের অনুষ্ঠানের দিনই বিয়ের কাবিননামা সম্পাদন করে নিবন্ধন করার ব্যবস্থা করা উচিত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাজিকে তাৎক্ষণিক ডেকে এনে খালি কাবিননামায় বর ও কনের স্বাক্ষর নেওয়া হয় মাত্র। পরবর্তীকালে অন্যান্য কলাম পূরণ করেন কাজি। কিন্তু এতে ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রয়োজনে সময় নিয়ে পুরো কাবিননামা ভালোভাবে পূরণ করে দুই পক্ষের অভিভাবকেরা তা যাচাই করার পর বর–কনের স্বাক্ষর নেওয়া উচিত। হিন্দু বিয়েতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক নয়, তবে নিবন্ধন করে নেওয়াই উচিত। নিবন্ধন ফি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত রয়েছে, সে পরিমাণটাও আগে থাকতে জানা থাকলে ভালো। বিয়েতে হলফনামা সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক নয়। কোর্ট ম্যারেজ বলে বিয়ের কোনো নিয়ম নেই। কোর্ট ম্যারেজ নিতান্তই ভুল একটি ধারণা। কোর্টে গিয়ে যেটা করা হয়, সেটা হচ্ছে হলফনামা, যা দিয়ে বিয়ের বৈধতা প্রমাণ করা কঠিন। তাই কোর্ট ম্যারেজের পর পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাগুলো সম্পন্ন করতে হবে। বিশেষ বিয়ের ক্ষেত্রে 'বিশেষ বিবাহ আইন' অনুযায়ী বিয়ে সম্পন্ন করতে হবে।

দেনমোহর কি ঠিকঠাক আছে

মুসলিম বিয়েতে দেনমোহর নির্ধারণ করা বাধ্যতামূলক। এই দেনমোহর নিয়ে পরে অনেক ধরনের জটিলতা দেখা যায়। উভয় পক্ষ আবেগের বশে কিংবা বাস্তবতা না বুঝে দেনমোহর নির্ধারণ করে থাকেন, যা মোটেও উচিত নয়। দেনমোহর নির্ধারণ করা উচিত উভয় পক্ষের সামাজিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার ভিত্তিতে। এ বিষয়ে আগে থেকেই আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে সেটা নির্ধারণ করে নেওয়া উচিত। মনে রাখা দরকার, দেনমোহর স্ত্রীর একটি অধিকার। যদি দেনমোহরের কোনো অংশ কিংবা পুরোটা স্ত্রীকে পরিশোধ করে দেওয়া হয়, কাবিননামায় তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা উচিত। তা দেওয়া না হলেও অপরিশোধিত হিসেবে সত্যটাই লেখা উচিত। এখানে কোনোভাবেই মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না।

স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে তো?

বিয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিনে আবার বিচ্ছেদের কথা কেন, এমনটা ভেবে অনেকেই বিষয়টি খেয়াল করেন না। তবে দাম্পত্য কখন কোনদিকে মোড় নেবে, সেটা বলা মুশকিল। তাই কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে স্ত্রীকে তালকের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে কি না, তা খেয়াল করতে হবে। বিশেষ করে কনেপক্ষের অভিভাবককে তা ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে। আর কী কী কারণে তালাক দিতে পারবে, তা–ও স্পষ্টভাবে যেন লেখা হয়। অন্যথায় ভবিষ্যতে কোনো কারণে বিবাহবিচ্ছেদ করতে চাইলে ঝামেলা পোহাতে হবে।

সাক্ষী ও উকিলের স্বাক্ষর

মুসলিম বিয়ের একটি বাধ্যতামূলক উপাদান হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষী। অন্তত দুজন পুরুষ সাক্ষী কিংবা একজন পুরুষ ও দুজন নারী সাক্ষী থাকতে হবে। কাবিননামায় সাক্ষীদের দরখাস্ত প্রয়োজন হয়। একজন উকিলও নিয়োগ করা হয় কাবিননামায়। কোনো মিথ্যা বা বানোয়াট সাক্ষীর নাম–ঠিকানা বা স্বাক্ষর বিয়েতে দেওয়া উচিত নয়। এতে পরবর্তী জীবনে বিবাহবিচ্ছেদের প্রয়োজন পড়লে ঝামেলা হতে পারে।

ভিডিও কলে কিংবা টেলিফোনে বিয়ে

টেলিফোনে বা ভিডিও কলে বিয়ে হতে হলে বিয়ের বৈধ উপাদানগুলো আছে কি না, তা খেয়াল করতে হবে। মুসলিম বিয়েতে একই বৈঠকে একই উপযুক্ত সাক্ষীদের সামনে স্পষ্ট উচ্চারণের মাধ্যমে পাত্র–পাত্রীর সম্মতি নিতে হয়। এর কোনোটি বাদ গেলে বিয়েটি যথাযথ বা বৈধ হয় না। বিয়ে নিবন্ধন করা যেহেতু বাধ্যতামূলক, তাই ভিডিও কলে বিয়ে হলেও যথাসময়ে তা নিবন্ধন করে নিতে হবে। সাধারণত এ ধরনের বিয়ে করতে দেখা যায় বিদেশি বা প্রবাসী পাত্র-পাত্রীর ক্ষেত্রে। হয়তো একজন থাকেন দেশে, আরেকজন বিদেশে। অনেক সময় পাত্র বিদেশে থাকেন বলে কনের অভিভাবকেরা বিশেষ খোঁজখবর নেন না। দ্রুত অনলাইনে বিয়ে সম্পন্ন করেন। পরে দেখা যায়, পাত্রের আগে বিয়ে আছে, স্ত্রী-সন্তান আছে। প্রবাসী পাত্রীর ক্ষেত্রেও এমন প্রতারণার ঘটনা আছে। তাই সবচেয়ে ভালো, বিয়ের আগে ঠিকমতো খোঁজ নিয়ে তারপর বিয়ে করা। এতে জটিলতা এড়ানো সহজ হবে।

কাবিননামা সংগ্রহ

বিয়ের কাবিননামা বা রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হওয়ার পর, সংশ্লিষ্ট বিয়ের রেজিস্ট্রারের নাম এবং অফিসের ঠিকানা উভয় পক্ষেরই সংগ্রহ করা উচিত। উভয় পক্ষেরই খুব দ্রুত একটি করে কাবিননামা বা বিয়ে নিবন্ধনের কপি তুলে রাখা উচিত। নিচ্ছি, নেব করে অনেক সময় সেটা আর হয়ে ওঠে না। পরে কোনো কারণে সম্পর্কে তিক্ততা দেখা দিলে কোনো একজনের কাছে নিবন্ধন কপি না থাকায় প্রতারিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে।

কোনো বিয়েতেই বিচ্ছেদ কাম্য নয়। তবে একবার যদি দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়, তখন যেন নিজে কোনো বিপদে না পড়েন, সেদিকটা আগে থেকেই ঠিকঠাক রাখা ভালো। অনেক সময় এসব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর কথা বলার ক্ষেত্রে 'সে কী মনে করবে' ধরনের ভাবনা কাজ করে। তবে দুজনেই এ বিষয়ে গুরুত্বসহকারে আলোচনা করে ঠিকঠাক করে নেওয়া ভালো। আর সেটা বিয়ের শুরুর দিকে যতটা সহজে করা যায়, পরে যত দিন যেতে থাকে, ততই জটিল হয়ে পড়ে। দুজনের ইচ্ছা বা আগ্রহও কমতে থাকে। আর সেখানেই ভুলটা হয়।

* লেখক: তানজিম আল ইসলাম | আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
 

Users who are viewing this thread

Back
Top