What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

সত্যিই কি যিশু ভারতবর্ষে এসেছিলেন? (1 Viewer)

BRICK

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Dec 12, 2019
Threads
355
Messages
10,073
Credits
81,757
T-Shirt
Glasses sunglasses
Calculator
Watermelon
Pistol
Pistol
*দুহাজার বছর কেটে গেল....আজও জানা গেল না ঈশ্বরের পুত্রের সম্পূর্ণ পরিচয়.....*



যিশু খ্রিস্ট। তাঁর শিক্ষাই খ্রিষ্টধর্মের বুনিয়াদ রচনা করেছে। যদিও যিশুর শিক্ষা তৎকালীন রোমান শাসনযন্ত্র এবং কট্টরপন্থী ইহুদি গোষ্ঠীর শিক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তাঁকে ৩৩ বছর বয়েসে ক্রশবিদ্ধ করা হয়। অবশ্য ২য় শতাব্দীর ফরাসি সাধু আইরেনিয়াস বলেছেন, ৩৩ বছর বয়েসে যিশু ক্রশবিদ্ধ হলেও ৩৩ বছর বয়েসে যিশু পৃথিবী ত্যাগ করেননি (অর্থাৎ মারা যাননি) ; তিনি পঞ্চাশেরও অধিক কাল বেঁচে থেকে পৃথিবী ত্যাগ করেছেন (অর্থাৎ মারা গেছেন)। সাধু আইরেনিয়াস- এর এই পরস্পর বিরোধী উক্তিটি খ্রিষ্টীয় পন্ডিত মহলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। ১৯৮১ সালে প্রকাশিত Jesus Lived in India নামে একটি বই তে জার্মান লেখক Holger Kersten বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে দাবি করেছেন যে যিশু খ্রিস্ট ক্রশবিদ্ধ হয়েছিলেন ঠিকই তবে তিনি ক্রশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেননি বরং তিনি ভারতবর্ষে এসেছিলেন এবং দীর্ঘদিন ভারতবর্ষে বেঁচেছিলেন ... কেবল তাইই নয়, যিশুর সমাধিটিও রয়েছে ভারতের কাশ্মীরে ।



কাশ্মীর। সত্যিই কি যিশুর সমাধিটি রয়েছে ভারতের কাশ্মীরে?



পন্ডিতেরা মনে করেন যিশু একবার নয় দু-বার ভারতবর্ষে এসেছিলেন। প্রথম বার তরুণ বয়েসে এবং দ্বিতীয়বার ক্রশবিদ্ধ হওয়ার পর। যিশুর জীবনের ১৩ থেকে ৩০ বছরের কথা বাইবেলে উল্লেখ নেই। ওই ১৭ বছর যিশুর জীবনের missing years মনে করা হয়। রুশ সাংবাদিক নিকোলাস নটোভিচ অবশ্য মনে করেন হারানো বছর গুলোয় যিশু ভারতবর্ষে এসেছিলেন। এই কথা জানিয়ে নটোভিচ উনিশ শতকের শেষে The Unknown life of Jesus Christ নামে একটি বই লেখেন।


নটোভিচ ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে বৌদ্ধধর্ম সম্বন্ধে জ্ঞানলাভের উদ্দেশ্যে ভারতের কাশ্মীর আসেন এবং লাদাখ- এর হেমিস মঠে কিছু সময় অতিবাহিত করেন। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা নটোভিচ কে প্রাচীন তিব্বতিয় পান্ডুলিপির কথা বলে, যাতে ইসা নামে এক পশ্চিমদেশিয় জ্যোর্তিময় পুরুষের কথা রয়েছে। ভিক্ষুরা ইসাকে বোধিসত্ত্ব (পবিত্র পুরুষ) বলে উল্লেখ করেন। যিশুর হারানো বছরগুলো ভারতবর্ষে কেটেছিল কিনা সেই বিষয়ে নটোভিচের মনে প্রশ্ন দানা বাধে।



নটোভিচ তিব্বতিয় পান্ডুলিপি অনুবাদ করেন এবং রাশিয়া ফিরে যান। যিশুর অজানা জীবনের কথা প্রকাশ হতে যাচ্ছে শুনে রুশ খ্রিষ্টান কট্টরপন্থিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে। অবশেষে ১৮৯৪ সালে বহু বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে The Unknown life of Jesus Christ বইটি প্রকাশিত হয়। বইটিতে নটোভিচ দাবি করেন যে হারানো বছর গুলোয় যিশু ভারতবর্ষে এসেছিলেন। এ সময়ে তিনি বৈদিক দর্শন, বৌদ্ধ ধর্ম এবং আয়ুর্বেদ সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করেন।


নটোভিচের পরে যিশুবিষয়ক তিব্বতি পান্ডুলিপির সন্ধানে অনেকেই লাদাখ গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম প্রখ্যাত বাঙালি সাধক স্বামী অভেদানন্দ (১৮৬৬-১৯৩৯) । ইনি নটোভিচের আবিস্কারে ঘোরতর সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। নটোভিচকে ভন্ড মনে করে তার মুখোশ উন্মেচনের জন্য লাদাখ পৌঁছান স্বামী অভেদানন্দ। হিমিস মঠে যিশুবিষয়ক তিব্বতি পান্ডুলিপি সচক্ষে দেখে বিস্মিত হন ওই প্রখ্যাত বাঙালি সাধক এবং তাঁর বই 'কাশ্মীর ও তিব্বতী' গ্রন্থে যিশুবিষয়ক তথ্যাদি সর্বমোট ২২৪ পঙতি বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন।



হেমিস মঠে তিব্বতিয় পান্ডুলিপিটি অনেকেই দেখেছেন। তাদের মধ্যে হেনরিয়েটা মেররিক অন্যদম। ইনি In the World's Attic নামে বইয়ের লেখিকা। ১৯২১ সালে মেররিক পান্ডুলিপিটি দেখেন। মেররিক তাঁর লিখেছেন,"In Leh (লাদাখ -এর রাজধানী) is the legend of Jesus who is called Issa, and the Monastery at Himis holds precious documents fifteen hundred years old which tell of the days that he passed in Leh where he was joyously received and where he preached." (লাদাখের রাজধানী লেহ্ তে কিংবদন্তীর যিশু ইসা নামে পরিচিত। এবং হিমিস মঠে রক্ষিত পনের শ বছরের পুরনো মূল্যবান নথিপত্রে যিশুর কথা কথা রয়েছে, যিশুর শিক্ষার কথা রয়েছে। )


লাদাখ-এর হেমিস মঠটি জোজি-লা গিরিখাতে অবস্থিত। ইসা নামে এক পশ্চিমদেশিয় জ্যোর্তিময় পুরুষের কথা প্রাচীন পান্ডুলিপিতে লেখা রয়েছে। এটি হেমিস গুম্ফা নামেও পরিচিত। গুম্ফা হতে হলে পাহাড়ের গুহা হতে হবে এমন কোনও কথা নেই।



১৮১২ খ্রিস্টাব্দে মীর ইজ্জুৎউল্লাহ নামে একজন পারস্যবাসী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নির্দেশে মধ্য এশিয়া ও লাদাখ সফর করেন। Travels in Central Asia বইতে তিনি লিখেছেন: "They keep sculptured representations of departed saints, prophets and lamas in their temples for contemplation. Some of these figures are said to represent a certain prophet who is living in the heavens, which would appear to point to Jesus Christ."(তাহারা ধ্যানের নিমিত্ত তাহাদের প্রার্থনাগৃহে পরলোকগত সাধুসন্তের ভাস্কর্য সংরক্ষণ করে। এইসব ভাস্কর্যের কয়েকটি স্বর্গবাসী নবীর-যাহাকে যিশু খ্রিস্ট বলিয়া প্রতীয়মান হয়।)

ভারতীয় সূত্রেও যিশু এবং ভারতবর্ষের যোগসূত্রের কথা উল্লেখ রয়েছে। কাশ্মীরের ইতিহাসের অন্যতম উৎস হল 'রাজতরঙ্গিনী'। এটি রচিত হয় ১১৪৮ খ্রিস্টাব্দে। রাজতরঙ্গিনী গ্রন্থটিতে রয়েছে, ' ইসানা নামক একজন মহৎ সন্ত দাল হ্রদের তীরে ইসাবারে বসবাস করিতেন। তাঁহার অসংখ্য ভক্ত ছিল।' একটি কাশ্মিরী পুরাণের নাম 'বৈশ্যমহাপুরাণ'। 'বৈশ্যমহাপুরাণ' হিন্দুদের আঠারোটি পবিত্র গ্রন্থের অন্যতম। বৈশ্যমহাপুরাণে প্রথম শতকের কাশ্মীরের রাজার সঙ্গে যিশুর সাক্ষাতের দৃশ্য বর্ণিত আছে। বৈশ্যমহাপুরাণে যিশুকে 'ইসাপুত্তম' এবং 'কুমারীগর্ভস্বংবরণ' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র পরিচালক সুভ্রজিৎ মিত্র The Unknown Stories of the Messiah নামে ডকুমেন্টারি নির্মান করেছেন। তিনি তাঁর গবেষনার সময় 'বৈশ্যমহাপুরাণ' পাঠ করে স্তম্ভিত হয়ে যান। যেখানে শ্রীনগরের কাছে রাজা শালিবাহনের সঙ্গে ইসা মহি-র সাক্ষাতের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। রাজা শালিবাহন-এর সময়কাল ৩৯ থেকে ৫০ শতক। শালিবাহন কুষাণ সাম্রাজ্যের কাশ্মীর অঞ্চলের শাসক ছিলেন।
কিন্তু, যিশুর পক্ষে ভারতবর্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা কতদূর?

এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আমাদের তৎকালীন ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরীণ ধর্মীয় ঘাত-প্রতিঘাতের দিকে ফিরে তাকাতে হবে। যিশু খ্রিস্টের জীবিতকালে ফিলিস্তিনে দুটি ইহুদি ধর্মীয় গোষ্ঠীর আধিপত্য ছিল। এরা ফরিশী এবং সাদ্দুসিস নামে পরিচিত। ফরিশীরা ছিল ঘোর কট্টরপন্থি। তারা ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের ক্ষেত্রে কঠোর ছিল এবং বাহ্যিক ধর্মীয় অনুষ্ঠান গুরুত্বপূর্ন ভাবত। অপরপক্ষে সাদ্দুসিসরা ছিল ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি নমনীয়। তারা ছিল অজ্ঞেয়বাদী, পশুবলীর ঘোর বিরোধী এবং মৃত্যুর পর পুনুরুত্থানে বিশ্বাস করত না। এদের পাশাপাশি আরেকটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী ছিল। তারা এসেনেস ( Essenes) নামে পরিচিত। এসেনেস অর্থ: বহিরাগত। এদের ফরিশী এবং সাদ্দুসিসরা ঘৃনা করত বলে অনেক এসেনেস সদস্য জেরুজালেম শহরের বাইরে গুহায় বসবাস করত। (বাংলার বাউল গোষ্ঠী কতকটা অনুরূপ কারণেই গুপ্ত জীবনযাপন করেন ...) তবে এই সম্প্রদায়ের সদস্যরা কেউ কেউ জেরুজালেম নাজারাথ প্রভৃতি শহরেও বাস করত। এসেনেসরা মরমী দয়াধর্মের অনুসারী ছিল বলেই এসেনেস দর্শনের মধ্যেই প্রকৃত খ্রিস্টবাদের বীজটি নিহিত ছিল। পশ্চিমা সভ্যতায় এসেনেসদের ভূমিকা সম্বন্ধে Olivier Manitara লিখেছেন, This brotherhood--more or less persecuted and ostracized--would bring forth people who would change the face of the world and the course of history. Indeed, almost all of the principal founders of what would later be called Christianity were Essenes--St. Ann, Joseph and Mary, John the Baptist, Jesus, John the Evangelist, etc.


পন্ডিতদের ধারণা ভারতবর্ষ থেকে শিক্ষা সমাপ্ত করে যিশু ফিলিস্তিনে ফিরে যান এবং গুপ্ত জীবন যাপন না-করে মরমী দয়াধর্ম প্রচার করেন। যিশুর ভারতীয় আধ্যাত্মবাদের প্রত্যক্ষ জ্ঞান কি এসেনেস দর্শনকে প্রভাবিত করেছিল? কাজেই যথার্থ খ্রিস্টবাদকে এসেনেস দর্শন এবং ভারতীয় আধ্যাত্মবাদের সমন্বয় বলা যেতে পারে কি? যে প্রকৃত খ্রিস্টবাদ (যা মূলত মরমী দয়াধর্ম) সেটি কিন্তু মধ্যযুগের গির্জেপিতাদের তথাকথিত 'আদিপাপ বিষয়ক' ডিসকোর্সে অনুপস্থিত ...



এসেনেস দের মধ্যে অন্যতম ছিলেন যোয়াচিম অভ নাজারথ এবং তাঁর স্ত্রী আনা। এরা অঢেল সম্পদ এবং বিপুল দানের জন্য বিখ্যাত ছিল।

যিশুমাতা মেরি এদেরই কন্যা। দুটি দেশের সঙ্গে এসেনেসদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। মিশর এবং ভারত। বেথেলহ্যামে যিশুর জন্মের পর রাজা হেরোদের নির্যাতনের হাত থেকে অব্যাহতি জন্য যোসেফ এবং মেরি মিশরে চলে যায়। মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় বৌদ্ধধর্ম চর্চা হত। কিশোর যিশু মিশরেই মহামতি বুদ্ধের দর্শনে আকৃষ্ট হয়ে থাকবে বলে পন্ডিতদের অনুমান। আর ভারতের সঙ্গে ভূমধ্যসাগরের পূর্ব তীরের অঞ্চলের যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল সম্রাট আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর হেলেনিস্টিক সময়ে। যখন পশ্চিমের সঙ্গে ভারতবর্ষে যাতায়াতের পথ সুগম হয়েছিল। হেলেনিস্টিক সময়ে এসেনেস দর্শন গড়ে উঠেছিল মিশরীয় রহস্যবাদ এবং ভারতীয় আধ্যাত্মবাদের সমন্বয়ে। কাজেই এসেনেস দর্শনের সঙ্গে ভারতীয় দর্শনের সাদৃশ্য ছিল। যেমন, অহিংসা,নিরামিষ আহার, মদ্যপান থেকে বিরত থাকা। ইত্যাদি। এসব তথ্যে উপর ভিত্তি করে পন্ডিতেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে 'মিসিং ইয়ারসে' যিশু ভারতবর্ষে কাটিয়েছেন। শুধু তাই নয়-পন্ডিতেরা মনে করে ক্রশবিদ্ধ হওয়ার পর যিশু পুনরায় ভারতবর্ষে ফিরে যাওয়াই শ্রেয় মনে করেছিলেন।




ক্রুশবিদ্ধ যিশুর ছবিটিই যেন চিরন্তন। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে এই মহৎ প্রাণ তৎকালীন ধর্মীয় গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দের বলি। যিশুর মরমী-দয়াধর্মের প্রচারের কারণে ফরিশী এবং সাদ্দুসিস তাকে জীবিত দেখতে চায়নি, সেই সংকীর্ণ দ্বন্দে রোমানদের টেনে এনে তাঁর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করা হয়েছিল। আজও আমাদের সময়ে আমরা মরমী দয়াধর্মের প্রচারকদের কট্টরপন্থীদের আক্রমনের শিকার হতে দেখি ...



বাইবেল এবং লিখিত নথি অনুযায়ী যিশুকে ক্রশবিদ্ধ করা হয়েছিল শুক্রবার দুপুরে। তিন ঘন্টা পর অচেতন যিশুর দেহ ক্রশ থেকে নামিয়ে নিকটস্থ সমাধি গুহায় রাখা হয়। ক্রশবিদ্ধ হওয়ার পর ৬ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকার সম্ভব। যা হোক। ক্রন্দনরত উদ্বিগ্ন শিষ্যরা নিশ্চয়ই যিশুর ক্ষতস্থানের চিকিৎসা করেছিল। তাদের মধ্যে কেউ কি যিশুর কাছ থেকে ভারতীয় আয়ুর্বেদ শেখেনি?

সমাধি গুহা থেকে পালিয়ে রোমান সৈন্য এবং ফরিশী ও সাদ্দুসিসদের চোখ ফাঁকি দিয়ে জেরুজালেমের বাইরে কোথাও লুকিয়ে ছিলেন যিশু? তারপর ক্ষত সেরে ওঠার পর নাম বদলে ফেলে ছদ্মবেশ ধারণ করে কাফেলার সঙ্গে রেশম পথ ধরে ভারতবর্ষ অভিমুখে অগ্রসর হয়েছিলেন?



পন্ডিতদের ধারণা প্রথম শতকের মাঝামাঝি কাশ্মীরে পৌঁছান যিশু। ভারতবর্ষে সে সময় কুশাণ সাম্রাজ্যের শাসন। যিশুর সঙ্গে ছিলেন যিশুজননী মা মেরি। 'জেসাস লিভড ইন ইন্ডিয়া' বই তে কারসটেন সেরকমই উল্লেখ করেছেন যে যিশুমাতা মেরিও ভারতযাত্রায় যিশুর সঙ্গে ছিলেন। মেরি কাশ্মীরেই মারা যান। গবেষকরা এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানের মারি শহরের কথা উল্লেখ করেন।

ভারতবর্ষের মানচিত্রে শ্রীনগরের অবস্থান। বসবাসের জন্য যিশু কাশ্মীরকেই কেন বেছে নিয়ে ছিলেন? এই যথার্থ প্রশ্নটির সম্ভাব্য উত্তরও পন্ডিতেরা অনুমান করেছেন। কাশ্মীরে যিশুর জন্মের বহুপূর্ব থেকেই (খ্রিস্টপূর্ব ৬০০) হিব্রুবাসী ইহুদিরা বাস করত। আপন গোষ্ঠীর সঙ্গে বসবাস করাই তো স্বাভাবিক। উপরোন্ত বাইবেলে রয়েছে: (যিশু বলছেন) And I have other sheep that are not of this fold. I must bring them also, and they will listen to my voice. So there will be one flock, one shepherd. (John 10:16) এই কাশ্মীরবাসী হিব্রুরাই কি other sheep ? তাছাড়া যিশুর জন্মের পর যে তিনজন প্রাচ্যদেশিও জ্ঞানীবৃদ্ধ বেথেলহেম গিয়েছিলেন সদ্যজাত যিশুকে আর্শীবাদ করতে তারা কি এই গোত্রের ?



যুগ যুগ ধরে বংশপরম্পরায় কাশ্মীরের অধিবাসীরা একজন প্রাচীন হিব্রুভাষী ইহুদি পুণ্যবান পুরুষের কথা বলে আসছে। তাঁর নাম উজ আসাফ (Yuz asaf)। শব্দটির মানে: Leader of the Healed . যিশু ক্রশবিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বেঁচে উঠেছিলেন বলেই কি এই নাম? যাই হোক। উজ আসাফ-এর প্রাচীন সমাধিটি রয়েছে কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরে । সমাধিটি স্থানীয় জনগনের কাছে 'রোজাবাল ' নামে পরিচিত। আমরা যেমন মাজার বলি, তেমনি কাশ্মীরে সাধুসন্তদের সমাধিকে রোজাবাল বলা হয়। কাশ্মীরে মুসলিম আগমনের পূর্বে বৌদ্ধ ও হিন্দুরা রোজাবাল দেখাশোনা করত। পরে পঞ্চদশ শতকে মুসলিম এক পীরকে রোজাবাল এ সমাহিত করা হয়। সেই পীরের নাম সৈয়দ নাসর-উদ-দিনিস ।



রোজাবাল । এটির অবস্থান শ্রীনগরের পুরনো শহরের মাঝামাঝি। জন বা জোহানেস কে সংস্কৃত ভাষায় বলা হয় আঞ্জুনা। জনশ্রুতি অনুযায়ী জনৈক আঞ্জুনা ৮৯ শতাব্দীতে সমাধি তৈরি করেন। ১১২ শতাব্দীতে নথিপত্রে উল্লেখিত হয়েছে ভূগর্ভের উপর একটি সংরক্ষিত ভবন তৈরি করা হয়েছে। উজ আসাফ ১১২ খ্রিস্টাব্দে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শ্রীনগরের অধিবাসীদের এমনই বিশ্বাস ।



সত্যিই কি যিশু ভারতবর্ষে এসেছিলেন?

শ্রীনগরে 'টেম্পল অভ সোলোমোন'এ একজন ফিলিস্তিনি নবীর কথা উৎর্কীণ রয়েছে যিনি কাশ্মীর উপত্যকায় প্রেম ও দয়াধর্ম প্রচার করতেন। যিনি শান্তিতে জীবন কাটিয়েছেন এবং আশি বছর বয়সে পরলোক গমন করেছেন। কত শত বছরের পুরনো কথা? কিন্তু বর্তমানেও যেন সে কথারই রেষ রয়ে গেছে! ২০০৭ সালে ভারতীয় ঔপন্যাসিক আশ্বিন সানঘি 'দি রোজাবাল লাইন' নামে উপন্যাসে কাশ্মীরে যিশুর জীবনের কথা তুলে ধরেছেন।



আশ্বিন সানঘি রচিত 'দি রোজাবাল লাইন' বইটির প্রচ্ছদ। যিশু খ্রিস্ট ক্রশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেননি বরং তিনি ভারতবর্ষে এসেছিলেন এবং ভারতবর্ষে দীর্ঘদিন বেঁচেছিলেন ... কেবল তাইই নয়, যিশুর সমাধিটিও (রোজাবাল?) রয়েছে ভারতের কাশ্মীরে -এটিই উপন্যাসটির বিষয়বস্তু।



এসব তথ্যাদি বিশ্লেষনের সময় আমাদের বারবার ফিরে যেতে হয় ২য় শতাব্দীর ফরাসি সাধু আইরেনিয়াস-এর কাছে। কেন তিনি বলেছেন, Jesus lived to be fifty or more years old before leaving the earth, though he also said that Jesus was crucified at the age of thirty-three. এরকম বলার মতো সাধু আইরেনিয়াস-এর কাছে কি এমন তথ্য ছিল? লাদাখ- এর হেমিস মঠের তিব্বতিয় পান্ডুলিপিতে এমন কি লেখা রয়েছে যা দেখে রুশ সাংবাদিক নিকোলাস নটোভিচ-এর মনে হয়েছিল যিশু তার অজানা জীবন কাটিয়েছিলেন ভারতবর্ষে? সত্যিই কি যিশু ক্রশবিদ্ধ হওয়ার পরও বেঁচে গিয়েছিলেন এবং মা মেরির সঙ্গে ভারতবর্ষে এসেছিলেন? শ্রীনগরের রোজাবাল সমাধিটি আসলে কার?

এই প্রশ্নগুলির যথাযত উত্তর কি সম্ভব?
শেষ করছি Holger Kersten এর একটি মন্তব্য দিয়ে। the many stories of Jesus journeying to the East are important because they highlight the "vital importance to find again the path to the sources, to the eternal and central truths of Christ's message, which has been shaken almost beyond recognition by the profane ambitions of more or less secular institutions arrogating to themselves a religious authority. This is an attempt to open a way to a new future, firmly founded in the true spiritual and religious sources of the past ... ( যিশুর পূর্বদেশ ভ্রমনের গল্পগুলি আসলে অতীব গুরুত্বপূর্ণ কেননা সেগুলি যিশুর মূল ও শাশ্বত বাণীর উৎস সম্বন্ধে আলোকপাত করে। যা তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলি ধর্মীয় কর্তৃত্বের নামে মুছে ফেলতে তৎপর। কাজেই এটি (যিশুর পূর্বদেশ ভ্রমনের গল্পগুলি) আসলে একটি নতুন ভবিষ্যতের দিকেই যাত্রা- যা অতীতের আধ্যাত্বিক এবং ধর্মীয় উৎসের উপর দৃঢ়ভাবে যুক্ত।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top